সুতরাং প্রাচীন সেই ইজরায়েলাইটদের সাথে সাক্ষাৎ করার অধীর আগ্রহ নিয়ে ব্রিগহাম ইয়ং বহু ওয়াগন ভর্তি কয়েক হাজার মর্মনদের নিয়ে তাদের নতুন ‘জাইওনে’ অভিনিষ্ক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুত স্পষ্ট হয়েছিল যে, মর্মনরা যা উটেদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেছিলেন আর উটেরা তাদের নিজেদের জন্যে যা চেয়েছিলেন সেটি সংগতিপূর্ণ ছিল না। এটি পুরো মহাদেশ জুড়ে ঐসব সাক্ষাতের আরেকটিতে পরিণত হয়েছিল, যা আদিবাসী আমেরিকানদের জন্যে ভয়াবহ সর্বনাশী প্রমাণিত হয়েছিল। ইয়ং যে-বিষয়টিকে সভ্যতার অভ্যাস’ নামে চিহ্নিত করেছিলেন, তিনি লক্ষ করছিলেন সেটি স্থানীয় আদিবাসী উটেদের জীবনযাত্রার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। আর সভ্যতাকে এখানে অবশ্যই জিততে হবে। উটেদের সংরক্ষিত এলাকায় সীমাবদ্ধ রেখে ইউটাহ মর্মনদের পবিত্রভূমিতে পরিণত হয়েছিল। যখন মেক্সিকোর সাথে যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউটাহ রাজ্য দখল করেছিল। ইয়ং এই রাজ্যের প্রথম গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন। চার্চ অব দ্য ল্যাটার-ডে সেইন্ট অবশেষে একটি স্থায়ী ঠিকানা সুরক্ষিত করতে পেরেছিল। কিন্তু এর জন্যে একটি মূল্য দিতে হয়েছিল। তার আগের নেতা স্মিথের মতো, ইয়ং নিজেও বহু বিবাহ করেছিলেন। তার বিশজন স্ত্রী ছিলেন আর তিনি সাতচল্লিশটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। যদি তিনি চান যে মর্মনরা শান্তিতে তাদের বিশ্বাস পালন করুক, তাহলে ফেডারেল সরকারের সাথে তাকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে, যে সরকার এই বহুবিবাহপ্রথার সমর্থক ছিল না। তারা বহুবিবাহপ্রথা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়েছিল, যদিও এর আকর্ষণ কখনোই ম্লান হয়ে যায়নি। মর্মনবাদের ইতিহাসে সবসময় কিছু নেতা এসেছিলেন, যারা চার্চ জীবনের অংশ হিসাবে এটিকে পুনর্বহাল করার প্রচেষ্টা করেছেন, যা তাদের নবী জোসেফ স্মিথের মূল সংস্করণের সাথে মানানসই ছিল। সাধারণত তারা তেমন কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তাদের জন্যে সান্ত্বনা পুরস্কার ছিল। বহুবিবাহ স্বর্গে এখনো প্রচলিত। যদি কোনো পুরুষের স্ত্রী পৃথিবীতে মারা যান এবং তিনি যদি আবার বিবাহ করেন, পরকালে তিনি দুই স্ত্রীকে তার সাথে রাখতে পারবেন।
চার্চ অব দ্য ল্যাটার-ডে সেইন্টের একটি বর্ণিল সূচনা হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে এটি অনেক সংযত একটি রূপ। মর্মনরা তামাকসহ কোনো ধরনের মাদক সেবন করেন না। এছাড়া তারা মদ্য, কফি অথবা চা পান করেন না। তাদের জন্যে উল্কি আঁকা কিংবা গায়ে কোথাও ছিদ্র করে আংটি পরাও নিষিদ্ধ। তারা জুয়া খেলেন না। বিয়ের আগে তারা সহবাস করেন না। তারা পারিবারিক জীবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং বিয়ের পরে সাধারণত তারা অনেক সন্তানের জন্ম দেন। তারা কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন এবং তাদের অনেকেই খুব বিত্তশালী ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন। এবং তাদের তরুণরা তাদের জীবন থেকে দুই বছর দেশে অথবা বিদেশে মিশনারি কাজের জন্যে উৎসর্গ করে। কোনো রাস্তায় হয়তো তাদের সাথে আপনার হঠাৎ দেখা হয়েও যেতে পারে।
৩৫. মহা-হতাশা
ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিউইয়র্ক রাজ্যে জোসেফ স্মিথই শুধু একমাত্র নবী ছিলেন।
। আর তার চার্চ অব দ্য ল্যাটার-ডে সেইন্টসও শুধু সেখানে আবির্ভূত হওয়া একমাত্র নতুন ধর্ম ছিল না। অনেক উদ্দীপনা ছিল চারিদিকে কিন্তু সেই উদ্দীপনাগুলোর অনুসরণকারীরা সবাই একই দিকে তাকাননি। স্মিথ মাটি খুঁড়ে অতীতের একটি নতুন সংস্করণ আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ ছিলেন যারা অতীতে নয় বরং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চেয়েছিলেন। তারা অতীত নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। তারা ভবিষ্যতের দিকে তাদের মনোযোগ দিয়েছিলেন, কারণ বাইবেলে যিশুর প্রত্যাবর্তন-সংক্রান্ত ঐসব প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ হবার সময় আসন্ন। তিনি ফিরে আসছেন এবং খুব শীঘ্রই সেটি ঘটবে!
আর এই বিষয়ে যে-ব্যক্তিটি সবচেয়ে নিশ্চিত ছিলেন, তিনি ছিলেন লো হ্যাঁম্পটনের বাসিন্দা উইলিয়াম মিলার। মিলার খুবই মনোযোগী একজন বাইবেল পাঠক ছিলেন। নিউ আর ওল্ড টেস্টামেন্টের সেই সূত্রগুলো তাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছিল, যা জীবন্ত আর মৃতদের বিচার করার জন্যে খ্রিস্টের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি সম্বন্ধে পূর্বধারণা করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, নিশ্চয়ই বাইবেলে গোপন কোনো সংকেত আছে, যা তাকে যিশুর দ্বিতীয় আগমনের সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ জানাতে পারে, যদি কিনা তিনি বিষয়টি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, ডানিয়েল হচ্ছে পড়ার জন্যে সেই বইটি, যদি আপনি এই রহস্যের সমাধান খোঁজার খেলাটি খেলতে আগ্রহী হন। আর ঠিক সেখানেই মিলার সেই সংকেতগুলো খুঁজে পেয়েছিলেন, যা তিনি খুঁজছিলেন।
ডানিয়েলের অষ্টম অধ্যায়ে নবী লিখেছিলেন : ‘দুই হাজার আর তিনশো দিন অতিক্রান্ত হবার পর; সেই আশ্রয়স্থল বিশুদ্ধ হবে’। মিলার নিশ্চিত ছিলেন যে এটাই সেই সংকেত, যার অনুসন্ধান তিনি করছিলেন। এর মানে ২৩০০ বছর! সামনের দিকে গণনা করে তিনি সেই তারিখটি নির্ধারণ করেছিলেন, যেদিন খ্রিস্ট আবার ফিরে আসবেন : ২১ মার্চ, ১৮৪৪। তিনি এর জন্যে প্রস্তুত হয়েছিলেন। কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি। তিনি মনে করেছিলেন, নিশ্চয়ই তার গণনায় কোনো ভুল হয়েছে। সুতরাং তিনি আবার চেষ্টা করেছিলেন, এবার তিনি পেলেন এই বছরের ২২ অক্টোবর। কিন্তু সেই দিনটিও এসে চলে গিয়েছিল। আবারও কিছুই ঘটেনি। মিলার ও তার অনুসারীদের জন্যে এই ব্যর্থতা ‘গ্রেট ডিসাপয়েন্টমেন্ট (বা মহা আশাভঙ্গের ঘটনা) নামে পরিচিত ছিল। সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে মিলার এই ভবিষ্যদ্বাণীর খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু অন্যরা এই খেলা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং ১৮৬০ সালে তারা নিজেরাই একটি ধর্মগোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন তাদের নিজস্ব নবীসহ। তারা নিজেদের ‘সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট’ নাম দিয়েছিলেন, অ্যাডভেন্টিস্ট, কারণ যিশু খুব শীঘ্রই ফিরছেন এই বিশ্বাসটি তারা ধরে রেখেছিলেন, যদিও তারা সঠিক তারিখটি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এটি ‘সেভেন্থ ডে’ কারণ, তারা রোববার নয়, শনিবারকে তাদের সাবাথ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তারা সাবাথকে সপ্তাহের প্রথম দিনের বদলে শেষদিন হিসাবে চিহ্নিত করার জন্যে ক্যাথলিক চার্চকে অভিযুক্ত করেছিলেন। আর এই সাবাথ পরিবর্তনের ব্যাপারটি রোমের চার্চের বিরুদ্ধে তাদের সব অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ন্যূনতম একটি অভিযোগ ছিল। ক্যাথলিক চার্চের পোপ এখন খ্রিস্ট-বিরোধী, এ বিষয়ে তারা স্কটিশ সংস্কারক জন নক্সের সাথে একমত ছিলেন।