আপনি রায়ান-এর সাথেও সংযোগ স্থাপন করতে পারেন যিনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাকে লিখেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে– যতই তিনি চাইতেন তার প্রকল্পটি কাজ করুক, এর পেছনে সময় ব্যয় করা তার কাছে ততই কঠিন মনে হতো। এটা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন এবং এর আসল কারণ ছিল ব্যর্থতার ভয়।
আমার ভালো লেগেছে যা তিনি সবশেষে বলেছিলেন– জয় হোক কিংবা পরাজয়, অন্তত আমি কিছু একটা তো করেছি। নিজের সঙ্গে সৎ হতে এবং যা করা প্রয়োজন তার উপর ফোকাস করাটা কতটা কঠিন তা স্বীকার করতে প্রচুর পরিমাণ সাহস লাগে।
আরেকটি নিখুঁত উদাহরণ হলো স্কট, আমাদের পি-এইচ-ডি ছাত্র। মনে আছে তিনি কি লিখেছিলেন? নিজের জন্য আমার অনেক উচ্চাশা রয়েছে। প্রতিবার যখনি তিনি বিলম্ব করেন, তার লজ্জা ও অপরাধবোধ হয়। ঐ নেতিবাচক অনুভূতিগুলো পরবর্তীতে স্কট-এর জন্য আরো বেশি চাপ তৈরি করে যেমনটি তিনি বলেছিলেন– আমার দ্বারাই আত্মবিশ্বাসগুলো পরবর্তীতে বিবর্ণ হতে শুরু করে। আর এই কারণে তিনি আরো অধিক চাপ অনুভব করেন এবং এমনকি আরো অধিক দীর্ঘসূত্রতার উদ্ভব হয়।
সুতরাং, স্কট-এর প্রতি এই পরামর্শ প্রয়োগ করা যাক, প্রথম ধাপ– নিজেকে ক্ষমা করার মাধ্যমে চক্রটি বন্ধ করুন। পাঁচ সেকেন্ড সময় নিন ৫-৪-৩-২-১, মানুষকে বিপর্যস্ত করা, পিছিয়ে পড়া এবং নিজের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ না করার জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যদি বুঝে গিয়ে থাকেন যে, ল্যাব-এ আপনার দীর্ঘসূত্রতার কারণ হলো অর্থ সংক্রান্ত চাপ, তাহলে আপনার জন্য এটি একটি সুযোগ– নিজেকে প্রমাণ করার ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার। প্রসঙ্গক্রমে, আপনি নিয়ন্ত্রণ নিতে চান যাতে করে আপনার লক্ষ্য পূরণ হয় এবং আপনি যা হতে চান তা হতে আপনাকে সাহায্য করে।
এটা আমাদেরকে দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।
ভবিষ্যতে আপনি কি করতে চান?
আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন। ড. পাইচিল-এর গবেষক দল আমাদের বর্তমান সত্তা ও ভবিষ্যৎ সত্তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, গবেষণা প্রমাণ করে যে আপনি যখন আপনার ভবিষ্যতের আপনাকে আঁকতে সক্ষম হবেন, এটা বর্তমানের আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যবস্তু স্থির করে দেবে। গবেষকরা যখন মানুষকে তাদের ভবিষ্যতের ছবি প্রযুক্তির মাধ্যমে এঁকে দেখিয়েছেন, দেখা গেছে ভবিষ্যতের জন্য তারা আরো বেশি করে সঞ্চয় করছেন। আমার ধারণা দৃষ্টি সংস্থা কাজ করার এটি একটি ব্যাখ্যা। তারা আপনার ভবিষ্যতের ছবি এঁকে দিতে সাহায্য করবে যা বর্তমান আপনার জন্য চাপ মানিয়ে নেয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং, মি. স্কট, একটি দৃষ্টি সংস্থা তৈরি করুন অথবা একটি মানসিক প্রতিচ্ছবি যা আপনার বর্তমান ছাত্র জীবনের চাপকে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের প্রফেসর স্কটকে প্রদর্শন করবে। যে মুহূর্তে আপনার নিজেকে আপনি দীর্ঘসূত্রতার ভেতর আবিষ্কার করবেন, জিজ্ঞেস করুন– প্রফেসর স্কট এক্ষেত্রে কি করবেন?
এটা আমাদেরকে তৃতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দিয়ে শুরু করুন
অবশেষে একবার আপনি যখন বুঝতে পারবেন দীর্ঘসূত্রতার উৎস কি, ড. পাইছিল-এর প্রিয় উপদেশ হলো– শুরু করে দিন। শুরু করার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনিই একমাত্র কথা বলছেন না, গবেষকদের মতে নতুন অভ্যাস তৈরি করার শক্তিশালী উপায় হলো– একটি প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা সৃষ্টি করা। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির চাইতে ভালো প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা আর কিছু হতে পারে না। এখন আমিও এইসব বিজ্ঞান বুঝতে পারছি। আমি ব্যাখ্যা করতে পারব কেন শুরু করে দিন ধারণাটি কাজ করে থাকে।
দীর্ঘসূত্রতা যদি একটি অভ্যাস হয়ে থাকে, আপনাকে তাহলে খারাপ (পরিহার) আচরণের ধরনটিকে ইতিবাচক আচরণ (শুরু করা) দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।
→ যে মুহূর্তে আপনি দ্বিধাবোধ করেন, আপনি সহজ কাজগুলো করেন অথবা কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে চলেন। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে রুলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা করা আপনার জন্য অতি প্রয়োজন, তা করতে নিজেকে ধাক্কা দিন।
→ শুরু করা আমাদের প্রকৌশলকে সিসকো ও লোকাস অব কন্ট্রোল এ ফিরিয়ে নিয়ে যায়। দীর্ঘসূত্রতার কারণে আপনার মনে হবে নিজের উপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যখনি আপনি নিজেকে যাচাই করবেন এবং শুরু করে দেবেন, আপনি সেই মুহূর্তটি ও আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।
ডানিয়েলা তার অনুশীলনে রুলটিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ক্ষমতাবান ও সক্ষম বোধ করেছিলেন যা আমাদেরকে দেখিয়েছে– দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করার সুবিধা কাজের চাইতে বেশি কিছু এবং নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কোন্নয়নের আরো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিস্তৃত।
যেমনটি আমি পুরো বইটি জুড়ে ব্যাখ্যা করেছি, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার প্রচেষ্টা আপনার মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে সক্রিয় করে এবং কাজ শুরু করার জন্য আপনার প্রিফ্রন্টাল করটেক্সকে অনুমতি দেয়। প্রত্যেকবার আপনি যখন রুলটি ব্যবহার করবেন, দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করা সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাবে এবং আপনি শুরু করে দিতে পারবেন। সাই যেমনটি দেখতে পেয়েছিলেন– কলটি করার জন্য, ই-মেইলটির উত্তর দেওয়ার জন্য, অর্থহীন কাজটি শেষ করার জন্য নিজেকে বলা এবং শুরু করাই হলো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ শেষ করার গোপন সূত্র।