Site icon BnBoi.Com

দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

দ্য লাস্ট ডন - মারিও পুজো

দ্য লাস্ট ডন

০১. জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

দ্য লাস্ট ডন / মারিও পুজো / অনুবাদ : মোঃ বুলবুল আহমেদ

উৎসর্গ

ভার্জিনিয়া অ্যাল্টম্যান
ডোমেনিক ক্লেরি

.

প্রস্তাবনা

কুওগ ১৯৬৫

ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে স্থির করলেন। সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধের ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। ইস্টার উৎসবের অব্যবহিত পূর্বের এক পাম সানডেতে ডন ক্লেরিকুজিও আমন্ত্রণ জানালেন যুক্তরাষ্ট্রে তার বৃহৎ গোষ্ঠীর পারিবারিক প্রধানদের। ডন জীবনের পরিশুদ্ধির জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ক্লেরিকুজিও নিতে যাচ্ছেন, তাতে বাদ পড়ল না তারই প্রবাহিত রক্তের দুটি শিশুও।

ক্লেরিকুজিও আমন্ত্রণ জানালেন ভেগাসে জানাদু হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টকে এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী ডেভিড রেডফেলোকেও। মূলত ডন তার এই ব্যাপক প্রসারিত গোষ্ঠীর পারিবারিক প্রধানদের নতুন পথে উপাধিভুক্ত করতে চান।

বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে শক্তিশালী মাফিয়া দলের প্রধান ক্লেরিকুজিও তার ক্ষমতা পরিত্যাগ করতে চান। তিনি ভাবছেন ক্ষমতা হস্তান্তরের এটাই সময় এবং নিশ্চিতভাবেই এটা অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল। তবে যে কোনো হাতে এই ক্ষমতায়নও হবে ভয়াবহ, বিষয়টি সম্পর্কে ক্লেরিকুজিও অনেকটা নিশ্চিত। তবে তাকে এটা করতে হবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহৃদয়তাপূর্ণ মানসিকতায় এবং সর্বোপরি নিজের এতদিনকার অর্জিত ব্যক্তিগত সুনামের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, ডন তার ক্ষমতা হস্তান্তর বা পরিত্যাগের বিষয়টি করতে চান তার আপন আস্তানায়।

ডন ক্লেরিকুজিও’র আস্তানাটি কুওগ-এ কুড়ি একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এই আস্তানার চারদিক ১০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন, লাল ইটের দুর্ভেদ্য দেয়াল তার ওপর কাঁটা তারের টানাবেড়া, বৈদ্যুতিক সংযোগও দেয়া হয়েছে তাতে। এই দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মাঝে ডনের আবাসন। অদূরে তার তিন পুত্রের তিনটি বাড়ি এবং বিশ্বস্ত জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর জন্য সব মিলিয়ে আরো কুড়িটি ঘর নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন মাফিয়া ডন ক্লেরিকুজিও নিবাস।

পাম সানডের এই বিশেষ দিনে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসার আগেই উন ও তার পুত্ররা এই কুওগ আস্তানার প্রধান ম্যানসনের ঠিক পেছনে বাগান বাড়িতে বসে আলোচনা করছিলেন। তাদের মাঝে ছিল মাটির ওপর স্থায়ীভাবে বসানো লৌহশক্ত সাদা টেবিল, আরো মাথার ওপর লোহার জালের ছাদ।

ডনের জ্যেষ্ঠপুত্র জর্জিও’র বয়স ২৭ বছর। ইংলিশ জেন্টেলম্যানের মতো ছিপছিপে গড়ন। চেহারায় নিষ্ঠুরতার একটা ছাপ। বিশেষ করে তার নাকের নিচে মোছটুকু চেহারায় এই ক্রভাব এনে দিয়েছে। পরিচ্ছন্ন ও সদ্য তৈরি করা পরিধেয় পড়ে মুখে এক বিষণ ভাব নিয়ে জর্জিও বসে ছিল উন ক্লেরিকুজিও’র সবচেয়ে কাছে।

ডন জর্জিওকে নির্দেশ দিলেন যে জর্জিও যেন হোয়ার্টন স্কুলে ব্যবসা সংক্রান্ত পড়াশোনার জন্য আবেদন করে। সেখানে আইনানুসারে বিভিন্ন জটিলতার ফাঁক-ফোকরে অর্থ চুরির বিভিন্ন কলাকৌশল যাতে সে শিখতে পারে এটাই চান ডন।

বাবার এই পরিষ্কার নির্দেশের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কোনো প্রশ্নই করল না জর্জিও। অবশ্য গুরুজনের কোনো নির্দেশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক মন্তব্য করা ডন পরিবারের রয়্যাল নিয়মের পরিপন্থী। জর্জিও বাধ্য ছেলের মতো মাথা হেট করে একরকম সায় দিয়ে গেল।

এরপর ডন তার ভগ্নি-পুত্র জোসেফ পিপি ডি লিমার দিকে তাকালেন। পিপিকে তিনি তার ছেলেদের মতোই ভালোবাসেন। যদিও পিপি তার রক্তের সম্পর্কের নয়। তাকে ভালোবাসার কারণ হচ্ছে, ডনের প্রয়াত বোনের পুত্র পিপি। এছাড়া সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়লাভের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে পিপি। এক কথায় সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে গ্রেট জেনারেল পিপির কারণেই জয়লাভ সম্ভব হয়।

তুমি ভেগাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। সেখানেই তুমি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবে। ডন গম্ভীর নির্দেশ ছুঁড়ে দিলেন পিপির দিকে। তারপর শুরু করলেন এই নির্দেশের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে। তিনি বললেন, তুমি সেখানে আমাদের জানা হোটেলের আয়-ব্যয় দেখাশুনা করবে। এখন আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছি। সে কারণে কুওগে তোমার তেমন কাজ নেই। তবে তুমি অবশ্যই আগের মতোই আমাদের পরিবারের পক্ষে মুগুর হয়ে থাকবে।

ডনের কথায় পিপি হয়তো খুশি হতে পারেনি পিপির দিকে তাকিয়ে ডন বুঝতে পারলেন। এবার ডন তার উদ্দেশ্য খোলাসা করে বললেন, এই পরিবারের বাতাবরণ তোমার স্ত্রী ন্যালিনির জন্য উপযুক্ত নয়। সে এই ব্রঙ্কস এনক্লেভ-এ বাস করতে পারবে না। ডন বলে চললেন, আমার ধারণা, ন্যালিনি সবার চেয়ে অতিমাত্রায় আলাদা। এখানে সে কোনোমতেই খাপ খাওয়াতে পারবে না। সবার কাছে তিও হতে পারে। তার চেয়ে বরং এ পরিবেশ থেকে দূরে গিয়ে তোমরা নতুন জীবন শুরু কর।

ডন পিপির উদ্দেশ্যে যে কথাগুলো বললেন, তার হয়তো সবটাই সত্য। তবে শুধুমাত্র এ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্য উনের নয়। ডন আরো ব্যক্তিক্রমী তিনি অন্য কোনো বৃহ উদ্দেশ্যে এমন পরিকল্পনা আটছেন। অন্তত পিপির মতো একজন বীরযোদ্ধাকে ক্লেরিকুজিও পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ডনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ডন জানেন ব্রঙ্কস এনক্লেভে পিপি যদি মেয়রের জন্য চেষ্টা করে তবে সে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী মেয়র হবে। ডন যখন জীবিত থাকবেন না তখন তার অনুপস্থিতিতে ডন-পুত্রদের জন্যও পিপি হবে অন্যতম রক্ষক।

পিপির উদ্দেশ্যে ডন এবার স্পষ্ট বললেন, পশ্চিমে তুমিই হবে আমার অন্যতম প্রতিনিধি। ডন বললেন অচিরেই তুমি ধনী হয়ে উঠবে, তবে এর জন্য স্পষ্ট তোমার কিছু কাজের সাথে জড়িত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

লাস ভেগাসের একটি বাড়ির দলিল পিপির হাতে তুলে দিলেন ডন। এরপর ডন তার কনিষ্ঠ পুত্রের দিকে দৃষ্টি দিলেন।

২৫ বছরের যুবক ভিনসেন্ট ক্লেরিকুজিও ত্রি-রত্নের সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছে এই ভিনসেন্ট। ভিনসেন্ট শুধু অবস্থানগত বা বয়েসের পার্থক্যেই কনিষ্ঠ নয় উচ্চতাতেও বড় দু ভাইয়ের চেয়ে খাটো, তবে গড়নে-গঠনে বেশ শক্ত। ভিনসেন্টের আরেকটি প্রশংসিত বিষয় হচ্ছে তার পরিমিত ব্যবহার ও সহানুভূতিশীল হৃদয়।

ভিনসেন্টের রয়েছে আরেকটি মজার গুণ। খুব ছোটবেলায়, যখন সে তার মায়ের হাঁটু সমান তখন থেকেই মায়ের কাছে রপ্ত করেছিল বিভিন্ন ক্ল্যাসিক ইটালীয় খাবার তৈরির কৌশল। সেই মমতাময়ী মা যখন মারা গেলেন তখন ভিনসেন্ট কিশোর মায়ের মৃত্যুতে খুব কেঁদেছিল সে। মায়ের অভাববোধ কাটিয়ে উঠতে তার অনেক দিন সময় লেগেছিল।

ডন ভিনসেন্টের দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকালেন। হাসিমুখে বললেন, তোমার ভবিষ্য সম্পর্কেও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বললেন, এবং ভাবছি, তুমি তোমা, লব্ধ পথেই এগিয়ে যাবে। নিউইয়র্কে তুমি সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট খুলবে। এর জন্য খরচের কোনো ত্রুটি করবে না। আমি চাই, তুমি দেখিয়ে দাও যে, ফ্রেঞ্চ খাবার সবখানেই পাওয়া যায়।

ডনের এমন নির্দেশ শুনে পিপিসহ উপস্থিত ডনপুত্ররা হেসে উঠল। ভিনসেন্টও হেসে ফেলল সবার সাথে। ডনের চেহারাও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি হাসি হাসি মুখেই ভিনসেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন, রান্না শিক্ষার জন্য তুমি ইউরোপীয় কোনো স্কুলে এক বছর মেয়াদী কোর্সে ভর্তি হবে।

ভিনসেন্ট বাবার সিদ্ধান্তে মনে মনে খুশি হলেও ইউরোপীয় স্কুলে প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি ঠিক তার মনোপুত হলো না। ডনের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে বিড়বিড় করে সে বলল, তারা আমাকে কি শেখাবে? ভাবখানা এমন যে, ভিনসেন্ট তাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে।

ডন তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন, তোমার অহমিকার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে, তবে … একটু থেমে ডন আবার বললেন, তবে তোমার প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি আসছে এজন্য যে, তুমি যথাযথ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে সক্ষম হবে। এর জন্য তোমার শিক্ষার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ভিনসেন্টের ভবিষ্য সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বললেন, কে জানে একদিন হয়তো তুমি হবে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টের মালিক। এ ব্যাপারে জর্জিও তোমাকে অর্থের যোগান দেবে।

সবশেষে ডন তাকালেন তার দ্বিতীয় পুত্র পেটি-এর দিকে। পেটি হচ্ছে ডনের সবচেয়ে হাসিখুশি ও সদা-উৎফুল্ল পুত্র। পেটি তার ছাব্বিশ বছর বয়সেও একজন বালকের মতোই উচ্ছল সদালাপী ও অমায়িক। তবে উন জানেন, এই উচ্ছল পুত্রটিকেও তার পূর্বপুরুষ সিসিলীয় ক্লেরিকুজিও’র ধারায় ফিরে আসতে হবে।

পেটি ডন বললেন, এখন যেহেতু পিপি পশ্চিমের দায়িত্ব নিচ্ছে, তুমি ব্রঙ্কস এনক্লেভের মেয়র হবে। তোমার কাজ হবে পরিবারের জন্য তুমি সব সৈন্য সরবরাহ করবে। এছাড়াও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি কিনে দেব। তুমি নিউইয়র্কে নির্মাণ করবে আকাশচুম্বী উঁচু উঁচু দালান। রাষ্ট্রের পুলিস ব্যারাকগুলোও হতে হবে তোমার প্রতিষ্ঠানের তৈরি। শহরের রাস্তাগুলোও ইটপাথর দিয়ে মসৃণ করে সাজাতে হবে তোমাকেই।

ডন বলে চললেন, এই ব্যবসা প্রায় নিশ্চিত। তবে আমি আশা করব এমন প্রতিষ্ঠান তুমি নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠা করবে। তোমার সৈন্য-সামন্তরা হবে তোমার বৈধতাপ্রাপ্ত বা আইনসম্মত চাকুরে। আরো এর জন্য তোমাকে হতে হবে প্রচুর টাকার মালিক।

এই লক্ষ্যে প্রথমেই তুমি হবে এমন একটি কোম্পানি নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরে। তবে মনে রেখো, তোমার প্রাথমিক কর্তব্য হচ্ছে পরিবারের সৈন্য সরবরাহ ও তাদের ওপর তোমার কমান্ড পরিচালনা করা।

একটু থেমে জর্জিও’র পূর্ণ মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য তার নাম ধরে ডাকলেন ডন, জর্জিও।

ডন বললেন, তোমাকেই আমার উত্তরসূরি নির্বাচিত করছি। তবে মনে রেখো শুধুমাত্র পরিবারের ওপর আসন্ন বিপদের সময় তুমি ও ভিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য তোমাদের সক্রিয় থাকার প্রয়োজন নেই।

ডন বললেন, পরবর্তী প্রজন্মের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। তোমার সন্তান-সন্ততি, আমার সন্তান-সন্ততি, এমনকি ছোট্ট ডেন্টি ও ক্রকসিফিজিও যেন এই মাফিয়া পরিবেশে বেড়ে না ওঠে।

আমরা ধনী নিঃসন্দেহে। দীর্ঘদিন আমাদের জীবন হুমকির মাঝে রাখতে চাই না। আরো এই রিস্কের মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিদিনের রুটিটুকুও রোজগার করতে চাই নাই। আমাদের পরিবার এখন কেবল সকল পরিবারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেই কাজ করে যাবে। আমরা চাহিদানুসারে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা যোগাব, ঝগড়া-ফ্যাসাদে মধ্যস্থতা করে যাব। তবে এর জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কার্ড থাকতে হবে। আমাদের থাকবে আমি এবং আমরা অবশ্যই সকলের অর্থ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করব। এর জন্য অবশ্য তারাও আমাদের গলা ভিজিয়ে যাবে।

অকস্মা ডন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কি যেন ভাবতে লাগলেন। উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া চোখ দুটো। কণ্ঠে প্রত্যয়ের সুরে বলতে শুরু করলেন– এখন থেকে কুড়ি-ত্রিশ বছর আমরা আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তর্হিত হয়ে একটি আইনসম্মত বৈধ পৃথিবীতে প্রবেশ করব এবং আমরা আমাদের সম্পদগুলো তখন নির্দ্বিধায়, ভীতিহীন চিত্তে উপভোগ করতে সক্ষম হবো। আমাদের পরিবারের ঐ দুটি শিশুও যাদের ধর্মীয় দীক্ষায়-দীক্ষিত করতে যাচ্ছি, তাদেরকে যেন আমাদের বর্তমান অপরাধী জীবনের দায়ভার বহন করতে না হয়। আমাদের জন্য তারা যেন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে না ওঠে।

তবে কেন এই ব্রঙ্কস এনক্লেভ ধরে রাখা? প্রশ্ন করল জর্জিও।

ডন বললেন, আমরা কোনো এক সময় ধার্মিক হয়ে যাব বলে বিশ্বাস করি। তার আগে শহীদ হয়ে যেতে চাই না।

এক ঘন্টা পর ডন ক্লেরিকুজিও তার বাড়ির বেলকনিতে উঠে এলেন। তারপর সেখান থেকে তাকিয়ে থাকলেন নিচে উৎসবমুখর আয়োজনের দিকে।

বেলকনি থেকে নিচের বিশাল লনটি যেন মনে হচ্ছিল পিকনিক-টেবিল দিয়ে কার্পেটের মতো বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। টেবিলগুলো ঘিরে প্রায় দুশর মতো আমন্ত্রিত অতিথি। টেবিল ঘিরে আমন্ত্রিত অতিথিদের দৃশ্যটি বেলকনি থেকে ডনের মনে হচ্ছিল যেন এক-একটি মুকুট। অতিথিদের অনেকেই ব্রঙ্কস এনক্লেভের সেনা। এই উৎসব মুখর আয়োজনে চাঞ্চল্য থাকলেও ডন-এর মাঝে কোনো প্রাণ খুঁজে পেলেন মা–মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন মেকি, সাজানো।

সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে জয় পেলেও ডন ক্লেরিকুজিওকে মূল্য দিতে হয়েছিল অনেক। সে লড়াইয়ে ডন হারিয়েছিলেন তার সবচেয়ে স্নেহের পুত্র সিলভিয়োকে। তার কন্যা রোজ ম্যারি হারিয়েছে স্বামীকে।

উদাস দৃষ্টিতে ডন তাকিয়েই রইলেন নিচের উৎসবমুখর লনটির দিকে। লনে ফেলা দীর্ঘ টেবিল ঘিরে বসে আছেন অতিথিরা। টেবিলের ওপর সাজানো গাঢ় লাল রঙের সুরাভর্তি ক্রিস্টাল গ্লাস। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল সাদা বাটিতে পূর্ণ সুপের লাইন। বিভিন্ন ধরনের পাস্তা, বারকোশে সাজানো বিভিন্ন রকমের স্লাইস করা মাংস-পনির এবং সতেজ ও মচমচে বিভিন্ন আকারের ব্রেড। এমন উৎসবে ভন ক্লেরিকুজিও অবশ্য নেপথ্যে ছোট-খাটো একটি ব্যান্ড দলের সফট মিউজিক পরিবেশেনেরও অনুমতি দিয়েছিলেন।

লনে সাজানো পিকনিক টেবিলগুলোর মাঝামাঝি একটি স্থানে গিয়ে ডনের দৃষ্টি স্থির হলো। শিশুবহনকারী ছোট দোলনা-গাড়িতে মোটা নীল পশমী কাপড়ে মোড়া দুটি শিশু। তিনি দেখলেন, ধর্মীয় পথের জন্য তাদের যখন পবিত্র পানির ছটা দেয়া হচ্ছিল, তখন, শিশু দুটি মোটেও ভয় পায়নি। তাদের পেছনেই ছিল তাদের দুই মা- রোজম্যারি এবং পিপির স্ত্রী ন্যালিনি ডি লিনা। তাদের সন্তান দুটির নাম ডেন্টি ক্লেরিকুজিও ও ক্রকসিফিজিও ডি লিনা। বেলকনি থেকে শিশু দুটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলেন তাদের যেন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে না হয়, এই নিশ্চয়তার জন্য তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। ধর্মের পথে ধর্মের জন্যই আজকে তাদের নিয়ে এই আয়োজন। ডনের এই পদক্ষেপ যদি সফল হয় তবে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য একটি সুন্দর সমাজে তারা প্রবেশ করতে পারবে। তিনি অত্যন্ত কৌতূহলের সাথে লক্ষ্য করলেন যে, এই জনসমাবেশের একটি লোকও শিশু দুটির প্রতি অনুগত্য স্বীকার করছে না।

তিনি বেলকনিতে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলেন ভিনসেন্টকে। গ্রানাইটের মতো কঠোর মুখে সে ছোট ছোট বাচ্চাদের হটডগ খাওয়াচ্ছে। শিশুদের জন্য এই আইটেমটি ভিনসেন্ট নিজের হাতেই তৈরি করেছে। হটডগ রাখার ঘোড়া গাড়িটির সাথে নিউ ইয়র্কের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ঘোড়া গাড়িটির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে ভিনসেন্টের গাড়িটি আকারে আয়তনে একটু বড় এই যা। গাড়ির উপরিভাগে বসানো রয়েছে উজ্জ্বল রঙের একটি ছাতা। ভিনসেন্ট তার গাড়ি থেকে ভালো ভালো খাবারগুলো তুলে আনছে। তার পরণে রয়েছে সাদা এপ্রোন। হটডগের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে হটডগ তৈরি করে যাচ্ছে। লোভনীয় এই খাবারটি পেতে প্রত্যেক শিশু ভিনসেন্টের গালে একটি করে চুমু দিচ্ছে।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভিনসেন্ট দেখতে কঠোর বা ককৰ্শ হলেও প্রকৃত পক্ষে সে বেশ সহানুভূতিসম্পন্ন যুবক। ডনের পুত্রদের মধ্যে ভিনসেন্টই সবচেয়ে দয়ালু প্রকৃতির বিষয়টি ডন ক্লেরিকুজিও ভালোভাবেই জানেন।

সেন্সর ক্যামরার মতো ডনের চোখ দুটো প্রত্যক্ষ করছিল লনের উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের ওপর। তার চোখ পড়ল বকসি কোর্টের ওপর। সেখানে দেখা গেল, পেটি, পিপি ডি লিনা, ভারজিনো ব্যালাজো ও আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  সাথে বকসি বল খেলায় মত্ত। পেটি স্বভাবগত জোকার। পেটির এই স্বভাব ডনের পছন্দ নয়। জুনের মনে হয় পেটির এই স্বভাব যে কোনো সময় তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমন কথা ভাবতে ভাবতেই ডন দেখতে পেলেন বকসি গেমটি পেটির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সে তাৎক্ষণিক তা ভণ্ডুল করতে বলটি প্রথম হিটেই পিসে পাঠিয়ে দিল।

ভারজিনো ব্যালাজো ক্লেরিকুজিও পরিবারের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ডনের আন্ডার বস। বকসি-বলের গেমটিতে অত্যন্ত তেজস্বী এই ব্যালাজো পেটিকে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। ডন জানেন, তার পুত্র পেটি জন্মগত একজন কৌশলী গুপ্তঘাতক এবং আমোদপ্রিয় ব্যালাজো তার আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিশ্চিত সুনাম রয়েছে।

তবে এদের কারো সাথেই পিপির কোনো তুলনা চলে না।

ডন দেখতে পেলেন অদূরে একদল মহিলা ক্ষণে ক্ষণে পিপির ওপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। তবে এদের দলে নেই সেই দুই মা রোজম্যারি ও ন্যালিনি।

সত্যিকার অর্থেই পিপি একজন সুদর্শন মানুষ। ডনের মতোই উঁচু-লম্বা সুপুরুষ। পেশিবহুল শক্ত শরীর–সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় হ্যান্ডসাম পুরুষ। শুধু মহিলারাই নয় উপস্থিত অনেক পুরুষও তাকে লক্ষ্য করছিল। এদের মধ্যে অনেকে ব্রঙ্কস এলক্লেভ থেকে আসা তারই সৈন্য। তারা দেখছিল পিপির নির্দেশনা, শারীরিক অভিব্যক্তির নমনীয় অ্যাকশন। অনেকেই তাকে লিজেন্ড হিসেবেই জানে যে কোনো পুরুষের চেয়ে তাকে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড মানব এবং শক্ত-সামর্থ্য, পেটানো শরীরের জন্য তাকে দি হ্যাঁমার নামেও ডাকা হয়।

ডেভিড রেডফেলো, একজন যুবক। গোলাপের পাপড়ির মতো চিবুক। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মাদক ব্যবসায়ী। দোলনা-গাড়িতে রাখা শিশু দুটির গাল টিপে আদর করছিল রেডফেলো।

বকসি-বলের অদ্ভুত এ খেলায় অবশেষে আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট হাঁপিয়ে উঠল। তার পরিষ্কার পরিধেয় জ্যাকেট ও টাই ময়লায় মাখামাখি হয়ে গেল। গ্রোনিভেল্টের  বয়স ডনের বয়সের কাছাকাছি, প্রায় ষাটের মতো।

আজকের এই দিনটির মাধ্যমেই ডন ক্লেরিকুজিও তার পরিবারের সবার জীবন পরিবর্তন করে ফেলতে চান–তিনি আশা করছেন ভবিষ্যতের পথ মঙ্গলময় হয়ে উঠবে।

জর্জিও বেলকনিতে তার বাবার কাছে উঠে এলো। মনে করিয়ে দিল আজকের দিনের প্রথম মিটিংয়ের কথা।

ডন ম্যানশনের ছোট একটি কক্ষে উপস্থিত হয়েছে শীর্ষস্থানীয় দশ জন মাফিয়া প্রধান। জর্জিও ইতিমধ্যেই ক্লেরিকুজিও’র প্রস্তাবনা সম্পর্কে তাদের জানিয়ে দিয়েছে। ডনের মাথা থেকে উদ্ভূত এই পরিশুদ্ধির বিষয়টি সভার জন্য নতুন ও বিশেষ বিষয় হলেও তারা ঠিক সমর্থন করতে পারছে না। এর কারণ ক্লেরিকুজিও’র সাথে তাদের প্রকৃত সামাজিক সম্পর্ক নেই। আর তাই তারা তাদের পথেই অগ্রসর হতে চায়।

ডনের এই সভাকক্ষটি জানালাবিহীন। ছোট্ট এই ডেন আকারের কক্ষে উন্নত মানের আসবাব। তাছাড়া কক্ষের কোণে রয়েছে একটি স্যাঁতসেতে পানশালা। কক্ষের মাঝামাঝি প্রায় কালো মার্বেল পাথরের কনফারেন্স টেবিল ঘিরে আসন গ্রহণকারী দশ জনের চেহারায় একটি বিষণ্ণ ভাব ফুটে উঠেছিল। ইতিমধ্যেই ডন প্রবেশ করলেন এবং সবাইকে অভিবাদন জানান। উপস্থিত মাফিয়া প্রধানরা ডন ক্লেরিকুজিও’র মুখ থেকে কিছু শোনার আশায় উদগ্রীব হয়ে উঠল।

ডন ক্লেরিকুজিও’র অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আর সামান্য কিছু সময় অপেক্ষা করার অনুরোধ জানালেন। আর তার পুত্রের প্রতি নির্দেশ দিলেন এ সভায় ভিনসেন্ট, ডনের এক্সিকিউটিভ অফিসার ব্যালাজো ও পিপি ডি লিনাও যেন উপস্থিত হয়। কাঙ্ক্ষিত জনেরা যখন সবাই উপস্থিত হলো, তখন জর্জিও শীতল ও খসখসে কণ্ঠে এই সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করল।

আর এরই ফাঁকে ফাঁকে ডন তার সামনে উপস্থিত সকল মাফিয়া সদস্যদের অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি ভাবছিলেন, তার সামনে বসা অবৈধ সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই মানুষগুলো জনগণের সত্যিকার প্রয়োজনে যথাযথ অবদান রাখতে পারে।

ডন এবার শুরু করলেন তার বক্তব্য—আমার পুত্র, জর্জিও আপনাদের কাছে সবই বর্ণনা করেছে। আপনারা কিভাবে কাজ করবেন, সে সম্পর্কে তার বক্তব্য নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে আপনাদের কাছে।

ডন বললেন, আমার প্রস্তাবটি মূলত এটাই। অপরাধ জগতের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে আমি অবসর নিতে যাচ্ছি। আর আমার নিউইয়র্কের সমস্ত কর্মকাণ্ড আমি তুলে দেব আমার পুরনো বন্ধু ভারজিনো ব্যালাজোর হাতে। তিনি তার নিজের মতো করে ফ্যামিলি গঠন করবেন। ক্লেরিকুজিও’র সমস্ত স্বাধীনতা ভোগ করবেন তিনি। আর দেশের অবশিষ্টাংশে আমার ইউনিয়ন, পরিবহন, এলকোহল, টোবাকো ও ড্রাগের যেসব ব্যবসা ও কর্মকাণ্ড রয়েছে সেসবও পরিত্যাগ করে আমি আপনাদের ফ্যামিলির মাঝে বিলিয়ে দেব। তবে সবকিছুর প্রতি আমার আইনানুগ অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে। যদি আমি কখনো ফিরে আসি তখন সেসব আয়-উপার্জনের অধিকারও আমাকে আপনারা দেবেন। ব্যালাজোর কর্তৃত্বে আপনারা নিরাপদ পন্থা অবলম্বন করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাবেন। আরেকটি বিষয়, সরকারকে আয়ত্বে রাখতে আপনাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না হয়তো। এর জন্য সরকারের সাথে পাঁচ শতাংশ কমিশন আমাদের বরাদ্দ রাখতে হবে। বিষয়টি আমি ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি।

ডনের এই চুক্তি ছিল উপস্থিত দশ মাফিয়া প্রধানের জন্য স্বপ্নের। তারা মনে মনে বেশ খুশি হলো। ক্লেরিকুজিও’র জন্য তাদের খুশি বা কৃতজ্ঞাবোধের কারণ–ক্লেরিকুজিও’র চক্রটি যখন গোটা অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর কিংবা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিল–এমন সময়েই ক্লেরিকুজিও অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন।

ভিনসেন্ট আমন্ত্রিত অতিথিদের ওয়াইন পরিবেশন করতে শুরু করল। অতিথিরা তাদের মদপূর্ণ গ্লাসগুলো উঁচিয়ে ডনের অবসর গ্রহণে তার সুস্বাস্থ্য কামনা করল।

.

মাফিয়া ডনের বিদায় অনুষ্ঠানের পর সেই সভাকক্ষটিতে ডেভিড রেডফেলোর সাথে দেহরক্ষীর মতো প্রবেশ করল পেটি। ডনের বিপরীত পাশে চামড়ার নির্মিত একটি শূন্য আর্মচেয়ারে বসল। ভিনসেন্ট তাৎক্ষণিক তার হাতে তুলে দিল একটি সুরার গ্লাস।

রেডফেলো দাঁড়াল মাফিয়া প্রধানদের আসন থেকে একটু পৃথক দূরত্বে। এর কারণ সে সবসময়ই ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রমী সে তার দীর্ঘ চুলের জন্য। শুধু তাই নয়, এ সময় তার পোশাকও ছিল ব্যতিক্রম। তার কানে শোভা পাচ্ছিল হীরার ইয়ার রিং, পরনে ছিল ডেনিম জ্যাকেট এবং পরিষ্কার প্রেসড জিনস। ব্যতিক্রমী এই রেডফেলোর ব্যতিক্রম হওয়ার আরো একটি কারণ তার শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান রক্ত। রেডফেলোর প্রতি আকর্ষণের অন্য কারণগুলোর মধ্যে তার স্বর্ণালী চুল ও স্বচ্ছ নীল দুটি চোখ, সেই সাথে সদা প্রাণোচ্ছল অভিব্যক্তি।

এই ব্যতিক্রমী রেডফেলোর প্রতি ডন যারপরনাই কৃতজ্ঞ ও ঋণী। এর কারণ রেডফেলো হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে প্রমাণ করে দেখিয়েছে টাকা দিয়ে ড্রাগের মতো ব্যবসারও বৈধ অনুমোদন সক্ষম।

ডেভিড, ডেভিডের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ডন ক্লেরিকুজিও। তাকে বললেন, তুমি তোমার ড্রাগ ব্যবসা থেকে অবসর গ্রহণ করছে। তোমার জন্য আমার কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আছে …।

রেডফেলো কোনো আপত্তি জানাল না। তবে প্রশ্ন করল, সেটা এখনই কেন?

নাম্বার ওয়ান…, ডন প্রতি উত্তরে বললেন, সরকার আমাদের এই ব্যবসায় ছাড় দিতে অনেক সময় উৎসর্গ করেছে। যে কোনো সময় এ ব্যবসায় সঙ্কট দেখা দিতে পারে। হতে পারে, তোমার বাকি জীবনটা অত্যন্ত দুঃসহ ও দুশ্চিন্তাযুক্ত হয়ে উঠবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমার পুত্র পেটি এবং তার সৈন্য-সামন্তরা তোমার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এটা আমি বেশি দিন অনুমোদন দিতে পারি না। কলম্বিয়ানরা খুব সহিংস, বোকার মতো এক হয়ে ও বন্য হয়ে থাকে। তাদের হাতেই এ ব্যবসা ছেড়ে দাও। তুমি এখান থেকে অবসর নিয়ে ইউরোপ চলে যাও। আমি সেখানে তোমার সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। তুমি ইতালির একটি ব্যাংক কেনার কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং অবস্থান করবে রোমে। ইউরোপে তুমি আরো অনেক ব্যবসা ফেঁদে বসতে পারো।

চমৎকার, রেডফেলো বিস্মিত হলো, আমি ইতালির ভাষাও জানি না, আর ব্যাংকের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতাও আমার নেই।

তুমি সবই শিখবে। ডন প্রতিউত্তরে বললেন, এবং রোমে তুমি সুখী জীবনযাপন করবে। অথবা তুমি যদি চাও, এখানেও থাকতে পারো। তবে এক্ষেত্রে হয়তো তুমি খুব বেশি দিন আমার সমর্থন গ্রহণ করতে পারবে না। এখন তোমার পথ তুমিই বেছে নাও।

ডনের এমন শর্তে রেডফেলো প্রশ্ন করল। আমার এই ড্রাগ ব্যবসার ভার কে নিচ্ছে? আমি কি তবে এটা কিনতেও সক্ষম হব না?

কলম্বিয়ানরা তোমার ব্যবসার দায়িত্ব নেবে। ডন বললেন, ব্যবসাটি সুরক্ষিত নয়, সেটা হচ্ছে ইতিহাসের স্রোত। তবে সরকার তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। এখন বলল, হ্যাঁ অথবা না?

রেডফেলো কিছুক্ষণ চিন্তা করল। তারপর আকস্মিক হেসে ডনের উদ্দেশে বলল, তাহলে আমাকে কিভাবে শুরু করতে হবে?

জর্জিও তোমাকে রোমে নিয়ে আমার লোকদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবে। ডন রেডফেলোর উদ্দেশ্যে আরো বললেন, এবং পুরো একটা বছর সে তোমাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাবে।

রেডফেলোর দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে ডন তাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, আমার উপদেশে সম্মতি দেয়ায় তোমাকে ধন্যবাদ। আমরা অংশীদার হিসেবেই থাকব। বিশ্বাস করো, এটা হবে তোমার জন্য একটা উন্নত জীবন।

.

ডেভিড রেডফেলো সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। ডন তার পুত্র জর্জিওকে পাঠালেন আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টকে ডেকে আনতে।

ভেগাসে জানাদু হোটেলের মালিক হিসেবে গ্রোনিভেল্ট ছিলেন বর্তমানে ক্লেরিকুজিও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সান্তাডিও ফ্যামিলির নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষায়।

কক্ষে প্রবেশ করল গ্রোনিভেল্ট। মি. গ্রোনিভেল্ট। তাকে উদ্দেশ্য করে ডন বললেন, আপনি আমার প্রোটেকশনে জানাদু হোটেল পরিচালনা করে যাবেন। আপনার সম্পত্তি ও নিজের সুরক্ষার জন্য চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

হোটেলের আয় থেকে একান্ন শতাংশ আপনি রাখবেন যথাযথ নিয়মে। সান্তাডিও ও একই পরিবারে পরিচয়ে অবশিষ্ট ঊনপঞ্চাশ শতাংশের মালিকানা আমারই থাকবে। এ ব্যাপারে আপনি সম্মত আছেন তো?

গ্রোনিভেল্ট তার বয়স অনুপাতে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও শারীরিক দিক দিয়ে বলিষ্ঠ ব্যক্তি। বেশ কৌশল ও সতর্কতা অবলম্বন করে তিনি ডনের  প্রস্তাবের প্রতিউত্তরে বললেন, যদি আমি থাকি, তবে আমি অবশ্যই একই কর্তৃপক্ষের সাথে হোটেলটি পরিচালনা করব। অন্যথায় আমি আমার অংশীদারিত্ব আপনার কাছেই বেচে দেব।

সোনার খনি বেচবেন! চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন ডন গ্রোনিভেল্টের  দিকে। অবিশ্বাস্য সুর ফুটে উঠল ডনের কণ্ঠে। তিনি বললেন, না না, আমাকে ভয় পাবেন না। আমি মোটের ওপর একজন ব্যবসায়ী। সান্তাডিও যদি পরিমিত বা সংযত হয়ে ওঠে তবে তো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাই কখনো ঘটবে না।

অস্তিত্ব আর বেশি দিন নেই। তবে আপনি এবং আমি দায়িত্ববান। আমার প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই সান্তাডিও’র কাছে কিছু দাবির প্রস্তাব দিয়েছে। জোসেফ ডি লিনা, পিপি তার সম্মানে ছাড় দিতেও প্রস্তুত। পিপি হবে পশ্চিমে আমার প্রতিনিধি ব্ৰুগলিওন। এর জন্য বছরে সে সেই হোটেলের আয় থেকে ভোগ করবে দশ লক্ষ। যদি আপনি কখনো কোনো বিপদের আঁচ করেন তবে সোজা চলে যাবেন তার কাছে। অবশ্য আমার ধারণা আপনার যে ব্যবসা, তাতে পদে পদেই আপনাকে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।

গ্রোনিভেল্ট, একজন দীর্ঘমানব, সেই তুলনায় বেশ ধীর। ডনের উদ্দেশ্যে তিনি এবার প্রশ্ন করলেন, আপনি আমাকেই কেন এত সমর্থন দিচ্ছেন? আপনার তো অন্যান্য আরো অনেক লাভজনক ক্ষেত্র আছে।

ডন ডোমেনিকে গ্রোনিভেল্টের  প্রশ্নে গম্ভীর হলেন। ধীর-স্থীর ও আরো ব্যক্তিত্বের আভা কণ্ঠে এনে বললেন, এর কারণ আপনি একজন জিনিয়াস। বিশেষত আপনার এই ক্ষেত্রটিতে। আমি জানি লাস ভেগাসে অনেকেই আপনাকে জিনিয়াস ভাবে এবং এটা প্রমাণ করতে আমিই আমার কিছু বিষয় আপনাকে ফিরিয়ে দেব।

গ্রোনিভেল্ট এ কথা শুনে হাসলেন।

আপনি আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন—আমার হোটেল। এছাড়া আর কি এমন গুরুত্বপূর্ণ থাকতে পারে? গ্রোনিভেল্ট বললেন।

ডন তার বদান্যতায় স্মিত হেসে পলকেই ভাবতে লাগলেন গ্রোনিভেল্ট যতই বিপজ্জনক মানুষ হোক না কেন তার বিশেষ ক্ষমতা এমন যে কোনো মানুষ আকস্মিক তার সাথে সাক্ষাতে পরিতপ্ত হবে।

ডন বললেন, নাভাদা গেমিং কমিশনের পরবর্তী নিয়োগে আপনি আপনার নাম দাখিল করতে পারেন। সেখানে একটি ভ্যাকেনিস আছে।

গ্রোনিভেল্ট তার জীবনে খুব কম সময় চমৎকৃত হয়েছে। এমন আকস্মিক প্রাপ্তির ঘটনা তার জীবনে খুব কম। তবে আজকে ডনের কাছ থেকে এই প্রাপ্তি অবশ্যই অনাকাক্ষিত। গ্রোনিভেল্ট মুগ্ধ হলেন। তিনি এতই আনন্দিত হলেন যে, ভবিষ্যতে যদি তার কাছ থেকে হোটেল কেড়েও নেয়া হয় তবে তিনি কোনো দাবি করবেন না– এমনই ভাবলেন গ্লোনিতে মনে মনে।

ডনের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, যদি আপনি তা করেন, তবে আসন্ন কয়েক বছরেই আমরা সবাই ধনী হয়ে উঠব।

ডন বললেন, তাই হবে। এখন আপনি উৎসবে ফিরে যান এবং ইনজয় করুন।

গ্রোনিভেল্ট বললেন, আমি এখনই ভেগাসে ফিরে যেতে চাই। আমি যে এখানে একজন অতিথি হয়ে এসেছি। বিষয়টি জানাজানি হওয়াটা আমার মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

ডন এ কথায় মাথা নত করলেন। পেটির উদ্দেশ্যে বললেন, মি. গ্রোনিভেল্টকে নিউইয়র্কে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা।

.

গ্রোনিভেল্ট সভাকক্ষ ত্যাগ করার পরপরই বেরিয়ে গেল পিপি ডি লিনা ও ভারজিনো ব্যালাজো। ডনের প্রস্তাবে আমন্ত্রিত অতিথিদের অধিকাংশই হয়তো তেমন একটা আস্থা রাখতে পারেনি। মুখাবয়বে একটা চিন্তার ছাপ নিয়েই বেরিয়ে গেল তারা।

শূন্য কক্ষ নয়-কক্ষজুড়ে অতিথিদের ক্ষণিক আগের উপস্থিতির রেশ। ডন ক্লেরিকুজিও আগের অবস্থানেই বলিষ্ঠ। পাশে তার বড় ছেলে জর্জিও। অন্য সবার মতো জর্জিও আস্থাহীন নয়। তার চোখে-মুখে বাবার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার দৃঢ় বিশ্বাসের আভা। অবশ্য জর্জিও’র মতো অন্য সদস্যরা ডনের পরিকল্পনার পূর্ণ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।

ব্ৰুগলিওন হিসেবে ব্যালাজোকে অপরিপক্কই মনে করছেন ডন। সে পিপির চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড়। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইউনিয়ন, গার্মেন্টস সেন্টার ও পরিবহনসহ কিছু ড্রাগ ব্যবসা। ডন ডোমেনিকো তাকে জানিয়েছেন, ব্যালাজো তার ব্যবসা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডগুলো এখন থেকে স্বাধীনভাবেই পরিচালনা করবে। তবে এসব থেকে মোটের ওপর সে ডনকে দশ শতাংশ সম্মানী প্রদান করবে। আরো তা না হলে সে তার নিজ দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণে তার ব্যবসা পরিচালনা করবে। ডনের দিক থেকে কোনো রকমের সহযোগিতা প্রদান করা হবে না।

ডনের এই প্রস্তাব একরকম জয় করেই নিল ভারজিনো ব্যালাজো। স্বভাবে সে বেশ উজ্জ্বল প্রকৃতির। যে কোনো বিষয়ে কৃতজ্ঞতা বা নালিশ প্রকাশে রীতিমতো হৈচৈ বাধিয়ে বসে। তবে ডনের প্রস্তাবে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিনয়ী হলেও উজ্জ্বল প্রকাশভঙ্গি তার ভেতর থেকে ঠিকরে বেরুল, যখন সে ডনকে জড়িয়ে ধরল।

ডন দশ শতাংশের যে শর্ত আরোপ করেছেন ব্যালাজোর প্রতি তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছিলেন তিনি।

দশ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকাংশ অর্থাৎ পাঁচ শতাংশ তোমার বার্ধক্য অথবা অনাকাক্ষিত কোনো সময়ের বা দুঃসময়ের জন্য জমা থাকবে।

ডন বললেন, ক্ষমা করবে– মানুষের পরিবর্তন ঘটছে। তাদের স্মৃতিশক্তিরও বিভ্রম ঘটছে। পূর্ব পুরুষের উদারতার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধও ম্লান হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। এবার এসো, তোমাকে আমি মনে করিয়ে দেই তোমার সঠিক হিসাব-নিকাশ সম্বন্ধে।

অল্প সময়ের জন্য থামলেন ডন। তারপর বললেন, আসলে আমি কোনো ট্যাক্স সংক্রান্ত দফতরের লোক নই। আর এ কারণে আমি সে রকম কোনো পেনাল্টি বা উৎকোচ গ্রহণও তোমার কাছে করব না।

ব্যালাজো ডনের কথার আচ বুঝতে পারল। ব্যালাজো জানে ডনের যে কোনো পানিশমেন্ট কার্যকর হয় অত্যন্ত দ্রুত ও নিশ্চিতভাবেই। এমনকি এসব পানিশমেন্টের কোনো পূর্ব সতর্কতামূলক বাণীও শোনানো হয় না। আর ডনের পানিশমেন্ট বা শাস্তি মানে সর্বদাই অবধারিত মৃত্যু। এর কারণ ডনের কাছে শাস্তিযোগ্য অপরাধীরা ছাড় পেলে যে কোনো শত্রুপক্ষের সাথে যোগ দিয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ব্যালাজোর উদ্দেশ্যে ডন আর তেমন কিছু বললেন না। ব্যালাজোকে বিদায় দিতে ডন যখন পিপিকে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, আকস্মিক থমকে দাঁড়ালেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর পিপিকে কাছে টেনে কানে কানে বললেন, তোমার ও আমার মাঝে এ বিষয়গুলো গোপন থাকবে। মনে রেখো, তুমি অবশ্যই এসব আজীবন গোপন রাখবে। আমি তোমাকে কখনোই এমন কোনো নির্দেশ দেব না।

ম্যানশনের বাইরে লনের এক কোণে রোজ ম্যারি ক্লেরিকুজিও পিপি ডি লিনার জন্য অপেক্ষা করছিল। পিপির সাথে তার জরুরি কথা আছে।

রোজ ম্যারি বিধবা হলেও নবীনা ও আকর্ষণীয়া। অপেক্ষমাণ রোজ ম্যারির পরনে কালো ড্রেস– একেবারেই বেমানান লাগছে। তার এই শোকাবহ পরিধেয়র কারণ সান্তাডিওর। আজকে রোজ ম্যারির গায়ে এই শোকাবহ পোশাক তার ভেতরের প্রকৃত সৌন্দর্য ও অল্প বয়সের প্রাণময়তা ঢেকে দিয়েছে।

রোজ ম্যারির ডাগর বাদামি চোখ দুটোতে শোকের গহিন ছাপ নেমে এসেছে। ত্বকের জলপাই রঙ এই শোকাবহ কালো পোশাকের জন্য মনে হচ্ছে আরো পিঙ্গল। শুধুমাত্র তার নবজীবনের সূচনায় উদ্দীপ্ত কোলের সন্তান ডেন্টি যেন রোজ ম্যারির শোক ঢেকে কিছুটা আভা ছড়াচ্ছে। ডেন্টির মাথায় নতুন জীবনের আভাপূর্ণ নীল ফিতা বাঁধা।

সারাটা দিন রোজ ম্যারি আজ তার বাবার কাছ থেকে সতর্কতার সাথে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এ দূরত্ব শুধু তার সাথেই নয় তার অপর তিন ভাই জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটির কাছ থেকেও। তাহলেও, এখন রোজ ম্যারি অপেক্ষা করছে পিপি ডি লিনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য।

পিপি ও রোজ ম্যারির মূল সম্পর্কটি কিন্তু রক্তের, উভয় উভয়ের কাজিন।

তবে রোজ ম্যারির সাথে পিপির বয়সের পার্থক্য প্রায় দশ বছরের। টিনএজার বয়সেই বোজ ম্যারি তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু অপরদিকে পিপি ছিল সর্বদা পৈতৃক ধারার রোজ ম্যারির আহ্বানে সে কখনোই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। পিপি ছিল সব সময়ই বিপরীতমুখী। এর কারণ হচ্ছে রোজ ম্যারি তার ডনের কন্যা। বলিষ্ঠদেহী পিপি তার প্রতি দুর্বল হলেও শুধুমাত্র একটি কারণে এই দুর্বলতা ঝেড়ে-মুছে দূর করেছে।

পিপিকে আসতে দেখে বোজ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, হ্যালো পিপি, তারপর শুভেচ্ছা জানাল, কংগ্র্যাচুলেশন।

স্মিত হেসে পিপি তাকাল রোজ ম্যারির দিকে। তার এই মিষ্টি হাসি খুব ভালো লাগল রোজ ম্যারির।

পিপি এগিয়ে এলো বরাজের কাছে। মাথা নিচু করে তার কোলের শিশুটির কপালে আলতো চুমু দিল। শিশুটির শরীর থেকে তখনো চার্চের ধূপ-ধুনার হালকা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শিশুটির দিকে তাকিয়ে পিপির মনে হলো– তার চুলগুলো একটি প্রায় নবজাতক শিশু হিসেবে বেশ ঘন।

পিপি শিশুটিকে উদ্দেশ্য করে রোজ ম্যারিকে বলল, ডেন্টি ক্লেরিকুজিও। চমৎকার নাম।

রোজ ম্যারির কাছে পিপির এ প্রশংসা ঠিক মনঃপূত হলো না। চুপিসারে রোজ অবশ্য তার পিতৃহীন সন্তানের নাম ঠিক করে রেখেছে। তার নিজের ক্ষেত্রেও কুমারী নামটিই প্রচার করতে ইচ্ছুক। বিষয়টি তার বাবা ডন ক্লেরিকুজিও’র কানে গেছে। ডন আপত্তি করেননি– মেনেই নিয়েছেন যুক্তির খাতিরে। তবে রোজ ম্যারি কিন্তু এখনো বিষয়টির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি– নিজকে অপরাধী ঠাওরাচ্ছে বারবার।

এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো বোজ। সে বলল, তুমি কিভাবে তোমার প্রটেস্ট্যান্ট স্ত্রীকে এই ক্যাথলিক উৎসবের জন্য সম্মত করালে, আর তোমাদের শিশুর ক্ষেত্রেও এমন ধর্মীয় নামেইবা তার সম্মতি এলো কেন?

পিপি তার কথায় আবারো হেসে ফেলল। আমার স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে, আর তাই সব সময় আমাকে খুশি রাখতে চায়।

কথাটি সত্য। রোজ ম্যারি ভাবল। তার ধারণা পিপির স্ত্রী তাকে ভালোবাসে কারণ পিপি সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। রোজ ম্যারি যে এক সময় পিপির প্রেমে পড়েছিল–এটিও সে জানে না।

রোজ ম্যারি বলল, তুমি তোমার ছেলের নাম রেখেছ কসিফিজিও। তুমিও তো তাকে খুশি করতে পারতে তোমার শিশুর একটি আমেরিকান নাম রেখে।

-আমি তোমার বাবাকে সন্তুষ্ট করতে তোমার দাদার নামে নাম রেখেছি।

হাসিমুখে রোজ ম্যারি বলল, ঠিক তাই, আমরাও অবশ্য তাই-ই করে যাব।

রোজ ম্যারির মুখে হাসি থাকলেও ভিতরে ভিতরে সে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। রোজ ম্যারির মুখে এই মুখোশপূর্ণ কষ্টের হাসি যেন বাতাসে মিষ্টি আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার মুখের সব কথা, অভিব্যক্তি মধুর লাগছিল পিপির কাছে।

রোজ ম্যারির মুখে কোনো কথা নেই।–দ্বিধাগ্রস্ত সে। আকস্মিক বলল, আমার জীবন রক্ষার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

পিপি রোজ ম্যারির ভাবলেশহীন মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। আকস্মিক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।

কোমল স্বরে বলল, তোমাকে কখনোই কোনো বিপদের মুখে পড়তে হবে না।

কথাটি বলেই পিপি তার বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল রোজ ম্যারির কাঁধ। তারপর বলল, বিশ্বাস করো। … আর, একটু থেমে পিপি বলতে লাগল, এখন থেকে আর কখনোই এমন কিছু ভাববে না। ভুলে যাও সব কিছু। আমাদের সামনে একটি সুখী জীবন অপেক্ষা করছে। অতীতের সবকিছু ভুলে যাও, একটু একটু করে।

রোজ ম্যারি তার কোলের সন্তানটিকে চুমু খেতে মাথা নিচু করল, কিন্তু পিপির কারণে পারল না।

পিপির কথার প্রতিউত্তরে ইতিবাচক মনোভাব এনে বলল, আমি সবই বুঝি।

রোজ ম্যারি জানে, এই কথোপকথনে পিপির মুখে তার বাবা ও ভাইদের কথা আবারো হয়তো আসবে। তাই বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল সে।

বলল, আমি বর্তমান অবস্থাতেই বেশ মানিয়ে গেছি।

রোজ ম্যারি চায় পরিবারের সকলে জানুক সে তাদের খুব ভালোবাসে এখনো। পরিবারের সবাই জানুক রোজ ম্যারি তার সন্তান নিয়ে সন্তুষ্ট এবং প্রকৃত অর্থেই রোজ ম্যারি তার সন্তানের জন্য এই ধর্মীয় উৎসব ব্যাপ্টাইজিং-এ সন্তুষ্ট। পবিত্র পানির পরশে তার সন্তান নরকের পথ থেকে এসেছে এবং ভবিষ্যৎ জীবনও হবে তার ধর্মীয়– এমন বোধ থেকে সে মনে মনে কৃতজ্ঞও।

এমন সময় ভারজিনো ব্যালাজো হৈচৈ করতে করতে লনে এসে প্রবেশ করল। রোজ ম্যারি ও পিপিকে একরকম জোর করেই ঠেলে পাঠালে লনের মাঝামাঝি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও তার ম্যানশন থেকে বের হলেন– পেছনে তাকে অনুসরণ করছিল তিন পুত্র।

দেখতে দেখতে লনে সমাবেশ ঘটল আমন্ত্রিত-অনামন্ত্রিত সব লোকের। পুরুষদের পরনে ছিল ফরমাল ড্রেস, মহিলাদের গাউন আর বাচ্চারা পরে ছিল সার্টিন।

ক্লেরিকুজিও পরিবারের সদস্যরা অর্ধবৃত্তাকারে দাঁড়াল ফটোগ্রাফারের সামনে। উপস্থিত সমাবেশ থেকে ভেসে আসতে লাগল করতালি। অনেকে শুভেচ্ছাবাণীর স্লোগানও দিতে থাকল। স্লোগানগুলো ছিল এ রকম : মুহূর্তটি শান্তির, বিজয়ের এবং ভালোবাসার।

পরবর্তীতে এই ছবিটি বড় করে ফ্রেমে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর তা টাঙানো হয়েছিল ডনের স্টাডিরুমে, সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে ডনের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র সিলভিও নিহত হয়, সেই সিলভিওর ছবির পাশে।

উৎসবের অবশিষ্টাংশ ডন তার বেডরুমের বেলকনি থেকে প্রত্যক্ষ করছিলেন।

রোজ ম্যারি তার পুত্রকে দোলনা গাড়িতে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক বোলিং পিঠের পাশ দিয়ে। অপর দিক থেকে পিপির স্ত্রী ন্যালিনি তার শিশুকে নিয়ে লনের দিকে আসছিল। ক্রকসিফিজিওর মা ন্যালিনি। স্লিম, লম্বা, মার্জিত। রোজ ম্যারির পুত্র ডেন্টির মতোই একটি ট্রলিতে করে ন্যালিনি তার ক্রকসিফিজিওকে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। এক সময় উভয়ে পরস্পরের কাছাকাছি এসে গল্পে মেতে ওঠে।

ডন প্রত্যক্ষ করছিলেন সবই। এই দুই শিশুকে দেখে তিনি বেশ নিশ্চিন্ত হলেন। শিশু দুটি যে আশ্রয়েই বড় হচ্ছে এবং নিরাপদে–এ ভেবেই তার এই নিশ্চিন্ত। তিনি এটাও ভাবলেন যে, এদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য যে এত মূল্য দিতে হয়েছে বা হচ্ছে- তা তারা কখনোই জানবে না।

ডনের দৃষ্টি গেল আকস্মিক হাসাহাসির শব্দের দিকে। সেখানে দেখতে পেলেন পেটিকে। সে তার স্বভাবসুলভ কৌতুক প্রদর্শনের জন্য একটি দুধের বোতল ডেন্টি ও ক্রকসিফিজিওর ট্রলির মাঝে ফেলে দিল। এ অবস্থায় বোতলটির জন্য শিশু দুটি আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল। এ দৃশ্যই সকলের হাসির কারণ।

এক সময় বোজ ম্যারি ট্রলি থেকে ডেন্টিকে কোলে তুলে নিল। ডনেরও মনে পড়ে গেল সেদিনকার সেই ছোট্ট ডন। ডন ভাবতে লাগলেন– ভালোবাসায় নারীর চেয়ে সুন্দর কিছু নেই, এমনকি কষ্টেও। স্বামী নিহিত হওয়ায় রোজ ম্যারি যখন বিধবা হয়ে পড়ল, তখন উন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন মেয়ের জন্য।

রোজ ম্যারি যখন খুব ছোট- খুব আদুরে চেহারা ছিল তার। যেমন ছিল তার গায়ের রঙ তেমনি ছিল উৎফুল্ল। কিন্তু সেই শিশু আর আজকের রোজ ম্যারির মধ্যে বিশাল ফারাক।

সান্তাডিও’র লড়াইয়ে ভাই ও স্বামী নিহত হওয়ার পর থেকে বদলে গেছে রোজ ম্যারি আমূল।

ডনের অভিজ্ঞতা বলে, প্রকৃত প্রেমিকরা আবারো ভালোবাসার জন্য হাত বাড়ায় আর বিধবারা কেবলই কালো পোশাকে হাঁপিয়ে উঠতে থাকে। মেয়ের জন্য কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল ডনের। তবে সান্ত্বনা দিতে আপন মনেই এলো– রোজ ম্যারির এখন একটি সন্তান আছে। সে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখবে– লালন-পালন করবে।

ডন তার ফেলে আসা জীবনে চলে গেলেন। অতীত জীবনের পর্যায়ক্রমিক সফলতায় তিনি নিজেই আশ্চর্য হয়ে উঠলেন।

তার মনে হলো– ক্ষমতা এবং সম্পদের জন্য তার সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবে সঠিক ছিল। তবে এর জন্য তাকে কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে। তাছাড়া সবই ছিল প্রয়োজনীয় ও প্রমাণিত।

যদি কোনো মানুষ তার অপরাধে বা পাপের জন্য অনুশোচনায় ভোগে, তবে ডন তাকে অন্তত এতটুকু নিশ্চয়তা দেবেন যে, ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাও। ডন জানেন, ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন।

ডনের দৃষ্টি পড়ল পিপির দিকে। তার ব্রঙ্কস এনক্লেভের তিন সৈন্যের সাথে বকসি খেলায় ব্যস্ত সে। এরা পিপির চেয়ে বয়সে কিছুটা বড়ই হবে। তবে, তারপরও তারা পিপির অনুগত।

পিপি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দক্ষতার জন্য সর্বদাই মধ্যমনি হিসেবে সহজেই স্থান করে নিতে সক্ষম। সে প্রকৃতই একজন লিজেন্ড। সে সান্তাডিও’র বিরুদ্ধেও বকসি খেলেছিল।

ডনের চোখে পিপি প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল যুবক। যখন তার বল বিপক্ষীয়দের বলে আঘাত হানে তখন সে আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে। কত প্রাণের ছোঁয়াই না তার মাঝে–ডনের খুব ভালো লাগে। তিনি ভাবেন– একজন বিশ্বস্ত সৈন্য একটি উষ্ণ সঙ্গিনীর মতো শক্তিশালী এবং দ্রুত, চালাক এবং সংযত হচ্ছে পিপি।

ডনের প্রিয় বন্ধু, ভারজিনো ব্যালাজোও উপস্থিত ছিলেন বকসি কোটে। এই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পিপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন দক্ষতার সাথে। ব্যালাজো যখন পিপির বলে জোরে আঘাত করতে সমর্থ হন তখন প্রায় সাথে সাথেই উল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠেন তার সফল হিটের জন্য। তারপর বেলকনির দিকে হাত উঁচিয়ে ডনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। ডনও করতালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করেন।

ডনের এই ভেবে খুব ভালো লাগে যে, এই মাত্র একটা দিন পাম সানডে, এ দিনটিতে তার নিয়ন্ত্রণাধীন সব লোক একে-অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। কুওগে মিলিত হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে। ডন মনে মনে গর্ববোধও করেন।

তিনি ভাবেন– হয়তো তার আজকের এই দুরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা আসন্ন কঠিন সময়গুলোয় রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দিবে।

তার আপন মানুষের মনে শয়তানের বীজ ইতিমধ্যেই সংগঠিত হয়েছে কি-না তা হয়তো ডন আগে থেকেই বুঝতে পারেননি।

.

পর্ব– এক

হলিউড
লাস ভেগাস ১৯৯০

০১.

ক্যালিফোর্নিয়ার বসন্ত।

সূর্যের আলোয় হলুদ আভা। বজ স্কানেট তার চুলগুলো স্প্রে করে হলুদ করে নিয়েছে। সূর্যের হলুদ, আরে স্প্রে করা হলুদে মিলে স্কানেটের চুল হয়েছে আরো উজ্জ্বল।

তার টান টান ও পেশিবহুল শরীরের পেশিগুলো একটি আসন্ন লড়াইয়ের উত্তেজনায় আন্দোলিত হচ্ছিল।

উত্তেজনার একরাশ আবেগ মনে। সারা বিশ্বের কয়েক কোটি দর্শক তাকে দেখবে টিভির পর্দায় দেখবে তার কাজ। উত্তেজনা হওয়া তো স্বাভাবিক।

স্কানেটের কোমরে এলাস্টিকের কোমরবন্ধ আর তাতে রয়েছে ছোট একটি পিস্তল। গায়ের জিপারযুক্ত পাতলা জ্যাকেট স্কানেটের কোমর ছাড়িয়ে নেমে গেছে আরেকটু নিচে। তাতে বেশ স্বাভাবিকভাবে গোপন রয়েছে তার কোমরে বাঁধা পিস্তলটি।

জ্যাকেটটি সাদা রঙের, তার ওপর অগ্নিশিখার লাল তীর নিচ থেকে উপরে উঠছে। এমন প্রিন্ট করা জ্যাকেটের সাথে ম্যাচ করে নীল ডটেড ব্যান্ড বেঁধেছে চুলে।

স্কানেটের ডান হাতে ধরা আছে বড় ধরনের রুপালি-রঙা অভিযান বোতল। পারতপক্ষে শো-বিজ দুনিয়ার একজন হিসেবে বজ স্কানেট নিজকে যতটা সম্ভব সাজিয়েছে। এর কারণ শো-বিস দুনিয়ার তারকা খচিত কলা কুশলীদের সম্মিলন অ্যাওয়ার্ড গিভিং সেরেমনি।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ডরোথি চ্যান্ডলারে নির্মিত হয়েছে প্যাভিলিয়ন। এই প্যাভিলিয়ন ঘিরে কৌতূহলী জনতার ভিড়। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিতে যোগ দিতে আসা মুভি স্টারদের জন্যই ভক্তরা ভিড় করে আছে। এ ভিড়ের ঘনত্ব বাড়ছে ক্রমেই। রাস্তার দুধারে দর্শক-শ্রোতাদের ব্যাপক সমাবেশকে আটকে রাখা হয়েছে।

সড়কগুলো পরিপর্ণ হয়ে আছে বিভিন টিভি সংস্থার ক্যামেরা ও রিপোর্টারে। এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ঘিরে খুঁটিনাটি সকল সংবাদ ক্যামেরার মাধ্যমে রিপোর্টাররা পাঠিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর কোণায় কোণায়।

আজ রাতে মানুষ দেখবে তাদের গ্রেট মুভি-স্টারদের সশরীরে। তাদের থাকবে না কোনো কৃত্রিমতা। পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জয়-পরাজয়ের ফয়সালাও হবে আজ রাতে– এত মানুষের সমাগম এ কারণেই।

পোশকি নিরাপত্তা কর্মীরা দর্শকের ঢল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে পথ দিয়ে মুভি-স্টাররা ঢুকবে তা মানবশূন্য রাখতে কত কৌশলের অবতারণা। নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে হাতে চকচকে বাদামি ব্যাটন। মাঝে-মধ্যে দর্শকদের উত্তেজনা দমন করতে ব্যাটন উঠিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছে।

বজ স্কানেট অবশ্য নিরাপত্তা কর্মীদের দেখে মোটেও বিব্রত নয়। সে আকারে-আয়তনে বিশাল। শুধু তাই নয়, অনেকের চেয়েই সে অনেক বেশি গতিশীল ও ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন। তাছাড়া আকস্মিক চমকে দেয়ার মতো স্কানেট কৌশলীও বটে।

নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যাপারে সে উদাসীন হলেও টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানদের নিয়ে দ্বিধান্বিত। কলা-কৌশলীরা তাদের পথে আসলেই তো শুরু হবে রিপোর্টারদের বিভিন্ন তৎপরতা। তখন তারা সেলিব্রেটিদের সুরক্ষার চেয়ে নিজেদের সংবাদ, সাক্ষাৎকার এসব রেকর্ড নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

এসব চিন্তা করতে করতেই একটি সাদা লিমুজিন দেখতে পেল স্কানেট। প্যাভিলিয়নের প্রবেশ দ্বারের কাছে এসে থেমেছে লিমুজিনটি। আর তা থেকে নেমে এলো বিশ্বের সেরা সুন্দরীর খেতাবপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের জরিপে অ্যাথেনা অব্যাহত বিশ্বসেরা সুন্দরী রমণী।

স্কানেট দেখল– অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন গাড়ি থেকে নেমে আসার সাথে সাথেই দর্শকদের ভিড় ক্রমেই অভিনেত্রীর কাছাকাছি চলে আসছিল। নিরাপত্তা কর্মীরাও গলদঘর্ম হয়ে, ব্যাটন পিটিয়ে যুদ্ধ করে তাদের নির্ধারিত সীমানায় আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অ্যাথেনার নাম ধরে ভক্তকুল স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছিল প্রাঙ্গণ।

অপরদিকে অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার, ছবি তোলা ও ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতে ফেউ লাগল রিপোর্টাররা। এক রকম ঘিরেই ধরল তারা অ্যাথেনাকে। ভক্ত ও টিভি ক্যামেরার সামনে অ্যাথেনা হাত উঁচিয়ে অভিবাদনের সাড়াও দিয়ে যাচ্ছিল থেমে থেমে ক্রমাগত।

স্কানেট নিরাপত্তা ঘের কৌশলে টপকে বেরিয়ে এলো। তারপর শুরু করল ট্র্যাফিক গার্ড এড়িয়ে আঁকাবাঁকা দৌড়। আকস্মিক এ দৌড় দেখে কয়েকজন নিরাপত্তা গার্ডও তার পিছু নিল। কিন্তু স্কানেট ছিল তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

কয়েক বছর আগে, কোনো এক ফুটবল ম্যাচে স্কানেট যেমন বিপক্ষীয় দলের কঠিন ডিফেন্স ভেঙে গোল করেছিল, ঠিক তেমনি এই নিরাপত্তা কমীদের জিগজ্যাগ সঙ্কুল পথ অনায়াসেই অতিক্রম করছিল। এভাবেই অবশেষে সে একেবারে যথাযথ মুহূর্তে এসে পৌঁছল প্যাভিলিয়নে।

অ্যাথেনা তখন সবেমাত্র মাইক্রোফোনটি হাতে তুলে নিতে যাচ্ছে। ফটোগ্রাফাররাও তার সৌন্দর্যপূর্ণ অ্যাঙ্গেলের অভিব্যক্তি ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত। অ্যাথেনার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনজন দেহরক্ষী টাইপের মানুষ।

স্কানেট নিশ্চিত হলো যে কিছু ক্যামেরার লেন্স তার ওপরও পড়েছে। এমন সময় কাটে তার বোতল থেকে কিছু লিকুইড আকস্মিক অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের মুখে ছুঁড়ে মারল।

শুধু তাই নয়, চেঁচিয়ে উঠল এখানে কিছু অ্যাসিড আছে। যেন অন্য কোনো দুর্বত্ত এই অ্যাসিড ছোঁড়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে এমন মনোভাব প্রদর্শন করে স্কানেট অজানা দুৰ্বত্তের উদ্দেশে গালাগাল দিতে লাগল–ইউবিন বলে। তারপরই সে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকাল–তার চেহারায় ছিল চিন্তাশীল, ভাবগম্ভীর ও মর্যাদাশীল এক ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি।

এক সময় স্কানেট গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠে বলল, এটা তার পাওনা ছিল। এর পরপরই ব্যাটন হাতে কয়েক জন খাকি পোশাকের নিরাপত্তা কর্মী তাকে ঘিরে ধরল। স্কানেট বসে ছিল হাঁটু গেড়ে।

এই নাটকীয় ঘটনার শেষে অ্যাথেনা অবশেষে স্কানেটের দিকে তাকাল। সে স্কানেটের চেঁচানোর আওয়াজ শুনেছিল কিন্তু লিকুইড তার কানে ও মাথায় পড়ায় সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বলে ঠিক ঠাহর করতে পারেনি।

কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাটি কোটি কোটি টিভি দর্শক ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে।

দারুণ লাভলি চেহারা অ্যাথেনার। তার গালে এখনো রুপালি রঙের দাগ। এই অ্যাসিড ছোঁড়া ব্যক্তিটির দিকে যখন অ্যাথেনার চোখ পড়ল, তখন সে বিস্মিত, মর্মাহত এবং কিছুটা ভয়ও পেল। আর এই বিস্ময় ও ভীতির ভাব অ্যাথেনার সৌন্দর্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল দ্বিতীয় বারের মতো।

টিভি ক্যামেরাগুলো তখনও সবল। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দেখছে পুরো বিষয়টি। স্কানেটকে এক রকম টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।

বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত হলেও দর্শক অনেকটা ফিলি ঘটনার মতোই উপভোগ করছিল। আপাতদৃষ্টিতে স্কানেট অপরাধী হলেও তাকে ঠিক মুভি স্টারের মতোই দেখাচ্ছিল। দু-হাতে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে একটি জয়সূচক স্যালুট দিল।

এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কানেটের কোমর হাতড়ে পেল লুকিয়ে রাখা ছোট পিস্তলটি। এরপরই পুলিশ কর্মকর্তাটি তার কিডনিসদৃশ স্থান লক্ষ্য করে আঘাত করল। সাথে সাথেই ঝাঁকিয়ে উঠে স্কানেট বেঁকে গেল কিছুটা।

এদিকে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তখনও অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিমর্ষ। তবে তার চিবুকে লেগে থাকা রুপালি রঙ ইতিমধ্যে শুকিয়ে যাওয়ায় ঝরে পড়ল। আসলে সেগুলো অ্যাসিড ছিল না– অ্যাসিডে ত্বক ঝলসে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটল না আর তার হাতে ছিটে-ফোঁটা লিকুইডগুলোও সরে গেল। কিন্তু এতক্ষণে বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে ফিলেছে তার নিরাপত্তার খাতিরে। তাকে হয়তো সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেও।

অ্যাথেনা স্বাভাবিক হলো। শান্ত কণ্ঠে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বলল, এটা ছিল শুধু পানি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য হাতে পড়া কয়েক ফোঁটা রঙ মিশ্রিত পানি পরখ করে দেখল সে।

এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিরাজমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে স্মিত হেসে অ্যাথেনা বলল, কি আশ্চর্য মানুষ আমার স্বামীটি।

অ্যাথেনা আর দেরি করল না। ঘটনাটির মোড় ঘুরিয়ে নিতে সে তাৎক্ষণিক প্যাভিলিয়নের দিকে এগিয়ে গেল। এমন একটা ঘটনার পরও অ্যাথেনার এই স্বাভাবিক মূর্তি দর্শকদের আন্দোলিত করেছিল। ভক্তকুলের কাছে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছিল, হয়তো এ কারণেই।

এরপর অ্যাথেনা যখন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষের মনোনয়নে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পেল, তখন উপবিষ্ট দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিতে লাগল।

লাস ভেগাসে জানাদু ক্যাসিনো হোটেলের পঁচাশি বছর বয়স্ক মালিক মড়ার মতো শুয়ে আছেন। তিনি শুয়ে আছেন মোল তলার চিলেকোঠার মতো একটি শীতল কক্ষে। শুয়ে শুয়ে তিনি ভাবছেন; এই ষোল তলা থেকেও ক্যাসিনো কক্ষের সব ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর হর্ষধ্বনি যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

আজকের এই বসন্ত দিনে, এই ক্ষণটিতে তিনি যেন স্পষ্ট শুনতে পারছেন রুলথ হুইলে ঘূর্ণায়মান লাল-কালো গজদন্তী বলের ঘর্ষণের শব্দ। তার কানে ভেসে আসছে ক্র্যাপ শুটারদের পাইয়ে দিতে কিংবা হারানোর জন্য গুটির খটাখট আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন চকচকে রুপালি কয়েন গেলা মেশিনের ঝনাঝনাৎ শব্দ, সবই যেন স্পষ্ট ভেসে আসছে তার কানে এই মোল তলার পেন্থ হাউসেও।

আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট, যে কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মতোই সুখী! ইতিমধ্যেই তিনি অতিবাহিত করেছেন জীবনের প্রায় আশিটি বছর। নব্বই ছুঁই উঁই গ্রোনিভেল্টের  সময় অতিবাহিত হয়েছে কেবল ব্যস্ততা আর ব্যস্ততায়। অনুরাগী ব্যভিচারী দূত, বহু হত্যাকাণ্ডের সক্রিয় মদদদাতা, রাজনৈতিক ফিক্সার এবং সর্বপরি জানা হোটেলের কঠোর অথচ দয়ালু লর্ড হিসেবে কেটে গেছে তার বর্ণাঢ্য জীবন।

বিশ্বাসঘাতকের ভয়ে আলফ্রেড় কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেননি। তবে অনেকের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন নীরবে। মানুষের ভালোবাসার ধার ধারেন না তিনি কোনো আক্ষেপও নেই তার এজন্য। সম্প্রতি তিনি মাঝে মাঝেই তার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোয় উঁকি মারেন তবে এও যেন বিকেলবেলায় তার ক্যাসিনো আড্ডায় সফরের মতো।

গত পাঁচ বছর ধরে ক্রকসিফিজিও ডি লিনা, অর্থাৎ ক্রস গ্রোনিভেল্টের দক্ষিণ হস্ত। শয্যাকক্ষে প্রবেশ করল ক্রস আলফ্রেড, তুমি রেডি? ক্রসের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, প্রতিউত্তরে কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলেন আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট।

ক্রস গ্রোনিভেল্টকে বিছানা থেকে টেনে তুলল, তারপর সতর্কতার সাথে নিয়ে বসাল হুইল চেয়ারে। একজন নার্স বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টকে নরম ব্লাঙ্কেট ভাঁজ করে ঢেকে দিল। একটি বালিশ ক্রসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেন্থ হাউসের দরজা খোলার জন্য রওনা হলো সে।

গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারের পেছনেই থাকার কথা নার্সটির। তবে আজকের এই সুন্দর বিকেলে ভ্রমণের জন্য গ্রোনিভেল্ট আর নার্সের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না।

পেন্থ হাউসের বাগানে গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারটি অনায়াসেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। বাগানে কার্পেট করা কৃত্রিম সবুজ ঘাসে চোখ পড়ল গ্রোনিভেল্টের । আবারো তার মন ছুটে গেল মোল তলার নিচের ক্যাসিনো কক্ষে। সেখানেও এমন একটা মোলায়েম মেঝে আছে মনে পড়ল তার।

সটান বসে আছেন গ্রোনিভেল্ট তার হুইল চেয়ারটিতে, আর বামে-ডানে অনবরত তাকাচ্ছেন পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে-~~ এটাই তার আপাতত আনন্দ। তার আনন্দিত ও গর্বিত হওয়ার আরেকটি কারণ–তার জন্য এতগুলো মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত ক্যাসিনোয়।

গ্রোনিভেল্টের  বহনকারী হুইলচেয়ার অত্যন্ত ধীর লয়ে এসে পৌঁছল ব্ল্যাকজ্যাক ও রুলথ এরিয়ায়। এরপর পরিদর্শন করল একে একে ব্যাকার্যাট পিট ও জাঙ্গল অব ক্র্যাপ টেবিল। এই পরিদর্শনের সময় জুয়াড়িরা তীর্যক উক্তিও করছিল বুড়ো গ্রোনিভেল্টের  উদ্দেশে। বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়নি গ্রোনিভেল্টের  সদা প্রস্তুত চোখ ও কান। তবে মুচকি হেসে তার যথাযথ উপলব্ধির কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেকে তাকে নতুন পঙ্গু-জুয়াড়ি হিসেবেও মনে করেছে। কেননা ভেগাসে এমন অনেকেই আছে যারা হুইলচেয়ারে করেই আসে জুয়ার আড্ডায়। অবশ্য এমন পঙ্গু জুয়াড়িরা অনেকের করুণাও পেয়ে থাকে। করুণার দৃষ্টি দিয়ে যেমন কিছুক্ষণ আগে কেউ মন্তব্য করেছিল- আহা, বেচারা, ভাগ্য তার সাথে শত্রুতা করে কি হাল করেছে।

অবশেষে গ্রোনিভেল্টের  হুইল চেয়ারটি এসে পৌঁছল কফি হাউসে। এটি ডাইনিং রুম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কক্ষের প্রহরী তাদের রিজার্ভ করা বুথে পৌঁছে সেখানে অন্য গ্রাহকের দখল করা টেবিল খালি না হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে লাগল।

গ্রোনিভেল্ট স্বচ্ছ গ্লাসের দেয়ালের অপর প্রান্তে দেখতে পেলেন একটি বিশাল আকারের সুইমিংপুল। নীল রঙের কাঁচের কারণেই সেই সুইমিংপুলের পানিগুলো হয়তো নীল দেখাচ্ছিল। গ্রোনিভেল্টের  মনে হলো– পানিগুলো যেন তপ্ত, সেখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তবে কিছু যুবতী ও শিশুও দেখতে পেলেন। তারা দাঁড়িয়েছিল ধোয়া ওড়া সারফেসের কাছেই। একটা ব্যতিক্রম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছিল গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টিতে। যুবতী ও শিশুদের রঙিন খেলনার মতো লাগছিল তার। হঠাৎ তার মনে হলো- এ ছোট্ট পরিসরে আনন্দ ও বিনোদনের জায়গা– এর সব কিছুই তার সৃষ্টি।

আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  চিন্তায় ছেদ ধরাল ক্রস ডি লিনা। বলল, আলফ্রেড একটা কিছু খাও।

গ্রোনিভেল্ট ফিরে এলেন বাস্তবে। ক্রসের দিকে হাসি মুখে তাকালেন। ক্রসের সব কিছুই তার ভালো লাগে। তিনি তাকে ভালোবাসেন। আসলে ক্রস এমনই এক ব্যক্তি যার প্রতি পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আকর্ষণ বোধ করে। গ্রোনিভেল্ট তাকে পছন্দ করার পেছনে কারণ সে অত্যন্ত আস্থাবান ও বিশ্বস্ত। গ্রোনিভেল্টের  জীবনে তার মতো বিশ্বস্ত আর একজনকেও পাননি।

ক্রসের উদ্দেশে গ্রোনিভেল্ট বললেন–আমি আমার এই ব্যবসাকে খুব ভালোবাসি।

একটু হেসে আবার বললেন, ক্রস, তুমিই হবে এই হোটেলে আমার উত্তরসূরি। আমি জানি তোমাকে নিউইয়র্কে আমাদের পার্টনারের সাথেও কাজ করে যেতে হবে। তবে কখনো জানাদু ছেড়ে যেও না।

ক্রস বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টের  হাত চেপে ধরল। তার হাতের নরম অস্থিতে আলতো চাপ দিল, উল্টো পৃষ্ঠের নরম চামড়ায় হাত বুলিয়ে আশ্বাসের সুরে বলল, আমি যেতে চাইও না।

গ্রোনিভেল্ট অনুভব করলেন সূর্যের রশ্মি রঙিন কাঁচ ভেদ করে যেন তার শরীর ঝলসে দিচ্ছে। তিনি ক্রসের উদ্দেশ্যে বললেন, ক্রস, আমি তোমাকে সবকিছু শেখাব। আমি কিছু কঠিন কাজ করেছি– সত্যিই সেসব ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তবে কখনো পিছন ফিরে তাকাবে না। তুমি হয়তো জানো পার্সেন্টেজের কাজগুলো হয় একটু ভিন্ন পথে। তুমি তোমার সাধ্যমতো ভালো কাজ করে যাবে। অবশ্যই সেখান থেকেও তুমি পাবে বিস্তর। আমি কিন্তু ভালোবাসায় ব্যর্থতা কিংবা এক্ষেত্রে ঘৃণাকেই প্রশ্রয় দেবে এমন কোনো উপদেশ দিচ্ছি না। এগুলো থেকে অবশ্য খুব একটা ভালো পার্সেন্টেজ আসে না জীবনে।

টেবিলে রাখা কফির কাপে চুমুক দিল দুজনে। গ্রোনিভেল্ট কফির সাথে আসা একটি প্যাস্ট্রি তুলে নিলেন। আর ক্রস তার কফির সাথে অরেঞ্জ জুস।

মধ্যবর্তী স্বল্প সময়ের নীরবতা ভাঙলেন গ্রোনিভেল্ট, একটি বিষয় ….

একটু থেমে তিনি আবার বললেন, যতক্ষণ অব্দি তোমার হাতে মিলিয়ন ড্রপটুকু না আসে ততক্ষণ তুমি একটি ভিলাও ছাড়বে না। কখনো ভুলে যেও না যেন ভিলা অর্থাৎ পূর্বপুরুষের বাগানবাড়িগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে সুদূর অতীতের স্মৃতি, সেগুলো পৌরাণিকই অন্তত আমার কাছে সে সবের গুরুত্ব অনেক।

ক্রস গ্রোনিভেল্টের  হাতের ওপর হাত রেখে আশ্বস্ত করল। গ্রোনিভেল্টের  প্রতি ক্রসের অনুভূতি দুর্বার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রস তাকে তার বাবার চেয়েও বেশি ভালোবাসে।

চিন্তা করো না–ক্রস বলল, ভিলাগুলো নিরাপদই থাকবে, এর জন্য যা কিছুই ঘটুক না কেন?

গ্রোনিভেল্টের  চোখটি অস্পষ্ট হয়ে উঠল। তীব্র জ্বালা অনুভব করল সে তার চোখ দুটিতে। পুরুষ না হয়ে কোনো নারী হলে হয়তো অঝোর ধারায় নেমে আসত অশ্রু। সামলে নিল গ্রোনিভেল্ট নিজেকে। বলল, সাবধানী হও। সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করবে।

অবশ্যই–ক্রস আশ্বস্ত করল তাকে। তারপর বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টকে এই বৈষয়িক প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে আনতে নতুন বিষয়ের উত্থাপন করল।

ক্রস বলল, সেই স্ট্যান্টাডিও যুদ্ধের কাহিনী তুমি আমাকে কখন শোনাবে? আমাকে সে বিষয়ে কখনো কেউ কিছু বলেনি। শুনেছি সে সময় নাকি তুমি তাদের সাথে সান্তাডিও’র কাজ করতে।

বৃদ্ধ গ্লোনিভেন্টের দীর্ঘশ্বাস কেঁপে উঠল। সেই সাথে বিড়বিড় করে তিনি যেন কিছু আওড়ে যাচ্ছিলেন উদাস দৃষ্টিতে। ক্রসের উদ্দেশে বললেন, আমি জানি আমার সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আমি সেসব ঘটনা তোমাকে শোনাতে পারব না।

একটু দম নিয়ে গ্রোনিভেল্ট আবার বলল, তুমি বরং তোমার বাবার কাছেই শুনে নিও।

ক্রস নাছোড়বান্দার মতো বলল, আমি পিপির কাছে শুনতে চেয়েছি। কিন্তু সেও কেন যেন এড়িয়ে গেছে।

অতীতকে অতীত হিসেবেই রেখে দাও না গ্রোনিভেল্ট প্রতিউত্তরে বলল, কখনো পেছন ফিরে তাকিও না। ক্ষমার জন্যও নয়, নয় বিচারের জন্য কিংবা সুখ খুঁজে পেতে। তুমি এখন যা আছ তা নিয়ে ভাব ভাব এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে।

পেন্থ হাউস কক্ষে ফিরে এলেন গ্রোনিভেল্ট, নার্স তার বিকেলের গোসল পরবর্তী আনুষঙ্গিক কাজ সমাধা করল।

রাতে একটা পরিপূর্ণ ঘুম দিলেন গ্রোনিভেল্ট। খুব ভোরে তার ঘুম ভেঙে গেল। নার্সকে অনুরোধ করলেন তাকে বেলকনি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য।

নার্স তাকে একটি বড় চেয়ারে বসিয়ে ব্লাঙ্কেট দিয়ে ঢেকে দিল। পাশে বসে নার্স গ্রোনিভেল্টের  পালসও পরখ করে নিল এই ফাঁকে।

নার্সের কোলেই ছিল গ্রোনিভেল্টের  হাত। পালস চেক করার পর নার্স যখন তার কোলে ফিরিয়ে দিতে গেল, গ্রোনিভেল্ট অসম্মত হলেন। এক পর্যায়ে নার্স আর বাধা দিল না।

পাশাপাশি দুজন বসেই আকাশে সূর্য উদয়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল।

সূর্যের রক্তিম বলয়ের আভা যখন আকাশে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল তখন মেঘগুলোর রঙও পাল্টে যাচ্ছিল বিস্ময়করভাবে– কালো-নীলাভ মেঘগুলোতে সূর্যোদয়ের আভা লেগে হয়েছিল গাঢ় কমলা রঙ। ভোরের আকাশে এই রঙের খেলায় মেতে ছিল উভয়ে।

বেলকনি থেকে গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টি গেল নিচের ভূ-পৃষ্ঠে। একেবারে আকাশ থেকে নেমে এলেন মাটিতে। দেখতে পেলেন–টেনিস কোর্ট, অদূরে গলফ-এর মাঠ, পাশে সুইমিং পুল, দূরে আবছা ভিলাগুলো যেন থেকে থেকে জ্বলে উঠছিল দূর আকাশের মিটিমিটি তারার মতো।

গ্রোনিভেল্টের  দৃষ্টি গেল জানাদু হোটেলে টাঙানো পতাকাগুলোর দিকে। জানাদুর নিজস্ব প্রতীক গাঢ় সবুজের মাঝে সাদা পায়রা সংবলিত ফ্ল্যাগের দিকে তিনি তাকিয়ে থাকলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর তার দৃষ্টি গেল সবশেষে অসীম বালিপূর্ণ সমুদ্র– মরুভূমির দিকে। যেখানে দিগন্তরেখা ভেদ করে একটু আগে উঠেছে আজকের দিনের সূর্য।

বেলকনি থেকে গ্রোনিভেল্টের  এই প্রত্যক্ষ অবলোকনে তার মনেও উদিত হয়েছে গর্বের আভা। তিনি ভাবতে লাগলেন– এসবই তার সৃষ্টি। গর্বভরে মনে মনে বলতে লাগলেন, একটি পতিত জমিতে আমিই এনেছি একটি আনন্দের বিনোদনের ভুবন এবং আমি নিজেই আমার সুখী জীবনের স্রষ্টা, বাইরের কেউ নয়।

এই বিশ্বে আমি সর্বদা যথাসাধ্য একজন ভালো মানুষ হিসেবে থাকার চেষ্টা করেছি।

গ্রোনিভেল্ট ফিরে গেলেন তার কিশোর জীবনে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার চৌদ্দ বছর বয়স্ক দার্শনিক বন্ধুর কথা। সে বয়সেই তারা আলোচনায় মেতে উঠতেন ঈশ্বর ও তার অস্তিত্বের নৈতিক মূল্যায়নের মতো কঠিন সব বিষয় নিয়ে।

গ্রোনিভেল্টের  সেই অন্তরঙ্গ দার্শনিক বন্ধুটি একবার তাকে প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা কেউ যদি তোমাকে এক মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি বাটন পুশ করতে বলে যা করলে দশ লাখ চীনা মারা যাবে, তুমি কি তা করবে? অসম্ভব ও অযাচিত এমন প্রশ্নের অবতারণা করে নিজ থেকেই সে শুরু করত তার নাতিদীর্ঘ বিশ্লেষণ। অবশেষে সে সম্মতিও আদায় করে নিত যে— এমন গর্হিত কাজ অসম্ভব। তবে গ্রোনিভেল্ট তার যুক্তিতে খুব একটা সায় দিতেন না। তিনি হয়তো হত্যাকাণ্ডের পক্ষেই থাকতেন দার্শনিক বন্ধুর সাথে বিতর্কে।

আজ প্রায় পঁচাশি বছর পর জানাদু হোটেলে তার নিজ পেন্থ হাউসের বেলকনিতে বসে ভাবছেন–সে বিতর্কে গ্রোনিভেল্টই ছিলেন সঠিক। এ চিন্তা তার এই সফল জীবনের জন্য নয়–এর কারণ, এমন বিশাল ধরনের একটি হেঁয়ালিপূর্ণ বিতর্ক কোনো কিছুকেই থামিয়ে দিতে যথেষ্ট নয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে উভয় সঙ্কটে ফেলার মতো বিষয়ও নয়।

এখন গ্রোনিভেল্ট বেশ ভালোই বুঝতে পারেন কিশোর কালেও তার সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। দার্শনিক বন্ধুর বিতর্ক থামিয়ে দিয়ে, প্রশ্নটিতে কেন চায় নাম্যানদের হত্যার কথা বলা হলো? আরো এর জন্য দশ লক্ষ ডলারইবা কেন? এই প্রশ্নগুলোই তখন সেই দার্শনিক বন্ধুকে থামিয়ে দিতে প্রতিপ্রশ্ন। এমন চিন্তা গ্রোনিভেল্ট সে বয়সেও করেছেন।

গ্রোনিভেল্ট বাস্তবে ফিরে এলেন। পৃথিবীতে আলোর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে লাগল। পাশে বসা নার্সকে অনুরোধ করলেন, তিনি তাকালেন সূর্যের প্রখরতার দিকে। চোখে ছানি পড়েছে তার, আর সেটাই তার চোখের বর্ম। নয়তো তিনি যেভাবে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সুস্থ চোখ হলে এতক্ষণে ধাধিয়ে যেত।

ঠায় বসে গ্রোনিভেল্ট তার পূর্বজীবনের কথা ভাবতে লাগলেন। তার মনে এলো নিশ্চিত সেই নারীর কথা, যাকে নিয়ে নিশ্চিতভাবেই কিছু পূর্ণাঙ্গ চিন্তাও করেছিলেন।

তার মনে ভেসে উঠল একে একে সেসব মানুষের ছবি, যাদের তিনি নির্দয়তার সাথে পরাস্ত করেছিলেন। তবে তার প্রতিও যে অনেকে করুণা করেছে, সহানুভূতি দেখিয়েছে সেসব কথাও ভাবনায় এলো গ্রোনিভেল্টের । পুত্রসম ক্রসের কথা মনে এলো। সে এখনও তার প্রতি সহানুভূতিশীল। সহানুভূতি পেয়েছেন গ্রোনিভেল্ট সান্তাডিও ও ক্লেরিকুজিও পরিবারের সবার কাছ থেকেও। এমন বর্ণাঢ্য জীবন পিছনে রেখে এ বয়সে তিনি বেশ সুখী। এমন জীবন-চিন্তা নিয়ে আজ তাই গ্রোনিভেল্টের  মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে আসলে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোনটা কাম্য, সুখী জীবন না কি নৈতিকতাপূর্ণ জীবন?– এই দ্বিধা তার মনকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করল।

ধীরে ধীরে শীতল হয়ে পড়ল গ্রোনিভেল্টের শরীর। নার্সের কোলেই রাখা তার একটি হাত। নার্সের মনে হলো বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টের  হাতটি ক্রমেই শীতল হয়ে উঠছে। পেশিগুলোও কেমন নিথর। নার্স তাৎক্ষণিক গ্রোনিভেল্টের  অপরিহার্য চিহ্নগুলোর পরীক্ষা শুরু করল। নিশ্চিত হলো নার্স— তিনি আর নেই।

গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যবস্থা করল তার উত্তরসূরি ক্রস ডি লিনা। এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য হাজির হলেন লাস ভেগাসের সব জ্যোতিষ্ক স্থানীয় মহাজনরা। হাজির হতে লাগল শীর্ষস্থানীয় জুয়াড়ি, গ্রোনিভেল্টের  বহু নারীবন্ধু এবং হোটেল জানাদুর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারা উপস্থিত হলেন তার মতো একজন মহান ব্যক্তির শ্রদ্ধায়, যিনি গ্যাম্বলিংকে একটি শৈল্পিক ও বৈধ রূপ দিয়ে গেছেন।

পাশাপাশি গ্রোনিভেল্ট তার জীবনে সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের চার্চের জন্য ব্যয় করে গেছেন বিপুল পরিমাণে অর্থ। এই দান প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, যারা ধর্ম এবং জুয়ায় বিশ্বাসী এই চার্চ তাদের জন্য উপহারস্বরূপ। গ্রোনিভেল্ট ধর্মীয় বিশ্বাস ও জুয়ায় বিশ্বাসকে এক করে দেখাতে চেয়েছেন।

গ্রোনিভেল্ট ভেগাসে বস্তি এলাকা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছিলেন। তিনি নির্মাণ করেছেন প্রথম শ্রেণীর হাসপাতাল এবং উন্নতমানের স্কুল। এসব কাজে সর্বদা তিনি ছিলেন আত্মতুষ্টির দাবিদার। পার্শ্ববর্তী আটলান্টিক শহরের প্রতি গ্রোনিভেল্টের  ছিল অবজ্ঞা। তিনি মনে করতেন, শহরের কর্তৃপক্ষ কেবল নিজের পকেটে টাকা পুরতেই ব্যস্ত। সামাজিক উন্নয়নের জন্য তারা কিছুই করেনি।

মানুষকে গ্রোনিভেল্ট বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে গ্যাম্বলিং কোনো নোংরা পন্থা বা দোষের কিছু নয়। এটি গলফ, বেসবলের মতোই মধ্যমান বিনোদনের উৎস। অমেরিকায় তিনি গ্যাম্বলিংকে একটি বৈধ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব কারণে লাস ভেগাসের সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয় তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে।

ক্রস সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরালায় এক কোণে চোখের জল ফেলছিল। গ্রোনিভেল্টের  মৃত্যু যেন তাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। গ্রোনিভেল্টের সাথে তার খাঁটি অন্তরঙ্গতা ছিল, তেমনটি আর হয়নি আগে। তবে ক্রস এখন হোটেল জানাদুর একান্ন শতাংশের মালিক, যার অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচশ মিলিয়ন ডলারের মতো।

ক্রস জানে, এই উত্তরাধিকার তার জীবনের অবশ্যই আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ধীরে ধীরে সে যতই ধনী ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবে, সাথে সাথে সে ততই হবে বিপজ্জনক। ডন ক্লেরিকুজিও ও তার পরিবারের সাথে ক্রসের সম্পর্কও কেবল প্রতিনিধিত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, বাড়বে দূরত্ব।

ক্রসের এখন প্রথম কাজ কুওগের সাথে যোগাযোগ করা। সেখানে তাকে আলোচনা করতে হবে জর্জিও’র সাথে। জর্জিও তাকে দেবে কিছু নির্দেশনা।

জর্জিও’র সাথে দেখা হলো ক্রসের। জর্জিও তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল একমাত্র পিপি ছাড়া গ্রোনিভেল্টের  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ক্লেরিকুজিও পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত হতে পারবে না। ডেন্টিও নয়। কারণ ডেন্টি তার নির্ধারিত মিশন কমপ্লিট করার জন্য বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু জর্জিও’র তো অতিরিক্ত কোনো কাজ নেই। সে-ও যে গ্রোনিভেল্টের  শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছে না তা পরিষ্কার জানিয়ে দিল ক্রসকে। আসলে এর কারণ হলো– ক্রস যে হোটেলের অর্ধেক মালিকানা হাতিয়ে নিচ্ছে তা সে জানায়নি।

এদিকে ক্রস তার বোন ক্লডিয়ার কাছ থেকে একটি ম্যাসেজ পেল। এর প্রতিউত্তরে ক্রস যখন যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল, তখন ক্লডিয়া আর কোনো সাড়া দেয়নি। আরেকটি ম্যাসেজ পেল সে আর্নেস্ট ভেইলের কাছ থেকে। ভেইলকে ক্রস খুব পছন্দ করে, কিন্তু ভেইলও কেন যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দেখাল।

গ্রোনিভেল্টের  সারা জীবনের বন্ধু ছিল পিপি। ক্রসের বাবা পিপি। পিপির কাছ থেকেও ক্রস পেল একটি ম্যাসেজ। সে ম্যাসেজেটি ছিল– ক্রস তার ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে কেমন উপদেশ আশা করছে। আর, তাছাড়া ক্রসের নতুন স্ট্যাটাস কিংবা সম্পদ সম্পর্কে তার বাবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

ক্রস তার বাবার ম্যাসেজে আরো জানতে পারল– ডন ক্লোরিকুজিওর সাথে কাজ করতে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ক্লেরিকুজিও চান পশ্চিমে তার প্রতিনিধি ব্ৰগলিওন হবে তার নিজস্ব লব্ধ অধিকারে ক্ষমতাবান ও সম্পদশালী।

এসব নিয়ে ডন খুব পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আশা করেন। ক্রসেরও এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রস অবশ্য আশা করছে যে, তার বাবা তাকে যথাসাধ্য সমর্থন ও সহযোগিতা যুগিয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডনের তিন পুত্রকে নিয়ে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি এবং ডনের অপর নাতি ডেন্টি। এদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, এটাই এখন ক্রসের চিন্তার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডনের স্ব-নির্মিত পারিবারিক চ্যাপেলে যেদিন ক্রস ও ডেন্টির ব্যাপটাইজ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হচ্ছিল, সেদিন থেকেই তারা পরস্পরের শত্রু- এমন একটি জোক এখনও ডন পরিবারে চালু আছে।

সেই ডেন্টি বর্তমানে ভেগাসে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভেগাসে সে বিগ টিম নামে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে চাকরি করবে। বিষয়টি ক্রসের জন্য বিরক্তির কারণ, কেননা ডেন্টি বিগ টিমের জন্য আগ্রহী নয়– ব্যাপারটি ভালোভাবেই জানে ক্রস। কিন্তু বেচারা ডেন্টি! তার করার কিছুই নেই। ডন নিজেই ডেন্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এই ক্ষেত্রটিতে। এ বিষয়ে ক্রসের চিন্তা এখন একটাই— কিভাবে ডেন্টি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরিটি করবে।

আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান ঘিরে যে সমাগম, তা এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড়। গ্রোনিভেল্টের  মতো একজন জিনিয়াসকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছেন অনেক লোক!

গ্রোনিভেল্টের  মৃতদেহ সটান শুইয়ে রাখা হয়েছে তারই অর্থে নির্মিত প্রটেস্ট্যান্ট চার্চে। এই চার্চটিতে তিনি পুরোহিত নিয়োগ করেছিলেন ইউরোপ থেকে আর এর নির্মাণশৈলী ছিল খোদ আমেরিকার নিজস্ব শিল্প থেকে নেয়া। ভেগাসের এই চার্চের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো চার্চটির বাইরে পার্কিংয়ের জন্য বিশাল লন। তাছাড়া এখানে ইউরোপীয়দের চেয়ে ন্যাটিভ আমেরিকান বোধকেই প্রাধান্য দেয়া হয় এ বিষয়টিও বিখ্যাত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।

চার্চের গায়ক দলের কণ্ঠে সুরের মূর্ঘনায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। ঈশ্বরের স্তুতি সঙ্গীতে যেন পবিত্রতার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল। গায়ক দল গ্রোনিভেল্টের  স্বর্গ যাত্রার জন্য প্রার্থনা করছিল– সুরে সুরে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ উজাড় করে।

অদূরে শোকাহত শত শত গ্রাজুয়েট ছাত্র সমবেত হয় চার্চে। এসব ছাত্রের জন্য গ্রোনিভেল্ট প্রচুর অর্থ সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের এই দাতার মৃত্যুতে অনেকেই ভেঙে পড়ে কান্নায়। কেউ কেউ হোটেলের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ব্যাকুল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। মধ্যবয়সি কিছু মহিলা গ্রোনিভেল্টের  চিরবিদায়ে নীরব অশ্রুপাত করে যাচ্ছিল। এই মহিলাদের অনেকে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগের কর্মী, অনেকে আবার ক্যাথলিক অনুসারী। গ্রোনিভেল্ট সকল ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতা করেছিলেন, উপাসনালয় নির্মাণে দিয়েছিলেন অর্থ।

নাভাদা রাজ্যের গভর্নর ওয়াল্টার ওয়াভেনও গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হলেন। তিনি এলেন মেয়র প্রদত্ত এসকর্টে। আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  শবযাত্রার জন্য ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি দেখে ওয়াভেন তার দেহরক্ষী গুটিয়ে নিলেন। সিমেট্রি বা কবরস্থানের উদ্দেশ্যে শবযাত্রার দীর্ঘ লাইনে তিনিও শামিল হলেন। গ্রোনিভেল্টের  মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি এগিয়ে চলল সিমেট্রির উদ্দেশ্যে। পলকে তিনি ছেড়ে যাচ্ছিলেন তার তৈরি পৃথিবী–এ যাত্রাই তার শেষ যাত্রা।

সে রাতে ভেগাসের শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের অন্তরে অন্তস্তল থেকে জানাল শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসা প্রকাশের অভিনব উন্মত্ততা রেকর্ড সৃষ্টি করল, যা কেবল বর্ষবরণ নিউ ইয়ার ইউ এ-ই হয়ে থাকে। গ্রোনিভেল্টের  কফিন যখন কবরে রাখা হলো তখন অনেকে তাদের অর্থও শ্রদ্ধার সাথে রাখল কফিনের ওপর। তারপর ঢেকে দেয়া হলো মাটি দিয়ে গ্রোনিভেল্টকে।

দিনের সমাপ্তি ঘটল, আরো ক্রস ডি লিনা তার নতুন জীবন শুরু করার জন্য শুরু করল প্রস্তুতি। সেই রাতে, ম্যালিবু কলোনিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তার বিচ হাউসে ছিল একাকী। মনে হাজারো প্রশ্নের দোলা– কি করবে সে, কি করার আছে তার?

সম্মুখ সমুদ্র থেকে হিমেল হাওয়া প্রবেশ করছিল সামনের খোলা দরজা দিয়ে। কোচে বসা অ্যাথেনা সাগরের শীতল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল– কেঁপে উঠছিল একই সাথে তার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে কষ্টে।

শিশুকাল থেকেই অ্যাথেনা স্বপ্ন দেখত বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হবার এবং তা সে খুব অল্প সময়েই অর্জন করতে সমর্থ হয় যার ফল আজকের বিশ্ব কাঁপানো অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। অ্যাথেনা নিজের কথা ভেবে অবাক হয়।

অবাক হয় সে একজন পরিপূর্ণ নারী হিসেবে নিজকে ফুটিয়ে তুলতে কত কি-ই না তাকে করতে হয়েছে। একজন মুভিস্টারের ক্যারিশমা হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশেষ করে কোনো নায়কের সাথে বিশেষ এডাল্ট দৃশ্যে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নায়িকাকে অবশ্যই পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে– শারীরিক ও মানসিকভাবেও থাকতে হবে তাদের সৌন্দর্যের সব কলা। তাদের কখনোই থাকবে না বিছানা-সঙ্গী হওয়ার ইতিহাস। মুখে কখনো থাকবে না কোনো দাগ; কুৎসিত চেহারা তো কাম্য নয়ই, তাছাড়া চেহারার ত্বকে থাকবে না কোনো ভাজ। তারা কখনোই মৈথুনে অভ্যস্ত হবে না কিংবা হতে পারবে না ভালোবাসার ভিখেরী। অত্যন্ত কঠিন জীবন পার করতে হবে তাদের শুধুমাত্র বিখ্যাত হওয়ার জন্যই।

অ্যাথেনা জন্মেছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান দুটি মানুষের ঘরে। সেখানে সবকিছুই ছিল তার জন্য স্বাভাবিক। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল– তার আছে অত্যন্ত ভালো মনের একজন বাবা ও মা যারা তার জন্য উপহারস্বরূপ। পূজনীয়। অ্যাথেনা তার বাবা-মার কথা ভেবে গভীর শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে ফেলল। তার মনে একের পর এক স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল সিনেমার পর্দার মতো– বাবা-মা অ্যাথেনার শারীরিক-মানসিক সৌন্দর্য এবং শিক্ষিত করে তুলতে সাধ্যের সবটুকু করেছেন। বাবা ছিলেন তার ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষক। মা শেখাতেন সাহিত্য এবং কলা। অ্যাথেনা তার শিশুকাল হাতড়ে মনে করতে পারে না যে সে ক্ষণিক সময়ের জন্যও তার বাবা-মার কাছে অসুখী ছিল, এমনকি সে তার কিশোর উত্তীর্ণ সতের বছর পর্যন্তও নয়।

এরপর আকস্মিক বজ স্কানেটের প্রেমে পড়ল অ্যাথেনা। তার চেয়ে মাত্র চার বছরের বড় স্কানেট। আঞ্চলিক ফুটবলের তারকা খেলোয়াড় সে।

হাস্টনের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি তাদের। অ্যাথেনা যেমন রূপসী তেমনি অপরদিকে স্কানেট সুন্দর ও যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। সেই সাথে সদা উচ্ছল ও মজার মানুষ সে। স্কানেট ও অ্যাথেনা যখন পরস্পর মুখোমুখি হতো, মনে হতো, যেন উভয় উভয়কে ম্যাগনেটের মতো আকর্ষণ করছে। উভয়ের নার্ভগুলো উত্তেজিত হতো উচ্চমাত্রার ভোল্টেজে-মিশে যেত একে-অপরের মাঝে, হারিয়ে যেত শিহরণে শিহরণে, সুখের অমিয় ধারার মাঝে। এভাবেই খুঁজে পেয়েছিল তারা একে-অপরকে। এই স্বর্গীয় সুখের ধারায় চিরকাল অবগাহন করতে অবশেষে তারা বিয়ে করল।

বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই অ্যাথেনা গর্ভবতী হলো। কিন্তু তারপরও তার শারীরিক সৌষ্ঠব বজায় ছিল। তবে কিছুটা যে পরিবর্তন হয়নি তা নয়– শরীরের ওজন একটু বেড়েছিল বৈকি। এতে তার খুব একটা সমস্যা হয়নি, কখনো অসুস্থ বোধও হয়নি তার সন্তান লাভের বিষয়টি বরং সে ইনজয়ই করেছে। কলেজেও গিয়েছে নিয়মমাফিক, ড্রামার ক্লাস করেছে– গলফ ও টেনিস খেলেছে নিয়মিত।

টেনিসে বরাবরই ছিল বজ অ্যাথেনার চেয়ে ভালো। তবে গলফে খুব সহজেই অ্যাথেনা হারিয়ে দিত বজ স্কানেটকে।

বজ তার বাবার ব্যাংকে কাজ করত। আর এদিকে তাদের ঘরে এলো একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হলো ব্যাথেনি। ব্যাথেনির জন্মের পরও অ্যাথেনা স্কুল যাওয়া অব্যাহত রেখেছিল। এ অবস্থায় নবজাতকের পরিচর্যার জন্য বিত্তশালী স্কানেট নিযুক্ত করল একজন ধাত্রী ও একজন মেইড সার্ভেন্ট।

বিবাহোত্তর অ্যাথেনা যেন জ্ঞান আহরণে আরো বেশি মরিয়া হয়ে উঠল। অধ্যয়ন করত যেন ক্ষুধার্তের মতে, বিশেষ করে খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ছিল তার দারুণ অনুরাগ। তারকাখচিত খেলোয়াড় পিরানডেলোর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হতে, উইলিয়ামসের জন্য অ্যাথেনা ছিল রীতিমতো পাগল।

অ্যাথেনা ক্রমেই পরিপক্ব হয়ে উঠছিল। তার বুদ্ধিমত্তা, তার সৌন্দর্যকে একই ফ্রেমে বেঁধেছিল, যা তাকে করেছিল আরো মহৎ। অ্যাথেনার এই বুদ্ধিমত্তার কাছে কখনো কখনো তার সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে যেত।

অবশ্য অনেকেই যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকেই অ্যাথেনার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে একদণ্ড কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে থাকত। ভালোবাসত তাকে। প্রেম নিবেদনও করেছে অনেকে। বিষয়টি অ্যাথেনার কাছে বিস্ময়ের ছিল না কিছু।

অ্যাথেনার মতো এমন বুদ্ধিমতী, শিক্ষিত, রুচিশীল এবং সর্বোপরি সুন্দরী একজন স্ত্রীর কারণে স্কানেট তার বন্ধুমহলে ছিল ঈর্ষার পাত্র। অ্যাথেনাও নিজের নিপুণতায় ছিল গর্বিত। পরবর্তী প্রায় বছর খানেক সে দেখেছে তার এই নিপুণতা অনেক মানুষের উত্তেজনার কারণ হয়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিকরাও।

বজ প্রায়ই জোক করে বলত, কি আর করা! অ্যাথেনার হাজারো গুণগ্রাহীর জন্য এখন আমাকে পথে পথেই কাটাতে হবে প্রতিটি রাত। বজ স্কানেটও যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সে জানত তার এই গুণবতী স্ত্রী জীবনের একটা বড় কিছু প্রাপ্তির দিকে ছুটছে। সে জানত অ্যাথেনা একজন অতিনারী এবং বজের এই বোধ থেকেই সে স্বয়ং বুঝতে পারত তার স্ত্রীকে আজীবন ধরে রাখা কঠিন হবে। স্কানেট অনুভব করত অ্যাথেনাকে নিয়ে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নও হয়তো একসময় ধূলিসাৎ হবে। তার এই কৌতূহলকে প্রমাণ করার জন্য কোনো বিশেষ যুদ্ধের দরকার নেই। অন্তত স্কানেটের নিজের তরফ থেকে কোনো ক্রটি নেই বলে সে নিশ্চিন্ত। তারপরও অ্যাথেনাকে নিয়ে তার সন্দেহ। তবে মাঝে মাঝে অ্যাথেনার চেয়ে নিজেকে বেশ দুর্বল ভাবত বজ। নিজের মাঝে উঁকি দিয়ে সে খুঁজত— এমন কি আছে তার মাঝে? কিছুই পেত না, কেবল উচ্ছলতা ও তার শারীরিক ফিটনেস ছাড়া। বিশেষ কোনো মেধাও সে খুঁজে পেত না তার নিজের মাঝে। আর স্কানেট তার ভবিষ্যতে ব্যাপক প্রাচুর্য কিংবা প্রাপ্তির প্রতিও খুব একটা আগ্রহী ছিল না।

ধীরে ধীরে স্কানেটের মনে অ্যাথেনার বিরুদ্ধে হিংসার জন্ম নিতে শুরু করল। অ্যাথেনার জনপ্রিয়তা, বিশ্বে তার যে একটা নিশ্চিত অবস্থান হতে যাচ্ছে। এসব নিয়ে তার মনে তোলপাড় শুরু হলো।

স্কানেট তার অনিশ্চিত ভাগ্যের সাক্ষাৎ লাভে এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। শুরু হলো তার অতিরিক্ত মাত্রায় মদপান। কলিগদের স্ত্রীদের সাথে শুরু হলো তার মেলামেশা। এই ফাঁকে বাবার ব্যাংকে তার কাজে অবহেলায় হিসাব নিকাশে দেখা গেল গরমিল। নিজেকে সে বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যা দিয়ে। গর্ববোধ করত। যেমন কোনো মানুষ কোনো কিছুতে দক্ষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে করে থাকে। আর এসবের পাশাপাশি স্ত্রী অ্যাথেনার বিরুদ্ধেও স্কানেটের বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করল।

শরীরের প্রতি তুমুল অনিয়ম সত্ত্বেও স্কানেটের স্বাস্থ্যহানী ঘটেনি বিন্দুমাত্র। তার শরীর ছিল এক্সট্রা অর্ডিনারি।

স্কানেট আকস্মিক নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠল– দুর্বার নিয়মিত শরীর চর্চা। মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিল। মেতে উঠল সে সরাসরি রিংয়ে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে আঘাত করতে–ধূর্ততার সাথে শিখল বক্সিং-এর ষোল কলা। নিজেকে কষ্ট দিতে ক্রমেই আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। শিকারের প্রতি বাড়ল তার আগ্রহ হত্যার খেলায় মেতে উঠল স্কানেট।

এক পর্যায়ে অ্যাথেনাকে শায়েস্তা করতে ব্যাকুল হয়ে উঠল। অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করল স্কানেট। মাথায় এলে তাদের আরো সন্তান জন্ম দিতে হবে। পাঁচ-ছটি সন্তান তাদের ঘরে এলেই হয়তো তারা আবার আগের মতো কাছাকাছি আসতে পারবে। আর অ্যাথেনার ঊর্ধ্বগামী উচ্চাকাঙ্ক্ষারও পতন ঘটবে, ফিরে আসবে বজ স্কানেটের বুকে। কিন্তু স্কানেটের এই দূরভিসন্ধি বুঝতে পেরে অ্যাথেনা তার সন্তান বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিল। সে বলল, তুমি যদি আরো সন্তান চাও তবে অন্য কোনো নারীর কাছে যেতে পারো। তুমি ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছ স্কানেট …

অ্যাথেনার এটাই ছিল স্কানেটের প্রতি বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করার প্রথম ঘটনা। স্কানেট এতে মোটেও বিস্মিত হয়নি যে, অ্যাথেনা স্কানেটের অনাস্থার বিষয়টি জেনে গেছে। অবশ্য স্কানেট এটা লুকানোরও চেষ্টা করেনি। আসলে সে চালাকিই করেছিল। এতে স্কানেট তার স্ত্রীকে নিজের পথে চালিত করতে পারত।

অ্যাথেনার কাছে বজ ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছিল। বজকে বোঝা তার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছিল। কিন্তু অ্যাথেনার বয়স ছিল এতই কম যে বজের প্রতি তার প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেয়ার মতো বুদ্ধি বা চিন্তা তার আর করা হলো না। এমন কলহ তাদের জীবনে নেমে এলো, যখন অ্যাথেনার বয়স মাত্র কুড়ি। তখন কেবল তার চরিত্রের গঠন পর্ব শুরু হয়েছে।

বজ শুরু করল নতুন খেল। সে এমন কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটাল, যা সত্যিকার অর্থেই নারীরা ঘৃণা করে থাকে। স্কানেট নিজেকে অ্যাথেনার কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করল, যেন সে একেবারেই বিচার-বুদ্ধিই পড়েছিল।

বজ স্কানেট নিয়মিত তাদের কাপড়-চোপড়গুলো ড্রাই ক্লিনিংয়ের জন্য নিয়ে যেতে শুরু করল। নিজের কাজ শেষে পরিবারের আনুষঙ্গিক কাজে অ্যাথেনাকে সহযোগিতা করতে লাগল। অ্যাথেনা অভিনয় করে যেতে লাগল। অ্যাথেনার উদ্দেশ্যে বলত, হানি, আমার চেয়ে তোমার সময়ের মূল্য অনেক বেশি। তোমাকে তোমার ডিগ্রির পাশাপাশি মিউজিক ও ড্রামার ক্লাসও চালিয়ে যেতে হচ্ছে …

স্কানেটের এমন উক্তিতে অ্যাথেনার কোনো ভাবান্তর হতো না। এর কারণ বজ স্কানেটের কণ্ঠে থাকত না কোনো প্রাণ। তার সবকথাই অ্যাথেনার কাছে। মেকি মনে হতো।

একদিন অ্যাথেনা যখন গোসল করছিল বজ বগলদাবা করে তার কাপড় নিয়ে হাজির হলো সেখানে। চোখে পড়ল অ্যাথেনার নগ্ন সৌন্দর্য। সোনালি চুল, নিখুঁত ফরসা ত্বক, সুডৌল স্তন আরো সুগঠিত পশ্চাৎদেশ। অ্যাথেনার সারা সৌন্দর্য ঢেকে রয়েছে ফিনফিনে ফেনিল সাবানে। কয়েক পলক তাকিয়ে ছিল বজ অ্যাথেনার সৌন্দর্যের দিকে। তারপর স্বাভাবিক হলো সে। সূক্ষ্ম কণ্ঠে বলে উঠল, তোমার এই ড্রেসগুলো যদি তোমার মতোই বাথটাবে ভিজিয়ে দেই কেমন হয় বলে তো! কিন্তু, বজ তা করল না। অ্যাথেনার কাপড়গুলো ঝুলিয়ে দিল ক্লোসেটে। বাথটাব থেকে তাকে উঠে আসতে সাহায্য করল। গোলাপি টাওয়েল জড়িয়ে দিল নগ্ন শরীরে। তারপর ভালোবাসার আস্বাদ গ্রহণ করল সে অ্যাথেনার কাছ থেকে। কয়েক সপ্তাহ পর এমনই এক ঘটনার পুনরাবৃদ্ধি হলো। কিন্তু এবার বজ অ্যাথেনার কাপড়গুলো আর ক্লোসেটে ঝুলাল না বাথটাবের পানিতেই ভিজিয়ে দিল। হতভম্ব হলো অ্যাথেনা। কাপড় আর শরীরে মতো ভিজে গেল তার চোখও।

বজ আর অ্যাথেনার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলতে লাগল এভাবেই। এক রাতে বজ আকস্মিক ডিনার সেটের সমস্ত বাসন-কোসন ভেঙে ফেলতে উদ্যত হলো— কিন্তু শেষ অবধি তা সে করেনি। সপ্তাহ খানেক পর সে কিচেনের সব জিনিসপত্র আছড়ে ভেঙে ফেলতে লাগল। অবশ্যই এমন ঘটনা ঘটাবার কিছুক্ষণ পরই বজ অনুশোচনায় ভুগত এবং অবশেষে অ্যাথেনার কাছে ক্ষমা চাইত। সর্বদাই এমন ঘটনার পর ভালোবাসার চেষ্টা করত বজ। কিন্তু অ্যাথেনার কাছ থেকে সাড়া পেত না– এড়িয়ে চলতে লাগল অ্যাথেনা। পৃথক কক্ষে ঘুমাতে শুরু করল।

এর রাতের ঘটনা– ডিনারের সময় বজ তার হত মুষ্টিবদ্ধ করে অ্যাথেনার মুখের কাছাকাছি নিয়ে বলল, তোমার মুখটি হবে পারফেক্ট। যদি আমি ঘুষি মেরে তোমার নাকটি ভেঙে দিই, তবে সেটি হবে নতুন চরিত্রের সৃষ্টি দেখতে হবে অনেকটা মারলন ব্র্যান্ডের মতো।

বজের এমন উক্তির পর অ্যাথেনা তাৎক্ষণিক ছুটে গেল কিচেনে– পেছনে পেছনে ছুটল বজও। অ্যাথেনা ভীষণ ভয় পেয়েছিল। পেছনে বজকে দেখে একটি ছুরি তুলে ধরল বজের দিকে। বজ অ্যাথেনার এমন আচরণে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। বলল, পৃথিবীতে এটা হচ্ছে এমন একটা কর্ম যা তোমার দ্বারা হবে না কখনো। সত্যিই অ্যাথেনা তা পারবে না কখনো। বজ খুব সহজভাবে অ্যাথেনার হাত থেকে ছুরিটি সরিয়ে নিয়ে বলল, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি, কিন্তু তুমি করলে ভুল– আসলে তোমার সেনস অব হিউমার বলতে নেই।

এভাবে অ্যাথেনা দিন দিন বজের বিকৃত আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল। তখন তার বয়স মাত্র কুড়ি। ইচ্ছে করলে অ্যাথেনা তার বাবা-মার সাহায্য কামনা করতে পারত। কিন্তু তা সে করল না। এমনকি সে তার বন্ধুদের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা করেনি কখনো। তার চেয়ে বরং সে নিজেই এর যথাযথ সমাধান বের করতে চিন্তায় ডুবে গেল– অবশ্য নিজের বুদ্ধিমত্তার ওপর অ্যাথেনার ছিল চরম আস্থা। তারপর অ্যাথেনা কখনোই তার কলেজের পাট শেষ করতে পারবে না। ক্রমেই পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

অ্যাথেনা বুঝতে পেরেছিল, তার কলেজ কর্তৃপক্ষও তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তাই সে মনে মনে বজের প্রতি ব্যাপক ছাড় দেয়ার কথা ভাবল। বজকে সত্যিকার ভালোবাসতে পুনরায় পুরনো বজকে ফিরে পেতে অ্যাথেনা চেষ্টা করতে লাগল। প্রথমে সে তৈরি করার চেষ্টা করল নিজেকে। কিন্তু পারল না। বজের প্রতি অ্যাথেনার বিরূপ ভাব এমনই প্রকট রূপ নিয়েছিল যে, সে তার মুখোমুখি দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বজ তাকে স্পর্শ করবে এমন কথা চিন্তাও করতে পারল না। অ্যাথেনার মধ্যে অতি সন্তর্পণে যে ঘৃণার বীজ ধীরে ধীরে রোপিত হচ্ছিল, এতদিন পর তা সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো। উপলব্ধি করল ভালোবাসা পেতে সে আর কখনো কাউকে প্রমাণ প্রয়োগে বিশ্বাস জন্মাতে পারবে না।

তার চেয়ে বরং বজের সংসার থেকে সরে এলে কেমন হয়– অ্যাথেনা ভাবল। চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত যদি অ্যাথেনা নিতে চায় তবে বজ কি এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে? হয়তোবা। একমাত্র কন্যা সন্তান ব্যাথেনিকে নিয়েই সমস্যায় পড়বে অ্যাথেনা। এত সহজে ব্যাথেনিকে ছেড়ে দেবে না বজ। একের পর এক সমস্যার চিন্তা মাথায় এসে জড়ো হতে লাগল। অ্যাথেনা বিভ্রান্ত হতে থাকল।

বজ প্রায়ই তাদের এক বছরের সন্তানকে নিয়ে ভয়াবহ খেলায় মেয়ে উঠত। ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে আবার তাকে শূন্য থেকে লুফে নিত। মাঝে মাঝে অ্যাথেনাকে দেখিয়ে এমন ভাব করত যেন ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে তাকে আর ধরবে না। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যাথেনিকে লুফে নিত। এভাবেই একদিন শূন্যে ব্যাথেনি ছুঁড়ে বজ আর ধরতে পারল না। শিশুটি পড়ে গেল মেঝেতে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ছুটে এলো অ্যাথেনা, মেঝে থেকে বুকে তুলে নিল শিশুটিকে। বিভিন্নভাবে পরখ করে দেখল সে। কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো মা অ্যাথেনা। তবে মেয়ের শয্যাপাশে ঠাই জেগে কাটিয়ে দিল সারাটি রাত— তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। ব্যাথেনি সুস্থ ছিল, নিশ্চিন্ত হলো অ্যাথেনা। তবে মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছিল তাদের শিশু কন্যাটি। একটু ফুলেও উঠেছিল। কন্যার এ অবস্থা দেখে মারাত্মক বিপর্যস্ত হলো বজ। অনুশোচনার কেঁদেই ফেলেছিল। অ্যাথেনার কাছে অশ্রুসজল নয়নে চেয়েছিল ক্ষমা এই প্রতিশ্রুতিতে যে, সে আর কখনো এমন ভয়াবহ কাণ্ড করবে না। অ্যাথেনাকেও আর কষ্ট দেবে না। কিন্তু অ্যাথেনা আর বজের কথায় কর্ণপাত করল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ভাবল।

পরের দিন অ্যাথেনা তার ব্যাংকের সমস্ত হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করল, অর্থাৎ ব্যাংক থেকে তার টাকা-পয়সা তুলে নিল। তারপর চিন্তা করল সে এমন এক অজ্ঞাত স্থানে চলে যাবে যেখানে কোনোমতেই পিছু নিতে পারবে না বজ। ঠিকানার বিন্দুবিসর্গও রেখে যাবে না অ্যাথেনা বজের জন্য। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অ্যাথেনা আর দেরি করেনি।

দুদিন পর বজ যখন তার কাজ শেষে ফিরে এলো তখন স্ত্রী অ্যাথেনা বা কন্যা ব্যাথেনি কাউকেই পেল না বজ।

দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর অ্যাথেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে আত্মপ্রকাশ করল। ব্যাথেনি ছিল না সঙ্গে।

অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন শুরু করল তার কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের জন্য সংগ্রাম। খুব সহজেই একটি মধ্যমানের এজেন্টও পেয়ে গেল অ্যাথেনা এবং প্রাথমিক অবস্থায় ছোটখাটো থিয়েটার গ্রুপগুলোতে কাজ শুরু করল। মার্ক ট্যাপার ফোরামে একটি নাটকে অভিনয়ের সুবাদে অ্যাথেনা একটি ছোট ব্যানারের মুভিতে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেল।

ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটতে লাগল যে অ্যাথেনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই ছোট চরিত্রের পর সুযোগ এলো একটি এ গ্রেড ছবির সহযোগী চরিত্রে অভিনয়ের। এ ছবিতেও অ্যাথেনা জনপ্রিয় হলো। আর পরবর্তী ছবিতে নায়িকা চরিত্রে প্রশংসিত হবার পর থেকেই একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে থাকল। সেই সাথে বজ স্কানেটও তার জীবনে ধীরে ধীরে পুনরায় প্রবেশ করতে লাগল।

বজ চলচ্চিত্র একাডেমিতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটাল। এতে অবশ্য অ্যাথেনা খুব একটা বিস্মিত হয়নি। তবে সেদিনকার সেই অ্যাসিড বলে রুপালি রঙ ছুঁড়ে মারার বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে শুধুমাত্র জোক বা কৌতুক বলে মনে হলেও অ্যাথেনা সন্দিহান। বজকে অ্যাথেনার চেয়ে বেশি আর কে চেনে। সে জানে, এবারের বোতলে পানি থাকলেও পরবর্তী কোনো দিন বজের হাতে থাকবে সত্যিকারের অ্যাসিডপূর্ণ বোতল।

স্টুডিওতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্লডিয়া ডি লিনার উদ্দেশ্যে বলল মলি ফ্লান্ডারস।

সকালের আলোপচারিতা শুরু হয়েছিল স্টুডিওকে ঘিরেই। মলি ফ্লাডারসের কণ্ঠে ঝরে পড়ল এক অনিশ্চয়তার সুর অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এর কারণ সেই একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার দিন অ্যাথেনাকে লক্ষ্য করে কথিত অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনাটি। অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছে, অ্যাথেনা হয়তো তার ছবির কাজে আর ফিরে যেতে পারবে না। অথচ বানজ হোমাকে স্টুডিওতে চায়। তারা চায় তুমি যেন অ্যাথেনার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করো।

ক্লডিয়া আর্নেস্ট ভেইলকে সাথে করে প্রতিউত্তরে বলল, যত শিগগির সম্ভব এখানকার কাজ শেষ করার জন্য আমি তাকে বলব। তবে আমার মনে হয় সে ঘাবড়ে যায়নি।

মলি ফ্লান্ডার একজন বিনোদন বিষয়ক আইনজীবী এবং শহরের অনেকেই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। চলচ্চিত্র জগতের আইনজীবী হিসেবে তার নামডাক রয়েছে বেশ। আদালত কক্ষে মোকদ্দমার লড়াই মলি বেশ উপভোগ করে। অধিকাংশ মোকদ্দমায় তার জয়লাভের সুখ্যাতি রয়েছে। তার এই যশের কারণ মলি নিজেও একজন অভিনেত্রী ছিলেন এবং চলচ্চিত্র জগতের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল, যা তার আইন প্রয়োগে সহায়ক।

এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে মলি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক দফতরের প্রধান অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সময় সে খুনের মামলার প্রায় কুড়িজন আসামিকে গ্যাস চেম্বারে প্রেরণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এ ধরনের মামলায় সত্যিকারের খুনির বিরুদ্ধেও এমন শাস্তি প্রদানে তার স্নায়ু কেঁপে উঠেছিল। সে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে অবশেষে এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশকেই অধিকতর পছন্দের মনে করল। মলি প্রায়ই বলে থাকে এক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতার বালাই নেই এবং এখানকার অপরাধীরা বেশ রসিক ও বুদ্ধিমান।

এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার ছাড়াও মলি এখন পরিচালক, কলাকৌশলী, চিত্রনাট্য লেখক সরবরাহ করে থাকে। আজকের এই সকালেও সে এমনসব কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তবে চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে প্রিয় ক্লায়েন্ট ক্লডিয়া ডি লিনাকে সশরীরের তার অফিসে উপস্থিত হতে দেখে আনন্দিত হলো মলি ফ্লান্ডারস। ক্লডিয়ার সাথে সে ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়েছ, সে বর্তমানে ক্লডিয়ার চিত্রনাট্য রচনার পার্টনার, একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট ভেইল।

ক্লডিয়া ডি লিনা ফ্ল্যাভারের শুধু প্রিয় ক্লায়েন্টই নয়, অনেক পুরনো একজন বন্ধুও। তাদের মধ্যে রয়েছে বেশ আন্তরিকতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। তাই ক্লডিয়া ভেইলের বিষয়টি মলি ফ্লাভারসকে দেখতে অনুরোধ করায় সে তাৎক্ষণিক তাতে সম্মতি প্রকাশ করল।

তবে ভেইলের যে সমস্যা তা শুনে মলি নিরাশ হলো। ভেইলের এ সমস্যার সমাধান তার দ্বারা সম্ভব নয় বলে আক্ষেপ করল মলি। তবে আর্নেস্টকে তার খুব একটা পছন্দ হলো না। একজন পুরুষ হিসেবে তার প্রতি কোনো আকর্ষণবোধও করল না সে।

আর্নেস্টের মামলাটি ছিল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত। মলির কাছে দেয়া সমস্ত কাগজপত্র ঘেঁটে আর্নেস্টকে দুঃসংবাদ ছাড়া কিছুই দিতে পারল না আইনজীবী মলি ফ্লান্ডারস।

সে আর্নেস্টের উদ্দেশে বলল, আমি তোমার কন্ট্রাক্ট ও বৈধতার সব কাগজপত্র ঘেঁটে দেখলাম। সেখানে লডস্টোন স্টুডিওর বিরুদ্ধে নালিশ করার জন্য কোনো পয়েন্ট পাওয়া গেল না। তবে একটি উপায়ে তুমি তোমার অধিকার ফিরে পেতে পারো। এর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কপিরাইটটি তোমাকে বের করতে হবে। সময়টি পরবর্তী পাঁচ বছর পরের হলে ভালো হয়।

এক দশক আগেও আর্নেস্ট ভেইল ছিল আমেরিকার একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। সমালোচিতও হয়েছিল সে। ব্যাপক পঠিত হয়েছিল তার লেখা। একটি নোভেলের চরিত্র নিয়েই পরে সমস্যা বাধে। লডস্টোন বইটির স্বত্ব কিনে নেয় এবং এর ওপর একটি ছবিও নির্মিত হয়। ছবিটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে। পরপর দুটি ধারাবাহিক নির্মিত হয়, ব্যবসায় লাভ হয় ব্যাপক। পরবর্তীতে আরো চারটি সিকুয়েলের ছবি বোর্ডে আগমন ঝুলিয়ে রাখা হয়।

দুর্ভাগ্যক্রমে ভেইল তার সব উপন্যাসের স্বত্ব প্রথম দফাতেই দিয়ে দিয়েছিল স্টুডিওর কাছে। কিন্তু সে চুক্তির পর চলচ্চিত্র থেকে একটি কণাও এ পর্যন্ত পায়নি সে।

আর্নেস্ট ভেইল সর্বদা একজন কদাকার মানুষ। সবসময়ই তার চেহারায় ফুটে থাকে এক তিক্ততার অভিব্যক্তি। এটি অবশ্য ভিন্ন একটি কারণে ভালো বলতে হবে। সমালোচকদের সাথে খুব একটা মিশতে হয়নি তার। তবে তারা ভেইলের সমালোচনায় অব্যাহতভাবে মুখর। তাদের মন্তব্য পাঠক তার বই পড়ে বেশি দিন মনে রাখবে না। ভেইলের মেধা সত্ত্বেও তার জীবন একটু ছন্নছাড়া। বিগত বিশ বছরের মধ্যে দাম্পত্য জীবন হয়েছে বিচ্ছেদের তার তিন সন্তানও চলে গেছে স্ত্রীর সাথে।

আর্নেস্ট ভেইলের একটি বই চলচ্চিত্রে বেশ সফলতা পায়। সেটি থেকেই ভেইলের কেবল এক দফা প্রাপ্তি আসে। অপরদিকে স্টুডিও ভেইলের ছবি করে বছরের পর বছর কামিয়ে নিচ্ছে দেদারসে বঞ্চিত হচ্ছে কেবল ভেইল।

আমাকে খুলে বলো, ভেইল বলল।

তোমার চুক্তিগুলো বোকা প্রমাণিত হবে–ভিত্তিহীন, মলি বলল। স্টুডিও তোমার লেখাগুলোর স্বত্ত্ব নিয়ে নিয়েছে। সেগুলো তাদের এখন ইচ্ছেমাফিক ব্যবহারের অধিকার আছে। কপিরাইটের আইন অনুযায়ী, তোমার মৃত্যুর পর তোমার সমস্ত কাজের অধিকার পাবে তোমার উত্তরাধিকারী।

এতক্ষণ সময়ে প্রথমবারের মতো হাসল ভেইল। একটি ছোট্ট শব্দ উচ্চারণ করল তারপর মুক্তি।

ক্লডিয়া কৌতূহলী হলো। প্রশ্ন করল, কেমন পরিমাণ অর্থ আমরা দাবি করতে পারি?

অন আ ফেয়ার ডিল, মলি বলল, মোটের ওপর পাঁচ শতাংশ। যেহেতু তারা চুক্তিবহির্ভূত পাঁচটির বেশি ছবি নির্মাণ করেছে এবং এর জন্য তারা বিপদগ্রস্তও নয়। তাছাড়া নিয়মিত বিশ্বব্যাপী সফল ব্যবসা তো তাদের রয়েছেই। আমরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিলিয়নের কথা ওঠাব।

কিছুক্ষণের জন্য মলি ফ্লাডার থামল। কি যেন ভেবে মিষ্টি একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলল, যদি তুমি মৃত হয়ে থাকো, তবে তোমার উত্তরাধিকারী তৈরি করে এর চেয়েও বেশি এনে দিতে পারি হয়তোবা। আমাদের সত্যিকার অর্থেই তাদের মাথায় ধরার মতো বন্দুক আছে।

তাহলে লডস্টোনে তাদের ডাকো। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব। যদি তাতেও তারা সম্মত না হয়, তবে নিজেকে মেরে ফেলা ছাড়া তো আরো উপায় নেই। বলল ভেইল।

প্রতিউত্তরে মলি বলল, তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে না।

তাহলেও আমি এটা করব। ভেইলের সাফ জবাব।

যুক্তির সাথে কথা বলো ভেইল, দৃঢ় প্রত্যয়ী মলির উত্তর, তুমি মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের একজন লোক। অর্থের জন্য এ মৃত্যুর এ বয়স খুব বেশি নয়। ভালোর জন্য, দেশের জন্য, ভালোবাসার জন্য, বয়সে মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো, কিন্তু অর্থের জন্য নয়।

আমাকে অন্তত আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য যোগান দিতে হবে। ভেইল বলল।

মলির উত্তর, তোমার প্রাক্তন স্ত্রী এবং ঈশ্বরের কসম তুমি তো দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছ।

আমি আমার প্রকৃত স্ত্রীর কথা বলছি। আমি আমার সেই স্ত্রীর কথা বলছি যার দুটি বাচ্চা আছে।

মলি এবার বুঝতে পারল আর্নেস্ট ভেইলকে– কেন তাকে হলিউডের সবাই এত অপছন্দ করে। সে বলল, তুমি যা চাও তা স্টুডিও তোমাকে দেবে না। তারা ভালো করেই জানে যে তুমি মোটেও আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নও। শুধুমাত্র একজন লেখকের এই ঘটনা গুরুত্ব পাবে না। হ্যাঁ, তুমি যদি অভিনয় শিল্পী হতে, তবে মানা যেত। একজন এ গ্রেডের পরিচালক হলেও হয়তো হতো, তবে একজন লেখক হিসেবে নয়।

মলি আকস্মিক ক্লডিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, স্যরি ক্লডিয়া, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

ক্লডিয়া বলল, আমি জানি আর জানে আর্নেস্ট। এক টুকরো শূন্য কাগজে মৃত্যুর সংবাদ এই শহরের সবাইকে যদি আতঙ্কিত না করে, তবে তারা। সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে। তাও কি তুমি কিছুই করতে পারবে না মলি?

মলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। লডস্টোনের প্রেসিডেন্ট ববি বানজের বিরুদ্ধে। আঘাত হানার যথেষ্ট ক্ষুদ্র উপকরণ হয়তো তার আছে কিন্তু … আপাতত সে এলি ম্যারিয়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল— এক নতুন মামলা।

পোলো লাউঞ্জে তারপর ভেইল এবং ক্লডিয়া বসল ড্রিংকসের জন্য। ভেইল আচ্ছন্ন ছিল তখনও মলি ফ্লাডারসের দেয়া তথ্যগুলোর মধ্যে। ক্লডিয়ার দিকে উদাসী দৃষ্টি হেনে বলল, মলি একজন বিশাল আকৃতির মানুষ। আরো এমন মানুষের সাথে পরকীয়া বেশ সহজ। ছোটখাটো নারীদের চেয়ে এরা বিছানাতেও চমৎকার যে কোনো ধরনের পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই।

ক্লডিয়া বিস্মিত হলেও, ভেইলের কথায় এমন চুলচেরা বিশ্লেষণের স্বাদ সে আগেই পেয়েছে। ভেইলের এই অতি-মেধাকে ভালোবাসে ক্লডিয়া–এসব  কারণেই তার প্রতি ক্লডিয়ার এত আগ্রহ। এমন জিনিয়াস ক্লডিয়ার জীবনে খুব একটা নেই।

ক্লডিয়া এখনও ভালোবাসে ভেইলের উপন্যাস। সে বলল, তুমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছ, ভেইল।

আমি ঠিক বোঝাতে চাইছি যে, এমন বড়সড় মহিলারা বেশ মিষ্টি স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা তোমাকে ব্রেকফাস্ট বিছানা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এছাড়াও ছোটখাটো অনেক কিছুই তারা করে দেবে দ্বিধাহীন- জাস্ট নারীসুলভ আর কি।

ক্লডিয়া একটু নড়েচড়ে বসল।

ভেইল বলল, বড় মহিলারা ভালো মনেরও হয়ে থাকে। একদিন এমনই একজন আমাকে পার্টি শেষে তার বাসায় নিয়ে গেল। সেই রাতে আমাকে নিয়ে যে সে কি করবে, বুঝতেই পারিনি প্রথমে। পরে দেখলাম এমনভাবে সে তার বেডরুমটি পরখ করছে– মনে পড়ে গেল আমার মায়ের কথা। মা ঠিক সেই মহিলাটির মতোই তার রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াত কিছু একটা খাবার তৈরির জন্য। এরপর তা সবার সামনে পরিবেশন করত। মহিলাটিও ছিল আশ্চর্য রকমের– আমাকে অভিভূত করেছিল। আমরা কিভাবে সে রাতটি সুন্দরভাবে কাটাব ব্যস্ত ছিল এই আয়োজনে।

ক্লডিয়া ও ভেইল তাদের ড্রিংকসে চুমুক দিতে শুরু করল। প্রত্যেক বারের মতো ক্লডিয়া আজও ভেইলের বন্ধুভাবাপন্ন আচরণে মুগ্ধ হলো। সে বলল, আমি ও মলি কিভাবে পরস্পরের বন্ধু হলাম, তুমি কি জানো?

ক্লডিয়া এবার শুরু করল তার কথা, একবার সে এমন এক লোকের পক্ষে কাজ করেছিল যে তার গার্লফ্রেন্ডকে না কি হত্যা করে। আর এই কাজে আদালতে অপরাধীদের পক্ষে মলির প্রয়োজন ছিল কিছু ভালো সংলাপের। উদ্বিগ্ন মলিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম আমি। ঠিক সিনেমার যেমন সংলাপ লেখা হয় আমি সেভাবেই লিখেছিলাম। মলির উপস্থাপনায় লোকটি অনিচ্ছাকৃত হত্যার রায় পেয়ে বেঁচে যায়। তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।

ভেইল বলল, আই হেইট হলিউড।

হলিউডের প্রতি তোমার বিদ্বেষের কারণ লডস্টোন তোমাকে একটা বেকায়দা অবস্থায় ফেলেছে প্রতারণা করেছে, বলল ক্লডিয়া।

ভেইল বলল, না, ঠিক সে কারণেই নয়। দেখো ক্লডিয়া আমি হচ্ছি সেই পুরনো সভ্যতার অনুসারী একজন মানুষ— চীনা সম্রাট কিংবা নেটিভ আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের আমলের মানুষদের প্রতি দরদি একজন, যাদের ওপর উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।

আমি একজন প্রকৃত লেখক, আমি আমার লেখার মধ্য দিয়ে মানুষের মনোস্তত্ত্বে আবেদন করি। আমার এসব লেখা খুব সেকেলে। মুভির জন্য এগুলো ঠিক দাঁড়ায় না। মুভির জন্য আছে ক্যামেরা, আছে দৃশ্যপট সাজানোর সেট, আছে সঙ্গীত– এসব দিয়ে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু একজন লেখক সামান্য কটা শব্দ সাজিয়ে কিভাবে তা সম্ভব করবে? বিশেষ করে যুদ্ধের দৃশ্যে হয়তো নিখুঁত সব দৃশ্যও তৈরি করা সম্ভব মুভির মাধ্যমে। তবে একটি ব্যাপার, মুভি মস্তিষ্ক জয় করলেও হৃদয় জয় করতে পারবে না।

ফাঁক ইউ, আমি লেখক নই। ক্লডিয়ার আক্ষেপ। সে বলল, একজন চিত্রনাট্যকার কখনোই লেখক নয়। তুমি এমন আক্ষেপ দেখাচ্ছ কারণ তোমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় তুমি কখনোই এর পক্ষে বলতে পারবে না।

ভেইল ক্লডিয়ার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, আমি তোমাকে ঠিক নিচে নামিয়ে ফেলছি না। আমি কেবল একটি সংজ্ঞা তৈরির চেষ্টা করছিলাম।

ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমি তোমার লেখা খুব পছন্দ করি, ক্লডিয়া বলল, কিন্তু এখানে কি কেউই তোমাকে পছন্দ করে না?

ভেইল হাসল, বলল, না, না তারা আমাকে অপছন্দ করে না। আমার প্রতি তাদের ঘৃণাবোধ আছে। তবে দেখো, যখন আমি আমার মৃত্যুতে লেখার স্বত্ব ফিরে পাব, তখন তারাই আমাকে শ্রদ্ধা জানাবে।

ক্লডিয়া বলল, তুমি একটুও সিরিয়াস নও।

আমি ভাবি, আমি যথেষ্ট সিরিয়াস। ভেইল বলল, আত্মহত্যা একটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এখন রাজনৈতিকভাবেও এটা সঠিক নয় বলে ভাবা হচ্ছে। তাই নয় কি?

ওহ শিট ক্লডিয়া তার একটি বাহু দিয়ে ভেইলের গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, লড়াই কেবল শুরু হচ্ছে। আমি যখন তোমার পয়েন্টগুলো তাদের সামনে উত্থাপন করব, আমি নিশ্চিত তারা শুনবে। এবার হলো তো!

ভেইল ক্লডিয়ার কথায় মুচকি হাসল। তাড়াহুড়োর কিছু নেই ভেইল বলল। এই করতে করতে ছয় মাসের মতো সময় লেগে যাবে। আর তখন আমিও আমার করণীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাব। আসলে সহিংসতা আমার একেবারেই অপছন্দ।

ক্লডিয়া এবার নিশ্চিত হলো যে, ভেইল সত্যি সত্যিই সিরিয়াস। আকস্মিক আতঙ্কিত হয়ে পড়ল ভেইলের মৃত্যুর কথা ভেবে। এমন ভাবনা, ক্লডিয়ার শুধু ভেইলকে ভালোবাসার জন্যই নয়, যদিও তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সে পর্যায়েই চলে গেছে। ভেইলের প্রতি অতিমাত্রায় অনুরক্তের কারণেও ক্লডিয়ার এই আতঙ্ক নয়। তার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, তার লেখা এত সুন্দর সুন্দর বই সামান্য কটা টাকার জন্য গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। ভেইলের এই শিল্প হয়তো অর্থকে জয় করে নেবে এক সময়। ক্লডিয়া তার এমন চিন্তা ঝেড়ে বেরিয়ে এলো। ভেইলের উদ্দেশে বলল, যদি খারাপ পরিস্থিতি একেবারে নগণ্য মাত্রায় নেমে আসে তবে আমরা ভেগাসে আমার ভাই ক্রসের সাথে যোগাযোগ করব। সে তোমাকে পছন্দ করে। সে নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারবে।

ভেইল হেসে উঠে বলল, সেও আমাকে ততটা পছন্দ করে না। ক্লডিয়া বলল, সে খুব ভালো মনের মানুষ। আমি আমার ভাইকে জানি। ভেইল এবার বলল, না ক্লডিয়া, তুমি তাকে চেনো না।

অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন সে রাতে ডরোথি চ্যান্ডলার প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি থেকে সরাসরি ফিরে এসেছিল। অবসাদগ্রস্ত অ্যাথেনা ঘরে ফিরেই সোজা চলে গিয়েছিল তার বিছানায়। কয়েক ঘণ্টা সময় সে বিছানায় শুধু এপাশ-ওপাশ করেই কাটাল- বিন্দুমাত্র ঘুম এলো না চোখে। শরীরের পেশিগুলোও যেন টেনে টেনে ধরছিল।

কেবল একটাই চিন্তা তার মাথায় চিন্তা নয় দুশ্চিন্তা। বজ স্কানেটের। আতঙ্কের রেশ তার তখনও কাটেনি। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে উঠল এ কাজের পুনরাবৃত্তি আর করতে দেয়া যাবে না। সে ভাবল, এমন ত্রাসের মধ্যে সে তার জীবন অতিবাহিত করতে চায় না।

আকস্মিক অ্যাথেনা উঠে বসল। সামান্য কয়েকটা মুহূর্তমাত্র। তারপর বিছানা থেকে নেমে সে তার পোশাক পরিবর্তন করল। গায়ে চড়াল খেলার পোশাক, পায়ে টেনিস জুতা। খুব ভোরে সূর্য উদয়েরও আগে এবং সৈকতে মানুষজনের পদচারণার অনেক পূর্বে অ্যাথেনা দৌড়াতে শুরু করল। তার দৌড়ের গতি হলো দ্রুত থেকে দ্রুততর।

সমুদ্র সৈকতের শক্ত ভেজা বেলেতে অ্যাথেনার দৌড় যেন অশরীরী মনে হতে লাগল। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দৌড়ানোর সময় অ্যাথেনার পায়ের ওপর আছড়ে পড়েছিল ঢেউ। নরম বেলেতে পা কদাচিৎ আটকেও যাচ্ছিল– তবুও থামেনি সে। সেই সাথে থামেনি তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতে স্নায়ুতে বজকে নিয়ে চিন্তার দৌড়।

অ্যাথেনা চায় না বজ তাকে কখনো আঘাত করতে সমর্থ হোক। মাথায় যেমনই আসছে বজের চিন্তা, অ্যাথেনার পরিশ্রমও বেড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে। চিন্তার রেশ থামেনি মোটেও। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল–বজ যে তাকে একসময় হত্যা করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার আগে সে অ্যাথেনাকে খেলিয়ে নেবে, তারপর অবশেষে তাকে বিকৃত করে ফেলবে– অ্যাথেনাকে কুৎসিৎ কদর্য করাই বজের অন্যতম অভিপ্রায়। এর কারণ, যদি অ্যাথেনাকে সে আবারো ফিরে পায়– অ্যাথেনা এভাবেই কথাগুলো বিড়বিড় করে আওড়ে যাচ্ছিল। এক সময় সমুদ্রের শীতল ছটা তার মুখে এসে পড়ল। আপন মনেই বলে উঠল– এ হয় না, এটা হতে দেয়া যায় না।

অ্যাথেনা আবার ভাবতে লাগল স্টুডিওর কথা তারা উন্মত্ত হয়ে উঠবে। তারা তাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। আরো এসব করা হবে কেবল অর্থের জন্য, নিশ্চয় অ্যাথেনার জন্য নয়, স্টুডিওর লোকরা অর্থের লাভ লোকসানে বেশ সতর্ক।

অ্যাথেনার ধারাবাহিক ভাবনায় এলো তার বন্ধু ক্লডিয়া। তার মনে এলো স্টুডিওর আরো কিছু মানুষের কথা। সে জানে, সে নিজের জন্য সবার কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করতে পারবে না। বজ খুব বেশি উচ্ছল, খুব বেশি সাহসী। সে এত বেশি স্মার্ট যে, অনায়াসেই যে কোনো লোককে আপন করে নিতে সক্ষম। মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাথেনা নিজের জন্য কোনো সুযোগই সৃষ্টি করতে পারবে না।

এভাবেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে, দৌড়াতে দৌড়াতে অ্যাথেনা এক সময় এসে পৌঁছল একটি টিলাসম পাথরখণ্ডের কাছে, যার অর্থ উত্তর সৈকতের সীমানা এখানেই শেষ।

এতক্ষণ অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘপথ অতিক্রম করায় মনের জোরও প্রায় ফুরিয়ে গেল অ্যাথেনার ফিরে যাবার মানসিক ইচ্ছেও শেষ হয়ে গেল। দম ফুরিয়ে অ্যাথেনা বসে পড়ল বেলেতেই। হৃদয়ের স্পন্দনকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করল সে।

আকস্মিক সি-গালের শব্দে তার সম্বিত ফিরে এলো। দেখল কয়েকটি সি গাল শূন্য থেকে উড়ে এসে পানি ছুঁয়ে আবারো উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। খুব ভালো লাগল তার অনেকটা সময় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল পাখিগুলোর খেলা। কিন্তু তাকে ফিরে যেতে হবে। মুখ শুকিয়ে এসেছিল, জিহ্বা বের করে ঠোঁট ভিজানোর চেষ্টা করল সে।

অকস্মাৎ দীর্ঘদিন পর তার প্রথমবারের মতো মনে হলো— সে ইচ্ছে করলেই তো তার বাবা-মার আশ্রয় নিতে পারে। বিষয়টি এমন কিছু কঠিন নয়। তার মনে হলো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি কোনো শিশুর পথ ভুলে যাবার মতো ঘটনা। ইচ্ছে করলেই আবারো ফিরে যাওয়া যায় নিরাপদে, নিরাপদ আশ্রয়ে। যেখানে গেলে কেউ দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরবে তাকে, তার ভালোর জন্য করবে যা কিছু দরকার।

খুব ভালো লাগল অ্যাথেনার। মনে জোর পেল– হেসে উঠল শিশুর মতো। তার মধ্যে বিশ্বাস জন্মাল– এটা অসম্ভবের কিছুই নয়।

বর্তমানের অ্যাথেনা অনেকের ভালোবাসার, পছন্দের এমনকি শ্রদ্ধারও। তবে সে মনে করে, সে একেবারেই শূন্য। বিশেষ করে কোনো মানুষের ভালোবাসার যথাযথ অনুভূতি তাকে আরো দোলা দেবে না কখনো। অ্যাথেনা প্রায়ই নিজেকে বড় একাকী মনে করে যেন এ পৃথিবীতে তার কেউ নয় আপন।

কখনো অ্যাথেনার পাশ কাটিয়ে একজন সাধারণ মহিলা তার স্বামী সন্তানের সাথে হেঁটে যায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সে এমন একটি সহজ জীবনের জন্য। ঈর্ষা হয় তার সেই সাধারণ নারীটির ওপর। থামো– চিন্তার রেশ থামাতে চিৎকার করে ওঠে অ্যাথেনা। মনে মনেই বলে– ভাবো, এমন একটা জীবন ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায়। এর জন্য অ্যাথেনা, তোমার প্রয়োজন পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।

সকালের মধ্যভাগে অ্যাথেনা ফিরে এলো তার বাড়িতে। গর্বের সাথে, বুক ফুলিয়ে, সোজা হনে সে ফিরে এলো। তার মধ্যে উপলব্ধি হলো তার আত্মবিশ্বাস ফুরিয়ে যায়নি। অ্যাথেনা জানে তাকে এখন কি করতে হবে।

বজ স্কানেটকে সারা রাত পুলিশ কাস্টোডিতে রাখা হলো। স্কানেট কাস্টোডি থেকে ছাড়া পাবার পর তার আইনজীবী প্রেস কনফারেন্সের ব্যবস্থা করল। স্কানেট সাংবাদিকদের জানাল, অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে সে বিয়ে করেছিল। দীর্ঘ দশ বছরেও সে অ্যাথেনার দেখা পায়নি। সেদিন দেখা হওয়ায় বজের এই কাণ্ডটি ছিল কেবল একটি বাস্তব কৌতুক। লিকুইডটি ছিল পানি।

সংবাদ সম্মেলনে বজ জানাল যে, নিশ্চিতভাবেই অ্যাথেনা তার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করবে না। বাস্তবে ঘটলও তাই। অ্যাথেনা এ বিষয়ে কোনো মামলা বা সংবাদ সম্মেলন করেনি।

.

তবে সেদিন অ্যাথেনা লডস্টোন স্টুডিওকে বিষয়টি জানিয়েছিল। লডস্টোন স্টুডিওর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে ছবি নির্মাণের রেকর্ড আছে। এ কারণে স্টুডিওটির নাম-ডাকও ব্যাপক। অ্যাথেনা স্টুডিও কর্তৃপক্ষকে জানাল, লডস্টোনে চুক্তিবদ্ধ কাজ সে আর করবে না। এর কারণ হিসেবে অ্যাথেনা লিখল, তার ওপর যে কৌতুককর হামলা চালানো হয়েছে, তাতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে– আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

অ্যাথেনা ছাড়া লডস্টোনের ব্যানারে নির্মিতব্য ঐতিহাসিক ছবি ম্যাসেলিনা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ অবধি ছবিটির জন্য যে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে তার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং অ্যাথেনা এই স্টুডিওতে কাজ না করার অর্থ, পরবর্তীতে কোনো বড় স্টুডিওতেই কাজ করার সুযোগ হারাবে সে।

অ্যাথেনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে লডস্টোন স্টুডিও থেকেও একটি স্টেটমেন্ট ছাড়া হলো। তাতে লেখা হলো তাদের তারকা অভিনেত্রী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অথচ চুক্তিবদ্ধ ছবির শুটিং-এর কাজ এখনও সিংহ ভাগ বাকি। তাকে এক মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজটুকু করতে হবে।

০২. লডস্টোনের সাথে অ্যাথেনা

০২.

লডস্টোনের সাথে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের কাজ না করার ঘোষণাটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যার সাথে জড়িত বিশাল পরিমাণে অর্থের বিনিয়োগ ব্যাপক মূল্য দিতে হতে পারে এজন্য অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে।

লডস্টোন পুরো হলিউডের এমনই এক প্রভাবশালী ও বৃহৎ স্টুডিও যে, সাধারণত কোনো অভিনয় শিল্পীই অ্যাথেনার মতো নেতিবাচক আচরণের সাহস দেখায় না।

ঐতিহাসিক কাহিনীনির্ভর ম্যাসেলিনা চলতি বছর ক্রিসমাস মৌসুমের যথেষ্ট গতিশীল প্রযোজনা। শুধু তাই নয়, এমন বড় ছবি পুরো দীর্ঘ ও কঠিন শীতকালে স্টুডিওর সব ছবির পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত। আর এতেই প্রধান চরিত্রে কাস্ট করা হয়েছে অ্যাথেনাকে।

অ্যাথেনার ওপর লডস্টোন স্টুডিওর ক্ষেপে যাওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে এমন এক সময় অ্যাথেনা ছবিতে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছে যখন বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমস্ত আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। পরের রোববার এলি ম্যারিয়নের বেভারলি হিলস এস্টেটে এই বার্ষিক উৎসব ঘিরে ব্রাদারহুড চ্যারিটি পার্টির দিন নির্ধারিত। এলি ম্যারিয়ন হচ্ছেন লডস্টোন স্টুডিওর সিংহভাগের অংশীদার এবং চেয়ারম্যান।

সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বেভারলি হিলসে এলি ম্যারিয়নের ম্যানশনটি আদতে একটি প্রদর্শনী ক্ষেত্র হিসেবেও অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যায়। বাড়িটিতে রয়েছে বিশাল বিশাল কুড়িটি কক্ষ। তবে সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, এত বড় বাড়িতে মাত্র একটি শয্যাকক্ষ বা বেড চেম্বার। এর কারণ এলি ম্যারিয়ন কখনোই চান না তার বাড়িতে কেউ ঘুমাক। তবে গেস্টদের জন্য অবশ্যই রয়েছে বাংলো-বাড়ি, রয়েছে টেনিস কোর্ট এবং বড়সড় আয়তনের সুইমিং পুল। ম্যারিয়নের বিশ কক্ষ বিশিষ্ট ম্যানশনটির প্রায় ছয়টি কক্ষই সাজানো হয়েছে অত্যন্ত মূল্যবান সব পেইন্টিংস দিয়ে। ম্যারিয়ন এ বিষয়ে প্রায় বলে থাকেন– আমার ম্যানশনের কয়েকটি কক্ষ পেইন্টিংসের জন্য উৎসর্গকৃত।

সেই বেভারলি হিলসের চ্যারিটি উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হলিউডের বাঘা বাঘা প্রায় পাঁচশ ব্যক্তিত্বকে। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে অতিথিদের প্রত্যেককে এক হাজার ডলার করে অ্যাডমিশন ফিও দিতে হয়েছে।

উৎসবের জন্য ম্যারিয়ন ম্যানশনের বাইরে পৃথকভাবে বসানো হয়েছে পানশালা। খাবারের স্থান, নাচের জায়গা ও মিউজিক ব্যান্ডের স্থান। এর বাইরে পুরো স্থান জুড়েই আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য এই আয়োজন। তবে ম্যানসনে অতিথিদের অবাধ বিচরণ সংরক্ষিত। আরেকটি বিষয়, অতিথিদের টয়লেট সিস্টেমেও আনা হয়েছে অভিনবতু— এর জন্য একটি বহনযোগ্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটি বেশ কৌতুককর।

ম্যানশন, অতিথিদের বাংলো, টেনিস কোর্ট ও সুইমিং পুলগুলো ঘিরে দড়ির সীমানা টানানো হয়েছে। বসানো হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী। কোনো অতিথিরই এমন নিরাপত্তা ডিঙিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এলি ম্যারিয়ন ব্যক্তি হিসেবে এতটাই প্রসিদ্ধ যে, এমন নিরাপত্তা ও আড়ম্বরপূর্ণ ব্যবস্থা না নিলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা অসম্ভব কিছু নয়।

আমন্ত্রিত অতিথিদের লনে গল্প-গুজব, নাচ-গানের জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর ম্যারিয়ন ছিলেন ম্যানশনের একটি বড় সম্মেলন কক্ষে। সেখানে একদল হলিউড ব্যক্তিত্বের সাথে তিনি ম্যাসেলিনা ছবিটি সম্পন্নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

বেভারলি হিলসে এই আয়োজনের পুরোটাই এলি ম্যারিয়ন নিজেই সম্পাদনা করছিলেন। আশি বছর বয়সেও ম্যারিয়নের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এতটা বয়স তিনি অত্যন্ত সতর্কতা ও ধূর্ততার সাথেই লুকিয়ে রাখতে পারেন। যে কেউ তাকে দেখে ষাটের বেশি মনে করবে না কখনো। তার ধূসর চুলগুলো নিখুঁতভাবে ছাঁটা এবং খুব সামান্যই তাতে রুপালি আভা। কালো সুট পরলে ম্যারিয়নের কাঁধ আরো প্রশান্ত মনে হয়। শরীরের টান টান ভাব আরো প্রস্ফুটিত হয়। সাথে ঠোঁটে ধরা চিকন পাইপ হারিয়ে দিতে পারেন প্রায় যুবকদের ইমেজও। তার পায়ে মাহোগ্যানি জুতা যেন ভূপৃষ্ঠ আঁকড়ে থাকে। লম্বভাবে কাটা সাদা শার্ট ও সাথে গোলাপি টাইয়ের বাঁধনে তার সামান্য ধূসর পাণ্ডুবর্ণও গোলাপি হয়ে ওঠে। তবে লডস্টোনে তার নিয়ম ও আইন পরিচালিত হয় তার নির্দেশমতোই। একটা সময় অবশ্য ছিল, যখন মানুষের ইচ্ছার স্বাধীন মতামতের ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হতো স্টুডিওর কার্যক্রম। এখন আর সে দিন নেই– কর্তৃত্ব ম্যারিয়নেরই।

একটি ছবির মাঝপথে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের অস্বীকৃতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে এলি ম্যারিয়নকে। এতে বিপর্যস্ত হয়েছে ম্যারিয়নের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সর্বোপরি তার মনোযোগ।

ম্যাসেলিনা শত মিলিয়ন ডলারের প্রযোজনা, স্টুডিওর গতি প্রকৃতি। এর অর্থায়ন বিভিন্ন বিদেশী ভিডিও, টিভি, ক্যাবল ইত্যাদি মাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত— যেন এক-একটি স্বর্ণের ভাণ্ডার। আর এই ভাণ্ডার স্প্যানিশ জাহাজ (গ্যালিওন) ডুবির মতো সাগরের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে যেন, তা আর কখনোই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এই ভাণ্ডার হচ্ছে অ্যাথেনা নিজেই। তিরিশ বছরে অ্যাথেনা– একজন মেগাস্টার। অ্যাথেনা শুধু ম্যাসেলিনার জন্যই নয়, লডস্টোনের পরবর্তী আরেকটি ব্লকবাস্টার ছবিতেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ম্যারিয়নের মতে, অ্যাথেনা একটি প্রকৃত মেধার নাম, তার মাঝে মেধা ছাড়া আর কি-ইবা আছে! তবে ম্যারিয়ন যে কোনো মেধার পূজারী।

মেধাকে তিনি ডিনামাইট হিসেবে মনে করেন। ডিনামাইটের মতোই ভয়ঙ্কর এই মেধা, তবে এর নিয়ন্ত্রণও রাখতে হবে। ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক এই ডিনামাইটের নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রয়োজন ভালোবাসার। তার নিয়ন্ত্রণে হতে হবে তোষামোদী– বিশ্বে প্রচার করতে হবে এর যত কিছু ভালো সব। এর জন্য হতে হবে বাবা, হতে হবে মা। এর জন্য নিজেকে একজন বোন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে, এমনকি প্রয়োজনে সাজতে হবে একজন প্রেমিক। তবে খুব বেশি ছাড়ও দেয়া যাবে না। কিন্তু ম্যারিয়নের এখন এমন একটি কঠিন সময়, যখন ডিনামাইট অ্যাথেনার প্রতি কোনো কিছুই সাজতে পারছেন না– দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারছেন না অ্যাথেনাকে।

কনফারেন্স রুমে উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছেন এলি ম্যারিয়নের দিকে। সবাই ম্যারিয়নের মনোভাব জানতে উদগ্রীব। আজকের এ সভায় উপস্থিত আছে ববি বানজ, স্কিপি ডিরি, মেলো স্টুয়ার্ট ও ডিটা টমি।

এলি ম্যারিয়ন তাকালেন তার কনফারেন্স রুমের কুড়ি মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের পেইন্টিংস, টেবিল, চেয়ার, সোফা, ক্রিস্টালের ওয়াইনপূর্ণ ধারক আরো মর্গগুলোর দিকে। তার এই দৃষ্টি ছিল উদাসীন। এসব যেন তারই শরীরের খণ্ড খণ্ড টুকরো। ম্যারিয়নের মনে হলো, যেন শরীরের টুকরোগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

এলি ম্যারিয়ন নিজেই অবাক হয়ে ভাবেন কতটা কৌশলের সাথে তিনি নিজেকে একজন শক্তিশালী, প্রভাবশালী হিসেবে সারা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করে থাকেন। খুব কঠিন মনে হয় তার বিশ্বের অপর পাওয়ারফুল ব্যক্তিদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা।

ম্যারিয়নের সকালগুলো কখনোই পুরোপুরি অবসাদমুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় তাকে। ক্লান্তিভরা শরীর নিয়ে শেভ করেন, কোটের বোম লাগান একে একে। তারপর বাঁধেন টাই–টাইয়ের নটটা সামলাতেও বেগ পেতে হয় তার। তবে মনের জোরেই করতে থাকেন সবকিছু। তিনি জানেন মানুষের মানসিক দুর্বলতা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়। এটা সক্রিয় হলে যে কোনো মানুষ তার জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলবে, ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বে। তবে এ বয়সে ম্যারিয়ন আর কত দিন তার মনের জোর ধরে রাখবেন?

তিনি এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ববি বানজকে ব্যবহার করছেন। তার কাছে ধীরে ধীরে গছিয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতা। বানজ প্রায় তিরিশ বছরের ছোট হলেও তাকে বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতেই দেখেন ম্যারিয়ন। সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করেন তাকে। এর কারণ দীর্ঘ সময় ধরে বানজ ম্যারিয়নের আনুগত্য।

স্টুডিওর প্রেসিডেন্ট এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের দায়িত্বে রয়েছে বানজ। প্রায় তিরিশ বছর যাবৎ বানজ যেন ম্যারিয়নের কুড়াল। এই দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে। সেটি পিতা-পুত্রের অনেকেই এমন মন্তব্য করে থাকেন আজকাল। ম্যারিয়নের সত্তর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকে, ক্রমেই তিনি স্বভাবগত কোমল হতে থাকেন। ঠিক ততটুকুই করেন যতটুকু না করলেই নয়। তবে বানজ এক্ষেত্রে সদা সক্রিয়।

বানজ ছিল এক সময় ছবির পরিচালক। সেই পরিচালক থেকে ম্যারিয়ন তাকে তুলে এনেছেন সমগোত্রে। ম্যারিয়নের সাথে যৌথ ছবি নির্মাণ করে দর্শকের জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর থেকেই উভয়ের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বানজ লডস্টোন স্টুডিওর একটি নিন্দনীয় নাম। এই সেই বানজ, যে ছবির পরিচালক, স্টার ও লেখকদের পারিশ্রমিক প্রদানে ঠকিয়ে যাচ্ছে অনবরত। কেউ বিদ্রোহ করে উঠলে আদালতের আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এই সেই বানজ যে যে কোনো ট্যালেন্টকে কঠিন শর্তে চুক্তিবদ্ধ করতে বাধ্য করে। এটি ঘটে বিশেষ করে লেখকদের ক্ষেত্রে।

লেখকদের একটি সাধারণ মাত্রার সম্মানী দিতেও তার কার্পণ্যের সীমা নেই। অনেক ক্ষেত্রে লেখকদের স্ক্রিপ্ট তার হাতে যাওয়ার পরপরই অস্বীকারও করে বসে। তবে বানজের কাছে মোটামুটি একটা মূল্য পায় পরিচালক। পরিচালকের গুরুত্ব তার কাছে একটু বেশিই। এর কারণ তারা হচ্ছে ছবির কলকাঠি নাড়নেঅলা–ইচ্ছে করলেই অন্ধ বানিয়ে ফেলতে পারে তারা। প্রযোজকদের ক্ষেত্রেও বানজের মনোভাব কিছুটা নমনীয়। চুরিবৃত্তির গলদ না পাওয়া পর্যন্ত বানজের কাছে প্রযোজকরা হচ্ছে ছবি তৈরির মানসিক শক্তির উৎস।

কিন্তু লেখকরা? বেচারা লেখকদের চুক্তিবদ্ধ হতে হয় বানজের কাছে শূন্য সাদা কাগজে। এতে সায় না থাকলে এমন অনেক লেখক বের করে নেয়া যায় বলে একটা হুমকিও শোনা যাবে তার মুখে। লেখা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রযোজক বিভিন্ন দৃশ্যের জন্য প্লট সাজান। পরিচালক দেন তার বাণিজ্যিক ভিত্তি এবং স্টাররা সংলাপের অভিব্যক্তিতে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন দৃশ্যের পর দৃশ্য। কোনো কারণে কোনো দৃশ্যে যদি সংলাপ না থাকে তবে সে লেখকের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে বানজ। কেটে নেয়া হবে তার সম্মানীর অংশ। এভাবে পূর্বে বহু লেখককে বঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেছে, যা একত্রে করলে কয়েক মিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে লেখকদের ক্ষেত্রে বানজের চেয়ে ম্যারিয়ন অনেকটাই নমনীয়। এর কারণ ছবি নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ করাতে স্টার, কলাকুশলীদের চেয়ে লেখকরাই সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয় তার।

ম্যারিয়ন এবং বানজ সারা বিশ্বের ফিল্ম ফ্যাস্টিভেলের আয়োজন করে ছবি বিক্রির চেষ্টা চালিয়েছে একসাথে। তাদের ছবির বিশ্ব বাজার তৈরির জন্য তারা কখনো গেছেন লন্ডন, কখনো প্যারিসে, কানসে–কখনোবা টোকিও কিংবা সিঙ্গাপুরে। সারা বিশ্ব সফর করে তাদের কাছে ছবি সংশ্লিষ্ট লেখক, সাধারণ আর্টিস্ট, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভূমিকাকে একেবারেই নগণ্য মনে হয়েছে। এর পরই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই বঞ্চিতকরণ ধারার। সাম্রাজ্য বিস্তারের নতুন আইন তৈরি হয়েছে তাতে একজন হয়েছেন সম্রাট আর অপরজন তার প্রধান আজ্ঞাবাহী।

এলি ম্যারিয়ন এবং ববি বানজ দুজনে একমতে পৌঁছেছেন। তাদের মনে হয়েছে লেখক, অভিনয় শিল্পী এবং পরিচালক শ্রেণীর লোকরা বিশ্বের সবচেয়ে অকৃতজ্ঞ। বানজ ও ম্যারিয়ন বলে উঠেছেন, আহা এরা যদি একটু সক্রিয় হতো, তাদের ভালো সুযোগের জন্য যদি একটু কৃতজ্ঞ হতো। তারা যদি নিজেদের তুলে ধরতে একটু চেষ্টা করত! একটু বিখ্যাত হলেই তারা কিভাবে যে এত পরিবর্তন করে ফেলে নিজেদের, বোঝা মুশকিল।

তাদের ধারণা ছবি সংশ্লিষ্ট এই নগণ্য, অকৃতজ্ঞরা যেন মধু তৈরির মৌমাছিদের প্রতি ক্রুদ্ধ ভিমরুলের মতো আচরণ করতে শুরু করে। আর এদের প্রকৃতিস্থ করতে ম্যারিয়ন-বানজ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। কুড়ি সদস্যবিশিষ্ট একটি আইনজীবীর দল রেখেছেন বিদ্রোহীদের ওপর জাল ফেলার জন্য।

তারা সব সময় শুধু শুধু সমস্যার সৃষ্টি করবে কেন? কেন অসুখী থাকবে তারা সর্বদা? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যেসব মানুষ শিল্পের চেয়ে অর্থের পেছনে সবসময় ছুটতে থাকে তাদের সে ক্যারিয়ার দীর্ঘ হতে পারে, জীবনে প্রচুর আনন্দ ও উপভোগ করতে পারে কিন্তু মনের প্রশান্তি তাদের ক্রমেই দূরে সরতে থাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই শিল্পের পূজারী তারা যেমন নিজেও স্বর্গীয় সুখ পায়, অপরকেও করতে পারে সুখী। শিল্প ছাড়া ছবি তৈরি হতে পারে কিন্তু তার মধ্যে প্রাণ থাকবে না, ভালোবাসা থাকবে না। আর মানুষও সেটা কিনতে আগ্রহী হবে না।

.

ববি বানজ ম্যানশনের বাইরে উৎসবমুখর আমন্ত্রিত অতিথিদের কনফারেন্স রুমে আসন গ্রহণের আহ্বান জানাল। এ আহ্বান থেকে বাদ গেল না একমাত্র মহিলা অতিথি ডিটা টমি। ডিটা টমি লডস্টোনের চলমান ছবি ম্যাসেলিনার পরিচালক।

ডিটা টমি একজন এ-ক্লাস পরিচালক এবং সমকামী নারী, অভিনেত্রীদের নিয়ে ছবি পরিচালনার তার সুখ্যাতি রয়েছে। আজকাল হলিউডে এই সমকামী শব্দটি প্রায় উঠেই গেছে। বৈধতা পেয়েছে সমলিঙ্গের যৌন বিনোদন। নারী সমকামীদের তাই এখন লেসবিয়ান না বলে ফেমিনিস্ট হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। ডিটা টমি নিজেও একজন সমকামী নারী। আর কনফারেন্স রুমে পুরুষদের ভিড়ে টমির উপস্থিতি অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে–একেবারেই বেমানান।

ডিটা টমি সবসময় বেশ কম বাজেটে ছবি তৈরি করে থাকে। ছবিগুলো প্রচুর অর্থও বয়ে নিয়ে আসে স্টুডিওর জন্য। সবচেয়ে সুবিধা হলো এই, তার ছবিতে নেয়া নারী অভিনেত্রীদের নিয়ে তাকে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না, যা একজন পুরুষ পরিচালকের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আরেকটি বিষয় হলো ডিটা টমি তার সমকামী অভিনেত্রীদের দিয়ে খুব সহজে দৃশ্যের পর দৃশ্যে কাজ করিয়ে নিতে পারে।

কনফারেন্স টেবিলের শীর্ষস্থানীয় আসন দখল করে বসে আছেন এলি ম্যারিয়ন। তার পাশে ববি বানজ সম্মেলনের বিষয়াদি আলোচনা করছিল।

বানজ ডিটার উদ্দেশে বলল, স্টুডিওতে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কি করা উচিত? এ বিষয়ে তোমার কোনো নিজস্ব চিন্তা থাকলে আমাদের বলো। এ সমস্যার মাথা-মণ্ডু কিছুই ঢুকছে না আমার মাথায়।

টমি আকারে একটু ছোটখাটো, তবে বেশ দৃঢ়তাসম্পন্ন, কথা বলে সবসময় যুক্তি দিয়ে। টমি বানজের কথার প্রতিউত্তরে বলল, অ্যাথেনাকে তার মৃত্যুভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যতক্ষণ না আপনারা তার এই ভীতি দূর করতে সক্ষম হবেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে সক্ষম হবেন–আমার ধারণা, সে ততক্ষণ তার কাজে ফিরে আসতে পারবে না। আর সে যদি ফিরে না আসে তবে আপনাদের পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার নিশ্চিতভাবে গোল্লায় যাবে। সে ছাড়া ছবির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

একটু সময় নিল টমি। তারপর বলল, গত সপ্তাহে আমি তাকে নিয়ে কাজ করেছি। সেখানেও আমি আপনাদের সাশ্রয় করেছি।

দিস ফাকিং পিকচার টমির কথা শেষ না হতেই বানজ এক রকম উত্তেজিত হয়ে উঠল। বলল, আমি কখনোই এটা বানাতে চাইনি।

ববি বানজের এই কথা উপস্থিত সকলের মনোযোগে আঘাত করল। প্রযোজক স্কিপি ডিরি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলল, ফাঁক ইউ ববি।

অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট ক্ষেপে গিয়ে ববির উদ্দেশে বিশেষণ ছুড়ল বুলশিট বলে।

সত্য কথা হলো ম্যাসেলিনা তৈরির জন্য সবাই খুব বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিল। এর কারণ ছবিটির কাহিনী প্রাচীনতম ঐতিহাসিক হলেও খুব সহজেই এটি ব্যবসায় সফলতা আনতে সক্ষম হবে–এই ভেবেই ছবিটি নির্মাণে সবুজ সংকেত দেয় প্রায় সবাই।

ম্যাসেলিনা ছবিটির কাহিনী প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সমকামী দৃষ্টিকোণ থেকেই ছবিটির বিষয়বস্তু মূলত প্রাধান্য পেয়েছে। তবে এই গল্পের লেখক একজন পুরুষ। লেখক যেভাবে লিখেছে–

সম্রাজ্ঞী ম্যাসেলিনা ছিলেন দুর্নীতিপরায়ণা, হন্তক এবং বহুগামী নারী। এক রাতে সম্রাজ্ঞী ম্যাসেলিনা রোমের সব মানুষকে যৌনাবেদনের মাধ্যমে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ঘটনাটি এমন হলেও ম্যাসেলিনা ছবির কাহিনী নির্মিত হয়েছে একটু ব্যতিক্রম করে প্রায় দুই হাজার বছর আগের ঘটনা। যেখানে ম্যাসেলিনাকে দেখানো হয়েছে একজন বিষাদগ্রস্ত নায়িকা হিসেবে। এ গল্পে ম্যাসেলিনা এমন একজন নারী যার অস্ত্র কেবল তার নারীত্ব। আর এই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে পুরুষ কর্তৃত্বের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে সামাজিক ব্যবস্থায়। নারীকে যারা শুধু যৌন সম্ভোগের বস্তু হিসেবে মনে করে থাকে এমন কর্তৃত্বের অবসানের লক্ষ্যই ছবি নির্মাণের মূল বিষয়বস্তু।

ছবির ধারণাটি চমৎকার-সম্পূর্ণ রঙিন ও যৌননির্ভর দৃশ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয় বিষয়বস্তু। কিন্তু নিখুঁতভাবে সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু তুলে ধরাই হবে সাফল্যের ব্যাপার।

প্রথমে স্ক্রিপ্টটি লিখেছিল ক্লডিয়া ডি. লিনা–গল্পের নিখুঁত অনুসরণ করে চমৎকার একটি পাণ্ডুলিপি দাঁড় করায় সে। ডিটা টমি এই চিত্রনাট্যের চলমান দৃশ্য নির্মাণের দায়িত্ব পায়। প্রায়োগিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ওপর ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিটার নিযুক্তিও একেবারে সঠিক। সে হচ্ছে একজন শুষ্ক বুদ্ধিজীবী এবং পরীক্ষিত পরিচালক। এদিক থেকে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন ম্যাসেলিনা চরিত্রের জন্য আরো বেশি গ্রহণযোগ্য। পুরো ছবিতে তার চরিত্রটিই মূলত কর্তৃত্ব করেছে। অ্যাথেনার রয়েছে চেহারা ও শরীরের সৌন্দর্য, আর সেই সাথে তার অভিনয়ের দক্ষতা ও মেধা সবকিছুর পরিপূরক। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অ্যাথেনা সারা বিশ্বে সেরা তিন সুন্দরী ও মেধাবী অভিনেত্রীর একজন। এদিকে ক্লডিয়া নেপথ্যের সেরা একজন জিনিয়াস। ম্যাসেলিনা চরিত্রটিকে অ্যাথেনার উপযোগী করে তুলতে চমৎকার সব কাজ অন্তর্ভুক্ত করেছে তার পাণ্ডুলিপিতে।

কনফারেন্স কক্ষের সভায় স্কিপি ডিরি বলল, অ্যাথেনাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত ছবির কাজ আমাদের বন্ধই রাখতে হবে। তবে এর জন্য প্রতিদিন আমাদের প্রায় দেড়শ ডলার পরিমাণ বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হবে।

এই হচ্ছে এখন অবস্থা। ইতিমধ্যেই আমরা ব্যয় করেছি পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার আর এদিক থেকে কাজের অগ্রগতি কেবল মাঝপথে। আমরা নতুন স্ক্রিপ্ট তৈরি করে অ্যাথেনাকে বাদও দিতে পারব না, আবার তার মতো আরেক অ্যাথেনা তৈরি করতে পারব না। এ অবস্থায় সে যদি আর ফিরে না আসে তবে এ পর্যন্ত নির্মিত ছবি আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

এ ছবি বাতিল করতে পারি না আমরা, বানজ বলল। তারকাদের কাজ করতে অস্বীকৃতির বিষয়ে ইস্যুরেন্স কোনো পদক্ষেপই নিতে চাইবে না। যদি তাকে প্লেন থেকে ফেলে দিই, সেক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স এগিয়ে আসবে।

এবার মেলোর দিকে তাকিয়ে বানজ বলল, মেলো তাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটা তোমার। অ্যাথেনার সব দায়-দায়িত্ব তোমাকেই বহন করতে হবে।

মেলো স্টুয়ার্ট বলল, আমি শুধুমাত্র তার এজেন্ট। তার মতো নারীর প্রতি আমার আগ্রহ আছে। আমি বলতে চাই অ্যাথেনার আতঙ্কিত হয়ে ওঠার বিষয়টি জেনুইন। বিষয়টি তোমার বোধগম্য হবে না হয়তো। কেননা তুমি সে প্রকৃতির নও। সে সত্যিই আতঙ্কিত, তবে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে আকস্মিক এই আচরণের নিশ্চয়ই কারণ আছে। পরিস্থিতি সত্যিই বেশ ভয়াবহ ও সঙ্কটপূর্ণ।

বানজ বলল, এই শত মিলিয়ন ডলারের ছবিটি যদি তার জন্য নস্যাৎ হয়ে যায়, তবে সে আরো কখনোই ফিরে আসতে পারবে না, সে কি এটা জানে?

খুব ভালো করেই জানে।

বানজ এবার বলল, এমন কেউ কি নেই যে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে। স্কিপি, তুমিও তো চেষ্টা করেছ, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছ। মেলো, তুমিও চেষ্টা করেছ। ডিটা, আমি জানি, তুমি তোমার সাধ্যমতো তাকে বুঝিয়েছ। এমনকি আমিও। আমাকেও সে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বানজের প্রতি উত্তরে টমি বলল, ববি, তুমি তো গুনতিতেই পড়ো না। সে তোমাকে ঘৃণা করে।

বানজ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। বলল, অবশ্যই, অনেকেই আমার কথা বলার ধরণ পছন্দ করে না। তবে তারা আমার কথা শোনে।

টমির কণ্ঠে সহানুভূতি। সে বলল, এমন কোনো ট্যালেন্ট নেই যে তোমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু অ্যাথেনার বিষয়টি আলাদা। সে তোমাকে ব্যক্তিগতভাবেই ঘৃণা করে।

বানজ বলল, অথচ আমিই তাকে স্টার বানিয়েছি।

মেলো স্টুয়ার্ট শীতল কণ্ঠে বানজের বিরোধিতা করে বলল, সে জন্মগত একজন স্টার। তুমিই বরং তাকে পেয়ে ধন্য হয়েছ।

বানজ ডিটার উদ্দেশে বলল, তুমি তো তার বন্ধু। তাকে কাজে ফিরিয়ে আনার কাজটুকু তুমিই করো।

অ্যাথেনা আমার বন্ধু নয়, টমি বলল। সে আমার একজন সহকর্মী। সে আমাকে শ্রদ্ধা করে। এর কারণ আমিই তাকে তৈরি করেছি। সে যখন আমার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে আমি খুব মর্মাহত হয়েছি। আমি তোমার মতো নই, ববি। তুমি বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারো।

বানজ আর ধরে রাখতে পারল নিজকে। ডিটার উদ্দেশ্যে বলল, হু দি হেল ইজ নট টু ফাঁক আজ।

এলি ম্যারিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল, আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তোমাকে এর একটা বিহিত করতে হবে।

উপস্থিত সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো কনফারেন্স টেবিলের সবচেয়ে বয়োজ্যষ্ঠ এলি ম্যারিয়নের দিকে। এতক্ষণের আলোচনায় ম্যারিয়ন বেশ বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার বিশাল মাথাটা নড়াচড়া করছিল উপস্থিত অতিথিদের দিকে। এ মুহূর্তে তার মাথা আরো বড় মনে হচ্ছিল। তার এই বড় মাথার জন্য কোনো এক স্টার জোক করে বলেছিল– তার মাথাটা একটু হেঁটে নেয়া দরকার।— এই মন্তব্যে যতটা না ছিল জোক, তার চেয়ে বেশি ছিল বিদ্বেষ।

ম্যারিয়নকে দেখতে অনেকটা গরিলার মতো। তবে বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ সে– ছড়ানো নাক, মাংসল ঢাউস মুখ। কনফারেন্স টেবিলে তিনি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক চেহারা নিয়ে বসে আছেন। অত্যন্ত ভদ্র অবয়ব তার, শারীরিক বৈশিষ্ট্যে হ্যান্ডসাম না বলে উপায় নেই। তবে তার চোখ দুটো কিন্তু ব্যক্তিত্বের উৎস। শীতল-ধূসর চোখ দুটোতে একটা বুদ্ধিমত্তার ছাপ এবং তা যে কোনো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। আরেকটি বিষয় হচ্ছে তিনি তার ফার্স্ট নেমটি লোকমুখে শুনতে পছন্দ করেন।

ম্যারিয়নের কন্ঠে কোনো আবেগ প্রকাশ পেল না। তিনি বললেন, অ্যাথেনা যদি আপনাদের কারো কথাই কর্ণপাত না করে, তবে সে আমার কথাতেও একই উত্তর দেবে। আমার যে অবস্থান তাতে তাকে ইমপ্রেস করার প্রচেষ্টা মানায় না। তবে একজন বোকা টাইপের বিবেকহীন লোকের হামলায় অ্যাথেনার আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আমরা কি অন্য কোনো পথের কথা চিন্তা করতে পারি না?

আমরা চেষ্টা করব, বলল বানজ। তবে অ্যাথেনার মনোভাবের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

প্রডিউসার স্কিপি ডিরি বলল, আমরা অন্যভাবেও, বিশেষ করে পুলিশ প্রয়োগ করে অ্যাথেনার আটককারীকে শায়েস্তার চিন্তা করে দেখেছি। এতেও ব্যর্থ হয়েছি। কারণ বিষয়টি খুব সহজ নয়। তার বাবার আছে অঢেল টাকা ও রাজনৈতিক যোগাযোগ।

স্টুয়ার্ট প্রশ্ন করল, এই ছবিটি যদি আমরা বাতিল করে ফেলি তবে স্টুডিওর ঠিক কতটা ক্ষতি হতে পারে? একটু থেমে তার কণ্ঠে প্রতিশ্রুতির সুর ভেসে এলো, স্টুডিওর পরবর্তী কাজে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব যেন এই ক্ষতি পুষিয়ে যায়।

স্টুডিওর ক্ষতির বিষয়টি স্টুয়ার্ট মেলোর কাছে মেলে ধরাটা একটা সমস্যা। বিশেষ করে অ্যাথেনার এজেন্ট হিসেবে তো এটা প্রকাশ করা বোকামি। ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ পেলে সুবিধে হবে অ্যাথেনার, এমনটি স্টুয়ার্টেরও। ম্যারিয়ন মেলোর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলেন না, তবে এ বিষয়ে বানজের মতামতের প্রতিই আগ্রহ ছিল তার। ম্যারিয়ন কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালেন বানজের দিকে।

অনিচ্ছাসত্ত্বেও বানজ মুখ খুলল, প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব পঞ্চাশ মিলিয়ন। ঠিক আছে, মেনে নিলাম যে আমরা এর পুরোটাই পেটে ঢুকিয়েছি। কিন্তু বিদেশী সংস্থাগুলোকে তো তাদের অর্থ ফেরত দিতে হবে, ফেরত দিতে হবে ভিডিও কোম্পানিগুলোকে। তাছাড়া ক্রিসমাসের কোনো লোকোমটিভও আমাদের হাতে এখন নেই। এটা ভিন্নভাবে আমাদের কৌশলগত দিক দিয়ে ক্ষগ্রিস্ত করবে।

কি যেন একটা ভাবল বানজ–কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তার পর বলল, আমরা যদি লাভের দিকটা দেখি তবে সব মিলিয়ে দুশ মিলিয়ন ডলার। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ পুষিয়ে দিতে তোমার কি যথেষ্ট প্যাকেজ আছে মেলো?

স্টুয়ার্ট মেলো হেসে উঠল। তার এই হাসির কারণ স্টুডিওর কর্ণধাররা অ্যাথেনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মেলোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। মেলো বলল, প্রকৃত অর্থ তোমাদের কাছ থেকে বেরিয়েছে, তোমাদের হিসেবে পঞ্চাশ মিলিয়ন।

ম্যারিয়নের স্বর কঠিন হয়ে উঠল। কণ্ঠের ভদ্র ভাবও কেটে গেল। ম্যারিয়ন প্রায় ধমকের সুরে বলে উঠলেন, মেলো, তুমি এই পরিমাণ অর্থের কতটা তোমার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারবে?

সবাই বুঝতে পারল কি হতে যাচ্ছে। ম্যারিয়ন সিদ্ধান্ত নিলেন, এমন চাপ সৃষ্টি করে যদি কিছু উদ্ধার করা যায়।

স্টুয়ার্টও ভালো করেই বুঝল–এই ছোট্ট স্কিমের জন্য তাকে কতটা কাঠ খড় পোড়াতে হবে। বানজের সামনে খরচের হিসাব চাওয়া এবং পরবর্তীতে পুষিয়ে দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন ছিল মেলোর একটা ন্যায়পরায়ণতা, কিন্তু এর জন্য যে তাকেই এর মাশুল দিতে হবে–এমন অভিপ্রায় নিশ্চয়ই ছিল না তার। সঙ্কটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ম্যারিয়নের সাথে, যদি বানজের সাথে ঘটত, তবে নিঃসন্দেহে রুষ্ট আচরণ করত মেলো।

মুভি ওয়ার্ল্ডে স্টুয়ার্ট মেলোও একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি। ম্যারিয়নকে তোয়াজ করে চলার মতো লোক সে নয়। হলিউডে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাঁচ-পাঁচটি এ ক্লাস পরিচালক। তারা শুধু ব্যাংকেবল স্টারই নয়, অত্যন্ত শক্তিশালীও। এদের মধ্যে রয়েছে দুজন ব্যাংকেবল পুরুষ তারকা ও একজন নারী— অ্যাথেনা। আর এমন স্টার থাকার অর্থ সে যে কোনো সময় যে কোনো ছবির জন্য সবুজ সংকেতের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু নেপথ্যে যার এত ক্ষমতা, সে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই যাচ্ছে ম্যারিয়নের প্রতি। ম্যারিয়নের ক্ষুব্ধতায় সেও প্রতিউত্তর দেয়নি। আর এমন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করার কারণেই সে ধীরে ধীরে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে।

মেলো স্টুয়ার্টের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার বিচক্ষণতা। সে যা দেবে তা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাস আছে অ্যাথেনার মেধার প্রতি দশ বছর আগেও, অ্যাথেনা যখন এ জগতে অপরিচিত মুখ, তখনও তার বিশ্বাস ছিল অ্যাথেনার মেধায়। এখনও আছে আগের মতোই। তবে কিভাবে তার মনোভাব পরিবর্তন করে ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসবে? মেলোর মন বলছে– নিশ্চিতভাবেই অ্যাথেনা কোনো বিশেষ সমস্যার মধ্যে আছে। আরো এই সমস্যার জন্য তার মতো মেধাবীকে শেষ হতে দেয়া যায় না।

এখানে অর্থের কোনো বিষয় নয়, স্টুয়ার্টের কণ্ঠে প্রচণ্ড ভাবাবেগ ফুটে উঠল। সে নিজেই উপলব্ধি করল তার বিচক্ষণতার উল্লাস। বলল, তোমরা অ্যাথেনাকে অতিরিক্ত এক মিলিয়নের প্রস্তাব দাও। আমার মনে হয় সে আর ফিরে যাবে না। তোমাদের অবশ্যই সেই দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিত তথাকথিত স্বামী সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

স্টুয়ার্ট মেলোর কথাগুলো যেন অমঙ্গলসূচক বার্তা বয়ে আনল- সারা ঘরে পিনপতন নীরবতা। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল মেলোর কথাগুলো। যেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে আরো কিছু অর্থের বিনিয়োগ। এটাই কি তাহলে অ্যাথেনাকে আটকানোর প্রারম্ভিক গোজ?

স্কিপি ডিরি বলল, সে টাকা চায় না।

ডিটা টমি গজগজ করে উঠল। স্টুয়ার্টের প্রতি ডিটার মোটেও আস্থা নেই। বিশ্বাসও করে না তাকে। তবে এই অর্থ তো আর তার পকেট থেকে যাচ্ছে না। বানজ বিস্ফারিত চোখে তাকাল স্টুয়ার্টের দিকে। কিন্তু স্টুয়ার্ট সূক্ষ্ম দৃষ্টি হেনে যাচ্ছিল ম্যারিয়নের ওপর। অত্যন্ত শীতল চোখে তাকিয়ে ছিল স্টুয়ার্ট।

স্টুয়ার্টের যুক্তিকে যথাযথ মনে করলেন ম্যারিয়ন। তার বিশ্লেষণে স্টুয়ার্টকে সঠিক বলেই মনে হলো। কিন্তু অ্যাথেনা কি ফিরে আসবে? টাকার জন্য অ্যাথেনা ফিরে আসবে না। ট্যালেন্টরা খুব বেশি চালাক হয় না। ম্যারিয়ন সভার এখানেই সমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিলেন।

তিনি বললেন, মেলো, খুব সতকর্তার সাথে তুমি তোমার ক্লায়েন্টের কাছে ব্যাখ্যা দেবে। এতে যদি সে এক মাস সময়ের মধ্যেও ফিরে না আসে তবে স্টুডিও এ ছবি বাতিল করবে। তারপর সে যা এ পর্যন্ত অর্জন করেছে তার সব কিছু আমরা কেড়ে নেব। সে অবশ্যই অবগত আছে যে, এরপর সে আমেরিকার কোনো বড় স্টুডিওতে কাজ করতে পারবে না।

কথাগুলো বলেই টেবিল ঘিরে বসে থাকা অতিথিদের দিকে তাকিয়ে রক্তশূন্য হাসি হাসলেন। বললেন, যা গেল, তা মাত্র পঞ্চাশ মিলিয়ন।

উপস্থিত সবাই বুঝতে পারল ম্যারিয়ন এ বিষয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং নিশ্চিতভাবেই এ ছবি আর হবে না। তবে ডিটা টমি ম্যারিয়নের এমন মন্তব্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। একটি ছবিকে টমি অন্য সবার চেয়ে আলাদা চোখে দেখে থাকে। তার কাছে একটি ছবি তার সন্তানের মতো। ছবিটি যদি সফল হতো তবে টমিও ব্যাংকেবল পরিচালকদের সারিতে উঠে আসত।

টমি বলল, ক্লডিয়া ডি লিনাকেই এই প্রস্তাবের জন্য পাঠানো সমীচীন হবে। ক্লডিয়া অ্যাথেনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম।

ববি বানজ অনিশ্চয়তার সুরে বলল, আমি বুঝতে পারছি না আসলে আমাদেরকে কোন চুলোয় যেতে হচ্ছে। একজন স্টার সবাইকে লাইনচ্যুত করে ফেলেছে। তার সাথে আবার লেখকের বন্ধুত্ব! ফাকিং স্টার! শ্লেষ ঝাড়ল বানজ।

একথায় ম্যারিয়ন আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। ববি, এমন একটি বাণিজ্যিক সভায় অপ্রাসঙ্গিক কথা কখনো বলবে না। ক্লডিয়াকে তার সাথে কথা বলতে দাও। তবে এটাকে এক রকম মুড়েই রাখো। আমাদের অন্য ছবির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

কিন্তু পরের দিন লডস্টোন স্টুডিওর নামে একটি পাঁচ মিলিয়ন ডলারের চেক এসে পৌঁছল। চেকটি পাঠিয়েছে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। ম্যাসেলিনাতে অভিনয়ের জন্য অ্যাথেনা যে অর্থ অগ্রিম নিয়েছিল তা সে ফেরত পাঠিয়েছে।

এখন ব্যাপারটি সম্পূর্ণ চলে গেল লয়ারদের হাতে।

.

পশ্চিম উপকূলের স্বনামখ্যাত নিরাপত্তা সংস্থা প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটি কোম্পানি। মাত্র পনেরো বছরে এন্ড্রিও পোলার্ড সংস্থাটি গড়ে তুলছেন। তার কর্মজীবনের শুরু হয় একটি হোটেলের সুইটে। সেই থেকে পোলার্ড এখন সান্তা মনিকায় চার তলা ভবনের মালিক। সেখানে তার রয়েছে পঞ্চাশ জন হেড কোয়ার্টার স্টাফ। এছাড়াও প্রায় পাঁচশ জনের মতো ইনভেস্টিগেটর ও গার্ড যারা যে কোনো কন্ট্রাক্টের সহযোগী– তাদেরকে ফ্রি-লান্স স্টাফ হিসেবে গণ্য করা হয়। আরো রয়েছে একদল ভাসমান রিজার্ভ গ্রুপ। এরা বছরের বিশেষ শুভ অংশে এন্ড্রিও পোলার্ডের জন্য কাজ করে থাকে।

প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটি সংস্থাটি এর সার্ভিসের জন্য বিখ্যাত এবং যথেষ্ট ব্যয়বহুল। কর্ণধারদের বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তা বিধানে সংস্থা রীতিমতো সশস্ত্র রক্ষী ও সাথে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসেরও যোগান দিয়ে থাকে। প্রযোজক ও তারকা শিল্পীদের জন্য এদের আছে দক্ষ দেহরক্ষীর ইউনিট। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কিংবা বড় কোনো ফ্যাস্টিভেলের উচ্ছল জনতার ঢল নিয়ন্ত্রণে আনতে অত্যন্ত শক্তিশালী ইউনিফর্ম কর্মীরও সরবরাহ দিয়ে থাকে। এছাড়া ব্ল্যাকমেইলিং কিংবা এ ধরনের সঙ্কট নিরসনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দক্ষদের যোগান দিয়ে তদন্তমূলক কাজের সুষ্ঠু সমাধার ক্ষেত্রেও সংস্থাটির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।

এন্ড্রিও পোলার্ডের এত সুখ্যাতির কারণ সে যে কোনো দায়িত্ব পালনে নিখুঁত এবং তার কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণমূলক। তার কোনো ধনী ক্লায়েন্টের বাড়িতে নিরাপত্তা বিধানে সে প্রথমেই যেটা করবে তা হলো– আর্মড রিসপন্স সাইন মাটিতে বসিয়ে দেবে। এতে রাতের আঁধারে কোনো অস্ত্রবহনকারী গুপ্তঘাতক এলে মাটিতে পেতে রাখা ডিভাইসগুলো সাথে সাথে রঙিন আলো জ্বেলে সিগন্যাল দিতে থাকবে। এছাড়া ম্যানশনে ওয়াল ঘিরে নিরাপত্তারক্ষীদের টহল তো থাকবেই।

পোলার্ড তার কর্মীদের যথেষ্ট ভাতা দিয়ে থাকে। এর কারণ তাদের জীবন সবসময় হুমকির মুখে। যে কোনো ঘাতকের আক্রমণে তার কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মৃত্যুর আশঙ্কাও অমূলক নয়। তবে তার ক্লায়েন্টরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ক্ষমতাবান ও অর্থ সম্পদের মালিক। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করার সুবিধাও সে চতুরতার সাথে আদায় করে নেয়। এক্ষেত্রে তাকে পুলিশের সাথেও সদ্ভাব গড়ে নিতে হয়েছে। ডিপার্টমেন্টের একেবারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নমান পুলিশের সাথেও তার ও তার সংস্থার রয়েছে ভালো সম্পর্ক-আর এখানেই তার শতভাগ কৃতিত্ব।

এন্ড্রিও পোলার্ডের লস অ্যাঞ্জেলেসের খ্যাতিমান গোয়েন্দা জিম লুজির সাথেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে–তাদের সম্পর্কটা ব্যবসায়িক। একে-অপরের পরিপূরক হিসেবেও বিবেচিত। জিম লুজি প্রকৃতই একজন গোয়েন্দা হিরো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-ক্লেরিকুজিও পরিবারের মদদপুষ্ট।

পনেরো বছর আগের কথা। তখন পোলার্ড ছিল একজন সামান্য পুলিশ কর্মকর্তা— খুব স্বাভাবিকভাবেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার অসচেতনতা ছিলই। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের চক্রান্তেও পড়তে হয়েছিল তাকে। পোলার্ডের অপরাধ খুব বড় ছিল না তবে তা একেবারে উপেক্ষা করার উপায়ও ছিল না। যে ঘটনাটি তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল পোলার্ড তা সরাসরি অস্বীকার করে। তবে বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন বসকে না জানানোটা ছিল একটা বড় ভুল। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্ত খবরাখবর জানত ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি। পোলার্ডের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তারা। আইনজীবী নিযুক্ত হয়। মোটকথা ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে, অবশেষে এন্ড্রিও পোলার্ড রক্ষা পায় নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের নিশ্চিত পানিশমেন্টের হাত থেকে। তবে সে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়।

নিউইয়র্ক সিটি থেকে পোলার্ড তার স্ত্রী ও শিশুসহ চলে আসে লস অ্যাঞ্জেলেসে। আজকের এই বিশাল প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পেছনে শতভাগ অবদান ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির। লস অ্যাঞ্জেলেসে আসার পর ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি তাকে এই প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য অর্থ সহযোগিতা দিয়েছিল– সহযোগিতা করেছিল পুঙ্খানুপুঙ্খ। সেই সাথে সাবধানও করে দিয়েছিল এই বলে যে, তার ক্লায়েন্টরা যেন তার সংস্থার লোকদের কাছে কখনো উৎপীড়নের শিকার না হয়। তাদের বাড়ি-ঘরে চৌৰ্য্য বৃত্তির ঘটনা যেন না ঘটে, সংস্থার কারণে তাদের ক্লায়েন্টরা যেন বিপদগ্রস্ত বা ফাঁদে না পড়ে। কোনো রকমের জুয়েলারি বা অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও যাতে না ঘটে। নিরাপত্তাজনিত কারণে যদি ক্লায়েন্টের অগোচরে সেসব সরাতেও হয়, তবে তা যেন আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়। ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির এমন সতর্কতামূলক শর্ত আরোপের কারণ— যে আর্মড রিসপন্স সাইন সংস্থা অপরাধীদের জন্য পেতে রাখবে, তাতে যেন তারা নিজেরাই আটকে না পড়ে। অর্থাৎ রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তবে সংস্থাটির অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটবে।

ম্যাজিকের ছোঁয়ায় যেন সফলতা পেয়েছিল এন্ড্রিও পোলার্ড। ক্লেরিকুজিও’র শর্তের কখনো লঙ্ঘন হয়নি। ক্লায়েন্টদের নিরাপত্তা রক্ষা ছাড়া কখনো তাদের একটি জিনিসও স্পর্শ করেনি পোলার্ডের লোকরা। তার সংস্থার দেহরক্ষীরা এফবিআইয়ের মতো উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাই কোম্পানির বিরুদ্ধে কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্যও করেনি কানো ক্লায়েন্ট। তার সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের কোনো নালিশ নেই, সে শিশুই হোক আর নারী। যা কিছু করেছে সংস্থা, শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য। তবে ব্ল্যাকমেইল কিংবা গুপ্তচরবৃত্তির মতো কিছু অভিযোগ এসেছিল ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সেসব যথাযথ শুরুত্বের সাথে পরখ করা হয়েছে–অপরাধীকে দেয়া হয়েছে শাস্তি। মোটের ওপর পোলার্ড ছিল সর্বদা নিষ্কণ্টক, পরিচ্ছন্ন।

এদিকে পোলার্ডের কোম্পানির কাছে ছিল বিভিন্ন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বৃত্তান্ত। এগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো। তবে তা সর্বদা গোপন রাখা হতো। কেবল একটি ক্ষেত্রে এসব সংরক্ষিত ডাটার গোপনীয়তা লঙ্ঘন হতো। আর সেটি ক্লেরিকুজিও’র ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ক্লেরিকুজিও’র কাছেই এসব ডাটা সরবরাহ করার নিয়ম ছিল। পোলার্ডের ক্লেরিকৃজিও ফ্যামিলির কাছে পোলার্ড ছিল অতিমাত্রায় কৃতজ্ঞ। যদি কেউ তার কাছে চাকরির জন্য আসত, পোলার্ড সরাসরি ক্লেরিকুজিও’র পশ্চিমাঞ্চলীয় ব্ৰুগলিওনের কাছে তাদের বৃত্তান্ত ও দরখাস্ত পাঠিয়ে দিত। সেখানকার অনুমোদনের পর শক্তিশালী অস্ত্রসহ তাদের নিয়োগ দেয়া হতো।

একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের পরদিন এন্ড্রিও পোলার্ডের ডাক পড়ল ববি বানজের অফিসে।

বজ স্কানেটের চরিত্রের সব তথ্য উঘাটনের দায়িত্ব আমি তোমাকে দিতে চাই, বানজ পোলার্ডের উদ্দেশে বলল। আমি অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের ব্যাক গ্রাউন্ডও জানতে চাই। একজন বড় তারকা হিসেবে তার সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্যই আমাদের কাছে আছে। আর বজ স্কানেটের সাথে একটি চুক্তির পরিকল্পনা করছি আমরা। আসলে আমরা চাই আগামী তিন থেকে ছয় মাস অ্যাথেনা আমাদের স্টুডিওর ছবিতে নির্বিঘ্নে কাজ করুক। এ সময়টায় যাতে স্কানেট অ্যাথেনার কাছ থেকে দূরে থাকে, সে চেষ্টাই চালাব আমরা তার সাথে চুক্তি করে। এর জন্য, প্রথমে প্রতি মাসে কুড়ি গ্রান্ডের অফার করবে, তবে তুমি সর্বোচ্চ একশ পর্যন্ত যেতে পারো।

কিন্তু এর পরেও যদি সে কিছু চায়? কণ্ঠে সন্দেহের সুর তুলে বলল পোলার্ড।

এর পরের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের, বানজ বলল প্রতিউত্তরে। তোমাকে কিন্তু খুব সতর্ক থাকতে হবে এন্ড্রিও। অত্যন্ত ক্ষমতাবান পরিবারের লোক সে। মনে রেখো, মুভি ইন্ডাস্ট্রির ওপর যেন কোনো রকমের আঁচ না লাগে। তাহলে ছবি তো ধ্বংস হবেই, স্টুডিও-ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একটু থামল বানজ। এরপর বলল, আমরা অ্যাথেনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তোমার সংস্থাকে ব্যবহার করতে চাই।

পোলার্ডের পাল্টা প্রশ্ন, যদি স্কানেট তোমাদের সাথে চুক্তিতে সম্মত না হয়…?

তাহলে অ্যাথেনার দিবা-রাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে তোমার। ছবির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এ দায়িত্ব পালন করে যাবে। বলল বানজ।

ঠিক আছে, আমি স্কানেটের ওপর খুব সামান্যই চাপ প্রয়োগ করব, পোলার্ড বলল। তবে অবশ্যই তা বৈধ উপায়েই। তাকে কোনো বিষয়ে উপদেশও দেব না।

বানজ বলল, খুব উপরের স্তর পর্যন্ত তার যোগাযোগ আছে। পুলিশ বিভাগ তাকে একটু বাঁকা চোখেই দেখে। এমন কি জিম লুজিও তাকে ঘাঁটতে চায় না। তার মানে এই নয় যে, তুমি তার সাথে একেবারে ফুলের মতো আচরণ করো, কিন্তু…।

পোলার্ড যা বোঝার বুঝে গেল। অর্থাৎ একজনকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে বেড়াতে হবে, অবশ্য এজন্য তার চাহিদার প্রতি নজরও দেয়া হবে।

পোলার্ড বলল, আমার সেই চুক্তিটি প্রয়োজন।

বানজ তার ডেস্কের ড্রয়ার খুলে একটি খাম বের করল। তারপর পোলার্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে তিনটি কপি আছে। তাকে সবগুলোতে স্বাক্ষর করতে হবে। আর এর বিনিময়ে ডাউন-পেমেন্ট হিসেবে আছে পঞ্চাশ হাজার ডলারের একটি চেক। চুক্তির জন্য ডলারের পরিমাণ উন্মুক্তই রাখা হলো। শুধু সে চুক্তিতে সম্মত হলেই তুমি এই ফরমগুলো পূরণ করবে।

পোলার্ড চুক্তিপত্রের খামটি নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো। পিছু ডাকল বানজ, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের দিন তোমার লোকেরা নিষ্ক্রিয় ছিল। তারা তাদের অথর্ব পাগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল।

পোলার্ড বানজের বিরোধিতা করল না। কারণ বানজকে সে চেনে ভালোভাবেই। শুধু বলল, তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নিযুক্ত গার্ড ছিল চিন্তা করো না, মিস অ্যাকুইটেনের জন্য আমি সর্বোচ্চ ক্রু নিয়োগ করব।

মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটির কম্পিউটারে বজ স্কানেটের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ হয়ে গেল। স্কানেটের বয়স চৌত্রিশ বছর। টেক্সাস-এ অ্যান্ড এম থেকে গ্র্যাজুয়েট। সেখানকার অল-স্টার নামে একটি দলের পৃষ্ঠপোষক এবং একটিমাত্র মৌসুমে ফুটবলের প্রফেসনাল খেলোয়াড়। হাস্টনে তার বাবার রয়েছে একটি ব্যাংক। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তার এক চাচা টেক্সাসে রিপাবলিকান দলের প্রধান। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্টের সাথেও তার চাচার রয়েছে খুব আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সব মিলিয়ে তারা অঢেল অর্থের মালিক।

বাবার ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদবিপ্রাপ্ত হওয়ার সুবাদে তেল ইজারা বিষয়ক এক কেলেঙ্কারি থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যায় স্কানেট। বিভিন্ন মার দাঙ্গা গুণ্ডামির জন্য তাকে এ পর্যন্ত ছয়বার অ্যারেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে একবার স্কানেট দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এমনভাবে পিটিয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এসব ঘটনার জন্য তাকে কখনো আদালতে যেতে হয়নি। কারণ ঘটনার পর পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুষিয়ে দিয়েছে। তার ছয়টি গ্রেফতারের মধ্যে একটি ছিল যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত।

স্কানেটের এই উচ্ছল জীবন ছিল অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে বিয়ে করার আগে। অ্যাথেনার সাথে বিয়ের পর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি– অন্তত বিয়ের এক বছরে তাদের কন্যা সন্তান ব্যাথেনি জন্মের কয়েক মাস পর্যন্ত। অ্যাথেনা তার কুড়ি বছর বয়সে কন্যা সন্তান ব্যাথেনিকে নিয়ে স্কানেটের ঘর ছেড়ে চলে আসে।

স্কানেট সম্পর্কিত এই তথ্যগুলো ছবির মতো স্পষ্ট হয়ে গেল এড়িও পোলার্ডের কাছে। খুব খারাপ মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত হলো স্কানেট, পোলার্ডের চোখেও! পোলার্ডের দৃষ্টিতে স্কানেক্ট এমন একজন মানুষ যে দশ বছর ধরে অ্যাথেনার ওপর হিংসা-বিদ্বেষ মনে মনে পোষণ করে আসছে। এমনই এক মানুষ যে সশস্ত্র পুলিশকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এই ধরনের মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। তাকে অর্থ দিয়ে, চুক্তি সই করিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা এতই কি সহজ?

জিম লুজির শরনাপন্ন হলো পোলার্ড। লস অ্যাঞ্জেলেসে লুজি আগে স্কানেটের কেস নিয়ে কাজ করেছে। লুজি ও পোলার্ডের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আছে যথেষ্ট, আর তাদের মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট কাজের সম্পর্ক। প্রত্যেক ক্রিসমাসে লুজি একটি হ্যান্ডসাম উপহার পেয়ে থাকে পোলার্ডের প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটি থেকে। যেহেতু তারা একে-অপরের পরিপূরক, পোলার্ড সেই সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চায়। স্কানেটের ওপর চলমান মামলা ও তার ব্যক্তিগত জীবনের আরো বিস্তারিত জানতে চায় পোলার্ড।

জিমের উদ্দেশে পেপালার্ড বলল, বজ স্কানেটের বিস্তারিত তথ্য তুমি কি আমাকে দিতে পারবে? তার লস অ্যাঞ্জেলেসের ঠিকানাও আমার প্রয়োজন এবং আমি তার সম্পর্কে আরো জানতে চাই।

অবশ্যই, লুজির প্রতিউত্তর। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। তুমি কেন এ বিষয়ে এগুচ্ছ?

প্রতিরক্ষার দায়িত্ব, পোলার্ডের বিস্মিত উত্তর, কি ভয়াবহ এই লোকটি?

সে মারাত্মক ধরনের উচ্ছল, জিম বলল। তোমার দেহরক্ষীদের বলে দিও, সে কাছাকাছি এলেই যেন তারা গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে।

আর এই অপরাধে তুমি আমাকে অ্যারেস্ট করো আর কি? পোলার্ড রসিকতা করে বলল। এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ।

তা আমি ভালো করেই জানি, লুজিও হাসল। পারলে তা-ই করতাম। তবে তোমার সাথে একটু জোক করলাম আর কি।

সান্তা মনিকায় একটি ছোটখাটো হোটেল ওশেন এভিনিউয়ে উঠেছে বজ স্কানেট। এটিই পোলার্ডের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যালিবু কলোনিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের বাড়ি থেকে ওশেন এভিনিউয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে লাগে মাত্র পনেরো মিনিট।

স্কানেটের হোটেলে আসার আগে পোলার্ড অ্যাথেনার বাড়িতে চার জন গার্ডের একটি দল নিযুক্ত করল। আর স্কানেটের হোটেলে রাখল দুই জনের একটি দল। এরপর সেদিন বিকেলে স্কানেটের সাথে দেখা করতে গেল পোলার্ড।

পোলার্ডের সাথে ছিল আকার-আকৃতিতে বড় ও প্রচণ্ড শক্তিশালী তিন জন রক্ষী। স্কানেট যেমন আকস্মিক পোলার্ডের আগমন হেতু বুঝতে পারেনি, তেমনি পোলার্ডও বুঝতে পারছিল না কি ঘটতে যাচ্ছে।

স্কানেট তাদেরকে তার হোটেলের সুইটে নিয়ে গেল। মিষ্টি হেসে, বিনয়ের সাথে তাদের অভ্যর্থনা জানাল। কিন্তু তাদের আপ্যায়নের জন্য কোনো আগ্রহই দেখাল না সে। পোলার্ডের চোখে স্কানেটের পরিধেয় বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। তার পরনে ছিল শার্ট, টাই এবং জ্যাকেট, মোটের ওপর যেন একজন ব্যাংকার। পোলার্ড নিজের এবং তার তিন দেহরক্ষীর পরিচয় দিল। দেহরক্ষীদের গলায় ঝুলছিল প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটির আই.ডি.।

স্কানেট পোলার্ডের দেহরক্ষীদের দিকে হাস্যকর ভঙ্গিতে তাকাল। তারপর বলল, তোমরা নিশ্চিতভাবেই বেশ বড়-সড়। তবে আমি একশটি ছাগল বিট রেখে বলতে পারি, যদি পক্ষপাতহীন লড়াই হয় তবে তোমাদের এক একজনকে কিক মেরে উড়িয়ে দেব।

উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পোলার্ডের তিন দেহরক্ষী-ই শুধু মুচকি হেসে স্কানেটের কথা মেনে নিল। কিন্তু পোলার্ড বেশ শান্ত হয়ে স্কানেটের বিরোধিতা করল– নিয়ন্ত্রণ করল তার উত্তেজনা।

আমরা এখানে বাণিজ্যিক কারণে এসেছি মি. স্কানেট। পোলার্ড বলল। হুমকির জন্য নয়। লডস্টোন স্টুডিও আপনাকে এই মুহূর্তে পঞ্চাশ হাজার ডলার ডাউন-পে করতে প্রস্তুত আছে, সেই সাথে আগামী আট মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে কুড়ি হাজার ডলার। আর এসব এজন্য যে, আপনাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে ছেড়ে যেতে হবে।

কথাগুলো শেষ করেই পোলার্ড তার ব্রিফকেস থেকে চুক্তিপত্র এবং সবুজ সাদা রঙের একটি ঢাউস চেক স্কানেটের সামনে তুলে ধরল।

স্কানেট চুক্তিপত্রটিতে মনোযোগর সাথে চোখ বুলাল। বলল, নগণ্য একটি চুক্তি। এর জন্য আমার আইনজীবীরও প্রয়োজন নেই। ডলারের পরিমাণটাও একই সাথে নগণ্য। আমি আশা করছি একশ গ্র্যান্ড ডাউন পেমেন্ট আর প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার।

অনেক হয়েছে, পোলার্ড বলল, আপনাকে দমিয়ে রাখার জন্য আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশ আছে। অ্যাথেনার ইচ্ছে থাকলে আপনার জেলও হতে পারে। অ্যাথেনাকে ঘিরে চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের প্রহরা থাকবে। সেই সাথে আপনার দৈনন্দিন যে কোনো কর্মকাণ্ডের সার্বক্ষণিক খবর রাখবে আমাদের বিশেষ নিরীক্ষণ দল। আর তাই, এই বরাদ্দকৃত অর্থই আপনার জন্য উপযুক্ত।

স্কানেট বলল, আমার তো খুব শিগগিরই ক্যালিফোর্নিয়ায় আসা উচিত। এর সড়কগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো। তবে আমাকে আপনারা কেন এত কিছু দিতে চাচ্ছেন?

স্টুডিও মিস অ্যাকুইটেনের নিশ্চয়তা চায়। পোলার্ডের প্রতিউত্তর।

সে আসলেই একজন বড়… একজন স্টার, উদাস মনে হলো স্কানেটকে। একটু থেমে আবার বলল, ঠিক আছে, সে সব সময়ই স্পেশাল। এবার পরিবর্তন হলো স্কানেট। আবারো সেই উচ্ছলপনা উক্তিতে সে বলল, আমার মনে আছে আমি প্রতিদিন তার সাথে পাঁচ বার মিলিত হতাম।

এবার তিন দেহরক্ষীর দিকে হাস্যকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্কানেট বলল, সে এক্ষেত্রেও ছিল বেশ চালাক।

বিস্মিত পোলার্ড কৌতূহলী দৃষ্টি হেনে তাকিয়ে থাকল স্কানেটের দিকে। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম এবং মালবোরো সিগারেটের বিজ্ঞাপন মডেলের মতো তার শরীর। মার্লবোরো মডেলের সাথে তার পার্থক্য কেবল শরীরের রঙে। স্কানেটের ত্বক লালচে এবং উজ্জ্বল। মদপায়ী এবং বিশাল বপুর অধিকারী।

দক্ষিণাদের মতো স্কানেট টেনে টেনে খুব প্রাণবন্ত স্বরে কথা বলে– বিষয়টি একদিকে যেমন মানবীয় অন্যদিকে তেমনই বিপজ্জনক। বহু নারীই এমন মানুষের প্রেমে পড়ে যায়। নিউইয়র্কে অবশ্য স্কানেটের মতো দেখতে বেশ কিছু পুলিশ আছে, যাদেরকে দস্যু হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। কোনো খুনের মামলায় যদি তাদের তদন্তের জন্য পাঠানো হয়, তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা স্বামীহারা নারীদের সান্তনা দিয়ে ফিরে আসত। জিম লুজিও এমনই এক কর্মকর্তা। পোলার্ডের অক্ষেপ যে, সে তাদের মতো ভাগ্যবান নয়।

আসুন আমরা আমাদের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করি। পোলার্ড বলল। স্কানেটকে দিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরই পোলার্ডের মূল উদ্দেশ্য। পোলার্ড চেকটি তার সামনে রাখল।

স্কানেট টেবিলের এক কোনায় বসে ছিল। আপনার কাছে কি একটি কলম ধার পেতে পারি?

পোলার্ড তার ব্রিফকেস থেকে কলম বের করে চুক্তিপত্রে প্রতি মাসে কুড়ি হাজার সংখ্যাটি লিখে ফেলল। এরপর স্কানেট উল্লসিত হয়ে বলল, এর মানে। আশি আরো বেশি পেতে পারি। চুক্তিপত্রের তিনটি কপিতেই স্বাক্ষর করল স্কানেট।

বলল, আমাকে ঠিক কখন লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়তে হবে?

আজ রাতেই, পোলার্ড জানিয়ে দিল। আমি আপনাকে আপনার প্লেন ধরিয়ে দেব।

না তার আর দরকার হবে না, ধন্যবাদ। স্কানেটের অস্বীকার। আমি ভাবছি আমি নিজেই ড্রাইভ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যাব। আর এই চেক দিয়ে জুয়ার দান মারব।

পোলার্ড বলল, তা আমার লক্ষ্য থাকবে। কিন্তু এখন তার মনে হলো স্কানেটকে তার শক্তি ও প্রভাব দেখানোর প্রয়োজন। পোলার্ড সতর্ক করে দিল, আমি আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই, লস অ্যাঞ্জেলেসে যদি আপনাকে কখনো দেখা যায় তবে অবশ্যই অ্যারেস্ট করা হবে এবং টাকা আদায় করা হবে।

স্কানেটের লাল মুখ উচ্ছলিত হয়ে উঠল। বলল, আমি সেটাই পছন্দ করব। আমিও অ্যাথেনার মতো বিখ্যাত হতে চাই।

সেই রাতে পোলার্ডের নিরীক্ষণ দল রিপোর্ট করল–বজ স্কানেট ওশেন এভিনিউ ছাড়লেও বেভারলি হিলস হোটেলে গিয়ে উঠেছিল। সেখানে সে পঞ্চাশ হাজার ডলারের চেকটি দি ব্যাংক অব আমেরিকার একটি অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করেছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে পোলার্ড নিশ্চিত হলো যে, স্কানেটের ওপর কিছুটা হলেও তার প্রভাব পড়েছে।

পোলার্ড এই তথ্যগুলো রিপোর্ট আকারে ববি বানজের কাছে পাঠাল এবং পরবর্তী নির্দেশনার আহ্বান জানাল। এ বিষয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য না করার নির্দেশ দিল বানজ। এরপর স্কানেটের স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রটি অ্যাথেনার কাছে পাঠানো হলো। স্টুডিওতে আবারো অ্যাথেনার ফিরে আসার নিশ্চয়তা দিতে যে এমন কৌশলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা বোঝাতেই এই চুক্তিপত্রের প্রদর্শন। কিন্তু চুক্তিপত্রটি দেখে যে অ্যাথেনা হেসেছিল তা বানজ ও পোলার্ড কেউ বুঝেনি।

পোলার্ড বলল, তুমি চেকটি বাতিল করে ফেলতে পারো।

না, বানজের নেতিবাচক জবাব। সে ক্যাশ ভাঙবে আর সাথে সাথেই আমরা তাকে জালিয়াতির মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। আমি শুধু চাই অ্যাথেনা যেন না জানুক যে স্কানেট এ শহরেই আছে।

অ্যাথেনার জন্য আমি ডাবল-সিকিউরিটি বসাব। পোলার্ড বলল। যদি সে উচ্ছল হয়ে ওঠে এবং সত্যিই যদি তার ক্ষতি করতে চায়, তবে কোনোভাবেই তাকে আটকানো যাবে না।

স্কানেট একজন প্রতারক। বানজ বলল, তার এমন ঘটনা প্রথম নয়। এত কিছুর পরেও সে এই প্রতারণা করল কেন?

আমি তোমাকে বলছি কেন। পোলার্ড বলল। আমরা তার কক্ষে চুপিসারে ঢুকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। জানো কি পেয়েছি। একটি কন্টেইনার ভর্তি অ্যাসিড।

ওহ শিট, বানজ প্রায় আঁৎকে উঠল। বলল, বিষয়টি কি পুলিশকে জানানো যায় না? অন্তত জিম লুজিকে তো জানানো যায়।

পোলার্ড বলল, এসিড রাখা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ নয়। বরং চুপিসারে তার কক্ষে প্রবেশটাই অপরাধের বিষয়টি প্রকাশ পেলে স্কানেট আমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে।

তুমি কখনো কিছু বলেনি আমাকে, বনজ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। আমরা কখনো এসব আলোচনা করিনি এবং তুমি যা জানো, সব ভুলে যাও।

অবশ্যই, মি, বানজ পোলার্ড আশ্বাস দিল। এবং, আমি এর জন্য তোমার কাছে কোনো বিলও দাখিল করিনি।

অসংখ্য ধন্যবাদ, যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বানজ। তবে আমার সাথেই থেকো দয়া করে।

স্কিপি ডিরির কাছ থেকে ক্লডিয়া ধারণা নিচ্ছিল। ছবিতে প্রযোজক ও লেখকের পাণ্ডুলিপি থেকে পরিচালক যেমন নিখুঁত অভিনয়ের জন্য দৃশ্যপট বুঝিয়ে দেয় ক্লডিয়াকে ঠিক সেভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছিল ডিরি।

ডিরি বলল, অ্যাথেনাকে খুব আন্তরিকভাবে তোমার চুমু দিতে হবে। তুমি হবে তার কাছে একেবারেই নত। প্রয়োজনে তোমাকে কাঁদতে হবে, তুমি নার্ভাস হয়ে ভেঙে পড়বে। তুমি তার জন্য যা করেছ তা মনে করিয়ে দেবে। মনে করিয়ে দেবে তুমি তার কত অন্তরঙ্গ একজন সত্যিকারের বন্ধু এবং একই পেশার কর্মী। তোমাকে এ ছবির জন্য অ্যাথেনাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।

ক্লডিয়া স্কিপিকে প্রশ্ন করল, কিন্তু এর জন্য আমাকেই কেন? শান্ত ও প্রশ্রয়ের কণ্ঠে আরো বলল, তুমি হচ্ছ একজন প্রযোজক, ডিটা একজন পরিচালক, লডস্টোনের প্রেসিডেন্ট বানজ– তোমরা তাকেচুমু দাও গিয়ে। এসব ক্ষেত্রে আমার চেয়ে তোমরা ঢের বেশি অভিজ্ঞ।

তুমি যাবে কারণ লেখাটা তুমি এমনভাবে লিখেছ যে, অ্যাথেনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। বলল ডিরি, এই চিত্রনাট্যের জন্য তুমি নিয়েছ আমাকে, নিয়েছ অ্যাথেনাকে। এ অবস্থায় যদি প্রজেক্টটি ব্যর্থ হয় তবে সেই ব্যর্থতার সাথে সর্বদা তোমার নামও উঠে আসবে।

ডিরি চলে গেল কিন্তু তার কথাগুলো বেজেই চলেছিল ক্লডিয়ার মস্তিষ্কে। ক্লডিয়া জানে ডিরির কথাগুলোই ঠিক। তবে এলোমেলো বেপরোয়া হয়ে উঠছিল যেন তার মন। এমন অবস্থায়, সে প্রায়ই যা-কবে তাই করল ক্লডিয়ার ভাই ক্রসের কথা ভাবল। ক্রসই হচ্ছে একমাত্র লোক যে তাকে এমন সমস্যার সমাধান দিতে পারে। অ্যাথেনার প্রতি বজের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব দূর করতে প্রয়োজন কেবল ক্রসের সহযোগিতা এতটাই বিশ্বাস ক্লডিয়ার তার ভাইয়ের প্রতি।

অ্যাথেনার সাথে সম্পর্ককে বাণিজ্যিক করে ভোলাটা ক্লডিয়া কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না– ঘৃণার চোখে দেখছে সে। তাছাড়া অ্যাথেনা তাকে নাকচ করে দিতে পারে। কিন্তু ক্রস তাকে সাহায্য করতে অবশ্যই এগিয়ে আসবে– সে বিশ্বাস ক্লডিয়ার আছে।

ক্লডিয়া ভেগাসে জানাদু হোটেলে ফোন করল। তবে সে সেখান থেকে জানতে পারল ক্রস সম্ভবত কুওগে রয়েছে। পরের দিন হয়তো সে ফিরে আসবে।

জানাদু হোটেলে থেকে এই ব্যর্থতার পর তার মনের পর্দায় ভেসে উঠল সেই শিশুকাল। অথচ সবসময় ক্লডিয়া তা ভুলে থাকতে চায়। কুওগে ক্লডিয়া কখনোই তার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করত না। ক্লেরিকুজিও পরিবারের সাথে কোনোরকম স্বেচ্ছাসেবী কর্মকর্মেও সে নিজেকে জড়াতে চায় না। এমনকি কুওগে তার ছেলেবেলার স্মৃতিটুকুও মুছে ফেলতে চায়। কখনোই মনে করতে চায় না তার বাবার কথা অথবা কোনো ক্লেরিকুজিও’র কথা।

০৩. রিকুজিও অ্যান্ড পিপি ডি লিনা

পর্ব–২

দ্য ক্লেরিকুজিও অ্যান্ড পিপি ডি লিনা

০৩.

ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির দুর্দান্ত উত্থান ঘটে সিসিলিতে। এ উত্থানের ইতিধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে শত বর্ষেরও বেশি সময়। আর এই দীর্ঘ সময়ে প্রথমার্ধের প্রায় কুড়িটি বছর কেটেছে কেবল যুদ্ধে আর যুদ্ধে। একটি বনের সামান্য একটি অংশের অধিকার নিতে ক্লেরিকুজিও হারিয়েছে তার অসংখ্য লোক। তেমনি অপর প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষও খুইয়েছে তাদের আপনজন, ভালোবাসার মানুষ।

ক্লেরিকুজিও উত্থানের পরবর্তী সময়ের ঘটনা। প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন ডন পিয়েত্রো ফোরলেঞ্জার। ক্লেরিকুজিও গোষ্ঠীর সাথে দীর্ঘ বিবাদ ফ্যাসাদের মধ্য দিয়ে ফোরলেঞ্জার পঁচাশিটি বছর অতিবাহিত হয়। এ বয়সে এসে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সময় তার শেষ হয়ে এসেছিল। চিকিৎসকও তার জীবনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বড়জোর এক সপ্তাহ বাঁচবেন তিনি। এক সময়ের প্রচণ্ড দাপটে ফোরলেঞ্জার শেষ দিনগুলো কাটবে কেবল বিছানায় শুয়ে থেকে তাও আবার চিকিৎসকের বেঁধে দেয়া সময়ের প্রহর গুনতে গুনতে। অসহায়ের মতো শুধু স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো ছাড়া কিই বা করার আছে তার?

কিন্তু এক সপ্তাহ অর্থাৎ সাতটি দিনও যেন অনেক বেশি মনে হলো প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লেরিকুজিও’র লোকজনের। ফোরলেঞ্জার অসহায়ত্বের সুযোগ নিল তারা। আকস্মিক ক্লেরিকুজি ওর লোক তার শয্যাকক্ষে প্রবেশ করে ফোরলেঞ্জাকে আতঙ্কিত করে তুলল। তারপর আঘাতের পর আঘাত করে নির্মম মৃত্যু উপহার দিল। এ সময় অসহায় অবস্থা পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ ফোরলেঞ্জা আত্মরক্ষায় কেবল যন্ত্রণাকাতর চিৎকারই দিতে পেরেছিলেন এর বেশি কিছু নয়। তারপর চিরদিনের জন্য বিদায়।

ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও প্রায়ই এই পুরনো গল্পের অবতারণা করতেন। এই হত্যাকাণ্ডকে তিনিও মন থেকে সায় দিতে পারেননি কোনো দিন। তিনি বলতেন, সেকালের হত্যাকাণ্ডের ধরন ছিল অত্যন্ত নির্মম ও বোকার মতো। একথা বলে তিন মূলত বোঝাতে চাইতেন– অসহায়ের ওপর আক্রমণ বা হিংস্রতা সম্পূর্ণরূপে বৃথা-দম্ভ মূল্যহীন বীরত্বের অহং। অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়া কোনো আক্রমণেরই মূল্য নেই- এটা সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও আসলে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তৎকালীন ক্লেরিকুজিওদের এমন বৃথা দম্ভের নীতিই তাদের পতন ঘটিয়েছিল।

ইতালিতে মুসোলিনি ও তার ফ্যাসিবাদী সংগঠনগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় আসার পর তারা বুঝতে পেরেছিলেন সর্বপ্রথম মাফিয়াদেরই ধ্বংস করতে হবে। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে তারা কিছু আইনের পরিবর্তন করেন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী নামিয়ে দেয়া হয়। যার ফলে মাফিয়াদের মেরুদণ্ড নড়বড়ে হয়ে যায়। শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর তুমুল অভিযানে হাজার-হাজার নিরপরাধ মানুষকেও মূল্য দিতে হয়। অনেকেই কারাবরণ করে, আবার মাফিয়াদের সাথে নির্বাসনে যেতে হয় অনেককে, অনেকের মৃত্যুও হয়।

মুসোলিনির কৌশলে ইতালির মাফিয়া সংগঠনগুলোর বিনাশ ঘটলেও একমাত্র ক্লেরিকুজিও গোষ্ঠীটি ফ্যাসিবাদী আইন ও এর সেনা মোতায়েনের বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেনি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তারা শুরু করে প্রচণ্ড বিদ্রোহ। স্থানীয় ফ্যাসিস্ট নেতাদের একে একে হত্যা করতে থাকে, ফ্যাসিস্ট গ্যারিসনে হামলা চালায়। ক্লেরিকুজিওদের এমন তৎপরতাকে আরো প্রবল করে মুসোলিনি। পালামোতে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা তার বোলার হ্যাট ও ছাতা চুরি করে নিয়েছে এই দস্যুরা।

মাফিয়াদের দমন করতে এটি ছিল সে সময় মুসোলিনির অত্যন্ত ফলপ্রসূ রটনা ও একই সাথে অবমাননাকর উক্তি। অবশ্য এর জন্য মুসোলিনি বেশ হাস্যাস্পদ হয়েছিলেন সিসিলিতে, তবে তাদের ধ্বংসের সূত্রপাতও হয়েছিল এ থেকে। এর পরপরই সিসিলি প্রদেশে সশস্ত্র বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এ অভিযান ঠেকাতে ক্লেরিকুজিও গোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক সদস্যের মৃত্যু ঘটে। আরো প্রায় পাঁচশ সদস্য ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী একটি অনুর্বর অঞ্চলে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সে অঞ্চলকে দণ্ডিত অরাধীদের উপনিবেশ পেনাল কলোনি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

সেই অভিযানে প্রচণ্ড ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও বেঁচে যান শক্ত প্রাণের ক্লেরিকুজিও। তার পরিবারের কয়েক সদস্যও একই সাথে রক্ষা পায়। ক্লেরিকুজিও, তার সন্তান ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য আমেরিকায় নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

কিন্তু যে মাফিয়া ডন ক্লেরিকুজিও’র রক্ত ডোমেনিকোর শরীরে সে কি এত সহজে ছাড়তে পারে পরম্পরা? ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও’র রক্তও পূর্বপুরুষের ধারাতেই আত্মপ্রকাশ করল। আমেরিকায় সে গড়ল তার আপন সাম্রাজ্য। পূর্বপুরুষর ঘটনা, ইতিহাস ঘাত-প্রতিঘাতের অভিজ্ঞতায় ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও হলেন আরো ধূর্ত, আরো কৌশলী ও শক্তিশালী। তবে তিনি মনে করতেন, আইন-শৃঙ্খলাহীন রাষ্ট্র সব সময়ই শক্রস্বরূপ, আর এদিক থেকে আমেরিকা তার পছন্দের। তিনি আমেরিকা ভালোবাসেন।

আমেরিকান বিচারকদের উদ্দেশে তিনি একটি প্রবাদ বাক্য প্রায়ই বলতেন। একজন নিরপরাধী ব্যক্তির শাস্তি হওয়ার চেয়ে একশ অপরাধীর মুক্তি দেয়া ভালো। সুন্দরের কাছে আঘাত ম্লান আসলে ক্লেরিকুজিও একজন উদ্দীপনাময় দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠেন। আমেরিকাকে তিনি নিজের দেশ হিসেবেই মনে করেন– আমেরিকার বাইরে কোনো দেশের প্রতিই তার কোনো আগ্রহ নেই। আমেরিকার প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্লেরিকুজিও সেই ছেড়ে আসা পূর্বপুরুষের দেশ সিসিলির চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও খাঁটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সে দেশের সব রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থাকে ক্লেরিকুজিও প্রচুর অর্থ দিয়ে বন্ধুত্ব নিশ্চিত করতে সমর্থ হন।

ব্যবসায় ডন কখনো একটি কিংবা দুটি ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট ছিলেন না। আমেরিকা জুড়ে সবচেয়ে উন্নত ব্যবসাগুলোয় তিনি সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হন। বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশের পুনর্গঠন, বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থায় ডন সহজাত অংশীদারিত্ব গ্রহণ করেন। তবে তার এসব ব্যবসার চেয়ে গ্যাম্বলিং থেকে আয় এর বহুগুণ। এটা ছিল ডনের ভালোবাসা। পাশাপাশি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা থেকেও জুয়ার চেয়ে কোনো অংশেই কম আসত না। তবে এক্ষেত্রে খুব একটা আস্থা ছিল না তার। জুয়ার প্রতি ভালোবাসার কারণেই ডন পরবর্তীতে তার পরিবারের লেকজনকেও এতে জড়িত হতে সম্মতি দিয়েছেন। ক্লেরিকুজিও এই ক্ষেত্রটি থেকে নিতেন মাত্র পাঁচ শতাংশ।

আমেরিকায় ডন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পঁচিশ বছরে ক্লেরিকুজিও’র পরিকল্পনা ও স্বপ্ন সত্য হতে শুরু করে। গ্যাম্বলিং আমেরিকায় এখন প্রতিষ্ঠিত, ক্রমেই বৈধতা পেতে শুরু করেছে। এটা এখন সবারই শ্রদ্ধার এবং সবার কাছেই এর গুরুত্বও বাড়তে শুরু করেছে দিন দিন। এমনকি সরকারও অনেক সময় লটারির মাধ্যমে গ্যাম্বলিংয়ে উৎসাহিত করছে। তবে এক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে একে একে টানা কুড়ি বছর ধরে। যার ফলে মোটের ওপর কোনো অর্থ দিতে হচ্ছে না আয়োজক প্রদেশগুলোর কর্তৃপক্ষকে। তবে মোট পরিমাণ অর্থের সুদের ওপর নামমাত্র একটা কর প্রদান করতে হয়। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার এ এক মজার জুয়া। ডন ডোমেনিকো এ বিষয়ে খুঁটিনাটি সবই জানেন। কারণ তার পরিবারের কেউ এমনই এক প্রতিষ্ঠানের একটির মালিক। এ কোম্পানি বিভিন্ন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সাথে লটারি পরিচালনা করে আসছে। ডন সেখান থেকেই জেনেছেন সব।

অন্যান্য স্পোর্টসের ওপর জুয়া যখন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্রই প্রায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, ডন তখন গ্যাম্বলিংকে শুধুমাত্র নাভাদায় বৈধ প্রতিষ্ঠা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তিনি জানেন নাভাদার গ্যাম্বলিং বিভিন্ন স্পোর্টসের ওপর গ্যামলিংয়ের চেয়ে পৃথক। কোনো ফুটবল ম্যাচের ওপর জুয়ার দান ধরে একদিনে বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে তবে তা মাত্র একদিনের জন্য। ডনের গ্যাম্বলিং বৈধতা পেলে এমন আয় হতে পারে প্রতিদিন। ডন জানেন গ্যাম্বলিং গোটা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধতা একদিন পাবে অবশ্যই হয়তো সেই সোনালি দিন পর্যন্ত তিনি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন না। তবে তার পরবর্তী প্রজন্ম উপভোগ করবে নিঃসন্দেহে।

রেনেসাঁ যুগের প্রিন্সের সাথে ডন ক্লেরিকুজিও’র তুলনা করা চলে নির্দ্বিধায়। ১৪শ থেকে ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের শিল্প ও সাহিত্যের যে পুনভুদয় ঘটিয়েছিলেন সে সময়ের শ্রদ্ধাভাজনরা। যার জন্য আজও তারা স্থান পেয়েছেন ইতিহাসে। শ্রদ্ধায় যাদের জন্য আমাদের এখনও মাথা নত হয়ে আসে, ঠিক তেমনি নিশ্চিতভাবেই ডনও একটি সভ্য সমাজের সভ্য এই সারা পৃথিবীর দ্রষ্টা। গাছ যেমন ফুলের সৌরভে মানুষকে মাতিয়ে রাখো ফল দেয়, ছায়া দেয়, তেমনই বৃক্ষের সহস্র বীজ ডন এ পৃথিবীতে বুনে যাচ্ছেন। একে একে এসব গাছ বড় হবে– ফুল দেবে, ফল দেবে, ছায়া দেবে– এসব বীজ বিনষ্ট হবে না কখনো।

.

যদি পুরো আমেরিকায় মাফিয়া সম্রাটদের পবিত্র চার্চ হিসেবে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলিকে গণ্য করা হয়ে থাকে তবে সে চার্চের ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও হচ্ছেন পোপ। তার এই খ্যাতি শুধু তার বুদ্ধিমত্তার জন্য নয়, তার দৃঢ়তার জন্যও।

ডন ক্লেরিকুজিও তার দৃঢ় নৈতিকতার জন্য তার পরিবারের কাছেও সমান শ্ৰদ্ধার। পরিবারের প্রত্যেকটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু তার যে কোনো নির্দেশের প্রতি দায়িত্বশীল। যে কোনো ব্যাপারে অনুশোচনাই হোক, বাধ্যবাধকতাই হোক কিংবা বৈরী পারিপার্শ্বিকতা হোক– ডনের আদেশের প্রতি অনুগত হতেই হবে। যদি কেউ তার বিরোধিতা করতে চায় তবে সে কথাগুলো কেবল বাতাসেই উড়ে বেড়াবে। ডন ঘৃণা করেন সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানের মতো যত বিষয়। তিনি একজন গোঁড়া ক্যাথলিক– তার বিশ্বাস, কর্মের ফল পেতে হবে এ পৃথিবীতেই, আর ক্ষমা, এর পর। তিনি বিশ্বাস করেন, সবাইকে তাদের ঋণ শোধ করে যেতে হবে এবং বিশ্বে তার বিচারে তিনি অত্যন্ত কঠোর।

তার আনুগত্য প্রথমেই তার প্রতি, যার রক্ত শরীরে প্রবহমান। দ্বিতীয়ত, তার প্রভুর প্রতি (তিনি কি তার বাড়ির নিজস্ব প্রার্থনালয়ে অবস্থান করছেন না?) এবং তৃতীয়ত, ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি যে ভূখণ্ডে বর্তমানে সমস্ত বাধ্যবাধকতার শিকার এটি হতে পারে তার সমাজ, সরকার, সর্বোপরি দেশ।

ডন ক্লেরিকুজিও সিসিলিতে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে সমাজ ও সরকার ছিল পরস্পরের শত্রু। তার মুক্তচিন্তার ধারণাটি বেশ পরিষ্কার- কেউ তার রোজগার, আয়ের জন্য মর্যাদা ও আশা বেচে তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। অপরদিকে শ্রদ্ধার সাথে, মর্যাদার সাথে পূরণ করতে পারে তার রোজগার চাহিদা।

ডন প্রায়ই বলেন, তোমার পরিবার হচ্ছে তোমার সমাজ, তোমার প্রভু তোমার ফলদানকারী এবং তোমার অনুসরণকারী তোমাকে রক্ষা করবে।

ডন তার সাম্রাজ্য শুধু এই জন্য প্রতিষ্ঠা করে নি যে তার সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা কেবল তা ভোগ করবে এবং মানবতাবোধ থেকে সরে আসতে থাকবে কিংবা একসময় পরিবারের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। ডন এমনভাবে তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন যেন তার ফ্যামিলির নাম এবং ভাগ্য চার্চের মতোই মানুষের মনে পবিত্রতার সাথে ঠাই পাবে। তিনি ভাবেন রুটি রোজগার ছাড়া এই বিশ্বে আরো অনেক কিছু করার আছে মানুষের, যা পরবর্তীতে (মৃত্যুর পর) যাবতীয় অপরাধের ক্ষমার জন্য নিজেকে উপস্থাপন করবে ঈশ্বরের কাছে।

ডন ডোমেনিকো তার পরিবারকে ক্ষমতার শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এর জন্য তাকে হতে হয়েছে কখনো বর্গিয়ানের মতো হিংস্র এবং ম্যাকিয়াভেলির মতো সূক্ষ্ম। সেই সাথে আমেরিকান বিজনেস সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে তাকে। তব এত সব কিছুর পরও তাকে তার অনুসারীদের ভালোবাসতে হয়েছে বাবার মতো। পুণ্য করলে তার ফলও ভোগ করা যায় আর পাপে করতে হবে প্রায়শ্চিত্য এটাই সত্য, জীবনের পরম বাস্তবতা।

অবশেষে ডনের পরিকল্পনায় দেখা গেল ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি ক্ষমতার এমন এক পর্যায়ে উঠে এসেছে, সেখান থেকে আর কোনো অপরাধের সাথে তাদের জড়িত থাকা সম্ভব নয়, কেবলমাত্র ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন না হওয়া পর্যন্ত। তবে ক্লেরিকুজিও সাম্রাজ্যের মাফিয়া প্রধান যেমন ব্যায়রন কিংবা ব্ৰুগলিওনরা (ইতালীয় শব্দ) ডনের যে কোনো বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবে। এটাও ডনেরসুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফল। এর জন্য ডন সমস্ত মাফিয়া প্রধানদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের জেল থেকে মুক্ত করেছেন, ইউরোপে অনেকের প্রাপ্ত অবৈধ অপরাধের নিশ্চিত শাস্তি থেকে মুক্ত করেছেন, আমেরিকায় সমঝোতার মাধ্যমে তাদের মাদক চোরাচালানের নিরাপদ পথ তিনি অনায়াসেই তৈরি করেছেন মাফিয়া দলগুলোর জন্য। পৌর এলাকাতেও তাদের ঠাঁই হয়েছে বিনা বাধায়।

ডন ফ্লেরিজিওর জ্যেষ্ঠ পুত্র জর্জিও একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে ফ্যামিলির অন্যতম ক্ষমতাবান। কালো টাকাকে সাদা করার পদ্ধতি যেন তার নখদর্পণে। একাজ সে এমন ভাবে করে থাকে যেন কোনো স্বর্গীয় ধোপা টাকাগুলো ক্রমেই ধুয়ে দিচ্ছে আর তা বৈধ ও সভ্যতার কল থেকে কেবল বেরিয়েই যাচ্ছে। এই হচ্ছে জর্জিও, যে তার বাবার সাম্রাজ্যকে বাবার পরিকল্পনানুসারে নিয়ন্ত্রণের জন্য সদাসচেষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা, ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির ওপর জনগণের তীক্ষ্ণ ও অশুভ দৃষ্টি এড়ানোর জন্য জর্জিও কঠোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই ফ্যামিলির অস্তিত্বও বহাল রয়েছে গতানুগতিক। ফ্যামিলির ওপর অনবরত তীক্ষ্ণদৃষ্টি, অপবাদ, ফ্যামিলিকে ঘিরে ভয়াবহ ও বিপজ্জনক যেসব তৎপরতা চলছে তা অত্যন্ত সফলতার সাথেই মোকাবেলা করছে জর্জিও। পাশাপাশি ফ্যামিলির একটা সুখ্যাতি প্রতিষ্ঠাতেও সে সম্পূর্ণ সফল।

ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির গাঁথা-গল্প-অপরাধের ঘটনা এফবিআই কিংবা পুলিশের নথিতে একের পর এক যুক্ত হলেও সংবাদ মাধ্যমে তা কখনোই প্রকাশ হয়নি। এমনকি সেসব সাহসী প্রকাশনা বা ম্যাগাজিনেও এই পরিবারকে নিয়ে কখনো দুকলম লেখা হয়নি। এই সংস্থাগুলো অবশ্য আমেরিকার অন্যান্য মাফিয়া দলের বিরুদ্ধে বিস্তর লিখেছে। যারা এই মাধ্যম এবং পুলিশকে মোটেও পাত্তা দেয়নি তাদের অবনতিই হয়েছে। অথচ জর্জিও’র মেধা, কৌশল ফ্যামিলিকে রেখেছে নিরাপদে।

তাই বলে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি যে দাঁতহীন বাঘ এটা মনে করা হবে বোকামি। জর্জিও’র ঘোট দুভাই ভিনসেন্ট এবং পেটি– এরা বড় ভাইয়ের মতো চালাক না হলেও, ডনের রক্ত আছে তাদের শরীরে। ব্রঙ্কসের সীমাবদ্ধ গণ্ডীতে তারা পূর্ণ শক্তি নিয়ে বসবাস করছে। সর্বদা ইতালীয় সংস্কৃতিতে শক্তির সঞ্চয় হচ্ছে তাদের দিন দিন। ব্রঙ্কসের এই পরিসরটি দুভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন চল্লিশটি ব্লক যা যে কোনো পুরনো ইতালির সংস্কৃতির ওপর ছবি নির্মাণে সহায়ক পরিবেশ। সেখানে নেই কোনো দীর্ঘ দাড়িঅলা হাসিডিক ইহুদি, নেই কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা এশীয়, অথবা নেই কোনো বোহেমীয় জাতির জনগণ নেই তাদের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিংবা লেনদেন। সেখানে কোনো চায়নিজ রেস্তোরাঁ নেই। ক্লেরিকুজিও ব্রঙ্কসের পুরো রিয়েল এস্টেট নিয়ন্ত্রণ করেন তার নিজ কর্তৃত্বে।

ছোটখাটো এই ইতালীয় উপনিবেশে দেখা যাবে ইতালীয় কিছু পরিবারের লম্বা চুলের তরুণ যুবক গিটার হাতে মেতে রয়েছে আপন উচ্ছলতায়। তবে খুব শিগগিরই ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে গছিয়ে দেয়া হবে। প্রতি বছর ইতালির সিসিলি থেকে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির পরিধি বৃদ্ধি করতে নতুন নতুন পরিবার আসছে সতর্কতার সাথে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ক্লেরিকুজিও সাম্রাজ্যের কোনো আস্তানায়। সারা বিশ্বে ব্রঙ্কস এনক্লেভ ঘিরে রয়েছে হাজারো অপরাধের গুঞ্জন, কিন্তু এই ব্রঙ্কস এনক্লেভে বিন্দুমাত্র অপরাধ সংঘটনের নজির নেই ব্রঙ্কস এনক্লেভ সদা পবিত্র, যেন শান্তির স্বর্গধাম।

পিপি ডি লিনা ব্রঙ্কস এনক্লেভের মেয়র থেকে লাস ভেগাসে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির ব্রুগলিওন হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরও সে ক্লোরিকুজিওর সরাসরি নির্দেশের অনুগত। তাকে এখনো ডনের বিশেষ মেধার ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।

তবে পিপি ব্রুগলিওন হিসেবে অত্যন্ত যোগ্য। তার ক্ষমতা গ্রহণের পর্বটিও শুরু হয়েছে সময়ের চেয়ে একটু আগেই- অর্থাৎ মাত্র সতেরো বছরে। যখন তার শরীরের গঠনও তেমন শক্ত হয়নি তখন থেকেই পিপি ক্লেরিকুজিও’র ক্ষমতার ছোটখাটো ছটা পেতে শুরু করে।

পিপি শারীরিকভাবে বেশ শক্ত-সামর্থ্য, তার উচ্চতা ও গঠন যে কোনো লোকের সমীহ আদায় করার মতো। সেই সাথে অবশ্যই তার এক্সপ্লোসিভ ও আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় রয়েছে নিখুঁত দক্ষতা। জীবনকে উপভোগ করার মতো প্রাণশক্তি ও উচ্ছলতা পিপির যেন সহজাত। মানুষ মুগ্ধ হয় তার এই প্রাণময়তায়, তার সাহসিকতায় অভিভূত হয় নারী। এদের মধ্যে সেই সিসিলীয় বংশোদ্ভূত মানুষই হোক কিংবা আমেরিকার মুভি তারকা। কাজের প্রতি পিপি অত্যন্ত একনিষ্ঠ, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বিশ্বাস করে জীবনটা আনন্দের, উপভোগের।

পিপির দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত মদপান আর নিয়মিত গ্যাম্বলিং— নারীর প্রতি রয়েছে তার অতিমাত্রায় দুর্বলতা। এসব কারণে ডন যে তাকে সর্বদা প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন তা নয়– তবে পিপির এই উচ্ছল জীবনে খুব একটা অন্যায় হয়ে দাঁড়াল না ডন। পিপির এসব দুর্বল দিক তাকে কখনো সমস্যায় ফেলেনি বরং তাকে করেছে আরো শক্তিশালী, আরো বলবান।

তার প্রাণময়তা, উপভোগের জীবন তাকে ক্যরিয়ার গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, কারণ সে ডনের ভগ্নীপুত্র। সে হচ্ছে রক্তের এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পিপি ফ্যামিলির ঐতিহ্য ভঙ্গ করে দিয়েছে নতুন দিকের সূচনা।

প্রত্যেক মানুষের জীবনেই থাকে কিছু কিছু ভুল। পিপির জীবনও বাদ যায়নি। তার যখন কুড়ি বছর বয়স সে প্রেমে পড়েছিল বিয়েও করেছিল সেই প্রেমিকাকে। তবে সে মেয়ে ছিল পিপি ডি লিনার মতো একজন যোগ্য ছেলের সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।

ন্যালিনি জেসাপ ছিল লাস ভেগাসে জানা হোটেলের একজন সামান্য ড্যান্সার। পিপি ন্যালিনি সম্পর্কে প্রায়ই গর্ব করে বলে, সে কোনো শো-গার্লের মতো তার শরীর প্রদর্শন করে না। ভেগাস স্ট্যান্ডার্ডে ন্যালিনি বেশ বুদ্ধিমতী নারী। বইপড়ুয়া মেয়ে, রাজনীতিতে তার রয়েছে আগ্রহ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ন্যালিনি ক্যালিফোর্নিয়া পুরনো দিনের স্যাকরামেন্টো ওয়াসপ সংস্কৃতির একটি মেয়ে তার গোড়াপত্তনও সেখানেই।

পিপি ও ন্যালিনির মধ্যে পার্থক্য ছিল বিস্তর– দুজন যেন দুই মেরুর। পিপির পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল না তেমন। কদাচিৎ সে বইয়ে চোখ বুলাত। গান-বাজনা, নাটক-থিয়েটারের প্রতিও তার খুব এটা আগ্রহ নেই। পিপি যেন একটা ঝাড়ের মতো, অপরদিকে ন্যালিনি একটি ফুল। পিপি উচ্ছল, প্রাণবন্ত, কখনো ভয়ঙ্করও, বিপরীতে ন্যালিনি স্বভাবগত নম্র, ভদ্র। ন্যালিনির সাথে কখনোই তার সহকর্মী শোগার্ল কিংবা ড্যান্সারদের বিবাদ হয়নি। বরং সহকর্মীদের সাথে তার রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অবসর সময়ে তারাই ন্যালিনির ভালো সঙ্গী।

একটি বিষয়ে ন্যালিনির সাথে পিপির মিল রয়েছে বেশ। সেটি হলো ড্যান্স। পিপি ডি লিনার ক্ষেত্রে ড্যান্সেও রয়েছে ডন ক্লেরিকুজিও’র নেতিবাচক মনোভাব। তবে পিপি যখন বলরুমে ড্যান্সের উদ্দেশ্যে নেমে পড়ে, তখন ভুলে যায় সব। এই একটি মাত্র ক্ষেত্রে পিপি নিজেকেও ঠিক বুঝতে পারে না। ড্যান্স যেন তাকে টানে এক অদৃশ্য ভালোলাগায়। অথচ কবিতা, গান, সাহসিকতা, স্নেহশীলতা, যৌনাচারে সূক্ষ্ম বিশুদ্ধতা– এমন যে কোনো বিষয়েই পিপি নিজেকে অনায়াসেই সংযত রাখতে পারে।

ন্যালিনি জেসাপের ক্ষেত্রে এই ড্যান্স তার অন্তরতম আত্মায় আলোর ঝলক ফেলে। অভাবনীয় সুখ পায় ন্যালিনি যখন পিপির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ঘণ্টাব্যাপী নাচতে থাকে। এই ঘনিষ্ঠতা তাদের মধ্যে তৈরি করে ভালোবাসার আবেগ উভয়ের যৌন সম্পর্কে তৈরি হয় স্বর্গীয় সেতুবন্ধন দুজনের মাঝে সহানুভূতির আত্মিক সম্পর্কের যোগাযোগ শুরু হয়। এই স্বর্গীয় সুখের সময়টুকুতে তারা চোখে চোখে, কথার মাধুরীতে মেতে ওঠে। এই সময়টি আসে কখনো ন্যালিনির অ্যাপার্টমেন্টে অথবা ভেগাসে হোটেলের কোনো ড্যান্স ফ্লোরে।

খুব গুছিয়ে গল্প করতে পারে পিপি এবং তার ভাণ্ডারও বেশ সমৃদ্ধ। ন্যালিনির প্রতি তার আবেগ ব্যক্ত করতে, ন্যালিনির ভক্তি কুড়াতে পিপি মাঝে মাঝেই হয়ে ওঠে একজন তোষামোদকারী হয়ে ওঠে একজন রসিক প্রেমিক। ন্যালিনি যখন কিছু বলে পিপি মুগ্ধ হয়ে শোনে। ন্যালিনির কোলে মাথা রেখে পিপির চোখ দুটো নিবদ্ধ হয় তার চোখে আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে। যখন ন্যালিনি তাকে বইয়ের কোনো কথা শোনায়, থিয়েটারের গল্প বলে, রাজনীতির কথা বলে, বলে গণতন্ত্রের উত্থানের কথা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার চলমান যুদ্ধের কথা, এমনকি তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর অভাবপীড়িত, দুর্গত মানুষের কথা পিপি তখন মনে মনে গর্ববোধ করে স্ত্রীর অসীম জ্ঞান ও বুদ্ধির জন্য। পিপি ন্যালিনির কথায় রোমাঞ্চ বোধ করে, যা এতদিন অবধি পিপির জন্য ছিল কেবল বাইরের বিষয়।

পিপি ও ন্যালিনির মধ্যে ভাবের এই আদান-প্রদানে উভয়ে উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়, ভালোবাসার সম্পর্ক হয় আরো দৃঢ় উভয়ের মধ্যে যৌন সম্পর্কের সূত্রপাতও হয় এ থেকে। এ থেকে ন্যালিনি কেবল বুঝতে পারে একজন সুন্দর মনের প্রেমিককে, তার ভালোবাসার মানুষ স্বামী পিপিকে। সত্যিকারের আরেক ভুবনের পিপি ন্যালিনির কাছে রয়ে যায় আবৃত। ন্যালিনি শুধু বুঝতে পারে তার স্বামী তাকে কত ভালোবাসে, যে তার জীবনের উৎকৃষ্ট উপহারস্বরূপ।

ন্যালিনির যখন মাত্র আঠারো বছর তখন তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ পর তারা মিলিত হয়েছিল। ন্যালিনি অবশ্য তখন পিপি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানত না। পিপির বয়স ছিল আটাশ এবং সত্যিই যে সে ন্যালিনিকে ভালোবাসত– একটুকুই বুঝত ন্যালিনি। ন্যালিনিকে বিয়ের পর পিপিও ক্রমে সেই পুরনো সংস্কৃতির মূল্যবোধে বেড়ে উঠতে থাকে। তারা উভয়েই একটি পরিবারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

ন্যালিনি ছিল অরফ্যানের, অপরদিকে পিপি ক্লেরিকুজিও পরিবারের হলেও ন্যালিনির সংস্পর্শে তার ভালোবাসায় ক্রমেই হারিয়ে গিয়েছিল– ক্লেরিকুজিও বিমুখ হয়ে উঠেছিল। তাকে বিয়ে করে পিপি বুঝতে পেরেছিল তাদেরকে ক্লেরিকুজিও পরিবার মেনে নেবে না। পরিবারের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে সেখান থেকে সরে আসাই সমীচীন মনে করে পিপি। গোপনে ভেগাসের এক প্রার্থনালয়ে তারা বিয়ে করে।

পিপির সমস্ত জল্পনা-কল্পনা, ভয় ও সন্দেহ দূর করে ক্লেরিকুজিও মেনে নেন তাদের। তিনি প্রায়ই একটি কথা বলতেন, একজন মানুষের প্রাথমিক কর্তব্যই হচ্ছে তার জীবনযাপনের জন্য নিজের রোজগারটুকুতে সক্ষম হওয়া। কিন্তু এর জন্য তার যদি না থাকে স্ত্রী কিংবা পুত্র?– এমন প্রশ্নে ডন বেশ অসম্মানবোধ করতেন। তিনি কখনোই এমন পরামর্শ দেননি যে, ক্লেরিকুজিও পরিবারে স্বাধীন বিয়েকে মেনে নেয়া হবে না। মোটের ওপর পিপির শরীরেও ছিল ক্লেরিকুজিও ধারার রক্ত।

পিপি-ন্যালিনির বিয়ে মেনে নিলেও মন থেকে সায় দিতে পারেনি ডন ক্লেরিকুজিও। তিনি যে তাদের বিয়েতে সন্তুষ্ট ছিলেন না তা তার খুঁতখুঁতে কিছু মন্তব্য থেকে বোঝা যায়। তিনি বলতেন তারা সাগরের তলদেশে গিয়ে যেন নেচে বেড়ায়। তা সত্ত্বেও ডন ক্লেরিকুজিও তাদের বিয়ে উপলক্ষে দিয়েছিলেন মুক্ত হস্তে অঢেল। ডন একটি কোম্পানির মালিকানা দিয়েছিলেন পিপিকে তাদের বিয়ে উপলক্ষে যা থেকে প্রতি বছর আয় ছিল এক লাখ ডলার। এই আয় পিপির সে সময়ের সব আয়কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল– এটা ডনের দৃষ্টিতে পিপির পদোন্নতি। তবে পিপি পশ্চিমে ক্লেরিকুজিও পরিবারের ব্রুগলিওন হিসেবে বহাল ছিল আগের মতোই। এক্ষেত্রে তার পদবির কিংবা দায়িত্বের কোনো হেরফের হয়নি। তাকে ব্রঙ্কস এনক্লেভ থেকে কেবল সরে যেতে হয়েছিল।

ব্রঙ্কস এনক্লেভে পিপিকে ছেড়ে যেতে হয়েছিল শুধু ন্যালিনি জেসাপকে বিয়ে করার জন্য। ব্রঙ্কস এনক্লেভে ন্যালিনি একজন বিদেশিনী, এজন্য ভিন্ন গোত্রের মানুষ– মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ, ইহুদি এবং এশীয়দের মতোই তারও উপস্থিতি ব্রঙ্কস এনক্লেভে নিষিদ্ধ, যেন অচ্ছুত কোনো সম্প্রদায়। আর এ সম্প্রদায়ের জায়গা ক্লেরিকুজিও’র ইতালীয় উপনিবেশ ব্রঙ্কসে অন্তত নেই। ন্যালিনির কারণেই ক্লেরিকুজিও’র মুগুর হওয়া সত্ত্বেও, স্থানীয় একটি মাফিয়া দলের প্রধান ব্যারন হওয়া সত্ত্বেও পিপিকে হারাতে হয়েছে কুওগে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন।

ডন শুধু তাদের বিয়ে উপলক্ষে যথাযথ পুরস্কার দিয়েই খালাস। এক্ষেত্রে তাদের বিয়েকে উৎসবমুখর করতে এগিয়ে এসেছিলেন জানাদু হোটলের মালিক, ডনের আরেক কাছের লোক আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট। পিপি-ন্যালিনির বিয়ে উপলক্ষে গ্রোনিভেল্ট তার হোটেলে আয়োজন করেছিলেন ছোট একটি ডিনার পার্টি। সে পার্টির অন্যতম আয়োজন ছিল বর ও কনের সৌজন্যে সারা রাত নাচের। এ থেকেই বছরখানেকের মধ্যে গ্রোনিভেল্টের  সাথে পিপির তৈরি হয়েছিল অত্যন্ত সুসম্পর্ক তারা একে-অপরের শ্রদ্ধাভাজনও হয়ে উঠেছিলেন ক্রমেই।

পিপি-ন্যালিনির দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনে এসেছে দুটি সন্তান– একজন ছেলে আর আরেকজন মেয়ে। ধর্মীয় বোধে উদ্দীপ্ত ককসিফিজিও পিপির জ্যেষ্ঠ পুত্র— ক্রস নামেই সে বেশি পরিচিত। তার যখন দশ বছর বয়স অবিকল সে দেখতে হয়েছিল তার মায়ের মতো। শরীরে ছিল লাবণ্য এবং আচার-আচরণে ছিল তার মেয়েলীপনা। এখন অবশ্য শারীরিক সৌষ্ঠব, সাহসিকতায় সে তার বাবার মতোই।

ক্রসের ছোট তার বোন ক্লডিয়া। নয় বছর বয়সে ক্লডিয়া পেয়েছিল বাবার চেহারা। তবে আচারে-গুণে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে মা ন্যালিনির মতো। বাবার চেয়ে মায়ের প্রতিই তার ভালোবাসা বেশি। মায়ের মতো বইপড়া, মিউজিক, থিয়েটারের প্রতি রয়েছে তার ভালোবাসা এবং মহানুভবতায়, তেজস্বীতায় ন্যালিনি জেসাপের মতোই তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। ক্রস যেমন তার বাবা পিপির ভক্ত, তেমনি অপরদিকে ক্লডিয়া তার মায়ের ভক্ত।

এগারো বছর আগেও ডি লিনা পরিবারটি ক্লেরিকুজিও পরিবার থেকে পৃথক হয়ে বেশ সুখে কাটাচ্ছিল জীবন। পিপি ভেগাসে ব্রুগলিওন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে, একই সাথে জানাদু হোটেলের কালেক্টরের দায়িত্বও পালন করতে থাকে; আর ডন ক্লেরিকুজিও’র মুগুর হিসেবে তো সে ছিলই। ধীরে ধীরে পিপি ধনী হয়ে ওঠে, জীবনযাপনে আসে উন্নতির ধারা– অবশ্য এর সবকিছুই ছিল ডনের বদৌলতে। তবে তার জীবনযাপন ঘিরে থাকে পরিবারের ছোঁয়া। মদপান আর জুয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারলেও তার সুখের জীবন অতিবাহিত হয় স্ত্রী ন্যালিনির সাথে নেচে, সন্তানদের সাথে খেলে। সন্তানদের মানুষ করতে পিপি ও ন্যালিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।

তবে সুখ যে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী হয় না পিপি তা বেশ অনুধাবন করত। সে তার এতদিনের বিপদসঙ্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পেরেছিল– সামনেও তার জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে কোনো অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর কারণ একমাত্র তার জীবনের সফলতা। আর তাই পিপি তার ছেলে ক্রসকেই অবলম্বন মনে করতে শুরু করল। সে মনে-প্রাণে আকাক্ষা করল তার ভবিষ্যৎ মানুষটিই যেন তার সহযোগী হয়ে ওঠে। অথবা সে ব্যতিক্রমও খুঁজতে থাকল এর এমন একজন মানুষ তার কাছে আকাক্ষিত হয়ে উঠল যার ওপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা রাখা যায়।

এসব চিন্তা থেকেই পিপি ক্রসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। শুরু হলো প্রশিক্ষণ পিপি তাকে শেখাল জুয়ার বিভিন্ন কলা-কৌশল, তাকে ঘনঘন গ্রোনিভেল্টের  সাথে ডিনারে নিয়ে যেতে লাগল পিপি। গ্রোনিভেল্টের  সংস্পর্শে নেয়ার উদ্দেশ্য ক্রস যাতে ক্যাসিনোর ব্যতিক্রমী ও বিভিন্ন ধারা গ্রোনিভেল্টের কাছ থেকে রপ্ত করতে পারে। গ্রোনিভেল্ট সবসময়ই ক্রসের জন্য ছিলেন মুক্ত। ক্রসকে তিনি বলতেন, প্রতি রাতেই হাজার হাজার লোক আমার ক্যাসিনোর সাথে প্রতারণা করতে জেগে বসে থাকে।

পিপির কাছ থেকে ক্রস শিখেছিল শিকারের কৌশল। শিখেছিল কিভাবে, কোন লক্ষ্যে আঘাত করলে জন্তু-জানোয়ার কুপোকাত হবে তাদের রক্তের গন্ধ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল পিপি। বিভিন্ন জানোয়ারের রক্ত পিপি ক্রসের হাতে লাগিয়ে তাকে ধারণা দিয়েছিল। মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণও বাবার কাছ থেকে পায় ক্রস। বন্দুকের ব্যবহার এবং এর যত্নের কলা-কৌশল শিখিয়েছিল পিপি।

নেভেদার পার্বত্যাঞ্চলে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির রয়েছে বিশাল হান্টিং লজ। ছুটির দিনগুলোতে পিপি ও তার পরিবার প্রায়ই বেড়াতে যেত। এ সময় ন্যালিনি যখন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকত তখন পিপি সন্তান দুটিকে নিয়ে মেতে উঠত শিকারের খেলায়। এসব শিকারে ক্রস এমনভাবে হাত পাকিয়ে নিয়েছিল যে, ভালুক, হরিণ এমনকি পাহাড়ি সিংহ কিংবা কোনো হিংস্র প্রাণী খুব সহজেই ধরাশায়ী হতে লাগল ক্রসের নিশানার কাছে। বাবা পিপি ডি লিনার ছেলের যোগ্যতায় ধীরে ধীরে আস্থা জন্মাতে লাগল। পিপি বুঝতে পারল ছেলের দৌরাত্ম্য। সেই সাথে বুঝল জন্তু-জানোয়ারের প্রতি তার যত্নবান। হওয়ার মনোভাবও। পিপির কাছে ক্রস যেন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও শান্ত মস্তিষ্কের ছেলে– কোনো শিকারে ক্রস কখনোই উত্তেজিত নয়– অত্যন্ত ধীর ও লক্ষ্যে আঘাত হানতে বেপরোয়া মনোযোগ।

ক্লডিয়া ছিল এসবে একেবারেই আগ্রহহীন। বন্দুকের গুলি খেয়ে যখন কোনো হরিণ লাফিয়ে উঠত ক্লডিয়া যেন মর্মাহত হতো। এমনই কিছু অবসর যাপনে ক্লডিয়া আর তার বাবা-ভাইয়ার সাথে যেত না, বরং লজে মায়ের সাথেই বসে গল্প করে কাটত। ক্লডিয়ার মাছ ধরতেও ছিল আপত্তি।

পিপি ছেলের প্রতিই বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করল। তাকে চরিত্রের মূল বিষয়গুলো শেখাত পিপি। ক্রসের উদ্দেশ্যে বলত– কখনো খুব সামান্যতেই রেগে যাবে না, আর নিজের সম্পর্কে কিছুই বলবে না কখনো। তোমার কাজের মাধ্যমেই তুমি আদায় করে নেবে অন্যের সমীহ, কথার মাধ্যমে নয়। সব সময় শ্রদ্ধা করবে তোমার রক্তের সম্পর্ককে। গ্যাম্বলিংকে কখনোই পেশা হিসেবে নয়, এটাকে মনে করবে তোমার শান্তি, বিনোদন হিসেবে। ভালোবাসবে তোমার বাবাকে, মাকে, বোনকে কিন্তু নিজের স্ত্রীর চেয়ে অন্য কোনো নারীর ভালোবাসায় থাকবে সদাসতর্ক। তোমার স্ত্রী, হতে পারে এমন একজন নারী যে তোমার সন্তানের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে– আর যদি তা তোমার ক্ষেত্রে হয়ই তবে তোমার জীবন হয়ে উঠবে দুর্বিষহ– তুমি ব্যর্থ হবে তাদের দুমুঠো খাওয়াতেও।

বাবার কথার অন্যথা করেনি ক্রস– পদে পদে সে মনে রেখেছে পিপির উপদেশ। ক্রসের সাথে তার মা ন্যালিনির চেহারার অদ্ভুত মিল থাকার কারণে পিপি ছেলেকে ভালোবাসে খুব। ক্রসের মাঝে ন্যালিনির উপস্থিতি খুঁজে পায় পিপি।

ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির পরবর্তী প্রজন্ম যে একটি বৈধ, আইনসম্মত সমাজের মধ্যে মিশে যাবে– ডন ক্লেরিকুজিও’র এমন স্বপ্নে পিপির কোনো বিশ্বাস নেই। এটা যে ভালো ফলাফলের দিগন্ত রচনা করবে- এমন বিশ্বাসও পিপি করে না কখনো। তবে সে বৃদ্ধদের অতিকৌশলী বুদ্ধিকে স্বীকার করে, তবে তা-ও কেবল গ্রেট ডন ক্লেরিকুজিও’র প্রতি। আসলে সব বাবাই চায় সন্তানরা যেন তাদের সাথেই কাজ করে, তাদের অনুসারী হয়ে ওঠে। রক্তের সম্পর্ক এক হবেই– এটা লঙ্ঘন করা যায় না— সত্য কথা।

আর এ ক্ষেত্রে পিপি তা সঠিক বলেই প্রমাণ করেছে। ডন ক্লেরিকুজিও’র দৃঢ় পরিকল্পনার পরও, তার আপন নাতি ডেন্টি তার নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যস্ত। ফেলে আসা সিসিলীয় রক্তের দুরন্তপনার ধারা ডেন্টির শরীরে, ক্ষমতার জন্য ব্যাকুল। সে কখনো সমাজের ও ঈশ্বরের বিধি-বিধান লঙ্ঘনে ভীত নয়।

ক্রসের যখন সাত বছর বয়স এবং ক্লডিয়ার ছয়, ক্রস ছিল ছোটবেলায় বেশ আক্রমণাত্মক। ছোট বোন ক্লডিয়াকেও ছাড়ত না। পাঞ্চিংয়ের অভ্যাস করত ক্লডিয়ার পাকস্থলি বরাবর আঘাত করে বাবা-মার সামনেই সে এমন দুরন্তপনার সাহস দেখাত। ক্লডিয়া দক্ষ ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য কেঁদে ফেলত। ক্রসের এই আচরণকে দমন করতে পিপি তখন ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিত।

ক্রসকে তার পাঞ্চিং অভ্যাস থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিত পিপি প্রথম। এতেও যদি ক্রস না থামত, তখন পিপি, তার ঘাড় ধরে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখত– এমনটা প্রায়ই করত পিপি। অথবা ক্লডিয়াকে নির্দেশ দিত— যেভাবে ক্রস তাকে আঘাত করেছে, ঠিক সেভাবে ক্লডিয়া যেন আঘাত করে। ক্রসের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পিপি তাকে ওয়ালে পাঞ্চ করার নির্দেশ দিত– এতে সে এক-দুবারের বেশি করতে পারত না। এক সময় সে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ত। কিংবা ন্যালিনি তাদের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে কখনো রেগে উঠত। কিন্তু পিপি তখন একটি সিগারেট ধরিয়ে শান্ত কণ্ঠে ক্রসের উদ্দেশে বলত, সব সময় তুমি তোমার বোনকে মারছ। এবার থেকে তুমি তাকে যত মারবে ক্লডিয়া আমার কাছ থেকে ততবার একটি করে ডলার পাবে। এরপর ক্রস ক্ষেপে গিয়ে আবারো ক্লডিয়াকে আঘাত করতে শুরু করত, আর পিপি ক্লডিয়াকে সাথে সাথেই দিত একটি করে ডলার। অবশেষে হিংসায় হোক, কিংবা ক্লান্ত হয়ে ক্রস থামতে বাধ্য হতো।

উপহারে উপহারে ভরে দিয়েছিল পিপি তার স্ত্রীকে, কিন্তু সেসব উপহার যেন ন্যালিনিকে পরিণত করেছিল পিপির ক্রীতদাসীতে– পিপির হয়ে জীবন চলার পথে সেগুলো ছিল ছদ্মবেশ ধারণের উপকরণ। হিরের আংটি, পশুর লেসের মূল্যবান মোলায়েম কোট, ইউরোপ সফরসহ বিভিন্ন মূল্যবান উপহার ছিল ন্যালিনির জন্য অযাচিত। ভেগাস ন্যালিনির পছন্দ নয় বলে পিপি তার জন্য স্যাকরামেন্টোতে কিনে দিয়েছিল অবকাশ যাপনের একটি বাড়ি। আর সেই সাথে দিয়েছিল একটি গাড়িও। স্যাকরামেন্টোর বাড়িটিতে পিপি নিজেই শোফারের ইউনিফর্ম পরে স্ত্রী ন্যালিনিকে নিয়ে গিয়েছিল। বিয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পিপি তাকে দিয়েছিল বর্গিয়া কালেকশনের মূল্যবান একটি অ্যান্টিক রিং। এত কিছু দেয়ার পরও পিপি একটি বিষয়ে ছিল বেশ কৃপণ। পিপি ন্যালিনিকে কখনোই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে দেয়নি।

এই একটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে পিপির ছিল যথেষ্ট উদারতা– পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ছিল ন্যালিনির। ইতালীয় স্বামীদের মতো পিপি স্ত্রীর প্রতি সন্দেহপ্রবণ ছিল না কখনোই। যদিও ব্যবসায়িক কাজে নিতান্ত প্রয়োজনে তাকে বিদেশে যেতে হতো, তবে তার মন পড়ে থাকত স্ত্রীর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসায়। পিপি ছাড়া ন্যালিনি অবশ্য ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ঘুরেছে– পিপি বাধা দেয়নি। সেসব সফরে ন্যালিনির সফরসঙ্গী হয়েছিল তার বান্ধবীরা। ন্যালিনির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল লন্ডনের মিউজিয়াম ঘুরে দেখার, প্যারিসের ব্যালে আরো ইতালির অপেরা উপভোগ করার। তার এসব স্বপ্ন, ইচ্ছা পিপি পূরণ করেছে দ্বিধাহীন।

পিপির মধ্যে স্ত্রীর প্রতি সন্দেহের বিন্দু-কণাও না পেয়ে অভিভূতই হয়েছিল ন্যালিনি। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই ন্যালিনি এও বুঝতে পেরেছিল যে ভেগাসের এই পরিমণ্ডলে পিপিকে ছাপিয়ে কোনো লোকই তার প্রতি সহান ভূতি কিংবা ভালোবাসা জানাতে আসবে না। এমন কোনো মানুষ নেই সেই তল্লাটে যে এমনকি পিপির স্ত্রীর বন্ধুও হতে পারে।

পিপি-ন্যালিনির বিয়ে এবং তাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন নিয়ে উন ক্লেরিকুজিও ছিলেন সন্দিহান। তিনি একবার মন্তব্য করেছিলেন, তারা কি মনে করে যে তাদের সারাটা জীবন নেচে নেচেই কাটিয়ে দিতে পারবে?

এ প্রশ্নের প্রমাণিত উত্তর হবে না। ন্যালিনি এমন কিছু সেরা নাচিয়ে ছিল যে একেবারে তারকা বনে যাবে। তার পাগুলো ছিল ড্যান্সের জন্য অনুপযুক্ত। তাছাড়া পার্টি গার্ল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে তার ছিল মারাত্মক রকমের অনীহা। আর এসব কিছুই স্থায়িত্ব পায় পিপির সাথে তার বিয়ে হওয়ার পর।

বিয়ের প্রথম চার বছর ন্যালিনি ছিল খুব সুখী। সন্তানদের যত্ন-আত্তি, পড়াশোনা আর ইউনিভার্সিটি অব নেভেদার ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত ছিল সে। কিন্তু পিপি তার এ সুখে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির কথা ভেবে বেশি দিন সেখানে থাকতে তার ছিল দ্বিধা। পিপি বুঝতে পেরেছিল– যে কোনো সময় তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে বিপদের কালো মেঘ। সে জানত রাজ্যের উছুল কৃষ্ণাঙ্গরা কোনো কিছু না ভেবেই কেড়ে নিতে পারে অনেক কিছু। ন্যাটিভ আমেরিকানদের সম্পর্কেও খুব ভালো ধারণা ছিল না তার– সে যে কেউ হোক না কেন, পিপি-ন্যালিনি ও তাদের সন্তানকে একেবারে সাগরের তলদেশে নামিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না মোটেও। আরো তাছাড়া বই এবং মিউজিক সম্পর্কেও পিপির খুব একটা আগ্রহ ছিল না বিধায় ন্যালিনির এই ইচ্ছায় বাদ সাধল পিপি।

সন্তানদের প্রতি ন্যালিনির মনোভাব ছিল বেশ কঠোর। তাদের সভ্য করে গড়ে তুলতে পিপির প্রতি অভিযোগ করে বলত ছেলেমেয়েদের শাসন না করলে পরে নিজেই তাদের আচার-আচরণে হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। শিশুরা পশুর মতো হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় তাদের শাসন না করলে, কিভাবে তাদের এই আচরণ-ব্যবহার শোধরাবে? ন্যালিনির এ অভিযোগের পরও পিপি তার সন্তানদের গায়ে কখনো টোকাটাও দেয়নি।

তাদের বিয়ের চতুর্থ বছরে সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিতে ন্যালিনির জন্য পিপি মিস্ট্রেস নিযুক্ত করল। আর এ নিয়োগও ছিল উল্লেখ করার মতো। এদের একজন লাস ভেগাসের, একজন নিউইয়র্কের এবং আরেকজন লস অ্যাঞ্জেলেসের। এই তিন মিস্ট্রেসের কাছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে ন্যালিনি হয়ে উঠল দক্ষ।

সন্তান মানুষ করতে শুধু ন্যালিনিই নয় পিপিও যোগ দিল একই সাথে। কঠোর পরিশ্রম আর ভালোবাসায় সন্তানদের জীবনও হয়ে উঠল মধুর। সন্তানদের লেখাপড়া, গান-নাচে দক্ষ করে তুলতে ন্যালিনিও তাদের পেছনে অতিবাহিত করতে লাগল ঘন্টার পর ঘণ্টা। পিপির উন্নত মনোভাবে তাদের দাম্পত্য জীবনও হয়ে উঠল মধুর। পিপির যত গুণ হচ্ছে, তার জীবনীশক্তি ও পশুর মতো উচ্ছলতা। কোনো স্বামী-স্ত্রীর বিবদমান সম্পর্ককে সহজ করতে এমন গুণ অবশ্যই ফলপ্রসূ।

পিপি-ন্যালিনির যেমন তাদের সন্তানের প্রতি ছিল প্রচণ্ড ভালোবাসা, সন্তানদেরও ছিল ঠিক তেমনই তাদের বাবা-মার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। তারা ভালোবাসত তাদের মাকে আর শ্রদ্ধাপূর্ণ অনুসরণ করত বাবাকে। ন্যালিনিকে ভালোবাসার কারণ মা হিসেবে সে সন্তানদের কাছে ছিল খুব মিষ্টি স্বভাবের, নম্র, সুন্দরী তো বটেই, সেই সাথে একেবারেই নির্ভরযোগ্য। অপরদিকে বাবা ছিল বেশ দৃঢ় ও শক্তিশালী।

বাবা ও মা খুব ভালো শিক্ষকে পরিণত হয়েছিল। মায়ের কাছে তারা শিখত সামাজিক রীতি-নীতি, ভালো আচার-ব্যবহার, নৃত্য, পোশাক পরিচ্ছদের নিয়ম-কানুনসহ জীবন চলার পথের বিভিন্ন আদব-কায়দা। বাবা তাদের শেখাত কিভাবে ছেলেমেয়েরা তাদের শারীরিক বিপদ-আপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে, এথলেট হিসেবে শারীরিক গঠনের কলা-কৌশল, আর এসবের সাথে গ্যাম্বলও। বাবার কাছে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে ছেলেমেয়েদের বেশ কষ্ট হতো, কিন্তু কখনোই বাবার প্রতি তারা বিরক্ত বোধ করত না। এর কারণ পিপিও তার সন্তানদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিত না কিছু যা কিছু সে করত অত্যন্ত নিয়ম-শৃঙ্খলার মাঝে। রাগ হতো না সে কখনো, শেখাত স্নেহের সাথে। বন্ধুর মতো।

ক্রস ছিল একেবারে ভয়-ভীতিহীন দুর্দান্ত চঞ্চল এবং স্বভাবগত নমনীয়। এদিক থেকে ক্লডিয়া তার ভাইয়ের মতো শারীরিক আচরণে খুব একটা উৎসাহিত না হলেও নিশ্চিতভাবেই ছিল একটু একগুঁয়ে।

কিছুদিনের মধ্যেই একটি বিষয়ে ন্যালিনির খটকা লাগল। প্রথম প্রথম বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি সে। কিন্তু পরে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। তাসের বিভিন্ন রকমের খেলা যেমন পোকার, ব্ল্যাক জ্যাক, জিন এসব যখন বাচ্চাদের শেখাত পিপি, ন্যালিনি তেমন গা করেনি। কিন্তু খেলাগুলো শেখাতে গিয়ে পিপি তাদের যখন কার্ডের ফাঁক-ফোকর চুরিবিদ্যা, প্রতারণামূলক দিকগুলো তুলে ধরত, তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ যখন সে কৌশলে, নিয়ে নিত তখন ক্ষেপে যেত ন্যালিনি। ক্রসের চেয়ে এ বিদ্যায় ক্লডিয়া এগিয়ে গিয়েছিল অনেক বেশি পারদর্শীও হয়ে উঠেছিল বেশ। পিপি অবশ্য পরে ছেলে-মেয়ের সাথে যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল তা সবিস্তারে বর্ণনা করত। ন্যালিনি তখন রাগ হয়ে পিপিকে বলত–আমি মনে করি, তুমি ছেলে-মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছ, যেভাবে তুমি খেলছ আমার সাথে। পিপি তখন প্রতিউত্তরে বলত, এটাও তাদের শিক্ষার একটা অংশ। ন্যালিনি বলত, এটা কোনো ভালো শিক্ষা নয়, দুর্নীতির প্রশিক্ষণ। তখন পিপি বলত– আমি চাই সন্তানরা যাতে জীবনের বাস্তব দিকগুলো শেখে এবং এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু ন্যালিনি তা চাইত না। ন্যালিনির ইচ্ছে— সন্তানরা যাতে জীবনের সুন্দর দিকগুলোর প্রতি উৎসাহিত হয়ে ওঠে।

পিপির টাকা রাখার একটি ওয়ালেট ছিল। তা সবসময় পরিপূর্ণ থাকত পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থে। ন্যালিনি মনে করত, একজন ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে এটা অসম্ভব কিছু নয়, তবে সন্দেহও যে হতো না, তা নয়। এটা সত্য যে পিপি একটি বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক একটি কালেকশন এজেন্সি। কিন্তু এ থেকে পিপির যা আয়, তার চেয়ে তারা অনেক বেশি সচ্ছল, ধনী— বিষয়টি প্রায়ই ন্যালিনিকে ভাবিয়ে তুলত।

অবকাশ যাপনে কিংবা অন্যান্য ভ্যাকেশনে তারা কখনো যেত পূর্বে, কখনো ক্লেরিকুজিও’র বিস্তৃত পরিবারের আশপাশের কোনো অঞ্চলে। সেসব জায়গায় তীক্ষ্ণ ধীসম্পন্ন ন্যালিনি দেখত সবাই তাদের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল এই শ্রদ্ধা একেবারেই ভিন্ন। কখনো কখনো পিপি সেই পরিমণ্ডলের লোকজনের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে গোপনীয় আলোচনায় ডুবে যেত– সেখানে ন্যালিনির প্রবেশাধিকার থাকত না। এসব দেখে বিস্মিত হতো ন্যালিনি। তার মনে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা হতো।

আরেকটি ছোট বিষয় নিয়েও ন্যালিনির মনে প্রশ্ন জাগত। সেটা হচ্ছে পিপির প্রায়ই অর্থাৎ প্রতি মাসেই অন্তত একবারের জন্য হলেও ব্যবসায়িক কারণে বাইরে সফর। কিন্তু ন্যালিনি এসব সম্পর্কে কখনোই বিস্তারিত কিছু জানতে পারেনি। পিপিও এ বিষয়ে কখনো কিছু বলত না। সে বৈধভাবেই লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও বহন করত– একজন কালেক্টর হিসেবে বড় পরিমাণ অর্থ লেনদেন বিষয়ে অস্ত্র সাথে রাখাটা অযৌক্তিক নয়– অন্তত ন্যালিনি এ ব্যাপারে এমন একটি যুক্তি মনে মনে দাঁড় করিয়েছে। পিপি যথেষ্ট সতর্ক মানুষ। তার আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো অংশই পিপি ন্যালিনি কিংবা সন্তানদের হাতের নাগালে রাখত না, বুলেটগুলো তালাবন্দি করে রাখত পৃথক এক স্থানে।

এভাবেই বছর চলে যাচ্ছিল আর পিপিরও ব্যবসায়িক সফর বাড়ছিল ক্রমেই। ন্যালিনি বেশিরভাগ সন্তানদের নিয়েই একাকী থাকতে লাগল সময়। যতই দিন যাচ্ছিল, পিপি-ন্যালিনির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে অবনতি ঘটছিল ক্রমেই। স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্কে দেখা দিয়েছিল টানাপোড়েন। পিপি যেন তার স্বভাবসুলভ কামনা সম্ভোগ থেকে দূরে সরে পড়ছিল– হয়ে উঠছিল সংযত এবং সহানুভূতিশীল। দুজনার দূরত্ব বেড়ে গেল আরো বেশি।

একজন মানুষের পক্ষে তার সহজাত প্রবৃত্তি অত্যন্ত আপনজনের কাছে, অন্তত যার সাথে সে তার জীবনের সবচেয়ে সান্নিধ্য সময় অতিবাহিত করেছে, সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব। ন্যালিনির চোখে ধরা পড়ল পিপি যেন নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত সে তার উচ্ছলতাটুকুও ঢেকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পিপি প্রকৃতির উচ্ছ্বাস লঙ্ঘন করেছে কখনো, কিন্তু ন্যালিনিকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। তবে তার এই লুকানো প্রবণতাকে ঢাকতে নিজের স্বভাবজাত উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতা প্রকাশের চেষ্টা করত সেটা ছিল। নিছক মেকি– ছদ্মবেশ। স্ত্রীর প্রতি তার আচরণ ছিল আগের মতোই অমায়িক, তবে ন্যালিনি পেত বিপদের আভাস–স্বাভাবিক মনে হতো না তাকে।

পিপির ছোটখাটো কিছু নির্বুদ্ধিতা তাকে মানুষের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলত আনন্দ পেত অনেকে এই নির্বুদ্ধিতায়। কিছু কিছু বিষয়ে সে বোকার মতো আনন্দ করত কিংবা কষ্ট পেত। আর তার এই অনুভূতি সহানুভূতি হতো অনেক মানুষ কিংবা অনেকের অনুভূতি-উপলব্ধিকে সে তাদের মতো করেই নিত। একবার এক দম্পতিকে ইতালীয় এক রেস্তোরাঁয় ডিনারের নিমন্ত্রণ করে সে। দম্পতিটি ইতালীয় খাবারত দামের কারণে বেছে বেছে খেতে শুরু করে। পিপি এ অবস্থা দেখে নিজের খাবার আর শেষ করতে পারেনি।

ন্যালিনিকে পিপি ভেগাসে তার কালেকশন এজেন্সি সম্পর্কে, তার কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়েছে। ভেগাসের বড় বড় হোটেলগুলো তার ক্লায়েন্ট। এই হোটেলগুলোয় যে গ্যাম্বলিং চলে তার নির্দিষ্ট একটা আয় পিপির এই এজেন্সিকে দিতে হয়। জুয়াড়িদের কাছ থেকে আয়ের অংশ নেয়া দুরূহ বিধায় পিপি নতুন কৌশলে গ্যাম্বলিং মেকার অর্থাৎ যারা গ্যাম্বলিংয়ের পয়েন্ট লিপিবদ্ধ করে, তাদের কাছ থেকে আদায় করে নেয়।

একটি বিষয়ে পিপি ন্যালিনিকে প্রায় বলত, জোর করে কখনো ভালো কিছু আদায় সম্ভব নয়- অব্যাহত চলতে থাকা বিশেষ কিছু বিষয় বা ক্ষেত্র ছাড়া। যারা ঋণ শোধ করবে, এটা তাদেরও একটি মান-সম্মানের বিষয়। আসলে, প্রত্যেকেই যার যার কাজে দায়িত্বশীল এবং এই দায়িত্বশীলতাই তাকে রক্ষা করে যদি সে প্রতিনিয়ত বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি না হয়।

বিশেষ করে চিকিৎসক, আইনজীবী কিংবা করপোরেশনের প্রধান কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে তাদের সম্মান বজায় রাখতে প্রশংসনীয় আচরণ করে থাকে– মোটামুটি দর কষাকষিকে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে। তাদের কছ থেকে অর্থ আদায় করে নেয়াটা কঠিন নয়। আচরণ যদি তাদের নেতিবাচক হয়, তবে তাদের কর্মক্ষেত্রে গিয়ে একটু উচ্চবাচ্য করলেই হলো– তাদের ক্লায়েন্টরা শুনবে, জানবে তাদের ভদ্রতার পোশাকের নিচে ভিন্ন জগতের কথা। এজন্য সাধারণত তারা সতর্কতার সাথেই লেনদেন করে থাকে।

তবে যারা ছোটখাটো ব্যবসা করে, তারা এক ডলারে জুয়ার দানে লাগায় এক পেনি। আবার এদের মধ্যে অনেকে একটু বেশিই চালাক—- তারা এমনভাবে চেকে অর্থের পরিমাণ লেখে, যা বাউন্স হবার সম্ভাবনাই বেশি। এটা একটা চমৎকার কৌশল। যেমন জুয়ার দানে এই শ্রেণীর লোক একটি দশ হাজার ডলারের চেক প্রদান করল কিন্তু দেখা গেল তার ব্যাংকের একাউন্টে রয়েছে আট হাজার। এই ক্ষেত্রে তার ব্যাংক একাউন্টটি পিপি পূর্বেই দেখে নেয় এবং চেকটি যাতে বাউন্স না হয় সে জন্য দশ হাজার পূরণ করতে অতিরিক্ত দুহাজার ডলার জমা করে ফেলা হয় তার নামে। দান ধরা লোকটি হেরে গেলে তার একাউন্ট অনায়াসেই শূন্য করা যায়। এমন সব কাহিনী ন্যালিনিকে শুনিয়ে হেসে উঠত পিপি।

এক রাতে পিপি ন্যালিনিকে তার জীবনের একটি মজার কাহিনী বলেছিল– কাহিনীটি ছিল পিপির কাছে হাস্যকর। জানাদু হোটেলের কাছে ছোট একটি শপিং মলের মতো কালেকশন এজেন্সিতে বসে কাজ করছিল পিপি। অফিসে বসেই শুনতে পেল গুলির শব্দ। সাথে সাথে বেরিয়ে এলো সে। দেখল পাশের একটি জুয়েলারি দোকান থেকে মুখোশধারী দুজন ডাকাত পালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কোনো কিছু চিন্তা না করেই পিপি তার বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। তবে ডাকাত দুটি তাদের জন্য অপেক্ষমাণ গাড়িতে লাফিয়ে উঠে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে পৌঁছল ঘটনাস্থলে এবং আশপাশের মানুষের কাছে জিজ্ঞেসাবাদের পর তারা পিপিকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেল– যদিও নিশ্চিতভাবেই তারা জানত পিপির অস্ত্রটি লাইসেন্সকৃত। কিন্তু গায়ে পড়ে এমন আচরণ একটি অপরাধ বলেই বিবেচিত। অবশ্য আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট থানায় গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

গল্পটি বলতে বলতেই পিপি নিজের কাছেই প্রশ্ন করল, আমি জঘন্য কাজটি কেন করেছিলাম? আলফ্রেড আমাকে বলেছিল, আমার মধ্যে নাকি শিকারে তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল তখন। কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। এই আমিই কি ডাকাতদের গুলি করেছিলাম? সমাজ রক্ষায় আমি কি এ কাজ করেছিলাম? যে উদ্দেশ্যেই হোক আমার অপরাধের সাজা তারা আমাকে গ্রেফতার করে দিয়েছিল। এই আমাকেই তারা থানায় আটকে রেখেছিল।

কিন্তু এই ছোট ঘটনাটিই, পিপির চরিত্রের একটি সামান্যতম অংশের এই খুনে মনোভাব ন্যালিনির মনে দাগ কেটেছিল। পিপির চরিত্রের গোপনীয় এই সত্যটি ন্যালিনিকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে যা অবশেষে ন্যালিনিকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে …

.

সান্তাডিও ফ্যামিলির ড্যানি ফিউবার্টা। নিজের উপার্জনের ওপর লোন নিয়ে নিউইয়র্ক ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি পরিবহন সংস্থা চালাচ্ছে সে আপন মালিকানায়। লুপ্তপ্রায় সান্তাডিও ফ্যামিলির এই সদস্যটির আয়ের বেশিরভাগ অর্থই আসে ভেগাসে অভ্যাগত অতিথিদের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করে। অফিসিয়াল পদবিতে যাকে বলা হয় জাঙ্কেট মাস্টার। ড্যানি ফিউবার্টার পদবি এটি।

বিভিন্ন শহরের গ্যাম্বলারদের জন্য ভেগাসে অবকাশ যাপনের সুবন্দবস্ত করে থাকে একজন জাঙ্কেট মাস্টার। ফিউবার্টার কাজটিও তেমনই–গ্যাম্বলারদের ধরে রাখতে সে তার পরিবহন সংস্থার ব্যবহার তো করেই, ভেগাসের হোটেলগুলোর সাথেও তার রয়েছে চুক্তি। ফিউবার্টার রয়েছে নিজস্ব একটি ৭৪৭ জেট। প্রতি মাসে এতে সে বহন করে দুই শতাধিক যাত্রী, যারা কেবল ভেগাসের জানাদু হোটেলে আসে শৌখিন গ্যাম্বলার হয়ে।

ফিউবার্টার দেয়া এই বিশেষ প্যাকেজ সুবিধায় গ্রাহককে দিতে হয় কেবল হোটেল রেন্ট। একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া মোটে এক হাজার ডলার। আর এর বিনিময়ে ফিউবার্টার গ্রাহকরা পায় নিউইয়র্ক থেকে ভেগাসে বিমানের ফ্রি রাউন্ড ট্রিপ, যাতায়াতকালে বিমানের ফ্রি খাওয়া-দাওয়া, হোটেলে ফ্রি কক্ষ এবং খাদ্য ও পানীয়। ফিউবার্টা সবসময় তার গ্রাহকদের খুশি করতে সচেষ্ট গ্যাম্বলিংয়ে উচ্চতর পর্যায়ে খেলার সুবিধাসহ প্রতিদিন ক্যাসিনোয় গ্রাহকরা পায় নিশ্চিতভাবে চার ঘণ্টা করে সময়। ফিউবার্টার গ্রাহকরা হোটেল জানাদুর ক্যাশে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাও পেয়ে থাকে।

ফিউবার্টার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সমাজের ভয়ানক অপরাধীদের সথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী, সিগারেট চোরাচালানিসহ নিউইয়র্কের নিকৃষ্ট পেশাজীবীর লোক। আর এই লোকগুলোই ফিউবার্টার সবচেয়ে ভালো গ্রাহক। আসলে এই পেশাজীবীর লোকজন তাদের কর্মকাণ্ডের জন্যই সবসময় মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে দিন অতিবাহিত করে। এই একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মানসিক পরিতৃপ্তি পেতে তারা জানাদু হোটেলে তাদের অবকাশ যাপনের জন্য ছুটে আসে। কালো পথে উপার্জিত তাদের প্রচুর কালো টাকা জুয়ায় উড়িয়ে দেয়, কিংবা আয়ও করে এ থেকে— গ্যাম্বল যেন তাদের মানসিক তৃপ্তির এক অসাধারণ উপায়।

জানাদু হোটেলে প্রতিদিন দুশ যাত্রী সরবরাহ করতে পারলে ড্যানি ফিউবার্টা তার কমিশন হিসেবে পায় কুড়ি হাজার ডলার। অনেক সময় জানাদু হোটেলের তরফ থেকে কিছু বোনাস অর্থও পেয়ে থাকে সে। যদি ফিউবার্টার কাস্টমাররা গ্যাম্বলিংয়ে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হেরে যায় তাহলে এই অর্থের একটা ভাগও সে পায় বোনাস হিসেবে। অর্থাৎ প্রতিদিন ফিউবার্টা তার প্যাকেজ থেকে পায় বিশাল পরিমাণের একটা অংক। তবে দুর্ভাগ্যবশত ফিউবার্টাও গ্যাম্বলিংয়ে মারাত্মক রকমের আসক্ত। আর এর ফলে তার আয়ের অধিকাংশই তাকে খোয়াতে হয় জুয়ায় অনেক সময় তার আয়ের অতিরিক্তও চলে যায়

তবে, যার রয়েছে এমন আয়ের সুবিধা, গ্যাম্বলিংয়ে ব্যাপক হারের পরও এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তার বেগ পেতে হয় না। নতুন ভাবে পুনরায় সচ্ছলতার পথ ফিউবার্টা সফলতার সাথেই বের করে নেয় আবারও সচ্ছল হয়ে ওঠে। তবে ক্যাসিনোর জাঙ্কেট মাস্টারের দায়িত্ব পালনকালে ফিউবার্টা আগেই তার ক্যাসিনো কাস্টমারদের ক্রেডিট কার্ড কিংবা ব্যাংক একাউন্ট পরীক্ষা করে নেয়।

ফিউবার্টার রয়েছে একেবারেই উপযুক্ত একটি সশস্ত্র পাণ্ডা দল। তাদের সাথে সে একবার জানা হোটেলের আট লাখ ডলার চুরির পরিকল্পনা করে। এ প্রেক্ষিতে সে তার চার জন লোককে গার্মেন্টের মালিক সাজিয়ে অত্যন্ত উচ্চ রেটিংয়ের নকল ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হোটেলে পাঠায়। আর এদের বিস্তারিত জীবন বৃত্তান্ত ফিউবার্টা তার এজেন্সি থেকে সরবরাহ করে, যাতে অন্তত জানাদু হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। ফিউবার্টা তার এজেন্সির রিপোর্টে জানায়– এই চার ব্যক্তির প্রত্যেকের ক্রেডিট কার্ডের লিমিট দুই লাখ ডলার করে। যার ফলে তারা ক্যাসিনোতে অংশগ্রহণে সক্ষম।

ক্যাসিনোতে এই চারজনের উচ্ছ্বাস-উদ্যম যেন মাতিয়ে রাখে। তাদের এই উৎসবপূর্ণ অবস্থা দেখে গ্রোনিভেল্ট বলেছিলেন– ওহ, এ যেন এক পিকনিকের আমেজ।

ফিউবার্টার এই অর্থ চুরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে তার লোকজনকে হোটেলে থাকতে হয়েছিল দুদিন। এই দুদিনে ফিউবার্টা ও তার দলের রুম সার্ভিস বিল হয়েছিল প্রচুর। তারা ডিনারে আমন্ত্রণ জানাত সুন্দর সুন্দর মেয়ের দলকে।

গিফট শপগুলোতে নামের সই-স্বাক্ষর করেই সেই রূপসীদের পাঠিয়ে দেয়া হতো। ক্যাসিনো থেকে তারা নিত সব সময় ব্ল্যাক টিপস।

দুটো ভাগে ভাগ করেছিল ফিউবার্টা তার দলকে। ক্যাসিনোয় একটি দল খেলত ডাইসের বিরুদ্ধে, আর অপর দলটি পক্ষে। এ উপায়ে তারা হেরেও যেত। আর তাই হারতে হারতে এক সময় তারা দশ লাখ ডলারের দান বসাত। এটা করার কারণ ছিল, ফিউবার্টা এই দান দেখে এক পর্যায়ে ক্যাশ যাচাইয়ের জন্য যেতে উদ্যত হবে। আসলে এ সবই ছিল অভিনয়। ফিউবার্টার লোকজনের ভাব দেখে মনে হতো তারা যেন মারাত্মকভাবে ডুবে গেছে জুয়ায়। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তারা এ অভিনয় চালিয়ে যেত- ডাইসের কাছে গিয়ে তারা যেন প্রার্থনা করতে শুরু করত। দান হেরে গেলে মারাত্মক মুষড়ে যেত এবং জিতলে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত।

এভাবেই শেষদিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন তারা ফিউবার্টার কাছে ক্যাশ করানোর জন্য তাদের পুরনো চিপসগুলো দিয়ে নতুন চিপস সংগ্রহ করল। এই হাস্যকর অবস্থার যখন সমাপ্তি ঘটল তখন দেখা গেল সিন্ডিকেট আট লাখ ডলারের ধনী– যারপরনাই খুশিও হয়েছিল তারা এই আয়ে।

ড্যানি ফিউবার্টা, এই অভিনব কৌশলের পরিকল্পনাকারী। দুদিন শেষে তার ঝোলায় ভরেছিল চার লাখ ডলার আর অবশিষ্ট অংশের অংশীদার সেই চার-ডাকাতও তাদের পাওনা বুঝে পেয়ে খুশি হয়েছিল। বিশেষ করে ফিউবার্টা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যখন তার ডাকাত দলের সদস্যদের ফ্রি খাদ্য, মদপান, সুন্দরী ললনা এসব শর্ত পূরণ করেছিল তখন তাদের বসের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছিল আরো বেশি।

কিন্তু ফিউবার্টার এই ডাকাতির সব কিছুই ধরা পড়েছিল গ্রোনিভেল্টের  কাছে। দুদিনব্যাপী ডাকাতির পরের দিন গ্রোনিভেল্ট সব কিছুই জনসমক্ষে প্রকাশ করে ফেলেন। জনদু হোটেলের সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল এসব— এই ক্যামেরায় বাদ যায়নি ফিউবার্টার ক্যাসিনো জাঙ্কেটর কর্মকাণ্ডও। সার্ভিলেন্স ক্যামেরাকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন আকাশের চোখ। অবশ্য গ্রোনিভেল্ট এই সার্ভিলেন্স ক্যামেরাগুলো চালু করে দিয়েছিলেন মূল অপারেশনের দশ মিনিট আগে– ক্যাসিনোর ক্যাশে অস্বাভাবিক অর্থ হ্রাসের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনি তৎপর হয়েছিলেন।

গত কয়েক বছরে জানাদু হোটেলে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। গ্রোনিভেল্ট বেশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে ফিউবার্টার ডাকাতি চক্রান্তটি ছিল বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ঘটনা। দীর্ঘ দিন ধরে একের পর এক এমন অর্থচুরির ঘটনায় গ্রোনিভেল্ট উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে সার্ভিলেন্স ক্যামেরার সাহায্য নিতে বাধ্য হন। গুরুতর অপরাধ ধরা পড়ার পরও তিনি ফিউবার্টার বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, তাকে ভালোবাসতেন গ্রোনিভেল্ট। এর কারণ মানুষটি জানাদু হোটেলের আয়ের অন্যতম উৎস। তাছাড়া গ্রোনিভেল্টও যে মাঝে মাঝে নকল আইডি প্রদর্শন করেন, তা ফিউবার্টা বেশ ভালোই জানে। বিষয়টি তার কাছ থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ারও ভয় আছে। তবে ফিউবার্টার সেই ডাকাতি পরিকল্পনার সমস্ত তথ্য গ্রোনিভেল্ট প্রথমে পিপি ডি লিনাকে জানান। পিপি ফিউবার্টাকে চেনে কিন্তু সেই চার সদস্য সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। গ্রোনিভেল্ট পৃথক পৃথক গোপন ক্যামেরা ও স্থির চিত্র ধারণ করে পিপির কাছে ছবি ও ভিডিও ফুটেজগুলো দেন।

গ্লোনিভেন্টের কাছে তথ্য ও প্রমাণগুলো পেয়ে পিপি মাথা নেড়ে বলল, ড্যানি কি করে ভাবল যে এমন এক অপরাধ করে সে পার পেয়ে যাবে? আমি তাকে জানাদু হোটেলের একজন স্মার্ট প্রতিনিধি ভেবেছিলাম।

সে একজন জুয়াড়ি গ্রোনিভেল্ট বললেন। তারা মনে করে তাদের কার্ডগুলো সব সময়ই জয়ের কার্ড। একটু থামলেন। তারপর বললেন, ড্যানি হয়তো তোমাকে ফুসলানোর চেষ্টা করবে। সে হয়তো বলবে সে এসবের কিছুই জানে না। তবে মনে রেখো, ফিউবার্টাকে প্রমাণ করতে হবে এ বিষয়ে। সে হয়তো বলবে, সে যে এই বিপুল পরিমাণে অর্থের হেরফের করেছে, তা তাদের আইডির ওপর ভিত্তি করেই। অবশ্য একজন জাঙ্কেট মাস্টারকে যে কোনো অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির সমস্ত তথ্য প্রমাণ করতে হয়।

পিপি গ্রোনিভেল্টের  কথায় হাসল। গ্রোনিভেল্টের গায়ে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করে বলল, চিন্তা করো না, সে আমাকে ফুসলাতে পারবে না।– এ কথায় পিপি ও গ্রোনিভেল্ট উভয়ে হেসে উঠল। ড্যানি ফিউবার্টা যদি অপরাধী হয়েও থাকে, তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাকে দায়ী করা হচ্ছে তার ভুলের জন্য।

কুওগে ক্লেরিকুজিও পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পিপি পরদিনই নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হলো।

.

প্রহরী-সুরক্ষিত প্রধান ফটক পেরিয়ে ইট বিছানো রাস্তার ওপর দিয়ে নিজেই। গাড়ি ড্রাইভ করে এগিয়ে যাচ্ছিল পিপি। রাস্তার দুধারে হেঁটে দেয়া ঘাসের মসৃণ সবুজ খোলা মাঠ। চারপাশের দেয়ালগুলোয় কাঁটাতারের বেড়া, তাতে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং স্বয়ংক্রিয় কিছু আগ্নেয়াস্ত্র।

ম্যানসন পর্যন্ত পৌঁছেই পিপি দেখতে পেল একেবারে ফটক বরাবর দাঁড়িয়ে আছে একজন গার্ড, এর অর্থ এখন এখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।

ম্যানশনের কাছে পৌঁছতেই বেরিয়ে এলো জর্জিও। পিপিকে অভিনন্দন জানাল সে। তারপর পিপিকে নিয়ে হেঁটে এলো পাশের একটি বাগানে। বাগান ভরা টমেটো ও শসার গাছ, সুন্দরভাবে বিন্যস্ত লেটুস ও তরমুজের পৃথক পৃথক ক্ষেত। তবে এত বড় এই বাগানে নেই কোনো ফুলের গাছ। ফুলের জন্য এখানে কোনো জায়গাই রাখেননি ক্লেরিকুজিও।

বাগানেরই এক পাশে মনোরম পরিবেশে পেতে রাখা কাঠের টেবিল। টেবিল ঘিরে বসে রয়েছে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির সদস্যরা। দিনের প্রথমার্ধের লাঞ্চের সময়। ভন স্বয়ং উপস্থিত রয়েছেন নির্ধারিত আসনে। সত্তর বছরের বার্ধক্য তাকে ছোয়নি– উজ্জ্বল, সতেজ এবং সকালের রক্তিম আভা ঘিরে ছিল। তার পূর্ণ অবয়বে। দূর থেকে ভেসে আসছিল ডুমুর জাতীয় ফল দিয়ে তৈরি পানীয়ের মিষ্টি সুবাস।

ডন তার দশ বছরের নাতি ডেন্টিকে কিছু একটা খাওয়াচ্ছিলেন স্নেহের সাথে। ক্রসের সমবয়সি ডেন্টি। বয়স অনুপাতে সুস্বাস্থ্যেরও অধিকারী, তবে সবেমাত্র বালক হিসেবে দাম্ভিকতাই যেন তার প্রধান ভূষণ। ডন নিজ হাতে তাকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন, আর আলোড়িত ডেন্টি বিভিন্ন মুখভঙ্গিমা আর আহাদি বিলাপ বকে যাচ্ছিল। দাদু-নাতির এ তামাশা দেখে বিব্রত বোধ করছিল ভিনসেন্ট এবং পেটি।

পিপি টেবিল ঘিরে একটি শূন্য চেয়ার দখল করে বসল। ডেন্টির খাওয়ার পর্ব শেষ না হওয়া অবধি মিটিং শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশেষে ডেন্টির মা রোজ ম্যারির হস্তক্ষেপে সে পর্বের সমাপ্তি ঘটল। ডেন্টি যখন তার মায়ের সাথে হেঁটে চলে যাচ্ছিল ডন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ডেন্টির দিকে হয়তো খানিকটা উদাসও হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ফিরে এলেন, তাকালেন পিপির দিকে। তবে ডেন্টির রেশ তখনও ছিল তার মননে– কুলরক্ষক ভবিষ্যতের ডন ডেন্টির উদ্দেশে একটা দীর্ঘশ্বাসই ফেললেন ক্লেরিকুজিও।

পিপির উদ্দেশে বললেন, ওই ফিউবার্টা, রাসকেলটার সম্পর্কে কি ভাবছ তুমি? আমরা তাকে দিয়েছি জীবিকা। আমাদের খরচেই তাকে আমরা পেটুক বানিয়ে তুলছি।

জর্জিও স্বভাবসুলভ শান্ত কণ্ঠে বলল, আত্মসাৎকৃত অর্থগুলো যদি সে ফিরিয়ে দেয় তবেই সে আগের মতো আমাদের হয়ে কাজ করতে পারবে। জর্জিও’র এই ছিল ফিউবার্টার জন্য একমাত্র ক্ষমা পাওয়ার পথ।

এটা কোনো ছোট অংকের টাকা নয়, ডন বললেন, টাকাটা তার কাছ থেকে অবশ্যই আমাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। ডন পিপির মতামত জানতে চাইলেন।

ফিউবার্টার উদ্দেশ্যে গালাগাল করে পিপি বলল, আমি চেষ্টা করতে পারি তবে তার মতো মানুষ তাদের দুঃসময়ের জন্যও একটি পেনিও জমা করে রাখে না।

ভিনসেন্ট ফিউবার্টার উদ্দেশে বিড়বিড়িয়ে শ্রাগ করল। বলল, দেখি ছবিগুলো দেখাও তো পিপি এক এক করে ছবিগুলো দেখাতে লাগল। ভিনসেন্ট এবং পেটি গভীর মনোযোগে দেখছিল সেই অস্ত্রধারী চার ডাকাতের ছবি। কিছুক্ষণ পর উজ্জ্বল হয়ে উঠল ভিনসেন্টের মুখ। সে বলল, আমি এবং পেটি তাদের চিনি।

পিপি উল্লসিত হয়ে বলল, দারুণ! তাহলে তোমরা এখনই ওই চারজনের তথ্য খুঁজে বের করো। ডনের উদ্দেশ্যে পিপি প্রশ্ন করল, ফিউবার্টার ব্যাপারে কি করা যায়?

ডন বললেন, তারা আমাদের উদ্দেশ্যে ঘৃণা প্রদর্শন করেছে। তারা কি জানে না আমাদের পরিচয়? যারা নির্বোধ, শক্তিহীন তারা যাবে পুলিশের কাছে। ভিনসেন্ট এবং পেটির উদ্দেশে ডন বললেন, তোমরা পিপিকে সহযোগিতা করো। আমি তাদের কাছ থেকে আমাদের অর্থ ফেরত পেতে চাই। আর ওই বিচ্ছগুলো তাদের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

ডনের নির্দেশ ও মনোভাব উপস্থিত সবাই বুঝল। পিপির চেহারা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করল। সবাই বুঝতে পারল ডনের উপযুক্ত শাস্তির অর্থ পাঁচ জনের অবধারিত মৃত্যু।

ডন সভা থেকে উঠে গেলেন। শরীর ধরে রাখতে এ সময়টায় তিনি বাগানে কিছুটা সময় পায়চারি করে কাটান। সে উদ্দেশ্যেই সরে পড়লেন তিনি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল জর্জিও, আমাদের সময় অনুপাতে এই বৃদ্ধ অত্যন্ত কঠোর। তার যতগুলো কঠোর দিক আছে তার চেয়ে এই নির্দেশটি আমাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

অবশ্যই। তবে এতে ভিনি এবং পিটি যদি না জড়াত, তবেই হয়তো ভালো হতো, পিপি বলল। ভিন্স, তুমি কি বলো?

ভিনসেন্টও দ্বিধান্বিত। জর্জিও’র উদ্দেশ্যে বলল, বুড়োর সাথে তোমাকেই এ বিষয়ে আলাপ করতে হবে। ভিনসেন্ট যুক্তি দিয়ে বুঝাল জর্জিওকে যে, তাদের কাছ থেকে এমনিতে একটি পেনিও আদায় করা যাবে না। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে আমরা তাদের সাথে চুক্তি করব, তারা যেন এই পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে যায় এবং উপার্জন করে যেন আমাদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়। এছাড়া যদি তাদেরকে আগেই মাটি চাপা দেয়া হয় তবে একটি পেনিও আদায় করা সম্ভব হবে না।

ভিনসেন্ট যথেষ্ট বাস্তববাদী। সে কখনোই রক্তের জন্য পিপাসু নয়। এর চেয়ে অন্য কোনো বাস্তব উপায়ে সমাধান বের করতেই তার উৎসাহ বেশি।

ঠিক আছে, আমি না হয় বাবাকে বুঝাব যে তারা প্রকৃত দোষী নয়। তারা ছিল কেবল সাহায্যকারী। কিন্তু ফিউবার্টার ঘাড়ে যে চেপে যাবে আরো বড় অপরাধ, তার নিয়তি ঠেকাবে কিভাবে?

পিপি এবার মুখ খুলল, জাঙ্কেট মাস্টারকে এ খবরটি এখনই জানিয়ে দিতে হবে।

কাজিন, পিপি, জর্জিও ঈষৎ হেসে ফেলল। বলল, এর জন্য তুমি কেমন বোনাস আশা করছ?

কাজিন বলে সম্বোধন করলে পিপি মনোক্ষুণ্ণ হয়, ঘৃণা করে সে এই পরিবারকে, বিশেষ করে জর্জিও ডাকলে তার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। কারণ সে পিপির সাথে কেবল কোনো বিষয়ে সমঝোতায় আসার সময় এ সম্বোধন করে থাকে। ভিনসেন্ট এবং পেটি কাজিন ডাকলে পিপির ততটা খারাপ লাগে না। সে জানে তারা কোনো রকম আকর্ষণ কিংবা উদ্দেশ্য ছাড়াই কাজিন বলে ডাকে।

জর্জিও’র প্রশ্নের জবাবে পিপি বলল, ফিউবার্টার বিষয়টি আমার। ধরো তোমরা আমাকে কালেকশন এজেন্সি দিয়েছ। এই সুবাদে আমি জানাদু থেকে একটা মজুরি পাই। তবে এখন যদি আমাকে প্রাপ্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতে বলা হয়, তা হবে অত্যন্ত কঠিন– আর তাই আমারও উচিত হবে সেখান থেকে একটা অংশ নেয়া, যেমনটি ভিন্স এবং পেটি তাদের নির্ধারিত ক্ষেত্র থেকে পেয়ে থাকে।

সেটা ঠিক, জর্জিও বলল। কিন্তু এ বিষয়টি তো তোমার কালেকটিং মাকারের মতো নয়। তাছাড়া তুমি পঞ্চাশ শতাংশ আশা করতে পারো না।

না, না, তা তো নয়ই, পিপি বাধা দিয়ে উঠল। বলল, আমি কেবল একটা উদাহরণ দিলাম। আমাকে একটু আমার ঠোঁটটা তত ভেজাতে দাও!

পিপির কথায় হেসে উঠল সবাই। পেটি জর্জিওকে উদ্দেশ্য করে বলল, মূল্যহীন কথা বলল না। আর তাছাড়া তুমি চাও না যে আমি এবং ভিনসেন্ট বাটালি হই।

ব্রঙ্কস এনক্লেভের পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে পেটি– এনক্লেভের প্রধান কর্মকর্তা পেটির বড় গুণ হচ্ছে সমাজের নিচু স্তরের লোকজনদের ধনী করে তোলার জন্য সে সচেষ্ট অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে সবসময়। এ প্রক্ষিতে তার অংশও পেটি মাঝে দিয়ে দেয়।

তোমরা হচ্ছ পেটুক ধরনের লোক, জর্জিও তিরস্কারের হাসি হাসল। বলল, তবে আমি বুড়োর জন্য কুড়ি শতাংশের সুপারিশ করব।

পিপি জানে জর্জিও’র এই কুড়ি শতাংশের মানে হবে দশ কিংবা পনের শতাংশ। এমন কৌশলের অবতারণা জর্জিও’র অনেক পুরনো দিনের অভ্যাস।

ভিনসেন্ট পিপিকে প্রশ্ন করল, তা নির্ণয় করব? এর মানে ফিউবার্টা কিংবা তার লোকদের যার কাছ থেকে যত টাকাই আদায় করা হোক না কেন, তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে- এটা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতও বটে। অর্থাৎ যাদের কপালে অবধারিত মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেছেন ডন, তাদের বেঁচে থাকার একটা সুযোগ করে দিতে চায় তার পুত্ররা, সেই আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করে। এতে প্রাণে বেঁচে যাবে ফিউবার্টা ও তার চার সদস্য, আর আর্থিক লাভ হবে ডনপুত্রদের। ভিনসেন্ট বুঝতে পারল পিপির কথার সারমর্ম।

পিপি ভিনসেন্টকে আশ্বস্ত করে বলল, নিশ্চিন্ত থাকো ভিন্স। আমিই তা নির্ধারণ করে দেব।

ছোট্ট ডেন্টির দিকে চোখ গেল পিপির। সে দেখল ডনের হাত ধরে ডেন্টি বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ততক্ষণে টেবিলে বসা সবার চোখ সেদিকেই স্থির হলো। পিপি জর্জিও’র মন্তব্য শুনতে পেল আকস্মিক। জর্জিও বলল, ডেন্টি এবং আমার বাবার এই একাকী হেঁটে বেড়ানোটা এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। স্বপ্নের মতো মনে হয়। অথচ বাবা কখনো আমার সাথে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেননি। তাদের দিকে তাকিয়ে উদাসভাবে জর্জিও বলল, তারা সব সময় গিসগিসিয়ে কি যেন অনবরত বলে চলেছে। এক দিক থেকে এটা ভালোই, বুড়ো যথেষ্ট স্মার্ট ও জ্ঞানী, ছোট ডেন্টি তার কাছে শিখবে অনেক কিছু।

পিপির চোখে পড়ল ডেন্টি যেন মাথা উঁচিয়ে ডনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে। তাদের এই কথোপকথনকে মনে হলো ডন এবং ডেন্টি যেন এমন কিছু গোপন পরামর্শ করছে, যা পৃথিবী এবং স্বর্গের কর্তৃত্বপূর্ণ কোনো বার্তার আদান-প্রদান।

অত্যন্ত সতর্ক পিপি ডি লিনা, সতর্ক তার পরিকল্পনা। অল্প সময়ের মধ্যেই পিপি ড্যানি ফিউবার্টার কেস দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে শুরু করল। এর জন্য সে শুধু গরিলার মতো ছোটাছুটি করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাকে হতে হয়েছে রীতিমতো দক্ষ কারিগর। প্রতিটি ক্ষেত্রে পিপি মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়ের অবতারণা করেছে শক্তি প্রয়োগ করে নয়। তবে ফিউবার্টা ও তার সঙ্গীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে প্রাথমিক অবস্থায় পিপিকে তিনটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার লক্ষ্য প্রথমত, তাকে আত্মসাৎকৃত সমস্ত টাকা উদ্ধার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভিনসেন্ট এবং পেটির সাথে সতর্কতামূলক সমন্বয় সাধন করতে হবে (অবশ্য এই পর্বটি খুব কঠিন নয়। পেটি এবং ভিনসেন্ট উভয়েই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ। দুই দিনের মধ্যেই তারা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিনিধিদের নামিয়ে দিল অপরাধীদের অনুসরণ করতে। কৌশলে অপরাধীদের কাছ থেকে তাদের অপরাধের স্বীকারোক্তিও নেয়া হলো। তারপর শুরু হলো ক্ষতিপূরণ আদায়ে মোলকলার প্রয়োগ) এবং তৃতীয়ত, ড্যানি ফিউবার্টাকে হত্যা।

ফিউবার্টাকে হত্যা করার কৌশল পিপি অন্যরকমভাবেই চিন্তা করে রেখেছে। সড়ক কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় ফিউবার্টার মৃত্যু পিপির জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আর এর জন্য পিপি তাঁকে বিাঞ্চলীয় একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় নিমন্ত্রণ করবে। তার আগে কৌশলে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পিপি নিজের প্রতি তার আস্থা অর্জন করে নেবে। হলোও তাই। পিপির নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারল না ফিউবার্টা। সে জানে, পিপি জানা হোটেলের পক্ষে কালেক্টর হিসেবে নিয়োজিত। চায়নিজ হোটেলে নিমন্ত্রণ পিপি যে ব্যবসায়িক স্বার্থেই করছে, এটুকু বুঝতে অসুবিধে হয়নি ফিউবার্টার।

চায়নিজ হোটেলে মুখোমুখি হলো দুজন। স্বাভাবিক, সাবলীল ও ধীর ছিল পিপির আচরণ। রেস্তোরাঁর ওয়েটার আসার অপেক্ষায় ছিল তারা। এর মঝে পিপি বলল, গ্রোনিভেল্টের  কাছ থেকে আমি জেনেছি সব। ক্রেডিট কার্ডধারীর শনাক্তের দায়িত্ব বরাবর তোমার। আর এ প্রেক্ষিতে সেদিনের সেই চার অপরাধীর দায়ভারও তোমাকেই বহন করতে হবে।

পিপির দাবি বেমালুম অস্বীকার করল ফিউবার্টা। পিপি একটু ঝুঁকে এলো ফিউবার্টার মুখোমুখি। আলতো করে কাঁধ চাপড়ে পিপি কমরেডের মতো বলল, কাম-অন ড্যানি, কেন মিছেমিছি ভান করছ? গ্লোনিভেন্টের কাছে একেবারে চলমান প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া সেই চারজন তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। একটু থেমে স্বাভাবিক হলো পিপি। আগের মতোই ধীর কণ্ঠে বলল, তুমি কিন্তু দারুণ বিপাকে জড়িয়ে পড়েছ। তবে ইচ্ছে করলে আমি তোমাকে মুক্তি দিতে পারি, যদি তুমি টাকাগুলো ফিরিয়ে দাও। হতে পারে আমি তোমাকে তোমার সেই পুরনো জাঙ্কেট ব্যবসায় পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারি।

এই কথাগুলোর সত্যতা প্রমাণ করতে পিপি চারটি ছবি তুলে ধরল ফিউবার্টার সামনে, এরা হচ্ছে তোমার সেই সাঙ্গ-পাঙ্গ, পিপি বলল। এবং এরা এদের সব দোষ উগরে দিয়েছে। আর সব অপরাধ এখন চেপেছে তোমার ঘাড়ে। এ অবস্থায়, তুমি যদি তোমার ভাগের চার লাখ ডলার ফিরিয়ে দাও, এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সবার কাছে তুমি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ফিউবার্টা ছবিগুলো দেখে বলল, আমি অবশ্য এই ছবির চার ব্যক্তি সম্পর্কে জানি। কিন্তু এরা হচ্ছে প্রচণ্ড রকমের কঠিন লোক তারা কখনোই এমন কথা বলবে না।

পিপি এবার বলল, যে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তিনি স্বয়ং ক্লেরিকুজিও।

হায় কপাল! ড্যানির কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। সরাসরি অস্বীকার করে সে বলল, আমি তখন জানতামই না যে সেই চার ব্যক্তি হোটেলে আছে।

এখন তো জানলে, সাড়াশির মতো চেপে ধরেছে যেন পিপি। বলল, তারা যদি তাদের টাকাগুলো ফেরত না দিত তবে তুমি আরো বিপদে পড়তে।

তোমার সামনে থেকে আমার উঠে যাওয়াটাই ভালো, অপ্রস্তুত হলো ফিউবার্টা।

উঁহু, পিপির শান্ত অথচ কঠিন স্বরে দমানোর চেষ্টা। পিপি বলল, লাভ করতে পারবে না। চারদিকে লাঠি, তাছাড়া পিকিংয়ের হাঁসগুলো কিন্তু বেশ! দেখো, আমি খুব বড় কোনো চুক্তির প্রস্তাব করছি না। সবারই জীবনে এরকম কিছু ভুল হয়ে থাকে, ঠিক? তোমারও হয়েছে। তুমি শুধু টাকাগুলো ফিরিয়ে দাও।

আ-আমার কাছে তার কোনো অবশিষ্টই নেই। আমতা, আমতা করে বলল ফিউবার্টা।

আকস্মিক উত্তেজিত হলো পিপি এতক্ষণ সময়ের কথোপকথনে এটাই তার প্রথম ক্ষুব্ধ আচরণ। পিপি বলল, তোমার অন্তত এতটুকু শ্রদ্ধা দেখানো উচিত ছিল। ঠিক আছে, তুমি এক লাখ দাও আপাতত, বাকি তিন লাখের জন্য আমরা তোমাকে সময় ও ব্যবস্থা দুটোই করে দেব।

অক্টোপাসের আকরে আটকা পড়েছে ফিউবার্টা– পালাতে পারবে না। চিন্তার রেখা কপালে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। মুখ শুকিয়ে যেন ছোট গোল পিঠের মতো হয়ে গেছে। বেশ কিছুটা সময় নীরব থেকে আকস্মিক বলে উঠল, আমি পঞ্চাশ হাজার ফিরিয়ে দিতে পারি।

এই তো, দারুণ, চমৎকার। উল্লসিত হলো পিপি। তবে বাকি অংশের জন্য তুমি তোমার চলমান জাঙ্কেট থেকে প্রাপ্য অর্থ ছেড়ে দেবে। ঠিক আছে?

আমি রাজি। ফিউবার্টা প্রতিউত্তরে বলল।

আর চিন্তা করো না। এবার নাও, সামনের খাবারগুলো উপভোগ করো। একথা বলেই পিপি একটি প্যানকেকের মধ্যে হাঁসের মাংস এবং মিষ্টি সসের মিশ্রণ দিয়ে রোল তৈরি করল। ফিউবার্টার হাতে রোলটি দিয়ে বলল, বিষয়টি খুব ভয়ানক, ড্যানি। ঠিক আছে, আগে খাও তারপর হবে ব্যবসার আলাপ।

তৃপ্তির সাথে খেল পিপি চায়নিজ খাবার। খাওয়ার শেষে চকলেট আইসক্রিমের স্বাদও নিল দুজনে। তারপর পকেট থেকে ডলার বের করে চুকিয়ে দিল বিল। অফিসিয়াল ওয়ার্কিং আওয়ার শেষে ফিউবার্টার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলার পাবার আশায় চায়নিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেল তারা দুজনে। পিপি যথাবিহিত সম্মান দেখিয়ে এগিয়ে দিল ফিউবার্টাকে।

ড্যানি ফিউবার্টা তার আটচল্লিশ বছরের জীবনে সহজভাবে কখনোই কিছু করেনি। চরম অবস্থায় না পৌঁছানো অবধি সে সহজে ছাড় দেয়নি কোনো ক্ষেত্রে। পিপির সাথেও তেমনই আচরণ করল ফিউবার্টা। চায়নিজে পিপির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার পর সেই যে ডুব দিল আর দেখা মিলল না তার। তবে একটি ম্যাসেজ ঠিকই পাঠিয়েছে পিপিকে। পিপির কাছে পাঠানো বার্তায় সে লিখেছে– জানাদু হোটেলের কাছে সে যে ঋণী হয়ে পড়েছে, সেই ঋণ শোধে অর্থ সংগ্রহের জন্য তাকে এলাকা ছেড়ে যেতে হলো।

ফিউবার্টার এ আচরণে পিপি বিস্মিত হয়নি। এমন ক্ষেত্রে সে যে তার পুরনো অভ্যাসের অবতারণা করবে, তা আর নতুন কি? তবে পিপি বুঝতে পারল, ফিউবার্টার কাছে কোনো অর্থ নেই এবং ভিনসেন্ট ও পেটি তাদের নিজ দায়িত্বে ফিউবার্টার চার সঙ্গীর কাছ থেকে ডলার আদয় না করা পর্যন্ত কোনো বোনাস প্রাপ্তিও হবে না।

ফিউবার্টার খোঁজে পিপি ব্রঙ্কস এনক্লেভের কিছু লোক লাগিয়ে দিল। তাকে অপরাধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ঘোষণা করা হলো– ফিউবার্টা ক্লেরিকুজিও’র মোস্ট ওয়ান্টেড লোক। পিপির তৎপরতা তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল এনক্লেভের লোকজন এ গলি, সে গলি, উপশহর, শহরতলি– সম্ভাব্য সব জায়গায়। কিন্তু লাভ হলো না তেমন।

এভাবেই কেটে গেল একটি সপ্তাহ। দিনের পর দিন, সপ্তাহ পেরিয়ে যেতে লাগল, আরো সেই সাথে বাড়তে লাগল পিপির ক্ষুব্ধতা।

সপ্তাহ পেরিয়ে এলো আরেক সপ্তাহ। কিন্তু কোনো ফল এলো না। তবে পিপি অত্যন্ত অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। তার ধৈর্যের সমস্ত বাধ যেন ভাঙল। আগের চেয়ে আরো ভয়ানক হয়ে উঠল তার মানসিকতা।

এদিকে ড্যানি ফিউবার্টা আত্মগোপন করে ছিল আপার ওয়েস্ট সাইডের একটি ছোট হোটেলে। ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরেছিল একজন ক্লেরিকুজিও প্রতিনিধি। ফিউবার্টার সম্ভাব্য খোঁজ পেয়ে সৈন্যটি জানাল পিপিকে। পিপি সেখানে এসে পৌঁছল তাৎক্ষণিক। কিন্তু ততক্ষণে ফিউবার্টা হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। ফিউবার্টার খোঁজে পিপি তখন মরিয়া। আকস্মিক শব্দে পিপি বিস্মিত হলো। ফিউবার্টার আসলে আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। খুব দ্রুত কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে চেয়েছিল ফিউবার্টা। তাই যখন সে পিপিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে লাগল–বুলেটগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। অবশ্য ততক্ষণে পিপিও ফিউবার্টাকে লক্ষ্য করে যে কয়টি গুলি ছুঁড়েছিল, তার পাঁচটিই বিদ্ধ করেছিল তাকে।

তবে ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে পিপির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। কয়েকটি বিষয়ের কারণে পিপি বিপদে পড়ে যায়। বিষয়গুলো হলো– এক. ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তো ছিলই। দুই, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই টহল পুলিশের উপস্থিতি। তিন. পিপি এমন হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে পৌঁছেনি। সে চেয়েছিল, নিরাপদ কোনো স্থানে ফিউবার্টার সাথে আরো এক দফা আলোচনায় বসবে। চার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারত পিপি। কিন্তু, প্রত্যক্ষদর্শীরা স্পষ্ট সাক্ষী দিয়েছিল প্রথমেই গুলি চালায় পিপি। আর এটাই এখন ঘটনার প্রধান অপরাধের সূত্র যে, প্রথম গুলিটি যাবে যার কাছ থেকে অইনত সেই সবচেয়ে ভয়ানক ও অপরাধী ব্যক্তি। পিপি অবশ্য তর অস্ত্রে সাইলেন্সর সংযুক্ত করেছিল। সে ভেবেছিল, নিরাপদ কোনো স্থানে আলোচনাকালে প্রয়োজনে ফিউবার্টাকে হত্যা করে সরে পড়বে।

ফিউবার্টাকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় টহল পুলিশের উপস্থিতিতে পিপি আর কোনো চেষ্টাই করল না। এমনকি নিজের পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করতে সে কোনো কর্মকর্তাকে হত্যাও করল না। এ বিষয়ে ডন ক্লেরিকুজিও’র স্পষ্ট ও কঠোর নির্দেশ পিপি সেই বিশৃঙ্খল মুহূর্তেও পালন করেছিল, সম্মানের সাথে। ডনের নির্দেশ ছিল, কখনো, কোনো অবস্থাতেই যেন আইনের কোনো কর্মকর্তাকে হত্যা করা না হয়। পিপি অক্ষরে অক্ষরে পালন করল তা। পুলিশ দেখে থমকে দাঁড়াল সে, তারপর তার হাতের অস্ত্রটি রাখল পায়ের কাছে লাথি মেরে অস্ত্রটি পৌঁছে দিল পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করল পিপি। কিন্তু স্পষ্ট অস্বীকার করল পথের ওপর পড়ে থাকা মৃত মানুষটির সাথে তার কোনো সম্পর্কের কথা।

এমনভাবে ঘটনাগুলো ঘটে গেল, যেন সবকিছুই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কোনো দৈব ঘটনা নয়, আকস্মিক ঘটনা নয়। পিপির জীবনটাই এমন। সে যতই পরিকল্পনা করুক, সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে যত্নশীল হোক– সমস্যা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরবেই। দুর্ভাগ্য যেন তার নিত্য সঙ্গী। পুলিশ কাস্টোডিতে বসে পিপির এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে যেন, সে অস্বচ্ছ ভাগ্যের ঘূর্ণি আবর্তে ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। তবে এ চিন্তায় ভেঙে পড়েনি সে। বরং সে জানে, এমন অবস্থায় তাকে থাকতে হবে যথাসম্ভব শান্ত-মস্তিষ্ক। আরেক ভরসা ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলি– তারা তাকে ঘূর্ণি আবর্ত থেকে তুলে এনে তীরে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে।

তীরে তরী ভেড়াতে সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো নিমেষেই ভাসতে লাগল পিপির মনে– প্রথমেই পিপির জামিন লাভের জন্য নিয়োগ করা হতে পারে উঁচু দরের উকিল তারপর হবে আইনি মারপ্যাঁচ। বিজ্ঞ বিচারক ও আইনজীবীরা অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে, সাহসিকতার সাথে পিপিকে সুরক্ষার জন্য উপস্থাপন করবে একে একে যুক্তি তর্ক। এসব যুক্তি তর্কে পিপির বিরুদ্ধে হয়তো দাঁড়াবে প্রত্যক্ষদর্শীরা। আইনজীবীরা তাদের দেখা ঘটনাকে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চালাবে। তাদের স্মৃতিশক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এমনকি যে আমেরিকান আইনজীবী তাদের পেশায় বিশ্বস্ত, অনুগত বলে পরিচিত, তারাও হয়তো পিপিকে সরাসরি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করবে না– কিঞ্চিৎ উৎসাহী হবে কর্তৃপক্ষকে পরাজিত করতে।

ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির পক্ষে দীর্ঘজীবনে পিপি ডি লিনার এটাই প্রথম আদালতে উপস্থিতি এবং সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থা তার জন্য এই যে, আদালতে মামলা চলাকালীন পিপির সাথে তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও উপস্থিত থাকতে হবে। এই নিরপরাধ পরিবারের জন্য একটি আনন্দদায়ক রায়ের ব্যবস্থা আইনজীবীরা অবশ্যই করবে।

পিপি ডি লিনার বিরুদ্ধে যে মামলার রায় যাবে না এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ সে। তারপরও এক অজানা আশঙ্কা।

রায়ের দিন সেই পুলিশ কর্মকর্তারা পিপি ডি লিনাকে ঘটনাস্থলেই দেখেনি বলে সাক্ষী দিল। পিপির বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছিল পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের তিনজন আইনজীবীদের চাপে পিছিয়ে গেলেও অপর দুজন পিপির বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়েছিল। তবে তারাও একসময় নিজেদের একরোখা মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। তারা বুঝতে পারে, এ মামলার আইনজীবীরা, এমনকি পুলিশ, বিচারক সবাই একই সূত্রে গাঁথা।

যে হোটেলে ফিউবার্টা আশ্রয় নিয়েছিল, তার মালিকও ক্লেরিকুজিও’র সামন্ত। পিপির পক্ষে সাক্ষী দিতে গিয়ে সে বলল ফিউবার্টা হোটেলের বিল পরিশোধ না করে পালিয়ে যেতে উদ্যত হলে সে তার পিছু নেয়, এ সময় কোত্থেকে যেন বুলেট এসে লাগে তার গায়ে। তবে তার হত্যাকারী যে পিপি নয়, এটা নিশ্চিত। ফিউবার্টা নামে লোকটির হত্যাকারী অন্য কেউ।

আকস্মিক একটা হোঁচট খেল পিপি। তার শরীর শিথিল হয়ে এলো। চারদিকে যেন নেমে এলো ঘোর। পলকেই পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য উধাও হয়ে গেল। শুধু পিপিই নয়, ন্যালিনি নিজেও এমন এক অসারতা অনুভব করতে লাগল। ন্যালিনি মোটেও কিছু রেখে-ঢেকে বলেনি। পিপিকে একজন খুনি হিসেবে আখ্যা দিয়ে সাফ বলে দিয়েছিল তাকে বিছানার পাশে নিয়ে কখনোই আর শুতে পারবে না। তার কোনো আনন্দে অংশীদার হতে পারবে না।

তবে পিপি মানসিকভাবে কিছুটা শান্তি পেয়েছিল এই ভেবে, ন্যালিনির কাছে তার জীবনের এই কালো অধ্যায় আর বেশি দিন লুকাতে হবে না। এই লুকোচুরির খেলায় পিপি খুব অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিল।

ন্যালিনির ডিভোর্স কথাটি তখনও পিপির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় বিভোর সে। এভাবেই বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল। এক পর্যায়ে স্বাভাবিক হলো পিপি। শান্ত কণ্ঠে বলল, ঠিক আছে, তাহলে আমরা ডিভোর্সের পথেই এগুবো। এক পলক থামল সে, তারপর বলল, আমি আমার সন্তানদের হারাতে চাই না।

আমি তোমার সম্পর্কে স্পষ্টই সব জেনে ফেলেছি। প্রতিউত্তরে বলল ন্যালিনি। তোমার মুখোমুখি আর হতে চাই না আমি এবং আমার সন্তানদেরও তোমার মতো মানুষের সাথে থাকতে দেব না।

এবার পিপি সত্যিই বিস্মিত হলো। এই কি সেই ন্যালিনি যে প্রয়োজন ছাড়া কখনোই কিছু বলেনি। যে কখনো মুখরাও ছিল না কিংবা পিপির ঘাড়ে কখনোই চাপিয়ে দেয়নি কিছু জোর করে। সেই শান্ত, সহিষ্ণু রমণী আজ পিপি ডি লিনার মতো একজন দাপটে ব্যক্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে, তাও আবার দাবির সুরে সত্যিই হতবাক পিপি।

মনে মনে একরোখা হয়ে উঠলেও পরক্ষণেই সে পরিহার করল সেই মনোভাব। তার মনে হলো নারীমাত্রই তাদের পরিণাম সম্বন্ধে উদাসীন। পিপির মস্তিষ্কে উদয় হতে লাগল বিভিন্ন ধরনের ভাবনা। সে উপলব্ধি করল এগার বছরের ক্রস এবং দশ বছরের ক্লডিয়াকে তাদের মায়ের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে না। তাছাড়া এ-ও বুঝতে পারল, তার সাথে ক্রসের ঘনিষ্ঠতা আছে সত্য, কিন্তু দুই সন্তানই ন্যালিকে খুব ভালোবাসে।

এমন ভাবনা থেকেই মনে মনে সে ন্যালিনির প্রতি উদারতা দেখাতে সম্মত হলো। প্রকৃত অর্থে তার কাছ থেকে পিপি পেয়েছে একটি গোছানো সংসার, সন্তান, পায়ের নিচে শক্ত এক খণ্ড মাটি যা সব পুরুষেরই জীবনের চরম চাওয়া-পাওয়া। ন্যালিনি যদি তার জীবনে না আসত তবে কে জানে পিপির জীবনের স্রোত কোন দিকে প্রবাহিত হতো?

আগের মতো শান্ত কণ্ঠে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে, এ প্রসঙ্গটি বাদ দাও। এই বিচ্ছেদের মুহূর্তে পরস্পরের মধ্যে যেন তিক্ততার সৃষ্টি না হয়। তারপর আরো স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল পিপি। বলল, জাহান্নামে যাক আমাদের এই বারোটি বছর। এ সময়টি ছিল আমাদের সুখের, আনন্দের। এই ছোট্ট পরিসরে আমরা পেয়েছি দুটি ফুটফুটে সন্তান– এ সবের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। কিছুক্ষণের জন্য থামল পিপি। তারপর আবারো ন্যালিনির কঠোর চেহারার দিকে তাকাল।

বলল, কাম অন ন্যালিনি, আমিও তো তাদের বাবা হিসেবে খারাপ ছিলাম না। তারাও আমাকে ভালোবাসে। আর তুমি যা চাও, সেভাবেই আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি বরং ভেগাসেই থেকে যাও। আর আমি তোমাকে জানাদু হোটেলেই একটি দোকান দেয়ার ব্যবস্থা করছি, কাপড়, জুয়েলারি কিংবা অ্যানটিক, যে কোন প্রকারের। এ থেকে প্রতি বছর তুমি দুহাজার গ্রান্ড আয় করতে পারবে। এর ফলে আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাদের সন্তানদের সাথে শেয়ার করতে পারব।

আই হেইট ভেগাস। সব সময় আমি ভেগাসকে ঘৃণা করে এসেছি।

এতক্ষণে মুখ খুলল ন্যালিনি। আমার শিক্ষকতার ডিগ্রি আছে এবং স্যাকরামেন্টোতে আমি একটা কাজও জুটিয়ে নিয়েছি। ইতিমধ্যে বাচ্চারা সে স্কুলে যাওয়া-আসাও শুরু করেছে।

এবার পিপির অবাক হওয়ার পালা। এতক্ষণে সে বুঝতে পারল এই নারী ছিল ভেতরে ভেতরে সর্বদাই তার বিরোধী এবং মারাত্মক। নারী সম্পর্কে পিপির এত দিনের ধারণাকে ভুল বলে প্রমাণিত করল ন্যালিনি। তার কাছে নারী কখনোই ভয়াবহ বলে কিছু ছিল না। সে যে নারীই হোক না কেন। স্ত্রীকে তো সে ভয়াবহ মনে করেইনি, মিসট্রেস থেকে শুরু করে মা, চাচি, খালা কিংবা কোনো বন্ধুর স্ত্রী, এমনকি ডনের কন্যা রোজ ম্যারিকেও তার কখনো সাংঘাতিক কিছু মনে হয়নি। পিপি তার এই দীর্ঘ জীবনে এমনই এক পৃথিবীতে বাস করে এসেছে, যেখানে নারীরা কখনোই শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়নি।

ন্যালিনির আচরণে ধাক্কা খেলেও, চট করে বদলে গেল পিপি। কেউ যখন তাকে নিয়ে খেলতে আরম্ভ করে, কিংবা তার বন্ধুত্বকে অস্বীকার করে– এমনকি তার উচ্চাসকে দমাতে চেষ্টা করে তখন সে আর আত্মসংবরণ করতে পারে না। মাথায় আগুন ধরে যায়। ন্যালিনির আচরণেও তার এমন হলো।

স্পষ্ট জানিয়ে দিল পিপি, আমি স্যাকরামেন্টো গিয়ে আমার সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারব না। পিপি ভীষণভাবে চটে গেল। তবে নিজেকে সংযত রেখে গম্ভীরভাবে কথাগুলো বলল সে। ন্যালিনি যে গোপনে এতদূর এগিয়েছে, পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে– একথা ভেবে পিপি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছে।

পিপি বলল, একটু আগেই বলেছ যে তুমি আমার সম্পর্কে জেনে গেছ। তাই বলছি, সতর্ক হও। স্যাকরামেন্টো যাও, আর সমুদ্রের তলদেশে যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাও, আমার আপত্তি নেই। তবে তুমি কেবল একজনকে নিয়ে যেতে পারবে। অপরজন থাকবে আমার কাছে।

খুব শীতল দৃষ্টিতে ন্যালিনি তাকাল পিপির দিকে। বলল, আদালতই এর রায় দেবে। আমার মনে হয় তোমার একজন লয়ার নিয়োগ করা উচিত, যে আমার লয়ারের সাথে আলোচনা করবে।

বিস্ময়ে বিস্ময়ে হতবাক পিপি। যতই সময় যাচ্ছে সে যেন নতুন থেকে নতুন ভুবনে প্রবেশ করছে, আর আশ্চর্য হচ্ছে। ন্যালিনির এমন উপদেশে পিপি যখন বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে তখন ন্যালিনি হেসেছে তার ক্রুর হাসি।

তুমি উকিলও নিয়োগ করেছ!পিপির বিস্ময়। তুমি? আইনের ভয়ও দেখালে?

এবার আর বিস্ময় নয়, নিজেকে আরেক দফা পরিবর্তন করল পিপি। অকস্মাৎ উচ্চস্বরে হেসে উঠল। দীর্ঘ সময় ধরে পিপির এ হাসি যেন উন্মাদের মতো, ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কাযুক্ত। ন্যালিনি চমকে গেল কিছুটা। প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ হলো তার পিপির প্রতি। মনে হলো সে এক বিকারগ্রস্ত মানুষ।

বারো বছর ধরে সে এই মানুষটির সাথে কাটিয়েছে। প্রেমিক সেজে তার শরীরের একটু উষ্ণতা পেতে এই লোকটিই তার কাছে কত অনুনয়-বিনয়ই না করেছে, অবশেষে তার কাছে সঁপে দিয়েছে সে নিজের দেহ, মন, প্রাণ। হায় কপাল! একটুও বুঝতে পারেনি সে। চুড়ান্ত মুহূর্তে এসে আজ ন্যালিনি বুঝতে পারল সব– কেন সবাই পিপিকে শ্রদ্ধা করে এত, কেন তাকে ভয় পায় সবাই।

পিপির সার্বিক আচরণে ন্যালিনি যতটা না পেয়েছে ভয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পেল কষ্ট। আর খুব সহজেই পিপির প্রতি তার ভালোবাসাও নিঃশেষ হয়ে গেল। বারোটা বছরের সমস্ত স্মৃতি, সমস্ত ভালোলাগা ভালোবাসা যেন নিমেষেই মিলিয়ে গেল ন্যালিনির মন থেকে।

শান্ত কণ্ঠে পিপি বলল, তুমি যা-ই সিদ্ধান্ত নাও না কেন, আই ডোন্ট কেয়ার। জাজের সিদ্ধান্তেও আমার কিছু যায়-আসে না। যদি সোজা পথে আসো, তবে আমার কাছেও অনুরূপ আচরণ পাবে। যদি বাঁকা হতে চাও তবে তোমার কপালে দুর্ভোগ আছে।

এই প্রথমবারের মতো ন্যালিনির মনে হলো পিপির সারা অঙ্গ যেন বিশ্রী রকমের পেশিবহুল বিদঘুটে। অথচ এই শক্ত-সমর্থ শরীরের প্রতি এক সময় ন্যালিনির ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ, অপার ভালোবাসা। পিপিকে ভালোবাসার আরেকটি কারণ হলো তাদের বারো বছরের এই দাম্পত্য জীবনে পিপি কখনোই ন্যালিনির সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলেনি, ন্যালিনির কোনো ব্যয়ে কৌতুক করেও কখনো কিছু বলেনি এবং এটাও সত্য, পিপি ছিল সন্তানদের জন্য সত্যিকার একজন ভালো বাবা। তাদের প্রতি তখনই পিপি রেগে যেত, যদি ক্রস কিংবা ক্লডিয়ার মধ্যে কেউ মায়ের অবাধ্য হতো।

কিছুটা নমনীয় হয়ে আসছিল ন্যালিনি কিন্তু পিপি যেন ক্রমেই হয়ে উঠছিল কঠোর। চেহারার বিকৃতি ঘটতে শুরু করেছিল। প্রচণ্ড রকমের মানসিক বিপর্যস্ত পিপির চিবুকে যেন অতিরিক্ত কিছু মাংস যোগ করে দিয়েছে কেউ। ন্যালিনির মনে হলো পিপির কপালে যেন কেউ খাজ কেটে তৈরি করে দিয়েছে রেখা। চিকন ঐ-জোড়া কপালের ভাঁজে মিশে ফর্সা করে ফেলেছে অংশটুকু। মাথার চুলগুলো যেন রুক্ষ মেজাজের সাথে ঘোড়ার মতো ঝরঝরে হয়ে উঠছে। সুন্দর নিষ্পাপ চোখ দুটোতে আগুনের লহমা– তাতে বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই নমনীয়তার ভাব।

ন্যালিনির কণ্ঠ ভিজে এলো। বলল, আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাস। কিন্তু কিভাবে তুমি আমার সাথে এতটা রুক্ষ আচরণ করতে পারছ? ন্যালিনি নিজেকে আর সামলাতে পারল না, কেঁদে ফেলল।

ন্যালিনির অশ্রুতে কিছুটা হলেও ভিজল পিপি, আমি, যা বলছি, শোনো। বলল, লয়ারের সাথে নয়, তুমি যদি কোর্টে যাও, তবে সব কিছু লক্ষ্মন করেই তোমাকে যেতে হবে। আর এখনই তুমি আমাদের সন্তানদের দুজনকে পাচ্ছ না। শোনো ন্যালিনি, আমাকে খেপিও না, আমি তা চাই-ও না।

একটু থেমে পিপি আবার বলল, আমি বেশ বুঝতে পারছি, তুমি আমার সাথে আর কোনো মতেই থাকতে চাইছ না। সব সময় আমি মনে করতাম তোমার মতো একজন নারী পেয়ে আমার জীবন ধন্য হয়েছে। সারা জীবন তোমাকেই আঁকড়ে থাকব। তোমাকে সুখ দিয়ে ভরে দেব তুমিও সুখী করবে আমাকে। আর আজ আমার সেই ভালোবাসার মানুষটিই আমার কাছ থেকে তো সরছেই, আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে আদালতের কাঠগড়ায়।

কয়েক পলক থামল পিপি। কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো, আমি এখন বার্ধক্যে। পরিবার ছাড়া আমি থাকতে চাই না।

তোমার আছে ক্লেরিকুজিও পরিবার, ন্যালিনি বলল।

হ্যাঁ, তা আছে, প্রতিউত্তর পিপির, তোমার এটা মনে করা উচিত। যাই হোক, আমি আমার বার্ধক্য জীবন একাকী কাটাতে চাই না।

হাজার হাজার লোক আছে তোমার, ন্যালিনি বলল, নারীও আছে।

তারা আমার সহযোগী নয়। কোনো একজন আছেন, যিনি তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত দেন। আর অনেকে তাদের অস্তিত্বে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমি তাদের মতো হতে চাই না।

উপহাসের স্বরে ন্যালিনি বলল, তুমিও তাদের পক্ষে ভেটো দাও!

ঠিক তাই হয়তো করা উচিত, হেসে ফেলল পিপি। ন্যালিনির দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।

ন্যালিনি বলল, ঠিক আছে যখন তোমার ইচ্ছে, তুমি সন্তানদের দেখে আসতে পারবে। তবে দুজনই থাকবে আমার কাছে।

একথা শুনে পিপি ন্যালিনির দিকে পেছন ফিরে দাঁড়াল এবং বলল, তোমার যা ইচ্ছে হয় করো। বলেই পিপি চলে যেতে উদ্যত হলো।

দাঁড়াও, ন্যালিনির ডাকে ঘুরে দাঁড়াল পিপি। তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল ন্যালিনি কিছুক্ষণ। প্রাণহীন এক ফ্যাকাশে মুখ দেখে ন্যালিনির খুব মায়া হলো। বলল, ঠিক আছে, সন্তানদের কেউ যদি তোমার সাথে যেতে চায়, আমি মেনে নেব।

পিপি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। নিমেষেই যেন সমস্ত বিপর্যস্ত ভাব উবে গেল তার চেহারা থেকে। পিপির মনে হলো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খুব কঠিন। কোনো সমস্যার সমাধান হলো এই মাত্র।

চমৎকার, চেঁচিয়ে উঠল পিপি। তোমার শিশুটি ইচ্ছে হলেই ভেগাসে এসে আমার সাথে দেখা করবে। আর আমারটাও যাবে স্যাকরামেন্টো তোমার সাথে দেখা করতে। দারুণ হবে। চলো, আজ রাতেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি।

ন্যালিনি পিপিকে নতুন জীবন শুরু করার জন্য আরেক দফা শেষ প্রস্তাব দিতে কার্পণ্য করল না। বলল, চল্লিশ বছর এমন কোনো বয়স নয়। তুমি আবার নতুন করে শুরু করতে পারো।

পিপি মাথা নেড়ে বলল, কখনোই না। তুমিই ছিলে আমার জীবনে একমাত্র নারী! তুমি ছিলে আমার কাছে সেই ভারতীয় বধূদের মতো। আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম একটু দেরিতেই। তবে আমি জানি আমি আর কখনোই বিয়ে করব না। ঠিক যেভাবে তোমাকে আমি ধরে রাখতে পারিনি, সেভাবে নতুন করে কোনো কিছুই শুরু করা হবে না আমার।

হয়তোবা, ন্যালিনির সন্দিগ্ধ উত্তর। আর তুমি আমাকে পুনরায় ভালোও বাসতে পারবে না।

তবে তোমাকে হত্যা করতে পারব। ন্যালিনির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল পিপি। কথাটি কৌতুক করেই বলল সে।

কিন্তু পিপির চোখের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করল ন্যালিনি। সে বুঝতে পারল এটা পিপির একটা ক্ষমতার সূত্র। যদি সে কাউকে হুমকি দেয়, তাতে বাস্তবতার মিশেল তো থাকেই।

তবে প্রসঙ্গ পাল্টে ন্যালিনি আবারো পিপির উদ্দেশ্যে বলল, মনে রেখো, যদি সন্তানরা দুজনই আমার সাথে থাকতে চায় তবে তুমি বাধা দিতে পারবে না।

তারা তাদের বাবাকেও ভালোবাসে, পিপির নিশ্চিত উত্তর। সে বলল, তাদের যে কোনো একজন থাকবে এই বুড়ো মানুষটির সঙ্গে।

ডিনার পর্ব শেষ হলো। সারাটা ঘরে ছিল বরফ শীতল ঠাণ্ডা। অপরদিকে বাইরের আবহাওয়া যেন মরুভূমির তপ্ত প্রবাহ। এমনই এক পরিমণ্ডলে আজ হতে চলেছে দুটি জীবনের চূড়ান্ত ফয়সালা।

এগার বছরের ক্রস আর দশ বছরের ক্লডিয়া। বাবা-মায়ের পরিণাম ভোগ করতে হবে তাদেরও, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের রেশ পোহাতে হবে তাদেরও। তারাও একরকম প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই সব কিছু খুলে বলা হয়ে গেছে ক্রস এবং ক্লডিয়াকে। এখন শুধু তাদের মতামতের অপেক্ষা- কে যাবে কার সাথে।

সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার, বাবা-মায়ের ডিভোর্সের এই সিদ্ধান্তে ক্রস কিংবা ক্লডিয়ার চোখে-মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। ভাবনা কেবল এই, তারা কার সাথে যাবে, বাবা, না-কি মায়ের সাথে?

ক্রস হ্যান্ডসাম। তার মায়ের মতোই সুন্দর। তবে তার ভেতরে যে দৃঢ়তা, তা বাবার মতো। এ মুহূর্তে সে সম্পূর্ণরূপে ভীতিহীন। দৃঢ়তার সাথে ক্রস বলল, আমি মার সাথেই থাকছি।

ক্লডিয়া একটু ঘাবড়ে গিয়েছে– কি বলবে সে? ভেবে পাচ্ছে না। তবে ক্রসের মতামত শুনে এই ছোট্ট শিশু ক্লডিয়া বলল, আমি ক্রসকে ছেড়ে যাব না।

হোঁচট খেল, পিপি সাথে বিস্মিতও হলো। ক্রস ছিল পিপির সবচেয়ে কাছের। ন্যালিনির চেয়েও বেশি। ক্রস হচ্ছে সেই ছেলে যে পিপির সাথে হতো শিকারের সঙ্গী। সে বাবার সাথে কার্ড খেলতে পছন্দ করত– খেলত গলফ এবং বক্সিং। ন্যালিনির বই পড়া কিংবা মিউজিক শোনায় তার কোনো আগ্রহই ছিল না। এই সেই ক্রস! পিপি ভেবেছিল অন্তত ক্রস তাকে ফেলে যাবে না।

বিস্মিত হলো ক্লডিয়ার অত্যন্ত কৌশলী উত্তরে। এ মেয়েটি অনেকটাই তার নিজের মতো দেখতে অবশ্যই স্মার্ট। তবে সে যে তার মায়ের দিকটাই টানবে, এটা যুক্তিযুক্ত। এর কারণ– ন্যালিনি যা করে ক্লডিয়া তাই ভালোবাসে। বাবার কর্মকাণ্ডের প্রতি তার আগ্রহ নেই বললেই চলে। এমন সন্তান নিয়ে পিপি কি করবে?

গভীরভাবে লক্ষ্য করতে লাগল পিপি তার সন্তানদের। মনে মনে গর্বিত হলো সে। অন্তত সন্তানরা তাদের মাকে চিনতে পেরেছে।

ন্যালিনি আজ সেজেছে বিশ্রী কালো পোশাকে কালো ট্রাউজারের সাথে কালো পুলওভার। মাথার সোনালি চুলগুলোও ঢেকে দিয়েছে কালো হেডব্যান্ড বেঁধে। চিকন, লম্বাটে দেখাচ্ছে ন্যালিনির মুখ– কালোর মাঝে সাদা এক লম্বাটে বৃত্ত।

এ অবস্থায় সচেতন পিপি— অন্তত শিশুদের সামনে তার নির্দয় আচরণ ও অভব্যক্তি থেকে স্বভাবসুলভ স্বাভাবিক থেকে পিপি শিশুদের উদ্দেশে বলল, সব কিছুর পরও আমি তোমাদের মধ্য থেকে অন্তত একজনকে পেতে চাই। কথা দিচ্ছি, ইচ্ছে করলেই তোমরা যে কোনো সময় দুজন দুজনের সাথে দেখা করতে পারবে। তোমরা আমাকে এই ভেগাসে একা ফেলে যেও না।

স্থির দৃষ্টি হেনে দুজনই তাকিয়ে থাকল বাবার দিকে। পিপি ন্যালিনির দিকে তাকাল। কণ্ঠে অনুনয়ের স্বর। বলল, এ ব্যাপারে তোমাকেই সহযোগিতা করতে হবে। তোমাকেই নির্ধারণ করতে হবে কাকে তুমি নেবে।

উত্তেজিত হয়ে উঠল পিপি, আমাকেই কেন ছাড়তে হবে সব?

তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে– তাদের দুজনই যদি আমার সাথে যেতে চায় তবে তুমি বাধা দেবে না। ন্যালিনি মনে করিয়ে দিল পিপিকে তার প্রতিশ্রুতির কথা।

পিপির অনুভূতিগুলো যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে অল্প সময়ে। তবে সে জানে তার সন্তানরা তাকে ভালোবাসে। মাকে ভালোবাসে একটু বেশি, এই যা। তার অর্থ এই নয় যে শিশুরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একেবারে সঠিক। অবজ্ঞাভরে ন্যালিনি বলল, এর পর আর কিছুই বলার থাকে না। তুমি যেখানে কথা দিয়েছ

পিপি বুঝতে পারছে না তার সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলোর চোখে তাকে কেমন দেখাচ্ছে। তবে সে নিজেকে যতটা সম্ভব সংযত রাখার চেষ্টা করেছে। কথায়-আচরণে স্বাভাবিকই থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেছে, যেন নিজের বিরুদ্ধে নিজের যুদ্ধ। কিন্তু অপর পক্ষের আচরণ কেন এত কঠিন?

সংযত কণ্ঠেই পিপি বলল, আমি তো আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি। আমি শুধু তোমার সহযোগিতা চেয়েছি। শেষ চেষ্টাটুকুতেও কি তোমার এত আপত্তি?

ন্যালিনি অনমনীয়। মাথা নেড়ে বলল, নাহ, তুমি অসম্ভব হয়ে উঠছ। আমাদের শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থই হতে হবে।

পিপি এবার বুঝতে পারল এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত। খুব ধীর কণ্ঠে যেন ফোয়ারা ছুড়ল পিপি ন্যালিনির উদ্দেশে, তুমি যা চাইছ, আমার জন্য তা কঠিন কোনো ব্যাপারই নয়। তুমি তোমার পথে যেতে পারো। তবে আজকের এ বিষয়টি মনে রেখো। মনে করে দেখো আমাদের জীবনের কথা। একটু ভেবে দেখো–তোমার পরিচয় কি, আরো আমিইবা কে? আমি তোমার কাছে কাকুতি করে ভিক্ষে চেয়েছি। এই চাওয়া আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। ক্রস আমার মতো, পক্ষান্তরে ক্লডিয়া পেয়েছে তোমার গুণ। ক্রস আমার সাথেই থাকবে ভালো, আর ক্লডিয়া তোমার সাথে, তোমার পরিমণ্ডলে। এটাই হচ্ছে আমার চাওয়ার উদ্দেশ্য।

কয়েক পলক থামল পিপি। তারপর বলল, সন্তানরা যে আমার চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবাসে এটা জেনেও কি তোমার জন্য যথেষ্ট হয়নি?

পিপির এ কথায় যেন ঘরের সমস্ত পরিবেশ রুদ্ধ হয়ে গেল। থেমে গেল পিপির থমথমে গলা। সে চায় না যে সে যা বলছে তা তার সন্তানরা বুঝুক। তবে ন্যালিনি বুঝতে পারল। সব কিছু উড়ে গেল, পিপির ওপর যে ভীতি ভাব ছিল তা-ও সরে গেল। ন্যালিনি যেন ছোঁ মেরে টেনে নিল ক্লডিয়াকে তার বুকের মাঝে।

আর ক্লডিয়া তাকিয়ে রইল তার ভাই ক্রসের দিকে। মিনতিভরে শুধু একবার ডাকল, ক্রস…।

ক্রসের মুখমণ্ডলে ছিল উদাসীন সৌন্দর্য। মায়ের দিক থেকে ঘুরে দাঁড়াল ক্রস। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বাবার দিকে। পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। শান্ত কণ্ঠে বলল, আমি তোমার সাথেই যাব, ড্যাড। উচ্ছ্বসিত পিপি কৃতজ্ঞ চিত্তে ক্রসের হাত তুলে নিল নিজ হাতে।

অনাকাক্ষিত এ দৃশ্যে হতবাক ন্যালিনি ডুকরে কেঁদে উঠল। বলল, যখন তোমার ইচ্ছে হবে আমাকে দেখতে এসো, ক্রস। স্যাকরামেন্টোয় তোমার একটা আলাদা বেডরুম থাকবে সাজানো। সেটা কেউই ব্যবহার করবে না।

যা ঘটার ছিল— ঘটল না, ঘটল উল্টোটা। অন্তত ন্যালিনি কয়েক মুহূর্ত আগেও ভাবেনি যে ক্রসকে তার ছেড়ে যেতে হবে!

কিন্তু পিপি যেন উচ্ছ্বসিত। যেন ফিরে পেয়েছে তার জীবনের সব কিছু। মনের একটা ভারী বোঝা যেন নেমে গেল মুহূর্তেই। বোধশক্তিও লোপ পেল তার। অকস্মাৎ বলে উঠল, আমাদের এবার সেলিব্রেট করা উচিত।

একটু থেমে আবার বলল, এটা সত্য যে আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেল। তবে এখন থেকে একটি সুখী পরিবারের বদলে আমাদের দুটি সুখী পরিবার হব এবং পরবর্তী যে কটা দিন বাঁচব, সুখেই থাকব।

পিপির এ কথা শুনে কঠিন মুখে তাকিয়ে থাকল সবাই তার দিকে। নিজেকে সামলে সে বলল, ঠিক আছে, যা ঘটেছে তা তো ঘটেছেই। আমরা সুখী হবার চেষ্টা করব।

প্রথমে দুবছর ভেগাস-স্যাকরামেন্টো যোগাযোগ মোটামুটি নিয়মিত ছিল। এরপর থেকে ক্লডিয়া আর কখনোই ভেগাসমুখো হয়নি। ক্রস কিন্তু অব্যাহত রেখেছিল ন্যালিনি ও তার বোন ক্লডিয়াকে দেখতে যাওয়া। ক্রসের যখন পনের বছর বয়স, তখন থেকে তার স্যাকরামেন্টো সফরও কমে যায়। শুধু ক্রিসমাসের ছুটিতেই সে যেত মা ও বোনের সাথে দেখা করতে।

এভাবেই দুই শহরে পৃথক থেকে বাবা ও মা তাদের প্রাপ্ত সন্তান নিয়ে কাটিয়ে যাচ্ছিল। ক্লডিয়া যতই বেড়ে উঠতে লাগল, তার মধ্যে ধীরে ধীরে দেখা গেল মায়ের গুণ। সে ভালোবাসে স্কুল, ভালোবাসে বই পড়তে, থিয়েটার তার পছন্দ, মায়ের মতো সে-ও ভালোবাসে ফিল্ম কিংবা মিউজিক। মোট কথা, মায়ের সব পছন্দ, ভালোলাগাগুলো তার মধ্যে দেখা গেল। আর ন্যালিনি তার মাঝে দেখতে পেল বাবার তেজোদীপ্ত চরিত্র ও উচ্ছ্বাস। বেশ সুখী ছিল মা ও মেয়ে স্যাকরামেন্টোতে।

সে তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এক প্রকার সুখী জীবনই কাটিয়ে যাচ্ছিল। ইতিমধ্যেই তার পদোন্নতি হলো। একটি পাবলিক হাই স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল হলো ন্যালিনি।

অপর দিকে পিপি ও ক্রস ও কাটিয়ে যাচ্ছিল সুখী জীবন। তবে ন্যালিনি ক্লডিয়ার চেয়ে ভিন্ন ভিন্ন তাদের জীবন পদ্ধতি, ভিন্ন তাদের প্রেক্ষাপট। পিপি তার মতো করে গড়ে তুলছিল ক্রসকে। ক্রস যখন হাই স্কুলে, তখন পিপি বুঝতে পারল, এথলেটে সে তার সব বন্ধুদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আর লেখাপড়ায় ঠিক ততটাই পিছিয়ে। হাই স্কুলের পাট চুকিয়ে ক্রস আর কলেজের লেখাপড়ায় আগ্রহী হলো না। তাছাড়া তার মধ্যে আরেকটি বিষয় ছিল লক্ষ্য করার মতো একজন সুদর্শন যুবক হয়েও ক্রসের নারীর প্রতি তেমন একটা আসক্তি ছিল না।

ক্রস তার বাবার সাথে উপভোগ করছিল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র। পিপির যে কোনো সিদ্ধান্ত যতই খারাপ হোক না কেন ক্রস যেন উৎসাহিত হয়ে উঠত, উপভোগ করত। ক্লডিয়ার কাছে যেমন তার মা তেমনি পিপিও ক্রসের কাছে। একজন ভালো বাবা, একজন ভালো বন্ধু হয়ে উঠল। ক্রসের মাঝে পিপি বিলিয়ে দিল তার সবটুকু তৈরি করল সম্পূর্ণ তার মতো করে।

ক্রস মেতে উঠল জানাদু হোটেলের কাজকর্ম নিয়ে। শো-গার্লদের প্রতি তার ছিল খুব সাধারণ প্রবৃত্তি। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য পিপি তার পুত্রের ওপর জোর করে কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করেনি। তবে তার ইচ্ছে ক্রস যাতে ক্লেরিকুজিও পরিবারে তার অবস্থান করে নেয়। আর ডন ক্লেরিকুজিও’র একটি উদ্ধৃতির প্রতি পিপির দারুণ বিশ্বাস। ডন প্রায়ই বলতেন, প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার রুটিটুকু আয় করে নেয়া।

ছেলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই পিপি তাকে কালেকশন এজেন্সির অংশীদার করে নিল। তাছাড়া প্রায়ই ক্রসকে নিয়ে সে যেত গ্লোনিভেন্টের সাথে ডিনার করতে। এই সাক্ষাতে, আলাপ-আলোচনায় যাতে গ্রোনিভেল্ট তার দিকে শুভ দষ্টি দেয়। এভাবে ধীরে ধীরে ক্রস গ্রোনিভেল্টের  গলফ সঙ্গীতে পরিণত হলো। ক্রসের মাত্র সতের বছর বয়সে যেভাবে গলফের বল নির্দিষ্ট গর্তে পৌঁছে দিত, দেখে মুগ্ধ হতে গ্রোনিভেল্ট। আর তাই সে ক্রসকেই তার পার্টনার করত প্রায় সময়। দুপার্টনার মিলে জিততে শুরু করল একের পর এক চ্যালেঞ্জ। পিপি উচ্ছ্বাস নিয়ে তাদের এই জয়ের আনন্দ উপভোগ করত, গর্বিতও হতো।

গ্রোনিভেল্টকে জয় করার পর পিপি ক্রসকে নিয়ে গেল নিউইয়র্কে ক্লেরিকুজিও পরিবারে। সে দিনটি ছিল ৪ এপ্রিল- ক্লেরিকুজিও পরিবারের সার্বিক হলিডে। অর্থাৎ এই দিনটিতে ফ্যামিলির সমস্ত বিয়ে এবং মৃত্যুবার্ষিকী একসাথেই পালন করা হয়। আর এই দিনে উপস্থিত হয় ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির সব সদস্য। ক্রসের শরীরের ক্লেরিকুজিও’র রক্ত। তারও অধিকার আছে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার।

ক্রমেই ক্রস তার বাবার সাথে থেকে শিখছিল নতুন নতুন সব বিষয়। প্রতি সপ্তাহে একবার পিপি জানাদু ক্যাসিনোয় তার আট হাজার ডলারের জন্য যায়। এবার ক্রসকেও নিয়ে গেল সাথে। ক্রস বসে বসে দেখছিল আর সব আয়ত্ত করে নিচ্ছিল। পিপি তাকে গ্যাম্বলিংয়ের সমস্ত কলা-কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছিল। ক্রসকে শিখিয়েছিল, যদি কখনো মন সায় না দেয়, যেন গ্যাম্বলিং টেবিলে না বসে ক্রস। দিনে যাতে দুঘণ্টা আর সপ্তাহে তিন দিনের বেশি যাতে কিছুতেই না খেলে। আর জিদ করে যেন কখনোই বড় দান না বসায়।

একজন বাবা হয়ে ছেলেকে পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম বিষয় শেখানোটা অনেকের দৃষ্টিতেই ঠিক পছন্দসই হলো না। তবে পিপির যুক্তি, কালেকশন এজেন্সির জুনিয়র পার্টনার হিসেবে ক্রসের জন্য এই শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পিপি তার ছেলের জন্য নিজেই করতে চায়।

কতটুকু শিক্ষা পেল ক্রস? এবার তার যাচাইয়ের পালা। পিপি তাকে পাঠাল ক্যালিফোর্নিয়ায় মাফিয়া ব্ৰুগলিওনের কাছে। এখান থেকে কালেকশন করাটা খুব সহজ নয়। ক্রসকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল, সে যাতে জোর করে সেখান থেকে আদায়ের চেষ্টা না করে। প্ররোচনার মাধ্যমেই যেন চেষ্টা করা

ক্যালিফোর্নিয়ার এই ব্ৰুগলিওনের ক্ষমতা পিপির মতো নয়। ছোটখাটো একটা প্রতিনিধি ক্লেরিকুজিও’র। মাত্র হাজার গ্রান্ড জানাদু হোটেলে প্রেরণ করে সে। ক্লেরিকুজিও’র নাম ফলাও করার মতোও সে নয়।

খুব খারাপ সময় ক্রস মাফিয়া ব্যারনকে পাকড়াও করল। ফ্যালকো নামের এই ব্যারন বা ক্ৰগলিওন প্রথমে ক্রসের কথা শুনল তারপর অকস্মাৎ তার অস্ত্রটি সোজা কেড়ে নিয়ে গেল ক্রসের কণ্ঠনালি বরাবর। বলল, আর একটি কথাও যদি তোমার মুখ থেকে বের হয় তবে গুলি করে তোমার ওই টনসিল এফোঁড়-ওফোঁড় করব।

এমন অবস্থাতেও ক্রস বিস্মিত হলো তার নিজের মতো করে। অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল তার অভিব্যক্তি। ভয়ের চিহ্নমাত্রও ছিল না তার চেহারায়। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল, মাত্র পঞ্চাশ গ্রান্ডের জন্য এ অবস্থা? আমার বাবা এটা পছন্দ করবে না।

কে তোমার বাবা? ফ্যালকোর অস্ত্রটি আগের মতোই ক্রসের কণ্ঠ বরাবর ধরে জিজ্ঞেস করল।

পিপি ডি লিনা, প্রতিউত্তরে কৌতুক করে বলল ক্রস। এই ফিফটি গ্রান্ডের সমাধা না হলে বাবা আমাকে গুলি করবে।

ফ্যালকো হেসে ফেলল। তার অস্ত্রটি রেখে দিল যথাস্থানে। বলল, ঠিক আছে, তাকে বলো আমি নিজেই ভেগাসে গিয়ে পরিশোধ করে আসব।

আসার আগে আমাকে জানিও কিন্তু। আমি তোমাকে তোমার প্রচলিত আচরণ মোতাবেক অভ্যর্থনা জানাব। পুনরায় ক্রসের কৌতুকপূর্ণ উত্তর।

পিপিকে চিনতে পারল ফ্যালকো। তবে ক্রসের চেহারায় এমন কিছু একটা ছিল যা ফ্যালকোকে খুব সহজেই নিরস্ত্র করতে বাধ্য করল। ক্রসের মধ্যে ছিল না ভয়ের লেশমাত্র ভাব, অত্যন্ত শীতল তার প্রতিউত্তর এবং ছোটখাটো রসালো কথাবার্তা, ক্রসের এমন সপ্রতিভ আচরণ যেন বন্ধুত্বের আহ্বান। তবে এ ঘটনা থেকে ক্রস শিক্ষা পেল যে ভবিষ্যতে কোনো সংগ্রহে তার সাথে অবশ্যই থাকতে হবে একটি অস্ত্র এবং দেহরক্ষী।

ক্রসের এই সাহসিকতার কাহিনী শুনে খুশি হলো পিপি! এক ছুটির দিনে ক্রসকে উৎসাহ দিতে জানাদু হোটেলে করা হলো ছোট একটি আয়োজন। গ্রোনিভেল্ট বাপ-বেটা দুজনকেই অভিনন্দন জানালেন। উপহার দিল দুজনকেই চমৎকার দুটি সুট। ক্রসকে পৃথকভাবে দিলেন ব্ল্যাক টিপসের একটি পার্স।

গ্রোনিভেল্টের  বয়স তখন আশি। মাথার চুলগুলো সব পেকে গেছে। তবে শরীরের সতেজতা হারায়নি তখনও। ক্রসের হাতে পার্সটি তুলে দিয়ে গ্রোনিভেল্ট বলেছিলেন, এভাবে যদি জয় না আসে তবে এটি আমি ফেরত নেব। এবার মন দিয়ে শোনো, তোমার সামনে মাত্র একটি সুযোগ। আমার হোটেলের কয়েকটি ক্ষেত্র আছে। এর মধ্যে একটি বড় গলফ কেস। জুয়াড়িরা সুদূর জাপান থেকে এখানে আসে গলফের ওপর দান ধরতে। আমাদের আছে ভোজন রসিকদের জন্য অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ আর আছে সুন্দরী শো-গার্ল, যারা চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতের তারকা। আমাদের আছে সুন্দর টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল এবং হোটেলের নিজস্ব বিমান। এ বিমান তোমাকে সাত সমুদ্র ঘুরিয়ে আনবে– এ সবই ফ্রি। এর জন্য তোমার ওই পার্সের পাঁচ গ্র্যান্ডও খরচ করতে হবে না। শুধু জুয়াড়ি হবে না।

তিনদিনের ছুটিতে ক্রস সম্পূর্ণরূপে সময় দিল গগ্ৰানিভেল্টকে। কাটাল গ্রোনিভেল্টের  উপদেশ অনুসরণ করে। এই তিন দিনের প্রতিটি সকাল ক্রস কখনো গ্রোনিভেল্ট, কখনো তার বাবা কিংবা জানাদু হোটেলের উঁচু দরের বোর্ডারদের সাথে গলফ খেলে কাটাল। গ্রোনিভেল্ট ক্রসের প্রত্যেকটি স্ট্রোক লক্ষ্য করে দেখল, সে যখন উঁচু করে নির্দিষ্ট গর্তের দিকে স্টেক করে তখনই তার লক্ষ্য হয় সুনিপুণ। এটা উপলব্ধি করার সাথে সাথে গ্রোনিভেল্ট বিস্ময় ও আনন্দের সাথে চেঁচিয়ে উঠল, ইস্পাতের মতো স্নায়বিক অবস্থা।

খুব কাছে চলে এলো ক্রস গ্রোনিভেল্টের । কয়েক বছরের মধ্যে ক্রস বুঝতে পারল পিপি এবং গ্রোনিভেল্টের মধ্যে কতটা আন্তরিক সম্পর্ক। উভয়েই উভয়ের খুব ভালো বন্ধু। প্রতি সপ্তাহ অন্তর তাদের অন্তত একবার দেখা হওয়া চাই-ই। দিনে অবসর না হলেও অন্তত ডিনারে। তাছাড়া পিপির কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও সে অন্তত গ্ৰোনিভেল্টের পরামর্শ নেবেই, যদিও ব্যবসায়িক প্রতিটি পদক্ষেপ ক্লেরিকুজিও ছাড়া নেয়া হয় না। অপর দিকে গ্রোনিভেল্টও জানাদু হোটেলের সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পিপির সাথে শেয়ার করে দ্বিধাহীন চিত্তে। তবে ভিলাগুলোর ব্যাপারে অবশ্য গ্রোনিভেল্টের  যত রাখ-ঢাক।

এদিকে ক্রস সতর্কতার সাথে উপলব্ধি করল, গ্রোনিভেল্ট তার প্রতি বেশ আগ্রহী। ক্রসের জন্য সে অতিরিক্ত একটা প্রশ্রয় যেন তুলে রাখে। বৃদ্ধ বয়সেও গ্রোনিভেল্টের  নারী আসক্তি ছিল। ক্রস তা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারল। জানা হোটেলের স্বত্বাধিকারী গ্রোনিভেল্টের পেন্থ হাউস সুইটে যে প্রায়ই শো-গার্লদের আনাগোনা ছিল তা বুঝতে পেরেছিল ক্রস। প্রথম দিকে বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে বন্ধু ভেবেই, ক্রসের কাছে প্রকাশ করেছিল সব, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল শো-গার্লদের সাথে। তবে এ বিষয়ে ক্রস সুদর্শন হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা আগ্রহী ছিল না। বরং মেয়েরাই ছিল তার প্রতি দুর্বল।

গ্রোনিভেল্টের  সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির পর থেকে ক্রস প্রায়ই একান্তে আলোচনা করত ব্যবসায়িক দিক সম্পর্কে। এমনই এক আলোচনায় একদিন শিক্ষকের মতো নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রনিভেল্ট। জানা হোটেলের ক্যাসিনো এবং এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক সম্পর্কে দীক্ষা নিচ্ছিল ক্রস। আলোচনার এক পর্যায়ে ক্রস একটু দ্বিধা নিয়েই জানতে চাইল, জানা হোটেলের যেসব মেয়ে কাজ করছে তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অর্থাৎ জানাদু হোটেলে তাদের কাজের সম্পর্ক কিংবা গ্রোনিভেল্টের  সাথেই তাদের সম্পর্কটা আদতে কেমন?

হেসে ফেললেন গ্রোনিভেল্ট। ক্রসের কথার প্রতিউত্তরে বললেন, হোটেলের বিভিন্ন শো-তে এই মেয়েদের আমি বিনোদনের জন্য ছেড়ে দেই। আবার কিছু কিছু মেয়ের সাথে আমি আচরণ করি পুরুষের মতো। এখন তুমি যদি তোমার ভালোবাসাপূর্ণ জীবনের জন্য আমার কাছে উপদেশ চাও, তাহলে তোমাকে আমি বলতে বাধ্য হব যে, একজন বুদ্ধিমান, নির্ভরশীল মানুষ হিসেবে নারীদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

একটু থামলেন গ্রোনিভেল্ট। তারপর আবার শুরু করলেন, তোমাকে অবশ্যই দুটি ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নাম্বার ওয়ান এবং একই সাথে অত্যন্ত বিপজ্জনক হচ্ছে সেসব মেয়ে যাদের বয়স ও সঙ্গতি উভয়েরই অভাব বর্তমান। দ্বিতীয়ত, সেই সব মেয়ে যারা তোমার চেয়েও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

এসব বলছি, তাই বলে আবার ভেবে বসো না যে আমি একেবারে হৃদয়হীন। আমি ইচ্ছে করলে একটি মেয়েকে এমন অবস্থায় ফেলে দিতে পারি। তবে সেটা আমাদের কাজ নয়। আমি অবশ্যই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, কারণ বিশ্বের যে কোনো পার্থিব বিষয়ের মধ্যে জানাদু হোটেল আমার সবচেয়ে ভালোবাসার জিনিস। তবে হ্যাঁ, আমার যে সন্তান নেই, তার জন্য আমার আক্ষেপ আছে। এ কথা আমি তোমার কাছে অস্বীকার করব না।

তাহলে তোমার মতে, এটাই পার্ফেক্ট লাইফ। ক্রস বলল। তুমি কি তাই ভাবছ? গ্রোনিভেল্টের  রসিকতাপূর্ণ প্রশ্ন। বেশ, আমি তাহলে এর জন্য বিল চুকিয়ে যাব।

কুওগে ব্যাপক টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে গেল ক্রসকে নিয়ে। ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির মেয়েদের মধ্যেই ক্রসকে নিয়ে এই উত্তেজনা।

ক্রসের বয়স তখন মোটে কুড়ি। হ্যান্ডসাম তো বটেই, সুদর্শন, টানটান শক্ত শরীর বয়স অনুপাতে এমন পুরুষ সঙ্গীর স্বপ্ন সব মেয়েরাই দেখে থাকে। ক্রসকে দেখে ক্লেরিকুজিও ফ্যামিলির সবাই কৌতুক করে বলেছিল, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে সে দেখতে তার মায়ের মতো হয়েছে, বাবার মতো নয়…! এমন রসিকতা অবশ্য তাকে হেয় করার জন্য নয়, কিংবা তার বাবার উদ্দেশ্যেও নয়।

ইস্টার সানডের দিন, যখন সবাই সানডে উৎসবে মেতে ছিল, কাজিন ডেন্টির কাছ থেকে ক্রস জানতে পারল ফ্যামিলিতে তার বাবার প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে।

বিশাল প্রাচীর ঘেরা বাগান– যেন দিগন্ত জুড়ে। শেষ নেই যেন এ প্রাচীরের। বাগানের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ফ্যামিলির সদস্যদের অবাধ বিচরণ। ক্রস এবং ডেন্টি লক্ষ্য করছিল দূর থেকে। হঠাৎ ক্রসের চোখে পড়ল একটি চমৎকার মেয়ে। তাকে ঘিরে রয়েছে একদল যুবক।

অপরদিকে ক্রস লক্ষ্য করল, পিপি একটি বাফেট টেবিল থেকে বারকোশে করে মাংসের কাবাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একদল যুবতীর দিকে। দেখা গেল, সুন্দরী মেয়েটি পিপিকে দেখে যেন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নারী মহলে বাবা যে প্রিয় তা ক্রস জানে। পিপির কুৎসিত দিকগুলোর সাথে সাথে তার চমৎকার রসবোধ, তেজস্বীতা এবং ব্যক্তিত্ব যে কোনো নারীকে খুব সহজেই কাবু করে ফেলে।

ক্রসের সাথে সাথে ডেন্টিরও চোখ পড়ল মেয়েটির দিকে, আর সাথে সাথেই বলে উঠল, চমৎকার মেয়ে। ক্রসের উদ্দেশ্যে বলল, চলো, তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।

কাছে গিয়ে মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ডেন্টি ডাকল, লিলা, এসো পরিচয় করিয়ে দিই। এ হচ্ছে আমাদের কাজিন ক্রস।

ডেন্টি কিংবা ক্রসেরই সমবয়সি লিলা। তবে তার শারীরিক কাঠামোয় এখনও নারীত্ব ফুটে ওঠেনি। এই বয়ঃসন্ধিক্ষণ কিংবা তার নব যৌবনের এই সময়ের কারণেই লিলার সৌন্দর্যে যেন একটা খুঁত রয়ে গেছে কোথাও। মধুরঙা চুল লিলার, ত্বকে যেন সদা সতেজতার আভা। সে তুলনায় মুখমণ্ডল পরিপূরক নয় মনে হবে যেন এখনো পরিপূর্ণ গঠনই হয়নি তার।

লিলার পরনে ছিল অ্যাঙ্গোরা সোয়েটার। এই পরিধেয়টি তার সফেদ ত্বককে করে তুলেছে স্বর্ণাভ। মুখোমুখি হতেই যেন ক্রস লিলার প্রেমে পড়ে গেল।

কিন্তু ক্রস যখন তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হলো, লিলা কেন যেন এড়িয়ে গেল তাকে। ক্রস ও ডেন্টির কাছ থেকে সরে লিলা গিয়ে বসল আরেক টেবিলে।

মর্মাহত হলো ক্রস। ডেন্টিকে বলল, আমার মনে হয় সে আমাকে ঠিক পছন্দ করেনি। মুখে একটা শুষ্ক হাসি টেনে ক্রসকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করল ডেন্টি। ধূর্ততার সাথে অপর এক দল সমবয়সি যুবকদের দিকে হাত উঠিয়ে অভিবাদন জানাল।

কোকড়ানো ঘন-কালো চুল ডেন্টির। অনেকটা ডন ক্লেরিকুজিও’র মতো। আর তা প্রদর্শনের জন্য সে ক্যাপ পরলেও অভিনব কায়দায় কিছুটা বের করে রাখে, যেমন রেখেছে এ মুহূর্তে। বেশ খাটো আকৃতির, উচ্চতা পাঁচ ফুটের দু এক ইঞ্চি বেশি হতে পারে বড়জোর। তবে তার আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা প্রখর। আর এর মূলে রয়েছে স্বয়ং ডন ক্লেরিকুজিও’র প্রচ্ছন্ন নির্ভরতা ও ভালোবাসা। এ বয়সেও ডন প্রায়ই ডেন্টিকে নিয়ে মুক্ত বাতাসে হাঁটতে বের হন।

ক্রসের উদ্দেশ্যে ডেন্টি বলল, মেয়েটির নামের শেষে রয়েছে এনাকস্তা! ক্রস তার স্মৃতি হাতড়ে নামটি মনে করার চেষ্টা করল। মনে পড়ল তার বছর খানেক আগে এক এনাকস্তা পরিবার ট্র্যাজেডির মুখে পড়েছিল।

মিয়ামি হোটেলের এক কক্ষে পরিবারটির কর্তা এবং তার বয়োজ্যেষ্ঠ পুত্রকে কেউ যেন হত্যা করেছিল। মনে করতে পারল ক্রস। কিন্তু এই ঘটনার সাথে মেয়েটির সম্পর্ক কি?

ডেন্টি ক্রসের চিন্তাযুক্ত সংকুচিত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন কিংবা উত্তর আশা করছিল ডেন্টি।

বিস্মিত ক্রসের সপ্রশ্ন কণ্ঠে বলল, এর মানে?

তুমি তো তোমার বাবার হয়েই কাজ করছ, তাই না? ডেন্টির সহজাত প্রশ্নঃ হ্যা! ক্রসের বিস্ময়বোধ যেন বাড়ছে।

লিলার সাথে নিশ্চয়ই সম্পর্ক গড়তে চাও? মুচকি হেসে বলল ডেন্টি। তুমি দুর্বল হয়ে পড়েছ।

ক্রস জানে এর উত্তর দেয়াটা বিপজ্জনক হতে পারে। ডেন্টির এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না ক্রস।

ডেন্টি এবার বলল, তুমি কি জানো না তোমার বাবার কাজটা কি?

সে একজন মানি কালেক্টর। তাৎক্ষণিক জবাব দিল ক্রস।

ডেন্টি মাথা নেড়ে নেতিবাচক উত্তর দিল। বলল, তোমার জানা দরকার। তোমার বাবা ফ্যামিলির জন্য মানুষদের একেবারেই সরিয়ে ফেলে।

এক ঝটকা ঝড়ো হাওয়ায় সব কিছু যেন পরিষ্কার হয়ে গেল। ক্রস এত দিনে বুঝতে পারল, কেন তার মা বাবাকে পছন্দ করত না। কেন বন্ধুরা বাবাকে এত শ্রদ্ধা করত, শ্রদ্ধা করত ক্লেরিকুজিও পরিবারকে। ক্রসের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, কেন তার বাবার সার্বক্ষণিক অস্ত্র এবং দেহরক্ষীর প্রয়োজন হয়।

ক্রস স্পষ্ট মনে করতে পারছে তার বাবার হত্যা মামলার রায়ের ঘটনা। এটি প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিল ক্রস। বিশেষ করে সেদিন রাতে বাবা যখন তার হাতটি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল গভীর স্নেহে, ক্রস ভুলে গিয়েছিল সব। তবে এসব ভেবেও বীতশ্রদ্ধ হলো না সে তার বাবার প্রতি। বরং উষ্ণ এক আবেগ যেন আরো ঘনীভূত হলো। উপলব্ধি করতে পারল, এখন যতই নগ্ন হোক না কেন, বাবার সুরক্ষায় তাকেই এগিয়ে যেতে হবে।

ডেন্টির ওপর ভয়ানক ক্ষুব্ধ হলো ক্রস। বাবার এই গোপনীয় সত্যতা সে তাকে না বললেও পারত।

ডেন্টির উদ্দেশে বলল, না, আমি সে সব জানি না এবং তুমিও কিছুই জানো না। কেউই জানে না কিছু।

ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল ক্রস। সংযত করার চেষ্টা করল নিজেকে। কিছুটা সময় থামল মাত্র কয়েক পলক। তারপর রসিকতা করে বলল, তোমার ওই ফাঁক-ইন হ্যাটটি কোত্থেকে পেলে?

.

ইস্টার সানডের ইস্টার এগ হান্টিং ইভেন্টে বাচ্চাদের সাথে তুমুল হৈচৈয়ের মধ্যে মেতে ছিল ভার্জিনো ব্যালাজো। শিশুদের সাথে এ খেলায় এমনভাবে মগ্ন হয়ে গিয়েছিল, যেন সে জন্মসূত্রেই একজন ভাড়। আর শিশুরাও মজে গিয়েছিল তার ভাঁড়ামিতে। তাকে ঘিরে ধরেছিল সবাই। ছোট্ট শিশুগুলোকে ফুলের মতো দেখাচ্ছিল– ছোট ছোট মুখ, ডিমের খোলসের মতো সাদা ত্বক, মাথায় গোলাপি সুদৃশ্য টুপি আর বাহারি পোশাক– চমৎকার এক দৃশ্যের অবতারণা। ব্যালাজো শিশুদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিল খর ভর্তি একটি করে ছোট বাক্স, বিনিময়ে শিশুরা ব্যালাজোর গালে এঁকে দিচ্ছিল একটি করে চুমু। বাক্স নিয়েই শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিল ব্যালাজোর সামনে থেকে।

বেশ পরিপাটি হয়ে ইস্টার সানডের এ উৎসবে এসেছে ভার্জিনো ব্যালাজো। তার পরনের সুটটি লন্ডনের তৈরি, জুতো জোড়া ইতালির, শার্ট ফ্রান্সের। চুলগুলো কাটিয়েছে ম্যানহাটানের মাইকেল এঞ্জেলোতে। তাকে দেখে যে কেউ মনে করবে অত্যন্ত আশীর্বাদপুষ্ট সুখী জীবন তার। সুখী তার মেয়েও। সার্বক্ষণিক বাবার পাশে রয়েছে। শিশুদের সাথে আনন্দে মেতে রয়েছে সে-ও।

ত্বরিত-চঞ্চলা ব্যালাজো কন্যা লুজিলি। সবাই তাকে সেইল করে ডাকে। আঠার বছরের কুমারী সেইল এ অনুষ্ঠানে তার বাবার সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে খোশ মেজাজে। পরনে তার রয়েছে সাদা রঙের ব্লাউস আর শর্টস। ঘোলাটে ফিকে ত্বক। মাথার চুলগুলো প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে এমনভাবে গোলাকার করেছে, দূর থেকে দেখেই মনে হবে যেন মাথায় পরেছে কোনো মুকুট।

সুন্দরী সেইল, তার ওপর অর্ধবক্ষা। সামান্য দূরের কিছু যুবক হা করে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। কেউ কেউ যৌবনের উন্মাদনায় সাড়া পেতে সিটি বাজিয়ে আহ্বানও জানাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই তার। হয়তো খেয়াল করেছে কিন্তু পাত্তা দেয়নি। প্রয়োজন মনে করেনি।

হঠাৎ করে সেইলর চোখ গেল বাগানের এক কোণায়। সেখানে ঝগড়া বাধিয়ে বসেছে ক্রস এবং ডেন্টি। দীর্ঘ সময় ধরেই চলছে তাদের চুড়ান্ত পর্যায়ের বাদানুবাদ, বিতর্ক হয়তো হাতাহাতিও। সেইলর মনে হলো ক্রস যেন আঘাত পেয়েছে; কুঞ্চিত হয়ে গেছে তার মুখমণ্ডল।

খরভর্তি একটি বাস্কেট ছিল সেইলর হাতে। সেটি নিয়েই তুরিত ছুটে গেল ক্রস ও ডেন্টির দিকে। তাদের অপ্রীতিকর অবস্থার মাঝখানে গিয়ে উপহাস করে বলল, তোমাদের মধ্যে কে ডিম শিকারে আগ্রহী? চমৎকার মোহিত হাসি সেইলর। হাসি মুখে তার হাতের বাস্কেটটি তুলে ধরল তাদের দিকে। অপ্রত্যাশিত এই সুন্দরীর আগমন দুজনকেই হতভম্ব করে ফেলল। দুজনেই তার দিকে তাকিয়ে রইল বিস্ময়ের দৃষ্টিতে।

সকালের সোনালি আলো সেইলর ত্বকেও যেন ছড়াচ্ছিল স্বর্ণ আভা। দুষ্টুমিতে ভরা চোখ দুটো নাচছিল। ব্লাউসের উপরাংশের দুধরঙা স্তনের আবৃত্ত যুগল তাদের ছন্দপতন ঘটাল। আমন্ত্রণ জানাল সেইলের কুমারিত্ব।

ঠিক এমনই এক মুহূর্তে একটি ছোট্ট শিশুর তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে এলো। মোহভঙ্গ হলো সবার। তাকাল শিশুটির দিকে। লাল ও নীল রঙের ছোপ দেয়া বিশাল আকৃতির একটি ডিম পেয়েই শিশুটির এই চিৎকার। সেই বিশাল আকৃতির ডিমটি সে তার খরপূর্ণ বাস্কেটে পুরে রাখার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। এই চেষ্টা করতে গিয়ে তার মাথার সুন্দর গোলাপি টুপিটি বারবার চোখ মুখ ঢেকে দিচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে পড়েছিল সে। এই গলঘর্ম প্রচেষ্টার এক পর্যায়ে ডিমটি গেল ভেঙে। আর তা থেকে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল একটি ছোট পাখি। আর সাথে সাথেই শিশুটির চিৎকারও যেন ধাওয়া করল পাখিটির পিছু পিছু।

কৌতুককর এ পরিস্থিতি অনেক সময় ধরেই লক্ষ্য করছিল পেটি। লন পেরিয়ে ছুটে এলো সে। কোলে তুলে নিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করল।

আসলে এই পাখি উড়ে যাওয়ার এমন পরিকল্পনা তারই। আর এ মুহূর্তে শিশুটিকে সান্ত্বনা দেয়ার হাস্যকর ধরন দেখে উপস্থিত সবাই হেসে উঠল।

সবাইকে হাসতে দেখে শিশুটি তার মাথা থেকে খসে যাওয়া হ্যাটটি এক হাতে চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠল। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে পেটির উদ্দেশ্যে বলতে লাগল, তুমিই আমার সাথে দুষ্টুমি করেছ। পেটি অসহায়ের মতো তাকাল শিশুটির দিকে। আরেক দফা হেসে উঠল সবাই। শিশুটি তার কোল থেকে নেমে দৌড়ে যাচ্ছিল। পেটিও পিছু নিল তার। অসম্ভব মন খারাপ হয়েছিল তার। কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য পিছু পিছু ছুটতে লাগল পেটি। অবশেষে তাকে ধরে কোলে তুলে নিল। তাকে শান্ত করতে দিল একটি রত্ন খচিত ইস্টার এগ। শিশুটি তা পেয়ে খুব খুশি হলো, পেটির গালে দিল সস্নেহে একটি চুমু।

সবার দৃষ্টি যখন পেটি এবং ছোট শিশুটির দিকে নিবদ্ধ তখন সেইল শক্ত করে ধরল ক্রসের হাত। ম্যানশন থেকে শখানেক দূরের এক আড়ালে টেনিস কোর্টের দিকে নিয়ে গেল তাকে। তিন দিকে দেয়াল ওঠানো খেলোয়াড়দের বিশ্রামের জন্য তৈরি টেনিস কুটিরে গিয়ে বসল দুজন। ম্যানশনের হৈ হট্টগোল থেকে বেশ খানিকটা নির্জন। এখানে তাদের দুজনের একান্ত সান্নিধ্যে কেউ ব্যাঘাত ঘটাতে আসবে না।

কারো নজরে তেমন একটা না পড়লেও ডেন্টির শ্যেনদৃষ্টিকে এড়াতে পারল না তারা। ডেন্টির চেয়ে ক্রস অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এ বিষয়ে ডেন্টির একটা হিংসাবোধও আছে ভেতরে ভেতরে। তবে এ মুহূর্তে সে তার। এই হ্যান্ডসাম কাজিনকে নিয়ে গর্বিত। তবে সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার, এতক্ষণে সে বুঝতে পারল তার হাতে রয়েছে সেইলের সেই বাস্কেটটি। মনে মনে হেসে উঠল ডেন্টি– সেইল কৌশলে তার বাস্কেটটি বসিয়ে দিয়েছে ডেন্টির হাতে, আর ক্রসের হাতে তুলে দিয়েছে তার নিজ হাত।

ম্যানশনের আড়ালে টেনিস কুটিরে দুজন খুব কাছাকাছি হলো। সেইল ক্রসের মুখে ছোঁয়াল সেইলের নরম দুটি হাত। ক্রসের ঠোঁট স্পর্শ করল সেইলের ঠোঁট। উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে লাগল ক্রমেই। ধীরে ধীরে সরে গেল। পার্থিব যত বিষয়। সম্পূর্ণ মনোসংযোগ ঘটল চুম্বনরত ঠোঁটের মাধ্যমে শিহরিত শিরায় শিরায়, উপশিরায়। চঞ্চল হয়ে উঠল ক্রসের হাত। নিখুঁতভাবে সেইলের সমস্ত শরীরের আস্বাদের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল। শেষ অবধি সংযত করতে না পেরে সেইলের কুমারী স্তনে উঠে এলো ক্রসের একটি হাত। তৎক্ষণাৎ ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল সেইল। দুষ্টু হাসিতে ক্রসের দুষ্টুমিকে পরাস্ত করল যেন।

বলল, আজকের এই চুম্বনের জন্য আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম দীর্ঘ দিন, আমার দশ বছর বয়স থেকে। এত দিন পর পেলাম এই শুভ দিন।

সেইলের চুম্বনের রেশ ক্রসের মন থেকে সরেনি তখনো। তারপরও সেইলের আকস্মিক এই উক্তিতে সে প্রশ্ন করল, কেন?

কারণ তুমি দারুণ সুন্দর এবং পার্ফেক্ট। সেইলের সহজ উত্তর। ক্রসের মুখ থেকে তার হাত দুটো সরিয়ে নিল। তারপর চোখের দিকে টানা দৃষ্টি হেনেই ক্রসের হাতে রাখল তার হাত।

বলল, আজকের মতো এমন ভুল একটি দিনের জন্যও আমার হয়নি।

একটু থেমে আবার সে বলল, আমাদেরও কি একটি সুন্দর পরিবার হতে পারে না?

ক্রস নিরুত্তর। তবে স্বাভাবিক। সেইলের কপালে কুঞ্চিত রেখা দেখা গেল মাত্র কয়েক পলকের জন্য। আকস্মিক বলল, আচ্ছা, তুমি তোমার বাবার সাথে কেন থাকছ?

ঠিক এমন একটি বিষয়ের জন্যই তুমি হয়তো আমাকে এখানে আনতে পেরেছ? সপ্রতিভ উত্তর ক্রসের।

বিষয়টি এতক্ষণে পরিষ্কার হলো সেইলের। পাল্টা প্রশ্ন করল ক্রসের উদ্দেশ্যে, তাই বুঝি ডেন্টির সাথে ঝগড়া বাধিয়ে বসেছিলে? সেইল বলল, সে কি তোমাকে খুব আঘাত দিয়ে কিছু বলেছে?

না, ডেন্টি সঠিক ছিল, ক্রস বলল প্রতিউত্তরে। শিশুদের মতো তর্ক করছিলাম আমরা। ডেন্টি একজন সাক্ষাৎ জোকার, ঠিক আমার পেটির মতো।

জোকার না কচু! খুব উগ্র সে, সেইলের প্রতিবাদী উত্তর। তারপর আবার আকস্মিক ক্রসের ঠোঁটে চুমু দিল সেইল। বলল, প্রচুর অর্থ করেছে আমার বাবা। কেন্টাকিতে একটি বাড়ি কিনেছে। ১৯২০ রোলস রয়েস গাড়িও কিনেছে। এমনিতেই তার রয়েছে তিনটি অ্যান্টিক গাড়ি, আবার কেন্টাকিতে ঘোড়াও কেনার পরিকল্পনা করছে। তুমি বরং কালই আমাদের ওখানে বেড়াতে চলো– আমাদের গাড়িগুলোও দেখতে পাবে। আর তাছাড়া তুমি ছোটবেলা থেকে আমার মায়ের রান্না পছন্দ করতে।

সম্ভব নয়। আগামীকালই আমাকে ভেগাসে ফিরে যেতে হবে। বলল ক্রস। আমি সেখানে জানাদু হোটলে কাজ করি।

ক্রসের হাত ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিল সেইল, অ ভেগাস। আমার মতে একটি বিরক্তিকর শহর ভেগাস।

কিন্তু আমার কাছে সেরা, পাল্টা জবাব ক্রসের। তুমি যদি সেখানে না-ই গিয়ে থাকো, তবে এত ঘৃণা কেন?

কারণ সেখানকার মানুষ তাদের কষ্টের উপার্জন নিমেষেই শেষ করে আসে, ঘৃণামিশ্রিত শিশুসুলভ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলল সেইল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমার বাবা গ্যাম্বলের আগে-পাছে নেই। এমনকি সেই শো গার্লদের প্রতিও আগ্রহী নয়।

হেসে ফেলল ক্রস। বলল, আমি এত কিছু জানি না। আমি কেবল গলফ কোর্টে ছুটাছুটি করি। ক্যাসিনোর অভ্যন্তরে কি ঘটে না ঘটে সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।

সেইল জানে ক্রস তার সাথে মজা করছে। তারপরও সে বলল, আচ্ছা আমি যেদিন কলেজের পাট চুকিয়ে বের হবে, সে দিন যদি তোমাকে ইনভাইট করি, তুমি আসবে?

অবশ্যই, ক্রস আশ্বাস দিল। এমন বিষয়ে ক্রস সেইলের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। মেয়েটির এই সরলতায় মুগ্ধ হলো ক্রস। মুগ্ধ হলো এখনো তার হাত দুটি যেভাবে সেইল ধরে রেখেছে, তা ভেবে। তবে ক্রস বুঝতে পেরেছে সেইলের এই আমন্ত্রণ তাদের অর্থ, গাড়ি-বাড়ি, প্রতিপত্তি প্রদর্শনেরই দাবি। ক্রস এ-ও বুঝতে পারল, সেইলের এই মিষ্টি স্পর্শ, প্রাণহীন মেকি চুম্বন ও তার নারীত্ব দিয়ে ক্রসকে জয় করার প্রচেষ্টা।

ক্রস এবার বলল, আমাদের বোধ হয় এবার ম্যানশনের দিকে যাওয়া উচিত।

টেনিস কুটির থেকে বেরিয়ে এলো দুজন। দুজনে দুজনার হাত ধরে এগিয়ে চলল পিকনিক এরিয়ার দিকে। সেইলের বাবা তাদের দিকে তাকিয়ে প্রথমে মুখ বাঁকিয়ে ফেলল। তারপর এক আঙুল বাকিয়ে ছিঃ! ছিঃ! লজ্জা বলেই হো হো করে হেসে ফেলল। এগিয়ে গেল তাদের দিকে, জড়িয়ে ধরল দুজনকেই।

এই দিনটির কথা ক্রসের মনে গেঁথে থাকবে দীর্ঘদিন। শুধু এ জন্যই নয় যে সে সেইলের ঘনিষ্ঠতা পেয়েছে। ক্রসের মনে এই ইস্টার সানডের দিনটি আরেকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এ দিনই ডেন্টির কাছে সে তার বাবার প্রকৃত স্বরূপ জানতে পেরেছে। সেই সাথে ছোট্ট শিশুটির সেই ডিম ভেঙে পাখি উড়ে যাওয়ার ঘটনাও দাগ কেটেছে ক্রসের মনে।

ক্রস এবং পিপি ইস্টার সানডের পর দিনই ফিরে গেল ভেগাসে। তবে তাদের মানসিক সম্পর্কে এবার দেখা দিল একটু ভিন্নতা। পিপি নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারল যে এত দিনের গোপন তথ্যের অনেক কিছুই ক্রসের কাছে ফাঁস হয়ে গেছে। আরো তাই নিজের দুর্বল মনকে শক্ত করতে ক্রসের প্রতি সে মনোযোগী হলো আর বেশি। তবে ক্রস বিস্মিত হলো, এত নেতিবাচক তথ্যের পরও বাবা সম্পর্কে মনোভাবের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। এখনও তাকে আগের মতোই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে ক্রস। বাবা ছাড়া সে যেন তার পৃথিবী কল্পনাও করতে পারে না, যেমন কল্পনাতীত ক্লেরিকুজিও পরিবার ছাড়া গ্রোনিভেল্ট ছাড়া এবং জানাদু হোটেল ছাড়া। এ সবই ক্রসের জীবনে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে এবং সত্যিকার অর্থেই সে সুখী এই জীবনধারায়।

তবে কেমন যেন এক অসহিষ্ণুতা বাসা বেঁধেছে ক্রসের মনে-বুঝে উঠতে পারছে না সে কিছুতেই। এটুকু তার মনে এসেছে যে, হয়তো নতুন কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে তাকে। কি সেই পদক্ষেপ, জানে না সে।

০৪. ক্লডিয়া ডি লিনা

পর্ব– তিন

ক্লডিয়া ডি লিনা
অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন

০৪.

ক্লডিয়া ডি লিনা প্যাসিফিক প্যালিস্যাডিসে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে রওনা হলো ম্যালিবুতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে। মনে মনে ভাবতে লাগল– ম্যাসেলিনার জন্য কিভাবে অ্যাথেনাকে রাজি করাবে? কিভাবে ক্লডিয়া নিজেকে উপস্থাপন করবে অ্যাথেনার কাছে?

ম্যাসেলিনায় অভিনয়ের জন্য তাকে ফিরিয়ে আনাটা যেমন ক্লডিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ স্টুডিওর জন্যও। আসলে ম্যাসেলিনা ক্লডিয়ার লেখা প্রথম অরিজিনাল স্ক্রিপ্ট। এর আগেও বিভিন্ন ছবির চিত্রনাট্য সে করেছে, তবে সেগুলোর কোনোটি ছিল কোনো নভেল থেকে নেয়া নকল পাণ্ডুলিপি, কিংবা মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ঘষা-মাজা স্ক্রিপ্ট।

ক্লডিয়ার কাছে এ ছবির গুরুত্ব আরেক কারণে। সেটি হলো–এই ম্যাসেলিনার মাধ্যমেই সে প্রথমবারের মতো কো-প্রডিউসার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ সুযোগ আগে তার আসেনি। লেখক এবং কো-প্রডিউসার হিসেবে ক্লডিয়ার ভাগ্যে যে উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে তার সাথে যোগ হবে গ্রস প্রফিটের একটা অংশও। এত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়াটা শুধু ক্লডিয়ার কেন, কোনো রক্ত-মাংসের মানুষেরই কাম্য নয়।

এ ছবি থেকে যে বড় লভ্যাংশের প্রত্যাশা ক্লডিয়া করছে তা তার কর্ম জীবনের পরবর্তী আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় হবে। প্রকৃতপক্ষে সে হচ্ছে, মিসিসিপির পশ্চিমাঞ্চলের এমন একজন যে সরাসরি কখনোই কিছু চায়নি, আশাও করেনি। মানুষের হিংস্রতা, বিবাদ, কলহ থেকে ক্লডিয়া নিজেকে রেখেছে সব সময় পৃথক করে। বিবাদপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হোক, তা চায় না সে।

অ্যাথেনার সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ, আন্তরিক। শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগতের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক নয় তাদের। অ্যাথেনা জানে তার বাকি জীবনটায় কতগুলো ছবিতে কাজ করতে পারবে। অবশ্যই বুদ্ধিমতী সে। শুধু বজ স্কাটে তার জীবনে একটা অশুভ ছায়া ফেলে রেখেছে, যার কারণে অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে সে প্রতিনিয়ত। তবে এও সত্য, অ্যাথেনা কখনোই কারো ভয়ে কিংবা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়তির ভয়ে ভীত ছিল না– এখনো নয়।

ক্লডিয়া ঠিক করে নিল অ্যাথেনার কাছে গিয়ে তার আচরণ কি হবে, কি বলবে সে অ্যাথেনাকে। অ্যাথেনার এই আতঙ্কিত হওয়ার প্রকৃত কারণ তাকে উদ্ধার করতেই হবে। হয়তো ক্লডিয়া এ ব্যাপারে তার সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে। না, হয়তো নয়, নিশ্চিতভাবেই। অ্যাথেনার ক্যারিয়ার এভাবে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না তাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। ক্লডিয়া তাকে নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে। তবে কে জানে এই মুভি ব্যবসায় কত রকমের জটিলতা কিংবা ফাঁদ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

ক্লডিয়া ডি লিনা নিউইয়র্ক থেকেই লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছে। একুশ বছর বয়সে কুড়িটি প্রকাশকের কাছে তার প্রথম নভেল উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু নিরাশ হয়নি সে। মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে সে পাড়ি জমিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। হলিউডে চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি লেখার কাজে মনোনিবেশ করেছে।

ক্লডিয়া উচ্ছল, প্রাণবন্ত এবং মেধাবী। লস অ্যাঞ্জেলেসে খুব শিগগিরই সে তার অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে, জুটেছে অনেক গুণী বন্ধু।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউসিএলএ-তে যখন সে স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের কোর্স করছিল তখন সেখানকার এক যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। যুবকটির বাবা ছিল বিখ্যাত প্রাস্টিক সার্জন। খুব অল্প দিনেই তাদের মধ্যে তৈরি হলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সম্পর্ক রূপ নিল ভালোবাসায়। ক্লডিয়ার শরীর, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তায় মোহিত হলো সে। দিনের পর দিন শয্যাসঙ্গী হয়ে উভয়ের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেতে লাগল ক্রমান্বয়ে।

এক রাতে ডিনারে নিমন্ত্রণ করে যুবকটি নিয়ে গেল তার বাসায়। ক্লডিয়াকে দেখে তার সাথে কথা বলে যুবকের বাবা মুগ্ধ হলো। ডিনার শেষে ক্লডিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে যুবকের বাবা বলল, তোমার মতো একজন যুবতীর যতটুকু সুন্দরী হওয়া উচিত ছিল, ততটা তুমি নও।

আকস্মিক এ মন্তব্যে ক্লডিয়ার ভ্রূজোড়া কুঞ্চিত হলো। তাকে দেখে যুবকের বাবা বলল, আমার এ কথার বিরূপ ধারণা করো না। এটা একটা নিশ্চিত দুর্ভাগ্য। আর আমার ব্যবসা বা দক্ষতা যা-ই বলল, আমি তোমাকে সুন্দর একটা চেহারা দিতে পারি।

ক্লডিয়া প্রেমিকের বাবার কথায় প্রতিবাদ করল না, তবে একটু রুষ্ট হলো, বলল, কেন আমাকে সুন্দরী হতে হবে? কি হবে এই সুন্দর দিয়ে? হেসে ফেলল ক্লডিয়া। বলল, আমি আপনার পুত্রের জন্য যথেষ্ট সুন্দরী।

এ পৃথিবীর সবই সুন্দর, সার্জন বলল। তোমার ঐ চেহারায় যখন হাত পড়বে, তখন তুমি আমার ছেলের জন্য হয়ে উঠবে আরো সুন্দর। তুমি সত্যিই একটি মিষ্টি এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে, আর এর সাথে সৌন্দর্য যোগ হলে তোমার ক্ষমতা আরো বাড়বে। তুমি কি সত্যিই তোমার বাকি জীবনটা উপভোগ করতে চাও না যেখানে সব পুরুষ সুন্দরীদের ঘিরে থাকবে অথচ তোমার মতো মেধাবীর দিকে হয়তো কেউ তাকাবেও না? তোমাকে হয়তো একটি ডামির মতো বসে থাকতে হবে, কারণ তোমার নাকটি বোচা এবং মাফিয়াদের মতো তোমার চিবুকটিও যেন থ্যাবড়ানো। এ কথাগুলো সার্জন ক্লডিয়াকে আঘাত করে বলেনি, বরং তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্যই বলল। তোমাকে পরিবর্তন করতে আমার খুব বেগ পেতে হবে না। তোমার খুব সুন্দর দুটি চোখ আছে, আছে সুন্দর একটি মুখ। আর একজন মুভিস্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মতো তোমার রয়েছে যথেষ্ট সুন্দর শরীর।

মাফিয়া শব্দটি ক্লডিয়ার শিরায় শিরায় অনুরণিত হলো। মুখ ফিরিয়ে নিল সে সার্জনের কথায়। স্পষ্ট উপলব্ধি হলো তার, সে জানে বাবার মতোই দেখতে সে।

সার্জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, এটা কোনো ব্যাপার নয়। আর তাছাড়া, আমি আপনার সম্মানী দিতে পারব না।

সেটা পৃথক বিষয়, সার্জন বিরোধিতা করল। মুভি ব্যবসা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। চলচ্চিত্র জগতের অনেক নারী-পুরুষ তারকার ক্যারিয়ার আমি দীর্ঘায়িত করেছি। আর এক্ষেত্রে তুমিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। জানি না আমার প্রস্তাবে তুমি কতটুকু অনুপ্রাণিত হচ্ছ, তবে তোমার মেধা সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

মনে রেখো, তোমার ক্ষেত্রটি চলচ্চিত্র জগতের। তোমাকে কিছুটা হলেও পেশাদারি মনোভাবের হতে হবে- এটা কোনো নারী বা পুরুষ বলেই শুধু নয়। যদিও এটা এ জগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

এত কিছু বলার পরও ক্লডিয়ার চোখে-মুখে দ্বিধা লক্ষ্য করল সার্জন। বলল, তোমার কাজটি আমি বিনা পারিশ্রমিকে করতে চাই। এ কাজটি আমি করব তোমার জন্য এবং আমার পুত্রের খাতিরে। যদিও আমি জানি তুমি তোমার বর্তমান রূপ হারাবে, সুন্দরী হয়ে উঠবে। আর আমার ছেলে হারাবে তার গার্লফ্রেন্ড।

ক্লডিয়ার মনে একটা বোধ ছিল সে সুন্দরী নয়। এ মুহূর্তে তার মনে এলো ক্রসের প্রতি তার বাবার অতিরিক্ত আগ্রহের বিষয়টি। একটু আফসোস হলো তার– যদি সে সুন্দর হতো, হয়তো তার লক্ষ্যও হতো ভিন্ন। এমন ভাবনা থেকেই ক্লডিয়ার প্রথমবারের মতো সার্জনকে ভালো লাগল। হ্যান্ডসাম পুরুষ সে, আকর্ষণীয়ও। চোখ দুটোতে সদা ভদ্রতার চাহনি। সার্জনের প্রস্তাবে সম্মতি জন্মালো তার মনে। হেসে ফেলল ক্লডিয়া।

বলল, ঠিক আছে! আমাকে সিনড্রেলা বানিয়ে ফেলুন।

সার্জন সিনড্রেলা করল না ক্লডিয়াকে তবে তার বোঁচা নাক, চিবুক আর মুখের ত্বকে আনল ব্যতিক্রমতা। সার্জারির পর যখন সে ফিরে এলো, তাকে খুব আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন এক গর্বিত নারী—নিখুঁত তার নাক, সাবলীল কর্তপূর্ণ তার উপস্থাপনা ও প্রকৃতপক্ষে খুব সুন্দরী রমণীর পর্যায়ে না গেলেও আগের চেয়ে ক্লডিয়া হলো অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

খুব অল্প সময়েই ক্লডিয়ার পেশাগত ক্ষেত্রেও ফল এলো ম্যাজিকের মতো। মেলো স্টুয়ার্ট ব্যক্তিগতভাবে তার সাক্ষাৎ প্রার্থী হলো। তার এজেন্ট হিসেবে নিজেকে প্রস্তাব করল স্টুয়ার্ট। খুব অল্প বয়সেই ছোটখাটো রিরাইট করা স্ক্রিপ্ট নিয়ে ক্লডিয়ার যাতায়াত বাড়ল চলচ্চিত্র জগতের নামি-দামি প্রযোজক, পরিচালক ও তারকাদের সম্মিলিত বিভিন্ন পার্টিতে। উচ্ছ্বসিত হলো তারা ক্লডিয়ার সৌন্দর্য ও মেধায়। পরবর্তী পাঁচ বছরে ক্লডিয়া অবস্থান করে নিল প্রথম শ্রেণীর লেখিকা হিসেবে। প্রথম শ্রেণীর ছবিগুলোতে তার চিত্রনাট্য সমানে কদর পেতে লাগল।

ব্যক্তিগত জীবনেও ম্যাজিকের মতো প্রভাব পড়ল ক্লডিয়ার। মর্মে মর্মে সে উপলব্ধি করল সার্জনের কৃতিত্ব বুঝতে পারল, সার্জনের চিন্তাধারাই ছিল সঠিক। কিন্তু যার কারণে সার্জনের কাছ থেকে এত কিছু সে পেয়েছে সেই যুবকও পিছিয়ে গেল প্রতিযোগিতায়। যৌন আবেদনে ক্লডিয়ার জয়জয়কার অবস্থা ধারালো এ অস্ত্রের ব্যবহারে যুক্তিসম্মতভাবে ঘায়েল হলো সবাই। অবশ্য এমন সফলতায় সব স্টারই গর্ববোধ করে থাকে। যৌন আবেদন এবং যৌনতা সত্যিকার অর্থেই চলচ্চিত্র জগতে টিকে থাকার গৌরব।

চলচ্চিত্র জগৎ ক্লডিয়ার ভালোবাসা। সে ভালোবাসে বিভিন্ন লেখকদের সাথে কাজ করতে, ভালোবাসে প্রডিউসারদের সাথে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক করতে। আরো পরিচালকের তোষামোদ করতে তার আনন্দ। একটি ছবির সাথে জড়িয়ে তার প্রথম কাজ হচ্ছে কিভাবে সার্বিক ব্যয় কমানো যায়, তার পথ বের করা, আর একই সাথে এই ব্যয়ে নির্মিতব্য ছবিকে কিভাবে সর্বোচ্চ শৈল্পিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা যায়। তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ক্লডিয়ার রয়েছে বিস্ময়কর চিন্তা-ভাবনা, কিভাবে একটি ছবির কলা-কুশলী তার স্ক্রিপ্টের প্রতিটি শব্দকে সার্থকভাবে উপস্থাপন করবে, কণ্ঠের মাধুর্যতায় ফুটিয়ে তুলবে দৃশ্যের পর দৃশ্য। ক্লডিয়ার ভালোবাসা চলচ্চিত্রের জাদুকরি সেট-সজ্জায়। অথবা অনেকেই এ বিষয়টিকে সবচেয়ে অপছন্দের কাজ বলে মনে করে। কিন্তু ক্লডিয়া এনজয় করে প্রতিটি কর্মকাণ্ড। সম্পূর্ণ কাজ শেষে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে যখন ছবি মুক্তির অপেক্ষায় থাকে তখন ক্লডিয়া রোমাঞ্চিত হয় সবচেয়ে বেশি— তার এই রোমাঞ্চের কারণ ছবির ব্যর্থতা কিংবা সফলতা।

ক্লডিয়া বিশ্বাস করে, চলচ্চিত্র হচ্ছে শিল্প মাধ্যমের একটি বিশাল অবকাঠামো। তাই যখন কোনো ছবির পাণ্ডুলিপি পুনর্লিখন কিংবা রিরাইটের জন্য তার ডাক পড়ে, ক্লডিয়া অত্যন্ত উৎসাহের সাথে এগিয়ে যায়। ছবির মূল ভাবার্থ ঠিক রেখে সে চেষ্টা করে নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই ক্লডিয়া পেয়ে যায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। শুধু তাই নয়, তার মেধা, সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক তারকাই তার বন্ধু হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের সাথে।

পুরুষের সাথে সম্পর্কের প্রধান আকর্ষণ ক্লডিয়ার উচ্ছ্বসিত যৌনতা। খুব সহজে সাবলীল যৌনতা ক্লডিয়া যেমন উপভোগ করে, তেমনি তার পুরুষ সঙ্গীও দ্বিধাহীন, খাঁটি অমিয় ধারার সুখে নিমজ্জিত হয়। মাঝে মাঝে বিস্মিত হয় তার শয্যাসঙ্গীরা। এত ঘনিষ্ঠতা স্ত্রীর কাছেও পাবে কি-না সন্দেহ জাগে। তবে ক্লডিয়া এই যৌন উপভোগের মাধ্যমে কখনোই বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়নি– এটি তার নীতিবিরুদ্ধ। মাঝে মাঝে তার শয্যাসঙ্গীর সাথে কৌতুক করে, আজকের এই সেক্স আমার পরবর্তী পাণ্ডুলিপিতে স্থান পাবে শৈল্পিকভাবে।

ক্লডিয়ার প্রথম রোমাঞ্চকর মানুষ হচ্ছে তার সেই সার্জন। পুত্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও সুপুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে সে ক্লডিয়ার কাছে। ধীরে ধীরে ছেলেকে ছাপিয়ে সার্জন নিজেই বন্ধু সেজেছে ক্লডিয়ার। আর নিজের উচ্ছ্বাসের জন্যই সে তাকে প্রস্তাব দিয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্টের, সাথে সাপ্তাহিক ভাতা। সার্জনের প্রস্তাব শুধু তার সাথে যৌন উপভোগের জন্য নয়, তার মেধাবী ও সুন্দর মানসিকতাপূর্ণ সঙ্গলাভের জন্যও।

কিন্তু সার্জনের প্রস্তাব সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে ক্লডিয়া। সে বলেছিল, আমি ভাবছি, এ ব্যাপারে অন্তত ফি দিতে হবে না। তাই নয় কি?

সহাস্যে সার্জন বলেছিল, তুমি তো ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছ অনেক। তবে আমি ভাবছি, আমার এ প্রস্তাব আমাদের দুজনের যে কোনো সময় সাক্ষালাভের সুযোগ করে দেবে।

ক্লডিয়া স্বীকৃতি দিয়ে বলেছিল, অবশ্যই।

ক্লডিয়া বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছিল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক তো বটেই, সাথে যৌনতার মিশেল। তবে সার্জনের মধ্যে সে পেত ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন অনুভূতি, অন্যরকম সুখ। এক অর্থে সার্জনই তাকে শিখিয়েছে জীবন উপভোগ করার এমন কৌশল। সার্জনের কাছেই পেয়েছে সত্যিকারের উপভোগের জীবন দর্শন। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের, ভিন্ন দর্শনধারীর সাথে শয্যাসঙ্গী হয়ে সে খুঁজে পেত ভিন্ন সুখ। এক অর্থে স্বেচ্ছা-পতিতার মতোই হয়ে উঠেছিল ক্লডিয়া। আনাড়ি অভিনেতা কিংবা চিত্রনাট্যকারের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতপক্ষে এমন পদক্ষেপ ছিল তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পুষ্ট করার মানসে। সবখানেই ছিল তার শেখার আগ্রহ। তার স্বল্প বিস্তর এই প্রবৃত্তিতে বয়স্কদের সান্নিধ্যে সে পেয়েছে সবচেয়ে বেশি আনন্দ এটা অভিজ্ঞতার ফসল তো বটেই।

একটি দিনের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্লডিয়ার। বিখ্যাত এলি ম্যারিয়ন স্বয়ং ক্লডিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন লর্ডস্টোনের বাংলোয়। উপভোগ করেছিল ক্লডিয়া সে রাত, তবে সত্যিকার অর্থে সফল হয়নি। লডস্টোনের এক পার্টিতে চলচ্চিত্র জগতের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এলি ম্যারিয়েনের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল ক্লডিয়ার। তার মতো প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য ক্লডিয়াকে মোটেও ভীত করেনি। পার্টিতে বরং ম্যারিয়নের সাথে সে ছিল প্রাণবন্ত। বিষয়টি বেশ কৌতূহলী করে তোলে ম্যারিয়নকে। এর কারণ, সে সময় স্টুডিওর এক প্রোডাকশনের আলোচনায় ক্লডিয়ার কিছু উক্তি ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ। আর এরই জের ধরে ববি বানজ তাকে কটাক্ষ করে অশ্লীল মন্তব্য করে। এর পরও ক্লডিয়ার অভিব্যক্তিতে কোনো ছাপ পড়েনি। বরং স্বাভাবিকই ছিল এবং প্রতি উত্তরে ক্লডিয়াও শুনিয়ে দিয়েছিল সমান অশ্লীল উক্তি। এই অশ্লীল উক্তিগুলো ছিল একটু ভিন্ন রকমের। ক্লডিয়ার তেজোদীপ্ত ও উচ্ছল উপস্থাপনাই ম্যারিয়নের অতিরিক্ত উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এলি ম্যারিয়ন তার বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে সেক্স থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। শারীরিক দৌর্বল্যের সাথে সাথে যৌনতার বিষয়টিও উঠে গিয়েছিল মন থেকে। তারপরও আকস্মিক ক্লডিয়াকে ডাকলেন বেভারলি হিলসের বাংলোয়। ম্যারিয়ন ভেবেছিলেন ক্লডিয়া হয়তো তার প্রভাব ও ক্ষমতার ভয়েই যেতে বাধ্য হবে। কিন্তু তার যে সেক্স সম্পর্কে কতটুকু কৌতূহল সে যে বয়সেরই হোক না কেন, তা জানা ছিল না বেচারা বৃদ্ধ ম্যারিয়নের। ম্যারিয়নের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির সাথে বিছানায় যাওয়াটা কেমন দেখাবে, যে একই সাথে বৃদ্ধও?

ম্যারিয়নের যেখানে ছিল দ্বিধা, ক্লডিয়ার সেখানেই ততখানি কৌতূহল। বৃদ্ধ ম্যারিয়নের মাঝেও সে এক আকর্ষণ অনুভব করেছিল। ম্যারিয়ন তার গরিলাসদৃশ চেহারা নিয়ে যখন হেসেছিলেন, খুব আকর্ষণীয় এবং হ্যান্ডসাম মনে হয়েছিল তাকে।

ক্লডিয়াকে পরীক্ষামূলক যাচাই করতে, অর্থাৎ তাকে যৌন ঔৎসুক্য থেকে নির্বাচিত করতে ম্যারিয়ন কৌশলে বলেছিলেন, সবাই আমাকে এলি নামেই ডাকে, এমনকি আমার নাতি-নাতনিরাও। ক্লডিয়াকে ম্যারিয়ন নাতির বয়সি হিসেবেই বোঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেচারা বৃদ্ধের এই বুদ্ধিদীপ্ত প্রকৃত উচ্ছ্বাসে ক্লডিয়া যেন আরো কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল। ম্যারিয়ন সম্পর্কে সে শুনেছিল সে মারাত্মক নির্দয় লোক, কিন্তু তার সান্নিধ্যে এসে ক্লডিয়ার মোটেও তা মনে হয়নি, ম্যারিয়নের সাথে যৌনতায় বরং আগাম রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগল।

বেভারলি হিলসে হোটেলের বাংলোয় বসে ছিলেন ম্যারিয়ন। ক্লডিয়ার আগমনের অপেক্ষাতেই ছিলেন। দ্বিধা ছিল মনে, ছিল সংকোচ। টগবগে যুবতী ক্লডিয়ার সাথে কতটুকু তাল মেলাতে পারবেন তিনি? কিংবা আদৌ পারবেন কি?

ম্যারিয়ন তার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন বাংলোর নিচতলায়। ক্লডিয়া যখন প্রবেশ করল ম্যারিয়ন তখনও দ্বিধান্বিত, স্পষ্ট চিন্তার ছাপ তার কপালে। আর ক্লডিয়া তার স্বভাবসুলভ স্বতঃস্ফুর্ত, প্রাণবন্ত। বৃদ্ধ ম্যারিয়নের সহযোগিতায় এগিয়ে এলো সে। সমস্ত দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে ম্যারিয়নের পরিধেয় খুলে ফেলল সে নিজ হাতে। তারপর সেগুলো সুন্দর ভাঁজ করে রাখল একটি চেয়ারে।

এবার বিবস্ত্র হওয়ার পালা তার নিজের। একে এক পরিধেয় সরতে লাগল ক্লডিয়ার, সম্পূর্ণ নগ্ন হলো সে। কিন্তু ততক্ষণে নগ্ন ম্যারিয়ন নিজেকে লুকিয়েছে বিছানার চাদরে। নগ্ন ক্লডিয়া জড়িয়ে ধরল ম্যারিয়নকে। নিজের সংকোচ কাটাতে এবং কিছুটা স্বাভাবিক হতে ম্যারিয়ন কৌতুক করে বলল রাজা সলোমন যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাকে উষ্ণ রাখতে তার শয্যায় পাঠানো হয়েছে কুমারী…

বেশ, আপনার যদি এমনই মনোভাব, তবে খুব বেশি সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে। ক্লডিয়া বুড়োকে উজ্জীবিত করতে তাৎক্ষণিক বলল। এ কথায় সাগ্রহে বুড়ো ম্যারিয়নকে জড়িয়ে ধরল এবং স্পর্শ করল তার ঠোঁট। ম্যারিয়নের ঠোঁটের উষ্ণতা পেল ক্লডিয়া। তবে শরীরে পেল শুষ্কতা এবং বার্ধক্যের নরম পেশি। সব মিলিয়ে ক্লডিয়ার একেবারে খারাপ লাগেনি বুড়োর সাথে শরীর মিশিয়ে রাখতে।

এর মধ্যে কেটে গেছে বেশ কিছু সময়। অবাক হলো ক্লডিয়া। এতটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া নেই ম্যারিয়নের। অবাক হলো এই ভেবে, হাজার ডলারের সুট-বুটের ম্যারিয়ন কতই না সুপুরুষ, কতই না ক্ষমতাবান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অথচ জীবনের এই শেষ লগ্নে ক্লডিয়ার আহ্বানে কতটাই তার অক্ষমতা। আরো মিনিট দশেক মরিয়া চেষ্টা চালাল ক্লডিয়া চুমুতে চুমুতে ভরে দিল সারা অঙ্গ, আলিঙ্গনের মোল কলার বাদ গেল না কিছুই। কিন্তু ম্যারিয়ন তথৈবচ। অবশেষে উপলব্ধি করল ম্যারিয়নের আর কিছুই হবার নয়।

ক্লডিয়ার বাহুতে তখনও ম্যারিয়নের মাথা। আফসোস হলো তার। ভাবতে লাগল- এই শেষ। জীবনের সর্বশেষ নারী। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। ক্লডিয়া তাকে বিন্দুমাত্র শ্লেষাত্মক উক্তি করল না। বরং স্নেহের সাথেই শরীরে নিজের উষ্ণতা বিলিয়ে দিতে লাগল আরো কিছুটা সময়।

এক সময় ক্লডিয়া প্রসঙ্গ এড়াতে বলল, ওকে এলি। আমি আপনার সাথে, একটি বিষয়ে আলোচনা করতে চাই। আসলে, আপনাকে আমি বলতে চাই ব্যবসায়িক এবং শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার ছবিগুলো কেন এত অবহেলিত হচ্ছে? আগের মতোই ম্যারিয়নকে আলিঙ্গনে রেখেছিল, তার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিল। ম্যারিয়নের সমস্যাগুলো এবার তুলে ধরল সে। দায়ী করল তার কিছু চিত্রনাট্যকার, কলাকুশলী ও পরিচালককে। ক্লডিয়া বলল, আপনার ছবিগুলো যে শুধু নিম্নমানের তাই নয়, দেখার মতোও নয় আপনার এসব ছবি। ভয়াবহ বিশ্লেষণ ক্লডিয়ার, যা আজ অবধি কেউ ম্যারিয়নের সামনে মুখ ফুটে এভাবে বলার সাহস পায়নি।

ক্লডিয়া স্বাভাবিকভাবেই বলে চলল, এর কারণ, ছবিগুলোতে গল্পের কোনো সেন্স নেই। তাছাড়া আপনার কিছু ফাঁকি পরিচালক আছে, যারা শুধু তাদের কল্পিত গল্পের স্লাইড শোগুলো উপস্থাপন করে আপনার সম্মতি আদায়ের জন্য। আর অভিনয় শিল্পীরা ছবিগুলোতে অভিনয় করে হয়তো অর্থের লোভে কিংবা অন্য কোনো স্বার্থে। ঠোঁটে প্রসন্ন হাসি ছড়িয়ে ম্যারিয়ন শুনছিল ক্লডিয়ার বিশ্লেষণ। বেশ আয়েসেই শুনছিল সে। কিছুক্ষণ আগের দ্বিধা-সংকোচ সরে গেছে তার মন থেকে। উপলব্ধি হলো— তার জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেছে ইতিমধ্যেই– এটা এক রকমের মানসিক মৃত্যুর সমতুল্য। বুঝতে পারল, সে আর কখনোই কোনো নারীর ভালোবাসা পাবে না, শত চেষ্টা করলেও নয়। কিংবা পারবে না তার পৌরুষত্ব দিয়ে কোনো নারীকে অপদস্থ করতে– এ অধ্যায়ে মৃত্যু ঘটেছে ম্যারিয়নের।

সে জানে, আজকের এই রাতের কথা ক্লডিয়া হয়তো কখনোই কারো কাছে প্রকাশ করবে না। আর যদি করেই, তাতেইবা কি এমন আসে-যায়? ম্যারিয়ন জানে তার এখনো আছে পার্থিব ক্ষমতা। এখনো এ বয়সেও হাজার হাজার লোকের জীবনের পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা তার আছে। যত দিন সে বেঁচে থাকবে ততদিনই থাকবে তার এ ক্ষমতা। তবে ক্লডিয়ার সুখের পরশ, সাথে ফিল্ম নিয়ে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনছে, শুনতে ভালো লাগছে ম্যারিয়নের।

এতক্ষণে মুখ খুলল সে, তুমি বুঝতে পারছ না, বলল ম্যারিয়ন। আমি কেবল একটি ছবির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সহযোগিতা করতে পারি, ছবির নির্বাহের কাজ আমার নয়– আমার পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়। তোমার মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে সঠিক—-আমি আর কখনোই সেসব পরিচালককে নিযুক্ত করব না। ট্যালেন্টদের তো আর অর্থের ক্ষতি হয় না হয় আমার। অবশ্য তাদেরকে এর দায় নিতে হবে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে— শৈল্পিক ছবি কি সত্যই অর্থ আনবে?

কথা বলতে বলতেই ম্যারিয়ন বিছানা ছেড়ে নেমে এলো। চেয়ারে রাখা কাপড়গুলো চড়াতে শুরু করল একে একে।

নগ্নতা ঢেকে যাবার পর পোশাকি ভদ্রতা উভয়ের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাল। এতক্ষণের স্বাভাবিকতায় ছেদ পড়ল। তবে ক্লডিয়ার এ মিশন সফল না হলেও, নগ্ন ম্যারিয়নকে কিন্তু তার যথেষ্ট শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। তরুণদের মতো টানা দুটি পা, মেদহীন চিকন শরীর, তুলনামূলক বড় মাথা– এর সব কিছুই ছিল ম্যারিয়নের প্রতি ক্লডিয়ার আকর্ষণের উৎস। শুধু একটি অঙ্গই হতাশ করেছে ক্লডিয়াকে। বুড়ো ম্যারিয়নের যৌনাঙ্গ সতেজ করার জন্য আদৌ কোনো চিকিৎসা আছে কি-না, ক্লডিয়া তার সার্জন প্রেমিকের পরামর্শ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

এ মুহূর্তে ম্যারিয়নের ক্লান্ত শরীরে শার্টের বোম লাগানো বোম দেখে তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে এলো ক্লডিয়া। তারপর নিজ হাতে গুলো লাগিয়ে দিল একে একে।

ক্লডিয়ার নগ্নতায় গভীর দৃষ্টি ফেলল ম্যারিয়ন। বিগত যৌবনের অনেক ভাসা ভাসা স্মৃতি উঁকি মেরে গেল তার মনে। এ পর্যন্ত যত স্টারদের সাথে সে বিছানায় গেছে তাদের অনেকের চেয়ে ক্লডিয়ার শরীর আকর্ষণীয়। কিন্তু এ মুহূর্তে ক্লডিয়ার নগ্ন সৌন্দর্য ম্যারিয়নকে মোটেও বিচলিত করতে পারল না– আর, পারবেও না কোনো দিন। তবে এর জন্য তার যেমন নেই আফসোস, তেমনই নেই কোনো উচ্ছ্বাস।

ক্লডিয়া সুন্দর করে বেঁধেছিল ম্যারিয়নের মেরুন রঙ্গা টাই। চেয়ারে বসে পড়েছিলেন ম্যারিয়ন। ক্লডিয়া কোল ঘেঁষে উষ্কখুষ্ক চুলে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছিল। চুলগুলো নির্দিষ্ট সিঁথিতে এনে ম্যারিয়নের ঠোঁটে আবারো উষ্ণ স্পর্শ দিল ক্লডিয়া। বলল, সুন্দর একটি সময় কাটালাম আজ।

কথাটি ম্যারিয়নের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। ক্লডিয়ার কণ্ঠে বিদ্রুপের কোনো লেশমাত্র পেলেন না বুড়ো ম্যারিয়ন। সত্যিই কি ক্লডিয়া সুন্দর সময় কাটিয়েছে? ম্যারিয়নের বিশ্বাস হয় না—-বিশ্বাস হবার কথাও নয়। এ পর্যন্ত ক্লডিয়ার সাথে যতটুকু হয়েছে, তার আদ্যপান্ত ব্যর্থতায় ভরা হাস্যকর একটা সময় গেছে। তবে ক্লডিয়ার কণ্ঠে যে এক আবেগ ছিল তাতে অবলম্বন যেন পাওয়া গেল কিছুটা। ক্লডিয়াকে মোহিত করা সেই বিখ্যাত হাসি ফুটে উঠল বুড়োর মুখে।

ম্যারিয়ন বুঝতে পারলেন যুবতী ক্লডিয়া সত্যিই নিষ্পাপ। তার সত্যিই আছে একটি সুন্দর হৃদয়। আর বুড়ো ম্যারিয়নের প্রতি তার এই ভালো লাগাটাও হচ্ছে যুবতী বয়সের উচ্ছল আবেগ। ম্যারিয়নের আফসোস হলো এই ভেবে যে, ক্লডিয়ার মতো এমন স্বচ্ছ, সুন্দর ও মেধাবী একটি মেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম একটি ক্ষেত্রে বিচরণ করছে- এ পৃথিবী তার আমূল পরিবর্তন করে ফেলবে। নিঃশেষ করে ফেলবে তাকে।

ক্লডিয়ার আচার-আচরণ, ব্যবহারে মুগ্ধ ম্যারিয়ন। তিনি বললেন, বেশ, অন্তত আজ আমি তোমাকে খাওয়াতে চাই। বলেই টেলিফোনের রিসিভার তুলে রুম-সার্ভিস বিভাগে নির্দেশ দিলেন তিনি।

সত্যিই ক্ষিদে পেয়েছিল ক্লডিয়ার। খাবার আসার পর গোগ্রাসে গিলল অধিকাংশ খাবার। নিমেষে শেষ করল সুপের বাটি ও হাঁসের মাংস দেয়া ভেজিটেবল। তারপর বড় আকারের বাটি ভর্তি স্ট্রবেরি আইসক্রিম তৃপ্তির সাথে খেল সে। অপরদিকে ম্যারিয়ন খেল খুব সামান্যই, তবে মদের বোতলের অনেকটাই সে শেষ করল। খেতে খেতে তাদের মাঝে আলাপ হলো মুভি এবং নভেল নিয়ে। এ আলাপ থেকে ক্লডিয়া আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করল– তার চেয়ে ম্যারিয়ন অনেক ভালো পড়ুয়া। অগাধ জ্ঞান আছে তার নভেলে।

লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম আমি, ম্যারিয়ন বললেন। এখনো আমার দুর্বলতা রয়েছে এর প্রতি। পড়তেও ভালো লাগে। বই সত্যিই আমাকে দেয় আনন্দ। তবে, তুমি কি জানো এমনই একজন লেখক আছে আমার পছন্দের তালিকায়, যার সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছি। এমনকি তার লেখা বইগুলো আমি রীতিমতো পূজা করি। শুনবে তার নাম? একটু থামলেন ম্যারিয়ন। আবার সচকিত হয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, সেই লেখকের নাম আর্নেস্ট ভেইল। অনেক সুন্দর সুন্দর বই লিখেছে সে। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনটা বেশ ব্যথাতুর। কিভাবে তার পক্ষে এমন লেখা সম্ভব- অবাক হই।

এর কারণ, লেখকরা তাদের লেখা বইয়ের মতো পারে না। ক্লডিয়া প্রায় তাৎক্ষণিক জবাব দিল। আবার বলল, জীবনের অনেক রস ঘেঁকে হেঁকে একজন লেখক পূর্ণ করে তোলে অন্যের উপভোগের জন্য। বিশাল বিশাল পাথরের বোঝ তাদের জীবনে, যেন এক একটা খনি। আর সেখান থেকে ছোট মূল্যবান হীরে পেতে, প্রচণ্ড রকমের বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে একের পর এক–এত সহজ নয়।

আর্নেস্ট ভেইলকে তুমি চেন ম্যারিয়নের প্রশ্নে ক্লডিয়া ইতিবাচক মাথা নাড়ল। ম্যারিয়নের প্রশ্নে এমন কোনো অশ্লীল আভাস ছিল না। ভেইলের সাথে যে ক্লডিয়ার সম্পর্ক আছে তা কোনো মতে ম্যারিয়নের জেনে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়। তবে সে ম্যারিয়নকে অবশ্যই জানাতে চায় যে, ভেইলের সাথে তার একটা সম্পর্ক আছে- যে সম্পর্ক ভালোবাসার। ক্লডিয়া বলল, আমি তার লেখা ভালোবাসি, খুব পছন্দ করি কিন্তু আমি তার জন্য একা দাঁড়াতে পারব না। একটু রহস্য রেখেই বলল ক্লডিয়া, তার সাথে স্টুডিও অবিবেচনাপূর্ণ আচরণ করেছে। অনিচ্ছাপূর্বক তার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে।

ক্লডিয়া আকস্মিক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। হাতের অশ্লীল ভঙ্গি প্রদর্শন করে সে ম্যারিয়নের উদ্দেশে বলল, স্টুডিওর প্রতি অধিকাংশ ট্যালেন্টেরই রয়েছে। ক্ষোভ। এটি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয় এবং আপনার সামনেই আজ বলছি, ব্যবসায়িক সম্পর্কের দিক দিয়ে আপনিও তাদের সুইট হার্ট নন। তবে, আমি হচ্ছি এ শহরের একমাত্র রাইটার যে প্রকৃতই আপনাকে পছন্দ করি।

এ কথায় দুজনই হেসে উঠল।

ক্লডিয়ার আজকের এই সুন্দর মুহূর্তটি থেকে বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে এলো। বেভারলি হিলস হোটেলের বাংলো ত্যাগের আগে ক্লডিয়ার উদ্দেশে ম্যারিয়ন বললেন, তোমার যে কোনো সমস্যায় দয়া করে আমাকে জানিও। এটি ম্যারিয়নের এমনই এক অভাবনীয় ম্যাসেজ যা এ পর্যন্ত তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব কম মানুষের ভাগ্যেই জুটেছে।

ক্লডিয়া বুঝতে পারল বিষয়টি। বলল, এমন সময় উপভোগ করে আমি কখনোই আমার সুবিধা আদায় করতে অভ্যস্ত নই। বরং কোনো স্ক্রিপ্ট নিয়ে যদি আপনি কখনো সমস্যায় পড়েন, আমাকে কল করবেন। সে ক্ষেত্রে উপদেশ হবে বিনা পয়সায়, আর যদি আমাকে লিখতে হয় তবে এর জন্য পে করতে হবে।

অত্যন্ত কাঠখোট্টা প্রফেশনাল জবাব শুনিয়ে দিল হলিউডের প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান বৃদ্ধ ম্যারিয়নকে। এমন একটা ভাব দেখাল সে যেন ক্লডিয়ার প্রয়োজনে নয়, ম্যারিয়নেরই প্রয়োজন পড়তে পারে ক্লডিয়াকে এবং খুব একটা সত্য কথা না হলেও গর্ব ভরে ম্যারিয়নকে সে বলল, আমার নিজের মেধার প্রতি যথেষ্ট আস্থা রয়েছে।

বন্ধু হয়েই সেদিনের মতো বিদায় নিল ক্লডিয়া। ম্যারিয়নের মনেও ছেয়ে রইল ক্লডিয়ার ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব।

সমুদ্র উপকূলের হাইওয়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল ক্লডিয়া। এখানে গাড়ির গতিসীমা কম। বাম পাশে সমুদ্র সৈকত। রোদের আলোয় সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝিলিক। আপন মনেই দৃষ্টি চলে গেল সেদিকে। সৈকতে অর্ধনগ্ন মানুষের শান্ত ঘোরাফেরা। তাকিয়ে রইল সেদিকে ক্লডিয়া। মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলার কথা– কতবারই না এসেছে সে বেড়াতে। মাথা উঁচু করে দৃষ্টি গেল সৈকত পেরিয়ে, সাগরের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে আরো অনেক দূর একেবারে দিগন্তরেখা অবধি। সেখানে যেন সাগরের উত্তালতা নেই। সর্ষে বিন্দুর মতো কিছু মাস্তুল চোখে পড়ল তার। দৃষ্টি ফিরে এলো হাইওয়ের ডান ডিকের এক জটলায়। ক্যামেরা, বোর্ড আর সাউন্ড সিস্টেম ঘিরে উৎসুক জনতা, হয়তো কোনো ছবির শুটিং চলছে। সৈকত তীরের এমন হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাতে ক্লডিয়ার খুব ভালো লাগে। আর ঠিক ততটাই এ বিষয়ে বিতৃষ্ণা আর্নেস্ট ভেইলের। ক্লডিয়ার মনে পড়ে গেল। ভেইল প্রায় বলত, এই হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালানো যেন নরকের জন্য ফেরি ধরা।

আর্নেস্ট ভেইলের সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের কথা স্পষ্ট মনে আছে ক্লডিয়ার। ভেইলের বহুল জনপ্রিয় নভেলের গল্প অবলম্বনে চিত্রনাট্য তৈরির জন্য যেদিন ডাক পড়ল ক্লডিয়ার, সেদিনই প্রথম দেখা। আগে থেকেই ভেইলের ভক্ত ছিল ক্লডিয়া। কিন্তু কখনো এই স্বপ্নের লেখকের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো একেবারে লেখকের গল্পের চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব পেয়ে।

ভেইলের লেখা প্রতিটি বাক্যে ক্লডিয়া পেত ভিন্ন স্বাদ, যেন মিউজিকের একটা ছান্দিক ভাব ফুটে উঠত লেখায়। পরবর্তীতে এ ছন্দেই দুজন গড়ে নেয় জীবনের কাব্য। ভেইলের লেখাগুলো হতো সর্বদাই বিয়োগান্তক চরিত্রের বিয়োগান্তক পরিণতি ছাড়া যেন কিছুই বোঝে না সে। তবে এর মাঝেও ছিল তার লেখার অভিনবত্ব। নতুন নতুন লেখায় অভিনব কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিল ক্লডিয়া।

.

ছোটবেলা থেকেই সে পড়ছে ভেইলের লেখা। আর যতই বড় হচ্ছিল সে, ততই যেন স্বপ্নের এই লেখকের সাথে সাক্ষাৎ লাভের বাসনা প্রগাঢ় হয়ে উঠেছিল। তার কথা চিন্তা করে রোমাঞ্চ অনুভূত হতো তার। কিন্তু যখন তাকে সামনে পেল, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ হয়ে দেখা দিল ক্লডিয়ার কাছে।

ভেইলের তখন পঞ্চাশ বছর বয়স। শারীরিক অবকাঠামোকে তার লেখা গদ্যের মতো মনে হলো না ক্লডিয়ার। বোটে, মোটা এবং টাক মাথা। ক্লডিয়ার মনে হলো, তার এই টাক ঢাকার কোনো চেষ্টাই যেন সে করেনি কখনো। এমনকি তার দৈনন্দিন জীবনে নিজের সামান্যতম সৌন্দর্যের যত্ন নেয়নি কখনো। অথচ গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য ছিল তার অপার স্নেহ, অশেষ যত্ন। হয়তো এটাই ছিল তার ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে উচ্ছ্বাসের বিষয়, শিশুর মতো সরলতা। বুদ্ধিমত্তাকে ছাপিয়ে যে সরলতা ক্লডিয়া ভেইলের মাঝে খুঁজে পেয়েছিল, তাতেই সে দুর্বল হয়ে পড়ল।

পোলো লাউঞ্জের প্রতি আর্নেস্ট ভেইলের রয়েছে সীমাহীন দুর্বলতা। সে মনে করে, পোলো লাউঞ্জে যদি অন্তত এক বেলা সকালের নাস্তা করতে পারত, তবে সে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। এই হচ্ছে তার মানসিক সরলতা। গুটিয়ে রাখাই যেন তার স্বভাব। তবে লেখক হিসেবে মোটেও নয়– নিখুঁত এবং প্রাণখোলা তার সব সৃষ্টি।

এ পর্যন্ত ভেইলের লেখা নভেলের সমালোচনা হয়েছে ব্যাপক। সমালোচকদের আকুণ্ঠ উদ্ধৃতি তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে, সে তুলনায় অর্থের প্রাপ্তি কিন্তু নগণ্যই বলা যায়। অর্থ প্রাপ্তি যাই হোক, শীর্ষ জনপ্রিয় ভেইলের নভেল অবশেষে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মনোনীত হয়েছে। আর এই উদ্যোগ বিখ্যাত লডস্টোন স্টুডিওর।

লডস্টোনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ববি বানজ। ভেইলের লেখাগুলো যেন তার হৃদয় স্পর্শ করেছে এভাবেই প্রশংসা করেছিল বানজ। তার সাথে তাল মিলিয়েছিল স্কিপি ডিরিও। তারা প্রায় এক সাথেই বলেছিল– চমৎকার তোমার লেখা। মুখোমুখি এমন প্রশংসায় লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেছিল ভেইল। স্বপ্নের লেখক ভেইলের এমন সরলতায় সেদিন ক্লডিয়াও তাজ্জব বনে। গিয়েছিল।

লেখক ভেইলের সাথে সেটাই প্রথম মিটিং। ক্লডিয়ারও প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর আবারও স্টুডিও কার্যালয়ে বসল তারা। কয়েকটা ঘণ্টা মাত্র অতিবাহিত হয়েছে এর মাঝে, অথচ কেমন বেমালুম পাল্টে গেল সুর বানজ-ডিরির মনোভাব, সামগ্রিক বাতাবরণ। যে মুখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিল বানজ সেদিন, সে মুখেই দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় ভেইলের উপন্যাসকে আকাশ থেকে একেবারে আছড়ে ফেলল মাটিতে। বলা হলো– সাদা কাগজ ভরে আবল তাবল কিছু আঁকিবুকি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন কথা অবশ্য ভেইলের অগোচরেই বলা হলো। শুধু জানল ক্লডিয়া, আর অবাক হলো বানজ ও ডিবির ধূর্ততায়।

ভেইলের সরলতায় তখনও ক্লডিয়া আঁচড় দেয়নি, অর্থাৎ জানায়নি বানজদের প্রকৃত মনোভাবের কথা। বরং ভেইলের সরলতা, বিশ্বাসপ্রবণতা এবং চলচ্চিত্রে তার আগ্রহ নিয়ে ক্লডিয়া মনে মনে বেশ মজাই পাচ্ছিল।

আলোচনার টেবিলে বানজ বলল আর্নেস্ট, তোমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা ক্লডিয়াকে এনেছি। তার ব্যাপক কারিগরি জ্ঞান রয়েছে এ বিষয়ে ছবি কিভাবে ব্যবসা সফল হবে সে বিষয়েও ভালো ধারণা আছে তার। এ ছবি যে সুপার-ডুপার হিট করবে, তার গন্ধ পাচ্ছি। তবে মনে রেখো, এ ছবির লভ্যাংশের টেন পার্সেন্ট পাবে তুমি।

এমন প্রস্তাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ভেইলের মুখ। ক্লডিয়া কিন্তু মোটেও খুশি হতে পারল না। গভীরভাবে লক্ষ্য করল ভেইলকে। মনে মনে ভাবল, এই হাবলাটা বুঝতেও পারছে না যে, মোটের ওপর দশ শতাংশ যে শূন্যও হয়ে যেতে পারে নিমেষে বানজদের চক্রান্তে।

তবে ভেইল এই প্রস্তাবে দারুণ কৃতজ্ঞ হয়ে উঠল তাদের প্রতি। আর এই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটল যখন সে ক্লডিয়াকে উদ্দেশ করে তাদের বলল, অবশ্যই, আমি তার কাছে শিখব। ছবির জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা অবশ্যই বই লেখার চেয়ে অনেক বেশি মজার হবে, যদিও বিষয়টি আমার কাছে একেবারেই নতুন।

ভেইলকে আশ্বস্ত করতে স্কিপি ডিরি এবার বলল, আর্নেস্ট, তোমার মাঝে আমরা সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধির আভাস দেখতে পেয়েছি। আমাদের এ প্রতিষ্ঠান থেকে তুমি ব্যাপক কাজ পেতে পারো। এ ছবি থেকেই তোমার সচ্ছলতাও ফিরে আসতে পারে, সত্যিই যদি ছবিটি হিট করে এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

ক্লডিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে দেখতে লাগল ডিরি ও বানজকে। দুজনই আজব ঠেকল ক্লাডিয়ার কাছে। তার মনে হলো––এ টেবিলে উপস্থিত তিনজনই অর্থাৎ বানজ-ডিরির সাথে গোবেচারা ভেইলও হলিউডে যেন তেমন একটা অপরিহার্য নয়– তারা না থাকলেও হলিউড চলবে আপন গতিতে এবং সগর্বেই। ক্লডিয়ার মনে পড়ে গেল তখনও সেই সার্জনের ছুরির পোচ পড়েনি তার। মাফিয়াদের মতো চিবুক নিয়েই ধুকে ধুকে চলছে তার স্বপ্নের জগতে পদচারণা। সবার চোখে সুন্দরী হয়ে ওঠেনি তখনও ক্লডিয়া। স্পষ্ট মনে আছে তার-~ এই ডিরি কি তাকে কম ঘটিয়েছে?

ক্লডিয়া জানে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়ার সাথে সাথেই হাজারো সমস্যা এসে জুটেছে। যাই হোক সে রাতে ভেইল তাকে ডিনারের প্রস্তাব দিল। খুব সাদামাটা উদ্দেশ্য। নতুন স্ক্রিপ্ট নিয়ে তারা কিভাবে কাজ করবে, তার একটা পরিকল্পনার জন্যই ভেইলের এ প্রস্তাব। ক্লডিয়া সম্মত হলো। কিন্তু সে নিজেকে মোটেও আকর্ষণীয় করে উপস্থিত হলো না সে সাক্ষাতে। কৌশলে এড়িয়ে গেল রোমান্টিক সব বিষয়। কাজের সময় এসব রোমান্স-টোমান্স ক্লডিয়ার একেবারে পছন্দ নয়। বিশেষ করে লেখালেখির সময় এ ধরনের বিষয় যোগ হলে কাজে মারাত্মক সমস্যা হয় ক্লডিয়ার।

সেই রাতের ডিনার থেকে শুরু হলো একসাথে স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ। দেখতে দেখতে কেটে গেল দুটি মাস। আর আশ্চর্যের সাথে ক্লডিয়া লক্ষ্য করল তাদের সম্পর্ক অনায়াসে বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

কাজ করতে করতে একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল তারা। মনে হলো যেন কিছুটা অবসরের দরকার। দুজনেরই এক দশা। মনোস্থির করল ভেগাসে যবে। ক্লডিয়া ভেইল একসাথেই রওনা হলো ভেগাসের উদ্দেশে গ্যাম্বলিংয়ে বেশ দুর্বলতা রয়েছে ক্লডিয়ার। ভেইলও একই পথের পথিক, এ লাম্পট্যে দুর্বলতা তারও।

ভেগাসে ক্লডিয়া ভেইলকে পরিচয় করিয়ে দিল তার ভাই ক্রসের সাথে এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করল তাদের সম্পর্কটি যেন তেলে আর জলে– কোনো দিনই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। বেশ বুঝতে পারল ক্লডিয়া।

আর্নেস্ট প্রকৃতই একজন বুদ্ধিজীবী। গলফের প্রতি তার আগ্রহই নেই। অপরদিকে ক্রস বছরেও একটা বই পড়ে কি-না সন্দেহ। ভাই ক্রসকে ভেইলের কেমন লাগল– এমন প্রশ্নের জবাবে ভেইল বলল, সে হচ্ছে শ্রোতা আর আমি যেন বক্তা।

এটা কোনো প্রকৃত ব্যাখ্যা হলো না। ক্লডিয়া হতাশ হলো। এরপর ভেইল সম্পর্কে ক্রসের কাছে জানতে চাইল ক্লডিয়া। ক্রসের উত্তর যেন আরো দুর্বোধ্য, আরো রহস্যময় মনে হলো।

ক্লডিয়ার প্রশ্নে ক্রসের ভেতর যেন তোলপাড় করে উঠল। বেশ কিছুটা সময় নীরব ছিল সে। অবশেষে বলে উঠল, তার প্রতি তোমার একচোখা দৃষ্টি দেয়া ঠিক হবে না। আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তার যেন কিছুই চাওয়ার নেই। এবং সে ক্লডিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিল সে খুব শিগগিরই তা বুঝতে পারবে। খুব অবাক ঠেকল ক্রসের এই খোলামেলা মন্তব্য। আর্নেস্ট ভেইল এমনই এক দুর্ভাগা যে তার কোনো কিছুই গোপনীয় নয়, এমনকি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাও।

আর্নেস্ট ভেইলের সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্কটি একটু ভিন্ন ধরনের। সারা বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হলেও, হলিউডে তার কোনো ক্ষমতাই নেই। এছাড়া তার যেমন নেই কোনো সামাজিক প্রাপ্তি তেমনি সে মারাত্মক ধরনের সদাবিরুদ্ধচারী। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে তার আর্টিকেলগুলো সব সময়ই জাতীয় বিরোধের উস্কানিমূলক এবং দেখা গেছে তার অনুমানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশ তাতিয়ে তোলে তার লেখাগুলো। আমেরিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে তার লেখাগুলো। নারীবাদের ঘোর সমালোচক ভেইল। এক লেখায় সে স্পষ্টই উল্লেখ করেছিল শারীরিক কাঠামোগত দিক দিয়ে সমান না হওয়া পর্যন্ত নারীরা পুরুষদের বশীভূত হয়ে থাকবে। নারীবাদীদের প্রতি তার উপদেশমূলক উক্তি হলো–তাদের পার্লামেন্টারি প্রশিক্ষণ দল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই নয়, আমেরিকা জুড়ে যে বর্ণ বৈষম্য বিরাজ করছে সে প্রসঙ্গেও ভেইল একবার এক দীর্ঘ আর্টিকেল লিখেছিল। তাতে সে জোর দিয়ে উল্লেখ করেছিল— কৃষ্ণাঙ্গরা যেন নিজেদের রঙিন বলে আখ্যায়িত করে। এটাই হবে তাদের জন্য উচিত কাজ। কেননা এই কৃষ্ণবর্ণ অর্থাৎ ব্ল্যাক বিবিধ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন কালো চিন্তা, কালো নরকের মতে, কালো সমর্থন, কালো টাকা– এ সবই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত। ভেইল শুধু আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্দেশ করেই বলেনি, তার লেখা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইতালীয় স্প্যানিয়ার্ডস, গ্রিকসহ বেশ কিছু জাতির কৃষ্ণাঙ্গদেরও আঘাত করে। এসব অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গ নিজেদের রঙিন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে জোর আপত্তি জানায়। বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি হয়েছিল। ভেইলের এসব লেখায়।

চিত্রনাট্যের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে করতে বেশ অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল ক্লডিয়া ও ভেইলের মাঝে। ভেইল ছিল ক্লডিয়ার যেন অত্যন্ত মনোযোগী ছাত্র। একেবারেই ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করল সে ক্লডিয়ার কাছে। তবে সামাজিক বোধের ওপর ভেইলের যে মারাত্মক চিন্তা চেতনা রয়েছে, সেসব বিষয়ে ক্লডিয়া উৎসাহিত হলেও, প্রায়ই তিক্ত রসিকতায় মেতে উঠত।

অর্থ বিষয়ে ভেইলের যে বেপরোয়া অসচেতনতা, বিষয়টি কিন্তু ক্লডিয়া মেনে নিতে পারেনি। তবে মোটের ওপর তাদের মাঝে সম্পর্কটি ছিল বেশ মজার।

ক্লডিয়া ডি লিনাও যে ইতিমধ্যে নিজেকে ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রকাশ করেছে, তা জানিয়েছিল ভেইলকে। হলিউডের চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেই সুনামের কারণেই হয়তো তার লেখা বই শেষ পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তার লেখা বইয়ের মন্তব্য করতে বলেছিল ক্লডিয়া। যেদিন কুডিয়ার এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট তার লেখা নভেলের ওপর প্রকাশিত সমালোচনাগুলো এনে হাজির করে, সেদিনই আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয় তার। ভেইলকে তাই একটি বই দিয়ে ক্লডিয়া মন্তব্য আশা করেছিল।

ক্লডিয়ার লেখা নভেলের অনেকে প্রশংসা করলেও, সমালোচিত হয়েছে ব্যাপক। বাজারে খুব একটা কাটতি ছিল না। তবে তাতে সে আশাহত নয়। কেউ তার বই কিনুক কিংবা না কিনুক অথবা তার বই চলচ্চিত্রের জন্য যদি মনোনীত নাও হয়, তবুও তার নিজের লেখার প্রতি আস্থা রয়েছে ক্লডিয়ার। ভালোও বাসে সে তার নিজের সৃষ্টিকে। ক্লডিয়া তার এই উপন্যাসটি অবশ্য ভেইলকেই উৎসর্গ করেছিল। তাতে সে লিখেছিল– আমেরিকার জীবন্ত কিংবদন্তি নভেলিস্টকে।

যাই হোক, ভেইল কিন্তু ক্লডিয়ার সমালোচনাই করেছে। এক সাক্ষাতে সে বলল, তুমি খুব ভাগ্যবতী নারী। একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে সত্যিই তুমি ভাগ্যবান কিন্তু ঔপন্যাসিক তুমি নও, আর কখনো হবেও না।

সে দিন প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ভেইল ক্লডিয়ার উপন্যাসের সমালোচনা করে। নভেলের অঙ্গচ্ছেদ করে সে বুঝিয়ে দেয়– এটা কোনো লেখাই নয়-~~~ সমালোচনায় নগ্ন করে ছাড়ে তাকে। ক্লডিয়ার লেখাকে সে একটা ছেলেখেলা পাণ্ডুলিপি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ক্লডিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছে তার লেখায় যেমন আছে কাঠামোগত সমস্যা তেমনি অগভীর। নেই চরিত্র গঠনের শাব্দিক উৎকর্ষ, এমনকি সংলাপেও নেই আকর্ষণ। অথচ এই সংলাপই হচ্ছে তার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। এতে বুদ্ধিদীপ্ত সরলতা আছে কিন্তু প্রাণ নেই। ভেইলের এমন সমালোচনায় ক্লডিয়া আঘাত পেলেও, তার কথায় যে সত্যতা আছে, আছে যুক্তি এটা মেনেই তর্ক করল না।

এত সমালোচনার পর দয়াপরবশ হয়ে ভেইল শুধু এটুকুই বলল, তোমার লেখা বইটি অষ্টাদশী মেয়েদের জন্য হবে বেশ চমঙ্কার। আর আমি এতটা সময় ধরে তোমার লেখার যে সমালোচনা করলাম তা আমার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে। তোমার লেখায় এমন কিছু সমস্যা আছে যা তুমি কখনোই শোধরাতে পারবে না। পারবে না মেরামত করতেও। তোমার আসলে ভাষা জ্ঞানের দারুণ অভাব।

ভেইলের এতক্ষণের কঠোর সমালোচনায় আঘাত পেলেও ভেঙে পড়েনি। কিন্তু এবার আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারল না– ভেঙে একেবারে যেন খান খান হয়ে গেল। তারপরও শেষ চেষ্টা চালাল যারা তার বইয়ের প্রশংসা করেছে। তাদের দেয়া কৃতিত্বের কথা বলে। ক্লডিয়া বলল, তবে কি যারা প্রশংসনীয় সমালোচনা করেছে তাদের সমালোচনাও ভুল? আমি তো যথাসাধ্য সাবলীল বাক্যই লেখার চেষ্টা করেছি। আরেকটি বিষয়, আমি মূলত তোমার লেখার ছান্দিক ভাষাকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি।

এই প্রথম বারের মতো হাসল ভেইল, ধন্যবাদ তোমাকে বলল ভেইল। আমি কিন্তু আমার লেখায় ছান্দিক ভাষারীতি আনার চেষ্টা করিনি। চরিত্রের আবেগেই এমন ভাষা চলে এসেছে। আর তোমার এসেছে জোর করে, যা অবশ্যই ভুল এবং মেকি।

ক্লডিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। অঝোর ধারায় নেমে এলো অশ্রু। তুমি কি ধরনের মানুষ কেঁদে কেঁদেই বলতে লাগল ক্লডিয়া। এত কঠোর ভাবে কিভাবে তুমি আমাকে বলতে পারলে?

ক্লডিয়াকে স্বাভাবিক করতে ভেইল তৎপর হলো। বলল, একটা প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করার মতো মান তোমার লেখায় আছে। তুমি একজন স্বনামধন্য চিত্রনাট্যকার হয়েও ঔপন্যাসিক হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ কেন? আমার মতো অনাহারে মরবে তুমি। তুমি চিত্রনাট্যকার হিসেবে অবশ্যই জিনিয়াস।

একটু থামল ভেইল। তারপর আবার বলল, আমার যা মনে হয়েছে, আমার অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করেছি। আমার মতে আমি যা বলেছি তা সঠিক। হতে পারে আমি ভুলও বলেছি, কিন্তু

ক্লডিয়া ধাতস্থ হলো। বলল, না, তুমি ভুল বলোনি, কিন্তু তোমার কথাগুলো আঘাত করেছে আমাকে।

সতর্কতার সাথে ক্লডিয়ার চোখে চোখ রাখল ভেইল। তারপর ধীরে ধীরে তার উদ্দেশে বলল ভেইল, তোমার কাছে প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু বিষয় আছে। মুভির সংলাপ তৈরির ব্যাপকগুণ আছে তোমার, স্টোরি লাইন তৈরিতেও তুমি পারদশী –প্রকৃত অর্থে চলচ্চিত্রে তোমার রয়েছে উৎকৃষ্ট ধারণা। অটোমোবাইলের জন্য উচ্চ প্রযুক্তি থাকতে তুমি কেন যাবে কামারের কাছে? তুমি হচ্ছ চলচ্চিত্রের ব্যক্তিত্ব, ঔপন্যাসিক না।

বিস্ফারিত নেত্রে ভেইলের দিকে তাকাল ক্লডিয়া। এতক্ষণে সত্যিকারের সুখের হিমেল পরশ বুলিয়ে গেল তার হৃদয়ে। তবে একই গোঁ ধরে ক্লডিয়া বলল, তুমি জানো না কতটা কঠোরভাবে অপমান করেছ তুমি।

হ্যাঁ অবশ্যই। আমি মানছি, স্বীকার করল ভেইল। তবে যা বলেছি তোমার ভালোর জন্যই।

তোমার, লেখা বইয়ের সাথে তোমাকে আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমিই সেই লোক! ক্লডিয়ায় কণ্ঠে এখনো বিদ্বেষ। তোমার সাথে কথা বলে কেউই বিশ্বাস করবে না যে তোমার লেখাগুলোর স্রষ্টা তুমি।

কর্কশ কণ্ঠে হেসে উঠল ভেইল, একেবারেই খাঁটি কথা বলেছ তুমি। এটাই কি মজার বিষয় নয়?

ভেইলকে দমাতে পারল না ক্লডিয়া। পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম কয়েকটা দিন ক্লডিয়া বেশ গম্ভীর থাকল। ক্লডিয়ার এ গাম্ভীর্য উভয়ের বন্ধুত্বে কোনো ছাপ ফেলল না। বরং আরো প্রগাঢ় হতে থাকল। কিন্তু ক্লডিয়ার এই পরিবর্তন ভেইলকে কিছুটা দমিয়ে ফেলল। সে ভাবল– এই বুঝি হতে চলেছে তাদের সম্পর্কের ইতি।

সব কিছুকে ছাপিয়ে ক্লডিয়া ভেইলকে সতর্ক করে দিল পরবর্তী দিনগুলোর জন্য। বলল, আর্নেস্ট, সেদিনের মতো এতটা রুক্ষ আচরণ করবে না আরো কখনো। আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। যদিও আমি জানি তোমার কথাগুলোই ছিল সঠিক। তাই বলে এতটা নির্দয় হওয়া উচিত হয়নি তোমার।

আরেকটু রুক্ষ হলো ক্লডিয়া। বলল, অপদস্থ করে তাতে প্রলেপ দিতে আমাকে বিছানায় নিয়ে যাওয়ার মনোবাসনা তোমার? অবশ্য আমি যতদূর জানি, এ ক্ষেত্রে তুমি একেবারেই আনাড়ি। ঈশ্বরের দোহাই, তোমার ঐ তিক্ত ওষুধের সাথে অন্তত একটু মিষ্টি দিও।

বিড়বিড় করে উঠল ভেইল, এই একটি বিষয়ে আমি নিজের মতো। ক্লডিয়ার উদ্দেশে বলল, এসব বিষয়ে যদি আমার সততা না থাকে তবে আমার তো কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। আর সত্যি কথা বলতে, তোমার প্রতি আমি যে পশুবৎ আচরণ করেছি তা তোমার সাথে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলেই। সত্যিই আমি তোমার অনুরাগী। তুমি হয়তো নিজেও জান না তুমি কতটা ব্যতিক্রমী।

ক্লডিয়া হেসে ফেলল। প্রশ্ন করল, তোমার এই অনুরাগ কি আমার টেলেন্টে না-কি আমার সরলতা এবং বুদ্ধিমত্তায়? না-কি আমায় সৌন্দর্যে?

হাত নেড়ে বিরোধিতা করল ভেইল। বলল, এগুলোর কোনোটাই নয়। তুমি আশীর্বাদপুষ্ট, অত্যন্ত সুখী একজন। এমনকি আমার মনে হয় কোনো বিমর্ষতাই তোমাকে যেন ছোঁয়নি এবং ছেবেও না এটাই তোমার ক্ষেত্রে বিরল, আর তোমার প্রতি আমার অনুরাগের কারণ।

ভেইলের এমন মন্তব্যে ক্লডিয়ার কপাল কুঞ্চিত হলো। কি যেন ভাবল কিছুটা সময়। তারপর বলল, তোমার এ কথাতেও অস্পষ্ট অপমানের আভাস। তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ, আমি নির্বোধ একটা ব্যক্তি? কয়েক পলক থামল ক্লডিয়া। আবার বলল, তোমার এ কথা তো আরো হতাশাজনক।

ঠিক ধরেছ তুমি, ভেইল বলল, আমি নিজেও বিষাদগ্রস্ত এবং তোমার চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। ভেইলের এ কথায় কি ছিল কে জানে, ক্লডিয়া হেসে ফেলল। ভেইলও হেসে উঠল তার সাথে। আর ক্লডিয়া তাকে জড়িয়ে ধরল।

ক্লডিয়া বলল, তোমার সতোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

লডস্টোন স্টুডিওর জন্য পাণ্ডুলিপির কাজ অব্যাহত রয়েছে—- তখনো শেষ হয়নি। কিন্তু ভেইল-ক্লডিয়ার সম্পর্ক এগিয়েছে ইতিমধ্যেই, অনেক দূর। ক্লডিয়ার স্বতঃস্ফুর্ত উৎসাহে বিছানা পর্যন্ত গেছে তাদের সম্পর্ক। নতুনভাবে ভেইলকে আবিষ্কার করেছে ক্লডিয়া। বিনা কাপড়ে ভেইলকে আরো অনুরাগী মনে হয়েছে তার। ক্লডিয়ার এই স্বভাবজাত কৌশল ভেইলের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছেছে। ভেইলও পেয়েছে ক্লডিয়ার হৃদয়-সান্নিধ্য। নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থাও জন্মেছে–বিনিময় করেছে নিজেদের প্রগাঢ় আস্থার ভাব।

ক্লডিয়ার চোখে, ভেইল যৌন সম্ভোগে আগ্রহান্বিত হলেও বিশেষ দক্ষ নয়। মানুষ হিসেবে সে যতটা না ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তার চেয়ে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সেক্সের পর ভেইল হৃদয় খুলে কথা বলত ক্লডিয়ার সাথে। তার নগ্নতা এমন আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, এমনকি ক্লডিয়ার প্রতি সমালোচনাতেও নয়। আর অপর দিকে ক্লডিয়াও ভেইলের এমন আলোচনা পছন্দ করেছে। ভেইলের নগ্নতাও ছিল তার পছন্দের পরিধেয় ছাড়া ভেইল যেন বন্য-বানরের মতো ক্ষিপ্র এবং প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ। সর্বোপরি তার লোমশ এবং জট পাকানো পেশিবহুল শরীরে কেমন যেন একটা বানরের আদল। নগ্ন শরীরে গাছে ঝুলিয়ে রাখলে মানুষ তার লোমশ শরীর দেখে বানরই মনে করবে। তবে ভেইলের এই বানর প্রবৃত্তির ক্ষিপ্রতায় ক্লডিয়া মুগ্ধ। ভেইলের সাথে যৌনতায় সে খুঁজে পেয়েছে এক রকমের কৌতুককর আনন্দ।

ভেইলকে এর আগে বেশ কয়েকবার টিভিতে দেখেছে ক্লডিয়া–হয়তো কোনো সাক্ষাৎকারে কিংবা কোনো আলোচনায়। সেসব অনুষ্ঠানে ভেইলের পোশাক-পরিচ্ছেদ, আভিজাত্যপূর্ণ ঠোঁটে ধরা পাইপ বাচনভঙ্গি– সব মিলিয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষই মনে হয়েছে ক্লডিয়ার তবে টেলিভিশনের ভেইলের চেয়ে। শয্যাসঙ্গী ভেইল ক্লডিয়ার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

সত্যিকারের প্রেমময় কথোপকথন বলতে যা বোঝায়, তা কখনোই হয়নি দুজনার মাঝে। ক্লডিয়াও এমন আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। আর ভেইলের মানসিকতা কেবল সাহিত্যের। ভেইলের আলোচনায় আবেগ এসেছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গে। আর বিশ্বের এত নামকরা ঔপন্যাসিক হয়েও ভেইল কখনোই তা ফলাও করে জাহির করার চেষ্টা করেনি। ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের মানসিকতায় এই সাহিত্য বিষয় ছাড়া আর কোনো কিছুতেই মিল নেই তেমন। তারপরও তাদের পারস্পরিক মানিয়ে চলার প্রবণতা থেকে তারা অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে মনস্থির করে উভয়ের সম্মতিক্রমেই।

ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের সাহিত্য বিষয়ে বিতর্ক না হলেও, বিতর্ক হতে মুভি নিয়ে। চলচ্চিত্র কোনো শিল্পই নয় ভেইলের দৃষ্টিতে। আর এতেই ছিল ক্লডিয়ার জোর আপত্তি। চলচ্চিত্রের মতো চিত্রশিল্পও ভেইলের দৃষ্টিতে কোনো শিল্প নয়।

ভেইলের এমন উস্কানিমূলক উক্তির বিরোধিতা করে ক্লডিয়ার যুক্তি, যদি চিত্রশিল্প তোমার দৃষ্টিতে আর্ট না হয় তবে বাখ বা বিথোভেনের কাজগুলোও শিল্প নয়, মাইক্যাল এঞ্জেলোর কাজও শিল্প নয়। তুমি একটা ষাঁড়ের মতো কথা বলছ। আরো এরপরই ক্লডিয়া বুঝতে পেরেছিল যে, ভেইল তাকে ক্ষেপানোর জন্যই এমন বিষয়ের অবতারণা করেছে। ক্লডিয়ার সাথে ভেইলের এরকম কৌতুককর আলোচনা হতো বেশিরভাগ সেক্সের পর।

স্ক্রিপ্টের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে এলো। এবার ফিরে যাবার পালা ভেইলের। নিউইয়র্কে ফিরে যাবার আগে ক্লডিয়াকে উপহার দিল ছোট্ট একটি এনটিক রিং। চারটি ভিন্ন রঙের এক দিকে হেলানো জুয়েলের রিংটির মূল্য খুব বেশি নয় কিন্তু যে কোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। ভেইলের কাছ থেকে রিংটি পাওয়ার পর ক্লডিয়া আর কখনোই খুলেনি। সবসময় তার হাতে দেখা গেছে ভেইলের দেয়া এ উপহার। আংটিটি যেন তার মনে সৌভাগ্যের প্রভাব ফেলেছিল।

ভেইলও চলে গেল, ক্লডিয়ার সাথে তার যৌন সম্পর্কের ইতি ঘটল। কখনো কদাচিৎ ভেইল ফিরে এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। সে দেখতে পেয়েছে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের যেন একটা অবনতি ঘটেছে। তাদের সেক্স সেক্সচুয়াল সম্পর্কে ভাবাবেগের চেয়ে বেশি বন্ধুত্বের আবেগ। প্রকৃতপক্ষে ক্লডিয়া তখন। অন্য কারো সাথে প্রেম-প্রেম খেলার মধ্যগগনে।

ভেইলের প্রতি ক্লডিয়ার বিদায়ের উপহারটি ছিল যেন হলিউডের পথে একটি নিদারুণ শিক্ষা। ক্লডিয়া তাকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দিল— তাদের লেখা স্ক্রিপটি পুনর্লিখনের জন্য বিখ্যাত বিনিম্নাইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিনিস্লাই হলিউডের একজন লিজেন্ড স্ক্রিপ্ট রাইটার। কয়েক দফা সে এ ক্ষেত্রে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হয়েছে। আর তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে অবাণিজ্যিক গল্পটি একশ মিলিয়ন ডলারের ব্লকবাস্টার ছবিতে ব্যবহার করা হবে। ভেইল নিঃসন্দেহ যে তার বইয়ের গল্পটি এবার সত্যিই মুভিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিষয়টি ভেইলের খুব পছন্দের নয়। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে তার দ্বিধার অবকাশ নেই যে, ছবিটি তৈরি হলে নিশ্চিত অনেকগুলো ডলার তার হস্তগত হবে।

ক্লডিয়ার কাছে তথ্যগুলো শুনে ভেইলের মাথা নুয়ে পড়েছিল। এবার মাথা তুলল সে। বলল, ঠিক আছে, আমি, দশ শতাংশ তো পেতে যাচ্ছি। এতেই আমার সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

অভিজ্ঞ ক্লডিয়ার কণ্ঠে ঝরে পড়ল বিস্ময়। দশ শতাংশ? কণ্ঠস্বরকে আরো তীক্ষ্ণ করে বলল, তুমি একটি পেনিও চোখে দেখবে না। মুভির ব্যবসা যতই হোক না কেন তুমি আদৌ এর ধারে-কাছে ভিড়তে পারবে কি-না সন্দেহ। লডস্টোনের এই ঠগ প্রবণতার দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা সত্যিই জিনিয়াস।

একটু থামল ক্লডিয়া। বলল, আমার কথা শোনো, ইতিমধ্যেই আমি লডস্টোনের প্রায় পাঁচটি ছবিতে কাজ করেছি। ছবিগুলো প্রচুর অর্থ আয় করেছে। অথচ আজ অবধি আমি একটি পেনিও চোখে দেখিনি। আর তোমার তো প্রশ্নই আসে না।

ভেইল আহত হলো। মাথা তুলে তাকাল ক্লডিয়ার দিকে। তবে খুব একটা চিন্তিত হলো না সে। গত কয়েক বছর ধরে তার জীবনটা এক ফেরের মধ্যেই কেটেছে– সব কিছুতেই যেন একটা জট। ক্লডিয়ার কথাগুলো কিছুটা ভাবিয়ে তুলল ভেইলকে।

আর্নেস্ট ভেইল একবার ক্লডিয়াকে তার মায়ের একটি কথিত উদ্ধৃতি শুনিয়েছিল। উদ্ধৃতিটি হলো– জীবন হচ্ছে এক বাক্স হ্যান্ড গ্রেনেডের মতো। ভেইলের মায়ের এই উদ্ধৃতিটি ক্লডিয়ার ক্ষেত্রে যেন যথাযথভাবে মিলে গেছে।

ক্লডিয়া-গ্রেনেডের পরবর্তী বিস্ফোরণ অর্থাৎ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলো। ক্লডিয়ার মনের অবিরাম ধারার প্রেম আটকে রাখতে পারল না ভেইল, ভেইলের ভালোবাসা এমনকি ভেইলের এন্টিক রিং। যথেষ্ট মেধাবী ক্লডিয়া এই প্রথমবারের মতো জড়াল এমন এক ব্যক্তির সাথে, যে ক্লডিয়ার তুলনায় মোটেও যথার্থ নয়। তবে সে যুবক এবং জনসাধারণের কাছে স্বীকৃত জিনিয়াস পরিচালক। শুধু এই পরিচালকের সাথে প্রেম করেই ক্ষান্ত দেয়নি ক্লডিয়া, এরপর সে আবারো প্রেমে পড়ল। এবারের সম্পর্কটি ছিল যেন আরো গভীর এবং বেপরোয়া। কিন্তু ক্লডিয়ার মেধার কাছে একেবারেই নগণ্য। এ ব্যক্তি হচ্ছে চলচ্চিত্র জগতের এমনই এক সুদর্শন পুরুষ, যার কাছে যে কোনো নারী নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দেবে সব।

আলফা, বিটা, গামা পর্যায়ের এই আলফা, অর্থাৎ, বিখ্যাত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের পুরুষদের সাথে ক্লডিয়ার সম্পর্ক তৈরির পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। অন্যতম কারণ হলো, এসব পুরুষ মানসিক, শারীরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লডিয়ার সাথে কেমন আচরণ করে, কতটুকুইবা তাদের দক্ষতা কিংবা মেধা- এসব যাচাই করা এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা।

ক্লডিয়ার চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড় ছিল সেই পরিচালক। মাত্র তিনটি ছবি বানিয়েই খ্যাতি পেয়েছিল সে। পরিচালকের এই ছবিগুলো সমালোচনাতে সফলতা তো পেয়েছিলই, আর্থিক দিক থেকেও হয়েছিল ব্যবসা সফল। আর এই সফলতার পর হলিউডের বিভিন্ন স্টুডিও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে লডস্টোনও বসে থাকেনি। নতুন এই পরিচালকের সাথে তিনটি ছবি তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর সাথে যুক্ত হয় ক্লডিয়া– লডস্টোন স্টুডিওর আগ্রহেই।

জিনিয়াস হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার পেছনে পরিচালকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ হলো যে কোনো চাট, যে কোনো দৃশ্য, সংলাপ সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা। প্রথম পরিচয়েই পরিচালক ক্লডিয়ার প্রতি প্রসন্ন হলো। তার এই প্রসন্নতার কারণ প্রথমত ক্লডিয়া একজন নারী এবং লেখক। আর এ দুটো সম্মিলন হলিউডে পদমর্যাদায় নগণ্যতম ধরা হয়ে থাকে। এদিক থেকে একটি বাড়তি সুবিধা আদায়ের মানসিকতা তত তার ছিলই। তবে পরিচালকের আশায় গুড়েবালি। ক্লডিয়া শক্ত বিরোধিতা করল তার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কিছু পরিকল্পনার। আর এতে খুব শিগগির উভয়ের মাঝে দেখা দিল দ্বন্দ্ব।

যে প্লটের ওপর যে দৃশ্য বর্ণনার নির্দেশ দিল পরিচালক, ক্লডিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে বসল। ক্লডিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, এমন দৃশ্য মোর্টেও শৈল্পিক নয় এবং অযথা অবতারণা।

আমি এ দৃশ্য লিখতে পারব না। অস্বীকার করল ক্লডিয়া। বলল, এটা গল্পের ক্ষেত্রে কোনো যুক্তিই বহন করে না। অযাচিত কিছু অ্যাকশন এবং ক্যামেরার কাজ হবে। আর কিছু নয়।

ক্লডিয়ার বিরোধিতায় পরিচালক ধীর কণ্ঠেই বলল, এটাই ছবির নিয়ম। আমি যেভাবে বলছি তুমি তা-ই লিখ।

আমি চাই না তোমার সময় নষ্ট হোক, সেই সাথে আমারও, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল ক্লডিয়া। বলল, তুমি নিজেই তোমার কাজ ভালো করতে পারবে, আশা করি।

ক্লডিয়ার আচরণে পরিচালক আর তর্ক বাড়াল, এমনকি ক্ষুব্ধও হলো না। হাততালি দিয়ে ক্যামেরা বন্ধ করার নির্দেশ দিল সে। তারপর ক্লডিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, তুমি অযথাই রেগে গেলে।

ক্লডিয়ার বিরোধিতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। অবশেষে স্কিপি ডিরি এবং ববি বানজের হস্তক্ষেপে ক্লডিয়া ও পরিচালক আবারও শুরু করল তাদের কাজ। ক্লডিয়ার একগুয়েমিই মেনে নিতে বাধ্য হলো সে। মুখ বুজে পরিচালক মেনে নিল ক্লডিয়ার বেশ কিছু যৌক্তিক নির্দেশ। ছবির কাজ শেষ হলো। অবশেষে দেখা গেল ছবিটি সফলতা পেয়েছে। আর এর কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার ক্লডিয়া। যৌক্তিক, শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুডিয়ার লেখা পাণ্ডুলিপির কারণেই মূলত ছবির এ সফলতা। বিষয়টি পরিচালককেও মুগ্ধ করল। এরপর আর থেমে থাকেনি উভয়েই–সম্পর্ক এগুলো বিছানা অবধি।

সেখানে গিয়েও দুজনের মধ্যে বাধল সমস্যা। সেক্সের সময় পরিচালক সম্পূর্ণ নগ্ন হতে রাজি নয়। কোমর থেকে নিচের পরিধেয় সরালেও গায়ের শার্ট সে কোনো মতেই খুলবে না। বিষয়টি ক্লডিয়াকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। তবে সে এ কারণে খুব একটা উচ্চবাচ্য করল না। এর কারণ এই পরিচালকের সাথে করতে হবে আরো দুটি ছবির কাজ। ক্লডিয়া নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করল। প্রথমটির মতো পরবর্তী ছবিগুলোও সফলতা পাবে। সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ছবিগুলোতে আর সুষ্ঠুভাবে কাজ করা হবে না। পরিচালকের আবরণেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো ক্লডিয়াকে। অবশেষে একে একে দুটি ছবিই মুক্তি পেল। যথানিয়মেই ক্লডিয়ার গুণে এগুলোও হলো ব্যবসা সফল।

এরপর ক্লডিয়ার সাথে পরিচালকটির সম্পর্ক টিকে ছিল মাত্র এক মাস। সম্পর্কের যা-ই ঘটুক, হলিউডে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে দুজনেরই খ্যাতি বেড়ে গেল। ম্যাসেলিনা ছবির জন্য স্ক্রিপ্টের কাজ ক্লডিয়া তখনও শেষ। করতে পারেনি। স্ক্রিপ্টটি সেই পরিচালককে দেখাল। আগা-গোড়া পড়ে পরিচালক মন্তব্য করল, নারীবাদী তথ্য সংবলিত একটি বুলশিট ছাড়া আর কিছুই নয় এটি। যেখানে যৌন সুড়সুড়ির বাহুল্য শুধু।

পরিচালক প্রচণ্ড রকমের বিরোধিতা করে বলল, এখানে যদিও তোমার বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়েছ, তারপরও এটা আমার কাছে ছবির যোগ্য কোনো পাণ্ডুলিপিই নয়। এ ছবির জন্য আমি আমার জীবনের মূল্যবান একটি বছর নষ্ট করতে চাই না।

ক্লডিয়া বলল, এটা একটা খসড়া পাণ্ডুলিপি।

ওহ ঈশ্বর আমি তাদেরকে ঘৃণা করি, যারা ব্যক্তিগত সম্পর্কের অজুহাতে কাজ বাগিয়ে নিতে চায়, যেন ক্লডিয়াকে আঘাত করাই ছিল পরিচালকের উদ্দেশ্য। আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্রুর কণ্ঠে কথাগুলো বলল সে।

আর ক্লডিয়া যেন মিশে গেল মাটিতে। মুহূর্তেই মানুষটির ওপর থেকে ক্লডিয়ার সমস্ত ভালোবাসা উবে গেল। ঝাঝালো কণ্ঠে সে বলল, আই ডোন্ট হ্যাভ টু ফাঁক ইউ টু মেক এ মুভি।

নিশ্চিতভাবেই তোমার তা দরকার নেই, সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল পরিচালক। বলল, তুমি তো মেধাবী, সেই সাথে ইদানীং আবার জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। সে সবকে তো কাজে লাগাবেই, আর বস্তাপচা এসব গেলাবে মানুষকে।

পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে গেল ক্লডিয়ার। দুচোখ ঠিকরে যেন আগুন বেরুতে লাগল। যে ক্লডিয়া তার সেক্সয়াল পার্টনার সম্বন্ধে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি, সেই ক্লডিয়াই পরিচালকের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠল।

বলল, তোমারও মেধা আছে তবে যে মানুষ সেক্সের সময় তার শার্ট গায়ে চাপিয়ে রাখে তার নিশ্চয়ই খারাপ কিছু দোষ আছে। আজ প্রতিজ্ঞা করছি, এমন মানুষের শয্যাসঙ্গী হওয়ার আগে অবশ্যই তার স্ক্রিন টেস্ট করিয়ে নেব।

পরিচালকের সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটল এ থেকেই। আর ম্যাসেলিনার জন্য পরিচালক হিসেবে ক্লডিয়ার মনে এলো ডিটা টমির নাম। ক্লডিয়া বুঝতে পারল, একমাত্র নারী পরিচালকই তার স্ক্রিপ্টের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবে।

ক্লডিয়া ভাবল, কি অসহ্য বিরক্তিকর নিরানন্দ সময় কাটিয়েছে সে পরিচালকের সাথে। যৌন মিলনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলোতে অস্বস্তি বোধ করত ক্লডিয়া।

চলচ্চিত্র পরিচালনায় সে যত বড় প্রতিভাধর পরিচালকই হোক না কেন, প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে সে একটা পাষণ্ড বৈ কিছু নয়।

যৌন মিলনের সময় সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতো না এবং সঙ্গম শেষে কোনো প্রণয়ালাপও করত না। তার যত প্রতিভা শুধু চলচ্চিত্র বিষয়ে, এর বাইরে সে ছিল প্রকৃতপক্ষেই বিরক্তিকর একজন মানুষ।

ভাবনার দৌড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লডিয়ার গাড়ি প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ের বিশাল বাঁকে পৌঁছল, তার বাম পাশে উন্মুক্ত বিস্তৃত সমুদ্র, ডান পাশে সুউচ্চ পর্বত চূড়া, সমুদ্রটাকে মনে হলো বিশাল এক আয়না, সুনীল জলের বুকে পর্বতশৃঙ্গের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে।

স্থানটি ক্লডিয়ার অন্যতম প্রিয় স্থান। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে চমকিত করে। এখান থেকে অ্যাথেনার বাসস্থান ম্যালিবু কলোনি মাত্র দশ মিনিটের পথ। অ্যাথেনাকে পুনরায় ম্যাসেলিনার শুটিংয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য সে মনে মনে একটা উপায় খুঁজতে লাগল। তার মনে পড়ল, অ্যাথেনার এক সময়কার প্রেমিকের সাথে তারও প্রণয় সম্পর্ক হয়েছিল। এটা ভাবতে ক্লডিয়া কিছুটা গর্ববোধ করে, কারণ অ্যাথেনার মতো সুন্দরী, তারকা অভিনেত্রীর প্রেমিক ক্লডিয়ার প্রেমে পড়েছিল এবং তাকে ভালোবেসেছিল।

মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য। সূর্যের আলো সমুদ্রের টেউয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। পুরো সমুদ্রটাই যেন বিশাল এক হীরকখণ্ডে পরিণত হয়েছে। একজন গ্লাইভারকে তার গাড়ির সামনে নেমে আসতে দেখে ক্লডিয়া হঠাৎ করেই ব্রেক কষল। সে গ্লাইডারকে দেখতে পেল একজন তরুণী, ক্লডিয়া লক্ষ্য করল, তার ব্লাউজের ফাঁক গলে একপাশের স্তন বেরিয়ে পড়েছে। অবতরণের সময় এক ঝলকের জন্য ওই দৃশ্যটি ক্লডিয়ার চোখে পড়েছিল।

ক্লডিয়া ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না, এদেরকে কেন গ্লাইডিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়, পুলিশ কেন এগুলো দেখে না? মাথা নেড়ে ক্লডিয়া এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে গ্যাস প্যাডেলে চাপ দেয়, রাস্তার ভিড় কমে আসছে। হঠাৎ করেই হাইওয়ে এমন একটা বাঁক নিয়েছে যার ফলে সে আর সমুদ্র দেখতে পারছে না, তবে সে জানে আধ মাইল পর আবারও সমুদ্র দেখা যাবে। সত্যিকারের ভালোবাসা যেমন বারবার ফিরে আসে ঠিক তেমনি, এই ভাবনায় ক্লডিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার জীবনেও সত্যিকার ভালোবাসা বারবার ধরা দিয়েছে।

ক্লডিয়া সত্যিকারভাবে স্টিভ স্টেলিংয়ের প্রেমে ডুবেছিল। সারা বিশ্বের মেয়েদের আরাধ্য চলচ্চিত্র তারকা, ব্যবসা সফল তুখোড় অভিনেতা স্টেলিং ছিল অত্যন্ত পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্যের অধিকারী। তার চেহারায় ছিল নিখাদ আকর্ষণ, প্রাণোচ্ছল তেজোদীপ্ত উজ্জ্বলতা ছিল তার মাঝে। অভিনয় প্রতিভায়ও সে ছিল অসামান্য। সতর্কতার সাথে সীমিত মাত্রায় কোকেন সেবন করত স্টেলিং। যা তাকে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখত। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গুণ ছিল তা হলো নারীবশীকরণ ক্ষমতা। এ দিক দিয়ে সে ছিল স্পেনিশ কিংবদন্তির ডন জুয়ান। যে কোনো রমণীকে সে তার শয্যাসঙ্গী করতে পারত। পৃথিবীর যে কোনো স্থানে আফ্রিকা, আমেরিকার ঘোট কোনো শহর, বোম্বে, সিঙ্গাপুর, টোকিও, লন্ডন, রোম, প্যারিস সবখানেই অনায়াসে, অবলীলায় নারীদেরকে যৌনসঙ্গ দিয়েছে। দান করার অনুপ্রেরণায়ই সে নারীদেরকে যৌনসঙ্গ দিত, একজন ভদ্রলোক যেমন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিয়ে যেমন খ্রিস্টীয় পুণ্যের আত্মপ্রসাদ লাভ করে, সেভাবেই স্টেলিং মেয়েদের সাথে যৌনতা উপভোগ করত। যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তার কোনো বাছ-বিচার ছিল না। স্টেলিংয়ের পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্যে ক্লডিয়া বিমোহিত হয়েছিল, তার প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়েছিল এবং তার প্রেমে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সত্যিকারের ভালোবাসার সম্পর্ক মাত্র সাতাশ দিন টিকে ছিল।

ক্লডিয়ার জীবনে ওই সাতাশ দিন অত্যন্ত আনন্দঘন হলেও তা ছিল অপমানজনক। স্টেলিংয়ের ভালোবাসায় যন্ত্রণা সয়েছে ক্লডিয়া কিন্তু সেই সাথে অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে সে।

স্টেলিংয়ের কাছে প্রচণ্ড ভালোবাসা পেয়েছে ক্লডিয়া। তার সান্নিধ্যে পেয়েছে পরিতৃপ্ত সুখানুভূতি। কোকেনের প্রভাবে স্টেলিং দুর্বারভাবে ভালোবাসতে পারত, নগ্নতার ক্ষেত্রে ক্লডিয়ার চেয়েও অধিক সাবলীল ছিল স্টেলিং। সঙ্গমের সময় সুনিপুণভাবে দৈহিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে সে যৌন সম্ভোগ করত যা ক্লডিয়ার আনন্দানুভূতিকে বাড়িয়ে দিত। ক্লডিয়া প্রায়ই লক্ষ্য করছে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্টেলিং নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। একজন মহিলা যেভাবে তার মাথার হ্যাট ঠিক করে ঠিক তেমনি সে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করত।

ক্লডিয়া জানত স্টেলিংয়ের কাছে সে একজন অবসর যাপনের সঙ্গীমাত্র, একজন রক্ষিতা। রাতের শয্যাসঙ্গী হিসেবেই ক্লডিয়াকে নিয়েছিল স্টেলিং। এছাড়া অন্য কোনো আকর্ষণ ছিল না তার, কিংবা ক্লডিয়ার প্রতি তার কোনো অনুভূতিও কাজ করত না। প্রায় সময়ই দেখা যেত ক্লডিয়াকে ফোন করে সে জানিয়ে দিত তার আসতে এক ঘণ্টা দেরি হবে কিন্তু দেখা গেল ছয় ঘণ্টা পর সে এলো। কখনো কখনো এখনও তাদের রাত্রি যাপনের পরিকল্পনাই বাতিল করে দিয়েছে স্টেলিং।

এছাড়াও দুজনে মিলিত হওয়ার সময় স্টেলিং তাকে কোকেন সেবন করার জন্য পীড়াপীড়ি করত। তাতে অবশ্য মিলনের আনন্দ বেড়ে যেত কিন্তু কোকেনের প্রভাব ক্লডিয়ার মস্তিষ্কে কয়েক দিন পর্যন্ত তাকে আচ্ছন্ন করে রাখত। সে কোনো কাজ করতে পারত না এবং যা সে লিখত তা তার মনোপূত হতো না। এক সময় ক্লডিয়া উপলব্ধি করল, একজন পুরুষ মানুষের খামখেয়ালির ওপর তার সমস্ত জীবন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং এই বিষয়টাকেই সে সর্বাধিক অপছন্দ করত।

ক্লডিয়া ছিল স্টেলিংয়ের চতুর্থ অথবা পঞ্চম পছন্দ। এই বিষয়টিই ক্লডিয়াকে অপমানিত করেছিল। কিন্তু এজন্য কখনোই স্টেলিংকে দায়ী করেনি সে, তার এই অপমানকর পরিস্থিতির জন্য সে নিজেকেই দায়ী করেছিল। কারণ স্টিত স্টেলিং তার খ্যাতির সুবাদে আমেরিকার প্রায় যে কোনো মহিলাকেই পেতে পাত এবং সেই স্টেলিং ক্লডিয়াকে পছন্দ করেছে এটা ক্লডিয়ার জন্য গর্বের বিষয় মনে হয়েছিল। স্টেলিংয়ের বয়স বাড়বে, তার সৌন্দর্য, খ্যাতিও কমে আসবে, তার কোকেন সেবনের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাবে। তাই স্টেলিং তার খ্যাতির শিখরে থাকতেই সবকিছু অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারই প্রেমে ক্লডিয়া পড়েছিল। তার জীবনের কিছু দুঃসময়ের মধ্যে এই প্রেমের কয়েকটি দিন অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল।

সাতাশতম দিনে স্টেলিং ফোন করে ক্লডিয়াকে যখন জানাল যে তার আসতে এক ঘণ্টা দেরি হবে। ক্লডিয়া তাকে বলল, কষ্ট করো না। স্টিভ, আমি তোমার রঙমহল ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

অপর প্রান্তে স্টেলিং কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল, আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে, সে আরও বলল, আমি সত্যিই তোমার সাহচর্য উপভোগ করেছি। ক্লডিয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে সে মোটেও আশ্চর্য হয়নি।

সিওর, বলল ক্লডিয়া এবং চুপ করে থাকল। এই প্রথম কোনো সম্পর্ক শেষ করার পর তার সাথে বন্ধুত্ব ধরে রাখতে চাইল না ক্লডিয়া। আসলে নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণেই ক্লডিয়া পীড়িত হচ্ছিল। এটা নিশ্চিত বুঝল ক্লডিয়া, তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই স্টেলিং তার সাথে ওই ধরনের আচরণ করেছিল। কিন্তু তা বুঝতে ক্লডিয়ার অনেক সময় লেগেছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সে কিভাবে এতটা নির্বোধ হয়েছিল? অপমান ও আঘাতে বিপর্যস্ত ক্লডিয়া খুব কেঁদেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই সে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। সে দেখল ভালোবাসার শূন্যতা তাকে মোটেও পীড়িত করছে না। সে উপলব্ধি করতে পারল, তার সমস্ত সময় একান্তই তার নিজের। সেখানে কারো যন্ত্রণাময় স্মৃতির অনুপ্রবেশ নেই এবং সে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছে। কোকেন এবং সত্যিকার ভালোবাসা থেকে মুক্ত মস্তিষ্ক নিয়ে লিখতে পারায় উৎফুল্ল ক্লডিয়া।

পরিচালক ক্লডিয়ার চিত্রনাট্য বাতিল করে দেওয়ার পর, পূর্ণোদ্যমে ম্যাসেলিনা-এর চিত্রনাট্য নতুন করে লেখায় মনোনিবেশ করে সে। ছয় মাসে একাগ্র প্রচেষ্টায় চিত্রনাট্য সম্পন্ন করে সে। ক্লডিয়া ডি লিনা পাঁচ বছর চলচ্চিত্র বাণিজ্যের সাথে জড়িত, তার এই স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতায় সে জেনেছিল যে কোনো মানবিক মূল্যবোধ এবং জীবনবোধ, যৌনতা, হত্যা প্রভৃতির মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করতে হয়। নতুন লেখা ম্যাসেলিনার চিত্রনাট্যে ক্লডিয়া তার অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ সমন্বয় ঘটিয়েছিল। ফলে ম্যাসেলিনার চূড়ান্ত চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছিল নারীবাদী প্রচারণায় অনবদ্য ও উপভোগ্য। ক্লডিয়া তার চিত্রনাট্যে প্রধান নারী চরিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে নির্বাচিত করেছিল এবং ম্যাসেলিনাকে অ্যাথেনার মধ্যে বিমূর্ত করেছিল। তার পাশাপাশি আরো তিনজন তারকা অভিনেত্রীর জন্য, পার্শ্ব নারী চরিত্রের অবতারণা করেছিল সে। দামি তারকা অভিনেত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ এবং প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ক্লডিয়া তা করেছিল। চিত্রনাট্যে একজন শক্তিমান খলনায়ক একান্ত অপরিহার্য। ক্লডিয়া তার বাবার স্মৃতি স্মরণ করে সৃষ্টি করেছিল খলনায়কের চরিত্র, মোহনীয়, নিষ্ঠুর সুদর্শন এবং উপভোগ্য। ক্লডিয়া প্রথমে একজন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী মহিলা প্রযোজকের খোঁজ করেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ স্টুডিওর প্রধান যারা চিত্রনাট্যের অনুমোদন দেবে তারা ছিল পুরুষ। চিত্রনাট্য হিসেবে ম্যাসেলিনা পছন্দ করলে ও অত্যন্ত খোলামেলা নারীবাদী প্রচারণামূলক কাহিনী এবং মহিলা প্রযোজক ও মহিলা পরিচালকের বিষয়ে তারা রাজি হয়নি। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো একটি ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ আশা করেছিল। ক্লডিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিটা টমিকে দিয়েই ম্যাসেলিনার পরিচালনা করাবে। ডিটা টমিকে নির্বাচনের পেছনে আরেকটি কারণ হলো– মহিলাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেতে পছন্দ করে ডিটা টমি এবং ম্যাসেলিনার কাজে সে চারজন খ্যাতিমান সুন্দরী অভিনেত্রীর সঙ্গ লাভ করতে পারবে। এছাড়া কয়েক বছর আগে একটি ছবির কাজে তারা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছে। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে একটা সুসম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। ডিটা টমি একজন প্রতিভাবান পরিচালক, অত্যন্ত স্পষ্টবাদী এবং মজার ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র জগতে ডিটাটমি কখনই চিত্রনাট্যকারের কৃতিত্বে নিজের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অথবা নতুন করে চিত্রনাট্য লেখার দাবী জানাত না। তার সুনির্দিষ্ট অবদান ছাড়া কোনো বিষয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবী করত না। চিত্রনাট্যকারকে কখনোই হেয় করত না ডিটা টমি। তার ওপর অন্যান্য পরিচালক ও তারকাদের মতো সে যৌন নিপীড়ক নয়। যদিও চলচ্চিত্র বাণিজ্যে যৌন নিপীড়ন বলে কিছু নেই, কারণ চলচ্চিত্র জগতে যৌনতা এবং যৌনাবেদন কাজেরই একটি অংশ।

স্কিপি ডিরিকেই তার চিত্রনাট্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্লডিয়া এবং এক শুক্রবারে চিত্রনাট্যটি ডিরির কাছে পাঠিয়ে দেয় সে। কারণ সপ্তাহের শেষে ছুটির অবসরে ডিরি যত্নসহকারে ক্রিপ্ট দেখে থাকে। ডিরি তার স্ক্রিপ্ট অনুমোদন নাও করতে পারে, তা সত্ত্বেও ক্লডিয়া তার কাছে স্ক্রিপ্ট পাঠায় কারণ সে সবচেয়ে ভালো একজন প্রযোজক। তাছাড়া ক্লডিয়া কোনো পুরনো পরিচিত প্রযোজকের কাছে যেতে চায়নি। এতে ফল হলো। রোববার সকালে ডিরির ফোন পেল সে, সেই দিন দুপুরে ডিরি তাকে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য আমন্ত্রণ জানাল।

ক্লডিয়া ঝটপট কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নিল, ব্লু জিন্স শার্ট, ফেডেড ব্লু জিন্স পরল সে, পায়ে পরে নিল একজোড়া স্পোর্ট সু, চুলগুলোকে বেঁধে নিল লাল স্কার্ফ দিয়ে। ল্যাপটপটা মার্সিডিজের সিটে ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে স্টার্ট দিল তার মার্সিডিজ। সান্টা মনিকার ওশেন এভিনিউ ধরে ছুটে চলল ক্লডিয়া। প্যালিসেডস পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে দেখল সান্টা মনিকার গৃহহীন নারী-পুরুষরা তাদের সাপ্তাহিক মধ্যাহ্নভোজের জন্য পার্কে সমবেত হচ্ছে। প্রতি রোববার স্বেচ্ছাসেবী সমাজকর্মীরা দরিদ্র গৃহহীন এই সমস্ত মানুষকে পার্কের খোলা পরিবেশে খাদ্য এবং পানীয় পরিবেশন করে থাকে। সারি সারি কাঠের টেবিল-চেয়ারে বসে গৃহহীন মানুষরা তাদের খাদ্য গ্রহণ করে। ক্লডিয়া এই মানুষগুলোকে দেখার জন্য এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। এই মানুষগুলোর মাঝে সে অন্য এক পৃথিবীর সন্ধান পায়, এদের মার্সিডিজ নেই, সুইমিং পুল নেই, রোড ও ড্রাইভে কেনাকাটা করার সামর্থ্য এদের নেই। প্রথম দিকে গৃহহীন মানুষগুলোকে খাবার ও পানীয় পরিবেশনের কাজে সেও অংশ নিত। কিন্তু তার নিজস্ব জগৎ থেকে ওই দরিদ্র মানুষগুলোর পৃথিবীতে যাওয়া তার জন্য কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছিল। তাদের কষ্ট ও অভাব ক্লডিয়াকে বিষণ্ণ করে তুলত। তার মাঝে সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে যেত। তাই সে এখন তাদের খাওয়ানোর দায়িত্বে নিয়োজিত চার্চে কেবল আর্থিক অনুদান দেয়। কিন্তু ছিন্ন বস্ত্রে আচ্ছাদিত ঝরে পড়া ওই মানুষগুলোকে দেখা সে ত্যাগ করতে পারেনি। তাদের মধ্যে আশ্চর্য রকমভাবে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তিও রয়েছে যারা সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। কোনো রকম প্রত্যাশা ছাড়া এ রকমভাবে বেঁচে থাকটা ক্লডিয়ার কাছে আশ্চর্য মনে হয়। কিন্তু তার পরও অর্থ উপার্জনের প্রশ্নটা থেকেই যায়। চলচ্চিত্রের জন্য গল্প লিখে সে সহজেই ভালো উপার্জন করে। সে ছমাসে যে টাকা উপার্জন করে এই মানুষগুলো তাদের সারাজীবনেও তত টাকা দেখেনি।

বেভারলি হিলসে স্কিপি ডিরির ম্যানশনে ক্লডিয়া পৌঁছলে ম্যানশনের হাউসকিপার তাকে সুইমিং পুলে নিয়ে যায়। উজ্জ্বল নীল আর হলুদ চমৎকার সুইমিং পুল। একটি কুশন ও লাউঞ্জ চেয়ারে ডিরি বসা। তার চোখে লাল ফ্রেমের রিডিং গ্লাস। এই চশমা সে শুধু বাড়িতেই ব্যবহার করে। তার পাশে ঘোট মার্বেলের টেবিলের ওপর টেলিফোন ও একগাদা স্ক্রিপ্ট। ডিবির হাতে একটি দীর্ঘকায় গ্লাসে হিমায়িত ইন্ডিয়ান ওয়াটার ছিল। ক্লডিয়াকে দেখে সে চট করে উঠে দাঁড়াল এবং ক্লডিয়াকে আলিঙ্গন করে বলল, ক্লডিয়া, আমাদের আলাপ দ্রুত সারতে হবে।

ক্লডিয়া সতর্কতার সাথে তার কণ্ঠস্বর নিরীক্ষণ করছিল। তার স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে কারো প্রতিক্রিয়া কি হবে তা সে কণ্ঠস্বর শুনেই বলে দিতে পারে। কেউ যদি সতর্কতার সাথে স্ক্রিপ্টের কৃত্রিম প্রশংসা করে, তার অর্থ নিশ্চিত না। আবার অনেকে হাসিমুখে আন্তরিকভাবেই স্ক্রিপ্টের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে অন্তত তিনটি কারণে তারা স্ক্রিপ্টটা ক্রয় করতে অপারগতা প্রকাশ করে–

অন্য একটি স্টুডিও একই বিষয়ের ওপর কাজ করছে, স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী উপযুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী জোগাড় করা সম্ভব না, কিংবা স্টুডিও স্ক্রিপ্টের বিষয়বস্তু যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারে না।

কিন্তু ডিরির কণ্ঠে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর সুর– এটা ভালো লক্ষণ। সে অর্থায়ন ও বিভিন্ন শর্ত নিয়ে কথা বলছিল, এটা অনেক বড় বাজেটের ছবি হবে, ডিরি ক্লডিয়াকে বলল, অনেক-অনেক বড় বাজেটের ছবি। প্রকৃতপক্ষে এখানে বাজেট কমানোর কোনো সুযোগ নেই, আমি জানি তুমি কি ভাবছ, তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে। যৌনতানির্ভর চলচ্চিত্র করার জন্য আমি স্টুডিওকে রাজি করাব এবং নারীবাদী চরিত্রের জন্য তারকা অভিনেত্রীরও ব্যবস্থা করব। পুরুষ তারকাও আমরা পেতে পারি যদি তুমি তাকে একটু সময় দিয়ে নমনীয় করতে পারো। আমি মনে করছি তুমি এই কাজে সহযোগী প্রযোজক হতে চাও, কিন্তু আমার পরামর্শ তুমি পরিচালনার দায়িত্ব নাও। তবে তুমি তোমার বক্তব্য খোলামেলাভাবে বলতে পারো। তোমার যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব আমি মেনে নেব।

ক্লডিয়া বলল, পরিচালকের ব্যাপারে আমার নিজস্ব পছন্দ আছে। ডিরি হাসতে হাসতে বলল, তুমি, স্টুডিও এবং তারকার ব্যবস্থা তাহলে হয়ে গেল।

ক্লডিয়া বলল, পরিচালকের অনুমোদন ছাড়া এই স্ক্রিপ্ট আমি ছাড়ছি না।

ডিরি বলল, ঠিক আছে, তাহলে প্রথমে তুমি স্টুডিওকে জানাবে যে পরিচালনা তুমি করছ, পরে তুমি পরিচালনা থেকে সরে এসো, তখন তারা তোমাকে অনুমোদন দেবে। সে ক্ষণিক থেমে জিজ্ঞেস করল, পরিচালক হিসেবে তুমি কাকে ঠিক করেছ? ডিটা টমি, ক্লডিয়া বলল।

গুড, বুদ্ধিমতী, ডিরি বলল, মেয়ে তারকারা তাকে ভালোবাসে। স্টুডিওগুলোও তাকে পছন্দ করে। পরিচালক হিসেবে সে সবকিছু বাজেটের মধ্যেই সম্পন্ন করে এবং কখনও মাঝপথে কাজ ছেড়ে দেয় না। তবে তার কাছে যাওয়ার আগে আমরা দুজনে মিলে অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনের কাজটা সেরে ফেলতে পারি।

ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করল, তুমি কাকে আনতে চাও?

লডস্টোন ডিরি বলল, তারা আমাকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। তাই পাত্র-পাত্রী নির্বাচন ও পরিচালনা নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব একটা সমস্যা হবে না। ক্লডিয়া, তুমি একটা নিখুঁত স্ক্রিপ্ট লিখেছ। আগের দিনের নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর তোমার এই স্ক্রিপ্ট অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং উপভোগ্য। বর্তমান সময়ে বিষয়টি খুবই জনপ্রিয়—-যৌনতাকে তুমি ম্যাসেলিনা ও অন্যান্য নারী চরিত্রের মাঝে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলেছ। আমি মেলো এবং মলি ফ্লান্ডার্সের সাথে তোমার বিষয়ে আলাপ করব, তারা যাতে লডস্টোনের সাথে চূড়ান্ত ব্যবসায়িক আলোচনা সেরে ফেলতে পারে।

ক্লডিয়া বলল, ইউ সান অব এ বিচ, তুমি এর মধ্যেই লডস্টোনের সাথে কথা বলেছ, তাই নয় কি?

ডিরি তার হাসি বিস্তৃত করে বলল, হ্যাঁ, গত রাতে আলাপ হয়েছে। আমি তাদেরকে স্ক্রিপ্ট দেখিয়েছি। যদি আমি সবকিছু জোগাড় করতে পারি তাহলে তারা ম্যাসেলিনার কাজ হাতে নেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছে। শোনো ক্লডিয়া, আমাকে ভুল বুঝো না, আমি জানি ম্যাসেলিনার-ক্ষণিক থেমে সে আবার বলল, আমি লডস্টোনকে এসব জানিয়েছি। এখন চলো কাজ শুরু করা যাক।

এভাবেই এই বিশাল প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। এখন ক্লডিয়া কিছুতেই সেটা ভেস্তে যেতে দেবে না।

ক্লডিয়া ট্রাফিক সিগন্যালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেখান থেকে সে বাঁয়ে ঘুরে একটি সাইডে উঠবে, ওই রাস্তাই তাকে ম্যালিবু কলোনিতে নিয়ে যাবে। এই প্রথম ক্লডিয়ার মনে সংশয় মিশ্রিত ভয়ের উদ্রেক হলো।. সে যদি অ্যাথেনাকে রাজি করাতে না পারে। অ্যাথেনা অত্যন্ত দৃঢ় সিদ্ধান্তের মেয়ে, হয়তো সে কখনোই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। তারকারা এমনই হয়ে থাকে। ক্লডিয়া ভাবল, অ্যাথেনা যদি তাকে বিমুখ করে তাহলে সে ভেগাসে যাবে। সেখানে তার ভাই ক্রসের সাহায্য নেবে। ক্রস সবসময়ই তাকে সাহায্য করেছে এবং কখনও তাকে নিরাশ করেনি। তারা দুই ভাইবোন যখন ছোট ছিল তখন থেকে নিয়ে তাদের মা মারা যাওয়া পর্যন্ত সবসময়ই সে ক্রসের সাহায্য পেয়েছে।

ক্লডিয়ার মনে তার শৈশবকালের স্মৃতি ভেসে উঠল। লং আইল্যান্ডে ক্লেরিকুজিও ম্যানশনে তার হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দঘন শৈশবস্মৃতি। চারদিকে প্রাচীর ঘেরা ম্যানশন তার কাছে এখন গ্রিমসের রূপকথার প্রাসাদের মতো মনে হয়। সেখানে ফিগ বাগানের মধ্যে দুই ভাইবোন একসাথে খেলেছে, ছুটোছুটি করেছে, কত মজাই না তারা করত ছেলেবেলায়। ক্লেরিকুজিও ম্যানশনে আট থেকে বারো বছরের ছেলেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ ছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিত তার ভাই ক্রস এবং প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতৃত্ব ছিল উনের নাতি ডেন্টি ক্লেরিকুজিও। আর বৃদ্ধ ডন ওপর তলার এক জানালার পেছন থেকে ড্রাগনের মতো সবকিছু দেখত।

ডেন্টি ছিল মারমুখো হিংস্র প্রকৃতির। সে সবসময় মারামারি করতে পছন্দ করত এবং নিজেকে একজন জেনারেল ভাবত। একমাত্র ডেন্টিই তার ভাই ক্রসের সাথে মারামারি করার সাহস রাখত। খেলার মাঠে ক্লডিয়াকে একা পেলে ডেন্টি তাকে মারধর করত এবং ক্লডিয়াকে তার বশ্যতা স্বীকার করাতে চেষ্টা করত। সে সময় ক্রস সেখানে হাজির হলে ডেন্টি ও ক্রসের মধ্যে মারামারি বেধে যেত। তখনই ক্লডিয়া ডেন্টির আক্ৰমণত্মক হিংস্র চেহারার বিরুদ্ধে তার ভাই ক্রসের অসামান্য আত্মবিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হতো এবং ক্রস সহজেই জয়ী হতো। ভাইয়ের প্রতি ক্লডিয়ার ছিল প্রচণ্ড টান।

কিন্তু ক্লডিয়া ভেবে পেত না তার মা কেন ক্রসকে অধিক পছন্দ করতেন না। কিভাবে তার মা ক্রসকে অধিক ভালো না বেসে থাকতে পারতেন! অধিক ভালোবাসা পাওয়ার মতো অনেক গুণই ক্রসের ছিল। তা সে প্রমাণও করেছে। মা-বাবা যখন আলাদা হয়েছিল তখন ক্রস বাবার কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মহৎ গুণ প্রকাশ করেছিল। কারণ ক্রস তার মা ও বোনের সাথেই থাকতে চেয়েছিল, এই বিষয়ে ক্লডিয়ার কোনো সন্দেহ ছিল না। বাবার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেই ছোটবেলাতেই ক্রস তার নিজের ইচ্ছার বিসর্জন দিয়েছিল।

তাদের মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কয়েক বছর পরিবারের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক ছিল, যোগাযোগ ছিল। সেই সময় ক্লডিয়া তাদের আশপাশের লোকের সাথে আলোচনায় এবং তাদের হাবভাবে জানতে পেরেছিল ক্রস তার বাবার আদলেই বেড়ে উঠছে। তার মধ্যে বাবার গুণাবলিগুলোই অনেকাংশে ফুটে উঠেছে। যদিও বর্তমানে ক্রস ও ক্লডিয়ার প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, তথাপি তাদের মধ্যে ভাইবোনের সেই স্নেহের টান, ভালোবাসার সম্পর্ক অটুট রয়েছে। ক্লডিয়া এটা ভালো কারেই জানে ক্রস ক্লেরিকুজিও পরিবারের অংশ, কিন্তু সে নয়।

ক্লডিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসার দুবছর পর তার মা ন্যালিনির ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন ক্লডিয়ার বয়স তেইশ। সে সময় ক্রস ক্লেরিকুজিও পরিবারের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করেছিল এবং জানাদু হোটেলে গ্রোনিভেল্টের  সাথে কাজ করত। মায়ের ক্যান্সারের খবর পেয়ে ক্রস শেষের দুটো সপ্তাহ সেক্রামেন্টোতে তার মা ও বোনের সাথে কাটিয়েছিল। একদিনের মধ্যে সে। তার মায়ের জন্য একজন নার্স, একজন বাবুর্চি ও একজন হাউসকিপারের ব্যবস্থা করে।

তাদের পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো মা-ভাই-বোন তিনজনে একসাথে হয়েছিল। ন্যালিনি পিপিকে আসতে বারণ করে দিয়েছিল।

ক্যান্সারের কারণে ন্যালিনির দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছিল, তাই ক্লডিয়া সবসময় তাকে বই, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ পড়ে শোনাত। ক্রস বাজার-ঘাট করত, মাঝে মাঝে হোটেলের কাজে একবেলার জন্য ভেগাসে যেত, তবে সবসময়ই সন্ধ্যায় ফিরে আসত।

রাতে ক্রস ও ক্লডিয়া পালা করে মায়ের সেবা করত। মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার হাত ধরে বসে থাকত। যদিও ডাক্তাররা ন্যালিনিকে কড়াডোজের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত তবুও তিনি সবসময় তার সন্তানদের হাত খুঁজতেন ধরে রাখার জন্য। মাঝে মাঝে তিনি হ্যালুজিনেশনে ভুগতেন, তিনি মনে করতেন তার সন্তানরা এখনও ছোটই আছে।

একদিন রাতে ন্যালিনি কেঁদে উঠলেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি ক্রসের কাছে ক্ষমা চাইছিলেন, ক্রসের প্রতি তিনি যে অবিচার করেছেন তার জন্য তিনি অনুতপ্ততা প্রকাশ করতে থাকেন, ক্রস মাকে বাহুতে জড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করে যে তিনি কোনো ভুল বা অপরাধ করেননি। যা হয়েছে তা ভালোর জন্যই হয়েছে।

ওষুধের প্রভাবে কোনো কোনো রাতে ন্যালিনি গভীর ঘুমে নিগম্ন থাকলে দুই ভাইবোন দীর্ঘরাত বসে গল্প করেছে। ক্রস ও ক্লডিয়া তাদের জীবনের সব ঘটনা একে-অপরকে জানিয়েছে।

ক্রস ক্লডিয়াকে বলেছে যে সে কালেকশন এজেন্সি বিক্রি করে দিয়েছে এবং ক্লেরিকুজিও পরিবার ত্যাগ করেছে। তবে জানাদু হোটেলে কাজ পাওয়ার জন্য সে ওই পরিবারের নাম ও প্রভাবের সাহায্য নিয়েছিল। ক্রস তার নিজের ক্ষমতার ঈষৎ আভাসও দেওয়ার জন্য ক্লডিয়াকে বলেছিল, জানাদু হোটেলে তুমি সবসময় আমন্ত্রিত। তোমার জন্য আরএফবি রুম, খাবার এবং পানীয় সব ফ্রি। এই কথা শুনে ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করেছিল সে কিভাবে তা করতে পারে। ক্রস সামান্য গর্বের সুরে উত্তর দিয়েছিল, আমার হাতে সে ব্যবস্থা রয়েছে।

ক্লডিয়ার কাছে তার ভাই ক্রসের গর্ব কৌতুককর ও বিষণ্ণ মনে হয়েছিল।

মায়ের মৃত্যুতে স্বাভাবিক কারণেই ক্রসের তুলনায় ক্লডিয়া অনেক বেশি আঘাত পেয়েছিল কিন্তু এর ফলে দুই ভাইবোন আবারো মিলে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে শৈশবকালের সেই ঘনিষ্ঠ সাহচর্য, হৃদ্যতা পুনরায় জেগে ওঠে। পরবর্তী বছরগুলোতে ক্লডিয়া প্রায়ই ভেগাসে তার ভাইয়ের কাছে গিয়েছে, সেখানে সে গ্রোনিভেল্টের  সাথে দেখা করেছে। ক্লডিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে ওই বৃদ্ধ লোকটির সাথে ক্রসের এক ধরনের ক্ষমতা আছে, যার সাথে ক্লেরিকুজিও পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ক্লডিয়া যখন থেকে ওই পরিবারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তখন থেকেই সে পরিবারের কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ড। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, বিবাহ এবং খ্রিস্টেনিংয়ে অংশগ্রহণ করত না। তবে ক্লেরিকুজিও পরিবারের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যে তখনও ক্রসের অংশগ্রহণ ছিল তা সে জানত না। আরো ক্রসও এ বিষয়ে ক্লডিয়াকে কিছু জানায়নি। ভেগাসে কদাচিৎ ক্লডিয়া তার বাবাকে দেখেছে। কিন্তু মেয়ের প্রতি বাবার (পিপি) কোনো আগ্রহ ছিল না।

নববর্ষের উৎসব ভেগাসের সবচেয়ে বড় উৎসব। সারাদেশ থেকে আমুদে মানুষের ঢল নামে ভেগাসে। কিন্তু ক্লডিয়ার জন্য হোটেল জানাদুতে সবসময় একটি সুইট রেখে দিত ক্রস। ক্লডিয়া বড় কোনো জুয়াড়ি নয়। শখের জুয়াড়ি। জানাদুতে বেড়াতে এলে একটু আধটু খেলে। অনেকটা সময় কাটানোর মতো। এক নববর্ষের উৎসবে ক্লডিয়া এক উদীয়মান তারকা অভিনেতাকে নিয়ে আসে জানাতে। সঙ্গী অভিনেতাকে ইমপ্রেস করার জন্য ক্লডিয়া সে বার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। জুয়ার বোর্ডে সে পঞ্চাশ হাজার ডলারের মার্কার চায়। যদিও সে মুহূর্তে তার অত টাকার সামর্থ্য ছিল না। ক্রস তার জন্য নিজে মার্কার নিয়ে আসে। ক্রস কৌতূহলী দৃষ্টিতে ক্লডিয়ার দিকে তাকায়। সে ক্লডিয়াকে বলল, ক্লডিয়া আমি তোমাকে আমার চেয়ে চৌকস ভাবতাম, তুমি এসব কি করছ? সেই মুহূর্তে ক্লডিয়া উপলব্ধি করেছিল– তবে মনে হয়েছিল ক্রস নয়, কথাগুলো তার বাবাই তাকে বলছে।

ক্রসের কথায় ক্লডিয়া বিব্রতবোধ করে। ক্রস প্রায়ই তাকে সতর্ক করে বলত, সবসময় ছোট স্টেকে দান ধরতে। সে আরও বলত, যখন বুঝবে তুমি হারছ তখনও দানের পরিমাণ বাড়াবে না এবং প্রতিদিন দুই তিন ঘণ্টার বেশি জুয়া খেলবে না। কারণ জুয়াতে সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফাঁদ। ক্লডিয়া ক্রসের সব সতর্কতাই লঙ্ন করেছিল।

সে বলল, ক্রস, আমাকে দুসপ্তাহ সময় দাও, আমি তোমার এই টাকা পরিশোধ করে দেব। ক্লডিয়ার এই কথায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে ক্রস। সে ক্লডিয়াকে বলে, তুমি টাকা শোধ করতে এলে আমি তোমাকে খুন করব। ক্রসের এমন প্রতিক্রিয়ায় ক্লডিয়া আশ্চর্য হয়ে যায়। ক্রস স্বাভাবিকভাবে মার্কারের স্লিপটি ছিঁড়ে নিজের পকেটে রাখল। সে বলল, দেখো ক্লডিয়া, আমি তোমাকে দেখার জন্য এখানে আসতে বলি, তোমার টাকা নেওয়ার জন্য নয়। এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। তুমি জুয়াতে কখনোই জিতবে না। এখানে ভাগ্য বলে কিছু নেই। এটা দুইয়ে দুইয়ে চারের মতো সহজ ব্যাপার। ক্লডিয়া বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে।

এতগুলো মার্কার হেরে যাওয়ার জন্য আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু তোমার নির্বুদ্ধিতা দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি। ক্রস বলল।

অতঃপর এ বিষয়ে তারা আর কোনো কথা বলল না। তবে ক্লডিয়া অবাক হয়েছিল এই ভেবে, অতগুলো টাকা পরিশোধের সামর্থ্য কি সত্যিই ক্রসের আছে? গ্রোনিভেল্ট কি অতগুলো টাকা ক্রসকে অনুমোদন করবে? কিংবা আদৌ কি গ্রোনিভেল্টকে এই টাকার ব্যাপারে কিছু জানানো হবে?

লরেটা ল্যাঙ নামের একজন মহিলাকে নিয়েও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধানও ক্রস করেছিল অনায়াসে। সেখানেও তার একটা অদৃশ্য ক্ষমতা উপলব্ধি করেছিল ক্লডিয়া এবং ওই বিষয়টিই ক্লডিয়াকে সবচেয়ে বেশি হতবাক করেছিল– সত্যিই কি তার ভাই ক্রস এতটা ক্ষমতাবান?

লরেটা ল্যাঙ জানাদু হোটেলের স্টেজ পার্ফরমার ছিল। সে হোটেলের স্টেজে গান গাইত এবং নাচত। তার ছিল অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তার পারফরমেন্সে ফুটে উঠত তার সহজাত প্রাণোচ্ছলতা, যা ক্লডিয়াকে আকৃষ্ট করেছিল। শো শেষে একদিন ক্লডিয়ার সাথে লরেটার পরিচয় করিয়ে দেয় ক্রস। পরিচিত হওয়ার পর ক্লডিয়া বুঝল, লরেটা স্টেজে যতটা প্রাণোচ্ছল এবং আকর্ষণীয় বাস্তবেও সে ততটাই উচ্ছল এবং প্রাণময়। ক্লডিয়া একটা বিষয় লক্ষ্য করল, লরেটার প্রতি ক্রস খুব একটা আগ্রহী নয় বরং তার উচ্ছলতায় ক্রস একটু বিরক্তি বোধ করে।

পরের বার ক্লডিয়া যখন ভেগাসে বেড়াতে এলো লরেটার শো দেখানোর জন্য সে মেলো স্টুয়ার্টকে সঙ্গে নিয়ে আসে। মেলো অবশ্য ক্লডিয়ার পীড়াপীড়িতে তাকে খুশি করানোর জন্যই ভেগাসে আসে। অনেক বড় কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা তার মোটেই ছিল না। সে আর দশজন স্টেজ পারফরমার কিংবা ক্যাবারে ড্যান্সারের চাইতে বেশি কিছু ধারণা করেনি লরেটা সম্পর্কে। মেলো স্টুয়ার্ট মেয়ের সত্যিকারের মেধা আছে। সেই মেধা তার নাচ অথবা গানের মধ্যে নেই বরং তার মধ্যে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার মতো সহজাত প্রতিভা রয়েছে। আর এই প্রতিভার অধিকারী মেয়েরা হলো সোনা।

মেলো লরেটাকে আশ্বস্ত করল, সব সমস্যাই সমাধান যোগ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সমস্যা অত্যন্ত জটিল। লরেটার শো বিজ এজেন্সি চুক্তি শেষ হওয়ার আগে কিছুতেই লরেটাকে ছাড়তে রাজি নয়।

এই সময় থেকে বের হওয়ার কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিল না ক্লডিয়া। এমন সময় লরেটা ক্লডিয়াকে তার ভাই ক্রসের কাছে এই ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন করার কথা বলে। লরেটার কথায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় ক্লডিয়া। সে লরেটাকে বলল, এই ব্যাপারে ক্রস কি করতে পারে?

লরেটা বলল, এই শহরে তার যথেষ্ট প্রভাব আছে। আমাকে চুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সে নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। প্লিজ, তুমি ক্রসকে সাহায্য করার জন্য বলল।

ক্লডিয়া হোটেলের পেন্থ হাউস সুইটে ফিরে এসে ক্রসকে লরেটার সমস্যার কথা জানাল। ক্রস বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। সে বলল, কেন আমি এই সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাব? উত্তরে ক্লডিয়া বলল, আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না, আমি তোমাকে এই সমস্যার সমাধান করতে বলেছি তাই মি করবে। দ্যাটস অল।

ক্রস বলল, তুমি বোকা। আমি লরেটার মতো অনেক অকৃতজ্ঞকে দেখেছি যারা তোমার মতো বন্ধুর ঘাড়ে পা দিয়ে উপরে উঠে যায় এবং পরে সেই বন্ধুকে ইতিহাসের মতো ভুলে যায়।

তাতে কি হয়েছে? ক্লডিয়া বলল, সে সত্যিকার অর্থেই প্রতিভাবান। এটা তার সম্পূর্ণ জীবনকেই উন্নততর জীবনে পাল্টে দিতে পারে।

ক্রস আবারো মাথা নেড়ে বলল, আমাকে এটা করার জন্য বলো না।

ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করল, হোয়াই নট?

তাকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপর এক প্রতিষ্ঠান নিতে চাচ্ছে, এটা চলচ্চিত্র ব্যবসারই অংশ।

ক্রস বলল, আমি বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছি না কারণ যদি আমি তা করি তাহলে আমাকে সমস্যা সমাধানে সফল হতে হবে। ক্লডিয়া বলল–

তোমাকে সফল হতেই হবে আমি তা বলছি না। আমি শুধু তোমাকে তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করতে বলছি। তাহলে অন্তত লরেটাকে আমি বলতে পারব আমরা চেষ্টা করেছিলাম।

ক্রস হেসে উঠল, বলল, সত্যিই তুমি বোকা। ঠিক আছে, তুমি লরেটা ও তার এজেন্সিকে আগামীকাল আমার সাথে দেখা করতে বলে। ঠিক সকাল দশটায়। এবং তুমিও সেখানে থেকো।

পরদিন সকালের মিটিংয়ে ক্লডিয়া প্রথমবারের মতো লরেটার শো বিজ এজেন্টের সাথে পরিচিত হলো। তার নাম টলি নাভান্স। লোকটির পরনে ছিল ভেগাস স্টাইলের সাধারণ পোশাক। তবে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের জন্য পোশাকের প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়েছিল। কলারবিহীন সাদা শার্টের ওপর ব্লু ব্লেজার এবং ব্লু ডেনিম প্যান্ট।

টলি নাভান্স বলল, ক্রস, তোমার সাথে পুনরায় দেখা হওয়ায় আনন্দিত বোধ করছি।

আমাদের কি ইতোপূর্বে দেখা হয়েছে? ক্রস জিজ্ঞেস করল। কারণ স্টেজ শো বিজনেসের বিষয়গুলো সে নিজে দেখাশোনা করে না।

নাভান্স অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানাল, অনেক দিন আগে। লরেটা যখন প্রথম জানাদু হোটেলে শো  করেছিল তখন।

ক্লডিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট ও টলি নাভান্সের মধ্যে পার্থক্যগুলো যাচাই করছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট দীর্ঘদিন ফিল্ম ট্যালেন্টদের নিয়ে কাজ করেছে আর টলি নাভান্স অল্প কিছুদিন থেকে নাইটক্লাব বিনোদনের জগতে পা দিয়েছে। নাভান্সকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিল। তাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে খুব একটা কর্তৃত্বপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল না। মেলো স্টুয়ার্টের মতো তার নিজের ওপর পূর্ণ আস্থা ছিল না।

লরেটা ক্রসের গালে আলতো চুমু দিল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। এমনকি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র উচ্ছলতার প্রকাশ ছিল না। লরেটা ক্লডিয়ার পাশে বসল। ক্লডিয়া তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছিল।

ক্রস গলফ খেলার পোশাকে ছিল-সাদা ট্রাউজার, সাদা টি শার্ট এবং পায়ে সাদা জুতো। তার মাথায় ছিল নীল বেসবল ক্যাপ। ক্রস ওয়েটবার থেকে সবাইকে পানীয় অফার করল কিন্তু সবাই অসম্মতি জানাল। ক্রস শান্তভাবে বলল, লরেটা তোমার সমস্যার একটা নিষ্পত্তি করা যাক, কি বলো?

কম্পিত কণ্ঠে লরেটা বলল, আমি যা আয় করব তার একটা পার্সেন্টেজ চায় টলি। এমনকি চলচ্চিত্র থেকে যে আয় আমি করব তার পার্সেন্টেজও টলিকে দিতে হবে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্টকে চলচ্চিত্রে কাজের উপার্জন থেকে পূর্ণ পার্সেন্টেজ দিতে হবে। আমি দুজায়গায় পার্সেন্টেজ দিতে পারব না। তাছাড়া টলি চায় আমার সবকাজ সে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এজেন্ট তা মানতে রাজি নয় এবং আমি তা মানব না।

নাভান্স শ্রাগ করে বলল, আমাদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। আমরা চাই সে চুক্তি অনুযায়ী চলবে।

লরেটা বলল, সেক্ষেত্রে আমার ফি এজেন্ট আমার সাথে চুক্তি করবে না। ক্রস বলল, আমার কাছে এটা খুব সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে লরেটা, চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথ তুমি কিনে নাও, নাভান্স বলল, লরেটা খুব বড় মাপের পারফরমার, সে আমাদের প্রচুর অর্থ উপার্জন করে দিয়েছে। আমরা সবসময়ই তাকে প্রমোট করেছি। আমরা তার প্রতিভার মূল্যায়ন করেছি। আমরা তার পেছনে প্রচুর অর্থ ইনভেস্ট করেছি। এখন সে টাকা দিলেই আমরা তাকে ছেড়ে দিতে পারি না।

লরেটা প্রায় আর্তনাদ করে বলল, আমি দুটো পার্সেন্টেজ দিতে পারব না। এটা চরম নিষ্ঠুরতা।

ক্লডিয়া অনেক কষ্টে তার হাসি চেপে রাখল কিন্তু ক্রস তা পারল না। নাভান্সকে আহত দেখাচ্ছিল।

শেষে ক্রস বলল, ক্লডিয়া, তোমার গলফ গিয়ারে নিয়ে এসো। আমি তোমার সাথে নাইন হোল খেলতে চাই। আমি এখানকার কাজ সেরে সিঁড়ির নিচে ক্যাশিয়ারের কক্ষে তোমার সাথে দেখা করব।

মিটিংয়ে খেলার পোশাক পরে দায়সারাভাবে ক্রসের উপস্থিতি দেখে ক্লডিয়া অবাক হয়েছিল। তার আচরণে মনে হয়েছিল সে মিটিংটাকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। এটা ক্লডিয়াকে আঘাত করেছিল এবং সে জানত লরেটাও এতে আহত হয়েছে। কিন্তু এতে টলি আশ্বস্ত হয়েছিল। লোকটি সমঝোতার কোনো প্রস্তাব জানায়নি।

ক্লডিয়া বলল, আমি এখানেই থাকব। আমি দেখতে চাই সলমন কিভাবে কাজ করে।

ক্রস কখনোই তার বোনের ওপর রাগ করতে পারে না। ক্লডিয়ার কথা শুনে সে হাসল। ভাইয়ের হাসির প্রতিউত্তরে সেও হাসল। ক্রস নাভান্সের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি দেখছি তুমি কিছুতেই মানছ না। আমার মনে হয় তুমিই সঠিক। লরেটা এক বছরে চলচ্চিত্রে যা উপার্জন করবে তাতে তোমার পার্সেন্টেজ কত আসবে? তবে তার ওপর তোমার কর্তৃত্ব পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথায় তুমি পার্সেন্টেজ পাবে না।

লরেটা রাগে ফেটে পড়ল। সে বলল, আমি কিছুতেই তাকে পার্সেন্টেজ দেব না।

নাভান্স উত্তরে বলল, আমি তা চাইও না। পার্সেন্টেজের বিষয়টা না হয় ছেড়েই দিলাম কিন্তু আমরা তোমার শোর জন্য বড় বায়না করি আর তখন যদি তুমি মুভির কাজে ব্যস্ত থাকো, তখন কি হবে? আমাদের টাকা লোকসানে যাবে।

ক্রস গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুঃখের সাথে বলল, টলি, আমি চাই তুমি লরেটাকে চুক্তি থেকে নিষ্কৃতি দেবে। এটা আমার অনুরোধ। তোমার সাথে আমাদের এই হোটেলের অনেক ব্যবসা আছে। আমার জন্য এই উপকারটুকু তুমি করো।

প্রথমবারের মতো নাভান্সের চেহারায় সতর্কতা ফুটে উঠল। সে কাতর কণ্ঠে ক্রসকে বলল, তোমার এই উপকার আমি করতে চাই ক্রস, কিন্তু এজেন্সির অন্যান্য পার্টনারের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ক্ষণিক থেমে সে বলল, হয়তো চুক্তি কেনার ব্যবস্থা আমি করতে পারব।

না, ক্রস বলল, আমি তোমাকে উপকার করতে অনুরোধ করছি, চুক্তি কেনার কথা বলিনি।

দেখো, আমি এখন খেলতে যেতে চাই, তোমার যা বলার এখনই বলো। তুমি আমার এই উপকারটুকু করবে কি-না। হ্যা অথবা না-এ তোমার জবাব আশা করছি।

ক্রসের কথায় ক্লডিয়া হতাশ হয়েছিল, আলোচনা পণ্ড হতে যাচ্ছে এই ভেবে ক্লডিয়া আহত হয়েছিল। ক্রসের আচরণে ক্লডিয়ার মনে হচ্ছিল সে পুরো ব্যাপারটাই যেনতেনভাবে শেষ করতে চাচ্ছে। মনে হচ্ছিল সে তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ক্লডিয়া লক্ষ্য করল ক্রসের কথায় নাভান্স কেঁপে উঠল।

নেভান্সের উত্তর শুনে ক্লডিয়া বিস্মিত হলো। নাভান্স বলল, এটা ঠিক নয়। সে সমর্থনের আশায় পরাজিত দৃষ্টিতে লরেটার দিকে একবার তাকাল। লরেটা তার দৃষ্টি নামিয়ে নিল।

ক্রস আত্মবিশ্বাসের সাথে কিছুটা গর্বিত ভঙ্গিতে তার মাথার ক্যাপটি একপাশে টেনে এনে বলল, এটা আমার অনুরোধ। তুমি আমাকে ফিরিয়েও দিতে পারবে। সেটা তোমার অভিরুচি।

নাভান্স ব্যস্তভাবে বলল, না, না, ক্রস, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি বুঝিনি তুমি আমার কথায় কষ্ট পাবে। কারণ আমরা খুব ভালো বন্ধু।

ক্লডিয়া লক্ষ্য করল হঠাৎ করেই তার ভাইয়ের মধ্যে চমকপ্রদ পরিবর্তন ঘটে গেল। ক্রস সামনের দিকে ঝুঁকে টলি নাভান্সের কাঁধে একটি হাত রেখে আন্তরিকভাবে তাকে কাছে টেনে নিল। উষ্ণ হাসিতে তার চেহারা ঝলমল করছে।

ক্লডিয়া ভাবল ক্রস সত্যিই সুদর্শন। ক্রস কৃতজ্ঞভরা কণ্ঠে নাভান্সকে বলল, টলি আমি তোমার এই উপকার কখন ও ভুলব না। শোনো টলি, জানা হোটেলের স্টেজ তোমার জন্য উন্মুক্ত। তোমার যে কোনো নতুন ট্যালেন্টের শো  সর্বনিম্ন চার্জে সেখানে করতে পারবে। আমিও তোমার এজেন্সির সব ট্যালেন্টদের নিয়ে একটি স্পেশাল শো আয়োজন করব এবং সেই রাতে তুমি এবং তোমার পার্টনাররা আমার সাথে হোটেলে ডিনার করবে। তোমার যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করো। আমি তা দেখব, ঠিক আছে?

ক্লডিয়া দুটি বিষয় উপলব্ধি করলক্রস খুব পরিকল্পিতভাবেই ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। সেই সাথে সে সতর্কতার সাথে নেভান্সের কিছুটা ক্ষতিও পুষিয়ে দিয়েছিল। তবে তা ক্রসের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার পরেই করেছিল, তার আগে নয়। টলি নাভান্স তার স্পেশাল নাইট উপভোগ করবে। এক রাতের জন্য সে নিজেকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ভেবে গর্বিত হবে।

ক্লডিয়া আরেকটি বিষয় উপলব্ধি করল, তার প্রতি ক্রসের ভালোবাসার গভীরতা বোঝানোর জন্য তার প্রভাব প্রদর্শন করেছে এবং তার ভালোবাসার একটা বাস্তব ক্ষমতা আছে। ক্রসের সুন্দর চেহারায় বিধাতা যেন নিজ হাতে তাকে গড়েছেন, তার ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। সেই শৈশবে তাকে যেমন দেখেছিল––কোমল একজোড়া ঠোঁট, নিখুঁত নাক, পটলচেরা আয়ত দুটি চোখ। বয়সের সাথে তার চেহারায় একটা দৃঢ়তা এসেছে—মনে হয় যেন মার্বেল পাথরের খোদাই করা প্রাচীন কোনো ভাস্কর্য।

ক্লডিয়া প্যাসিফিক হাইওয়ে থেকে বাঁক নিয়ে সাইড রোড ধরে ম্যালিবু কলোনির গেটে পৌঁছল। সাগর সৈকতে ম্যালিবু কলোনি। কলোনির সামনে বিস্তৃত ঝলমলে সমুদ্র। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। ক্লডিয়ার খুব পছন্দ এই কলোনি। ক্লডিয়া আবারও পেছনের পর্বতশৃঙ্গের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল সাগরের জলে। সে অ্যাথেনার বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করল।

ম্যালিবু কলোনির দক্ষিণ দিকের ঘেরার বাইরে পাবলিক বীজ উন্মুক্ত সৈকতে বজ কানে শুয়ে আছে। ম্যালিবু কলোনি তীরের জালে ঘেরা। তারের জাল সৈকত ছাড়িয়ে প্রায় দশ গজ পানি পর্যন্ত বিস্তৃত। তারের জালের এই ঘেরা খুবই সাধারণ একটা বাধা। যে কেউ ইচ্ছে করলেই পানিতে সাঁতরে। ঘেরার ভেতরে যেতে পারবে।

অ্যাথেনার ওপর আবারও আক্রমণ চালানোর জন্য বজ আগে থেকেই চারপাশ ভালো করে দেখে নিচ্ছে। আকস্মিক আক্রমণ চালানোর জন্য সবকিছু খতিয়ে দেখতে আজ সে পাবলিক বিচে এসেছে সমুদ্রে গোসল করার সাজে। তার পরনে বাথিং সুট, তার ওপর একটি টি শার্ট পরে আছে। পায়ে টেনিস খেলার জুতো। একটা টেনিস ব্যাগ তার সাথে। তার ভেতরে তাওয়াল দিয়ে জড়ানো একটা এসিডপূর্ণ বোতল।

বজ যেখানে শুয়ে আছে সেখান থেকে তারের জালের ভেতর দিয়ে অ্যাথেনার বাসা দেখা যায়। সে দেখল দুজন ব্যক্তিগত রক্ষী সৈকতে পাহারা দিচ্ছে। রক্ষী দুজনই সশস্ত্র। যেহেতু বাড়ির পেছনে পাহারার ব্যবস্থা আছে সেহেতু বাড়ির সামনেও রক্ষীরা প্রহরারত, এটা নিশ্চিত।

বজ প্রয়োজনে রক্ষীদেরকেও আঘাত করতে প্রস্তুত। কিন্তু সে একজন উন্মাদের মতো সবাইকে মেরে ফেলতে চায় না। কারণ তাহলে অ্যাথেনার ওপর তার ন্যায্য প্রতিহিংসার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষ ঘটনাটিকে একটি সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখবে।

বজ স্কানেট জুতো এবং টি-শার্ট খুলে ফেলে ব্লাঙ্কেটের ওপর শুয়ে পড়ল। সূর্যের উষ্ণতা তাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করল। সে অ্যাথেনার ভাবনায় ডুবে গেল।

কলেজ জীবনে একজন প্রফেসর এমারসনের প্রবন্ধের ওপর লেকচার দেওয়ার সময় একটি উক্তির উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন Beauty is its own excuse. কিন্তু এমারসন বা সৌন্দর্য কোনো কিছুই বজ ভাবতে পারছে না। তার মাথায় এখন কেবলই অ্যাথেনার ভাবনা।

অ্যাথেনার মতো এত সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। অ্যাথেনার বিরল সৌন্দর্য নিয়ে বজ নিমগ্ন। একজন মানুষের দৈহিক গড়নের সৌন্দর্যের সাথে চারিত্রিক অন্যান্য গুণাবলির সচরাচর সমন্বয় দেখা যায় না। কিন্তু অ্যাথেনা ছিল ব্যতিক্রম। তার দৈহিক সৌন্দর্যের সাথে মিশেছিল মেধা, প্রাণোচ্ছলতা, মানুষকে আকৃষ্ট করার অসাধারণ ক্ষমতা। কৈশোরেই লোকে তাকে থেনা বলে ডাকত।

বজ তার যৌবনে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসত অ্যাথেনাকে। অ্যাথেনাও তাকে ভালোবাসত এই ভাবনায় সে সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল। জীবন যে এত মধুর হয় তা সে কখনোই জানত না। কিন্তু একটু একটু করে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল।

সে কেন এত সুন্দর হলো? তাকে কেন এত ভালসেছিলাম? কেন সবাই তাকে এত ভালোবাসত? এটা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কি সে জানত না?

বজ নিজের কথা ভেবে বিস্মিত হলো, অ্যাথেনার প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা কিভাবে ঘৃণায় পরিণত হলো?

এটা অত্যন্ত সহজ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ সে জানত, সে সারা জীবন অ্যাথেনাকে ধরে রাখতে পারবে না এবং একদিন অ্যাথেনা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। একদিন বজের সুখের স্বর্গ ভেঙে দিয়ে অ্যাথেনা অন্য পুরুষের শয্যাসঙ্গী হবে এবং আর কোনো দিনও তার জীবনে ফিরে আসবে না অ্যাথেনা।

সে অনুভব করল তার মুখের ওপর ছায়া পড়েছে। সে চোখ মেলে দেখল, একটা ফোল্ডিং চেয়ার হাতে পরিপাটি পোশাকের একজন লোক তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। বজ লোকটিকে চিনতে পারল। জিম লুজি ডিটেকটিভ থেনার মুখে প্রথমবার পানি ছুঁড়ে মারার পর এই লোকই তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করেছিল।

রোদের কারণে বজ তার দিকে চোখ কুঁচকে তাকাল। লুজিকে সে বলল, কি আশ্চর্যের বিষয়। আমরা দুজনই একই সৈকতে সাঁতার কাটতে এসেছি। কিন্তু তুমি আমার কাছে কেন এসেছ?

লুজি চেয়ার পেতে বসল। আমার এক্স-ওয়াইফ এই চেয়ারটা আমাকে দিয়েছিল। আমি নাকি অনেক সাফারকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞেসাবাদ করি। তাই আমার একটু আরামের জন্য সে আমাকে এটা দিয়েছিল। লুজি বজ স্কানেটের দিকে দয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি শুধু তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। প্রথমত মিস অ্যাথেনা একুইটিনের বাড়ির এত কাছে তুমি কি করছ? তুমি বিচারকের নিষেধাজ্ঞা জ্ঞান করেছ।

আমি পাবলিক বিচে আছি এবং অ্যাথেনা ও আমার মাঝে তারজালের বেষ্টনী রয়েছে। আমি এখানে সাঁতারের জন্য এসেছি। আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি অ্যাথেনাকে উৎপীড়ন করছি?

বজ উত্তর দিল।

লুজি তার মুখে সহানুভূতির হাসি এনে বলল, হেই, শোনো তার সাথে যদি আমার বিয়ে হতো তাহলে আমিও তার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারতাম না। আমি কি তোমার ব্যাগটা দেখতে পারি?

বজ ব্যাগটা টান দিয়ে তার মাথার নিচে রাখল এবং বলল, না, ওয়ারেন্ট ছাড়া তুমি তা পারো না।

লুজি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হেসে বলল, তোমাকে গ্রেফতার করতে আমাকে বাধ্য করো না। তাই বলছি মাথা থেকে দুর্বুদ্ধি ঝেড়ে ব্যাগটা আমাকে দাও। এই কথায় বজ উঠে দাঁড়াল। সে ব্যাগটা লুজির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সাথে সাথে আবার তা দূরে সরিয়ে নিল।

সে বলল, চেষ্টা করে দেখো নিতে পারো কি-না।

লুজি বজের কাণ্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। এ পর্যন্ত কেউ-ই তার সাথে এমন আচরণ করার সাহস পায়নি। অন্য কোনো পরিস্থিতি হলে এতক্ষণে সে তার ব্ল্যাকজ্যাক (হান্টার) অথবা বন্দুক বের করে লোকটিকে পিটিয়ে দলা বানিয়ে ফেলত। কিন্তু পায়ের নিচে বালু থাকায় সে অনিশ্চয়তায় ভুগছে কিংবা বজ স্কানেটের ভীতিহীন আচরণ তাকে দ্বিধাগ্রস্ত করে দিয়েছে। বজ তার দিকে তাকিয়ে হাসল, বলল, আমার কাছ থেকে ব্যাগ নিতে হলে তোমাকে গুলি করতে হবে এবং যদি তুমি আমাকে গুলি করো তাহলে গুলি করার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে পারবে না তুমি। কেননা আমি তোমার চেয়ে শক্তিশালী এবং তোমার মতোই লম্বা-চওড়া।

বজের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও বিচক্ষণতাকে লুজি মনে মনে প্রশংসা করল। তার সাথে দৈহিক সংঘাতের বিষয়টি নিয়ে যেখানে সংশয় দেখা দিতে পারে সেখানে অস্ত্র বের করার প্রশ্নই ওঠে না।

লুজি বলল, ঠিক আছে, সে তার চেয়ার ভাজ করে চলে যেতে উদ্ধত হলো। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশংসার সুরে বলল, তুমি সত্যিই একজন কঠিন লোক। তুমিই জিতলে কিন্তু এমন কিছু করো না যাতে আমি উপযুক্ত কারণ পাই। তুমি লক্ষ্য করেছ অ্যাথেনার বাড়ি থেকে তোমার দূরত্ব আমি মেপে দেখিনি, হয়তো তুমি বিচারকের নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে আছ।

বজ হেসে বলল, চিন্তা করো না, আমি তোমাকে কোনো সুযোগ দেব না।

সে দেখল লুজি সৈকত দিয়ে হেঁটে গিয়ে তার গাড়িতে উঠল এবং গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেল। বজ তার ব্লাঙ্কেটটি তুলে ব্যাগে ভরল এবং সেও তার গাড়িতে ফিরল। গাড়ির বুটে ব্যাগটি রাখল। গাড়ির চাবিটি রিং থেকে খুলে নিয়ে সামনের সিটের নিচে লুকিয়ে লাখল!

তারপর সে ফেন্সের (ঘেরার) চারপাশে সাঁতার কাটতে সৈকতে ফিরে গেল।

০৫. গতানুগতিক নিয়ম

০৫.

অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন গতানুগতিক নিয়মে তারকার স্তরে সাদামাটাভাবে উপার্জন করছিল। জনগণ কদাচিৎ তাকে মূল্যায়ন করত। সে বছরের অনেক সময় প্রশিক্ষণে ব্যয় করত। অভিনয়ের ক্লাস, নাচ ও হাঁটা-চলার ক্লাস, কণ্ঠ পরীক্ষা, নাট্য, সাহিত্য বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা এবং অভিনয়ের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ে সে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। আরও অনেক ছোটখাটো কাজ করত সে।

সে এজেন্টদের চারপাশে ঘুরত, পরিচালকদের তাকে নেবার জন্য বলত। প্রযোজক ও পরিচালকদের শান্তভাবে কামাসক্তে জড়াত এবং ডাইনোসরের মতো স্টুডিও চক্র ও প্রধান ব্যক্তিদের যৌন কামনায় আসক্ত হতে বাধ্য করত।

প্রথম বছরে কিছু কমার্শিয়াল কাজ ও কিছু মডেলিং করে যা উপার্জন করেছিল, তা দিয়ে কোনোমতে তার জীবিকা নির্বাহ করত। খুবই কৃপণতার সাথে তাকে চলতে হতো। এরকম শুধু তার প্রথম বছরই হয়েছিল। এরপর তার অভিনয়ের দক্ষতা বেড়ে গেল।

যারা তাকে গহনা ও টাকা উপহার হিসেবে দিত সে তাদের শুধু প্রেমিক ভাবত। তাদের কেউ কেউ বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল। এই সম্পর্ক ছিল খুবই স্বল্পকালের এবং বন্ধুত্বের মধ্য দিয়েই একদিন তা শেষ হয়ে যেত।

এর কোনোটাই তার কাছে যন্ত্রণাদায়ক বা অবমাননাকর ছিল না। এমনকি রোলস রয়েস গাড়ির বিক্রেতাও ধরে নিয়েছিল, সে গাড়ির সাথে আসবে না। সে কৌতুক করে বলেছিল এ দামের মধ্যে এমন গাড়ি হলে আমি কিনব। সে মানুষের প্রিয় ছিল। সে সেক্স দারুণভাবে উপভোগ করত। তার অত্যাধিক প্রচেষ্টার ফলেই সে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে স্থান করে নিয়েছিল। অভিনয়ই তার জীবন।

তার নিজস্ব বোধগম্য ক্ষমতা ছিল অন্যদের চেয়ে বেশি। তেমন কোনো বোধগম্য ছিল। বিশ্বের বিপদ-আপদ ছিল তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার জীবনটা প্রথমেই অভিনয় দিয়ে শুরু করেছিল। ছোট পর্দায় তার পদযাত্রা তেমন ছিল না। বেশ কিছু বড় নাটকের বড় চরিত্রে সে কিছুদিন অভিনয় করেছিল।

আর এর পরেই চলচ্চিত্রে তার একটা পরিচিতি আসে। এর ফলশ্রুতিতে বড় চলচ্চিত্রে ভালো চরিত্রে অভিনয় করার তার সুযোগ আসে।

তার বাস্তব জীবন ছিল তার অভিনয়েরই অংশ। সে অধিকতর সজীবতা অনুভব করত তার চরিত্রের নিজের জীবনটা ফুটিয়ে তুলবার জন্য। সে বারংবার চেষ্টা করত।

তার ভালোবাসার বিষয় ছিল আনন্দের মতো গলফ ও টেনিস খেলার মতো, বন্ধুদের সাথে আড্ডার মতো, স্বপ্নের মতো ছিল তার অস্তিত্ব। তার বাস্তব জীবন থিয়েটারের মধ্যে দিয়েই সামনের দিকে ধাবিত হতে লাগল।

অ্যাথেনা একটা নতুন খবর পেয়ে পুরোপুরি আশ্চর্য ও অভিভূত হলো।

সে জানল যে, তাকে বড় অভিনয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু সে জানে কেন তাকে পছন্দ করা হলো। আসলে তার এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট তাকে আলোকিত করার জন্য প্রথম থেকে চেষ্টা করে আসছিল।

তুমি একজন বড় অভিনেত্রী। কিন্তু তুমি এই শহরে অল্প কয়েক বছর ধরে আছ, তোমার মেধা থাকা সত্ত্বেও তুমি কিছুটা অনভিজ্ঞ। তাই আমি যা বলব তাতে তুমি অপরাধ নিও না–যা ঘটে এখানে তা বিস্তৃত হয়।

সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। সাধারণভাবে আমি কখনো এটা ব্যাখ্যা করব না; কারণ ব্যাখ্যাটা ততটা জরুরি নয়।

কিন্তু আমি অত্যন্ত অনভিজ্ঞ অ্যাথেনা হেসে বলল।

না, ঠিক অনভিজ্ঞ নও বলে কোনো কথা নয়, মেলো বলল।

তুমি তোমার অভিনয়ের প্রতিই মনোযোগী, তবে চলচ্চিত্র শিল্পের অভ্যন্তরীণ জটিলতা সম্পর্কে তুমি অসচেতন।

অ্যাথেনা বেশ মজা পেল। আমাকে বলল আমি কিভাবে এমন সুযোগটা পেলাম।

মেলো বলল, স্টেলিংয়ের এজেন্ট আমাকে ডেকেছিল। সে বলল, সে তোমাকে ট্যাপার নাটকে দেখেছিল। তোমার পারফমেন্সে সে অভিভূত হয়েছিল। সে এখন নিশ্চিতভাবে তার চলচ্চিত্রে তোমাকে অভিনয় করাতে চায়। পরে প্রযোজক আলোচনা করার জন্য আমাকে ডাকল।

প্রযোজকের সাথে আমার চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। বেতনভুক্ত হয়ে তুমি কাজ করবে। তোমার পারিশ্রমিক দুশত গ্রান্ড। এমন কোনো শর্ত নেই যা তোমার পরবর্তী ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করবে, অন্য যে কোনো ছবিতে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এটা তোমার জন্য সত্যিই ভালো সুযোগ।

ধন্যবাদ অ্যাথেনা বলল।

মেলো বলল, স্টিভেন তার সহঅভিনেত্রীর সাথে পাগলের মতো ভালোবাসায় প্রায়ই জড়িয়ে পড়ত। আন্তরিকভাবে কিন্তু সে ভালো লোক।

অ্যাথেনা তাকে থামাল। মেলো, এটা আর বলো না।

আমি মনে করি এটা অবশ্যই তোমাকে অবগত করা দরকার, মেলো বলল।

আমাকে কী বলতে চেষ্টা করছ যে আমি প্রথমেই তার ঘাড়ে লাফ দিয়ে। উঠে পড়েছি! এমন কি মনে হচ্ছে তোমার?

অ্যাথেনা কঠোরভাবে বলল, আমার কি অভিনয়ের প্রতিভা নেই যে তার সঙ্গে আমাকে অন্তরঙ্গ হয়ে অভিনয় করতে হবে?

অবশ্যই নয়, মেলো বলল।

ব্যাপারটা তেমন নয়। অভিনয় ছাড়াও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে। কিন্তু তুমি জানো কিভাবে একজন লোক চলচ্চিত্রে বড় তারকা হয়?

কখনো কখনো কেউ কেউ ভালো অভিনেত্রী না হয়েও বড় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পায়। আর এটা হলো তোমার জন্য বড় চরিত্র। তুমি এটাকে হাতছাড়া করো না। আর স্টিভেন স্টেলিংয়ের সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়াটা কী খুব কঠিন? সমগ্র বিশ্বের একশত মিলিয়ন মহিলা তাকে ভালোবাসে, তুমি কেন বাসবে না? তোমাকে অভিভূত হতে হবে।

আমি আনন্দিত বোধ করছি, শান্তভাবে অ্যাথেনা বলল।

কিন্তু আমি আসলেই তাকে ঘৃণা করলে পরে কী ঘটবে?

কাকে ঘৃণা করবে? সে আসলেই একজন সুন্দর মানুষ, আমি তোমাকে শপথ করে বলতে পারি। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে হবে যতক্ষণ ছবিতে তোমার যথেষ্ট পরিমাণ দৃশ্য না নেয় এবং যখন আর তোমাকে বাদ দিতে পারবে না।

আমি খুব ভালো করলে কী তারা আমাকে বাদ দিতে চাইবে? অ্যাথেনা বলল।

মেলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, সত্য কথা, স্টিভেন অত লম্বা সময় অপেক্ষা করবে না। তিনদিনের মধ্যে তার ভালোবাসায় না পড়লে, তুমি তার ছবি থেকে বাদ পড়ে যাবে।

এটা যৌন হয়রানি, অ্যাথেনা হেসে বলল।

চলচ্চিত্র জগতে এটা যৌন হয়রানি হতে পারে না। মেলো বলল, এক বা অন্যভাবে তোমার পশ্চাৎদেশ বিক্রির সুযোগ দেবে, অবশ্য এখানে ঢোকার পর।

আমি মনে করি আমি তার ভালোবাসায় আসক্ত হলাম, অ্যাথেনা বলল।

যৌন কাজ করা স্টিভেনের জন্য যথেষ্ট নয়? সে যাকে চায় তার সঙ্গে যৌন কাজ করতে পারে। মেলো বলল।

সে তোমার সাথে ভালোবাসায় মগ্ন হবে, পরিবর্তে সেও ভালোবাসা চাইবে।

সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

তুমি কাজের বাইরে ভালোবাসা করতে পারো, কারণ তুমি তখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকবে না। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। এটা তোমার সম্মানহানিব কথা হচ্ছে না। সে বলল।

মেলো, তুমি কি মনে করো না করো তা আমি জানি না। আমার শরীর বিক্রি ছাড়াই আমি যথেষ্ট ভালো করতে পারব? অ্যাথেনা শক্তভাবে বলল।

অবশ্যই তুমি পারবে মেলো বলল। তুমি পঁচিশ বছরের যুবতী। তোমাকে দুই থেকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তোমার প্রতিভায় আমার চুড়ান্ত বিশ্বাস আছে। কিন্তু একটা সুযোগ দাও। সবাই স্টিভেনকে ভালোবাসে।

আমি মেলোকে নিজের করে ভাবতে গিয়েছিলাম। অ্যাথেনা প্রথম দিন আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছিল। তার পরও সে আর আমার কোনো কথা, কোনো কিছু সাদরে গ্রহণ করেনি। কারণ তারপর সে স্টিভ স্টেলিংয়ের প্রতি দুর্বল হয়েছিল। তার পর তারা একে-অপরের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করতে থাকে, পরিশেষে তারা একে-অপরের সঙ্গে গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে আমার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায়। কারণ তখন স্টিভ স্টেলিংয়ের আকাশ ছোঁয়া গুডউইল ছিল। তার গুডউইলের কাছে আমার সব কিছু স্রোতে ভেসে যায়। আমি অ্যাথেনা বুঝতে অক্ষম হই।

এবং শেষ দিন স্টিভ স্টেলিং তার ভালোবাসায় মৌখিকভাবে সাড়া দেয়। আমি মনে করি একটি ভালো ছবির কারণে তারা একে-অপরকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ফেলে। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, তারপর একটু হেসে বলল, আমি বেশ আছি।

ধন্যবাদ তোমাকে। অ্যাথেনা বলল, কোথায় এবং কখন? তৎক্ষণাৎ স্টিভের চেহারা তার চোখের সামনে ভাসতে লাগল, আরে না, সে বলল, তোমার পছন্দ।

সেই মুহূর্তে সে একজন সুপার তারকা, আর অ্যাথেনা এই পথে নতুন– তাছাড়া সে তার দায়িত্বে তার কর্তব্যে কখনোই কোনো প্রকার অবহেলা করেনি। তুমি কি আমার স্থানে আসতে পারবে? অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল, আমরা একসঙ্গে আজ রাতের খাবার খাব তারপর বাকি কাজের ব্যাপারে কথা বলব। সে কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়ার পর বলল, রাত সাত টার সময়।

তারপর অ্যাথেনা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করল। আসলেই আমার কোনো কাজই যৌনতার কারণে পড়ে থাকতে পারে না। তারা রাতের খাবার খাওয়ার পর সাদা মদ খেল এবং তারা একত্রে কোক খেল।

তখন তার পরনে ফেডেড ব্লু জিন্স পরা ছিল। তার শার্টটি ছিল বু কালারের। আর অ্যাথেনার পরনে ছিল সিল্কি হাউজ, তার সঙ্গে স্রেক পরেছিল। তার পায়ে ছিল উঁচু হিলের জুতা। যা তাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছিল। সব কিছু মিলে তাকে দেখতে সুন্দরী মনে হয়েছিল। স্টিভ স্টেলিং সঙ্গে করে রেড মদের বোতল এনেছিল। কিন্তু সে রাতের খাবারের পর এটা খেল না। সে এটা আগামী দিন রাতের খাবারের পর খাওয়ার জন্য রেখে দিল।

সে তখন ব্যবসায়ী পোশাক পরে ছিল। তখন তার পরনে ছিল বেগি ব্রাউন রঙের টাওজার, ব্লু ডেনিম শার্ট, তার কালো চুল বাতাসে উড়ছিল। তার পায়ে ছিল ইতালি জুতা যা তাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলল।

তারপর তারা রাতে খেতে খেতে তাদের স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করল। তারা স্ক্রিপ্টের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করার জন্য ভালোভাবে স্ক্রিপ্টটি পড়তে লাগল। রাতের খাবারের পর তারা তাদের লিভিং রুমে গেল এবং পুনরায় স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনায় মগ্ন হলো। তারা দুজনই স্ক্রিপ্ট নিয়ে বেশ উত্তেজনার মধ্যে ছিল। তাই তারা সেটা পরিবর্তন করে আরো ভালো কিছু করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখল।

অ্যাথেনা লক্ষ্য করে দেখল স্টিভ স্টেলিং প্রত্যেককে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেটি ক্যামেরার সামনে মুভ করার আগে বারবার নিজকে সংশোধন করার চেষ্টা করে। সে পরিচালকের সঙ্গে বারবার চরিত্রের ব্যাপারে আলোকপাত করে। কখনো কখনো সে নিজেই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজে নিজেই ক্যামেরা টেক করার জন্য চেষ্টা করে অর্থাৎ তার চরিত্র তার পছন্দমতো না হওয়া পর্যন্ত সে চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

দীর্ঘক্ষণ চরিত্র নিয়ে আলোচনার পর তারা পাশাপাশি বসল। তারপর অ্যাথেনা নিচু হয়ে তার বুকে চুমু দিল। এটা ছিল তার নিত্যদিনের ভালোবাসার সংকেত। চুম্বন খেয়ে স্টিভ স্টেলিং একটু শিহরিত হলো। সেও তার ভালোবাসায় সাড়া দিল। আরো এতেই প্রমাণিত হলো সে বড় মাপের তারকা। তারা দুজনেই দক্ষ।

তারপর তারা দুজনই আলোড়িত হলো। স্টিভ স্টেলিং তার সারা শরীরে হাত বুলাতে লাগল, এতে অ্যাথেনা আর বেশি সংবেদনশীল হলো, সেটা তাকে বেড়ে যাওয়ার জন্য সংকেত দিল।

তারপর সিনেমার ভঙ্গিমায় একে-অপরকে আদর করতে আরম্ভ করল। তারা আস্তে আস্তে উত্তেজনার চরম শিখরে আরোহণ করল …

কিছুক্ষণ পরে তারা ফ্রেস হলো। অ্যাথেনা তার জন্য কিছু খাবারের আয়োজন করল। তারা পুনরায় খাবার খাওয়ার সময় আলোচনায় ফিরে এলো। অ্যাথেনা বলল, শুধু চরিত্র ফুটানোর চেষ্টা করলেও চলবে না– চরিত্র ভালো করে ফুটিয়ে তোলার জন্য গল্পেরও প্রয়োজন। তারা উভয়েই একমত হলো। এখন থেকে তারা কোনো ছবি করলে অবশ্যই অনেক আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট সংগ্রহ করবে। কারণ গল্প ভালো না হলে চরিত্র ফুটানো যাবে না আর চরিত্র ফুটানো না গেলে ছবি হিট হবে না। এতে করে সবার চাইতে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।

স্টিভ স্টেলিং তার প্রতি আরো বেশি ভালোবাসায় আসক্ত হলো। কিন্তু সে পুনরায় তাদের পেশা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হলো। অ্যাথেনা বলল, আসলে ভালো ঘটনার চমকপদ বিশ্লেষণ না হলে কোনো পরিচালকই ছবিকে ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। তাই সবার আগে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গল্প বা কাহিনীর দিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

স্টিভ স্টেলিং নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে আনন্দ উপভাগ করল। সে নতুন করে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করল। কিন্তু সে সর্বদাই অ্যাথেনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিল। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সে অ্যাথেনাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করত। কারণ সবকিছুর চাইতে সে অ্যাথেনার প্রতি বেশি দুর্বল ছিল। কারণ তার জীবন চরিত্রে অ্যাথেনার মতো কখনো এমন সুন্দরীর সাক্ষাৎ পায়নি। কিন্তু মাঝে মাঝে অ্যাথেনার আচরণে সে বেশ ক্ষুব্ধ হতো। তখন সে নিজেই তার সমস্যা দূর করার জন্য উঠে পড়ে লাগত।

পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে ঘটনার সন্নিবেশ হলো– তারা দুজনই বেডের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। চলো আমরা আমাদের কাজে ফিরি। তারা স্ক্রিপ্টটি হাতে নিল এবং জোরেসোরে পড়তে লাগল।

স্টিভ স্টিলিং যখনই ক্যামেরার সামনে পোজ দেয় তখনই অ্যাথেনা তা ভালোভাবে খেয়াল করে। সে চেষ্টা করে কিভাবে ভালো অভিনেত্রী হওয়ার জন্য আরো ভালোভাবে পোজ দেওয়া যায়। সে স্টিভ স্টিলিংয়ের প্রতিটি কাজকে পাগলের মতো অনুসরণ করে। আর যদি কোনো পোজ তার পছন্দ না হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্টিভ স্টিলিংকে তা অবগত করে, অনুরূপভাবে স্টিভও অ্যাথেনার পোজ দেওয়ার সময় ক্যামেরার পেছনে থাকে, তার প্রতিটি কাজকে নিখুঁতভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখে। প্রকৃতপক্ষে এটিই একজন ভালো অভিনেতার ও অভিনেত্রীর গুণ। অ্যাথেনা বলল, স্টিভ তুমি আমাকে যা শিখিয়েছ তা আমি কখনো ভুলব না। প্রকৃতপক্ষে আমার আজকের অবস্থানের জন্য সব কৃতিত্ব তোমার। আমি অ্যাথেনা যা সারা জীবন স্মরণ করব।

তারপর সে মৃদুভাবে বলল, আসলে এটা একটি বোধগম্য হওয়ার ব্যাপার।

তোমার ধারণা ঠিক, স্টিভেন বলল, তারা দুজনই ছিল একে-অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তার কাজ ও চলচ্চিত্র দুটোই খুব বড় ধরনের সাফল্য। অ্যাথেনা প্রথম কাজের মাধ্যমে তারকা খ্যাতি অর্জন করল। পাঁচ বছরে একটি ছবি করার সিদ্ধান্ত নিল সে কারণে সফলতা লাভ করল। তারকার জন্য কাজ, সফলতার জন্য কাজ। অ্যাথেনা ও স্টিভেন পরস্পরকে ভালোবাসে এবং পরশকে সংলাপ বলার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার মূলে ছিল মজা করা, বিখ্যাত হওয়া বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ভালোবাসা মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারে এবং কোনো ভালোবাসার মৃত্যু থেকে ফেরাতে পারে না, ভৌগোলিক প্রশ্নও সেখানে ছিল। ছবি শেষ, তাদের ভালোবাসাও শেষ। অ্যাথেনা মালিবুতে চলে গেল এবং স্টিভেন ইতালিতে। তাদের এই মুহূর্তে বিয়ে করা উচিত কিন্তু এটা ছিল অসম্ভব। অ্যাথেনা সম্পর্কটাকে খুব উপভোগ করত কিন্তু সে এটাকে গৌণভাবে নিয়েছিল। এটাকে পেশা হিসেবে নিলেও স্টিভেনকে সে অনেক বেশি ভালোবাসে। তার পক্ষে এটা অতিক্রম করা অসম্ভব। স্টিভেন খুব সচেতন, সঠিক এবং দায়িত্বশীল প্রেমিক। তার একটি ছবির কাজ চলে গেলেও সে এটা করবে।

সে তার শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ করে কিন্তু এটা তার প্রশংসা ধরে রাখতে পারে না। স্টিভেনের বিয়ের প্রস্তাব তার কাছে বড় পাওয়া ছিল। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করল। কারণ সে জানত স্টিভেন তার ছবির ও হলিউডে অবস্থানের জন্য এটা করে। যখন ড্রাগ সমস্যাটি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল তখন সে এটাকে তার জীবনের একটি অংশ হিসেবে পেতে চাইল। স্টিভেন তার প্রত্যাখ্যান ভালোভাবেই গ্রহণ করল। এটা ছিল তার অতিরিক্ত কোকেন গ্রহণের ফল। তাই সে এটা থেকে মুক্ত হলো। পরবর্তী পাঁচ বছরে অ্যাথেনা তারকা খ্যাতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাল। স্টিভেন পুনরায় মেয়েদের প্রতি দুর্বল হতে লাগল দুর্ভাগ্যবশত এটা তাকে অভিনয়ে অমনোযোগী করে তুলল। ড্রাগ-অ্যালকোহল তাকে কাজের প্রতি দায়িত্বহীন করে তুলল। শেষ বছরে অ্যাথেনা সবার সাথে সুসম্পর্ক রেখেছিল। তার মধ্য এলি ম্যারিওনের একমাত্র পুত্র তরুণ প্রযোজক কেভিন ম্যারিওন। কেভিন ম্যারিওন ছিল তার সমবয়সি কিন্তু সে ছিল ছবি ব্যবসার সাথে জড়িত। তার প্রথম ছবি খুব সাফল্য পায় এবং ছবিতে তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ে তার তিনটি ছবি ফ্লপ করে এবং তার বাবাই শুধু তাকে এ ব্যবসায় সাহায্য করে। কেভিন ম্যারিওন খুব সুদর্শন ছিল। এলি ম্যারিওনের প্রথম স্ত্রী খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতভাবে ক্যামেরার সামনে ভালো দেখাত না, ফলে তার ভবিষ্যৎ তৈরি হলো একজন প্রযোজক হিসাবে।

অ্যাথেনার সাথে কেভিনের দেখা হলো এবং তখন সে তাকে তার নতুন ছবির তারকা হওয়ার জন্য অনুরোধ করল। সে যে নিষ্পাপ তা অ্যাথেনা র‍্যাপ পার্টিতে হতাশা ও উদ্বিগ্নতার মধ্য শুনেছিল। এটা চলচ্চিত্রের সেরা সংলাপ আমি এটি পড়েছি, কেভিন বলল। আমি অবশ্যই তোমাকে বলব এবং পুনরায় লিখতে সাহায্য করব। অ্যাথেনা তুমি সত্যিই এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত। তোমার মতো অভিনেত্রীকে আমি আমার ব্যবসায় চাই। সে তাকিয়ে থাকল এবং অ্যাথেনা তার ছবির সংলাপ দেখে উৎসাহিত হলো। এটা ছিল গৃহহীন রাস্তার মেয়ের গল্প। তার বসবাস গার্বেজপূর্ণ এলাকায় হলেও সে তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমেরিকার গৃহহীনদের নেতা হয়ে গিয়েছিল।

কেভিন বলল, তুমি যদি অভিনয় করো তাহলে আমি আনন্দে মরেই যাব। অ্যাথেনা চিন্তা করল আমি উন্মাদ কিন্তু সে একজন ক্ষমতাবান প্রযোজক এবং সে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করতে পারে। সে হতাশায় মেলো স্টুয়ার্টের দিকে তাকাল এবং মৃদ হাসল। কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেল। খুব ভালো ধারণা মেলো বলল, এটা একটি ক্লাসিক অর্থবহ কাহিনী কিন্তু কেভিন তুমি কি জানো অ্যাথেনার জন্য কতটা গুরুত্ববহ হবে। চলো আমরা সংলাপটি পড়ি তার পর নাট্যরূপ দিই।

অবশ্যই, কেভিন বলল একশর মতো কপি এই সংলাপের। আমি জানি তুমি এটাকে পছন্দ করবে। মেলো, অ্যাথেনাকে মেলরোজের একটি ছোট থাই রেস্টুরেন্টে নিল।

তারা তাদের খাবারের অর্ডার দিল এবং স্ক্রিপ্টের দিকে নজর দিল। অ্যাথেনা বলল, আমি প্রথমে নিজেকে হত্যা করব। কেভিন ফিরে আসবে। তুমি চলচ্চিত্র ব্যবসা ঠিক বুঝনি, মেলো বলল। কেভিন খুব বুদ্ধিমান আমার করার কিছু ছিল না কিন্তু কিছু করলাম। তাই আমার খারাপ লাগছে। কোথায়, কখন, অ্যাথেনা বলল। মেলো বলল, আমি তাকে পুনরায় ডাকতে পারি না। তুমি একজন বড় মাপের তারকা, তোমাকে না করতে নেই, এটা প্রয়োজনীয় কিছু নয়।

ক্লডিয়া অ্যাথেনাকে বলল, সবকিছুই তোমার নিজস্ব অ্যাথেনা, তা তোমারও আছে। এটা এক প্রকার বন্ধুত্ব। ক্লডিয়া এটাকে বুঝতে পারলেও বন্ধুত্বের জন্য তাকে খুব সহজে গ্রহণ করল। ক্লডিয়া বলল, স্টিভ স্টেলিংয়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আছে। অ্যাথেনা উচ্চ স্বরে হাসতে লাগল, যা সেখানকার সবাই লক্ষ্য করছিল, তারা সবাই এককথায় অকপটে বিশ্বাস করত, স্টিভ স্টেলিং বিছানায় বড়ই পারদর্শী একজন দামি অভিনেতা এবং একজন মজার মানুষ।

সে সর্বদা তোমার মতো সুন্দর, ক্লডিয়া বলল, মানুষ তার সৌন্দর্যের ভীষণ প্রশংসা করে। অ্যাথেনা না শোনার ভান করল। এটা এক প্রকার কারও কারও অভ্যাস, যারা কোনো কারণ ছাড়াই আমার প্রশংসা করে।

এতেই কি সে একজন বড় মাপের অভিনেতা প্রমাণিত হয়? অ্যাথেনা বিরক্তি সহকারে বলল।

আরে না, তুমি আসলেই একজন বড় মাপের অভিনেত্রী, ক্লডিয়া বলল। তারপরই অ্যাথেনা একটু শান্ত হলো। সে আরও বলল, কিন্তু সে তোমার চাইতে একজন সুখী মানুষ।

সত্যিই? অ্যাথেনা বলল। তা হয়তো ঠিক কিন্তু কিছু দিন সে আমার চাইতে অসুখী জীবনযাপন করেছিল যা আজ আমার মনে পড়ে।

হ্যাঁ, ক্লডিয়া বলল। সে এখন আর ভালো কিছু করতে যাচ্ছে না। কিন্তু সে বুদ্ধিমান, সম্ভবত তার আরো চালাক হওয়া প্রয়োজন। সে যা করতে যাচ্ছে তা সম্পর্কে আমি আগে কিছু জানতাম।

অ্যাথেনা বলল, তাছাড়া আমি তেমন কিছু চাই না।

তুমি আমার না, ক্লডিয়া বলল, কিন্তু তুমি কখনও তোমার প্রতিভা ধরে রাখতে পারবে না।

আমি জানি তুমি মদ পান করতে চাওনি। বজ তোমাকে জোর করে মদ পান করিয়েছে। তা তুমি নিজের মধ্যেই গোপন রেখেছ।

অ্যাথেনা হাসল। আমার গোপনীয়তাই আমার আস্থা। সে বলল, আমার গোপনীয়তার চেয়ে আরো বেশি আস্থাশীল, আরো বেশি রক্ষণশীল আমরা ছবির তারকা, আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ববোধ থাকা উচিত।

প্রত্যেক শুক্রবার সকালে তাদের সাধারণত কোনো কাজ থাকে না, তাই তারা সেদিন একসঙ্গে কেনাকাটার জন্য শপিংমলে যায়।

সে শারীরিক সৌন্দর্যকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য কালো উইগ এবং ঢিলা ব্ল্যাক পরিধান করল। তার চেহারাকে একটু মোটা করার জন্য মেকাপ গ্রহণ করল। তার ঠোঁট একটু মোটা, তারপরেও সুন্দর। সবকিছু মিলে মেকাপ করার পর তাকে বেশি ভালো লাগত ছিল। সে তার চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করল যাতে তাকে আরও বেশি বুদ্ধিমতী মনে হলো। তার গলার স্বর আরও নরম ও মসৃণ হলো।

অ্যাথেনা কিছু কিনল, তারপর সে জিনিসগুলো ক্লডিয়ার ব্যাগে রাখল। এভাবে কেনাকাটা শেষ করার পর তারা দুজনে দুপুরের খাবার খেল। এটা ছিল একটি বেশ বড় রকমের রেস্টুরেন্ট, সেখানে সাধারণত সবাই প্রবেশ করতে পারত না। তাই কেউ-ই তাদের চিনতে পারল না।

প্রতি মাসের দুই সপ্তাহ ক্লডিয়া অ্যাথেনার ম্যালিবুর বাড়িতে সম্পূর্ণভাবে কাটাত। তারা একসঙ্গে সাঁতার কাটত, টেনিস খেলত, আরো অনেক আনন্দপূর্ণ কাজ করত।

ক্লডিয়া অ্যাথেনাকে ম্যাসিলিনার দ্বিতীয় চ্যাপটার পড়ার জন্য আদেশ করল। তখন অ্যাথেনা তাকে চরিত্র কেমন সে ব্যাপারে জানার জন্য জিজ্ঞেস করল। যদিও তখনও সে বড় মাপের তারকা হতে পারেনি। তাই যখন ক্লডিয়া পুনরায় ম্যালিবুতে পৌঁছল তখন অ্যাথেনা তার ছবির কাজে বেশ ব্যস্ত, তাছাড়া অ্যাথেনার ক্যারিয়ার তখন হুমকির মুখে যা হয়েছিল ক্লডিয়ার সূক্ষ্ম ভুলের জন্য।

সর্বদা প্যাসিফিক হোটেলের দুজন নিরাপত্তা প্রহরী অ্যাথেনার বাড়ির গেটে পাহারারত থাকত। আরো দুজন নিরাপত্তা প্রহরী তার বাড়ির বাগানের মধ্যে সর্বদা পাহারারত থাকত।

অ্যাথেনা ক্লডিয়াকে জানাল, আমি তোমাকে মিস করছি সে বলল, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি চলে যাব।

তুমি কেন এত উন্মাদ হচ্ছ? ক্লডিয়া বলল, তুমি সামান্য ভুলের জন্য তোমার জীবনটাকে হুমকির মুখে নিয়ে যাচ্ছ এবং মনে রেখো, আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি না, শোনো, আমি আজ তোমার সঙ্গে থাকব এবং আগামীকাল আমি আমার প্রশিক্ষণ শুরু করব।

অ্যাথেনা হাসল এবং তার কাধ বাকা করে সম্মতি জানাল। তোমার মধ্যে থেকে মাফিয়া চক্রর গন্ধ বের হয়ে আসছে। কারণ তুমি হাজার হলেও ক্লেরিকুজিও পরিবারের একজন সদস্য।

তারা একসঙ্গে মদ পান করল। তারপরও তারা পাশাপাশি বসে আরো কিছু সবুজ জাতীয় পানীয় পান করল।

তুমি আমার মনকে পরিবর্তন করতে পারবে না কারণ আমি অবুঝ শিশু নই, অ্যাথেনা বলল।

এখন তুমি তোমার যাবতীয় কথা আমাকে বলতে পারো, আমি মনে করি আমি তা অবশ্যই বুঝতে পারব।

তারপর সে ক্লডিয়াকে তার বিবাহ সম্পর্কে যাবতীয় কথা বলল। আসলে বজ স্কানেট দীর্ঘদিন আমার অপেক্ষার প্রহর গুনছিল, আমি পরিশেষে জীবনের দিকে তাকিয়ে সাড়া দিতে বাধ্য হলাম। ক্লডিয়া অ্যাথেনার গল্পে কিছু ভুল ধরল। সে বলল, তুমি পুনরায় কিছু গোপন করতে যাচ্ছ। এটা ঠিক না– প্রাণ খুলে বলতে পারো। তাছাড়া তোমার কথা সত্য হলে, আমাকে বলল তোমার শিশুর ঘটনাটা কি?

অ্যাথেনা বলল, তোমাকে আমি বলেছি- তাই সত্য এর চেয়ে আমার কাছে আর কিছু জানার চেষ্টা করো না, কারণ প্রত্যেকেরই নিজস্ব বলে কিছু থাকে। তুমি পারলে ছবি এবং স্টুডিওর ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলাপ করতে পারো। তাছাড়া আমি বর্তমানে কিছুটা হতাশার মধ্যে আছি, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আমি তোমাকে বলার চেষ্টা করব। তবে এতটুকু বলতে পারি তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছ। তাছাড়া এর বাইরে কিছু ঘটেছে তা একান্তই আমার নিজস্ব ব্যাপার। সেদিকে তুমি নাক না গলালে আমি খুবই খুশি। হব।

ঠিক এই মুহূর্তে একজন লোক একটি বিশাল ট্রাঙ্ক নিয়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করল। নিরাপত্তা প্রহরীরা তাকে থামাতে পারেনি। অপর দিকে বাগানের দুজন প্রহরীও ছুটে আসছিল– তার পরেও সে নিরাপত্তা প্রহরীর বাধাকে অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে পড়েছে।

অ্যাথেনা দাঁড়াল, সে ক্লডিয়াকে মৃদু সুরে বলল, এটা বজ, সে তাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিল, এটা তার আসল চেহারা না। সে পাশে তাকিয়ে আরও পাঁচজন লোক দেখল। ক্লডিয়া তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করছিল।

বজ স্কানেট তাদের দিকে তাকিয়েছিল, তার চোখ দিয়ে যেন রক্ত বের হয়ে আসছে। তার চেহারা রোদে পুড়ে তামা হয়ে গেছে। তার দেহটা, ট্রাঙ্ক বহন করার জন্য একটু হেলিয়ে গেছে। সে হেসে বলল, হাই অ্যাথেনা, মদ পান করার জন্য আমাকে দাওয়াত করলে কেমন হতো? অ্যাথেনা একটি হাসি দিল, আমি চাই না আমার জন্য কেউ নেশা জাতীয় কিছু গ্রহণ করুক– তাছাড়া তুমি অনেক পূর্বেই আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছ।

তোমার ধারণা ঠিক না, বজ বলল, আমরা একে-অপরের কাছের মানুষ। আমাদের মধ্যে অনেক গোপন অভিমান আছে। তারপরও তুমি এমনভাবে কথা বললে, তারপর সে কিছুটা হাসল। সে তার দিকে তাকিয়ে থাকল।

একজন নিরাপত্তা প্রহরী বলল, সে আমাদের সাঁতার কাটাতে বাধ্য করেছে, সে আমাদের হয়রানি করেছে, এখন আমরা তাকে হাতকড়া পরাব।

না, অ্যাথেনা বলল, তার গাড়ির কাছে যাও।

তার পরও বজ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তার শরীর অবশ হয়ে এলো। অ্যাথেনা বলল, আমি তোমাকে দেখে নেব। তারপর সে চলে গেল।

সত্যিই তুমি সুপুরুষ। তা না হলে তুমি চার জন নিরাপত্তা প্রহরীকে অতিক্রম করে আসতে পারতে না, ক্লডিয়া বলল। আমি তোমাকে বাবা দিচ্ছি।

ক্লডিয়া আমি আগামীকাল আমার ভাই ক্রসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ভেগাসে যাচ্ছি। সে অনেক সুদর্শন লোকজনকে চেনে। আমি নিশ্চিত যে, সে আমাকে সাহায্য করতে পারবে। তাছাড়া সে আমাকে সাহায্য করা ব্যতীত সেখান থেকে আমাকে আসতেও দেবে না। সে কেন সাহায্য করবে, অ্যাথেনা বলল, এবং কিভাবে? সে ও কি মাফিয়া চক্রের কেউ?

ক্লডিয়া জোর দিয়ে বলল, অবশ্যই না, সে আমাকে সাহায্য করবে, কারণ সে আমাকে ভালোবাসে। সে বেশ গর্বের সাথে কথাটা বলল, আমি একমাত্র মানুষ যাকে সে পিতার পরেই বেশি ভালোবাসে।

অ্যাথেনা তার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। তোমার ভাই তোমার পেছনে ছায়ার মতো লেগে আছে। তুমি ছবি ব্যবসার জন্য খুবই উঁচু মানের একজন মেয়ে, আর এ জন্য তুমি অনেকের সঙ্গে রাত্রি যাপনও করেছ, তুমি তো অভিনেত্রী নও, তুমি একজন সাধারণ ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সেটা কোনো ব্যাপার নয়, ক্লডিয়া বলল, আমি ভেগাসে যাচ্ছি, ছবি শুটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি ফিরব না।

রাতটা অ্যাথেনা ডেস্কের সামনে বসে সাগর, চন্দ্রবিহীন কালো রাত্রি দেখে কাটাল। সে সারারাত ক্লডিয়ার চিন্তা-ভাবনার প্রতি অনড় থাকল– সে ভাবল ক্রস তাকে হয়তো সাহায্য করতে পারে, কিন্তু কিভাবে তাকে ভালোবাসে?

যখন ক্লডিয়া স্কিপি ডিরির সঙ্গে বিকেলে বসে অ্যাথেনার গল্প বলছিল, তখন তারা সবাই নিশুপ ছিল। তারপর ডিরি বলল। কিছুদিনের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে আমি দেখেছি, সে অনেক দিন বজ স্কানেটের সঙ্গে জীবনযাপন করেছে। সে যদি আজ বজকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সে কিভাবে তার শিশুকে পেল।

ক্লডিয়া বলল, আমি আমার ভাইয়ের কাছে ভেগাসে যাচ্ছি। সবকিছু সম্পর্কে তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। সে একটি সমাধান বের করতে পারবে।

আমি ভাবতে পারি না সে কিভাবে বজ স্কানেটকে প্রত্যাখ্যান করল, ডিরি বলল। আমরা অবশ্যই ইতিমধ্যে তা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের জানার অন্য কোনো সুযোগ নেই।

সে জানত, একমাত্র ক্রস ব্যাপারটাকে পরিষ্কার করতে পারে। কারণ ক্রস দীর্ঘদিন তার সঙ্গে ছবি ব্যবসায় জড়িত ছিল। তাছাড়া ক্রস তার সঙ্গে আরো ব্যাপারে জড়িত ছিল, তাই ক্রসই তার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে। আমি মনে করি ক্রস সব ব্যাপার জানলেও তোমার কাছেও সবকিছু পরিষ্কার করে বলবে না।

স্কিপি ডিরি কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়ার পর বলল, আমিও তোমার সঙ্গে যাব।

ডিরি তার আধা মিলিয়ন ডলার মেরে দেবার পরও ক্লডিয়া তাকে ভালোবেসেছিল। সে ডিরিকে ভালোবাসে তার দোষ ও দুর্নীতির জন্য। স্কিপি ডিরি এমন একজন ব্যক্তি যার মধ্যে একজন প্রযোজক হিসেবে সব গুণ বিদ্যমান।

কয়েক বছর আগে তারা একত্রে একটা ছবিতে কাজ করছিল। এমনকি ডিরি হলিউডের একজন খুবই সফল প্রযোজক। এক সময় চলচ্চিত্রের একজন তারকা ডিরির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার গর্ব করেছিল। এটা শুনে সে তার কাঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল।

ক্লডিয়ার আরো অনেক কিছু মনে পড়ল। তারা দুজনেই গাড়ি করে যাচ্ছিল, হঠাৎ ক্লডিয়া একটি সুন্দর ব্লাউজ গাড়ির জানালায় দেখল। সে কখনও এমন ব্লাউজ আগে দেখেনি।

কিন্তু ক্লডিয়া সে ব্যাপারে ডিরিকে কিছু বলল না। তারপরও ডিরি ক্লডিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু সেও তাকে সে ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করল না।

যখন তারা স্থানীয় একটি দোকানে গেল দোকানের কর্মচারী তাদেরকে পাঁচশত ডলার মূল্যের একটি ব্লাউজ দেখাল, ক্লডিয়া বলল, একটি ব্লাউজ পাঁচশ ডলার?

আমাকে হাসাবেন না।

কর্মচারী বলল, এটা খুব দামি কাপড়ের এবং হাতে তৈরি। তাছাড়া এ ধরনের ব্লাউজ পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না, একমাত্র আমরাই এটা সরবরাহ করি। তাছাড়া এটার দামও তেমন বেশি বলে আমরা মনে করি না।

ডিরি হাসছিল, সে বলল, ক্লডিয়া এটা কেনার প্রয়োজন নেই। তুমি কি জান দুপুরের খাবার খেতে কত টাকা লাগবে। তাছাড়া তুমি সর্বদা এটা ৩০ ডলার দিয়ে কিনতে পারবে এবং বাকি টাকা তুমি অন্য কাজে ব্যয় করতে পারবে।

ক্লডিয়া ক্লার্কের দিকে তাকিয়ে হাসল, আমাকে শেষ বারের মতো বলুন এটার দাম কমাতে পারবেন কি-না।

ক্লার্ক বলল, ঠিক আছে আপনারা আসতে পারেন।

তারা দোকান থেকে বের হয়ে এলো যেহেতু তারা দোকান থেকে বের হয়ে আসছিল, ক্লার্ক পুনরায় তাদের পেছন থেকে ডাকল, তখন ক্লডিয়া হেসে বলল, আসি।

তারপর তারা গাড়ি করে যেতে শুরু করল। স্কিপি ডিরি বলল, তুমি ভাগ্যবতী, তুমি এটা এমনি এমনি পেয়ে গেলে।

পরের দিন যখন ক্লডিয়া কাজের জন্য স্টুডিওতে পৌঁছল, তার টেবিলে উপহারের বক্স দেখল। সে বক্সটি খুলে দেখল সেখানে এক ডজন ব্লাউজ এবং যা স্কিপি ডিরি পাঠিয়েছে।

ক্লডিয়া ভাবল, দোকানে ক্লার্ক আর ডিরি আমাকে বোকা বানিয়েছে। সে বক্সের মধ্যে আরও একটি সুন্দর পোশাক এবং টেনিস ব্যাট দেখতে পেল।

সেখানে আরো দুজন প্রযোজক তার সঙ্গে রাতের খাবার খেল। তারপর তারা সকলেই মদ পান করল। ক্লডিয়া ভাবল হয়তো ডিরি তার সঙ্গে মজা করছে, কিন্তু যখন ডিরি দুজন প্রযোজককে বলল, আমাকে প্রতি বছর আমার সন্তানের জন্য পাঁচ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করতে হয়। তারপরও আমি ভাবি হয়তো আমি তাদের ভরণপোষণ করতে পারব না।

ক্লডিয়া হঠাৎ হতাশ হয়ে গেল, ডিরি তখন তাকে বলল, আমি সৎ, সবাই তা ভাবে কিন্তু কেউই চিৎকার করে বলতে পারে না।

স্কিপি ডিরি তার ছবি ব্যবসার বাকি টাকা পরিশোধ করল। একজন রাজমিস্ত্রির ছেলে হিসেবে এই প্রথম কেউ হলিউডের ছবি ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করল।

সে কঠোর পরিশ্রমী, সে ছোট ঘরের ছেলে হলেও ছবির জগতের সবকিছুই বুঝত। সে সব কাজ যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গ সম্পন্ন করত। কিভাবে পরিচালক, তারকার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়, তাও সে আত্মস্থ করেছিল। তার ব্যবহার ছিল খুবই ভালো। সে ছবির জগতের সঙ্গে জড়িত সকলের সঙ্গেই ভালো আচরণ করত। সে সবকিছু বুদ্ধিমত্তা আর ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করত। ছবির ব্যবসার জন্য তার মধ্যে কোনো কিছুর ঘাটতি ছিল না। সে ছবির কাজের জন্য বিভিন্নভাবে তার লগ্নি করা টাকাকে বিভিন্ন খাত অনুযায়ী ভাগ করত। ফলে সে একজন ভালো প্রযোজক হতে পেরেছিল। সে ছবির স্ক্রিপ্টের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ এবং চিত্র গ্রহণের জন্য সত্তর শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করেছিল।

সে যত্ন করে সব কাজ করত। সে নিজেই তার প্রয়োজনে সকল স্ক্রিপ্ট পড়ত। সে চরিত্র ও তারকা অনুযায়ী যাকে যে চরিত্র দেওয়ার দরকার তাকে সেই চরিত্র দিত। তাছাড়া সে ছবির প্রয়োজনে টাকা খরচ করেও বিভিন্ন লোকেশনে তার ছবির দৃশ্য চিত্রায়ণ করত। সে কখনো কোনো কাজে বিন্দু পরিমাণ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করত না। আর এত কিছুর বিনিময়েই সে একজন সফল তারকা হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছিল। ছবি তৈরি করার সময় সে বারবার তার টাকা ওঠানোর জন্য খুব ব্যস্ত থাকত। তার চিন্তা-ভাবনা থাকত যে করেই হোক তার ছবিকে সাফল্য পেতেই হবে।

তাছাড়া ছবির জন্য বিজ্ঞাপন ব্যয় বেশি করত। যাতে করে ছবি শেষ হওয়ার আগেই দর্শকদের মধ্যে ছবির প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।

তাছাড়া অনেক সময় ছবির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, প্রতিনিধিদের ক্রিসমাস কার্ড ও বিভিন্ন উপহার পাঠাত।

তাছাড়া সে সাড়া ফেলানোর জন্য আগে থেকেই পত্রিকা, ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন দিত। আর এই সব কাজে ক্লডিয়া তাকে সর্বাত্মক সাহায্য করত। ক্লডিয়া সঙ্গে সঙ্গে তা শুধরিয়ে দিত। আর এই সব কারণেই শত কিছুর পরেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। যখন ক্লডিয়া তাকে ভুল বুঝত, তখন ডিরি নিশ্চুপ থাকত এবং ভুল বোঝার চেষ্টা করত। কখনোই ক্লডিয়ার প্রতি রাগ করত না সে।

স্কিপি ডিরি প্রায় বলত, আমি যখন একজন পরিপূর্ণ মানুষ হব তার পরেই বিয়ে করব। কিন্তু সে ভালোবাসার প্রতি যথেষ্ট আসক্ত ছিল।

কিন্তু ডিরি সত্যিই ক্লডিয়াকে ভালোবাসত। যখন সে ক্ষমতাবান প্রযোজক ছিল তার ছবির কাজ বড় বড় তারকাদের নিয়ে করত। সে প্রায় ছবির তারকা, পরিচালক ও অন্যান্য কলাকৌশলীদের নিয়ে প্রায়ই মিটিং করত। সে এখন আস্তে আস্তে ভাটির দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাই আর তার কাজের প্রতি তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বর্তমানে সে তার সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখী জীবন করার চেষ্টা করছে।

স্কিপি ডিরি সমস্ত সফল প্রযোজকের মতো খুবই ব্যস্ত। তার প্রযোজিত ছবিগুলো দেখাশোনার জন্য, অর্থ সংগ্রহ ও প্রকল্প বাড়ানোর জন্য সমগ্র বিশ্ব জুড়ে তাকে ভ্রমণে যেতে হয়। অনেক সুন্দরী, উচ্ছল নারীরা তার সাথে যোগাযোগ করে বন্ধুত্ব করতে চায়। কিন্তু সে এখনো তার স্ত্রীকে ভালোবাসে।

একদিন এক বালিকা তার কাছে একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসে বলল, এটা একটি খ্রিস্টিও ভালো কাহিনী। সে ছিল খুবই প্রতিভাধর, সে বলল–এটা একটা কালো ছবি, এখানেই এক যুবক কবির প্রতি ভালোবাসায় আসক্ত হয় এক নারী। পরে সে স্বামীকে হত্যা করে কবির সঙ্গে চলে যেতে চায়।

স্কিপি ডি বলল, এই ছবি করার জন্য একটি আলাদা স্টুডিও ভাড়া করতে হবে। খ্রিস্টকে এই চরিত্রে অভিনয় করে বাস্তবিকতা ফুটিয়ে তুলতে হবে।

সে তার সমস্ত অর্থ শেষে ফিরিয়ে আনল। সব কিছু স্বপ্নের মতো সম্পন্ন। হলো। খিস্ট তার চরিত্রটিতে ভালোভাবে অভিনয় করল। ডি ছবিটা যথাযথভাবে প্রযোজনা করল। এটা বাজেটের নব্বই শতাংশেই পর্দায় পাঠানো সম্ভব হলো।

সেই সময় ডি কখনো তার স্ত্রীর প্রতি অবিশ্বস্ত হতে পারছিল না। শুধু একটা রাত ছাড়া যখন সে লন্ডনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজনে ছিল।

তখন সে একটা খুব স্লিম ইংলিশ মেয়ের ভালোবাসায় আসক্ত হয়েছিল।

এই ভালোবাসা তার কাজে সাহায্য করেছিল। ছবিটি আর্থিক সাফল্য এনেছিল। খিস্টি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরস্কার পেল।

স্কিপি ডিবি পরে ক্লডিয়াকে বলল, হ্যাপিলি ইভার আফটার ছবিটি কোথায় শেষ হওয়া উচিত ছিল। দেখল তার আসল আত্মমর্যাদা। এখন সে তার সত্য মূল্য অনুভব করল। সত্য হলো সে এখন একজন পরিপূর্ণ ব্যস্ত তারকা। সে এখন পরিচালকের পাঠানো স্ক্রিপ্ট পায়।

অধিক ভালো কিছু খোঁজার জন্য ডি তাকে পরামর্শ দিল। পরের ছবিটা হবে জটিল। তার জীবন সম্পর্কে সে কখনো উদ্বিগ্ন ছিল না। কিন্তু পুরস্কার। পাওয়ার কয়েক মাস পর সম্মানীয় অভিনেত্রী হিসেবে তাকে সর্বশীর্ষ স্থানীয় পার্টিতে দাওয়াত করল। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ সারিতে তাকে দেখা গেল। সে সদ্য যুবতী মেয়েটির সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে গেল। খেয়ালখুশিভাবে পনের বছরের জুনিয়র অভিনেতার সাথে অন্তরঙ্গভাবে সে বাইরে চলে যেত। চিত্র সাংবাদিকরা তার বিবরণ নিল, নারীবাদীরা তা নিয়ে খুব আনন্দিত হলো।

স্কিপি ডিরি বাহ্যিকভাবে এটাকে খুব ভালোভাবে নিল। সে সমস্ত বিষয়টা বুঝল।

সর্বোপরি কেন সে নিজে নিজেই যুবতী মেয়েটাকে প্যাঁচের মধ্যে রাখল? আবার কেন সে তার অসাধারণ প্রচেষ্টা খ্রিস্টির ক্যারিয়ারে যোগ করবে? বিশেষ করে, সে আসলে তার কাছে তার এক যুবক প্রেমিকের জন্য চরিত্রটা চেয়েছিল। তার জন্য স্ক্রিপ্ট খোঁজা বন্ধ করল। সে অন্য প্রযোজক, পরিচালক, স্টুডিও প্রধানদের সাথে তার জন্য প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দিল। তারা বয়স্ক লোক হিসেবে খ্রিস্টিকে কোনো প্রকার সুযোগ দিল না।

খ্রিস্টি প্রধান চরিত্র হিসেবে আরো দুইটি ছবি নির্মাণ করল। আর দুটি ছবিই ফ্লপ করল কারণ তার চরিত্র ছিল ভুলে ভরা।

আর সে কারণেই সে পুরস্কার থেকে যা পেয়েছিল তা ব্যবসায়ে ব্যয় করল।

তিন বছরের মধ্যে সে তৃতীয় পর্যায়ে চলে এলো।

এই সময়ে সে একজন লোকের সাথে ভালোবাসায় আসক্ত হলো। লোকটার ইচ্ছে ছিল প্রযোজক হওয়ার। বাস্তবিক একেবারে তার স্বামীর মতো, কিন্তু তার মূলধন দরকার। তাই খ্রিস্টি তাকে ডিভোর্স দিল। বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি এবং বছরে পাঁচ লাখ ডলার খোরপোশ হিসেবে পেল। তার আইনজীবী ইউরোপে স্কিপির সম্পদ সম্পর্কে কোনো খোঁজ পেল না। অতএব, তারা বিচ্ছিন্ন বন্ধু। সাত বছর পর খ্রিস্টি এক দুর্ঘটনায় মারা গেল। যদিও সে ডির খ্রিসমাস কার্ডের তালিকায় আছে, আসলে সে তার বিখ্যাত লাইফ ইজ টু শর্ট-এর তালিকায়ও আছে। কাজেই ক্লডিয়া ডি লিনা ডির ভালোবাসায় আচ্ছন্ন ছিল। কারণ সত্য অন্যের কাছে প্রকাশ করা, তার জীবনধারণ তার জীবনের জন্য। তাই অশালীনভাবে সে তার আত্মস্বার্থে মগ্ন হলো। তার ক্ষমতার কারণে তুমি তাকে দেখো, আর তোমাকে তার বন্ধু বলে মানে, তোয়াক্কা না করে তুমি জানলে সে কখনো বন্ধুত্বের মতো কাজ করতে পারে না। সে ছিল যেমন আকর্ষণীয় তেমন ভণ্ড। আর অন্যদিকে ডি ছিল একজন বড় ধৈর্যশীল। আর সে ছিল সেই লোক, সে জেনেছিল কে ক্রসের সাথে বুদ্ধিমত্তা মানিয়ে নিতে পারে। তারা পরবর্তী প্লেনে ভেগাসে গেল।

০৬. ক্রসের একুশ বছর

পর্ব– চার

ক্রস ডি লিনা
দ্য ক্লেরিকুজিও

০৬.

ক্রসের একুশ বছর পূর্ণ হলো। পিপি ডি লিনা ক্রসের অদৃষ্ট নিয়ে অস্থির এছিল। একজন মানুষের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সে তার জীবনধারা গড়ে তুলবে। সে অবশ্যই উপার্জন করবে, আর তার শিশুদের ভরণ-পোষণ করবে। একজন লোকের অবশ্যই নিশ্চিত একটি শক্তির উৎস এই পৃথিবীতে থাকতে হবে। এটা করতে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করতে হয়। এভাবেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ক্লেরিকুজিও পরিবারে ক্রস তার জায়গা করে নিয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবে প্রয়োজন ছিল তার অস্তিত্ব গড়ে তুলতে।

পরিবারে তার ভালো সম্মান ছিল। পিপি সম্পর্কে ডেন্টির বাজে মন্তব্যের বিরুদ্ধে সম্মানের সাথে উত্তর দিয়ে ডন বলল, আমি তা জানি না। তুমিও তা জানো না। কোনো লোকই তা জানেন না। তুমি কোথায় পেলে এরকম বাজে কথা? উত্তরটা ডন আনন্দের সাথে ব্যাখ্যা করল। তরতাজা যুবক শ্রেণীর একজন মানুষ খুব কৌশলী ও প্রজ্ঞাবান হতে হবে, আর এতে তার পিতার সম্মান বাড়বে। আমরা অবশ্যই সেই বালককে সুযোগ দেব। এর সব কিছুই পিপির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। তাই সে বুঝল, সময়টা উপযুক্ত।

সে ক্রসকে প্রস্তুত করতে শুরু করল। সে তাকে সংগ্রহ করার কাজে নিয়োগ করে পাঠাল। আর এটা ছিল কঠিন কাজ। সে পরিবারের পুরনো ইতিহাস ও কিভাবে কাজ সমাধা করা হয়েছিল তা আলোচনা করল। কোনো কল্পনা নয় বলে সে জোর দিল। কিন্তু কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইলে, তোমাকে অবশ্যই চূড়ান্ত পরিকল্পনা দাঁড় করাতে হবে। সরল হলো চূড়ান্ত সরলতা। তুমি একটা ছোট ভৌগোলিক এলাকা নির্দিষ্ট করে সেখানে তোমার লক্ষ্য ঠিক করো। প্রথমে সন্দেহভাজন লোকদের ওপর নজর দাও, পরে গাড়ি এবং মানুষকে আঘাত করো। তারপর সব চলমান গাড়ি ব্লক করে ফেল, শেষে ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে যাও, যাতে তৎক্ষণাৎ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয়। এটা সোজা। কল্পনা করো, তুমি কল্পনাকে জয় করেছ। তুমি যে কোনো বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে পারো কিন্তু এটাকে ফিরে পেতে তোমাকে সঠিক পরিকল্পনায় অবশ্যই এগোতে হবে। অনিবার্যভাবে হলে– তুমি শুধু কল্পনার আশ্রয় নিতে পারো।

এমনকি সে নিশ্চিত নীতিমালার গোপন কথা ক্রসকে বলল। আক্রান্ত ব্যক্তি অদৃশ্য হলে সম্প্রদায় টিকে যাবে এটা কল্পনা মাত্র। শরীরটা পাওয়া গেলে একটা নিশ্চয়তা আছে। তা কিন্তু সোজা।

পিপি ক্লেরিকুজিও পরিবারের ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্রসকে শোনাল। সান্তাডিও পরিবারের সাথে তাদের একটা বড় যুদ্ধ হয়েছিল। যার ফলে তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পিপি ঐ যুদ্ধে তার জড়িত হওয়ার বিষয়ে কিছুই বলল না। বাস্তবিক যুদ্ধটা ছিল দুর্লভ ঘটনা। বরং সে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটির প্রশংসা করেছিল। কিন্তু ডন ডোমেনিকো সবার চেয়ে বেশি প্রশংসা করেছিল তার দূরদর্শিতার জন্য।

ক্লেরিকুজিও অনেক এলাকা জালের মতো সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর বেশিরভাগই খেলার মাধ্যমে হয়েছে। সব ধরনের জুয়া খেলা এরা নিয়ন্ত্রণ করে; আর অবৈধ জুয়াখেলা আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় আমেরিকাবাসীদের জুয়াখেলার ওপর এদের খুব সূক্ষ্ম প্রভাব রয়েছে। বাজি ধরার খেলায়ও এদের খুব প্রভাব আছে। নাভানায় শুধু তাদের বৈধতা আছে, বাকি সমগ্র দেশে তারা অবৈধ। এই পরিবারটির খাজ কাটা মেশিনের কারখানা আছে, ডাইস ও কার্ড তৈরি করে এরা লাভবান হয়, চীনা পণ্য সামগ্রী ও রৌপ্য সামগ্রী সরবরাহ করে, জুয়াখেলার হোটেলের জন্য লন্ড্রি আছে। জুয়া খেলা তাদের সাম্রাজ্যের বড় রত্ন আর সমগ্র দেশের প্রত্যেক রাজ্যে বৈধভাবে জুয়াখেলায় আগ্রহী করতে জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়তে তারা ছোটাছুটি করে।

কেন্দ্রীয় আইনে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ জুয়াখেলা এখন ক্লেরিকুজিও পরিবারের দ্য হোলি গ্রেইল। শুধু জুয়াখেলা ও লটারি নয়, বাজি ধরার খেলা যেমন- বেসবল, ফুটবল, বাস্কেট বল ও অন্যান্য। আমেরিকায় খেলা হলো। পবিত্র। আরো একদা জুয়াখেলা বৈধতা দেওয়া হয়, এতে পবিত্রতা জুয়াখেলার ওপর আবর্তিত হয়। লাভও হয় প্রচুর।

জর্জিও যার কোম্পানি কিছু রাষ্ট্রে লটারির আয়োজন করত, পরিবারকে দেয়া হতো প্রত্যাশিত সংখ্যার হিসাব। কমপক্ষে দুই বিলিয়ন ডলারের সুপার বৌল বাজি হতো সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে, এটার বেশিরভাগই অবৈধ। ভেগাসে খেলার বই, বৈধ বাজি ধরা একটাতেই পঞ্চাশ মিলিয়নের ওপরে উঠে যায়। ওয়ার্ল্ড সিরিজে যেখানে অনেক খেলাই নির্ভর করে, এতে সর্বমোট আয় হয় প্রায় কয়েক বিলিয়ন। বাস্কেট বল খুব ছোট খেলা, কিন্তু অনেক নিষ্পত্তিমূলক খেলায় আসবে আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার। আর মৌসুমে প্রত্যেক দিনের বাজির হিসাব করা যায় না।

একদা বৈধভাবে সুপার বৌল খেলা ছাড়াও সহজভাবেই দুই বার বা তিন বার বিশেষ লটারি ও যৌথ বাজির ব্যবস্থা করা যেত। যা বেড়ে দশ বারে উন্নত হতো। আর এমনকি প্রতিদিন অবশ্যই নেট রাজস্ব আসত এক বিলিয়ন ডলার। সর্বমোট একশ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারত। আরো ভালো দিক হলো, কোনো উৎপাদনের ব্যয় ছিল না, শুধু বাজারজাতকরণ ও প্রশাসনের ব্যয় ছিল। অনেক অর্থ ক্লেরিকুজিও পরিবারের জন্য বয়ে আনত, এটার লাভ বছরে কমপক্ষে পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

আর ক্লেরিকুজিও পরিবারের বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আর বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য ছিল প্রচুর সুশৃঙ্খলিত বাহিনী। জর্জিও বড় বড় খেলার সার্বিক দায়িত্ব ও পুরস্কার ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল। জুয়া খেলা চুম্বকের মতো বিরাট স্বর্ণখনি হতে অর্থ তুলে আনত, এটার টার্গেটে ছিল আমেরিকার জনগণ।

আর তাই জুয়াখেলায় কম ঝুঁকি ও বিরাট লাভের সম্ভাবনা। বৈধ জুয়াখেলা চালু করতে খরচ ছিল কম এবং এমনকি বড় ঝুঁকিকে বিবেচনা করা হতো।

তাছাড়া ড্রাগের ব্যবসা থেকে প্রচুর আয় করত কিন্তু এটা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারা ইউরোপীয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করত, রাজনৈতিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করত ও আইনগত সমস্যা মোকাবেলা করত। তাদের ড্রাগ বৈধভাবে খুবই লাভজনক ছিল। তাদের কালোটাকা ইউরোপের কয়েকটি ব্যাংকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি ব্যাংকে রাখত। আইনের কাঠামো সব ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু পরে, পিপি সতর্কভাবে বলল, এত কিছু সত্ত্বেও তাদের বিভিন্ন রকম ঝুঁকি নিতে হতো, একটা বিয়োগাত্মক মারামারি ঘটেছিল। এই পরিবার উচ্চ বিচক্ষণতা ও চরম হিংস্রতার সাথে সবকিছু মোকাবেলা করেছিল। ভালো জীবন যাপন ও দৈনন্দিন রোজগারের নিমিত্ত তারা এগুলো করছিল।

ক্লেরিকুজিও পরিবারের অধিক পুরস্কৃত রাজনৈতিক একজন সম্পদ নেভানার গভর্নর ওয়াল্টার ওয়াভেন। তার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। লম্বা এবং রাখালের হ্যাট পরলেও তার পোশাক ছিল খুবই সুসজ্জিত। সে একজন সুদর্শন পুরুষ, যদিও বিয়ে করেছে তবুও নারীর প্রতি তার আসক্তি তীব্র। তাছাড়া সে ভালো খায় এবং বেশ পান করে। সে বাজি খেলা পছন্দ করে ও নিয়মিত জুয়াড়ি হিসেবে সে সতেজ। জনগণের অনুভূতির প্রতি তার আগ্রহ ছিল এবং প্রেমের জন্য সে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল। আর সে কারণেই, আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের  ওপর নির্ভর করত আর জাদু হোটেল তার চাহিদা পূর্ণ করত।

গ্রোনিভেল্ট ওয়াভেনের বিশেষ উপহার গ্রহণ করল। আর তার আর্থিক ভিত্তি মজবুত করে দিল। ফলে ওয়াভেন রাজনৈতিক সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সক্ষম হয়। ওয়াভেন নেভানার গভর্নর হয়ে ছুটির দিন উপভোগ করতে চাইলে গ্রোনিভেল্ট তাকে পুরস্কার হিসেবে একটা ভিলা তাকে দিয়েছিল।

ভিলা গ্রেনিভেল্টের বিরাট প্রত্যাশা ছিল। গ্রোনিভেল্ট সতুর ভেগাসে ফিরে আসে। সে সময় তখনো এটা ছিল মূলত পশ্চিমা রাখালের জুয়াখেলার শহর। আর সে চেষ্টা করছিল জুয়াখেলা ও জুয়াড়িদের নিয়ে যেমন বড় বিজ্ঞানীরা। চেষ্টা করে একটা কীট-পতঙ্গের বিবর্তনের গুরুত্ব নিয়ে। একটা বড় রহস্য ছিল, যেসব ধনী লোকদের অর্থের সমস্যা নেই তারা কেন জুয়া খেলে সময় নষ্ট করে, তা কখনো সমাধান হবে না। গ্রোনিভেল্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা এটা করবে তাদের নিজে ভাগ্য ভোলার জন্য, কিন্তু যে কেণো কিছুর চেয়ে বেশি এটা কমতির দিকে নিয়ে যায়।

সে কারণেই সাতটা বিলাসবহুল ভিলা ও একটা রত্ন খচিত জুয়াখেলার কামরা জানাদু হোটেলের মাঠে তৈরি করার জন্য গ্রোনিভেল্ট একশত মিলিয়ন ব্যয় করল। ঐ ভিলাগুলোতে রয়েছে ছোট ছোট প্যালেস, প্রত্যেকটাতে ছয় জন একসাথে ঘুমাতে পারবে। এ রকম ছয়টা প্যালেস আছে, শুধু ফার্নিচার দিয়ে সাজানো নয় আসবাবপত্র, ছিল অতি পর্যাপ্তও হাতে বোনা গালিচা, মার্বেলের মেঝে, সোনলি গোসলখানা, দেয়ালে দামি কাপড়, খাবার কামরা ও রান্নাঘরে হোটেলের কর্মচারী। অতি সাম্প্রতিককালের অডিও ভিজুয়াল সজ্জিত কামরা থিয়েটারের দিকে ঘুরানো।

বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টিত অঞ্চলে একটি বাগানবাড়ি ছিল যার নাম প্রিয়াল। সেখানে যাবতীয় গোপন আলাপ-আলোচনা করা হতো। তবে আলোচনার বিষয়ের তেমন কোনো দিক ছিল না।

অবশ্যই সেখানে অনেক কিছু ছিল। এখানে অনেকেই তাদের বালক বন্ধু কিংবা সস্ত্রীক আসত। সেখানে তারা জুয়া খেলত আরো অনেক আনন্দ-ফুর্তি করার মতো অনেক কাজ করত। সেখানে প্রতিনিয়ত শত শত মিলিয়ন ডলার নিমিষেই উড়ত। অনেক সময় যারা একাকী থাকে তারাও কিছুটা আনন্দ পাওয়ার জন্য এখানে আসত। আর এই কারণেই গ্রোনিভেল্ট বাড়িটাকে আরো সুন্দর করেছিল।

গভর্নর ওয়ালাটার ওভেন ছিলেন তাদের মধ্যকার একজন মানুষ যে গ্লোনিভেল্টাকে অনুসরণ করে শত শত মিলিয়ন ডলার ওড়াত। সে জুয়া খেলত এবং গোপনে টাকা গ্রোনিভেল্টকে যোগান দিত, যাতে গ্রোনিভেল্ট তার ভবিষ্যতের পথকে আরও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছিল।

ওভেল হটেলে বিশ্রামের জন্য আসত; জানাদুতে গলফ খেলত এবং মদ পান করে গ্রোনিভেল্টকে আরো বেশি আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করত। গ্রোনিভেল্ট গভর্নরের সঙ্গে বেশ সময় দিয়ে খেলত। গত বিশ বছর সে তাকে কোনো প্রকার প্রশ্ন করেনি। পাশাপাশি সে গ্রোনিভেল্টকে বিভিন্ন ব্যবসা করতে সাহায্য করত। অনেক সময় ব্যবসা সংক্রান্ত জটিল বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করতে। তাছাড়া রাজনীতির সহচর হিসাবে গ্রোনিভেল্ট বিভিন্ন সরকারি আমলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার সাহায্য পেত। সব মিলে গভর্নরের সাহায্যের হাত অনেক বড়। বলতে গেলে গ্রোনিভেল্টের  বর্তমান অবস্থানের জন্য গভর্নর অনেকটা বেশি ফলপ্রসূ।

গ্রোনিভেল্ট ছিল তার গোপন আত্মা। তার সবকিছুই গভর্নর জানত। সে। যে আগামী দিনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছে তাতে তার অবদান থাকবে অনেক বেশি। কিন্তু ফোর্ট ফায়েলর ছিল খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক, যা গ্রোনিভেল্ট মাথায় রাখত। সে যে খুব ক্ষমতাবান তাও গ্রোনিভেল্ট আগে থেকেই জানত। এই ক্ষমতাধর লোকটি ছিল গভর্নরের বড় মেয়ের প্রেমিকা, যার বয়স ছিল আঠার বছর।

গভর্নর যাকে বিয়ে করেছিল সে ছিল খুবই বুদ্ধিমতী, দেখতে খুব সুন্দর, খুবই সহজাত এবং তার ছিল রাজনীতি জ্ঞান। যদিও সে কঠোর পরিশ্রম করত। তাদের ছিল তিনটি ছেলেমেয়ে। পরিবারটি ছিল রাজনীতিকেন্দ্রিক যা গভর্নরের জন্য ছিল খুবই ভালোবাসা, বড় ছেলে বারকেমির প্রতি ছিল বেশি মনোযোগী, তারা তাদের বাবার চাইতে মাকে বেশি পছন্দ করত।

রাজনীতির পরিবার থেকে নিজেকে মুক্ত করা খুবই কঠিন। মারসি মুক্ত মনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছিল। যার প্রথম শর্তই ছিল রাজনীতি পরিত্যাগ করা। যার বাসনা ছিল নতুন সঙ্গীত এবং মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি। একজন ভালো মানুষের মেয়ে হিসেবে যৌনতার প্রতি তার ছিল গভীর আকর্ষণ। তার নিষ্পপতা তার সহজাত প্রবৃত্তি খুব সহজেই সবার মধ্যে বাসনার প্রজ্বলিত আলো ছড়িয়ে দিল। সে সবকিছুর মধ্যে ভালোবাসার শৈল্পিক রূপ ছড়িয়ে বেশ আকর্ষণীয় মনোভাব অনুভব করে। তবে সাধারণভাবে কবি মনোভাব এবং সঙ্গীত মনোভাবসম্পন্ন লোকদের বেশি ভালোবাসত। সে প্রকৃতপক্ষে তাদেরই বেশি ভালোবাসত, যাদেরকে প্রকৃতপক্ষে চিনত।

তার নামছিল ফ্রি-উটাসকি এবং যে ছিল কলেজের উপযুক্ত কৌশলী মানুষ। সে খুব ভালোমতো মদপান করতে পারত। সে পড়াশোনার পাশাপাশি অটো কারখানায় কাজ করত এবং যার পরিবার ছিল খুবই প্রভাবশালী।

সাময়িক সময়কাজ করলেও সে সব কিছুই খুব অসাধারণভাবে করত। তার সবকিছুর মধ্যেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যেত।

মারসি এবং থিও দু বছর আলাদা জীবনযাপন করল। তারপর সে থিওকে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাল। তার বাবার সঙ্গে মিলিত হয়ে সে বেশ আনন্দ লাভ করল। সে তাকে বলল তার বাবা খুবই সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ।

যদিও থিও কিছুক্ষণ নীরব ছিল, তার পরও বাবা, মা তার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ জুড়েছিল। তারা চেষ্টা করল তার সঙ্গে আরো বেশি মজা করতে। তারা তাদের মেয়ের পছন্দকে সম্মান করল। তারা ভাবল মেয়েটি শেষ পর্যন্ত ভালো কিছুই করেছে।

তারপর বাবা-মার সম্মতিক্রমে, মারসি এবং থিও একসঙ্গে বসবাস শুরু করল। তার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিল তাদের গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর তাদের বিয়ে দেবে। থিও নাটকের ওপর পড়াশোনা করত আর মারসি সঙ্গীত ও সাহিত্যের ওপর।

কিন্তু যুবকরা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। মারসি বর্তমানে তার কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী। ইতিমধ্যে সে একই শ্রেণীর এক ছাত্রকে ভালোবেসে ফেলল, যে থিওর পিতা-মাতার চাইতেও অনেক বেশি সামাজিক এবং ধনী ছিল। সে থিওকে একজন শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইল। সে দেখল একই সময়ে দুইজন প্রেমিককে সমানভাবে কাছে টানা যায় না। তার নিষ্পপতা বোধ তাকে এমনভাবে ব্যাপারটাকে সহজ করে তুলল। এটা তাকে অদ্বিতীয় করে তুলল।

থিও অবাক হলো। সে কোনোভাবেই ব্যাপারটাকে মন থেকে মেনে নিল না। সে বারবার তার দোষ খোঁজার চেষ্টা করল। তাকে ভুলে যাওয়ার পরিবর্তে তার মধ্যে আরো আবেগ দেখা দিল। সে এটাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা হিসেবে আরো বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠল।

তাছাড়া মারসি জানত থিও সাধারণত কোনো কাজ করতে পারেনা। একদা যখন তারা দুই সপ্তাহের ছুটিতে তাদের এপার্টমেন্টে গিয়েছিল তখন তারা নতুন জন্মলাভ করা একটা ছোট মাইচ তাদের বিছানায় দেখেছিল। থিও এটাকে খুব সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিল এবং পরবর্তীতে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু মারসি ব্যাপারটাকে খুব কঠিন করে নিয়েছিল। সে ভেবেছিল পরে এটা তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বা ভয়ের কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু যখন থিও মারসির অন্যান্য প্রেমিকদের দেখেছিল, তার মনে আঘাতের ছোঁয়া লেগেছে। তখন কান্নায় ফেটে পড়ত এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত। সে তাকে ক্ষমাও করত। সে দেখত তাদের ভালোবাসার উত্তেজনা, পাগলামি। আবার তারা অনেক সময় ব্যাপারটিকে নিয়ে ঝগড়াও করত। তাছাড়া অনেক সময় ঝগড়া-ঝাটির কারণে মারসি এপার্টমেন্ট থেকে বাইরেও চলে যেত।

তার অন্য ভালোবাসার প্রতিও অনুগত ছিল। মারসির আরো অনেক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে এবং থিও একে-অপরের বন্ধু হিসেবে বিভিন্ন ওকেসানে একসঙ্গে ঘুমাত।

মারসি পূর্বের দিকে গিয়ে ইভিলিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার পরিকল্পনা করল। থিও লস অ্যাঞ্জেলেসের দিকে যাত্রা আরম্ভ করল এবং ছবির বাকি চিত্রনাট্য লিখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। সেখানে একদল নাট্য গোষ্ঠী তাকে নাটক করার জন্য আমন্ত্রণ জানাল।

মারসি নাটক করার জন্য গেল এবং সেই রাতে মারসি থিওর এপার্টমেন্টে রাত কাটাল। আসলে সে দিন কি ঘটেছিল তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তারপর মারসির মৃত লাশ পাওয়া গেল।

ক্যালিফোর্নিয়াতে এমনই অনেক মিডিয়ার ভিড়, তারওপর আবার সেখানকার গভর্নরের মেয়ে খুন হয়েছে। সবাই অবাক হলো, ব্যাপারটি আসলে কি ঘটছে ভেবে। কারণ থিওর সঙ্গে মারসির তিন বছরেরও বেশি সম্পর্ক ছিল।

আইনবিদ মলিফ্লোন্ডার সেখানে চেষ্টা করছিল প্রকৃত ঘটনা উঘাটনের জন্য।

সে অনেক সাক্ষী-প্রমাণ গ্রহণ করল। শেষ পর্যন্ত মারসির ছয় জন প্রেমিক বিদ্যমান ছিল। যখন থিও বিশ্বাস করল যে মারসি বিবাহিত। তখনই ঘটনাটা অন্য দিকে মোড় নিয়েছিল। এমনই মন্তব্য পোষণ করল মলিফ্লোন্ডার। তাছাড়া গভর্নরের সঙ্গে মলি ফ্লান্ডারের সম্পর্ক বিশ বছরের। তাই সে বারবার হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য বের করার চেষ্টা করল।

অন্য দিকে থিও ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির সন্তান। মলিগ্লান্ডার সব কিছু বিবেচনা করে মুখ খুলল না। তবে ধারণায় নিলেন কাজটি থিওর দ্বারাই সম্পন্ন হয়েছে। আসলে সেই সময় থিওকে খুবই আনন্দিত মনে হচ্ছিল আর এ কারণেই সবাই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে থিও মারসির অন্য ছয় জন প্রেমিককে মেনে নিতে পারেনি। তাই সে এই তুলকালাম ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

সে গভর্নরের সমস্যাটাকে গভীর সমবেদনার মাধ্যমে গ্রহণ করল। আসলে কারো সঙ্গে বিশ বছরের সম্পর্ক যেনতেন ব্যাপার নয়। তাই সে বারবার তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। তাছাড়া গভর্নর রাজনৈতিক জীবনে আমাদের সবাইকে অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শ, আদেশ দিয়ে সাহায্য করেছিল। সে অনেক সময় জজ কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তা নীরবে মুখ বুজে সহ্য করেছিল। যখন সে জুয়া খেলত তখন সে সবকিছু ধৈৰ্য্য সহকারে করত। আর গ্রোনিভেল্ট দীর্ঘদিন তার সঙ্গে থেকে বিভিন্নভাবে ফায়দা লুটত। তারপরও গভর্নর তাকে প্রত্যাখ্যান করেনি। তার এই বিপদের দিনে অবশ্যই প্রত্যেককে এগিয়ে আসা দরকার, এমনই মনে করল গ্রোনিভেল্ট।

গ্রোনিভেল্ট গভর্নরকে সকালে গলফ খেলার আসরে তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করল। তারা খেলার পর গভর্নরের বাড়িতে গেল এবং সেখানে দুপুরের খাবার খেল। পিপি ও ক্রস, গভর্নরকে শান্ত করার চেষ্টা করল। তারা নিজেদের তার সন্তান হিসেবে দাবি করল যাতে করে গভর্নর একটু হলেও সান্ত্বনা পায়।

ওভেন ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার কারণে তার নিজস্ব ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল। তার চোখ-মুখে কষ্টের ছায়া দেখা গেল। জানাদু হোটেলের কক্ষে বেসবল ক্যাপ পরে কথা বলছিলেন। সে ছিল অস্থির। মাঝে মাঝে হাসলেন। কোনো রাজনীতির হাসি না। গ্রোনিভেল্ট লক্ষ্য করল তার দাঁতগুলো বেশ হলুদ। সে অবশ্যই অতিরিক্ত মদপান করে।

গ্রোনিভেল্ট কিছু বলার জন্য স্থির করল। সে বলল, গভর্নর, আপনি আপনার পরিবারের প্রধান, আপনি বন্ধু মহলে সমাদৃত এবং নেভেদার লোকজনের আস্থাভাজন। এমন কিছু করতে পারেন না যাতে আপনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হ্যাঁ, তা আমি জানি, ওয়ালটার ওভেন বলল, আমি ছাড়া লিভিডার লোকদের কে দেখবে? গ্রোনিভেল্ট বলল, আমি আপনার প্রতি নজর রাখব। আমি আপনাকে টাকা দেব আগামী নির্বাচন করার জন্য।

তা হবে কেন? গভর্নর বলল, এটা আমাদের দেশের জন্য কোনো ব্যাপার না। আমি বড় রাজ্য নেভেদার গভর্নর, কিন্তু আমার মেয়ে খুন হলো, তারা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এটার একটা ব্যবস্থা নেব। লোকজন আমার মেয়ের খুন হওয়া নিয়ে হয়তো মজা করছে কিন্তু আমি এর একটা বিহিত করে ছাড়ব। তুমি জানো তা আমি পারব। প্রয়োজন বোধে আমি দেশের ওপর অ্যাটম বোম বিস্ফোরণ ঘটাব। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার ওপর।

পিপি এবং ক্রস শান্ত হয়ে সবকিছু শুনছিল। তারা এটাও বুঝল গ্রোনিভেল্ট একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজটি করার চেষ্টা করছে।

তোমাকে এর একটা প্রতিশোধ নিতেই হবে, আমি তোমার পেছনে আছি। গ্রোনিভোন্ট বলল, ঐ আঘাত তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

গভর্নর তার মাথার বেসবল টুপি খুলল এবং পুনরায় আবার হুইসকি নিয়ে বসল।

আমি ভুলতে পারছি না, সে বলল। আমি এক রাতে স্বপ্ন দেখলাম আমার মাথায় একটি কাক ঠোকরাচ্ছে। আমি তাকে গুলি করতে চাইলাম। তার পাখা ও পা কাটতে চাইলাম। তার পর আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। তারপর সে মদপান করতে করতে মৃদু ইসল। তারা তার হলুদ দাঁত দেখল এবং তার মুখ থেকে বেশ আকারে গন্ধ বের হচ্ছিল, যা তারা অনুভব করল।

ওভেন কিছুক্ষণ মদ পান করা থেকে বিরত থাকল, তার কণ্ঠস্বর মলিন হয়ে এলো। সে খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিল, আমি তার পিতা, তোমরা তার ছবি দেখ। তোমাদেরও খারাপ লাগবে। কিন্তু এত কিছুর পরও থিও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না, সময় সময় মনে হচ্ছে সবাইকে খুন করে ফেলি, বিচারক, আইনজীবী সবাই তার জন্য দায়ী। সে আবার গ্লাসে মদ নিল এবং ঘরের মধ্যে পায়চারি করল। তার মধ্যে প্রতিশোধের নেশা দেখ দিল।

আমি এবং আমার স্ত্রী তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলাম। আমরা তার আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং তার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলাম। তাকে আমরা আমাদের বাড়িতে আনলাম, আমার মেয়ের সঙ্গে তার ঘুমানোর ব্যবস্থা করলাম। সে তখন খুব খুশি হলো। সে বলছিল, কে বলে আপনার অনেক টাকা আছে? কে বলে আপনি সভ্য? কে বলে আপনি গভর্নর? আমি আপনার মেয়েকে খুন করব কিন্তু আপনি তার জন্য কিছুই করতে পারবেন না। আমি আপনার মেয়ের সম্ভ্রমহানী করব, তাকে খুন করব এবং তারপর আমি মুক্তভাবে চলব, দেখব আপনি তার জন্য কি করতে পারেন।

কথাগুলো বলার সময় গভর্নর ক্রসের দিকে স্থিরভাবে তাকিয়েছিল। আমি তার মৃত্যু চাই গভর্ণর, বলতে বলতে কান্নায় ফেটে পড়ল। আমি তার মৃত্যু চাই।

গ্রোনিভেল্ট বলল, ওয়ালটার একদিন তাই হবে, সময়ের জন্য অপেক্ষা করো। তুমি আগামী বছরে অনেক সুযোগ পাবে। তুমি অবশ্যই প্রতিশোধ নিতে পারবে।

কিন্তু সামনে নির্বাচন। আমি যদি প্রতিশোধ নিতে না পারি তাহলে লোকজন আমাকে দুর্বল ভাববে। তারা মনে করবে আমি বোকা। একজন পিতা যখন তার মেয়েকে হত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে তখন তার শাস্তি না হয়ে পারে না। কে আমাকে বিশ্বাস করবে, কে আমাকে ক্ষমা করবে?

সে কিছুক্ষণ চুপ থাকল, আলফ্রেড এটা ভুলে যাও। আমি হয়তো তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না।

গ্রোনিভেল্ট তাকে সতকর্তার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছিল। সে কিছু করছিল যা পিপি এবং ক্রস জানত না। প্রবল দুঃখ তাকে দুর্বল করে ফেলল, কিন্তু গ্রোনিভেল্ট ঝুঁকি নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। সে বলল, ওয়ালটার, তুমি কি সিনেটর ঠিক করতে পারবে যদি লোকটিকে শাস্তি দেওয়া হয়? তুমি কি মানুষটিকে নিজের করতে পারবে?

গভর্নর তা বুঝতে পারল না। পিপি এবং ক্রসকে দেখে তার চোখ বড় হয়ে গেল, তার মুখে কষ্টের ছায়া দেখা দিল। গ্রোনিভেল্ট পিপি এবং ক্রসকে বলল, আমার অফিসে আমার জন্য অপেক্ষা করো।

পিপি এবং ক্রস তাড়াতাড়ি চলে গেল। গ্রোনিভেল্ট এবং গভর্নর ওভেন থাকল। গ্রোনিভেল্ট তাকে কর্কশভাবে বলল ওয়ালটার তুমি এবং আমি আমাদের প্রথম জীবনে নিজেরাই পরিচালনা করেছিলাম। আমরা একে অপরের কাছাকাছি বিশ বছর ছিলাম, তুমি কি কখনও আমার মধ্যে অসতর্কতা দেখেছ? এটা ছিল খুবই নিরাপদ, তুমি কি পুনরায় চালু করতে যদি ঐ বালকটি মারা যেত?

গভর্নর বারে গেল এবং হুইস্কি ঢালল। কিন্তু সে পান করল না। সে হাসল। আমি দিনের কাজটি সমাপ্ত করলাম এবং তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে শোক প্রকাশ করলাম, সে বলল। আমার মনপ্রাণ ছিল তাকে ভালোবাসার।

গ্রোনিভেল্ট বিশ্রাম নিল, এটা করা হয়েছে আমাদের কার্যক্রম অনুযায়ী। তার মেজাজ সিক্ত হলো, প্রথমত তোমাকে দন্তচিকিৎসককে দেখা সে গভর্নরকে বলল তোমাকেও তোমার অসম দাঁতগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

পিপি এবং ক্রস, পেন্থ হাউজের সুইটে গ্লোনিভেল্টে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। সে তাদেরকে বাসভবনে পাঠিয়েছিল যাতে তারা খুব আরামদায়কভাবে অপেক্ষা করতে পারে। তার পর তাদের বলল, তোমরা কি বলবে বললো।

গভর্নর, কি ঠিক আছে? পিপি জিজ্ঞেস করল। গভর্নর মদপান করার মতো ভান ধরে ছিল না, গ্রোনিভেল্ট বলল, সে নিজেকে বিজড়িত না করেই আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল।

আমি আজ রাতে পূর্ব আমেরিকার দিকে যাওয়ার জন্য প্লেনে উঠব। পিপি বলল। এটা ক্লেরিকুজিও’র জন্য ভালো হবে।

তাদেরকে বলল আমি মনে করি গভর্নর এমন একজন লোক যে সর্বদিকে অবতরণ করতে পারে। গ্রোনিভেল্ট বলল, এটা খুবই ভালো। সে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হতে পারত।

জর্জিও এবং ডন তা বুঝতে পারবে পিপি বলল। আমি শুধু সব কিছু খুঁজে বের করতে চাই যাতে সব কিছু ঠিক থাকে।

গ্রোনিভেল্ট ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর পিপির দিকে ঘুরল। সে বিনীতভাবে বলল, পিপি আমি একসময় ভেবেছিলাম ক্রস হয়তো তার পরিবারের সাথে মিলিত হয়েছে। আমি মনে করি তার সঙ্গে তোমার পূর্বে যাওয়া উচিত।

কিন্তু জর্জিও ক্লেরিকুজিও সভার জন্য পশ্চিম থেকে ভেগাসে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নিল–

সে গ্রোনিভেল্টকে কিছু কথা বিস্তারিতভাবে বলতে চেয়েছিল।

তাছাড়া গ্রোনিভেল্টও গত দশ বছর কোনো ভ্রমণে যায়নি।

জর্জিও এবং তার দেহরক্ষী এক বাড়িতে কাজ করছিল, যদিও তার কোনো উচ্চ রোমার ছিল না। গ্রোনিভেল্ট এমন একজন মানুষ, তিনি জানতেন কিভাবে অনুভূতি তৈরি করা যায়। সে ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতাকেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ কোনো এক সময় তিনি তাদের ত্যাশিত হয়েছিলেন। তিনি আজও তা স্মরণে রেখেছেন।

তারা জর্জিও’র বাড়িতে মিলিত হলো। গ্রোনিভেল্ট, পিপি এবং জর্জিও… গ্রোনিভেল্ট অবস্থানটি ব্যাখ্যা করলেন। গভর্নর এই পরিবারের দামি সম্পদ হতে পারে, গ্রোনিভেল্ট বলল। যদি সে নিজ থেকে মিলিত হয়, তাহলে সে সবকিছুই করতে পারবে।

প্রথমত, সিনেটর, তার পর প্রেসিডেন্ট এবং তার পরে তুমি গোটা দুনিয়া রাজত্ব করতে পারবে। তাতে তোমার গোটা পরিবারকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। তোমার টাকাগুলো হবে সাদা টাকা। আমি মনে করি তাহলেই আমরা সবকিছু ঠিকমতো করতে পারব।

সাদা টাকার মূল্য কালো টাকার চাইতে অনেক বেশি। কিন্তু জর্জিও, বড় অংকের সম্পদও তোমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে না। গভর্নর জানে যে তুমি আমাদের সঙ্গে আছ?

আমি নিশ্চিত না, গ্রোনিভেল্ট বলল, কিন্তু সে অবশ্যই গুজবটি শুনেছে। এবং সে কোনো ডামি না। আমি তার জন্য কিছু করেছি যা সে জানে আমি তা করতাম না যদি আমি একা থাকতাম। তাছাড়া সে খুব চালাক। সবাই বলে সে অফিস চালু করত যদি শিশুটি মারা যেত। সে কিছু করার জন্য আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। সে ছিল একজন বড় মাপের বিশ্বস্ত লোক। যখন সে মদ পান করত না তখন সে ভেঙে পড়ত। আমি মনে করি সবকিছুই বের হয়ে আসতে থাকবে। সে পাপী, তার পরও সে এটা অতিরিক্তভাবে করেছিল। সে ভুগছিল কিন্তু সে কিছুটা চিৎকার করছিল। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। যদি আমরা এর মধ্য দিয়ে আসি, তাহলে সে তা চালু করতে পারবে এবং সে আমাদের সিনেটর হবে। জর্জিও নীরবতার সাথে কক্ষের মধ্যে দিয়ে পায়চারি করতে লাগল। সে গ্রোনিভেল্টকে বলল, তুমি তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক হওয়া ছাড়া তুমি কিছুই করবে না।

হ্যাঁ গ্রোনিভেল্ট বলল, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমি তাকে হ্যাঁ সূচক কথা বলেছিলাম, তার অর্থ এই নয় যে আমি তার হয়ে গেলাম। যার ফলে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি এবং সে পুনরায় নতুন করে ক্ষমতাসম্পন্ন কাজ করতে অগ্রসর হয়নি। জর্জিও কথা বাঁকাল, আমি এরকম ব্যবসাকে ঘৃণা করি সে বলল। পিপি হাসল। জর্জিও একেবারেই বোকা। সে সান্তাডিও পরিবারকেও কাজটি করতে সাহায্য করেছিল। তার কারণে প্রতিশোধ নিতে ডন গর্ববোধ করেছিল।

আমি মনে করি কাজটি করতে পিপির প্রয়োজন, গ্রোনিভেল্ট বলল। এটাই তার পুত্রের জন্য সঠিক সময়। ক্রস তার পরিবারের সঙ্গে যোগদান করতে পারে।

জর্জিও পিপির দিকে তাকাল, তুমি কি মনে করো ক্রস প্রস্তুত? সে জিজ্ঞেস করল।

পিপি বলল, তার সময় হয়েছে সেখানে যাওয়ার। তাছাড়া সে কিছুটা হলেও আগ্রহী। কিন্তু সে কি এটা করবে? জর্জিও জিজ্ঞেস করল, এটা একটা বড় পদক্ষেপ। আমি তার সঙ্গে কথা বলব। পিপি বলল, এটা করবে।

জর্জিও গ্রোনিভেল্টের  দিকে ঘুরল, আমি গভর্নরের জন্য এটা করব। তারপর দেখব তিনি কতটুকু আমাদের ভুলে যান। আমি ঝুঁকি নেব এবং জানি এটা কিছুই না। এখানে একজন মানুষ আছে যে নেভেদার গভর্নর। তার কন্যা খুন হয়েছিল এবং সে অধঃপতিত হলো। সে কিছু করেছিল। সে আমার নিকট এসেছিল, গ্রোনিভেল্ট বলল, তোমাকে গভর্নরের মতো কিছু করতে হবে। সুতরাং সে এর মধ্যেই আসবে? জর্জিও বলল। আমরা পরবর্তী ব্যাপারটাকে গোপন করব। গ্রোনিভেল্ট বলল, আমি তার সঙ্গে বিশ বছর ব্যবসা করেছি। আমি তোমাকে নিশ্চিত বলতে পারি, সে এরই মধ্যে আসবে। সে জানে সে খুব চালু পর্যায়ের লোক। জর্জিও বলল, পিপি এটা একটি দুর্ঘটনার মতো। যা অনেক আঘাত বয়ে আনবে। আমরা সব, বাধা-সমস্যা, সমস্ত শত্রুকে জব্দ করার জন্য গভর্নরকে চাই।

গ্রোনিভেল্ট বলল, হ্যাঁ, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু গভর্নরকে কিছুই করতে পারবে না।

জর্জিও বলল, সম্ভবত এটা একটা বড় কৌশল ক্রসের জন্য।

না, এটা তার জন্য উপযুক্ত না, পিপি বলল। তাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। পিপি ছিল সেই কাজের আদেশকর্তা। সে অনেক কাজ করেছে। প্রত্যেকটি কাজই তার আদেশে হয়েছে। এমনকি সান্তাডিও যুদ্ধও তার আদেশেই হয়েছিল। সেই প্রায় ক্লেরিকুজিও পরিবারকে বলত। এটা আমার জন্য উপযুক্ত কাজ, যদি আমি আঘাত পাই আমি ভাবব এটা আমার দোষ। কারো কিছু করার ছিল না।

জর্জিও হাততালি দিল। ঠিক আছে, তাহলে আমরা তাই করি।

আলফ্রেড আগামীকাল সকালে গলফ খেললে কেমন হয়? আগামীকাল রাতে আমি ব্যবসার কাজে লস অ্যাঞ্জেলেসে যাব। এ দিনই আমি পূর্বে ফিরব। পিপি তুমি আমাকে জানাও তুমি কি ধরনের সাহায্য এনক্লেভের কাছ থেকে চাও এবং আমাকে বলল, আছে না নেই।

পিপি জানত যে ক্রস কখনোই ক্লেরিকুজিও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবে না কারণ যদি তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে।

গলফ খেলা ক্লেরিকুজিও পরিবারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। তাই শত ঘটনার মধ্য দিয়েও বৃদ্ধ ডন তা ধরে রেখেছে। পিপি এবং ক্রস সন্ধ্যায় জানা হোটেলে অবস্থান করছিল। তারা ঘোড়ার গাড়ি চালাতে জানত না, তাই। পিপি হেঁটে হেঁটে শারীরিক অনুশীল করত। তাছাড়া হাঁটতেও সে বেশ পছন্দ করত। ঠিক নয়টার সময় তারা একটি বড় গাছের নিচে পৌঁছল। তারা সেখানে বসল।

আমি চিরদিন বাঁচব না। পিপি বলল, তোমাকেও তা করতে হবে। কালেকশান এজেন্সি টাকা তৈরি করার বড়ই ওস্তাদ।

কিন্তু ধরে রাখতে পারে না। তাই তোমাকে ক্লেরিকুজিও পরিবারেই থাকতে হবে। পিপি ক্রসকে বোঝাচ্ছিল। ক্রস তার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনছিল। পিপি উপযুক্ত অবস্থানের জন্য ধৈর্য সহকারে অবস্থা করল।

ক্রস শান্তভাবে বলল, আমি বুঝতে পেরেছি। পিপি বলল, আসলে ঐ লোকটিই গভর্নরের মেয়েকে খুন করেছিল। তাছাড়া ঘটনা ঘটানোর পেছনে একটি কারণও ছিল, তা হয়তো আমি জানি না।

ক্রস তার পিতার মনের ধারণা অনুমান করছিল। তাছাড়া গভর্নর আমাদের বন্ধু, সে বলল।

তা ঠিক। পিপি বলল, ক্রস তুমি একবাক্যে বিশ্বাস করতে পারো। কিন্তু আমি তোমার সাহায্য কামনা করছি। তুমি সাহায্য করলে আমি খুব সহজে একটি কাজ পেতে পারি।

তা করা যাবে। তবে ব্যাপারটাকে আমার কাছে পরিষ্কার করো। ব্যাপারটি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। পিপি বলল, ব্যাপারটা বেশ জটিল। আমাদের ব্যাপারটা ভেবে তেমন কোনো উপকারে আসবে না।

পিপি তার দিকে তাকাল, তাহলে কাজটা গ্রোনিভেল্টের  জন্য পাচ্ছি। তুমি দেখেছিলে আমি গভর্নরের সঙ্গে ছিলাম। ভালো, তোমার যা ইচ্ছা তাই তুমি করো। তবে তুমি যাই মনে করো না কেন আমি তোমাকে তোমার কাজের ব্যাপারে সাহায্য করব।

আমি সব কিছুই পরিকল্পনা করব, পিপি বলল, আমি সব সময়, সব অবস্থায় তোমার সঙ্গে থাকব। তোমার কোনো ভয় নেই। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই একজন ভালো শুটার হতে হবে।

তারপর উঠে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বাড়িটাকে ভালোভাবে দেখল, তারপর বলল, ঠিক আছে আমি তোমার কথামতো কাজ করব। তবে ব্যাপারটাকে নিয়ে আমি কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলাম, তুমি যখন বলছ তবে আমার আর কোনো ভাবার কারণ নেই।

নিউইয়র্ক লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি শহর, সেখানে থিও দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। সমস্ত পরিকল্পনাই নির্ভর করছে সোভালিয়ান দলের প্রতিবেদনের ওপর। পিপির বক্তব্য একজন দার্শনিকের মতো ক্রস শুনল।

এটা এক প্রকার ব্যবসা, সে বলল, তুমি তো মানুষের কথা ভেবে আজীবন কাটাতে চাও। আসলে শুধু ভালো হলেই হবে না, আমাদের সবাইকে মানুষের ভালোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। যখন মোটর কোম্পানি বিনা কারণে পঞ্চাশ হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করল, তুমি পারোনি ঐ সব লোককে সাহায্য করতে। যে কারণে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে কিন্তু তুমি কি করতে পেরেছ? মানুষ আরো খারাপ ব্যবসা করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। তাতে তুমি কি করতে পারছ? আসলে প্রত্যেকের বন্দুক আছে, প্রত্যেকেই প্রত্যেককে খুন করছে। কারণ এটা টাকার খেলা। এখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো মূল্য নেই।

ক্লেরিকুজিও’র পরিবার খুবই কৌশলী। পিপি ক্রসকে বলল, তুমি তাদের পেতে পারো, তা ঠিক আছে, তুমি খুনি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারো না। কারণ তারা তোমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। পরিবারটিকে তোমার সঙ্গে থাকতে হবে কারণ তারা তাদের জেদকে প্রমাণ করতে চায়। ক্রস শুনল, কখনও কাউকে বলে না তুমি কিভাবে অবস্থানটি পরিবর্তন করতে যাচ্ছ। তারপর তারা চলে গেল। তারা উভয়ের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিল। আমি জানি আমার জন্য কি ভালো আর কি খারাপ? ভালোটা হলো খুবই সাধারণ থাকা। খুব খুব সাধারণ থাকা। যখন সোভালিয়ান প্রতিবেদন এলো পিপি ক্রসকে সমস্ত ডাটা পড়াল। সেখানে থিও-এর কিছু ছবি, গাড়ির কিছু ছবি দেখল। তাছাড়া তারা থিও যে ম্যাপ অনুযায়ী বা রাস্তা দিয়ে তার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যেত, সে সব তথ্যও তারা ডাটাতে খুঁজে পেল। ক্রস পিপিকে বলল, সে এখনও গার্লফ্রেন্ড পায়?

তুমি মেয়েদের চেনো না, পিপি বলল। যদি তারা তোমাকে পছন্দ করে তবে তোমার পিছু ছাড়বে না। যদি তারা তোমাকে পছন্দ না করে, তাহলে তুমি তাদের ইংল্যান্ডের রানী বানাবে এবং তারা তোমাকে উপহাস করবে।

পিপি, টিম সেট করার জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসে গেল। সে দুদিন পর ফিরল এবং ক্রসকে বলল, আগামীকাল রাতে। পরের দিন সূর্য ডোবার আগেই তারা তাদের পদক্ষেপ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিল। তারা ভেগাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে গেলও পিপি ক্রসকে বিশ্রাম করতে বলল। ক্রস কিছুটা সূর্যের শেষ গোধূলি দেখে আনন্দিত হলো এবং ভাবল এবার হয়তো আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। কিছুক্ষণ পর সে আবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। সে তখনই কাজটি শেষ করতে চেয়েছিল। তারা প্রশান্ত প্যালিফিডের এক বাড়িতে পৌঁছল। সেখানে ব্রঙ্কস এনক্লেভ থেকে আসা আরও ছয় জন নাবিক তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারপর তারা ভুয়া লাইসেন্সসম্পন্ন একটি চুরি করা গাড়িতে যাওয়ার জন্য ঠিক করল। তাদের সঙ্গে কিছু ভারী বন্দুক রাখল। যেন তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। ক্রস জাঁকজমক বাড়ি দেখে অবাক হয়ে গেল। এটা ছিল সাগরের কিনারায়, দেখতে খুবই মনোরম। তাছাড়া বাড়িতে সুইমিং পুল ও ছয়টি বেড রুম আছে। লোকটি পিপিকে ভালোভাবেই চিনত। কিন্তু তারা ক্রসের সঙ্গে পরিচিত হলো না এবং তারাও তাদের সঙ্গে পরিচিত হলো না।

তারা মধ্যরাতে কাজটি করার আগে খুনের ব্যাপার নিয়ে প্রায় এগারো ঘন্টা আলাপ-আলোচনা করল। তারপর অন্য একজন টিভি ছাড়ল, কেউ কেউ কার্ড খেলা আরম্ভ করল। তারা সবাই একই কক্ষে থাকল। পিপি ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল এবং বলল, আমি সুইমিং পুলের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম–

ঠিক আছে, ক্রস বলল, আমরা সাঁতার কাটতে যেতে পারি। বাড়িটির পাশে ছিল একটি বিশাল গাছ যা বাড়িটিকে আরও সৌন্দর্যময় করেছিল।

তারা সবাই কিছু সময় ধরে সাঁতার কাটল এবং তাদের মধ্যকার একজন নাবিক তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করছিল। খাবারের মধ্য মাংসের ক্রিম, শুকনা মাংস, সালাদ এবং এগুরা এবং অন্যরা খাবারের সঙ্গে লাল মদ খেল। কিন্তু ক্রস ক্লাব সোড়া খেল। সে পর্যবেক্ষণ করে দেখল যে প্রত্যেকেই খেতে আর পান করতে ব্যস্ত।

খাওয়ার পর পিপি ক্রসকে চুরি করা গাড়িতে নিল। তারপর তারা পশ্চিমা রেস্টুরেন্টে কফি খাওয়ার জন্য গেল। সেখানে তারা থিওকে খুঁজে পেল। তারপর তারা সেখানে ডিম, কফি আরো অনেক কিছু খেল।

ক্রস তার ঘড়ির দিকে তাকাল। সাড়ে বারোটা বাজে। তাদের আরো পনের মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। হঠাৎ পিপি তার কাঁধে আঘাত করল। সে আগেই এসেছে, পিপি বলল। যাও।

ক্রস বিল পরিশোধ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে, দরজার আলো তার ওপর পড়ছে। তার চেহারা ছিল বালকদের মতে, ছোটখাটো, মলিন ও পাতলা মুখের ওপর ছোট ছোট ঘন চুল। থিওকে দেখতে খুনির মতো মনে হচ্ছে।

তারা আশ্চর্যান্বিত হলো। থিও তার গাড়ির দিকে না গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগীয় হাইওয়ে ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর ঢেউকে তোয়াক্কা না করে সে উন্মুক্ত সৈকতের প্রান্তে হাওয়া খেতে লাগল। সে সমুদ্র পাড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সীমান্তে উদীয়মান চাঁদ দেখল। তারপর ঘুরেফিরে হাইওয়ে পার হয়ে আর্কিটে ফিরে এলো। সমুদ্রের ঢেউ তরঙ্গায়িত হয়ে কাছে তার পোঁছছিল। এ সময় তার ফ্যাশনাবল জুতা পানির ছোঁয়ায় ভিজে গেল।

ক্রস আস্তে করে গাড়ি থেকে বের হলো। তখন থিও প্রায় তার কাছাকাছি। ক্রস থিওর পেছন ফেরার অপেক্ষায় ছিল। তারপর সে একটু মিষ্টি হেসে থিওর গাড়িতে চড়ল। থিও গাড়ির ভেতর গেলে ক্রস তৎক্ষণাৎ বন্দুক বের করল। তখন থিও তার চাবি রাখার জন্য গাড়ির জানালা নামাচ্ছিল, থিও তার ছায়া দেখে একটু সজাগ হয়ে তার চোখ ওপরে ওঠাল। ঠিক সে সময় ক্রস তাকে গুলি করল। তারা দেখল থিও স্থির হয়ে পড়ে আছে, তার মুখে গুলি লাগায় সে পুরোপুরি রক্তে রঞ্জিত মুখোশে পরিণত হয়েছে। চোখ দুটি খোলা। ক্রস একটানে গাড়ির দরজা খুলে তার মাথায় আরো দুটি গুলি করল। রক্ত মুখে ছিটিয়ে পড়ল। পরে ড্রাগের ব্যাগটি থিওর গাড়িতে ছুঁড়ে মারল। তারপর সে ধপাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। ক্রসের গুলি করার সময় পিপি তার গাড়িতে বসে সবকিছু দেখছিল। পিপি গাড়ির দরজা খুললে ক্রস লাফ দিয়ে উঠে বসল। তার পরিকল্পনা অনুসারে পিস্তলটি ব্যবহার করার কথা থাকলেও পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল।

পিপি ক্রসকে নিয়ে দ্রুত বেগে লটের বাইরে গাড়ি চালিয়ে এলো। সেই সময় তাদের আশপাশে অনেক গাড়ি ছিল বিশেষ করে দুটি অগ্রগামী গাড়ি তাদের পেছনে অবস্থান নিল। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে তারা তাদের হাউজে ফিরে এলো। বেশ কিছুক্ষণ বিরতির পরে পিপি ও ক্রস পিপির গাড়িতে করে ভেগাসের দিকে রওনা হলো। এখন তারা অভিযানের দল, চুরি করা গাড়ি ও বন্দুক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত, তারা অনেকটা স্বাধীন। যখন তারা রেস্টুরেন্ট পার হচ্ছিল তখনো তাদের পুলিশের নজরদারি পরিলক্ষিত হলো না। থিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেল। পিপি একটু গাড়িটা ঘুরিয়ে রেডিওটা অন করে প্রচারিত সংবাদ শুনল। কিন্তু সংবাদে তেমন কোনো খবর পেল না। চমৎকার, পিপি বলল, তুমি যখন পরিকল্পনা করেছ তখন তো সব চমৎকার হবেই।

তারা যখন লাস ভেগাসে পৌঁছল তখন সূর্য কেবল উদিয়মান। সূর্যের সোনালি আলোয় মরুভূমিকে রক্তের সাগর মনে হচ্ছিল। কখনও মরুভূমি, কখনও অন্ধকার আবার কখনও জ্যোৎস্নার আলোর মধ্য দিয়ে এই ভ্রমণ ক্রসকে আপুত করল। ক্রস বলল, আমি কখনোই এই ভ্রমণকে ভুলতে পারব না। চলতে চলতে সূর্য মাথার উপর এলো, কিছুক্ষণ পর ভেগাসের নিয়ন আলো বাতিঘরের মতো চারদিকে আলো ছড়াতে লাগল। দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে ওঠার মতো তাদের মনে হচ্ছিল।

ঠিক এই সময় থিওর লাশ খুঁজে পাওয়া গেল। তখন তার মুখমণ্ডল ছিল ভৃত্যের মতো মলিন, চারদিকে প্রচারিত হচ্ছিল থিও আধা মিলিয়ন মূল্যের কোকেনের মালিক ছিল। তাছাড়া ড্রাগগুলো যে গুদামে ছিল সে বিষয়ে গভর্নর নিশ্চিত ছিল।

ক্রস এই ঘটনা থেকে অনেক বিষয় পর্যবেক্ষণ করল। থিওর মালিকানায় যে ড্রাগ ছিল তার দাম বড় জোর দশ হাজার ডলার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটার মূল্য নির্ধারণ করেছিল আধা মিলিয়ন ডলার। গভর্নর এই ঘটনার প্রশংসা করল এবং থিওর পরিবারকে তার পক্ষ থেকে সমবেদনা পাঠাল। এর ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে মিডিয়ায় এই বিষয়ে তেমন কোনো সংবাদ প্রচার করল না।

পিপি ও ক্রসকে জর্জিও’র সাথে পূর্বে একটি অডিয়েন্সের জন্য ডেকে পাঠান হলো। জর্জিও তাদের উভয়কে একটা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং ভালোভাবে সম্পাদিত অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশ তাদের মধ্যে তেমন কোনো সাড়া ফেলেনি। তাই তারা এটাকে সাধারণ দুর্ঘটনার মতো মনে করছিল। আর ক্রস এই যাওয়া সম্পর্কে সজাগ ছিল যে ক্লেরিকৃজিও পরিবার তাকে সম্মান জানিয়ে পরিবারের হেমার হিসেবে বিবেচনা করবে। যার প্রমাণ ছিল ক্লেরিকুজিও লাস ভেগাসে জুয়া খেলার আয়ের অংশ তাকে দিয়েছিল। এতে বোঝা গেল যে, ক্রস এখন পর্যন্ত ক্লেরিকুজিও পরিবারের অফিসিয়াল সদস্য।

গ্রোনিভেল্টও তার পুরস্কার পেল। ওয়াল্টার ওভেন সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার পর সে জানাদুতে ছুটি কাটাল। গ্রোনিভেল্ট তাকে একটি ভিলা উপহার দিল, তাকে স্বাগত জানাতে সে তার বিজয় উৎসবে গিয়েছিল। সিনেটর ওভেন ছিলেন ঐ উৎসব অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক। সে জুয়া খেলত। কখনো জিতত আবার কখনো হারত। সে জানাদু হোটেলে শো  গার্লসদের সাথে রাতের ডিনার করত। তখন তাকে মনে হতো সে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ।

০৭. বোনকে গ্রহণ

পর্ব– পাঁচ

লাস ভেগাস
হলিউড

কুওগ

০৭.

ক্রস ডি লিনা তার বোনকে গ্রহণ করল। ক্লডিয়া এবং স্কিপি ডিরি জানা এহোটেলের পেন্থ হাউজ নামক বিশাল সুইটে আছে। ডিরি দুটি সিবলিং এর মধ্যে সর্বদাই পার্থক্য খুঁজতে আনন্দ উপভোগ করত। ক্লডিয়া খুব সুশ্রী ছিল না কিন্তু সে ছিল পছন্দসই এবং ক্রস ছিল দারুণ সুদর্শন, চিকন কিন্তু সুঠাম দেহের অধিকারী। ক্লডিয়া ছিল প্রকৃতির মতো ভালোবাসার যোগ্য এবং ক্রস খুবই সদালাপি। সে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলত। আর এটাই ছিল তাদের মধ্যে পার্থক্য, ডিরির মতে, একজন সহানুভূতিশীল এবং অন্যজন জ্ঞানী।

ক্লডিয়া এবং স্কিপি ডিরি খাটের উপর বসল, বাকিরা বিপরীত দিকে বসল। ক্লডিয়া বজ স্কানেট এবং তাদের জ্ঞান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল, ক্রস, তুমি আমার কথা শোন, এটা শুধু ব্যবসার ব্যাপার না। অ্যাথেনা আমার একজন খুব কাছের বন্ধু এবং আমার জানামতে সে একজন খুব ভালো মানুষ। যখন আমার সাহায্যের দরকার হয়েছে তখনই সে আমাকে সাহায্য করেছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া যা আমি তোমাকে আগেও অবগত করেছিলাম। অ্যাথেনা তার কাজে সাহায্য করলে আমি তোমাকে সে ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করব না।

তার পর সে স্কিপি ডিরির দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, তুমিই বলো ক্রসের টাকার অংশের ব্যাপারে। সে ক্রসকে বলল, আমি তোমার হোটেলে দশ বছর যাবৎ আসছি। কিন্তু কখনোই আমাকে বাগানবাড়িটা দাওনি। ক্রস হাসল, আসলে এটা সর্বদাই পরিপূর্ণ থাকে।

ডিরি বলল, কাউকে বাইরে রাখো।

অবশ্যই, ক্রস বলল, যখন আমি তোমার ছবি থেকে কিছু লাভ করতে পারব।

ক্লডিয়া বলল, তার বোন এবং আমি কখনোই একটিও বাগানবাড়ি পাইনি। ওসব কথা বন্ধ করো, স্কিপি এবং টাকার সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি করো।

যখন ডিরি কথা বলা শেষ করল ক্রস তখন একটা বিষয় নোট করতে করতে বলল, আমাকে বিষয়টি সোজা পেতে দাও, তুমি এবং স্টুডিও আমার পঞ্চাশ মিলিয়ন নগদ টাকা এবং দুইশত মিলিয়ন প্রজেক্ট লভ্যাংশ ক্ষতি করেছ। যদি এরপর অ্যাথেনা কাজে না ফিরে? সে কাজে হয়তো আর ফিরবেও না, কারণ সে তার পাতানো স্বামী বজ স্কানেটকে চরম ভয় পায়। তুমি তাকে কিনতে পারো কিন্তু কোনোভাবেই কাজে ফিরবে না কারণ সে বিশ্বাস করে না যে এটা তার কারণে বন্ধ হয়ে যাবে। এটাই কি সবকিছু?

হ্যাঁ, ডিরি বলল, আমরা তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তাকে আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চাইতে তাকে বেশি পাহারা দেব যখন সে ছবিতে কাজ করবে। আমরা এটাও নিশ্চিত করেছিলাম যে প্রয়োজনবোধে ঐ সময় স্কানেট আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবে। তাছাড়া আমরা তাকে চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখনও সে কাজে ফিরল না।

আমি সত্যিকার অর্থে কোনো সমস্যা দেখতে পাই না, ক্রস বলল, আসলে মেয়েটি টেক্সাসের একটি ক্ষমতাধর রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছে, ডিরি বলল, এবং সত্যিকার অর্থে সে আসলেই একজন কঠিন মেয়ে। আমি চেষ্টা করেছিলাম আমাদের জনগণের জন্য।

কারা তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

পেসিফিক ওশেন সিকিউরিটি, ডিরি বলল।

কেন তুমি আমার সাথে কথা বলছ? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

কারণ তোমার বোন বলেছিল, তোমার সাহায্য লাগবে, ডিরি বলল, এটা আমার ধারণার বাইরে।

ক্রস তার বোনকে বলল, ক্লডিয়া তুমি কি ভাবছিলে আমি তোমাকে সাহায্য করব?

ক্লডিয়ার চেহারা আনন্দে ভরে উঠল। আমি দেখেছি তুমি আগেও আমার সাহায্য সমস্যার সমাধান করেছ, ক্রস তুমি আসলেই খুব ভালো, তুমি সব সময়, আমার সমস্যায় সমাধান করতে এগিয়ে এসেছ। তখন সে এক নিষ্পাপ হাসি দিল, তুমি আমার বড় ভাই, আমি তোমাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি।

তিনজন চুপচাপ বসে থাকলে কিছুক্ষণ পর ডিরি বলল, ক্রস আমরা একটি বড় চিত্র দৃশ্যায়িত করার জন্য এখনে এসেছিলাম। কিন্তু তোমাকে অন্য একজন টাকা লগ্নীকারীর মতো দেখাচ্ছে। আমি সামনে এর চাইতে একটি ভালো প্রজেক্ট আনছি।

ক্রস, ক্লডিয়ার দিকে তাকাল, তার পর তাকাল ডিরির দিকে এবং চিন্তিত মনোভাব নিয়ে বলল, স্কিপি আমি অ্যাথেনার সঙ্গে দেখা করতে চাই এবং সম্ভবত তার পর আমি সব সমস্যার সমাধান করতে পারব।

সত্যি তাই, ক্লডিয়া মুক্তকণ্ঠে বলল, আমরা আগামীকালই রওনা দেব সে তাকে সাড়া দিল।

ঠিক আছে, ডিরি বলল, আমি ইতিমধ্যেই ক্রসের ম্যাসিলিনা ছবির ক্ষতিকে পরবর্তী ছবির লভ্যাংশের মাধ্যমে পূরণ করার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করার জন্য চেষ্টা করেছি।

পরের দিন তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে গেল। ক্লডিয়া তাদের দেখে অ্যাথেনার সঙ্গে কথা বলল, তারপর ডিরি ফোন নিল। কথাবার্তার মধ্যে বুঝতে পারল অ্যাথেনা আর কখনোই ছবির জগতে ফিরতে পারবে না।

ম্যালিবু কলোনি যেখানে অ্যাথেনা বাস করত, তা ছিল সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ এবং চল্লিশ অংশ বড় বড় পাহাড় এবং হলিউড অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। ঐ কলোনিতে মোটামুটি একশ পরিবার বসবাস করে, যেখানে একটি পরিবার তিন থেকে ছয় মিলিয়ন ডলার দিয়ে বসবাস করে কিন্তু জায়গাটি দেখতে খুবই সাধারণ। প্রতিটা বাড়িই দেয়াল দ্বারা ঘেরা এবং সময় সময় ভেতরে প্রবেশ করার জন্য একটি গেট মাত্র ব্যবহার করা হয়।

কলোনিতে একটিমাত্র ব্যক্তিগত রাস্তা দিয়েই প্রবেশ করা যায়, তাছাড়া রাস্তাটি সর্বদাই নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়। নিরাপত্তা প্রহরী বা ব্যক্তিগতভাবে সব পরিদর্শককেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। প্রত্যেকটি বাসভবনেই গাড়ি রাখার জন্য নির্দিষ্ট গ্যারেজ আছে কিন্তু তা প্রতি সপ্তাহেই পরিবর্তিত হয়। ক্রস এটাকে অতিরিক্ত বলে অভিযুক্ত করল এবং এটা কোনো জরুরি প্রয়োজন বলে সে মনে করল না।

কিন্তু প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটির প্রহরীরা, অ্যাথেনার বাড়ি বলতে অন্য বিষয়কে আখ্যায়িত করে। তারা পোশাক পরা, অস্ত্রধারী এবং দেখতে তারা খুবই সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী।

তারা সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে হেঁটে অ্যাথেনার বাড়িতে প্রবেশ করল। অ্যাথেনার ব্যক্তিগত সহকারী নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। তারা তাদেরকে ছোট অতিথি ভবনে নিয়ে গেল।

সেখানে দুজন প্যাসিফিক ওশেনের পোশাক পরা নিরাপত্তা প্রহরী ছিল, তারা অতিথিশালা অতিক্রম করে একটি বড় ফুল বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটল, একটি লেবু গাছে সুগন্ধি বাতাস ছড়াচ্ছিল। পরিশেষে তারা প্রধান হাউজে পৌঁছুল, যা দেখতে প্রশান্ত মহসাগরের মতোই ছিল।

যখন ক্রস ডি লিনা অ্যাথেনাকে দেখল, তখন সে ভয়ে আতঙ্কিত হলো। তার মধ্যে ছবির জগৎ থেকে অনেকটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হলো যা খুবই কম দেখা যায়। তার চোখগুলো গভীর ধূসর, দেহ একজন ক্রীড়াবিদরে মতো যাতে আছে শুধুই শারীরিক সৌন্দর্য। তার চুলের ধরন একটু আলাদা যা অন্য যে কোনো নারীর কাছেই পছন্দসই হবে না। সে একটি নীল পোশাক পরা ছিল, যা তার শরীরের সঙ্গে বেখাপ্পা দেখাচ্ছিল তার কুনই থেকে হাতগুলো একটু বেশি লম্বা, তার পা ছিল খালি যা আঙুলে কোনো পালিশ নেই। কিন্তু তার চেহারায় বুদ্ধিমত্তার ছাপ ছিল এবং তার মনোযোগ তাকে অভিভূত করল। তার চোখে যেন সাগরের উত্তাল পানি তরঙ্গিত হচ্ছে।

ক্লডিয়া সর্বদা তার সম্পর্কে কথা বলেই যাচ্ছে, সে ক্রসকে বলল, তার সুদর্শন ভাই যে তাকে তৈরি করতে পারেনি কিন্তু একসময় যাকে সে চেয়েছিল। সে হাসল, এটার প্রকৃতি স্বাভাবিক হাসি, যে হাসি কোনো নারীকে বিরক্ত করবে না। ক্রস আনন্দে ফেটে পড়ল কিন্তু কোনো শব্দ হলো না। সেই সময় তার গলার স্বর ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম ঠাণ্ডা শীতল, খুবই মিষ্টি।

ক্রস ভেগাসের অনেক সুন্দরী নারীকেই চেনে, তেমন চেনে লস অ্যাঞ্জেলেসে এবং হলিউডের নারীদেরও। কিন্তু ভেগাসে এমন কিছু সুন্দর নারী আছে যেখানে হলিউডের নারীরাও ব্যর্থ হবে।

হলিউডের মেয়েরা সুন্দরী, তারা সাধারণত বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে বিয়ে করে থাকে, খুব কমই যারা অভিনেতাদের বিয়ে করে থাকে। শহরের সব মেয়ের সৌন্দর্য পৃথিবীতে সমানভাবে গৃহীত। সেখানকার সব অভিনেত্রীই ছোটখাটো তারকা।

এই সব মহিলা যারা তাদের চমৎকার শৈলী এবং সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে, তাদের থাকে শিশুসুলভ নিষ্পপতা এবং সৎ সাহস। তাদের প্রতি মানুষের থাকে চরম কৌতূহল, যার ফলে তারা উচ্চ শিখরে অবস্থান করতে পারে। যা তাদেরকে দেয় নিশ্চিত ওপরে ওঠার সিঁড়ি। যদিও উভয় শহরেই সুন্দরীদের অবস্থান। তারপরও হলিউডের সুন্দরীদের পৃথিবীর সবাই একটু ভিন্ন। চোখে দেখে। অ্যাথেনা তাদের মধ্যে একজন সুন্দরী রমণী।

ক্রস মৃদু সুরে আহোনাকে বলল, ক্লডিয়া আমাকে বলেছে, সবচেয়ে সুন্দরী নারী।

অ্যাথেনা বলল, সে আমার মেধা সম্পর্কে কি বলেছে?

সে বারান্দার ডেকের ওপর হেলান দিল এবং একটি আঙুল আগা-পেছন করার মাধ্যমে শারীরিক অনুশীলন করল। তারপর সে বিভিন্নভাবে হাত, পা, কখনো শরীর বাকানোর মাধ্যমে শারীরিক অনুশীলন করতে থাকল।

ক্লডিয়া বলল, ডিনা, তুমি জানো না, আমরা একে-অপরের সম্পর্কযুক্ত?

স্কিপি ডিরি বলল, কখনোই না।

অ্যাথেনা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা দেখতে দুজন খুবই কাছাকাছি, ক্রস দেখল, সে আসলেই কথাটা বলছে।

ক্লডিয়া বলল, এখন তুমি বুঝ কেন আমি তাকে ভালোবাসি।

অ্যাথেনা কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস্তবতায় ফিরে এলো এবং ক্রসকে বলল, ওরা আমাকে বলেছে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারো, কিন্তু কিভাবে করবে তা আমি জানি না।

ক্রস তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার চেষ্টায় ব্যর্থ হলো। সে বলল, আমি ধৈর্যশীল মানুষের কাছে প্রিয়, যদি তুমি কাজে ফিরতে রাজি থাকো তাহলে আমি তোমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলব।

আমি বিশ্বাস করি না বজ তোমার কথা রাখবে, অ্যাথেনা বলল, স্টুডিও ব্যাপারে একজন ভেইলের সঙ্গে কথা হয়েছিল।

ডিরি বলল, এটা তার জন্য একটি জয় করা কণ্ঠ, অ্যাথেনা, সত্যি এ ব্যাপারে তোমার চিন্তা করার কিছুই নেই। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। কিছু কারণে সে নিজের জন্য এটা করতে বাধ্য ছিল। সে বেশ সতর্কতার সাথে তাদের পর্যবেক্ষণ করেছিল। সে জানত, অ্যাথেনা কিভাবে মানুষ অভিভূত করেছিল, কিভাবে সে একজন অভিনেত্রী হয়ে পৃথিবীর মানুষকে মুগ্ধ করল। কিন্তু ডিরি কোনোভাবেই ক্রসকে সুযোগ দিচ্ছিল না।

স্কিপি চায়নি যে আমি চলচ্চিত্র জগৎ ত্যাগ করি, অ্যাথেনা বলল, এটা তার জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এবং তোমার জন্য নয়? ডিরি রাগান্বিত হয়ে বলল।

অ্যাথেনা দীর্ঘক্ষণ নিশুপ তাকিয়ে থাকল, এটা একজনের কাজ; কিন্তু আমি বজকে চিনি। আমাকে হতাশ হতে হয়েছিল, আমাকে একটি নতুন জীবন শুরু করতে হবে। সে তাদেরকে একটি দুষ্ট হাসি উপহার দিল, আমি একাই যে কোনো জায়গায় যেতে পারি।

আমি তোমার স্বামীর সঙ্গে একটি চুক্তিনামা করতে পারি, ক্রস বলল এবং আমি জোর দিয়ে বলতে পারি সে অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে।

ডিরি আত্মবিশ্বাস সহকারে বলল, অ্যাথেনা চলচ্চিত্র ব্যবসায় আছে, সেখানে এর মতো আরো শত শত ঘটনাও আছে, তারা সাধারণত উত্তর দ্বারাই হার মানে। আমাদের প্রযোজক, তারা কোনোভাবেই ভয়ঙ্কর না। অ্যাথেনা রীতিমতো তার অনুশীলন চালাতে থাকল, তুমি বজকে চেনো না, সে বলল, আমি চিনি, শুধু বজের কারণেই কি তুমি কাজে ফিরতে পারছ না? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ, অ্যাথেনা বলল, সে আমার চিরদিনের জন্য চলার পথে অনুসরণ করবে। তুমি কি আমাকে ছবির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে পারো কিন্তু তার পর কি হবে?

ক্রস বলল, আমি কোনো কাজে ব্যর্থ হইনি, তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দেব।

অ্যাথেনা অনুশীলন বন্ধ করল, এই প্রথম সে সরাসরি ক্রসের চোখের দিকে তাকাল, আমি বজের তৈরি কোনো কারবারি কখনোই বিশ্বাস করব না, সে বলল।

ক্রস বলল, তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।

আমি আমার সময় অপচয় করিনি অ্যাথেনা আনন্দের সাথে বলল, আমি আমার অনুশীলন করছিলাম, তারপর সে তার দিকে তাকাল, আমি তোমার চেষ্টাকে স্বাগতম জানাই। আমি শুধু আমার ছবির প্রয়োজনে এমন একজন সাহসী অভিনেত্রীকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলাম। ক্রস বলল, সত্যিই আমি মৃত্যুকে চরম ভয় পাই।

ক্লডিয়া এবং স্কিপি সর্বদাই তার বিখ্যাত বাগানবাড়ি নিয়ে কথা বলছিল। যদি আমি ভেগাসে আসি, তাহলে তুমি আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেবে?

তার চেহারায় পরিবর্তন আসল, কিন্তু তার চক্ষু আনন্দে নেচে উঠল। তারপর সে বলল, যদি তুমি ভেগাসে আসো, আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, কেউই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।

অ্যাথেনা তাকে সরাসরি কথাগুলো বলল, কেউই বজকে থামাতে পারবে না। তুমি যদি সতর্কতা, যা তুমি করতে চাচ্ছ তা তুমি অবশ্যই করতে পারবে যা সব জনগণ সেদিন দেখতে পারে। ক্লডিয়া অসহিষ্ণুভাবে বলল, কেন কেন? অ্যাথেনা হেসে হেসে বলল, কারণ সে একদিন আমাকে ভালোবেসেছিল এবং আমার জীবন এর চেয়ে ভালো কিছুর দিকে মোড় নিতে পারত। সে এক মুহূর্তের জন্য তাদের দিকে তাকাল, এটা কোনো লজ্জার বিষয় না, সে বলল, দুজন মানুষের ভালোবাসা, দুজনের মধ্যে ঘৃণার জন্ম দিতে পারে?

আমেরিকার পরিচালকের মাধ্যমে একদিন একটা সভার আয়োজন করেছিল, যারা একজন মানুষকে পুরোপুরি পরিচালক হওয়ার সাহস যুগিয়েছিল।

মানুষটি ছিল লম্বা, সুদর্শন এবং সাধারণ পোশাক পরা, যাতে ছিল যথেষ্ট আধুনিকতা, একটি আরমানি সুট, টারবুল এবং এসাট শর্ট গুয়েকি টাই এবং ছিল বেলি জুতা। সে তাড়াতাড়ি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল, সে আমাকে বলেনি তুমি ব্যস্ত ছিলে, মিস অ্যাকুইটেন, সে বলল। আমি মনে করি সে দেখে হঠাৎ ভয় পেল, সে তার মনোবল দেখিয়েছিল আমি কেবল কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য এসেছিলাম যা ছিল অন্য রাত্রির মতো। আমি অপেক্ষা করতে পারি অথবা ফিরে আসতে পারি।

তার চাহনি বিরক্তিকর হলেও কথা ছিল বেশ মার্জিত। সে অন্য দুজন ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, হ্যালো, স্কিপি।

স্কিপি ডিরি রাগান্বিত হয়ে তাদের দিকে তাকাল, তুমি বৈধ অনুমতি ছাড়া তার সঙ্গে কথা বলতে পারো না। সে বলল, তুমি তার চেয়ে ভালো জানো, জিম। গোয়েন্দা ক্লডিয়াকে প্রস্তাব দিল এবং ক্রস বলল, জিম লুজি।

তারা জানত সে কে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত গোয়েন্দা। তার কার্যকলাপ বিভিন্ন ছবির কাহিনী হিসেবে ঠায় পেয়েছে। সে নিজেও অনেক ছবির বিভিন্ন অংশে ছোটখাটো অভিনয় করেছেন। তাছাড়া সে ছিল বড়দিনে ডিরির বড় উপহার, তাই ডিরি অভিভূত হয়ে বলল, জিম দেরিতে আমাকে ফোন দেয় এবং আমি মিস অ্যাকুইটেনকে নিয়ে পুরোপুরিভাবে একটি সভার আয়োজন করি।

লুজি তার দিকে তাকাল এবং মার্জিতভাবে বলল, ঠিক আছে স্কিপি।

কিন্তু অ্যাথেনা বলল, আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকব না, এখন তার কারণ আমাকে জিজ্ঞেস করো না। আমি কিছু মনে করব না। লুজি এতক্ষণ বেশ শান্ত ছিল কিন্তু তার চোখে ছিল উদ্বিগ্নতার চিহ্ন। তাছাড়া তার মধ্যে অনেক বছর অপরাধ জগতে কাজ করার সতর্কতা বিদ্যমান ছিল।

সে বলল, আমি তাদের সামনে ছিলাম? অ্যাথেনার মনে বেশিক্ষণ স্থিরতা ছিল না এবং সে সব কিছুই উৎকর্ষতার সঙ্গে পুরোপুরি বলে ফেলল। আমি পুলিশকে যতটা বিশ্বাস করি তার চেয়ে তাদের বেশি বিশ্বাস করতাম।

লুজি তার প্রতিক্রিয়াই অন্তর্ভুক্ত করল, এটা ছিল খুবই পরিচিত, আমি শুধু জানতে চাই কেন আপনি আপনার স্বামীর দায়িত্ব অন্যকে দিতে চান। সে কি আপনাকে কোনোভাবে কোনো দিন হুমকি দিয়েছিল? তা, না, অ্যাথেনা সহসা বলল, সে কেবল এক বিলিয়ন জনগণের কাছে আমাকে ডুবাতে চেয়েছিল এবং যাতে আমার মান ক্ষুণ্ণ হতো। পরের দিন সে বের হলো।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি শুধু ভাবি, আমি আপনাকে একটু সাহায্য করলাম।

ডিরি বলল, জিম আমাকে ফোন করেছিল।

আর এটাই, ক্রসের উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছিল। সে চিন্তিতভাবে ডিরির দিকে তাকিয়েছিল, লুজিকে অবজ্ঞা করল এবং লুজিও তার দিকে তাকাতে বিরক্তি ভাব দেখাল।

লুজি বলল, আমিই, সে অ্যাথেনার হাতব্যাগটি একটি চেয়ারের ওপরে দেখল এবং হাতে নিল, আমি তার মধ্যে একটি রোড লাইসেন্স দেখলাম। সে বলল, দুই হাজার ডলার, সে সরাসরি অ্যাথেনার দিকে তাকাল এবং ভদ্রতা সহকারে বলল, ইচ্ছে করলে আপনি আমার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন। যে কেউ কেন সামান্য কিছু করার জন্য এমন টাকা পেতে পারে?

অ্যাথেনার মুখ ভারী হয়ে গেল, সে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল, সে বলল, এটা একটি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, এখান থেকে বেরিয়ে যাও।

লুজি, তাড়াতাড়ি তার কাছ থেকে বেরিয়ে গেল। তার মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো যা সে চেয়েছিল।

তুমি মানুষ বটে, ক্লডিয়া বলল, সে তার হাত অ্যাথেনার কাঁধে রাখল। কেন তোমাকে পাগলের মতো মনে হচ্ছে? আমি পাগল না অ্যাথেনা বলল, আমি তাকে একটি ম্যাসেজ পাঠাচ্ছিলাম।

তার পর তিন জনই চলে গেল, তারা ম্যালিবু গেল। ডিরি জোর দিয়ে ক্রসকে বলল যে, এটা সেই জায়গা, যেখানে তুমি অবসর কাটাতে পারো, এখানে গরুর মাংস এবং কনি আইসল্যান্ডের হটডগ পাওয়া যায়।

তাই তারা ডিরির কথামতো খাবার খেল। অ্যাথেনা আর কাজে ফিরে গেল না। আমি সব সময় তা জানতাম, ক্লডিয়া বলল, কেন সে গোয়েন্দা জিমকে দেখে পাগলের মতো আচরণ করল।

ডিরি হাসল এবং ক্রসকে বলল, তুমি কি এটা পেতে চেয়েছিলে?

না, ক্রস বলল,

ডিরি বলল, এটা হচ্ছে হলিউডের পৌরাণিক কাহিনী যার সূত্রে সবাই তারকাদের মধ্যে ফাটল খুঁজে পায়। আজকে পুরুষ তারকারা অনেক এগিয়ে যার কারণ তুমি দেখবে অনেক মেয়ে তাদেরকে দেখার জন্য অনেক দামি হোটেলে ভিড় জমায়। মেয়ে তারা অনেক কম, একটি মেয়ে সাধারণত বাড়িতে কাজ করে, একজন মালি, কুমার ভাগ্যবান হতে পারে, ইচ্ছা করলেই সে তার নিজের পথ খুঁজে বের করতে পারে, এটা আমার সাথেও ঘটেছিল।

স্টান মানুষেরা ভালো স্কোর করতে পারে এবং নাবিকরাও ভাগ্যবান হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্র জগতে ভাগ্যবান হওয়া কিংবা টিকে থাকা বড়ই মুশকিল, বিশেষ করে মেয়ে তারকাদের ক্ষেত্রে। খুব কদাচিৎ আছে যারা শেষ পর্যন্ত সুপার তারকা হওয়া পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে। চলচ্চিত্র জগতে টাকা আর ক্ষমতা ছাড়া কিছুই ভাবা যায় না। এখন তুমি জিম লুজিকে নাও, সে একজন বেশ সুদর্শন যুবক, তার চেহারা মানুষের কাছে এতই প্রিয় যে সবাই তাকে বিশ্বাস করতে পারে। সে নিজেও তা জানে। আর যার কারণেই সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। বস্তুত যদি সেটা ছিল তার কৌশল। এটা ছিল অ্যাথেনার সঙ্গে মিলিত হওয়ার তার প্রাথমিক পদক্ষেপ। তার অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার অর্থ হলো যেন তার মধ্য থেকে দুর্বলতা বেরিয়ে আসে। অ্যাথেনা তাকে বের হতে বাধ্য করেছিল। তাহলে সে কি যিশুখ্রিস্টের মাতা? ক্রস বলল, একজন সিনেমার তারকা, ডিার ক্রস বলল, তুমি জানো, সে স্টুডিওর মালিক হতে চেয়েছিল, চেষ্টা করেছিল আরও অনেক টাকা পাওয়ার?

সে এমন কিছু করতে পারে না, ক্লডিয়া বলল, সে সত্যি একজন ভালো অভিনেত্রী।

সে তার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করত? ক্রস জিজ্ঞেস করল। তুমি এই ব্যবসা বুঝবে না, ডিরি বলল, প্রথমত স্টুডিওটি তাদের ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তারকারা সর্বদাই এমন কিছু করে। দ্বিতীয় যদি সে কোনো নিরাপত্তা চাইত, এটা তার জন্য ঠিক হতো। কিন্তু সে সব সময় শান্ত থাকত, তাছাড়া সে ববি বানজকে ঘৃণা করে এবং সে আমাদের ক্ষেত্রে তেমন উন্মত্ত ছিল না।

আমরা সারা বছরই তার সঙ্গে কাজ করেছি কিন্তু সে কখনোই আমাদের সাথে বেঈমানী করেনি।

খুব খারাপ তুমি, তাকে সাহায্য করতে পারলে না, ক্লডিয়া ক্রসকে বলল, কিন্তু সে কোনো উত্তর দিল না।

সমস্ত আলোচনা চলছিল ম্যালিবুতে প্রত্যাবর্তন করার সময়। ক্রস খুব চিন্তা করছিল। এটা দেখার জন্য তার একটি সুযোগ ছিল। এটা বিপজ্জনক হতে পারত, কিন্তু যদি সে কোনো কাজ করত তাহলে পরিশেষে ক্লোরিকুজিও পরিবারের আইন ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারত।

স্কিপি ক্রস বলল, আমার একটি সুযোগ আছে, আমি তোমাকে এবং স্টুডিওটিকে পুনরায় নতুন করে তৈরি করতে চাই। আমি আমার সামর্থ্যে এখন তোমার ছবি কিনব। আমি তোমাকে পঞ্চাশ মিলিয়ন দেব। সটা দিয়ে তুমি কাজটা সম্পন্ন করবে এবং বাকিটা স্টুডিওর মধ্যে ভাগ্য করে দেবে।

তুমি এক হাজার মিলিয়ন পেয়েছ? স্কিপি ডিরি এবং ক্লডিয়া–উভয়েই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল।

আমি মানুষকে চিনি যাদের সামর্থ্য আছে।

ক্রস বলল, তুমি অ্যাথেনাকে ফিরে পাবে না এবং অ্যাথেনা ছাড়া ছবি তৈরি করা যাবেন না। ডিরি বলল। আমি বললাম, আমি একজন বড় মাপের প্রযোজক। ক্রস বলল, তুমি কি এলি ম্যারিয়নের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করে দিতে পারবে?

হ্যাঁ ডিরি বলল, কিন্তু আমি কেবল ছবির একজন প্রযোজক হিসেবে থাকব। সভাটি আয়োজন করা কোনো সহজ কাজ নয়। লডস্টোন স্টুডিও, এলি ম্যারিয়ান এবং ববি বানজকে আয়ত্তে আনতে হতো যাতে ক্রস ডি লিনাকে টাকার জন্য অন্য কারো কাছে হাত বাড়াতে হয় না হয়। যার ফলে তার অর্থের ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ হতো। নিশ্চিত সে ভেগাসের জানাদু হোটেলের কিছু অংশের মালিক ছিল। কিন্তু তার কোনো অংশীদায়ত্বের দলিল ছিল না, এটা সে জোরপূর্বক ভাব ভোগদখল করত। ডিরি তার জন্য মনোক্ষুণ্ণ, ক্লিনসার তখন ক্রসের কাছ থেকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ধার নিল।

তার বোনের উপদেশ মতে, ক্রস ডি লিনা তার আইনজীবীর পরামর্শে একটি ব্যবসা করার জন্য মলি ফ্লাডারের কাছে দ্বারস্থ হলো। মলি ফ্লান্ডার বশ্যতা স্বীকার করে ক্রসকে তার অফিসে গ্রহণ করল। ক্রস ছিল খুবই সতর্ক, সে জানত, তার সম্পর্কে, পৃথিবীর সব জায়গাতেই সে বসবাস করেছিল, সে কখনও কোনো মেয়ের সঙ্গে মিলিত হয়নি- যার সর্বদাই এক সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল। ক্লডিয়া তাকে বলল, মলি ফ্লান্ডার হলিউডের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। স্টুডিওর প্রধান তাকে ডাকল, মনস্টার প্রতিনিধি মেলোর কাছে বড় ব্যবসার জন্য অর্থ সাহায্য কামনা করল। অ্যাথেনার মতো তারকারা স্টুডিওতে অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে কোলাহল সৃষ্টি করে। ফ্লান্ডার টিভির মিনি সিরিয়ালটি প্রচার বন্ধ করে দিল, তখন তার এক সহকারী পরীক্ষা করে দেরিতে তাকে মেইল করল।

সে ক্রসের প্রত্যাশার চাইতেও বেশি সুন্দরী ছিল, সে ছিল বেশ লম্বা ও ফ্যাকাশে কিন্তু পোশাক ছিল খুবই রুচিসম্মত।

তার চেহারা ছিল পরীর মতো জাদুকরি, পাখির মতো নাক, খাদক মুখ, এবং ভয়ংকর ধূসর চোখ, যা দেখে মনে হতো সে খুব বুদ্ধিমতী, সহজাতপূর্ণ, আবেগপ্রবণ, তার চুলগুলো মাথার ওপর সাপের কুণ্ডলীর মতো পাকানো। হাসির আগ পর্যন্ত তাকে খুব বীভৎস দেখাত।

মলি ফ্লান্ডার ক্রসকে দেখামাত্র তাকে সুদর্শন বলে মন্তব্য করল। সে অবাক হয়েছিল কারণ তার ধারণা ছিল ক্লডিয়ার ভাই হবে গেঁয়ো প্রকৃতির। সে খুব জোর দিয়ে বলল সে যেমন সুদর্শন তা ক্লডিয়ায় নয়। তার ছিল সতর্ক চাহনি যা দেখে পৃথিবীর কেউই অভিমত পোষণ করবে না। যদিও সে আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ হলো তবুও সে ক্রসকে ভালো সহকারী হিসেবে গ্রহণ করল। সে ভেগাস পছন্দ করত না তারপরও সে ক্রসকে সাদরে গ্রহণ করল।

মি. ডি. লিনা, সে বলল, একটা বিষয় আমাকে পরিষ্কার করে দাও। ব্যাখ্যা দাও। সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। আমি তার আয়ত্তে বিধায় সে আমার ওপর জোর করতে পারে। এখন যদি তুমি স্টুডিওর ব্যবসা করতে চাও এবং অ্যাথেনা যদি কাজে না ফিরে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ক্রস তার দিকে তাকাল। এই মেয়ের পাল্লায় পড়ে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। সে তার কাগজপত্র টেবিলে রাখত। অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিল।

আমাকে দেখতে দাও, একটু বুঝতে দাও, মলি বলল, তুমি স্টুডিওতে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলে, ঠিক। ছবিটি নির্মাণ করতে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। সুতরাং তোমার মূলধন দাঁড়িয়েছে একশ মিলিয়ন ডলার। তদুপরি তোমার অংশগ্রহণের ফলে ছবিটি ব্যবসা সফল হয়েছিল। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হতেও পারত। তা হতো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

ক্রস আকর্ষণীয় হতে লাগল যখন সে তাকে চেয়েছিল। কিন্তু সে ভাবল তার আকর্ষণ মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গ দিতে সাহায্য করত না। আমি বুঝলাম তার বৈদেশিক ভিডিও, টিভি বিক্রয়ের টাকা কোনোভাবেই তার ছবির ক্ষতিপূরণ করতে পারবে না সে বলল, এটি মিস অ্যাকুইটেনের ছবির জগতে ফিরে আসার এটাই মূল সমস্যা এবং ইচ্ছে করলে তুমি তাকে সাহায্য করতে পারো।

না, আমি পারি না, মলি বলল। আমি তোমাকে আমার সাথে জড়াতে চাই না। আমি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। প্রত্যেকেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

সে তার ছবির কাজ বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তারপর অ্যামেচার ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করার চেষ্টা করল। কিন্তু আমি তা করতে দেব না, ক্রস বলল।

ক্রস চিন্তিত হলো, তুমি কিভাবে এটা করবে?

ম্যারিয়ন আমাকে একা পেতে চেয়েছিল, সে বলল, সে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি। আমিও তার আইনের লড়াই করব, আমি তার স্টুডিও এবং সকল ব্যবসা ধ্বংস করে দেব। অ্যাথেনার আবার কাজে ফিরে আসার কোনো সামর্থ্য নেই।

যদি তুমি আমাকে আশ্বস্ত করো, তাহলে তুমি তোমার ক্যারিয়ারে সফল হতে পারবে, ক্রস বলল। সে তার পকেট থেকে একটি খাম বের করে তার হাতে দিল। সে এটা খুলে পরল। তারপর ফোনটা অন করে কয়েকটি কল করল যাতে তার বাধা দূর হলো।

সে ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল এবং বলল, আমি তোমাকে তিরস্কার করছি না, এই শহরের সবচেয়ে বড় প্রযোজকের সঙ্গে আমি এটা করছি।

স্কিপি ডিরির মত? ক্রস হাসতে হাসতে বলল। আমি তার ছয়টি ছবিতে টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, তাদের মধ্যে চারটি ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত আমি টাকা পাচ্ছি না।

কারণ তুমি আমার হয়ে আর কাজ করছ না, মলি বলল, এখন আমার রাজি হওয়ার পূর্বে তোমাকে বলতে হবে তুমি কি ভাবে অ্যাথেনাকে কাজে ফিরাতে পারো সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। আমি তোমার সম্পর্কে কিছু গুজব শুনে।

ক্রস বলল, এবং আমিও তোমার সম্পর্কে শুনেছি। আমি অনেক বছর আগের কথা স্মরণ করি যখন তোমার একজন ক্রিমিনাল আইনজীবী ছিল, সে তার গালফ্রেন্ডকে খুন করেছিল, তুমি পেয়েছিলে, সে এক বছর রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলে। সে এক মুহূর্তের জন্য বিরতি দিল, তারপর বলল, তুমি তার অবস্থান নিয়ে চিন্তা করো না।

মলি তার দিকে তাকাল, তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনি।

ক্রস বলল, একটি মিথ্যা একটি ছোট আকর্ষণ বহন করে, মলি, সে বলল, আমি তোমাকে ফোন করতে পারি, সে তার মাথা নোয়াল। ক্রস বলল, তুমি জানো আমি ভেগাসের একটি হোটেলে পলাইয়া আছি। আমি শিক্ষা নিয়েছিলাম, টাকা এক প্রকার জাদু। তুমি টাকা দিয়ে যে কোনো কজ সম্পন্ন করতে পারো, তাই আমি অ্যাথেনাকে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য যাচ্ছি যাতে করে অ্যাথেনা পঞ্চাশ শতাংশ পাবে, আমি ছবি বানাব। তুমি যদি ব্যবসার সঠিক ব্যবহার করতে পারো তাহলে আমরা ভাগ্যবান হবে, তার জন্য ত্রিশ মিলিয়ন ডলার থাকবে। সে এক মিনিট বিরতি নিল এবং বলল, মলি, অন্তত একবার ত্রিশ মিলিয়ন আবার সুযোগ নাও? মলি তার মাথা নড়াল, অ্যাথেনা সত্যিকার অর্থে টাকাকে মূল্যায়ন করে না।

এক প্রকার মোহ আমাকে হতবুদ্ধি করে। কেন স্টুডিও তাকে ভালো ব্যবসা দিতে পারেনি। ক্রস বলল, এই প্রথম তাদের সভায় আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসছি, তুমি ছবি তৈরির স্টুডিও সম্পর্কে জানো না। তারা উদ্বিগ্ন যেসব তারকা একইভাবে স্টুডিওকে অগ্রগামী হতে বাধা দেয়। কিন্তু তারপরও আমরা চালা। স্টুডিও তোমার ব্যবসা পরিচালনা করে। আমি মনে করি, তারা বড় অংকের টাকা শুধু সবার মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়।

তারা তা করতে বাধ্য। তাছাড়া তারা কিছুটা লাভও আশা করে, কিন্তু আমি তোমাকে পুনরায় বলছি, অ্যাথেনা তোমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে, সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, তারপর উত্তেজনার হাসি দিয়ে বলল, আমি ভেবেছিলাম তোমার ভেগাসে জুয়া খেলা মোটেই ঠিক ছিল না।

ক্রস তার দিকে ফিরে হাসল। প্রত্যেকেই জুয়া খেলে, আমি খেলেছিলাম যখন আমার লভ্যাংশ ঠিক ছিল এবং হোটেলটি বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলাম ছবির ব্যবসায় মনোনিবেশ করলাম। সে এক মিনিটের বিরতি নিল। আমি মনে করি এটা খুবই মজার ছিল।

আমি জানি মলি বলল, এটা শুধু কল্পনা করলেই চলবে না। এটা এক প্রকার দরজার মধ্যে পা রাখার মতো ব্যাপার ক্রস বলল। আমি আর একবার করতে চাই যার জন্য তোমার সাহায্য আমার প্রয়োজন হবে।

আমি তোমার সবকিছুই অনুমান করেছি। আমি তোমার প্রতিনিধি মাত্র সে বলল। কিন্তু তুমি যদি পুনরায় ব্যবসা আরম্ভ করো। তুমি প্রথমেই একশত মিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সে ফোনটা নিয়ে কথা বলল। তারপর কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে ক্রসকে বলল, আমরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করে যাচ্ছি এবং তোমাকে তিনদিনের বিবেচনায় রেখেছি।

ক্রস হতবাক হলো, এই প্রথম সে বলল। তাদের, না আমাকে। মলি বলল, এটা তাদের ছবির ব্যবসা করার একটি সুবর্ণ সুযোগ–আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না, আমি জানি, ক্রস বলল, কিন্তু প্রস্তাবটি, অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে আশ্বস্ত করে। আমার পরিকল্পনায় সাহায্য করবে যা তোমার এবং আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

না, তুমি এটা করতে পারবে না, মলি বলল। কিছুক্ষণ পর ক্রস চলে গেল। মলি কিছু স্মরণ করার চেষ্টা করল। কেন ক্রস ডি লিনা অনেক পূর্বের ঘটনা উল্লেখ করল, যখন সে একটি শিশু পেয়েছিল এবং যা ছিল তার বিখ্যাত জয়। কেন তার ছবি জগতে এই ঘটনা?

তিনদিন পর ক্রস ডি লিনা এবং মলি ফ্লাডারসকে সডস্টোন স্টুডিওতে যাওয়ার আগে তার অফিসে মিলিত হলো যাতে সে সকল ব্যবসায়িক কাগজ পত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারল। তারপর মলি তাদের সবাইকে মারসিটিজি SL 300 করে স্টুডিওতে নিয়ে গেল।

যখন তারা গেইট অতিক্রম করল, মলি ক্রসকে বলল, সবকিছুই পরীক্ষা করে নাও, আমি তোমাকে আমেরিকান গাড়ি কেনার জন্য ডলার দেব। তারপর তারা বিভিন্ন রঙের গাড়ি দেখল, মারসিটিজি, এসটন মারটিনস BMWS, Rolls Royees, ক্রস একটি কাডিলিক গাড়ি দেখল এবং তা নেওয়ার জন্য সমর্থন করল। মলি আনন্দের সাথে বলল, কিছু গরিব দুর্বল লেখক নিউইয়র্ক থেকে এসেছে।

অনেক বড় জায়গা নিয়ে লডস্টোন স্টুডিওটি যার মধ্যে আরও অনেক ছোট ছোট বাড়ি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রধান বাড়ির ১০টি তালা আছে এবং দেখতে ছবি তৈরির সেটের মতো।

স্টুডিওটি ১৯২০ সালে শুরু করার প্রাক্কালে বেশ সাড়া জাগিয়ে ছিল। তাছাড়া প্রয়োজনীয় মেরামত শুরু করা হয়েছিল।

স্টুডিওর প্রশাসনিক বিল্ডিংটি ১০নং, তা ছাড়া সব সময়ই অফিসিয়াল কাজে লোকে পরিপূর্ণ থাকে। যেখানে এলি ম্যারিয়ন এবং ববি বানজ তাদের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে। দুটি তালার মধ্যে অনেক ছোট ছোট কনফারেন্স রুম আছে এবং পাশে একটি বার রুম এবং বার রুমের সঙ্গে একটি রান্নাঘর আছে। প্রতিটি কনফারেন্স রুমে আরমার চেয়ার এবং ডার্ক রেড টেবিল রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ছবির পোস্টার ওয়ালে লাগানো আছে এলি ম্যারিয়ন, ববি বানজ, স্কিপি ডিরির টেডিওর প্রধান এবং দুজন অন্য আইনজীবী তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি প্রধান কাউন্সিলরকে ব্যবসায়িক কাগজ-পত্রগুলো ছিল এবং তিন আইনজীবী তা পড়ার জন্য সেখানে উপস্থিত হলো। তাদের খুশি করার জন্য তাদের পছন্দমতো ব্রান্ডের পানীয় আনা হলো, তারপর তারা অদৃশ্য হলো, স্কিপি ডিরির সবার সঙ্গে পরিচয় করছিল। এলি ম্যারিয়ন সব সময়ই জোর প্রয়োগ করত যাতে ক্রস তাকে ডাকে। তারপর তাদের মধ্যকার একটি গল্প বলা শুরু হলো। তার দাদা এলি ম্যারিয়ন বলল, ১৯২০ সালে এই কোম্পানির কাজ শুরু হয়। সে লডস্টোন স্টুডিতে ফোন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তখন জার্মানের আইনবিদ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হন। মাত্র ১০ হাজার ডলারের অভাবে কোম্পানিটি এই ভুল করেছিল। আজ তার খেসারত দিতে হচ্ছে। আমি কোনো মজা করছি না, আসলে এটাই ছিল সেই সময়ে আমাদের ব্যবসায়িক ভুল এবং যার অনেক প্রমাণ দেখাতে পারব। আসলে আমি ব্যাপারটাকে অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ভাবে দেখেছিলাম। আর এই সকল সৎ গুণের জন্যই কোম্পানিটি সেই সময় যথেষ্ট ক্ষমতা এবং সুনাম অর্জন করেছিল। তখন মলি অফিসে উপস্থিত ছিল। ক্রস স্টুডিও বাবদ পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করল, তাতে স্টুডিওর প্রতি তার অধিকার সৃষ্টি হলো, স্কিপি ডিরি একজন প্রযোজক। ক্রস ছবিটি শেষ করার জন্য টাকা দিল। লডস্টোন স্টুডিও সাধারণ যে কোনো ছবি থেকে পাঁচ পারসেন্ট লাভ পায়।

তারা সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনল। ববি বানজ বলল, লভ্যাংশ মজার, এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া এবং আমরা কিভাবে জানব যে তুমি, তোমার লোজন এবং অ্যাথেনা এটাকে ভালোভাবে মেনে নাও।

ক্রস মলির কথা শুনে অবাক হলো। কিছু কারণে সে মনে করল যে তাকে ব্যবহার করার চাইতে ভেগাসে বিষয়টা মীমাংসা করা ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু মলি সারাক্ষণই চেঁচামেচি করত, তার চেহারা ডাইনীর মতো। কোনো সমস্যা, ববি, সে বানজকে বলল, তুমি আমাদের কাছে একটি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিলে। তোমার নিশ্চয়তা পূরণ করতে তুমি ব্যর্থ হয়েছ, তুমি সভায় দরজা খুলে আমাদের অপমান করেছিলে, যদি তুমি ক্ষমা না চাও, তাহলে আমি মি ডি. লিনার কাছে অভিযোগ করব এবং এতে তুমি তিরস্কৃত হবে।

স্কিপি ডিরি তা অমান্য করল, মলি, ববি, আসল। আমরা এখানে ছবিটির ব্যয়ভার কমানোর চেষ্টা করছি। চলো আমরা এ বিষয়টা কথা বলি…।

ম্যারিয়ন সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করল এবং একটু মৃদু হাসি দিল কিন্তু সে কিছুই বলল না। সে ভালো অথবা মন্দের কিছুই বলল না।

সে মনে করল, এটা কঠিন প্রশ্ন, ববি বানজ বলল, ক্রস অ্যাথেনাকে কাজে ফেরানোর জন্য কি প্রস্তাব দিতে পারত, তাই নয় কি?

ক্রস হাসতে হাসতে সেখানে বসল। মলি তাকে তার সামর্থ্য মতো উত্তর দিতে বলল।

সে বলল, মি. ডি লিনা অবশ্যই এই প্রস্তাবের জন্য বিশেষ কিছু করেছে। কেন এটা তোমাকে বলা উচিত? যদি তুমি তাকে দশ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দাও, আমি নিশ্চিত যে সে কাজটি করবে। দশ মিলিয়ন ডলার খুবই সামান্য।

এমনকি ববি বানজ এটার জন্য হাসল। স্কিপি ডিরি বলল, তারা মনে করে ক্রস নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝুঁকি নেবে না। তা তাদের মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা সৃষ্টি করল।

স্কিপি, মলি বলল, আমি তোমাকে এক মিলিয়ন সমমূল্যের তালিকা তৈরি করে দেখব, এটি ছাড়া তুমি ছবিটি তৈরি করতে পারবে না।

পার্থক্যটা কি হবে?

ববি বানজ এটা মানল না, কারণ স্কিপি আগে আমাদের স্টুডিওর কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছিল।

তারা সবাই হাসল, ক্রস এই সভা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হলো, সে তার ধৈর্য হারাল, তাছাড়া সে জানত তার তা দেখার তত আগ্রহ নেই। সে মৃদু স্বরে বলল, আমি খাটো হতে যাচ্ছি, যদি এটা খুবই দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ, তবুও আমরা সবকিছুই ভুলতে পারব।

বানজ রাগান্বিত হয়ে বলল, আমরা টাকা সংগ্রহের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। ছবিটি সারাবিশ্বে প্রচার করতে হাফ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

যদি তুমি অ্যাথেনাকে ফেরাতে পারতে, মলি দ্রুত বলল। আমি তোমাকে বলতে পারি আজ সকালে তার সাথে কথা বলেছিলাম। ইতিমধ্যে সে তার সমস্ত চুল কেটে ফেলেছে যাতে তাকে কুৎসিত লাগে। আমরা তাকে অভিনয় করার জন্য নকল চুল দিতে পারি, বানজ বলল। এখন সে ক্রসের সাথে সময় কাটাচ্ছে, ক্রস তাকে ফিরে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে আমতা আমতা করছে।

সে বলল, যদি অ্যাথেনা না ফিরে তাহলে তোমার পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে এবং তুমি ছবিটি শেষ করতে পারবে না, কে তোমার প্রাথমিক কাজ সম্পূর্ণ করবে? আমি করব ক্রস বলল।

আহ, বানজ বলল, যদি তুমি এটা মুক্তি দিতে চাও তাহলে সম্ভবত এর সঙ্গে সামান্য অশ্লীল দৃশ্য যোগ করতে হবে।

এটা কি সম্ভব, ক্রস বলল।

মলি ক্রসের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানাল, শান্ত থাকার জন্য সতর্ক করল। যদি তুমি এই ব্যবসা করতে রাজি হও, বানজকে বলল, সবকিছুই চুক্তির পূর্বে আলোচনা হবে যাতে ভিডিও, টিভি এবং লাভের ভাগ-বাটোয়ারা সব কিছুই উল্লেখ থাকবে। চুক্তিপত্র অবশ্যই গোপন থাকবে। কেবল ডি লিনা থাকবে সহকারী প্রযোজক হিসেবে।

ঠিক আছে, স্কিপি ডিরি বলল, কিন্তু আমার টাকা শুধু স্টুডিওকে দাঁড় করাতে ব্যয় হবে।

এই প্রথম ম্যারিয়ন কথা বলে উঠল। সব কিছুই ভাগাভাগি ব্যাপারটা তেমন না। ক্রস তার আইনজীবীর মাধ্যমে সবকিছুই চুক্তিপত্রে উল্লেখ করবে।

হ্যাঁ ক্রস বলল।

আমি এটা রেকর্ড করতে চাই, ম্যারিয়ন বলল, তুমি অবশ্যই জানো আমরা একটি অসমাপ্ত ছবির কাজ করার পরিকল্পনা করছি এবং এটি নির্ঘাত ক্ষতি বয়ে আনবে। আমরা অ্যাথেনাকে কাজে ফিরে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা তোমার প্রতিনিধি হতে পারি না যাতে সে ফিরে আসতে পারে। যদি তুমি এই কাজটা করতে পারো তাহলে তুমি পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পাবে। তার জন্য আমরা দায়ী থাকব না। তুমি যদি তাকে নিশ্চিত কাজে ফিরাতে পারো তাহলে সেজন্য অ্যাথেনা কোনো টাকা-পয়সা পাবে না। আমি তার সম্পর্কে নিশ্চিত না ক্রস বলল। আমি তাকে ভুলে যাব এবং ক্ষমা করব।

বানজ বলল–তুমি তোমার টাকার ব্যাপারে কোনো উত্তর দেওনি?

ক্রস মাথা ঝাঁকাল।

ম্যারিয়ন বলল, এটা এক প্রকার দুর্নীতি। তুমি মানুষের টাকা নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারো না। যারা তোমাকে বিশ্বাস করেছিল শুধু এই কারণে তারা মনের দিক দিয়ে ধনী।

ক্রস সোজাসুজি বলে ফেলল। ধনীদের আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণার কারণে আমি এটা করছিলাম।

বানজ তিরস্কার করে বলল, এটা এক প্রকার কৌশল।

ক্রস বলল, আমি আমার সারাটা জীবন মানুষর কল্যাণে ব্যয় করে যাচ্ছি। আমার ভেগাস হোটেলে দারুণ সুদর্শন ব্যক্তিদের জুয়া খেলে টাকা নষ্ট করা থেকে বিরত রেখেছিলাম এবং আমি তা করেছিলাম তাদের সুখী করার জন্য। তার অর্থ আমি তাদের তা দিয়েছিলাম যা পেয়ে তারা সুখী হয়। আমি তা মিস অ্যাকুইটেনের জন্যও করবো।

বানজ তার সমস্ত ধারণা অপছন্দ করল। সে নিশ্চিত ধারণা করেছিল যে, তার স্টুডিওটি প্যাঁচ-কলে পড়তে যাচ্ছে। সে দ্রুত বলে ফেলল, যদি আমরা অ্যাথেনাকে খুঁজে পাই তাহলে তাকে কাজে রাজি করাব। আমরা কি নিশ্চিত আমরা কি চুক্তিপত্র ধরে রাখতে পারব?

আমি অনেক দিন ধরে ছবির ব্যবসা করতে চাই, ক্রস বলল।

আমি লর্ডস্টোন স্টুডিওতে কাজ করতে চাই। সেখানে প্রত্যেকেরই প্রচুর টাকা আছে।

এলি ম্যারিয়ন ক্রসের সভার সবকিছুই পুনরায় পড়ল, চেষ্টা করল একটি সারাংশ বের করার। লোকটি ছিল খুবই স্থির প্রকৃতির। প্যাসেফিক ওশেন নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অ্যাথেনার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র ছিল না। সেখানে পছন্দমতো কোনো নিয়ম ছিল না। একটি সিদ্ধান্ত তৈরি করা হলো, কিন্তু রুমের মধ্যে মানুষের ভিড় থাকার জন্য সিদ্ধান্ত তৈরি করতে কঠিন হলো। তারপরও ম্যারিয়ন সঠিক সিদ্ধান্ত তৈরি করার চেষ্টা করল।

স্কিপি ডিরি বলল, সম্ভবত অ্যাথেনা এক প্রকার পাগল, হয়তো সে কিনারায় পৌঁছেছিল। তাই আমরা নিশ্চয়তার সূত্র বের করতে পারি। মলি ফ্লাডার বলল, সে রুমের অন্যদের চেয়ে ভালো মনের অধিকারী, তুমি তাকে পাওয়ার পূর্বে আমি তার সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করেছি। ববি বানজ সরাসরি ক্রসের চেহারার দিকে তাকাল। অ্যাথেনার সাথে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না। তুমি কি এই মুহূর্তে ঐ কাজটা নেবে?

হ্যাঁ, ক্রস বলল, সে বানজকে তার অপছন্দের ব্যাপারটি জানিয়েছিল।

ম্যারিয়ন, এটা পর্যবেক্ষণ করে সন্তুষ্ট হলো। অবশেষে সভার কিছু সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা মাফিক গৃহীত হল। বানজ খারাপ লোকটিকে চিহ্নিত করল। প্রতিষ্ঠিত করল। ধারণা করা হলো কি ভাবে মানুষ তাকে তীব্র ঘৃণা করে এবং এতে কি সত্যিই তার কোনো দোষ নেই এটা তাকে নিয়ে খেলার মতো একটা বিষয়, যদিও তা তার ব্যক্তিত্বে বারবার আঘাত করছে।

আমরা ছবিটি থেকে বিশ শতাংশ লভ্যাংশ চাই। বানজ বলল, আমরা দেশে এবং বিদেশে চালাব। যে কোনো দুঃসময়েও আমাদের অংশদারিত্ব থাকবে।

স্কিপি ডিরি স্বস্তির সাথে বলল, বি তারা যদি ছবি তৈরির শেষ মুহূর্তে মারা যায়, তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

ঠিক আছে বানজ বলল।

মলি বলল, তুমি তাদের কাছে থাকতে পারো। কিন্তু তুমি দশ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ পাবে না। তুমি প্রচার করার সময় একটা সুযোগ তৈরি করতে পারো। এবং তোমার কোনো ঝুঁকি নেই। নাও অথবা ছেড়ে দাও।

এলি ম্যারিয়ন তেমন কিছুই মন্তব্য করল না, সে সোজা হয়ে দাঁড়াল এবং খুব মেপে মৃদু স্বরে বলল, বারো শতাংশ। সে বলল, আমারও ব্যবসা আছে।

সে কিছুটা বিরতি নিল এবং ক্রসের দিকে সরাসরি তাকাল। সে বলল, এটা তেমন কোনো বেশি টাকা নয়। কিন্তু এটা হতে পারে বড় মাপের চলচ্চিত্র এবং আমি এটাকে জটিল করতে চাই না। তাছাড়া আমি খুবই দেখতে ইচ্ছুক যা ভবিষ্যতে ঘটবে। সে মলির দিকে ঘুরল এখন, হাঁ অথবা না বলো?

মলি ফ্লান্ডার ক্রসের দিকে না তাকিয়েই স্বাক্ষর করতে করতে বলল। হ্যাঁ।

কিছুক্ষণ পর এলি ম্যারিয়ন এবং ববি বানজ সভাকক্ষে বসল। তারা উভয়েই নিশ্চুপ থাকল। শেষে ম্যারিয়ন বলল, এখানে একটি নৈতিক প্রশ্ন আছে।

বানজ বলল, আমরা গোপনে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলাম, আমরা যদি তেমন ভাবি, তাহলে আমরা তাকে ফোন করতে পারি।

ম্যারিয়ন মাথা ঝাঁকাল। তাহলে আমরা ছবিতে ক্ষতিগ্রস্ত হব, ক্রস হলো আমাদের আশা-প্রত্যাশা, তাছাড়া যদি সে কিছু ভুল বের করতে পারে তবে তা আমাদের জন্য হবে খুবই বিপজ্জনক।

তাতে তার কি, তার লডস্টোনকে স্পর্শ করার সাহস নেই বানজ বলল, আমি কি তার আগমনে উদ্বিগ্ন হব?

ম্যারিয়ন আস্তে আস্তে মদপান করছিল, চুরুট টানছিল। পাতলা সুগন্ধিযুক্ত চুরুটটি তার শরীরে যন্ত্রণার উদ্রেক করল।

এলি ম্যারিয়ন এখন পুরোপুরি ক্লান্ত। সে এতই বৃদ্ধ হয়েছিল যে ভবিষ্যৎ নিয়ে সে খুবই চিন্তিত ছিল।

আমাকে ফোন করো না, সে বলল, আমদের চুক্তিপত্রটি রাখতে হবে। কারণ যে কোনো সময় আমাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্কিপি ডিরি সভার পর তার বাড়ি ফিরে গেল এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়ে জিম লুজির প্রতি হুকুমনামা জারি করল।

তাদের সভায় জিম লুজির কাছে ঘটনা বর্ণনা করল। সে বলল, তুমি কিছু মজার জিনিস খুঁজে পাবে।

কিন্তু সে বলল, জিম লজির সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর আমি একটি নতুন ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি। সে সান্তা মনিকা সম্পর্কে একটি সিরিয়াল তৈরি করছিল।

যে কোনো কারণের জন্য ক্রস ডি লিনা লাস ভেগাসে ফিরে এলো এবং পেন্থ হাউজের সুইটের কারণে তার জীবনে অভিশাপ নেমে এলো। কেন সে ঝুঁকি নিয়েছিল? খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার জয়লাভ করা। কেবল টাকা নয় তার জীবনে নতুন পথ তৈরি ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে দুর্দশা নেমে এলো। যার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। একদিন অ্যাথেনা তার জীবনে এসেছিল এবং তাকে খুবই ভালোবেসেছিল কিন্তু তার ভালোবাসা সারা জীবনের জন্য না হলেও এক মুহূর্তের জন্য তো ছিল।

গ্রোনিভেল্ট কি বলেছিল? নারীরা কখনোই নিজ থেকে ভয়ঙ্কর হয় না যদি না তাদের ভয়ঙ্কর করতে অনুপ্রাণিত না করা হয়। স্মরণ রেখো, গ্রোনিভেল্ট বলল, সৌন্দর্য হলো ভয়ঙ্করের প্রধান কারণ, কিন্তু সে যে তার মন থেকে সবকিছু ধুয়েমুছে ফেলল। ভেগাসের দৃশ্য দেখতে লাগল, দেয়ালে বিভিন্ন। রঙের বাতি জ্বলছিল তা দেখে, সামান্য সময় তার মন ভরলেও আবার অতীত তার চোখে ভেসে উঠল। যদিও অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন এক প্রকার দৈত্য ছিল। কিন্তু কেন সে এমন করল, তা সামান্য কথার দ্বারা বোঝানো যাবে না। সে সে বিষয়ে কারও কাছেই পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। তার সমস্ত প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার পরও সে ছবি করতে রাজি হয়নি কারণ মৃত্যুর প্রতি তার ভয় ছিল খুবই বেশি। ছবিটি করার পর সে একা হয়ে গিয়েছিল, স্কানেট তারপর এসেছিল।

এলি ম্যারিয়ন, ববি বানজ, স্কিপি ডিরি, তারা সকলেই সমস্যাটা জানত এবং তার উত্তরও জানত। কিন্তু কারও তা বলার সাহস ছিল না। মানুষ তাদের পছন্দ করত, ঝুঁকি ছিল বেশ বড়, তারা বেশ উচ্চস্থানে অবস্থান করছিল, ভালোভাবে জীবনযাপন করত। যা তারা খুব সহজেই হারিয়ে ফেলল। তাদের জয়লাভ ঝুঁকির সমান ছিল না। শুধু ছবিতে একটি মাত্র ভুলের জন্য তারা সবকিছু হারিয়ে ছিল। তাছাড়া তারা উঁচু ও নিচু সমাজের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই তাদের ঝুঁকি ছিল নৈতিক। তাছাড়া তাদের মূলধন উঠেও এসেছিল। আর সেই সময় বুদ্ধিজাত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরও তাদের কিছু ভুল ছিল। ছবি তৈরির টাকা দিয়ে অন্য কোনো কাজ করলেও তারা তাদের অবস্থান ঠিক রাখতে পারত।

সুতরাং এখন তাদের প্রধান সমস্যা দুটো। বজ স্কানেট তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলল, প্রথমটি হলো ছবিটি প্রধানত অ্যাথেনার কারণেই মার খেয়েছিল। ক্রসের সাবলীল ভুল।

 ০৮. বিগ টমের সঙ্গে জড়িয়ে

০৮.

ক্রস ডি লিনা বিভিন্ন কারণে বিগ টমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এর একটি হলো সে প্রতি বছর পাঁচশত মিলিয়ন ডলার মানুষের ভাগ্যান্বেষণে এবং এক মিলিয়ন ডলার জাদুর বন্দিশিবিরে প্রদান করত। দ্বিতীয়ত সে জীবনের ক্রান্তিলগ্নে তার নীতিবহির্ভ ভাড়ামির জন্য মানুষের মধ্যে ভালোবাসা অন্বেষণ করত।

টিম স্নেডেন শপিংমলের মালিক হওয়া সত্ত্বেও একজন রাসলার হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল। সে লাস ভেগাসের একজন শাসক হলেও ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য জুড়ে ছিল তার অগাধ বিচরণ। সে স্থায়ীভবে জানাদুতে বসবাস করত। সে বিশেষভাবে জুয়া খেলায় পারদর্শী ছিল। এই খেলা তার ভাগ্যের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সে ছিল খুব ঝুঁকিপ্রবণ জুয়াড়ি। জুয়া খেলা ছাড়াও সে অন্য খেলায়ও ঝুঁকি গ্রহণ করত। সে কখনও কখনও সামান্য বল খেলা নিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাজি ধরত। সে নিজেকে একজন সুচতুর বা চালাক বলে মনে করত। অনেক সময় ছোট বাজিতে হারলেও বড় বাজিতে সে ঠিকই জয়লাভ করত। এজন্য সে সকল বাজিতেই কম-বেশি অংশগ্রহণ করত।

রাসলারটি ছিল বেশ লম্বা, প্রায় সাড়ে ছয় ফিট উচ্চতা, তিনশত পঞ্চাশ পাউন্ড ওজন। তার ক্ষুধা ছিল তার শারীরিক গঠনের মতোই, তার চোখে যা পড়ত সে তাই খেত। এজন্য সে সর্বদা উল্লাসপূর্ণ থাকত।

রাসলার ছিল একটা প্রাকৃতিক সৃষ্টি, অসৎ পরিকল্পনার শিল্পী, যার জন্যে সে এই উপন্যাসে খ্যাত হয়ে ওঠে। জানাদুতে সে বন্ধুদের ওপর বিরক্ত হতো। সে কখনও কখনও চূড়ান্তভাবেই কক্ষ ধ্বংস করে ফেলত। তার কলগার্লকে সে বিল পরিশোধ করতে চাইত। কোম্পানির অধীনে উপহার ক্রয় করত।

যদিও সে জুয়া খেলায় ভাগ্যবান ছিল। সে ছিল দক্ষ, খেলার ধারা বুঝত এবং সঠিক বাজি ধরতে পারত। কিন্তু তার প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি এমনি চলে যেত। তার বাজিতে জেতা সব মুছে যেত এবং বেশি করে ক্ষয়ে যেত। আর সে কারণেই এটি হতে অর্থের কারণে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের কারণে ক্লেরিকুজিও সুযোগটা নিতে পেরেছিল।

পরিবারের অনিবার্য গন্তব্য ছিল সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে জুয়াখেলাকে বৈধতা প্রদান। যে কোনো লোক স্ক্যান্ডাল সংশ্লিষ্ট খেলাকে খারাপভাবে দেখবে। এটাই লক্ষ্য। অতএব, বিগ টিম স্নেডেন দ্য রাসলারের জীবন অনুসন্ধান করতে হবে। এর ফলাফল এতই সাংকেতিক যে, পিপি ও ক্রসকে পূর্ব আমেরিকার কুওগ ম্যানশনে এক কনফারেন্সের জন্য ডেকে পাঠানো হলো। সিসিলি থেকে তার ফেরার পর এটাই পিপির প্রথম কাজ।

পিপি ও ক্রস একত্রে পূর্ব আমেরিকায় ফিরে গেল। ক্রস উদ্বিগ্ন হলো এই ভেবে যে, ক্লেরিকুজিও বোধ হয় ইতোমধ্যে তার ম্যাসেলিনা চলচ্চিত্রের কাজ সম্পর্কে জেনে ফেলেছে। তার বাবা অবশ্যই রাগান্বিত হবে কারণ তার সাথে যে কোন আলোচনা করেনি। সাতান্ন বছরের পিপি, যদিও অবসরপ্রাপ্ত তবুও তার ছেলের প্রতি যত্নবান।

প্লেনে চলচ্চিত্র সম্পর্কে ক্রস তার বাবাকে বলল। আর তাকে আশ্বস্ত করল যে, সে অবশ্যই তার নীতিকে মূল্যায়ন করবে কিন্তু ক্লেরিকুজিও’র কোনো খারাপ জিনিস সে ধরে রাখতে চায় না। তাছাড়া পুনরায় তার ডাক সম্পর্কে সে উদ্বেগ প্রকাশ করল। কারণ ডন অবশ্যই জানবে তার হলিউডের পরিকল্পনা সম্পর্কে।

ফোনে কথা না বলে পিপি শুধু শুনল, পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তুমি এখনও খুব ছোট সে বলল। চলচ্চিত্র সম্পর্কে কিছু হবে না। ডনও এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি তার দৃষ্টি দেবে না। কী ঘটে সেটা দেখার জন্য সে অপেক্ষা করবে। এটা দেখতে জর্জিও চলতি বিষয়ের মতো, আর তা হলো ভিনসেন্ট, পেটি ও ডেন্টি যা মনে করে। তারা বিভ্রান্তিতে ছিল। বুড়ো লোকটা আমাদের সবার চেয়ে চালাক। তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হইও না। সে সর্বদা এই বিষয়ে ভীত। জজিও ডেন্টির বিষয়ে তুমি অবশ্যই উদ্বিগ্ন হতে পারে। সে একটু বিরতি নিল, যেন পরিবার সম্পর্কে এমনকি ক্রসের সাথে আলাপ করতে অনিচ্ছুক। তুমি দেখবে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটির সন্তানরা পরিবারের ব্যবসা সম্পর্কে কিছুই জানবে না। ডন ও জর্জিও পরিকল্পনা করে যে, শিশুদেরকে শক্তভাবে, আইনসঙ্গতভাবে কাজ করতে হবে। ডন ডেন্টির জন্যেও পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু ডেন্টি অতি চালাক, শারীরিক গঠনে অন্যরকম, আর তার ইচ্ছে ভেতরে থাকার। ডন তাকে থামাতে পারেনি। জর্জিও, ভিনসেন্ট, পেটি, তুমি ডেন্টি ও আমি আমাদের সকলকেই প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, যাতে ক্লেরিকুজিও গোত্র নিরাপদ থাকতে পারে। এটা ডনের পরিকল্পনা, এটাই তার শক্তি যা তাকে মহান করে। এমনকি আনন্দিত হতে পারে, তোমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারো। তোমরা এটাই করবে বলে সে আশা করে।

আমি তাই মনে করি, ক্রস বলল। গ্রোনিভেল্টের  মতো এটা সব সময় লম্বা খেলা, পিপি বলল। সময় হলে ভনকে সরাসরি বলব পরিবারের অবস্থা সুসংহত করতে। জর্জিও এবং ডেন্টি প্রস্তুত রয়েছে। কেবল ভিনসেন্ট ও পেটি এ ব্যাপারে নীরব।

জর্জিও ও ডেন্টি কেন? ক্রস জিজ্ঞেস করল, কারণ জর্জিও একটা গ্রেডিপ্রিক, পিপি বলল। আর ডেন্টি, সে সর্বদা সতেজতায় পূর্ণ থাকে। কারণ তুমি আমার ছেলে। অন্যদিকে সে বাজে পাগলাটে।

ক্রস বিস্মিত হলো। এই প্রথম কাউকে ক্লেরিকুজিও’র সমালোচনা করতে শুনল তার বাবার কাছে। আর ভিনসেন্ট ও পেটির যত্ন নেওয়া হয় না? সে জিজ্ঞেস করল।

কারণ ভিনসেন্টের রেস্টুরেন্ট আছে এবং পেটির নির্মাণ ব্যবসা ব্রঙ্কস এনক্লেভ আছে।

ভিনসেন্ট তার বয়স্ক জীবন উপভোগ করতে চায় আর পেটি কাজ পছন্দ করে। তাদের দুজনই তোমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে সম্মান করে।

ক্রস বলল, পপ, তুমি পাগল নও। আমি তোমার সাথে এ বিষয়ে স্বচ্ছ নই? পিপি বলল, আমি বলদের বিষ্টা নই। ক্রস বলল, এটা খুবই গোপন বিষয়। অ্যাথেনা আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসতে পারে। তুমি অবশ্যই ক্লডিয়াকে দেখেছ। সে এখন খুবই সুন্দরী।

তা ভালো, পিপি বলল, ছোটবেলায় তাকে খুব খারাপ দেখা যেত, আমার মতো।

তোমার এখন তাকে দেখা উচিত। ক্রস বলল।

মনে থাকবে, পিপি বলল, এই মিটিং অন্য বিষয় নিয়ে।

ভেগাসে ডেন্টি জানাদু হোটেল রেজিস্ট্রি করল। রাসলার স্নেডেন এক সপ্তাহ ভেগাসে ছিল না। এই সময়ের মধ্যে ক্রস ও পিটি ডেন্টিকে অনুশাসনের মাধ্যমে কাছে আনল।

রাসলার একজন বড় শাসক, ক্রস বলল, কিন্তু তার একটা উঁচু মানের ভিলা নেই। আরব কিংবা এশিয়ার মতো ওর কোনো বাসভবন নেই। সে মনে করে সবকিছু মুক্ত, আসলে তা ঠিক নয়।

কেন তাকে তারা রাসলার বলে ডাকবে? ডেন্টি জিজ্ঞেস করল।

কারণ বেতন ছাড়াই সে তাদেরকে রেখেছে, ক্রস বলল।

ডেন্টি বলল, আমি তার কথা শুনতে পারি না।

তাকে একটা ভিলা দেবার বিষয়ে কখনো গ্রোনিভেল্টের  সাথে সে কথা বলতে পারেনি। ক্রস বলল।

ডেন্টি তার দিকে কঠিনভাবে তাকাল। আমি একটা ভিলা পাব না?

কারণ, এটার দাম পড়বে একটা হোটেলের সমান আর একটা হোটেল থেকে প্রতি রাতে অনেক আয় হয়, ক্রস বলল।

ডেন্টি বলল, কিন্তু জর্জিও একটা ভিলার অধিকারী।

তুমি বিয়ে করলে তোমার মধুচন্দ্রিমা করার জন্য একটা ভিলা পাবে। ক্রস বলল।

তুমি একজন ক্লেরিকুজিও, পিপি বলল। সে ডেন্টির কাঁধে হাত দিয়ে বলল, আমাদের একত্রে কাজ করার চাকরি হয়ে গেল। চলো আমরা আনন্দ করি।

রাসলার স্নেডেন এলে ডেন্টি তাকে বোঝানোর প্রয়াস পেল। সে ছিল বিরাটকায় ও মোটা। তার শার্টে অনেক বড় বড় পকেট ছিল। তার ট্রাউজার ছিল ভোলা।

বেশিরভাগ সময়ই রাসলার জুয়া খেলতে। ক্রস ও ডেন্টি জেনেছিল যে, সে ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় বাজি ধরে জিতেছে। আর সে এই পর্যাপ্ত টাকার কোনো ট্যাক্স দিত না, আর বিষয় নিয়ে সে কখনো উদ্বিগ্ন ছিল না। সে জুয়া খেলার জন্য অনেক সময় ব্যয় করত।

জুয়া খেলার টেবিলের মেয়র ছিল সে। ডাইস ঘুরানোর সময় সে কাছেই থাকত এবং চেষ্টা করত যাতে তার বাজিটা লেগে যায়। ডাইস ঘুরার সময় বিপরীত দিকের দেয়ালের সাথে লাগলে সে তা আঁকড়ে ধরতো। অন্য জুয়াড়িরা যাতে বাজি জিততে পারে সে জন্য জুয়ার লোকেরা তাকে ফেরাত।

ডেন্টি জুয়া খেলায় তার জায়গা দখল করল। জেতার জন্য বিগ টিমের সাথে বাজি ধরল। বাজিতে ডেন্টি জিতে গেল। পরে বিশ হাজার ডলারের বাজি ধরে ডাইসটি টেবিলে ঘুরাল। এই সময় বিগ টিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তারা দেখল সে, চেকে সাইন করছে। সম্ভবত তার কাছে নগদ অর্থ নেই। ক্রস ও ডেন্টি কফি পান করতে করতে আরাম করে বসল। ক্রসের রুমটা খুব পছন্দ হয়েছিল। এর দেয়ালের গ্লাসে মনে হলো রাত নেমে এসেছে। বাইরে ঘাস ও সবুজ গাছের প্রতিচ্ছবি পড়ছিল গ্লাসে।

তুমি কি করছিলে? ডেন্টি জিজ্ঞেস করল।

আমি নিরাপত্তা প্রহরীর রুমে তাকে চার্জ করছিলাম কারণ টেবিল থেকে আমার পাঁচ গ্রান্ড হারিয়ে গেছে, যা সে কখনো পরিশোধ করতে পারবে না। সে মানুষ বছরে আধ মিলিয়ন টাকা তোমার উপার্জন করে দেয় তুমি তার রুমে চার্জ করতে গিয়েছিলে! ক্রস বলল, তুমি কি সত্য করে বলতে পারো যে টাকাগুলো তোমার নিরাপত্তা প্রহরী নিয়েছে তোমার ভিলায় অন্য কেউ যে কাজ করতে পারে, তা কে জানে?

পরের দিন ক্রস বিগ টমের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেল এবং তাকে রোল রয়েস উপহার দিল। পিপি তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের সঙ্গে পরিচিত

বিগ টিম সর্বদাই বিরতি নিয়ে কথা বলে। আমি তোমার কাছ থেকে উপহার পাওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমাকে একটা কথা বলো, কবে তোমার কাছ থেকে আমি একটি ভিলা পাব?

হ্যাঁ, তুমি ধৈর্য ধরো, পরবর্তী সয়ম তুমি যখন ভেগাসে আসবে, তখন তোমাকে একটি ভিলা দেব। এটা আমার এক প্রকার প্রতিজ্ঞা, যদিও আমি তোমাকে এর আগেও কথা দিয়েছিলাম তবে এবার আমি আমার কথা রাখব।

বিগ টিম এবং রাসলার পিপিকে বলল, তোমার পুত্র গ্রোনিভেল্টের  চাইতে অনেকটা বেশি সুন্দর মানুষ।

.

সে বছরের শেষের দিকে একটু মজা করেছিল। পিপি বলল, সম্ভবত আমি তার একজন ভালো বন্ধু, কিন্তু সে কখনোই আমাকে একটি ভিলা দিতে পারল না।

খুব ভালো, বিগ টিম বলল, তোমার পুত্র হোটেল চালু করতে যাচ্ছে এখন সে তোমাকে একটি ভিলা দিতে পারবে। যখন তোমার দরকার তুমি চেয়ে নিও।

কখনও না, ক্রস বলল, সে জুয়াড়ি না, তারা সকলেই হাসল।

আমি তাকে এমন কোনো সুযোগ দিইনি যাতে করে তার সঙ্গে আমাকে দেখবে, বিগ টিম বলল, আমি তাকে আমার সঙ্গে দেখতে চাই।

বিগ টিম সব খাবার খেয়ে শেষ করল। শুধু তাই নয়, টেবিলের বাকি ফলগুলোও খেয়ে শেষ করল। পিপি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল— কি দেখছ অমন করে, বিগ টিম বলল।

পরিশেষে পিপি টেবিলের উপর বিলের জন্য বিশ ডলার রেখে দুজনে হোটেল ত্যাগ করল। হোটেল বয় পিপির কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করল। তারপর পিপি, বিগ টিমকে একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে দিল। বিগ টিম বলল, তুমি কি এরে চেয়ে চেয়ে বড় গাড়ির ভাড়া করতে পারলে না?

তুমি সামান্য পথ যাবে পিপি বলল, তাছাড়া মাত্র পাঁচ মিনিট তুমি গাড়ির মধ্যে থাকবে। অবশ্য এই সময়ে তুমি খুবই অন্ধকার অনুভব করবে, শুধু গাড়ির সামনের ছোট আলো ছাড়া।

সর্বদাই একজন লোক বিগ টিমের সঙ্গে নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে থাকত। আরেক জন লোক তাকে দূর থেকে অনুসরণ করে চলত। পিপি এবং বিগ টিম গ্যাংকপ্লাকের উপরে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ডেন্টি তাদের সাদরে গ্রহণ করল এবং তাদের সঙ্গে হাত মিলাল। সে তখন তার রেনেসা হান্টিং পরে ছিল যাতে তাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় মনে হলো।

ডেন্টি তাদের কারুকাজসম্পন্ন ডাইনিং রুমে নিয়ে গেল। তারা টেবিলের চারপাশে আরাম দায়ক চেয়ারে বসল। টেবিলের উপর মদের বোতল, বরফের টুকরা, এক সেট গ্লাস ছিল। পিপি সবাইকে মদপান করার আহ্বান জানাল। তাছাড়া সে আমাদের সকলের কাছেই একজন মিষ্টি মানুষ হিসেবে পরিচিত।

বিগ টিম ডেন্টির বাহুতে হাত রেখে বললআমাদের কথা বলতে হবে, চলো আমরা কিছুটা সময় কফি হাউজে কাটাই। সেখানে বিগ টিম অনেক কিছু দেখার পর শেষ পর্যন্ত ঐে ব্যারি আইসক্রিম অর্ডার দিল আর ডেন্টি কফি অর্ডার দিল।

তারা এক ঘণ্টা ধরে খাবারগুলো খেল– তাদের মধ্যে পুনরায় বিস্তারিত আলাপ হলো। তারা টেবিলের উপর বিল রেখে তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলো। তারপর তারা নাটক দেখার জন্য থিয়েটার কক্ষে প্রবেশ করল। তারা নাটক শেষ করে পুনরায় ছবির ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করল।

ডেন্টি ব্যাপারটা আগে কখনও এমনভাবে ভাবেনি। যিশু, এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, আমি খেলাধুলা ভালোবাসি। আমরা ইচ্ছে করলে বেসবল খেলার একটি দল গঠন করতে পারি?

বড় আকারে নয়, বিগ টিম বলল, বড় দল অনেক ব্যয়বহুল। তাহলে আমরা কখন পুনরায় মিলিত হতে পারি? ডেন্টি জিজ্ঞেস করল।

বিগ টিম গর্বের সঙ্গে বলল, আগামিকাল হোটেলে আমার জন্য পার্টির আয়োজন করছে। কারণ তারপরের দিন আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যাব। ঐ রাত কেমন হবে?

ডেন্টি না বোঝার ভান করে তাকে প্রশ্ন করল। ঠিক আছে, সে বলল। পিপি লস অ্যাঞ্জেলেসে আমি সেখানে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে তোমাকে কল দেব। তাহলে খুব ভালো হবে, বিগ টিম বলল।

ডেন্টি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করল। আমি খারাপ ব্যাপার সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানি, আমি শুধু তাকে বোকামির জন্য পছন্দ করি– আসলে ঐ লোকটিকে ধরলে আমি আমার যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাব।

সেখানে তোমার সাফল্য অর্জন করার কোনো আশা নেই, বিগ টিম বলল। কিন্তু আমি এবং তুমি কিছু টাকা নিয়ে একসঙ্গ কিছু কাজ করতে পারি।

পরের দিন জানাদু হোটেলের বড় বল রুমে বিগ টিমের জন্য বড় পার্টির আয়োজন করা হলো। সেখানে আরও বিশেষ কিছুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। আসলে এটা ছিল নতুন বছরকে উদযাপন উপলক্ষে ক্রিসমাস বাফেট্রস, সেখানে আরো বিশেষ বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আরো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিত কথার জন্য দাওয়াত করা হয়েছিল।

এটা ছিল অনেক বড় একটি রুম— রুমটির চারদিকে বেলুন সাজানো হলো রুমটির মধ্যে রয়েছে বড় বড় দুটি বাফেল্ট টেবিল যা রুমটির অর্ধেক জুড়ে বসানো হলো। তাছাড়াও রুমের চারদিকে আরো রঙ্গিন কাগজ দিয়ে কারুকাজ করানো হলো। রুমটির এক পাশে বরফের আচ্ছাদন রাখা হলো, অপর পাশে বিভিন্ন মানুষের রুচির ওপর ভিত্তি করে খাবারসরবরাহ করা হয়েছিল। খাবারগুলোর মধ্যে ছিল গরুর মাংস, প্রায় বারো প্রকারের কেক, বেরন ইত্যাদি। অনেক প্রকার ফলমুলও ছিল। ক্রিসমাস উপলক্ষে জানাদু হোটেলের বাইরের ভাগটিকে বিভিন্ন কালারের কাগজ দিয়ে অবোরা বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হলো। সব মিলে সেদিন হোটেলটিকে আরো বেশি জাঁকজমক মনে হলো।

বিগ টিম, প্রথম স্তরের অতিথি আসার আগে থেকেই তাদের জন্য টেবিলে বসে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল।

পুরো রুমটিই বিভিন্ন মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠল। মনে হচ্ছিল পুরো ভেগাসের মানুষের মিলনমেলা আজ জানাদু হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে ভেগাসের আরো নামি-দামি মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছিল। তারা মানুষের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিল। সব মিলে জানাদুতে অনাবিল আনন্দের বাতাস বইছিল।

বিগ টিমের কারণেই হোটেলে আয়োজিত পার্টি সাফল্য পেয়েছিল। দুজন মানুষ সর্বদা প্রতিটি টেবিলে ব্র্যান্ডটি সরবরাহ করতে ব্যস্ত ছিল। আসলে এটা ছিল এক প্রকার খাবার মেলা যা ডেন্টি অপ্রয়োজনীয়ভাবে আয়োজন করেছিল।

ক্রস হোটেলকে একটি উপহার সামগ্রীতে পরিণত করেছিল, আর বিগ টিম তাকে আরও বেশি গতিময় করেছিল।

আমি জানাদু হোটেলের পক্ষ থেকে এই সুন্দর উপহার পাওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এই মুহূর্তে দুইশ হাজার ডলার মূল্যের গাড়িও আমার কাছে কিছু না। আর এটাই জানাদুতে দশ বছরের মধ্যে আসা আমার প্রথম পুরস্কার। তারা আমাকে রাজপুত্রের মতো সম্মান করেছে। যার জন্য সত্যিই আমি অভিভূত, এমনকি আনন্দিত। আমার জীবন চরিত্রে কখনোই আমি এমন সম্মান আশা করিনি। আমি একটি গাড়ি ওয়ান টাইম ব্যবহার করি। তার পরেও আমি এমন আনন্দ পাইনি যা আজ আমি হোটেল থেকে পেয়েছি।

সুন্দরী কলগার্লরা তাকে অভ্যর্থনা জানাল, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার মধ্য দিয়ে একটি সম্পর্কের সুত্রপাত ঘটাল। পার্টিতে উপস্থিত হতে পারার জন্য সে নিজকে ভাগ্যবান মনে করল।

গ্রোনিভেল্ট শুরু থেকেই ক্রসকে লক্ষ্য করছিল। সেখানে পুরুষ ও নারী জুয়াড়িরা মোট ছয় ভাগে বিভক্ত ছিল। যা সবার কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ। ঐ দিন পৃথিবীর অনেক নামি-দামি লোক অতিথি হয়ে এসেছিল– নোবল বিজয়ী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক–বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মহান ব্যক্তিরা সেখানে উপস্থিত ছিল। যা গ্রোনিভেল্টকে মোহিত করেছিল।

বিগ টিম বলল, তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে যে, আমি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ঐদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাকে আমার জীবন চরিত্রে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আজীবন এই দিনটির কথা স্মরণ রাখতে চাই। তাই সে লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে প্রস্তুত হলো, জানাদু শুধুই তার স্মৃতির অন্তরালে ভাসতে লাগল।

তারপর বিগ টিম তার যাত্রা আরম্ভ করল। পার্টির সকলেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে জুয়া খেলার টেবিলে গেল। তারা কেউ কেউ চার ঘণ্টা ধরে জুয়া খেলল।

ঐ রাতের পার্টিতে গ্রোনিভেল্ট নিজেও খুব আনন্দ উপভোগ করেছিল। হলরুমের অনাড়ম্বর পরিবেশ তাকে খুবই মোহিত করেছিল।

গ্রোনিভেল্ট পার্টিতে উপস্থিত সকল বিখ্যাত লোকদের সঙ্গেই পরিচিত হলো এবং প্রত্যেকেই পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করল। এই সকল ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করল। তাছাড়া পাটিতে উপস্থিত ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রতি সে তার স্নেহশীল ভালোবাসা প্রদর্শন করল। বাচ্চাদের ঘুরে বেড়ানোটাকে সে খুব বেশি পছন্দ করল। বাচ্চারা যখন ঘুরে বেড়ছিল সে তখন তন্ময় হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। গ্রোনিভেল্ট লক্ষ্য করে দেখল, প্রত্যেকেই জুয়া খেলা নিয়ে ব্যস্ত, সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি লোকই নিজ নিজ আনন্দে ব্যাকুল মনে হচ্ছে, কারো কোনো দিকে নজর দেওয়া সময় নেই। একজন বৃদ্ধ সবার নজর কাড়ল। লোকটি নিজেও সবার সঙ্গে মজা করে কথা বলছিল। তার মধ্যে ডেন্টি এবং জর্জিও একটু উদ্বিগ্নতার মধ্যে কাটাতে ছিল।

গ্রোনিভেল্ট একটু বিরতি নিয়ে বলল, যেখানে আমরা সবাই আনন্দ করছি সেখানে তোমাদের সমস্যা কোথায়? আজকের দিনে সব ভুলে যাও, আসো, আমরা সবাই আনন্দে মেতে উঠি।

তাছাড়া আমি জানি তোমাদের কোনো ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা বা তোমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই। কিছুক্ষণ পর পার্টি শেষ হলো। সবাই হোটেল থেকে নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে আরম্ভ করল।

পিপি বলল, আমার পরিকল্পনা বিগ টিমের ওপর নির্ভর করছে। ক্রস বলল সবকিছু তার উপর ভিত্তি করলেই হবে না। এর জন্য তোমার নিজস্ব চিন্তা চেতনা থাকা দরকার। তুমি তোমার কাজ নিজে করার চেষ্টা করো। তোমার মতো মানুষের কাকে প্রতি নির্ভরশীল হওয়া চলে না।

হলিউডের তিনজন বিখ্যাত মহিলা ডেন্টির টেবিলের সামনে বসে ছিল। তারা সকলেই বড় মাপের তারকা। তারা সকলেই বিগ টিমের পার্টিতে যোগদান করতে এসেছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ছিল জুলিয়া ডিলারি, সে ছবির জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিল। তাদের ছিল দুটি সন্তান।

দ্বিতীয়জন জোন ওয়ার্ড, সে এখন পর্যন্ত বেশ আকর্ষণীয়, তার বয়স এখন প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। তার একটি সন্তান আছে। পরে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল। এই বুদ্ধিমত্তা অভিনেত্রী শত কষ্টের মধ্যেও তাকে ধরে রেখেছিল।

তৃতীয়জন অভিনেত্রী লরেটা, সেও ছবির সঙ্গে জড়িত একজনকে বিয়ে করেছিল। তার স্বামী নিজেও একজন বিখ্যাত অভিনেতা।

এই তিনজন তারকা তার বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে জীবনযাপন করত। একে-অপরের সুখে-দুঃখে সাহায্যের হাত বাড়াত। তারা একসঙ্গে লং ড্রাইভ, শপিং করতে বের হতো। তারা কখনও কোনো কাজ করতে স্বামীর টাকার ওপর নির্ভরশীল ছিল না। তারা সব সময় কার্ড ব্যবহার করত। তারা কোনো ব্যাপারে তাদের স্বামীদেরও কোনো প্রশ্ন করত না।

জুলিয়া অভিযোগ করল, তার স্বামী তার সন্তানের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করে না। আর জোন বলল, তার স্বামীর ব্যবহার শিশুসুলভ। তাছাড়া সে একজন নতুন তারকা। লরেটা অভিযোগ করল, স্বামী খুব বড় মাপের অভিনেতা। তারপরও আমি বলতে পারি, আমি বেশ সুখে আছি।

জুলিয়া বলল, আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি কিন্তু সে প্রতি মাসে শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

তারা বসে গান উপভোগ করল।

ডেন্টি তাদের আকর্ষণীয় দিকগুলো আলাপ করছিল, এতে তারা আরো বেশি মজা পেল।

তারপর তারা নিজ নিজ সুইটে বিশ্রাম নিতে চলে গেল।

আমার সুইটে এসে জুলিয়া বলল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব। ঠিক আছে আমি একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত আছি, পরে আসব। তারপর জুলিয়া বিশ্রামের প্রস্তুতি নিল।

ডেন্টি তার সুইটে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ডেন্টি জুলিয়ার সুইটের দরজায় নক করল। জুলিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর তারা দুজনেই নিজেদের শক্তি হারিয়ে চরম উত্তেজনার সাগরে ভাসতে শুরু করল।

আর ছবির কাজে গিয়ে সে নিজেই থাকে। তার সঙ্গে আমার যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এতে তার কি, আমার মনের দিক থেকে কোনো প্রকার সমস্যাও হয় না। লরেটা বলল, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। পৃথিবীর অনেক সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গেই তার কাজ থাকে। কিন্তু সে শুধু আমাকেই পছন্দ করে।

এভাবেই তারা তাদের স্বামীর ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিল। তারা বলল, আমেরিকার অনেকেই আমাদের চেনে। তাই প্রয়োজন বোধে আমাদের অনেক সময় বেশভূষা পরিবর্তন করতে হয়। তারপরেও আমরা সুখী মানুষ বলে নিজেদের মনে করি।

ডেন্টি তাদের জানাদু হোটেলের লাউঞ্চ ক্লাবে নিয়ে গেল, সেখানে জুয়া খেলার পাশাপাশি একজন গায়িকার গান চলছিল।

ডেন্টি তুমি আর কখনও তোমার রেনেসাঁ টুপিটি পরবে না, কারণ মানুষ তোমাকে নিয়ে মজা করবে। আর সব সময় খেয়াল রাখবে তুমি যা করতে যাচ্ছ, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বলবে না। কারণ এতে তোমার শত্রুতা বাড়বে। আরেকটি কথা, কখনও কোনো কাজ করতে গিয়ে পাগলের মতো আচরণ করবে না। তাতে তোমার আশেপাশের মানুষ তোমাকে নিয়ে মজা করবে।

ডেন্টি আস্তে করে বলল, আমি টুপি ছাড়া নিজে হতভাগ্য মনে করি।

পিপি মাথা ঝাঁকাল। তুমি কখনও কোনো কাজ করতে গিয়ে কারো সঙ্গে প্রতারণা করবে না। এটা উনের আদেশ। কখনও কারো সঙ্গে প্রতারণা করবে না। কারণ তিনি এটাকে মানতে পারেন না। প্রয়োজন বোধে তুমি নিজেই লস অ্যাঞ্জেলেসে যাও, সেখানে নিজে কিছু করার চেষ্টা কর। সেখানে তুমি আরো অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। যারা তোমাকে অনেকভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। তুমি কখনও নিজস্ব বিদ্যাবুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে কিছু করতে যেও না। তাহলে তুমি অবশ্যই বিপদে পড়বে। এখন তুমি ভেবে দেখো, তোমার কি করা উচিত। আমি তোমাকে এক ঘন্টা সময় দিলাম, তুমি এই সময়ের মধ্যে তোমার পরিকল্পনা তৈরি করে নেও। তবে সব সময় খেয়াল রেখো, তোমার কাজ তোমাকেই সমাধান করতে হবে। তুমি কখনও কোনো কাজই কার ওপর নির্ভর হয়ে করবে না, এটা আমার নির্দেশ এবং অনুরোধ।

ডেন্টি বলল, চিন্তা করো না। কাজেই আমার আনন্দ। তারপর সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, আমি আশা করি আগামীকাল একটি ভালো খবর দিতে পারব।

তাতে ক্রস আশ্চর্য হলো, তার পরেও তোমরা নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা আলাপ-আলোচনা করেছ?

কিন্তু তার উত্তরে পিপি কিছুই বলল না– সে বলল, আমি শুধু আমার বুদ্ধি সংকোচনশীল করার জন্য কাজটি করেছি। যার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ভবিষ্যতে এমন করার আরো কখনই চেষ্টা করব না। তবে আমাকে বলল, আমার খবরটা কেমন বলে তুমি আশা করছ। তার জন্য আমি অধীর আগ্রহে বসে আছি।

সে আমার জুনিয়র পার্টনার, ডেন্টি বলল, আমার উপদেষ্টা। আমার টাকা আছে, আর তার আছে মেধা। সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, সে আমাকে বলেছিল তোমার অনেক কিছু আছে, তাহলে টিম তার সঙ্গে কেন কথা বলছিলে।

তারপর তারা সকলেই টেবিলের চারদিকে বসল, আলোচনা করতে করতে তারা ব্রান্ডিতে চুমুক দিতে লাগল। টিম বলল, ব্যবসা বলল, বন্ধু বলো সবকিছুই বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল,–বিশ্বাস ছাড়া কখনও সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকে রাখা যায় না। তাই সবকিছুর মধ্যে বিশ্বাসটাই হলো আসল। আমরা প্রথমে একসঙ্গে ব্যবসা করতে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে অবশ্যই বিশ্বাসকে স্থান দিতে হবে।

আমি আছি। ডেন্টি বলল, আমার আইনজীবী আগামীকাল আমার কাছে আসবে, আমি তার সঙ্গে আলাপ করে কিছু টাকা ব্যবসাতে বিনিয়োগ করব।

বিগ টিম ব্র্যান্ডির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল, তোমার ধারণা, আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিজ নিজ আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে অন্ততপক্ষে ব্যবসার কাজকর্ম করা। পিপিও গ্লাস হাতে নিল, সে অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে ছিল, তোমরা মনে করো আমি একেবারে বোকা? সে বলল।

ডেন্টি তার মাথা থেকে হ্যাটটি খুলল, তখন তাকে আরো বেশি ভালো লাগল, আমি মনে করি তুমি আমার হান্টিং নেওয়ার ব্যাপারে ভাবছ।

সে মৃদু হাসি দিয়ে কথাগুলো বলছিল কিন্তু সকলের মধ্যে পিপিই ছিল খুব বেশি চালাক।

তোমরা কি আমাকে কিছু বলছ?

পিপি বলল, সুপার বাউল আসতে আরও আট মাস বাকি, তোমরা কেউ জানো না কে প্রথম তার খবরটি পাবে।

তুমি ব্যবসার বাইরের কথাবার্তা রাখো। এখানে যে আলোচনা হচ্ছে, তুমি তার সঙ্গে একমত কি-না তা বলো, কারণ আজকের পর তুমি আর সময় পাবে না, ব্যস্ত হইও না। পিপি বলল, শুধু তোমরা আমাকে বলল, কি ধরনের ব্যবসা করার জন্য তোমরা একমত হলে।

বিগ টিম পুনরায় ব্র্যান্ডি মুখে দিল এবং রেগে বলল, আমি তোমাকে তা পুনরায় বলতে পারি না।

কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, তুমি ঠকবে না। তোমাকে ব্যবসা করার জন্য দশ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। তোমার কি কোনো আপত্তি আছে? প্রয়োজন বোধে পরে আমি তোমাকে দশ মিলিয়ন ফেরত দেব। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো। ডেন্টি এবং পিপি একে-অপরের দিকে তাকিয়ে থাকল, ডেন্টি মৃদু হাসি দিয়ে পুনরায় তার হ্যাট পরল।

ডেন্টি নিজে নিজেই আনন্দ উপভোগ করল। সবকিছুই আছে, বিগ টিম বলল। সে আরও বলল, কারও বড় হওয়া নির্ভর করে তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। সে প্রশ্ন করল কতটুকু আত্মবিশ্বাস তার জন্য প্রয়োজন।

তুমি তোমার কার্ডটি আমাকে দাও, সে বলল, আমি তোমাকে অথবা পিপিকে কল দেব তারপর আমরা রাতের খাব এবং আমাদের ব্যবসায়িক ব্যাপারটা পুরোপুরি আলাপ-আলোচনা করে চুক্তিপত্র তৈরি করব।

বিগ টিম তার কার্ডটি দিল, চলো আমরা এটার ব্যবহার তাড়াতাড়ি করি, সে বলল, আমি একা ব্যবসা করি, আমার ব্যবসায় কোনো ক্ষতি নেই। যা তোমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারো। আর তা আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে। সে কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়ার পর বলল, আসলে এটা এক প্রকার খেলাধুলার সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা।

বিগ টিম বলল, যিশু আমাকে বড় কিছু করার উৎসাহ দাও।

পিপি তার কথাবার্তার ধরন পরিবর্তন করল। তুমি দুজন বালক-বালিকা নিয়ে একটি দল গড়তে পারতে। কারণ এই সকল বালক-বালিকার প্রচুর টাকা আছে। কিন্তু ব্যবসা করার মতো কোনো সুযোগ নেই। আমি জানি তোমার একটি সুন্দর বালিকা আছে টিম, তাকে আমাকে দিয়ে দাও, আমি তোমার চিন্তা-চেতনার প্রয়াস ঘটাব।

এটা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, বিগ টিম বলল। তারা সকলেই হাসল, কিন্তু পিপি ডেন্টির চোখে চোখ পড়ার কারণে হাসতে পারল না। তাছাড়া সে কিছুটা ডেন্টির ওপর রাগান্বিত ছিল। সে ডেন্টিকে স্টিভের একজন সহকারী হিসেবে বিগ টিমের সঙ্গে পরিচয় করে দিল। বিগ টিম বলল আমার সঙ্গে স্টিভের অনেক আগে থেকেই পরিচয় আছে, তবে বর্তমানে একটু দূরে।

তাছাড়া স্টিভকে আমি একজন অভিনেতা ছাড়াও একজন জুয়াড়ি হিসেবে বেশি চিনতাম।

বিগ টিম অন্য কৌশল অবলম্বন করল। ইদানিং একজন ছোট বালিকা একটি সুন্দর হ্যাট পরে আমাদের পাশে আনাগোনা করছে। শুনছি, বালিকাটি এক ঘণ্টার জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে দুই হাজার গ্রান্ডে। তুমি তার সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতে পারো না। তুমি জানো আমি সব সময় সবকিছুর মধ্যে একটা অনুসন্ধান চালাই। আমি তোমাকে আমার অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে পারি না। ক্রস বলল, তুমি কিভাবে ভাবলে যে আমি তাদের সম্পর্কে তোমাকে তথ্য দেব? আমি তোমাকে এতটুকু বলব, সে যে কোনো সময় আমার কাছ থেকে একটি ভিলা পেতে পারে। সে কখনোই আমাকে বলতে পারবে না। সে শুধু আমার কাছে তার প্রোফাইল পাঠাতে পারবে।

তুমি শুধু আমার সঙ্গে তার একটু পরিচয় করে দাও–বিগ টিম বলল, আমি যদি কোনো ব্যবসা করি তুমি অবশ্যই তার অংশ পাবে।

না, ক্রস বলল, কিন্তু আমার বাবা তাকে চেনে।

আমি তাকে কিছু কাজে ব্যবহার করেছি, পিপি বলল, বিগ টিম একজন এবারিকো বিশেষজ্ঞ। তারপর সে পিপির ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল, স্টিভ কোথায়? সে কি এখন আশপাশেই আছে? আমি তার আগমনের সময় জানি না।

পিপির মধ্যে উৎকর্ষতা ফিরে এলো, সে বিগ টিমের কাঁধে হাত দিল। সে বলল, বস আমার সঙ্গে খাবার খাও–তারপর আমরা স্টিভকে নিয়ে আলোচনা করি।

যখন হোটেল বয় তাদের কাছে অর্ডার নিতে এলো, পিপি তাকে বলল, আমরা সব সময় ভালো খাবার খাই। তোমার কাছে সবচেয়ে দামি এবং ভালো যা কিছু আছে তা নিয়ে আসো। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে আমার খাদক বন্ধু আছে। সে বর্তমানে খুবই ক্ষুধার্ত। যা বললাম তাই করো, আমি ভিনসেন্টের সঙ্গে কথা বলব।

হোটেল বয়টি মৃদু হাসি দিল। সে জানত তারা কি ধরনের খাবার খায়। তাছাড়া ভিনসেন্ট হোটেলের অংশীদার ছিল। তারা বিভিন্ন প্রকার খাবার খেল, তার মধ্যে শিরাম, লোবেস্টার পিপি ও টিম বেশি খেল। পিপি অনেক পরে খাওয়া শেষ করল। সে তাকে বলল, যে বালকটি সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সে আমার বন্ধু, প্রচুর মদ খাওয়ার জন্য আজ তার এই অবস্থা। যদি তার সম্পর্কে তুমি আরো কিছু জানো তাহলে বলতে পারো।

সে সব সময় লেভার ব্লাকমানি ব্যবসা করে, পিপি বলল, এবং তোমার ব্যবসায় সঙ্গে তার টাকা জড়িত আছে।

বিগ টিম খেতে বেশ মজা পাচ্ছিল, সবটুকু বিরানি নসট্রিলস সে একাই খেল। সে বলল, আর কিছু না পারি অন্তত পক্ষে ভালো খেতে পারি কিন্তু এতে তোমাদের সমস্যা কোথায়?

তাকে শুধু তোমার সঙ্গেই দেখা যায়, পিপি বলল, তুমি ছাড়া তার সঙ্গে অন্য কাউকে সে মেনে নিতে পারে না। সে আসলেই খুব সাংঘাতিক লোক।

সেই মুহূর্তে তারা তন্ময় হয়ে গেল, তারপরও তারা পুনরায় খাওয়া আরম্ভ করল। বিগ টিম বলল, আমরা কোথায় যাচ্ছি।

ডেন্টি মৃদুভাবে বলল, কেবল আমরা একটু মুক্ত বাতাস সেবন করার জন্য একটু একটু করে মজা করব। আমরা এরপর আরও বেশি মজা করব।

ডেন্টি বলল, টিম, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার সঙ্গে ব্যবসা করতে

না, আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে ব্যবসা করবে। বিগ টিম বলল, এটা আমার নৈতিকতা, গর্ব। আমি যা দীর্ঘদিন আমার ভেতর চালিয়ে যাচ্ছি। তুমি তোমার টাকা কোনো প্রিমিয়াম ছাড়াই ফেরত পাইবে। এটা আমার প্রতিজ্ঞা। এটা ছাড়াও আমার অন্য ব্যবসা সব সময় চালু আছে।

তোমার কথা আমার খুব ভালো লাগল, পিপি ডি লিনা বলল।

বিগ টিম তার কথায় সাড়া দিল। তুমি কোথায় সাফল্য অর্জন করেছ? এটা তোমার কাছে আমার জিজ্ঞাসা।

সঠিক নয়, বিগ টিম বলল, আমি অন্য কাজ করতে পারব, এতে দশ মিলিয়ন টাকা লাগবে। তুমি তোক ঠিক করেছ, ডেন্টি জিজ্ঞেস করল। সে পারে না, পিপি বলল, তার অনেক টাকার প্রয়োজন। এটা অবশ্য অফিসিয়ালভাবে।

বিগ টিম উৎসাহিত হলো। আমি তোমাকে বলতে পারব না, এটা এক প্রকার বোকামি। টাকার জন্য কিছু মনে করো না।

পিপি বলল, তা ঠিক আছে, আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য বেশ টাকা, টিম তুমি আমাদের আরো কিছু বলল।

ডেন্টি সরাসরি বলল, তুমি একটি চালাক লোক টিম। তার কথাটা সরাসরি বিগ টমি শুনল। এখন আমি শুনতে চাই তোমরা কি কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বিগ টিমের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমি মনে করি তুমি আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছ। তোমরা ভাবছ আমি তোমাদের সঙ্গে মজা করছি। কারণ তোমরা আমার কোনো কথাকেই মূল্যায়ন করছ না। বিগ টিম উঠে দাঁড়াল ফলে টেবিলের সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে টেবিলের যাবতীয় জিনিসপত্র নিচে পড়ে গেল।

টিম শোনো, পিপি বলল। সে জীবনে অনেক কাজ করতে গিয়ে ঠকেছে। আসলে সে তোমাকে এমন প্রশ্ন করতে চায়নি। জীবনের সামান্য। ভুলের মাশুল আর ভবিষ্যতে না দেওয়ার জন্যই সে এমন করেছে। তারপর বিগ টিম খুব তাড়াতাড়ি দরজার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এলো। যাহোক বিগ টিম আবার ফিরে এসে টেবিলের পাশে বসল। সেই সময় ডেন্টি খুব বেশি ঘুম অনুভব করছিল। সে বিগ টিমের বাহুর উপর ঘুমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর বিগ টিম নিজেও ঘুমিয়ে পড়ল। তারা দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ নাক ডেকে ঘুমাল।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডেন্টি উঠল। তাকে চেয়ার দাও। ডেন্টি নিরাপত্তা প্রহরীকে বলল। তখনও বিগ টিম ঘুমের মধ্যে আচ্ছন্ন। ডেন্টি খুব সতর্কতার সঙ্গে তার পেটে ছুরি বসিয়ে দিল, টেবিলের সমস্ত কাপড় রক্তে ভিজে গেল। তাছাড়া চেয়ারের গা বেয়েও রক্ত পড়েছিল।

টিম তখন অচেতন হয়ে পড়েছিল। পিপি বলল, তুমি কিছুটা সময় অপেক্ষা করো।

না– ডেন্টি বলল, সে কঠিন লোক, দেখবে সে কতটা কঠিন। যখন তুমি কাউকে খুন করবে। সেখানে তোমার কিছু পড়ে থাকল কি-না তা বারবার খেয়াল রাখবে। তাতে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

সে দেখল, ডেস্কের সামনে দুজন লোক প্রস্তুত হয়ে আছে। তারা দুজনে বাক্স নিয়ে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়েছিল। বাক্সটাকে প্লাস্টিকের সিট দিয়ে। ঢেকে দিল।

পিপি সেটা সাগর পর্যন্ত বহন করা অবধি দুজন নিরাপত্তা প্রহরী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল। ঘটনা ছিল খুবই ভয়াবহ, যা পিপির চেহারা দেখে অনুমান করা গেল।

চারজন মানুষ বিগ টিমের দেহ ধরে পানিতে ফেলে দিল। বাক্সটি ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিমের বডি আলাদা হয়ে পানির মধ্যে ভাসতে লাগল। তারা পুনরায় তার দেহটি বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে ভালোভাবে বাক্সের মুখ আটকে দিল।

সূর্য উদিত হওয়ার আগেই তারা স্থানটি ত্যাগ করল। তারা দেখল সাগরের স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে টিমের দেহটিও আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। তারপর ডেন্টি তার পোশাক পরিবর্তন করল। তারপর সে হ্যাটটি দেখল তাতে কোনো রক্ত আছে কি-না– সে পুনরায় হ্যাটটি পরল।

তারপর সে বলল, তুমি আমার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো।

পিপি বলল, সে কি কথা বলল?

হ্যাঁ, ডেন্টি বলল, ঘটনা খুবই সাধারণ। যদিও আমরা খুব উভয়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করেছি।

পরের দিন পিপি, ডন এবং জর্জিও’র রিপোর্ট অনুযায়ী উড়াল দিল। বিগ টিম ছিল পাগল, সে বলল।

সে কি কখনও তোমাদের সঙ্গে পাগলামি করেছিল? জর্জিও জিজ্ঞেস করল।

আমি মনে করি সে বিখ্যাত হতে চেয়েছিল, পিপি বলল, ধনী হওয়াটা তার কাছে কোন ব্যাপার ছিল না।

সে আর কিসের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে তোমরা মনে করো? ডন জিজ্ঞেস করল। যখন আমরা রাসলারের কথা শুনলাম, পিপি বলল।

জর্জিও বলল, আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। খুব ভালো। ডন বলল, আমার বড় ছেলে বেশ ভালো কাজ করেছে। আমি তাকে বলেছিলাম। কোনো কাজ করতে গিয়ে কখনোই হ্যাট ব্যবহার করবে না। আমি মনে করি তোমরা ঠিক কাজটিই করেছ। আসলে কাজটি করার প্রয়োজন ছিল। কারণ সে সব সময় আমাদের বিপদের মধ্যে রেখেছিল।

ডন বলল, তোমরা যুবক, তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি অনেক সময় লোপ পায়। তোমরা যে কোনো কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই নিজেকে ঠিক রেখে কাজ করবে। যা আমি তোমাদের আগেও বলেছি, আজও বলছি। যে কোনো কাজ করার আগে তা বারবার ভাববে।

পরিশেষে ডন পিপির মাথায় হাত দিয়ে বলল, পিপি, তোমার পরিকল্পনা খুবই সন্দরভাবে বাস্তবায়িত হয়। এখন তুমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্রাম নাও।

তুমি কখনও আর ডেন্টির সঙ্গে কোনো কাজ করবে না। তুমি অবশ্যই। ডেন্ট আমার মেয়ের একমাত্র সন্তান। জর্জিও আমি তার জন্য অবশ্যই ভালো কিছু করতে চাই। সে আরো জ্ঞানী হোক।

ক্রস ডি লিনা জানাদু হোটেলের সুইটের পাশের বেলকনিতে বসে ছিল। সে সেখানে বসে আশপাশের সবকিছু অবলোকন করছিল। সে দেখল রাস্তায় অনেক লোকের ভিড়। সে সারাদিনের কাজকর্ম নিজে নিজেই পরিলক্ষিত করছিল।

সে ক্লেরিকুজিও পরিবারের কাজকর্ম নিয়ে খুবই শংকিত অনুভব করছিল। সে ভাবছিল, ক্লেরিকুজিও পরিবারের সদস্য দীর্ঘদিন তাদের দাপট ধরতে রাখতে পারবে কি-না। কারণ তারা ইতিমধ্যে সান্তাডিও যুদ্ধে অংশগ্রহণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদেরকে কোনোভাবে ব্যাপারটা থেকে সরানো যায় নি। তারপরও তারা একের পর এক খারাপ কাজ করেই যাচ্ছিল। তাদের অধঃপতন একের পর এক হওয়ার পরেও তারা তাদের নিজ কাজ থেকে বিরত হতে পারেনি।

আসলে অভিযানটি ছিল খুবই সাংঘাতিক। কারণ গ্রোনিভেল্ট জানা হোটেল থেকে এক শতাংশ লভ্যাংশ পেত। এটা সত্য যে, যদিও সে তার নিজ টাকা ব্যয় করে সব কাজ করেছিল। তার পরেও তার লভ্যাংশ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু অন্য দিকে ক্লেরিকুজিও পরিবারের সবাই বিনা বিনিয়োগে দিনের পর দিন লভ্যাংশ ভোগ করছে। তারা কারো কোনো উপদেশ ছাড়াই সেখানে টাকা বিনিয়োগ করেছিল। তাদের সত্যিকারের কোনো লিগ্যাল অধিকার ছিল না যাতে তারা এমন কাজ করতে পারবে।

আসলে পৃথিবীতে টাকাটাই সমস্যা– যেটা গ্রোনিভেল্টের  বেলাও দেখা দিয়েছিল। আসলে গ্রোনিভেল্ট ক্রসের অনুরোধে জানাদু হোটেলের পঞ্চাশ শতাংশের মালিক হয়েছিল।

আর বাকি পঞ্চাশ মিলিয়ন ক্রস নিজে বহন করেছিল। অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল বেশি। কিন্তু ক্লেরিকুজিও তা অন্যভাবে ম্যানেজ করেছিল।

সেই সময় ক্রস অন্য কিছুও স্মরণ করেছিল। যখন সান্তাডিও আর ক্লেরিকুজিও পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা তখন একসঙ্গে ছবির ব্যবসা করত। এর বাইরে তাদের মধ্যে কোন প্রকার সম্পর্ক ছিল না। যখন সান্তাডিও সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংস হলো, ডন ক্লেরিকুজিও সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করার আদেশ দিল। কিছু মানুষ ছিল খুবই চালাক। তাই ডন বলল, তাদের কোনো ভয় নেই কারণ তাদের সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের সবাইকে খুন করতে হবে, তার পরেও ব্যবসা আমাদের মধ্যেই রাখতে হবে, এটা আমাদের যে কোনো উপায়ে করতে হবে।

না, ক্রস সিদ্ধান্ত নিল যদি সে আমাদের অনুমতি দেয়, তাহলে আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হবে। যদি আমরা এতে জয়লাভ করি তাহলে আমরা সকল দিক থেকে লাভবান হব, আর যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমরা সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হব।

সে কেন এটা করতে যাচ্ছে? সে ভেবেছিল এসব কিছুর মূলে গ্রোনিভেল্টের হাত ছিল। তাছাড়া ভেগাসের অনেকেরই সেক্ষেত্রে হাত ছিল।

কিন্তু সে জানত, সে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের রূপে মুগ্ধ ছিল। কারণ সে অ্যাথেনাকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে, যা আমরা সবাই জানি, বিশেষ করে সে অ্যাথেনার চেহারা, চুলের গঠনকে এতই বেশি পছন্দ করতে যে, তার জন্য সে সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিল।

তারও অনেক পরে সে আসল ঘটনা উঘাটন করতে পেরেছিল। বর্তমানে তার প্রধান লক্ষ্য অ্যাথেনা। এই মুহূর্তে ক্লেরিকুজিও’র ওপর তার কোনো রাগ নেই। আর এজন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বজ স্কানেটের, যদিও তা খুব তাড়াতাড়ি মীমাংসা করার প্রয়োজন ছিল।

ক্রস অপারেশন করার জন্য তিন জন লোক ঠিক করল। প্রথম জন ছিল এন্ড্রিও পোলার্ড, যে ওশেন পেসিফিকে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করত–দ্বিতীয়ত ছিল লিয়া ভাজি, যে ক্লেরিকুজিও নেভেদা মাউনটেনের হান্টিং লজের কেয়ারটেকার ছিল আর তৃতীয় জন ছিল লিওনার্ডো সোসা, যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ছিল। তারা সবাই ক্রস ডি লিনার আয়ত্তে এসেছিল।

দুদিন পর ক্রস ডি লিনার কাছে প্রথম জন ফোন করল। আমি শুনেছি, তোমার কাজ বেশ কঠিন।

ক্রস বলল, তুমি কিভাবে সামান্য ছুটিতে ভেগাসে আসবে? আমি তোমার জন্য বিশেষ রুশ খাবার ব্যবস্থা করেছি। তুমি ইচ্ছে করলে তোমার বউকে সঙ্গে আনতে পার। তাছাড়া তুমি আমার সঙ্গে গল্প করার জন্য আমার অফিসেও আসতে পারো। ধন্যবাদ পোলার্ড বলল, আমি তোমার প্রতি বেশ খুশি, এবার বলো আগামী সপ্তাহে এলে কেমন হয়?

অবশ্য হ্যাঁ, ক্রস বলল, কিন্তু সেই সময় আমি শহরের বাইরে থাকব। আমি তোমাকে মিস করব।

তাহলে আমি আগামীকাল আসব। পোলার্ড বলল, ঠিক আছে। আসো।

তারপর পোলার্ড কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করল– পরে সিদ্ধান্ত নিল সে এখানে আসবে।

লিওনার্ডো সোসা মানুষের মৃত্যু খুব বেশি উপভোগ করে। সে সূর্য উপভোগ করে, সে সূর্য ডোবা উপভোগ করে। সে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু উপভোগ করে। সে আরো পছন্দ করে সুন্দরী নারী আর চালাক ছেলে-মেয়ে। সে আরো উপভোগ করে মদ, চিস শুকনা রুচি।

আজ থেকে বিশ বছর আগে সান্তাডিও পরিবারের জন্য এফ.বি.আই তাকে আটক করেছিল। তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, রেপ ইত্যাদির অভিযোগ ছিল। যার কারণে তাকে খুব কম বয়সে জেলে যেতে হয়েছিল। তাছাড়া সে অপরাধ করতে বেশ মজা অনুভব করত। সে কোনো কিছু করতে কোনো প্রকার দ্বিধা-দ্বান্তে ভুগত না। আর এই সব কাজে লিওনার্ডো সোসা তার সঙ্গে জড়িত ছিল। লিওনার্ডোর দক্ষতা ছিল তার চেয়ে অনেকাংশে বেশি। তারা সব সময় ক্লেরিকুজিও পরিবারের জন্য হুমকির বার্তা বয়ে এনেছিল।

জানাদু হোটেল ছিল খুবই লাভজনক। জানাদু হোটেলে মূল মালিক মারা যাওয়ার পর সোসা সামান্য টাকার বিনিময়ে হোটেলের মালিক হয়ে যান। যদিও মূল মালিকের কাছ থেকে কোনো প্রকার দলিল করতে পারছিল না। কিছুদিন পর সরকারি ভেটের টাকার অভাবে হোটেলটি তার হাতছাড়া হয়।

তারপরেও সোসা দীর্ঘ বিশ বছর দাপটের সাথে উপভোগ করেছিল এরপরেও ম্যালিবুতে তার একটা সুন্দর বাড়ি ছিল। বাড়ির চারদিকে ফুলের বাগান, সে খুব আনন্দের সাথে ও জীবনের বাকি সময়টা অতিক্রম করছিল। জীবন চরিত্রে সে আসলেই খুব মজা উপভোগ করত।

লিয়া ভাজি আমেরিকায় ক্লেরিকুজিও নাভাদা প্রদেশের হান্টিং লজের কেয়ারটেকার ছিল।

যখন তার বয়স ত্রিশ বছর এবং সে ভালো ইংরেজি বলতে পারত, তখন থেকেই সে হান্টিং লজের কেয়ারটেকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। মূলত সে ছিল প্রভাবশালী ঘরের আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী।

তারপর সে রোমে কিছুকাল সরকারি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল। পথিমধ্যে তার সঙ্গে একদিন ডনের সাক্ষাৎ হয়, ডন তাকে তার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিলে সে কিছুদিন চিন্তা-ভাবনার পর তার সঙ্গে হাত মিলায়। পরে ডন তাকে হান্টিং লজের কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করার জন্য তাকে আদেশ দেয়। ঠিক তখন থেকেই আজ পর্যন্ত সে কেয়ারটেকারের দায়িত্বে আছে।

লিয়া ক্রসের দিকে তাকাল তারপর পিপিকে বলল, তোমার একটা পুত্র সন্তান আছে। তাকে তুমি কিভাবে সেভ করবে? আমি আমার স্ত্রী এবং সকল ছেলেমেয়েকে ভালোভাবে নিরাপদে রেখেছি। তাই আমি সব কাজ চিন্তামুক্তভাবে করতে পারি। আমাদের সবার বিপদ আছে। পিপি বলল, তোমাকেই বুঝতে হবে। আমি আমার নিজেকে নিরাপদে রেখেই সব কিছু করতে পারি। লিয়া মাথা ঝাঁকাল। আমি তোমার ব্যাপারে অবগত। পিপি বলল, তুমি যদি তোমার নিজের জন্য আসো তাহলে এটা করা সহজ হবে।

না, লিয়া ভাজি বলল, আমার পরিবার বাঁচতে হলে বাঁচবে, মরতে হলে মরবে, তবে অবশ্যই একসঙ্গে।

আস্তে আস্তে রোম আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে আসছে। তাই আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা ত্যাগ করতে হবে। সমস্যা শুধু তোমার একার না, তোমার পরিবারেরও। ভাজি মাথা ঝাঁকাল, আমেরিকা অনেক বড়। সে বলল, ক্রস বললে আমরা তাড়াতাড়ি স্থানটি ত্যাগ করতে পারি।

না, ক্রস বলল, আমি সব কিছু বুঝেশুনেই করতে চাই। তোমরা এত ব্যস্ত হইও না, আমি তোমাদের অবশ্যই সময়মতো অবগত করব।

সরকার রোমে কিছু ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করল, এবং তাদের কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করল, যাতে তারা সিসিলির সমস্ত মাফিয়া চক্রকে শাস্তি প্রদান করতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেট তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পারারমোতে এলো নিরাপত্তার জন্য, সঙ্গে অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং পুলিশ নিয়ে এলো। সে সিসিলির আইন ভঙ্গকারীদের জোর হুঁশিয়ারি সংকেত দিত। এতে করে ইতালি সিসিলিতে বসবাসকারী প্রত্যেকেই হুমকির মুখে পড়ে গেল, এমনকি লিয়া ভাজিও ব্যক্তিগতভাবে বিপদের সম্মুখীন হলো।

ম্যাজিস্ট্রেট সারা দিনরাত্রি চারিদিকে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করল। সে অপরাধী পাওয়ামাত্র বন্দি করার আদেশ দিল। তার নিজ বাড়িতে আর্মির দ্বারা কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল। লিয়া ভাজি অনেক আগে থেকেই তার সম্পর্কে অবগত ছিল। তাই সে কোনোভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারল না।

ম্যাজিস্ট্রেট সিসিলির বড় শহরে সর্বদা তার আনাগোনো অব্যাহত রাখল। প্রত্যেক অপরাধীর হুকুমনামা সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি শুরু করল। লিয়া ভাজি যে মাফিয়া চক্রের সদস্য। সে সরকারিভাবেই পূর্ব থেকে জ্ঞাত ছিল। তাই তাকে ধরামাত্র গুলি করার আদেশ ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর দেওয়া হলো। কারণ সরকার যে কোন কিছুর বিনিময়ে সিসিলিকে অপরাধমুক্ত করতে চায়।

তারপর ক্লেরিকুজিও পিপি ডি লিনাকে সিসিলিতে পাঠাল। ডনের বিশ্বাস ছিল আমার দলভুক্ত কোনো লোক এমন অপরাধ করতে পারে না, যাতে করে তারা পুলিশি হয়রানির স্বিকার হতে পারে। তাই সে ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য, পিপি ডি লিনাকে ডন বলে দিল। ইতিমধ্যে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অনেককে জেলখানায় পাঠানো হলো।

সিসিলির সব মাফিয়া চক্র ভয়ে আত্মগোপন করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। তাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় মেয়রের সাহায্য কামনা করল। প্রকৃতপক্ষে মেয়র কম-বেশি মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। পিপি মেয়রের সঙ্গে তাড়াতাড়ি কিছু করার জন্য জোর তাগিদ করল। মেয়র পিপিকে বলল, তুমি তোমার লোকজনের নামের তালিকা আমার কাছে পাঠাও, দেখি কি করা যায়।

যদি তারা বিয়ে করত, আজ তাদের কমপক্ষে একটা সন্তান থাকত। তাহলে তারা মেয়র কর্তৃক অনেক কিছু করার সুযোগ পেত। সে তা নিজেই। ব্যাখ্যা করল। যদিও লোকটি যথেষ্ট ইয়াং। কিন্তু সে আমেরিকার কালচারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি অনেকে বৃদ্ধ হওয়ার পরও আমেরিকার কালচারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। যদি তাদের কমপক্ষে একজন সন্তান থাকত, তাহলে তারা আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা পেত।

অনেকেই আছে যারা নিজেকে না মানাতে পারার কারণে আমেরিকার ত্যাগ করে সিসিলিতে চলে গেছে। অনেকেই শত সমস্যার মধ্যেও আমেরিকাতেই আছে। চালাক প্রকৃতির কিছু লোক ক্লেরিকুজিও’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শত সমস্যার মধ্যেও সেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

সপ্তাহ শেষে পিপি কুওগুতে বসবাস করে এমন বিশ জনের নামের তালিকা মেয়রের কাছে পেশ করল। সে তাদের অনুমোদন করল, ইমিগ্রেশনের যাবতীয় ব্যবস্থা করল। নামগুলোর মধ্য থেকে মেয়র একজনের নাম কেটে দিল।

পিপি বলল, আমি মনে করি সে আমাদের জন্য পারফেক্ট। আমি কোনো ভুল করেছি?

না, না, মেয়র বলল, তুমি সব সময় যে কোনো কাজে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও।

পিপি কিছুটা খুশি হলো, তার দেওয়া সব তথ্যই ভালোভাবে গ্রহণ করা হলো। তার মধ্যে একজন মানুষ এপার্টমেন্ট পেল, বিবাহ করা লোকটি একটি ছোট বাড়ি পেল। বাকি সবাই চাকরি পেল। তারা সবাই ব্রঙ্কস এনক্লেভে বাস করত। তাছাড়া সবাই ক্লেরিকুজিও পরিবারের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। যে মানুষটির নাম মেয়র কেটে দিল, সে মানুষটি আসলেই খারাপ প্রকৃতির ছিল। যা ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বোঝ গিয়েছিল। মেয়র তাকে বুঝতে পেরেছিল। তার মনের কথা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল।

তুমি আসলেই সিসিলিয়ান, মেয়র বলেছিল। যে মানুষটির নাম আমি কাটলাম তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ের কথা ছিল। আমি আমার মেয়ের সুখের জন্য তার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম। আর এই কারণেই আমি তার নাম কাটলেও তার ইন্টারভিউ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম না। আরেকটি কারণ হলো আমি যা মনে করি, তারই প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করি। তাতে তোমরা আমাকে কি মনে করো, তা আমার ব্যাপার না।

অবশ্যই, পিপি বলল।

মেয়র বলল, আমি তোমার খারাপ কিছু করতে চাইনি। কিন্তু এটা বিশেষ কেউ, তাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি স্থানটি ত্যাগ করতে বলল।

তুমি জানো, আমি সবকিছুতেই খুব সাবধানতা অবলম্বন করি। যা আমি ক্লেরিকুজিও’র কাছ থেকেই শিখেছি।

এটা তোমার ব্যাপার, মেয়র বলল, কিন্তু এটা একটু বিপজ্জনক। তারপর সে লিয়া ভাজির ব্যাপারটা লক্ষ্য করল। ব্যাপারটাকে আমি মূল্যায়ন করলে ক্রস ও তুমি সমস্যার সম্মুখীন হবে। যদিও ব্যাপারটাকেও প্রমাণিত করতে পারবে না। তারপরও ভাজির ওপর অর্পিত হতো? ক্রস বলল।

মেয়ের বলল, ইয়াং ম্যান, এই হলো সিসিলি। তাছাড়া পুলিশগুলো ছিল সিসিলিয়ান। এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট ও সিসিলিয়ান। সবাই জানে এটা ছিল লিয়া ভাজি। কিছু মনে নিও না, এটা হলো আসল কথা।

যদি সে তাদের হাতে ধরা পড়ত। সে মারা যেত। পিপি বলল, তুমি তাকে দেশের বাইরে আমেরিকাতে পাঠাতে পারো।

হ্যাঁ, পারি মেয়র বলল, কিন্তু আমেরিকাতেও সমস্যার সম্মুখীন হতে

পিপি বলল, তার মানে বোঝা যাচ্ছে তার আর অনেক সমস্যা আছে।

মেয়র মাথা ঝাঁকাল, সে আমার বন্ধু আমি স্বীকার করি। কিন্তু আমি তাকে একটু দূরে সরিয়ে রাখি। সে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ, সে যথেষ্ট চালু, সে সর্বদাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা করতে পারে। সে সব কিছুই বোঝে, তাছাড়া সে সবকিছুইতে দক্ষ। তার ছুরি আর বন্দুকই হলো তাঁর একমাত্র অভিশাপ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সে কথা কম বলে আর বেশি শুনে। এখন বলল, তুমি কি কোনোভাবেই তার কাজটি করতে পারো না?

আমার কথার উত্তর দাও, পিপি বলল, কেন একজন মানুষ এভাবে জীবনযাপন করবে?

কারণ তার গুণের চাইতে দোষ বেশি।

মেয়র বলল, সে বিজ্ঞ, সে ভাগ্য বিশ্বাস করে না, এটাই তার আসল ঘটনা।

তাহলে কোন মানুষটি যোগ্য? পিপি বলল, সে কি একজন সাধারণ সৈনিক হয়েও আমেরিকাতে সুখী জীবন-যাপন করতে পারবে না?

মেয়র মাথা ঝাঁকিয়ে নাকচ করল–

সে খ্রিস্টান। সে বলল, তার মধ্যে যথেষ্ট মানবতা বোধ আছে, যা আমি জোর গলায় বলতে পারি।

আমার জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশেছি, পিপি বলল, অন্ততপক্ষে, তার অভিজ্ঞতার জন্য তুমি ব্যবস্থা নেও, এ ব্যাপারে আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, আর কোনো সমস্যা হবে না।

মেয়র ছিল একজন চালাক ব্যক্তি, আমি জানি তুমি তাকে খুব পছন্দ করো সে বলল, কিন্তু সেখানেও তার সমস্যা আছে, যা আমি তোমাকে জোর গলায় বলতে পারি। তাছাড়া, তার স্ত্রী ও তিনটি সন্তান আছে। তারা অবশ্যই তার সঙ্গে যাবে। পিপি বুঝতে পারল তার উত্তর না সূচক। সে বলল, যা তাকে আরো কঠিন করে ফেলল। তুমি কখন তার সঙ্গে মিলিত হও?

সে সাধারণত অন্ধকার হওয়ার পর বাগানে আসে। মেয়র বলল, সেখানে কোনো বিপদ নেই, এলে আমি দেখব।

লিয়া ভাজি একজন ছোট মানুষ, তারপর আরব থেকে আগত অনেক সিসিলিয়ান ব্যক্তির প্রিয় পাত্র ছিল সে। সে খুব সুদর্শন এবং সব সময় ইংরেজিতে কথা বলতে পারত।

তারা দেশী তৈরি রেড মদ, ওলিভস এবং শুকনা রুটি নিয়ে মেয়রের বাগানে বসল। লিয়া ভাজি সবকিছুই কম কম করে খেল কিন্তু কিছুই বলল না।

আমি আমাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় গ্রহণ করেছি। পিপি বলল, তারপরও আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন। একজন মানুষ তোমার মতো শিক্ষিত হয়ে আমেরিকাতে অন্য মানুষের মতো চাকরি করতে পারে? লিয়া ক্রসের দিকে তাকাল, তারপর পিপিকে বলল, তোমার একটা সন্তান আছে। তাকে সেভ করার জন্য তুমি কি করতে পারো?।

আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপত্তা চাই, এই কারণেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।

তাতে আমাদের কিছু বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। পিপি বলল, তোমাকে বুঝতে হবে যে আমাকে কিছু সুবিধা পাওয়ার আশায় ঝুঁকি গ্রহণ করতে হবে।

লিয়া মাথা ঝাঁকাল, আমি তোমার মতামতকে গ্রহণ করতে পারি না। সে মনে করল তাতে আমাকে প্রত্যাখ্যান করার শামিল।

পিপি বলল, যদি তুমি এগিয়ে আসো তাহলে ব্যাপারটা সহজ হবে।

না, ভাজি বলল, প্রয়োজন বোধে আমার পরিবার নিয়ে একসঙ্গে বাঁচব, না হয় মরব। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, যদি আমি তাদের এখানে রেখে যাই, তাহলে রোমে থাকা তাদের জন্য খুবই কঠিন হবে। যা আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি।

পিপি বলল, সমস্যাটা তোমার এবং তোমার পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে আছে।

ভাজি মাথা ঝাঁকাল, আমেরিকা অনেক বড়, সে বলল।

তুমি কি তোমার বাবাকে চিরজীবন ভুলে থাকতে পারবে?

, ক্রস বলল, সে আমার অতীত দিনের স্মৃতি, তোমার মত সে খুব গর্বের সঙ্গে মৃদু হাসল, আমি শুনেছি তুমি একজন কৃষক ছিলে।

অলিভাস ভাজি বলল, আমার নিজস্ব বলে কিছু আছে।

ক্রস পিপিকে বলল, হান্টিং লজে তোমার পরিবার কেমন আছে? সে তার পরিবারের প্রতি আরো বেশি যত্ন নিতে পারত এবং তাদের জন্য আরো বেশি উপার্জন করতে পারত। এটাই সবার উচিত, তাহলে তার পরিবারও তাকে সাহায্য করতে পারত। সে লিয়ার দিকে তাকাল, তুমি কি বন্য জীবনযাপন করতে পারতে? বন্য জীবন আর গ্রাম্য জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। লিয়া মাথা ঝাঁকাল, ভাজি কোনো বড় মাপের লোক নয়, কিন্তু তার শরীরে ছিল অনেক শক্তি, সে এমনই একজন ব্যক্তি যে মৃত্যু ভয় পেত না, দোজখ বা কি আর বেহেস্ত কি তা সে কিছু মনে করত না।

পিপি বলল, এটা একটি ভালো দিক, যদি আমরা তোমাকে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি তাহলে তুমি আরো বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবে, যদিও চাকরিটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

যেহেতু লিয়া ভাজির টাকা উপার্জনের চাইতে করুণার বেশি প্রয়োজন ছিল। সে তার যাবতীয় দক্ষতার মাধ্যমে ক্রসের সমস্ত অভিযান সৈন্যদের প্রধান হয়েছিল। তাছাড়া সে হান্টিং লজের দেখাশোনাকারী ডজন ব্যক্তির মধ্যে প্রধান ছিল, সেখানে তার নিজের বসবাস করার জন্য বাড়ি দেওয়া হয়েছিল।

সে সেখানকার নাগরিক হয়েছিল এবং তার ছেলেমেয়ে অন্য দশজনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। তার সমস্ত উপার্জনকৃত টাকা ভালো কাজে ব্যয় করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। তাই যখন সে ক্রস ডি লিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ভেগাসে ম্যাসেজ পেল, সঙ্গে সঙ্গে সে তার ব্রিফকেস রেডি করে ভেগাসের উদ্দেশ্যে রওনা হল। এন্ড্রিও পোলার্ড প্রথম ভেগাসে পৌঁছেছিল। সে লস অ্যাঞ্জেলেসে থেকে বিকালের প্লেনে এসেছিল। তারপর সে কিছুক্ষণ জানাদু হোটেলে সুইটে বিশ্রাম নেওয়ার পর ক্রসের পেন্থ হাউজের অফিসে উপস্থিত হলো।

তারা হাতে হাত মিলাল, ক্রস বলল, আমি তোমাকে বেশিক্ষণ রাখতে চাই না। তুমি আজ রাতেই চলে যেতে পারো, আমি কি প্রয়োজনে তোমাকে ডেকেছিলাম তা তুমি স্কানেটের লোকদের মাধ্যমে জানতে পারবে।

পোলার্ড তুমি সবই বিস্তারিত জানতে পারবে। বর্তমানে স্কানেট বেভারলি হিলস হোটেলে অবস্থান করেছে। সে তোমার ব্যাপারে বানজের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে।

এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, তারা কেবল ছবি ব্যবসার ব্যাপারে আলাপ করতে চায়। তাছাড়া স্টুডিওতে তোমার মতো কেয়ারটেকার নেই। আমি আমার কোম্পানিতে আরো বিশ জন লোক নিয়োগ করতে চাই। তারা হয়তো তোমার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করবে বলে আমি মনে করি।

তুমি কি ভাবছ? ক্রস জিজ্ঞেস করল। তারা কি কিছুই করতে পারে না?

না, পোলার্ড বলল। সবকিছু শেষ হওয়ার পর কিছুই করা যায় না।

তাতে তুমি কি করতে পারো? ক্রস জিজ্ঞেস করল। তোমার জন্য আরো কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে।

আমাকে সতর্ক থাকতে হবে পোলার্ড বলল। আমি আমার ব্যবসা হারিয়েছিলাম। যদিও আমি তা করার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলাম।

বজ স্কানেট কেমন লোক তা তুমি জানো, ক্রস জিজ্ঞেস করল। সে স্বার্থলোভী মানুষ, পোলার্ড বলল, তার পরিবারের অনেক টাকা আছে। তাছাড়া তার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই সে যে কোনো কাজ ঝুঁকি নিয়ে করতে পারে। তাছাড়া মানুষ হিসেবেও সে খুব ভয়ানক, যদি তুমি তার সঙ্গে কিছু করতে চাও তাহলে অবশ্যই সাবধানে করবে।

আমি সর্বদাই সিরিয়াস ক্রস বলল, তুমি শুধু স্কানেটের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবে।

অবশ্যই, পোলার্ড বলল।

ক্রস বলল, তুমি তার দিকে কড়া নজর রাখবে। আমি তাকে আমার কোনো কাজেই রাখতে চাই না, বুঝতে পেরছ?

ঠিক আছে, তুমি যা বলছ, তাই হবে। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, তারপর সে বলল, তুমি জিম লুজির দিকেও খেয়াল রাখবে। তুমি কি লুজিকে চেনো?

আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, ক্রস বলল, আমি অন্য একটি কাজ করার জন্য তোমাকে চাই। দুই ঘণ্টা কাজ করার জন্য তুমি তোমার প্যাসিফিক ওশেন আইডি নিরাত্তা প্রহরীকে ধার দেবে।

তুমি আজ মধ্যরাতের প্লেন ধরে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যাবে। পোলার্ড উদ্বিগ্ন হলো, ক্রস তুমি জানো, আমি তোমার জন্য কিছু করব। কিন্তু খুব সাবধান, এটা খুব মারাত্মক ব্যাপার, আমি এখানে একটি ভালো জীবনযাপন করতে চাই। আমি পুনরায় আর নিম্নস্তরে ফিরে যেতে চাই না। আমি জানি এটাই ক্লেরিকুজিও পরিবারের রীতিনীতি, আমি সব সময়ই আছি। তবে স্মরণ রেখো এটা খুবই কঠিন একটি কাজ।

ক্রস তার দিকে তাকাল, তুমি আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। তোমাকে স্কানেট ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তুমি চলে আসবে এবং আমার সঙ্গে স্বাক্ষা করবে, এজন্য তুমি সব সময় সতর্ক থাকবে।

পোলার্ডের হার্টবিট বেড়ে গেল। সে বুঝতে পারল, এবার বুঝি আসল সমস্যার পড়তে যাইতেছি।

ক্রস বলল, এখন তুমি তোমার অন্যান্য কথা বলতে পারো। তখন পোলার্ড খুব বিতর্কের মধ্যে পড়ে, ক্রস আরো বলল, আমি তোমার জন্য কিছু করব, তা অবশ্যই দেরিতে।

পোলার্ড কিছুক্ষণ ভাবল, স্কানেট অভিযোগ করেছিল সে সব গোপন খবর জানে, অ্যাথেনা অনেক কিছুই করতে পারে, আর এই কারণেই তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ দাঁড় করেছিল।

আসলে স্কানেট গোপন কিছু করতে সব সময় ভালোবাসে। আমি জানি না, সে কেন এবং কিভাবে এসব কিছুর সঙ্গে সংম্পৃক্ত হয়। তবে জানি গোপনভাবেই তাকে সবকিছু সমাধান করতে হবে।

এই প্রথম ক্রস তার দিকে তাকাল। ক্রস তার দিকে এমনভাবে তাকাল, যেন তার মৃত্যু আসন্ন।

ক্রস বলল, তুমি জানো আমি এই বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক। বানজ অবশ্যই তোমাকে গল্পটি বলেছে, সে তোমার কাছে আমার জীবন সম্পর্কে সবকিছুই বর্ণনা করেছে।

না, পোলার্ড বলল, কে জানে, ক্রস আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ভালো কাজটিই করব, তা তুমি জানো।

আমি তা জানি, ক্রস বলল, তবে ব্যাপারটাকে আমার কাছে আরেকটু সহজ করে দাও। অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন কাজে ফিরানোর জন্য স্টুডিও আমার প্রতি খুব নাখোশ।

আমি তোমাকে বলব।

আমি তাকে প্রতিটি ছবির লভ্যাংশের অর্ধেক তাকে দিতে যাচ্ছি। এটা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই চুক্তি হয়ে গেছে। সে তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি চামড়ার ব্যাগ বের করে, পোলার্ডের হাতে দিল। এখানে নগদ অনেক টাকা আছে, যা যত্ন করে তোমার কাছে রাখবে এবং চাওয়া মাত্র আমাকে দেবে। পোলার্ড কিছুটা উদ্বিগ্ন হলো। যদি সে টাকাটা হারিয়ে ফেলে, তাহলে কিভাবে তাকে বুঝ দেবে।

লিওনার্ডো সোসা এই মাত্র জানা হোটেল সুইটে পৌঁছল। আর তখন পোলার্ড তার আইডি কার্ড দেখাল। কিন্তু পোলার্ড তার আইডিকার্ড দেখার প্রয়োজন বোধ করল না। যখন পোলার্ড তার নির্দিষ্ট কাজ শেষ করল, তারপর দুজন নাভাদার হান্টিং লজের উদ্দেশে রওনা হলো। সেখানে গিয়ে তারা একসঙ্গে অবস্থান করল।

তারা ঠিক বিকেলে সেখানে পৌঁছেছিল। রাতে সে তার জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার করল। সে জানে না যে কোথায় এবং কি করতে যাচ্ছিল। সে বছরে একশত গ্রান্ড পেত যা দিয়ে সে ভালোভাবে চলতে পারত। কিন্তু আজকের অবস্থানের ব্যাপারে সে কিছুই বুঝতে পারল না।

লিয়া ভাজি সব সময় সবার চাইতে আলাদা জীবন করত। ক্রস এ জন্য তাদেরকে সব সময় ভালো চোখে দেখত। তার সঙ্গে প্রায় তার সুইটে মদ পান করত। আমেরিকাতে ক্রস তার অনেক কাজে তাকে ব্যবহার করেছিল, কারণ তার দুর্দান্ত সাহস ছিল। ক্রস একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে তাকে খুব সম্মান করত।

অনেক সময় বছরের মধ্যে কয়েকবার ক্রস তার সঙ্গে শিকারে বের হতো। ভাজি তাকে সিসিলির বিভিন্ন সমস্যা আর আমেরিকার জীবন প্রবাহ নিয়ে গল্প বলত। তার প্রতি ক্রসের ভালোবাসা থাকার জন্য ভাজি তার পরিবার নিয়ে ভেগাসে থাকার পরও তাকে আরো পাঁচ হাজার গ্রান্ড প্রতি মাসে প্রদান করত। যা লিয়ার দ্বারা কখনোই উপার্জন করা সম্ভব ছিল না। মদ পানের পর তারা সাধারণ কথাবার্তা বলত। ভাজি তার আমেরিকার জীবনযাপনই বেশি পছন্দ করত। তার বড় সন্তান ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করলেও তার বাবার গোপান কাজ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ভাজি এর জন্য প্রায় ইতস্তত প্রকাশ করত। সে সব সময় বিশ্বাস করত মেয়েরাও পুরুষের মতো সমানাধিকারী। সে বিশ্বাস করত মেয়েরাও তার পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকে ভাগ পাওয়ার যোগ্য। আমি আমার জীবনটা সিসিলিতে কাটাব। সিসিলিই আমার প্রিয় আবাস ভূমি।

তারপরও ভাজি বলল তারা সবাই ডুবে গেছে। যখন তারা খাওয়া শেষ করেছিল। তখন তারা ব্যবসা নিয়ে আলাপ করেছিল। ভাজি মোটেই ভেগাসের খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছিল না। কিন্তু ভেগাসের ব্রান্ডি এবং সিগারেট সে খুব বেশি ভালোবাসত। ক্রস প্রায় এবং বিশেষ করে ক্রিসমাসে তার জন্য ব্রান্ডিও স্কানেটের প্যাকেট পাঠাত।

আমি তোমার জন্য কঠিন কিছু করব। ক্রস বলল, কিছু কিছু কাজ খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে হবে।

কারণ সব সময় কঠিন ভাজি বলল।

আমি হান্টিং লজে আছি। ক্রস বলল, তোমার কোনো সমস্যা হলে তা তুমি অবশ্যই আমাকে জানাবে। যদি তারা বুঝতে না পারে সে জন্য আমি তোমাকে চায়নিজ ভাষার তথ্য দেব।

ভাজি বলল।

কেবল মেয়েরাই কথার মাধ্যমে মানুষকে ভোলাতে পারে। ভাজি সিগারেট টানতে টানতে বলল।

তুমি আস্তে আস্তে তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো তুলে আনছ। তা কি তুমি বুঝতে পারো।

ভাজি তার সিগারেট টানতেই ছিল। তারা ডেসিল্যান্ড যাবে, তারা সেখানে সুখ ও সমস্যাটাকে ভাগাভাগি করে বসবাস করবে।

ডেসিল্যান্ড ক্রস জিজ্ঞেস করে হাসল। আমি কখনোই যাইনি, ভাজি বলল, আমি যখন মারা যাব তখন সেখানে যাওয়ার আশা করি। এটা প্রায় আমার কাছে এক প্রকার সত্য আশ্চর্য বলে মনে হয়।

নিশ্চিত, ক্রস বলল।

তারপর তারা সেখানে ব্যবসা করবে। ক্রস তার কাছে আসল কথা ব্যাখ্যা করল কেন এবং কিভাবে কাজটি করতে হবে। তুমি এটা কিভাবে করবে? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

তুমি সিসিলিয়ান, আর আমার পুত্র ও তুমি আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করেছিলে, ভাজি বলল, কিন্তু কি ঘটত, তুমি যা চেয়েছিলে, তা পেলে।

তখন দোষটি আমার নিজের হতো। ক্রস বলল, প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা আর সিসিলি একই।

সত্য, ভাজি বলল, তাহলে এটা চায়না, রাশিয়া এবং আফ্রিকার মতো। ডন প্রায় বলত, তাহলেই আমরা সবাই সাগরে মুক্তভাবে সাঁতার কাটার মতো যে কোনো স্থানে যেতে পারতাম।

.

০৯.

এলি ম্যারিয়ন, ববি বানজ, স্কিপি ডিরি এবং মেলো স্টুয়ার্ট ম্যারিয়নের বাড়িতে জরুরি সভায় উপস্থিত হলো। বানজ ক্রস ডি লিনার গোপন পরিকল্পনা হলো অ্যাথেনাকে যে কোনো উপায়ে কাজে ফিরিয়ে আনবে। গেয়েন্দা জিম লুজি এই তথ্যকে সত্য বলে সমর্থন করেছিল। কিন্তু সে তার গোপন কথা ফাঁস করার উৎসকে প্রত্যাখ্যান করল।

এটা একটা বড় রকমের বিপর্যয় বানজ বলল, মেলো, তুমি তার এজেন্ট। তার এবং তোমার সব মক্কেলের কাছে তুমিই দায়ী। আমরা যখন বড় ছবির কাজ করেছিলাম, তখন তোমার তারকারা কাজ করতে অস্বীকার জানায়। কারণ তারা লভ্যাংশের অর্ধেক চেয়েছিল, এটার অর্থ কি?

যদি তুমি দিশেহারা হও, তাহলে এটা দিয়ে দাও, স্টুয়ার্ট বলল। অভিনেতা ডি লিনা এটা করুন। সে ব্যবসায় বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।

ম্যারিয়ন বলল, মেলো, তুমি কৌশলে কথা বলছ, আমরা সঠিক কথাই বলছি। অ্যাথেনা কাজে ফিরে গেলে, তুমিও তোমার মক্কেলরা ব্যাংক ডাকাতির মতো আমাদেরকে হুমকি দেবে। তুমি কি তার অনুমতি দিবে?

তারা সবাই বিস্মিত হলো। এটা বিরল যে ম্যারিয়ন প্রথম থেকেই তার কাজ দ্রুত করে। স্টুয়ার্ট সতর্ক হলো।

অ্যাথেনা সম্পর্কে কিছুই জানে না, সে বলল, সে অবশ্যই আমাকে বলেছিল।

ডিরি বলল, সে জানলে কি কাজে অংশ নিত?

স্টুয়ার্ট বলল, আমি তাকে এটা নিতে উপদেশ দেব। আর পরে স্টুডিওটাকে দুভাগে ভাগ করে ফেলব।

বানজ বলল, তার পর তার সব ভয়ের কথা উপহাসে পরিণত হলো। সংক্ষেপে বাজে কথা। আর মেলো, তুমি পুরোপুরি শোধরিয়ে যাও। তুমি মনে করো অ্যাথেনা ডি লিনা থেকে যা পায় তা এই স্টুডিওর অর্ধেক হবে? ঐ সব টাকার আসল মালিক আমরা আর ঐ টাকা নিয়ে সে ডি লিনার সঙ্গে ধনী হবে। কিন্তু এমন করলে খুব তাড়াতাড়ি তাকে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিতে হবে। কোনো স্টুডিওই তাকে আর ডাকবে না।

বিদেশ, স্কিপি বলল, বিদেশে একটা সুযোগ নিতে পারে।

ম্যারিয়ন রিসিভার তুলে স্টুয়ার্টের হাতে দিল। কারো কোনো উদ্দেশ্য নয়। অ্যাথেনাকে ডাকো। তাকে বলো ক্রস ডি লিনার ডাকে সে সাড়া দেবে কি-না।

ডিরি বলল, সাপ্তাহিক ছুটিতে তাকে দেখা যায়নি।

সে পিছে আছে, স্টুয়ার্ট বলল, সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রায়ই তাকে দেখা যায় না। সে টেলিফোনের বাটনে চাপ দিল।

আলাপ খুব সংক্ষিপ্ত ছিল। স্টুয়ার্ট রিসিভার রেখে হাসল। সে বলল, আমি এমন অফার গ্রহণ করি না। আর এমন অফার কাজে ফিরে আসতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করে না। আমার ক্যারিয়ার সম্পর্কে অবজ্ঞা আমি কখনো মেনে নেব না। কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে পরে সে বলল, আমি অভিনেতা স্কানেটের সাথে দেখা করতে পছন্দ করি। যে কোনো লোক একজন অভিনেত্রীকে দেখে ঘাবড়ে যেতে পারে, ক্যারিয়ারের বাইরে তার প্রতি মানুষের ভালো কিছু থাকে।

ম্যারিয়ন বলল, এটাই এই জগতের রীতি। আমরা পুনরায় সবকিছু নতুন করে করতে পারি। কিন্তু এটা করুণা। অ্যাথেনা এখন একজন বড় তারকা।

এন্ড্রিও পোলার্ড তার নির্দেশনা দিল। প্রথমে বানজকে জানাল ক্রস ডিলিনা অ্যাথেনাকে নিয়ে চিন্তিত। দ্বিতীয়ত ছিল স্কানেটের ওপর পাহারা জোরদার করা। তৃতীয়ত ছিল বজ স্কানেটের ভ্রমণ ও একটা বিবৃতি প্রদান প্রসঙ্গে।

এইমাত্র শেভ করলাম, স্কানেট বলল, একটা পতিতার কামরার সুগন্ধির চেয়ে বেশি সুগন্ধি এই হোটলের বাথরুমে আছে।

অ্যাথেনা বিস্মিত না, কারণ তুমি অবশ্যই চলচ্চিত্র জগত ছাড়বে না সে বলল, সে মনে করে, স্টুডিও তোমাকে বোঝে না কিন্তু সে বোঝে। আর সে কারণেই সে তোমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চাচ্ছে। সে মনে করে যে শুধু তোমারা দুজনই আঘাত করতে পার।

স্কানেটের মুখে মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ দেখে সে বুঝল যে, ক্রস সঠিক ছিল। এই অভিনেতা এখনো ভালোবাসায় মগ্ন। সে এখন ছবি বানানোর জন্য গল্প কেনায় ব্যস্ত আছে।

বজ স্কানেট হঠাৎ সতর্ক হলো। এটা অ্যাথেনার স্বরের মতো না। সে আমার পাশে দাঁড়াতে পারে না, আমি তাকে ধিক্কার জানাতে পারি না। সে হাসল। আমার প্রয়োজন এর চেয়ে সুন্দর মুখশ্রী।

পোলার্ড বলল, আমি একটা জমকালো সুযোগ পেতে চাই। যা আমাকে আজীবন আর্থিক যোগান দেবে। আর বাকি জীবনের উপার্জনের একটা অংশ তুমি চাইলে পাবে। কিন্তু আমি তোমার সাথে ব্যক্তিগত ও গোপনভাবে কথা বলতে চাই। অন্য রকম কিছু পেতে চাই।

সে কি চায় আমি জানি, স্কানেট বলল। স্কানেটকে উৎসাহব্যঞ্জক দেখাচ্ছিল।

সাতটা বাজে পোলার্ড বলল, আমার দুজন লোক তোমাকে মিটিংয়ে নিয়ে যাবে। তারা আমার দেহরক্ষী হিসেবে অবস্থান করবে।

স্কানেট হাসল। আমার সম্পর্কে তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না, সে বলল।

সত্য বলে পোলার্ড চলে গেল।

দরজা বন্ধ করে স্কানেট তার ডান হাত উপরের দিকে উঠাল। সে অ্যাথেনাকে শর্টকাট পোশাক পরা অবস্থায় আবারও দেখল। মিটিংয়ের প্রথমে আমার কারণেই সে এমনভাবে অ্যাথেনাকে দেখতে পেল।

বাকি দিনটা সে তাদের পুনরায় একত্র হওয়ার স্বপ্ন দেখল। আরো এটা ভেবেই সে আরো একটু বিস্মিত হলো।

আর এটাও ভাবল, অ্যাথেনা তার দাম বাড়ানোর জন্য শরীর ব্যবহারও করতে পারে। কিভাবে তাকে আবার তার কাছে পাবে এটা কল্পনা করতে করতে বিছানায় সে সাদা তুক, তার অসাধারণ স্তনযুগল, তার চোখ দুটি এতো নীল যে, মনে হয় আলাদা কোনো আলো। তার আকর্ষণীয় মুখশ্রী ঢেউ খেলানো চুল যেন সূর্যের আলোতে ঝলমল, ধোয়ার আঁকা রাতের আকাশ। ভাবতে ভাবতে তার ভেতর পুরনো প্রেম জাগ্রত হলো। ষোল বছর বয়সের সময় অ্যাথেনার প্রতি সে আসক্ত হয়ে যায়। সে সময় সে ছিল সুখী। আর তাকে সেও ভালোবাসত।

এন্ড্রিও পোলার্ড বিস্ময়ের সাথে তাকে অভ্যর্থনা ও কিছু উষ্ণ অভিনন্দন জানাল। স্কানেট তাকে পুনরায় আশ্বস্ত করল।

আমি তোমাকে বলতে চাই, আমার গাড়িতে করে তোমাকে মিটিংয়ে নিয়ে যাব। তোমার লোজনও আমার সাথে যেতে পারে, তারা আমাকে নির্দেশনা দেবে।

পোলার্ড একটু কাঁধ ঝাঁকাল। এটা তার ব্যবসায়ের কাজ নয়। সে যে কাজের নির্দেশনা পেয়েছে সে কাজই সে করেছে। সুন্দর সে বলল, কিন্তু তোমাকে অবশ্যই আমাকে ডাকতে হবে।

স্কানেট হাসল, অবশ্যই কিন্তু আমি তোমার অফিস চেক করতে চাই। তাছাড়া আমি অ্যাথেনাকে কাজে যোগদানের নিশ্চয়তার জন্য তাকে ডাকতে চাই। আমার জন্য তুমি তাকে ফোনে পেতে পারো। কিন্তু আমার কল সে ধরবে না।

অবশ্যই পোলার্ড আগ্রহভরে বলল। সে রিসিভার তুলে নিল। সে জানাল অ্যাথেনা তার সাথে সরাসরি কথা বলবে না।

সে ডায়াল করে অ্যাথেনাকে চাইল। স্কানেট যাতে শুনতে পায় সেজন্য লাউডস্পিকার অন করল। অ্যাথেনার সেক্রেটারি তাকে বলল যে, মিস অ্যাকুইটেন বাইরে আছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তার ফেরার সম্ভাবনা নেই। রিসিভার রেখে সে স্কানেটের দিকে তাকাল। তখন স্কানেটকে বেশ সুখী দেখাচ্ছিল।

ভাজি তাকে নিয়ে দরজা খুলল। সেই সময় স্কানেট দেখল অনেকগুলি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করছে। সে ভাবল, অ্যাথেনা এলো হয়তো। সে দেখল গাড়িগুলো পার্কিং হচ্ছে। আর দুজন করে লোক প্রত্যেক গাড়ি থেকে বের হচ্ছে। লিয়া ভাজি তাকে বড় ফায়ার প্লেসের দিকে বড় কামরায় নিয়ে গেল। সেখানে বড় সোফায় একজন লোক তার জন্য অপেক্ষা করছিল, সে তাকে কখনো দেখেনি। লোকটি ছিল ক্রস ডি লিনা।

পরের ঘটনা খুব তাড়াতাড়ি ঘটল। স্কানেট রাগান্বিতভাবে বলল, অ্যাথেনা কোথায়? পরে দুজন লোক তার বাহু আঁকড়ে ধরল, অন্য দুজন লোক মাথায় আঘাত করল। লিয়া ভাজি তার পা দুটি ধরে টানল যাতে ফ্লোরে পড়ে যায়।

ভাজি বলল, যেমন তুমি বলেছিলে, তেমন যথাযথভাবে না করতে পারলে তুমি এখন মরে যেতে পারো। যুদ্ধ করো না, শুয়ে থাকো।

একজন লোক স্কানেটের পা একত্রে করে শিকল দিয়ে বেঁধে দিল। পরে তাকে টেনে তাদের পায়ের কাছে আনল। যাতে সে ক্রসের মুখোমুখি হতে পারে। তার বাহু ছেড়ে দেবার পরও সে কত অসহায়। তাকে বাধার ফলে তার শারীরিক শক্তি লোপ পেয়েছিল।

ভাজি বলল, আমরা জানি তুমি একজন বিদ্রোহী লোক। কিন্তু এখন শুধু তুমি তোমার মানসিক কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারবে। শারীরিক শক্তি এখন তুমি ব্যবহার করতে পারবে না।…

স্কানেট তার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে কঠিন কিছু ভাবছিল। তারা তাকে হত্যা করতে চাইলে তারা তা অবশ্যই পারবে। অ্যাথেনাকে বাঁচতে হলে তাকে অবশ্যই কিছু করতে হবে। এই বিষয়ে সে নিশ্চিত ছিল। অ্যাথেনা এই কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। সে ভাজির প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে সোফায় বসা অন্য লোকদের দিকে ঘুরে বসল।

তোমরা কে? সে বলল।

ক্রস বলল, আমার কিছু বিষয় আছে, আমি চাই তুমি তা করবে। আর তার পরেই তুমি বাড়িতে যাবার অনুমতি পাবে।

আর আমি না করলে, তুমি আমার ওপর অত্যাচার করবে, ঠিক? স্কানেট হাসল। সে ভাবতে আরম্ভ করল যে এটা হলিউডের কিছু দৃশ্য, কিছু কিছু খারাপ চলচ্চিত্রে স্টুডিও এগুলো ব্যবহার করছে।

না, ক্রস সাধারণভাবে বলল। নির্যাতন নয়। কেউ তোমাকে স্পর্শ করবে না। আমি চাই তুমি টেবিলে বসে আমার জন্য চারটা চিঠি লেখ। একলা লডস্টোন স্টুডিওতে তুমি কখনো যাবে না, প্রতিজ্ঞা করো। আরেকটা কথা, অ্যাথেনা তোমার পূর্ববর্তী কাজ সম্পর্কে অবগত আছে, আর তুমি শপথ করো কখনো আর তার কাছে যাবে না। পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা স্বীকার করো তুমি, তোমার স্ত্রীকে এসিড মারার জন্য এসিড কিনেছিলে। অন্যটা আমার প্রতি, তোমার স্ত্রীর কাছেও যা গোপনীয় তা তুমি আমার কাছে বর্ণনা করবে সাধারণভাবে।

স্কানেট ক্রসের দিকে খুঁড়িয়ে যাচ্ছিল আর লোকদের একজন তাকে ধাক্কা দিল যাতে সে বসে থাকা সোফার বিপরীতে সরে গিয়েছিল।

তাকে ছুঁয়ো না ক্রস কঠিনভাবে বলল।

অ্যাথেনা কোথায়? স্কানেট বলল।

সে এখানে নেই, ক্রস বলল, লিয়া ছাড়া সবাই কামরার বাইরে সে। বলল। অন্য লোকেরা দরজার বাইরে গেল।

আসনে গিয়ে বসো ক্রস স্কানেটকে বলল। স্কানেট তাই করল।

ক্রস তাকে বলল, আমি গুরুত্ব সহকারেই তোমার সাথে কথা বলতে চাই। তুমি কেমন খারাপ তা প্রদর্শনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকো। আমি চাই তুমি আমার কথা শুনবে। বোকার মতো কিছু করো না। তোমার হাত অবশ্যই খুলে দেয়া হবে। আমি চাই তুমি চিঠিগুলো লিখে ফেল। আর তুমি মুক্ত হও।

স্কানেট বিরক্তভাবে বলল, তুমি নিজে নিজেই গোল্লায় যেতে পারো।

ক্রস ভাজির দিকে ঘুরে বলল, সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। তাকে হত্যা করো।

ক্রস তার কথার স্বরকে এমনভাবে উচ্চারণ করল যে, সেখানে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। সেই মুহূর্তে স্কানেট ভয় অনুভব করল। সে বুঝতে পারল, সব লোক লজে অবস্থান করছে। সৈন্যরা তার বিরুদ্ধে প্রস্তুত। লিয়া ভাজি এগোনোর জন্য বাধ্য করছে না। স্কানেট বলল, ঠিক আছে, আমি এটা করব। সে একটা কাগজের পাতা তুলে নিয়ে লেখা শুরু করল।

চিঠিগুলো ভালো নয়, ভাজি বলল, ক্রস স্কানেটকে বলল, আমি মনে করি তুমি এত খারাপ যে, আমাকে তেমার জন্য কিছু করতে হবে। আমি তোমাকে ভয় পেতে পারি না। আমি যা চাই তা তোমাকে করাতে পারি না।

স্কানেট সোফা হাতে দাঁড়িয়ে ক্রসকে বলল, কিন্তু আমি যা বলব, তা সত্য। সবাই অ্যাথেনার ভালোবাসায় পড়ে, কিন্তু কেউ তাকে চেনে না, যেভাবে আমি চিনি।

ক্রস শান্তভাবে বলল, তুমি তাকে চেনো না। আর তুমি আমাকেও চেনো না। সে দরজায় গিয়ে পায়চারি করল। চারজন লোক কামরায় ঢুকল। তারপর ক্রস লিয়ার দিকে ঘুরল। আমি যা চাই তুমি তা জানো? সে আমাকে এটা না দিলে, আমি তাকে মুক্তি দেব। সে কামরায় পায়চারি করল।

ভাজি স্কানেটের দিকে ঘুরে মোলায়েম কণ্ঠে বলল, তুমি আর আমি, এটা শুরু করব। সে লোক চারজনের দিকে ঘুরল। তার বাহু শৃঙ্খলিত। তাকে আঘাত করো না।

কমেডি শেষ, ভাজি স্কানেটকে বলল। তুমি চিঠিগুলো ডান হাতে লিখে দাও। না হলে, তুমি প্রত্যাখ্যাত হতে পারো। লোকগুলোর একজন একটা বড় রিভলবার ও এক বাক্স বুলেট লিয়ার হাতে দিল। সে রিভলরি লোড করল আর প্রতিটি বুলেট স্কানেটকে দেখাল। সে জানালার কাছে গিয়ে শূন্য হবার আগ পর্যন্ত বনের দিকে ফায়ার করতে থাকল।

পরে স্কানেটের কাছে ফিরে গিয়ে একটা বুলেট তার কাছে রাখল।

আমি জানি না বুলেটটা কোথায়, লিয়া বলল, তুমি জানো না কোথায়।

তুমি এখনো চিঠিগুলো লিখতে রাজি না হলে আমি গুলি চালাব। এখন বলল হ্যাঁ অথবা না।

স্কানেট লিয়ার চোখের দিকে তাকাল আর কোনো উত্তর দিল না। লিয়া ট্রিগার চাপল। এটা গুলিশূন্য ছিল। তোমার জন্যে আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি, সে স্কানেটকে বলল।

আমরা আবার চেষ্টা করব, রিভলবারে গুলি ভরে লিয়া বলল। সে রিভলবারটা স্কানেটের থুতনির নিচে রাখল। কিন্তু স্কানেট এবার ভয় পেল।

ফের তোমার বসকে ডাকো স্কানেট বলল, আমার অতিরিক্ত কিছু বিষয় আছে, আমি তাকে বলতে চাই।

না, লিয়া বলল, সেই বোকামি শেষ। এখন উত্তর দাও হ্যাঁ অথবা না।

স্কানেট লিয়ার চোখের দিকে তাকাল। সে তার চোখে হুমকি দেখল না, দেখল শোকসন্তপ্ত অনুতাপ। ঠিক আছে, স্কানেট বলল, আমি লিখব।

ছয়জন লোক এই কাজে নিয়োজিত হলো। স্কানেটকে একটা ভ্যানে রাখা হলো। তার হাত-পা শিকলে বাঁধা। কোনো কিছু করার ক্ষমতা তার ছিল না। দুজন লোক তার সাথে ভ্যানে উঠল। পাঁচজন লোক স্কানেটের গাড়ি চালাচ্ছিল। লিয়া ভাজি ও ষষ্ঠ লোক অন্য গাড়িতে সামনে যাচ্ছিল।

লিয়া ভাজি দেখল পর্বতের ছায়া থেকে সূর্য আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠছে। তাদের গাড়ির বহর ষাট মাইল দূরে এসেছে। পরে একটা রাস্তা বনের দিকে মোড় নিয়েছে।

ভাজি যথাযথভাবে নির্দেশ করল কিভাবে স্কানেটের গাড়ি পার্ক করতে হবে। তারপর স্কানেটকে ভ্যানের বাইরে আনা হলো। স্কানেট আত্মরক্ষার কোনো চেষ্টা করল না, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে।

ভাজি গাড়ি থেকে রশি বাইরে বের করল। সে খুব সতর্কভাবে কাছের একটা গাছের ডালে রশিটা ঝুলাল। দুইজন লোক সোজাভাবে স্কানেটকে উপরে ধরল যাতে সে মানুষের গলার চারপাশে ফস পড়াতে পারে। ভাজি দুইটা আত্মহত্যার নোট লিখে ফেলল, লিওনার্ডো সোসা সেগুলো ভাজ করে স্কানেটের পকেটে ঢুকিয়ে দিল।

চারজন লোক স্কানেটকে রশির ভ্যানে তুলল। আর লিয়া ভাজির ড্রাইভারকে নির্দেশের ইঙ্গিত করল। ভ্যানটা সামনে ছুটল, স্কানেট রশিতে ঝুলতে লাগল। তার গলার শব্দের প্রতিধ্বনি হতে থাকল বনের মধ্য দিয়ে। ভাজি মৃতদেহপরীক্ষা করল এবং তার শরীর থেকে শিকল খুলে নিল। সে পরীক্ষা করে হাত-পাগুলো দেখল আবার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না। কিছু নমুনা ছিল কিন্তু তা দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। সে সন্তুষ্ট ছিল। এটা কাজ করবে কি-না সে তা জানে না। কিন্তু, ক্রসের আদেশের সবকিছু করা হয়ে থাকে।

দুদিন পরে এক অজ্ঞাত যাত্রায় সতর্ক কাউন্টি নির্বাহী কর্মকর্তা স্কানেটের শরীর দেখতে পেল। সে উত্তেজিত বাদামি ভল্লুক দেখে ভীত হলো। ভল্লুকটা রশিটাকে আঘাত করায় মৃত শরীরটা সামনে-পেছনে দুলছিল। আর তখন পর্যবেক্ষণকারী ও তার সহকারী এটা নিয়ে মাথা ঘামাল না।

১০. লিউড ডেথ

পর্ব– ছয়

এ হলিউড ডেথ

১০.

ক্যামেরার মিটিমিটি চোখকে সম্ভাষণ জানাতে একসাথে দশ নগ্ন নারীর নিতম্ব জেগে উঠল। চিত্রগুলো এখনো অবহেলিত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও, ডিটা টমি ম্যাসেলিনায় অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের সাথে পাছা প্রদর্শনের জন্যে নায়িকাদের মহড়া নিচ্ছিল।

অ্যাথেনা নগ্ন হয়ে অভিনয় করা প্রত্যাখ্যান করল। সে তার স্তনদ্বয় ও পাছা নগ্নভাবে প্রদর্শন করবে না। একজন তারকার জন্য বিস্মিত হবার মতো অহংকার হলেও কিন্তু মারাত্মক কিছু না। ডিটা বিভিন্ন নায়িকার মধ্যে থেকে কিছু নায়িকাকে খোলামেলাভাবে স্তনদ্বয় ও নিতম্ব প্রদর্শনের জন্য বিকল্প হিসেবে নিল। সে এখন মহড়া করছে।

অবশ্য সে নায়িকাদের সমস্ত দৃশ্যেই সংলাপসহ চিত্র ধারণ করছিল। সে তাদেরকে অশ্লীল কোনো দৃশ্যে প্রদর্শন করে তাদেরকে নিচু করতে চায়নি। কিন্তু নির্ধারিত বিষয় উপস্থাপন করতে, শেষে যৌন দৃশ্য আনতে হয়েছিল। বিছানায় গড়াগড়ি করার সময় তারা তাদের নগ্ন নিতম্ব ক্যামেরায় দেখানোর জন্য উদগ্রীব থাকে।

তার যৌন দৃশ্যে পুরুষ অভিনেতা স্টিভ স্টেলিংয়ের সাথে গড়াগড়ি মোচড়া-মুচড়ি ভালোভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।

ববি বানজ ও স্কিপি ডিরি টেষ্ট দেখার জন্য ডিটা টমির সাথে ছিল। সেটে অন্য লোকদের মধ্যে কেবল প্রয়োজনীয় লোকেরা ছিল। ডিরি দেখল এতে টমি কিছু মনে করেনি, কিন্তু ববি বানজ তখন যা করেছিল তা ছিল যন্ত্রণাদায়ক। সেট থেকে তাকে অল্প সময়ের জন্য বাদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ম্যাসেলিনা থেকে বাতিল করা হলে সে সবচেয়ে দুর্বল শক্তিতে পরিণত হয়ে যাবে। সে। তার ব্যবসায়িক সুনাম ব্যবহার করল।

বানজ অস্থিরভাবে জিজ্ঞেস করল, আসলে আমরা এখানে কি খুঁজছি?

যৌন দৃশ্যে অভিনয়কারী উইলিস নামের এক যুবক, সে লস অ্যাঞ্জেলেসে এব্যালেট কোম্পানির প্রধান ছিল।

সে খোশ মেজাজে বলল, পৃথিবীতে অনেক মহিলার খুব আকর্ষণীয় নিতম্ব আছে। সাথে মাংসপেশিও আছে। আমরা নোংরা চাই না, আমরা মারাত্মক কিছু চাই না।

ঠিক, বানজ বলল, নোংরা কিছু না।

স্তন সম্পর্কে কি? ডিরি জিজ্ঞেস করল।

তারা লাফানোর অনুমতি পাবে না, কোরিওগ্রাফার বলল।

আমরা আগামীকাল স্তন দৃশ্যের মহড়া করব টমি বলল, সম্ভবত অ্যাথেনা ছাড়া কোনো মহিলারই সুন্দর স্তন ও সুন্দর নিতম্ব নেই। আর সে তাদের দেখাবে না।

বানজ গোপনভাবে বলল, ডিটা তুমি মেনেছিলে। টমি তার দুর্বল শক্তির অবস্থা ভুলে গেল।

ববি তোমার পাছা খুব সন্দর আমরা যেমন খুঁজছি ঠিক তেমনিই। সে তোমার সাথে যৌন সংসর্গ করবে না। অতএব তুমি ধরে নাও সে একজন পুরুষ সমকামী।

ঠিক ঠিক, বানজ বলল, আমি একশর মতো ফোন কল পেয়েছি, আমি অবশ্যই ফিরে যাব।

আমাকেও ডিরি বলল।

আমি তোমাদের মতো অভিনয়কারীদের বিশ্বাস করি না টমি বলল।

ডিরি বলল, ডিট একটু সমবেদনা অবশ্যই আছে। ববি আর আমি কি বিনোদনইবা পেয়েছি। আমরা গলফ খেলায় খুব ব্যস্ত থাকি। ছবি দেখা আমাদের কাজ। থিয়েটার বা অপেরায় যাবার সময় আমাদের নেই। আমাদের পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করার পরে সম্ভবত কৌতুক করার মতো দিনে এক ঘন্টা সময় কোনো মতে বের করতে পারি। নাকি দিনে এক ঘণ্টা কি তোমার সাথে কাজ করতে পারি? উদ্ভট। এটা প্রায় শ্রমিকদের নিবিড় বিনোদন।

ওয়াউ, স্কিপি, এটা দেখো। বানজ বলল, আমি আদৌ এত সুন্দর পাছা দেখেনি!

বিস্ময়ে ডিরি মাথা ঝাঁকাল। ববি-ই ঠিক। ডিটা এই একজন, তাকে স্বাক্ষর করাও।

টমি অবিশ্বস্তভাবে মাথা নাড়াল। যিশু, তোমরা অভিনয়কারীরা কম বুদ্ধির অধিকারী। সে বলল, এটা একটা কালো পাছা।

যে কোন ভাবে তাকে স্বাক্ষর করিয়ে ফেল। ডিরি উচ্ছাসিত আনন্দের সাথে বলল।

হ্যাঁ, বানজ বলল। ম্যাসালিনার জন্য এক ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী বালিকা। কিন্তু কেন সে মহড়ায় যন্ত্রণায় যাবে?

ডিটা টমি ঔৎসুক্যের সাথে উভয় লোককেই দেখল। এখানে ছবি ব্যবসায় দুইজন ভয়ঙ্কর লোক আছে। ফিরে যাবার জন্যও তাদের কাছে একশর ওপর ফোন কল আসে। তারা ওই দুইজন টিনেজারের মতো যারা তাদের যৌন উত্তেজনার সর্বোচ্চ পর্যায়ের খোঁজে ব্যস্ত। সে ক্লান্তভাবে বলল, যখন আমরা  কাউকে বাছাই করে ফেলব তখন আর আমরা বলতে পারব না আমরা ঠিক সাদা পাছা চাই।

বানজ বলল, আমি ঐ মেয়েটির সাথে দেখা করতে চাই।

আমিও, ডিরি বলল।

কিন্তু মেলো স্টুয়ার্ট সব থামিয়ে সেটে এলো। সে বিজয়ীর মতো হাসছিল। আমরা সবাই কাজে ফিরে যেতে পারি। সে বলল, অ্যাথেনা ছবিতে ফিরে যাচ্ছে। তার স্বামী বজ স্কানেট স্বয়ং ঝুলে গেছে। বজ স্কানেট ছবি থেকে দূরে। সে যখন এটা বলল, তখন সে হাততালি দিল যেমন কর্মীরা সর্বদা হাততালি দেয়, কোনো ছবির অভিনেতার রোল শেষ হলে। স্কিপি ও ববি তার সাথে হাততালি দিল। ডিটা টমি বিরক্ত হয়ে তাদের তিন জনের দিকে চেয়ে রইল।

এলি চায় তোমরা দুজনে ঠিক করে ফেল, মেলো বলল, তুমি নও ডিটা। সে হাসল। এটা কি একটা ব্যবসায়িক আলোচনা, কোনো সৃষ্টিশীল সিদ্ধান্ত হবে না। সব লোক শব্দ মঞ্চ ত্যাগ করল।

যখন তারা চলে গেল তখন ডিটা টমি সুন্দর পাছাওয়ালা মেয়েটিকে তার ট্রেইলারের কাছে ডাকল। সে খুব সুশ্রী, অথচ কালো কিছুটা তামাটে তা ছিল নির্লজ্জ প্রাণোচ্ছলতা। ডিটা লক্ষ্য করল সে ছিল প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু যা কোনো অভিনেতার থাকে না।

ইমপ্রেস ম্যাসালিনায় আমি তোমাকে এক ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী বালিকার রোল দিচ্ছি, ডিটা বলল, তোমার এক লাইন সংলাপ বলতে হবে কিন্তু আসলে আমরা তোমার পাছা দেখাব।

দুভার্গ্যক্রমে আমাদের প্রয়োজন ছিল একটা সাদা পাছা, মিস অ্যাকুইটেন ও তোমারটাও কালো। অন্যদিকে তুমি অবশ্যই ছবি চুরি করবে। মেয়েটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি উপহার দিল। Falene fant, এটা একটা ছবির নাম।

তখন মেয়েটি বলল। আপনাকে ধন্যবাদ।

দিকনির্দেশনা ও চাকরি উভয়ের জন্য ধন্যবাদ।

একটা শুভ খবর ডিটা বলল, আমাদের প্রযোজক স্কিপি ডিরি বলে, পৃথিবীতে তোমার পাছা খুব সুন্দর। স্টুডিওর সভাপতি ও প্রোডাকশনের প্রধান মিস্টার বানজ তাই মনে করে। তুমি তাদের কাছ থেকে শুনতে পাবে।

ফ্যালেন ফ্যান্ট দুষ্ট হাসি দিল, আর আপনি কি মনে করেন? সে বলল।

ডিটা টমি কাঁধ ঝাঁকাল। পুরুষেরা যে রকম পাছা নিয়ে ভাবে, আমি সে রকম ভাবি না।

কিন্তু আমি মনে করি তুমি আকর্ষণীয় এবং একজন খুব ভালো অভিনেত্রী। আমি ভাবি ছবিতে তুমি একলাইনের বেশি সংলাপ ভালোভাবেই করতে পারবে। আর আজ রাতে আমার বাড়িতে তুমি এলে আমরা তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে পারি। আমি তোমার জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করব।

সেই রাতে ডিটা টমিও ফ্যালেন ফ্যান্ট বিছানায় দুই ঘণ্টা ব্যয় করল। ডিটা রাতের খাবার রান্না করল। তারা ফ্যালেনের ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করল। এটা কৌতুক ডিটা বলল, কিন্তু আমি এখন থেকে মনে করি আমরা ঠিক বন্ধু হয়ে যাব, আর এই রাতের ঘটনা তুমি গোপন রাখবে।

অবশ্যই, ফ্যালেন বলল, কিন্তু সবাই জানে তুমি পুরুষ সমকামী। এটা কি আমার কালো পাছা? সে দাঁত বের করে হাসছিল।

ডিটা পুরুষ সমকামী শব্দটা উপেক্ষা করল।

এটা ছিল একটা ইচ্ছাকৃত নির্লজ্জতা প্রত্যাখ্যানের জন্য ফিরিয়ে দেয়া কালো, সাদা, সবুজ অথবা হলুদ যাই হোক, এটা একটা সুন্দর পাছা। ডিটা বলল। কিন্তু তুমি আসলেই প্রতিভার অধিকারী। আমার ছবিতে তোমাকে নিলে তোমার প্রতিভার মূল্য পাবে না আর প্রতি দুই বছরে শুধু আমি একটা ছবি বানাই। তোমাকে এর চেয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। বেশিরভাগ পরিচালক পুরুষ, তারা তোমার মতো কাউকে ছবিতে নিলে, তারা সর্বদা একটু আধটু যৌন সঙ্গমের আশা করে। তুমি পুরুষ সমকামী জানতে পারলে তারা হয়তো তোমায় এড়িয়ে যাবে।

একজন প্রযোজক স্টুডিওর প্রধান আমার থাকলে, কার প্রয়োজন পরিচালকের? ফ্যালেন উল্লসিতভাবে বলল।

তুমি পারবে ডিটা বলল, অন্য অভিনেতারা তোমার দরজায় যেতে পারে। কিন্তু পরিচালক চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কামরায় তোমাকে ত্যাগ করতে পারে। অথবা তোমাকে সে গুলি করতে পারে। যাতে তোমার চেহারা ও কথা বলা নষ্ট হয়ে যায়।

ফ্যালেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার মাথা ঝাঁকাল।

আমি ববি বানজ, স্কিপির সাথে অবশ্যই যৌন সঙ্গম করব। আর ইতিমধ্যে তোমার সাথে আমি সঙ্গম করেছি। এটা কি নিঃশর্তভাবে প্রয়োজন? সে সরলভাবে তার চোখ বড় করল।

ডিটা আসলেই তৎক্ষণাৎ তার প্রিয় হয়ে গেল। এখানের এই বালিকাটি ক্ষুয়া হতে চেষ্টা করল না। আজকের রাত আমার জন্য খুব ভালো সময়। সে বলল, তুমি যথাযথভাবে আসল কাজে আঘাত দিয়েছ।

ভালো, আমি কখনো বুঝতে পারি নাই জনসাধারণের যৌন বিষয়ে বাড়াবাড়ি। ফ্যালেন বলল, এটা আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। আমি ড্রাগ গ্রহণ করি না, বেশি মদও পান করি না। আমার অবশ্যই কিছুটা মজা থাকতে হবে।

খুব সুন্দর, ডিটা বলল, এখন ডিরি ও বনজ সম্পর্কে আমি তোমাকে বলব, ডিরি কেন অধিকতর নিশ্চিত। ডিরি আত্মমগ্ন। সে নারীদের ভালোবাসে। সে আসলেই তোমার জন্য কিছু করবে। সে তোমার ভালো দিক উন্মুক্ত করবে। তোমার প্রতিভা দেখায় সে যথেষ্ট দক্ষ। এখন বানজ সম্পর্কে বলি। এলি ক্যারিয়ার ছাড়া কাউকে পছন্দ করে না। তাছাড়া তার কোনো পছন্দ ছিল না, প্রতিভার জন্য তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। বানজ তোমাকে একটা স্টুডিওতে স্বাক্ষর করাবে এবং পরে তুমি পচে যাবে। সে তার স্ত্রীকে শান্ত রাখার জন্য তার সাথে থাকে। বেশি ডলারের জন্যে সে অনেক কাজ পায় কিন্তু শালীন কোনো কাজ পায় না। স্কিপি ডিরি তোমাকে পছন্দ করলে তোমার ক্যারিয়ারের জন্যে কিছু করতে পারবে।

এই কথা কিছুটা অনুভূতিহীন, ফ্যালেন বলল।

ডিটা তাকে বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল। আমাকে বাজে ভেব না। আমি একজন পুরুষ সমকারি কিন্তু আমি একজন নারীও। আমি অভিনেতাদের চিনি। তারা যে কোনো কিছু করবে পুরুষ কিংবা নারী তুমি ওই মইয়ে চড়ো দেখাবে। আমরা সবাই বড় বাজির জন্যে খেলি। তুমি কি জানো নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে থাকতে হবে ওকলাহামায় অথবা তুমি কি জানো ছবির একজন তারকা হয়ে তুমি বাস করবে ম্যালিবুতে? তোমার গড়ন দেখে বুঝতে পারছি যে তোমার বয়েস তেইশ বছর। ইতিমধ্যে তুমি কতবার যৌন সঙ্গম করেছ?

তুমি চালাচ্ছ? ফ্যালেন বলল। সম্ভবত পঞ্চাশ। কিন্তু সমস্তই মজার জন্য, সে আত্মপক্ষ সমর্থনে তামাশা করে বলল।

এর চেয়ে একটু তোমাকে দিতে বড় আঘাত পারবে না ডিটা বলল, এবং কে জানে, এটাও হয়তো মজা করাই হবে আবার।

তুমি জান ফ্যানেল বলল, আমার তারকা হওয়া নিশ্চিত না হলে আমি এটা করব না।

অবশ্যই, ডিটা বলল, আমাদের কেউই পাবে না।

ফ্যানেল হাসল। তোমার সম্পর্কে কি? সে জিজ্ঞেস করল, আমার বাছাই করার কোনো উপায় ছিল না। ডিটা বলল, নিছক প্রতিভার আচ্ছন্নতায় এটা আমি গড়ে নিই।

দুর্ভাগ্য তোমার, ফ্যানেল বলল।

লডস্টোন স্টুডিওতে এলি ম্যারিয়নের সাথে তার অফিসে ববি বানজ, স্কিপি ডিরি এবং মেলো স্টুয়ার্ট মিটিং করছিল। বানজ রাগান্বিত ছিল। বোকা লেওড়াটা যে সবাইকে মৃত্যুর ভয় দেখায় এবং পরে সেই আত্মহত্যা করবে।

ম্যারিয়ন স্টুয়ার্টকে বলল, আমার ধারণা, তোমার মক্কেল কাজে ফিরে আসছে।

অবশ্যই, মেলো বলল।

তাকে পুনরায় করতে হবে না, তাকে আলাদা উৎসাহ প্রদান করার প্রয়োজন নেই। শান্ত ও মৃদু স্বরে ম্যারিয়ন জিজ্ঞেস করল। প্রথমে মেলা স্টুয়ার্ট সজাগ হলো যে ম্যারিয়ন রাগান্বিত রয়েছে। না, মেলো বলল, সে আগামীকাল কাজ আরম্ভ করতে পারে। খুব ভালো ডিরি বলল, আমরা হয়তো এখন নিম্ন বাজেটে আসতে পারব।

আমি চাই তোমরা সবাই কথা বন্ধ করে আমার কথা শুন ম্যারিয়ন বলল। এই রূঢ়তা এতই নাজিরবিহীন যে, তারা চুপ করতে বাধ্য হলো। ম্যারিয়ন সাধারণ নিয়মে হাসি-খুশি স্বরে বলছিল, কিন্তু তার রাতের বেলায় এখন কোনো ভুল নেই।

স্কিপি ছবির বাজেট ভালো, আমরা কি নগ্ন দৃশ্য দেব? আমরা কোনোভাবেই ছবির মালিক না। আমরা আতঙ্কগ্রস্ত, আমরা একটা বোকামীপূর্ণ ভুল করেছি।

আমাদের সবাই দোষী। এই ছবির মালিক আমরা নই। এটা বাইরের।

স্কিপি ডিরি তাকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করছিল। চিতরনে লডস্টোন একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করবে। আর লাভের ওপর তুমি একটা পার্সেন্টেজ পাবে। এটা এখনো একটা ভালো ব্যবস্থা।

কিন্তু ডি লিনা আমাদের চেয়ে বেশি উপার্জন করবে। বানজ বলল, এটা ঠিক না

এক্ষেত্রে ডি লিনা সমস্যার সমাধানে কিছুই করবে না। ম্যারিয়ন বলল, অবশ্যই আমাদের স্টুডিওর ছবি পাবার ক্ষেত্রে কিছুটা বৈধ ভিত্তি আছে।

এটা সত্য, বানজ বলল, তার সাথে যৌন সঙ্গম করো। আমাদের আদালতে যেতে হবে।

ম্যারিয়ন বলল, আমরা তাকে আদালতের ভয় দেখিয়ে তার অর্থের অংশ কেটে নেব। আমরা তাকে তার অর্থ ফিরিয়ে দশ শতাংশে মোটের ওপর সমন্বয় করব।

ডিরি হাসল। এলি ও মলি ফ্লাডারস তোমার অংশ তাকে নেবার অনুমতি দেবে না।

আমরা ডি লিনার সাথে সরাসরি আলোচনা করব, ম্যারিয়ন বলল, আমার মনে হয়। আমি তাকে বুঝতে পারব। সে একটু সময় বিরতি নিল। আমি খবর পাওয়া মাত্র তাকে বলব। সে খুব তাড়াতাড়ি আমার সাথে যোগদান করবে। আর তুমি জানো তার একটা নিংসন্দেহ পটভূমি রয়েছে। এই আত্মহত্যা তার জন্য খুবই সৌভাগ্যের কারণ হয়েছে। আমি মনে করি না যে আদালতে কেসের প্রচারণার ব্যাপারে সে তোয়াক্কা করবে।

ক্রস ডি লিনা জানাদু হোটেলের চিলেকোঠায় বসে সংবাদপত্রে স্কানেটের মৃত্যুর ওপর রিপোর্ট পড়ছিলেন। সবকিছু যথাযথভাবে চলে গেল। এটা একটা পরিষ্কার আত্মহত্যার কেস ছিল। এটা প্রমাণের জন্য দুটা সুন্দর নোট দেয়া হয়েছে।

হাতের লেখার বিশেষজ্ঞদের জালিয়াতি তদন্ত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। বজ স্কানেট বড় সাংবাদিকের কাউকেই ছাড়েননি। আর লিওনার্ডো সোসা ছিল খুব ভালো। স্কানেটের হাত ও পায়ের বেড়ি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিথিল করা হলো। আর এতে কোনো দাগ লাগেনি। লিয়া ভাজি ছিল একজন বিশেষজ্ঞ।

ক্রসের রিসিভ করা প্রথম কলটি তার প্রত্যাশিত ছিল। কুওগের ফ্যামিলি ম্যানশনে জর্জিও ক্লেরিকুজিও তাকে ডাকল। ক্ৰস নিজেকে কখনো বিভ্রান্ত করতে পারেনি। সে যা করেছিল ক্লেরিকুজিও তা বের করতে পারল না।

এলি ম্যারিয়নের দ্বিতীয় কলটি রিসিভ করল ক্রস। তার আইনজীবীকে ছাড়াই লস অ্যাঞ্জেলেসে আসতে বললেন। ক্রস বলল, সে অবশ্যই যাবে। কিন্তু লাস ভেগাস ত্যাগ করার আগেই সে মলি ফ্লাভারকে কল করে। আরো জানায় যে, ম্যারিয়ন তাকে ফোন করেছিল। সে রাগান্বিত ছিল। ঐ সব নোংরা জারজরা, সে বলল, আমি তোমাকে বিমানবন্দরে আটকাব এবং আমরা একত্রে ভেতরে যাব। তুমি একজন আইনজীবী ফলে কখনো একজন স্টুডিওর। প্রধানকে সুপ্রভাত বলবে না। যখন তারা দুজন লডস্টোন স্টুডিও ও ম্যারিয়নের অফিসের দিকে হাঁটছিল তখন তারা জানল সেখানে সমস্যা আছে। সেখানে চারজন লোক অপেক্ষা করছিল। মারাত্মক হিংস্র লোকদের হাতে ছিল কিছু ঘটাবার মতো শক্তিশালী অস্ত্র।

আমি আমার আইনজীবীকে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম। ক্রস ম্যারিয়ানকে বলল, আমি আশা করছি তুমি কিছু মনে করবে না।

তুমি যেটা ইচ্ছে করো ম্যারিয়ন বলল, আমি তোমার অস্বস্তি থেকে তোমাকে কিছুটা রক্ষা করতে চেষ্টা করব।

কঠিন ও রাগি মুখে মলি ফ্লাভারস বলল, এটা আসলেই ভালো হতে যাচ্ছে। তুমি ছবি ফিরত চাও, কিন্তু আমাদের চুক্তি কঠিন।

সে ইতিমধ্যে ঝুঁকির মধ্যেই আতুমি সঠিক ম্যারিয়ন বলল। কিন্তু ক্রসের ন্যায্য নাটকের অনুভূতির প্রতি আমরা আপিল করতে যাচ্ছি। সে এ সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারল না। যেহেতু লডস্টোন স্টুডিও বিনিয়োগ করেছে বেশ সময়, টাকা ও সৃষ্টিশীল প্রতিভা। যা ছাড়া এই ছবি বানানো সম্ভব নয়। ক্রস তার অর্থ ফেরৎ পাবে। সে যৌথ সমন্বয়ের দশ শতাংশ পায় এবং আমরা সমন্বয়ে সিদ্ধান্তে উদার হব। যে কোনো ঝুঁকিতে পড়বে না।

মলি বলল, তোমাকে সুযোগ দেয়া অপমানজনক।

পরে আমাদের অবশ্যই আদালতে যেতে হবে। ম্যারিয়ন বলল, ক্রস আমি।

আমি নিশ্চিত তুমি জানবে যে আমি কি রকম খারাপ কাজ করতে পারি। সে ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল। এটা ছিল একটা দয়ালু হাসি, যার ফলে তার গরিলার মতো মুখকে বানিয়েছিল স্বর্গীয় দূতের মতো।

মলি ছিল অসংযত। এলি এক বছরে তুমি বিশ বার আদালতে যাও এবং তোমাকে অপসারণ করে, কারণ তুমি সর্বদা পায়খানা টানছিলে এর মতো। সে ক্রসের দিকে ফিরে বলল, আমরা ছাড়ছি।

কিন্তু ক্রস জানত যে আদালতে দীর্ঘমেয়াদি কেস চালানোর সামর্থ্য তার নেই। তার ছবি কি-না স্কানেটের মৃত্যর পেছনের সব ঘটনার খোঁজ নিয়েছে। তারা তাকে এমনভাবে চিহ্নিত করেছে যাতে সে জনসাধারণের সাথে খুবই পরিচিত মুখ হয়ে যায়। আর একে বড় ডন এখনো সহ্য করবে না। কোনো ভুল ছিল না। ম্যারিয়ন এর সব জেনেছিল।

চলো আমরা সব দিকে দিয়েই কঠিন হই।

ক্রস মলিকে বলল। পরে সে ম্যারিয়ন বানজ, স্কিপি ডিরি ও মেলো স্টুয়ার্টের দিকে ঘুরল।

একজন জুয়াড়ি আমার হোটেলে এসে জুয়া খেলে জয়ী হলে আমি তাকে আলাদা কিছু দেব। এমনকি আমি বলছি না আমি তাকে অর্থ দেব। ভদ্রলোক হিসেবে তুমি এখানে তাই করছ? অতএব কেন তুমি এটা পূর্ণ বিচার করবে না?

বানজ অবজ্ঞাভরে বলল, এটা ব্যবসা, জুয়া খেলা নয়। মেলো স্টুয়ার্ট ক্রসকে বলল, রক্ষণশীলভাবে তোমার বিনিয়োগে তুমি দশ মিলিয়ন ডলার বানাবে। নিশ্চিতভাবেই এটা সহজ।

আর এমনকি তুমি কোনো কিছু করছিলে না বানজ বলল শুধু স্কিপি ডিরিকে তার পাশে আছে বলে মনে হলো। ক্রস তুমি আর যোগ্য হও। কিন্তু আদালতে লড়াই করার চেয়ে তারা যে অফার দিয়েছে তা ভালো। ক্ষতির ঝুঁকি নিই। এই একজন চলে যাক। তুমি আর আমি স্টুডিও ছাড়াই আমরা ব্যবসা শুরু করব। আর আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি তুমি সহজ ঝাঁকুনি পাবে।

ক্রস বুঝল হুমকির মতো মনে না হলেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করে সে হাসল। সম্ভবত তুমি সম্পূর্ণ সঠিক, সে বলল, আমি ছবির ব্যবসায় ভালোর জন্য সবার সাথেই থাকতে চাই। আর দশ মিলিয়ন লাভ কোনো খারাপ শুরু নয়। মলি কাগজপত্রের সব দায়িত্ব নেবে। তখন আমাকে অবশ্যই একটা প্লেন ধরতে হবে। Please excuse me. সে কামরা থেকে বের হলো আরো মলি তাকে অনুসরণ করল।

আদালতে আমরা জিততে পারি, মলি তাকে বলল, আমি আদালতে যেতে চাই না। ক্রস বলল, সুযোগ তৈরি করো।

মলি তাকে খুব সর্তকতার সাথে বোঝাল। পরে সে বলল, ঠিক আছে, কিন্তু দশ শতাংশের চেয়ে আমি বেশি পাব।

যখন পরের দিন ক্রস কুওগের ম্যানশনে পৌঁছল, তখন ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও, তার পুত্র জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি এবং নাতি ডেন্টি তার জন্যে অপেক্ষা করছিল। তারা ইতালির ঠাণ্ডা শূকরের রান, পনির, কাঠের বাটি ভর্তি প্রচুর সালাদ ও বড় বড় কেত্তাদুরস্ত ইতালির রুটি দিয়ে বাগানে দুপুরের খাবার খেল।

ডনের জন্য ছিল গুঁড়ো পনিরের বাটি। তারা খাচ্ছিল, ডন বলল, ক্রকসিফিজিও আমরা শুনলাম তুমি ছবির ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হয়েছ। লাল মদে চুমুকের জন্যে সে বিরতি নিল। সে পরে এক চামচ ইতালির পারামিসান গুড়া পনির খেল।

হ্যাঁ, ক্রস উত্তর দিল।

জর্জিও বলল, এটা কি সত্য যে, ছবির অর্থের জন্য জানা তোমার শেয়ার থেকে কিছু তুলেছে।

এটা আমার অধিকারের মধ্যে গণ্য। ক্রস বলল, আমি সর্বোপরি তোমার পশ্চিমের ব্ৰগ লিওন। সে হাসল।

ব্রিগ লিওন, ডেন্টি বলল।

ডন তার নাতির দিকে অসমর্থনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সে ক্রসকে বলল, তুমি পরিবারের পরামর্শ ছাড়া খুবই মারাত্মক একটা ঘটনার সাথে জড়িত হয়েছিলে।

তুমি আমাদের প্রজ্ঞা খোঁজনি। সবার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ, তুমি একটা অবাধ্যতার কাজ করেছ। এর জন্য অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া অবশ্যই তীব্র হবে। এর জন্য প্রথা হলো তুমি অবশ্যই আমাদের সম্মতিতে রাজি হবে। না হলে, তোমার নিজের পথে যাবে এবং পরিণতি ভোগ করবে।

আর তুমি পরিবারের সম্পদ ব্যবহার করতে, জর্জিও কর্কশভাবে বলল। সিয়েরার হান্টিং লজ লিয়া ভাজি, লিওনার্ডো সোসা এবং পোলার্ড তুমিও নিরাপত্তা এজেন্সির সাথে ব্যবহার করবে। অবশ্য তারা তোমার পশ্চিমের লোক কিন্তু তারাও পরিবারে সম্পদ। সৌভাগ্যক্রমে সবকিছু যথাযথভাবে চলে গেল। কিন্তু এটা থাকল না? আমরা সবাই অবশ্যই ঝুঁকিতে রয়ে গেলাম।

ডন ক্লেরিকুজিও অস্থিরভাবে বললেন, সে সবকিছু জানে। প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন। ভাগ্নে তুমি কয়েক বছর আগে জরুরি কাজে অংশগ্রহণে অপারগতা জানিয়েছিলে, যে কাজ অবশ্য কিছু লোকে করে। এ ঘটনা সত্ত্বে আমি তোমার অনুরোধ রক্ষা করেছিলাম। কারণ তুমি ছিলে খুবই মূল্যবান। এখন তুমি তোমার নিজের লাভের জন্য এটা করলে। ভালোবাসার ভাগ্নে হিসেবে এটা নয় কি, আমি সব সময় অবশ্যই জানি।

ক্রস পরে জানল যে, ডন তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। সে জেনেছিল যে সত্য বলছিল না। আসলে সে অ্যাথেনার রূপে প্রলুব্ধ হয়েছিল।

এটা আসলে ব্যাখ্যা করার মতো কারণ হতে পারে না। বাস্তবে এটাকে অপমানিত করা হচ্ছিল। আরো সম্ভাব্যভাবে ভয়ানক ছিল। একটা আকর্ষণীয় অদ্ভুত মহিলার চেয়ে অমার্জনীয় হয়েছিল তা যা রাজকীয় ক্লেরিকুজিও পরিবারের গুরুত্ত্ব অধিক ছিল। সে সতর্কভাবে বলল, বেশি পরিমাণ উপার্জনের সুযোগ আমি দেখলাম। আমি একটা নতুন ব্যবসা করার সুযোগ পেলাম। আমার জন্যে এবং আমার পরিবারের জন্য। একটা ব্যবসায়ে কালো টাকা সাদা বানানো যাবে। কিন্তু আমাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে। আমার নিশ্চতভাবেই এটা গোপন রাখার ইচ্ছে নেই।

সত্য যে, পরিবারের সম্পদ ব্যবহার করব যা তুমি অবশ্যই জানবে। আমি চেয়েছিলাম কাজ সম্পন্ন করার সাথে সাথে তুমি আসবে।

ডন তার কথা শুনে হেসে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, কাজ সম্পন্ন করাটা কি?

ক্রস তৎক্ষণাৎ বুঝতে পালে যে, ডন সবকিছু জেনে গেছে। অন্য একটা সমস্যা আছে ক্রস বলল এবং ম্যারিয়নের সাথে করা নতুন ব্যবস্থা সে ব্যাখ্যা করল। ডন উচ্চস্বরে হেসে উঠলে, সে বিস্মিত হয়ে গেল।

তুমি যথার্থই করেছিলে, ডন বলল, একটা আদালতের মামলা অবশ্যই দুর্ঘটনা বয়ে আনে। তাদের বিজয় তাকে অর্জন করতে দাও। কিন্তু তারা যে পাঁজি। এটা খুব ভালো বিষয় যে আমরা সবসময় ঐ ব্যবসায়ের বাইরে ছিলাম। তিনি কিছুক্ষণের বিরতি নিলেন। বড় জোর দশ মিলিয়ন তুমি উপার্জন করতে পারতে। সেটা বিরাট অঙ্ক।

না, ক্রস বলল, পাঁচ আমার জন্য এবং পাঁচ পরিবারের জন্য। আমি ভাবি না, আমরা সহজে পিপি হয়ে যাব। আমার কিছু পরিকল্পনা আছে কিন্তু আমার অবশ্যই পরিবারের সাহায্য লাগবে।

পরে আমরা অবশ্যই বেশি ভাগের জন্য আলোচনা করব, জর্জিও বলল। সে ছিল বানজের মতো। ক্রস ভাবল সে সর্বদা বেশির জন্য চাপ দিত।

ডন অস্থিরভাবে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। প্রথমে খরগোস ধরব, পরে আমরা এটা ভাগ করব। তোমার ওপর পরিবারের করুণা কিন্তু একটা বিষয়। সবকিছুর জোরালো আলোচনার পর এটা করা হবে। তুমি কি আমার কথা বুঝেছ ভাগ্নে?

হ্যাঁ ক্রস বলল।

সহায়তা-অনুভূতি নিয়ে সে কুওগ ত্যাগ করল। ডন তার মায়া দেখল।

ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও’র বয়স আশি বছর, এখনও তিনি তার সাম্রাজ্যে তার আদেশ বহাল রেখেছেন। অনেক প্রচেষ্টায় অনেক মূল্য দিয়ে তিনি তার পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। তিনি অনুভব করেন, এটা তার উপার্জিত সম্পদ।

যখন অনেক লোক পাপ কাজের জন্য আচ্ছন্ন থাকে, দুঃস্বপ্নের জন্য অনুতাপ করে এমনকি তাদের নিজস্ব সততায় সন্দেহ করতে শুরু করে অথচ ডন এখনো তার গুণে সে অনড়, যেমন তিনি তার চল্লিশ বছর বয়সে ছিলেন।

ডন ক্লেরিকুজিও তার বিশ্বাস ও রায়ে এখন কঠিন। ঈশ্বর একটা বিপজ্জনক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর এর মাঝে এমনকি মানব জাতিকে করেছে আরো বিপজ্জনক। ঈশ্বরের পৃথিবী একটা কয়েদখানা যার মধ্যে মানুষ তার প্রতিদিনের রুটি-রোজগার করে এবং সহকমী লোক ছিল একজন সহকারী জানোয়ার, মাংসাশী এবং করুণাহীন। ডন ক্লেরিকুজিও গর্বিত ছিল যে, তার প্রতিরক্ষায় তার ভালোবাসার লোকেরা নিয়োজিত ছিল তাদের সারাটা জীবনের মধ্য দিয়ে।

তার বেশি বয়স নিয়ে সে তৃপ্ত ছিল। তার শত্রুদের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দেবার ইচ্ছা তার ছিল। নিঃসন্দেহে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। তিনি কি একজন খ্রিস্টান ছিলেন না যিনি তার নিজের ঘরে পবিত্র চ্যাপেলের ব্যবস্থা রাখতেন? কিন্তু তিনি তার শত্রুদের ক্ষমা করে দিতেন যেমন ঈশ্বর সব মানুষকে ক্ষমা করে।

ক্লেরিকুজিও’র সৃষ্টি করা সংসারে অনেক শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন। তার পরিবারের হাজার হাজার লোক ব্রঙ্কস এনকেভে বসবাস করছিল। ব্ৰগ লিওন বিভিন্ন এলাকা শাসন করছিল। তাদের অর্থ তার কাছে রাখার বিশ্বাস করেছিল। চলমান সমাজ ব্যবস্থার সাথে চলতে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে, তার মধ্যস্থতার জন্য তারা আসত। তারা জেনেছিল যে, ডন সঠিক। প্রয়োজনে অসুস্থতা অথবা যে কোনো সমস্যার সময় তারা তার কাছে আসত আর তিনি দুর্ভাগ্যের একটা নির্দেশনা দিয়ে দিতেন। আর এই কারণেই তারা তাকে ভালোবাসত। ডন জানলেন যে, ভালোবাসা বিশ্বাসযোগ্য কোনো আবেগ নয়; কত গভীর তাও একটা বিষয় না। ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা নিশ্চিত করে না, মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে না, অত্যধিক জটিল এই পৃথিবীতে ঐক্যের কোনো ব্যবস্থা করে না। কোনো মানুষই এটা ডন ক্লেরিকুজিও’র চেয়ে বেশি বুঝে না। সত্য ভালোবাসা উদ্বুদ্ধ করতে একজন লোক শুধুই ভয় পায়। নিঃসঙ্গ ভালোবাসা ঘূণ্য। ভালোবাসায় বিশ্বাস ও বাধ্যতা না থাকলে এটা কিছুই না। তার শাসন স্বীকার না করলে তার প্রতি কি ভালোবাসা থাকত?

কারণ তিনি তাদের জীবনের জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি তাদের ভাগ্যোন্নয়নের শিকড় ছিলেন। আর সেই কারণেই তিনি তার কোনো কাজে, ভয়ে দ্বিধান্বিত হতেন না। তিনি তার রায়ে সব সময় শক্ত থাকতেন। কেউ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে, কেউ তার সংসারে অখণ্ডতা ধ্বংস করলে, তাকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হতো। এবং এমনকি তাকে দমন করা হতো, যার অর্থ ছিল মৃত্যুদণ্ড। এখানে কোনো ক্ষমা নেই, অবস্থার কোনো কমতি ছিল না। দয়া ভিক্ষার জন্য কোনো আপিল ছিল না। যা অবশ্যই করতে হবে তা অবশ্যই করা হবে। তার পুত্র জর্জিওকে একদা বলা হতো যে জেকেলে। সে যা গ্রহণ করত তার কোনো বিকল্প ছিল না।

এখন তিনি অনেক কিছুই বিবেচনা করেন। সান্তাডিও যুদ্ধে থেকে গত পঁচিশ বছর ভালোভাবেই পরিকল্পনা তিনি করছিলেন। প্রয়োজনে তিনি ছিলেন দূরদর্শী ধূর্ত, নিষ্ঠুর এবং এগুলো রক্ষা করতে তিনি ছিলেন দয়ালু আরো এখনও ক্লেরিকুজিও পরিবার ক্ষমতার শীর্ষে, যে কোনো আক্রমণ হতে রক্ষার ক্ষমতা রাখে। শিগগিরই সমাজের বৈধ গঠনে এটা অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং এটা ফেরানো যাবে না।

কিন্তু অদূরদর্শী আশাবাদিতা দিয়ে ডন ডোমেনিকোকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তিনি জমিতে আগাছা মাথা গজিয়ে ওঠার পূর্বেই ক্ষতিকর আগাছা চিনতে পেরেছেন। এমন বড় বিপদ ছিল অভ্যন্তরীণ। ডেন্টির বেড়ে ওঠা, ডনের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়– এ মনোভাব নিয়ে বড় হয়ে ওঠা ছিল ডনের জন্য বড় বিপদ।

তারপর গ্রোনিভেল্টের  উত্তরাধিকারী দ্বারা ক্রস ধনী হয়ে গেল। পরিবারের তত্ত্বাবধান ছাড়াই সে বাস্তবিকই বড় পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন। সুদক্ষভাবে যুবক তার যাত্রা আরম্ভ করলেন। তার বাবা পিপির মতো একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তারপর ভারজিনো ব্যালাজো চাকরি তাকে আহার ও পরিধেয় নিয়ে খুঁতখুঁতে পরিণত করল। আর পরিবার কর্তৃক সক্রিয় কর্তব্য থেকে তাকে অব্যাহতি দেবার পরও, তার কোমল হৃদয়ের কারণে তার নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য সে মাঠে ফিরে গিয়েছিল এবং সম্পদনা করেছিল স্কানেট। স্বয়ং ডনের অনুমতি ছাড়াই এটা করেছিল। কিন্তু তার বিরল ভাব প্রবণতায় স্বয়ং ডন ক্লেরিকুজিও এই কাজের জন্য ক্ষমা করেছিলেন। ক্রস তার সংসার রক্ষার চেষ্টা করছিল এবং অন্য কোথাও ঢুকতে চেয়েছিল। যদিও এই কাজগুলো বিশ্বাসঘাতকের বীজ থেকে এটা ডন ক্লেরিকুজিও বুঝতে পেরেছিলেন। এখন পিপি এবং ক্রস যৌথভাবে পরিবারের প্রতি হুমকি হয়েছে। তাছাড়া ডি লিনার জন্য ডেন্টির ঘৃণা বিষয়ে ডন অসচেতন ছিলেন। পিপি এটা জানার মতো এত চালাক ছিলেন না। আরো সে ছিল একজন বিপজ্জনক লোক। তার প্রমাণিত আনুগত্য সত্ত্বেও তার ওপর একটি চোখ অবশ্যই রাখা হতো।

ডনের ধৈর্য ক্রসের প্রতি মমতা জন্মিয়েছিল এবং তার পুরনো ও বিশ্বস্ত সৈনিক, তার বোনের ছেলে পিপির প্রতি জন্মেছিল ভালোবাসা।

সর্বোপরি তার ছিল ক্লেরিকুজিও’র রক্ত। ডেন্টির দ্বারা উপস্থিত পরিবারের প্রতি বিপদ সম্পর্কে তিনি আসলেই অধিক উদ্বিগ্ন ছিলেন।

নানা ডন ক্লেরিকুজিও’র সব সময় স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল ডেন্টির প্রতি। প্রায় দশ বছর বয়সের বালক হওয়া পর্যন্ত এবং নিশ্চিত মোহমুক্তি তাদের মধ্যে স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত তারা খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। ডন বালকদের চারিত্রিক শনাক্ত করেছিলেন যা তাকে সমস্যায় ফেলেছিল। দশ বছর বয়সে ডেন্টি ছিল সরলভাবে বর্ধনশীল, প্রতারণাপূর্ণভাবে কৌতুকপ্রবণ শিশু। সে ছিল সুঠাম শারীরিক সমন্বয়ের ভালো একজন ক্রীড়াবিদ। সে বিশেষভাবে তার নানার সাথে কথা বলতে ভালোবাসত। আর তার মা রোজ ম্যারির সাথে তার অনেক গোপন আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরে দশ বছর বয়সের পরে সে বিদ্বেষপরায়ণ ও ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়।

সে তার বয়সের ছেলেদের সাথে অযোগ্য তীব্রতা নিয়ে লড়াই করত। সে করুণাহীনভাবে মেয়েদের বিরক্ত করত, লাম্পট্য দেখাত। এগুলো ছিল খুবই জঘন্য। যদিও সে এটা মজা করা হিসেবে করত; কিন্তু ছোট ছেলেদের সাথে নয়। কিন্তু স্কুলের সুইমিং পুলে একটা ছোট বালককে একবার সে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল, তা ডন জেনেছিল।

ডন ঐ বিষয়ে বিশেষভাবে কঠিন সংকটপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। সর্বোপরি শিশুরা পশুর মতো, সভ্যতা তাদের বারবার মস্তিষ্কে ও পেছনে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। ডেন্টির মতে শিশুরাই একদিন বড় হয়ে দরবেশ হবে। তার বাঁচালতা উনকে বিরক্ত করত, তার মার সাথে তার অধিকক্ষণ কথাবার্তা এবং সবচেয়ে স্বয়ং ডনের প্রতি অবাধ্যতা তাকে বিরক্ত করছিল।

সম্ভবত ডন বিরক্ত হচ্ছিলেন। পনের বছর বয়সের সময় ডেন্টির বেড়ে ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। তার উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি হয়েছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিল যে, সে সর্বোচ্চ আরো ৩ ইঞ্চি বাড়বে এবং ক্লেরিকুজিও পরিবারের সাধারণ উচ্চতা ৬ ফুট হবে না। ডন ডেন্টির খাটো হয়ে যাওয়াকে বিপদ সংকেত হিসেবে বিবেচনা করলেন।

.

ডন ডেন্টির উচ্চতায় খাটো হওয়া বিপদের বার্তা মনে করেছিল। তাছাড়া তিনি যমজ হিসেবেও বিবেচনা করলেন। তিনি দাবি করলেন, জন্মটা ছিল আশীর্বাদ পুষ্ট অলৌকিক, যমজের ব্যাপারটা তখন অনেক দূরে ছিল। সে সময় ব্রঙ্কস এনক্লেভ এক সময়ে তিন সন্তানের জনক, এক সৈন্য ছিল। ডন আতঙ্কিত হয়ে তাদেরকে পোটল্যান্ডের ওরগন নামের এক সুন্দর অথচ নিঃসঙ্গ এক বাড়িতে আনলেন। তাছাড়া বাঁহাতি লোক এবং যারা তোতলা, তাদের সম্বন্ধে ডনের কুসংস্কার ছিল। যে কোনো লোকই বলছিল, এ লক্ষণগুলো ভালো হতে পারে না। ডেন্টি প্রাকৃতিকভাবেই বাঁহাতি ছিল।

কিন্তু এমনকি ডনের নাতির প্রতি সতর্ক বা তার মমতা বাড়ানোর জন্য এত কিছুও যথেষ্ট ছিল না। তার রক্তের যে কেউ ছিল স্বাভাবিকভাবেই দায়মুক্ত। কিন্তু ডেন্টি বড় হয়ে উঠলে সে ডনের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ঘোর বিরোধী হয়ে ওঠে।

ষোল বছর বয়সে ডেন্টি স্কুল ছাড়ল এবং সম্প্রতি পরিবারের ঘটনায় সে নাক গলাতে শুরু করল। রেস্টুরেন্টে ভিনসেন্টের সঙ্গে কাজ করত। তার সততা ও বুদ্ধির কারণে সে জনপ্রিয় ওয়েটার হিসেবে পরিচিত হয় এবং অনেক বখশিস পায়। এতে সে ক্লান্ত হয়। ওয়ালস্টিট অফিসে জর্জিও’র সাথে দুই মাস কাজ করেছিল। কিন্তু এটাকে সে ঘৃণা করল। কাগজ সম্পদের জটিলতা বিষয়ে তাকে শিক্ষা দিয়ে জর্জিও’র পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও, সে কোনো কাজের প্রতি তার প্রবণতা দেখাল না। শেষে পেটির সাথে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে সে স্থায়ী হলো। আর এনক্লেভের সৈন্যদের সাথে কাজ করতে ভালোবাসত, তার বাড়ন্ত শরীরের পেশির জন্য সে গর্বিত ছিল। কিন্তু এতে সে তার তিন চাচার বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। আর তার চাচাদের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ডন খুব গর্ববোধ করত। সে ছিল ভিনসেন্টের স্পষ্টতা, জর্জিও’র শান্ত এবং পেটির হিংস্রতা। যে কোনো জায়গায় এ দ্বারাই সে তার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে আসলেই চালাক, ধূর্ত ও চাতুর্যপূর্ণ কিন্তু এর সাথে ছিল কৌতুকের অনুভূতি, যাতে সে আরো আকর্ষণীয় হয়েছিল। আরো পরে সে তার পুনর্জাগরণের টুপি পরা শুরু করলেন। কেউ জানত না, সে তাদেরকে কোথায় নিচ্ছিল। টুপিগুলো রংধনুর মতো রঙিন সুতায় তৈরি ছিল। কোনোটি ছিল গোলাকার, কিছু ছিল আয়তক্ষেত্রকার এবং এগুলো তার মাথায় এমনভাবে বসা থাকত যেন এগুলো পানির উপরে ছিল। আর এই টুপি তাকে অধিকতর লম্বা, অধিকতর সুদর্শন ও অধিক পছন্দীয় করে তুলেছিল। কিছুটা কৌতুক অভিনেতার মতো ও নিরস্ত্রীর মতো। কতকটা দ্বিমুখাকৃতির মতো মনে হতো। টুপিতে তাকে মানিয়েছিল। ক্লেরিকুজিও’র মতো তার চুল এলো, কুচকুচে ও নিম্নমানের সব টুপিতে ঢেকে যেত।

এতদিন সিলভির ফটো এখনো সম্মানের স্থান হিসেবে দখল করে রেখেছে। সেই আখড়ায় ডেন্টি তার নানাকে জিজ্ঞেস করল, সে কিভাবে মারা গেল? ডন সংক্ষিপ্তভাবে বলল, একটা দুর্ঘটনা। সে আপনার প্রিয় পুত্র ছিল ঠিক? ডেন্টি জিজ্ঞেস করল। এতে ডেন্টি চমকে উঠল। ডেন্টির বয়স এখনো মাত্র পনের। এটা কেন সত্য হবে? ডন জিজ্ঞেস করল।

কারণ সে মৃত, ডেন্টি ধূর্ত হেসে বলল। আর এটা বুঝতে ডন কিছুক্ষণ সময় নিল। এই কচি যুবক কেমন করে এমন কৌতুক করার সাহস পেল।

ডন আরো জানল যে, যখন ডন ডিনার খাবার জন্য নিচে আসে তখন ডেন্টি উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরাফেরা করে এবং অফিসের কর্মচারীদের খোঁজা খুঁজি করে। এটা তাকে বিরক্ত করে না। শিশুরা সব সময় বয়স্কদের সম্পর্কে উৎসুক থাকে।

উনের কখনো কাগজে কোনো কিছু ছিল না; যাতে তার কোনো প্রকার গোপন কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ডন ক্লেরিকুজিও’র মস্তিষ্কে কোনো একটা বিরাট ব্ল্যাকবোর্ড আছে যাতে সমস্ত দরকারি তথ্য লেখা রয়েছে। এর মধ্যে তার প্রতি আনুগত কারীদের অপরাধও গুণাসমূহ সবিস্তারে লেখা হয়েছে।

কিন্তু ডন ক্লেরিকুজিও ডেন্টির প্রতি সতর্ক হলেও তার প্রতি অধিক মমতা দেখাত এবং তাকে আশ্বস্ত করত। তার পরিবারের সম্পত্তির একজন উত্তরাধিকারী হবে। আর তার মামারা প্রথমত জর্জিও তাকে তিরস্কার ও হুশিয়ার করত। শেষে উন ডেন্টির বৈধ সমাজে যোগদান করার হতাশ হয়েছিল এবং একজন হ্যাঁমার হবার জন্য তার প্রশিক্ষণে ডেন্টিকে অনুমতি দিয়েছিলেন।

ডন শুনেছিলেন তার মেয়ে রোজ ম্যারি রান্নাঘরে তাকে ডেকে নিয়ে রাতের খাবার খায় আর খাবার সময় শুধু তারা দুজনই সেখানে থাকে। সে ভেতরে গিয়ে টমেটোর সাথে পেশতা মোড়ানো রাজকীয় খাবারে মেশানো তার বাগানের তাজা পুদিনা পাতার বড় রঙিন বাটির সামনে রাখত। পনির ছিল খুবই হলদে, যা দেখে মনে হতো এটা খুবই মিষ্টি। রোজ ম্যারি এসে তার বিপরীত দিকে বসত। সে ছিল হাসি-খুশি, উজ্জ্বল এবং তার সুন্দর মেজাজের জন্যে সে খুবই আনন্দিত থাকত। আজ রাতে তার কোনো ভয়াবহ মূৰ্ছা হবে না। সে সান্তাডিও যুদ্ধের পূর্বে যেমন ছিল ঠিক তেমন।

কি বিয়োগান্তক ঘটনা সেদিন ঘটেছিল! একটি ভুলের জন্যে তাকে এমন করতে বাধ্য করে। আর এটা প্রমাণিত, একটা বিজয় সব সময় বিজয় থাকে না। কিন্তু কে ভাবত যে, রোজ ম্যারি চিরদিন বিধবা হয়ে থাকবে! প্রেমিকরা সব সময়আবার ভালোবাসে, সে সব সময় তাই বিশ্বাস করত। সে সময়, তার মেয়ের জন্যে মমতায় অভিভূত হয়ে যেত। সে ডেন্টির ছোট অপরাধগুলো মাফ করে দিত। ডনের ধূসর মাথায় মমতাময় পরশ দিয়ে তাকে রোজ ম্যারি সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করল।

সে গুড়ো পনিরের এক চামচ খেয়ে এটাতে বাদামের মতো স্বাদ অনুভব করল। সে তার মদে চুমুক দিয়ে বোজ ম্যারির শেষাংশের পা কাটতে দেখল। সে তিনটে কঠিন আবরণমুক্ত বাদামি, গোল আলু ও মসৃণ চর্বিযুক্ত খাবার পরিবেশন করল। তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিষ্কার হলো। তার চেয়ে কি ভালো?

সে এমন ভালো মানসিকতায় ছিল যে এর পরের সপ্তাহে বসার রুমে রোজ ম্যারির সাথে বসে টেলিভিশন দেখার জন্যে তাকে সে বুঝিয়েছিল।

চার ঘণ্টা দেখার পর আতঙ্কিত হয়ে সে রোজ ম্যারিকে বলল, এমন সংসারে কি বাস করা সম্ভব, যেখানে যার মনে যা চায় তাই করবে! ঈশ্বর বা মানুষ কাউকে শান্তি দেবে না এবং জীবন চালানোর জন্য কারো কোনো উপার্জনের অধিকার নেই? এমন কোনো মহিলা আছে যে সব পাগলামি অনুসরণ করে? এমন কোনো দুর্বল পুরুষ কি আছে যে প্রতিটা ছোট আশায় বশীভূত হয়, প্রতিটা ছোট সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়? কোথায় সেই স্বামী যে তার খাবারের জন্য পরিশ্রম করে। যে ভাগ্য ও নিষ্ঠুর পৃথিবী ভালো উপায় নিয়ে ভাবে? কোথায় সেই মানুষ যে বুঝে। একটু করা পনির, এক গ্লাস মদ ও দিনের শেষে একটা উষ্ণঘর যথেষ্ট পাওয়া? কারা সেই লোক যারা কিছু রহস্যময় মুখের জন্য আকুলভাবে আকাক্ষা করে থাকে? কি হৈচৈ তাদের জীবনে তৈরি করে নেয়। ডন তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সমর্থন জানালেন। তিনি টিলিভিশনের পর্দায় দুলনী বন্ধ করে দিলেন। তিনি বললেন, তাদের সম্পর্কে সাগরের তল থেকে সাঁতারের অনুমুতি দেয়া হলো। তারপর সে তার প্রজ্ঞার শেষ অংশটুকু দিলেন। প্রতিটা মানুষ যা করে তার জন্য সে নিজেই দায়ী।

ডন সেই রাতে তার শোবার ঘরে একাকী ছিল। সে তার বেলকনিতে বের হলো। ঘরগুলো ছিল উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত।

সে টেনিস খেলায় টেনিস বলের শব্দ শুনতে পেল এবং দেখল আলোর কিনারের খেলোয়াড়দের। অনেক দেরিতে বিধায় বাইরের এই খেলায় কোনো শিশু ছিল না। তিনি গেটে ও বাড়ির চারদিকে রক্ষীদের দেখতে পারলেন।

ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কি পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেন তা নিয়ে তিনি ভাবছিলেন। তার মেয়ে ও নাতির জন্য তার ভালোবাসা তার মধ্যে জেগে উঠল, যা তাকে যথার্থ সময়ে বুড়ো করে দিয়েছিল তাকে। কতটা ভালো করতে পারত সে সাধারণভাবে তাদেরকে রক্ষা করত। পরে তার নিজের সাথে তিনি রাগান্বিত ছিলেন। কেন তিনি সব সময় দুর্ঘটনার খবর অগ্রিম জানছিলেন? তিনি অবশ্যই তার জীবনে সকল সমস্যার সমাধান করবেন এবং এই একটি সমাধানও তিনি করলেন। এখন তার মন পরিকল্পনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তিনি সিনেটরের কথা ভাবছিলেন। বৈধতা নিশ্চিত করতে আইন পাসের জন্য লোকটাকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিল বছর বছর। কিন্তু সিনেটর ছিল নীতি বিবর্জিত লোক। এটা খুবই খারাপ। গ্রোনিভেল্ট তখন জীবিত ছিলেন না। ক্রস ও জর্জিও দরকারি দক্ষতা তাকে উৎসাহিত করার অধিকার ছিল না। সম্ভবত জুয়া খেলার বিষয়টা কখনো পাশ কাটায় তারপর তিনি তার পুরনো বন্ধু ডেভিড রেডফেলোর কথা ভাবল। যে এখন রোমে খুব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে। সম্ভবত এটা ছিল তাকে পরিবারে ফিরিয়ে আনার সময়। তার হলিউডের পার্টনারের প্রত্যাবর্তনের দাবি না করা ক্রসের জন্য সবদিক দিয়ে খুব ভালো ছিল। সে জানত না যে, দুর্বলতার একটা লক্ষণ অবশ্যই ভয়াবহ কিছু হবে। ডন সিদ্ধান্ত নিয়ে বোম থেকে ডেভিড রেডফেলোকে ডেকে পাঠাল ছবির ব্যবসা সম্পর্কে কোনো কিছু করার জন্য।

.

১১.

বজ স্কানেটের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ক্রস অ্যাথেনা একই ট্রেনে ম্যালিবু বাসাতে দাওয়াতে ক্লডিয়াকে কাছে পেল।

ক্রস ভেগাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে এ পাড়ি জমাল। তার পর তারা গাড়ি ভাড়া নিয়ে ম্যালিবু কলোনিতে পৌঁছল। সেখানে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না। যদিও সেখানে অতিথি হাউজে নিরাপত্তা প্রহরী ছিল, তারা তাকে পরীক্ষা করে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিল। সে লংজিটিভ ডিনাল বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে সমুদ্র সৈকতের উপরের বাড়িতে পৌঁছল। সেখানে একজন দক্ষিণ আমেরিকান কুমারী পরিচালিকা ছিল, তাকে সুন্দর শয়ন কক্ষটি দেখাল। যা তার কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউয়ের মতো মনোরম মনে হলো।

অ্যাথেনা তার জন্য অপেক্ষা করছিল এবং তাকে অন্য দিনের তুলনায় খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে সবুজ ব্লাউজ ও স্নেক পরেছিল, তার সৌন্দর্যের কাছে সাগরের সৌন্দর্য যেন কুয়াশার মতো বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, তারপর হাত মিলিয়ে স্বাগত জানাল কিন্তু হলিউডের মতো তার গালে চুম্বন করল না।

সে পানীয় প্রস্তুত করে তার হাতে দিল। এটা ছিল এক প্রকার লেবু মিশ্রিত ইডার্ন পানীয়। তারপর তারা সবুজ টাকশাল গদিসম্পন্ন চেয়ারে বসল। তখন হেলে যাওয়া সূর্য সোনার মুদ্রার মতো রুমের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

ক্রস তার সৌন্দর্যের প্রতি এতই সতর্ক ছিল যার কারণে সে তার মাথা সরিয়ে নিল যাতে তাকে দেখা যায়।

সোনালি চুল আর দুধের সরের মতো ত্বক, চেয়ারে ছড়ানো তার লম্বা দেহ– সব কিছুই ক্রসের রঙিন চোখে আরো রঙিন হয়ে উঠল। তাকে কিছুটা মালবাহী জাহাজের ছায়ার মতো দেখাল। অ্যাথেন কোনো কিছুর প্রতি মোটেই সতর্ক ছিল না। সে একটি উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। সে একটু একটু করে পান করল এবং শান্তভাবে বলল, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম, আমাকে চলচ্চিত্র ব্যবসায় আনার জন্য। তার গলার স্বরে পুনরায় ক্রস তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো। তার কথায় আহ্বান ছিল না। কথাগুলো ছিল আত্মবিশ্বাস পূর্ণ, যা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গরম করে ফেলল। যাতে সে তার সঙ্গে কথা বলতে না চায়।

যিশু এটা আমার জন্য বড় কষ্টের। সে তার প্রতি সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করল। তার মাথা নুয়ে গেল, সে কিছুটা হতবুদ্ধি হলো, আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে পুনরায় কাজের মাধ্যমে পাব। এটা আমার দুর্বলতা, অ্যাথেনা বলল। তার পর সে তার মাথা ঘুরাল যাতে তাকে সরাসরি দেখা যায়। ক্লডিয়া আমাকে বলল, স্টুডিওর রিজেন্ট তাদেরই ছিল এবং আমার স্বামী নিজে নিজেই আত্মহত্যা করল। তুমি এটাকে চলচ্চিত্রে রূপ দেবে, যার জন্য তুমি একটি লভ্যাংশ পাবে।

ক্রসের চেহারার ছাপ পরিবর্তিত হলো। সে সবকিছু আয়ত্তে আনার আশা করল। সে তাৎক্ষণিক বিষয়গুলো কিছুটা অনুভব করল, আমি মনে করি আমি কোনো স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নই। সে বলল, আমি তোমাকে সবকিছুই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সে সময় আগ্রহী ছিলে না। ক্লান্ডার তোমার আবেদন লিখেছিল অ্যাথেনা বলল, সে খুবই ভালো, তুমি ইচ্ছে করলে তার সঙ্গে কাজ করতে পারো।

ক্রস মাথা ঝাঁকাল, এটা একটা রাজনীতির বিষয়, আমি এটা চলচ্চিত্রের ব্যবসার মধ্যে পেতে চাই এবং আমি লডস্টোনের স্টুডিওতে শত্রুতা বাড়াতে চাই না।

আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারতাম অ্যাথেনা বলল, আমি পুনরায় ছবির জগতে ফিরে আমাকে পরিত্যাগ করতে পারতাম। ক্রস একটি আতঙ্ক অনুভব করেছিল, যে তার জন্য এটা করতে চাইল। সে তার প্রস্তাবকে প্রস্তাব বিবেচনা করল। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য ছিল। যদিও অ্যাথেনা খুব সুন্দরী ছিল কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, সে চালাক ছিল না।

তুমি কেন এটা করতে চাও? সে জিজ্ঞেস করল। অ্যাথেনা চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়াল, সমুদ্র সৈকতে বাদামি ছায়া নেমে এসেছিল, সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সে অনুমান করল, তারপর সে জানালা দিয়ে নীল, কালো পানি এবং ছোট ছোট ঢেউ দেখছিল।

এতে একজন সুন্দরী মহিলার ভয় করার তেমন কিছু নেই। ক্রস জানত যদি সে সত্য সত্য উত্তর দিত, সে তাকে চিরদিনের জন্য হারাত। হঠাৎ সে তার বাহু তার শরীরের সঙ্গে লেপটে ধরল, তুমি খুবই সুন্দর, কেউ তোমার মতো এত সুন্দর না–আসলে মনে মনে সকলেই সুন্দরের পূজা করে।

না, সে বলল, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না তুমি যা করিয়েছ। সে তার থেকে একটু দূরে গেল।

তাছাড়া বজের জন্য তোমার কোনো দায়িত্ব নেই ক্রস বলল, সে নিজে নিজেই ইত্যাদি হয়েছিল অ্যাথেনা মনে মনে তাকে অনুমান করে নিল। সে তার হাত ধরল, তুমি কি বিশ্বাস করো আমি বজকে হত্যা করেছি?

সে জিজ্ঞেস করল।

তারা হাসল। তারা দুজনেই নিজেদের নিষ্পপতা ঘোষণা করল। সে তার হাত ধরল এবং বলল, আমি তোমার জন্য রাতের খাবার তৈরি করছি এবং তারপর আমরা বিছানায় যাব। তারপর অ্যাথেনা খাবার তৈরি করিতে রান্নাঘরে গেল।

সে আর কতটা সময় রান্নাঘরে থাকবে? ক্রসের যেন আর দেরি সহ্য হচ্ছিল না। এই সুন্দরী রাণী গৃহিনীর কাজ করছে! তাও আবার একজন নারীর মতো। সে তার রান্না করা দেখল। সে রান্না করার সময় এক্সট্রা কোনো কাপড় পরিধান করেনি। তাছাড়া সে বেশ মনোযোগ দিয়েই রান্না করছে। অ্যাথেনা তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কাজ করছিল। সে একা একা রান্না করে টেবিলের ওপর রাখল। সে তাকে একটি মদের বোতল দিল ঢাকনা খোলার জন্য। তারপর তারা আধা ঘণ্টা ধরে খাবার খেল। সে বলল, আমি ছোট খাটো সব কাজই কম-বেশি করতে পারি। কারণ একজন মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। যখন অ্যাথেনা অভিনয় করে তখন সে অভিনেত্রী অ্যাথেনা একজন তারকা কিন্তু সে একজন সাধারণ গৃহিণী।

খাবারগুলো ছিল খুবই মজার। সবজি সঙ্গে গরুর মাংস, সালাদ আর তার সঙ্গে রুটি। তাছাড়া সেই সময় ঘরের মধ্যে সবুজ যেমন আলো ছড়াচ্ছিল, তেমনি সব মিলে তারা খুব দারুণ উপভোগ করল।

এই মুহূর্তে তোমার জন্য কোক দরকার। ক্রস বলল, আমার চাচাতো ভাই ভিনসেন্ট তার হোটেলে তোমাকে দাওয়াত করতে পারে। আহ! তাহলে বেশ মজা হবে। অ্যাথেনা বেশ রসিকতার সঙ্গে বলল।

রাতের খাবার খেতে খেতেই তারা একে-অপরকে স্পর্শ করে আসছিল। যার কারণে উভয়ের মধ্যেই যৌনতার আবেশ ছড়িয়ে পড়ল। তারা দুজনেই উন্মত্ততার চরম শিখরে অবস্থান করছিল।

বড় শোবার ঘরটি ছিল বাড়িটির এক পাশে এবং তার সঙ্গে ছিল এক বিশাল বারান্দা। যেখান থেকে সাগর দেখা যায়। তাছাড়া ঘরের প্রতিটি দেয়াল ছিল ছবিতে পরিপূর্ণ। তাই সবুজ আলোর ঝলকানিতে ঘরটিকে আরও বেশি মনোরম মনে হচ্ছিল। তখন কিছুক্ষণ পর তারা দুজনেই বারান্দাতে এসে দাঁড়াল। তারা বাইরের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করল, দেখল ম্যালিবুর বাড়িগুলো যেন সবুজ বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ছোট পাখিরা গান গাচ্ছিল, বৃষ্টি টপটপ করে করে ওয়াল ছেয়ে মাটিতে পড়ছিল।

অ্যাথেনা ক্রসকে জড়িয়ে ধরে, তার মুখে মুখ রাখল। তারা একে-অপরকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আদর করল। তারা উভয়েই গরম শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া শুরু করল। তার পর অ্যাথেনা তাকে পুনরায় শোবার ঘরে নিয়ে গেল। সে খুব তাড়াতাড়ি পোশাক খুলে ফেলল, শরীর থেকে সবুজ ব্লাউজ, ব্ল্যাক আলাদা করে ফেলল। তার সাদা শরীর অন্ধকার রাতে জোছনা ছড়াল। সে এমনই সুন্দী ছিল ক্রস যেমন অনুমান করেছিল। তার শরীরের গন্ধ যেন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল, তার আহ্বানে যেন প্রকৃতিও পাগল। তারপর তারা দুজনেই উন্মত্ততার জোয়ারে ঘুড়ির মতো উড়তে লাগল। ক্রস নতুন করে ভালোবাসা গড়ল। কখনো এমন ভালোবাসা তার জীবনে আসেনি। সে তার শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলল। তারা পাশাপাশি শুয়ে এবং পুনরায় আরম্ভ করল। অ্যাথেনা ছিল পূর্বের চেয়েও বেশি সক্রিয়, আরো বেশি আবেগময়ী। তাদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতার ছন্দ বয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে তারা অবসন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

ক্রস ঠিক সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠল। এই প্রথম তার জীবনে মাথাব্যথা অনুভব করল। বস্ত্রহীন অবস্থায় সে বারান্দায় গিয়ে একটি কাঠের চেয়ারে বসল। সে সাগরের ওপর সূর্যের বিচ্ছুরণ দেখতে লাগল। অ্যাথেনা একজন ভয়ানক নারী। সে তার মেয়ের হত্যাকারী এবং বিছানায় সে একজন দক্ষ নারী, যে তার শেষ দেখতে চেয়েছিল। ঐ মুহূর্তে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে কখনও আর তাকে দেখবে না। যখন ক্রস ফ্রেস হয়ে পুনরায় বারান্দাতে এলো অ্যাথেনা তখন একটি ট্রেতে কেসিনিও, কফি এবং কমলা লেবুর জুস তার সামনে নিয়ে এলো। আমি তোমার জন্য বেকন এবং ডিম নিয়ে আসি, সে বলল।

বেশ, ক্রস বলল।

তুমি আবার কখন আসবে?

অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল।

লাস ভেগাসে আমার অনেক কাজ আছে, ক্রস বলল।

আমি তোমাকে আগামী সপ্তাহে ফোন করব।

অ্যাথেনা তাকে গভীরভাবে দেখল। তার মানে বিদায়, তাই নয় কি?

সে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই গত রাতে আমি বেশ উপভোগ করেছি।

ক্রস মাথা ঝাঁকাল। তুমি তোমার চাহিদা পূরণ করেছ।

সে তখন মুগ্ধ করা হাসি দিল এবং বলল, তুমিও কম ছিলে না, তা কি ভেবেছ?

ক্রস হাসল, না।

সে পুনরায় গত রাতের কথা স্মরণ করল। গত রাতে তারা একসঙ্গে ঘুমিয়েছিল। সকালে তার শরীরে কোনো শক্তি নেই। আসলে তার সৌন্দর্য তার সমস্ত শক্তি কেড়ে নিয়েছে। তাই তার সম্পর্কে এক প্রকার ভয় কাজ করল। তাই বারবার গতরাতের দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভেসে উঠল তারপর অ্যাথেনা বলল, আমি জানি তুমি ব্যস্ত, কিন্তু তোমাকে কিছু দেখাতে হবে। তুমি কি সকালে থেকে বিকালের প্লেনে যেতে পারো? কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে কিছু জায়গা দেখাতে চাই।

ক্রস কখনোই তার চাওয়াকে অপূরণ রাখেনি। আজকেও রাখতে চাইল না। তাই সে বলল, হ্যাঁ।

অ্যাথেনা মারসিডিস SL 300তে তাদের নিয়ে উঠল, তার পর সান্তাডিও’র দিকে ধাবিত হতে লাগল, কিন্তু পৌঁছার আগে তারা একটি শহরে পৌঁছল, তারপর তারা একটি পাতলা রাস্তা অনুসরণ করে পাহাড়ের পাদদেশ অভিমুখের দিকে যাওয়া আরম্ভ করল। পনের মিনিটের মধ্যে তারা বারবেড ওয়ারির কাছে এলো। সেখানে ছিল ছয়টি লাল ইট নির্মিত বাড়ি, যার দেয়ালে অনেক ছবি আঁকা। সেখানে ছিল একটি সবুজ মাঠ। মাঠে বিশ জন ছেলে মেয়ে বল খেলছিল। অন্য সবুজ মাঠটিতে আরো দশজন ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। তিন থেকে চার দল যুবক তাদের খেলা দেখছিল। কিন্তু কিছু বিষয় আমার কাছে সন্দেহপ্রবণ মনে হয়। ছেলে-মেয়েরা বলের পেছনে দৌড়াছিল। অন্য দিকে তাদের একটি ঘুড়ি আকাশের নীলমায় হারিয়ে গেল। তারা আর ফিরে পেল না।

জায়গাটির নাম কি? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

অ্যাথেনা তার দিকে আবেদনময়ী হয়ে তাকিয়ে থাকল। এখন তুমি শুধু আমার সঙ্গে থাকো। পরে তোমার প্রশ্ন শুনব। অ্যাথেনা প্রবেশ গেটে পৌঁছল এবং একটি সোনার আইডি ব্যাজ পরা নিরাপত্তা প্রহরী সে দেখল। গেটের মধ্য দিয়ে পার হয়ে তারা একটি বড় বিল্ডিংয়ের কাছে গাড়িটি পার্ক করল। যার এক পাশে ছিল অভ্যর্থনা টেবিল। অ্যাথেনা অভ্যর্থনাকারীকে মৃদু কণ্ঠে কিছু জিজ্ঞেস করল। ক্রস তার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু সে গভীরভাবে তার উত্তর শুনল। সে খুব মুডে ছিল, তাই সে আর কোনো আগ্রহ দেখাল না।

ঘটনাটা কি? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

কিন্তু অ্যাথেনা কোনো উত্তর করল না।

সে তার হাত ধরল এবং তাকে নিয়ে একটি বড় বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রবেশ করল।

প্রবেশপথে একজন সেবিকা তাদের নাম জিজ্ঞেস করল। যখন সে তা নোট করল। অ্যাথেনা ক্রসকে অন্য একটি বড় হলরুমে নিয়ে গেল দরজার পাশ দিয়ে। পরিশেষে সে একটি দরজা খুলল। তারা একটি সুন্দর বেড রুমে দাঁড়াল, যেটা লাইটে পরিপূর্ণ ছিল। সেখানেও অ্যাথেনার বাড়ির ওয়ালের মতো অদ্ভুত একই রকম ছবি আঁকানো ছিল। কিন্তু একটু ভিন্নতা ছিল, তা হলো মেঝেতেও বিভিন্ন প্রকার ছবি আঁকানো। ওয়ালের সঙ্গে একটি ট্রাক, ট্রাকে পুতুলের অনেক পোশাক।

একটি ছোট বেড যা বেগুনি রঙের কম্বল দ্বারা আবৃত। একটি সাদা বালিশ যার চারদিকে লাল কাপড়ের কাজ করা। কিন্তু বেড়ে কোনো শিশু নেই।

অ্যাথেনা হেঁটে একটি বড় বাক্সের দিকে গেল এবং বাক্সটির ঢাকনা উপরের দিকে তুলল। যখন ক্রস পাশ থেকে তাকাল, দেখল একটি শিশু শুয়ে আছে। সে তাদের দিকে লক্ষ্য করল না।

সে একটা দশ বছরের ছোট বালিকা, অ্যাথেনার যেন বিকল্প ছোট ছবি, কিন্তু তার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই এবং তার সবুজ চোখগুলো দেখতে পুতুলের মতো। ক্রস কিছুই বুঝতে পারল না। তাছাড়া সেই মুহূর্তে অ্যাথেনার তাদের দিকে কোনো প্রকার নজর দিল না।

অ্যাথেনা কাঠের তৈরি বাক্সের দিকে গেল। সে সুইচ নিয়ন্ত্রণ করল যাতে সে শিশুটিকে বাহিরে আনতে সক্ষম হলো। শিশুটির ওজন আছে বলে মনে হলো না।

অ্যাথেনা শিশুকে বুকে জড়িয়ে নিল এবং শিশুটির গালে চুমু খেল কিন্তু শিশুটির মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।

অ্যাথেনা বলল, আমি তোমার মাম্মি। তুমি কি আমাকে আদর করতে পারবে না?

তার গলার স্বর ক্রসের হৃদয়ে গুলির মতো বিদ্ধ হলো। এটা ছিল এক প্রকার শোচনীয় অপরাধ স্বীকার। পরিশেষে অ্যাথেনা আস্তে করে শিশুটিকে মেঝেতে রাখল। শিশুটি কনুইয়ের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে একটি ছবি আঁকার বাক্স হাত নিল। সে ছবি আঁকতে নিমগ্ন হলো। ক্রস স্থির দাঁড়িয়ে থেকে অ্যাথেনা এবং শিশুটির সকল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করল। সে শিশুটিকে আঁকতে সাহায্য করতে চাইল কিন্তু শিশুটির মধ্যে কোনো প্রকার সাড়া পেল না। অ্যাথেনা নিজেও একটি ব্রাশ নিল এবং তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করল, কিন্তু যখন শিশুটি দেখল, তখন সে অ্যাথেনার কাছ থেকে বাটি কেড়ে নিল। কিন্তু সে কোনো কথাই বলল না। পরিশেষে অ্যাথেনা পরিত্যাগ করল।

আমি আগামীকাল ফিরে আসব প্রিয়তমা। আমি তোমার জন্য একটি রাইড এবং একটি নতুন পেন্থ বক্স আনব। দেখ, সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি Youre running out of reds বিপদের মধ্যে বাহিরে যাচ্ছ। সে শিশুটিকে একটি সুন্দর কিস দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু শিশুটি তার সুন্দর দুটো হাত দিয়ে বাধা দিল।

পরিশেষে অ্যাথেনা এবং ক্রস রুম থেকে বের হলো। অ্যাথেনা তাকে গাড়ির চাবি দিল, যাতে সে ম্যালিবুতে যেতে পারে। অ্যাথেনা গাড়িতে চড়ার সময় তার মাথায় হাত রেখে কেঁদে ফেলল। সেই সময় ক্রস গাড়ি ঘোরানোর কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য কিছুই বলতে পারল না।

যখন তারা গাড়ি থেকে নামল, অ্যাথেনা কোনো মতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল। তারপর সে ক্রসকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল এবং তারা একে অপরের মুখোমুখি হলো। ঐ শিশুটি, আমি বজকে বলেছিলাম, আমি তাকে মরুভূমিতে সমাধিত করেছি। এখন কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ? এই প্রথম ক্রস বিশ্বাস করল যে অ্যাথেনা তাকে ভালোবাসত।

অ্যাথেনা তাকে রেখে রান্নাঘরে গেল এবং কফি তৈরি করল। তারা সাগর দেখার জন্য বেলকনিতে বসল। তারা কফি খাচ্ছিল, অ্যাথেনা কথা বলা শুরু করল, সে সাধারণ কথাবার্তা বলছিল, তার কণ্ঠে ও চেহারায় কোনো আবেগ ছিল না।

যখন আমি বজের কাছ থেকে পালিয়ে গেলাম, আমি আমার বাচ্চাকে দূর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাইয়ের কাছে রাখলাম। তখন তারা সান্তাডিওতে নতুন বিবাহিত কপোত-কপোতী। সে এটাকে খুবই সাধারণভাবে নিল। আমি জানতাম না যে সেও ছিল প্রতিবন্ধী। তারপরও আমি তাকে সেখানে রাখলাম, কারণ আমি একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আমাকে আমাদের সকলের জন্য টাকা উপার্জন করতে হতো। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি বুদ্ধিমতী এবং ঈশ্বর জানে সবাই আমাকে কেন সুন্দরী বলত। যখনই আমি সাফল্য পেতাম, তখন আমি তা ভাবতাম। তারপর আমি আমার বাচ্চা ফেরত পেলাম।

সুতরাং আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করতাম এবং যখনই সুযোগ পেতাম তখন তাকে দেখার জন্য সান্তাডিও ছুটে যেতাম। তারপর আমি তাকে এক মাস সময় দিতাম। পরিশেষে যখন আমি তাকে বাড়িতে এনে তার তৃতীয় জন্মদিন পালন করার প্রস্তুতি নিলাম ঠিক তখনই ব্যাথেনি তার শারীরিক ভারসাম্য হারাল। আমি নিজেও চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। আমি ভাবলাম সম্ভবত তার ব্রেন টিউমার হয়েছে। আমি স্মরণ করলাম একদিন বজ তাকে মেঝের ওপর আছাড় দিয়েছিল, সম্ভবত তখনই সে ব্রেনে আঘাত পেয়েছিল। যার প্রতিফলন ঘটছে এখন। তারপর আমি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। সে তার সবকিছুই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। তারপর আমি একজন বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম। তিনিও সব কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। কিন্তু সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ার জন্য আমি তাকে টেক্সাস শিশু হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলাম। সে আমাকে বলল– সে একজন প্রতিবন্ধী।

আমি কখনো বিশ্বাস করিনি যে তার এমন কিছু হতে পারে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব। না ডাক্তার বলল আসলে ঘটনা তেমন না। সে তার নিজের মতো পৃথিবীতে বাস করতে পারবে। সে অন্য মানুষের প্রতি কোনো আকর্ষণ খুঁজে পাবে না, সে কারও প্রতি কোনো প্রকার অনুভূতির বিচরণ ঘটাতে পারবে না। মোট কথা হলো, সে সবকিছুই তার নিজ মনের মতো করতে পারবে। তার ওপর কোনো জোর করা যাবে না। তারপরও আপনি তার জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেখতে পারেন।

ক্রস কোনো কারণ ছাড়াই বলল, কিন্তু তখন অ্যাথেনা প্রতিনিয়ত কথা বলছিল। প্রতিবন্ধী অর্থ সে কখনই আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু ডাক্তার আমাকে বলেছেন কিছু কিছু প্রতিবন্ধী খুব বুদ্ধিমান হয়, অর্থাৎ তারা সবকিছুই বুঝতে পারে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে সেই অনুযায়ী কম। আমি মনে করি ব্যাথেনি বুদ্ধিমতী। সে বুঝল ছবি আঁকতেই পারদর্শী না অন্য ক্ষেত্রেও তার বেশ দক্ষতা আছে বলে আমি মনে করি। ডাক্তার আমাকে বলেছিল কঠিন প্রশিক্ষণের পর কিছু কিছু লোকের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তখন দেখা গেছে তারা তাদের দেরিতে হলেও মানুষকে বুঝতে সক্ষম হয়। যা আমরা আমাদের বিগত জীবনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি।

সে আমাকে মেনে নিতে পারে না কিন্তু এর জন্য আমি তার প্রতি বিরক্তও নই। আমি মনে করি তাকে একা রাখার জন্য এটা আমার শাস্তি। কারণ আমি সাফল্য চেয়েছিলাম। বিশেষজ্ঞ আমাকে বলেছিল তার ব্যবহারে আপনি সময় সময় বিরক্ত বোধ করতে পারেন, কিন্তু তার পরেও তাকে মেনে নিতে হবে। ডাক্তার আমাকে আরো বলেছিল, তার এমন ব্যবহারকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। সবকিছুর মধ্য দিয়েই তাকে অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। তাই আমি সর্বদা তাকে আমার সঙ্গেই রাখতে চাইতাম। আমি তাকে আমার সাথে মেসিলিয়াতে রাখার জন্য মনে মনে চিন্তা করলাম।

কেন? ক্রস জিজ্ঞেস করল, তুমি কি করতে চাচ্ছ?

সেখানে অনেক দামি ক্লিনিক আছে, আছে অনেক ভালো ডাক্তার, অ্যাথেনা ব্যাখ্যা করল। আমি ছবি শেষ হওয়ার পর তাকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছি। বজ আমাকে খুন করতে চায়– যাতে ব্যাথেনি একা হয়ে যায়। কিন্তু আমি এমন সুযোগ দেব না। আমি তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমি থাকতে ব্যাথেনির জীবনে আর কোনো প্রকার আঘাত আমি মেনে নেব না। তারপর অ্যাথেনা কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল। এটা কি তোমার জন্য ভালো হবে বলে তুমি মনে করছ? ক্রস বলল।

অ্যাথেনা হাসল। ক্রস সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন সূর্যের তীব্র আলো সাগরের ওপর পড়ে এক সোনালি আবরণ ছড়াচ্ছিল। ক্রস ভাবল তার মতো অনেক মানুষই এই সব সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত।

বাক্সটি কিসের? সে জিজ্ঞেস করল। অ্যাথেনা হাসল। এটা আমার আশা পূরণ করবে। দুঃখিত, তাই নয় কি? এটা একটি হাগ বক্স। প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েরা এটা ব্যবহার করে। যখন তারা হতাশা অনুভব করে, তখন তারা এটাকে একজন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে কিন্তু তারা কোনো দিনও মানব জাতিকে এমন মনে করতে পারে না। অ্যাথেনা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, ক্রস কিছু দিন আমি আমার সঙ্গে বাক্সটি রাখতে চাই। এখন এটাই আমার জীবনের বড় উদ্দেশ্য। এটা ছাড়া জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। এটা কি শুধুই কৌতুক? স্টুডিওর লোকজন আমাকে বলেছে, আমি মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসার হাজার হাজার পত্র পাই। মানুষ আমাকে পেতে চায়। তারা আমাকে ভালোবাসে। প্রত্যেকেই আমাকে চাই কিন্তু আমি শুধু আমার ব্যাথেনিকে চাই।

ক্রস বলল, আমি তোমাকে যে কোনো ক্ষেত্রে সাহায্য করব, যতটুকু পারি। তাই তুমি আগামী সপ্তাহে ফোন দেবে।

ম্যাসেলিনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলল আমরা একসঙ্গে থাকি।

আমি তোমাকে ফোন করব, ক্রস বলল। আমি আমার নিষ্পপতা প্রমাণ করতে পারেনি, কিন্তু আমার জীবনের যে কোনো কিছুর চাইতে তোমাকে বেশি ভালোবাসি।

তুমি কি আসলেই নিষ্পাপ? অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল।

হ্যা, ক্রস বলল, তুমি কি তার প্রমাণ চাও?

আমার তা প্রমাণ করতে ভয় নেই।

ক্রস ব্যাথেনিকে নিয়ে ভাবল।

তার চেহারা আনন্দে ভরে উঠল। তার মনে হলো সে আসলেই পাপমুক্ত। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানব জাতির এমন পাপমুক্ত হওয়া উচিত। এক বড় ধরনের আঘাত তার জীবনে নেমে এলো, যখন সে দেখল সে যথেষ্ট সুন্দরী, বুদ্ধিমতী হওয়া সত্ত্বেও সবাই তার সঙ্গে প্রতারণা করল। সে ভাবল, তাহলে আমার ভদ্রতা, বুদ্ধিমত্তা, মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসার মূল্য কোথায়।

যখন বজ তাকে প্রহসন করল এবং যদিও বজকে কেউই জারজ বলে আখ্যায়িত করল না। তাই সে সকলকেই সন্তুষ্টের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখল। প্রথমে সে এমন কল্পনা করেছিল যে তা যথেষ্ট আবেগপ্রবণ। যখন বজ তাকে দ্বিতীয় বারের মতো প্রহসন করল তখন সে তার দিকে পুনরায় ফিরে তাকাল, তাতে সে খুব আঘাত পেল এবং সেই সময় সবকিছুই পুরোপুরি বুঝতে পারল।

অবশ্য তারা তাকে ভালবাসত, তার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। এটাকে সে অশুভ বিরোধিতাপূর্ণ মনে করল না। মহৎ যে কোনো হিংসাকে প্রতিরোধ করতে পারে।

আর এমন একটি কারণেই সে ক্লডিয়াকে ভালোবাসত, কারণ ক্লডিয়া তার সঙ্গে কখনোই বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেনি। এই কারণেই সে ব্যাথেনিকে দিনের পর দিন গোপন করে লালন-পালন করত। সে ঐ ধারণাকে ঘৃণা করত। মানুষ তার সৌন্দর্যের মোহে তাকে ভালোবাসত, কারণ সে এই সৌন্দর্যের কারণে অনেক বেশি শান্তি পেয়েছিল। সে বুঝল তার সকল ক্ষমতাই তার সৌন্দর্যকে ঘিরে। সে হতাশ হলো, যতদিন তার সৌন্দর্যময় চেহারা থাকবে, বুদ্ধিমত্তা থাকবে ততদিন মানুষ তাকে ভালোবাসবে। মানুষ তার প্রশংসা গাইবে। কিন্তু মানুষ চিরদিন তার সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে পারে না। আমিও একদিন আমার দাঁতগুলো পড়ে যাবে তখন হাসলে আমাকে বিশ্রী দেখাবে, আমার হাসি মানুষ আর পছন্দ করবে না। একদিন যে আমি শরীরের মাধ্যমে মানুষ অর্জন করেছিলাম তা আমি হারাব। এই ভাবনা তাকে ক্লান্ত করে ফেলল। সুতরাং সে ক্রস ডি লিনার ওপর সতর্ক মনোভাব ব্যক্ত করল। যখন সে ব্যাথেনির সঙ্গে সাক্ষা করল, প্রথমে তার হালকা প্রতিক্রিয়া দেখাল, কিন্তু কিছুই বলল না। সে জানত তার প্রতি ভালোবাসার কারণেই তার এই অসহায়তা এবং সে দেখল তার মধ্যে নিশ্চিত কোনো সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া নেই যখন সে জানল দুর্ভাগ্যবশত সে ব্যাথেনির আছে।

.

১২.

ক্লডিয়া এলি ম্যারিয়নের সাথে তার যৌন আকর্ষণের সুযোগ নিতে চেয়েছিল। সে আর্নেস্ট ভেইলকে লজ্জা দেবার বিষয়টা তার উপন্যাসে বর্ণনা করতে চেয়েছিল। এটা ছিল বড় শট; কিন্তু সে তার নীতিতে অবিচল ছিল। ববি বানজ পুরো বিষয়ের ওপর নাখোশ ছিল। কিন্তু এলি ম্যারিয়ন তার কোনো শট নেয়ায় কোনো অনুমতি দিল না। অন্যদিকে চলচ্চিত্র ব্যবসায় যৌনতা প্রদর্শনটা সম্মানজনক প্রথায় পরিণত হয়েছে। বলার প্রয়োজন নেই ভদ্র সমাজে এটার চাহিদা আছে।

ভেইলের আত্মহত্যার হুমকি দিয়েই মিটিংয়ের আলোচনা শুরু হলো। তার উপন্যাসে তার সাবেক স্ত্রী ও তার বাচ্চাদের আনা হলে মলি ক্লান্ডার খুব ঝগড়া করবে। কেউ তার হুমকিতে বিশ্বাস করে না, এমনকি ক্লডিয়াও নয়। কিন্তু যা করে তারা অর্থ উপার্জন করে সে বিষয়ে ববি বানজ ও এলি ম্যারিয়ন সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে।

যখন ক্লডিয়া, আর্নেস্ট ও মলি লডস্টোনে এলো তখন তারা শুধু ববি বানজকে নির্বাহী হিসেবে সেখানে দেখল। তাকে মলিন দেখল। যদিও সে বিশেষ করে ভেইলকে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে এটা গোপন করতে চেষ্টা করল। আমাদের সুখ। আর্নেস্টকে ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে সে বলল।

মলি তৎক্ষণাৎ সতর্ক হলো। এলি কোথায়, সে বলল। সে-ই একমাত্র ব্যক্তি যে এটার ব্যাপারে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

বানজের স্বর মদ হয়ে এলো। এলি হাসপাতালে। তেমন কিছুই হয়নি। তার, শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই হবে। সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, লডস্টোনের ওঠা-নামার সাথে সাথে তার স্বাস্থ্যও ওঠানামা করছে। ক্লডিয়া কর্কশভাবে বলল, তার বয়স এখন আশির ওপরে। তাকে এখন অনেক কিছুই আক্রমণ করবে।

না, না বানজ বলল, আমরা প্রতিদিনই তাকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। সে কিছুটা ভালো, তোমার কথা বলতে পারো। আমি যখন পরিদর্শনে যাব তখন তাকে তোমার গল্প বলো।

না, মলি ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলল

কিন্তু আর্নেস্ট ভেইল বলল, চলো আমরা ববির সঙ্গে কথাবার্তা বলি।

তারা তাদের ব্যাপারটা উপস্থাপন করল। বানজ তা সহজেই উপলব্ধি করল। কিন্তু তত বেশি মনোযোগ দিল না। সে বলল, আমি সব কিছুই শুনেছি। আমার ভালো লেগেছে। আমি আমার আইনজীবীকে ব্যাপারটা অবগত করেছিলাম, কিন্তু সে আমাকে বলল ভেইল সে ব্যাপারে তাকে তেমন ইঙ্গিত দেয়নি। যদিও ব্যাপারটা পুরোপুরি লিগ্যাল। তোমার লোজন দ্বারা এটাকে আরো প্রচার করো। ক্লডিয়া বলল, যদি আর্নেস্ট এটা করে তাহলে লডস্টোনের সবাই এটাকে সুন্দর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে। এলি হয়তো পছন্দ করবে না। তার চিন্তা-চেতনা আরও বেশি নৈতিক।

তারপর আমি ব্যাপারটা দেখব। ববি বানজ বলল, কেন লোকজন বুঝতে পারে না। এলির অনুমোদনকৃত সবকিছুই আমি করি। সে আর্নেস্টের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কিভাবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজটি করলে?

আমরা কেউই ব্যাপারটা সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত না। মলি বলল, আমরা কেন এলিকে দেখার জন্য হাসপাতালে যাই না।

ভেইল বলল, আমি টাকার অভাবে রোগী দেখতে হাসপাতালে যেতে পারি না। তারা সবাই তার দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ দিয়ে তাকাল। অবশ্যই এটা একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা।

মলি ঠাণ্ডাভাবে বলল, তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখো। মি. আর্নেস্ট; তুমি যদি আমার লোক থেকে বিরত থাকতে চাও পারো। মলি বলল, ম্যারিয়নকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারি। কিন্তু ববি তার ব্যবসা তাকে করতে দাও। তুমি অবশ্যই লডস্টোন থেকে একটা লভ্যাংশ পাবে। তুমি প্রয়োজনবোধে ইস্যুরেন্স করতে পারো। বানজ কিছুটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল। লভ্যাংশ কখনো না।

তা ঠিক আছে। মলি বলল, কিভাবে সে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ পেতে পারে। বিজ্ঞাপন বিল নেই। কোনো সুদ নেই। তাহলে সে কিভাবে এমন অংকের টাকা পেতে পারে!

বানজ ভেবেচিন্তে বলল, তার লভ্যাংশ সর্বদাই মোট টাকার ওপর হবে। আমরা সকলেই জানি আর্নেস্ট নিজে নিজের সর্বনাশ করল। সে যতটা বোকা তার চেয়েও বেশি চালাক। প্রকৃতপক্ষে তার চাওয়া কি তা আমাদের জানতে হবে।

কে জুয়াখেলার আলোচনায় পুনরায় আসছে? মলি বলল, আমি ইতিমধ্যে তার সীমা অতিক্রম করেছি। তোমার পরিকল্পনা তিনটা বিষয় নিয়ে। তার মধ্যে একটি পরিকল্পনায় টাকা দাঁড়াবে আধ বিলিয়ন ডলার যা বৈদেশিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তার টাকা টিভি, ভিডিওর কাজে ব্যবহার করা হয়নি। যিশু জানে আর কত টাকা সে বিভিন্ন হাত থেকে আত্মসাৎ করেছে।

বানজ এটা পরিপূর্ণভাবে ভাবল। তারপর সে কিছুটা সতেজ হলো। আর্নেস্ট, সে বলল, একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে তুমি জাতীয় সম্পদ।

কিন্তু কেউই তোমাকে আমার চাইতে বেশি সম্মান করে না। এলি তোমার প্রত্যেকটা-বই পড়েছে। সে সত্যিকারে তোমাকে ভালোবাসে। সুতারাং আমরা চাই তুমি আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার বাজে কাজ করো না।

ক্লডিয়া হতবৃদ্ধি হলো, তারা কিভাবে আর্নেস্টকে সামান্য ভুলের জন্য এমনভাবে নিচু করতে পারল। কে সে আর কিছু না হোক, সে আমাদের জাতীয় সম্পদ।

সে উল্লেখ করে বলল, ক্লডিয়া তার জন্য গর্ববোধ করে।

বানজ মলিকে বলল, কিভাবে একজন লেখক সপ্তাহে মাত্র দশ গ্রান্ডের বিনিময়ে স্ক্রিপ্ট লিখতে পারে। তারপরও আবার সেটাকে চিত্রনাট্যে রূপ দিতে পারে। আর অতিরিক্ত লেখার জন্য তাকে প্রতি সপ্তাহে আরো পঞ্চাশ গ্রান্ড বেশি দেওয়া উচিত। সে গত পাঁচ বছর যাবৎ। বাৎসরিক দশ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কাজ করে আসছে।

দ্বিগুণ টাকা? মলি বলল, তারপর আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারি। কেউই মোর মতো ঝুঁকি নেবে না। সে বলল, এটা আমি খুব সাধারণভাবে গ্রহণ করেছি। ববি, তোমার ব্যবসা তুমি তারপরও চালাতে পারো। তুমি কখনোই আমার কাছ থেকে মূল স্ক্রিপ্ট কিনবে না। তাছাড়া আমি নিজেও করব না। তুমি কখনোই আমাকে তোমার লেখা দেবে না। তাহলে তুমি কিভাবে বাকি কাজটুকু করবে। তাহলে তুমি এক বিলিয়ন অর্জন করতে পারো। তারপর ভেইল সত্যিকারের আনন্দ উপভোগ করতে আরম্ভ করল। আড়াই মিলিয়ন ডলার আমাকে সাহায্য করতে পারো।

তুমি-হাসতে পারো? ববি বলল, ভেইল সব সময়ই খামখেয়ালীপনা। আমি কখনোই আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটতে দিতে পারি না। তাছাড়া এক মিলিয়ন ডলার আমাকে সাহায্য করতে পারে না।

ক্লডিয়া ভেইলের রসিকতা সম্পর্কে জানত। সে বলল, এটা তোমাকে সাহায্য করতে পারে না? কারণ আমি এখন পর্যন্ত জীবিত। ভেইল বলল, আমার পরিবারের যেগুলো প্রয়োজন। তারা আমাকে বিশ্বাস করে এবং আমিও তাদেরকে সম্মান করি। তারা সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। তদুপরি বাজে, ভেইল ছাড়া তুমি অবশ্যই বিপদে পড়বে। তারপরেই তুমি ইচ্ছামতো কাজ করতে পারবে।

মলি ফ্লাডার বলল, চলো আমরা এলির কাছে যাই।

ভেইল তার রাগ হারিয়ে ফেলল এবং চিৎকার করা আরম্ভ করল। আমি তোমার মত লোকের সঙ্গে ব্যবসা করব না। তাছাড়া আমি একজন রোগীর জন্য প্রার্থনা করতে পারব না।

যখন সে চলে গেল। ববি বানজ বলল, তুমি তার জন্য দুটি বিষয় চাইতে পারো।

মলি বলল, মেয়েটি আসলেই উন্মাদ। সে অনেক সময় অসাবধানতার সঙ্গে অনেক কিছু করে ফেলে।

বানজ উদ্বিগ্নের সাথে জিজ্ঞেস করল, সে কি ওষুধ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত?

না। ক্লডিয়া বলল, আর্নেস্টের বেশ জটিল, সে আসলেই আর কি কাজ করে তা বোঝা বেশ মুশকিল।

বানজ কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর বলল, তাদের বিষয়টা বেশ জটিল, আমি কখনোই কাজকর্ম বিশ্বাস করতে পারেনি, আজও পারতাম না। আমি আমার কাজের জন্য মলি ফ্লাডারের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। কারণ মেয়েটি আসলেই খারাপ প্রকৃতির। আমি মলিকে কল করব। যদি সে বিষয়টাকে রায় দেয় তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। আমি নিশ্চিত যে ম্যারিয়ন বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করবে। তারপরও আমি তোমার জন্য চেষ্টা করব। যাতে করে সে কাজটি গ্রহণ করতে রাজি হয়।

তারা বানজের লিমুজিন গাড়িতে করে হাসপাতালে গেল। এটা একটি বড় গাড়ি হলেও তেমন আরামদায়ক ছিল না। গাড়িটির সঙ্গে কমপিউটার, ফ্যাক্স এবং সেলুলার ফোন যুক্ত ছিল। গাড়িতে তিনজন দেহরক্ষী ছিল। যার মধ্যে দুজন গাড়ির পেছনে ও একজন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল।

তারা হাসপাতালে পৌঁছল। সেখানে তারা হাসপাতালের কেবিনেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। মহিলা ছিল বেশ সুন্দরী এবং সেবিকার পোশাক পরা। সে ক্লডিয়াকে ভেগাস হোটেলের হোস্ট মনে করল। সে তাদেরকে বিশেষ চলন্ত লিফটের মাধ্যমে উপরে নিয়ে গেল।

সুইটটির দরজা বেশ চমৎকার। তাছাড়া দরজাটি কমপিউটারের মাধ্যমে খুলে আবার বন্ধ হয়। সুইটটির মধ্যে একটি খাবার টেবিল, বেশ কিছু চেয়ার, সোফা, পাশে আরো একটি বড় টেবিল। সুইটটির এক কোণে কমপিউটার, ফ্যাক্স ও টেলিফোন। তাছাড়া পাশে ছোট রান্নাঘর এবং অতিথি বাথরুম আছে। তার পারে রোগীর জন্য বিশেষ বাথরুম আছে।

সিলিং পাখাটি বেশ উপরে এবং সুইটটির আর এক কোণে একটি টিভি সেট আছে।

সাদা কাপড় বিছানো বেডের ওপর ম্যারিয়ন শুয়েছিল। সে একটি সবুজ কভার আঁকা স্ক্রিপ্ট পড়ছিল। তার পাশে টেবিলের ওপর তার চলচ্চিত্র ব্যবসার অনেক মূল্যবান কাগজপত্র রাখা ছিল।

একজন সুন্দরী সেক্রেটারি বেডের অপর পাশে বসে ছিল। ম্যারিয়ন আগে থেকেই সুন্দরী নারীদের সঙ্গ পছন্দ করত।

ববি বানজ ম্যারিয়নের গালে চুমা দিয়ে বলল, এলি তোমাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে। মলি এবং ক্লডিয়াও তাকে চুমা দিল। ক্লডিয়া তাকে কিছু ফুলের তোড়াও দিল। সে তা তার বেডের পাশে রাখল। অন্যান্য পারিবারিক রীতি ব্যবহার করা হলো না। কারণ ম্যারিয়ন অসুস্থ। ম্যারিয়ন বলল, আমি তোমার সমস্ত কথা বুঝতে পেরেছি! তারপর তার সেক্রেটারিকে সকল কিছু বুঝিয়ে দিয়ে সে রুম ত্যাগ করল। সেই সময় তার কর্তব্যরত সুন্দরী সেবিকা ডাইনিং টেবিলে বসে বই পড়ছিল।

ম্যারিয়ন তাকে অবগত করে বে হলো।

সে তার হাতে হাত মিলাল। তখন সে পড়তে ব্যস্ত ছিল।

ম্যারিয়ন মুচকি হাসি দিল। সে সবাইকে বলল, সে একজন ক্যালিফোর্নিয়া, সবচেয়ে ভালো সেবিকা হবে বুঝতে পেরেছি। আমার জন্য ডাক্তার যা করেছে তার চেয়ে সে বেশি করেছে। আমি তাকে আজীবন স্মরণ করতে চাই। তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সে হাতপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো।

মলি বলল, আমি সর্বোচ্চ বিশ মিলিয়ন তার কাজের দাম দিতে রাজি থাকব। যদি এ ব্যাপারে সে নিশ্চয়তা চায় তাহলেই তাকে নিশ্চয়তা দেব। তার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। ঝুঁকি যা নেওয়ার তা আমিই নেব।

বাজ রাগান্বিত স্বরে বলল, এটা খারাপ না। সে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করল। ব্যাপারটাকে খেয়াল করো, মলি বলল।

আর্নেস্ট এমন একজন লোক যার কোনো অবাক করার মতো জিনিস নেই। ক্লডিয়া বলল, সে তার পরিবার ভরণপোষণ করার দায়িত্ব নিতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এলি একজন লেখক সে সব সময়ই অন্য একজন লেখককে ভালোবাসে। এটা তার মানবিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম। তুমি মেট্রোপলিটন জাদুঘরে বিশ মিলিয়ন ডলার দিয়েছ। তাহলে কেন আর্নেস্টের জন্য কিছু করতে পারবে না।

বেশ ভালো, তোমাকে ধন্যবাদ। সে তার গালে চুমু দিল। ঠিক আছে আমি আগামীকালকের মধ্যেই তোমার অফিসে টাকার মেমো পাঠাব এবং আমি আশা করি তুমি তোমার কাজ ঠিকমতো খুব তাড়াতাড়ি করতে পারবে।

ক্লডিয়া তার কথাগুলো বুঝতে পারল না। সে এলির হাত ধরে বলল, তোমার অনেক কিছু আছে। তোমার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ তুমি আর্নেস্টের জীবনটাকে বাঁচাও।

ঠিক এই মুহূর্তে এলি ম্যারিয়নের কন্যা তার দুই সন্তান নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। তার সহকারী পাশ থেকে তাদের বসানোর জন্য চেয়ার আনল। তার কন্যা বর্তমানে তার দুই সন্তান নিয়ে তার সঙ্গেই লডস্টোন স্টুডিওতে কাজ করছে। কারণ এলি ম্যারিয়ন তার নাতিদের খুবই ভালোবাসে।

ক্লডিয়া এবং মলি বেরিয়ে মলির অফিসে এলো এবং আর্নেস্টকে কল করে বলল, তোমার একটি ভালো খবর আছে। সে তাকে রাতের খাবার আয়োজন করতে বলল।

উপন্যাসটি আমি আমার মেয়ের জন্য ক্রয় করি। তাই আমি কি এটা ছবি বানাব? ম্যারিয়ন জিজ্ঞেস করল, এটা দিয়ে কম বাজেটের ছবি বানাতে হবে। কিন্তু তোমার মেয়ে তো বড় ছবি ছাড়া ছোট ছবি তৈরি করবে না, বানজ বলল।

ম্যারিয়ন বলল, আসলেই এই উপন্যাস দিয়ে ছবি তৈরি করলে আমি আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তারপরও যখন কিনেছি একবার চেষ্টা করে দেখি।

তুমি কি আসলেই ভেইলকে হারাতে যাচ্ছ? বানজ জিজ্ঞেস করল, যদি সে মারা যায় তাহলে আমরা কোটে জিততে পারি।

ম্যারিয়ন বলল, যদি আমি এটা ভালোভাবে পাই। আর পেলে তোমাকে দিয়ে দেব। তুমি যদি মারো তাহলে আইনের লড়াইয়ে দিয়ে ভিলাটি অর্জন করবে।

বানজ তার প্রস্তাবে অবাক হয়ে গেল। এলি তুমি কি সম্পূর্ণ সুস্থ আছ? অবশ্যই এবং আমি তোমাকে যা বলছি তাই সত্যি। তুমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত থাকতে পারো।

আমি এলি ম্যারিয়ন যা বলি তা মন থেকেই বলি। আমার মধ্যে কোনো ভণিতা নেই। যার প্রমাণ তুমি পরে পাবে। তুমি শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা। করো এবং একজন ভালো আইনজীবী ঠিক করো। তোমাকে জিততেই হবে।

আমাদের এখন কি নিয়ে ভাবতে হবে। ভেইল বলল, আমরা তিনটি কাজের মধ্যে দুটিতে জয়লাভ করেছি। অতি বেশি লোভী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মলি বলল, ইতিমধ্যে ব্যবসাটি তৈরি হয়ে গেছে। ভেইল ছবির তারকা স্টাইলে তার হাতে চুমু দিল এবং বলল, মলি তুমি সত্যিই জিনিয়াস।

তারপর মলি তার রুটির সঙ্গে টমেটোর সস নিল। আর্নেস্ট, সে বলল। তুমি কখনোই এই শহরের হাবভাব বুঝতে পারবে না। এখানে কোনো করুণা নেই। তুমি মদ পান করো না, রান্না করো না। তুমি ভালোবাসা ভাগাভাগি ভাঙাভাঙি করো না। কেন তোমাকে অসুস্থতার মতো জীবনযাপন করতে হবে।

ক্লডিয়া বলল, স্কিপি ডিরি আমাকে বলেছিল যখন তুমি ওটা কিনেছিলে? মানুষ যেটাকে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট হিসেবে গ্রহণ করেছিল যখন তুমি বিক্রয় করলে তখন ওটাকে মানুষ ইতালিয়ান রেষ্টুরেন্ট হিসেবে গ্রহণ করল। বিষয়গুলো সব সময় খেয়াল রেখ। তুমি জানো, আর্নেস্ট, তুমি হলিউডে দীর্ঘদিন জড়িত। তোমার মধ্যে যথেষ্ট পাগলামি আছে।

আমার মধ্যে মোটেই ভিন্নতা নেই। ভেইল বলল, আমি ঠিক তোমাদের মতো নই কিন্তু তাই বলে আমি পাগলামি করি না।

ক্লডিয়া অধৈর্যভাবে বলল, তুমি কেমন করে পাগলামি চিন্তা-ভাবনা করতে পারো? তুমি দশটা বই লিখেছ। তুমি কিছু পুরস্কারও জিতেছ। তুমি একজন আন্তর্জাতিক লেখক।

মলি বলল, তুমি পাগল না, তুমি উন্মাদ। আর্তচিৎকার থামাও। কারণ তুমি ধনী না, তুমি গরীবও না। তুমি এখানে থাকতেও পারবে না। তুমি তোমার শিল্পকর্ম নিয়ে আর বেশিদিন ভোগান্তিও করবে না।

ভেইল মলির বাহু ধরল। তোমার ধারণা ঠিক আছে। সব কিছুই সত্য বলেছ। আমি প্রতি মুহূর্তে আমার জীবন উপভোগ করতে চাই। কিন্তু আমার শিল্পকর্ম আমাকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছে। সে মদ পান করতে করতে কথা বলে চলল। আমি আর পুনরায় লিখতে চাচ্ছি না। নভেল লিখা অর্থ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা। আমি আর নভেল লিখব না।

তুমি অলস মলি বলল, তোমার কোনো অনুরোধই মানার যোগ্য না। আরো এটাই প্রধান কারণ। সেজন্য তুমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে। তারা সকলেই হাসল। আর্নেষ্ট তাদের কাছ থেকে দ্বিতীয় বার বাছুরের মাংস পেল। এটা ছিল অতিরিক্ত পাওয়া, ফলে সেই সময় তাকে বেশি খেতে হলো। সে মনে করে নিজে খাওয়ার চাইতে মানুষ খাওয়াতে সে বেশি আনন্দ পায়।

তা ঠিক আছে সে বলল, কিন্তু একজন ঔপন্যাসিক একটি সাধারণ উপন্যাস লিখে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে না। যেমনটা তুমি পেরেছ।

একটি উপলক্ষ কখনোই একটি ছবির মতো সাধারণ হতে পারে না। ক্লডিয়া রাগান্বিতভাবে বলল, তুমি কেন ছবির কাজটি নিলে? আমি তোমাকে ভালো ছবিতে কাঁদতে দেখেছি এবং তা ছিল একটা শিল্প।

ভেইল নিজে নিজেই আনন্দ করছিল। তাছাড়া সে সেই সময় স্টুডিওর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিল। তার নমুনা দিল। ক্লডিয়া, আমি রাজি। সে বলল, চলচ্চিত্র একটা শিল্প। অতএব কোনোভাবেই আমাদের কারণে এই শিল্পটাকে নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আমরা যতদিন পারি আমাদের পক্ষ থেকে এই শিল্পিটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করব। এজন্য আমাদের সবার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। তারপর ভেইল বলল, আমি দুজন মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। তারা নামি-দামি, দেখতে খুবই সুন্দরী।

আমি আজই তাদের কাছে যাব। আমি বেশ কিছুদিন দুজন নতুন নারী খুঁজছি। আমার বিশ্বাস, হয়তো তাদের দ্বারা আমার পরিশ্রম লাঘব হবে। তারা যদি অভিনয়ের ব্যাপারে সাড়া দেয় তাহলে আমি অবশ্যই আমার ছবিতে তাদের সুযোগ করে দেব।

আমি তোমাদের সঙ্গে কোনো উপহাস বা কৌতুক করছি না। আমি শুধু তোমাদের কাজ থেকে সাহস চাচ্ছি। তারপর সে কিছুক্ষণ হাসল। এক্ষেত্রে তোমাদের চাইতে আমার অভিজ্ঞতা কোনো অংশে কম নয়।

ক্লডিয়া হাসিতে ফেটে পড়ল। এতদিন জানতাম তুমিই বোকা। আমি শুধু একটা নতুন জীবন অন্বেষণ করছি।

ভেইল বলল, আমরা কি ব্যবসা নিয়ে কথাবার্তা বলতে পারি মলি বলল, আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবার সবকিছুর ওপর তাদের অধিকার বসাতে পারবে। আমি মনে করি তারা লডস্টোন থেকেও পাঁচ পার্সেন্ট পাবে।

কমপক্ষে পাঁচ। মলি বলল, তুমি তোমার নিজের সবকিছুকে বিনষ্ট করতে যাচ্ছ। তুমি আমাকেও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্লডিয়া তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে তার সকল কথা অবিশ্বাস ভাবে গ্রহণ করল। আর্নেস্ট তুমি এখন পর্যন্ত অসুখী। আমরা তোমাকে একটি নতুন ব্যবসা দেব। আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি।

ভেইল বলল, ক্লডিয়া বর্তমান পৃথিবী সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। যা তুমি পর্দায় ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবে।

আমাকে দিন। আমি সবকিছুতেই জয়লাভ করেছি। আমি আমার নিজেকে বিনষ্ট করিনি। আমি খাওয়ার মধ্যে আনন্দ উপভোগ করি। আমি আমার ভালোমন্দ আমার দুজন সুন্দরী সঙ্গীর সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমি আমার স্ত্রীকেও ভালোবাসি, আর আমার সন্তানদের জন্য আমি অনেক কিছু করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে তুমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারোনি। মলি বলল, তুমি তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করছ।

কারণ আমি ভালো লিখতে পারি না। ভেইল বলল, তাছাড়া আমি এই কাজটিকে তেমন মূল্যায়ন করি না। তার কথা শুনে দুজন মহিলা হাসিতে ফেটে পড়ল। ভেইল তাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। আমরা এলির বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি, সে বলল।

তুমি তোমার লেখায় আরও বেশি উদ্যমী হও। আর বেশি যদি বাড়াও ক্লডিয়া বলল, যেহেতু আমি লিখতে পারি না। তাই আমি তোমাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাচ্ছি না। আমি এখন মজার বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি। যে ছবি তৈরি করতে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে এবং যার আয় ধরেছ একশত মিলিয়ন ডলার সেখান থেকে আমি কিভাবে দশ শতাংশ লভ্যাংশ পাব বুঝতে পারছি না।

তখন মলি তাকে হিসাব বোঝানোর জন্য নোট বই বের করল এবং তাকে টাকার ফিগারগুলো বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল। আমি তোমাকে যে হিসাব দিলাম তা তার মধ্যে কোনো ভুল নেই। তারপরও সে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য বেশ কিছুদিন সময় চাইল।

ঠিক আছে স্টুডিও ছবি বানানোর জন্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পাবে। তারপর বাকি আরো ত্রিশ মিলিয়ন ডলার থাকে। সেটা স্টুডিওর সবার মধ্যে ভাগবণ্টন করা হবে। আর বাকি বিশ মিলিয়নের মধ্যে পাঁচ মিলিয়ন ছবির প্রিন্ট ও বিজ্ঞাপন ব্যয়। পাঁচ মিলিয়ন ছবির পরিচালক-তারকা পাবে। তুমি কি এবার বুঝতে পেরেছ? ভেইল হাসল। মোটেই না, সে বলল। তাহলে টিভি এবং ভিডিওর টাকা? হিসাব নিয়ে পুনরায় আমি আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি। তাছাড়া আজকের আলোচনায় এলি উপস্থিত নেই। এই হিসাব যদি সবাই মেনে নেয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। তাছাড়া আমি আর পুনরায় লেখালেখির কাজটি করতে চাইব না। তুমি সত্যিই একটা পাগলাটে, ক্লডিয়া বলল।

না-না, আমি কেবলমাত্র আমার অভিমত প্রকাশ করলাম। ভেইল বলল, লেখকের স্বভাব যদি এমন হয় তাহলে হয়তো দর্শকও তোমার লিখা ছবি সেভাবেই গ্রহণ করবে, ক্লডিয়া বলল।

এলি ম্যারিয়নের বয়স এখন আশির ওপরে। সে আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার জীবন-মরণ সমস্যা। যে কোনোভাবেই অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছে না। তাকে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন সববরাহ করা হচ্ছে।

আমাদের সবার উচিত এই মুহূর্তে তার পাশে থাকা। ব্যবসা পরেও করা যাবে। একজন মানুষের জীবনের চাইতে ব্যবসা বড় হতে পারে না। সে দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছিল। কিন্তু কাজের চাপের কারণে আমাদের দিকে চেয়ে সে সেদিকে নজর দেয়নি। কিন্তু আজ তাকে মরণব্যাধি পেয়েছে। তার রোগমুক্তির জন্য আমাদের সবার উচিত আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা। আমাদের সারাক্ষণ কাউকে না কাউকে তার পাশে থাকা উচিত। বিশেষ করে ববি বানজ যেভাবে তার সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের উচিত তার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ আমরা সবাই এক সঙ্গে একই পেশায় জড়িত।

এলি ম্যারিয়ন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। সে তখন কারেন্টের শক গ্রহণ করছিল। তার হার্টবিটের কম্পাঙ্ক কমপিউটারের স্ক্রিনে বারবার ওঠানামা করছে। চলচ্চিত্র জগতের সবাই যখন নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তখন একজন সেবিকা প্রিসিলিয়া তার কর্তব্যে ব্যস্ত আছে। সে তার জন্য দুই শিফটে কাজ করছে। কারণ সে দুজন ছোট ছেলেমেয়েকে ভরণ-পোষণ করে। এটা তার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তার শিফটে এলি মারা যাওয়ার কারণে সে হতাশ হলো। সে মৃত্যুকে ঘৃণা করল। সে সেবিকার বাইরে একজন ছবি মেকার হতে চেয়েছিল। সে এলি ম্যারিয়নের অনেকটা নির্ভরশীল হয়েছিল। সে চেয়েছিল এলি রোগমুক্ত হলে তার সঙ্গে ছবির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

সে চিরদিন সেবিকা হয়ে থাকবে না। কিন্তু এখন সে আর আশা করতে পারছে না। হাসপাতালের টপ ফ্লোরে হলিউডের লোকের উপচেপড়া ভিড়। সবাই হলিউডের মহান ব্যক্তিকে দেখার জন্য সমস্ত কাজকর্ম ছেড়ে চলে এসেছে। আর সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে চির বিদায়ী সেই মহান ব্যক্তিকে শেষ দেখা দেখে নিচ্ছে।

ম্যারিয়নের মৃত্যুর আগে অনেকেই তার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেছিল।

সেবিকা বলল, তার মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেও আমি পাশে ছিলাম। তখন সে সংজ্ঞাহীন হয়ে বেড়ে পড়ে আছে। তার মৃত্যু ছিল আমার কাছে অকল্পনীয়। মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে সে জানালার কাছে গিয়ে সূর্য উদয় দেখেছিল। তারপর সে আস্তে আস্তে বিছানায় এলো। আমি তখন তার পাশে ছিলাম। এভাবেই হয়তো একদিন আমাকে চলে যেতে হবে।

১৩. চমৎকার বার্তাটি

১৩.

সিনেটর ওভেন চমৎকার বার্তাটি দিল। যার মূল্য হিসেবে ক্লেরিকুজিও তাকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রদান করল। সে জন্য তাকে জর্জিও’র দূত বলে আখ্যায়িত করা হলো। আসলে ঐ সময় খবরটি পাওয়া তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। তাছাড়া ক্রস ক্লডিয়া ও ভেইলের কাছ থেকে একটা ম্যাসেজ পেল। তারা একই হোটেলের একই রকম পাশাপাশি সুইট ভাড়া নিল। যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেখার জন্য তারা অপেক্ষা করছিল।

এর মধ্যে ক্রস অবশ্য জুয়া খেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার জিতে আনল। ফলে অদৃশ্যভাবে আয়-ব্যয়ের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে সমতার চূড়ান্ত মিলন ঘটল। তাছাড়া লিয়া ভাজির কাছ থেকে হান্টিং লজে একটা কল এলো। সে যত দ্রুত সম্ভব ক্রসকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করল। সে জোর দিয়ে বলল না যে, এটা খুবই জরুরি। তবে অনুরোধেই বোঝা গেল এটা হয়তো জরুরি হতে পারে। তা না হলে সে এমনভাবে ফোন করত না। তার কথাগুলো থেকে এমনই ধারণা পোষণ করা যায়। ক্রস সিনেটর ওভেনকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রদান করার কাগজপত্র প্রস্তুত করতে লাগল। এই নগদ মার্কিন ডলার বহন করার জন্য একটা সুটকেস বা একটা বড় ব্যাগ প্রয়োজন। সে হোটেলের গিফট শপের কথা বলল। তার মনে হলো ঐ গিফট শপে চায়নিজ সুটকেস বিক্রি হয় যা এই টাকা বহন করার জন্য যথেষ্ট হবে। এই সুটকেসগুলোর উপরিভাগ কালো সবুজের আবরণে লাল ড্রাগন আঁকা এবং যার আছে একটি শক্ত অথচ সহজে খোলা যায় এমন তালা।

গ্রোনিভেল্ট তাকে টাকা পাঠানোর কাগজপত্র প্রস্তুত করার পদ্ধতি শিখিয়েছিল। আরও শিখিয়েছিল কিভাবে হোটেলের জুয়া খেলার টাকা বৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া যায়। এটাও দীর্ঘমেয়াদি ও পরিশ্রমসাধ্য কাজ, যা অর্থ পাঠানোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট, এটা এক প্রকার হিসাবও বলে ধরে নেওয়া যায়।

ক্রস কাজটি এক ঘণ্টা ধরে করল। সিনেটর ওভেন তার আগামী দিন পর্যন্ত বাকি রাখল না, সে স্থানটি ত্যাগ করার আগে এক মিলিয়ন ডলার তার হাতে নিল। তার প্রাথমিক কাজ শেষ করার পর সে সামান্য সময় বিরতি নিল। ক্লডিয়া ভেলকে তার কক্ষে ডাকল, ক্লডিয়া ফোন তুলল, আমি আর্নেস্টের সঙ্গে খুব ভয়ঙ্কর সময় কাটাচ্ছি। আমার তোমার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

ঠিক আছে, ক্রস বলল, কেন তুমি দিন দিন নিজকে বিলম্বিত করছ, আমি তোমাকে উপরে তুলবই। তার পর তারা রাতের খাবারের জন্য বাইরে গেল যেতে ক্রস বলল যেতে তোমার সমস্যা শুনবো।

আমরা জুয়া খেলি না। ক্লডিয়া বলল। আর্নেস্ট দিন দিন তার সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তাকে কোনোভাবেই ভালোর দিকে ফিরাতে পারছি না, প্লিজ হেল্প মি। আমাকে এক ঘণ্টা সময় দাও। তারপর আমি তোমার কক্ষে আসছি। আমরা ঐখানে একসঙ্গে রাতের খাবার খাব তোমার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।

তারপর ক্রসের অন্য একটি ফোন এলো। যার মাধ্যমে সে সিনেটরের টাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করল এবং জর্জিওকে ব্যাপারটা অবগত করল।

ক্রস পর্বতের সমান কাগজের কাজ রীতিমতো করে যেতে লাগল। কিন্তু পুনরায় তার মধ্যে আবারও উদ্বিগ্নতা দেখা দিল। সিনেটর ওভেন তাকে নতুন কিছু বলতে যাচ্ছে। তারপর সে লিয়াকে নিয়ে ভেগাসের পথে যাওয়া আরম্ভ করল। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারল না।

তারপর তারা পুনরায় হোটেল ফিরে এলো।

দরজায় রিং বেজে উঠল, নিরাপত্তা প্রহরী ক্লডিয়া এবং আর্নেস্টকে পেন্থ হাউজের দিকে নিয়ে গেল। ক্রস ক্লডিয়াকে বেশ কিছু গরম কথা শুনাল। কারণ সে চায়নি তার এই বিরাট সমস্যার মধ্যে আরেকটি সমস্যা দেখা দিক।

ক্লডিয়া বলল, ক্রস ভেইল একটি ভীতু মানুষ। আমাদের তার জন্য কিছু। করতে হবে। ভেইলকে দেখতে ক্রসের মতো খারাপ লাগছিল না। সে বলল, এখন নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নাও। তার চোখগুলো বন্ধ হয়ে আসছিল, তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ছিল। যা ক্রসকে একটু হলেও অনুপ্রাণিত করল।

নিশ্চয় আমার প্রথম কাজই হবে এ শহরে তার সমস্ত যোগ্যতা বিনষ্ট করা।

যেহেতু ববি লর্ডস্টোন স্টুডিওর প্রধান হয়েছিল, এতে তার ক্ষমতার আরও উন্মত্ততা বাড়ল। সে ম্যারিয়নের মতো আরো ভালো হতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার তেমন মেধাশক্তি নেই। সুতরাং তার সবকিছুই পুনরায় ভেস্তে গেল। শুধু বলো, তোমার দুর্দশা নিয়ে কি ভাবছ। তাছাড়া আমি কি করতে পারি? ক্রস জিজ্ঞেস করল। তোমার ম্যাসেলিনার স্টুডিওতে অংশীদার আছে ক্লডিয়া বলল। তাদের সঙ্গে তোমার অবশ্যই কিছু যোগসূত্র আছে। আমি জানি ববি বানজ ম্যারিয়নের কথা রক্ষা করেছে।

এই সময়ের মধ্যে ক্রস ক্লডিয়ার প্রতি নিরাশ হয়ে গেছে। বানজ তা কখনোই দেবে না, যা ছিল চাকরির চরিত্রের অংশ।

না, ক্রস বলল, আমি আগেও তোমার সামনে ব্যাখ্যা করেছি। তার উত্তর হ্যাঁ বা না জানা পর্যন্ত আমি এবং আমার অবস্থান গ্রহণ করতে পারি না। এখানে কোনো সুযোগ নেই।

ক্লডিয়া অসম্মতি প্রকশ করল। আমি কখনো তাকে বুঝতে পারছিলাম না সে বলল। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, আর্নেস্ট খুবই সাংঘাতিক, সে নিজেই খুন করেছিল, যাতে তার পরিবার অধিকার ফিরে পেয়েছিল।

এজন্য ভেইল এক প্রকার মজা পেল, সে বলল, ক্লডিয়া তুমি বধির, তুমি কি তোমার ভাইকে বুঝতে পারোনি? যদি সে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে তারা কিছু বলে না, তাই তাকে তাদের খুন করতে হতো। সে ক্রসকে ভেংচি হাসি উপহার দিল। ক্রস অবাক হলো যে ভেইল কিভাবে ক্লডিয়ার সামনে এই কথা বলতে পারল। ভাগ্যক্রমে সেই মুহূর্তে তারা সবাই তাদের রুলিং টেবিলে পৌঁছল এবং তারপর মদ পান করতে বসল। ক্ৰস নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল এবং তারপর তারা খেতে বসল। কিন্তু সে কথা না বলে পারল না; একটু মৃদু হাসল, আর্নেস্ট তুমি কিছু সমাধান করতে পারো, তাতে তুমি নিজেই নিজকে নক করতে পারো, যেহেতু আমি বুঝেছি সম্ভবত আমি সাহায্য করতে পারি, আমি দশ তালা পর্যন্ত উঠলাম। তুমি আমাকে জানালা দিয়ে দেখতে পেলে।

ক্লডিয়া রাগান্বিত ছিল, এটা কোনো মজা করা নয়, সে বলল। আর্নেস্ট হলো আমার একজন সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তুমি আমার ভাই যে সব সময়ই আমাকে ভালোবাসার জন্য অভিযোগ করেছে আমার জন্য তা করবে। তার চোখে জল ছিল।

ক্রস উঠে তার কাছে গেল। ক্লডিয়া সেখানে আমার কিছুর করার নেই। আমি কোনো জাদুকর নই। আর্নেস্ট ভেইল তার পানীয় নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছিল। কোনো মানুষ নিজ অপরাধকে গোপন করতে পারে না। তুমি যথেষ্ট ভদ্র ক্রস, সে বলল, দেখো, আমি জানালাটা লাফ দেওয়ার শক্তি হারাইনি আমার অনেক কল্পনা আছে। আমি পথের মধ্যে হাজার হাজার মৃত মানুষ দেখলাম। আমি তা অবিরতভাবে দেখতে লাগলাম, কিছু নিষ্পাপ মানুষও দেখলাম। আমি খুব মর্মাহত হয়ে পড়লাম। আমি রক্তের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না এবং মৃত্যুর পাশে বন্দুক ছোঁড়া, মালবহন করা গাড়ি দেখলাম।

আমি সেই মজা চাইনি, বাজ এবং ডিরি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে ছিল, আমার সমস্ত টাকা রেখে দিল। সেখানকার একটা ঘটনা তুমি ঘটিয়েছ। কাউকে ভাড়া করতে আর আমাকে খুন করার জন্য। কখন করবে, তা আমাকে বলার প্রয়োজন নেই। শুধু তোমরা এটা করবে।

ক্রস পুনরায় হাসতে আরম্ভ করল। যে ক্লডিয়াকে একটি প্যাট দিল এবং তার চেয়ারে ফিরে গেল। তুমি কি জানো এটা একটি মজার ছবি?

সে আর্নেস্টকে বলল, তুমি মনে করো কাউকে খুন করা এক প্রকার মজা?

ক্রস টেবিল থেকে উঠে তার অফিসে গেল। সে তার টেবিলের ড্রয়ারটি খুলল এবং একটি কালো চিপসের থলে বের করল। তারপর সে থলেটা আর্নেস্টের দিকে নিক্ষেপ করে বলল, এখানে দশ গ্রেন্ট আছে। তুমি তোমার সর্বশেষ শটটি টেবিলে নাও, সম্ভবত তুমি জয়ী হবে। আমার বোনের সামনে আমাকে তিরস্কার করা বন্ধ করো।

ডেইল এখন বেশ আনন্দে আছে। সে বলল, ক্লডিয়া এদিকে আসো তোমার ভাই তোমাকে সাহায্য করতে চাচ্ছে না। সে কালো টাকার থলিটি নিজে পকেটে রেখেছে। সে জুয়া খেলতে বেশ উদ্বিগ্ন প্রকাশ করছে।

ক্লডিয়া এটাকে বাধা মনে করল, সে সবকিছুই তার মাথার মধ্যে ঢোকাল কিন্তু যোগ-বিয়োগ করতে ব্যর্থ হলো। সে তার সুদর্শন ভাইয়ের দিকে তাকাল। সে জানে না, যা জাল বসিয়েছিল। সে ক্রসের গালে চুমু খেয়ে বলল, আমি দুঃখিত কিন্তু আমি আর্নেস্টকে নিয়ে চিন্তিত।

ক্রস বলল, তার সবকিছুই ঠিক হবে। যে মৃত্যুর চাইতেও জুয়া খেলাকে বেশি পছন্দ করে, সে একজন জিনিয়াস তাই নয় কি?

ক্লডিয়া হাসল, তাই সে সব সময় বললেই আমি রাজি সে বলল, সে একজন ভয়ঙ্কর কাপুরুষ। কিন্তু সে ভেইলের স্নেহের কাছে পৌঁছতে পারল না।

বোন তুমি দুঃখ-দুর্শাকে তার সঙ্গে ভাগাভাগি করছ, ক্রস বলল। কেন তুমি তার সঙ্গে সুইট শেয়ারিং করছ।

কারণ আমি তার প্রিয় এবং শেষ বন্ধু ক্লডিয়া রাগান্বিত হয়ে বলল, তার বই ভালোবাসি।

তারা দুজন যাওয়ার পর, ক্রস বাকি রাতটা একাই কাটাল। পাঁচ মিলিয়ন সিনেটর ওভেনের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা করল। যখন তার পরিকল্পনা শেষ হলো, তারপর ক্যাসিনোর ম্যানেজারকে ফোন করল, যে ক্লেরিকুজিও পরিবারের একজন উচ্চমানের সদস্য, তাকে টাকাগুলো তার পেন্থ হাউজের সুইটে আনতে বলল।

টাকাগুলো বড় দুটি বস্তার মধ্যে ভরে একজন যুবক ক্লেরিকুজিও পরিবারের দুজন নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা আনা হলো। তারা চায়নিজ ট্রাঙ্কের মধ্যে টাকাগুলো রাখতে সাহায্য করল। ব্যাথেনি ও ম্যানেজার ক্রসকে একটি ভেচকা হাসি দিয়ে বলল, খুব সুন্দর ট্রাঙ্ক। লোকটি যাওয়ার পর ক্রস প্রকাণ্ড খেপটি তার বিছানা থেকে নিল এবং ভাঁজ করে ট্রাঙ্কে রাখল। তারপর সে রুম থেকে নাস্তা আনল। কয়েক মিনিটের মধ্যে নিরাপত্তা প্রহরী তাকে ফোন করে বলল, লিয়া ভাজি তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।

ক্রস লিয়ার সঙ্গে আলিঙ্গন করল। সে সব সময়ই তাকে দেখে আনন্দ করত।

ভালো খবর কিংবা মন্দ খবর? ক্রস তার রুমের কাজ এবং নাস্তা শেষ করে তাকে জিজ্ঞেস করল।

খারাপ, লিয়া বলল, যখন হোটেল বেভারলি লবীতে স্কানেটের সঙ্গে ছিলাম তখন গোয়েন্দা জিম লুজি, আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল। সে আমাকে দেখেছিল এবং স্কানেটের সঙ্গে আমার কি ধরনের সম্পর্ক সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল। আমি তাতে মনোযোগ দিইনি। আমি কে, আমি কোথায়, তা সে কিভাবে জানল, তা আমার জ্ঞাত হয় না।

আমি পুলিশের ফাইলে নেই। আমার জীবনে এমন কোনো ঘটনা নেই। তাতে বোঝা যায় একজন তথ্য প্রচারকারী কাজটি করেছে।

ক্রস তার যাত্রা আরম্ভ করল। এমন একজন আত্মত্যাগী ক্লেরিকুজিও পরিবারে দেখা যায় না এবং যা সব সময়ই নির্দয় শিকড় হয়ে বেরিয়ে এসেছিল।

ক্রস বলল, আমি নিজেই ডনকে ব্যাপারটা অবগত করব।

লিয়া খুব কম খেয়েছিল, সে নিজেই ব্যান্ডি হেভেনাস সিগারেট পরিবেশন করল।

আমি অস্থির না, একটুও না। আমি শুধু এই লোকটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার জন্য তোমার অনুমতি চাচ্ছি।

ক্রস উত্তেজনার মধ্যে ছিল। লিয়া, তুমি তা করতে পারবে না, সে বলল, এই দেশের একজন পুলিশ অফিসারকে খুন করা খুবই কঠিন কাজ।

এটা সিসিলি নয়।

জিম লুজি ক্লেরিকুজিও’র নরম গদির টাকার ওপর বসে আছে। আমি মনে করি সে তোমাক চিরদিনের জন্য প্রশমিত করার জন্য চারদিকে তোমার ব্যাপারে কথা ছড়াচ্ছে।

ভালো, ভাজি বলল, কিন্তু এটা একটা ঘটনা বটে, সেখানে অবশ্যই একজন তথ্য প্রাচারকারী আছে।

আমি ব্যাপারটা সব সময় স্মরণে রেখেছি, ক্রস বলল, লুজিকে নিয়ে তোমরা কোনো দুশ্চিন্তা করো না লিয়া তার সিগারেটে টান দিচ্ছিল।

সে খুব ভয়ানক মানুষ। সাবধান।

আমাকে ক্রস বলল, কিন্তু কাউকে আঘাত করার মতো তোমার কোনো অধিকার নেই। ঠিক আছে?

অবশ্যই লিয়া বলল, তার এখন বিশ্রাম দরকার, তা সে খুবই আবেদনের সহিত বলল। একটা ছোট উপহারও একজন মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রস বলল। তুমি কি আমার সঙ্গে হোটেলে রাত্রি যাপন করতে চাও?

না লিয়া বলল, আমি আমার লজে ফিরে যাব, তুমি আমাকে বলল, যা তুমি আমার সময়ে অর্জন করেছ। কিন্তু আমার উপদেশ অবশ্যই জিম লুজির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।

আমি ডনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব। ক্রস বলল।

সিনেটর, ওরেল ওভেন এবং তার সহকারী তিনজন পুরুষ। জানাদুর বাড়িতে বিকাল তিনটার সময় তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। সচরাচর সে একটি চিন্তাবিহীন লিমো গাড়িতে করে প্রায় ভ্রমণ করত। পাঁচটার সময় সে ক্রসের বাড়িতে হুকুমনামা জারি করল।

ক্রসের ছিল দুজন নিরাপত্তা প্রহরী, তারা লেপ ভাজ করে সৈন্য দল সজ্জিত গাড়িতে ট্রাঙ্কসহ রাখল। একজন নিরাপত্তা প্রহরী ট্রাঙ্কটি রাখল এবং ক্রস সিটে বসল এবং ট্রাঙ্কের দিকে নজর রাখল, তার পর সৈন্যদল সজ্জিত গাড়ি নিয়ে তার পাঁচ নং বাড়ির দিকে ধাবিত হতে লাগল।

ক্রস সকল সময় পাশের দৃশ্য দেখতে ভালোবাসত। তাই সে গাড়ির জানালাতে মুখ দিয়ে পাশের দৃশ্য দেখতে লাগল। কয়েক ঘন্টা পর সে তার বাড়ির আঙ্গিনায় গাড়ি পৌঁছল।

ক্রস নিজেই তার ট্রাঙ্কটি তার বাড়িতে বহন করে নিয়ে গেল। একজন সিনেটর তা বহন করার জন্য তাকে সাহায্য করল। তারপর তারা সবাই খাওয়ার রুমে ঢুকল। সেখানে তারা বিভিন্ন খাবার জুস খুবই উপভোগ করল। সে বেশিক্ষণ মদপান করল না।

ঠিক, ওভেন বলল। সে খুবই জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। আমি অবশ্যই বলব, যদিও আমরা তার বিরুদ্ধ দল। সে পুনরায় নির্বাচিত হবে। আমাদের অবশ্য ধৈর্য ধরতে হবে।

সুতরাং আমাদের পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে, তাহলে আশা করা যাবে সে তাদের ভেটো ছাড়াই জয়লাভ করবে?

তা সত্য না, সিনেটর বলল, আমি অবশ্যই তার সঙ্গে সঙ্গে থাকব। এই পাঁচ বছরে অবশ্যই সভাতে তার অবস্থান পরিবর্তন হবে। পুনরায় সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। তার বহু কারণ আছে।

ক্রস এখন সম্পূর্ণভাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছে। দুঃখটা কি হতে পারে তা আমাকে সত্য করে বলল ওভেন। তার পর সিনেটর হাত বাড়াল। অবশ্যই কিছু ঘটলে তা প্রেসিডেন্টের জন্যই ঘটবে। সহকারী প্রেসিডেন্ট বিলটিতে স্বাক্ষর করবে।

সুতরাং এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাকে আশা করতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট হার্ট অ্যাটাক কিংবা প্লেন দুর্ঘটনায় কিংবা তাকে আকস্মিক হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যেতে হতে পারে। এটা ঘটবে কারণ আমরা সকলেই মরণশীল সিনেটর এভাবে উদাহরণের মধ্য দিয়ে ক্রসকে পরিষ্কার করার জন্য চেষ্টা করল।

সে রেগে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করল। এই জারজ ক্লেরিকুজিও’র জন্য তাকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে। এখন তাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে খুন করতে হতো তাদের বিলের জন্য।

কারণ টাকা মানুষের জীবনের সবকিছু। টাকা ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই সৃষ্টি করা জায় না। যা আমি বর্তমান পরিস্থিতিতে যথেষ্টভাবে অনুভব করছি। টাকা হলো মানুষের উপরে ওঠার চাবি। মানুষের জীবনের উপরে ওঠার পাটি সিঁড়ির মধ্যে টাকা হলো প্রথম।

ক্রস বলল, এখন বলল তোমার খারাপ সংবাদ কি?

সিনেটর মনোক্ষুণ্ণ হয়ে মাথা নাড়ে। তোমার বন্ধু ওটা পছন্দ করবে না। সে বলল, বিশেষ করে জর্জিও যথেষ্ট অধৈর্যশীল, কিন্তু সে যথেষ্ট বিশ্বাসী। সত্যই বিশ্বাসী?

আমার সবচেয়ে প্রিয় চাচাতো ভাই। ক্রস বলল, ক্লেরিকুজিও পরিবারের সবার মধ্যে আমি তাকে বেশি পছন্দ করতাম। ওটা সিনেটরেরও ধারণা ছিল।

তারপর ওভেন বোমসেলগুলো সরবরাহ করল। প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছে, যে বিলের সঙ্গে ভেটো দেবে।

ক্রস ক্লেরিকুজিও সর্বশেষ পরিকল্পনাকেও সফলতার সঙ্গে বুঝতে পারল। কিন্তু আরও কিছু তথ্যের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হলো। কিন্তু সেখানে আরো কার্যকরী করার জন্য তার আরো ভোটের প্রয়োজন হলো। সিনেটর ভয় পেল বলল, ও না, না। আমরা একই পার্টিতে উপস্থিত থাকব না। তাছাড়া প্রেসিডেন্ট খুবই ধনী ছিল। যখন সে তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে অবসর নেয়। প্রত্যেকটি কোম্পানির পরিচালকরাই তা থাকে। তাদের ব্যবসা করার জন্য নিজস্ব টাকার প্রয়োজন না, ওভেন ক্রসকে সন্তাষ্টের হাসি দিল। সবকিছুই পরিবর্তন হবে যখন তুমি নিজেই প্রেসিডেন্ট হবে।

সিনেটর ওভেন ছিল চিরকালের সুদর্শন। তাছাড়া সে রাজনীতির উচ্চ শিখরে অবস্থান করছিল। সে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভার প্রধান ছিল। বার্ষিক ঘোড়া দৌড়ের প্রতিযোগিতার প্রধান উদ্যোক্তা ছিল। সে প্রায় ক্রসকে উচ্চ আসনে নেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করল।

ক্রস তার ট্রান্স থেকে সেলটি বের করে তার মেঝেতে রাখল। ছোট উপহারটি সিনেটর হোটেল থেকে এনেছিল।

সিনেটর ক্রসের সঙ্গে হাত মিলাল। তার থেকে ছিল খুবই মসৃণ। আহ দারুণ উপহার! সে বলল, তোমাকে ধন্যবাদ ক্রস। এখন আমি তোমাকে আত্মবিশ্বাস অর্জন করার কিছু কথা বলছি। অবশ্যই, ক্রস বলল তাকে ট্রাঙ্কের চাবি দিল।

ওভেন চাবিটা তার টাউজারের পকেটে রাখল। সে দাঁড়িয়ে বলল, দয়া করে তোমাদের একজন সেখানে অবস্থান করো। এখন আমাকে আমার বন্ধু ক্রসের সঙ্গে কিছুক্ষণ থাকতে দাও। তারা চলে যাওয়ার পরে সিনেটর আস্তে আস্তে রুমের দিকে গেল। সে কুটি করল, আমার ভালো খবর আছে কিন্তু আমার কিছু খারাপ খবর আছে।

ক্রস মাথা নুয়ে মৃদু স্বরে বলল, আসলে ব্যাপারগুলো সচরাচর এমনই হয়। সে মনে করল ভালো খবর অনেক সময় কিছু কারণের জন্য মানুষের জীবনে খারাপ হয়ে আসে।

ওভেন চাপা হাসি দিল। এটা কি সত্য ছিল না? প্রথমেই ভালো সংবাদ ছিল, আমি আমার জীবনের পাঁচটি বছর আমেরিকাতে জুয়া খেলায় কাটিয়ে ছিলাম। যদিও আমার জুয়া খেলার যথেষ্ট সামর্থ্য ছিল তারপরও আমি ভাবলাম এটা আমার করা ঠিক ছিল না।

সে ছিল খুবই পাতলা এবং অন্তরমুখী মানুষ। তার নিজস্ব কোনো কঠিন কাউকে বিজড়িত করার মতো মানসিকতা ছিল না। ক্রস নিশ্চিত ছিল, ডন ওটার জন্য কখনোই জিততে পারবে না এবং যদিও সে পারে, ক্রস তার পরিবার থেকে নিজকে প্রত্যাখ্যান করে নেবে চিরজীবনের জন্য।

ওভেন সদালাপী হাসি চালিয়ে যেতে থাকল। ওটা আমাকে কতটুকু অসহায় করে ফেলেছে তা তুমি জানো না। সহকারী প্রেসিডেন্ট আমার খুব কাছের বন্ধু, যদিও আমরা পরস্পরবিরোধী দলে অন্তর্ভুক্ত। আমি বিষয়টা সম্পর্কে কতটুকু জানি তিনি বিলটি অনুমোদন করবেন। আমরা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।

ক্রস কদাচিৎ বিশ্বাস করত যে কথাটা সিনেটর বলেছে। সিনেটর ওভেন আমেরিকান রাজনীতিতে একটি আদর্শ দৃষ্টিতে পরিণত করেছিল। যদিও তার নারী এবং গলফ খেলার প্রতি ছিল দারুণ দুর্বলতা। সে দেখতে খুব সুদর্শন ছিল। তার কণ্ঠস্বর ছিল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মতো। তিনি নিজেকে পৃথিবীর একজন মানুষ হিসেবে উপস্থিত করেছিলেন। তথাপি তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে ক্লেরিকুজিও পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব ছিল, ক্রস ভাবল।

সিনেটর টেরিকে খাবার জোগাড় করছিল। আমি একাই রাত কাটাব। সে বলল, আমি আশা করি তুমি কিছু মেয়েকে আমার কাছে শো করতে পারবে, যারা আমাকে মদ পান করাবে এবং আনন্দ দেবে।

পেন্থ হাউজে ফিরে গিয়ে ক্রস জর্জিওকে ফোন করল এবং তাকে বলল, সে আগামীকাল কুওগতে যাবে। জর্জিও তাকে বলল, পরিচিত ভাই ভাবই তোমাকে বিমানবন্দরে রেখে আসবে। সে আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল না। যখন ক্রস কুয়েণ্ডের ম্যানশনে পৌঁছল, সে তখন আলাদা সুখ খুঁজে পেল।

ক্রস একটি পশু চারণভূমিতে ডন এবং তার পুত্রের সঙ্গে মিলিত হলো। ভিনসেন্ট, পেটি এবং ডেন্টি আকাশি রঙের গুপ্তঘাতক টুপি পরেছিল।

সেখানে কোনো খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। তাই রাতের খাবার দেরিতে হলো। আজ আমাদের খুব সুখের দিন। ডন সব সময়ই বলতে লাগল। তারা সকলে সোফায় বসল, জর্জিও মদ পান আরম্ভ করল এবং ডন ইতালিয়ান চুরুট টানা শুরু করল।

ক্রস একটি পুরোপুরি প্রতিবেদন দিল। সে কিভাবে সিনেটরকে পাঁচ মিলিয়ন দিয়েছে। তারপর সে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে লাগল। সেখানে অনেকটা সময় তারা নিশুপ থাকল। তাদের মধ্যে কেউই ক্রসের বিষয়টাকে মূল্যায়ন করল না। ভিনসেন্ট এবং পেটিকে খুবই উদ্বিগ্ন দেখাল। এখন ভিনসেন্ট তার হোটেলকে আরো শৃখল করতে চায়। সে আর ঝুঁকি নিতে চায় না। পেটি ভাবল, আমি ব্রঙ্কস এনক্লেভের সৈন্য বাহিনীর প্রধান। সে নিজেও তার নির্মাণ ব্যবসা নিয়ে উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছে। তারা সবাই তাদের জীবনযাপন নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে।

ঐ সিনেটর খুবই উন্মত্তা ভিনসেন্ট বলল। ডন ক্রসকে বলল,-তুমি কি নিশ্চিত যে খবরটি সিনেটর আমাদের পাঠিয়েছিল? আমরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। তাছাড়া আমাদের ভেতরই একজন প্রেসিডেন্ট।

জর্জিও সরাসরি বলল, তারা সবাই একই দলের অন্তর্ভুক্ত না।

ক্রস ডনকে উত্তর দিল, সিনেটর কখনোই নিজে কাজটা করবে না। সে শুধু ব্যাপারটা উপস্থাপন করবে। আমি মনে করি সে আমাদের সঙ্গে অভিনয় করবে। ডেন্টি কথা বলে উঠল সে তাদের ধারণা দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ল। আমরা সমস্ত জুয়া খেলার ব্যবসা পেতে পারি। তাতে আমাদের সৎ থাকতে হবে। এটাই আমাদের বড় কর্তত্ব।

ডন পিপির দিকে মাথা ঘুরাল, এবং তুমি কি ভাবছ? সে নরম সুরে জিজ্ঞেস করল।

পিপি সত্যিই রেগেছিল। এটা করা যাবে না এবং এটা করা উচিত হবে না।

ডেন্টি মৃদু স্বরে বলল, ভাই পিপি তুমি এটা করতে পারো না, আমি পারি।

জর্জিও তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তুমি একজন মুচি, তুমি পরিকল্পনাকারী না। তুমি কখনোই এক মিলিয়ন বছরের মতো কিছু করার পরিকল্পনা করতে পারো না। এটা করা বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ, এটা করা বড় কঠিন। এতে তুমি কখনোই মুক্ত হতে পারবে না।

ডেন্টি করুণ স্বরে বলল, দাদা আমাকে চাকুরিটা দিয়েছিল। আমি এটা করব।

ডন তার বড় ছেলেকে ভালো চোখে দেখত। আমি নিশ্চিত পারব এবং পুরস্কারটাও হবে বেশ বড়। কিন্তু পিপিরও অধিকার আছে। যার জন্য আমাদের পরিবারটি ঝুঁকিতে থাকতে পারে। একজন সব সময়ই ভুল করতে পারে কিন্তু কখনোই বড় আকারের ভুল করতে পারে না। তদপুরি যদি আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারি তাহলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন হবে।

ডেন্টি মৃদুভাবে বলল, তা তোমার ব্যাপার, তা তোমার সমস্যা।

ডন তার মাথা নাড়াচ্ছিল, একজন তথ্য পাচারকারী থাকতে পারে না, সে বলল, গোয়েন্দারা কিছু খোঁজ-খবর পেয়েছিল এবং এখন বন্ধ। জর্জিও এ বিষয়ে সতর্ক থেকো।

জর্জিও বলল, নিশ্চিত, অন্য পঞ্চাশ গ্রান্ড, ক্রস বলল, তা তোমার ব্যবসা তুমি হোটেলের বাইরে পেয়ে যাবে।

ডন সিগারেট টানছিল, এখন সবাই আমরা এক জায়গায়, তোমাদের অন্য কোনো সমস্যা আছে? ভিনসেন্ট কেমন চলছে তোমার হোটেলের ব্যবসা?

ভিনসেন্ট, আমি তিনটি জায়গায় তা খুলেছি, ফেলি, ডিনভের এবং অন্যটা নিউইয়র্কে। আপনি বিশ্বাস করবেন এক প্লেট চাপাতির দাম নিল মোল ডলার। তাহলে দলিলটি আমাদের সারা জীবন থাকবে। এটা একটা খুব বড় অপরাধ।

অথচ আমাদের কোনো বিপদের সম্মুখীন হওয়ার মতো তেমন কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। এটা খুব সাধারণ একজনের সাফল্য অর্জনের জন্য। আমাদের উদ্দেশ্যটাকে খুব ধৈর্য সহকারে অর্জন করতে হবে।

রুমের সবাই আরাম করছিল। ডেন্টি ছাড়া আর কারো মধ্যেই কোনো টেনশন ছিল না। ভিনসেন্ট এবং পেটি হাসল। ডন তার মাথা নাড়াল, অন্য কোন বিষয় ডন ক্লেরিকুজিও বলল, আমি মনে করি আমরা তখন সিনেটরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব।

সবকিছু স্থির হলো, ক্রস অন্য একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিল। তাই সে লিয়া ভাজি এবং জিম লুজি সম্পর্কে বলল। আমাদের পরিবারের তথ্য পচারকারী হিসাবে একজন আছে, ক্রস বলল।

তারপরও বলতে পারি ব্যবসার অবস্থা আজকাল ভালো যাচ্ছে না। আমি ওর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনার কথা ভাবছি।

পেটি বলল, আমি পরিচালনা করার চাইতে বেশি ব্যবসা হাতে পেয়েছি। আমরা বিল্ডিং এবং রাস্তার কাজ করছি। তাছাড়া তারপরও আমি একটা চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি যেটা করতে পারলে আমার বেশি ভালো হতো। তারপরও আমি আমার মনকে ব্যবসায়ীর দিকে চালাতে চাই। তাছাড়া আমি আমার ব্যবসার ধরন পাল্টানোর চেষ্টা করছি তবে ভবিষ্যতে আপনার সাহায্য কামনা করি। আপনি আমার মধ্যে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা অবশ্যই আমাকে অবগত করবেন।

ডেন্টি, আমরা শক্তিশালী অস্ত্র পেতে যাচ্ছি।

সে চাপা হাসি দিয়ে বলল, ক্লেরিকুজিও?

পেটি বলল, আমি পপের মতো চিন্তা করার চেষ্টা করছি। কেন তারা এটা করতে পারবে না।

তুমি ভালো করেছিলে ডন পেটিকে বলল, তুমি একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি একটি ছোট সমস্যাকে ধরে রেখেছিলে এবং যা ক্লেরিকুজিওকে তাদের কোন অংশীদারিত্ব দেয়নি।

আমার সেই বিশ্বাসঘাতিনীর ছেলেকে খুন করতে হবে। ডেন্টি বলল, সে আমাদের আসনে এখন থেকে বরাবর আসবে।

এবং তাকে অনেক কিছু দেব ডন বলল। তারপর মাথা ঘুরিয়ে পিপিকে জিজ্ঞেস করল, তোমার কি সমস্যা হচ্ছে?

কিছুই নাই, পিপি বলল, পরিবার ছাড়া আমার কোনো সমস্যা নেই।

এটা তোমার ভালো সুযোগ, ডন বলল, তুমি কঠোর পরিশ্রম করো, তাহলে তোমার জীবনে অনেক আনন্দ করতে পারবে। ডেন্টি আর প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করল না। আমারও একই অবস্থা সে ডনকে বলল, এবং আমি এতই বাচ্চা যে কাজ করতে পারি না।

আসলে জীবনটা গল্প নেয়ার মতো, ডন ক্লেরিকুজিও বলল। চিন্তা করো না। তোমরা সবাই ধৈর্য ধরো, তোমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক এই কামনা করি এবং আমার…

.

১৪.

এলি ম্যারিয়নের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন সকালবেলায় ববি বানজ স্কিপি ডিরিকে দেখে আর্তনাদ করে কাঁদছিল।

হায়রে বিপদ! চলচ্চিত্র ব্যবসার জন্য এটা খুবই খারাপ সংবাদ। তুমি কিভাবে এটা ঘটার অনুমতি দিতে পারো? সে ডিরির দিকে তাকিয়ে গুঁজে রাখা কাগজের বান্ডিল নাড়ছিল।

ডিরির দিকে তাকাল। এটা ছিল রোমে একটা ছবি শুটিং করার শিডিউলের যাতায়াত পত্র। হ্যাঁ, তাহলে কী করাতে হবে? ডিরি বলল।

বানজ রাগান্বিত ছিল। এই ছবির সবাইকে রোমের ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীতে বুকিং করা হয়েছে। শুধু একজন বাদ আছে। সে কে তুমি জানো? লডস্টোনের একাউন্ট অফিসার হিসেবে, হিসাব-নিকাশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। সে অর্থনৈতিক দিকটা দেখবে।

হ্যাঁ, মানলাম, তাতে হয়েছে কী? ডিরি বলল।

বানজ রাগান্বিত হয়ে বলল, ছবির জন্য একটা স্কুল সেট করতে বাজেট করা হয়েছে, যেখানে স্কুলের সব ছেলেমেয়ে ছবিতে অংশগ্রহণ করবে। বাজেটে দুই সপ্তাহের জন্য ভাড়া বরাদ্দ করা হয়েছে। আমি ঠিক ঠিকভাবে স্ক্রিপ্ট পড়েছি। এখানে বারো জন অভিনেতা-অভিনেত্রী যাদের দুই-তিন মিনিট করে ফিল্মে দেখানো হবে। কেবল দুই দিনের শুটিংয়ের জন্য প্রমোদরী নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখন আমার কাছে ব্যাখ্যা করো তুমি কিভাবে এটা অনুমোদন দেবে।

স্কিপি ডিরি তার কথায় দাঁত বের করে হাসল। নিশ্চয়, সে বলল। আমাদের পরিচালক হলো লোরানজু টালুফো। সে তার লোকজনকে প্রথম শ্রেণীতে যাবার বিষয়ে জোর দিয়েছে। অল্প অভিনয়ের শিল্পী ও ক্যামেও রোল স্ক্রিপ্টে লেখা হয়েছে, কারণ তারা জনপ্রিয় তারা কাদের প্যাঁচে ফেলতে পারে। প্রমোদতরী দুই দিনের জন্য বুকিং করা হয়েছে। কারণ লোরানজু ক্যানেস ফিল্ম ফেস্টিভালে যেতে চায়।

তুমি প্রযোজক, লোরানজুর সাথে কথা বলো। বানজ বলল।

আমার দ্বারা হবে না। ডিরি তাকে বলল।

লোরানজুর কাছে চারটা এক শত মিলিয়ন ডলারের ছবি আছে, তার দুটিতে একাডেমি পুরস্কার রয়েছে। প্রমোদতরীতে তাকে সহায়তা করার সময় আমি তার পশ্চাৎদেশে চুমু খাব। তুমি তার সাথে কথা বলো।

এর কোনো উত্তর ছিল না। বাস্তবিকভাবে ইন্ডাস্ট্রির আধিপত্য পরম্পরায়, স্টুডিও প্রধান সবার উপরের রেঙ্কে। প্রযোজক একমাত্র ব্যক্তি যিনি একত্রে সব বিষয়ে দেখাশোনা করতে পারে, বাজেটের বিষয়ে তদারকি করতে পারে এবং স্ক্রিপ্ট বাড়াতে পারে। কিন্তু সত্য হলো যে ছবির শুটিং শুরু হলে পরিচালকের হাতে থাকে সর্বময় ক্ষমতা। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে সাফল্যের কীর্তি তার থাকলে তো কথাই নেই।

বানজ মাথা ঝাঁকাল, আমি লোরানজুর সাথে কথা বলতে পারি না। লোরানজু আমাকে স্বয়ং চলে যেতে বলতে পারে আর আমি এই ছবি থেকে বঞ্চিত হব।

আর সে ঠিকই করবে। ডিরি বলল। কী যন্ত্রণা, লোরানজু সবসময় একটা ছবি থেকে পাঁচ মিলিয়ন চুরি করে ফেলে। তারা সবাই এটা করে। এখন শান্ত হও। আমরা নিজেরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় থাকতে পারি।

কিন্তু, বানজ এখন খরচের অন্য দিকগুলি দেখছিল। তোমার ছবিতে, সে ডিরিকে বলল, চায়নিজ খাবার খাওয়ার জন্য খরচ হবে পাঁচ শত হাজার ডলার। কেউ না কেউ, এমনকি আমার স্ত্রীও চায়নিজ খাবারে অধিক মিলিয়ন ডলার ব্যয় না করে পারে না। ফ্রান্স খাবার হতে পারে। কিন্তু চায়নিজ?

স্কিপি ডিরি দ্রুত ভাবল। ববি সেখানে ছিল। একটা জাপানিজ রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে সুশি নামে একটি খাদ্য আছে। ঐটা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার।

বানজ হঠাৎ করেই শান্ত হলো। লোকজন সবসময় সুশি সম্পর্কে অভিযোগ তোলে। একটা প্রতিদ্বন্দ্বী স্টুডিও-র প্রধান জাপানিজ উদ্যোক্তা তাকে রাতের খাবারের জন্য একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া সম্পর্কে বলেছিল, আর ঐ খাবারের মধ্যে বিশেষভাবে ছিল সুশি। দুইজন মানুষের জন্য বিশটি বাজে মাছের মাথার দাম ছিল এক হাজার মার্কিন ডলার, সে বলেছিল। বানজের মনে ছাপ পড়ল।

ঠিক আছে, বান স্কিপি ডিরিকে বলল। কিন্তু তুমি অবশ্যই কমাতে পারো। তোমার পরবর্তী ছবিতে অধিক সংখ্যক কলেজ পড়ুয়া নবাগতদের পেতে চেষ্টা করো। নবাগতরা ফ্রি কাজ করে।

এলি ম্যারিয়নের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হলিউডের একজন প্রখ্যাত তারকার চেয়েও বেশি মর্যাদায় পালিত হলো। স্টুডিও প্রধান, প্রযোজক, এজেন্টরা তাকে শ্রদ্ধা জানাল। বিখ্যাত তারকা, পরিচালক এমনকি স্ক্রিন প্লে লেখকরাও তাকে সম্মান ও ভালোবাসা জানাল। তার সদাশয় ও ক্ষমতার প্রজ্ঞায় চলচ্চিত্র ব্যবসার অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে তাকে সবাই সম্মান করল। তাছাড়া সে ছিল সুন্দর জীবনের প্রতি উদার।

তার পরের বছরগুলোতে সে ছিল সন্ন্যাসী, ক্ষমতায় মত্ত থাকেনি, সেজুয়াল বিষয়ে কোন আদেশ চাপিয়ে দেননি। তাছাড়া লডস্টোন অন্য স্টুডিওর চেয়ে অধিক ভালো ছবি বানিয়েছিল। কেউ ভালো ছবি বানাতে পারে এরকম লোক সেখানে ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার স্টাফ প্রধানের মাধ্যমে তাকে উচ্চ প্রশংসার বাণী দিয়েছে। হলিউড ছবির প্রতিদ্বন্ধী হাওয়া সত্ত্বেও ফ্রান্স তার সংস্কৃতিমন্ত্রীর মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছে।

জাপানের ব্যবসায়িক কর্মকর্তা হঠাৎ করেই এখানে উপস্থিত হয়েছে। নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি ও সুইডেনের চলচ্চিত্র জগতের বড় কর্মকর্তারা এলি ম্যারিয়নকে সম্মান জানিয়েছে।

উচ্চ প্রশংসা শুরু করলে প্রথমে একজন বিখ্যাত পুরুষ তারকা। তারপর একজন মহিলা তারকা, তারপর একজন পরিচালক, এমনকি একজন লেখক বেনি স্লাই ম্যারিয়নকে সম্মান জানাল। তারপর প্রেসিডেন্টের স্টাফের প্রধান। ঠিক এরকমভাবে সবাই সম্মান জানাল। এলি ম্যারিয়নের শক্তি ও ব্যবসায়িক দক্ষতার ওপর দুটি বিখ্যাত ছবির অংশবিশেষ দেখানো হলো। পরিশেষে এলির পুত্র কেভিন এবং তার মেয়ে ডোরা ও ববি বানজ শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করল।

কেভিন ম্যারিয়ন বলল একজন যত্নশীল বাবা হিসেবে শুধু তার নিজের সন্তানদের জন্য নয়; লডস্টোনে যারা কাজ করেছিল তাদের সবার প্রতি এলি ম্যারিয়ন যত্নবান ছিল বলে ভূয়সী প্রশংসা করল। সে ছিল চলচ্চিত্রে প্রকৃত শিল্পী আনয়নকারী ব্যক্তি, একটি উজ্জ্বল আলো। কেভিন শোকাহতদের আশ্বস্ত করল। সে আজ ঝরে গেল।

এলি ম্যারিয়নের কন্যা ডোরা বেনি স্লাই লিখিত কবির ভাষায় তার বক্তব্য দিল। প্রশংসাযোগ্য আত্মিক, উল্লেখযোগ্য ছিল এলি ম্যারিয়নের গুণাবলি, আমি এ পর্যন্ত যত লোককে চিনি সবার চেয়ে আমার বাবাকে আমি বেশি ভালোবাসি সে বলল, কিন্তু আমি আনন্দিত যে, আমাকে তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হতো না। আমার শুধু মেলামেশা ছিল ববি বানজের সাথে। আমি বুদ্ধিতে তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম।

ববি বানজের দিকে ঘুরে সে হাসল। গোপনভাবে সে ডোরার কৌতুকে রাগান্বিত হলো। আমি ত্রিশ বছর লডস্টোন স্টুডিওর বিল্ডিংয়ে এলি ম্যারিয়নের সাথে কাটিয়েছি, সে বলল। আমি যতদূর জানি সে ছিল প্রতিভাধর ও অত্যধিক দয়ালু ব্যক্তি আর অধীনে ত্রিশ বছরের আমার চাকরি আমার জীবনের জন্য খুবই আনন্দের ছিল। আমি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ চালিয়ে যাব। পরবর্তী পাঁচ বছর আমার ওপর স্টুডিও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে সে আমার প্রতি তার বিশ্বাস দেখিয়েছিল। আমি তাকে ব্যর্থ করব না। এলির প্রাপ্তি এলি আশা করতে পারে না। সে সমগ্র পৃথিবীর বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। তার সম্পদ ও ভালোবাসা তার পরিবার ও আমেরিকার সব লোকের সাথে সে ভাগ করে নিয়েছিল। সে বাস্তবিক একটা চুম্বক ছিল।

সম্মিলিত শোকাহতরা জানল যে ববি বানজ নিজেই এই ভাষণ লিখেছিল। কারণ, সমস্ত চলচ্চিত্র জগতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ তাকে দেয়া হয়েছিল। যা সে পরবর্তী পাঁচ বছর লডস্টোন স্টুডিওর জন্য করেছিল। সে আশা করছিল এলি ম্যারিয়নকে যে সম্মান দেয়া হয়েছিল ঠিক সেই সম্মান প্রতিটা মানুষ দিক। ববি বানজ বেশি দিন দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে থাকেনি, সে ছিল নাম্বার ওয়ান ব্যক্তি।

শব শোভাযাত্রা হওয়ার দুই দিন পর বানজ স্টুডিওতে স্কিপি ডিরির প্রতি হুইলনামা জারি করল এবং লডস্টোনের যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের সুবিন্যস্তক্রম এর প্রধান হিসাব দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিল। বর্তমান সে ম্যারিয়নের প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করছিল। তাই সে ডিরির প্রস্তাবকে অপ্রতিহত করল। ডিরি স্টুডিওতে তৈরি প্রত্যেকটা ছবি থেকে অংশীদার হিসেবে লভ্যাংশ পেত। তার যে কোনো ছবি ত্রিশ মিলিয়ন ডলারের কমে তৈরি করার সামর্থ্য ছিল। লডস্টোন স্টুডিও থেকে যে কোনো ছবি তৈরি করার মতো তার যোগ্যতা স্বাধীনভাবে ছিল না। স্কিপি ডিরি তার এই বড় প্রস্তাবে বিস্ময়ে অভিভূত হলো। সে বুঝতে পারল এটা বানজের একটি অনিশ্চিত পদক্ষেপ। বানজ জানত আমি সৃষ্টিশীল কাজে দুর্বল এবং আমি তার কাজ পূর্ণাঙ্গ করতে পারব না।

ডিরি তার প্রস্তাব গ্রহণ করল এবং ক্লডিয়া ডি লিনাকে ঐ কোম্পানির যন্ত্র ও শ্রমিকদের সুবিন্যস্তকরণ প্রধানের দায়িত্বে নিয়োগ করল। কারণ সে কেবল সৃজনশীল নয়, সে কেবল ছবি তৈরি করতেই জানে না, সে এতই স যে, সে তাকে সেবা করতে পারবে। তার সঙ্গে কাজ করলে তাকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হবে না। তদুপরি সে খুব সহজেই ভালো ছবি তৈরি করতে পারবে। কোম্পানিতে তার সঙ্গে সব সময় আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। তার আছে ভালো রসবোধ এবং তার যৌন আবেদন অনেক দিন আগেই তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।

এটি নতুন করে কিছু করার, কিভাবে ভালো কিছু করা যায়, তা স্কিপি ডিবিকে দেবে। এতে স্কিপি ডিরি খুব সহজেই তার হারানো মূল্যবোধ এবং তারকা সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে। ডিরি ইতিমধ্যেই খুব সম্পদের মালিক বনে গেছে কিন্তু সে মনে করে এটি হলো ধনী হওয়ার দশটি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথমটি যা সে অর্জন করেছে। সে নিশ্চিত তার বাকি জীবন জাক-জমকের মধ্যে কাটাতে পারবে কিন্তু তার ব্যক্তিগত কোনো প্রচেষ্টাই হয়নি, তার পাঁচটি বাড়ি নেই, তার কোনো অন্তঃপুরবাসী নারী নেই, সে কখনোই অধঃপতিত জুয়াড়ি হতে চেষ্টা করেনি, সে কখনোই আর পাঁচজনের সঙ্গে সম্পর্কে অবসান ঘটায়নি। সে কখনোই তার নিজস্ব ছবিতে কোনো সময় টাকা লগ্নি করার চেষ্টা করেনি। কখনোই সে এলি ম্যারিয়নের কোনো কিছুর জন্য টাকা খরচ করতেও চেষ্টা করেনি।

কিন্তু কয়েক দিন হলো, সম্ভবত, সে প্রথম অধ্যায় থেকে পঞ্চম অধ্যায়ে ধাবিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, অধ্যয়ন করতে হবে এবং শত্রু সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে যেমন বানজ তার প্রতিটি কাজে সতর্ক থাকে।

বানজ তার পরিকল্পনা বের করল এবং ডিরি তার সাহস দেখে অবাক হলো। কিভাবে তা সম্ভব অবশ্যই বানজ একটা বিশেষ ক্ষমতাবলে তার অবস্থানকে শক্ত করেছিল।

অবশ্য প্রথমের দিকে সে, মেলো স্টুয়ার্টের সঙ্গে একটা ব্যবসা করতে যাচ্ছিল, যাতে মেলো লডস্টোন এর যাবতীয় ভালো যন্ত্রপাতি তাকে দিয়েছিল।

আমি এটা ব্যবহার করতে পারব, ডিরি বলল, আমি কাজটি হওয়ার পর তা তোমাকে বুঝিয়ে দেব। কারণ এটা আমি আমার কাজে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারব।

আমি বিশেষ করে আনন্দিত যে আমরা পরবর্তী ছবিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে পাচ্ছি। ববি বানজ বলল।

হ্যাঁ, ডিরি ভাবল, এখন লডস্টোন বানজের আয়ত্তে, আমি অ্যাথেনাকে আমার বিছানায় পেতে চেয়েছিলাম, ডিরি ভাবল, যেহেতু আমি প্রধান দায়িত্বে আছি, আমি পারব বলে মনে করি। তাই আমি ক্লডিয়াকে প্রজেক্টে ভালোভাবে কাজ করার জন্য বলব, ডিরি বলল।

তা ঠিক আছে, বানজ বলল, স্মরণ রেখো, আমি সব সময়ই জানি যে, এলি প্রকৃতপক্ষে কি করতে চেয়েছিল কিন্তু করতে পারেনি কারণ সে খুবই নরম মনের অধিকারী। আমরা শিগগিরই ডোরা এবং কেভিনের তৈরি কোম্পানি পেতে যাচ্ছি। তারা সব সময়ই বিনিয়োগে মার খেয়েছে এবং তারপরও তারা টিকে আছে।

তাই তোমাকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে, ডিরি বলল। তাদের অনেক কিছু কোম্পানিতে জমা আছে।

বানজ হাসল। হ্যাঁ, কিন্তু এলি তার জন্য আমাকে ত্যাগ করে নিজেই পাঁচ বছর নিয়ন্ত্রণ করেছিল। তাই তুমি মূল ঠিক করতে পতিত হতে যাচ্ছ তুমি অবশ্যই তাদের প্রকল্পে ভালোকিছু করতে ব্যর্থ হবে। আমি মনে করি এক বছর কিংবা দুই বছর পর তারা তোমাকে ঝামেলা বা দোষী মনে করে ত্যাগ করবে। আর এটাই হলো এলির কৌশল, আমি সব সময়ই তার জন্য দোয়া করি।

আমি মনে করি তুমি ছবি নিয়ে এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছ, ডিরি বলল। এটা তাদের দ্বিতীয় যাত্রা সূচনাস্থল। তারা এটাকে অবশ্যই দিনের পর দিন বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

আমি চেষ্টা করব বানজ বলল। অন্য ব্যাপার, রাত্রি শেষ হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, এলি আর্নেস্ট ভেইলকে কিছু টাকা দিতে রাজি হয়েছিল, ছবিটিতে কাজ করার জন্য।

না বানজ বলল, এলি এবং আমি আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যাপারটা আলোচনা করেছিলাম এবং তারা বলেছিল মলির চুক্তিপত্র কোর্টে অবশ্যই মার খাবে। আমি সামান্য টাকাকে কিছু মনে না করলেও, মোটা অংকের টাকাকে মূল্যায়ন করেছিলাম। কারণ ঐ টাকা আমাদের রক্ত শোষণ করেছিল।

তাতে মলি উত্তর দিয়েছে? ডিরি জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ তা ছিল আইনজীবীদের অনর্থক পত্র। বানজ বলল। আমি তাকে উপগত হইত বলেছিলাম।

বানজ তার মনঃসমীক্ষণবিদকে বলল, আমার স্ত্রী আমাকে এক বছর ধরে চাপ দিচ্ছি চিকিৎসা করার জন্য, যাতে আমি আরো মনোরম হতে পারি।

বানজ আরো বলল, আমি শুধু আমাদের চারজন পিএম নিয়োগের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ, আগামী সপ্তাহে চিত্রনাট্যের ব্যাপারে কথা বলব। সে ফোনটি রাখল এবং ডিরিকে একটি মৃদু হাসি দিল।

ডিরি জানত যে বানজ স্টুডিওতে বেভারলিতে ফ্যালেন ফান্টের সঙ্গে পরস্পর মিলিত হলো। তারপর ডিরি চিত্রনাট্য পড়ে বুঝল, এই চিত্রনাট্য দিয়ে কম বাজেটের ছবি তৈরি করা যাবে। বানজ ভেবেছিল যদিও এতে শিষ্ট ভাষার প্রয়োগ নেই। ডিরি তারপরও এটা দিয়ে ছবি বানাবে এবং বানজ এটাও বিশ্বাস করল যে, ডিরি শুধু তার পক্ষে কাজ করিতেছে।

তারপর বানজ এবং ডিরি, ফ্যালেনের সঙ্গে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য সময় ব্যয় করছে। তা সম্পর্কে খোশগল্প করল। তারা উভয়েই সম্মত হলো এটা একটা শিশু সুলভ কাহিনী। যা হয়তো অনেক মানুষই পছন্দ করবে। তারা আরো সম্মত হলো ফ্যালেনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আছে যা খুবই আনন্দায়ক কারণ সে খুবই মজা করতে পারে। তাছাড়া তাদের প্রতি তার দাবিও আছে। অবশ্য এটা তার একটা অপূরণীয় দাবি। কিন্তু সে এতটাই বুদ্ধিমতী যে, সময়মতো সে ঠিক তার সুযোগ করে নেবে।

বানজ বলল, তার বিষয়টা নিয়ে আমি একটু হলেও উদ্বিগ্ন যে আধা তারকা নিয়ে সে তার ছবি নির্মাণ করেছে। যা আমার কাছে খুবই মজার বলে মনে হয়েছে।

হ্যাঁ ডিরি বলল, তাতে তার বুদ্ধিমত্তার পথ উন্মোচন হয়েছে। কিন্তু কোনো রসাতলে পড়ে সে আমাদের অনেক টাকা ব্যবহার করেছে।

তাদের মধ্যে দুটো ইতিমধ্যে মুক্তি পাওয়ার সময় হয়েছে। ম্যাসিলিনায় দুই মাসের মধ্যেই শেষ হয়েছে এবং তা আগামী ক্রিসমাসে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এই দুটো লডস্টোনে ছবিতে ভিডিওসহ মোটা অংকের টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাজ ছবি দুটিতে বিশ মিলিয়ন ডলার লাভ করে, আর ডিরি আশা করে পাঁচ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ববি বানজ লাভ ব্যাপারে তেমন কিছু আশা করল না। তবে সে ভাবল ছবিটি ভালো ব্যবসা করতে পারে।

ডিরি সরাসরি বলল, তবে আমরা আশা করতে পারি ম্যাসিলিনা থেকে আমরা কমপক্ষে পনের মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারব।

আমরা আশা করি লভ্যাংশসহ তার টাকা ফেরত দিতে পারব। এটিও জানি যদি আমরা তা না পারি তাহলে অবশ্যই সে কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছবে।

কারণ অনুমান করা যায়, সে একজন মাফিয়া চক্রের সদস্য।

আমি ক্রসকে চিনি, ডিরি বলল। সে কোনো কঠিন ব্যক্তি না। তার বোন ক্লডিয়া আমাকে বলেছিল, যদিও সে সত্যিকারে খুবই ভয়ংকর। আমি বিশেষ করে মলি ফ্লান্ডারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ঠিক আছে, ববি বলল, আমি সত্যিকারভাবে ভালো দিন অতিবাহিত করছি। আমরা ভেলের জন্য বিশ মিলিয়ন এবং ডি লিনার জন্য দশ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করতে পারব। আর এটাই আমাদের লভ্যাংশে আমরা হব স্বাবলম্বী।

হ্যাঁ ডিরি বলল, সে ঘড়ির দিকে তাকাল, এটা চারটার সময় বন্ধ হবে। তোমার কি ফ্যালেনের পথকে অনুসরণ করা উচিত না?

ঠিক সেই মুহূর্তেই ববি বানজ অফিসে পদার্পণ করল, দেখল মলি ফ্লান্ডার দাঁড়িয়ে আছে। সে টাওজার জ্যাকেট এবং ক্লিন ব্লাউজ পরে যুদ্ধাহত সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। তার সৌন্দর্যময় চেহারা হতে গ্লানী হয়ে আসতেছিল তার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল এবং তাকে মোটেও সুন্দর লাগছিল না। তার কণ্ঠে হতে করুণার বানী বের আসছিল।

তোমরা দুজনই অতি আস্থাবান। সে বলল, আর্নেস্ট ভেইল মারা গেছে। তাতে আমি জীবন যন্ত্রণা থেকে অনেকটুকু সাশ্রয় পেয়েছি। এখন আমি তোমাদের ভালোভাবেই ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করতে পারব।

আর্নেস্ট ভেইল ভালোভাবেই জানত তার বড় সমস্যা কোথায়, তাই সে আত্মহত্যার মতো পথকে বেছে নিতে পিছপা হয় না। আসলে সে মরতে চায়নি, পৃথিবীর কেউই সহজেই মরতে চায় না। কিন্তু অনেক সময় বিভ্রান্তের পথে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে, তখন সে কিছুই বুঝতে পারে না। তার কি করা উচিত আরো কি উচিত না। আর্নেস্টের বেলায়ও তাই দেখা দিয়েছিল। তাই তাকে হঠাৎ মারা যেতে হল।

আর্নেস্টের গর্ব ছিল তার কথামতো কাজ করলে লডস্টোন স্টুডিও ছাড়া। প্রত্যেকেই উপকৃত হবে।

এটা ছিল তার নিজস্ব মনের ভ্রান্ত ধারণা। সে তার দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনের সূত্র মতে এমনটা প্রকাশ করেছিল। ব্যক্তিগত জীবনে সে নিজেই তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। সাগরে সাঁতার কাটা যেমন কঠিন, চলন্ত বাসে চড়া যেমন কঠিন তার চেয়ে কঠিন চলচ্চিত্র করা, তা আর্নেস্ট ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে বুঝেছিল। দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় না। হয়তো ঘুমের বড়ি খেয়ে আঘাতকে নিবারণ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করা যায়। কিন্তু তাতে প্রকৃত পক্ষে কষ্ট জীবন থেকে দূরে সরে যায় না।

আসলে সাফল্য আর ব্যর্থতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কিন্তু আর্নেস্ট তা মেনে নিতে পেরেছিল না।

আর্নেস্ট সাফল্য পাওয়ার জন্য বারবার তার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছিল, কিন্তু সুখী হতে পারছিল না। তাই সে বারবার তার ধারণা থেকে শেষ পর্যন্ত নিজকে আলাদা করতে চেয়েছিল। কিন্তু হয়তো পারেনি তাই তাকে শেষ পর্যন্ত কাপুরুষের মতো মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল।

সে তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে জীবনযাপন শুরু করেছিল। যাকে তার মনের মাধুরী মিশিয়ে ভালোবেসেছিল। সে ভালোবাসাকে সংসার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার ব্যবসায়িক ব্যর্থতাই তার জীবনের সবকিছুর বাধা হয়ে দাঁড়াল।

মলি ফ্লান্ডার, যেই মাত্র তুমি আমার আইনজীবীর নোট পাবে, সেই মাত্র তুমি তার কাছ থেকে একটি ভালো সংবাদ পাইবে। আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমার ছেলে-মেয়ে বছরের পর বছর ধরে ভালোভাবে আছে যা তুমি আমাকে দিয়েছ।

আমি, ভাবতে চাই না, আমি তোমার জন্য যা কিছু করিয়াছি কারণ আমার চেয়ে তুমি আমার জন্য অনেক ভালো কিছু করেছ, দয়া করে আমার এ বিষয়টা না ভাবলে খুশি হব। যা আমার আইনজীবী তোমার কাছে নিঃশব্দে ব্যাখ্যা করবে। আমার ছেলেমেয়েদের বল, আমি তাদেরকে অনেক ভালোবাসি।

আর্নেস্ট তার অনুভূতি এভাবেই প্রকাশ করেছিল। তার কথাগুলো ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। কথাগুলো ছিল খুবই ঠাণ্ডা কিন্তু গতিশীল। তাই অনেকেই তার বিরুদ্ধে কিছু বলার অভিপ্রায় প্রকাশ করল না। সবাই তার এমন কার্যকলাপে নিজেদেরই কিছুটা হলেও দায়ী করল। সবাই ব্যাপারটাকে একটি ব্যর্থতার গ্লানি হিসেবে মেনে নিল। আর এটাই ছিল তার ববি বানজকে লিখা শেষ নোট। যা ছিল খুব সাধারণ এবং সাদামাটা।

তারপর একটি নোটে মলি ফ্লাভার কিছু লিখেছিল। বাস্টার্ডকে যেতে দাও যা তোমাকে আরও কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

ক্রস ডি লিনার কাছে সে লিখেছিল, পরিশেষে আমি ভালো কিছু করেছি, তোমার সাহায্যের জন্য আমি সব সময়ই তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম, আজও জানাচ্ছি।

পরিশেষে তার লিখা নোট ছিল ক্লডিয়ার কাছে। তুমি আমাকে আমার জীবনে সবচেয়ে সুখী সময়টা উপহার দিয়েছিলে এবং আমি আমার জীবনে সবকিছুই ভুল করে আরম্ভ করেছিলাম। আর তুমি তা আমাকে শোধরিয়ে দিয়েছিলে। তোমার একজন সহকারী থাকলে কোনো কিছু ভুল করতে পারবে না। যা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে তোমার সঙ্গে থেকে বুঝেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো। আমি তোমার ভালোবাসায় সবকিছুই করতে পেরেছিলাম তা আজও স্বীকার করি।

তার নোটটি হলুদ পাতায় লিখা ছিল, যা ক্লডিয়াকে আরো বেশি মর্মাহত করল।

কিন্তু নোটগুলো তার প্রবৃত্তিকে একত্রে কোণঠাসা করে ফেলল। পরিশেষে সে ভাবল, মৃত্যুই আমার একমাত্র পথ যা আমাকে সবকিছু থেকে বিরত রাখতে পারবে।

ক্যাথনেথ কেলডন হলিউডের সবচেয়ে বড় দন্তবিদ। সেই সময়ে একজন বিখ্যাত তারকার মতোই তার নামডাক ছিল। সে তার পেশায় ছিল খুবই দক্ষ। তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই সুন্দর এবং গোছালো।

সে খুব সুন্দর পোশাক পরত, তার আচার-আচরণ ছিল খুবই ভালো। তার দন্তের অফিস ছিল খুবই জাক-জমকপূর্ণ এবং আমেরিকা, ইংল্যান্ডে প্রকাশিত একশতর বেশি ম্যাগাজিন তার অফিসে ছিল। তাছাড়া আরও অনেক জার্মান, ইতালিয়ান, ফ্রান্স, এমনকি রাশিয়ার অনেক ম্যাগাজিন তার অফিসের ঘোট র‍্যাকে সাজানো থাকত।

অপেক্ষমাণ কক্ষের ওয়ালে অনেক মজার ছবি আঁকানো, যখন তুমি মূল রুমে প্রবেশ করবে, সেখানে দরজার মধ্যে ছবিসহ হলিউডের বিখ্যাত ব্যক্তির নাম খোদায় করা আছে। এমন কি তার বিশেষ রোগীদেরও সে সর্বদাই রসিকতার সঙ্গে আকাশ-কুসুম কল্পনায় ব্যস্ত রাখত এবং তার ছিল ভালোবাস, মেয়েলী স্বভাব যা ছিল অদ্ভুত বিভ্রান্তিকর।

সে মেয়েদের ভালোবাসত কিন্তু কোনো সময় কোন মেয়ের সঙ্গে কোনোকিছু বোঝাঁপড়া পর্যন্ত পৌঁছাত না, সে যৌনতাকে রাতের ভালো খাবার, মদ, সুন্দর সঙ্গীতের চাইতে বেশি মূল্যায়ন করত না।

কেবল দন্ত বিষয়কেই ক্যাথনেথ কেলডন বেশি বিশ্বাস করত। সে একজন শিল্পী যে সবকিছুই কৌশলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করত। সে তার সহকারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত না। সে পড়া দাঁতকেও কৃত্রিমতার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে লাগাতে পারত। সে দন্ত বিষয়ক সভায় বক্তৃতা রাখত। তাছাড়া দন্ত বিষয়ক যে কোনো অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ থাকত সবার আগে।

ক্যাথনেথ কেলডনের কোনো রোগীই পানি খাওয়ার আগে শিরশির অনুভব করত না। কোনো রোগী তার চেয়ারে বসে অসুবিধা অনুভব করত না। সে রোগী দেখার সময় কৃত্রিম পদ্ধতিতে মিষ্টি বাতাস এবং ভালো ওষুধ ব্যবহার করত। রাবারের তৈরি মুখোশের মধ্য দিয়ে সে রোগীকে অক্সিজেন ও অক্সাইড ব্যবহার করত, যাতে রোগী তার নাড়িতে কোনো প্রকার ব্যথা অনুভব না করে। সে চাইত যেন রোগী আনন্দের মধ্য দিয়ে তার রোগ থেকে মুক্ত হতে পারে।

বিশ বছর আগে ক্যাথনেথ ও আর্নেস্ট হলিউড পরিদর্শন করতে গেলে ক্যাথনেথ তার বন্ধু হয়ে যায়। আর্নেস্ট তার এক প্রযোজকের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে গেলে দাঁতে ব্যথা অনুভব করে। আগেই প্রযোজকের সঙ্গে ক্যাথনেথের পরিচয় ছিল। প্রযোজক মধ্য রাতে ক্যাথনেথকে ফোন করে তার অফিসে আসার জন্য।

ক্যাথনেথ ফোন পাওয়া মাত্র গাড়ি নিয়ে প্রযোজকের অফিসের দিকে রওনা দেয়। তার পর আর্নেস্টের ইনফেটেড দাঁতের চিকিৎসা করে। কেথনেথ সেদিন আর ফিরতে পারে না। তাই সে পরের দিন তার অফিসে ফিরে। আর্নেস্ট, তার মতো একজন বিখ্যাত দন্তবিদের মধ্যরাতে চিকিৎসা করতে আসতে রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। এভাবেই আর্নেস্টের সঙ্গে হৃদতা তৈরি হয়ে যায়। এর মধ্যেই কালডন আর্নেস্টের লেখা অনেক বই পড়ে শেষে করে এবং আর্নেস্টের কাজকে সে খুব ভালোবেসে ফেলে।

পরের দিন যখন আর্নেস্ট ক্যাথনেথের অফিসে যায়, সে বড় মহত্বের পরিচয় দেয়। ক্যাথনেথ তার সমস্ত কাজ বন্ধ করে তাকে সময় দেয় এবং বলে, আমি আপনার বইয়ের একজন ভক্ত, তাছাড়া আমি আপনার বই পড়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি। এখন বলুন আপনার আর কি সমস্যা আছে, যা আমার দ্বারা করা সম্ভব। তারপর দাঁতের যত্ন বিষয়ে সে দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা দেন। আর্নেস্ট বেশ কিছু দাঁত অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিল। কালডন তার দাঁত মুখে লাগানোর সমস্ত ব্যবস্থা করেন।

আর্নেস্ট বলল, আমি আপনার ব্যাপারে চিন্তিত। না ক্যাথনেথ বলল, আমি আমার কাজ প্রশংসা পাওয়ার জন্য করি না। আমাকে আপনি বলুন আপনার আর কোনো সমস্যা আছে কিনা।

আর্নেস্ট হাসল, এটি সত্য যে আপনি কোনো ঔপন্যাসিক নন। সে বলল, সব ঠিক আছে।

তারা একে-অপরের বন্ধু হয়ে গেল। ভেইল রাতের খাবার খাওয়ার পরে কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসে যাওয়ার সময় প্রায় তাকে ফোন করত, শুধু মুক্ত আবহাওয়া সতেজ হওয়ার জন্য। ক্যাথনেথ আর্নেস্টের বই পড়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিল। সে জানত সাহিত্য মানুষের মনের খোরাক, আর আর্নেস্টের বই। সে ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী এবং বোধগম্যভিত্তিক।

আর্নেস্ট মিষ্টি বাতাস ভালোবাসত। সে প্রায়ই বিভিন্ন রাজ্য ঘুরতে বের হত। কয়েক বছরের মধ্যে তার এবং ক্যাথনেথের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ক্যাথনেথ আর্নেস্টের জন্য এক জোড়া স্টিলের দাঁতের ব্যবস্থা করলেন তাতে আর্নেস্ট আরো বেশি খুশি হলেন, এতে তাদের আরও হৃদতা বাড়ল। তারা উভয়েই মনে করল তাদের বন্ধুত্ব মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকবে। কিন্তু আর্নেস্ট ক্যাথনেথকে একজন উপন্যাসের ভক্ত হিসেবে বেশি পছন্দ করতেন। আর্নেস্ট বিশ্বাস করতেন প্রতিটি মানবজাতিরই একটি বিশেষ গুণ আছে। হয়তো অনেকই সময়-সুযোগের অভাবে তার প্রয়োগ দেখাতে পারে না। ক্যাথনেথ তার উপন্যাস পড়ে মন্তব্য করে, এটা যৌন আবেদনময়ী তবে নিম্নস্তর বিশিষ্ট অশ্লীল নয়।

তারা চিকিসার আগে কিছুক্ষণ খোশগল্প করত। অনেক সময় মুক্ত বাতাস পাওয়ার জন্য দুজনেই বাহিরে বের হতো। ক্যাথনেথ তার জীবনের প্রথম মেয়ে বন্ধুর কথা বলতে গিয়ে বলল, সে ছিল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়, যার ছিল নিচু স্তরের গভীর মৌন আকর্ষণ। আর এ কারণেই তার সঙ্গে আমার দূরত্বটা সৃষ্টি হয়। কারণ আমি কখনোই যৌনতা বেশি পছন্দ করতাম না।

আর্নেস্ট বলল, যৌন আকর্ষণ হলো মুক্ত বাতাস সেবা করার মতো। পৃথিবীর এমন ব্যক্তি খুঁজে কমই পাওয়া যাবে যার যৌন বিষয়ে আকর্ষণ নেই, শুধু ভিন্ন তুমি। আসলে যৌনতা হলো সম্পূর্ণ একজন ব্যক্তির মনের ব্যাপার। শরীরটা অনেক পরে। ক্লান্তি দূর করে আরেকটি কাজে মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে যৌনতার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে এমন জিনিস পৃথিবীতে বিরল। আসলে তোমার মনের সমস্যা কালডন। তুমি একজন বিখ্যাত ডাক্তার হলেও, তোমার এ বিষয়ে জ্ঞান খুবই সীমিত। তাই আমি ভাবছি তোমাকে খুবই শীঘ্রই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাব, এতে তোমার আপত্তি থাকলে বলতে পারো।

প্রথমত, আর্নেস্টের কাছে বিষয়টা কৌতুকের মতো মনে হলো। তারপর দেখল, আসলে ব্যাপারটা ক্যাথনেথের ক্ষেত্রে খুবই সাংঘাতিক। ক্যাথনেথ বলল, আসলে আমি এ ব্যাপারগুলো কখনোই তোমার মতো ভেবে দেখিনি। আমি আমার পেশায় সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ পাই। মূলত আমি আমার পেশার। বাইরে বই পড়া ছাড়া অন্য কোনো বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখি না।

আর্নেস্ট বলল, আসলে ক্যাথনেথ এমনই একজন লোক যার ভালোবাসা কিংবা যৌনতার ওপর তার কোন আকর্ষণ নেই। রোগীর দাঁতের ব্যথা দক্ষতার সঙ্গে নিবারণ করাটাই তার কাছে সবচেয়ে আনন্দের। একজন রোগীর সেবা করার মধ্যে সে যে আনন্দ পায়, তা কখনোই সে অন্য কিছুর মধ্যে খুঁজে পাইনি। আর এখানেই ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে আমার পার্থক্য যতটুকু।

তারা ঐ রাতে একসঙ্গে রাতের খাবার খেল এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে বুঝতে পারল, আর্নেস্ট নাইট্রাসের চেয়ে যৌনতাকে বেশি পছন্দ করে।

ক্যাথনেথ বলল, কিন্তু নাইট্রাস পছন্দ করো, এর সঙ্গে ত্রিশ শতাংশ অক্সিজেন মিশ্রিত আছে। তার পর সে আর্নেস্টকে বলল, আমি সত্যিই মিষ্টি বাতাস পছন্দ করি, আমি তোমাকে বলতে পারি, আমি সত্তর শতাংশ এলকোহল দেব যাতে তুমি খুব ভালোভাবেই তোমার ইন্দ্রিয় সম্পূর্ণভাবে লোপ পাবে।

আর্নেস্ট জিজ্ঞেস করল, এটা কি বিপজ্জনক?

মোটেই না ক্যাথনেথ বলল, যদি না তুমি মুখে মুখোশ ব্যবহার করো, সেক্ষেত্রে অন্য কথা অবশ্যই খাঁটি নাইট্রাস পনের থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে তোমাকে মেরে ফেলতে পারবে। বস্তুত আজ মধ্য রাতে আমার অফিসে একটি পার্টির আয়োজন আছে। সেখানে অনেক মানুষ থাকবে, তুমি ইচ্ছে করলে সুন্দর মানুষ খুঁজে বের করতে পারো। তারা সবাই আমার রোগী। সুতরাং আমি তাদের সবাইকে চিনি, সবাই স্বাস্থ্যবান, তারা সবাই নাইট্রাস গ্রহণ করে। তুমি ইচ্ছে করলে যৌনতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

আর্নেস্ট হাসল। আমি তোমার কৌশল বুঝতে পেরেছি মি, কেলডন।

কেলডন রসিকতার সঙ্গে বলল, কেন তুমি আগামী রাতে আমার অফিসে আসবে না। সত্যই খুব মজা হবে সে আর্নেস্টের দিকে তাকিয়ে বলল, নাইট্রাস কোকেন নয়। নাইট্রাস মানুষের সামান্য সময়ের জন্য ইন্দ্রিয়কে বিলাপ করে। নাইট্রাস মেয়েদের আরো বেশি যৌনতার দিকে আকৃষ্ট করে। অবশ্যই তুমি আসবে ঐ পার্টিতে, কিন্তু তুমি কোনো বিশেষ লক্ষ্য অর্জন করতে আসবে না।

আর্নেস্ট বিদ্বেষপূর্ণভাবে ভাবল, কুকুর কি সেখানে প্রবেশের অনুমতি পাবে! এখানে কি অন্য কোনো বিষয় আলাপ করা যাবে? আমাকে ক্ষমা করবেন, এটা শুধু উপন্যাস গবেষণা করার জন্য আয়োজন। সে অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার মজা করল না এবং এমনকি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও তার ভিন্ন। ভাবনার বিষয়। এটা সত্য যে, নাইট্রাস অক্সাইড আমাকে যৌনতার চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে, তার পরও ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত আমার কাছে গৌণ।

আসলে নাইট্রাস আমাদের বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দান করে। ক্যাথনেথ নিজে কখনোই অংশগ্রহণ করত না। সে সব সময়ই তার অফিস নিমন্ত্রণ করতে ব্যস্ত থাকে।

কিন্তু এক বছর পর আর্নেস্ট বুঝল কিভাবে নিজে নিজেই খুন হওয়া যায়। এটা হবে ব্যথাবিহীন দন্ত চিকিৎসার মতো। তাতে আমি কষ্টে ভুগব না। তাতে আমার কোনো ভয় থাকবে না। তাতে আমি সুখের মধ্য দিয়ে মরতে পারব। আমার মধ্যে কোনো ঝুট-ঝামেলা কাজ করবে না। সে কাথনেথকে দিয়ে তার শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। যখন ক্যাথনেথ তার এক্সরে প্রতিবেদন দেখল, আর্নেস্ট তাকে বলল, আমি শুধু মুক্ত বাতাস সেবন করেছিলাম এবং দাঁতের ব্যথা নিবারণ করার জন্য মাঝে মাঝে নাইট্রাস সেবন করতাম। আমি চেয়েছিলাম যাতে করে আমার সব ব্যথা দূর হয়। আমার ধারণা ছিল কখনোই আমার জীবন বিপজ্জনক হয়ে আসবে না। আর্নেস্ট জিজ্ঞেস করল। তুমি আমাকে এমন কি পান করালে, যার জন্য আমার সব কিছু অস্থির হয়ে পড়ল? তুমিই আমাকে খুন করলে।

না, এটা তোমার মধ্যে আপনা আপনি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, যাতে তুমি ত্রিশ শতাংশ অক্সিজেন পেয়েছিলে, ক্যাথনেথ ব্যাখ্যা করল।

আর্নেস্ট কিছুক্ষণ ইতস্তত করল এবং চেষ্টা করল তা মেনে নেওয়ার। তুমি জানো আমি আগেও কোনো পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং আনন্দ উপভোগ করেছিলাম বেশ। আমাকে একটু সাহায্য করো তুমি, তোমার অফিসের চাবিটা আমাকে দিতে পারো, যাতে আমি আজ রাতটা সেখানে কাটাতে পারি, নাইট্রাস কেবল আমার মনের ভারসাম্য রক্ষা করেছে।

ক্যাথনেথ এক্সরে প্রতিবেদন ভালোভাবে দেখল। তোমার মুখের অবস্থা খুবই করুণ, সে বলল, তুমি সত্যিই একজন ভালো দন্তবিদ।

ঘটনা কি? আর্নেস্ট বলল।

সত্যিকারের একজন সুন্দরী গায়িকা? ক্যাথনেথ জিজ্ঞেস করল। আমাকে বলল রাতে যা কিছু হয়েছে, আমার সময় নেই, আমাকে অফিসের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

না, না আর্নেস্ট বলল, আসলে সে একটা সোজা-সরল মেয়ে।

সে কখনোই নাইট্রাস সেবন করতে চায়নি। তারপর সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল, সে সত্যিই পুরাতন যুগের মনোভাবপূর্ণ মেয়ে।

আরে তা না, ক্যাথনেথ বলল এবং আর্নেস্টের চোখের দিকে সরাসরি তাকাল। তারপর সে বলল, আমি কিছু সময় থাকব এবং তারপর চিকিৎসা রুমে চলে যাব।

যখন সে ফিরেছিল, তার হাতে একটি চাবি ছিল, এটা নাও, হার্ডওয়ার রুমটি খুলো এবং তুমি এটার দ্বিতীয়টা পেয়ে যাবে। ক্যাথনেথ বলল, নিশ্চিত হও তুমি যাকে চেনো, সে কি-না? তারপর ফিরে আসো এবং আমার চাবিটা দাও।

আর্নেস্ট অবাক হয়ে গেল, আমি তেমন কিছু মনে করছি না।

ক্যাথনেথ এক্সরে প্রতিবেদনটি হাতে নিল এবং আর্নেস্টের দিকে ঘুরে তাকাল। এই অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আর্নেস্ট তাকে চিনে ফেলল। তার উজ্জ্বল চেহারা মলিন হয়ে গেল।

যখন কোপস তোমাকে খোঁজে, ক্যাথনেথ বলল, আমি কোনো ক্ষেত্রেই তোমাকে বিজড়িত করতে চাই না। আমি কখনোই আমার পেশাকে বিপদগ্রস্ত করতে চাই না। কোপস তাদের খুঁজবে এবং পরাস্ত করার চেষ্টা করবে। আর আমি মনে করি তুমি তা নোট করবে।

ক্যাথনেথ তার দিকে তাকিয়ে ছিল এবং মৃদু হাসি দিচ্ছিল যাতে তার দুঃখ দূর হয়। আর্নেস্ট ক্যাথনেথ এর কাছ থেকে চাবিটা নিল, তারপর সে এক অনুভূতিপ্রবণ হলো, সে ক্যাথনেথকে মৃদু আঘাত দিল। তবে বুঝতে পেরেছ সে বলল, আমি এখন পুরোপুরিভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

নিশ্চিত আমি করব, ক্যাথনেথ বলল, আমি প্রায় আমার নিজ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছি, আমার বৃদ্ধ বয়সের জন্য। সে হাসল, এবং বলল, মৃত্যুর কোন প্রতিযোগিতা নেই। তারা উভয়েই হাসল।

তুমি সত্য কি জানো? আর্নেস্ট জিজ্ঞেস করল।

হলিউড সম্পর্কে সবাই জানে ক্যাথনেথ বলল, স্কিপি ডিরি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এবং ঘোষণা দিয়েছিল যে সে পুনরায় ছবি তৈরি করতে যাচ্ছে। সে বলল, আমি চেষ্টা করব ভেইল যেন আত্মহত্যা না করে এবং তুমি ভেব না আমি পাগল? আর্নেস্ট বলল, টাকার জন্য এটাও করো আমি তা ব্যয় করতে পারি…

কেন না? ক্যাথনেথ বলল, এটা তোমার ভালোবাসার জন্য কিন্তু বিষয়টা অতটা কঠিন না। তুমি সত্তর শতাংশ তার সঙ্গে এলকোহল মিশ্রণ করতে পারতে। তারপরেও তুমি তোমার মনমতো খেতে পারতে সেক্ষেত্রে আমার তেমন কিছুই বলার থাকত না। যাতে আমি নিজেও করতে পারতাম। তাছাড়া তুমি শুধু খাঁটি অক্সাইড সেবন করলে, কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারতে।

তারপরও সে হাসল, আমার সমস্ত কাজ ছিল তোমার দাঁত নিয়ে। আহ কি লজ্জা!

দুদিন পর শনিবার সকালে, আর্নেস্ট খুব সকাল সকাল তার বেভারলি হোটেল থেকে ঘুম থেকে উঠল। সূর্য কেবল উদিত হচ্ছে। সে সকালের কাজ সেরে সেভ করল এবং আরামদায়ক জিন্স এবং টি-শার্ট পরল, জামার ওপর জ্যাকেট পরিধান করল। তার কক্ষটি জামা-কাপড় এবং খরচের কাগজে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এটা ছিল সর্বত্রই ছড়ানো-ছিটানো।

ক্যাথনেথ অফিস হোটেল থেকে আধা ঘন্টার পথ ছিল। আর্নেস্টের মধ্যে সেদিন স্বাধীনচেতা ভাব ছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসে কেউই হাঁটে না। সে ছিল খুব ক্ষুধার্ত কিন্তু কিছু খেতে ভয় পেল কারণ তার পুরো শরীরে নাইট্রাসের প্রভাব তখন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।

ষোল তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের পনের তলায় তাদের অফিসটি ছিল। সেখানে একজন বেসরকারি নিরাপত্তা প্রহরী ছিল এবং কারো জন্যই কোনো চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল না। আর্নেস্ট চাবি দিয়ে দরজা খুলল এবং ভেতরে প্রবেশ করল। সে পুনরায় দরজাটি তালাবদ্ধ করল এবং চাবিটি তার জ্যাকেটের পকেটে রাখল। কক্ষটি ছিল সম্পূর্ণভাবে নির্জন। অভ্যর্থনা কক্ষটির জানালা দিয়ে রোদ জ্বলজ্বল করছিল এবং তার কমপিউটারটিতে অশুভ ছায়া পড়ছিল।

আর্নেস্ট দরজা খুলল, যাতে কাজের পরিধি দেখা যায়। তাই সে বারান্দা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বিখ্যাত তারকাদের ছবি দেখছিল। সেখানে ছয়টি চিকিৎসা কক্ষ ছিল। প্রতিটি রুমের তিন পাশে বারান্দা ছিল। সর্বশেষে ছিল ডা. ক্যাথনেথের সভা কক্ষ যেখানে তারা অনেক সময় ধরে খোশগল্প করেছিল।

ক্যাথনেথ নিজস্ব কক্ষটি মূল কক্ষের সঙ্গে সংলগ্ন ছিল, সেই কক্ষে ছিল হাইড্রোলিক ডেন্টাল চেয়ার। সেখানে সে উচ্চ বিত্ত শ্রেণীর রোগীদের চিকিৎসা করত।

চেয়ারটি ছিল অতিরিক্ত আরামপ্রদ; তার গদি ছিল খুবই মোটা এবং নরম। মোবাইল টেবিলটি চেয়ারটির পাশে রাখা ছিল এবং তার সঙ্গে মিষ্টি বাতাস সেবন করা মুখোশ ছিল। যার সংযোগ ছিল নাইট্রাস এবং অক্সিজেনের সিলিন্ডারের সঙ্গে এবং এর সঙ্গে দুটো নিয়ন্ত্রণকারী বাটুল ছিল।

তারপর সে চেয়ারে বসল এবং তার মুখে মুখোশ পরল। সে কিছুটা বিশ্রাম নিল। সবকিছুর পর। তার সারা দেহ থেকে সমস্ত ব্যথা দূর হলো। তার মাথা পরিষ্কার হলো। সে সুস্থ অনুভব করল। মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও সে মুক্তি পেল। এমনই মনে হলো তার।

তারপর আবার মাথায় উপন্যাসের লিসার কথা ফিরে এলো। সে জানল মানুষ তাকে ভালোবাসে। আসলে সে এতদিন ভুলের মধ্যে ছিল। সে আত্মহত্যার কথা ভুলে গেল এবং অনুভব করল পৃথিবীটা কত সুন্দর। কেউই এই সুন্দর ভবন থেকে কেন যেতে চাইল না। তার মধ্যে পুনরায় সব সজীবতা ফিরে এলো। সে আবার নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে পার এমনভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলো।

সে এলি ম্যারিয়নের কথা ভাবল, যে তার মর্যাদা অনুসরণ করেছিল, অর্জন করেছিল প্রচুর ক্ষমতা, যে তার জীবনতরীতে তা পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করেছিল। আর্নেস্টের ভালো বই প্রকাশিত হয়েছিল এবং এলিই বইটি প্রকাশ করার জন্য সবার আগে এগিয়ে এসেছিল।

এলি বলল, তুমি একজন ভালো লেখক, তোমার সঙ্গে আমি আছি, থাকব। তুমি তোমার কাজ ভালভাবে করে যাও। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে। তোমার উপন্যাস হলিউডের ছবি পাড়ায় একদিন ঝড় তুলবে, তুমি খুব সম্মান পাবে এটাই আমার চাওয়া, কোনো সমস্যা নেই। আমার মৃত্যুর পর বানজ তোমাকে দেখবে। তাছাড়া বানজ কোনো খারাপ প্রকৃতির লোক নয়। আমি জানি সেও তোমার মতো পরিশ্রমী। আমার অবর্তমানে সে তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করতে পারবে। তবে তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তাছাড়া তোমার উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ছবি করে যদি লভ্যাংশ পাওয়া যায় তাহলে একদিন তোমার প্রতি সবাই আস্থাবান হবে। পরিচালক, তারকা, প্রযোজক প্রত্যেকেই তোমাকে সন্ধান করবে। কখন কোনো কাজ করতে গিয়ে শুধু তার বিপরীতটাই চিন্তা-ভাবনা করো না। কিছুটা সমার্থক চিন্তা-ভাবনাও করবে।

তারপর আর্নেস্টের মন পরিষ্কার হলো এবং মিষ্টি বাতাস সেবন করার জন্য সে কিছুটা উদগ্রীব হলো। কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়ার পর সে ক্যাথনেথের অফিসে গেল এবং চেয়ারে বসল।

তার অনুভূতি ফিরে এলো। সে ক্যাথনেথের চেয়ারে সোজা হয়ে বসল এবং বিভারলি পাহাড়ের উপর সূর্য উদয় দেখতে লাগল। সে মনে মনে রাগান্বিত হলো কারণ বেশ কিছুদিন সে কোনোভাবেই আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না। তাই রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য ঘুমের বড়ি খেল এবং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হল।

এখন আর তার পড়ার প্রতি বেশি ইচ্ছে হয় না, তখন আর সে পড়ে বা লিখেও মজা পায় না। তাই সে ভাবল আর বেশি লেখালেখি করবে না।

প্রতিটি সকালই সে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে। তারপর সেভ করে নাস্তা খায় কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম। কোনো এক সময় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করত এবং তা জুয়া, নারী, মদের পেছনে ব্যয় করত অথবা কাউকে সাহায্য করত। সেই সময় টাকা তার কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না।

গত দুই মাস সে তার ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীর জন্য কোনো টাকা-পয়সা পাঠাতে পারেনি। গত পাঁচ বছরে তার কোনো বইও প্রকাশিত হয়নি ফলে তার ব্যক্তিত্ব দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সে সব সময় তার ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত। সে সরু মসৃণ দাঁত পছন্দ করত। আজ তার সবকিছু দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

একদিন কত বড় লেখক ছিল সে কিন্তু আজ সবই তার ভগ্নদশা। সে পুরোপুরি ক্ষমতাহীন।

সে উঠে আস্তে আস্তে চিকিৎসা রুমে গেল। ক্যাথনেথ তাকে বলল, তাকে অবশ্যই যা করতে হবে। সে দুটো ক্যাবল তুলল যার একটিতে অক্সিজেন এবং অন্যটিতে নাইট্রাস আছে। তার পর সে মাত্র নাইট্রাসের প্লাগটি নিল। সে চেয়ারে বসল। তারপর দেখল তার মধ্যে দশ শতাংশের বেশি অক্সিজেন নেই। তাই তার মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম। তাই সে মুখোশ হাতে নিল এবং মুখে পরিয়ে দিল।

খাঁটি নাইট্রাস তার দেহে প্রবেশ করল এবং এক মুহূর্তের মধ্যে তার সমস্ত ব্যথা দূর হলো। নাইট্রাস তার পুরো মাথায় ছড়িয়ে খুলিতে পৌঁছল। মুক্ত হওয়ার পরে এটাই ছিল বড় আনন্দের। সে বিশ্বাস করেছিল সেখানে ঈশ্বর আছে সেখানে বেহেস্তও আছে।

মলি ফ্লান্ডার, ববি বানজ এবং স্কিপি ডিরি সেভ করল। যতদিন এলি ম্যারিয়ন জীবিত ছিল ততদিন সে সতর্কতার সঙ্গে সব কাজ করত।

আর্নেস্টের নতুন বই শিগগিরই আসছে। আমার সব কিছুই এজন্য বন্ধ করে রেখেছি। সম্পদ এখন পর্যন্ত আর্নেস্টের দখলে আছে। নিশ্চিত আমি ছবি মুক্তির পর আবার পুনরায় তার প্রতি হুইলনামা জারি করব। যদি আমরা জয়লাভ করি তাহলে আমরা অনেক টাকা অর্জন করতে পারব এবং নিশ্চিত আমরা তার বইয়ের অন্য সব চরিত্রকে প্রতিরোধ করতে পারি। এখন আমরা সবকিছুই সেভ করব যা বিগত বছরে কোর্ট পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছিল।

তুমি প্রত্যেক ছবি থেকে দশ শতাংশ হিসেবে পাঁচ মিলিয়ন ডলার পাবে আর এটার জন্য তোমার টাকা জমা রাখার জন্য ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব দরকার।

ডিরি ভীতু এবং বানজ ছিল খুবই সাহসী। ভেইল একজন লেখক, যে কোনো ছবি থেকে মোটা অংকের টাকা সে অন্য দশজন তারকার মতো পায়।

বানজ খুব তাড়াতাড়ি মেলো এবং লডস্টোন স্টুডিওর প্রধানকে ডাকল। তারা সভাকক্ষে ছিল। মেলো সভার প্রযোজক ছিল কারণ সে সমস্ত প্যাকেজ এবং তারকাদের থেকে কমিশন পায়। আর এই কারণেই সে সভার কিছু জরুরি পয়েন্ট তুলে ধরল।

প্রধান আলোচক বলল, আমরা অবস্থানটি পর্যবেক্ষণ করলাম যখন মি. ভেইল তার প্রথম হুমকি স্টুডিওতে দিত।

কালোবাজারি প্রধান কাউনসিলর মৃদুভাবে বলল, আমরা পুরোপুরিভাবে আইন পর্যালোচনা করছি। যা খুবই দুরূহ, কিন্তু আমরা স্টুডিওর প্রতি অধিকার নিয়ে কোর্ট পর্যন্ত যেতে চাচ্ছি না, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই জয়ী হতে চাই। বিশেষ করে ওর উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য কারো হাতে হস্তান্তরযোগ্য নয়।

তার নিশ্চয়তা কি? মলি কাউনসিলরকে জিজ্ঞেস করল, কমপক্ষে পঁচানব্বই শতাংশ নিশ্চিত?

না, কাউনসিলর বলল, আইনের কাছে কিছুই নিশ্চিত নয়, মলি আনন্দিত হয়। সে অবসর নিতে পারত, সে ঐ বোসে জয়লাভ করতে পারত।

সে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল এবং বলল, সবকিছুই বিরক্তিকর, আমি কোর্টে ব্যাপারটা দেখব।

বানজ এবং ডিরি ভয় পেল, তাই তাহারা কিছু বলল না। বানজ তার মনেপ্রাণে ব্যাপারটাকে স্থির করল যে এলি ম্যারিয়ন এখন পর্যন্ত জীবিত।

এটি ছিল মেলো স্টুয়ার্ডের, যে মলির প্রতি স্নেহাশীষ-ভালোবাসা দেখাল। হে সে বলল, আমরা কেবল সভ্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। সে মলিকে চেয়ারে যেতে বাধ্য করল, তার চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। আমরাও ব্যবস্থা করতে পারি। আমি কিছু ব্যবস্থার সূত্র বের করছি।

মলি বানজকে বলল, তুমি কি সবকিছু করতে ঝুঁকি নিতে চাও? তোমার কাউনসিলর কি নিশ্চিত যে তুমি জয়লাভ করতে পারবে? অবশ্যই, সে কেন পারবে না, তুমি কি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা করতে আগ্রহী? তার জন্য তোমার বিশ থেকে চল্লিশ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, তুমি এমন ঝুঁকি নেবে?

তারা দুজনেই ব্যবসা করে। আর্নেস্ট প্রথমে চার মিলিয়ন এবং ছবি মুক্তির পর আট শতাংশ লভ্যাংশ পেত। সে অন্যান্য অংশ থেকে দশ শতাংশ লভ্যাংশ পেত। আর্নেস্টের স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরা ধনী হইবে।

মলি জয়লাভ করল। সে স্মরণ করল সে কিভাবে আর্নেস্টের বাড়িতে আয়োজিত পার্টি থেকে সেগুলো নিয়েছিল। সে ভালোভাবে মদ পান করেছিল এবং একাকিত্ব হয়েছিল আর অন্যদিকে আর্নেস্ট তার সঙ্গে রসিকতার সঙ্গে বাকি রাতটি কাটাতে চেয়েছিল। তাই যখন তারা তার বাড়িতে পৌঁছল নেশা কাটার পর সে তাকে বেড় রুমে নিয়ে গেল। সে যা কিছুই তাকিয়ে দেখছিল। আর্নেস্ট ছিল খুবই খর্বাকৃতি এবং যৌন আবেদনময়ী। সে ছিল প্রকৃতপক্ষে সহজ-সরল মানুষ।

কিন্তু মলি এতটাই সুন্দর মনের মানুষ ছিল যে, সে কঠিন সময়েও নিজেকে সংযত রেখেছিল। তাই সে পুনরায় মদ পান করল এবং বেড়ে গেল। আর্নেস্ট অনেক আনন্দ করল, তারপর তার নিজ বেড়ে নাস্তা করল।

সে মৃদু হাসি দিল, ধন্যবাদ, সে বলল, এবং তোমাকে পুনরায় ধন্যবাদ। এবং বলল, আমি সবকিছুই বুঝতে পেরেছি।

সে পূর্বেকার রাতের কথা স্মরণ করে বলল, কেবল তার নাস্তার জন্যই নয়, তার যৌন আবেদনও আমার কাছে ধরা দিয়েছে। সে সব সময় স্বীকার করত সে কখনোই একজন ভালো মানের অভিনেত্রী ছিল না। কিন্তু দুর্বলতা কি? সে একজন আইনজীবী। এখন আর্নেস্ট ভেইল তার কাছে ভালোবাসার অভিনয় করছে।

ডেটর ডেভিট রেডফেলোডন ফ্লেরিকুজিওর হুইলনামা গ্রহণ করল। যখন সে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিল সে তখন ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে নতুন ব্যাংকের আইন-কানুন, রীতিনীতি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিল।

সে তাড়াতাড়ি সভা থেকে উঠল এবং আমেরিকার উদ্দেশে রওনা হলো।

কমপক্ষে পঁচিশ বছর ইতালিতে সে নির্বাসিত ছিল। ডেভিড রেডফেলো সাফল্য অর্জন করেছিল এবং তার স্বপ্ন পরিবর্তন করতে হয়েছিল। শুরুতে ডন ক্লেরিকুজিও রোমে একটি ব্যাংক কিনতে তাকে সাহায্য করেছিল। সুযোগ পেয়ে সে একটি ওষুধের লাইসেন্স তৈরি করেছিল এবং বেশ কিছু টাকা সুইচ ব্যাংকে জমা করল। সে আরো অনেক ব্যাংক এবং টেলিভিশন চ্যানেল তৈরি করেছিল। কিন্তু এটা করতে ক্লেরিকুজিও’র ইতালিয়ান বন্ধু তাকে সাহায্য করেছিল। তাছাড়া পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ইত্যাদি অর্জন করতে তাকে সেই বন্ধু সাহায্য করেছিল।

কিন্তু ডেভিড রেডফেলো খুব আনন্দিত হয়েছিল, সে নিজে যা করেছে তার জন্য। এটা ছিল চরিত্রের পুরোপুরি পরিবর্তন। সে অর্জন করেছে ইতালিয়ান নাগরিকত্ব, ইতালিয়ান স্ত্রী এবং ইতালিয়ান ছেলেমেয়ে। আর এই সব ক্ষেত্রে ডন ক্লেরিকুজিও’র সাহায্যের হাত ছিল চাওয়ার চাইতে বেশি।

কুওগ ম্যানশনে তার জন্য রাতে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিল, যখন সে পৌঁছল রোজ ম্যারি তখন নিজের কাজ করছিল করণ রেডফেলো সব সময়ই রোমের হোটেলে উত্তেজনাপূর্ণ আনন্দের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ডন ক্লেরিকুজিও ভেতরে প্রবেশ করল। ডন নিজেই বলল, জর্জিও, পেটি এবং ভিনসেন্ট আমার বড় ছেলে, আর ডেন্টি, পিপি এবং ক্রস আমার নিজের লোক।

তাদের ছিল বীরের সম্মান। ডেভিড রেডফেলো ছিল কলেজ জীবনের সবচেয়ে বেশি মদপানকারী। সে ছিল দামি পোশাকের অধিকারী- যার যৌনতা ছিল তুঙ্গে, আর সবকিছু মিলেই সে ছিল সমাজের উঁচু স্তরে। তারা তার জন্য গর্ব করত। তাছাড়া ডন ক্লেরিকুজিও অনুভব করত যে রেডফেলোর মধ্যে অনেক নৈতিক শিক্ষা অর্জন করার মতো বিষয় ছিল।

খুব সকালেই ডন ক্লেরিকুজিও একটা বিষয় নিয়ে খুব সমস্যার মধ্যে কাটাচ্ছিল। সে বিশ্বাস করত যে আইন কোনোভাবেই তার ওষুধের ব্যবসার ক্ষতি করতে পারবে না।

রেডফেলো ১৯৬০ সালে বিশ বছরের একজন কলেজ ছাত্র। যখন সে প্রথম ওষুধের ব্যবসা শুরু করল, লাভের জন্য নয়, যাতে তার বন্ধু তা সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

একটা শৌখিনতার বশবর্তী হয়ে তারা কোকেন, গাঁজা ব্যবসার প্রচেষ্টা চালাল। এক বছরের মধ্যে এটি বেশ প্রসারিত লাভ করল। তারপর সে এবং তার এক কলেজ বন্ধু অংশীদার হয়ে নিজেরাই একটি ছোট পরিকল্পনা করল, যাতে করে তারা মেক্সিকান এং দক্ষিণ আমেরিকার সীমানা থেকে মালপত্র আনতে পারে।

সম্ভবত তারা তা খুব সহজেই চালু করতে পেরেছিল এবং ডেভিড তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল। ছয় জন অংশীদার হয়ে ব্যবসা করে অনেক টাকা উপার্জন করছিল এবং রেডফেলো অত্র এলাকার সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সব সরকারি লোকদের ঘুষের মাধ্যমে আয়ত্তে এনেছিল। এর ফলে শত শত পুলিশ, বিচারক, জেলা এন্টানি তার পেছনে ছায়ার মতো কাজ করত।

সে সব সময় দাবি করত এটা খুবই সাধারণ। তুমি বার্ষিক অফিসিয়ালভাবে বেতন অর্জন করতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে এক বছরের মধ্যে পাঁচ বার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

এভাবেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে লাগল, ইতিমধ্যে রেডফেলোর চার জন পার্টনার খুন হলো। ফলে রেডফেলো ক্লেরিকুজিও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করল তাকে রক্ষা করার জন্য এবং সে তাদেরকে তার ব্যবসার অর্ধেক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা প্রস্তাব করল।

পেটি, ক্লেরিকুজিও ব্রঙ্কসএনক্লেভের একজন প্রধান সৈনিক। সে তার দেহরক্ষী হিসেবে কাজে আরম্ভ করল। তার চুক্তিপত্র ইতালিতে ডনের সঙ্গে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বহাল থাকল। ওষুধ ব্যবসা বেশ বিপজ্জনক।

এখন তারা সবাই একসঙ্গে রাতে খাবার খায়। তারা অনেক বছর ধরে ডনের এই প্রজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছিল। ডেন্টি এবং ক্রস এই প্রথম রেডফেলোর কাছ থেকে গল্পটি শুনল। রেডফেলোর একজন ভালো গল্পকার এবং পেটির সে খুব প্রশংসা করল। আহ! কি যোদ্ধা! সে বলল, যদিও এটা তার জন্য ছিল না, আমি কখনোই সিসিলিতে বসবাস করার জন্য যেতাম না।

সে ডেন্টি এবং ক্রসের দিকে ঘুরল এবং তাদের বলল, সেদিন তোমরা সবাই যিশু তুল্য ছিলে, আমি তোমাদের স্মরণ করি, তোমরা যখন পবিত্র পানি পান করেছিলে। আমি কখনোই স্বপ্ন দেখছিলাম না যে আমরা একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করতে পারব ভালো মানুষের মতো।

ডন ক্লেরিকুজিও কঠোরভাবে বলল, তুমি তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না, তুমি শুধু জর্জিও এবং আমার সঙ্গে ব্যবসা করবে। যদি তোমার সাহায্যের দরকার হয় তুমি শুধু পিপিকে ফোন করবে। আমি ব্যবসাটি করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তোমাকে বিস্তারিত বলেছিলাম, জর্জিও তোমাকে বাকিটা বলবে।

জর্জিও ডেভিডকে সবশেষ আকর্ষণীয় সংবাদটা বলল, এলি ম্যারিয়ন মারা গেছে এবং ববি বানজের স্টুডিওটি হাতছাড়া হয়ে গেছে, যার ফলে ক্রস সবকিছুর মালিক হয়েছে এবং সুদসহ তার টাকা ফেরত পেয়েছে।

রেডফেলো গল্পটা শুনে আনন্দ উপভোগ করল। সে খুব চালাক মানুষ। সে জানে তুমি কোর্টে যাবে না। তাই সে তোমার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এটা তার একটা ভালো ব্যবসা।

ডেন্টি কফি পান করছিল এবং সে বিরাগের সাথে রেডফেলোকে লক্ষ্য করল। রোজ ম্যারি তার পাশে বসেছিল, তার হাতটি তার বাহুতে রাখল।

তুমি ভাবছ এটা মজার? ডেন্টি রেডফেলোকে বলল।

রেডফেলো মুহূর্তের মধ্যে ডেন্টিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করল। তার চেহারা রাশভারি হয়ে গেল। এর একমাত্র কারণ আমি জানি সে বেশি চালক হওয়ার কারণে তার এই ভুল উদাহরণ হয়ে থাকবে।

ডন তার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করল এবং এটা তার মনে গভীরভাবে পতিত হলো। যে ঘটনা ঘটুক না কেন তার পুত্ররা সব সময় আনন্দফুর্তি করে। কিন্তু আজ তারা কেমন যেন মর্মাহত।

তাও আবার বড় পুত্র, সে ডেন্টিকে বলল, কিভাবে তুমি এই সমস্যা সমাধান করতে পারো?

ডেভিড তার সিগারেটে টান দিল এবং গভীরভাবে বলল, স্টুডিওটি ক্রয় করো। একটি সভ্য বা ভালো ব্যবসা করো। স্টুডিও ক্রয় করে আমাদের ব্যাংক ও অন্যান্য কোম্পানির সাথে কাজ করো।

ক্রয় মৃদু হাসল। লডস্টোন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন এবং দামি স্টুডিও। আপনি এর দাম দশ মিলিয়ন হাঁকালেও, তারা আপনার কাছে এটি বিক্রি করবে না। এটা কোনো সাধারণ বিষয় না, এমনকি সম্ভবও না।

পেটি কৌতুকের সুরে বলল, ডেভিড আমার পুরাতন বন্ধু, তুমি দশ মিলিয়ন দিয়ে তোমার বেসবলের আস্তানা পেতে পারো।

পৃথিবীর সব লোক তোমাকে এক সময় চিনবে, আবার কেউ তোমাকে প্রত্যাখ্যান করবে, আবার কেউ তোমাকে সম্মানও করবে।

ক্রস গভীরভাবে ডনের সঙ্গে কথা বলতে ছিল। এলি ম্যারিয়নের বাড়ি এখন পর্যন্ত তার আয়ত্বে আছে যার মূল্য বিশ থেকে ত্রিশ মিলিয়ন ডলার। আমরা তা পুরোপুরি ভাবে আমাদের আয়ত্তে আনতে পারি। দীর্ঘদিন তা আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারি।

না, ডন বলল। তা তোমাকে অনাবৃত করবে, তোমার ক্ষমতা প্রকাশ হবে, এটা কোন বিষয় না যে তুমি তা সুক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারতে। কিন্তু তুমি কমবেশি বিপদেরও সম্মুখীন হতে। এটা খুবই জটিল, ডেভিড তুমি কি করতে পারতে?

তাকে সাগরের সৈকতে সাঁতার কাটতে পাঠাও। ডেন্টি বলল, ডন তার দিকে তাকিয়ে হাসল।

এবং তুমি, ক্রকসিফিজিও? তুমি কিভাবে এই অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাবে? ডন জিজ্ঞেস করল।

আমি কেবল এটা গ্রহণ করেছিলাম, ক্রস বলল। আমি এই শিক্ষা অর্জন করেছিলাম। আমি কেবল আউটপুট পেয়েছিলাম। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল না তাদের সুবিন্যস্ত কর্মসূচি ছিল।

পেটি এবং ভিনসেন্ট? ডন জিজ্ঞেস করল।

কিন্তু তারা উত্তর দিতে ব্যর্থ হলো। তারা জেনেছিল সেই ক্রিয়া অনুষ্ঠানে সে খেলেছিল।

তুমি এটাকে অবজ্ঞার সাথে নিতে পারো না–ডন ক্রসকে বলল, রেডফেলো তাকে ইশারা করল। তুমি বুঝতে পারছ না কত টাকার কাজ হয়েছে। এটা দুধের সরের মতো ক্ষমতাবান, তুমি স্টেক শেয়ার, এমনকি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ছোট আকারের মূলধন পেতে পারো। টাকা কোনো সমস্যা না।

ক্রস বলল, সমস্যা হলো বানজকে খুঁজে বের করা। সে তার যাবতীয় দোষত্রুটিকে স্টুডিওর মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। সে ছিল ম্যারিয়নের পক্ষ পাতিত্ব। সে কখনোই স্টুডিও বিক্রি করতে রাজি ছিল না।

আমি বাইরে যাব এবং তাকে একটি চুমা দেব, পেটি বলল।

ডন তার সিদ্ধান্ত তৈরি করল। সে রেডফেলোকে বলল, পরিকল্পনা করো। এটি পাওয়ার জন্য করো কিন্তু সতর্ক থেকো, পিপি এবং ক্রকসিফিজিও তোমার আদেশ মান্য করবে।

একটা বিষয় জর্জিও রেডফেলোকে বলল, ববি বানর্জ এলি ম্যারিয়নের আদেশ মান্য করে পরবর্তী পাঁচ বছর স্টুডিওর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু ম্যারিয়নের পুত্র এবং মেয়ে বানজের চেয়ে এই কোম্পানিতে বেশি বিনিয়োগ করেছিল। এজন্য বানজ মনে মনে রাগান্বিত হত কিন্তু যদি স্টুডিওটি বিক্রি হয়, তাহলে নতুন মালিক তাকে সর্বোচ্চ টাকা দেবে। তাতে তোমার সমস্যা তুমি দূর করতে পারবে।

ডেভিড রেডফেলো হাসল এবং সিগারেটে হালকা টান দিল, এটা সেই পুরাতন দিনের মতো। ডন ক্লেরিকুজিও তোমার প্রয়োজনে আমি তোমাকে সাহায্য করব। ইতালির বেশ কিছু ব্যাংক জুয়া খেলার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। স্মরণ রেখো, আমরা স্টুডিওটির ন্যায্য দামের চাইতেও বেশি মূল্য দিতে পারব।

উদ্বিগ্ন হই না, ডন বলল। আমার এই সব ব্যাংকে প্রচুর টাকা আছে।

পিপি ডি লিনা সবকিছুই সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল। ঐ সভায় কি ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছিলে তা খোলাখুলি বলো। প্রযোজক, ডন, জর্জিও এবং ডেভিড রেডফেলোর সভায় উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। পিপি এবং ক্রস রেডফেলোকে সাহায্য করার জন্য পৃথকভাবে আদেশ দিয়েছিল। কেন তারা বিষয়টাকে এতদিন গোপন রেখেছিল? তাছাড়া এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেন ডেন্টি, পেটি এবং ভিনসেন্ট ঐ চক্র আনয়ন করেছিল? কোনো কিছুই ডন ক্লেরিকুজিও’র মতো ছিল না, তা সে জানত। কে সর্বদাই তার সমস্ত পরিকল্পনাকে যতটা সম্ভব গোপন রাখত। ভিনসেন্ট এবং রোজ ম্যারি ডনকে সিঁড়ি বেয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। একঘেয়ামির কারণে লিফট চেয়ারের মাধ্যমে উপরে যেতে অসম্মতি জানাল।

সেইমাত্র তারা দৃষ্টির বাইরে চলে গেল, ডেন্টি জর্জিও’র দিকে মাথা ঘুরাল এবং হিংস্রভাবে বলল, কে স্টুডিওর মালিকানা পাবে, যখন আমরা এটা অর্জন করব?

ডেভিড রেডফেলো মৃদু বাধাপ্রাপ্ত হলো। আমি স্টুডিওটির মালিক হব। আমি এটাকে চালু করব। তোমার দাদা অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে। আর এটাই তার দলিল হয়ে থাকবে।

জর্জিও রাজি হলো।

ক্রস হাসতে হাসতে বলল, ডেন্টি আমাদের মধ্যে কেউ স্টুডিওটিকে চালু করতে পারে না। আমরা এতটা নির্দয় নাই।

পিপি তাদের সবকিছুই লক্ষ্য করল। সে বিপদকে কাটিয়ে উঠতে খুবই দক্ষ ছিল। আর এই কারণেই সে অনেক বেঁচে ছিল। আর সম্ভবত এই কারণেই ডন দিন দিন বৃদ্ধার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

পিপি রেডফেলোকে কেনিডি বিমানবন্দরে রেখে এলো, সেখানে তার ব্যক্তিগত জেট বিমানটি অপেক্ষা করছিল। ক্রস এবং পিপি চার্টার্ড জেট বিমান ভেগাসে থাকার সময় ব্যবহার করত। ডন ক্লেরিকুজিও জানা এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জেট বিমানটি ব্যবহার করতে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছিল।

ক্রস তাদের ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলো। গাড়ি চলাকালীন পিপি ক্রসকে বলল, আমি নিউইয়র্কে কিছুদিন সময় কাটাতে যাচ্ছি। আমি বিমান বন্দরে পৌঁছে গাড়িটা রেখে দেব।

ক্রস দেখল তার বাবা খুব উদ্বিগ্ন ছিল। আমি সেখানে ভালো কিছু করতে পারলাম না। সে বলল, তোমার ধারণা ঠিক, পিপি বলল, কিন্তু ডন ছিল পুরোটাই ঠিক। তুমি কাউকে দ্বিতীয়বার বেকুব হতে দিতে পারো না।

যখন তারা কেনিডিতে পৌঁছল ক্রস এবং পিপি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল। তারা খোলা জানালার মধ্য দিয়ে হাত মিলাল। সেই মুহূর্তে পিপি তার ছেলেকে দেখতেছিল এবং তার প্রতি ভীষণ ভালোবাসা প্রদর্শন করল। সে আবার চেষ্টা করল এবং ক্রস তার গাল টেনে বলল, সাবধানে থেকো।

অবশ্যই? ক্রস জিজ্ঞেস করল, তার চোখ এখন তার পিতাকে খুঁজতেছে।

ঠিক আছে পিপি, তাহলে যাই, ক্রস বলল।

ক্রস তার বাবাকে গাড়ি চালাতে দেখল এবং এই প্রথম অনুভব করল তার বাবা তার ব্যাপারে কতটা উদ্বিগ্ন এবং তাকে কতটা ভালোবাসে।

.

১৫.

পিপি ডি লিনা অত্যন্ত হতাশার মধ্যেও বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, ভালোবাসার জন্য, শুধু বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। সত্য যে, সেদিন জানাদু হোটেলে ক্রল তার সঙ্গী হিসেবে ছিল। ক্লেরিকুজিও পরিবারের সদস্য হিসাবে তার অনেক আত্মীয়-স্বজন ছিল। এছাড়াও তার ছিল তিনটি প্রণয়পাত্রী। সে খুব ভালো খেতে পারত। সে গলফ খেলা বেশ উপভোগ করত, নাচতে খুব ভালোবাসত। আর ডনের অনুমতি থাকার জন্যই সে ক্লাবে নাচতে যেতে পারত।

তাই সে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেও দীর্ঘ জীবন আশা করত, এমনকি সে বাচ্চা নেওয়ারও আশা ব্যক্ত করত। কিন্তু কেন? কারণ এমন ধারণা তার মধ্যে বারবার উদিত হচ্ছিল।

হঠাৎ তার মধ্যে পিতা হওয়ার খুব ঔৎসুক্য পুনরায় দেখা দিল। ইহা একটি মেয়ের বড় হওয়ার জন্য ছিল মজার কিছু। সে একজন শিশু হিসেবে ক্লডিয়াকে ভালোবাসত যদিও তারা বেশিক্ষণ কথা বলে। একই সময়ে সে ছিল খুব অগ্রগামী ও ধূর্ত। পৃথিবীর মধ্যে একজন ভালো চলচ্চিত্র লেখক হওয়ার জন্য সে তার পথ তৈরি করেছিল। কেইবা জানে কিছু দিনের মধ্যে তারা তা করতে পারবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে ছিল তার মতো জেদি। সুতরাং সে তাকে সহজেই বুঝতে পেরেছিল এবং সে যে পথ অবলম্বন করে দাঁড়িয়েছিল তার প্রশংসাও সে করেছিল, যা ছিল শুধু তার বিশ্বাস।

ক্রস জুয়াখেলায় হারল, সে চলচ্চিত্র ব্যবসা শুরু করল কিন্তু তাই অন্যদিক দিয়ে তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ছিল। সে জানুদা হোটেলে আসল এবং তার হারানো সবকিছু ফিরে পাওয়ার জন্য ডন তাকে সাহায্য করেছিল। তাই সে পুনরায় নতুন অভিযান গ্রহণ করল। তার ছিল একটা ভালো সন্তান কিন্তু সে তরতাজা এবং সে অবশ্যই ঝুঁকি গ্রহণ করতে পারত, সুতরাং তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ।

বিমানবন্দরে ক্রস অবতরণ করার পর, পিপি বিশাল জনতাকে অতিক্রম করে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রবেশ করল তার উক্লীয় স্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দিন থাকার জন্য। সে ছিল দেখতে অপরূপ মায়াবী, একজন সেক্রেটারি এবং সর্বোপরি সে ছিল একজন ভালো ড্যান্সার।

সত্য যে তার ছিল প্রচুর খাওয়ার অভ্যাস, যার কারণে সে সব সময় পরিহাস পেত। সে টাকা খরচ করতে ভালোবাসত। সে ছিল তারজন্য একজন ব্যয়বহুল স্ত্রী, কিন্তু সে ছিল খুব বয়স্ক। তখন তার বয়স ছিল পঁয়তাল্লিশ বছর এবং খুবই স্বাধীনচেতা একজন বড় মনের স্ত্রী। কিন্তু পিপি তাকে যেভাবে বিয়ে করতে চেয়েছিল সে তেমন চেয়েছিল না।

এটা ছিল তার উপভোগের শেষ সপ্তাহ। যদিও সে সোমবারের অর্ধেক সময় টাইম পত্রিকা পড়ে কাটিয়েছিল। তারা একটা ভালো হোটেলে খেত, নাচার জন্য নাইট ক্লাবে গিয়েছিল এবং তার ছিল ভালো সেক্স করা যায় এমন নির্জন পরিবেশপূর্ণ বাড়ি। কিন্তু পিপি শান্তভাবে তা কিছুটা প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিল।

পিপি শিকাগোতে চলে গেল, তার স্ত্রী ব্রোয়িং সিটিতে সমানভাবে সেক্সে অংশগ্রহণ করল। সে অল্প অল্প পান করত, প্রাণবন্তভাবে সবকিছুতে অংশ করল। সে খুব সুখী ভাগ্যবর্তী বলে নিজেকে মজা করল। কিন্তু সে একটু অলস প্রকৃতির, একটু বেশি নোংরা। পিপি পরিষ্কার বাড়ি পছন্দ করত। পুনরায় সে বৃদ্ধ বয়সে নতুন পরিবার আরম্ভ করল।

শিকাগোতে দুদিন পর পিপি তার তালিকা অতিক্রম করেছিল।

ভেগাসের মধ্যে সবকিছু নিয়েই সে তার সমস্যা সমাধান করেছিল। পিপি জানত, ভেগাস ছাড়া তার বাস করার অন্য কোনো উপায় নেই। কিন্তু ভেগাসে রাতবেলায় জীবনযাপন প্রাণবন্ত ছিল না। বৈদ্যুতিক আলো সমস্ত ভূতকে নির্বাসন করেছিল। শহরটিকে রাতেরবেলায় একটি মরুভূমির মধ্যে উজ্জ্বল হিরার মতো দেখাচ্ছিল। ডুবন্ত উত্তপ্ত সূর্য যেন সমস্ত প্রেতাত্মাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। যাতে নিয়ন আলো থেকে নিজকে মুক্ত মনে হচ্ছিল।

লস অ্যাঞ্জেলেসে তার সব চেয়ে ভালো আকর্ষণ ছিল তার স্ত্রী। পিপিও খুশি হয়েছিল যে তাদের কাছে ভৌগোলিক অবস্থান ছিল খুবই পরিপাটি পূর্ণ।

কোনো কিছুর সম্মুখীন হওয়ার জন্য তাদের কোনো বাধা ছিল না, ছিল না কোনো মানসিক দ্বন্ধ কোনো কিছু পছন্দ করার ক্ষেত্রে। তারা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লালন করেছিল এবং তারা কোনো অস্থায়ী ভালোবাসার প্রতি হস্তক্ষেপ করত না। তদপুরি সে খুব খুশি হয়েছিল এবং ভেবেছিল আর কিভাবে একটি পরিপূর্ণ জীবন গঠন করা যায়।

একটি ভুলের জন্য সে ন্যালিনির মতো মহিলাকে তাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। কারণ ঐ মহিলা তাকে দীর্ঘ এগারো বছর ধরে অনেক সুখ দিয়েছিল। সে ব্যক্তি একটি ভুলের কারণ হিসেবে তার জীবন চরিত্রে অহংকারকে দায়ী করেছিল। ডন সর্বদা বলেছিল, একটি জীবনের জন্য একটি ভুল ছিল ঠিক, তবে এটি তেমন বড় ধরনের ভুল ছিল না।

সে ভেগাসে না থেমে সরাসরি লস অ্যাঞ্জেলেসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে মিক হেলিকে ডাকার জন্য নোটিশ দিয়েছিল যাতে সে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে তাকে অপহরণ করে।

শুধু আমার জন্য প্রস্তুত হও।

সে তাকে বলল।

আমি তোমাকে মিস করছি।

আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা তোমাকে বলব।

.

মিক হেলি বত্রিশ বছরের যুবতী এবং তার ছিল অনেক দয়া, অনেক দানশীলতা, স্নেহশীল ভালোবাসা, সম্ভবত তার কারণ সে ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছিল এবং বড় হয়েছিল। সে ছিল ছোট খুকি।

সে নবীনদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত, জোরে কথা বলত এবং পুরাতন সবকিছু সম্পর্কে কথা বলত, তাছাড়া সে ক্যালিফোর্নিয়ার সুন্দরীদের সঙ্গে মজা করত। সে একজন অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। যা ছিল তার আইডিয়ার বাইরে। সে পুরোপুরিভাবে ইয়েগো কাছ থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। নতুন মোকাবেলার জন্য শারীরিক চর্চা, দৌড় এবং ব্যামাগারে যেত। এর ফলে কোনো মহিলাই জানত না যে তার সত্য অভিযানটি কি? সে ভেগাস হোটেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিল। হ্যাঁ সঙ্গে মিক হেলি, সে ভেগাসে অবস্থান করেছিল। তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে তে একটা এপার্টমেন্ট রাখতে পারত। যখন তারা বিমানে চল্লিশ মিনিট যাত্রা করেছিল লস অ্যাঞ্জেলসে যাওয়ার জন্য, তারা দুই সপ্তাহ ধরে ব্যস্ত ছিল। সে জানাদু হোটেলে একটি উপহারের দোকান কিনেছিল। যদিও সত্যিকার অর্থে বাইরে কাজ করতে হয়। কিন্তু কিছু না বলত।

তার মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। ন্যালিনি গোল্ডিলোকস বই পড়ত এবং তার ছিল তিনটি কর্মচারী, যখন তার ছেলেমেয়েরা ছোট ছিল। সে কেবল গোল্ডিলোকসকেই পছন্দ করত। নিউইয়র্কের মহিলারা কঠিন ছিল, কিন্তু শিকাগোর মহিলারা ছিল খুব নরম প্রকৃতির এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মহিলারা সরল প্রকৃতির এই চিন্তা তাকে শান্তি দিয়েছিলে। অবশ্য একটি সুন্দর জীবনের কিছুই নাই। সামান্য আনন্দ ছাড়া।

যখন সে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিমান থেকে অবতরণ করল, সে ক্যালিফোর্নিয়ার সতেজ বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিল। সে একটি গাড়ি ভাড়া নিল এবং প্রথমে সে রেডিও ড্রাইভ করল। সে ভালোবেসেছিল মহিলার ছোট উপহার যা তাকে অবাক করেছিল। সে গুসিস্টোর থেকে একটি গাইড়িড হাত ঘড়ি কিনেছিল, কিন্তু তার কাছে এটা পরে কুৎসিত বলে মনে হয়েছিল।

একটি হারমেস স্কার্ফ, কিছু সুগন্ধি বোতলে ছিল যা দেখতে ব্যয়বহুল ভাস্কর্যের মতো দেখাচ্ছিল। যখন সে একটি ব্যয়বহুল লিনাগিরি বক্স কিনল, তখন তার সতেজ মনোভাব তৈরি হলো। এতে বিক্রেতা তার দিকে শিশুসুলভ দৃষ্টিতে তাকাল। বালিকাটি তার দিকে পুনরায় আরেক বার তাকাল এবং বলল, ঠিক আছে।

সে গাড়িতে উঠল, তিন হাজার ডলার ভাড়া দিয়ে তার সমস্ত উপহার সামগ্রী যাত্রীর সিটে রাখল। উপহারগুলো বাদামি রঙের ব্যাগে ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর ব্রাউডমার্ট নামক এক জায়গায় থামলেন কারণ ঐ জায়গাটি ছিল তার খুব পছন্দের। সে খাবার খুব ভালোবাসত তাই সে ব্রাউড মার্টের দোকান থেকে কিছু খাবার এবং ঠাণ্ডা পানীয় কিনল। সেই সময় সে খুবই ক্ষুধার্ত ছিল।

মিক হেলি কখনও কোনো খাবার ফ্রিজে রাখত না কারণ সে সর্বদা নিজেকে কন্ট্রোল করত।

এক দোকান থেকে সে দুটো মুরগির রোস্ট, এক ডজন বারবিকিউসড সেপাররিপস এবং চারটি হট ডগস কিনল। অন্য দোকান থেকে সাদা সতেজ রুটি এবং সতেজ ব্রাকেট কিনল। সে দুটো হট ড্রগজ, অর্ধেক মুরগির রোস্ট এবং কিছু ফ্রেন্স ফ্রাই খেল। সে বুঝতে পারল না কোনটা বেশি ভালো।

সে ক্যালিফোর্নিয়ার শেষ বিকেলের সোনালি আভাময় একটি জায়গায় বসল। মিষ্টি মৃদু বাতাস তার চেহারাকে আরও সতেজ করল। সে স্থানটি ত্যাগ করতে চাইল না কিন্তু মিক হেলি তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই তার আরও কিছুক্ষণ থাকার মন থাকলেও মিক হেলির আহ্বান তাকে তাড়া দিল। তাই সে মনের বিরুদ্ধেই যাত্রা করল। যখন সে তার শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়িতে উঠল তখন সে মনে মনে বলল, খাবার হলো মানবজাতির বেঁচে থাকার অংশ বিশেষ, মুক্ত বাগানের মতো… যা জিসাস, পিপি ভেবেছিল।

সে সান্তা মনিকা ত্যাগ করল এবং কিছুক্ষণ পর মিক হেলি কোনডুর সামনে থামল। ছিল দুই তার বিশিষ্ট একটি বাংলো। যখন সে গাড়ি থেকে বের হলো তখন সে তার দুটো ব্যাগ তার বাম হাত দিয়ে বহন করল। তখন তার ডান হাত মুক্ত হলো। জায়গাটি ছিল খুবই সুন্দর, তাই সে সেখানে গাড়ি পার্ক করল না। তখন সে স্পেনিস কায়দায় তার গাড়ি কিছু দূরে পার্ক করল। জায়গাটি সবুজ ঘাসে আবৃত ছিল এবং কিছু ফুল স্থানটিকে আরো সুন্দর করেছিল। আর সূর্যের রক্তিম আভা গাছগুলোকে আরও সৌন্দর্যময় করেছিল।

পিপি মুগ্ধ হয়ে স্থানটির আনাচে-কানাচে হাঁটছিল। মিক হেলির বাড়ি ছিল এর পেছনে, যার একটি সুন্দর বেলকনি, তাছাড়া এক পাশে সুইমিংপুল আছে যার চারপাশে ছিল অনেক বসার বেঞ্চ।

পিপি সেখান থেকে একটু দূরে পথে যাওয়া গাড়ির আওয়াজ শুনছিল। এটা তাকে সচেতন করল। সে সব সময়ই সজাগ থাকত। ঠিক একই সময় একজন লোককে অন্য একটি বেঞ্চ উঠতে দেখল। সে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, তুমি সেখানে কি কর ছিলে?

লোকটি কুশল বিনিময় করার জন্য তার কাছে এলো না। যার কারণে সবকিছু পিপির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। সে বুঝল কি ঘটতে যাচ্ছে। তার মাথা ছিল খুব ভালো যার কারণে সে সবকিছু আগে থেকেই আন্দাজ করতে পারল। সে তার কাছে ছোট বন্দুক দেখল, তার চোখে-মুখে হত্যাকারীর ছায়া পরিলক্ষিত করল। যা সে প্রথমেই তাকে দেখে আন্দাজ করতে পেরেছিল। সে তার শেষ জীবনের পরিণতি দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলো। সে আরো লক্ষ্য করল যে, হত্যাকারীটির জীবন যেন কেমন অগোছাল। তাকে দেখে তার মনে হলো, তার জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই। জীবনভর খারাপ কাজ করার জন্য সে কিছুটা ক্লান্ত।

সে তাকে জানার জন্য বারবার চেষ্টা করল, কিন্তু তার প্রতি কোনো করুণ দেখাল না। সে তার বন্দুক বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে শপিং ব্যাগটি দিতে চাইল। লোকটি তৎক্ষণাৎ তা নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পিপিও তার আহ্বানে সাড়া দিল। লোকটি সর্বদা ছয়টি গুলিসহ বন্দুক, বালিশ এবং কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সব সময় তার নিজের সঙ্গে রাখত। সে লোকটির দিকে কিছুক্ষণ তাকানোর পর বলল, তুমি সান্তাডিওতে কোনো ঘটনা ঘটেছে। তারপর শেষ বুলেটটি তার মাথায় বিদ্ধ হলো। পিপি ডি লিনা পৃথিবী থেকে বিদায় নিল।

১৬. দিনের প্রথম প্রহরে

১৬.

পিপি ডি লিনা দিনের প্রথম প্রহরে মুমূর্ষ হয়ে পড়ল। ক্রস অ্যাথেনাকে তার Tম্যালিবুর বাড়িতে নিয়ে গেল। তারা অ্যাথেনার মেয়ে ব্যাথেনির কাছে যাওয়ার জন্য সান্তাডিও’র উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রওনা হলো।

ব্যাথেনি বাইরে যাবার জন্য সাজগোজ করছিল। ক্রস দেখল, সে তার মায়ের বেশি বয়স ও চিন্তায় বিকল অবস্থার জন্য চিন্তিত। তার মুখ-চোখ শূন্যতায় ভরা। আর তার শরীরও খুব নির্জীব। তার মুখের আদলে মনে হয় আসল সুস্পষ্টতা বিরাজমান আছে। যেন সাবান ব্যবহারের ফলে পানশালার মতো আংশিকভাবে মুছে গিয়েছিল। সে এখনো আঁকার সময় পরনের কাপড় রক্ষার জন্য প্লাস্টিকের অ্যাপ্রোন পরে আছে। সকালের প্রথম দিক থেকেই সে দেয়ালে আঁকাআঁকি করে। সে তাদের দেখছিল না। আর সে তার মায়ের আলিঙ্গন গ্রহণ করল এবং আঁকড়ে ধরল। তার শরীর ও মুখ চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল। এমনকি অ্যাথেনা এটা আগ্রহ করে তাকে অধিকতর শক্তভাবে আলিঙ্গন করল।

এই দিনটি বনময় সরোবরের পাশে বনভোজনের মতো হয়েছিল। অ্যাথেনা দুপুরের খাবার বাস্কেটে প্যাকেট করেছিল।

কিছুক্ষণের যাত্রায় ব্যাথেনি তাদের মাঝে বসে গাড়ি চালিয়েছিল। অ্যাথেনা বারবার ব্যাথেনির চুল পিছনের দিকে আঁচড়ে দিয়েছিল। ব্যাথেনি যখন সোজা সামনের দিকে তাকিয়েছিল তখন অ্যাথেনা সোহাগভরে তার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ক্রস ভাবছিল কিভাবে এবং কখন দিনটি শেষ হবে এবং অ্যাথেনা ম্যালিবুতে ফিরে গিয়ে ভালোবাসা দেবে তাকে। সে কল্পনা করছিল বিছানায় তার উলঙ্গ শরীর এবং অন্য কিছু।

হঠাৎ ব্যাথেনি কথা বলল তার সাথে। সে কখনো আগে তাকে দেখেনি। সে তার দিকে বিষণ্ণ বড় সবুজ চোখে তাকিয়ে বলল, তুমি কে?

অ্যাথেনা উত্তর দিল, তার স্বর ছিল যথার্থ। যেন ব্যাথেনির জবাবে এটা বিশ্বের খুব বড় প্রাকৃতিক বিষয় মনে হলো তার। সে বলল, তার নাম ক্রস। আমার খুব ভালো বন্ধু। ব্যাথেনির ভাবটা ছিল এমন। যেন সে শুনেও শোনেনি। পুনরায় সে তার জগতে আত্মমগ্ন হলো। অ্যাথেনা বনের চোখ ধাঁধানো সরোবরের কয়েক গজ দূরে গাড়ি পার্ক করল! একটা ছোট নীল খচিত একটা বড় সবুজ কাপড় বিছানো হলো। ক্রস খাবারের বাস্কেট আনল। অ্যাথেনা ঘাসের ওপর বিছানো লাল কাপড়ের ওপর খুলল। সে সবুজ ন্যাপকিন, কাঁটা চামচ এবং মচমচে কিছু খাবার কাপড়ের ওপর বিছালো। কাপড়টি ছিল সংগীতের সামগ্রী দিয়ে নকশাকাটা। ব্যাথেনিকে আকর্ষণ করল। তারপর অ্যাথেনা বিভিন্ন স্যান্ডউইচের অংশ, পটেটোর সালাদের বাটি এবং ফলের ফালি বিতরণ করল। পরে এক প্লেট মিষ্টি কেক ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলে ভাজা অংশও ফুরিয়ে গেল। সে ব্যবসায়ীর মতো খুব যত্নের সাথে খাবার পরিবেশন করল। কারণ ব্যাথেনি খাদ্য ভালোবাসত।

ক্রস গাড়ির কাছে ফিরে গিয়ে মদের বক্স আনল। বাস্কেটে অনেকগুলো গ্লাস ছিল। এগুলোতে সোডা ঢেলে দিল সে নিজেই। অ্যাথেনা তার গ্লাস ব্যাথেনিকে দিতে বলল কিন্তু ব্যাথেনি তার হাত দিয়ে পাশে আঘাত করল, সে ক্রসকে দেখছিল।

ক্রস তার চোখের দিকে তাকল। তার মুখ এত রাগান্বিত ছিল যে, তাকে মনো হলো মাংস ছাড়া একটি মুখোশ। কিন্তু তার চোখ এখন খুব সতর্ক। এটা এমন ছিল যেন সে গোপন কোনো গুহায় আটকা পড়ে গেছে। যেখানে সে শ্বাস ক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে, কিন্তু কাউকে সাহায্যের কথা বলতে পারছে না। যেখানে তার মাংসে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে কিন্তু সে তা ছুঁতে পারছে না এমন। তারা খেলো। অ্যাথেনা অযথা বকবক করে ব্যাথেনিকে হাসতে চেষ্টা করল। সে কেবল দক্ষতাসম্পন্ন কৃত্রিমভাবে বিরক্তি ও একঘেয়েমি প্রকাশ করল। ক্রস তা ভেবে রীতিমতো আশ্চর্য হলো। যেন তা আত্মসংবৃত্ত শিশুসুলভ আচরণ যা যথাযথ প্রাকৃতিক। ব্যাথেনি মজার গল্প করছে যদিও বালিকা কোনো উত্তর করছিল না। এটা ছিল অনুপ্রাণিত সদোক্তি যা দ্বারা সে তার নিজের যন্ত্রণা কমানোর চেষ্টা করছিল।

পরিশেষে এটা ছিল শেষ খাবারের পরিবেশনা। অ্যাথেনা একটা মিষ্টি কেকের ঢাকনা খুলে দিয়ে ব্যাথেনিকে খেতে বলল। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করল। ক্রসকে একটা খেতে বললে, ক্রস তার মাথা ঝাঁকাল। সে খুবই নার্ভাস হয়েছিল। কারণ যদিও ব্যাথেনি প্রচুর পরিমাণ খাদ্য খেয়েছিল। এটা স্বাভাবিক, সে তার মার ওপর খুব রাগ করেছিল। অ্যাথেনার অনুভূতিও সে জানল। অ্যাথেনা পেস্ট্রি খেয়ে খুব প্রশংসা করল। সে অন্য দুটা বক্স খুলে ব্যাথেনির সামনে দিল। বালিকাটি সাধারণত মিষ্টি ভালোবাসত। ব্যাথেনি সেগুলো টেবিল ক্লথের ওপর ঢেলে ঘাসের উপর ফেলে দিল। অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে পোকা এগুলো ঢেকে ফেলল। পরে কেক দুটি ব্যাথেনি তুলে নিল এবং একটি তার মুখে। ঢোকাল। তার হাতের অন্যটা ক্রসের দিকে দিল। একটুখানি ভাবার পরেই ক্রস পেস্টিটি তার মুখে পুরল। পরিতৃপ্তি বোধ, রুচি বোধ সবারই মাটির পাশে বিদ্যমান। ব্যাথেনি অবাক হয়ে অ্যাথেনার দিকে তাকাল।

এক অভিনেত্রী জটিল এক দৃশ্যে কিভাবে কুটি করার পরিকল্পনা করছে। সে বিষয়ে অ্যাথেনা চেষ্টা করে দেখছিল। পরে সে জানাল, আশ্চর্যজনকভাবে প্রভাবিত করার মতো হাসি এবং সে হাত দিয়ে হাততালি দিল। আমি তোমাকে বললাম, এটা আনন্দদায়ক। সে অন্য পেস্ট্রি খুলল কিন্তু ব্যাথেনি প্রত্যাখ্যান করল এবং ক্রসও তা করল। অ্যাথেনা পেস্ট্রিটি ঘাসের ওপর ছুঁড়ে মারল। তারপর তার ন্যাপকিনে তুলে নিল। মুছে ব্যাথেনির মুখে দিল। তারপর ক্রসকে এ রকম করল। তার মনে হলো, সে নিজে নিজেই উপভোগ করছে।

হাসপাতালের দিকে গাড়ি ঘোরাল। ক্রসের সাথে সে আলাপ করল। ব্যাথেনির সাথে যেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। সে যেন আত্মসংবৃত্ত। ব্যাথেনি সতর্কতার সাথে দেখাল। পরে ক্রসের দিকে তার দৃষ্টি ফেরাল।

যখন তারা হাসপাতালের শিশু বিভাগে নিয়ে গেল তখন ব্যাথেনি একটু সময়ের জন্য ক্রসের হাত ধরল। ক্রস বলল, তুমি সুন্দর। কিন্তু তাকে বিদায় জানাতে ক্রস যখন চুমু দিতে চেষ্টা করল, সে তখন তার মাথাটা ঘুরিয়ে নিল। তারপর সে দৌড়াল।

ম্যালিবুর দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে অ্যাথেনা উত্তেজিতভাবে বলল, সে তোমার দিকে সাড়া দিয়েছে, এটা খুব ভালো লক্ষণ।

কারণ আমি সুন্দর, ক্রস সহজভাবে বলল।

না, অ্যাথেনা বলল, কারণ তুমি কীটপতঙ্গ খেতে আর আমি প্রায় তত সুন্দর যত তুমি। সে আমাকে ঘৃণা করে… সে আনন্দিতভাবে হাসতে লাগল।

অ্যাথেনা বলে তুমি তার মতো। সে ভাবে তুমি আত্মসংবৃত্ত।

ধারণাটিকে উপভোগ করে ক্রস হাসল। সে সম্ভবত ঠিক, সে বলল। সম্ভবত তুমি অবশ্যই আমাকে তার সাথে হাসপাতালে ভর্তি করে দেবে।

না, অ্যাথেনা হেসে বলল। পরে আমি চাইলে তাকে আমি কাছে পাব না। অন্যদিকে ম্যাসেলিনা শেষ করার পর আমি তাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছি।

যখন তারা তার ম্যালিবুর বাড়িতে এলো, তখন ক্রস তার সাথে ভেতরে গেল। রাতে তার সাথে সময় কাটানোর জন্য তারা পরিকল্পনা করতে লাগল।

তুমি বিপর্যস্ত বোধ করলে আমি ভেগাসে ফিরে যেতে পারি। সে কথা শুনে একটু বিস্মিত ও কিছুটা আশ্চর্য হলো। সে যখন প্রকৃতভাবে উচ্ছ্বসিত ছিল কিংবা যখন খুব মানসিক কষ্টে ছিল তখন সে তাকে কেমন ভালোবাসত। তার মুখের সৌন্দর্য অলৌকিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেল, যেন তার মতো তারও অনুভূতি ছিল।

সে তাকে সস্নেহে বলল, তুমি একটা ভয়ানক দিনের অধিকারী হয়েছিলে এবং তুমি অবশ্যই তোমার প্রতিদান পাবে। তার স্বরে তিরস্কারের গন্ধ পাওয়া গেল। কিন্তু সে বুঝল এটা তার সৌন্দর্যের উপহাস মাত্র। সে জানল তার জাদু ছিল মিথ্যে।

আমি আর একটা ভয়ানক দিনের অধিকারী হচ্ছি না। ক্রস বলল, আর এটা সত্য ছিল। সেদিন সে যে আনন্দ অনুভব করেছিল। বিরাট বনের ধারে সরোবরের কাছে তারা তিনজনে উপভোগ করেছিল অপার আনন্দ। এটা তার বাল্য জীবনের কথা স্মরণ করে দিয়েছিল।

তোমার পেস্ট্রিতে পিঁপড়ের ভালোবাসা ছিল। অ্যাথেনা বলল।

ওগুলো খারাপ ছিল না। ক্রস বলল। ব্যাথেনি খুব ভালো খেয়েছিল।

আমি জানি না, কিন্তু পাবার পূর্ব পর্যন্ত খুঁজেছিলাম অ্যাথেনা বলল। যখন ম্যাসেলিনা স্যুটিংয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন থাকবে না, তখন আমার এক সপ্তাহের ছুটি আছে। ব্যাথেনির সাথে আমি ফ্রান্সে যাচ্ছি। প্যারিসে একজন বড় ডাক্তার আছে। তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছি।

যদি সে বলে কোনো আশা নেই? ক্রস বলল।

সম্ভবত আমি তাকে বিশ্বাস করব না। এটা কোনো বিষয় না। অ্যাথেনা বলল। আমি তাকে ভালোবাসি। আমি তার যত্ন নেব।

চিরদিন এবং সব সময়? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ, অ্যাথেনা বলল। পরে সে একসাথে হাততালি দিল। তার সবুজ আঁখিদ্বয় উজ্জ্বল হলো। আমাদের নিজেদের যত্ন নিতে হবে। আমরা উঁচু সিঁড়িতে যাব, বৃষ্টিতে ভিজব, এবং ঝাঁপিয়ে পড়ব বিছানায়। আমরা সময়ের প্রয়োজনে পাগল আবেগপূর্ণ ভালোবাসা গড়ব। পরে আমি রাঁধব আমাদের মধ্যরাতের শেষ খাবার।

ক্রস ভাবছে- সে ছিল এমন শিশু যে দিনের শুরুতে আনন্দের সঙ্গে ঘুম থেকে জাগত, তার মা সকালের নাস্তা তৈরি করত; তার বন্ধুদের সাথে খেলা, বাবার সাথে শিকারে যাওয়া, তার পরিবারের সঙ্গে দিনের শেষ খাবার খাওয়া, তখন ক্লডিয়া, ন্যালিনি এবং পিপিও থাকত। পরবর্তীকালে তাস খেলা। এটা হলো নিষ্পাপ অনুভূতি। অ্যাথেনার প্রতি তার ভালোবাসা জন্মেছিল, বেলকনি থেকে প্রশান্তের ওপরে অস্পষ্ট সূর্য সে দেখছিল, আকাশ জ্যোতির্ময় লাল ও গোলাপি রঙে আঁকা ছিল, উষ্ণ মাংস আরো রেশমি ত্বকের পরশ ছিল। তার সুন্দর মুখমণ্ডল ও ঠোঁট ছিল চুমু খাওয়ায় জন্য পাগল। সে হাসত এবং তাকে সিঁড়ির উপর নিয়ে যেত।

শোবার ঘরে ফোন বাজছিল, অ্যাথেনা এটা উত্তর দেবার জন্য ক্রসের সামনে এলো। সে রিসিভার তুলে আস্তে আস্তে বলল, এটা তোমার জন্য। জর্জিও নামের এক লোক। সে আগে কখনো তার বাড়িতে ফোন কল রিসিভ করেনি।

অ্যাথেনা ফোনে বলল, সে এখানে নেই… হ্যাঁ, তারপর সে ফোন রেখে বলল, জর্জিও কে?

একজন আত্মীয়।

ক্রস বলল, যা দ্বারা যে কাজ করে, যা দ্বারা সে চৈতন্য হারিয়ে ফেলে।

কেন?

কারণ সে অ্যাথেনাকে ছাড়া একটা রাতও থাকতে পারে না। আর তা একটা কষ্টদায়ক অপরাধ।

পরে সে বিস্মিত হলো। জর্জিও কিভাবে জানল সে এখানে থাকতে পারে এবং জর্জিও কি চেয়েছিল। এটা অবশ্যই কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, সে ভাবল। কিন্তু এটার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যে কোনো বিষয়ের চেয়ে বেপরোয়া অ্যাথেনার সাথে ভালোবাসার মুহূর্ত তৈরি করা।

এটা সেই সময়, যে সময়ের জন্য দিন, সমস্ত সপ্তাহ ধরে তারা অপেক্ষা করছে। ঝরনার সামনে তারা একত্রে তাদের কাপড় খুলে ফেলল। কিন্তু ক্রস অ্যাথেনাকে জড়িয়ে না ধরে পারল না। বনভোজন থেকে এ পর্যন্ত তাদের শরীর ঘর্মাক্ত। পরে অ্যাথেনা ক্রসের হাত ধরে ঝরে পড়া পানির নিচে নিয়ে গেল।

তারা দুজনেই বড় কমলা রঙের তোয়ালে দিয়ে নিজেদের আবৃত করল। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দিগন্তের পেছন দিয়ে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখল। পরে তারা ভেতরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

যখন ক্রস তাকে ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত করেছিল তখন তার মনে হলো তার মস্তিষ্কের সব কোষ ও শরীর উড়ে যাচ্ছে। কিছু উত্তেজিত স্বপ্নের ভেতর সে সব ত্যাগ করছিল। যেন সে এক প্রেতাত্মা, যার অনুভূতি পরমানন্দে পূর্ণ আর একটা প্রেতাত্মা তার শরীরে ঢুকছে। সে তার সমস্ত নিষেধাজ্ঞা, তার সমস্ত কার্যকারণ হারিয়ে ফেলল। এমনকি সে তার সাথে অভিনয় করছে। সে তাকে আসলে ভালোবাসে কি-না তা ভাবারও তার সময় নেই। যতক্ষণ না তারা তাদের একে-অপরের হাতের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ততক্ষণ এরকম চলতে থাকে। যখন তারা জেগে আড়মোড়া ভাঙল, তখন বাইরে চাঁদের আলোয় পূর্ণ, সে আলো মনে হয় রৌদ্রের চেয়েও উজ্জ্বল। অ্যাথেনা তাকে চুমু দিয়ে বলল, তুমি আসলেই ব্যাথেনিকে পছন্দ করেছিলে।

হ্যাঁ, ক্রস বলল। সে তোমার অংশ।

তুমি কি ভাব সে আর ভালো হতে পারে?

অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল, তুমি কি ভাব, তার আরো ভালোর জন্য আমি সাহায্য করতে পারি?

সেই সময় ক্রস আবেগপ্রবণ হলো, মেয়েটির ভালো করতে তার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। কোনো নারীর ভালবাসার প্রতি এরকম আত্মেসর্গের কথা অনেকে বললেও বালিকাটির প্রতি তার ভালোবাসার আগে এরকম চিন্তার সাথে অপরিচিত ছিল।

আমরা উভয়ে সাহায্যের চেষ্টা করতে পারি।

ক্রস বলল, না। অ্যাথেনা আমি অবশ্যই এটা করব।

তারা আবার ঘুমিয়ে পড়ল। আর যখন আবার ফোনটা বেজে উঠল তখন রহস্যময় নতুন সকাল হচ্ছে। অ্যাথেনা ফোন তুলে শুনল, তারপর ক্রসকে বলল, গেটের গার্ডের কল এটা। সে বলল, একটা গাড়িতে চার জন লোক এসেছে এবং তারা তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়।

ক্রস ভয় পেল। সে ফোন হাতে নিয়ে গার্ডকে বলল, তাদের একজনের কাছে ফোনটা দাও।

সে ভিনসেন্টের গলার স্বর শুনতে পেল। ক্রস, আমার সাথে পেটি আছে। আমরা কিছু খারাপ খবর পেয়েছি।

ঠিক আছে, গার্ডের কাছে দাও ক্রস বলল।

পরে, গার্ডকে বলল, তারা ভেতরে আসতে পারে।

জর্জিও’র কল সম্পর্কে সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ভালোবাসা যা করে তা-ই, সে উদ্ধতভাবে ভাবল। যদি আমি একে উপরে তুলি, তাহলে আমি এক বছরও বাঁচব না। সে তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে নিচের সিঁড়িতে দৌড়াল। গাড়িটি বাড়ির সামনে দিয়ে উপরে উঠছিল। সূর্য তখন অর্ধেক অস্তমিত। দিগন্তের ওপরে এটার আলো ছড়িয়ে পড়েছে। ভিনসেন্ট ও পেটি বিলাসবহুল লিমুজিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ড্রাইভার ও অন্য একজন মানুষকে পেটি সামনে দেখতে পেল। পেটি ও ভিনসেন্ট দরজার দিকে লম্বা বাগানের পথে হাঁটল। আর ক্রস তাদের জন্য এটা খুলে দিল।

হঠাৎ অ্যাথেনা তার পাশে এসে দাঁড়াল। পেটি এবং ভিনসেন্ট তার দিকে তাকাল। তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল না।

অ্যাথেনা তাদের সবাইকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে কফি বানানো শুরু করল। আর ক্রস তাদেরকে তার কাজিন হিসেবে পরিচিত করে দিল।

কিভাবে এখানে আমার লোক গেল?

ক্রস জিজ্ঞেস করল। গত রাতে তোমরা নিউইয়র্কে ছিল।

জর্জিও একটা উড়ো জাহাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, পেটি বলল।

অ্যাথেনা তাদের জন্য কফি বানানোর চেষ্টা করছিল। তাদের কেউ কোনো আবেগের কথা বলল না। তাদেরকে ভাইয়ের মতো দেখাল। তারা দুজনই বড় মানুষ কিন্তু ভিনসেন্ট ছিল ম্লান। পেটির কৃশ মুখে রোদে পুড়ে তামাটে লাল হয়েছে।

আর হ্যাঁ, খারাপ খবরটা কি? ক্রস বলল। সে আশা করছিল যে, সে শুনবে ডন মারা গেছে, বোজ ম্যারি আসলেই দিশেহারা হয়ে গেছে। অথবা ডেন্টি এমন কোনো ভয়ানক কাজ করেছে যাতে পরিবারটি সমস্যার মধ্যে আছে।

ভিনসেন্ট তার স্বাভাবিক ভদ্রতার সাথে বলল, আমরা তোমার সাথে একা কিছু বলতে চাই।

অ্যাথেনা তাদেরকে কফি ঢেলে দিল।

আমি তোমাকে আমার সব খারাপ খবরগুলো বলি, সে ক্রসকে বলল।

তোমারটা আমি শুনব।

আমি ঠিক তাদের সাথে যাব, ক্রস বলল।

তুমি ওরকম বাজে কাজে যেতে পারবে না।

অ্যাথেনা বলল, তুমি ছেড়ে যাবার তোয়াক্কা করতে পারবে না।

এতে ভিনসেন্ট ও পেটি প্রতিক্রিয়া জানাল। ভিনসেন্টের ধূসর বর্ণের কঠিন মুখ অস্বস্তিতে আরো রক্তিম হয়ে গেল। পেটি দাঁত বের করে ফটকাবাজের মতো হাসল। যেন সে দেখতে আসা একজন লোক। ক্রস এটা দেখে হেসে বলল, ঠিক আছে, বলো বাকিটা শুনি।

পেটি এই গতিকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করল। তোমার বাবার কিছু ঘটনা ঘটেছে। সে বলল।

ভিনসেন্ট খোলাখুলিভাবে বলে ফেলল, কিছু বাজে ছিনতাইকারী পিপিকে গুলি করে। সে মৃত। সে দৌড়িয়ে যাবার সময় লুজি নামের একজন পুলিশ এই ছিনতাইকারীকে গুলি করে। লাশের পরিচিতি ও কাগজপত্রের কাজের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসে তাদের তোমার প্রয়োজন। বয়স্ক লোক চায়, কুওগে তার কবর হোক।

ক্রস তার দম হারাল। সে কিছুক্ষণ টলতে থাকল। তারপর সে উত্তেজিত হয়ে উঠল, পরে সে অনুভব করল যে অ্যাথেনা তার দুই হাত দিয়ে তাকে ধরেছে।

কখন, ক্রস জিজ্ঞেস করল।

প্রায় আটটায়, পেটি বলল।

জর্জিও তোমাকে ডেকেছিল?

ক্রস ভাবল সে যখন ভালোবাসা করেছে তখন তার বাবা মর্গে শুয়ে। আমার যাওয়া উচিত ছিল সে অ্যাথেনাকে বলল।

সে তার শক্ত হওয়া মুখের দিকে তাকাল। সে তাকে কখনো এমন দেখেনি। আমি দুঃখিত সে বলল। আমাকে ডেকো।

লিমুজিন গাড়ির পেছনের আসনে বসে ক্রস শুনল অন্য লোক দুজন তাকে ধৈর্য ধরার জন্য বলছে। সে তাদেরকে চিনল। তারা ব্রঙ্কস এনক্লেভের সৈন্য। যখন তারা ম্যালিবু কলোনির গত রাতে অনুচরদের সাথে নিয়ে সে জানাদু হোটেলের বেলকনি থেকে বর্ণবাদের দাঙ্গা দেখছিল। এমনকি এর ওপরে সে গানের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। জুয়াড়িদের গুঞ্জনে ভিড়ের ফালি জুয়া খেলার স্থান খুঁজছিল। কিন্তু গত মাসে যা ঘটেছিল তা ব্যাখ্যা করার জন্য তার কাছে এটা যথেষ্ট শান্তি ছিল এবং তার বাবার মৃত্যুর প্রতিফলিত উপযুক্ত স্থান ছিল এটা।

ক্রসের এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে পিপি ডি লিনাকে একজন বাজে ছিনতাইকারী গুলি করেছিল। একজন যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের এমন ভাগ্যের সম্মুখীন হওয়া অসম্ভব ছিল।

তাকে যেভাবে বলা হয়েছিল, সেভাবেই সমস্ত ঘটনা পর্যালোচনা করল।

গেটের মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল হাইওয়েতে এগিয়ে গেল, তখন ক্রস বুঝতে পারল চলার নিষ্ক্রিয়তা। যে গাড়িতে তারা চড়েছিল সেটা ছিল সামরিক গাড়ি।

পাঁচ দিন পরে পিপি ডি লিনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কুওগে অনুষ্ঠিত হলো। ডনের এস্টেটের নিজস্ব ব্যক্তিগত গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হলো। ডনের সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবে পিপিকে সিলভিও-এর কবরের পরের কবরে দাফন করা হলো।

শুধু ক্লেরিকুজিও বংশ এবং অত্যধিক সম্মানিত ব্রঙ্কস এনক্লেভের সৈন্য উপস্থিত ছিল। ক্রসের অনুরোধে থিয়েরাসের শিকার শালা থেকে লিয়া ভাজি এসেছিল। রোজ ম্যারি উপস্থিত ছিল না। পিপির মৃত্যুর কথা শুনে সে মূৰ্ছা গেল এবং মানসিক ক্লিনিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো।

কিন্তু ক্লডিয়া ও ডি লিনা সেখানে ছিল। সে ক্রসকে সান্ত্বনা দেবার জন্য উড়ে গিয়ে তার বাবাকে গুড বাই জানাল।

পিপি যখন বেঁচে ছিল, তখন সে কিছুই করতে সমর্থ ছিল না। সে অনুভব করছিল। তার মৃত্যুর পর সে অবশ্যই করবে। সে দাবি করতে চেয়েছিল তার একটা অংশ ক্লেরিকুজিও’র জন্য প্রদর্শিত হবে।

ক্লেরিকুজিও ম্যানশনের সামনের লন ফুল জড়ানো বিল বোর্ড বাফেট টেবিল দিয়ে সাজানো হলো। এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে শোক প্রকাশের একটা দিন এবং কোনো পারিবারিক ব্যবসার আলোচনা করা নিষিদ্ধ ছিল।

সারা বছর বাধ্যতামূলকভাবে তার বাবাকে ছাড়া বাস করতে হয়েছিল বলে ক্লডিয়া তীব্রভাবে কেঁদে চোখের পানি ফেলছিল। কিন্তু ক্রস শান্তভাবে দুঃখ প্রকাশ করল না।

.

১৭.

ক্রস এই প্রথম অ্যাথেনার কাজ দেখার জন্য তার শুটিং স্পটে গেলেন। দেখলেন, তার অভিনয়ের আবেগতাড়িত ত্রুটি, যা অন্যদের চাইতে একটু বেশি।

তিনি ক্লডিয়ার সঙ্গে তার লডস্টোনের অফিসে দেখা করলেন। তারা একসঙ্গে অ্যাথেনাকে দেখল। সেখানে আরো অপরিচিত দুজন মহিলাও ছিল, ক্লডিয়া তাদের সঙ্গে পরিচয় করে দিল। এই আমার ভাই ক্রস, উনি পরিচালক। ডিটা টমি এবং ফ্যালেন ফ্যান্টি যারা এই ছবিতে কাজ করছে। টমি তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে ভাবল সে ব্যবসার জন্য যথেষ্ট উপযোগী। কিন্তু দেখাতে পারেনি তার উদ্দীপনা, ভাবাবেগ। যে চলচ্চিত্রের পর্দায় যেন এক প্রকার মৃত ঠাণ্ডা পাথর।

সে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল, আমি এখনই ত্যাগ করছি, সে তার হাত নাড়া দিয়ে বলল, আমি তোমার পিতার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তোমাকে আমার সেটে আসার জন্য স্বাগতম। ক্লডিয়া এবং অ্যাথেনা তাকে একজন সত্যিকারের প্রযোজক হিসেবে সমর্থন করল।

ক্রস অন্যান্য মহিলা সম্পর্কে অবগত হলো।

সে তার ভয়ানক চেহারা এবং ভীতিকর দেহের জন্য কালো বাদামি রঙের পোশাক বাছাই করল। তার সঙ্গে ডাটের সাথে আবৃত হলো। ফ্যালেন টমির চেয়ে এই দিকটায় কম উৎসাহী ছিল।

আমি জানতাম না ক্লডিয়ার এক সুদর্শন ভাই আছে। সে ধনী যা আমি শুনতাম, ফ্যালেন বলল, যদি তোমার ডিনারে সঙ্গীর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে ডেকো।

সে দাওয়াতে খুব একটা বেশি আশ্চর্য হয়নি।

জানাদু হোটেলে পর্যাপ্ত শো বালিকা, নাচনেওয়ালী, প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেল।

এমন একটি মেয়ে ছিল যে প্রকৃতপক্ষে তার সৌন্দর্যের পর্দা খুলল। সে সামাজিক রীতির কারণে যে মানুষের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পছন্দ করত।

ক্লডিয়া বলল, আমরা ফ্যালেনকে ছবিতে ছোট কিছু করার জন্য দিয়েছিলাম। ডিটা ভাবল সে খুব দূরদর্শী, সুতরাং আমি এটা করেছি।

ফ্যালেন ক্রসকে দাঁত বের করানো হাসি সমর্পণ করেছিল।

আমি, এখন আমার নির্বোধ ব্যক্তিটিকে ছয় মিনিটের পরিবর্তে দশ মিনিট ধরে অস্থির করছি এবং যা ম্যাসেলিনাকে বলেছি। রুমের সকল নারীই তোমাকে ভালোবাসে এবং তোমার জয় আশা করে।

সে কিছু সময় বিরত থেকে বলল, আমি তোমার এক প্রযোজক সম্পর্কে শুনেছি। সম্ভবত তুমি তাদের পেত পারো।

ক্রস তার মধ্যে কিছুটা বিচক্ষণতা পরিলক্ষিত করল, প্রাণবন্ত থাকা সত্ত্বেও সে কিছুটা লুকাতে চেষ্টা করল।

ক্রস বলল, আমি কেবল একজন টাকাওয়ালা মানুষ। প্রত্যেককেই তাদের নির্বুদ্ধিতা কিছু সময়ের জন্য বা অন্য এক সময় তাকে অবশ্যই অস্থির করবে। সে মৃদু হাসল এবং আকর্ষণীয় সরলতায় বলল, যাই হোক, আমি তোমার জয় কামনা করি।

ফ্যালেন একটু হেলান দিয়ে তার গালে চুমু দিল। সে তার পারফিউমের গন্ধ পেল যা ছিল খুবই ভেজানো এবং তার সুনামটাকে নিবিড়ভাবে অনুভব করল। তখন সে আবার পেছনের দিকে হেলান দিল। আমি এবং ক্লডিয়া তোমাকে কিছু বলব কিন্তু এটা খুবই গোপনীয়। আমি সমস্যার মধ্যে যেতে চাই না, বিশেষ করে এখন।

ক্লডিয়া তার কম্পিউটারে বসল, কঠোর দৃষ্টি রাখল এবং কিছুই বলল না। ক্রস ফ্যালেন থেকে একটা পদক্ষেপ নিল। সে কাউকে হতবুদ্ধি করা পছন্দ করত না।

ফ্যালেন তার কথার রেসপন্স করল। তার কথায় জড়তা দেখা ছিল। আমি তোমার বাবার ব্যাপারটি নিয়ে আন্তরিকভাবে দুঃখিত, কিন্তু তোমার এ ব্যাপারে কিছু শোনা উচিত।

মার্লো, এক অদ্ভুত চেহারার লোক যে তাকে কষ্ট দিয়েছিল। সে শিশু ছিল, আমি তাকে বড় করলাম। ভালো করে চিনতাম। অনুমান করা যায় গোয়েন্দা জিম লুজি মার্লোকে গুলি করেছিল। সে তোমার পিতাকেও গুলি করেছিল। কিন্তু আমি জানি মার্লোর কখনও বন্দুক ছিল না। এমনিতেই সে নিজেই বন্দুককে খুব ভয় করত।

মার্লো ওষুধের ব্যবসা করত এবং ক্লালারনেট খেলত। তাছাড়া সে ছিল একটু বোকা প্রকৃতির। জিম লুজি এবং তার পার্টনার সারকি তাকে পকেট মারাতে ব্যবহার করত এবং ঘোড়ায় চড়িয়ে চারিদিকে ঘুরাত। সে তাদের নিন্দা করত। মার্লো জেলকে ভীষণ ভয় পেত, সে ছিল একজন পুলিশ অনুসন্ধানকারী। সবকিছুই হঠাৎ তার জীবনে আকস্মিকভাবে ঘটে আমি জানি, মার্লো কোনো জীব হত্যা করতে পারে না।

ক্লডিয়া নিশ্চুপ ছিল। ফ্যালেন আন্দোলিত হলো এবং বাড়ির বাইরে গিয়ে ফিরে এলো, সে বলল, স্মরণ রেখো এটা আমাদের মধ্যেই গোপন রাখতে হবে।

ক্রস মৃদু হেসে পুনরায় আশ্বস্ত করে বলল, এটা সবাই ভুলে গেছে, তাই তুমি তোমার গল্প, পরিবর্তন করো না। আমি শুধু চাই এটা আমার মন থেকে দূরে সরে যাক। ফ্যালেন বলল, মার্লো একজন ভালো ছেলে ছিল, এই বলে সে চলে গেল।

ক্লডিয়া ক্রসকে বলল, তুমি কি ভাবছ?

ক্রস সামান্য কাঁধ তুলল, চাহিদাহীন ওষুধ সর্বদাই…। তার টাকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল, তাই সে এটা করেছিল, ফলে তার ভাগ্য প্রসন্ন হলো না।

ক্লডিয়া বলল, আমার অনুমান ফ্যালেনের আছে ভালো হৃদয়, সে সবকিছুই বিশ্বাস করবে। আমাদের বাবা ঐ ভাবেই মারা গেছে।

ক্রস তার পাথরের মতো চেহারার দিকে তাকাল এবং বলল, প্রত্যেকেই এক সময় নিজকে ভাগ্যহীন মনে করে।

সে বাকি বিকালটা ছবির দৃশ্য দেখে কাটাল, একটি দৃশ্যে নায়ককে দেখান হলো নিরস্ত্র, পরাভূত, সশস্ত্র তিনজন লোক। এটা তাকে বিরক্ত করল। তার কাছে অসম্ভব উপহাস বলে মনে হলো। একজন নায়কের কখনও অসহায় অবস্থানে থাকা উচিত নয়। সবকিছুতেই প্রমাণ হলো যে একজন নায়ক হওয়ার জন্য সে ব্যর্থ।

তারপর সে অ্যাথেনার ভালোবাসা এবং ঝগড়ার দৃশ্য দেখল। সে একটু হতাশ হলো। সে মনে করল তাকে আরও ছোট অভিনয় করতে হবে।

অন্য অভিনেতারা তাকে অনুসরণ করেছে। ক্রস আরও মনে করল, ক্যামেরা তার জন্য জাদুর মতো কাজ করছে।

সে প্রকৃত অ্যাথেনাকে আবিষ্কার করতে পারল না, কারণ ছবির অ্যাথেনা আর বাস্তবের অ্যাথেনার মধ্যে যে অনেক ফারাক পরিলক্ষিত হলো। কিন্তু অ্যাথেনা মনে করল, ছবিতে তাকে কম সুন্দর মনে হয়েছে, যেমন সুন্দর সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে ছিল।

যখন ম্যালিবুতে অ্যাথেনার সঙ্গে রাত কাটাল, তখন সে বলল, এটা এমন কিছুই না। তারপর তাদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হলো, অ্যাথেনা তাদের জন্য রাতের খাবার তৈরি করল সে বলল, আজ আমি ভালো নেই, তাই কি? যা সব সময় তাকে আনন্দের মধ্যে রাখত। আমি তোমাকে আমার ভালো ছবি দেখাতে চেয়েছিলাম। সে বলল, আমি জানতাম তোমাকে ভালো কিছু করার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

সে হাসল, সে সব সময় তার চরিত্র সম্পর্কে উৎফুল্ল ছিল। সে বলল, না বেশি কিছু হয়নি। তুমি কি আমাকে প্যারিসে যাওয়ার সঙ্গী করবে? অ্যাথেনা আশ্চর্য হলো, সে জানত সে তার চোখ দেখে আশ্চর্যও হবে। তার চেহারা কখনো পরিবর্তন হয়নি আঘাতের মধ্যেই ছিল, সে এটা সম্পূর্ণ করল। যা এক প্রকার বড় ধরনের সাহায্য। তার জন্য আমরা একসঙ্গে প্যারিস দেখব এবং তুমি কি আগামী সোমবার ফিরবে? ক্রস জিজ্ঞেসা করল।

অ্যাথেনা বলল, হ্যাঁ আমাকে আগামী মঙ্গলবার সকালে শুটিং করতে হবে।

ক্রস বলল, সত্যিই তাই?

অ্যাথেনা বলল, তারপর আমি বিশ্রাম নেব এবং আমার কন্যার যত্ন নেব। তাছাড়া আমি তার গোপন বিষয়টি বেশিদিন ধরে রাখতে চাই না। ক্রস জিজ্ঞেসা করল, প্যারিসের ডাক্তারের কি এটাই শেষ কথা? অ্যাথেনা বলল, কারোরই শেষ কথা নয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা একটি বিশেষ প্লেনে প্যারিসে গেল। অ্যাথেনা ভুল ভাবে নিজের কঠোর ভর্ৎসনা করল, তার মেকআপ তার সৌন্দর্যকে প্রকাশ করল। তাকে সেই মুহূর্তে বাড়ির কাজের মেয়ের মতো দেখাচ্ছিল। সে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করেছিল, যাতে তার ফিগার সম্পূর্ণভাবে ঢেকে গেল, তাকে গৃহিণীর মতো দেখাল। ক্রস ধারণা করেছিল। তাছাড়া সেই মুহূর্তে সে এলোমেলোভাবে হাঁটছিল। প্লেনে ব্যাথেনি বাইরের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হলো। সে বাইরের প্রকৃতি দেখার জন্য বিভিন্ন জানালায় একের পর এক উঁকি মারছিল। সেই সময় অনুভূতি ছিল খুবই স্বাভাবিক।

তারা প্লেন থেকে নেমে মেনডেল এভিনিউয়ের ছোট হোটেল জিওরজেলে গেল। তারা দুটো কক্ষ ভাড়া নিল, একটি ক্রসের জন্য এবং আরেকটি অ্যাথেনা ও ব্যাথেনির জন্য। অ্যাথেনা নতুন করে মেকআপ নিল। পোশাক পরিবর্তন করল। তখন তাকে মোটেই কাজের মেয়ের মতো মনে হলো না।

বিকেলে তারা তিনজনই ডাক্তারের কাছে গেল। প্রবেশ পথে একজন দারোয়ান তাদের তল্লাশি করার পর তাদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিল।

তারা দরজার কাছে একজন দলপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করল, সে তাদের একটি অপেক্ষমাণ কক্ষে নিয়ে গেল, যা ছিল কোলাহলপূর্ণ একটি কক্ষ।

সেখানে আরো অনেকেই ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছিল।

ডাক্তার ওয়েল গিয়াড অন্য রকম প্রকৃতির মানুষ। তার পরনে সাদা শার্ট এবং তার গলায় ছিল একটি কালো ধূসর টাই, তার চেহারা গোল আকৃতির। তার ঠোঁট ছিল হালকা লাল বর্ণের। সে নিজ থেকেই ক্রস ও অ্যাথেনার সঙ্গে পরিচিত হলো কিন্তু সে ব্যাথেনিকে ঘৃণার চোখে দেখল।

ক্রস এবং অ্যাথেনা উভয়েই খুব কম সময়ের মধ্যে ডাক্তার সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করল কারণ তাকে একজন পেশাদার ডাক্তারের মতো মনে হলো না তাদের।

সেখানে একটি টি-টেবিল ছিল। একজন দলপতি তাদের কাছে উপস্থিত হলো। তারা দুজন সেবিকার সঙ্গে মিলিত হলো। তারা নিজ পেশায় খুবই দক্ষ। তাদের মাথায় ছিল সাদা টুপি এবং পরনে আইভরি রঙের ব্লাউজ এবং স্কাট। সেবিকা দুজন দেখল ব্যাথেনি সব সময় খেতে মনোযোগী।

ডাক্তার গ্রিয়ার্ড অ্যাথেনাকে অভিনন্দন জানাল। ম্যাডাম একজন প্রতিবন্ধী বাচ্চার প্রতি আপনার দয়া দেখানোর জন্য মেডিকেল ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনার অনুরোধ আস্থার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং যার কারণে আমি তার সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করছি। এখন আমাকে বলুন, আপনি আমার কাছ থেকে কি আশা করছেন? তার কণ্ঠ ছিল মিষ্টি, তা ছিল রীতিমতো চুম্বকের মতো। যা ব্যাথেনির মনোযোগ আকর্ষণ করল এবং সে তার দিকে তাকাল, কিন্তু ডাক্তার অবজ্ঞা করল।

অ্যাথেনা কিছুটা হতাশ হলো, সে কোনোভাবেই ডাক্তারকে মেনে নিল না।

আমি তার এক প্রকার স্বাভাবিক জীবনযাপন চাই, যদি তা সম্ভব হয় এবং আমি এটা অর্জনের জন্য সবকিছুই দেব। আমি নিজ ইচ্ছায় ফ্রান্সে বাস করছি। এবং তাকে বিদ্যালয়ে প্রাপ্ত শিক্ষা অর্জন করাচ্ছি।

সে বেশ বড় আশা নিয়ে এ কথা বলল। এটা করতে পারা তার জন্য একটা ভাগ্যের ব্যাপার। সে তা মনে করে। দুজন সেবিকা খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল। ক্রস বুঝল যে সবকিছুই করছে ডাক্তারকে আয়ত্তে আনার জন্য, যাতে করে এই ইন্সটিটিউটে ব্যাথেনি ভর্তি হতে পারে।

শুধু ডাক্তার গ্রিয়ার্ডকে অমনোযোগী মনে হলো তার। সে মোটেই বেথানির দিকে তাকাল না। সে নিজেই তার কথা অ্যাথেনার নিকট প্রকাশ করল। সে বলল, আপনি নিজের সাথে প্রতারণা করবেন না। আপনার সব ভালোবাসাও তাকে সাহায্য করতে পারবে না। আমি তার সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি সে প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী না, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সে আপনার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। সে আমাদের পৃথিবীতে বাঁচবে না। তাকে অন্য নক্ষত্রে বাস করতে হবে এবং সম্পূর্ণ একাকী, সে বলেই বসল আপনার আদৌ কোনো দোষ নেই এবং এও বিশ্বাস করি না তার পিতার কোনো দোষ আছে। এটা হলো মানবজাতির একপ্রকার রহস্যময় জটিল অবস্থান।

এখানে আমি কি করতে পারি। তারপরও আমি তাকে সম্পূর্ণভাবে আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। তারপর আমি বলব আমার প্রতিষ্ঠান কি করতে পারবে। যদি আমি সাহায্য করতে না পারি, আপনি তাকে অবশ্যই বাড়ি নিয়ে যাবেন। আর যদি আমরা পারি, তাহলে আপনি তাকে ফ্রান্সে আমার কাছে চার বছরের জন্য রেখে যাবেন।

সে ফ্রান্স ভাষায় একজন সেবিকাকে কি যেন বলল এবং সেবিকাটি বেরিয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর সে অনেক ছবিওয়ালা একটি বই নিয়ে ফিরে এলো। সে বইটি ব্যাথেনিকে দিল। কিন্তু এটা এতই বড় ছিল যে তার জন্য উপযুক্ত হলো না। এই প্রথম ডাক্তার গ্রিয়ার্ড ব্যাথেনিকের সঙ্গে ফ্রান্স ভাষায় কথা বলল। সে তাড়াতাড়ি পাঠ্যবইটি টেবিলের ওপর রাখল এবং পাতাগুলো ছিঁড়তে আরম্ভ করল। শিগগিরই সে বইয়ের সব ছবিসহ পাতাগুলো আলাদা করে ফেলল।

ডাক্তার বিষয়টি সহজভাবেই নিল। সে বলল, আমি এটাকে খারাপভাবে নিইনি। কিন্তু এটার মধ্যে আপনার বাচ্চার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ রয়েছে। আমি জানি ডি-লিনা আপনার স্বামী না। কিন্তু এটা কি সম্ভব, সেই আপনার বাচ্চার পিতা? যদি তাই হয়, তাহলে আমি তাকে পরীক্ষা করতে চাই। অ্যাথেনা বলল, আমি তাকে চিনি না, তাছাড়া যখন আমার বাচ্চার জন্ম হয়েছিল তাও জানি না।

ডাক্তার সামান্য কাঁধ তুলে বলল, কিছু কিছু বিষয় সব সময়ই সম্ভব।

ক্রস হাসল, সম্ভবত ডাক্তার আমার মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখেছে। ডাক্তার মাথা নত করে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দিল। আপনার মধ্যে নিশ্চিত কিছু লক্ষণ আছে। সুতরাং আমরা সবকিছুই করব। কে জানে এখন আমি বাচ্চাটিকে সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অবশ্যই করব। এতে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টার মধ্যেই হবে। আপনারা দুজনের কেউই কেন আমাদের ভালোবাসার প্যারিসে বেড়াচ্ছেন না। ডি লিনা কি আপনার জীবনে প্রথম?

ক্রস বলল, হ্যাঁ।

অ্যাথেনা বলল, আমি আমার বাচ্চাকে অবশিষ্ট চাই। তা আপনার ইচ্ছা সে বলল। তারপর ক্রসকে বলল, ধীরে-সুস্থে আনন্দ করেন। আমি নিজে প্যারিসকে অত্যন্ত ঘৃণা করি। যদি কোনো শহর হতো প্রতিবন্ধীদের, তা হতে প্যারিস।

ক্রস একটি ট্যাক্সি ডাকল এবং হোটেলে ফিরে গেল। অ্যাথেনা ছাড়া তার প্যারিস দেখার ইচ্ছা হলো না, তাছাড়া তার বিশ্রামের দরকার ছিল। তদুপরি সে বাইরের কিছু জিনিস দেখার জন্য প্যারিসে এসেছিল। যাতে করে তার মাথা পরিষ্কার হয়ে যায়। সে বিবেচনা করল, ফ্যালেন তাকে যা বলেছিল। তার স্মরণ হলো যে লুজি একাই ম্যালিবুতে এসেছিল। গোয়েন্দারা সাধারণত প্যারিসে কাজ করত।

চারটার সময় ক্রস ডাক্তারের কাছে ফিরে এলো। তারা তার জন্য অপেক্ষা করছিল। অ্যাথেনাকে মলিন দেখাচ্ছিল, যাতে ক্রস জানল এটা তার অভিনয় যে ব্যাথেনি একখানা পাস্টরাইজ পোগ্রাসম খাচ্ছিল এবং ডাক্তার খাওয়ার প্লেটটা তার কাছে থেকে একটু দূরে নিয়ে গেল, ফ্রান্স ভাষায় কিছু বলল, কিন্তু ব্যাথেনি কোনো প্রতিবাদ করল না। একজন সেবিকা এলো এবং তাকে নিয়ে সেবার ঘরে গেল।

আমাকে ক্ষমা করবেন, ডাক্তার ক্রসকে বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব।

ক্রস বলল, যা আপনার ইচ্ছা, ডাক্তার চেয়ার থেকে উঠল এবং অন্য একটি কক্ষে প্রবেশ করল। আমি আপনাকে ম্যাডাম সম্পর্কে কিছু বলব। ডাক্তার বলল, এখানে কেউই নেই। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ আপনার জীবনে উন্নতি আনবে যা আপনি অতি সহজেই আরাম-আয়েশের মধ্যে করতে পারবেন। এখানে একজন কুমারীও থাকবে। সে কমপক্ষে এই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর অবস্থান করবে। আমাদের সেখানে শিক্ষক আছে যিনি যত্ন সহকারে সবকিছুই করবে। সেই সময় আমরা জানব, তবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে দেওয়া যাবে কি-না।

অ্যাথেনা পুনরায় কাঁদতে আরম্ভ করল। সে একটা ছোট নীল সিল্কি রুমাল দিয়ে তার চোখ মুছল। ডাক্তার আবেগহীনভাবে তার দিকে তাকাল। ম্যাডাম রাজি আছে। সে একজন শিক্ষক হিসাবে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবে।

সে সোজাসুজি ক্রস বরাবর বসল। চিত্রকর হিসেবে সে যথেষ্ট ভালো। আমি যখন ফ্রান্স ভাষায় কথা বললাম তখন সে যথেষ্ট মজা পেল। সে বুঝতে পারল না কিন্তু স্বতস্ফূর্ত হলো। এটা একটা খুব ভালো দিক।

বাচ্চাটির বিকাশে আপনার অনুমতি ইশারার মাধ্যমে দেখাল। তার অন্যান্য মানবজাতির প্রতি কিছুটা অনুভূতি আছে এবং যা দিনের পর দিন সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে। এটা তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ পাওয়া। এটা কোনো রহস্যময় ব্যাপার নয়, যা বুঝা যায়। যখনই তার মধ্যে এটা অনুসন্ধান করতাম তখন সে আমাকে বলল, তুমি সুন্দর। এখন আপনি অবশ্যই আমাকে বিরক্ত করবেন না মি. ডি লিনা। আমি শিশুটিকে সাহায্যের জন্য এবং চিকিৎসার কারণ হিসেবে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি, আপনি অন্যভাবে নেবেন না। আপনি কোনোভাবে বালিকাটির সেয়ালভাবে উত্তেজিত হয়েছেন কি? সম্ভবত অনভিপ্রেত?

ক্রস এতটাই বিম্মচিত হলো সে হেসে ফেলল। সে আমাকে বলল, আমি জানি না এবং আমি তাকে কখনোই এমন কিছু করিনি।

অ্যাথেনার রাগার ফলে গালগুলো লাল হলো। সে বলল, ব্যাপারটি একটি উপহাস ছাড়া আর কিছুই না। আমি কখনও তার সঙ্গে একাকী থাকিনি।

ডাক্তারের জিদ ধরল, আপনি কখনও তার শরীরে আদর করেছেন? আমি এমন কিছু মনে করছি না যে আপনি তার সঙ্গে করমর্দন, তার চোখে মৃদু চাপ, কিংবা তার গালে চুমা দিয়েছেন।

বালিকা স্ত্রীলোকের জাতি। ওরা সাধারণত খুব কমই সাড়া দেয়। আপনিই প্রথম ব্যক্তি না, যে তার নিষ্পাপতাকে কামে প্রবৃত্ত করেছে।

ক্রস বলল, সম্ভবত সে জানে তার মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা।

সে তার মাকে কেয়ার করে না, ডাক্তার বলল, আমাকে ক্ষমা করবেন ম্যাডাম, আপনার সহযোগিতা তাকে মুক্ত করতে পারে। তাছাড়া আপনি নিজেই তাকে বড় করতে পারেন।

ক্রস তার দিকে তাকাল, যদি আমি এটা করতাম তাহলে অবশ্যই আপনাকে বলতাম এবং তাকে সাহায্য করতাম।

ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বালিকাটির জন্য কোনো দয়া অনুভব করেন? ক্রস একটি বিরতি নিয়ে বলল, হ্যাঁ।

ডাক্তার গ্রিয়ার্ড একটু সরে তার সঙ্গে করমর্দন করলেন। সে বলল, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। আমার বড় আশা ছিল।

যদি সে আপনাকে সাড়া দিত, সে অন্যকেই সাহায্য করার জন্য সাড়া দিত। সম্ভবত সে তার মাকে কিছুদিন সহ্য করবে এবং যা আপনার জন্য যথেষ্ট। আমি কি ঠিক বললাম?

অ্যাথেনা বলল, ও ক্রস– আমি আশা করি তুমি রাগান্বিত হবে না।

ক্রস বলল, ঠিক আছে তাই হবে। ডাক্তার গ্রিয়ার্ড তার দিকে সতর্কতার সাথে তাকাল।

আপনি নিজের প্রতি নির্ভর করতে পারেন কি? সে বলল, বেশিরভাগ মানুষ অনেক সময় খুব বেশি হতাশ থাকে। একসময় আমার পিতা-মাতা ছাড়া আমাকে আঘাত করে, কিন্তু আপনি রাগ করবে না। আমাকে বলুন কারণটা কি।

সে ডাক্তারের কাছে কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারল না, এমনকি অ্যাথেনার কাছেও কিভাবে ব্যাথেনি তাকে গভীরভাবে প্রেমে আবদ্ধ করল। তাও সে বুঝতে পারেনি।

ক্রস সরাসরি ডাক্তারের চোখে চোখ রাখল। সে বলল, সম্ভবত আমি নিজেও এক প্রকার প্রতিবন্ধী। তাছাড়া সম্ভবত আমি কিছু অপরাধ গোপন করেছি।

ডাক্তারের একটু সামনে ক্রস এবং সে ভরাট কণ্ঠে বলল। সে একটু বিরতি নিল, এই প্রথমবার হাসল। আপনার কি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এসেছেন? তারা উভয়ে হাসল।

ডাক্তার গ্রিয়ার্ড বলল, আমার ধারণা আপনারা আগামীকাল সকালে আমেরিকাতে ফিরে যাবেন। তাহলে আপনারা কেন আপনার কন্যাকে আমার কাছে রেখে যাচ্ছেন না? আমার সেবিকারা খুব ভালো এবং আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, আপনার কন্যা আপনার অভাব বুঝতে পারবে না।

কিন্তু আমি তার অভাব বুঝতে পারব, অ্যাথেনা বলল, আমি কি তাকে আজকের রাতটা আপনার কাছে রাখতে পারি এবং আগামীকাল সকালে নিয়ে যেতে পারি আমাদের একটি বিশেষ প্লেন আছে, তাই আগামীকালই রওনা করতে হবে। ডাক্তার বলল, অবশ্যই। এখান থেকে তাকে সকালে নিয়ে যাবেন। আমার সেবিকারা তাকে প্রহরীর মতো পাহারা দেবে। এই প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে এবং আপনি যে কোনো সময় আমাকে কল করতে পারেন। তারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। অ্যাথেনা অভিভূত হলো ডাক্তারের গালে চুমু দিল।

ডাক্তার ঝলসে উঠল, তার শারীরিক গঠন এবং সৌন্দর্য তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলো। তদুপরি তার চেহারার মধ্যে বিরক্তকর আভাস পাওয়া গেল।

অ্যাথেনা, ব্যাথেনি এবং ক্রস দিনের বাকি সময় প্যারিসের রাস্তাঘাটে ঘুরে কাটাল। অ্যাথেনা ব্যাথেনির জন্য নতুন কাপড় কিনল। সে ছবি আঁকার যাবতীয় জিনিস এবং রান্নার জন্য অনেক বক্স কিনল। তারা সবকিছুই হোটেলে পাঠাল।

ভীরু জ্যামস আইল সেছ হোটেলে রাতের খাবার খেল। ব্যাথেনি গ্রিডিলি এবং বিশেষ করে পাসটিই খেল। সে সারাক্ষণ অ্যাথেনার সঙ্গে একটি কথাও বলল না।

ডিনার চলাকালে অ্যাথেনা ব্যাথেনির হাত ধরল এবং বলল, সে এক মাসের মধ্যেই প্যারিসে ফিরে যাবে এবং বাকি পাঁচ বছর ব্যাথেনির সঙ্গে থাকবে।

ব্যাথেনির কোনোই মনোযোগই পরিলক্ষিত হলো না।

সন্ধ্যা হলো, তারা হেঁটে হেঁটে তাদের হোটেলে ফিরে গেল। ব্যাথেনি তাদের মধ্যে ছিল, তারা সারাদিনই ব্যাথেনিকে অনেক আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করল।

পরিশেষে তারা হোটেলে ফিরে গেল। অ্যাথেনা ব্যাথেনিকে ঘুমাতে সাহায্য করল। তারপর সে সুইটে প্রবেশ করল। সেখানে ক্রস তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা লেভেনডার সোফায় পাশাপাশি বসল।

অ্যাথেনা তার দিকে হেসে বলল, প্যারিসের প্রেমিক আমরা কখনোই ফ্রান্সের বিছানায় একসঙ্গে ঘুমাইনি।

ক্রস জিজ্ঞেস করল, তুমি কি ব্যাথেনির এখানে থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন?

অ্যাথেনা বলল। না।

ক্রস বলল, পাঁচ বছর সে অনেক সময় এবং তুমি নিজ ইচ্ছায় তোমার পেশা থেকে পাঁচ বছর বিরত থাকতে যাচ্ছ?

অ্যাথেনা সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল এবং রুমের দিক যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো, সে শান্তভাবে বলল, আমি অভিনয় ছাড়া সবকিছু করতে একটা গর্ব বোধ করি। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন একজন বড় মাপের নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।

.

পর্ব– সাত

দ্য সান্তাডিও ওয়্যার

১৮.

বোকা মানুষের যুক্তিপরায়ণতা বিপজ্জনক হয়।

মদের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার সময় ডন ক্লেরিকুজিও বলল। সেই সময় চুরুটটি সে পাশে রাখল। খুব মনোযোগ দিয়ে শোনো, এটা একটা লম্বা গল্প। আর এটা যা মনে হবে, আসলে তা নয়। প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা… তিনি তার তিন পুত্রের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। আমি কিছু ভুলে গেলে তোমরা আমাকে সাহায্য করিও। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ভুলে যেতে পারেন, এ কথা শুনে তার পুত্ররা হাসল।

আমি সান্তাডিও যুদ্ধের পরের প্রমাণগুলো দেব…। তিনি মদের গ্লাসে চুমুক দেবার জন্যে কিছুটা সময় বিরতি নিলেন। সেই সময়ের কথা যখন সান্তাডিও ক্ষমতায় আমাদের সমান ছিল। কিন্তু হঠাৎ সান্তাডিও শত্রুতে পরিণত হয়ে গেল। কর্তৃত্বের দিকে তারা বেশি মনোযোগ দিল। তাদের চিরন্তন ব্যবস্থাপনায় কোনো বাছবিচার ছিল না। তাদের মধ্যে কোনো আদর্শও ছিল না। আর ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো ক্ষমতা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।

আমি সান্তাডিওকে অনেক বিষয়েই প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমি শান্তিতে থাকতে চাই বলে অনেক ছাড় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ছিল খুবই শক্তিশালী। উত্তেজিত জনতার জন্য তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল। তারা বিশ্বাস করে শক্তিই সব। সে কারণেই তারা আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো।

জর্জিও মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলল, এই গল্প কেন ক্রসকে জানতে হবে? এটা কিভাবে তাকে কিংবা আমাদের লাভবান করতে পারে?

ভিনসেন্ট ক্রসের ওপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। পেটি তার দিকে তাকাল। ডনের তিন পুত্রের কেউ-ই চাচ্ছিল না যে তিনি গল্পটা বলেন।

কারণ, পিপি ও ক্রকসিফিজিওর কাছে আমরা ঋণী, ডন বলল, পরে তিনি সরাসরি ক্রসকে বলল, তুমি যেরকম মনে করবে এটা সেরকমভাবেই তৈরি করা। তুমি যে অপরাধের কথা সন্দেহ করো আমি ও আমার পুত্র কিন্তু তা থেকে মুক্ত। পিপি আমার ছেলের মতো, আর তুমি আমার নাতির মতো, আমি মনে করি সবাই ক্লেরিকুজিও পরিবারের রক্ত।

জর্জিও আবার বলল, এটা আমাদের সবার জন্য ভালো করতে পারে না।

ডন উত্তেজিতভাবে তার হাত নাড়াচ্ছিল। পরে তার পুত্রদের বলল, এ পর্যন্ত আমি যা বলছি তা সত্য।

তারা মাথা নাড়ল। পেটি বলল, আমাদের অবশ্যই প্রথম থেকে তাদের ভুলে যাওয়া উচিত।

ডন ক্রসকে বলল, আমার ছেলেরা যুবক, তোমার বাবাও যুবক ছিল, এমনকি তাদের কারো বয়সই ত্রিশ হবে না। আমি চাই না তাদের জীবনটা একটা বড় যুদ্ধে শেষ হয়ে যাক। ডন সান্তাডিও বলল, ঈশ্বর তার আত্মায় করুণা বর্ষণ করুক। তিনি ছেলের চেয়ে সৈন্য হিসেবে তাদেরকে বেশি ভাবতেন। জিমি সান্তাডিও ছিল বয়স্ক। আর সে আমাদের পুরানো বন্ধু গ্রোনিভেল্টের  সাথে কাজ করত। ঈশ্বর তার ওপরও করুণা করুক। জিমি দুর্ভাগ্যের অধিকারী, সে-ই একমাত্র ব্যক্তি যে জেনেছিল আমাদের সবার জন্য শান্তিই উৎকৃষ্ট সমাধান। কিন্তু বুড়ো লোকটা আর তার অন্য সন্তানরা রক্তপাত ঘটাতে উত্তেজিত থাকত।

যুদ্ধটা রক্তাক্ত হওয়ার পেছনে আমার কোনো স্বার্থ ছিল না। আমি সময়কে ঠিকমতো ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, ভালো কিছুর করার জন্য। আমার প্রস্তাবনা তাদেরকে প্রমাণ বা বিচার-বিবেচনা করতে বলেছিলাম। আমি তাদেরকে সব ধরনের সমাধানের পথ দেখিয়েছিলাম। তারা আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল। জানাদুর অর্ধেকটা তাদের কাছে চেয়েছিলাম। পরিবর্তে তারা আমেরিকায় ড্রাগের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে। খুবই বোধগম্য প্রস্তাব। ড্রাগ ব্যবসায় অনেক অর্থ আছে আরো এটাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনায় জড়াতে হতো না। একটা ছোটখাটো ব্যবসাতেও অনেক কাজ থাকে। আর এ সমস্ত প্রস্তাবই সান্তাডিও’র শক্তি বৃদ্ধি করেছিল, আমি চেয়েছিলাম ক্লোরিকুজিও জুয়াখেলার সব দিক নিয়ন্ত্রণ করুক। কারণ জুয়া খেলা ড্রাগ ব্যবসার মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়, খুব লাভজনকও নয়। কিন্তু সচেতনভাবে ম্যানেজ করতে পারলে দীর্ঘ সময়ের জন্য মূল্যবান হয় আর এতে ক্লেরিকুজিও’র শক্তি বাড়ত। আমি সব সময় সমাজের একজন সাধারণ সদস্য হতে আশা করেছিলাম। আমি মনে করি জুয়া খেলা ঝুঁকি আর নিচু মানের কাজ ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনতে পারে না। যা সময়ই আমাকে প্রমাণ করে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সান্তাডিও সবকিছু চেয়েছিল। সব কিছু ভাগ্নে, এটা নিয়ে ভাব। এটা ছিল আমাদের সবার জন্য একটা খুবই বিপজ্জনক সময়।

যুবকগণ, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারীরা তাদের বর্ণকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে, আমি ব্রঙ্কস এনক্লেভ প্রতিষ্ঠিত করলাম। সৈন্য বাড়ানোর জন্য সিসিলি থেকে নতুন লোক আনলাম। শুধু একটা বিষয় আমি কখনো বুঝতে সক্ষম হইনি, কিভাবে মহিলারা

সৃষ্টি করতে পারে। আমার মেয়ে রোজ ম্যারি সে সময় আঠার বছরের যুবতী। সে কিভাবে জিমি সান্তাডিও’র ওপর আসক্ত হলো তা আমি আজও ভেবে পাই না। সে বলেছিল তারা ছিল রোমিও এবং জুলিয়েটের মতো। রোমিও এবং জুলিয়েট কারা। তাদের নাম কি খ্রিস্টানদের নামে ছিল? তারা নিশ্চিতভাবেই ইতালিয়ান ছিল না। এটা শুনে আমি মিটমাট করার চেষ্টা করলাম। আমি সান্তাডিও পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করলাম। আমি অনেক ছাড় দিলাম। এটাকে একটা দুর্বলতা হিসেবে মনে করল। আর এভাবে ট্রাজেডির বছরগুলো আরও দীর্ঘায়িত হলো।

ডন থেমে গেল। জর্জিও মদের গ্লাস, রুটির খণ্ড ও দুধ মেশানো পনির দিয়ে তাকে সহযোগিতা করল। পরে ডনের পাশে দাঁড়াল।

আজ কেন? জর্জিও জিজ্ঞেস করল। কারণ, আমার প্রিয় ভাগ্নে কিভাবে তার বাবা মারা গিয়েছিল সে সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। আর আমরা অবশ্যই যে কোনো সন্দেহ থেকে মুক্ত হতে চাই। তার হয়তো আমাদের ওপর সন্দেহ থাকতেও পারে, ডন বলল। ক্রস বলল, ডন ডোমেনিকো, আপনার ওপর আমার কোনো সন্দেহ নেই।

সবারই সবকিছুতে সন্দেহ আছে, ডন বলল, এটা মানুষের এক প্রকার সহজাত প্রকৃতি। রোজ ম্যারি ছিল যুবতী। তার পার্থিব বিষয় সম্পর্কে কোনো জ্ঞান ছিল না। প্রথমেই যখন দুটি পরিবারই তাদের বিষয়ে বিরোধিতা করল তখন তার মনে ভেঙে গেল। তার কোনো আসল ধারণা ছিল না। আর সে কারণেই সে সবাইকে একত্রে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে বিশ্বাস করেছিল ভালোবাসা সব জয় করে ফেলতে পারে। যা সে পরে আমাকে জানিয়েছিল। সে ভালোবাসায় খুবই আসক্ত ছিল। আর সে ছিল আমার জীবনের আলো, যুবতী অবস্থায় আমার স্ত্রী মারা গেল আর আমি পুনরায় বিয়ে করিনি। কারণ রোজ ম্যারির প্রতি আমি অন্য কারো সমঝোতা করতে পারব না। আমি তার কোনোকিছুই প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার খুবই উচ্চ আশা ছিল। তাই সান্তাডিও’র সাথে তার বিয়েটা আমি মেনে নিতে পারলাম না। আমি এটা নিষেধ করলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার নির্দেশ অবশ্যই আমার সন্তানরা পালন করবে। আমি চেয়েছিলাম সে কলেজে যাক। অন্য পরিবারের যে কাউকে বিয়ে করুক। জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি সে সময় আমাকে সমর্থন করেছিল। আর তাদের সাহায্য আমার প্রয়োজন ছিল। আমার আশা ছিল তাদের সন্তানরা পরবর্তীতে যেন ভালো পজিশনে চলে যেতে পারে। আর আমার ছোট ছেলে সিলভিও। ডন বসার ঘরের দেয়ালের ফটো দেখাল।

ক্রস কখনো ছবিটার দিকে আন্তরিক দৃষ্টিতে তাকাল না। কারণ তার ইতিহাস তার জানা ছিল না। ফটোর যুবকটি দেখতে বিশ বছরের মতো হবে, রোজ ম্যারির সমবয়স্ক। তার চোখ ভদ্রোচিত, অধিকতর বাদামি ও জ্ঞানদীপ্ত। জানালাবাহী কামরাটি সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরে গেল। হাভানা সিগারেট খেয়ে জর্জিও তখন অনেকটা মাতালের মতো আচরণ করছিল। ডন ক্লেরিকুজিও বলল, আমি রোজ ম্যারির চেয়ে সিলভিওর ওপর বেশি নজর দিয়েছিলাম। সবার চেয়ে তার মনটা একটু বেশি ভালো ছিল। সে ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পেয়েছিল। তাকে নিয়ে আমি অনেক আশাই করেছিলাম। কিন্তু সে ছিল খুবই সাদাসিধে।

ভিনসেন্ট বলল, সে খুব একটা কেতাদুরস্ত ছিল না। আমাদের কেউই তার সাথে কোথাও যেতাম না। নিজেকে প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্য কিছু করতে সে পছন্দ করত না।

জর্জিও আলাপটা বাদ দিল। রোজ ম্যারি ও জিমি সান্তাডিওকে একটা নাড়া দিয়েছিল। রোজ ম্যারি ধারণা করেছিল যে, জর্জিও ও সিলভিও আলাপ করলে তারা দুটি পরিবারকে একত্রে আনতে পারবে। সে সিলভিওকে বলায় কাউকে না বলে মোটেলে গিয়েছিল। তাদের তিনজন তাদের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছিল। সিলভিও সবসময় রোজ ম্যারিকে রো বলে ডাকত। তার শেষ কথা তাকে বলেছিল রো, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বাবা আমার কথা শুনবে।

কিন্তু সিলভিও কখনো তার বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সান্তাডিও’র দুই ভাই ফনজা ও ইতালো অভিভাবকের মতো তাদের ভাই জিমিকে পাহারা দিয়েছিল। সান্তাডিও’র উত্তেজিত লোকেরা সন্দেহ করছিল, রোজ ম্যারি তাদের ভাইকে ফাঁদে ফেলছে। অন্তত বিয়ে করতে বাধ্য করবে, যাতে তাদের পরিবারের শক্তি কমে যায়। আর রোজ ম্যারি তার হিংস্র সাহসের জন্য তাদের কাছে অশোভন ছিল এবং তাদের ভাইকে বিয়ের জন্য নিশ্চিত করল। সে তার বাবা গ্রেট ডন ক্লেরিকুজিও’রও বিরোধিতা করতে পারে।

সিলভিও মোটেল ছাড়ার সময় তারা তাকে রবার্ট মোসেস কটেজের কাছে ফেলে গুলি করে হত্যা করল। তাকে ডাকাতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ওটা সান্তাডিও পরিবারের একটি রীতি বলে আখ্যায়িত করা যায়। তাদের অনেক কাজই ছিল অসভ্য, বর্বর পশুর মতো।

ডন ক্লেরিকুজিও কাছে এক মুহূর্তের জন্য ঘটনাটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। অন্যদিকে জিমি সান্তাডিও ডনের কাছে ব্যক্তিগত অনুরোধ নিয়ে এলো। সে সময় তার রক্ষী ছিল কিন্তু হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।

ডন ক্লেরিকুজিও বলল, সান্তাডিও পরিবারকে দায়ী ভাবলে আমি আমার জীবনটা আপনার হাতে তুলে দেব। আমি আমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেননি। তিনি আমাকে বলতে বলেছে, যে সে আপনার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করবে। সে আমাকে আপনার মেয়েকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।

রোজ ম্যারি জর্জিও’র হাত ধরতে এসেছিল। তার মুখমণ্ডলে এমনই করুণার ছাপ পড়েছিল যে, মুহূর্তের মধ্যেই ডনের মন গলে গেল। আর এজন্য দুঃখ ও ভয়ের মধ্যেও তার ভেতর আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলল।

সে ডনের দিক থেকে ঘুরে জর্জিও সান্তাডিও’র দিকে এমন ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাল, যাতে ডন ক্লেরিকুজিও কিছু সময়ের জন্যে হলেও যেন তার জীবনের জন্য করুণা করে। সে কিভাবে এমন সুন্দর মেয়ের জীবনটা নষ্ট করতে পারে।

ডন ক্লেরিকুজিও হত্যাকাণ্ডের জন্য সান্তাডিও’র পরিবারকে দায়ী করল। তার কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। কিন্তু তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

আমি পুনরায় বিশ্বাস স্থাপন করে তোমাকে গ্রহণ করলাম, ডন বলল। আর বাস্তবিকই জিমির নির্দোষিতার ব্যাপারে তিনি বিশ্বাস করলেন। যদিও তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। রোজ ম্যারির বিয়েতে আমার সম্মতি আছে কিন্তু এই বাড়িতে নয়। এমনকি আমার পরিবারের কেউ-ই সেখানে উপস্থিত থাকবে না। আর জিমি, তোমার বাবাকে বলল যে বিয়ের পর আমরা একত্রে বসে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

ধন্যবাদ, জিমি সান্তাডিওকে বলল। আমি বুঝেছি। আমাদের পামম্পিং হাউজে বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। পুরো এক মাস আমার পরিবার সেখানে থাকবে। আর আপনার পরিবারের সবাইকে নিমন্ত্রণ দেয়া হবে। তারা আসতে না চাইলে আসবে না। এটা তাদের সিদ্ধান্ত।

পরে রোজ ম্যারি ডনের বাহুতে ভেঙে পড়লেন। সে তার ভয়ের কারণ বুঝল। সে তাকে আস্তে আস্তে বলল, আমি গর্ভবতী।

আহ ডন বলল। সে জিমি সান্তাডিও’র দিকে তাকিয়ে হাসল।

রোজ ম্যারি আবার ফিসফিস করে বলল, আমি তার নাম দিব পরবর্তী সিলভিও। সে প্রায় সিলভিও-র মতো হবে।

ডন তার কালো চুল বিলিয়ে তার গালে চুমু দিল। চমৎকার, সে বলল, আমি তারপরও বিয়েতে উপস্থিত হতে পারব না।

এখন রোজ ম্যারি তার সাহস ফিরে পেল। সে তার মুখ তুলে গালে চুমু দিল। পরে সে বলল, বাবা, কিছু লোক আসতে পারে। আমাকে অবশ্যই কিছু লোক ত্যাগ করতে পারে এটাই, পৃথিবীর রীতি।

তার পাশে দাঁড়ানো পিপির দিকে ডন তাকাল। পিপি বিয়েতে পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করবে। সে নাচতে ভালোবাসে। পিপি, তুমি তোমার কাজিনদের বাদ দিয়েই ভালো নাচতে পারবে।

পিপি রোজ ম্যারির গালে চুমু দেবার জন্য নিচু হলো। আমি অবশ্যই সেখানে থাকব সে বলল, আর জিমি প্রদর্শন না করলে আমরা একত্রে চলে আসব।

রোজ ম্যারি খুশিতে তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে তাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করল।

এক মাস পর পিপি ডি লিনা ভেগাস থেকে বিয়েতে যোগদানের জন্য পামম্প্রিংয়ে উপস্থিত হলো। ঐ মাসেই ডন ক্লেরিকুজিও’র সাথে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি কুওগ ম্যানশনে মিটিংয়ের জন্য অবস্থান করছিল।

ডন পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিয়েছে যে, পিপি ঐ কাজের দায়িত্বে থাকবে। আর যে কোনো আদেশকে ডনের আদেশ হিসেবেই মানতে হবে।

শুধু সাহস করে ডনকে ভিনসেন্ট প্রশ্ন করল। সিলভিও হত্যায় সান্তাডিও জড়িত না থাকলে কি হবে?

ডন বলল, এ কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু তাদের বোকামিটা ছিল খুব নিচু মানের। আর যা আমাদেরকে ভবিষ্যতে বিপদে ফেলতে পারে। আমরা অবশ্যই তাদের সাথে অন্য সময় যুদ্ধ করব। অবশ্য তারা দোষী, আমি হত্যার প্রতিশোধ অবশ্যই নেব। সান্তাডিও পরিবার দোষী না হলে আমরা মেনে নেব যে ব্যাপারটা স্বয়ং আমাদের বিরুদ্ধে। তা কি তুমি বিশ্বাস করতে পারো?

জীবনের প্রথম দিক থেকেই পিপি লক্ষ্য করতে ডন ছিল ক্ষাপা প্রকৃতির লোক। তিনি বাড়ির সাথে নির্মিত ছোট উপাসনালয়ে কাটাতেন। তিনি খেতেন কম কিন্তু মদ খুব বেশি পান করতেন। যা তাকে অসাধারণ করে তুলেছিল। কিছুদিন তার শোবার ঘরে সিলভিও ছবি রেখেছিল।

শেষ দিন ডন পিপির সাথে একান্তে মিটিং করল। পিপি ডন বলল, এটা খুবই কঠিন কাজ। এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারো যে, জিমি সান্তাডিও আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে এবং তা তারা জেনে যেতেও পারে। তা হবে না। কিন্তু কেউই জানে না যে এটা আমার আদেশ। এটা সর্বদা তোমার মাথায় রাখতে হবে। আমার, জর্জিও, ভিনসেন্ট কিংবা পেটির মাথায় নয়। তুমিই এই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছ?

হ্যাঁ, পিপি বলল, আপনি চাচ্ছেন আপনার মেয়ে আপনাকে ঘৃণা অথবা নিন্দা না করে, এমনকি তার ভাইদেরও।

যেখানে রোজ ম্যারি ঝুঁকিতে আছে, তখন একটা অবস্থা দাঁড়াতে পারে ডন বলল।

হ্যাঁ, পিপি বলল।

ডন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। সবকিছু খুব সতর্কভাবে করো বৎস্য, সে বলল। তুমি অবশ্যই শেষ সিদ্ধান্ত তৈরি করতে পারবে। কিন্তু আমি কখনো তোমাকে জিমি সান্তাডিওকে হত্যার আদেশ দেব না।

আর রোজ ম্যারি যদি এটা জানতে পারে তখন… পিপি জিজ্ঞেস করল।

ডন সরাসরি পিপি ডি লিনার দিকে তাকাল। সে আমার সন্তান এবং সিলভিওর বোন। সে আমাদের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকা করবে না।

পামস্ট্রিংয়ে সান্তাডিও ম্যানশনে প্রায় তিন ফ্লোরে চল্লিশটি কামরা রয়েছে। স্পেনীয় কায়দায় চারদিকে খোলা রেখে চতুর্দিক ঘিরে এটি বানানো হয়েছে। এর ভেতরে সুইমিংপুল, টেনিস খেলার জায়গা রয়েছে।

পিপি ডি লিনা শনিবার সকালেই বিয়ের কাপড়-চোপড়ে ভরা একটা সুটকেসসহ এখানে উপস্থিত হলো। দ্বিতীয় ফ্লোরে তার জন্য একটা কামরা বরাদ্দ করা হলো।

দরজা ঠেলে জিমি সান্তাডিও ভেতরে প্রবেশ করল। তার মুখ ছিল খুশিতে উজ্জ্বল। তার পরনে বিয়ের কাপড় পরা ছিল না। সাদাসিধে অথচ তাকে খুব মানিয়েছিল। সে পিপির হাত ধরে শুভেচ্ছা জানাল।

তুমি এসেছ, এটা খুবই মহৎ উদ্যোগ, জিমি বলল। সে বলল, তুমি তাকে ছেড়ে চলে গেছ। এখন সবকিছু নতুন করে তুমি শুরু করো। বয়স্ক লোকেরা তোমার সাথে দেখা করতে চায়।

কতক্ষণ হলো তুমি এসেছ? বৃদ্ধ লোকটি বলল। আমাদের দুটি পরিবারকে মিল করার জন্য তুমি সাহায্য করতে পারে বলে আমার মনে হয়। যে রকম আমরা দুজনে করতে পারি। তুমি শান্তির পায়রা, আমরা অবশ্যই পারব। তোমার মঙ্গল হোক। এবং বিছানায় শুয়ে চোখ বুজল। আজ আমি কত সুখী।

সান্তাডিও’র দুই ভাই ফনজা ও ইতালো পিপির কামরায় আগ্নেয়াস্ত্র ও যোগাযোগের মাধ্যম সন্ধান করছিল। পিপির ভাড়া করা গাড়িও তল্লাশি করল।

নাচ-গান শেষ হলে জিমি ভিড়ের মধ্য থেকে তুলে এনে দুইশতের অধিক অতিথির মাঝে তাকে পরিচয় করিয়ে দিল।

সে বলল, ইনি পিপি ডি লিনা যে বিয়েতে এসেছে। আর সে ক্লেরিকৃজিও পরিবারের প্রতিনিধি। সে আমার খুব প্রিয় বন্ধু। তার বন্ধুরা আমার বন্ধু, তার শত্রুরা আমার শত্রু। সে তার চশমা খুলে বলল তুমি পরিবারের সবাইকে একত্রে আনতে পারবে, পারবে না পিপি?

এটা খুব কঠিন পিপি বলল।

জিমি সান্তাডিও পিপির পাশে দাঁড়াল। তুমি সব কাজ করতে পারো, আমি এটা তোমার সম্পর্কে বলতে পারি। সে বলল, আমাদের দুটি পরিবারকে একত্র করতে কিছুই আমাদেরকে থামাতে পারে না। জিমি সান্তাডিওকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল।

পিপি খুব মেপে মেপে আন্তরিকতার সঙ্গে উত্তর দিচ্ছিল। আমরা পারব, সে বিস্মিত হয়েছিল যে, জিমি সান্তাডিও কতই না সৎ।

আমি তোমাকে শপথ করে বলতে পারি পিপির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। সে পিপির হাত ধরল। সিলভিওর মৃত্যুতে আমাদের কোনো কিছু করার ছিল না। কিছু না। আমার বাবার মাথায় হাত রেখে শপথ করতে পারি।

আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, বলে জিমির হাতে চাপ দিল। তার সন্দেহের একটা সময় ছিল। কিন্তু এটা এখন কোনো বিষয় না। খুব দেরি হয়ে গেছে।

পিপির আবদারে আনুষ্ঠানিক সভার আয়োজন করে জিমির পাঁচ ভাই। তারা দুই পরিবারের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করা হলো।

একটা বড় ট্রাক সান্তাডিও গেটের কাছে এসে থামল। দুজন গার্ডের একজন ট্রাকের কাছে গেল। আর ড্রাইবার তাকে বলল যে, একটা পুরনো জেনারেটর নিয়ে ফিরে আসবে।

বিলম্ব হয়েছে? গার্ড বলল।

তার সাথে কথা বলার সময় ড্রাইভারের হেলপার ট্রাক থেকে নেমে অন্য গার্ডের দিকে এগিয়ে গেল। উভয় গার্ডই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করল।

একই সময়ে দুটি ঘটনা ঘটে গেল। ড্রাইভার তার কাছাকাছি চলে গিয়ে সরাসরি তিনটি গুলি করল। ড্রাইভার ও হেলপারের মৃত্যু হলো ধারালো চাকু আক্রমণে। আর তার ঠোঁট দুটিও কেটে গেল।

মাঠের উপর তাদের লাশ পড়ে ছিল। এর মধ্যেই একটি ট্রাক এসে থামল। এটা থেকে বিশ জন ক্লেরিকুজিও সৈন্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুখোশ পরা, কালো পোশাক পরা শব্দহীন বন্দুক নিয়ে জর্জিও, ভিনসেন্ট, পেটির নেতৃত্বে প্রাসাদে উঠল বিশেষ কিছু লোক টেলিফোন লাইন কাটল। অন্যরা প্রাসাদে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুখোশ পরা দশ জন লোকের সাথে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি ডাইনিং রুম আক্রমণ করল।

সান্তাডিও’র ভাইয়েরা পিপির সাথে মদপান করল। সে তাদের থেকে দূরে ছিল। কোনো কথা হচ্ছিল না। দখলদাররা অস্ত্র বের করল। সান্তাডিও’র পাঁচ ভাই একটু সরে দাঁড়াল বুলেটের হাত থেকে রক্ষার জন্য। মুখোশ পরা একজন, পেটি, তাদের সামনে দাঁড়াল। সেই সময় বাকি পাঁচ জন শেষ টান মারছিল। তাদের মধ্যকার একজনের চিবুকের নিচে একটা বুলেট ঢুকে গেল। ভাঙা গ্লাসের টুকরায় ফ্লোরটা চকচক করতে লাগল।

মুখোশ পরা লোকগুলো জর্জিও, পিপিকে একটি করে মুখোশ, কালো ট্রাউজার ও সুয়েটার দিল। পিপি তাড়াতাড়ি তার পোশাক পরিবর্তন করে আর তার অন্য কাপড়গুলো ব্যাগে ভরে মুখোশ পরা একজন দখলদারের হাতে দিল।

অস্ত্রহীন পিপি জর্জিও পেটি ও ভিনসেন্টকে ডন সান্তাডিও লম্বা করিডোরে নিয়ে গেল। সে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলল।

ডন সান্তাডিও তখন বিয়ের কেক খাচ্ছিলেন। তৎক্ষণাৎ চারজন লোক তার মুখে বালিশ চেপে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে তারা কেকের বাটি পেছনের মেঝেতে পড়ে গেল।

নার্স কামরার কোণে পড়েছিল। পেটি তার পাশে গিয়ে নাইলনের চিকন রশি দিয়ে চেয়ারের সাথে তাকে বেঁধে ফেলল।

তারা আবার মিলিত হলো। ভিনসেন্ট পিপিকে অস্ত্র ও একটা লম্বা তামার রশি হস্তান্তর করল।

পিপি তাদেরকে কামরা থেকে নিচের লম্বা করিডোরে নিয়ে গেল। পরে তৃতীয় ফ্লোরে বাসর ঘরে নিয়ে গেল। করিডোরটা ফুলে ফুলে সাজানো ছিল।

পিপি বাসরঘরের দরজায় ধাক্কা দিল। এটা আটকানো, পেটি লাফ দিয়ে লকটি সরিয়ে ফেলল। এতে করে সহজভাবে দরজাটা খুলে গেল। ঘরে প্রবেশ করে তারা পুনরায় দরজাটি লক করে দিয়েছিল।

রোজ ম্যরি ও জিমি ভোলামেলা অবস্থায় বিছানায় ছিল। সদ্য তারা তাদের ভালোবাসা শেষ করেছে। রোজ ম্যারির ডান হাত জিমির চুলে আর বাম হাত তার পেটের ওপর। জিমি পুরো নগ্ন। কিন্তু অন্য লোক দেখে সে তড়িঘড়ি করে বেড শিট পরে নিল। সে সবকিছু বুঝল।

এখানে নয়, বাইরে, এ কথা বলে সে তাদের দিকে এগিয়ে গেল।

রোজ ম্যারি কিছু ভাবতে পারছিল না। জিমি দরজার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে সে তাকে আঁকড়ে ধরল। কিন্তু সে তাকে কৌশলে এড়িয়ে গেল। মুখোশ পরা জর্জিও, পেটি ও ভিনসেন্ট কর্তৃক ঘিরে ফেলা দরজার মধ্য দিয়ে সে বাইরে গেল। রোজ ম্যারি বলল, পিপি দয়া করে এমন কাজ করো না। আর যখন সে বুঝতে পারল যে মুখোশ পরা লোকগুলো তার ভাইয়েরা তখন বলল, জর্জিও, পেটি, ভিনসেন্ট এমন কাজ করিও না ভাই।

পিপির জন্য একটা খুব জটিল সময় ছিল। ক্লেরিকুজিও পরিবার হত্যাকারী একথা যদি রোজ ম্যারি বলে দেয়। অতএব তার প্রথম কাজ হবে তাকে হত্যা করা। ডন কিন্তু তাকে এ নির্দেশ দেয়নি। তাহলে কিভাবে তার মেয়েকে হত্যা করে তার ভাইয়েরা এটা মানবে কি? আর সে কিভাবে জানে যে লোকগুলো তার ভাই? সে বুদ্ধি আঁটল। তার পেছনের দরজা বন্ধ করে দিল আর বাইরের করিডোরে জিমি ও রোজ ম্যারির তিন ভাই এলো।

জিমি সান্তাডিও’র বেডশিট পরল। তারপর এক টানে পিপির মুখ থেকে মুখোশটা খুলে ফেলল। জর্জিও তার একটি হাত আঁকড়ে ধরল, পিপি অন্য হাত ধরল। এখন পিপি তার রশিটা জিমির গলায় প্যাচিয়ে ফ্লোরে শুইয়ে দিল। জিমি পিপির দিকে করুণা ভরে তাকিয়ে রইল। এটা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বা ঈশ্বরের রহস্যময় কাজ।

পিপি প্যাঁচ দিয়ে রশিটা টাইট করল। পেটি তার সাথে সহযোগিতা করল। সাদা বেডশিট দিয়ে জিমি সান্তাডিও শরীরের উপর এমন করে রাখল, মনে হলো যেন কাফন পরা কেউ। ভেতরে বাসরঘর, রোজ ম্যারি আর্তচিৎকার শুরু করল…

ডন তার কথা শেষ করল। তিনি অন্য চুরুট ধরালেন এবং তার মদে চুমুক দিল।

জর্জিও বলল, পিপি সবকিছু পরিকল্পনা করেছিল। আমরা পলায়ন করেছিলাম আর সান্তাডিও শেষ হয়ে গেল। এটাই আসল কথা।

ভিনসেন্ট বলল, এটাতে সবকিছু সমাধান হয়েছে। তখন থেকে আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই।

ডন ক্লোরিকুজিও দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমার সিদ্ধান্ত হিসেবে এটা ভুল ছিল। কিন্তু আমরা কিভাবে জানব যে রোজ ম্যারি পাগল হয়ে যাবে? তোমরা অবশ্যই জানো যে, আমি এখনও ষাট বছরে পা রাখিনি। আমার শক্তি বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভালোভাবেই চিন্তা করতে পারি। আমি অবশ্যই জানতাম যে এটা আমার মেয়ের জন্য বড় ট্রাজেডি। কিন্তু এটা জানতাম না যে, এজন্য একটা বিধবা চিরকাল ভোগ করবে। তারা আমার ছেলে সিলভিওকে হত্যা করেছে। মেয়ে হোক বা না হোক কিভাবে আমি ক্ষমা করব? কিন্তু আমাকে অবশ্যই আমার ছেলে ও মেয়েকে রক্ষা করতে হবে। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল।

তোমরা জানো, ডেন্টি জিমি সান্তাডিও’র ছেলে। ডেন্টির বাবার অভাব পূরণের জন্য আমি বছরের পর বছর চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। আমি চেষ্টা করব তার যন্ত্রণা থেকে যাতে আমার মেয়ে মুক্তি পেতে পারে। একজন ক্লেরিকুজিও হিসেবে ডেন্টিকে আনা হবে। আর সে থাকবে আমার ছেলেদের সাথে এবং আমার উত্তরাধিকারী হবে।

কী ঘটতে যাচ্ছে ক্রস তা বোঝার চেষ্টা করল। ক্লেরিকুজিও’র প্রতি উত্তেজনায় তার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। সে তার বাবা পিপি সম্পর্কে ভাবল। সে শয়তানের মতো কাজ করেছে। সান্তাডিও পরিবারের মৃত্যুর জন্যে সে-ই দায়ী। এমন লোক কিভাবে তার পিতা হতে পারে?

সে পরে তার প্রিয় খালা রোজ ম্যারির কথা ভাবল। ভাঙা মন নিয়ে এতদিন ধরে বেঁচে আছে সে। সে জানে যে, তার বাবা ও ভাইয়েরা তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তার নিজের পরিবার তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পরে ডন সম্পর্কে বিস্মিত হলো। নিশ্চিতভাবে সে বিশ্বাস করে না যে, পিপির দুরভিসন্ধির জন্য এই গল্প ঠিক আছে। কেন সে এত বড় সিদ্ধান্ত নেবে? এখানে আসল কারণটা কি?

ক্রস কখনো জর্জিওকে বুঝতে পারে না। সে কি প্রতারণার হত্যাকে বিশ্বাস করে? এটা স্বাভাবিক যে, ভিনসেন্ট ও পেটি বিশ্বাস করে। কিন্তু এখন সে বুঝতে পারল, এ ঘটনার পেছনে তার বাবা, ডন ও তার তিন ছেলের মধ্যে কোনো গোপন চুক্তি ছিল। তারা সান্তাডিওতে একসঙ্গে মিলিত হয়ে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে। আর তার বাবা রোজ ম্যারিরও ক্ষতি করেছিল।

ক্রস বলল, আর রোজ ম্যারি কখনো কথা বলেনি।

না, অবজ্ঞাভরে ডন বলল। সে অনেক বেশি বলেছে। সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে। গর্বভরে সে বলল, আমি তাকে সিসিলি পাঠাব। আমেরিকার মাটিতে ডেন্টিকে ফিরিয়ে আনব। কে জানে, কোনো দিন সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে যায়। ছোট্ট ঐ বালককে নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন। যৌথভাবে ক্লেরিকুজিও ও সান্তাডিও’র রক্ত তার জন্য খুবই মঙ্গলজনক।

আর তোমরা কি ভয়াবহ কিছু জানো? ডন বলল। তোমার বাবা পিপি একটা ভুল করতে বাধ্য হয়েছিল। রোজ ম্যারির এত বড় ক্ষতি করা তার কখনো উচিত হয়নি। যদিও এর জন্য আমি তাকে ভালোবাসি। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তিনি এক চুমুক মদ খেল। ক্রসের দিকে তাকিয়ে বলল, সচেতন হও। পৃথিবী যা তাই। আর তুমি যা তাই।

ভেগাসে ফিরে এসে এই ধাঁধা নিয়ে চিন্তা করল। পরিশেষে ডন কেন তাকে সান্তাডিও যুদ্ধের গল্প বলল? কেন রোজ ম্যারির কাছে যেতে বাধা দিলেন আর কেনই বা অন্যরকম চিরন্তন বানি শোনালেন? অথবা তাকে তার বাবার হত্যাকারীর ওপর প্রতিশোধ না নেওয়ার কথা বলে তাকে সতর্ক করলেন। কারণ ডেন্টি এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। ডন রহস্যময় একজন মানুষ। কিন্তু একটা বিষয়ে ক্রস নিশ্চিত ছিল। তার বাবাকে কে হত্যা করেছিল এটা ডেন্টি জানলে সে তাকে অবশ্যই হত্যা করবে। আর নিশ্চিতভাবেই এটা ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও-ও জেনেছিল।

.

১৯.

ডেন্টি ক্লেরিকুজিওকে এই গল্প শুনতে হয়নি। যখন তার বয়স দুই বছর ৫৩তখন থেকেই তার মা রোজ ম্যারি তার ছোট্ট কানে ফিসফিস করে বলত। যতবার তার অনেক মুছে যাওয়ার ঘটনার একটি ভাবত; ততবার তার স্বামী ও তার ভাই সিলভিওর প্রতি তার হারানো ভালোবাসার যন্ত্রণা অনুভব করত। ততবার ভয়ানক পিপির এবং তার ভাইদের কর্তৃক তাকে পরাভূত করার কথা ভাবত।

রোজ ম্যারি তখনই প্রকটভাবে মূৰ্ছিত হয়ে যেত যখনই তার পিতা ডন ক্লেরিকুজিওকে তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করত। মিস্টার ডন সব সময় এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করত। যেহেতু সে প্রত্যাখ্যান করত যে তার পুত্ররা ও পিপি নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু দুবার সে তাকে অভিযুক্ত করার পর, এক মাসের জন্যে রোজ ম্যারিকে ক্লিনিকে রেখেছিল বিনা বাক্যে। তারপর সে ক্ষ্যাপার মতো কথা বলত এবং আবার কখনো সরাসরিভাবে তাকে দায়ী করত না।

কিন্তু ডেন্টি সর্বদা তার ফিসফিসিয়ে বলা কথা স্মরণ করছিল। একটি শিশু হিসেবে সে তার দাদাকে ভালোবাসত এবং তার নিষ্পাপ মনে বলে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু সে তার তিন চাচার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, যদিও তারা তাকে সর্বদা সহজভাবে দেখত। বিশেষভাবে, সে পিপির ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার স্বপ্ন দেখত এবং যদিও এগুলো ছিল তার উদ্ভট কল্পনা। সে এ রকম ভাবত তার মায়ের কল্যাণার্থে। যখন রোজ ম্যারি স্বাভাবিক ছিল, সে পরম মমতায় বিপত্নীক ডন ক্লেরিকুজিও’র যত্ন নিত। তার তিন ভাইয়ের প্রতি সে বোন সুলভ আচরণ প্রদর্শন করত। পিপির সাথে তার দূরত্ব ছিল। কারণ সেই সময় সে ছিল অতি সুন্দর মুখাবয়বের অধিকারী। আর বিশ্বাসযোগ্যভাবে অমঙ্গল কামনা করা তার জন্য কঠিন ছিল। তার মুখমণ্ডলের হাড়ের গঠন তার মুখের বক্রতা এবং তারুণ্য মিশ্রিত বাদামি অনিন্দ্য আঁখি যুগল তার ঘৃণাকে দুরীভূত করল। ডেন্টি তার শিশুর প্রতি প্রদর্শন করেছিল এমন অভিভূতকারী ভালোবাসা যা অন্য কারো জন্য অনুভব করতে পারেনি।

সে তাকে দিয়েছিল উপহারের মতো সেই ভালোবাসা বাইরে যা ছিল তার দাদা ও চাচাদের প্রতি। কিন্তু তা ছিল নানা দোষে কর্দমাক্ত ভালোবাসা। যখন রোজ ম্যারি স্বাভাবিক থাকত সে কখনোই ডেন্টিকে গল্পটা বলত না।

কিন্তু তার মূৰ্ছিত অবস্থায় সে ছিল অশ্লীলভাষী অভিশাপে পূর্ণ। এমনকি তখন তার মুখমণ্ডল একটি ভয়ঙ্কর নোংরা মুখোশে পরিণত হতো। ডেন্টি সব সময়ই বিভ্রান্ত ছিল। যখন তার বয়স সাত বছর, তখন একটা সন্দেহ তার মনে ঢুকে গিয়েছিল। তুমি কিভাবে জানলে পিপি আমার চাচা? সে তাকে জিজ্ঞেস করত।

রোজ ম্যারি উল্লাসের সাথে বকবক করত। রূপকথার বইয়ের বাইরে ডেন্টিকে সে ডাইনী মনে করত। সে তাকে বলল, তারা ভাবে তারা এতই চালাক যে তাদের মুখোশ বিশেষ কাপড় এবং মাথার টুপির জন্য তারাই পরিকল্পনা করে। তুমি কি জানতে চাও যা তারা ভুলে গেছে? পিপি তখন তার নাচের জুতা পরেছিল। চকচকে চামড়া এবং কালো সুতার চট। তোমার চাচা সব সময় তাদের সাথে দল করে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে ঘুরত, তখন জর্জিও সব সময় সামনের দিকে, ভিনসেন্ট একটু পাশে এবং পেটি সব সময় ডান দিকে থাকত। আরো এভাবে তারা পিপির দিকে তাকিয়ে থাকে যদি সে আমাকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কারণ আমি তাদেরকে চিনেছিলাম। এভাবে তারা ইতস্তত করে শেষে পিছিয়ে এলো। কিন্তু তারা আমাকে অবশ্যই মারবে, তারা মারবেই। আমার আপন ভাইয়েরাও সে তারপর এক রকম জোরে কান্নায় ভেঙে পরল যে, ডেন্টি ভয়ে ভীত হয়েছিল।

এমন সময় সাত বছরের একটা ছোট শিশুও আরামদায়ক কিছুর চেষ্টা করবে। আঙ্কেল পেটি তোমাকে কখনো আঘাত দেবে না।

পারলে দাদা তাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তার আঙ্কেল জর্জিও এবং এমনকি আঙ্কেল ভিনি সম্পর্কে সে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু তার শিশুসুলভ হৃদয়ে পিপি ছিল। সে কখনো তাকে মাফ করতে পারছিল না। এই সময়ের মধ্যে ডেন্টির দশ বছর পূর্ণ হলো। সে তার মায়ের মূৰ্ছা দেখে জানল এবং যখন সে ইশারায় তাকে কাছে ডেকে সান্ত্বনা দিয়ে গল্পটা আবারও বলতে বলল। সে খুব জলদি তাকে তার নিরাপদ শোয়ার ঘরে নিয়ে ঢুকল, যাতে দাদা ও চাচারা শুনতে না পারে।

এই সময়ে ডেন্টি পূর্ণ বয়সে পদার্পণ করল। সে এত চালাক ছিল যে, ক্লেরিকুজিও পরিবারকে ছদ্মবেশ দ্বারা বোকা বানাল। সে এত রসাত্মকপূর্ণ বিদ্বেষপরায়ণ এক প্রকৃতি ছিল যে, তার দাদা ও চাচাদের আকারে-ইঙ্গিতে বুঝাল। সে আসল সত্য ঘটনা জানে। সে উপলব্ধি করল তার চাচাদের নিকট সে প্রিয় না। ডেন্টি বৈধ সামাজিক সংসারে মনোনীত হলো, জর্জিও’র আসনে। সম্ভবত শিখে ফেলল অর্থনৈতিক জটিলতা। কিন্তু সে কোনো আগ্রহ দেখাল না। সে তার চাচাদের বিদ্রূপ করল, পরিবারে মেয়েলী পুরুষের পাশে থাকার তার কোনো আগ্রহ নেই। মোল বছর বয়সের ডেন্টির কথা ঠাণ্ডাভাবে এবং ভয়ে ভয়ে জর্জিও শুনল।

আঙ্কেল জর্জিও বলল, ঠিক আছে, তুমি থাকবে না। তার স্বরে দুঃখ ও একটু রাগও ছিল।

যখন ডেন্টি হাই স্কুলের ঊর্ধ্বতন শ্রেণীতে গেল, তখন তাকে ব্রঙ্কস এনক্লেভে পেটির নির্মাণ কোম্পানিতে কাজে পাঠানো হলো। ডেন্টি ছিল কঠোর পরিশ্রমী, তাই সে নির্মাণের সাইটে অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নয়ন ঘটাল। ব্রুঙ্কস এনক্লেভ থেকে পেটি তাকে সৈন্যদের নিয়োগ করল। যখন ডেন্টি যথেষ্ট বয়স্ক হলো, মিস্টার ডন ঘোষণা দিল যে ডেন্টি পেটির অধীনে সৈনিক হিসেবে থাকবে।

ডেন্টির চরিত্র ও তার করা কিছু কাজের ওপর জর্জিও’র দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে মিস্টার ডন তার সিদ্ধান্ত দিল। হাই স্কুলের সুন্দরী ক্লাসম্যাটকে ধর্ষণ এবং তার সমবয়সি অন্য এক ছাত্রকে একটা ছোট্ট চাকু দ্বারা হামলা করার অভিযোগে এক যুবককে অভিযুক্ত করা হলো। ডেন্টি এই অভিযোগ তার দাদার কাছে না জানানোর জন্য তার চাচাদের অনুরোধ করল। তারাও তাকে আশ্বস্ত করল। কিন্তু তারা অবশ্য অতি তাড়াতাড়ি মিস্টার ডনকে জানাল।

এই অভিযোগ অনুযায়ী নির্ধারিত হলে ডেন্টিকে বিশাল অংকের অর্থ জরিমানা দিতে হবে।

আর এই সময়টা ছিল তার তারুণ্যের বয়স, যা ক্রস ডি লিনার প্রতি তার ঈর্ষা বাড়িয়ে দিয়েছিল। লম্বা অসাধারণ সুগঠিত দেহের অধিকারী হিসেবে ক্রস বেড়ে উঠেছিল। ক্লেরিকুজিও গোত্রের সব মহিলা তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছিল এবং করেছিল উত্তেজনার বশবর্তী। তার চাচাতো বোনেরা তার সাথে ফষ্টিনষ্টি করত। মিস্টার ডনের নাতির সাথে কখনো তারা কিছু করত না। গোপন রসিকতাপূর্ণ রেনেসাঁর টুপি পরা এবং তার খাটো পেশিবহুল শরীর দেখে যুবতী বালিকারা ভয় পেত। ডেন্টি এতটাই চালাক ছিল যে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারত।

যখন সিয়েরামের শিকার আশ্রমে ডেন্টিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন সেখানে সে গুলি ছোড়ার চাইতে তার ফাঁদে আটকা পড়াটা অধিক উপভোগ করেছিল। যখন সে এক চাচাতো বোনের সাথে প্রেমে পড়ে গেল, কারণ সে ছিল ক্লেরিকুজিও গোত্রের, খুব সুশ্রী প্রকৃতপ্রদত্ত সৌন্দর্যের মতো। ডেন্টি ছিল আসলেই বেশ অগ্রিম চিন্তার অধিকারী। ব্রঙ্কস এনক্লেভ বসবাসরত ক্লেরিকুজিও’র সৈন্যের মেয়ের মাঝে সে বেশ পরিচিত ছিল। পরিশেষে জর্জিও ছিল নির্মাণ সংক্রান্ত ও শাস্তিদাতা পিতার অভিনেতা, সে তাকে নিউইয়র্ক সিটির মালিকের উচ্চ শ্রেণীর বর্ভেলোর নিচের পদে তালিকাবদ্ধ করেছিল।

তাই প্রচুর উৎফুল্ল, ধূর্ত, চালাক ডেন্টিকে ক্লেরিকুজিও’র প্রজন্মের অন্যতম একজন করে ফেলল। সে জানে এই পরিবার কি করেছিল। সে পরিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে কাজের প্রস্তুতি নিতে হবে।

যেহেতু সময় যাচ্ছিল, ডেন্টি তার পরিবার থেকে তার দূরত্ব বাড়ানো অনুভব করল। মিস্টার ডন ছিল তার অত্যধিক প্রিয় এবং সে তাকে পরিষ্কার বুঝল যে সে এ সাম্রাজ্যের একজন উত্তরাধিকারী।

কিন্তু সে ডনের নাতিদের সাথে তার চিন্তাধারা নিয়ে কোনো সমঝোতার আলোচনা করল না। তার গোপন অভিসন্ধির কথা কাউকে জানাল না। তাছাড়া ডেন্টির প্রস্তাবনা ও দক্ষ ধারণাকে মিস্টার ডন সমর্থন করল না।

যখন সে শিশু তখন থেকেই তার চাচা জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি তাকে উষ্ণ স্নেহ দিত না। এটা সত্য মনে হলেও, পরে পেটির অধীনেই সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। ডেন্টি যথেষ্ট বুঝেছিল যে, হয়তো তার ভুল হয়েছিল কারণ তার বাবা সান্তাডিও’র নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তাকে বিদ্রোহী করেছিল। এমনকি জিমি সান্তাডিও সম্পর্কেও পেটিকে সে জিজ্ঞেস করেছিল এবং তার চাচা তাকে বলেছিল কি পরিমাণ সম্মান তার পিতাকে তারা করত। তার মৃত্যুতে তারা কতটুকু দুঃখ পেয়েছিল। এটা কখনো প্রকাশ্যে বলা হতো না। গ্রহণযোগ্যও বলা হতো না। কিন্তু ডন ক্লেরিকুজিও এবং তার পুত্ররা বুঝেছিল যে, ডেন্টি আসল গল্প জেনেছে। রোজ ম্যারির মূৰ্ছার সময় সব গোপন কথা প্রকাশিত হয়েছিল। তারা এর একটা সংশোধন চাচ্ছিল। তারা তাকে শিশু রাজপুত্র হিসেবে দেখত।

কিন্তু তার মায়ের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা ছিল তার চরিত্রের একটা বিশেষ দিক। তার মূৰ্ছার সময় পিপি ডি লিনার প্রতি উত্তেজিতভাবে সে ঘৃণা প্রকাশ করত এবং তার পিতা ও ভাইদেরকে দোষী করত না।

সব কিছুর সাহায্যে ডন ক্লেরিকুজিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কারণ তার প্রার্থনা যত সহজে পড়েছিল তত সহজে তার নাতির মন বুঝলেন। মিস্টার ডন রায় দিলেন যে, ডেন্টি কখনো সমাজের ছদ্মবেশের জন্য চূড়ান্ত পূর্ণ বিবেচনা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সান্তাডিও এবং ক্লেরিকুজিও রক্তে অত্যধিক নিষ্ঠুর একটা মিশ্রণ ছিল। অতএব ডেন্টি, ভিনসেন্ট ও পেটির সমাজে, জর্জিও পিপি ডি লিনার সমাজে অন্তর্ভুক্ত হবে। তারা সবাই একত্রে চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করবে।

আর ডেন্টি একজন ভালো সৈনিক হওয়াটা প্রমাণিত করল, যদিও সে একজন অদম্য সৈনিক। তার ছিল একটা স্বাধীনতা যা তাকে পরিবারের নিয়ম নীতির বিরোধিতা করাকে উসকে দিত। বাস্তবে কখনো কখনো সে কারো শাস্তির আদেশের বিরোধিতা করত। যখন উদ্বিগ্ন গলিয়নরা বিশৃঙ্খলিত সৈন্য বাহিনীকে ধ্বংসের হাত থেকে অধিকতর কম জটিল অবস্থায় নেয়ার সময় তার হিংস্রতা উপকারী। স্বয়ং ডনের বিষয় ছাড়া ডেন্টি আর কিছুকে তোয়াক্কা করত না। আর রহস্যজনকভাবে উন কঠোর শাস্তি প্রদানকে প্রত্যাখ্যান করত।

ডেন্টি তার মায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিল। যে ভবিষ্যৎ ডনের ওপর নির্ভর করত এবং তার মায়ের মূৰ্ছা প্রায়ই হতো। ডেন্টি লক্ষ্য করত এতে ডন বেশি অধৈর্য হয়ে যেত। বিশেষভাবে যখন রোজ ম্যারি তার পা দিয়ে গোল করে আঁকত, তার মহাপ্রস্থানে পথ এবং পরে তীব্র চিৎকার করে গোল চক্রের ভেতরে তার ঘৃণা প্রকাশ করত।

সে কখনো আবার ঘরে ঢুকত না। এরকম হতো যখন কয়েক দিনের জন্য তাকে আবার ডন ক্লিনিকে রেখে আসল।

আর এভাবে ডেন্টি মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে মূৰ্ছা থেকে তাকে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এবং স্নেহ-মায়ায় ফিরে আনে। কিন্তু সর্বদা একটা ভয় ছিল, শেষে তাকে ফেরাতে পারবে না। যদি না সে স্বয়ং ডনের মতো ক্ষমতাধরে পরিণত হয়। পৃথিবীর মধ্যে ডেন্টি একজন ব্যক্তিকেই ভয় করত, সে ছিল ডন। একটা শিশু হিসেবে তার জন্ম থেকে তার দাদা সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা জন্মেছিল তার অনুভূতিতে, ডন ক্লেরিকুজিও যে তার সন্তানগণ যে রকম ভালোবাসত সে রকমই ভয় পেত। যা ডেন্টির কাছে ছিল আশ্চর্যজনক। ডনের বয়স আশি বছর, তার শারীরিক শক্তি নেই। সে কদাচিৎ তার ম্যানশন থেকে বের হয়, তার উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে। তাকে ভয় করো কেন?

সত্য, সে খায় ভালো, তার দেখার মতো চেহারা আছে। কেবল শারীরিক বিশৃঙ্খলার সময় তার দাঁত দিয়ে নরম করে খাদ্য খেত। পনির, শাকসবজি চিবিয়ে ও স্যুপ খেত। তাছাড়া মাংস ফুটিয়ে কুটি কুটি করে টমেটোর সসের সাথে খেত।

কিন্তু বয়স্ক ডন এখন মৃত্যু পথযাত্রী, তাই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। পিপি যদি জর্জিও’র ডান হাতের মানুষ হয় তাহলে? পিপি যদি সম্পূর্ণ কাহিনী দ্বারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তাহলে? আর যদি এ রকম ঘটে। ক্রস ক্ষমতায় আরোহণ করবে। বিশেষভাবে সে তখন অনেক সম্পদ অর্জনে সক্ষম হবে জানাদুর সাথে সমঝোতায় এসে। অতএব এর বাস্তবিক কারণ আছে। ডেন্টি নিজেকে আশ্বস্ত করে। যে পিপিকে ঘৃণা করত যে তার পরিবার সম্পর্কে সমালোচনা করতে ভয় পেত।

যখন জর্জিও সিদ্ধান্ত নিল যে ডেন্টিকে ক্ষমতার কিছু অংশ অবশ্যই দিতে হবে। পরিবার থেকে লুজির বেতন প্রদানের দায়িত্বে তাকে নিযুক্ত করা হবে তখন ডেন্টি প্রকৃতই জিম লুজির সাথে যোগাযোগ গড়ে নিল।

অবশ্য পূর্ব সতর্কতা নেয়া হলো ডেন্টিকে রক্ষার্থে, যদি লুজি কখনো বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো যাতে লুজি একজন উপদেষ্টা হিসেবে পরিবার নিয়ন্ত্রণের নিরাপত্তা কর্পোরেশনে কাজ করবে। চুক্তিটি বিশ্বস্ততা এবং যাতে নগদ অর্থে লুজিকে বেতন দেয়া হয় এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু কর্পোরেশনের ট্যাক্স ফাইলিংসের অর্থ লুজি গ্রহণ করবে কর্পোরেশনের নকল থাকা প্রাপ্তি শিকারের মাধ্যমে।

অধিকতর আন্তরিক সম্পর্কের জন্য কয়েক বছর আগে থেকেই লুজির জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিল ডেন্টি। লুজির খ্যাতির জন্য সে ভীত হয়নি। সে তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, সে এমন এক লোক যে জীবন সন্ধিক্ষণে অর্থাৎ তার জীবনের শেষ বয়সের জন্য বেশ কিছু পুঞ্জীভূত করে রেখে যেতে চায়। সব বিষয়েই লুজির হাত আছে। সে মাদকদ্রব্য সরবরাহকারীকে প্রতিহত করে। ক্লেরিকুজিও’র অর্থ নিয়ে জুয়া প্রতিহত করে এমনকি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ফিও প্রতিহিত করে। লুজির ভালোবাসা প্রকাশের জন্য ডেন্টি তার সব কৌশল ব্যবহার করল। ডেন্টি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছিল লুজির ওপর, যা তিক্ত যুদ্ধের গল্প, যা ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে। যারা পশ্চিমা সভ্যতা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ডেন্টির নিজের কোনো গোত্রগত কুসংস্কার ছিল না। কৃষ্ণাঙ্গরা তার জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি এবং যদি তারা করে তাহলে তারা অবশ্যই কৃপাহীনভাবে তা দূর করবে।

ডেন্টি ও লুজির একটি ক্ষমতাবান সাধারণ আকাক্ষা। তারা উভয়েই তাদের দৃষ্টিতে একই বেশভূষাতে আসক্ত এবং উভয়েই একই যৌন তাড়না ছিল নারীদের শাসনের প্রতি।

এটা যৌন কামনা উদ্রেককারী নয়, এটা একটা ক্ষমতার প্রকাশ। যখন ডেন্টি পশ্চিমে থাকত তখন তারা একত্রে তাদের সময় ব্যয় করত। তারা একত্রে ডিনার খেত এবং নাইট ক্লাবে তরী ভাসাত। ডেন্টি কখনো ভেগাস ও জানাদুতে তাকে আনতে সাহস দেখাত না এবং এটা তার উদ্দেশ্যও ছিল না।

ডেন্টি লুজিকে বলতে ভালোবাসত কিভাবে সে শোচনীয় অসংযত নারীকে প্রথম চেয়েছিল এবং নারীদের সৌন্দর্যের শক্তিতে উদ্ধত হতো। তারপর সে কিভাবে কোণ পরিস্থিতিতে বিশেষ কৌশলে তাদের ঔদ্ধত্যকে উপভোগ করত যখন তারা যৌন অনিচ্ছাকে রক্ষা করতে পারত না। ডেন্টির কৌশলের চেয়ে লুজির কৌশল ছিল প্রকট ঔদ্ধত্যপূর্ণ। লুজি বলত কিভাবে একেবারে প্রথমেই তার অসাধারণ পৌরুষ শক্তিতে মেয়েদের নিচে ফেলে দিত তারপর তাদের লজ্জিত করত। তারা উভয়েই একমত যে, কোনো নারীকে জোর করে তাদের সাথে যৌন ব্যবহার করে না যতক্ষণ না তারা তাদের ডাকে সাড়া দেয়। তারা উভয়ে একমত যে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন একটা বড় উপহার, যদি সে কখনো তাদের সাথে খোলাখুলির ব্যাপার ঘটায়। যখন তারা এলো, ক্লাবের চারপাশে একত্রে ঘুরত। মেয়েদের তুলে আনত এবং হাসত এই সব বঞ্চিত মেয়েদের যারা ভাবত তাদেরকে চরমসীমায় যেতে হবে। তারপর চূড়ান্ত কাজ প্রত্যাখ্যান করতে হবে। মাঝে মাঝে প্রতিহত করাটা খুবই প্রবল হতো। তারপর লুজি তার অজুহাত প্রদর্শন করে নারীদের বলত সে তাদেরকে গুঁড়িয়ে ফেলে পতিতাবৃত্তিতে দেবে। তাদের মধ্যে যারা নরম হৃদয়ের ছিল তাদের ওপর এই হুমকি কাজে দিত।

ডেন্টির সুর সংযোজনে তারা সন্ধ্যাটা সৌহার্দের সাথেই কাটাল। লুজি যখন নিগ্রোর গল্পটা বলছিল না, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন রকমের নষ্টাদের কথা সে বলার চেষ্টা করছিল।

প্রথম পুরোপুরি পতিতারা যারা টাকার জন্য এক হাত ধরবে এবং অন্য হাত দিয়ে খপ করে আপনার জননেন্দ্রীয়টা ধরবে। তারপর সুশ্রী পতিতারা আপনাকে আকর্ষিত করবে এবং আপনাকে একটা বন্ধুত্বসুলভ সঙ্গম দেবে। আর তারপর সকালে সেখান থেকে চলে আসার আগে ভাড়া পরিশোধের জন্য আপনার কাছে একটা চেক চাবে।

তারপর সুশ্রী পতিতারা, যারা আপনাকে ভালোবাসে, আবার তারা অন্যদেরকেও ভালোবাসে এবং অনেক দিনের সম্পর্ক উন্নয়ন করে।

প্রতিটা ছুটির দিনে যেমন শ্রম দিবসে গহনায় তারা সুশোভিত হয়। তারপর নয়টা থেকে চারটা পর্যন্ত ডিউটি করা ফ্রিল্যান্স সেক্রেটারি এরপর লাইনের বিমানবালা, শৌখিন জিনিসের দোকানের কেরানি যারা আপনাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে কফির আমন্ত্রণ জানাবে। পরে দামি ডিনার খাওয়াবে। তারপর তারা আপনার পাছা আঁকড়ে ধরে তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবে। এরকম করা তাদের প্রিয় অভ্যাস। তাদের সাথে যৌন সম্ভোগ উত্তেজনাময়, নাটকীয়তাপূর্ণ, অশ্রুসজল এবং আত্মসংযম ও ধৈর্যের জন্য কান্নাকে প্রতিহত করবে। আর সেই যৌন সম্ভোগে উজ্জীবিত করবে হয় ভালোবাসার চেয়ে অধিক ভালো।

এক রাত পরে, ভ্যানিসের লে-চিনোইজ রেস্টুরেন্টে ডিনার করল। ডেন্টির পরামর্শে তারা সৈকতের ফুটপাত বরাবর ধীরে-সুস্থে হাঁটা শুরু করল। তারা একটা বেঞ্চিতে বসে দেখতে লাগল মানুষের চলাচল, রোমার ব্লেডের উপর সুন্দরী যুবতী মেয়েদের অবস্থান করা। সব ধরনের পতিতার দালালের তাদের ধরার চেষ্টা এবং সোহাগের আহ্বান করা, সুশ্রী পতিতারা দুজন মানুষের কাছে অভাবনীয় কথার ফুলঝুরি দিয়ে টি-শার্ট বিক্রি করছে। গিটার হাতে দাড়িওয়ালা গায়কের দল, ক্যামেরাসহ পরিবার এবং প্রতিবিম্বিত করে।

তাদেরকে প্রশান্তের কৃষ্ণসাগর যাদের ওপর বালুকাময় সৈকত পৃথক করে। কম্বলে গুটিশুটি দিয়ে থাকে। তারা ছদ্মবেশে তাদের যৌন সম্ভোগ করায় বিশ্বাস করে।

আমি সবাইকে এখানে সম্ভাব্য কারণে তালাবদ্ধ করে রাখব, লুজি হেসে বলল। কি একটা যৌন সংসর্গ করার চিড়িয়াখানা।

এমনকি ওরা স্কেটস পরা সুন্দরী যুবতী বাচ্চা?

ডেন্টি জিজ্ঞেস করল।

আমি বিপজ্জনক অস্ত্র তাদের যোনর ওপর দিয়ে গড়িয়ে অবশ্যই সব চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবে। লুজি বলল, যেখানে অনেক বেগুন গাছ নেই, ডেন্টি বলল। লুজি সৈকতের দিকে এগিয়ে গেল। আর সে এটা দক্ষিণ অঞ্চলের নকলের মেলা বলে অভিহিত করল।

আমি মনে করি যে আমার কৃষ্ণ ভাইদের প্রতি অধিকতর কঠিন হয়েছি।

সে বলল, উদারতার মতো এটা সর্বদা বলে থাকে, এরা সবাই দাসত্বের কৃষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

ডেন্টি ছিদ্র করার যন্ত্রের কাছে অপেক্ষা করছিল এই সময়।

লুজি তার দুই হাত সংযোগ করে তার মাথার পাশে নিয়ে তার জ্যাকেটটা পেছনে টেনে এনে তার অস্ত্রটি পিস্তলের খাপে রাখল। যেন বাজে একটা জিনিস রেখে দিল। তারপর তারা দুজনে সমুদ্র সৈকতের পথে হাঁটা শুরু করল।

দাসত্ব, জিম লুজি বলল, মনোবল ভেঙে দেয় এবং তাদেরকে খুবই নির্ভরশীল বানিয়ে ফেলে। স্বাধীনতা অত্যধিক কঠিন। বৃক্ষরোপিত এলাকায় তারা লালিতপালিত হয়, তিন বেলা খাবার পায়, ভাড়া লাগে না, তারা কাপড় পায় এবং তারা ভালো চিকিৎসা সুবিধা পায়। কারণ তাদের মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। এমনকি তারা তাদের সন্তানদের জন্যও দায়বদ্ধ থাকে না। কল্পনা করো। বৃক্ষরোপিত এলাকার মালিকরা তাদের মেয়েদের সাথে যৌন সংসর্গ করে এবং ঐ সব শিশুর জীবন অন্যদের মতো হবে। নিশ্চিত যে, তারা সব সময় গান গেয়ে কাজ করে। যতই কঠিন হোক না কেন তারা কাজ চালিয়ে যাবেই। আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে, একজন নিগ্রো যে কাজ করবে পাঁচ জন শ্বেতাঙ্গ সেই কাজ করতে পারবে।

ডেন্টি তৃপ্ত হলো। লুজি কি গম্ভীর? এটা ব্যাপার না, সে একটা আবেগ প্রকাশ করল যৌক্তিক কোনো বিষয় না।

তারা পরস্পর উপভোগ করছিল। এটা ছিল সুমধুর রাত। যে সংসার তারা দেখল তা তাদেরকে আরামদায়ক অনুভূতির নিরাপত্তা দিল। এই সব জনগণ কখনো তাদের জন্য বিপদ নয়।

তারপর ডেন্টি বলল, তোমাকে বলার মতো আসলেই একটা জরুরি বিবৃতি আমি পেয়েছি। তুমি প্রথমে পুরস্কার চাও অথবা প্রথমে ঝুঁকি চাও?

লুজি তার দিকে চেয়ে হাসল। সব সময় প্রথমেই পুরস্কার।

ডেন্টি বলল, দুই শত সর্বোচ্চ নগদ সামনে। এক বছর পরে, জানাদু হোটেলে নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে একটা চাকরি। পাঁচ বারে এখন তুমি যা পাও একসাথেই সেই বেতন। হিসাবটা খুব উচ্চ। বড় গাড়ি, কামরা, বড় বাড়ি এবং সব স্ত্রী যৌনাঙ্গ তুমি ব্যবহার করতে পারবে। তুমি হোটেলের প্রদর্শনীর মেয়েদের পাবে, যা খুশি তা করতে। অতিরিক্ত বোনাস চাইলে তুমি এখন বলতে পারো। প্রাথমিক তোমাকে কোনো ঝুঁকি নিতে হবে না।

আহ্বানটা খুবই ভালো, লুজি বলল। কিন্তু কিছু লোক এটা পেতে চাবে। এটাই ঝুঁকি কি?

আমার জন্য, ডেন্টি বলল। আমি সেই ক্ষেপক।

কেন নই? লুজি জিজ্ঞেস করল। এটা বৈধভাবে গড়ে নেবার অভিজ্ঞতা আমার আছে।

কারণ ছয় মাস পরে এখানে থাকতে পারবে না। ডেন্টি বলল।

তাহলে আমি কি করি? লুজি জিজ্ঞেস করল।

পাখির পালক দিয়ে তোমার পাছায় কাতুকুতু দাও।

ডেন্টি সমস্ত পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করল। লুজি হুইসেল দিয়ে তার ধারণার প্রশংসা জানাল।

পিপি ডি লিনা কেন লুজি জিজ্ঞেস করল।

কারণ সে প্রায় বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, ডেন্টি বলল, লুজি এখনো সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো তার জীবনে প্রথম। ডেন্টি তাকে কিছু আলাদা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিল।

তুমি স্মরণ করো যে, বজ স্কানেট আত্মহত্যা করেছে? সে বলল, ক্রসই সেই আঘাত করে, ব্যক্তিগতভাবে নয় কিন্তু লিয়া ভাজি নামে এক নায়কের সাথে।

সে দেখতে কেমন? লজি জিজ্ঞেস করল। যখন ডেন্টি ভাজির বর্ণনা দিল, তখন যে বুঝতে পারল, এই সেই ব্যক্তি যে স্কানেটের সাথে ছিল, হোটেলের লবিতে। যখন তাকে থামিয়ে দিয়েছিল। ভাজি নায়ককে আমি কোথায় খুঁজে পাব?

অনেকক্ষণ ধরে ডেন্টি ভাবল। ডেন্টি কিছু করতে যাচ্ছে যা বাস্তবে পবিত্র পরিবারের আইন ভেঙে ফেলবে, এমনকি ডনেরও। কিন্তু এটা হবে ক্রসের পথের বাইরে এবং পিপির মৃত্যুর পর ক্রসকে অনেকেই ভয় পাবে।

আমি কাউকে কখনো বলব না কোথায় এর জন্ম, লুজি বলল।

ডেন্টি কিছু সময় ভেবে নিল। তার পর সে বলল, সিয়েরায় শিকারি এলাকায় জর্জিও বাস করে। যার মালিক আমার পরিবার। কিন্তু পিপিকে শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারবে না।

অবশ্যই, লুজি বলল, সে তাই করবে সে যা পছন্দ করে। আমার সামনের দুই শত সর্বোচ্চ পদ আমি পাব কি ঠিক?

কি, ডেন্টি বলল।

অবশ্যই ভালো লুজি বলল, একটা বিষয়। যদি ক্লেরিকুজিও আমাকে অনুসরণ করে। আমি তোমাকে প্রতারণা করব।

উদ্বিগ্ন হইও না খোশ মেজাজে ডেন্টি বলল, এটা শুনলে আমি প্রথমেই তোমাকে হত্যা করব। এখন আমাদের নিয়ে বিস্তারিত কথা বলি।

তাদের পরিকল্পনার সময় সবাই চলে গেল।

যখন ডেন্টি পিপি ডি লিনার শরীরে ছয়টি গুলি করল। যখন দূরছাই সান্তাডিও বলে ফিসফিস করে বলছিল, ডেন্টি একটা জয়োল্লাস অনুভব করছিল যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি।

২০. উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অমান্য

২০.

লিয়া ভাজি এই প্রথম তার বস ক্রস ডি লিনার আদেশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অমান্য করল।

এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। গোয়েন্দা জিম লুজি অন্যান্য গৃহ তল্লাশি করল এবং পুনরায় স্কানেটের মত্যু সম্পর্কে প্রশ্ন উপস্থাপন করল। লিয়া স্কানেটের সব বিচারবুদ্ধিকে ঘৃণা করল এবং দাবি করল, সে কেবল হোটেল লবিতে বিশেষ সময়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। লুজি তার কাঁধে মৃদু আঘাত করল, তারপর তার গালে তীব্র বেগে চড় মারল। লিয়া বলল, ঠিক আছে, তুমি ছোট্ট একটি মুদ্রা বিশেষ। আমি তোমাকে শিগগিরই পাব।

লিয়ার মনে লুজির মৃত্যু পরোয়ানা জারি করল। ব্যাপার না, আর যা ঘটেছে এবং সে মনে করল তার ভবিষ্যৎ বিপদের মধ্যে। সে লুজির মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু সে ছিল খুবই সাবধানী। ক্লেরিকুজিও পরিবারে বিধিনিয়ম ছিল খুব কঠিন।

তুমি কখনও একজন পুলিশ অফিসারের ক্ষতি করতে পারবে না।

লিয়া নিজেকে সংবরণ করল, ফিস সারকির সঙ্গে ক্রসের সভায় যাওয়ার কথা। লুজি হলো অবসরপ্রাপ্ত অংশীদার। সে কখনও বিশ্বাস করত না যে, সারকি ভবিষ্যতেও গোপনীয়ভাবে অবশিষ্ট অংশীদার হিসেবে থাকবে। সে নিশ্চিত সারকি লুজিকে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছিল এবং সম্ভবত ভাজিকে কারের মধ্যে অপেক্ষা করতে দেখেছিল। যদি এটা সত্য হতে তাহলে এটা ক্রস এবং তার জন্য বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনত। এই মতবাদের ওপর ভিত্তি করে সে ক্রসের বিচারকে সন্দেহ করল। পুলিশ অফিসার মাফিয়ার মতো একসঙ্গে আঘাত করল।

লিয়া দুজন নতুন সৈন্য সংগ্রহ করল এবং হান্টিং লজ থেকে সান্তা মানকায়, সারকির বাড়িতে গেল। সারকির বাড়ির বাইরের দিক ছিল নির্জন। তার বাড়ির পাশের বাগানটিতে একটি পরিত্যক্ত ঘাসকাটা যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নেই।

কিন্তু গাড়ির গ্যারেজের দরজা খোলা একটি গাড়ি এর মধ্যে আছে এবং লিয়া হেঁটে দরজার কাছে গেল এবং বেল বাজাল। কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। সে বাজাতেই থাকল। সে দরজার বলের মতো হাতলটি পরীক্ষা করল, দরজায় তালা বন্ধ ছিল না। সে কি তাড়াতাড়ি ভেতরে গেল না তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করল? তারপর সে দরজার মধ্য দিয়ে একটি ছোট হল রুমে প্রবেশ করল এবং উচ্চস্বরে সারকিকে ডাকল। এবারও কোনো উত্তর পেল না। লিয়া বাড়ির মধ্যে ঘুরল। দুটো শোবার ঘরই সম্পূর্ণ অনাবৃত, সে বেষ্টনীর মধ্যে এবং বিছানার নিচ অংশ দেখল। সে সোজা ড্রইং রুমে গেল, সোফার নিচ অংশ এবং চেয়ারের গদির মধ্যে কিছু আছে কি-না তা দেখল। তারপর সে রান্নাঘরে গেল এবং একটি প্রেটিও টেবিল দেখল, যেখানে আরো একটি দুধের বাটি, একটি কাগজের থালা, চিজ, স্যান্ডউইচ, সাদা রুটির আংশিক অংশ আরো অনেক কিছু ছিল।

রান্নাঘরের সঙ্গে সংযুক্ত একটি দরজা ছিল, কিন্তু কোনো জানালা পাওয়া গেল না বিধায় লিয়া একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ল।

লিয়া ভাজি অপ্রত্যাশিতভাবে ভেতরে প্রবেশ করল এবং পূর্বপুরুষ ব্যবহৃত একটি বাইসাইকেল দেখল। যে বন্ধকৃত অনেক দরজা খুলল, ভেতরে ওয়ালে পুলিশের পোশাক ঝোলানো মেঝের এক কোণে এক জোড়া কালো জুতা এবং খোঁপা করা একটি পুলিশের টুপি ছিল।

তড়িঘড়ি করে সে অট্টালিকার নিচ তলায় ফিরে এলো এবং ট্রাঙ্ক থেকে সমস্ত পশমের কম্বলগুলো বাইরে ছুঁড়ে মারল এবং নিশ্চিত হলো, জলের তলদেশে প্রথমেই মস্ত বড় মাথা এবং তারপর মাংসহীন দেহ। সারকির ডান চোখে বড় গর্ত এবং তার ওপর লাল মুদ্রার মতো রক্তের জমাট পিণ্ড। তার মুখের চামড়া মোমের মতো নরম, কালো বসন্তের দাগ। লিয়া একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। সে বুঝতে পারল বিষয়টা কি হতে পারে। লিয়া সাবধানে কম্বলগুলো ভাজ করল, শরীরের ওপর রাখল। তারপর বাড়ি থেকে বের হলো। সে তার কোনো হাতের ছাপ রাখল না কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে কম্বলের টুকরাগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়ে এলো। সে কাপড়গুলো পোড়াতে

তারপর লিয়া মেঝেতে রাখা একটি ট্রাঙ্কের কাছে গেল এবং জোরে টেনে ট্রাঙ্ক থেকে ঢাকনাকে আলাদা করল। এটা তাৎক্ষণিক আলোকিত হয়ে উঠল। ট্রাঙ্কের অভ্যন্তরে ভাঁজ করা পরিপাটি কিছু কম্বল দেখতে পেল।

লিয়া সিঁড়ি বেয়ে ফিরে এলো এবং সাগরের কিনারায় দাঁড়াল। দেখল বালুর মধ্যে একজন বোকার মতো মানুষের দেহ লুকিয়ে রাখা। তখন তার ধারণা পাল্টে গেল। সম্ভবত কেউ এখানে এসেছিল এবং সারকিকে চয়ন করেছিল। কিন্তু একজন গুপ্ত ঘাতকের জন্য সেখানে রিস্ক নেওয়া বড়ই কঠিন। তাছাড়া সারকি মানুষ হিসেবে খুবই বিপজ্জনক। তাই লিয়া যুক্তির সাহায্যে প্রবৃত্ত হলো। যদি মানুষটি মৃত হয় তাহলে তার বাড়িতে থাকত।

এমনকি তার জুতাও। তার সৈন্য দল তাকে বিমানবন্দরে নিয়ে এলো এবং যখন সে ভেগাসে যাওয়ার জন্য জাহাজের অপেক্ষা করেছিল। তখন সে বিমানবন্দরের একটি দোকান থেকে নতুন জুয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নতুন কাপড় কিনল। তারপর সে একটি ব্যাগ কিনল এবং তারপর পুরাতন কাপড় চোপড় এটার মধ্যে রাখল। ভেগাসে সে জানদু হোটেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল এবং ক্রসকে একটি সংবাদ পাঠাল। তারপর সে সম্পূর্ণ সিক্ত হলো। সে ক্রসের কল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করল।

যখন কল এলো সে ক্রসকে বলল, কে তার পুরনো কাপড়-চোপড় ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে এবং এটাই প্রথম জিনিস, সে ক্রসকে বলল, তুমি নিজেই পঞ্চাশ গ্রান্ড জমা করেছিলে। ক্রস তার দিকে তাকাল এবং হাসল। লিয়া এমনিতেই সাধারণত নিপুণ পোশাক কিনত। তাই সে একটি ফ্লাউরি জামা, নীল প্যান্ট এবং একটি হালকা রঙের জ্যাকেট কিনল যা একটু নীল। তাকে নিম্নজাতের জুয়াখেলা ব্যক্তির মতো মনে হলো। লিয়া তাকে সারকির সম্পর্কে বলল। সে তার প্রতিশোধের জন্য আক্রমণের নকশা তৈরি করল, কিন্তু ক্রস তাদের মীমাংসা করল, তুমি আমাদের মধ্যেই আছ, তোমার নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু তুমি জুয়া খেলার বাড়ি বলতে কি বোঝাচ্ছ?

অতি সাধারণ লিয়া বলল, সারকি একজনই ছিল যে লুজির সঙ্গে ডেন্টিকে বাধল। অন্যথায় এটা তোমার কথার কথা। ডেন্টি লুজিকে দিয়ে তার অংশীদারকে হত্যা করিয়েছিল।

ক্রস বলল কিভাবে জুয়াখেলার বাড়িতে সারকি বোবার মতো অভিনয় করত।

লিয়া একটু কাঁধ বাঁকাল, সে নকশা দ্বারা বিভূষিত করল, সে বলল, সে লুজির কাছ থেকে টাকা পেত। সে জানত যে লুজি অবশ্যই খোটাখুঁটি খেলতে থাকবে। কারণ তুমি তাকে টাকা দিয়েছিলে, মোটের ওপর সে বিশ বছর ধরে একজন গোয়েন্দা ছিল। যে এই জিনিসগুলো নকশা করে বের করেছিল এবং সে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি লুজি তাকে হত্যা করতে পারে।

ক্রস বলল, তারা এখন প্রান্ত সীমায়।

এই অবস্থানে, তুমি অতিরিক্ত কোনো খেলোয়াড়কে গ্রহণ করতে পারো না। লিয়া বলল, আমি অবশ্যই বলব, আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম যে ডেন্টি সব বিপদ-আপদই দেখেছিল। সে লুজিকে আয়ত্তে এনেছিল, যে সত্যিকার অর্থে একজন পুরনো অংশীদারকে হত্যা করতে চায়নি।

আমাদের অনুভূতিতে সবকিছুই আছে। সুতরাং এখন ডেন্টি লুজিকে আয়ত্তে আনছে।

ক্রস বলল, আমি মনে করেছিলাম লুজি তার চেয়ে বাটপার ছিল।

তুমি দুটি ভিন্ন শ্রেণীর জন্তু সম্পর্কে কথা বলছ, লিয়া বলল, লুজি ভয়ানক, ডেন্টি ক্রেজি।

সুতরাং ডেন্টি জানে, আমি তার সম্পর্কে জানি।

ক্রস লিয়াকে বলল, কোণ অর্থে আমাকে তাড়াতাড়ি অভিনয় করতে

ক্রস সামান্য মাথা নুয়াল, এটা হবে পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন সে। বলল, তাদের অদৃশ্য হতে হবে।

লিয়া হাসল, তুমি কি মনে করো তাতে ডন ক্লেরিকুজিও প্রতারিত হবে? সে ক্রসকে বলল, যদি আমাদের পরিকল্পনা হিসেবে তাকে কেউই আমাদের দোষারোপ করবে না।

লিয়া পরবর্তী তিনদিন ক্রসের সঙ্গে পরিকল্পনা করে কাটাল। ঐ সময় সে নিজ হাতে তার সমস্ত পুরানো কাপড়-চোপড় হোটেল ইনায়িনিটরে পোড়াল। ক্রস একাকী গলফ খেলা অনুশীলন করত। সময় পেলে লিয়া তার সঙ্গী হতো। গলফ খেলার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে লিয়া অবগত ছিল না।

তৃতীয় দিন রাতে তারা পেস্থ হাউজের বেলকনিতে বসল। ক্রস হাতে হেভানা চুরুট নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। তারা নিচে জনতার ভিড় দেখছিল।

তারা কতটুকু চালাক, তা ভাবার বিষয় নয়। আমার মৃত্যু শিগগিরই হবে। ইচ্ছে করলে আমার বাবা ডনের সঙ্গে ডেন্টির মিটমাট করতে পারত।

ক্রস বলল, আমি মনে করি, আমরা অপেক্ষা করতে পারি। লিয়া তার চুরুটে দমকা টান মারল, বেশি দূর নয়, এখন তারা জানে তুমি সারকির সঙ্গে কথা বলেছ।

আমাদের একই সময়ে তাদেরকে পেতে হবে।

ক্রস বলল, স্মরণ রেখো, এতে পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন হবে। তাদের দেহ অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

লিয়া বলল, তুমি প্রথমে শেষ জিনিসটি রাখছ এবং আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। আমরা তাকে হত্যা করতে পারব।

ক্রস দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। এটা খুবই কঠিন হতে যাচ্ছে। লুজি একজন বিপজ্জনক এবং সাবধানী মানুষ। ডেন্টি যুদ্ধ করতে পারে। আমাদের একটি জায়গায় তাদেরকে পৃথক করে রাখতে হবে। তুমি কি এটা লস অ্যাঞ্জেলেসে করতে পারবে?

লিয়া বলল, না এটা লুজির রাজ্য। সেখানে সে খুবই ভয়ানক। আমরা এটা ভেগাসে করতে পারব। এবং তা নিয়ম ভেঙে ক্রস বলল, যদি এটা পরস্পর কথোপকথনের মাধ্যমেই হয় তাহলে কেউই জানে না তারা কোথায় হত্যা হয়েছিল, লিয়া বলল, এবং পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে আমরা ইতিমধ্যে নিয়মটি ভাঙছি।

আমি মনে করি একই সময়ে ভেগাসে তাদের কিভাবে পাওয়া যায়।

ক্রস বলল, সেও এমন কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছিল, আমরা অনেক টোপ ব্যবহার করব।

লিয়া ক্রসকে বলল, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে লুজি এবং ডেন্টি এলে আমরা তাদের এখানে চাই।

ক্রস অন্যান্য ব্রান্ডি পান করল, ঠিক আছে এখানে আরো অনেক টোপ আছে।

সে লিয়াকে বলল এবং শর্তে রাজি হলো। তাদের তিরোধান হবে আমাদের পরিত্রাণ।

ক্রস বলল, এবং এটা সবাইকেই প্রতারিত করবে।

ডন ক্লেরিকুজিও ছাড়া।

.

পর্ব– আট

কমিউনিয়্যান

২১.

স্টিভ স্টেলিং তার ম্যাসিলিনার সর্বশেষ দৃশ্যটি চিত্রায়ন করা পর্যন্ত সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ছিল। তাছাড়া এটা পুনরায় চিত্রায়িত করতে খরচ করতে হতো এক মিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ দৃশ্যটি ছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্রের, যা ছবিটির মাঝখানে সংঘটিত ছিল। ভেগাস থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরে একটি নির্জন শহর ছিল যা সম্রাট ক্লডিয়াস কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।

স্টিভ স্টেলিং একটি ছোট শহরে দিনের শেষ ভাগে তার হোটেলের সুইটে বিশ্রাম নিল। সেই রাতের সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে ছিল দুজন মেয়ে, কোকেন এবং মদ। সে কিছুটা অস্বাভাবিক থাকার কারণে সবাইকে গর্দভ ভেবে পা ছোঁড়াছুড়ি করছিল। কারণ ছিল তাকে ছবির মূল অভিনয় থেকে বাদ দিয়ে একটি ছোট চরিত্র দেওয়া হয়েছে। সে বুঝতে পারল, এখানে সে একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর অভিনেতা এবং তার জন্য তারকা হওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার।

অন্যদিকে সব দৃশ্য চিত্রায়ন করার সময় অ্যাথেনা তার থেকে অনেক দূরে ছিল, যদিও তার অনেক আশা ছিল অ্যাথেনা তার সঙ্গে থাকবে।

সিনেমা ব্যবসার অনেক বছর পর স্টিভ স্টেলিং জানল কিভাবে ভালো কাজ করা যায়। যখন সে বড় তারকা হলো, তখন সে সবাইকেই বাঘা দিল। প্রকৃতপক্ষে স্টুডিওর প্রধানই ছিল, মালিক সে ছবির জন্য ছিল একটি লাইম লাইট। একজন ক্ষমতাবান প্রযোজক, যে স্টুডিওর জন্য এই সম্পদ কিনেছিল, তাছাড়া সে নিজেই স্টুডিওর প্রধানও ছিল। সে তারকা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার সবকিছুই পেয়েছিল, চিত্রনাট্য বা সংলাপ সে নিজেই তদারকি করত এবং স্বাধীনভাবে মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা-পয়সাও উপার্জন করেছিল, যারা তাকে সে সহকারী প্রযোজক হিসেবে মূল্যায়ন করেছিল, কিন্তু তার কোনো মর্যাদা ছিল না, তারপরও সে ছিল প্রধান। একটি ছবির চিত্রায়ন আরম্ভ হলো। বস নিজেই পরিচালক ছিল। সর্বোপরি সে ছিল একজন ক্ষমতাবান পরিচালক।

পরিচালক ছবির পুরোপুরি দায়িত্ব শেষ করল। সবকিছুই তার কথামতো হলো, পোশাক-পরিচ্ছেদ, সঙ্গীত সেট, কেমন করে অভিনয় করতে হবে তাও তার দ্বারা নির্ধারিত হলো। তাছাড়া ছবি সমাজে পরিচালকের একটা ক্ষমতাবান সংঘ ছিল। সে ছাড়া অন্য কোনো পরিচালকের নাম কল্পনা ধরা যেত না।

কিন্তু সব জনগণই তাদের মতো ক্ষমতাবান ছিল, তাই তারা সবিনয়ে একজন বড় তারকার মর্যাদাই স্বীকার করে নিল। একজন পরিচালক একটি ছবির জন্য যে দুই দিকে বড় তারকা পদে অধিষ্ট হয়েছিল যেমন একজন মানুষ একসঙ্গে দুটো ঘোড়াকে পরিচালনা করে।

তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

দিনটি সবেগে পার হয়ে গেল, স্টিভ স্টেলিংয়ের বিশ্রামের প্রয়োজন দেখা দিল। সে একটি মাংসের ফালি গিলে খেল এবং যখন তার কাছে দুজন বালিকা এলো তাকে দেখতে। মোটামুটি ভালোই ছিল। সে তাদের কোকেন এবং শ্যাম্পেন খাওয়াল। সর্বোপরি তার জীবনকাল শেষ বিকালের গোধূলির মতে শেষ হয়ে যাচ্ছিল এবং সে কিছুই মনে করতে পারছিল না। সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হলো।

টি শার্ট পরা বালিকা দুটি গর্দভ, উচ্চ বংশীয় স্টিভ স্টেলিংয়ের প্রশংসা করল আর এই প্রশংসার কারণে সে পৃথিবীর সব নারী-পুরুষের বন্ধু হয়ে গেল।

আগামীকাল র‍্যাপ পার্টি আছে। সে তার সাফল্য দেখতে পেল। সে অ্যাথেনাকে পীড়াপীড়ি করল, সে ক্লডিয়াকেও চাপ দিল যে ছবিটি লিখেছিল। সে অনেক আগে ডিটা টমিকেও পীড়াপীড়ি করেছিল, যখন তার পুরোপুরি তাকে সেক্সের আয়ত্তে আনতে পারছিল না। সে ববি বানজের স্ত্রীকেও পীড়াপীড়ি করেছিল। যদিও ববি বানজের স্ত্রী এটা বেশিদিন টিকে ছিল না। কারণ সে মারা গিয়েছিল। এটা তাকে একটা পবিত্র অনুভূতি দিত। যখন সে একটি ডিনার পার্টিতে থাকত তখন সে চারদিকে তাকাত এবং সকল নারীকে বলত যারা তাদের স্বামী এবং প্রেমিকের সঙ্গে শান্ত হয়ে বসেছিল। সে সবার সঙ্গে পরিচিত হলো।

এটা ছিল এক প্রকার পাগলামি। একজন বালিকা তার আঙুল দেখিয়ে তাকে গর্দভ বলল, যা তাকে সর্বদা বিরক্ত ধরাল। তার অর্শ ছিল। সে অর্শের মতো নাক ঝরিয়ে বেড থেকে উঠত এবং কিছুটা কোকেন সেবন করত এবং ঢকঢক করে শ্যাম্পেন পান করত। কিন্তু মদ তার পেটকে কাছিল করে ফেলত। সেই সময় সে জানত না সে এখন কোথায় আছে।

হঠাৎ সে অবসন্ন হয়ে জেগে উঠল। তার পা ঝুলে পড়ল, হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেল। সে হতবুদ্ধি হলো। বেশ দূর থেকে সে একজন বালিকার চিৎকার শুনতে পেল এবং চিৎকারের জন্য সে তার প্রতি রাগান্বিত হলো এবং তৎক্ষণা তার মাথার মধ্যে বজ্রের মতো আলো জ্বলে উঠল।

পরবতীতে কি ঘটতে পারে, তার জন্য সে তার বোকামি এবং অহিতেচ্ছাকে দায়ী করল। একজন বালিকা চিৎকার দিয়ে উঠল কারণ স্টিভ স্টেলিং তাকে বেডের ওপর সজোরে নিক্ষেপ করল, ফলে সে শুয়ে পড়ল, মুখ খুলে গেল। চোখগুলো জ্বলে উঠল, সুতরাং নিশ্চিত মৃত্যু যা দুজন বালিকাকেই আতঙ্কিত করল এবং তাদের চিৎকার বন্ধ হলো। চিৎকারটি সবাইকেই আতঙ্কিত করল, যারা হোটেলে জুয়া খেলছিল এমনকি তাদের কেউ, এই লোকগুলো চিৎকার করে অনুসরণ করল এবং তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে এলো।

স্টিভ স্টেলিংয়ের রুমটি ছিল হোটেলের একটু বাইরে, রুমটির দরজা এখন খোলা। কিছু সংখ্যক লোক বেডে ছড়িয়ে থাকা তার বস্ত্রহীন দেহ দেখছে, কি এমন ঘটনা, যার জন্য কয়েক মিনিটের মধ্যেই শত শত লোক ভিড় জমাল। তারা তার দেহ স্পর্শ করার জন্য রুমের মধ্যে ভিড় জমাল। প্রথমেই ভক্তিমান মেয়েরা তাকে স্পর্শ করল যাদের মধ্যে সে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর কিছু মেয়ে তাকে চুমো খেল। অনন্য মেয়েরা তার অণ্ডকোষ, পুরুষ লিঙ্গ স্পর্শ করল, একজন মেয়ে তার পার্স থেকে এক জোড় কেঁচি বের করল এবং তার মাথা থেকে কালো চুলগুলো কেটে নিল। মালসাইটি এলো কারণ স্কিপি ডিরি এই প্রথম পৌঁছল এবং সে তাড়াতাড়ি পুলিশকে ডাকতে ব্যর্থ হয়েছিল। তার মতামত পরিষ্কার হলো। স্টেলিংয়ের মুখ খোলা ছিল যেন, সে এখন গান গাচ্ছে এবং তার চেহারা অত্যন্ত বিস্ময় দেখাচ্ছিল। প্রথম মহিলা যে তার কাছে পৌঁছল সে তার নিজ চোখ বন্ধ করল, মুখ বন্ধ করে স্টিভের কপালে চুমো দিল।

ডিরি দুজন যুবতী মেয়েকে অনুসন্ধান করল যারা তার সঙ্গে ছিল এবং যাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, তারা কোকেন সেবন নিয়ে কোনো অভিযোগ করবে না এবং তারা নতুন ছবির একটি ছোট দৃশ্যতে অভিনয়ের জন্য স্বাক্ষর করেছিল। সে তাদের দুবছরে প্রতি সপ্তাহে হাজার মিলিয়ন করে দিত। কিন্তু তদুপরি তাদের নৈতিক নিচুতার কারণে সেই শর্ত বন্ধ হলো যদি তারা স্টিভের মৃত্যু নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলে। তখন সে ববি বানজকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাকল এবং ব্যাখ্যা করল সে কেন এটা করেছে। সে ডিটা টমিকেও ডাকাল, নতুন সংবাদ দেওয়ার জন্য এবং তাকে ম্যাসেলিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কে বলত।

.

 ২২.

স্টিভ স্টেলিংয়ের মৃত্যু কোনোভাবেই ভেগাসের র‍্যাপ পার্টির ওপর প্রভাব। ফেলল না। এমনই মূল্যায়ন করল স্কিপি ডিরি। এটা সত্য যে, স্টিভ স্টেলিং একজন তারকা ছিলেন, কিন্তু তিনি একজন বড় তারকা হতে ক্ষান্ত হয়েছিলেন।

এটা সত্য যে, তিনি তার সুঠাম শরীরের জন্য বহু নারীর মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তার ভালোবাসা পরস্পরের মধ্যে আনন্দ দিতে পারেনি। এমনকি অ্যাথেনা, ক্লডিয়ার ডিটা টমি এবং আরও তিনজন সুশ্রী মেয়ে তারকাও এমনই মন্তব্য করল। তারাও তার মৃত্যুতে অপেক্ষা, কম শোক প্রকাশ করেছিল। প্রত্যেকেই স্বীকার করেছিল যে, স্টিভ স্টেলিং র‍্যাপ পার্টিতে উপস্থিত থেকে সবার মধ্যে আরো বেশি আনন্দ বিলিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তার মৃত্যু র‍্যাপ পার্টিতে ততটা শোক প্রভাবিত করল না। স্কিপি ডিরি দাবি করল। তার ধারণা যদি র‍্যাপ পার্টি জানাদু হোটেলে আগেকার পার্টির মতো অনুষ্ঠিত হতো, তাহলে আনন্দটা আরো বেশি হতো।

সে মনে করেছিল অ্যাথেনা আরও কিছুদিন এই দেশে বাস করত। তাহলে আমরা ছবির ব্যবসায় আরো বেশ সুনাম কুড়াতে পারতাম।

কিন্তু এটাই বাস্তবতা। কারণ ক্রস নিজেই জানাদু হোটেলে ছবিটি প্রদর্শন এবং র‍্যাপ পার্টির আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

কারণ এতে জানাদু হোটেলের প্রভাব আরো প্রসারিত হবে। ক্রস ডিরিকে বলল, তাছাড়া আমি তোমার জন্যও কিছু করব। আমি ছবিটি সবাইকে দেখানোর জন্য এক রাতের একটি আমন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছিলাম এবং প্রত্যেকের জন্য খাবারের আয়োজনও করেছিলাম। আমি তোমাকে এবং বানজকে একটি ভিলা দেব। আমি অ্যাথেনাকেও একটি ভিলা দেব। আমি নিরাপত্তা প্রহরী সরবরাহ করব। যা তোমরা কখনোই আমার কাছ থেকে চাওনি। তোমরা দীর্ঘদিন একটি ভিলার জন্য অনেক চেঁচামেচি করেছ।

ডিরি এটা ভেবে দেখো।

ক্রস তার দিকে তাকিয়ে ভেসকা হাসি দিল। তাছাড়া তুমি কমপক্ষে একশত জন মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়েছ। ক্যাসিনো যার একটি ভাল অংশ পাবে। বানজ জুয়া খেলে না। ডিরি বলল, আমি খেলি। তুমি আমার টাকা পাবে।

আমি তোমাকে পঞ্চাশ গ্রান্ড ধার দেব। ক্রস বলল, যদি তুমি টাকা হেরে যাও, তাহলে আমরা তার ব্যয়ভার বহন করব না। ভেবে দেকো ডিরি। ঠিক আছে সে বলল, কিন্তু এটা আমার ধারণায় থাকতে হবে। তা না হলে আমি এটা স্টুডিওতে বিক্রি করতে পারব না।

নিশ্চয়, ক্রস বলল, কিন্তু স্কিপি, তুমি এবং আমি একসঙ্গে অনেক কিছু করেছি। আমি সব সময় সবকিছু থেকেই মুহূর্তে বের হয়ে এসেছি। সে ডিরির দিকে তাকিয়ে হাসল। সেই সময় তুমি আমাকে হতাশ করোনি।

তার জীবন চরিত্রে ডিরি ক্রস সম্পর্কে কখনোই উৎকণ্ঠা অনুভব করেনি। কখনো তাকে প্রশ্নে জর্জরিত করে কোনো কিছুর অর্থ জানতে চায়নি। ক্রস কখনো তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। সে সর্বদা তাকে সহপাঠী মনে করেছে। তাদের মধ্যে কখনোই কোনো কিছু নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়নি।

উদ্বিগ্নের কিছু নেই। স্কিপি ডিরি বলল, আমরা তিন সপ্তাহের মধ্যে ছবির শুটিং শেষ করব। তারপর তোমার জন্য পরিকল্পনা করব।

তারপর ক্রস নিশ্চিত হলো, আথেনা র‍্যাপ পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে এবং ছবি দেখতে আসার জন্য রাজি হতে পারত। সত্যিই আমার হোটেলের জন্য এটা প্রয়োজন এবং তোমাকে পুনরায় দেখার সুযোগ। সে তাকে বলল। অ্যাথেনা রাজি হলো। এখন ক্রসকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ডেন্টি ও লুজি ব্যাপ পার্টিতে আসবে।

সে লডস্টোন সম্পর্কে কথাবার্তা বলার জন্য ভেগাসে আসার জন্য ডেন্টিকে আমন্ত্রণ করল এবং লুজির পুলিশ সংক্রান্ত কার্যকলাপ বা অভিযানের ওপর কোনো ছবি তৈরি করা যায় কি-না সে ব্যাপারেও আলোচনা করবে বলে ঠিক করল। এখন সবাই জানে লুজি এবং ডেন্টি তার দুজন ভালো বন্ধু।

আমি চাই তুমি জিম লুজিকে আনতে পারবে এমন কথা তুমি আমাকে দেবে।

আমি ঐ ছবির সহকারী প্রযোজক হতে চাই। তাছাড়া আমি নিজ ইচ্ছায় ছবির মোট ব্যয়ের অর্ধেকটা বিনিয়োগ করতে চাই।

ডেন্টিও তার সম্পর্কে এমন ধারণাই করেছিল। তুমি আসলেই ছবি ব্যবসার জন্য একজন উপযুক্ত ব্যক্তি। সে বলল, কেন?

অনেক টাকা, ক্রস বলল, না বড় মানসিকতার। ডেন্টি হাসল, তোমার অনেক টাকাও আছে। তাছাড়া তোমার মানসিকতাও বেশ বড়। সে বলল, তুমি পার্টিতে আসার জন্য দাওয়াত না করলে আমি কিভাবে আসতে পারি। ডেন্টি জিজ্ঞেস করল, লুজিকে আনতে পারে সে ব্যাপারে তুমি আমাকে কথা দাও। ক্রস বলল, এবং তোমরা দুজনেই তা পারবে। লুজিকে একাই আনবে। তাছাড়া যদি তুমি আমাকে নির্দিষ্ট তারিখ দাও তাহলে আমি টিফিনির সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিতে পারব। তুমি তার প্রদর্শন দেখবে।

ডেন্টির কাছে টিফিনি শেষ পর্যন্ত তার ব্যক্তিতের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। তার সুশ্রী চেহারা, মোটা ঠোঁট, চওড়া মুখ, তার উচ্চতা, লম্বা মসৃণ পা ডেন্টিকে মোহিত করল। এই প্রথম ডেন্টি তার সম্পর্কে প্রবল উৎসাহী হলো। ধুত্তরি ছাই। সে বলল, সে আমার কাছে যেমন বড় তেমনি ভালো কল্পনা। তুমি একটি ব্যবসা পেয়েছ। এটা ছোট হলেও সত্য। কিন্তু ক্রস ঘটনাটি পরিমাপ করেছিল। আসলে তার পরিবারের জন্যই ভেগাসে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে ডেন্টির মধ্যে আরো বেশি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল।

তারপর ক্রস আকস্মিকভাবে তা যোগ করেছিল। তদুপরি অ্যাথেনা আসছে এবং আমার ছবি ব্যবসা করার সেই প্রধান কারণ।

ববি বানজ, মেলো স্টুয়ার্ট এবং ক্লডিয়া ভেগাসে স্টুডিও জেটে চলে গেল। অ্যাথেনা এবং বাকি তারকারা তাদের ব্যক্তিগত কাজ সেরে সেখানে পৌঁছল। সেই সময় ডিটা টমি, সিনেটর, ওভেন, তারা নাভাদা রাজ্যে উপস্থিত ছিল এবং নাভাদার গভর্নর সেই সময় তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিল।

ডেন্টি ও লুজি একই ভিলাতে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। লিয়া ভাজি এবং তার অন্য মানুষেরা অন্য চারটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকত।

সিনেটর ওভেন, গভর্নর এবং তাদের সময়বয়সীরা অন্য ভিলাতে বাস করত। ক্রস কিছু বালিকা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদের জন্য একটি ডিনার পার্টির আয়োজন করেছিল। সে আশা করেছিল তাদের উপস্থিতি পরবর্তী ঘটনা অনুসন্ধান করতে তাকে সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে তারা তাদের রাজনীতি ইমেজ ব্যবহার করে তার প্রচার আরও তুরান্বিত করবে।

ক্রস সমস্ত নিয়ম কানুনই ভেঙে লাগল। অ্যাথেনার একটি ভিলা ছিল। তাতে ক্লডিয়ার, ডিটা টমির এবং মলি ফ্লান্ডারের ঐ ভিলাতে অ্যাপার্টমেন্ট ছিল।

অ্যাপার্টমেন্টের বাকি দুজন লিয়া ভাজির লোক, যারা অ্যাথেনার দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করত।

এই চারটি ভিলা বানজ, স্কিপি ডিরি এবং সমবয়সিদের জন্য বরাদ্দ করা ছিল। বাকি তিনটি ভিলা লিয়ার লোকজন ব্যবহার করত। তদপুরি ভাজির কোনো লোকই প্রকৃত কাজে যুক্ত ছিল না। তারা ক্রসের আসল উদ্দেশ্য জানত না। লিয়া এবং ক্রস সহকারী ঘাতক হয়েছিল। ক্রস ভিলার মেরামত কাজ করতে হবে এমন কথা বলে হলিউডের অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রেখেছিল। তাই অনেক উচ্চ মানসম্পন্ন লোকজনও সেখানে আসতে পারত না।

তাই কিছুদিন পর ভিলাগুলোতে নির্জনতা বিরাজ করল। পক্ষান্তরে কিছু কিছু ভিলা আসলেই বাসযোগ্য ছিল না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রস এবং লিয়া ভাজি সংকল্প করল যে, ক্রস ডেন্টিকে এবং লিয়া লুজিকে খুন করতে পারত। যদিও ডন তাদের অপরাধ ধরতে পেরেছিল এবং সংকল্প করেছিল সে প্রকৃতপক্ষে লিয়া ডেন্টির ওপর ভর করে কাজটি করেছিল। যদিও ডন তার সত্যতা খুঁজে পেল। সে ক্লডিয়ার প্রতি তার প্রতিশোধ নিল না। কারণ হাজার হলেও সে ক্লেরিকুজিও পরিবারের রক্ত।

তাছাড়া লিয়ার জিম লুজির বিরুদ্ধে একটি ব্যক্তিগত বংশানুক্রমিক প্রতিহিংসা ছিল। সে সব সরকারি প্রতিনিধিকে ঘৃণা করত।

ক্রস আশা করেছিল ডেন্টি এবং লুজি ফাঁদটি সন্দেহ করতে পারত না। তারা জানত না। লিয়া সারকির দেহ আবিষ্কার করেছিল। আর এটাই ছিল তাদের অভিপ্রায়। অন্য সমস্যা ছিল কিভাবে ক্রসের বিরুদ্ধে ডেন্টিকে প্রস্তুত করা যায়। তাই লিয়া ডেন্টির ক্যাম্পে স্পাই প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

মলি ফ্লান্ডার পার্টিতে যোগদান করার জন্য ঐ দিন সকাল সকাল এলো। তার এবং ক্রসের ব্যবসা ছিল। সে ক্যালিফোর্নিয়ার সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন ক্যাথলিক পাদ্রিকে তার সঙ্গে আনল। তারা সাক্ষী হিসেবে কাজ করেছিল যখন ক্রস তার সমস্ত সম্পদের উইল দলিলে স্বাক্ষর করল। সে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়েছিল। ক্রস জানত তার বাকি সম্পদগুলো খুবই সামান্য এবং সে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করেছিল। জানা হোটেলের অর্ধেক তার অংশ থেকে চলে যাওয়া উচিত। আর এ জন্য তার সুদ ছিল সর্বমোট পাঁচ মিলয়ন ডলার। যা মোটেই অবজ্ঞা করার মতো ছিল না।

সে লিয়ার স্ত্রী এবং তার ছেলেমেয়েদের আরামদায়ক জীবনযাপন করার জন্য উইল ত্যাগ করেছিল এবং বাকিটা ক্লডিয়া ও অ্যাথেনার মধ্যে বণ্টন করে দিল। এটা তাকে আঘাত করল। কারণ সে প্রচুর টাকা উপার্জন করলেও আজ থেকে তার জন্য এই পৃথিবীতে আর কিছুই রইল না।

মলি, জাজ এবং পাদ্রি পেন্থ হাউজের সুইটে পৌঁছল। যুবক বয়সে এ ধরনের একটি ভালো কাজ করার জন্য তাকে স্বাগতম জানাল। পাদ্রি খুব ভালো ভাবে সুইটটি পর্যবেক্ষণ করল। তাছাড়া দুজনেই মলির ভালো বন্ধু; যারা তাদের জন্য এই উত্তম কাজটুকু করল। সে ক্রসের বিশেষ অনুরোধে তাদের ডেকে এনেছিল। সে সাক্ষী চেয়েছিল যেন তার ক্লেরিকুজিও’র পরিবর্তিতে দুর্নীতির স্বিকার না হতে পারে।

ক্রস তাদের মদপান করাল এবং গান গাইতে গাইতে উইল শেষ করা হলো। দুজন চলে গেল যদিও তাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তারা তাদের অবদানকে ভেগাসের র‍্যাপ পার্টিতে অংশগ্রহণ করে উপহাস করতে চাইল না।

তারা ঐ রাজ্যে অফিসিয়ালিভাবে নির্বাচিত ছিল না।

ক্রস এবং মলি সুইটে একাকী ছিল। মলি তাকে উইলের মূল কপি দিল। ক্রস বলল, তুমি একটি কপি তোমার নিজের কাছে রাখো, ঠিক আছে?

অবশ্যই, মলি বলল, আমি অবশ্যই বলব আমি অবাক হয়েছিলাম যখন তুমি আমাকে তোমার নির্দেশনা দিয়েছিল। আমার তোমার এবং অ্যাথেনা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। অ্যাথেনা খুবই চুপচাপ ছিল।

তার যা আছে। সম্ভবত তার আরো বেশি টাকার প্রয়োজন। ক্রস বলল, তার মেয়ের জন্য, মলি বলল, আমি তার সম্পর্কে জানি। আমি অ্যাথেনার ব্যক্তিগত সহকারী। তুমি ঠিক বলেছ। সম্ভবত ব্যাথেনির জন্য টাকার প্রয়োজন।

তোমার ধারণা সম্পূর্ণভাবে সঠিক।

ক্রস বলল, কেমন লাগছে?

মলি শান্তভাবে বলল, আমার ধারণা ছিল তুমি বজ স্কানেটর যত্ন নিয়েছিলে। আমি দেখেছিলাম একজন মাফিয়া গাই তোমাকে কোনো করুণা করেনি। আমি স্মরণ করি যে আমি একজন খুনির কাছে ঐ গরিব শিশুটিকে পেয়েছিলাম এবং যা তুমি উল্লেখ করেছিলে এবং সেই কিছু ওষুধের ব্যবসাকে ধূলিসাৎ করেছিল। এখন তুমি দেকো। কতটা ভুল তুমি করেছিল। ক্রস তার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল, এবং আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন তুমি ম্যাসেলিনার ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে ববি বানজকে বঞ্চিত করেছিলে।

সেটা ছিল একটা ছোট কৌশলমাত্র। ক্রস বলল। সে ডন এবং ডেভিড রেডফেলোর কথা ভাবল।

অ্যাথেনা আগামীকাল দিনে ফ্রান্সে যাচ্ছে। মলি বলল, কিছুদিনের জন্য হলেও কি তুমি তার সঙ্গে যাচ্ছ?

না, ক্রস বলল, আমার এখানে অনেক কিছু আছে।

ঠিক আছে, মলি বলল, আমি তোমাকে ছবির পর্দা এবং ব্যাপ পার্টিতে দেখব। সম্ভবত প্রদর্শনের মধ্য দিয়েই ববি বানজকে বাদ দেওয়ার আসল ঘটনা উন্মোচিত হবে।

এটা কোনো বিষয় নয়। ক্রস বলল, তুমি জানো, ডিটা প্রদর্শনের শুরুতেই একটি কার্ড রেখেছিল। যা স্টিভ স্টেলিংকে উৎসর্গ করেছিল। বানজ এটার প্রতি অবশ্যই নাখোশ হবে।

কেন? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

কারণ স্টিভ সব নারীর প্রতিই আধ পাগলা ছিল। কিন্তু বানজ ছিল না।

ক্রস বারান্দার চেয়ারে বসল। তখন ভেগাসের রাস্তায় লোকজনের ভিড় ছিল। লোকজন হোটেল ক্যাসিনো গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তার বাতিগুলোর সোনালি আলোয় সব কিছু ঝলমল করছিল। ম্যাসেলিনার লোকজন তখনও তাদের নিজ নিজ বাড়িতে কাজ সেরে বাড়ি যাওয়া আরম্ভ করেনি। সে বারান্দার ফোনটি দিয়ে তার ভিলাতে লিয়া ভাজিকে পেন্থ হাউজে সুইটে আসার জন্য বলল, যাতে তারা তাদের বাকি আলোচনা সময় থাকতেই করতে পারে। ম্যাসেলিনায় তখন বিকাল। ডিটা টমি, সূর্যের আলো প্রবাহমাত্র থাকতেই শেষ দৃশ্যটি চিত্রায়িত করতে চেয়েছিল। অ্যাথেনা এবং স্টিভ স্টেলিং তা দেখছিল।

সে স্টিভের জন্য দুটি দৃশ্যে শট দিয়েছিল। তখন তার চেহারায় মনে পড়া ছায়া বিদ্যমান ছিল। এটা ছিল ঠিক বেলা তিনটার দিকে। সেটের চারিদিকে জনতার উত্তাল ভিড়। মিডিয়ার লোকজনও তাদের নিজ নিজ কাজে ব্যতিব্যস্ত। অনেকেই এমনিই এসেছে। কারণ ক্রস এটাকে ভেগাসের পুরাতন রীতিনীতির প্রতি ছবি হিসেবে তৈরি করছিল। তাছাড়া ছবির সঙ্গে জড়িত সব কলাকুশলী সেটে উপস্থিত ছিল।

রাত দশটার সময় ম্যাসিলিয়া ছবির প্রদর্শন শুরু হলো কিন্তু প্রদর্শনের সময় ছবির সঙ্গে কোনো সঙ্গীত, কিংবা আবহ সঙ্গীত ছিল না। ঐদিন জনতার অংশ সেখানে উপস্থিত ছিল। জনতার দুটি অংশের মধ্যে একটি অংশ ছবির প্রদর্শন দেখছিল, আর অন্য অংশটি নিজ নিজ ব্যক্তিগত আলাপে ব্যস্ত ছিল। বিকাল চারটার সময় প্রত্যেকেই হোটেলে এবং ভিলাতে ফিরে গেল। এখানে দুটি জগৎ হলিউড আর ভেগাসের তেমন কেউই অনুপস্থিত ছিল না।

সেখানে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাছাড়া ভিলাতে এবং বলরুমে স্পেশাল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে তারকাদের ছবি তোলার কোনো অনুমতি ছিল না। শুধু তারকাদেরই নয় ছবির সংশ্লিষ্ট কোনো কলাকুশলীরই ছবি তোলা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ ছিল। তারপর তাদের মধ্যকার অনেকেই জুয়া খেলতে আরম্ভ করল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হারলেও অনেকেই জিতল।

চারজন নাবিক, দুজন স্টান্টম্যান এবং দুজন মেয়ে তাদের প্রতি করা প্রতিবেদন এক হাজার ডলারে বাইরে বিক্রি করল। অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন দরজার খুব কাছাকাছিই ছিল, সে নতুন খানসামা, একজন গোয়েন্দা যেন আশ্চর্যবোধ করল। কিন্তু তারপর সে ব্যাপারটা বুঝতে আরম্ভ করল। বাইরের কারও সঙ্গে কিছু আলাপ করবে না সে বলল, এবং এখনই দরজাটা বন্ধ করো।

প্রত্যেকেই তাদের আইডি কার্ড তাদের নিজ নিজ জ্যাকেটের পকেটে রাখল।

লুজি রেগে স্থানটি ত্যাগ করার আগে বলল, তোমাকে স্মরণ রাখব, সে বলল, তোমাকে আর কোনো মানুষই গ্রহণ করতে পারবে না।

লুজি এই বলে চলে গেল। পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে ডেন্টি ক্লেরিকুজিও ক্রস তাদের ভিলাতে এলো।

তারপর ডেন্টি তার সঙ্গে ব্যবসার যাবতীয় বিষয়-আষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইল। সে বলল, বিষয়গুলো আমার মধ্যে এলোমেলোভাবে কাজ করছে। তার একটি সুচারু ব্যবস্থা করা দরকার। ক্রস বলল, আমি আজ রাতে আমার একটি বিশেষ কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। ডেন্টি ক্লেরিকুজিও এবং জিম লুজি তাদের জাকজমকভাবে বাড়িতে আনন্দ করছিল। লুজি ক্ষোভে মাথা বাড়াল।

একজন বুলগার এক বছরের জন্য বেঁচে গেল, সে চিৎকার করে বলল।

না, তা সে পারবে না, ডেন্টি বলল। তাকে ৬ মাসের মধ্যে মারা যেতে হবে।

তারা লুজির অ্যাপার্টমেন্টের একটি কক্ষে বসেছিল। তারা কক্ষে পরিচারিকাকে ডাকল না, কারণ ফ্রিজে স্যান্ডউইচ, কেভিয়ার, বাইরের বেয়ার, এবং দামি মদ ছিল।

তাই আমরা সবাই প্রস্তুত, লুজি বলল।

ঠিক আছে, ডেন্টি বলল, এবং যখন আমি করেছি। আমি হোটেলের জন্য দাদাকে বলব, তাহলেই আমরা সবকিছু নতুন করে সাজাতে পারব।

সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হলো, আমি তাকে এখানে একা পাব। লুজি বলল।

আমি সবকিছুই করতে পারব।

কোনো ভাবনা নেই, ডেন্টি বলল। খারাপ কিছু বেশি খারাপ বয়ে আনে, আমরা তাকে আমাদের মতো ব্যবহার করতে পারব।

তুমি কিভাবে এখানে এই বাড়িতে তাকে পাবে? লুজি বলল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

আমি তাকে বলব জর্জিও গোপনে এসেছে এবং তাকে দেখতে চায়, ডেন্টি বলল, তারপর আমি কাজটি করব এবং তুমি আমাকে সাহায্য করবে। তুমি অপরাধ জগৎ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখো। তাছাড়া তারা তোমার জন্য কি করবে?

সে দাপটের সঙ্গে বলল, তাকে শেষ করার এটাই সবচেয়ে উত্তম পথ। তারা কখনোই তাকে খুঁজে পাবে না। সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। তুমি জানো, আজ রাতে পিপি মারা গেছে। সে পুনরায় এটা করার সাহস পাবে না।

কিন্তু সে কি করতে পারবে? লুজি জিজ্ঞেস করল।

আমি এখানে সারারাত অপেক্ষা করতে থাকব।

অ্যাথেনার বাড়ি পরবর্তী দরজায়, ডেন্টি বলল, তুমি শুধু এর ওপর ভরসা রাখবে, তাহলেই তুমি লাকি।

যথেষ্ট গরম খবর, লুজি বলল।

ডেন্টি ভেসকা হাসি দিয়ে বলল, আমরা তাকে মরুভূমিতে ক্রসের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি।

তুমি এখন উন্মত্ততার মধ্যে আছ, লুজি বলল, তার পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট সত্য ছিল।

কেন না? ডেন্টি বলল, কেন, কিছু মজা হবে না?

মরুভূমিটি দুটি দেহ বহন করার জন্য যথেষ্ট বড়।

লুজি অ্যাথেনার দেহের কথা ভাবল, তার সুন্দর চেহারা, তার কণ্ঠ, তার সোনালি চুল, সে এবং ডেন্টি মজা করল। সে ইতিমধ্যে খুনির খাতায় ক্রস ডি লিনা এবং লিয়া ভাজি জানাদুর পেন্থ হাউজের কক্ষে, ঐ রাতে যা করেছিল তার বিস্তারিত আলোচনা করছিল।

ঐ স্থানে সব মানুষ আমার দিকে আছে, আমি ভিলার কমপাউন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করি। কেউই জানে না, তুমি এবং আমি কি করব। তারা কেউই ব্যাপারটার সঙ্গে জড়িত হবে না। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যে, ডেন্টির একজন নাবিক এনক্লেভ থেকে আসছে, যে তোমার জন্য মরুভূমিতে কবর খনন করছে। আমাদের আজ রাতে সতর্ক থাকতে হবে।

আসলে আজকের রাতটা নিয়েই আমি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি ক্রস বলল, তারপর আমরা ডন ক্লেরিকুজিও’র সঙ্গে ব্যাপারটা আলোচনা করব। তুমি কি মনে করো সে গল্পটি ক্রয় করবে?

তা প্রকৃতপক্ষে ঠিক, লিয়া বলল, কিন্তু ঐটাই আমাদের একমাত্র আশা।

ক্রস মাথা ঝাঁকাল, আমার কোনো পছন্দ নেই; ডেন্টি আমার পিতাকে খুন করেছিল এবং বর্তমানে সে আমাকে খুন করবে। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমার ধারণা ডন তার জীবনের শুরুতে পাশে ছিল না। তাই আমাদের কোনো সুযোগ নেই।

লিয়া বলল, আমরা আমাদের সমস্যা ডনের সামনে তুলে ধরতে পারি। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং কাজ করতে দাও।

না, ক্রস বলল, সে তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তোমার ধারণা সঠিক, অবশ্যই, লিয়া বলল, কিন্তু বর্তমানে ডন একটি নরম মনের মধ্যে দিয়ে কাঁটা। সে হলিউডের লোকজনের সঙ্গে, এমনকি তোমার সঙ্গেও প্রতারণা করছে। তার যুবক বয়সে তাকে কেউ গ্রহণ করেনি। টাকার জন্য না, এটা তার আচরণের জন্য।

ক্রস প্রচুর পরিমাণ ব্র্যান্ডি লিয়ার গ্লাসে ঢালল এবং সে কারেন্ট জ্বালাল। সে তাকে রেডফেলো সম্পর্কে কিছুই বলল না। কক্ষটি তোমার কেমন পছন্দ হয়েছিল। সে বলল, বেশ ভালো।

লিয়া সিগারেট টানছিল, বোকা। খুব সুন্দর। উদ্দেশ্যটা কি? কেন যে কাউকে তার মতো জীবনযাপন করতে হবে?

এটা অতিরিক্ত তোমার শক্তিকে প্রশমিত করবে। এটা প্রতিহিংসা তৈরি করবে। এটা গরিবকে উপহাস করার মতো চালাকি নয়।

কেন তারা তোমাকে খুন করতে চায় না আমার পিতা সিসিলির ধনী ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু সে কখনোই জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেনি।

তুমি আমেরিকার জীবনযাপন প্রণালি সম্পর্কে অবগত না, লিয়া, ক্রস বলল। প্রত্যেক গরিব মানুষ যারা পাশ থেকে বাড়িটির জৌলুস দেখেছে। কারণ সে কিছুদিন তার মন দিয়ে জেনেছে, তাকে এরকম একটি স্থানে বাস করতে হবে।

ঠিক সেই মুহূর্তে পেন্থ হাউজে একটি প্রাইভেট ফোন বেজে উঠল। ক্রস ফোনটি রিসিভ করল, তার বুকের মধ্যে ধপাস করে উঠল। অ্যাথেনা। আমরা ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পূর্বে মিলিত হতে পারি?

অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল–

যদি তুমি আর একবার আমার কক্ষে আসো।

ক্রস বলল, আমি এখানে বাস করতে পারব না।

এমন হবে কেন? অ্যাথেনা মৃদুভাবে বলল। তাহলে আমরা র‍্যাপ পার্টিতে মিলিত হতে পারি, আমি তাড়াতাড়ি ছাড়তে পারব এবং তুমি আমার ভিলাতে আসতে পারো।

আমি তা পারি না ক্রস বলল, আমি আগামীকাল সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকছি অ্যাথেনা বলল, তারপরের দিন আমি ফ্রান্সে যাব। তুমি না আসা পর্যন্ত আমরা মিলিত হতে পারব না… যদি তুমি আসো।

ক্রস লিয়ার দিকে তাকাল, কে তার মাথা খারাপ করে দিয়েছে? তাই ক্রস অ্যাথেনাকে বলল, তুমি কি এখানে আমার কাছে আসতে পারবে, এখন?

চেষ্টা করো।

সে বলার আগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করল।

হ্যাঁ পারব, তবে তুমি আমাকে এক ঘণ্টা সময় দাও।

আমি তোমার জন্য গাড়ি এবং নিরাপত্তা প্রহরী পাঠাব।

ক্রস বলল, তারা তোমার ভিলার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকবে। সে ফোনটি রাখল এবং লিয়াকে বলল, আমরা তাকে দূর থেকে দেখব। ডেন্টি যে। কোনো কিছু করার জন্য যথেষ্ট পাগল।

মেলো স্টুয়ার্ট, জিম লুসির গল্প মঞ্চস্থ করার জন্য একজন যুবতী অভিনেত্রী এনেছিল। সে ছিল মিশসরীয় সুন্দরী। যার শরীর একটু মোটা, আকর্ষণীয় গ্লামার। বানজ তাকে খুঁজে পেয়েছিল। জোহনা কিন্তু সেই নিষ্পাপ কুমারীর নাম এখনও ঠিক হয়নি। অ্যাথেনা, যার চেহারাতে তেমন কোনো আকর্ষণীয় ছাপ নেই। তারপরও তার চারিদিকে বন্ধু-বান্ধবে ভরা ক্লডিয়া, ডিটা টমি এবং মলি ফ্লান্ডার। অ্যাথেনা সর্বজনখ্যাত না, কিন্তু জোহনা এখন পর্যন্ত মঞ্চ অভিনেত্রী। লিজা তার প্রতি সব সময়ই হিংসা মনোভাব প্রকাশ করত। তারা উভয়েই অ্যাথেনার কাছে আসত। রানী তাদের প্রত্যাশা স্থাপন করুন।

মলি আমাকে বঞ্চিত করল, বানজ বলল, যে সব সময়ই ক্লডিয়াকে পছন্দ করত, কারণ সম্ভবত ম্যারিয়ন তাকে পছন্দ করত। তাই সে তার বাচ্চাকে তেমন কিছু মনে করত না। সে আমার মাথায় কামান সেট করেছিল।

কিন্তু তুমি এটাকে আরো কঠিন করেছিলে ক্লডিয়া বলল, ম্যারিয়ন সমর্থন করল।

বানজ তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাল। হঠাৎ সে ভয় অনুভব করল। সে তখন তাকে মিসও করল।

ইতিমধ্যে স্কিপি ডিরি জোহানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তার নতুন ছবি সম্পর্কে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলছে।

তুমি এই অভিনয়টুকু করার জন্য উপযুক্ত। তোমার বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমি এটাকে অতীতের ববির মতো পেতে পারি।

তুমি আসো এবং অনুশীলন করো। সে কিছুক্ষণ চুপ থাকল এবং তারপর বলল, আমি মনে করি তোমার নাম পরিবর্তন করা উচিত। জোহানা নামটি তোমার চরিত্র অনুযায়ী খুবই সেকেলে।

জোহনা বানজের সঙ্গে একের পর এক কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিল। আর ডিরি মেলো স্টুয়ার্ট এবং তার নতুন বালিকা বন্ধু লিজার সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল। যদিও সে মঞ্চে খুবই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল তবুও স্কিপি ডিরি তার ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে সন্দেহ করত। ক্যামেরা তার প্রতি এতই নিষ্ঠুরতা আচরণ করত, যাতে তার সৌন্দর্য ছবিতে ফুটিয়ে উঠত না এবং তার বুদ্ধিমত্তা তাকে অনেক অভিনয়ের জন্য অনুপযুক্ত করত।

ডিরি লিজার উভয় গালেই চুমা দিল।

আমি তোমাকে নিউইয়র্কে দেখেছিলাম। সে বলল, তোমার পারফম্যানস খুব ভালো। সে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল, আমি আশা করি তুমি আমার নতুন ছবিতে কাজ করবে।

মেলো মনে করে, এটাই হবে তোমার ছবিতে ভুলের মধ্য দিয়ে শুরু।

লিজা তাকে একটি ঠাণ্ডা হাসি দিল, আমাকে চিত্রনাট্যটি দেখতে হবে।

ক্লডিয়া তার রেনেসাঁ টুপিটি তার মাথা থেকে তুলল। ক্রস তোমার টুপি সম্পর্কে আমাকে বলল। তারা তোমাকে খুব সুন্দরী করে তুলেছে। সে টুপিটি তার মাথায় পরল, টুপিটি তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিল।

তার অনেক টুপি আছে, ডেন্টি বলল, এখন তুমি আমাকে বলো ছবির ব্যবসা করতে আর কি কি লাগবে।

তুমি দিনে কি করো? ক্লডিয়া জিজ্ঞেস করল।

আমি একটি মাংসের ব্যবসা শুরু করেছি।

ডেন্টি বলল, আমরা হোটেলে সরবরাহ করি, সে হাসল, তারপর জিজ্ঞেস করল, শোনো, তুমি কি আমার সঙ্গে তোমার কোনো সুন্দরী তারকার পরিচয় করাতে পারো?

লুজি প্রতিনিয়ত তার কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিল। আমি জানি তোমার ছবিটা ভালো হবে। সে তাকে বলল, র‍্যাপ পার্টির পর সম্ভবত তোমাকে তোমার দেহরক্ষী দ্বারা আমায় ভিলাতে যেতে সাহায্য করতে হবে। তারপর আমরা একসঙ্গে মদপান করতে পারি।

অ্যাথেনা তার কাছে ছিল একজন শরণার্থী। সে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল।

আমিও ভালোবাসতাম সে বলল। কিন্তু আমি পার্টিতে আধাঘণ্টা অবস্থান করছি কারণ আমি চাই না তুমি তাকে মিস করো।

আমি আগামী সকালের প্লেনে করে ফ্রান্সে যাব।

আমি তোমার সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতে পারি।

লুজি বলল, আগামীকাল কয়টায় তোমার ফ্লাইট।

তা ঠিক আছে, অ্যাথেনা বলল। কিন্তু এটা একটি ছোট ব্যক্তিগত ভাড়া। করা প্লেন, তাছাড়া সব আসনেই যাত্রী আছে।

যখন সে নিরাপদে তার ভিলাতে ফিরে গেল, তখন সে ক্রসকে ডেকে বলল যে, আমি আমার দায়িত্ব শেষ করলাম।

প্রথমেই অ্যাথেনা তার নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সতর্ক ছিল। জানাদু হোটেলের পেন্থ হাউজ কক্ষে যাওয়ার চলন্ত সিঁড়িতে নিরাপত্তা প্রহরী ছিল। তাছাড়া চলন্ত সিঁড়িটি বিশেষ চাবির মাধ্যমে খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

চলন্ত সিঁড়ির সামনে সচিত্র ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল, তাছাড়াও দরজার সামনে অরো পাঁচজন লোক সব সময় বসে ছিল।

হঠাৎ লুজি তার হাত ধরল। আমার মিলিত হওয়ার মধ্যে তুমিই সবচেয়ে দেখতে সুন্দরী নারী। সে বলল। তুমি কেন অভিনেত্রী ছাড়া প্রকৃত নারীকে কাছে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করোনি।

অ্যাথেনা তার হাতটি ধরল। আমিও একজন অভিনেত্রী, শুভ রাত্রি।

আমি কি তোমার সঙ্গে মদপান করতে আসতে পারি? লুজি জিজ্ঞেস করল।

আমি দুঃখিত, অ্যাথেনা বলল এবং তারপর বাড়ির বেল বাজাল। একজন লোক দরজাটি খুলল, যাকে অ্যাথেনা আগে কখনও দেখেনি।

লুজি তার সঙ্গে যাওয়ার একটি পথ বের করল, যাতে সে আশ্চর্য হয়ে যায়। লোকটি হেঁটে হেঁটে বাইরে চলে গেল–

তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী লুজি এবং দরজার মধ্যে কর্তব্যরত ছিল।

লুজি বিনয়ের সাথে তাদের দিকে তাকাল। ঘটনা কি? সে বলল।

খানসামা দরজার পাশেই ছিল। এটা হলো মিস অ্যাকুইটেনের নিরাপত্তা আপনি এখানে আসতে পারেন।

লুজি তার আইডি কার্ড দেখাল। তোমরা জানো আমি কে? সে বলল। আমি তোমাদের সবাইকে লাথি মেরে এখান থেকে সরাতে পারি। তারপর আমি তোমাদের সবাইকে বন্দিও করতে পারি।

খানসামা তার আইডি দেখল। সে বলল, আপনি লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ কর্মকর্তা। সুতরাং কোনো ধানাইফানাই করে কাজ হবে না। তারপর সে নিজের আইডিটি বের করল। আর আমি লাস ভেগাসের প্রতিনিধি।

প্রতিউত্তরে ডেন্টি বলল, আমিও আজ রাতে ব্যস্ত থাকব। তারপরও আলোচনা করাটা জরুরি। সে তার ঘড়ির দিকে তাকাল।

লুজি চলে গেল, তার কাছে সবকিছুই অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো, পরিবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে ডেন্টি ক্লেরিকুজিও ক্রস ডি লিনাকে তাদের ভিলাতে আনল।

ডেন্টি ক্লেরিকুজিও পুরো র‍্যাপ পার্টিতেই তার রেনেসাঁ টুপিটি পরেছিল। সে কঠিন কাজের মধ্যেও সবার সঙ্গে মজা করছিল। তাকে দেখে কোনোভাবে মনে হলো না সে একটি কঠিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। একজন বালিকা বারবার তার মনোযোগ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল, কিন্তু তাকে ততটা উৎসাহ দিতে পারছিল না। কারণ সেই সময় সে অন্য একজন চিত্রহারী মানুষ। কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছিল। চিত্রহারী মানুষটি ডেন্টির আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করছিল, যা ডেন্টি নিজেও বুঝতে পারল। আজ রাতে আমার ব্যস্ততা আছে। সে তার ঘড়ির দিকে তাকাল।

যত সম্ভব জিম অ্যাথেনাকে ব্যবস্থা করেছিল। টিফিনিকে দেখা গেল না, যদিও সে থাকবে বলে ওয়াদা করেছিল। ডেন্টি আধ ঘণ্টা আগেই সবকিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল। সে ক্রসকে ডেকে এনে অপারেটরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে নাম্বারগুলো ব্যবহার করতে বলল।

ক্রস উত্তর দিল।

আমাকে তোমার সঠিক কাজটি দেখতে হবে, ডেন্টি বলল, আমি বল রুমে একটা পার্টিতে উপস্থিত আছ।

উপরে আস, ক্রস বলল।

না, ডেন্টি বলল, আমি এখন ব্যস্ত আছি।

তুমি প্রয়োজন মনে করলে, নিচে নেমে আসতে পারো।

অনেক দেরি হয়ে যাবে? ক্রস বলল, তাহলে আমিই নিচে আসব। ডেন্টি নিজ থেকে একটু বেশি স্থির হলো যাতে করে ক্রস বল রুমে এসে ব্যাপারটা পুরোপুরিভাবে আন্দাজ করতে পারে। সেখানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না। ক্রস তার মাথার রেনেসাঁ টুপি খুলল, আর এই টুপিটি তার অতীত মনে করিয়ে দিল, ক্রস এমন একজন বালক ছিল সেই সময় তার মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করত না, প্রকৃতপক্ষে সে ছিল খুব সাহসী। সেই সময় তার নিজস্ব ও পারিবারিক কারণে অনেক শত্রুর জন্ম হয়েছিল। এমনকি তার চাচাতো ভাইয়েরাও প্রকাশ্যে তার শত্রুতা করত। কিন্তু কোনো কিছুই তার বড় হওয়ার পথকে রোধ করতে পারেনি।

একদিন সে পিপিকে খুন করল। ডেন্টি জানত, ক্রসকেই জীবিত থাকতে দেবে না। তার দাদা যে তাকে ভালোবাসে সে বিষয়ে ডেন্টির কখনো কোনো সন্দেহ ছিল না। সে সব সময় তার ভালোবাসা দেখিয়েছিল। ডন সরাসরি তাকে পছন্দ করে তা প্রকাশ করত না। সে কখনোই চাইত না যে কোনো কারণেই হোক তার বড় ছেলে শান্তি পাক।

ক্রস তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ক্রসকে ভিলাতে যেতে বলল কারণ সেখানে তার জন্য লুজি অপেক্ষা করছিল। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার হতে পারত। সে ক্রসকে গুলি করতে পারত এবং মরুভূমিতে এনে কবর দিতে পারত। তার জন্য কবরটি আগে থেকেই ভিলাটির সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ক্রস করুণার সঙ্গে তাকে বলল, তাহলে এটা কি?

সে কোনোভাবেই তার দিকে তাকাল না। সুন্দর নতুন টুপিটা, সে বসে হাসল। ডেন্টি সব সময় এ ধরনের হাসিকে মানতে পারত না। তাছাড়া ডেন্টি যা ভাবছিল তার পুরোটাই সে জানত।

ডেন্টি ক্রসের কানে ফিসফাস করে বলল, জর্জিও এসেছে, সে এখন আমার ভিলাতে। গোপন রাখো। তোমাকে সে সঠিক পথ দেখাতে চায়।

আর এই কারণেই আমি তাকে ফোনে কিছু বলেনি।

ক্রসের উদ্বিগ্নতা দেখে ডেন্টি খুবই আনন্দিত হলো। সে আমাকে কিছু না বলার জন্য নিষেধ করল কিন্তু সেও চুপ থাকল। আমি মনে করলাম যে তোমাদের বৃদ্ধ লোকটি সম্পর্কে কিছু তথ্য বের করতে চাই। সেই সময় ক্রস ডেন্টির দিকে করুণভাবে তাকাল, তাদের মধ্যে একজন আনন্দ বঞ্চিত ছিল। তারপর সে বলল, ঠিক আছে, চলো আমরা যাই।

সে ডেন্টিকে নিয়ে হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের মধ্য দিয়ে ভিলাতে এলো।

কম্পাউন্ড গেটের চার জন নিরাপত্তা প্রহরী ক্রসকে চিনতে পারল এবং তাদের মনের মধ্যে একটা ভাব তরঙ্গিত হলো।

ডেন্টি দরজাটা খুলে তার হেটটি রাখল। সে বলল, তারপর তুমি, এবং মৃদু হাসল যা তার চেহারাতে আরো বেশি আনন্দ ফুটিয়ে তুলল।

ক্রস বাড়ির ভেতরেই হাঁটল। সে ভিলাতে প্রবেশ করার জন্য চাবি ব্যবহার করত। তার মনে হলো এখন সবাই পার্টিতে আছে। সে ক্রসকে রিসিভ করার জন্য এক ঘণ্টা আগে থেকেই প্রস্তুত নিল। সুটটি খুলল। সেখানে তার গ্লোসিং গ্লোব ক্লিন অয়েল ছিল। সে তার দ্বিতীয় সুটকেসটি খুলল, যার একটি গোপন পকেট ছিল। সেখানে বুলেট ফ্লিড ম্যাগাজিন ছিল। সে তা একসঙ্গে রেখেছিল, সে একটি সৈনিকের হোস্টলার রাখল এবং বন্দুকটি পাশে রাখল। সে সবকিছুই প্রস্তুত করে রেখেছিল। তার ভাব-ভঙ্গিমায় কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছিল না। সে কখনোই কোনো কাজে ভয়-ভীতি অনুভব করত না। আর এই সব ভাবভঙ্গিই তাকে একজন প্রকৃত পুলিশ বানিয়েছিল।

লুজি বেড রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করল। সেখানে ভিলার অনেক সরঞ্জামই ছিল। সে ফ্রিজ থেকে এক বোতল বিয়ার নিয়ে ট্রেতে রাখল। তারপর দাঁত দিয়ে বোতলের বার্গটি খুলে গ্লাসে ঢালল, সঙ্গে কিছুটা কেভিয়ার নিল। সে কিছুটা আনন্দ পেল, সে এর আগে অন্য কিছু খেয়ে এমন সুস্বাদ পানি। সে মনে করল এটাই তার বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। তাছাড়া এটাই ছিল তার বাকি জীবনের বাকি লক্ষ্য। ক্যাভিয়ার শোগার্লস, সম্ভবত কিছুদিন অ্যাথেনাও ছিল। তাকে শুধু রাতে কাজটি করতে হতো। ট্রে ও বোতলটি নিয়ে সে মূল রুমে গেল।

রুমটি প্লাস্টিকের চেয়ার আর টেবিলে পরিপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে একটি চেয়ারে বসে একজন লোক গ্লাস ভর্তি মদ নিয়ে সিগারেট টানছিল। আর লোকটি ছিল লিয়া ভাজি।

লুজি ব্যাপারটা কিছুক্ষণ ভাবল, সে কফি টেবিলে ট্রে এবং বোতলটি রেখে লিয়া বলল, আমি তোমাকে খুঁজছি।

লিয়া সিগারেট টানার ফাঁকে ফাঁকে মদের গ্লাসেও চুমুক দিচ্ছিল। এখন তুমি আমাকে খুঁজে পেয়েছ, সে বলল, দাঁড়াও তুমি আমাকে পুনরায় চড় মারো।

লুজি কেবল একজন সচেতনই নয় যথেষ্ট অভিজ্ঞসম্পন্ন একজন লোক। সে একসঙ্গে জিনিসগুলো রাখল। ভিলাটির অন্যান্য অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার জন্য সে উদ্বিগ্ন ছিল। আর এই বিষয়টা তাকে বার বার আঘাত করতে লাগল। সে বোতামহীন একটি জ্যাকেট পরতে পরতে লিয়া এদিকে তাকিয়ে হাসল।

সে ভাবল, এই সময় তার আরও চড় খাওয়া প্রয়োজন। এখন থেকে এক ঘন্টা আগে ক্রসের সঙ্গে ডেন্টির এখানে পৌঁছার কথা। আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি অস্ত্র প্রস্তুত করলাম। লিয়ার সঙ্গে থাকার কারণে তার কোনো ভয় ছিল না। হঠাৎ রুমের মধ্যে বন্যার মতো কিছু লোক এলো। তারা রান্নাঘরের দিকে ধাবিত হলো। তারা সবাই জিম লুজির চেয়ে বড় ছিল। কেবল তাদের মধ্যেকার দুজন লোকের কাছে বন্দুক ছিল।

লুজি তাদের বলল, তোমরা জানো আমি পুলিশ। আমরা সবাই জানি, লিয়া বেশ জোরালো কণ্ঠে বলল। ঠিক সেই সময় দুজন লোক লুজিকে পেছন থেকে বন্দুক ধরল।

লিয়া লুজির জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে গ্লোক বা হাতকড়া বের করল। সে এটা তাদের মধ্যকার একজনকে দিল, লোকটি সঙ্গে সঙ্গে লুজির হাতে পরিয়ে দিল।

তুমি এর আগে আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছ, লিয়া বলল, এখন আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেসা করব। লুজি কোনো ভয় ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকল। সে শুধু ডেন্টি ও ক্রসের পৌঁছা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলো।

নিজেদের মধ্যকার একজন মানুষ এমন করতে পারবে তা কখনোই সে বিশ্বাস করত না। প্রত্যেকেই বিপদে পড়ে, তার মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত সফল হয়।

তুমি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হবে শুধু স্কানেটকে আসতে দাও। লুজি বলল, একটু আগে তোক আর পরেই হোক আমি মুক্ত হবই।

এটা তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি দেবে। লিয়া বলল, দেরি হবে না। হ্যাঁ তোমার ধারণা সত্য। এখন তুমি সুখেই মরবে।

লুজি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে একজন পুলিশ অফিসারকে খুন করার জন্য ঠাণ্ডা মাথায় কেউ সাহস করতে পারে। একজন ধনী খুব সহজেই তার ভৃত্যকে শাস্তি প্রদান করতে পারে, বন্ধু বন্ধুর বুকে গুলি চালাতে পারে; ভাই তার স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রাখতে আরেক ভাইকে খুন করতে পারে। কিন্তু এমন সাহসী লোক কমই আছে যে একজন পুলিশ অফিসারকে খুন করতে পারে। এটা বেশ জটিল কাজ।

লিয়া চলে গেল, লুজির অবস্থা আস্তে আস্তে আরও ঘনীভূত পর্যায়ে পৌঁছল, প্রথমে তারা তার পেটে গুলি চালাল। এতে সে কাত হয়ে পড়ে গেল, পরে তারা তার কানে গুলি করলে সে আর কিছুই শুনতে পেল না। সে কাত হয়ে পড়ে গেল– তার মুখ দিয়ে অবিরত রক্ত বের হতে লাগল।

পরে তার মৃত লাশ একটা বড় ব্যাগে ঢুকাল। ব্যাগটির কোনো ছিদ্র ছিল না ফলে কোনো অবস্থায় রক্ত ব্যাগ ভেদ করে বাইরে পড়ল না। লাশটি ব্যাগে পরিহিত অবস্থায় আরো দুই দিন ঐ ভিলাতেই থাকল। লিয়া কঠিন সতর্কতার সঙ্গে পাহারা দিচ্ছিল কিন্তু ব্যাগ থেকে গন্ধ বের হওয়ার কারণে তারা বিপাকে পড়ল। সেই সময় ভিলাতে বাইরের লোক প্রবেশ নিষেধ ছিল। পরে তারা গন্ধ দূর করার জন্য সোফার নিচে বস্তাটি রাখল কিন্তু তাতেও কোনো আশু ব্যবস্থা হলো না। তারা খুব বিপাকের মধ্যে পড়ে গেল। কি করা যায়, তা তারা ভেবে পাচ্ছিল না। তারা শুধু জানত খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ক্রস এবং ডেন্টি ভিলার কমপাউন্ড গেটের সামনে পায়চারি করতে লাগল। তখন দুপুর হলেও সূর্য প্রচণ্ডভাবে তাপ বিকিরণ করছিল। ডেন্টি লক্ষ্য করল ক্রস স্নেকের সাথে খোলা শার্ট তারপর তার ওপর বোতামঅলা জ্যাকেট পরেছে। যাতে তাকে দেখতে খুব সাহসী মনে হচ্ছে। সাতটি ভিলাতেই সবুজ পতাকা পতপত করে ওড়াচ্ছিল। তার ওপর চাঁদের হালকা আলো পড়ার কারণে আরও বেশি ভালো দেখাচ্ছিল। তারা বেলকনি থেকে তা ভালোভাবে উপভোগ করছিল। সেই সময় কিছুটা আলো জানালার মধ্যে প্রবেশ করে ঘরগুলো আরো চমৎকার করল। ডেন্টি ক্রসকে বলল, সৌন্দর্য উপভোগ করো। ভালো লাগবে। তাকাও, দেখ সুন্দর চন্দ্রিমা রাত্রি, আমি এমন একটি রাতে ছবির কাজ করতে পারলে বেশ মজা পেতাম।

ক্রস বলল, নিশ্চয়–

ডেন্টি তার হ্যাট নিল এবং আগ্রহের সাথে বলল, প্রত্যেকেই আমার হ্যাটটি পছন্দ করে। সেও আমাকে বলেছিল, সে হ্যাটটি পছন্দ করে।

সে তোমাকে মজা দিত ক্রস কর্কশভাবে বলল।

তোমার ধারণাটা ঠিক আছে, ডেন্টি বেশ মজা করেই বলল, তার পরেই তার বলার মধ্যে একটা ভিন্নতা ছিল।

তারা ভিলাটির দরজায় ছিল। যেখানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না। ডেন্টি কলিংবেলে চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। বেলটি রীতিমতো বাজছিল কিন্তু কেউই দরজা খুলল না। সে তার পকেট থেকে চাবি বের করে দরজাটি খুলল। তারা লুজির সুইটে প্রবেশ করল।

ডেন্টি ভাবছিল সম্ভবত লুজি অ্যাথেনার সঙ্গে সেবা-এ আছে। তা না হলে হয়তো সে তার নিজ অপারেশনে ব্যস্ত আছে।

ডেন্টি ক্রসকে নিয়ে লিভিং রুমে প্রবেশ করে ওয়াল এবং আসবাবপত্র এলোপাতাড়ি দেখে তারা আশ্চর্য হলো।

সোফার ওপরে অনেক প্রকার প্লাস্টিক ব্যাগ পড়ে আছে। সোফাগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তারা কিছুই বুঝতে পারল না। ডেন্টি। যিশু এটা কি?

সে ক্রসের দিকে মাথা ঘুরাল ক্রস একটি ছোট বন্দুক তার হাতে নিল। আসবাবপত্রের গায়ে রক্ত, ক্রস বলল, আমাকে তোমায় বলতে হবে, আমি কখনোই তোমার হ্যাটস বিষয়ে ভাবিনি। আমি কখনোই বিশ্বাস করব না একজন ছিনতাইকারী আমার পিতাকে খুন করতে পারবে।

ডেন্টি ভাবছিল, লুজি কোথায়? সে বলল, একটা সাধারণ বন্দুক দ্বারা তাকে থামানো সম্ভব নয়।

ক্রস বলল, তুমি তোমার পুরো জীবনটাই সান্তাডিও-এর জন্য ব্যয় করেছ।

ডেন্টি ক্রসকে আক্রমণ করার জন্য পাশ থেকে সুযোগ নিল। কিন্তু তার আগেই ক্রস তার কাঁধে গুলি করল। ক্রস মনে করল এটা তার দ্বিতীয় বিজয়। তারপরও সে পুনরায় তার বাহুতে গুলি করল। সে পর্যবেক্ষণ করে দেখল তার বাঁচার আশা নেই। তার শরীর থেকে রক্ত স্রোতের মতো বেরুতে লাগল। ঘরের মেঝেতে রক্তের বন্যা বয়ে গেল। ক্রস আশ্চর্য হলো ঠিকই কিন্তু হতভম্ব হলো না; তারপর সে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র দিয়ে তার দেহ ঢেকে দিল।

ক্রসের পদক্ষেপ ছিল খুবই দুরভিসন্ধিমূলক। তখন ডেন্টি জীবিত ছিল। সে আস্তে আস্তে তার শরীর থেকে আসবাবপত্রগুলো সরানোর চেষ্টা করছিল। ক্রস তা লক্ষ্য করে পুনরায় তার মুখে গুলি করল।

তারপরও ডেন্টি উঠে দাঁড়াল। ক্রস তাকে আবারও গুলি করল, ডেন্টি পড়ে গেল, ক্রস পুনরায় তার মাথায় গুলি করল। এবার মাথা থেকে হ্যাটটি আলাদা হয়ে গেল। এমনকি তার মাথর খুলিও উড়ে গেল। তখন তার মাথাটাকে ফাঁকা মনে হচ্ছিল।

ক্রস দাঁড়াল। তার বন্দুকটি হোলস্টারে রাখল। ঠিক সেই মুহূর্তে লিয়া রুমের মধ্যে এলো। তারা একে-অপরকে দেখল।

শেষ, লিয়া বলল, বাথরুমটা পরিষ্কার করে চলো আমরা হোটেলে যাই। তুমি তোমার পোশাক গোজগাছ করো, আমি বন্দুক নিয়ে পরিষ্কার করি।

আর বাকি আসবাবপত্র, অন্যান্য জিনিস? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

আমি সবকিছুর যত্ন নেব, লিয়া বলল।

সবকিছু ধৌত করে আমি পার্টিতে যোগদান করব।

যখন ক্রস চলে গেল, লিয়া নিজে নিজেই ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ঠিকঠাক করে থোয়া-মোছার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করল।

সেখানে কেউ ছিল না। কিন্তু সোফা ভারী হওয়ার কারণে ফ্লোর সরাতে পারল না। তারপরেও মোটামুটিভাবে সে গোজগাছ করল।

সে ডেন্টির দেহ প্লাস্টিকের সেট দিয়ে মোড়াল তারপর তা বড় কেনভাস ব্যাগে ঢুকাল। তারপরও অনেক প্লাস্টিকের সেট, অনেক ব্যাগ ঘরের মধ্যে পড়ে রইল। যখন যে কাজটি শেষ করল, সে এটাকে শক্তভাবে বাঁধল তারপর তাকে বহন করে লুজির কাছে নিয়ে গেল। পরে দুটো ডেডবডিই ভিলার মধ্য দিয়ে ভ্যানে রাখল। ভ্যানে, লিয়া ভাজি সবকিছু ব্যবস্থা করল। দুটি ফ্লোরের। মধ্যে একটি স্পেস ছিল। লিয়া এবং তার নিজস্ব একজন দুটো ব্যাগ স্পেসে আনল। তারপর তারা ফ্লোরটি পরিষ্কার করল।

একজন দক্ষ মানুষ হিসেবে সবকিছুই প্রস্তুত করল। ভ্যানে দুটি গেসোলিনের ক্যান ছিল। সে নিজেই তা ভ্যান থেকে ভিলাতে সব আসবাবপত্র এবং ফ্লোরগুলো পুনরায় পরিষ্কার করল। তারপর ভেনে উঠে লক অ্যাঞ্জেলেসের দিকে যাত্রা করল। তার সামনে এবং তারপরের লোস দুটি তার নাবিক দলের সদস্য ছিল। সকাল হওয়ার আগেই সে ইসাথের সামনে ব্যাগগুলো নামাল। সে ব্যাগ দুটো ভ্যান থেকে খালাস করে বহুদূর নিয়ে গেল। ইযাথ সাগরের কিনারায় নামাল।

তখন বিকেল গড়িয়ে আসছিল, যখন তারা ব্যাগ দুটি সাগরে ফেলে দিল। সে দেখল লোহার বাক্সে ঢুকানো দুটি লাশ সাগরের স্রোতের সঙ্গে আস্তে আস্তে দূরে যাচ্ছে। এভাবেই তারা তাদের শেষ কাজটি করল।

ক্রস তার পোশাক পরিবর্তন করে পার্টিতে যোগদান করতে গেল। সে ক্লডিয়ার সঙ্গে বসল। ববি বানজ ডিটাটমি, স্কিপি ডিরি ম্যাসিলিনার সাফল্যের জন্য তাকে অভ্যর্থনা জানাল। হঠাৎ বাইরে থেকে কিছু চিল্কারের শব্দ তার কানে পৌঁছল। হলিউডের লোকজন দৌড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রস তাদেরকে অনুসরণ করল।

উৎসবে ব্যবহৃত গোলাপি ফিতায় আগুন ধরে গেছে। যার ফলে পুরো ঘরটি নিয়নের মতো আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষণ পর বালিশেও আগুন ধরে গেল।

যিশু ক্লডিয়া ক্রসকে শক্ত করে ধরে বলল, এটাই তোমার সবচেয়ে ভালো ভিলা।

ক্রস নিশ্চুপ ছিল। সে ভিলার ওপরে সবুজ পতাকা দেখছিল। সে অনুমান করল সম্ভবত সিগারেটের আগুন থেকে ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে ক্রস বারো মিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। লিয়া ভাজি একজন দক্ষ মানুষ, যে এটাকে আমোদ করে দেখাল।

.

 ২৩.

কারণ সে অফিসিয়াল ছুটিতে। জানাদুতে আগুনের পাঁচ দিন পর পর্যন্ত গোয়েন্দা জিম লুজির অন্তর্ধান লক্ষ্যযোগ্য ছিল না। ডেন্টির অদৃশ্য হয়ে যাওয়া অবশ্য ক্লেরিকুজিওকে কোনোভাবেই কখনো জানানো হয়নি।

ফিল সারকির শরীর খোঁজার তদন্তে পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। লুজির ওপর সন্দেহটা জোরদার ছিল। আর মনে করা হয়েছিল জিজ্ঞেসাবাদ থেকে রক্ষা পেতে সে পালিয়ে ছিল।

লস অ্যাঞ্জেলেসের গোয়েন্দারা ক্রসের সাক্ষাৎকার নিতে এলো, কারণ লুজিকে জানা হোটেলে শেষ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই দুজন মানুষের মধ্যে কোনো সম্পর্ক দেখা যাচ্ছিল না। ক্রস ব্যাখ্যা করল, পার্টির রাতে সে তাকে এক নজর দেখেছিল।

কিন্তু আইন সম্পর্কে ক্রস মোটেই উদ্বিগ্ন ছিল না। ক্লেরিকুজিও’র কথা শোনার জন্য সে অপেক্ষা করছিল।

ক্লেরিকুজিও নিশ্চিতভাবেই জানলেন, ডেন্টি নিখোঁজ ছিল। তারা নিশ্চিতভাবেই জানলেন, জানাতে তাকে শেষ দেখা গিয়েছিল। কেন তারা তার এই তথ্যের জন্য যোগাযোগ করল না। সমস্ত ব্যাপারটা কি এত সহজে পার পেয়ে যাবে? ক্রস এক মুহূর্তের জন্য এটা বিশ্বাস করছিল না। সে নিয়মিতভাবে দিনের পর দিন হোটেলে যেত। পুড়ে যাওয়া ভিলাগুলো পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে থাকত। লিয়া ভাজি নিঃসন্দেহে রক্ত মাখাদের যত্ন নিত।

ক্লডিয়া তার কাছে প্রমণে এলো। সে ছিল উত্তেজনায় কানায় কানায় পূর্ণ। ক্রস তার অনুচরদের আপ্যায়নে ডিনারের আয়োজন করেছিল যাতে ব্যক্তিগত কথা বলতে পারে।

তুমি এটা বিশ্বাস করতে চাচ্ছা না, ক্রসের কাছে সে বলল, তোমার বোন লডস্টোন স্টুডিওর প্রধান হতে যাচ্ছে।

অভিনন্দন ভাই সুলভ আলিঙ্গন করে ক্রস বললেন। আমি সব সময় বলতাম তুমি ক্লেরিকুজিও’র মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

তোমার স্বার্থেই আমাদের পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়েছিলাম। সবার কাছে পরিষ্কার করলাম। ক্লডিয়া ভ্রূকুটি করে বলল।

ক্রস হাসল। তমি নিশ্চিতভাবেই করেছিলে। তোমরা চলে গিয়েছিলে শুধু ডন নিজে থেকে গিয়েছিল। ডন বলল, তার নিজের চিন্তার জন্য মুক্তি দেয়া হয়, আর ঈশ্বর তার প্রতি সহায় হোন।

ক্লডিয়া কাঁধ ঝাঁকালেন। আমি তাদের সমীহ করি না। কিন্তু যা ঘটেছিল তা তোমাকে বলার দরকার ছিল। কারণ এটা ছিল খুবই অদ্ভুত ঘটনা। যখন ববির জেট বিমানে আমরা সবাই ভেগাস ছেড়ে আসলাম, তখন মনে হয়েছিল সবকিছু ঠিকঠাক আছে। কিন্তু যখন আমরা লস অ্যাঞ্জেলেসে অবতরণ করলাম তখনই সব যন্ত্রণা প্রকাশিত হলো। গোয়েন্দারা ববি-কে গ্রেফতার করল। মনে করো তখন কি অবস্থা?

বাজে সিনেমার মতো, ক্রস ঠাট্টা করল।

না, শোনো, এটা রহস্যময় ক্লডিয়া বলল।

চিন্তা করো জোহানা বানজের সঙ্গে গোপন পার্টিতে অবস্থান করেছিল? তাকে দেখতে কেমন দেখা গিয়েছিল, তুমি কি ভাবতে পারো? দেখা গেল, তার বয়স মাত্র পনের বছর। তারা ববিকে সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণেই পেয়েছিল। সে তাকে রাজ্যের সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল বলে এটা শ্বেতাঙ্গ দাসত্ব।

উত্তেজনায় ক্লডিয়ার চোখ বড় হয়ে গেল। কিন্তু এটা সবই ছিল একটা সাজানো ঘটনা। চল্লিশ বছর বয়সের একজন লোক তাদের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করার ফলে সে রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডের মতো চিৎকার করছিল, আর সে সময় সেখানে জোহানার মাতাপিতা উপস্থিত ছিল।

সে অবশ্যই দেখতে পনের বছরের ছিল না। ক্রস বলল। যদিও তাকে একজন ভালো পতিতার মতো দেখাচ্ছিল।

এই ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারী অবশ্যই বানানো হয়েছিল। ক্লডিয়া বলল, কিন্তু স্কিপি ডিরির মতো একজন ভালো বয়স্ক লোক দায়িত্বটা নিয়েছিল। সে বানজকে সে সময় রক্ষা করেছিল। সে তাকে আয়ত্তে রেখেছিল। সমস্ত বিষয় মিডিয়ায় দিয়ে দিয়েছিল। অতএব সবকিছু মনে হয় চতুর্ভুজের মতো ছড়িয়ে পড়ল।

ক্রস হাসছিল। আপাতদৃষ্টিতে ডেভিড রেডফেলো তার দক্ষতার কিছুই হারায়নি।

এটা মজার বিষয় নয়। ক্লডিয়া নিন্দনীয়ভাবে বলল। অসহায় ববির বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটা হয়েছিল। মেয়েটা কসম খেয়ে বলছিল ভেগাসে ববি তাকে জোরপূর্বক যৌন কাজ করেছিল। তার পিতা-মাতা কসম খেয়ে জানাল, তারা টাকার তোয়াক্কা করে না। কিন্তু তারা চেয়েছিল ভবিষ্যতে যেন যুবতী ও নিষ্পাপ বালিকাদের ওপর ধর্ষকের ধর্ষণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সমস্ত স্টুডিও হৈচৈএ পূর্ণ ছিল। ডোরা ও কেভিন ম্যারিয়ন এতই বিমর্ষিত হয়ে পড়েছিল যে তারা তাদের স্টুডিওটি বিক্রি করার জন্য আলাপ-আলোচনা করেছিল। তারপর আবার দায়িত্ব নিল। কম বাজেটের একটি ছবিতে মেয়েটিকে তারকা বানানোর জন্য সে চুক্তি করল।

তার বাবা স্ক্রিপ্ট লিখে দিলেন। তারপর বেনিকে স্ক্রিপ্টটাকে পুনর্লিখন করতে বললেন একদিনের মধ্যে। এজন্য তাকে দেয়া হবে অনেক টাকা। খারাপ কিছু নয়। তাছাড়া বেনি জানিয়াসদের মধ্যে অন্যতম। আমরা সবকিছু সেট করি। পরে লস অ্যাঞ্জেলেসের জেলা অ্যাটর্নি জোর দিয়ে বলেন, তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিএ লডস্টোন নির্বাচিত হয়। ডিএ এলি ম্যারিয়নের মাধ্যমে নিজেকে রাজার মতো মনে করেছিল। স্কিপি পাঁচ বছরের জন্য প্রতি বছর এক মিলিয়ন বেতন হিসেবে স্টুডিওতে নিলেন অ্যাথোয়াম হিসেবে তাকে একটা চাকরির প্রস্তাব দিল। আর তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি জোর দিয়ে বললেন ববিকে, বানজ স্টুডিওর প্রধান হিসেবে আগুন জ্বালাবে। পরে সে বিস্তারিত আলোচনা করল। কেউ জানে না কেন এত কঠিন ছিল।

এক ঘুষ না খাওয়া পাবলিক অফিসার কাঁধ বাঁকিয়ে ক্রস বলল, এটা ঘটায়।

সে আবার ডেভিড রেডফেলার কথা ভাবল। রেডফেলো প্রান্তভাবে অসম্মত হয়েছিল যে, এমন পশু একেকটা ছিল। আর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে চিন্তা করল রেডফেলো কিভাবে সবকিছুর ব্যবস্থাপনা করে। রেডফেলো খুব সম্ভব ডিরিকে বলল, আমি তোমাকে তোমার কর্তব্য পালনের জন্য ঘুষ দিচ্ছি? আর অর্থ প্রসঙ্গে রেডফেলো অবশ্যই তড়িঘড়ি করে সীমান্তের দিকে চলে গেল। ক্রস কল্পনা করল বিশ থেকে পনের বিলিয়নে স্টুডিও বিক্রি করা যাবে, বিশ মিলিয়নে কখনো নয়। আর ডিরির জন্য কোনো ঝুঁকি হবে না। সে কঠিনভাবে আইন অনুসারে অভিনয় করবে। এই আসলেই আভিজাত্যপূর্ণ।

ক্লডিয়া তখনো দ্রুত কথা বলছিল। যে কোনোভাবে বানজ পদক্ষেপ নিয়ে ফেলল সে বলল, আর ডোরা ও কেভিন স্টুডিওটি বিক্রয় করে সুখী ছিল। তাদের নিজস্ব ছবিতে পাঁচটা সবুজ বাতি সংযোগ করলেন আর তাদের নগদ অর্থ এলো এক বিলিয়ন ডলার। আর এই ছোট ইতালিয়ান লোকটির আবির্ভাব হয় স্টুডিওতে। সভা ডেকে সে ঘোষণা করে সে এই স্টুডিওর নতুন মালিক। পরে সত্যই অপ্রত্যাশিতভাবে সে আমাকে স্টুডিওর প্রধান বানায়। স্কিপি বদ্ধ পাগল ছিল। এখন আমি তার বস। এটা কি বাতিকগ্রস্ত? ক্রস তৎক্ষণাৎ তাকে হাস্য কৌতুক অবস্থায় দেখল। পরে সে হাসল।

হঠাৎ ক্লডিয়া ঘুরে দাঁড়াল এবং তার ভাইকে দেখল। সে আগে যেমন দেখেছিল তার চেয়ে তার চোখ ছিল কালো, উজ্জ্বল, আধা তীক্ষ্ণ। কিন্তু তার মুখের ওপর ভালো প্রকৃতির হাসির পরশ। সে বলল, সেসব বালকের মতো করতে যাচ্ছে। আর আমি এমনকি কারো সাথে যৌন সংসর্গ করিনি…।

ক্রস বিস্মিত হলো। কি ব্যাপার ক্লডিয়া? সে জিজ্ঞেস করল, আমি ভাবি তুমি সুখী।

ক্লডিয়া হাসল। আমি সুখী। আমি কি আঁস্তাকুড়ে না? কারণ তুমি আমার ভাই এবং আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে জানতে চাই যাতে আমি বোকা বনে না যাই।

সে সামনে হাঁটল এবং তার পরের আসনেই বসল। যখন আমি বলেছিলাম ঠিক তোমার জন্য বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়েছিলাম তখন মিথ্যা বলেছিলাম। আমি গিয়েছিলাম কারণ আমি চেয়েছিলাম কোনো কিছুর অংশ হতে যেমন তুমি কারো অংশ। আমি গিয়েছিলাম কারণ আমি বেশি সময় ছেড়ে থাকতে পারি না। কিন্তু ক্রসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকাকে আমি ঘৃণা করি। ডন এবং অন্যদেরকেও।

এর অর্থ তুমি স্টুডিও চালু করতে চাও না? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

ক্লডিয়া উচ্চস্বরে হাসল। না আমার ঢোকার ইচ্ছে আছে, আমি এখনো ক্লেরিকুজিও এবং আমি ভালো ছবি বানাতে চাই ও অনেক টাকা উপার্জন করতে চাই। আমি বিখ্যাত মহিলাদের নিয়ে একটা ভালো ছবি বানাতে পারি। তা দেখা যাবে যা ঘটতে পারে। আমি ব্যবহার করব পরিবারের মেধাবীদের জন্য খারাপ বাদে ভালোটা শুধু। তারা উভয়েই হাসল।

পরে ক্রস তাকে বাহুতে জড়িয়ে নিল। সে গালে চুমু দিল। আমি ভাবি এটাই বড়, সত্যই বড়। সে বলল।

সে তার নিজের জন্য এবং তার জন্য বুঝাল। কারণ ডন ক্লেরিকুজিও তাকে যদি স্টুডিওর প্রধান হতে বাধ্য করে, সে ডেন্টির নিখোঁজের ব্যাপারে ক্রসের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে না। সমস্ত প্রকল্প কাজ করছিল।

তারা ডিনার শেষে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করল। যখন উঠতে যাচ্ছিল তখন ক্রস তার ডেস্ক থেকে কালো মানিব্যাগটা নিল। ঘরের টেবিলে একটা হিসাব-নিকাশ করে নাও। সে বলল, সে তার গালে হালকা চড় দিয়ে বলল, বড় ভাইয়ের বিষয়ে তুমি জড়িয়ে না পড়লে সে আমার সাথে শিশুর মতো কথা বলবে। ঐ শেষ সময়ে আমি তোমাকে সজ্জিত করতে চাই।

সে তাকে জড়িয়ে ধরল। তার খুব আন্তরিকতা অনুভব হলো। দুর্বলতার এক মুহূর্তে সে বলল, তুমি জানো, হঠাৎ কোনো কিছু ঘটলে আমি তোমার জন্য আমার এস্টেট ত্যাগ করব। আর আমি খুব ধনী। অতএব তুমি চাইলে, তুমি সব সময় স্টুডিওটি দূর করার কথা বলতে পার। সে যখন বলল, তার আঁখি যুগল তখন জ্বলজ্বল করছিল, ক্রস, আমি তোমাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তোমার এস্টেট ছাড়া স্টুডিওটি যে কোনোভাবে বন্ধ করে দেয়ার কথা বলতে পারি। তারপর হঠাৎ সে উদ্বিগ্নভাবে তাকাল কোনো ভুল? তুমি কি অসুস্থ?

না, না ক্রস বলল, আমি ঠিক তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম।

ঈশ্বকে ধন্যবাদ ক্লডিয়া বলল, এখন আমি ভেতরে আছি; সম্ভবত তুমি চলে যেতে পারো। তুমি পরিবারটি থেকে পালিয়েও যেতে পারো। তুমি মুক্ত হতে পারো।

ক্রস হাসল। আমি মুক্ত সে বলল, ফ্রান্সে অ্যাথেনার সাথে বসবাসের উদ্দেশ্যে আমি শিগগিরই চলে যাচ্ছি।

দশম দিনের বিকেলে জর্জিও ক্লেরিকুজিও তাকে দেখতে জানাদুতে এলেন। ক্রস তার পাকস্থলিতে দমে যাবার অবস্থা অনুভব করলেন। সে এটা নিয়ন্ত্রণ না করলে সে জেনেছিল এটা তাকে যন্ত্রণার দিকে নিয়ে যাবে।

জর্জিও তার দেহরক্ষী রেখে হোটেলে, রক্ষীদের সাথে বাইরে গেল না। কিন্তু ক্রস কোনো মোহে ছিল না। তার নিজস্ব দেহরক্ষীরা জর্জিও’র দেয়া যে কোনো আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত।

আর জর্জিও’র আবির্ভাবে সে পূর্ণ আশ্বস্ত ছিল না। জর্জিওকে মনে হলো ওজন হারিয়ে ফেলার সাথে তার মুখমণ্ডল ছিল খুবই মলিন। ক্রস এই প্রথম তাকে এ রকম দেখল যদিও সে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

ক্রস তাকে উচ্ছ্বসিতভাবে সম্ভাষণ জ্ঞাপন করল। জর্জিও, সে বলল, এটা একটা অপ্রত্যাশিত সুখ। আমাকে আহ্বান করলেই আপনার জন্য প্রস্তুত ভিলা পাবেন।

জর্জিও একটা ক্লান্ত হাসি হেসে বলল, আমরা ডেন্টির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারিনি।

সে একটু সময় বিরতি নিল।

সে তার ঠিকানায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। আর জাদুতে তাকে শেষ দেখা গিয়েছিল।

যিশু ক্রস বলল, এটা মারাত্মক। কিন্তু আপনি ডেন্টিকে জানেন, সে সব সময় নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকে না।

এখন জর্জিও হাসতে বিরক্তবোধ করল না। সে ছিল লুজির সাথে ছিল।

সে জিম লুজির সাথে ছিল আর লুজিও চলে গেছে।

তারা আশ্চর্য বন্ধনে বাঁধা ছিল।

ক্রস বলল, আমি ঐ সম্পর্কে বিস্মিত।

তারা দুজনে ছিল বন্ধু জর্জিও বলল, বয়স্ক লোকেরা এটা পছন্দ করে না, কিন্তু ডেন্টি ছিল লোকদের বেতন প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

যে কোনোভাবে আমি সাহায্য করব।

ক্রস বলল, আমি সব হোটলের চাকরিজীবীদের চেক করে দেখব। আপনি ডেন্টিকে চেনেন, কিন্তু লুজি অফিসিয়ালভাবে রেজিস্ট্রিকৃত ছিল না। আমরা ভিলাগুলোতে একজনের জন্য কাজ পারব না।

ফিরে পাবার সময়ই তুমি করতে পারবে।

জর্জিও বলল। ব্যক্তিগতভাবে ডন তোমাকে দেখতে চায়। এমনকি সে উড়োজাহাজে ফিরিয়ে আসার জন্য তোমাকে সনদ দিতে চায়।

ক্রস অনেকক্ষণ বিরতি নিল। আমি একটা ব্যাগে যাত্রার জন্য সবকিছু পুরব। সে বলল, জর্জিও, এটা কি মারাত্মক?

জর্জিও সরলভাবে তার মুখের দিকে তাকাল। আমি জানি না, সে বলল।

কাগজে ভরা একটা ব্রিফকেসসহ জর্জিও রাজকীয় উড়োজাহাজে করে নিউইয়র্কের দিকে গেল। ক্ৰস নিজেকে সুযোগ দিল না। যদিও এটা একটা খারাপ লক্ষণ। যে কোনো কারণে জর্জিও তাকে কোনো তথ্যই কখনোই দেবে না। উড়োজাহাজটি ডিনটি আটকা গাড়ি ও ছয়জন ক্লেরিকুজিও সৈন্যের সম্মুখীন হলো। জর্জিও একটা গাড়িতে চড়ল এবং তা চলা শুরু করল। ক্রস অন্যটাতে চড়ল। আবার একটা খারাপ লক্ষণ। কুওগে অবস্থিত ক্লোরিকুজিও কম্পাউন্ডের নিরাপত্তার গেট বরাবর যখন গাড়ি পার হচ্ছিল তখন প্রভাত। দুই জন লোক বাড়িটির দরজায় নিরাপত্তায় ছিল। অন্যান্য লোকজন কম্পাউন্ডের চারপাশে ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু সেখানে কোনো নারী বা শিশু দেখা গেল না।

ক্রস জর্জি ওকে বলল, ডিসনিল্যান্ডে কোথায় নরক? কিন্তু জর্জি ও কৌতুকের বাস্তবতা প্রত্যাখ্যান করল।

প্রথম কারণ, ক্রস দেখেছিল কুওগের বসবাসের কামরা যার মধ্যে আট জন লোকের চক্র ছিল। ঐ চক্রের মধ্যে দুজন নোক খোশ মেজাজীভাবে কথা বলছিল। তার হৃৎপিণ্ডটা একটা জাম্প দিল। তারা ছিল পেটি ও লিয়া ভাজি। ভিনসেন্ট তাদেরকে দেখছিল। তাকে রাগান্বিত দেখাল।

পেটি ও লিয়া খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছে বলে মনে হলো। কিন্তু লিয়া শুধু টিলা পাজামা ও একটা শার্ট পরেছিল, জ্যাকেট বা টাই ছিল না। লিয়া সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় পরে। তাই এটার অর্থ হলো সে খুঁজছিল ওসব নিরস্ত্র করেছিল। আর বাস্তবিক তাকে দেখাত উল্লসিত ইঁদুরের মতো যার চারপাশে হাসি-খুশি ও ভীতিকর বিড়ালেরা ঘিরে থাকত। লিয়া ক্রসকে একটা দুঃখিত প্রাপ্তি স্বীকারের অভিবাদন দিল। পেটি তার দিক থেকে কোনো কিছুই জানাল না। কিন্তু যখন জর্জিও ক্রসকে আকড়ার পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন পেটি হঠাৎ থামল এবং তাদের অনুসরণ করল, যেমন করল ভিনসেন্ট।

ডন ক্লেরিকুজিও তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বড় আরাম কেদারায় আসন গ্রহণ করে তিনি তার একটি আঁকাবাঁকা সিগারেট পান করছিলেন। ভিনসেন্ট এসে পানশালা থেকে আনা মদের গ্লাস তার হাতে তুলে দিল। ক্রস কোনো কিছুই প্রস্তাব করল না। পেটি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। জর্জিও ডনের পরবর্তী সোফায় বসে ক্রসকে তার সাথে বসতে ইঙ্গিত করল।

ডনের মুখে বয়সের পাতলা দাগ পড়েছে। আবেগের ছোঁয়া নেই। ক্রস তার গালে চুমু দিল। ডন তার দিকে তাকিয়ে যেন দুঃখে তার মুখমণ্ডল মোলায়েম হলো।

ক্রকসিফিজিও, ডন বললেন, এটা চাতুর্যভাবে সম্পন্ন হলো কিন্তু এখন তুমি অবশ্যই তোমার কারণসমূহ ব্যাখ্যা করবে। আমি ডেন্টির নানা, আমার মেয়ে তার মা। এখানে এমন লোক আছে যে তার চাচা। তুমি অবশ্যই আমাদের সবাইকে বলবে।

ক্রস আত্মসংবরণ ঠিক রাখার চেষ্টা করল।

আমি বুঝতে পারলাম না, সে বলল, জর্জিও কর্কশভাবে বলল, ডেন্টি, সে কোথায়?

যিশু, আমি কিভাবে জানব? বিস্মিত হয়ে ক্রস বলল।

সে কখনো আমাকে জানায়নি। মেক্সিকোর নিচু এলাকায় অনেক সময় থেকেও থাকতে পারে।

জর্জিও বলল, তুমি বোঝনি। চারপাশে খারাপ কাজ। তুমি অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হয়েছ। তুমি তাকে কোথায় আঁস্তাকুড়ে রেখেছ?

পানশালায় ভিনসেন্ট ঘুরল, যদিও সে তার মুখমণ্ডল দেখতে পারল না। তার পাশে ক্রস শুনতে পারল পেটি তার সোফার কাছে আসছে।

কোথায় প্রমাণ আছে? ক্রস বলল।

কে বলে আমি ডেন্টিকে হত্যা করেছিলাম।

আমি বলি। ডন কথা বলছিল। বোঝ আমি ঘোষণা করেছি তুমি দোষী।

এই রায়ের কোনো আপিল নাই। আমি তোমাকে এখানে তোমার ওপর দয়ার জন্য তোমার অজুহাত দেখতে আসব। কিন্তু তুমি অবশ্যই আমার নাতিকে হত্যা ব্যাপারটা প্রমাণ করবে।

ঐ স্বর গাম্ভীর্যপূর্ণ কথায় ক্রস উপলব্ধি করল সবকিছু শেষ। তার ও লিয়া ভাজির জন্য সবশেষ। ভাজি অবশ্য উপলব্ধি করেছিল। তার চোখ দেখে বোঝা গেল।

ভিনসেন্ট ক্রসের দিকে ঘুরল। তার শক্ত মুখমণ্ডল মোলায়েম হলো। বলো ক্রস, আমার বাবার কথা সত্য? এটা তোমার একমাত্র সুযোগ।

ডন মাথা নাড়ল। সে বলল, ক্রকসিফিজিও, তোমার বাবা ছিল আমার ভাগ্নের চেয়ে বড়, ক্লেরিকুজিও’র রক্ত যেমন তুমি। তোমার বাবা ছিল আমার বিশ্বস্ত বন্ধু। আর সে জন্যেই আমি তোমার কারণগুলো শুনব।

ক্রস নিজে নিজেই প্রস্তুতি নিল। ডেন্টি আমার বাবাকে হত্যা করেছিল। আপনি যেমনি আমাকে দোষী বলে রায় দিলেন তেমনি আমি তাকে দোষী বলে রায় দিলাম। আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশোধের বাইরে সে আমার বাবাকে হত্যা করেছিল। বাকরের দিক দিয়ে সে ছিল একজন সান্তাডিও’র।

ডন জবাব দিল না। ক্রস চালিয়ে গেল। কিভাবে আমার বাবার প্রতিশোধ না নিয়ে পারি? যে বাবা আমার জীবনের জন্য দায়িত্বশীল ছিল তাকে আমি কিভাবে ভুলতে পারি?

আর আমি ক্লেরিকুজিও’র প্রতি অত্যধিক সম্মান দিয়ে থাকি যেমন আমার বাবা দিত। আর তাকে হত্যার সন্দেহ করা হয়। এমনকি আমার মনে হয় আপনি অবশ্যই জানেন ডেন্টি দোষী ছিল ছিল না। অতএব আমি কিভাবে এ ভুলের সংশোধন করতে পারি?

তোমার প্রমাণ জর্জিও বলল।

পিপি ডি লিনার মতো লোক কখনো বিস্মিত হতে পারে না, ক্রস বলল।

আর জিম লুজি অন্য দিকের শেষে অনেক মিল রয়েছে। এই কামরার একজন মানুষও নেই যে বিশ্বাস করবে।

আপনারা সবাই জানেন ডেন্টি দোষী। আর ডন আপনি স্বয়ং সান্তাডিও’র গল্প আমাকে বলেছেন।

তা কে জানে, যে ডেন্টি পরিকল্পনা করেছিল, পরে সে আমাকে মারবে। পরবর্তীতে তার চাচারা। ক্রস ডনের কথা উল্লেখ করতে কারো ভোয়াক্কা করল না। সে আপনার স্নেহ কামনা করেছে। ক্রস উনকে বলল।

ডন তার সিগারেট পাশে রেখে দিল। তার মুখমণ্ডল রহস্যময় হলো কিন্তু দুঃখের ছোঁয়া মেখে রইল।

পেটি কথা বলল। পেটি ডেন্টির খুব কাছের ছিল। কোথায় আঁস্তাকুড়ে শরীরটা ফেলেছ। পেটি আবার জিজ্ঞেস করল। আর ক্রস তার কোনো উত্তর দিল না। কোনো শব্দ তার মুখ দিয়ে বের হলো না।

অনেকক্ষণ নীরবতার পর শেষে ডন তাদের সবার দিকে তার মাথা তুলে বলল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যুবকদের সময় নষ্ট করে। সে বলল, তারা তাদের অভ্যর্থনা জানালে কি ঘটবে? কিভাবে তারা অধিক সম্মান প্রদানে উদ্বুদ্ধ হবে? যুবকদের সমবেদনা, কৃতজ্ঞতা নেই। আর আমার মেয়ে কিছুটা দিশেহারা হয়ে গেল। আমাদের তার জটিল যন্ত্রণা এবং মুছে যাওয়া স্মৃতির সুস্থতা আশা করতে হবে। সে তার ছেলেকে সব বলে দিয়েছে, তার ছেলে পালিয়েছে। আর সত্য জানার জন্য বছরের পর বছর সময় নিয়েছে।

আর এখন মনে হচ্ছে যে, এই কামরায় সবাই আরামে আছে। পেটি সামনে এগিয়ে ভয়ে ক্রসের পাশে সোফায় বসল। ভিনসেন্ট পানশালার পেছনে ব্র্যান্ডির গ্লাস তার ঠোঁটে তুলে স্যালুট জানাল।

কিন্তু বিচার হোক বা না হোক, তুমি পরিবারটির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছ ডন বলল।

অবশ্যই শাস্তি হবে। তোমার জন্য অথ, আর লিয়া ভাজির জন্য তার জীবন।

ক্রস বলল, লিয়া ডেন্টির সাথে কিছুই করেনি অবশ্য লুজির জন্য। মুক্তিপণে তাকে যদি মুক্ত দেন। আমি জানাদুর অর্ধেকের অধিকারী। আমার এবং লিয়া ভাজির জন্য দান হিসেবে আমি সম্পত্তির অর্ধেক আপনাকে দিয়ে দেব।

ডন ক্লেরিকুজিও এটা ভেবে দেখবে বলে মনে হলো। তুমি বিশ্বাসী ও অনুগত সে বলল। সে জর্জিও পরে ভিনসেন্ট ও পেটির দিকে ঘুরে ফিরল। যদি তোমরা তিনজন সম্মত হও আমি সম্মত হব। তারা কোনো উত্তর দিল না।

ডন যেন অনুতাপে দীর্ঘশ্বাস নিলেন। তোমার সম্পত্তির অর্ধেক তুমি দেবে কিন্তু অবশ্যই আমাদের রাজ্যের বাইরে চলে যাবে। ভাজি অবশ্যই তার পরিবারের সাথে সিসিলিতে ফিরে যাবে কিংবা যাবে না এটা তার ইচ্ছা। আমি যতদূর অনুমান করতে পারি তুমি এবং ভাজি অবশ্যই কখনো আবার একত্রে কথা বলবে না। আর আমি আমার ছেলেদেরকে আদেশ করছি, তোমাদের উপস্থিতিতে কখনো তাদের ভাগ্নের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে না। তুমি এক সপ্তাহ থাকবে তোমার কাজ গোছানোর জন্য। জর্জিও’র কাছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজে সই দেবে। তারপর ডন মৃদু কর্কশ ভাষায় বলল, তুমি আমাকে আশ্বস্ত করবে যে ডেন্টির পরিকল্পনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিল না। এখন শান্তিতে যাও এবং স্মরণ করো। আমি সর্বদা তোমার বাবাকে একটা সন্তানের মতো ভালোবাসতাম।

যখন ক্রস ঘর ছাড়ল তখন ডন ক্লেরিকুজিও চেয়ারের বাইরে এলেন এবং ভিনসেন্টকে বললেন বিছানায়। ভিনসেন্ট তাকে উপর সিঁড়িতে যেতে সাহায্য করল। এখন ডনের পায়ে নিশ্চিত দুর্বলতা এসে গেছে। তার বয়স পরিশেষে তার শরীর ধ্বংস করতে শুরু করছিল।

.

সমাপ্তি

নাইস, ফ্রেন্স
কুওগ

ভেগাসের শেষ দিনগুলোতে ক্রস ডি লিনা তার চিলেকোঠার বেলকনিতে বেসল। নিচে তাকিয়ে দেখল সূর্যস্নাত উন্মুক্ত মাঠ-ঘাট। সিজার প্যালেস, কলহ, মরীচিকা ও মরুর পান্থশালা বিখ্যাত হোটেল নিয়নের তাঁবু সূর্যের সাথে যে, চ্যালেঞ্জ করে।

ডন ক্লেরিকুজিও নির্বাসন প্রদানে সুনির্দিষ্ট ছিল। ক্রস লাস ভেগাসে আর কখনো ফিরে আসেনি। তার বাবা কি রকম সুখী। পিপিও এখানে রয়েছে। আর গ্রোনিভেল্ট তার নিজের ভ্যালহালায় শহর গড়ে তুলেছে। কিন্তু ক্রস কখনো তাদের শান্তি আসলেই উপভোগ করতে পারল না। এটা সত্য, ভেগাসের সুখ সে উপভোগ করেছিল। কিন্তু সেই সুখে কোনো স্বাদ ছিল না।

সাত ভিলাতে সব সবুজ পতাকা মরুর নীরবতায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ডেন্টির প্রেতাত্মা একটা কালো কঙ্কাল পুড়ে যাওয়া বিল্ডিংয়ে ঝুলে রইল। কিন্তু সে আবার কখনো এর সব দেখল না।

সে ভালোবাসত জানাদু। সে ভালোবাসত তার পিতা ও গ্রোনিভেল্টকে এবং ক্লডিয়াকে।

যদিও তাদের কিছু ধারণার বিরোধিতা করত। গ্রোনিভেল্ট জানাদুর কাছে বিশ্বস্ত হতে ব্যর্থ হয়। তার বাবা ক্লেরিকুজিও’র কাছে সত্য হতে পারেনি। আর ক্লডিয়া তার নিষ্পাপত্রে বিশ্বাস করত। এখন সে তাদের থেকে মুক্ত। সে একটা নতুন জীবন শুরু করবে। অ্যাথেনার জন্য তার ভালোবাসা কি গড়তে পারবে? গ্রোনিভেল্ট তার বাবা এমনকি ওল্ড ডন রোমান্টিক ভালোবাসার বিপদ সম্পর্কে তাকে সতর্ক করেছিল। যারা তাদের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন মহৎ লোকদের মারাত্মক দোষ এটা। এখন সে তাদের উপদেশ কিভাবে উপেক্ষা করে?

একজন মহিলার কৃপার প্রতি তার নিয়তিকে রাখবে কেন?

কিছুটা সরল তার দৃষ্টি, তার স্বরে শব্দ, যে পথে সে চলাচল করে। তার সুখ এবং তার দুঃখ তার সবই তাকে সুখী করে। পৃথিবীটা চোখ ধাঁধানো সুখের মতো হয়ে যায় যখন সে তার সাথে থাকে। খাদ্য তৃপ্তিকর হয়ে যায়, সূর্যের তাপ উষ্ণ করে তার হাড়। আর সে অনুভব করে তার মাংসের ক্ষুধা, জীবনকে পবিত্র করে। আর যখন সে তার সাথে ঘুমায় সে কখনো দুঃস্বপ্নের ভয় করে না। তার ঘুম এগিয়ে যাবে প্রভাতের দিকে।

অ্যাথেনাকে শেষ দেখার পর এখন তিন সপ্তাহ পার হচ্ছে। কিন্তু এই সকালে তার স্বর সে শুনতে পাচ্ছে যেন। ফ্রান্সে তাকে জানিয়েছিল, সে আসছে। তার স্বরে মুখ সে ধরে ফেলেছে কারণ এখন সে জানল সে স্বয়ং জীবিত আছে। এটা সম্ভব, সে তাকে ভালোবাসবে। আর এখন, কম করে হলেও বিশ ঘণ্টা সে তাকে দেখবে। ক্রসের বিশ্বাস, কিছুদিন সত্যই সে তাকে ভালোবাসবে। সে তাকে ভালোবাসার পুরস্কার দেবে। সে কখনো তাকে সায় দেবে না। আর কিছু ফেরেস্তার মতো সে তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।

সম্ভবত অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন ফ্রান্সের একমাত্র মহিলা যে তার সৌন্দর্য নষ্ট করার চেষ্টায় মেকাপ ও কাপড় পরিধান করে। শুধু তাই নয়, দেখতে যাতে খারাপ দেখা যায় সে সেই চেষ্টাও করে। সে সমকামী নয় কিন্তু বুঝতে সমান হয়, তার শারীরিক সৌন্দর্য এত মারাত্মক সে তার ভেতরের জন্য খুব ক্ষতি করে। সে ক্ষমতাকে ঘৃণা করে। যা তাকে অন্য জনগণের কাছে সোপর্দ করে। সে অহংকারকে ঘৃণা করে। আর অহংকার অকেজো করে দেয় শক্তি। জেনে কারো বিষয়ে নাক গলানো তার জীবনের কাজ।

নাইসে অর্টিসটিক শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার প্রথম দিনে সে শিশুদের মতো হাঁটা-চলা দেখতে চাইল। সে পরিচয়ের ধারণাকে পরাভূত করল। সেদিন সে আরামবোধ করেছিল।

ড. জিরার্ড এ দেখে উপহাস করে বলল, হু, খুব ভালো কিন্তু তুমি ভুল নির্দেশে যাচ্ছ। তার পর সে তার হাত তার হাতে নিয়ে ভদ্রভাবে বলল, তুমি অবশ্যই তাদের দুর্ভাগ্যের সাথে পরিচিত হওনি। তুমি অবশ্যই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

অ্যাথেনা তিরস্কার ও লজ্জাবোধ করল। আবার তার নায়িকাসুলভ অহংকার তাকে বিপথগামী করল। কিন্তু সে স্বয়ং এই শিশুদের শান্তিতে যত্নের কথা অনুভব করল। এটা তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না; তার ফ্রেঞ্চ ভাষা অসম্পূর্ণ, কোনোভাবেই তার শব্দের অর্থ উপলব্ধি করতে পারবে না।

এমনকি আসল যন্ত্রণাও তাকে নিরুৎসাহিত করে না। শিশুরা কখনো ধ্বংসাত্মক হয়, কখনো সমাজের নিয়ম-কানুন বুঝতে পারে না। তারা সবকিছু সামাল দেয় এবং তাদের পরিচর্যা করে। তাদের মল দিয়ে তারা দেয়াল আঠালো করে। আর যেখানে খুশি তারা প্রস্তাব করে। তাদের হিংস্রতায় ও বাইরের দুনিয়ার প্রতি অরুদ্ধিতে কখনো কখনো সত্যিই তারা ভয় পেয়ে যায়।

নাইসে ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় রাতে যখন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সাহিত্য পড়ে তখন অ্যাথেনা নিজকে খুবই অসহায় অনুভব করে। শিশুদের উন্নতি ও তাদের নিয়ে আতঙ্ক সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়। তারপর সে তার বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে কাঁদে।

প্রতিবেদনটি তাকে খুবই অসুখী করে ফেলে। ক্রস তাকে দেখতে আসবে জেনে সে সুখ ও আশায় উচ্ছ্বসিত হয়ে গেল। সে এখনো বেঁচে আছে। আর সে তাকে সাহায্য করবে। সে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়ল। সে ড. জিরার্ডের সাথে পরামর্শ করল।

আপনার মতে কি করলে অত্যাধিক ভালো হবে? সে জিজ্ঞেস করল। সে ব্যাথেনির বড় সহকারী হবে। ড. জিরার্ড বলল, আমি দেখতে চাই সে তাকে কিভাবে সে সময় গ্রহণ করে। আর এটা তোমার জন্য অবশ্যই খুব ভালো হবে।

তাদের সন্তানের জন্য মেয়েদের অবশ্যই আত্মত্যাগ থাকবে না। নাইস বিমানবন্দরে অপরিচিত ক্রসের সাথে তার কাল্পনিক চিন্তা করল।

বিমানবন্দরে ক্রস হেঁটে হেঁটে দেখল সমতল থেকে নিচু ঝুলন্ত টার্মিনালে বাতাস ছিল স্নিগ্ধ ও মিষ্টি। ভেগাসের মতো তাপে দগ্ধ, গন্ধময় না। শেষ প্রান্তের অভ্যর্থনা প্লাজা বিলাসবহুল লাল ও রক্ত বর্ণের ফুলে সুশোভিত।

সেই প্রাজায় সে দেখল তার জন্য অ্যাথেনা অপেক্ষা করছে। আর সে তার গান শৈলীতে প্রজ্ঞা ছড়ানোভাবে মোহিত। যদিও সে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল, তবু তার সৌন্দর্য পুরোপুরিভাবে লুকাতে পারেনি। সোনালি ফ্রেমে ঈষৎ রঞ্জিত চশমা তার চোখকে উজ্জ্বল সবুজ থেকে বাদামিতে পরিণত করেছে। যে কাপড় সে পরেছে তাতে তাকে আরো অপরূপা লাগছে। তার উজ্জ্বল চুল নীল ডেনিমের হ্যাঁটের নিচে খুঁজে রেখেছে। আর এতে তার মুখের একটা অংশ ঢেকে আছে। সে অনুভব করে এমন রোমাঞ্চ যে সেই একমাত্র ব্যক্তি যে জানে। সে আসলে কত সুন্দর।

ক্রস এগিয়ে এলো, অ্যাথেনা তার চশমা খুলে তার ব্লাউজের পকেটে রাখল। সে তার অদম্য অহংকার দেখে হাসল।

কমপক্ষে এক ঘণ্টা পরে তারা অনুচরসহ গেল নেগরেসকো হোটেলে যেখানে নেপোলিয়ন জোসেফাইনের সাথে থাকত। একজন পরিচারিকা ট্রেতে করে ওয়াইনের বোতল দিয়ে গেল। আর পরিবেশন করল ছোট্ট স্যান্ডউইচ।

বেলকনির যেখান থেকে ভূমধ্যসাগর দেখা যায় সেখানে চলে গেল। প্রথমে তারা একে-অপরের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। যদিও সে তার হাত ধরে, মনে হয় যেন সে ধরতে বাধ্য। তার দোয়ায় সে তার মধ্যে উষ্ণতা অনুভব করল। কিন্তু সে দেখল সে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। অনুচরবৃন্দ সুন্দরভাবে জানাদুর যে কোনো ভিলার চেয়ে এটাকে সাজিয়েছেন।

বিছানা কালো, লাল সিল্কের চাদর দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর মানানসই ভাঁজে সোনালি নকশা করে শোভিত করা হয়েছে। টেবিল-চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, ভেগাসের কোথাও এর অস্তিত্ব কখনো ছিল না।

অ্যাথেনা ক্রসকে বেলকনিতে নিয়ে গেল। আর সে যখন এ রকমই করল তখন ক্রস অন্ধের মতো তার গালে চুমু দিল। তারপর সে নিজেকে আর সহায়তা করল না। সে একটা ভেজা সুতি ন্যাপকিন দিয়ে ওয়াইনের বোতল ঢাকল এবং তার মুখ থেকে খারাপ দেখা যায় এমন কসমেটিক্স ঘষে-মেজে তুলে ফেলল। পানির ফোঁটায় তার মুখ চিকচিক করছে। তার ত্বক দীপ্তিমান ও গোলাপি। সে তার একটি হাত তার কাঁধে রেখে তার ঠোঁটে মার্জিতভাবে চুমু দিল।

বেলকনি থেকে তারা নাইসের পাথরের বাড়ি-ঘরের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিল। শত বছর আগে থেকে আঁকা সবুজ ও নীলের ম্লান আভা তারা দেখছিল। ক্রস ও অ্যাথেনা তাদের ওয়াইনে প্রথম চুমুক দেয়। সে সময় তারা মৃদু আওয়াজ শুনছিল। পাথরের সমুদ্র পাড় থেকে, কামানের মুখের মতো দেখা যায় তা থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু আসলে নীল সাগরের উত্তেজিত গভীর পানির বড় ঢেউয়ের আওয়াজ।

অ্যাথেনা তার মাথা ঘুরিয়ে ফেলল। সে ক্রসকে বলল, কত দিন তুমি এখানে থাকবে?

তুমি চাইলে পাঁচ বছর সে বলল।

এটা কথার কথা অ্যাথেনা ভ্রুকুটি করে বলল।

তুমি এখানে কি করবে? ক্রস বলল, আমি ধনী লোক, হয়তো আমি একটা ছোট হোটেল কিনব।

জাদুর তাহলে কি হবে? অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল।

আমার স্বার্থ বিক্রি করতেই হলো, সে বলল। সে কিছু নিল। অর্থ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।

আমার অর্থ আছে অ্যাথেনা বলল। তুমি বুঝেছ। এখানে আমি পাঁচ বছরের জন্য থেকে যেতে চাচ্ছি। আর পরে তাকে বাড়িতে নিতে যাচ্ছি। তারা কি বলে তা আমি কেয়ার করি না। আমি কখনো একটা প্রতিষ্ঠানে তাকে রাখবো না। আমি তার জীবনের বাকি দিনগুলোর দায়িত্ব নেব। আর তার কিছু ঘটলে, আমার জীবন তার শিশুদের মতো হবে। অতএব তুমি দেখ, আমরা একত্রে একটা জীবনে কখনো আসতে পারব না।

ক্রস যথাযথভাবে তাকে বোঝাল। উত্তরের জন্য ক্রস একটু বেশি সময় নিল। তার স্বর ছিল শক্ত এবং নিশ্চয়তাপূর্ণ। সে বলল, অ্যাথেনা আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত, আমি তোমাকে ও ব্যাথেনিকে ভালোবাসি।

তোমাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। এটা হওয়া সহজ নয়, আমি তা জানি। কিন্তু আমরা সর্বশক্তি নিয়েই চেষ্টা করব। ব্যাথেনিকে তুমি সাহায্য করতে চাও কিন্তু জীবন উৎসর্গ করতে না। সে কারণেই আমাদের অবশ্যই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি সবকিছু করব, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারব। দেখ, আমরা হলাম জুয়াখেলার ঘরে জুয়াড়ির মতো। আমাদের বিরুদ্ধে ঝুঁকিগুলো জড়ো হয় কিন্তু তাদেরকে সর্বদা আমাদের সরাতে হয়।

ক্রস দুর্বলতা দেখে তাতে সে আরো চাপ দিল। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। সে বলল, আমাদের সন্তানরা অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতো বেড়ে উঠবে। সব পরিবারেই কিছু দুর্ভাগ্য থাকে। আমি জানি আমরা তা পরাভূত করতে পারব। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো? শেষে অ্যাথেনা তার দিকে সরাসরি তাকাল।

শুধু তুমি বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, সে বলল।

শয়নকক্ষে ভালোবাসার সময় তারা একে-অপরকে বিশ্বাস করল। অ্যাথেনাও বিশ্বাস করে, ক্রস সত্যিই ব্যাথেনিকে রক্ষায় তাকে সাহায্য করবে।

আর ক্রসকেও অ্যাথেনা সত্যই ভালোবাসে। পরিশেষে তার শরীর তার দিকে ঘুরিয়ে চুপি চুপি বলল, আমি তোমায় ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি। ক্রস মাথা নুইয়ে তাকে চুমু দিল। সে আবার বলল, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আর ক্রস ভাবল, পৃথিবীতে এমন মানুষ কি আছে সে তাকে অবিশ্বাস করতে পারে?

নিঃসঙ্গ শোবার ঘরে ডন তার গলায় শীতের চাদর জড়াল। মৃত্যু আসন্ন। আর সে এত ধূর্ত যে কেউ কাছে আসতে চায় না। কিন্তু সবকিছু তার পরিকল্পনা অনুসারেই সম্পন্ন হয়। আহ! কি সহজে যুবকদের চালাকিতে পরাস্ত করা যায়।

গত পাঁচ বছরে সে দেখেছে ডেন্টি বড় বিপদের মহাপরিকল্পনা করেছে। ক্লেরিকুজিও পরিবারের ভুলভ্রান্তি নিয়ে সমাজে ডেন্টি বিরোধিতা করে। আর যদিও উন সে স্বয়ং কি করতে পারে। নির্দেশ দেয়া হলো তার মেয়ের ছেলেকে হত্যার, যে ছিল তার নাতি? জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি– এ রকম একটি নির্দেশ কি অমান্য করবে? যদি তারা তাই করে, তারা তাকে কি রাক্ষসের মতো ভাবে তাদের ভালোবাসার চেয়ে তাকে কি বেশি ভয় করে? আর রোজ ম্যারি সত্যের জন্য নিশ্চিতভাবেই তার পবিত্রতা রক্ষা করেছে।

কিন্তু যখন পিপি ডি লিনাকে হত্যা করা হয়, লাশটিও ফেলে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ডন সত্য বিষয়টা জেনেছিল। লুজির সাথে ডেন্টির সম্পর্ক তদন্ত করা হয় এবং তার রায় সে প্রদান করে।

বর্মের গাড়ি ও অন্যান্যসহ ক্রসকে রক্ষার জন্য সে ভিনসেন্ট ও পেটিকে পাঠিয়ে দিল। আর পরে সান্তাডিও যুদ্ধের ঘটনা জানিয়ে ক্রসকে পূর্ব সতর্ক করা হয়। দুনিয়াকে সহজভাবে নেয়াটা কত না যন্ত্রণাদায়ক। সে যখন গেল কে তখন ভয়ানক ঘটনা ঘটানোর সিদ্ধান্ত দিল? সে এখন সিদ্ধান্ত নিল, এক এবং সবার জন্য ক্লেরিকুজিও তার চূড়ান্ত পুনর্বিচার করবে।

তাদের রেস্টুরেন্ট ও নির্মাণ ব্যবসায়ের সাথে ভিনি ও পেটি সরাসরি যুক্ত হবে। ওয়ালস্ট্রিটের কোম্পানি জর্জিও কিনবে। উত্তোলন সম্পূর্ণ হবে। এমনকি ব্রঙ্কস এনক্লেভ পুনরায় শূন্যস্থান পূরণ করবে না। ক্লেরিকুজিও পরিশেষে নিরাপদ হয় এবং নতুন বহিষ্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মূলত তাদের বিরুদ্ধে যারা সমগ্র আমেরিকায় গজিয়ে উঠছে। অতীত ভুল, তার মেয়ের সুখ বঞ্চিত হওয়া এবং তার নাতির মৃত্যুর জন্য কাউকে দোষী করা হবে না। সর্বোপরি ক্রসকে সে মুক্ত করে দেয়।

ঘুমিয়ে পড়ার আগে ডনের একটা দূরদৃষ্টি ছিল। সে চিরদিন বাঁচবে। মানবজাতির অংশ হিসেবে ক্লেরিকুজিও’র রক্ত চিরদিন থাকবে। আর সে স্বয়ং একাকী সৃষ্টি করেছে এই বংশধারা, তার নিজস্ব গুণে।

কিন্তু খারাপ এই পৃথিবী মানুষকে পাপের দিকে তাড়িত করে।

Exit mobile version