হঠাৎ হেসে উঠল পল কেড্রিক। তা হলে শিগগির অনুমতি দাও, এই মুহূর্তে কাজটা ছেড়ে দিলাম আমি।
পল! প্রতিবাদ করল গুন্টার। এসব কী বলছ।
কোম্পানির কাছে তোমার দেনার কী হবে? বিরক্তির সঙ্গে জিজ্ঞেস করল কর্নেল কীথ। ফেরত দেয়ার ক্ষমতা আছে?
তার দরকার নেই।
একসঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে বক্তার দিকে তাকাল, ওরা। দোরগোড়ায় সামান্থা ফক্স দাঁড়িয়ে। তোমাদের এই ব্যবসাতে আমার টাকাও খাটছে। টাকা নেয়ার সময় মামা বলেছিল এটা রিয়েল-এস্টেট ব্যবসা, কোনওরকম দুর্নীতি নেই। এতদিন মামা সৎ পথে ছিল বলে তার কথা বিশ্বাস করে খোঁজ-খবর ছাড়াই টাকা খাটানোর অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আসল কথা জানার পর আমার টাকা উঠিয়ে নেব ঠিক করেছি। ক্যাপ্টেন কেড্রিকের কাছে তোমাদের যা পাওনা, কেটে রেখে বাকি টাকা আমাকে ফিরিয়ে দাও। ক্যাপ্টেন তার সুবিধে মতো ওই টাকা ফিরিয়ে দেবে।
পাথর হয়ে গেল যেন সবাই। রক্ত সরে শাদা হয়ে গেছে জন গুন্টারের চেহারা। প্রথমে হতবাক, তারপর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল কর্নেল কীথ, প্রতিবাদ করতে গেল, কিন্তু তার আগেই গুন্টারের দিকে তাকিয়ে মুখ খুলল বারউইক।
তুমি- ধমকে উঠল সে, তুমি বলেছিলে টাকাগুলো তোমার। গর্দভ কোথাকার! এর মাঝে মেয়েমানুষকে টানতে গেলে কোন আক্কেলে? বেশ, ওকে তুমি জড়িয়েছ, এখন সামলাও! নইলে আমাকে হাত দিতে হবে।
এখন থেকে আমাকে কিংবা আমার কাজকর্ম নিয়ে আর কাউকে মাথা ঘামাতে হবে না, জবাব দিল সামান্থা। আমি নিজেই সব দেখাশোনা করব!
কেড্রিকের দিকে তাকাল ও। তোমার সিদ্ধান্তে আমি খুশি হয়েছি, ক্যাপ্টেন। আশা করি এর জন্যে তোমাকে আপসোস করত্বে হবে না।
সামান্থার পিছু পিছু কামরা থেকে বেরিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়াল পল কেড্রিক, কিন্তু বারউইকের ডাকে থামতে হলো ওকে।
ক্যাপ্টেন!
ঘুরে দাঁড়াল পল কেড্রিক! কুৎসিত দৃষ্টি ফুটে উঠেছে কর্নেল কীথের চোখে। গুন্টারের চেহারায় অবিশ্বাস আর আতঙ্কের ছাপ।
ক্যাপ্টেন, কেড্রিক, বলল বারউইক, আমরা বোধ হয় একটু ধৈর্য হারা হয়ে পড়েছিলাম। যা হোক, এ-ব্যাপারে তোমার সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি আমার ভালো লেগেছে। ঠিকই বলেছ, ইয়েলো বাট থেকে ওদের উচ্ছেদ করতে গেলে ঝামেলা হবে এবং তাতে স্বভাবতই ওয়াশিংটনে নানা কথা উঠবে। ব্যাপারটা আমিও ভেবেছিলাম, কিন্তু ম্যাকলেনন সম্পর্কে জানা না থাকায় সম্ভাবনাটা ক্ষীণ বলে উড়িয়ে দিয়েছি।
সেগালকে আমি চিনি, আবার বলল সে। কিন্তু ম্যাকলেনন সম্পর্কে কিছুই জানি না। তোমার কথা শুনে, সর্বাত্মক হামলার পরিকল্পনা বাদ দিতে হচ্ছে। ভিন্ন উপায় খুঁজতে হবে আমাদের। আর হ্যাঁ, বলে চলল বারউইক। মিস ফক্সের ওপর তোমার মোটামুটি প্রভাব আছে বলে মনে হলো। এই মুহূর্তে আমরা কোনওরকম ব্যর্থতা সহ্য করতে পারব না, তাই তোমাকে একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। তুমি আমাদের কোম্পানিতে যোগ দিলে কেমন হয়? সাইলেন্ট পার্টনার হিসেবে?
ক্রোধে ঝলসে উঠল, কীথের চেহারা। কিন্তু গুন্টারের চোখে-মুখে প্রত্যাশার ছাপ পড়ল। বারউইক থামল না। লাভের শতকরা পনের ভাগ পাবে তুমি। প্রচুর টাকা! মিস ফক্সকে তুমি লাইনে রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। তুমি যদি হাল ধরো, রক্তপাত ছাড়াই হয়তো সমস্যার একটা সমাধান বের করা সম্ভব হবে।
দ্বিধায় পড়ল পুল কেড্রিক। টাকার পরিমাণ প্রলুব্ধ করার মতো, সামান্থার কাছে দায়বদ্ধ হতে চায় না ও। কিন্তু, রক্তপাত ছাড়া কথাটাই বেশি আকৃষ্ট করল ওকে, সাবধান হতে ভুলে গেল।
রক্তপাত না হলে, বলল কেড্রিক, তোমার শর্তে আমি রাজি। কিন্তু তারপরও ব্যাপারটা নিয়ে একটু খোলাখুলি আলাপ করতে হবে।
পাঁই করে ঘুরে দাঁড়াল কর্নেল কীথ। এ-সবের কোনও অর্থ হয় না, বারউইক! তুমি খুব ভালো করে জানো, ওদের সরানোর একমাত্র রাস্তা সরাসরি পূর্ণশক্তিতে আক্রমণ। আগেও এ-নিয়ে কথা বলেছি আমরা। তা ছাড়া এই লোকটা মোটেই বিশ্বস্ত নয়। আমার কানে এসেছে, শত্রুপক্ষে ওর বন্ধু আছে; ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে ও।
যত যোগাযোগ রাখবে তত ভালো, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কী যেন ভাবল বারউইক, হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছল। ওদিকে বন্ধু থাকায় কেড্রিক সহজেই একটা সমঝোতায় পৌঁছুতে পারবে! হঠাৎ হেসে উঠল সে। তোমরা দুজন একটু বাইরে যাও তো, ক্যাপ্টেন কেড্রিকের সঙ্গে একা কিছু কথা বলতে চাই।
.
কয়েক ঘণ্টা পর, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ বোলাচ্ছে পল কেড্রিক। বারউইক আশাতীত ভালোমানুষির পরিচয় দিয়েছে। বিশ্বাসভাজন না হলেও, ওদের কাছ থেকে জমি কেনার ব্যাপারে অন্তত লোকটার আপত্তি আছে বলে মনে হয় নি। কয়েকজনকে জমি বিক্রি করায় রাজি করানো গেলে অন্যরাও শেষ পর্যন্ত আপত্তি তুলবে না। সরকার হস্তক্ষেপ করলে জায়গাটা ওদের এমনিতেই ছাড়তে হবে। ম্যাকলেনন আর সেগালকে রাজি করিয়ে শান্ত করতে পারলে নেতৃত্বের অভাবে লড়াইয়ের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে সেটলাররা। লড়াই না হলে রক্তপাতের প্রশ্নই ওঠে না। বরঞ্চ সেটলাররা জমির বিনিময়ে বেশ কিছু টাকা পাবে।
লোকজনের ভিড় এড়িয়ে রাস্তা ধরে এগোল কেড্রিক। বিরক্তি বোধ করছে। বারউইক কুটিল চরিত্রের লোক, কিন্তু বাস্তব বুদ্ধি আছে তার। বুঝতে পেরেছে, জমি কেনার আগ মুহূর্তে একাধিক হত্যাকাণ্ড মহাশোরগোলের সৃষ্টি করবে, ফলে ওদের পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যাবে। সাময়িকভাবে হলেও ঝামেলা ঠেকানো গেছে। সামান্থার ধারণা, এবার একটা সমাধান বের করা। সম্ভব হবে। ম্যাকলেনন আর সেগালের সঙ্গে আলাপ করার জন্যে কাল আবার ফিরে যাবার কথা ভাবছে পল কেড্রিক। একজন নিরপেক্ষ লোক মারফত রাতের মধ্যেই খবর পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।