জমে গেল ডরনি শ, কিন্তু ঘুরল না। ওর শরীর যেন পাথরের মূর্তি। এক মুহূর্ত পরেই আবার হাঁটতে শুরু করল সে। না! বলল রুক্ষ কণ্ঠে, চিনি না!
লরেডো শ্যাড তাকিয়ে রইল ওর দিকে। মনে রেখো পার্ডনার, ওই লোকটাকে তোমার একদিন খুন করতে হবে, নইলে নিজেই মারা পড়বে তুমি।
হুম, শান্ত কণ্ঠে বলল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক, আমিও তাই ভাবছি।
০৭. ধূসর পাথুরে ভবনের অফিস-রুমে
ধূসর পাথুরে ভবনের অফিস-রুমে পা রাখল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ঘরময় পায়চারি করছিল কর্নেল লরেন কীথ; থমকে দাঁড়িয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। ডরনির কাছে শুনলাম মাঝরাতের পরই ফিরেছ তুমি। আসার সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলাম, দেখা করো নি কেন?
আসলে, খুব ক্লান্ত ছিলাম আমি। তা ছাড়া, কীথের চোখে চোখ রাখল কেড্রিক, জরুরি কোনও খবরও আমার কাছে ছিল না।
একটা কাজের জন্যে তোমাকে ভাড়া করা হয়েছে, কিন্তু এখনও কিছুই করতে পারো নি তুমি। কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল কীথ। গিয়েছিলে কোন চুলোয়?
সংক্ষেপে পরিষ্কার করে ইয়েলো বাটের ঘটনা খুলে বলল কেড্রিক, তবে লুকোনোর জায়গা এবং স্যু লেইনের সঙ্গে দেখা করার কথা সযত্নে এড়িয়ে গেল। জায়গাটা নিজের চোখে দেখার পর, বলল পল, কেন যেন আমার মনে হচেছ ওখান থেকে ওদের উচ্ছেদ করা সহজ হবে না। গুন্টার আর তুমি সরকারকে তো বটেই আমাকেও মিথ্যে কথা বলেছ। চোর-ছ্যাচড় আর গুণ্ডা বদমাশের দল আদৌ আস্তানা গাড়ে নি ওখানে।ওরা সৎ এবং ভালো মানুষ। ওদের তাড়াতে গেলে অনেক ধকল পোহাতে হবে, টিকতে পারবে না।
অনুকম্পার হাসি দেখা দিল কর্নেল কীথের ঠোঁটে। ভয়ে কুঁকড়ে গেলে মনে হয়। তুমি নাকি লড়াকু লোক! আমাদের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছ, শোনো বলি, ওই ফালতু লোকগুলোকে একবার যখন তাড়াব ঠিক করেছি, তুমি সাহায্য করো বা না করো, যেভাবে হোক ওদের তাড়াবই। তোমাকে ভাড়া করার বুদ্ধিটা গুন্টারের মাথা থেকে বেরিয়েছিল-আমার নয়।
সত্যি কথা বলেছ, বারউইকের পিছু পিছু কামরায় ঢুকল জন গুন্টার। এক লহমায় কেড্রিক আর কীথকে জরিপ করে নিল ও। ইয়েলো বাট-এ গেছে বলে ওকে দোষারোপ করো না, আমিই যেতে বলেছিলাম।
ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে আসতে নিশ্চয়ই বলে দাও নি? ও এখন বলছে, আমাদেরকে নিয়ে, নাকি কাজটা হবে না!
এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল বারউইক; এবার ডেস্কের উল্টোদিকে গিয়ে প্রকাণ্ড চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল। বড় করে শ্বাস টানল, ঘাম মুছল হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে; তারপর তীব্র দৃষ্টি হানল কেড্রিকের দিকে। কী জানতে পারলে, বলো?
ওরা যুদ্ধ করার জন্যে তৈরি হয়ে আছে। বব ম্যাকলেনন আর সেগালের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। ওদের মাঝে ভয়ের কোনও চিহ্ন নেই, বরং আছে প্রখর আত্মমর্যাদা বোধ; প্রয়োজনে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও লড়বে। যে কোনও পরিস্থিতির জন্যে তৈরি হয়ে আছে ওরা। তোমাদের হামলায় ওদের একজন লোক মারা গেছে, গুরুতর আহত হয়েছে একজন আর ডিনামাইট বিস্ফোরণে একটা দোকানের দরজা, বারান্দা উড়ে গেছে।
অগ্নিদৃষ্টিতে কীথের দিকে তাকাল অ্যাল্টন বারউইক। অথচ তুমি বলেছিলে তিনজন মারা গেছে, মাটির সঙ্গে মিশে গেছে একটা দালান। এবার থেকে নিশ্চিত হয়ে তারপর আমার কাছে রিপোর্ট করবে, ঠিক আছে? আবার কেড্রিকের দিকে তাকাল সে। হ্যাঁ, তারপর বলল, তোমার কী হয়েছিল, পালিয়েছিলে?
আমাকে এখানে দেখতে পাচ্ছ।
অনেকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল ওরা। বারউকের শীতল কঠিন দৃষ্টি যেন পলের অন্তস্তল পর্যন্ত দেখে নিচ্ছে।
এখন এ-ব্যাপারে তোমার মতামত? অবশেষে জানতে চাইল বারউইক।
যুদ্ধ বাধলে, ভেবেচিন্তে জবাব দিল: কেড্রিক, ওয়াশিংটনে এর হাওয়া লাগবে। লিংকন কাউন্টি ওঅরের কথা নিশ্চয়ই তোমাদের মনে পড়ে? ওখানকার মতো এখানেও একজন জেনারেল এসে হাজির হবে। তারপর ওই জায়গা থেকে কত মুনাফা তোমাদের হাতে আসবে বুঝতেই পারছ।
প্রকাণ্ড মাথাটা দুলিয়ে সায় দিল বারউইক। নেহাত সত্যি কথা! সুতরাং আমাদের অন্য উপায়ের কথা ভাবতে হবে। এ লোকটা, আবার কীথ আর। গুন্টারের দিকে আগুনঝরা-দৃষ্টিতে তাকাল সে, অন্তত কাজের কথা বলতে পারে, নির্ভুল রিপোর্ট দেয়; ওর কাছ থেকে তোমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
কেড্রিকের দিকে তাকাল বারউইক। আর কিছু?
একটা কথা। ওদিকে সমভূমিতে একজন রহস্যময় ঘোড়সওয়ারের আনাগোনা চোখে পড়েছে আমার। ইঁদুর-রঙা একটা মাস্ট্যাং হাঁকিয়ে বেড়ায়। লোকটা একাই ওখানকার লোকজনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে, তোমাদের তর্জন-গর্জনে কিন্তু কিছুই হয় নি!
তাই? নিরাবেগ কণ্ঠে বলল বারউইক। ডেস্কের কাগজপত্র নাড়াচাড়া করল কয়েক মুহূর্ত তারপর জিজ্ঞেস করল, শুনলাম, তুমি নাকি কাজ ছেড়ে দেবার কথা ভাবছ, সত্যি নাকি?
খুন-খারাবীতে জড়াতে চাই না আমি। ওরা মোটেই আউট-ল নয়, নিরপরাধ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমার পরামর্শ: ওদের কাছ থেকে জায়গাটা কিনে নাও, নইলে ওরা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দাও।
তোমাকে আর মাতব্বরি ফলাতে হবে না! শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল লরেন কীর্থ। সিদ্ধান্ত যা নেয়ার আমরাই নেব!
আমার অনুমতি ছাড়া, নরম গলায় বলল বারউইক, কেউ এখন কাজ ছাড়তে পারবে না!