অনড় দাঁড়িয়ে ওকে রওনা হতে দেখল ডরনি শ। কিছু বলল না। পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোয় যতটা সম্ভব দূরত্ব কমিয়ে আনতে দ্রুত এগোল পল কেড্রিক। ইয়েলো বাট শহর এবং তার আশপাশের এলাকা জরিপ করা ছাড়াও আরেকটা উদ্দেশ্য আছে ওর। ওখানকার অধিবাসীদের আসল পরিচয় জানাঃ ও সংসারী মানুষ নাকি খুনে-ডাকাত? আউট-ল তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার মতো তেমন কিছু এখনও দেখতে পায় নি ও।
একটা দীর্ঘ ডিম্বাকৃতি মেসার ঠিক পায়ের কাছে গড়ে উঠেছে ইয়েলো বাট শহর। মেসা থেকেই শহরের নামের উৎপত্তি। এখানে এক চিলতে সমতল ভূমিতে জুড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে পাথর আর কাঠের বাড়িগুলো। ঘরগুলো পাহাড়ের দেয়ালের সামনে দীর্ঘ একটা অ্যারোয়ো অর্থাৎ গিরিখাদের দিকে মুখ করে বানানো। গিরিখাদের কিনারায় মাত্র তিনটে ঘর আর একটা করলি। একটা জিনিস স্পষ্ট বোঝা যায়: শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলে কিছু নেই।
একজন কিংবা দুজন রাইফেলধারী মেসার চূড়ায় উঠতে পারলে ওখান থেকে অনায়াসে পুরো শহর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তা ছাড়া শহরের পেছনের পাহাড় কিংবা সামনের গিরিখাদের নিচু অংশে লুকিয়ে থেকে শহরের দিকে গুলি ছোড়া সম্ভব। ইয়েলো বাট মেসাটি প্রায় দেড়শো ফুট উঁচু, মুখ শহরের
প্রশস্ত রাস্তার দিকে। তবে শহর প্রতিরক্ষার জন্যে ইদানীং কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কয়েকটা বাড়ির সামনে স্তূপীকৃত মাটি দেখা যাচ্ছে-নতুন মার্টি। তূপের দিকে তাকিয়ে, কোথায় কেন মাটি খোঁড়া হয়েছে বোঝার চেষ্টা করল পল কেড্রিক; খানিক পর হাল ছেড়ে দিয়ে আশপাশের এলাকায় নজর বোলাতে শুরু করল।
চিন্তিত চেহারায় ইয়েলো বাট মেসার দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। শহরের লোকেরা ওটার চূড়ায় রাইফেলসহ কাউকে পাঠানোর কথা, কি ভাবে নি? পাঠানোই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যোগ্য, সেনাপতিকেও রণাঙ্গনে অনেক সময় মামুলি ব্যাপার ভুলে বসতে দেখা যায়। এদের বেলায়ও তেমন ঘটতে পারে। অথচ মেসার মাথায় বসে কেবল ইয়েলো বাট শহর নয়, আশপাশের পুরো এলাকার ওপর কর্তৃত্ব ফলানো সম্ভব। কয়েক মাইলের ভেতর এটাই সর্বোচ্চ চূড়া।
ঘোড় ঘুরিয়ে শহরের দিকে এগোল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ফাঁকা জায়গায় রয়েছে ও; কিন্তু কেউ দেখে থাকলেও কোন রকম বাধা দিল না। ওর সঙ্গে আরও লোক থাকলে কী হত?
বাট স্যালুনের সামনে ঘোড়া থামিয়ে স্যাডল থেকে নাম কেড্রিক, হিচরেইলে বাধল ওটাকে। জানে, ঘোড়াটা ক্লান্ত, এই মুহূর্তে দূরে কোথাও যাবার ক্ষমতা নেই।
শহরের একমাত্র রাস্তা খাঁ খাঁ করছে। স্যালুনের বারান্দায় উঠল কেড্রিক, তারপর স্যুইং-ডোর ঠেলে আলোকিত কামরায় পা রাখল। একটা টেবিলে বসে সলিটেয়ার খেলছিল একজন, মুখ তুলে তাকাল, ভুরু কুঁচকে উঠল তার, কিছু যেন বলতে চাইল; কিন্তু পরমুহূর্তে মত পাল্টে আবার খেলায় মনোযোগ দিল। বারের দিকে এগিয়ে গেল পল কেড্রিক। রাই, সহজ কণ্ঠে বারটেন্ডারকে বলল।
ওর দিকে না তাকিয়েই মাথা দোলাল বারটেন্ডার, একটা গ্লাসে মদ ঢেলে দিল। কেড্রিক বারের ওপর পয়সা ফেললে চোখ তুলে তাকাল সে সঙ্গে সঙ্গে কাঠিন্য ফুঠে উঠল তার চেহারায়। কে তুমি? জানতে চাইল সে। তোমাকে তো আগে দেখি নি?
দুজন লোক দুপাশে এসে দাঁড়িয়েছে, বুঝতে পারছে কেড্রিক। অচেনা লোক। প্রথমজন মাঝবয়সী, তীক্ষ্ণ চেহারা; অপরজন লাল-চুলো এক উদ্ধত যুবক।
এদের জন্যেও ঢাল, বারটেন্ডারকে বলল পল। তারপর সাবধানে, আস্তে আস্তে, ওদের সন্দেহের উদ্রেক না করে বারের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। সতর্ক দৃষ্টিতে পুরো রুম জরিপ করল!
দশ বারজন লোক আছে স্যালুনে। একদৃষ্টিতে মাপছে ওকে। আমার পকেট থেকে পয়সা যাচ্ছে, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, তোমরাও যোগ দেবে। নাকি?
নড়ল না কেউ কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক। আবার বারের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। মদের গ্লাস হাওয়া হয়ে গেছে!
আস্তে আস্তে বারটেন্ডারের দিকে তাকাল কেড্রিক। আমার গ্লাসটা, কোথায়? নম্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
কেড্রিকের দিকে তীব্র দৃষ্টি হানল বারটেন্ডার। কী জানি, বলতে পারব না! কাঁধ ঝাঁকিয়ে পাল্টা জবাব দিল সে।
পয়সা দিয়ে মদ কিনেছি, গ্লাসটা দাও। অখণ্ড নীরবতা।
ওকে প্রায় উপেক্ষা করে দুপাশের দুজন লোক বরের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।
আমাকে খেপিয়ো না, আবার বলল কেড্রিক। মদের গ্লাসটা ফিরিয়ে দাও-জলদি!
মিস্টার, বারের উপর দিয়ে সামনে ঝুঁকল বারটেন্ডার তোমার মতো লোকের কাছে আমরা মদ বিক্রি করি না। চ্যাঙদোলা করে বাইরে ফেলে দেয়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়ো। ভাগো হিয়াসে!
বারের কিনারে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিল পল কেড্রিক, পরের ঘটনা এত দ্রুত ঘটে গেল যে, পাশের লোক দুটো নড়াচড়া করারও ফুরসত পেল না।
বিদ্যুৎ চমকের মতো ছুটে গেল কেড্রিকের ডান হাত, জাপ্টে ধরল বারটেন্ডারের কলার, সাথে সাথে বারের দিকে পেছন ফিরে হ্যাচকা টান দিল। বাইন মাছের মতো পিছলে শূন্যে উঠে গেল লোকটা, উড়ে গিয়ে দড়াম করে মেঝেয় পড়ল। পরমুহূর্তে বাউলি কেটে দুপাশের দুজনের আওতার বাইরে সরে গেল কেড্রিক। চট করে খাপ থেকে পিস্তল বের করেই কাভার করে দাড়াল কামরার প্রতিটি লোককে।
উঠে দাঁড়িয়েছিল কয়েকজন, কেড্রিকের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে পিস্তল দেখে জমে গেল। পয়েন্ট-ফোর-ফোর রাশানটা কখন বেরিয়ে এসেছে দেখতে পায় নি কেউ।