ধরো শালাকে! চেঁচিয়ে উঠল একজন। ধরো! আমার কাছে দড়ি আছে!
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে কেড্রিক, জানে, এখন এদের কিছু বোঝানো অসম্ভব। হয়তো পরে বুঝতে পারবে রবার্টসের হত্যায় ওর হাত ছিল না, ওর অজান্তে ঘটেছে ব্যাপারটা; কিন্তু এই মুহূর্তে কারও কথায় কান দেবে না। লোকটা চেঁচিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্যাৎ করে স্যালুন থেকে বেরিয়ে এল কেড্রিক, হ্যাচকা টানে হিচরেইল থেকে ঘোড়ার বাধন খুলে লাফিয়ে স্যাডলে চেপে বসল। চমকে উঠে দালানকোঠার মাঝ দিয়ে ছুটতে শুরু করল অ্যাপলুসা। #
পেছন থেকে চিৎকার আর খিস্তি ভেসে আসছে। গুলি করল কেউ, কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেল একটা বুলেট। দুটো দালানের মাঝখানে ঘোড়া ঢোকাল পল কেড্রিক, পরক্ষণে বুঝতে পারল, পালাতে গিয়ে ফঁদে পা দিয়ে ফেলেছে। সামনে, বড়জোর দুশো গজ দূরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে নিরেট পাথুরে দেয়াল। দেয়ালের নীচের দিকে ফাঁক-ফোকর আছে কি না বোঝার উপায় নেই। এখন গিরিখাদের দুটোমুখেই সশস্ত্র প্রহরী পাঠিয়ে দেবে ওরা, ওদিকে যাওয়া আর সম্ভব নয়। বাঁক নিয়ে অন্ধকারে সোজা ইয়েলো বাট এর দিকে ঘোড়া ছোটাল কেড্রিক।
শহরে ঢোকার পথে মেসার গোড়ায় ইংরেজি হরফ ভি আকৃতির একটা ফাঁক দেখেছিল ও। ওদিক দিয়ে বেরুনো গেলেই হয়! হয়তো বক্স, ক্যানিয়নও হতে পারে ওটা। সেক্ষেত্রে ওখানে ঢোকার অর্থ হবে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেয়া।
গতি কমিয়ে আনল কেড্রিক। শব্দ করা চলবে না। শব্দ শুনলে সহজেই ওর অবস্থান আঁচ করে ফেলবে প্রতিপক্ষ। কোণঠাসা করে ধরে ফেলবে। সমভূমিটা ছোট, গিরিখাদ ছাড়া বেরুনোর পথ মাত্র দুটো এবং ওদিকে কড়া নজর রাখা হবে নিঃসন্দেহে।
অনেক কাছে চলে এসেছে মেসা। অতল গহ্বরের মতো কালো আঁধারে ধীর গতিতে এগোচ্ছে অ্যাপলুসা আর কয়েক মিনিট, তারপরই নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছুতে পারবে।
অ্যাপলুসা ক্লান্ত, সারাদিন পথ চলেছে। বন্ধুর, পথে ওর মতো বিশালদেহী একজন লোককে এতদূর বয়ে এনেছে। তরতাজা ঘোড়া নিয়ে ধাওয়াকারীদের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে পারবে না। প্রাণ বাঁচানোর এখন মাত্র একটা উপায় আছে: ওদের ধাঁধায় ফেলতে হবে, যাতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় আদায় করা যায়। কিন্তু যেভাবেই হোক, ভোর হবার আগেই পালাতে হবে ওকে। দিনের আলোয় পুরো এলাকা চষে ফেলবে ওরা, ওর অবস্থান ফাস হয়ে যাবে।
সামনে হাঁ করে আছে ক্যানিয়নের মুখ। ক্যানিয়নের দুপাশের দেয়াল উঁচু না হলেও এত খাড়া যে ঘোড়া নিয়ে এই দেয়াল বেয়ে উঠে পালানো সম্ভব, হয়।
এখন আর চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কেড্রিক জানে, ওকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করবে ওরা, গিরিখাদের দিকে যারা নজর রেখেছে, এতক্ষণে অন্যদের জানিয়ে দিয়েছে, ওদিকে যায়নি ও। এখনও আটকা পড়ে আছে। হতে পারে ওদিকে আদৌ কোনও পাহারা নেই, কিন্তু কাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে জানে পল; আসার সময় কাউকে পাহারা দিতে না দেখলেও এখন পাহারা থাকবে ধরে নেয়াই ভালো।
সংকীর্ণ ক্যানিয়ন। খুব সাবধানে এগোল কেড্রিক, কিন্তু খানিকটা এগোনোর পরই দেখল ক্যানিয়নের শেষপ্রান্তের দেয়াল আকাশ, ছুঁয়েছে-কালো, নিরেট। মুখ গলা শুকিয়ে এল ওর, থমকে দাঁড়াল অ্যাপলুসা। ঝিম মেরে বসে রইল পল। ঘোড়াটা হাঁপাচ্ছে। একটা নিরেট দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ও, ফাঁদে পড়েছে।
পেছনে একটা আলো জ্বলে উঠেই নিভে গেল। চিৎকার করে উঠল কেউ। দেশলাই জ্বালিয়ে ট্র্যাক খুঁজছিল ওরা, পেয়েছে। আর কিছুক্ষণ, তারপরেই এসে পড়বে! ধরা পড়ে যাবে ও। কিছুই বুঝতে চাইবে না ওরা, মরণফাঁদে আটকা পড়েছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক! নিরুপায়!
০৫. অনড় হয়ে স্যাডলে বসে রইল কেড্রিক
অনড় হয়ে স্যাডলে বসে রইল কেড্রিক। কান খাড়া। নুড়ি পাথর গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ ভেসে এল। বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখন, অনর্থক ঝুঁকি নেয়ার উপায় নেই। ফঁদে আটকা পড়ে গেছে ও। কিন্তু ফাঁদ থেকে বেরুতে গিয়ে কাউকে হত্যা করতে চায় না, এবং মরারও ইচ্ছে নেই।
নিঃশব্দে স্যাডল থেকে নামল কেড্রিক। সতর্ক। এই মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে গেলে বিপদ হবে। হয়তো কিছুই করার উপায় নেই, তবু অভিজ্ঞ মানুষ ও, অতীতে বহুবার এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছে, কিন্তু শেষ, পর্যন্ত ঠিকই সব বিপদকে পেছনে ফেলে আসতে সক্ষম হয়েছে। ঠাণ্ডামাথায় ধীরে সুস্থে ভাবতে পারলে এবারও একটা না একটা উপায় বেরোবেই।
অ্যাপলুসার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে চারপাশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জরিপ করল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ইয়েলো বাটের বিশাল কাঠামোর নীচে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার এতক্ষণে চোখে সয়ে এসেছে। মাথা নামিয়ে পায়ের দিকে তাকাল ও। বালির ধূসর একটা রেখা দেখা যাচ্ছে, কাছেই বেশ বড় বড় বোল্ডার আর ছড়ানো ছিটানো ঝোঁপের মাঝে একটা ফাঁকের ভেতর হারিয়ে গেছে ওটা। ঘোড়া নিয়ে ফোকরটার দিকে পা বাড়াল কেড্রিক।
ফোকরটা এত সংকীর্ণ যে ঘোড়ার্টার এগোতে কষ্ট হচ্ছে। মোটামুটি ফুট বিশেক এগোনোর পর সামান্য চওড়া হলো। বোল্ডারগুলো এখানে কিছুটা ছোট, কোমর সমান উঁচু, আগাছা জন্মেছে ওগুলোর ওপর। অপালুসাও বিপদ টের পেয়েছে বোধ হয়, প্রায় নিঃশব্দে আলতো পায়ে এগোচ্ছে।