এখানে হাজি মুরাদ যুদ্ধে তার কীর্তিকলাপের বিবরণ দেন, যার অনেক কিছুই লরিস-মেলিকভ জানত। তার সব আক্রমণ ও হামলা উল্লেখযোগ্য ছিল অসম্ভব দ্রুত চলাচলের জন্য এবং তীব্র আক্রমণের জন্য। তিনি সব সময় জয়ের মুকুট পেয়েছেন।
আমার ও শামিলের মধ্যে কখনো বন্ধুত্ব ছিল না, তার কাহিনি শেষে হাজি মুরাদ বললেন। সে আমাকে ভয় পেত এবং আমাকে তার দরকার ছিল। কিন্তু আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো শামিলের পর কে ইমাম হবে, তখনই ঘটনাটা ঘটল। আমি জবাব দিলাম, যার তলোয়ারে সবচেয়ে বেশি ধার, সে ইমাম হবে!
কথাটা শামিলের কানে ভোলা হয়েছিল এবং সে আমাকে বাদ দিতে চেয়েছিল। সে আমাকে তাসবাসারানে পাঠায়। আমি গিয়ে এক হাজার ভেড়া এবং তিন শ ঘোড়া দখল করলাম। কিন্তু সে বলল আমি ঠিক কাজ করিনি এবং আমাকে নায়েবের পদ থেকে বরখাস্ত করল। সব টাকা তাকে পাঠানোর আদেশ দিল। আমি এক হাজার সোনার মুদ্রা পাঠালাম। সে তার মুরিদদের। পাঠিয়ে আমার সব সম্পত্তি নিয়ে গেল। তার কাছে যেতে আদেশ করল। জানতাম আমাকে মেরে ফেলবে, তাই আমি যাইনি। তারপর সে আমাকে ধরে নিতে পাঠাল। আমি বাধা দিয়ে ভরসভের কাছে গেলাম। আমি পরিবার সঙ্গে নিয়ে যাইনি। আমার মা, স্ত্রী এবং ছেলে তার হাতে। সরদারকে বলল, আমার পরিবার শামিলের হাতে থাকলে আমি কিছু করতে পারব না।
আমি তাকে বলব, লরিস-মেলিকভ বলল।
কষ্ট হলেও চেষ্টা কোরো! আমার যা কিছু আছে, সবই তোমার। শুধু প্রিন্সের কাছে আমার পক্ষে বলে আমাকে সাহায্য করো! আমি বাঁধা পড়ে আছি, আর দড়ির অন্য দিক শামিলের হাতে, তার কাহিনি শেষ করে বললেন হাজি মুরাদ।
১৪
২০ ডিসেম্বর ভরন্তসভ সমর বিভাগের মন্ত্রী চেরনিসভকে নিচের চিঠিটি লেখেন। চিঠিটি ফরাসি ভাষায় লেখা ছিল :
প্রিয় প্রিন্স, গত ডাকে আপনাকে চিঠি লিখিনি। কারণ, হাজি মুরাদকে নিয়ে আমরা কী করতে পারি, আমি প্রথমে সে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। তা ছাড়া গত দু-তিন দিন আমি খুব সুস্থ ছিলাম না।
আগের চিঠিতে হাজি মুরাদের এখানে আসার খবর আপনাকে জানিয়েছি। সে আট তারিখে তিবলিসে আসে। আমার সঙ্গে দেখা হয় তার পরের দিন। পরের সাত-আট দিনে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। ভেবেছি আমরা ভবিষ্যতে তাকে কীভাবে ব্যবহার করতে পারি। বিশেষ করে এখন আমরা তাকে নিয়ে কী করব। সে তার পরিবারের ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রতিবারই সে খোলাখুলি বলেছে তারা শামিলের হাতে থাকলে তার নড়ার শক্তি নেই এবং আমাদের জন্য কিছু করতে পারবে না। তাকে যে যত্ন করা হচ্ছে বা ক্ষমা করা হচ্ছে, তার জন্যও সে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারছে না।
প্রিয় মানুষদের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তাকে অসুস্থ করে ফেলছে। তার কাজ করার জন্য যাদের লাগিয়েছি, তারা আমাকে বলেছে সে রাতে ঘুমায় না। খায় খুব কম আর সারাক্ষণ নামাজ পড়ে। সব সময় কিছু কসাক নিয়ে বের হওয়ার অনুমতি চায়। এটাই তার একমাত্র বিনোদন এবং কায়িক শ্রম হতে পারে। সারা জীবনের অভ্যাস বলে সেটা তার প্রয়োজন। প্রতিদিন সে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে তার পরিবারের কোনো খবর আছে কি না। শামিলকে আমাদের হাতে বন্দীদের বিনিময়ে তার পরিবারকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব পাঠাতে বলে। সে কিছু টাকাও দিতে চায়। সে জন্য তাকে টাকা দেওয়ার মতো লোক আছে। সে সব সময় আমাকে বলে, আমার পরিবারকে বাঁচান এবং আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন (তার মতে সে ভালো হবে লেসঘিয়ান রেখায়), আর এক মাসের মধ্যে যদি আপনাদের কোনো কাজে না আসি, তাহলে আপনাদের যা খুশি শাস্তি দিতে পারেন। আমি বলেছি, এগুলো আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কিন্তু তার পরিবার পাহাড়ি এলাকায় থাকলে এবং আমাদের হাতে পণবন্দী না থাকলে আমাদের মধ্যে অনেকেই তাকে বিশ্বাস করবে না। আরও বলেছি, আমাদের সীমান্তে সব বন্দীকে এক জায়গায় আনার জন্য সম্ভব সবকিছু করছি। তার পরিবারের মুক্তিপণ হিসেবে সে যা জোগাড় করতে পারবে, তার সঙ্গে যোগ করার জন্য আমাদের আইনে আমি তাকে টাকা দিতে পারব না। কিন্তু তাকে সাহায্য করার জন্য হয়তো অন্য কোনো উপায় বের করা যেতে পারে। তারপর আমি তাকে খোলাখুলি বলেছি যে আমার মতে শামিল তার পরিবারকে কোনোভাবেই ছাড়বে না। বরং শামিল তাকে ক্ষমা করে তার আগের পদ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে। আর হাজি মুরাদ ফিরে না গেলে তার মা, স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে পারে। আমি তাকে খোলাখুলি জিজ্ঞেস করেছি শামিলের কাছ থেকে এমন ঘোষণা এলে সে কী করবে। হাজি মুরাদ তার চোখ এবং হাত দুটো ওপরের দিকে তুলে বলেছে, সবই আল্লাহর হাতে। কিন্তু সে কখনো শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। কারণ, সে নিশ্চিত জানে, শামিল তাকে ক্ষমা করবে না। তাই সে বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারবে না। তার পরিবারকে মেরে ফেলার ব্যাপারে তার মন্তব্য শামিল হয়তো অতটা বোকা হবে না। কারণ, প্রথমত, সে চাইবে না হাজি মুরাদ আরও মরিয়া ও বিপজ্জনক শত্রু হোক। দ্বিতীয়ত, দাগেস্তানে অনেকে, অনেক প্রভাবশালী লোক আছে, যারা শামিলকে ওই রকম কাজে বিরত করবে। সবশেষে সে কয়েকবার বলেছে আল্লাহ তার জন্য ভবিষ্যতে যা-ই রেখে থাকুন না কেন, এখন সে তার পরিবারের মুক্তি ছাড়া আর কিছুতে আগ্রহী নয়। সে আমাকে আল্লাহর নামে তাকে সাহায্য করার এবং তাকে চেচনিয়ার কাছাকাছি যেতে অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেছে। সেখান থেকে আমাদের কমান্ডারদের অনুমতি ও সাহায্য নিয়ে সে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও নিয়মিত খবর পেতে চায়। তাদের উদ্ধার করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী, বের করতে চায়। সে বলেছে, ওই এলাকার কিছু লোক, এমনকি কিছু নায়েব তার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে ঘনিষ্ঠ এবং ওই এলাকায় রাশিয়ার অধীন অথবা নিরপেক্ষ লোকদের মধ্য থেকে আমাদের সাহায্য নিয়ে সে সম্পর্ক করতে পারবে, যা তার স্বপ্ন সফল করতে কাজে লাগবে। যে স্বপ্ন তার দিনরাত্রির ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সে সফল হলে সহজে আমাদের উপকারের জন্য কাজ করতে পারবে এবং আমাদের আস্থা অর্জন করতে পারবে।