বিদায়, ম্যাডাম, তিনি তাকে বললেন। আপনাকে ধন্যবাদ!
ঈশ্বর আপনাকে সাহায্য করুন। ঈশ্বর আপনার পরিবারকে মুক্ত করতে সাহায্য করুন! বলল মেরি দমিত্রিয়েভনা।
তিনি তার কথা বুঝতে পারেননি, কিন্তু তার প্রতি সহানুভূতি অনুভব করে মাথা নাড়লেন।
মনে রাখবেন, বন্ধুকে ভুলবেন না। বলল বাটলার।
তাকে বলো, আমি তার খাঁটি বন্ধু, কখনো তাকে ভুলব না। হাজি মুরাদ দোভাষীর মাধ্যমে উত্তর দিলেন। এক পা খাটো হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত হালকাভাবে শরীরটাকে ঘোড়ার ওপর তুলে দিলেন পাদানি সামান্য ছুঁয়ে। গদিতে বসে অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছোরা আর তলোয়ার ঠিক করে নিলেন। তারপর একমাত্র ককেশীয় পাহাড়িদের মতো দেমাগি দৃষ্টি নিয়ে তিনি মেজরের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। খানেফি আর এলডারও মেজবান ও অফিসারদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এসেছিল। দুলকি চালে তারা মুরশিদের অনুসরণ করছিল।
কেউ বিদায় নিয়ে গেলে যারা রয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিয়ে আলাপ করে।
দারুণ সাহসী! আরসালান খানের দিকে একদম নেকড়ের মতো ছুটে গিয়েছিল। তার চেহারা বদলে গিয়েছিল!
কিন্তু তার মনে কোনো ফন্দি আছে–ভয়ানক শয়তান, আমি বলব, পেত্রভস্কির মন্তব্য।
ঈশ্বর যদি রুশদের মধ্যে আরও ওই রকম শয়তান দিতেন! বিরক্তিভরে হঠাৎ বলল মেরি দমিত্রিয়েভনা। আমাদের সঙ্গে এক সপ্তাহ থেকেছে, আমরা ভালো ছাড়া তার মধ্যে আর কিছু দেখিনি। তিনি ভদ্র, জ্ঞানী ও ন্যায়পরায়ণ।
তুমি কী করে বুঝলে?
বেশ, আমি বুঝতে পেরেছি!
সে একদম মুগ্ধ, কেবলই ঘরে ঢুকে বলল মেজর। এটা ঠিক!
ঠিক আছে আমি না হয় মুগ্ধ! কিন্তু তাতে তোমার কী? একটা ভালো লোককে কেন খারাপ বলবে? সে তাতার হতে পারে, তারপরও সে ভালো লোক!
ঠিক বলেছ, মেরি দমিত্রিয়েভনা, বাটলার বলল। তার পক্ষে তুমি ঠিক কথা বলেছ!
২১
চেচেন সীমানার কাছাকাছি আমাদের অগ্রবর্তী দুর্গগুলোয় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। আগে যে ঘটনাটার বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তারপর মাত্র দুবার বিপৎসংকেত দেওয়া হয়। তখন কোম্পানিগুলোকে ডাকা হয়েছিল। ঘোড়া ছুটিয়ে সৈন্যরা সেখানে যায়। কিন্তু দুবারই উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পাহাড়িরা পালিয়ে যায়। একবার ভজভিঝেনস্কে তারা একজন কসাককে মেরে ফেলে আর আটটি ঘোড়া নিয়ে যায়। সেগুলোকে গোসল করানো হচ্ছিল। আগের ঘটনায় গ্রামটি ধ্বংস করার পর আর কোনো হামলা চালানো হয়নি। কিন্তু লেফট ফ্ল্যাঙ্কে নতুন কমান্ডার, প্রিন্স বারিয়াতিনস্কিকে নিয়োগের পর বড় ধরনের একটি অভিযান আশা করা হচ্ছিল। তিনি ভাইসরয়ের একজন পুরোনো বন্ধু। কাবার্ড রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন। পুরো লেফট ফ্ল্যাঙ্কের কমান্ডার হিসেবে গ্রজনিতে আসেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে চেরনিশভের মাধ্যমে ভরসভের কাছে পাঠানো জারের আদেশ পালনের জন্য একটা সেনাদল গড়ে ফেলেছেন। ভজভিঝেনস্কে জড়ো করা সেনাদলটি অবস্থান নেয় দুর্গের বাঁয়ে কুরিনের দিকে। সেখানে শিবির গেড়ে সৈন্যদের রেখে বন কাটা শুরু হয়। তরুণ ভরন্তসভ সুন্দর একটা কাপড়ের তাঁবুতে ছিল। তার স্ত্রী মেরি ভাসিলিয়েভনা প্রায়ই শিবিরে আসত আর রাতটা তাঁবুতে থেকে যেত। বারিয়াতিনস্কির সঙ্গে মেরি ভাসিলিয়েভনার সম্পর্কের বিষয়টা কারও কাছে গোপন ছিল না। নিম্নশ্রেণির অফিসার এবং সৈন্যরা তার সম্পর্কে বাজে বাজে কথা বলত। কারণ, সে শিবিরে থাকলে তাদের ওত পাতার জায়গায় রাত কাটাতে হতো। পাহাড়িদের স্বভাব ছিল কামানগুলো শিবিরের কাছে এনে গোলা ছোঁড়া। গোলাগুলো সাধারণত লক্ষ্যে পড়ত না। তাই অন্য সময় তাতে বাধা দেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু করা হতো না। কিন্তু এখন মেরি ভাসিলিয়েভনা যাতে কামানের গোলায় আহত না হয় বা ভয় না পায়, সে জন্য পাহাড়িদের বাধা দিতে ওত পাততে পাঠানো হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত সৈন্যদের সঙ্গে অফিসাররাও মেরি ভাসিলিয়েভনার সম্বন্ধে বাজে কথা বলে।
বাটলার দুর্গ থেকে ছুটি নিয়েছে। ক্যাডেট কোরের এবং কুরিন রেজিমেন্টের পুরোনো বন্ধুরা অর্ডারলি-অফিসার হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাটলার এসেছে শিবিরে। প্রথম আসার পর তার সময়টা খুব ভালো কেটেছিল। তার জায়গা হয়েছিল পোলতোরাৎস্কির তাঁবুতে। সেখানে অনেক পরিচিতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সবাই তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। আগে একই রেজিমেন্টে থাকার সুবাদে সামান্য পরিচয় থাকায় সে ভরসভের সঙ্গেও দেখা করেছিল। ভরন্তসভ তাকে ভদ্রভাবে অভ্যর্থনা করে এবং প্রিন্স বারিয়াতিনস্কির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেয়। বাটলারকে জেনারেল কজলভস্কির বিদায়ি ভোজেও দাওয়াত করে। প্রিন্স বারিয়াতিনস্কি আসার আগে কজলভস্কি লেফট ফ্ল্যাঙ্কের কমান্ডার ছিলেন।
ভোজসভাটি ছিল জাঁকালো। এক সারিতে বিশেষ তাঁবু খাটানো হয়। তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছয়টা টেবিল ডিনার সেট, গ্লাস ও বোতল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সবকিছু পিটার্সবার্গে দেহরক্ষী বাহিনীর জীবন মনে করিয়ে দিচ্ছিল। দুটোয় খাবার পরিবেশন করা হয়। টেবিলের মাঝখানে একদিকে বসেছিলেন কজলভস্কি, অন্য পাশে বারিয়াতিনস্কি। কজলভস্কির বাঁ ও ডান দিকে ভরন্তসভ দম্পতি বসেছিল। পুরো টেবিলের দুই পাশে কাবার্ডা আর কুরি রেজিমেন্টের অফিসাররা বসেছিল। বাটলার বসেছিল পোলতোরাৎস্কির পাশে। তারা দুজন ফুর্তিতে গল্প করছিল আর চারপাশের অফিসারদের সঙ্গে মদ পান করছিল। রোস্ট দেওয়া হলে আরদালিরা ঘুরে ঘুরে শ্যাম্পেনের গ্লাস ভরে দিচ্ছিল। পোলতোরাৎস্কি উদ্বিগ্ন হয়ে বাটলারকে বলল, আমাদের কজলভস্কি নিজেকে অভিশাপ দেবে!