ধর্মপ্রচারকারী মিনিস্টার টিম লাহায়েকে বলা হয় গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান। তিনি মূলত যিশুর দ্বিতীয় আগমনের কাহিনিতে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন, বলা যায় একধরনের বৈদ্যুতিক উত্তেজনা তিনি সেখানে সঞ্চারিত করেছিলেন। তার লেফট বিহাইন্ড’ ধারাবাহিকে ষোলোটি উপন্যাস আছে। সমসাময়িক প্রেক্ষাপট থেকে বইগুলো এর শক্তি সঞ্চয় করেছে। এই বইগুলোর কাহিনির প্রেক্ষাপট ইজরায়েল নয়। এটি ঘটছে এখনই, বর্তমান এই সমস্যাপূর্ণ আর সহিংস পৃথিবীতে। ‘দ্য রাপচার’ নামে পরিচিত এই বইগুলোর ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটেছে, অর্থাৎ শেষ শুরু হয়েছে। এবং সত্যিকারের বিশ্বাসীরা যে-মুহূর্তে এটি শুরু হয়েছে, তারা সেই মুহূর্তে যা কিছু করছিলেন সেখান থেকে স্বর্গে আরোহণ করেছেন। তারা যদি তখন গাড়ি বা উড়োজাহাজ চালাতে থাকেন, তাদের চালকের সিট থেকে অনন্তজীবনে টেনে তুলে নেওয়া হয়েছে, তাদের পরিত্যক্ত গাড়ি বা উড়োজাহাজ চোখ-ধাঁধানো বিস্ফোরণে বিস্ফোরিত হয়েছে।
আর ‘লেফট বিহাইন্ড’ বিশ্বটি বিশৃঙ্খলতায় পতিত হয়েছে, এবং সবাই পাগলের মতো একজন নেতাকে খুঁজছেন, যিনি তাদের এই ভয়াবহ আতঙ্কিত পৃথিবী থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। এবং একজন আবির্ভূত হয়েছিলেন সেই দৃশ্যে। তারা তাকে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে নির্বাচিত করেছিল, কারণ তাদের মনে হয়েছিল, তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই গ্রহে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু পৃথিবীর মানুষরা যা জানতেন না, সেটি হচ্ছে তিনি আসলে বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণী করা সেই অ্যান্টি-ক্রাইস্ট বা খ্রিস্টবিরোধী একজন চরিত্র। একজন প্রতারক, যিনি পৃথিবীকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। সেই বিস্ট বা পশু! যদি এই কাহিনিটি রিফরমেশনের সেই সময়ের হতো, তাকে হয়তো তারা পোপের আসনে বসাতেন। কিন্তু খ্রিস্টীয় আমেরিকানদের ঘৃণার পাত্র আজ আর পোপ নয়। এটি হচ্ছে জাতিসংঘ। উপন্যাসগুলোয় একজন পাইলট আর তার কিছু বন্ধু খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন কী ঘটছে। তারা এই নতুন অ্যান্টি-ক্রাইস্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন, যারা বাকি সব প্রত্যাখ্যাতদের প্রস্তুত করেন সেই ‘গ্রেট ট্রাইবুলেশন’ পর্বের জন্যে, আর সেটি হচ্ছে পৃথিবীর শেষদিনটির একটি ভূমিকা। এ-যাবৎ এই উপন্যাসগুলোর ৬৫ মিলিয়ন কপি বিক্রয় হয়েছে। মহাপ্রলয় বা শেষদিনের ধর্ম নিয়ে এখনো অনুশীলন অব্যাহত রাখতে আমেরিকার যথেষ্ট পরিমাণ দম আছে।
কিন্তু এটাই একমাত্র ধর্ম নয়, গত শতবছরে সেখানে যা আবির্ভূত হয়েছিল।
৩৬. অতীন্দ্রিয়বাদী এবং চলচ্চিত্র তারকা
ধর্মের ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা চার্চ আর সেক্ট বা ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে একটি পার্থক্য। চিহ্নিত করে থাকেন। একটি চার্চ কোনো একটি সেক্ট থেকে সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি জটিল। এটি নানাধরনের বিশ্বাসকে ধারণ করে, আর সেই বিশ্বাসগুলোর মধ্যে একধরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করে। কোনো সেক্ট বা ধর্মগোষ্ঠী মূলত ধর্মের কোনো একটি বিশেষ দিককে আঁকড়ে ধরে, আর সেটাই তাদের ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়। আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি কীভাবে সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস আর জিহোভাস উইটনেস বাইবেলের কিছু অংশের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল, যে-অংশটি শেষবিচার এবং সময় আর ইতিহাসকে সমাপ্ত করতে যিশুর প্রত্যাবর্তনের বিষয় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। আর সে-কারণেই শ্রেণিবিন্যাসকারীরা তাদের বোর্ডের উপর এদের চার্চ নয় বরং সেক্ট হিসাবে পিন দিয়ে সেঁটে রাখেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার বোস্টনে ‘দ্য চার্চ অব ক্রাইস্ট সায়েন্টিস্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আর এটিকেও একটি সেক্ট হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। যিশুখ্রিস্টের জীবনে একটি বিশেষ দিকের ওপর এই গোষ্ঠীটি জোর দিয়েছিল এবং যে-বিষয়টিকে তারা তাদের গোষ্ঠীর মূল ভাবনা হিসাবে অনুসরণ করেছিল।
আর সেই দিকটি হচ্ছে একজন হিলার বা নিরাময়কারী হিসাবে যিশুর কাজ, যা ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স (খ্রিস্টীয় বিজ্ঞান)-এর মূল লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করেছিল। আর যে নবী এই আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি ছিলেন মেরি বেকার, ১৮২১-এ নিউ হ্যাঁম্পশায়ারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মেরি শৈশব থেকেই অসুস্থ আর বেশ দুর্বল শরীরের ছিলেন, আর বিরতিহীন অসুস্থতা আমৃত্যু তাকে অনুসরণ করেছিল। মার্কের গসপেলে বর্ণিত সেই নারীর মতো, যাকে চিকিৎসকের হাতে অনেক দুর্দশা সহ্য করতে হয়েছিল, আরোগ্য অনুসন্ধানে মেরিও অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন। গতানুগতিক চিকিৎসা ছাড়াও তিনি সম্মোহন ও অন্যান্য বিকল্পপদ্ধতিও চেষ্টা করেছিলেন। কোনোকিছুই বেশিদিন কাজ করেনি। তারপর ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি একবার বরফে ঢাকা রাস্তায় পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন এবং সেই আঘাতে তার মেরুদণ্ডের বেশ ক্ষতি হয়েছিল। তবে চিকিৎসার জন্যে এবার তিনি ভিন্নকিছু চেষ্টা করেছিলেন। তিনি চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে না গিয়ে। বরং নিউ টেস্টামেন্টে একটি সমাধান খুঁজেছিলেন। ম্যাথিউ’র গসপেলের একটি অংশ নিয়ে ধ্যান করার সময়, যেখানে যিশু একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি নিজেও সেই নিরাময়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। আর শুধুমাত্র তার ক্ষতিগ্রস্ত মেরুদণ্ডেরই নিরাময় হয়নি, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন তিনি সেই বিজ্ঞানটি আবিষ্কার করতে পেরেছেন, যা যিশুর এই আরোগ্যদান করার ঘটনাগুলোর ভিত্তি।