আপনি এখানে থামতে পারেন, এবং এখানে সেটি বাতিল করতে পারেন অথবা অধিকাংশ বিবরণ মেনে নিয়ে এবং দ্বিতীয় দরজার ধারণায় প্রবেশ করতে পারেন। ধর্মীয় অভিজ্ঞতার মানবিক দিকটি খুঁটিনাটি বিষয় পরিবর্তন না করেই, বিশ্বাস করা সম্ভব যে, এটিও ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। আমরা সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পারি না যা মোজেস শুনতে পাচ্ছেন, এর কারণ হচ্ছে এটি সেই ঘটনা যেখানে ঈশ্বরের মন সরাসরি মোজেসের মনের সাথে সংযোগ করছে। আমাদের কাছে যা অদৃশ্য আর শ্রবণের সীমানার বাইরে, এটি ছিল আরেকটি বাস্তবতার সাথে সত্যিকারের একটি সাক্ষাৎকার। আমরা পুরোপুরিভাবে সেই ঘটনাটিকে বুঝতে পারি না, কিন্তু আমরা এর পরিণতিগুলো দেখেছি।
দ্বিতীয় দরজার ধারণাটিকে আরেকটি ভিন্ন রূপ দেওয়া যেতে পারে সেই বিষয়টি মনে রেখে যে, প্রতিদিন অন্যদের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মানুষ প্রায়শই কত সহজে ভুল-বোঝাবুঝির স্বীকার হয়। ঈশ্বরের সাথে সাক্ষাতের যে দাবিগুলো তারা করছেন, সেই সম্বন্ধে বিচার করার সময় তাদের সতর্ক হওয়া উচিত হবে এবং সংশয় আর পরিমিত সংযমের সাথেই তাদের বিবেচনা করা উচিত। এর মানে হচ্ছে ধর্মীয় দাবিগুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করা উচিত, শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব আত্মবিশ্লেষণের ভিত্তিতে সেটি গ্রহণ করা উচিত নয়।
সুতরাং আপনি একজন অবিশ্বাসী, একজন সত্যিকার বিশ্বাসী অথবা সচেতন সমালোচনামূলক বিশ্বাসী হতে পারেন। যখন আপনি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন হয়তো আবিষ্কার করবেন সময়ের সাথে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে আপনি জায়গা বদল করেছেন, যেমন অনেকেই করেন। এই বইতে যে গল্পগুলো আপনি পড়বেন সেগুলো ব্যাখ্যা করার সেরা উপায় কোটি, সেই বিষয়ে নিজের মনস্থির করার দায়িত্ব আমি আপনার ওপরেই ছেড়ে দেব, অথবা এই বিষয়টি অনির্ধারিত রাখুন যতক্ষণ-না শেষ পৃষ্ঠা অবধি পড়ছেন। আর এমনকি কোনো সিদ্ধান্ত না নেবারও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একটি অবস্থান, যা পরিচিত ‘অ্যাগনস্টিসিজম’ বা অজ্ঞেয়বাদ নামে, এর উৎস একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ ‘যা জানা সম্ভব নয়’ বা অজ্ঞেয়।
আপাতত আমরা ধর্মকে নিয়ে ভেবেছি সাধারণ একটি অর্থে। এবার সুনির্দিষ্টভাবে একক ধর্মগুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করা হবে, সেটি বেশ কৌতূহলী একটি প্রশ্ন। যেমন, চামাদের কোন্ ক্রম অনুসরণ করা উচিত হবে? বিজ্ঞান বা দর্শনের ইতিহাসের ব্যতিক্রম, ধর্মের ব্যাপারে কঠোর সময়ানুক্রমিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেনা। ভিন্ন ভিন্ন জিনিস একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় একই সময়ে ঘটেছিল, সুতরাং আমরা কোনো নিরবচ্ছিন্ন। ক্রমবিকাশের ইতিহাস অনুসরণ করতে পারব না। আমাদের সময়ের ক্ষেত্রে এবং ভৌগোলিকভাবে আঁকাবাঁকা পথই বেছে নিতে হবে।
এই পদ্ধতির একটি সুবিধা হচ্ছে এটি আমাদের প্রদর্শন করে যে, একেবারে শুরু থেকে মানবতার বড় প্রশ্নগুলোর যে-সমস্ত উত্তর বিভিন্ন ধর্ম দিয়েছে, সেগুলো আসলেই কত বিচিত্র ছিল। প্রশ্ন হয়তো একই হতে পারে, ‘কেউ কি আমাদের উপরে আছেন?’ আর, ‘মৃত্যুর পর কী হয় আমাদের সাথে’? কিন্তু উত্তরগুলো পরস্পর থেকে খুবই ভিন্ন ছিল। আর সে-কারণে ধর্মের ইতিহাস এত বিস্ময়কর আর আকর্ষণীয়।
সৌভাগ্য যে, আমাদের যাত্রাপথের একটি সুস্পষ্ট সূচনাবিন্দু আছে। জীবন্ত সব ধর্মগুলোর মধ্যে এটি অবশ্যই সবচেয়ে প্রাচীনতম ধর্ম এবং বহুভাবেই বর্তমানে জীবিত কোনো ধর্মের চেয়ে অনেক বেশি জটিল — হিন্দুধর্ম। সুতরাং আমরা ভারত থেকেই শুরু করব।
০৩. চাকা
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির একটি জনপ্রিয় মূলভাবনা হচ্ছে, একজন নায়ক সময়ের অতীতে যিনি ফিরে যান, অতীতের কিছু ঘটনা পরিবর্তন করতে, মানব-ইতিহাসের ওপর যে ঘটনাগুলো ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছিল। এরকমই একটি গল্পের শুরুতে আমরা দেখি, উন্মত্ত, সন্ত্রাসী একজন বোমাবাজসহ একটি রেলগাড়ি রেললাইন ধরে দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে। এবং রেলগাড়িটি যখন বিশাল একটি বাঁধের উপর দিয়ে অতিক্রম করছিল, সে বোমা বিস্ফোরণ করে এটিকে উড়িয়ে দেয়, এবং সেই বাঁধটি ভাঙার কারণে পুরো শহরটি নিমজ্জিত করার মতো ভয়াবহ প্লাবনের সৃষ্টি করে। সৌভাগ্যজনকভাবে সরকারের একটি গোপন বিভাগ একটি কৌশল পরিশীলিত করেছিল, তারা চাইলে যে-কোনো একজন ব্যক্তিকে অতীতের কোনো নির্দিষ্ট একটি সময়ে পাঠিয়ে দিতে পারে। এই নতুন যন্ত্র ব্যবহার করে এই রেলগাড়িটি স্টেশন ত্যাগ করার আগেই তারা তাদের একজন এজেন্টকে সেই রেলগাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। বোমাবাজকে খুঁজে বের করা এবং বোমাটিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য তাকে দুইঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় অতিক্রান্ত হবার কয়েক মুহূর্ত আগে সেই এজেন্টটি তার মিশনটি সফল করতে পেরেছিলেন, শহরটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল। আমরা অধিকাংশই এভাবে অতীতে ফিরে যাবার ইচ্ছা পোষণ করেছি, যেমন, কিছু ঘটার আগে একটি ম্যাসেজ যদি মুছে ফেলতে পারি অথবা কিছু করার তাড়না ঠিক সময়মতো দমন করতে পারি যা অন্যদের কষ্ট দিয়েছে এবং আমাদের জন্যে কেবল দুঃখের কারণ হয়েছে। কিন্তু ‘ল অব কনসিকোয়েন্স’ (পরিণতির সূত্র অথবা একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার পরে ঘটবে এমন একটি শর্ত) পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর আমরা যা করেছিলাম তার পরিণতিসহ আটকা পড়ে যাই।