চমকে উঠল গুন্টার, অস্বস্তির সঙ্গে সামান্থার দিকে তাকাল। কী বাজে বকছ?
বাজে বকছি না, মামা। সত্যি কথা বলছি। ওই সুদর্শন লোকটার আসল চেহারা আমি চিনি। ওর মতো স্বার্থপর লোক আর দুটি পাবে না। নাহ্, মানতেই হয়, চমৎকার সব সঙ্গীসাথী বেছে নিয়েছ তুমি। ঘুরে দাঁড়াল সামান্থা। ক্যাপ্টেন পল কেড্রিকের খোঁজ পেলে আমাকে জানিয়ে, ঠিক আছে?
ঘরে চলে গেল সামান্থা।
ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইল গুন্টার। তিক্ত কণ্ঠে বিড়বিড় করে কী যেন বলল। একেবারে মায়ের স্বভাব পেয়েছে মেয়েটা! সত্যি কথাটা কীভাবে যেন জেনে ফেলে। এবারও ভুল হয় নি। পুরো ব্যাপারটা ধীরে ধীরে কুৎসিত চেহারা নিতে শুরু করেছে। কীথের চেয়ে বারউইকের ওপরই বেশি অসন্তুষ্ট গুন্টার। অদ্ভুত, স্থূলদেহী ওই নোংরা লোকটা যেন মূর্তিমান পিশাচ, ওর হাবভাবে কোথায় যেন একটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে, দেখলেই সাপের কথা মনে পড়ে।
.
পল কেড্রিকের আকস্মিক অন্তর্ধান শুধু সামন্থী ফক্সকেই চিন্তায় ফেলে দেয় নি।
শহর প্রতিরক্ষা দলের অঘোষিত নেতা বব ম্যাকলেনন ইয়েলো বাটের সীমান্তে জীর্ণ র্যাঞ্চ হাউসে পিটার সেগাল, বার্ট উললিয়ামস, ডাই রীড এবং পিটলেইনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। মু। লেইনও আছে সভায়। একটু পেছনে বসেছে সে। কালো চোখে দেখছে সবাইকে, প্রতিটি শব্দ গিলছে।
অবাক কাণ্ড! বিরক্তির সঙ্গে বলল ম্যাকলেনন। লোকটা গেল কোথায়? কসম খেদার, নিজের চোখে ওকে বক্স ক্যানিয়নে ঢুকতে দেখেছি। ওদিক দিয়ে বেরোনোর কোনও রাস্তা নেই। আকাশে উড়ে গিয়ে না থাকলে ক্যানিয়নেই তাকে পাওয়া যাওয়ার কথা!
নিজেই তো দেখলে, শুকনো গলায় বলল সেগাল নেই! স্রেফ হাওয়া হয়ে গেছে।
সেটা অসম্ভব নয়, মন্তব্য করল ডাই রীড। পল কেড্রিক ক্ষিপ্র লোক, হাত মাথা দুটোই সমান চলে, পাইপ বের করে আস্তে আস্তে তামাক ভরতে শুরু করল সে। ওর ওপর হামলা চালানো ঠিক হয় নি, বলে চলল, রীভ, ওকে আমি চিনি, ভালো ছেলে। আমাদের সম্পর্কে জানতে এখানে এসেছে বলে থাকলে, মিথ্যে বলে নি। বাজি রেখে বলতে পারি রবার্টসের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ও কিছুই জানত না।
বিশ্বাস করতে পারলে ভালো হত, বলল ম্যাকলেনন। ওকে আমার ভালো লেগেছে। শত্রুপক্ষে একজন ভালো লোক থাকলে আমাদেরই সুবিধে। অন্তত কিছুটা হলেও ঝামেলা কমত, এ-সবের অবসানও ঘটতে পারত।
কিন্তু এখন ডরনি শকে ঠেকানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ব্যাটা আস্ত শয়তান, বলল সেগাল, শেয়াল যেমন মুরগী মারে তেমনিভাবে মানুষ খুন করে ও।
কেড্রিক সেদিন ন্যায়সঙ্গতভাবেই লড়েছিল আমার সঙ্গে, বলল বার্ট উইলিয়ামস। ওর ওপর আমার কোনও রাগ নেই।
বললাম তো, কেড্রিক ভালো ছেলে, বলল ডাই রীড়। ছেলেবেলা থেকে ওকে চিনি। আমার অন্তত ভুল হতে পারে না। ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই আমি। যে ওর খোঁজ দিতে পারবে, পঞ্চাশ একর জমি দেব তাকে!
.
ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে হামলা হলো। চোখের পলকে আক্রমণ চালাল ওরা। গিরিখাদের মুখ থেকে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এল অশ্বারোহীদের দল, ইয়েলো বাটের ধূলি-ধূসর রাস্তায় পৌঁছেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু, করল। সেই সাথে ডিনামাইট বিস্ফোরণের প্রচণ্ড আওয়াজে কানে তালা লাগল। তারপর আচমকা, যেমনি এসেছিল, তেমনি চলে গেল ওরা। দেখা গেল দুজন লোক পড়ে আছে রাস্তায়।
মাস্ট্যাংয়ের রাস্তায় পিটার্সকে হুমকি দিয়েছিল ডরনি শ, সেই পিটার্স এদের একজন। তিনটে গুলি খেয়েছে বুকে, মাটিতে পড়ার আগেই মারা গেছে বেচারা। অপমানের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল পিটার্স। অশ্বারোহীদের মাঝে ডরনি শকে দেখেই অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল, কিন্তু গুলি করার সুযোগ পায় নি।
অন্যজনের উরু আর বাহুতে গুলি লেগেছে, লোকটা সুইডিশ, মাত্র বছর দুএক হলো এখানে এসেছে।
যত্নের সঙ্গে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল ওরা। পাহারাদারের অজান্তে গিরিখাদের মুখে পৌঁছে গেছে। এ-রকম সময়ে আক্রমণ হতে পারে কারও মাথায় আসে নি। অঘোরে ঘুমোচ্ছিল প্রহরী। হঠাৎ ধড়মড় করে জেগে ওঠে সে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের ঘায়ে জ্ঞান হারিয়েছে আবার। তবে ওর কপাল ভালো, গুরুতর কোনও আঘাত পায় নি।
দুটো ডিনামাইট বিস্ফোরিত হয়েছে ইয়েলো বাটে। একটা জেনারেল স্টোরে, দরজা আর বারান্দা উড়ে গেছে; অন্যটি ফেটেছে দুটো দালানের মাঝামাঝি জায়গায়, ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।
প্রথম রাইফেলের আওয়াজ পেয়েই খাদ থেকে বেরিয়ে এল কেড্রিক। আগেই ঘোড়ার পিঠে জিন চাপিয়ে রেখেছিল। হঠাৎ পালানোর সুযোগ পেয়ে গেল! গোলাগুলির শব্দে ক্যানিয়নের মুখের পাহারাদাররা শহরের দিকে ছুটে গেছে। চট করে খাদ থেকে ঘোড়া বের করে ক্যানিয়নের মুখে চলে এল পল। শহরের ওদিকে বালির মেঘ দেখা যাচ্ছে। ক্যানিয়ন থেকে বেরিয়ে ডানে বাঁক নিল ও, এগোল মেসার গা ঘেঁষে।
আবার মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া লাগল গায়ে।
০৬. মাস্ট্যাংয়ে ফিরল না পল কেড্রিক
মাস্ট্যাংয়ে ফিরল না পল কেড্রিক। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে, সেটা সফল করতে হবে। উত্তর-পশ্চিমে বাঁক নিয়ে ইয়েলো বাট আর মাস্ট্যাংয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলল। এখানকার অধিবাসীদের সম্পর্কে এত কথা উঠেছে যখন, ওদের আবাসস্থল নিজের চোখে দেখতে চায়, ও। জীবন যাপনের কায়দা দেখলে ওদের আসল পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। সকালের কাঁচা রোদে আরামদায়ক উষ্ণতা। এগিয়ে চলল পল কেড্রিক। কিছুক্ষণ পর গতি কমিয়ে আনল ও, হাঁটিয়ে নিয়ে চলা অ্যাপলুসাকে। চারদিকে সতর্ক নজর বোলাচ্ছে।