রাশিয়া ১৮২৬-২৮ সালে পারস্যের সঙ্গে এবং ১৮২৮-২৯ সালে তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকে। ফলে ১৮২৫-৩৩ সালের মধ্যে ককেশীয়দের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযান চলেনি। তুরস্ক ও পারস্যের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পর, রাশিয়া উত্তর ককেশাসের স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ককেশাস যুদ্ধ পুনরায় শুরু করে। রুশ বাহিনী আবারও, বিশেষত গাজি মোল্লা, গামজাতবেক ও হাজি মুরাদের নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ইমাম শামিল তাদের অনুসরণ করেন। তিনি ১৮৫৯ সালে দমিত্রি মিলেউতিনের হাতে বন্দী না হওয়া পর্যন্ত ১৮৩৪ সাল থেকে পাহাড়িদের নেতৃত্ব দেন। ১৮৪৩ সালে শামিল আভারিয়ায় রুশ সীমান্ত ফাঁড়িগুলোর ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালান। ২৮ আগস্ট উসুকুলে ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে তিন দিক থেকে রুশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে ৪৮৬ জনকে হত্যা করেন। পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে শামিল আভারিয়ার একটি বাদে সব রুশ সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেন এবং ২ হাজারের বেশি রুশ রক্ষীকে হত্যা করেন। ১৮৪৫ সালে তিনি রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাড়ি দখলের জন্য আভার ও কাজি-কুমুখ নদীর মিলনস্থলে উত্তর অভিযান চালান। শামিলের বাহিনী সবচেয়ে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছিল প্রিন্স ভরসভের বিশাল রুশ আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়ে।
১৮৫৩-৫৬ সালে ক্রাইমিয়ার যুদ্ধের সময় রুশরা শামিলের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছিল, কিন্তু ১৮৫৫ সালে তা ভেস্তে যায়। ককেশাসের যুদ্ধ শেষ হয় ১৮৫৬ থেকে ১৮৫৯ সালের মধ্যে, জেনারেল বারিয়াতিনস্কির অধীনে ২ লাখ ৫০ হাজার সৈন্যের বাহিনী ককেশীয়দের প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার পর।
উত্তর ককেশাসের পূর্ব অংশে যুদ্ধ ১৮৫৯ সালে শেষ হয়। রুশরা শামিলকে ধরে নিয়ে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল। জারের প্রতি আনুগত্যে বাধ্য করে তাকে কেন্দ্রীয় রাশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়।
যাহোক, সির্কাসীয়রা (মূলত ভৌগোলিক বা ভাষাগতভাবে আদিগে, তবে আবখাজ-আবাজাদেরও এদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়) উত্তর-পশ্চিম ককেশীয় জাতিগোষ্ঠী। তারা উত্তর ককেশাসের পশ্চিমাঞ্চলের যুদ্ধ পুনরায় শুরু করে। ১৮৬৪ সালের মে/জুনে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধোত্তর ঘটনাগুলোর মধ্যে উত্তর ককেশীয়দের ইতিহাসের বিয়োগান্ত পরিণতি হলো (বিশেষ করে সির্কাসীয়দের) মুহাজিরবাদ অথবা মুসলিম জনসংখ্যার অটোমান সাম্রাজ্যে স্থানান্তর।
কাজী জাওয়াদ
বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য
নভেম্বর ২০১৯
১
বাড়ি ফিরছিলাম খেতের ভেতর দিয়ে। তখন গ্রীষ্মের মাঝামাঝি; খড় কাটা শেষ হয়ে গেছে, শুরু হয়েছে রবিশস্য বোনা। বছরের এই সময়টায় অনেক রকম সুন্দর ফুল ফোটে। যেমন লাল, সাদা বা গোলাপি রঙের সুগন্ধি গোছার ক্লোভার। ঝাঁজালো মিষ্টি গন্ধের দুধসাদা বুনো চন্দ্রমল্লিকা, এই ফুলগুলোর বুকে থাকে উজ্জ্বল হলুদ ফোঁটা। মধুগন্ধি রাইসরিষার হলুদ ফুল। লম্বা উঁটার ঘণ্টাকর্ণ, যার নাম সাদা আর লালচে বেগুনি টিউলিপ আকারের ঝুমকা থেকে। আরও ফোটে কলাইয়ের ফুল; হলুদ, লাল ও গোলাপি খোঁচা খোঁচা বোতাম ফুল; হালকা ঘ্রাণের কাষ্ঠকদলী, যার সামান্য গোলাপি আভার বেগুনি পাপড়ি পরিপাটি করে সাজানো। ফোটে যব ফুলের কলি, ভোরের সূর্যে এগুলোর রং উজ্জ্বল নীল, সাঁঝের দিকে বা একটু বড় হলে যা ফিকে ও লাল হয়ে আসে। আর ফোটে কোমল ক্ষণস্থায়ী স্বর্ণলতা ফুল, গন্ধ যার বাদামের মতো। এই সব বিভিন্ন ফুল দিয়ে একটি হোড়া বানিয়ে বাড়ি রওনা হয়েছি, ঠিক তখনই একটা খাদের মধ্যে দেখলাম টকটকে লাল জাতের পুরো ফোঁটা চমৎকার একটা কাটা গেন্ধালির গোছা, আমাদের এলাকায় এই ফুলের নাম তাতার এবং ফসল বা ঘাস কাটার সময় সবাই খুব সাবধানে এটা এড়িয়ে যায় কিংবা কোনোভাবে কাটা পড়ে গেলে দূরে ফেলে দেয়, যেন হাতে কাটা না বেঁধে। ভাবছিলাম কাটা গেন্ধালিটা আমার হোড়াটার ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দেব কি না। তাই খাদের নিচে নামলাম। গোছার একটা ফুলের গভীরে ঢুকে মিষ্টি করে ঘুমিয়ে পড়া মখমলের মতো একটা ভ্রমরকে সরিয়ে ফুলটা তুলতে গেলাম। কিন্তু দেখা গেল কাজটা খুব কঠিন। আমার হাতে একটা রুমাল জড়িয়ে নেওয়া সত্ত্বেও বোটার কাঁটা ফুটল সবদিকে। তার ওপর বোটাটা এত শক্ত যে ওটার আঁশগুলো একটা একটা করে ছিঁড়তে আমার মিনিট পাঁচেক লেগে গেল। ছেঁড়া শেষ হতে দেখলাম বোটাটা পিষে গেছে আর ফুলটাও যেন আগের মতো তাজা আর সুন্দর নেই। আবার ফুলটা শক্ত আর খসখসে হওয়ায় আমার তোড়ার অন্য কোমল ফুলগুলোর সঙ্গে যেন মানাচ্ছিল না। বন্যেরা বনে মানে গাছেই ফুলটা অত্যন্ত সুন্দর। ওটা তোলার বৃথা চেষ্টায় ফুলটা নষ্ট করে ফেলেছি। আমার খুব খারাপ লাগল এবং আমি ওটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
কী শক্তি আর নিষ্ঠা! কী রকম সংকল্প নিয়ে সে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে এবং নিজের জীবন সে কত চড়া দামে বিকিয়েছে! ফুলটি তুলতে আমার যা কষ্ট হয়েছে, সেটা মনে করে আমি নিজে নিজে ভাবছিলাম। বাড়ি যাওয়ার পথটি যে কালো মাটির খেতের ভেতর দিয়ে গেছে, তা কেবল চাষ দিয়ে ওলটানো হয়েছে। আমি ধুলোর পথে উঠলাম। চষা খেতটা একজন জমিদারের এবং এত বড় যে পাশের দুই দিকে এবং আমার সামনে পাহাড়টার চূড়া পর্যন্ত হাল দিয়ে কাটা সীতা আর ভেজা মাটি ছাড়া অন্য কিছু দেখা যাচ্ছিল না। জমিটা খুব ভালো করে চষা হয়েছে, কোথাও একটা ঘাসের পাতা বা অন্য কোনো আগাছা চোখে পড়ে না; পুরোটাই কালো। আহ, মানুষ যে কী ধ্বংসাত্মক প্রাণী… নিজে বাঁচার জন্য কত ধরনের গাছগাছালির জীবন সে ধ্বংস করে! অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাণহীন ওই কালো