মেয়েটা এখানে এসেছে কেন? কীথের সঙ্গে কী সম্পর্ক তার? ওর প্রতি কীথের বিদ্বেষ টের পেয়েছে কেড্রিক, অবাক হয় নি। এমনিতে ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ ও, সহজে রাগে না, কিন্তু ওকে যদি কেউ খোঁচায়, বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা এক বাঘ গা ঝাড়া দিয়ে জেগে ওঠে, ওলট-পালট করে দেয় সবকিছু। নিজের সুপ্ত ক্রোধের কথা জানে, তাই সতর্ক থাকে ও, মেপে কথা বলে; সংযত রাখে নিজেকে।
হঠাৎ লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল ডরনি শ। ওটা ল্যারগো ক্যানিয়ন, সামনের সংকীর্ণ উপত্যকার দিকে ইঙ্গিত করল সে। ওই যে ডান দিকে দূরে পাহাড়টা দেখছ, ওটাই দ্য অরফ্যান। ইনজুনরা ওখানে শাদা মানুষদের উঠতে দেয় না; শোনা যায়, ওখানে নাকি চমৎকার মিঠে পানির একটা ঝর্না আছে, সারা বছর পানি পাওয়া যায়।
এর পরই শুরু হয়েছে বারউইকদের এলাকা। একেবারে অ্যারিজোনার সীমান্ত ঘেঁষা জায়গাটুকু না পেলেও; বিশাল একটা এলাকা পেতে যাচ্ছে। স্কোয়াটারদের ঘাঁটি ইলো বাট নামে একটা শহর; গোটা বার ঘর-বাড়ি আছে ওখানে; দোকান, আস্তাবল, করাল, স্যালুন এমনকী ব্যাংকও পাবে।
চিন্তিত চেহারায় মাথা ঝাঁকাল কেড্রিক। সামনে যদূর চোখ যায়, ধু-ধু মরুভূমি; কিছুতেই একে জলাভূমি বলা যায় না। আশপাশে পাছপালা চোখে পড়ছে না, লতানো কিছু মেসকিট ঘাস কিংবা ব্ল্যাক গ্র্যামা রয়েছে, এ ছাড়া ক্যাকটাস, সোপউইড, ক্রিওসেট ঝোঁপ আর ক্যাট-ক্ল ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে জুন্মেছে। কোনও কোনও ওঅশে অবশ্য গাঢ় সবুজ পিনন কিংবা জুনিপারও আছে।
আরও সামনে এগোল ওরা। ল্যারগো ক্যানিয়নে ঢুকল, তার পর বেরিয়ে এসে পশ্চিম দিকে চলল। সতর্ক কেড্রিক। মুহূর্তের জন্যে অনেক দূরে একজন অশ্বারোহীকে দেখতে পেল। কিছুক্ষণ পর একই ঘোড়সওয়ারকে আরও খানিকটা কাছাকাছি দেখে অনুমান করল ওদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রার্থনা করল ও, কোনওরকম হামলা যেন না হয়।
কোম্পানির জমির প্রায় মাঝখানে আস্তানা গেড়েছে স্কোয়াটাররা। ওদের নেতার নাম বর ম্যাকলেনন। ওর আবার দুই চ্যালা আছে। একজন পিটার সেগাল অন্যজনের নাম পিট লেইন। গতকাল জানতে চাইছিলে ওরা লড়বে কিনা। এই তিন শয়তানের বাচ্চা অন্তত লড়বে। সেগালের মোটামুটি বয়স হয়েছে; চল্লিশের কোঠায় রয়েছে ম্যাকলেনন, এক কালে. একটা কাউটাউনের মার্শাল ছিল; আর লেইন, ব্যাটা বড় কঠিন চীজ, ঠিক বোঝা যায় না; কোমরে দুটো পিস্তল ঝুলিয়ে ঘোরে, অসম্ভব প্রভাব রাখে স্কোয়াটারদের ওপর। শুনেছি, ডুরাংগোতে নাকি একবার গানফাইটে জড়িয়ে পড়েছিল, একাই ঝামেলা সামাল দিয়ে বেরিয়ে আসে।
কেড্রিকের পেছন থেকে কে যেন নিচু কণ্ঠে বলে উঠল, বোনটার মতোই দুর্বোধ্য চরিত্র!
চেপে বসল ডরনি শয়ের ঠোঁটজোড়া, কিন্তু এ-ছাড়া আর কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না। তবে কেড্রিকের তথ্যের ভাণ্ডার কিছুটা পূর্ণ হলো। নিঃসন্দেহে শত্রু-শিবিরে ডরনি শয়ের একজন বন্ধু আছে, তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যই কীথকে দেয় সে। আপন, ভাই আর গোষ্ঠীর সঙ্গে বেইমানি করছে মেয়েটা? অসম্ভব নয়। ওদের চোখে ধরা না পড়ে কীভাবে মেয়েটার কাছে যাওয়া-আসা করে ডরনি?
ওয়েলশম্যান ডাইরীডের কথা বলে নি ডরনি। কিন্তু ছোটখাট শক্তিশালী মানুষটার একটা ভূমিকা না থেকেই পারে না।ওর কথা ভুললে চলবে না।
হঠাৎ গজ তিরিশেক দূরের একটা ক্যানিয়ন থেকে এক অশ্বারোহী বেরিয়ে এল, ঘোড়া নিয়ে এগোল ওদের দিকে। বিড়বিড় করে গাল বকে লাগাম টানল ডরনি শ। একসঙ্গে থামল বাকিরাও।
অশ্বারোহী একটা মেয়ে। চমৎকার স্বাস্থ্য, ইন্ডিয়ানদের মতো বাদামি ত্বক, এক মাথা কালো চুল, বড় বড় দুচোখে অদ্ভুত দ্যুতি; হাত দুটো ছোট, পুতুলের মতো।
প্রথমে শয়ের দিকে তাকিয়ে তারপর অন্যদের ওপর চোখ বোলাল সে। অবশেষে পল কেড্রিকের ওপর স্থির হলো তার দৃষ্টি। প্রচুর সময় নিয়ে মাপল ওকে। তোমার নতুন বন্ধুটি কে, ডরনি? জিজ্ঞেস করল, পূরিচয় করিয়ে দাও?
তীক্ষ্ণ কঠিন দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল ডরনি শ ক্যাপন কেড্রিক, এসো, স্যু লেইনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।
ক্যাপ্টেন? নতুন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল মেয়েটা। আর্মিতে ছিলে?
হ্যাঁ, শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল কেড্রিক। মেয়েটার পিনটো দেখে বোঝা যাচ্ছে, ওদের ওপর এ নজর রাখে নি। অর্থাৎ কাছেপিঠে আরও একজন ঘোড়সওয়ার আছে! কে?
ঘর ছেড়ে একা এত দূর আসা কি ঠিক হয়েছে, সু? বাধা দিয়ে প্রশ্ন করল ডরনি শ।
ঠিক-বেঠিক আমি ভালো বুঝি, ডরনি, ঠাণ্ডা স্বরে জবাব দিল মেয়েটা। ডরনির চেহারা লাল হয়ে গেছে, লক্ষ্য করল কেড্রিক। যাক গে, তোমাকে, কিংবা ক্যাপ্টেন কেড্রিক যদি লিডার হয়, ওকে সাবধান করে দিতে এসেছি আমি। তোমাদের আর এগোনো ঠিক হবে না। সকালে আলোচনায় বসেছিল ওরা, ম্যাকলেননও ছিল। ওরা ঠিক করেছে, বাইরের ঘোড়সওয়ার কিংবা সারভেঅরদের দেখলেই গুলি করবে। এখন থেকে এটা তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ এলাকা। খবরটা জামাতে একজন লোককে মাস্ট্যাংয়ে পাঠানো হচ্ছে, আজ রাতে পৌঁছে যাবে সে।
বলে কী মেয়েটা! শুষ্ক কণ্ঠে বলল লী গফ। ওরা দেখছি অনেক বেড়ে গেছে। তা আমরা সামনে বাড়লে কী হবে?
গফের দিকে তাকাল স্যু লেইন। লড়াই, শান্ত কণ্ঠে বলল সে।