অবশ্য, আবার বলল ও, অন্যেরা কী করবে না করবে জানি না, তবে আমার সিদ্ধান্ত ওদের জানিয়ে দেব।
যুক্তিসঙ্গত কথা, সায় দিল ম্যাকলেনন। বেশ, ঠিক আছে, আমাদের কথা বলছি এবার। এখানকার জমিজমার মালিক আসলে সরকার। তবে কিছু অংশ নাভাহহা আর উতে ইন্ডিয়ানরা ওদের বলে দাবী করে। ওদের সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে, তবেই এখানে থাকতে পেরেছি। চার-পাঁচজন আছে, দশবছরেরও বেশি হলো এখানে বসবাস করছে। বাকিরা কমপক্ষে তিনচার বছর ধরে আছে।
এখানে ঘর-বাড়ি বানিয়েছি আমরা, ঝর্নাগুলো পরিষ্কার করেছি, কিছু কিছু জায়গা ঘিরে নিয়ে চাষাবাদ করেছি। এখানে আমাদের সংসার আছে, ছেলে-মেয়ে আছে। কিন্তু তোমাদের কোম্পানি এখন আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া করার চেষ্টা করছে; আমাদেরকে বঞ্চিত করতে চাইছে।
আইন অনুযায়ী ছয়মাস আগে নোটিস জারি করা উচিত ছিল। অর্থাৎ কারও কাছে খাস জমি বিক্রি করার অন্তত ছয়মাস আগে সরকারকে নোটিস জারি করতে হয়। সেই জমি, আমাদের জানা মতে, জনবসতিহীন হতে হবে। কিন্তু এ-জায়গাটা তা নয়। দেখতেই পাচ্ছ, আমরা এখানে বাস করছি। তার ওপর, মাত্র পাঁচমাস আগে নোটিস জারি করা হয়েছে; এমন জায়গায় সাঁটানো হয়েছে সেটা, যেখানে সচরাচর মানুষের চলাচল নেই! নোটিসটা এত ছোট ছোট হরফে ছাপা ম্যাগনিফাইং গ্লাস ছাড়া পড়ে কার সাধ্যি।
যাই হোক, মাত্র মাসখানেক আগে কীভাবে যেন আমাদের একজনের চোখে পড়ে যায় ওটা, আইনের প্যাচাল কথাবার্তা থেকে অর্থ বের করতেই তার কয়েকদিন লেগে যায়, তারপরই হাউমাউ করে আমার কাছে ছুটে আসে সে এখন সত্যি ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্যে সরকারের কাছে লোক পাঠাব, অত টাকা কোত্থেকে পাব, বল? সুতরাং রুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করা ছাড়া উপায় নেই। সেদিকেই জোর দিচ্ছি আমরা। কোম্পানি আমাদের উৎখাত করতে, চাইলে, যদিও তা পারবে বলে মনে হয় না, এখানকার প্রতিটি ধূলিকণা রক্ত দিয়ে কিনতে হবে! বিড়বিড় করে ম্যাকলেননের কথায় সায় দিল সবাই। ভুরু কুঁচকে আবার কামরার চারদিকে নজর বেলাল কেড্রিক। ডরনি শ ঠিকই বলেছে। প্রয়োজনে লড়াই করে মরবে এরা। ম্যাকলেনন আর সেগালের মতো লোক নেতৃত্ব দেয়ায় এদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল হবে।
আইনের দিক থেকে কোম্পানি অবশ্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে গেছে এরা। এখনই যদি কাউকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়, গন্তব্যে পৌঁছুতে কমপক্ষে সপ্তাতিনেক সময় লাগবে তার। এর পর লালফিতার বাধা পেরিয়ে উপযুক্ত লোকের কাছে গিয়ে জমি বিক্রি ঠেকানো যাবে-তার আশাও ক্ষীণ।
ফটকাবাজিতে নেমেছে বারউইকরা, জানাল বব ম্যাকলেনন, গুজব রটেছে; এখানে নাকি শিগগিরই ইন্ডিয়ান রিজারভেশন প্রতিষ্ঠা করা হবে। কথাটা যদি সত্যি হয়, এখন জমি কিনতে পারলে পরে সরকারের কাছেই আবার চড়া দামে এই জমি বিক্রি করে অনেক টাকা মুনাফা লুটতে পারবে ওরা।
অথবা তোমরা, বলল পল কেড্রিক। দুদিকের পাল্লাই ভারি দেখতে পাচ্ছি, ম্যাকলেনন। কোম্পানির পক্ষে একটা শক্ত যুক্তি আছে। ফেডারেল সরকার এখানে রিজারভেশন প্রতিষ্ঠা করলে তোমাদের এমনিতেই বিদায় নিতে হবে।
সেটা যখন হবে তখন দেখা যাবে, বলল পিটার সেগাল। এই মুহূর্তে কোম্পানিকে ঠেকানোই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা ফটকা কারবারী নই। এবং পিস্তলবাজও নই।
আরও একজন লোক ঢুকল স্যালুনে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিনতে পারল পল কেড্রিক। বার্ট, মাস্ট্যাংয়ের রাস্তায় একে পিটিয়েছিল ও। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কামরা জরিপ করল বাট।
কেউ না? আস্তে করে জিজ্ঞেস করল কেড্রিক। পিট লেইন সম্পর্কে কী যেন শুনছিলাম?
লেইন মোটেই খারাপ না! তেতে উঠল রেড। ওর মতো ভালো মানুষ পাওয়া কঠিন।
ম্যাকলেনন কিংবা সেগাল কিছুই বলল না। অস্বস্তির সঙ্গে নড়েচড়ে দাঁড়াল সেগাল। অর্থাৎ, একটা ব্যাপারে মতানৈক্য আছে এদের। লেইন সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে, ভাবল পল কেড্রিক।
তো, দৃঢ়কণ্ঠে বলল ও, ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে একটু চিন্তাভাবনা করতে হবে। তার আগে গোলমাল করার দরকার নেই। তোমরা রাজি থাকলে। বল, আমি আমার লোকদের শান্ত রাখার ব্যবস্থা করি।
আমরাও ঝামেলা চাই না, বলল বব ম্যাকলেনন। আমরা যতক্ষণ শান্তিতে আছি, কোম্পানির লোকজন এখন থেকে দূরে থাকছে, আমাদের দিক থেকে গোলমাল হবে না।
দরজার দিকে পা বাড়াল কেড্রিক, কিন্তু বারটেন্ডারের ডাকে থামতে হলো।
পয়সা ফেলে যাচ্ছ, তুমি, শুকনো গলায় বলল সে।
ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল কেড্রিক, হাসল, তারপর খুচরো পয়সা নিয়ে পকেটে রাখল। আবার দেখা হবে, বলে পা বাড়াল।
ঠিক এই সময় আচয়কা দড়াম করে দরজা খুলে গেল, টলমল পায়ে ভেতরে ঢুকল এক লোক। অন্য একজন লোককে ধরে রেখেছিল, মেঝেয় ফেলল তাকে।রবার্টস! বলল লোকটা। ওকে ওরা খুন করেছে।
একসঙ্গে মেঝের লোকটার দিকে তাকাল কামরার সবাই। একাধিকবার গুলি করা হয়েছে বেচারাকে, তারপর ঘোড়ার পায়ের নীচে পিষ্ট করেছে; ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে লাশ। পেটের ভেতরে পাক দিয়ে উঠল কেড্রিকের, বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল, কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে যেন।
অভিযোগ ভরা দৃষ্টিতে ওকে দেখছে সবাই। ম্যাকলেননের চেহারা আড়ষ্ট, তাতে অবিশ্বাসের ছাপ; সন্ত্রস্ত সেগাল। রেডসহ অবশিষ্টরা সামনে পা বাড়াল। এই লোকটা! আঙুল তুলে কেড্রিকের দিকে ইঙ্গিত করল রেড, ক্রোধে থর গুর করে কাঁপছে। এখানে দাঁড়িয়ে মিঠে মিঠে কথা রলেছে আর ওর চ্যালারা খুন করেছে আমাদের ববকে!