কিন্তু কেড্রিক ফিরল না ফিরল তাতে ওর কী? ও ভাবছে কেন অযথা? এই কেনর জবাব ও জানে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ও। সেদিন বারান্দায় দেখা হওয়ার পর থেকে কেবলই ঘুরে ফিরে কেড্রিকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। লোকটার ইস্পাত দৃঢ় চেহারা, চওড়া কাঁধ আর তাকানোর ভঙ্গি যেন এখনও চোখের সামনে ভাসছে। জন মামার সঙ্গে যাদের ওঠাবসা তাদের সঙ্গে বিরাট একটা পার্থক্য রয়েছে কেড্রিকের জীবনে প্রথম এমন কাউকে দেখেছে ও।
অজান্তেই কেড্রিকের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করছিল সামান্থা, কিন্তু হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল লোকটা?
বারান্দায় এসে দাঁড়াল জন গুন্টার। চিন্তিত চেহারা, সিগারের গোড়া চিবুচ্ছে।
কী হয়েছে, বল তো? জিজ্ঞেস করল সামান্থা। কোনও অঘটন ঘটল না। তো? ক্যাপ্টেন কেড্রিক কোথায়?
জানি না! উৎকণ্ঠায় তীক্ষ্ণ শোনাল গুন্টারের কণ্ঠস্বর। স্কোয়ার্টারদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, তারপর আর ফেরে নি। ডরনির ওপর কীথের আস্থা থাকলেও ওকে আমি একটুও বিশ্বাস করি না। ভরনি একটা ব্লুক্তপিপাসু পিশাচ। আমরা বোধ হয় একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি, সাম্য। এই সময় কেড্রিককে দরকার ছিল। লোকটার বিচার-বুদ্ধি আছে, মাথা খাটিয়ে কাজ করতে জানে।
ও হয়তো এসকে জড়াবে না বলে ঠিক করেছে। হয়তো বুঝতে পেরেছে, তোমরা যাদের চোর-ডাকাত, খুনী বলছ আসলে মোটেই সেরকম কিছু নয় তারা।
ঝট করে সামান্থা ফক্সের দিকে তাকাল জন গুনার। একথা কার কাছে শুনলে? কৈফিয়ত চাইল সে।
কারও কাছে না। শুনতে হবে কেন? আমার চোখ নেই? এখানে রাস্তায় ঘোরার সময় ওই চোর-ডাকাতের চেহারা নিজের চোখে দেখেছি: ওদের সংসার আছে, ছেলেমেয়ে আছে, রসদপূত্র কেনার জন্যেই এখানে আসে ওঁরা। আমার কাছে ওদের ভদ্রলোক বলেই মনে হয়েছে। এসব আর আমার ভালো ঠেকছেন, মামা, আমার টাকায় এত কাণ্ড ঘটছে ভাবতে পারি না।
আহা! তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না, সামা। তুমি নিশ্চিত থাকো, তোমার যাতে লাভ হয় আমি আর লরেন সেদিকেই খেয়াল রাখব।
আমার লাভের কথা ভাবলে এ-কাজটা ছেড়ে দাও! আবেদন ঝরল সামান্থ। ফক্সের কণ্ঠে। এর তো কোনও প্রয়োজন দেখি না। আমার টাকা পয়সার অভাব নেই। টাকার জন্যে মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করতে হবে এ কেমন কথা? ওরাও মানুষ, ওদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে!
তা তো বটেই! ধৈর্য-চুতি ঘটল গুন্টারের। এ-নিয়ে আগেও বহুবার আলোচনা করেছি আমরা, সামা 1 ওখানে যারা থাকছে তাদের বেশির ভাগই খারাপ লোক। তাছাড়া এমনিতেও ওদের জায়গাটা ছাড়তে হবে। যার দখলেই থাক, ভবিষ্যতে সরকার পুরো জায়গাটা কিনে নেবে। যদি আমাদের দখলে থাকে, প্রচুর টাকা লাভ করতে পারব আমরা। সরকারের কাছ থেকে? নিজের দেশের সরকারের কাছ থেকে? ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে গুন্টারের দিকে তাকাল, সামান্থা। সরকারকে যে ফাঁকি দেয় সে কেমন চরিত্রের মানুষ আমি বুঝি না। স্বীকার করি এ ধরনের লোক আছে, কিন্তু আমার মামাও সেই দলে, কোনওদিন ভাবতে পারি নি।
হাসিয়ো না আমাকে, সামা। ব্যবসার ব্যাপার, তুমি কী বোঝ? এসব বুঝতে হলে বাস্তববাদী হতে হয়!
তা ঠিক। কিন্তু এই মুহূর্তে এমন কিছু জিনিসের কথা মনে পড়ছে যেগুলো অনেকের কাছেই অবাস্তব মনে হবে, অথচ লক্ষ টাকার বিনিময়েও ওসব পাওয়া যায় না। নাহ, উঠে দাঁড়াল সামান্থা ফক্স, আমি ভাবছি, তোমাদের ব্যবসা থেকে আমার টাকা উঠিয়ে নেব। এখানে কাছাকাছি কোথাও ব্লাঞ্চ কিনব। আমি আর তোমাদের সঙ্গে নেই।
অসম্ভব! অধৈর্যভাবে চেঁচিয়ে উঠল জন গুন্টার। সব টাকা ব্যবসায় খাটানো হয়ে গেছে। এখন কোনওমতেই টাকা দেয় যাবে না। শোনো, সামা, লক্ষ্মী মেয়ের মতো আমার ওপর বিশ্বাস রাখো, যেমন এতদিন রেখেছ!
হ্যাঁ, এতদিন বিশ্বাস করেছি, কারণ তোমাকে দিয়ে খারাপ কাজ হতে পারে ভাবি নি। সরাসরি গুন্টারের দিকে তাকাল সামান্থা। তুমি খুব ভালো করেই জানো, যা করতে যাচ্ছ, কাজটা ভালো নয়, বলে চলল ও, মনে রেখো, লড়াই ছাড়া ওদের নড়ানো যাবে না। ভয় দেখালেই সুড় সুড় করে ইঁদুরের গর্তে পালাবে ওরা-এই তো ভেবেছিলে? তোমাদের ধারণা ভুল। বব ম্যাকলেননকে দেখেছি আমি। ভয়-ভীতিতে কাবু হওয়ার মতো লোক সে নয়। লরেনের ভাড়াটে খুনীদের দিয়ে কাজ হবে না।
কে বলেছে, ওরা খুনী? অস্বস্তির সঙ্গে প্রতিবাদ করল জন গুন্টার। সামান্থার চোখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না তার। একটু বেপরোয়া এবং রগচটা হতে পারে, কিন্তু খুনী নয়।
তাহলে ডরনি শ? এরই মধ্যে বারজন মানুষকে খুন করে নি সে? দেখতে সুন্দর আর অল্প বয়সী হলে কী হবে, লোকটা শেয়ালের চেয়েও ধূর্ত। ওকে দেখলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যায় সবাই। উঁহু, এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই, মাম!। এভাবে চালালে শিগগিরই নিরপরাধ মানুষ হত্যাও বিনা আপত্তিতে মেনে নিতে শুরু করবে তুমি।
লরেন অব্য এসব নিয়ে ভাবে না। সে বরাবর ঠাণ্ডী স্বভাবের মানুষ। তুমি সেদিন জানতে চেয়েছিলে ওকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি কোথায়। এই স্বভাবের জন্যেই ওকে আমার অপছন্দ। হিংস্র বাঘের মতো মেজাজ ওর। স্বার্থ উদ্ধারে বাধা হয়ে দাঁড়ালে আপনজনকে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না, প্রয়োজনে তোমাকেও ছাড়বে না সে।