মাথা দোলাল ডরনি, যেন সন্তুষ্ট হয়েছে। গুন্টার তোমাকে খুব পছন্দ করে। তবে সে একজন সাধারণ পার্টনার ছাড়া আর কিছু নয়।
খর্বাকৃতি স্থূলদেহী এক লোক ভিড় ঠেলে এদিকে এগিয়ে আসছে। থুতনিতে চৌকো ছাঁটের দাড়ি; ঠোঁটে একটা কালো সিগার ঝুলছে।
তার পাশে কেড্রিকের মতো লম্বা আরেকজন লোক। তীক্ষ্ণ চেহারা, চোখজোড়ায় শীতল দৃষ্টি; আদেশ করার জন্যেই যেন তার জন্ম। প্রয়োজনে এই লোক চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিতে দ্বিধা করবে না। এ-ই বোধ হয় কর্নেল লরেন কীথ। অর্থাৎ আর একজনের সঙ্গে পরিচয়ের পালা বাকি রইল-বারউইক। তিন অংশীদারের মধ্যে শুধু বারউইকই নাকি স্থানীয় লোক।
কাছে আসতেই হাসল গুন্টার, ঝকঝকে শাদা দুপাটি দাঁত বেরিয়ে পড়ল। হাত বাড়িয়ে দিল করমর্দনের জন্যে। এই যে, কেড্রিক, শেষ পর্যন্ত এলে! কর্নেল, এর কথাই তোমাদের বলেছি। কেউ যদি পারে একমাত্র ও-ই পারবে কাজটা। প্যাটারসনের গরু নিয়ে গিয়েছিল ও। চোর-ডাকাত আর কোম্যাঞ্চেদের নাকের ডগা দিয়ে গরু নিয়ে গেছে, একটা বাছুর পর্যন্ত খোয়া যায় নি।
মাথা ঝাঁকাল কীথ। ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে চট করে মেপে নিল কেড্রিককে।
ক্যাপ্টেন-আর্মিতে ছিলে নাকি?
হ্যাঁ, গৃহযুদ্ধের সময়।
হুম্। অ্যাপাচি ওঅরে পল কেড্রিক বলে একজন সার্জেন্টের নাম শুনেছিলাম…
আমিই। সেনাবাহিনী ভেঙে দেয়ার সময় সবার র্যাংক কয়েক ধাপ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
রণাঙ্গনে ছিলে কতদিন? কেড্রিকের উপর থেকে চোখ সরাল না কর্নেল কীথ।
চার বছর। দক্ষিণ-পশ্চিমে দুবার পাঠানো হয়েছিল আমাদের।
মন্দ নয়। লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে দেখা যাচ্ছে, বিদ্রূপ-ভরা দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল লরেন কীথ। আমি অবশ্য বার বছর আর্মিতে ছিলাম, নিয়মিত সদস্য হিশেবে।
কীথের আচরণ বিরক্তির উদ্রেক করছে কেড্রিকের। তবু ঠিক করল উপেক্ষা করবে ব্যাপারটা। চুপ করে রইল ও।
শুধু আমেরিকান সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়ে ওর অভিজ্ঞতার বিচার করো না, কর্নেল, বলল গুন্টার। লোক নির্বাচনে তার ভুল হয় নি প্রমাণ করতে চাইছে। ও ফ্রাংকো-প্রুশিয়ান ওঅরে মেয প্রতিরক্ষায় অংশ নিয়েছে। ম্যাকমোহ্যানের সঙ্গে সেডানের যুদ্ধেও ছিল।
তীক্ষ্ণ হলো কীথের দৃষ্টি, পরস্পরের সঙ্গে চেপে বসল ঠোঁটজোড়া। লোকটা ওকে পছন্দ করছে না, কেড্রিক বুঝতে পারছে, গুন্টারকে না থামালে শুরু থেকেই এ লোক ওর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে, কাজ করতে দেবে না সুষ্ঠুভাবে। কিন্তু তার-সুযোগ পেল না ও।
আফ্রিকায় সেকেন্ড অ্যাশ্যানতি ওঅরে ওয়ালসেলির সহকারী ছিল আমাদের পল, গুন্টারের গলায় আত্মপ্রসাদ। তার পর উত্তর তাই শানের তুঙ গ্যানসেদের বিপক্ষে দুবছর ব্যাপী লড়াইতেও অংশ নিয়েছে-ওই যুদ্ধে জেনারেল ছিল।
খাঁটি মার্সেনারী!
এবার আর সহ্য হলো না কেড্রিকের। এত লোকের সামনে কেউ তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইবে এটা সে মেনে নিতে পারে না। ঠিক করল। কর্নেলের অহঙ্কারে একটু খোঁচা দেবে, লোকটা বেশি বাড়াবাড়ি করছে। নিজের লড়াই ভাড়াটে লোকদের দিয়ে করানোর রেওয়াজ পৃথিবীর সব দেশেই আছে, কী বলো?
প্রথমে লাল পরক্ষণে রক্ত সরে শাদা হয়ে গেল কর্নেল কীথের মুখ। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই দশাসই চেহারার এক লোক ভিড় ঠেলে সামনে এসে দাঁড়াল।
তুমি গুন্টার? চড়া গলায় জিজ্ঞেস করল লোকটা। তুমি কেন এখানে এসেছ আমরা জানি। কিন্তু শুনে রাখো, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বহু কষ্টে ওখানে সংসার গড়ে তুলেছি আমরা। অত সহজে আমাদের জমি কেড়ে নিতে পারবে না। আমরা লড়ব!
কেউ জবাব দেয়ার আগেই কীথ আর গুন্টারের পেছন থেকে লোকটার সামনে চলে এল ডরনি শ। গোলমাল করার খায়েশ হয়েছে আঁ? এখনই পিস্তল বের করতে চাও?
ডরনি শ নিচু, প্রায় অস্পষ্টভাবে কথাগুলো বললেও আতঙ্কে যেন কুঁকড়ে গেল লোকটা। আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুহাত তুলে এক কদম পিছিয়ে গেল। তোমাকে কিছু বলি নি আমি, ডরনি! আশপাশে তুমি আছ, জানতাম না!
তা হলে ভাগো! খেঁকিয়ে উঠল ডরনি। শান্ত ভাব খসে পড়েছে চেহারা থেকে, হিংস্র দেখাচ্ছে। লোকটার দুচোখে খুনের নেশা জেগে উঠতে দেখে হতবাক হয়ে গেল কেড্রিক।
ভাগো! আবার বলল ডরনি। বাঁচতে চাইলে, আর কক্ষনো এ-মুখো হবে না।
ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে হোঁচট খেল লোকটা। চট করে ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে পড়ল। জনতার দিকে তাকাল পল কেড্রিক, ভাবলেশহীন চেহারায় তাকিয়ে আছে সবাই, কারও কারও দৃষ্টিতে ঘৃণা, ঝরছে; কিন্তু শুভেচ্ছা বা বন্ধুত্বের আভাস নেই কারও মাঝে। ভুরু কুঁচকে উঠল কেড্রিকের, ঘুরে দাঁড়াল।
বাহু আঁকড়ে ধরে ওকে থামাল গুন্টার। কীথের সঙ্গে ওর মন কষাকষি শুরু হয়েছে বুঝতে পেরেছে সে। এবার এই গোলমালের ফলে ওদের আলাপে বাধা পড়ার সুযোগে কীথের সঙ্গে ওর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। বুঝতে পারছ, কাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে? বলল গুন্টার। এই লোকটার নাম পিটার্স। ও অবশ্য তেমন বিপজ্জনক নয়। তবে ওদের মধ্যে কিছু ভয়ঙ্কর লোকও আছে, চালু বন্দুকবাজ। সবাই তো আর পিটার্সের মতো গবেট হতে পারে না! চল, বারউইকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।
গুন্টারের পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল কেড্রিক, অন্যপাশে এগোচ্ছে কীথ। মুহূর্তের জন্য একবার পেছনে তাকাল কেড্রিক, ডরিন শকে দেখা গেল না কোথাও। স্পষ্ট বুঝতে পারছে কেড্রিক, ওর সহকারী ডরিন শ জাত খুনী। এই ধরনের লোকদের চিনতে ভুল হবার কথা নয় ওর।