আসলেই, ভালো! বলল নিকতিন। তোমাকে একা পেলে তোমার ভুঁড়ি বের করে দিত।
একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে, বলল পান।
হ্যাঁ, তারাগুলো নিভে যাচ্ছে, আরাম করে বসতে বসতে আভদিয়েভ বলল
এবং সৈন্যরা আবার নীরব হয়ে গেল।
৩
দুর্গে ব্যারাক ও সৈন্যদের বাড়িগুলোর জানালা অনেক আগেই অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার সবচেয়ে ভালো বাড়িটির জানালাগুলোয় তখনো আলো দেখা যাচ্ছিল।
বাড়িটায় থাকতেন প্রিন্স সাইমন মিখাইলোভিচ ভরসভ, কুরিন রেজিমেন্টের সেনাপতি, রাজকীয় পার্শ্বচর (এডিসি) এবং প্রধান সেনাপতির ছেলে। ভরন্তসভ থাকতেন তার স্ত্রী, পিটার্সবার্গের সুখ্যাত সুন্দরী মারিয়া ভাসিলিয়েভনাকে নিয়ে। ককেশিয়ার ছোট্ট দুর্গে তাদের মতো বিলাসে ওই বাড়িতে আগে আর কেউ থাকেনি। ভরসভের, বিশেষ করে তার স্ত্রীর, মনে হতো তারা অত্যন্ত সাদাসিধে এবং কষ্টকর জীবন যাপন করছে, কিন্তু বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের কাছে তাদের বিলাসিতা ছিল বিস্ময়কর এবং অসাধারণ।
তাদের বিশাল বসার ঘরের জানালায় দামি পর্দা ঝোলানো এবং মেঝে কার্পেটে মোড়া। সেখানে মধ্যরাতেও একটা তাস খেলার টেবিলে চারটি মোমবাতির আলোয় মেজবান এবং মেহমানেরা তাস খেলছিল। খেলোয়াড়দের একজন ছিল ভরন্তসভ নিজে। লম্বাটে চেহারা আর সুন্দর চুলওয়ালা কর্নেল, পোশাকে রাজকীয় পার্শ্বচরের তকমা এবং কাঁধে সোনালি কর্ড। তার সঙ্গী, পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উষ্কখুষ্ক বিষণ্ণ চেহারার এক স্নাতক, প্রিন্সেস ভরন্তসভ সম্প্রতি যাকে তার আগের ঘরের ছোট ছেলেটির শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে খেলছিল দুজন সেনা কর্মকর্তা-একজন চওড়া লালমুখো পুরুষ, কোম্পানি কমান্ডার পোলতোরাৎস্কি। দেহরক্ষী দল থেকে বদলি হয়ে এসেছে। অন্যজন সুদর্শন চেহারায় শীতল নির্বিকারভাব ধরে রাখা রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট। সে তার চেয়ারে সোজা হয়ে বসে ছিল।
প্রিন্সেস মারিয়া ভাসিলিয়েভনা, স্থূলকায়, বিশালাক্ষী এবং কালো ভুরুধারী সুন্দরী, পোলতোরাৎস্কির পাশে বসে তার তাস দেখছিল, তার ফাঁঁপানো পোশাক পোলতোরাৎস্কির পা স্পর্শ করছিল। তার কথা, তার দৃষ্টি, তার হাসি, তার সুগন্ধি এবং তার অঙ্গের প্রতিটি নড়াচড়ায় এমন কিছু ছিল, যাতে সংকোচে তার নৈকট্য সম্বন্ধে সচেতন থাকা ছাড়া পোলতোরাৎস্কি আর সবকিছু ভুলে যাচ্ছিল এবং সে একের পর এক গুরুতর ভুল করায় তার সঙ্গীর ধৈর্যের পরীক্ষা চলছিল।
নাহ, এটা খুব খারাপ হলো! তুমি আবার একটা টেক্কা নষ্ট করলে, পোলতোরাৎস্কি একটা টেক্কা ছুঁড়ে দিলে মুখ লাল করে রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট বলল।
পোলতোরাৎস্কি কিছু না বুঝে, যেন এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে, এমন মুখ করে তার বড় বড় কালো চোখে করুণ দৃষ্টিতে ক্ষুব্ধ অ্যাডজুট্যান্টের দিকে তাকাল।
ওকে মাফ করে দাও! মুচকি হেসে বললেন মারিয়া ভাসিলিয়েভনা। পোলতোরাৎস্কির দিকে ফিরে বললেন, দেখেছ, এখন? আমি তোমাকে বলেছিলাম না?
কিন্তু তুমি মোটেই এটা বলোনি, হেসে জবাব দিল পোলতোরাৎস্কি।
তাই নাকি? মারিয়াও হেসে জবাব দিল এবং তার মুচকি হাসিতে পোলতোরাৎস্কি এতটাই উদ্দীপ্ত আর খুশি হলো যে সে তাসগুলো নিয়ে ফেটাতে শুরু করল।
এখন তোমার বাটা না, কড়া গলায় বলল অ্যাডজুট্যান্ট এবং তার সাদা আংটি পরা হাতে তাসগুলো দ্রুত বাটতে শুরু করল, যেন শেষ হলেই সে বাঁচে।
প্রিন্সের খানসামা বসার ঘরে ঢুকে বলল, ডিউটি অফিসার প্রিন্সের সঙ্গে দেখা করতে চায়।
মাফ করো, ভদ্রলোকেরা, ইংরেজি উচ্চারণে রুশ ভাষায় বললেন প্রিন্স।
তুমি আমার জায়গাটা নেবে, মারি?
তোমরা সবাই রাজি? জিজ্ঞেস করলেন প্রিন্সেস। তার সিল্কে খসখস শব্দ আর মুখে সুখী মহিলার আভা তুলে মুচকি হেসে দ্রুত সটান দাঁড়িয়ে।
আমি সব সময় সবকিছুতে রাজি, প্রিন্সেস, যে খেলার কিছুই জানে না, এখন তার বিপক্ষে খেলবে বলে খুব খুশি হয়ে বলল অ্যাডজুট্যান্ট।
পোলতোরাৎস্কি কেবল হেসে তার তাসগুলো বিছিয়ে দিল।
প্রিন্স যখন বসার ঘরে ফিরে এলেন, দানটি তখন প্রায় শেষ। তিনি ফিরে এলেন উত্তেজিত এবং খুব খুশি মনে।
তোমরা জানো আমি কী প্রস্তাব করতে যাচ্ছি?
কী?
চলো, শ্যাম্পেন পান করা যাক।
আমি সব সময় তার জন্য প্রস্তুত, বলল পোলতোরাৎস্কি।
কেন নয়, খুব মজা হবে! বলল অ্যাডজুট্যান্ট।
ভাসিলি! নিয়ে এসো তো! বললেন প্রিন্স।
কারা তোমার কাছে এসেছিল? মারিয়া ভাসিলিয়েভনা জিজ্ঞেস করলেন।
ডিউটি অফিসার আর একটা লোক।
কে? কী ব্যাপারে? দ্রুত জিজ্ঞেস করলেন মারিয়া ভাসিলিয়েভনা।
আমি কিছুতেই বলতে পারব না, কাধ নেড়ে বললেন ভরন্তসভ।
আমি কিছুতেই বলতে পারব না, তার অনুকরণে বললেন মারিয়া ভাসিলিয়েভনা। আচ্ছা দেখা যাবে।
শ্যাম্পেন আনা হলে অতিথিরা প্রত্যেকে এক গ্লাস করে পান করে এবং তাদের খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় ফলাফল যোগ করে চলে যেতে শুরু করল।
তোমার কোম্পানিকে কাল বনে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে? বিদায় নেওয়ার সময় প্রিন্স জিজ্ঞেস করলেন পোলতোরাৎস্কিকে।
হ্যাঁ, আমার…কেন?
ওহ, তাহলে কাল আবার দেখা হবে, মৃদু হেসে বললেন প্রিন্স।
খুব ভালো, ভরন্তসভ তাকে কী বলছিলেন, তা মোটেও না বুঝে জবাব দিল পোলতোরাৎস্কি, একটু পরই সে মারিয়া ভাসিলিয়েভনার হাতে চাপ দেবে, এই চিন্তাটাই তার মাথায় তখন ঘুরছিল।