বিস্ময়করভাবে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল কেড্রিক। যখন ঘুম ভাঙল, অ্যাপলুসার হাবভাবে সতর্ক হয়ে উঠল ও। চোখের পলকে সোজা হয়ে দাঁড়াল। অ্যাপলুসার ঘাড়ে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে ওকে শান্ত করল। সকাল হয়েছে। ওপরে, খানিকটা দূর থেকে মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে।
গুহাটা চুনাপাথরের, প্রায় পনের ফুটের মতো উঁচু, তবে গুহামুখের দৈর্ঘ্য আট ফুটের বেশি হবে না। গুহার খোলা মুখে এসে দাঁড়াল কেড্রিক, যে-পথে এখানে এসেছে, কড়া নজরে সেদিকে তাকাল। যা ভেবেছিল, ক্লিফের মাথার কাছে ওই নচ থেকে নামা পানির তোড়েই এই খাদের সৃষ্টি। বৃষ্টির সময়, সন্দেহ নেই, কানায় কানায় ভরে যায় এটা।
এখানে মাথার ওপরে ডালপালায় খাদের ফাঁক ঢাকা পড়ে গেছে, একটা চ্যাপ্টা পাথর খাদের ওপর সেতু বানিয়ে দিয়েছে। আবার খাদের মুখের দিকে তাকাল কেড্রিক, প্রায় সম্পূর্ণই ঝোঁপের আড়ালে রয়েছে খাদটা বোধ হয় ওকে খুঁজে পাবে না ওরা, ক্ষীণ সম্ভাবনা বেশি কিছু আশা করা ঠিক নয়।
সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে, কিন্তু ধরানোর সাহস হলো না। ধোয়ার গন্ধে ও কোথায় আছে বুঝে যাবে ওরা। কয়েকবার মানুষের গলার আওয়াজ পেল কেড্রিক। দুএকবার খুব কাছে এসেও ফিরে গেল ওরা। গুহার ভেতর চোখ ফেরাল পল। গেল্ডিংটা পানি খাচ্ছে। পরিমাণে সামান্য হলেও, সারারাত গর্তে আবার পানি জমেছে। কেড্রিকের ক্যান্টিন এখনও আধাআধি ভরা, এবং পানি কোনও সমস্যা নয়।
.
হাঁটুর ওপর রাইফেল ফেলে বসে আছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। মাঝে মাঝে খাদের গভীরে তাকাচ্ছে। বৃষ্টির পানি এখান থেকে কোথায় যায়? শহরের কাছে গিরিখাদে? তা যদি হয়, এই খাদের কথা শহরবাসীদের অজানা থাকার কথা নয়।
সময় গড়িয়ে চলল। হঠাৎ কখনও মানুষের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলেও ওর ধারেকাছে এল না কেউ। খাদটার কথা বোধ হয় কেউ জানে না। কিছুক্ষণ পায়চারি করল কেড্রিক। একটা ঢিবির গা থেকে কয়েক গোছা ঘাস নিয়ে ফিরে এল। অ্যাপিলসাকে দিল ওগুলো। ঘাস খেতে পেয়ে খুশি হয়ে গেল ঘোড়াটা। ব্যাগ থেকে কয়েক টুকরো জার্কি বের করে চিবুতে লাগল কেড্রিক। এক কাপ কফি হলে দারুণ হত, ভাবল।
কিছুক্ষণ পর আবার খাদ ধরে সামনে এগিয়ে গেল কেড্রিক। একটু এগোতেই দেখল, হঠাৎ আরও গভীর হয়ে নীচের দিকে নেমে গেছে ওটা। এখন আর কথাবার্তার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। থামল ন পল। এক জায়গায় এসে আবার ঈষৎ বাঁক নিয়েছে খাদ, পানির তোড়ে বড়সড় একটা গামলার মতো গুহা তৈরি হয়েছে, গুহার ভেতরে আবার বাঁক নিয়েছে স্রোতের পানি, ঢাল বেয়ে আরও গভীরে ছুটে গেছে।
এত দূরে আসার পর আর লোভ সামলাতে পারল না পল কেড্রিক, বড় গুহাটার দিকে এগিয়ে গেল। বিশাল গুহা পাহাড়ের পেটের ভেতর ঢুকে গেছে। এখানে ওখানে পাথুরে তাক, কিন্তু ওগুলোর পানির নীচে কখনও ডুবেছে বলে মনে হলো না। গুহার তলায় একটা ছোট্ট পুকুর মতো রয়েছে, পুকুরের তলদেশে বিরাট বিরাট ফাটল, সমস্ত পানি ওই ফাটলগুলো দিয়েই বেরিয়ে যায়।..
যদিও খুব একটা ভেতরে ঢোকে নি, কিন্তু বেরুনোর দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেল কেড্রিক; বাতাস স্থির হয়ে আছে। তবু, এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে কেড্রিকের মনে হলো, সঙ্গে যথেষ্ট খাবার থাকলে অনায়াসে কয়েক সপ্তাহ এখানে লুকিয়ে থাকা সম্ভব। ঢালের গোড়ায় খাদের মুখ দেখতে না পেলে এটার কথা জানতে পারবে না কেউ।
ক্লিফের মাথা থেকে নেমে আসা পানি শহরের পাশে গিরিখাদের দিকে না গিয়ে এই গুহাতেই আসে।
মন্থর গতিতে বেলা গড়িয়ে চলল। সিগারেট খাওয়ার জন্যে দুবার বড় গুহার কাছে চলে এল কেড্রিক। কয়েক ঘণ্টা পর পালানোর একটা চেষ্টা করবে ও। কিন্তু আঁধার নামার পরে খাদ থেকে বেরিয়ে ঢালের গোড়ায় দাঁড়িয়ে ক্যানিয়নের মুখের দিকে তাকাতেই একটা অগ্নিকুণ্ড চোখে পড়ল ওর। দুজন লোক বসে আছে আগুনের পাশে। ওদের কাছে রাইফেল আছে। ও এদিকে কোথাও আছে, অনুমান করে নিয়েছে ওরা, জানে খাবারের অভাব হলে আপসে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে।
এতক্ষণে ওর নিখোঁজ সংবাদ নিয়ে মাস্ট্যাংয়ে ফিরে গেছে ডরনি, শ। ইয়েলো বাটের রবার্টকে হত্যা করার কথাও বারউইককে জানাবে সে। ওর লোকজনই রবার্টসের মৃত্যুর জন্য দায়ী, এ ব্যাপারে কেড্রিক নিঃসন্দেহ। কিন্তু শহরের কাছাকাছি এরকম নগ্ন সন্ত্রাস গুন্টার কিংবা কীথ কি মেনে নেবে? বিপক্ষীয় কেউ দেখে থাকলে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হবে ওদের।
ঘুরে চুড়ার দিকে উঠে-যাওয়া ঢালটা পরখ করল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ঘোড়ার পিঠে এটা বেয়ে ওঠা অসম্ভবই বলা যায়। অবশ্য সুস্থ সবল একজন লোকের পক্ষে এটা বেয়ে উঠে যাওয়া কঠিন নয়, অ্যাপলুসাটা তো পাহাড়ী ঘোড়াই…ঝুঁকি নিয়ে দেখা যেতে পারে…ঢালের শেষ মাথায় ওর অপেক্ষায় লোক বসে না থাকলে বেরিয়ে যেতে পারবে। হাতের কাছে একটা মাটির তুপ থেকে এক মুঠো ঘাস ছিড়ে নিয়ে অ্যাপলুসার কাছে ফিরে এল কেড্রিক। ঘোড়াকে ঘাস দিতেই মহানন্দে চিবুতে শুরু করল সে। তাকিয়ে রইল ও।
অস্বস্তিতে ভুগছে সামান্থা ফক্স।
মামার কাছে ইয়েলো বাটের সংবাদবাহককে আসতে দেখেছে ও, ফিরে যেতেও দেখেছে। বারউইক কী জবাব দিয়েছে জানে। লোকটা বিদায় নেয়ার পর দিন দুপুরে সদলে ফিরে এসেছে ডরনি শ। কিন্তু ক্যাপ্টেন কেড্রিক ফেরে নি ওদের সঙ্গে।