ধেত্তের, অধৈর্য কণ্ঠে বলল পয়েন্সেট, অনর্থক কথা বলে সময় খরচ করার কী দরকার? লড়াই করতেই তো এসেছি আমরা, নাকি? চল, আগে বাড়ি, কেমন লড়াই জানে ব্যাটারা দেখি!
চিন্তিত চেহারায় স্যু লেইনের আপাদমস্তক জরিপ করল পল কেড্রিক। মেয়েটা সুন্দরী, সন্দেহ নেই। সামান্থা ফক্সের মতো রূপসী, হয়তো নয়, তবে সুন্দরী।
পাহারা দেয়ার জন্যে লোক পাঠিয়ে দিয়েছে? জিজ্ঞেস করল ও।
কেড্রিকের দিকে তাকাল স্যু লেইন। এখনও না পাঠালেও শিগগিরই পাঠাবে। হাসল স্যু লেইন। পাহারা থাকলে তোমাদের সাবধান করার সুযোগ পৈতাম?
তুমি কার পক্ষে, মিস লেইন? জানতে চাইল কেড্রিক।
ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে অগ্নিদৃষ্টি হানল ডরনি শ। কিন্তু সে কিছু বলার সুযোগ পেল, না। স্যু লেইনই জবাব দিল। কারও না। বলতে পারো আমি নিজের পক্ষেই আছি। আমি কী চাই না চাই সেটা আমিই ঠিক করি। ভাই কিংবা অন্য কারও তোয়াক্কা করি না। ওরা নির্বোধ, নইলে এই মরুভূমির জন্যে লড়াই করবে কেন? বিরক্তির সঙ্গে হাত খেলিয়ে চারপাশ দেখাল ও। এখানে মানুষ বাঁচে? আমি চাই ওরা হারুক। তা হলে এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে পারব!
আচমকা ঘোড়া ঘুরিয়ে নিল স্যু লেইন। যে কথা বলতে এসেছিলাম বলেছি, এবার চলি।
আমিও আসছি, হঠাৎ বলল ডরনি শ।
শয়ের দিকে তাকাল স্যু লেইন। না! এবার কেড্রিকের দিকে দৃষ্টি দিল, আপাদমস্তক জরিপ করল ওকে। ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে। তবে ক্যাপ্টেন কেড্রিক চাইলে আসতে পারে। ওকে ওরা চেনে না!
হেসে উঠল কে যেন। মরার মতো শাদা হলো ডরনির চেহারা, সাঁই করে ঘোড়া ঘোরাল। ঠোঁট ফাঁক হয়ে দাঁতের পাটি বেরিয়ে পড়েছে। ডান হাত পিস্তল বের করার জন্য তৈরি।
কে হাসল? জিজ্ঞেস করল ডরনি, গলাটা একটু যেন কেঁপে গেল তার। হাসল কে?
মিস লেইন, শান্ত কণ্ঠে বলল কেড্রিক, ডরনি শ গেলেই ভালো হত। এলাকাটা আমার চেয়ে বেশি চেনে ও।
ঝলসে উঠল ডরনির চোখ। আমি জানতে চেয়েছি, কে হেসেছে?
ঘাড় ফেরাল কেড্রিক। রাখো এসব, শ, স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল ও, আমি যতক্ষণ কম্যান্ডে আছি কেউ মারামারি করতে পারবে না!
মুহূর্তের জন্যে যেন পাথর হয়ে গেল ডরনি শ। পরক্ষণে সাপের মতো ঠাণ্ডা চোখে কেড্রিকের দিকে তাকাল। আমাকে বলছ? ওর কণ্ঠে একই সঙ্গে বিদ্রূপ আর অবিশ্বাস।
বিপদ চিনতে পল, কেড্রিকের ভুল হয় না, কিন্তু উত্তেজিত হলো না ও, শুধু মাথা ঝাঁকাল। তোমাকে একা নয়, ডরনি, সবাইকে বলছি। বিশেষ একটা কাজ নিয়ে এখানে এসেছি আমরা। তোমাকেও আর সবার মতো টাকা দেয়া হচ্ছে। আমরা যদি নিজেরা মারপিট করে সময় নষ্ট করি, কাজ এগোবে কী করে? এখন আমাদের শক্তি হ্রাস পেলে মুশকিল হয়ে যাবে।
তা ছাড়া নিজের লোকদের মধ্যে খুনোখুনি কীথ কিংবা বারউইক পছন্দ করবে না।
কেড্রিকের চোখে চোখে তাকিয়ে রইল ডরনি শ। অসহনীয় নীরবতা। ঝোঁপের মধ্যে একটা ঝিঝি পোকার ডাক নিস্তব্ধতাকে যেন বাড়িয়ে তুলছে। মাটিতে পা ঠুকে মাছি তাড়াল স্যু লেইনের ঘোড়া। সহসা পল কেড্রিক বুঝতে পারল, ডরনি শ ওকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। সম্ভবত এই প্রথম কোনও কাজে বাধা দেয়া হয়েছে তাকে। খেপে গেছে সে।
আস্তে আস্তে পিস্তলের কাছ থেকে হাত সরিয়ে নিল ডরনি শ। ঠিকই বলেছ, ক্যাপন, শুষ্ক কণ্ঠে বলল সে। এখনও গোলাগুলির সময় আসে নি। তা ছাড়া, বারউইক আবার রাগী মানুষ।
কেড্রিকের দিকে তাকাল স্যু লেইন, দৃষ্টিতে অবহেলা। আমি যাচ্ছি। তোমরা সাবধানে থেকো।
কিন্তু স্যু লেইনের ঘোড়া পা বাড়ানোর আগেই কেড্রিক জানতে চাইল, মিস লেইন, বল তো তোমাদের দলে কার একটা লম্বা পাঅলা গুলা আছে?
ঝট করে ঘাড় ফেরাল স্যু লেইন, ফ্যাকাসে চেহারা। কী-গ্রুল্লা?
হ্যাঁ, বলল কেড্রিক, সকাল থেকে ওটায় চেপে আমাদের ওপর নজর রাখছিল কে যেন। এই মুহূর্তে আধমাইলটাক দূরে আছে সে। এবং, আবার বলল ও, একটা ফীল্ডগ্লাসও আছে তার কাছে!
খিস্তি ঝেড়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ফেসেনডেন। চোখ কটমট করে ইতিউতি নজর বোলাল পয়েন্সেট। কেবল ডরনি শয়ের মুখেই কথা ফুটল। শুকনো অবিশ্বাস ভরা কণ্ঠে বলব, গ্রুলা? এখানে?
ব্যস, আর কিছু বলল না সে।শয়ের মন্তব্যে বিভ্রান্তিতে পড়ল কেড্রিক, তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করল ওকে। গ্রুলা ঘোড়াটার কথা মনে হচ্ছে আগে। থেকেই জামে ডরনি, কিন্তু এখানে দেখা যাবে ভাবে নি। স্যু লেইনের বেলায়ও একই কথা খাটে। স্পষ্টতই, ওর প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে সে।
অনেকক্ষণ পর, নর্থ ফোর্কের ঝর্নার কাছে ফিরে আসার সময়ও ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবল ও নতুন একটা তথ্য, হয়তো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ-আবার অর্থহীনও হতে পারে।
ফিরতি পথে খুব একটা কথাবার্তা হলো না ওদের মাঝে। লড়াই করতে না পেরে হতাশ হয়েছে পয়েন্সেট, তবে কিছুটা সন্তুষ্ট ফের বিশ্রামের সুযোগ পেয়ে।
০৪. নির্বাক হয়ে গেছে যেন ডরনি শ
নির্বাক হয়ে গেছে যেন ডরনি শ। সাপার শেষে কেড্রিক যখন অ্যাপলুসার পিঠে জিন চাপাতে গেল, মুখ তুলে তাকাল সে।
ডরনি, আমি ইলো বাট-এ যাচ্ছি। নিজের চোখে, শহরটা একবার দেখে আসি, বলল, কেড্রিক। গোলমাল করার ইচ্ছে আমার নেই, চাইও না। কিন্তু, কীসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যাচ্ছি সেটা জানা দরকার।