এটা আর যাই হোক জলাভূমি নয়। অন্তত এই একটা ক্ষেত্রে কোম্পানি মিথ্যে তথ্য সরবরাহ করেছে। জায়গাটা জনবসতিহীন, এটাও সত্যের অপলাপমাত্র। অবশ্য স্কোয়াটাররা আদতেই বাজে লোক হলে, ওকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। পুরো ব্যাপারটা ইতিমধ্যে বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছে; কিন্তু কোম্পানির কাছে ঠেকে আছে ও, কাজ ছাড়তে গেলে সব টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে-এই মুহূর্তে এতগুলো টাকা জোগাড় করা রীতিমত অসম্ভব। তা ছাড়া, চিন্তাটা হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল, এখানে সামান্থা ফক্স আছে…।
কর্মময় জীবনে অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ পেয়েছে পল কেড্রিক, কিন্তু নির্দিষ্ট কারও প্রতি কখনও তেমন দুর্বলতা বোধ করে নি, অবশ্য তাদের মধ্যে সামান্থার মতো দীর্ঘাঙ্গী, প্রিয়দর্শিনী ছিল না কেউ। কোম্পানির জন্যে নয়, সামান্থাকে আরেকবার দেখবে বলেই মাস্ট্যাংয়ে ফিরে যাবে ও আরেকটা কারণ আছে, ওর নির্দেশ উপক্ষো করেছে উরনি শ, রবার্টসকে খুন করা হয়েছে, হামলা চালানো হয়েছে, ইয়েলো বাট শহরে; ওরা হয়তো ধরে নিয়েছে পল কেড্রিক বেঁচে নেই; ওদের ভুল ভেঙে দিতে হবে।
উত্তরে ঘোড়া ঘোরাল কেড্রিক, সেঝোঁপ আর ক্যাট-ক্ল গাছের মাঝে পথ করে আকাশ-ছোঁয়া জোড়া নীল-পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলল। উত্তরে এই এলাকাটিকে দেয়ালের মতো ঘিরে রেখেছে রিম-দেয়ালের এপাশে ওগুলো ছাড়া আর কোন পাহাড় নেই। বাঁ দিকে এবড়োখেবড়ো প্রান্তর, একটা গভীর ক্যানিয়নও আছে। অ্যাপলুসাকে ঘুরিয়ে ক্যানিয়নের দিকে এগোল কেড্রিক। আচমকা লাগাম টেনে ধরল, দাঁড়িয়ে পড়ল ঘোড়াটা।
সামনে মাটিতে একটা ছুটন্ত ঘোড়ার ট্র্যাক্ট দেখা যাচ্ছে। এই ছাপ কেড্রিকের চেনা।
ইয়েলো বাটে যাবার সময় পথে একজন অজ্ঞাত ঘোড়সওয়ার ওদের ওপর নজর রাখছিল। এটা তারই গ্ৰল মন্টংয়ের ট্র্যাক। ঘোড়াটা এদিকে গেছে বেশিক্ষণ হয়নি।
এবার আরও ধীর গতিতে এগোল কেড্রিক। ক্যানিয়নে ঢুকে অন্য দিকে বেরিয়ে এল। সামনে, ঘাসে ছাওয়া. বিরাট মাঠ, ক্ষুদে একটা ঝর্না বয়ে যাচ্ছে মাঠের বুক চিরে। দূরে এক কোণে একটা পাথুরে কুটির। এ-তল্লাটের অন্যান্য ঘর-বাড়ির তুলনায় সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। সামনে ট্রেইল দেখে সময় নষ্ট করল না কেড্রিক, ঘোড়া নিয়ে মাঠের ওপর দিয়ে কুটিরের দিকে এগিয়ে গেল।
স্যান্ডস্টোন ব্লকের দেয়াল আর শনের ছাউনি দেয়া, কুটিরটা দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। উঠোনে ছায়া বিলোচ্ছে শেড গাছ। ছ-সাতটা মুরগী আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাবার খুঁটে খাচ্ছে। করালে কয়েকটা ঘোড়া আছে। জিন চাপানো গ্রাটা চোখে পড়তেই ধক করে উঠল বুকটা। কারও জন্যে যেন অপেক্ষা করছে ওটা।
কুটিরের দরজার সামনে রাশ টেনে ঘোড়া থামাল প্রল কেড্রিক, স্যাডল থেকে নামল, লাগামটা জড়িয়ে দিল পয়েলের সঙ্গে। এই সময় হঠাৎ দরজা খুলে কড়াই হাতে একটা মেয়ে বেরিয়ে এল। কেড্রিককে দেখে চমকে উঠল সে! মুহূর্তে তাকে চিনতে পারল পল। স্যু লেইন, এর সাথেই ট্রেইলে দেখা হয়েছিল। ডরনি শ নাকি এই মেয়েটার প্রতি দুর্বল।
তুমি! কেড্রিকের দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে ঢোক গিলল স্যু লেইন! তুমি না মারা গেছ?
কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক। মারা যাই নি, খিদেয় কাহিল। খাওয়ার কিছু আছে?
ঝাড়া এক মিনিট ওর দিকে চেয়ে রইল স্যু লেইন, তারপর মাথা দোলাল। এসো, ভেতরে এসো। ঘোড়াটা বেঁধে রাখো, নইলে সোজা মাঠে চলে যাবে। তোমার আবার, শুকনো শোনাল ওর কণ্ঠস্বর, যে কোনও মুহূর্তে ওটার দরকার হতে পারে। জায়গাটা তোমার জন্যে নিরাপদ নয়।
মাস্ট্যাংয়ের পাশেই অ্যাপলুসাকে বাঁধল কেড্রিক, তারপর স্যু লেইনের পিছু পিছু ঘরে ঢুকল। তাই নাকি? বলল ও, আমার তো ধারণা ছিল কোম্পানির সঙ্গে তোমার ঠিক বিরোধ নেই।
এসব কথা বলে না! ধমকে উঠলস্যু লেইন। কক্ষনো না! গলা নামাল সে, তারপর আবার বলল, এখানে অন্তত নয়। ভাইয়ের কানে গেলে…!
তার মানে বোনের সঙ্গে পিট লেইনের বনিবনা নেই? কৌতূহলের বিষয়। হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে চুল আঁচড়ে নিল কেড্রিক।
বিরক্তির সঙ্গে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভরা গাল চুলকাল ও। তোমার ভাইয়ের ক্ষুর আছে? এভাবে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
জবাব না দিয়ে ক্ষুর এনে দিল স্যু লেইন। শেভ করে হাত মুখ ধুয়ে আবার ঘরে ঢুকল কেড্রিক। পরিপাটি করে সাজানো কামরা; একটা সাইড টেবিলের ওপর কয়েকটা বই সাজিয়ে রাখা, নকশা তোলা পর্দা ঝুলছে জানালায়, গোটাকতক তামার বাসন দেয়ালে ঝুলিয়ে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল পল কেড্রিক। প্লেটে খাবার বেড়ে দিল স্যু লেইন। গরুর মাংস, ডিম, রুটি আর মধু।
গরু খোঁজা খুঁজছে তোমাকে সবাই, বলল স্যু লেইন, আচ্ছা, ছিলে কোথায়?
স্যু লেইনের বক্তব্যের প্রথম অংশ বিশ্বাস করল কেড্রিক, প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল।
রবার্টস খুন হওয়ার পর ইয়েলো বাট থেকে পালানো ছাড়া উপায় ছিল। লুকিয়ে ছিলাম। পরের ঘটনা কী?
শেষবারের মতো নোটিস দিয়েছে কর্নেল কীথ। ভালোয় ভালোয় আমরা সরে না গেলে শক্তি প্রয়োগ করা হবে। কীথের কথা মানতে অস্বীকার করেছে বব ম্যাকলেনন।
ঠিক করেছে।
ঝট করে কেড্রিকের দিকে তাকাল স্যু লেইন, দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা। তুমি একথা বলছ? তুমি না কোম্পানির লোক?