কিন্তু বিষয়টি শস্তা নয়। আপনাকে এইসব নিরাময়ের পদ্ধতিগুলোর জন্যে সত্যিকারের অর্থ ব্যয় করতে হবে। আর এগুলো খুবই ব্যয়সাধ্য। সায়েন্টোলজির রহস্যগুলোর যত ভিতরে আর গভীরে আপনি প্রবেশ করবেন, তত বেশি আপনাকে নগদ অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। আর সে-কারণে এর সমালোচকরা বলেন, এটি আসলে ‘ব্যবসা’, কোনো ধর্ম নয়। যার উত্তরে সায়েন্টোলজিস্টরা দাবি করেন যে, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে টাকা আদায় করতে অন্য ধর্মগুলোও তাদের নিজস্ব উপায় ব্যবহার করে, তাহলে তারা কেন সেটি করতে পারবে না? লাফায়েট রন হুবার্ড ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি আবার একজন সায়েন্টোলজিস্ট, নাকি অন্য কোনো রূপে ফিরে এসেছেন, তা বলা অসম্ভব। সুতরাং আমরা জানি না তিনি এখনো তার উদ্ভাবিত এই প্রোগ্রামে আছেন কিনা।
সায়েন্টোলজির মতো ধর্মগুলো একের-পর-এক আবির্ভূত হতে থাকে, এবং তারা তাদের ধর্ম নিয়ে যা কিছু দাবি করেন, সেখানে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। হয়তো এর কারণ, যেমন, ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব ইকলিজিয়াস্টিজ বলেছে, কোনোকিছু সম্বন্ধেই আর নতুন কিছু বলার নেই : যা কিছু ছিল তাই থাকবে এবং যা কিছু করা হয়েছে সেগুলো আবার করা হবে, এবং এই সূর্যের নিচে নতুন কিছুই নেই। আর এটি অবশ্যই সত্য শেষ যে, ধর্মটির ক্ষেত্রে, যা নিয়ে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি এই অধ্যায়ে : ‘দি ইউনিফিকেশন চার্চ অথবা হলি স্পিরিট অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ইউনিফিকেশন অব ওয়ার্ল্ড ক্রিশ্চিয়ানিটি, যাদের ডাকনাম হচ্ছে, মুনিস’, আর তারা এই নামটি পেয়েছেন তাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং নবী সুন মিউঙ মুনের নাম থেকে। মুন ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যখন তার বয়স ষোলো, একবার যিশু তার সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন, তার লক্ষ্য পূরণ করতে তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। মুন যৌনতার ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইভ/হাওয়া ভালোবাসা থেকে এটিকে পৃথক করে মানবতার জন্যে যৌনতাকে ধ্বংস করেছে। অ্যাডামের সাথে মিলন করা ছাড়াও, সে শয়তানের সাথে মিলিত হয়েছিল। এবং সেই কলঙ্ক পরবর্তীতে মানবতার মধ্যে প্রবেশ করেছে।
সুতরাং এই পরিস্থিতির সমাধান করতে ঈশ্বর যিশুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার পরিকল্পনাটি ছিল, তিনি বিয়ে করবেন এবং পাপমুক্ত সন্তান উৎপাদন করবেন। এভাবে সায়েন্টোলজি থেকে একটি শব্দ ধার করে মানবতার যৌন-অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রবিষ্ট ইভ/হাওয়ার সেই পাপের ইমপ্লান্ট’ বিশোধন করা যেতে পারে এবং যিশু ও তার স্ত্রী পাপহীন সন্তান উৎপাদন করতে পারবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সঠিক সঙ্গিনী খুঁজে বের করার আগেই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল, এবং সে-কারণে মানবজাতিকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঈশ্বরের পরিকল্পনা আবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি আবার সফল হবার সব সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যিশুর অসমাপ্ত কাজটি সম্পূর্ণ করতে সুন মিউঙ মুনকে মেসাইয়া হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর একটি আদর্শ পরিবার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে এটি করা সম্ভব হবে, যার ভালোবাসার বিশুদ্ধতা অবশেষে ইভ/হাওয়ার পাপের নিষ্পত্তি করবে।
মুনের অবশ্য চতুর্থ স্ত্রীর জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, যিনি তার জন্যে সবচেয়ে সঠিক সঙ্গী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। এবং বিয়ের মাধ্যমে তিনি তার মানবতার আত্মার মুক্তির আন্দোলনটি শুরু করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারপর তিনি তার অনুসারীদের তার উদাহরণ অনুসরণ করতে বলেন। আর তিনি সেটি একটি সম্মিলিত অনুষ্ঠানে করতে তাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন, যেখানে কিছু সম্মানীর বিনিময়ে কয়েক হাজার দম্পতি একই সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই তাদের সঙ্গী নির্বাচন করে দেওয়া হয়েছিল। এটি নিশ্চয়ই বেশ ব্যবসা-সফল একটি পরিকল্পনা ছিল। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ৯২ বছর বয়সে যখন সুন মিউঙ মুন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন তার সম্পদের মূল্য ছিল প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার।
ইউনিফিকেশন চার্চ সত্তরের দশকে পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং এর সদস্য হতে বহু তরুণকে এটি আকৃষ্ট করেছিল। ধর্মটির মূল শিক্ষার এই সংক্ষিপ্ত রেখাচিত্রটি প্রদর্শন করে কীভাবে ধর্মে ‘দ্য ফল, পাপে পতিত হওয়া এবং পরিত্রাণ পাবার মূল ধারণাগুলোর পুনরাবৃত্তি আর পুনর্নবায়ন করা হয়েছে। মানব অসন্তুষ্টি নিরন্তর এর সমস্যাগুলোর সমাধান অনুসন্ধান করে। আর সবসময়ই আরো একটি নতুন ধর্ম সরবরাহ করতে অত্যুৎসাহী কেউ মঞ্চের উইংএ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। আর সে-কারণে পরের অধ্যায়ে একটি আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করা স্বস্তির মনে হতে পারে, যাদের উদ্দেশ্য ধর্মের সংখ্যা বহুগুণে বাড়ানো নয় বরং তাদের একত্রে নিয়ে আসা।
৩৭. দরজা উন্মুক্ত করা
আপনার ধর্মীয় শব্দভাণ্ডারে যোগ করার মতো একই উপযোগী শব্দ হচ্ছে। ‘একুমেনিকাল। শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘ওইকস’ থেকে, যার অর্থ একটি বাড়ি, এটিকে ‘ওইকুমেনে’ অথবা সমগ্র মানবতার ধারণায় সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই পরিবর্তনটি মূলত বনু দরজার পেছনে আবদ্ধ থাকা একটি একক পরিবার থেকে পৃথিবী সমগ্র মানবতার অংশে পরিণত হওয়া। একুমেনিকাল মানে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এবং সবার সাথে আমাদের যা কিছু সাধারণ, সেগুলো উদ্যাপন করা। এর মানে বন্ধ দরজার পেছন থেকে বের হয়ে এসে আমাদের প্রতিবেশীদের হাতে হাত রাখা। এই ধরনের বেরিয়ে আসা বিংশ শতাব্দীতে ধর্মগুলোর একটি বড় কাহিনি। এটি ঘটেছিল বেশ কয়েকটি জায়গায়, কিন্তু আমরা খ্রিস্টধর্ম দিয়েই শুরু করব।