দেখে, স্যালুনের সবাইকে উদ্দেশ্য করে নরম কণ্ঠে বলল কেকি। গোলমাল করার জন্যে এখানে আসি নি আমি। একটা কাজ করে দেয়ার জন্যে আমাকে ভাড়া করা হয়েছে, তাই দেখতে এসেছি তোমাদের সম্পর্কে যা শুনেছি, সেসব সত্যি না মিথ্যা। তোমাদের বারটেন্ডার লোকটা হয় কালা কিংবা ভদ্রতা জানে না; আমি এক গ্লাস হুইস্কি দিতে বললাম, কথা না শুনে বাজে বকতে শুরু করে দিল। তাই একটু শিক্ষা দিয়ে দিলাম।
এই যে, তুমি, সলিটেয়ার খেলোয়াড়কে বলল কেড্রিক, তোমাকে দেখে তো ভালো লোক বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে এসো, গ্লাসে মদ ঢেলে বারের কিনারে রাখো দেখি। তারপর, দৃষ্টি সরাল না ও, এখানকার প্রত্যেককে এক গ্লাস করে হুইস্কি দাও। বাঁ হাতে, পকেট হাতড়ে একটা স্বর্ণ মুদ্রা বের করে বারের ওপর ছুঁড়ে ফেলল। এই যে, পয়সা মিটিয়ে দিলাম।
এক কদম পিছিয়ে এল, কেড্রিক, তারপর পিস্তল হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখল। নিষ্পলক চোখে ওকে দেখছে সবাই, নড়াচড়া করার সাহস করছে না। ব্যাপারটা সম্ভবত লালচুলো মেনে নিতে পারছে না, বাহাদুরী দেখাতে চাইছে, সে, বুঝতে পারছে কেড্রিক।
অ্যাই, তুমি! আচমকা বলে উঠল ও, বিয়ে করেছ? ছেলেপুলে আছে?
কটমট করে কেড্রিকের দিকে তাকাল লালচুলো, তারপর শুকনো গলায় জবাব দিল, হ্যাঁ, দুটো ছেলে। তাতে তোমার কী?
বললাম না, সহজ কণ্ঠে জবাব দিল কেড্রিক, তোমাদের সম্পর্কে জানতে এসেছি এখানে?
মদ ঢালতে ঢালতে মুখ তুলে তাকাল সলিটেয়ার খেলোয়াড়। কী জানতে চাও, আমাকে জিজ্ঞেস করো। আমি পিটার সেগাল।
তোমার কথা অনেক শুনেছি।
মৃদু হাসি ফুটে উঠল সেগালের ঠোঁটে। হ্যাঁ, বলল সে, তোমার কথাও শুনেছি আমরা।
নিঃশব্দে সবাইকে মদ ঢেলে দিল পিটার সেগাল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে স্যালুনের প্রতিটি লোক। মদ বিতরণ শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়াল সেগাল।
বন্ধুরা, বলল সে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে খামোকা প্রাণনাশের ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। ও কী বলতে চায় আগে শোনা যাক। পছন্দ না হলে আমল না দিলেই হবে।
ধন্যবাদ, সেগাল, স্যালুনের চারপাশে নজুর বোলাল কেড্রিক। নিষ্করুণ চেহারায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে দুজন, দৃষ্টিতে বিদ্বেষ; একজনের চোখে নিখাদ কৌতূহল; পেছনের দরজায় এক লোক দাঁড়িয়ে, রুক্ষ চেহারা, অস্থির দৃষ্টি, প্রাক্তন আউট-ল ক্লসনের মতোই রগচটা বলে মনে হচ্ছে লোকটাকে।
আমি যেই কোম্পানির চাকরি করছি, বলল কেড্রিক, সরকারের কাছ থেকে এদিককার সব জমি কিনে নিতে যাচ্ছে ওরা। কোম্পানির নাম কীথ গুন্টার অ্যান্ড বারউইক। নিউ অরলিন্সে আমাকে কাজ দেয়ার সময় ওরা জানিয়েছিল, একদল আউট-ল, ছিচকে চোর আর ছিনতাইবাজ গায়ের জোরে জায়গাটা দখল করে রেখেছে। উচ্ছেদ করতে গেলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে, এখানে চোর-ডাকাতের আস্তানা বানাতে চায় ওরা। আমার দায়িত্ব এদের বিতাড়িত করে জায়গাটা কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া। সেই কারণেই এখানে আসা।
পেছনের সারি থেকে মৃদু গুঞ্জন ভেসে এল। সময় নিয়ে গ্লাস খালি করল পল কেড্রিক। তারপর সহজ ভঙ্গিতে সিগারেট বানাতে শুরু করল।
ডান দিকের দরজা ঠেলে দুজন লোক স্যালুনে চুকল। প্রথমজন লম্বায় মোটামুটি কেড্রিকের সমান হবে, মাথায় আলকাতরার মতো কালো চুল, জুলফির কাছে পাক ধরেছে, ধূসর চোখে শীতল দৃষ্টি; চেহারায় দৃঢ়তার ছাপ। কামরার চারদিকে নজর বুলিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল সে।
বব, এ হচ্ছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক, নিচু গলায় বলল পিটার সেগাল। এতক্ষণ ওর কথাই শুনছিলাম। ওকে নাকি বলা হয়েছে, আমরা একদল খুনে ডাকাত, বদমাশ!
বারউইকের কাণ্ড নিশ্চয়ই, বলল ম্যাকলেনন। বলে যাও, কেড্রিক।
বিশেষ কিছু বলার নেই আর। আসলে একজন যোদ্ধা হিসেবে নিজের চোখে জায়গাটা দেখতে চাইছিলাম আমি। মাস্ট্যাংয়ে আসার পর থেকেই এমন কিছু কথা কানে এসেছে, এমন কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি, যাতে করে আমার ধারণা হয়েছে ৰারউইকরা হয়তো মিথ্যে বলে নি। তাই তোমাদের আসল পরিচয় জানতে নিজেই চলে এসেছি। দেখতে চাই, আমাকে যেমন বলা হয়েছে, সত্যি, তোমরা তৃত খারাপ কি না। তা ছাড়া, তোমাদের মতামতও তো জানা দরকার।
কুৎসিত হয়ে গেল লালচুলোর চেহারা। আমরা তোমার কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই, কেড্রিক! কর্কশ কণ্ঠে বলল সে, বুঝতে পারছ কী বলছি? খুনীর দলকে নিয়ে একবার শুধু আসো এখানে, দেখে নেব কয়টা জ্যান্ত ফিরে যেতে পারে!
চুপ করো, রেড! ধমকে উঠল সেগাল। বব কী বলে শোনা যাক।
আহা, কেন পাত্তা দিচ্ছ? রুক্ষ কণ্ঠে বলল রেড। এই ব্যাটা ভয়ে এখনই কাবু হয়ে গেছে, নইলে এভাবে খোঁজখবর করতে আসত?
ভুরু কুঁচকে, রেডের চোখের দিকে তাকাল পল কেড্রিক, কণ্ঠকে শান্ত রেখে বলল, উঁহু, ভয় পাই নি, রেড। আমি যদি মনে করি কোম্পানি ঠিক বলেছে, তোমাদের উচ্ছেদ করা দরকার, যে কোনও মূল্যে তা করব; কেউ ঠেকাতে পারবে না। প্রয়োজন হলে আরও লোক যোগাড় করব। আমি জানি কীভাবে লড়াই করতে হয়। সারা জীবন লড়াই করে আসছি, জেতার কৌশল আমার অজানা নেই। ভয় পেয়ে এখানে আসি নি, এসেছি, নিজের কাছে পরিষ্কার থাকতে চাই বলে। এখানে তোমাদের দাবী বৈধ হলে, তোমাদের সম্পর্কে যেসব কথা বলা হয়েছে সেসব মিথ্যে হলে, নিজেকে সরিয়ে নেব আমি।