সে চাচ্ছে তাকে বিশ-ত্রিশজন বাছাই করা কসাকের পাহারায় গ্রজনিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। কসাকরা তাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা এবং আমাদের বিশ্বস্ত রাখার নিশ্চয়তা হিসেবে কাজ করবে।
প্রিয় প্রিন্স, আপনি বুঝতে পারছেন এসব কারণে আমি কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ, আমার ওপর দায়িত্ব অনেক। তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা হবে হঠকারিতা। তার পালানোর সব পথ বন্ধ করতে হলে আটক রাখতে হবে। আমার মতে, তা অন্যায় হবে এবং কৌশলেও ভুল হবে। ওই রকম ঘটনার খবর খুব তাড়াতাড়ি পুরো দাগেস্তানে ছড়িয়ে পড়বে। তাতে যারা কমবেশি প্রকাশ্যে শামিলের বিরোধিতা করতে চাচ্ছে (সংখ্যায় তারা অনেক) বা যারা ইমামের সবচেয়ে সাহসী ও ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নায়েব, তারা হাজি মুরাদ আমাদের কাছে আসার পর তার সঙ্গে আমাদের ব্যবহারের ওপর লক্ষ রাখছে এবং তাদের পিছিয়ে রাখলে আমাদের ভীষণ ক্ষতি হবে। আমরা হাজি মুরাদকে একজন বন্দী হিসেবে রাখলে পরিস্থিতির সবচেয়ে ভালো ফল হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই আমি মনে করি, আমি যা করেছি, তার চেয়ে ভিন্ন কিছু করা যেত না। একই সঙ্গে আমি মনে করি হাজি মুরাদ আবার পালানোর কথা মাথায় আনলে আমাকেই বিরাট ভুলের জন্য দায়ী করা হবে। এই চাকরিতে এবং বিশেষ করে এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে কোনো ঝুঁকি, ভুল বা দায়িত্ব ছাড়া কোনো সহজ উপায় পাওয়া অসম্ভব না হলেও খুব কঠিন। কিন্তু একবার সঠিক মনে করে কোনো পথ ধরলে তা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে।
প্রিয় প্রিন্স, এই বিষয়টি মহামহিম সম্রাটের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করতে আপনাকে অনুরোধ করছি। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় সম্রাটকে আমার পদক্ষেপ সন্তুষ্ট করলে আমি খুব খুশি হব।
আমি ওপরে যা লিখেছি, তা জেনারেল জাভোদভস্কি এবং জেনারেল কলোভস্কিকেও লিখেছি, যা থেকে পরের জন হাজি মুরাদের সঙ্গে সরাসরি আলাপের নির্দেশনা পেতে পারেন। আমি হাজি মুরাদকে কজলোভস্কির অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করতে বা কোথাও যেতে নিষেধ করেছি। আমি তাকে আমাদের সেনাদলের সঙ্গে বের হতে বলেছি। তা না হলে তাকে আটক করা হয়েছে, শামিল এমন গুজব রটাতে পারে। একই সঙ্গে আমি তাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছি যে সে ভজভিঝেনস্কে যাবে না। কারণ, সে আমার ছেলের কাছে প্রথম আত্মসমর্পণ করে তাকে বন্ধু বানিয়েছে কিন্তু আমার ছেলে সেখানকার কমান্ডার নয় এবং সহজেই ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। যা-ই হোক, ভজভিঝেনস্ক ঘন জনবসতির শত্রুভাবাপন্ন এলাকার বেশি কাছে এবং সে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে যা চায়, তার জন্য গ্রজনিই সব দিক থেকে উপযুক্ত।
তার অনুরোধে বিশজন কসাককে দেওয়ার পরও তার সঙ্গে ক্যাপ্টেন লরিস-মেলিকভকে দিয়েছি। সে একজন চমৎকার অত্যন্ত বুদ্ধিমান অফিসার। সে তাতার বলতে পারে এবং হাজি মুরাদকেও ভালো করে জানে। হাজি মুরাদও তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে বলে মনে হয়। হাজি মুরাদ দশ দিন এখানে থাকার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রিন্স তারখানভের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিল। তারখানভ সুশিন জেলার কমান্ডার এবং সার্ভিসের কাজে এখানে আছে। সে সত্যি একজন যোগ্য লোক, তার ওপর আমার পুরো আস্থা আছে। সে-ও হাজি মুরাদের আস্থা অর্জন করেছে। সে খাঁটি তাতার জানে বলে তার মাধ্যমেই আমরা গোপন ও খুঁটিনাটি বিষয় আলাপ করেছি। আমি হাজি মুরাদের বিষয়ে তারখানভের সঙ্গে আলাপ করেছি। সে-ও একমত যে আমি যা করেছি, সেটাই করা দরকার ছিল অথবা হাজি মুরাদকে জেলে ঢুকিয়ে কড়া পাহারায় রাখতে হতো। (কারণ একবার তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তাকে আটকে রাখা সহজ হতো না), আর তা না হলে তাকে দেশ থেকে বের করে দিতে হতো। কিন্তু পরের দুটোর যেকোনো একটা করলে শামিলের সঙ্গে হাজি মুরাদের ঝগড়ার ফলে আমরা যা সুবিধা পাচ্ছি, তা নষ্ট হয়ে যেত। আর ভবিষ্যতে শামিলের বিরুদ্ধে লোকের বিদ্রোহ বন্ধ হয়ে যেত। প্রিন্স তারখানভ আমাকে বলেছেন যে তার মনে হাজি মুরাদের সত্যবাদিতা নিয়ে সন্দেহ নেই এবং শামিল তাকে ক্ষমা করবে না এবং ক্ষমা করার ওয়াদা না করে মেরে ফেলবে, হাজি মুরাদের এমন বিশ্বাসের ব্যাপারেও তারখানভের নিজের কোনো সন্দেহ নেই। হাজি মুরাদের সঙ্গে মেশার সময় একমাত্র যে বিষয়টি উদ্বেগের বলে তার নজরে এসেছে, তা হলো হাজি মুরাদের ধর্মভক্তি। তারখানভ মানেন যে শামিল হয়তো সেদিক দিয়ে তার ওপর প্রভাব খাটাতে পারে। কিন্তু আমি আগেই যেমন বলেছি, শামিল হাজি মুরাদকে জীবনে তার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারবে না।
প্রিয় প্রিন্স, আমাদের এখানকার বিষয়ে আপনাকে এটাই জানানোর ছিল।
১৫. তিবলিস থেকে প্রতিবেদন
১৫
তিবলিস থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছিল ১৮৫১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। বারোটি ঘোড়াকে হয়রান করে এবং আরও বারোটিকে রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পিটিয়ে একজন বার্তাবাহক নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় সেটা প্রিন্স চেরনিশভের কাছে পৌঁছোয়। তিনি তখন সমর বিভাগের মন্ত্রী। ১ জানুয়ারি ১৮৫২ তারিখে চেরনিশভ অন্যান্য কাগজপত্রের মধ্যে ভরন্তসভের চিঠিটাও সম্রাট নিকোলাসের কাছে নিয়ে গেলেন।
চেরনিশভ ভরন্তসভকে অপছন্দ করতেন। কারণ, সবাই ভরন্তসভকে শ্রদ্ধা করত। আরও কারণ, ভরসভের প্রচুর সম্পত্তি এবং তিনি ছিলেন আসলেই অভিজাত। অন্যদিকে চেরনিশভ দরিদ্র অবস্থা থেকে বড় হয়েছেন। কিন্তু বিশেষ কারণটা ছিল ভরন্তসভের প্রতি সম্রাটের দুর্বলতা। তাই চেরনিশভ যেকোনো সুযোগে ভরসভের ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন।