তার আপন মানুষের মনে শয়তানের বীজ ইতিমধ্যেই সংগঠিত হয়েছে কি-না তা হয়তো ডন আগে থেকেই বুঝতে পারেননি।
.
পর্ব– এক
হলিউড
লাস ভেগাস ১৯৯০
০১.
ক্যালিফোর্নিয়ার বসন্ত।
সূর্যের আলোয় হলুদ আভা। বজ স্কানেট তার চুলগুলো স্প্রে করে হলুদ করে নিয়েছে। সূর্যের হলুদ, আরে স্প্রে করা হলুদে মিলে স্কানেটের চুল হয়েছে আরো উজ্জ্বল।
তার টান টান ও পেশিবহুল শরীরের পেশিগুলো একটি আসন্ন লড়াইয়ের উত্তেজনায় আন্দোলিত হচ্ছিল।
উত্তেজনার একরাশ আবেগ মনে। সারা বিশ্বের কয়েক কোটি দর্শক তাকে দেখবে টিভির পর্দায় দেখবে তার কাজ। উত্তেজনা হওয়া তো স্বাভাবিক।
স্কানেটের কোমরে এলাস্টিকের কোমরবন্ধ আর তাতে রয়েছে ছোট একটি পিস্তল। গায়ের জিপারযুক্ত পাতলা জ্যাকেট স্কানেটের কোমর ছাড়িয়ে নেমে গেছে আরেকটু নিচে। তাতে বেশ স্বাভাবিকভাবে গোপন রয়েছে তার কোমরে বাঁধা পিস্তলটি।
জ্যাকেটটি সাদা রঙের, তার ওপর অগ্নিশিখার লাল তীর নিচ থেকে উপরে উঠছে। এমন প্রিন্ট করা জ্যাকেটের সাথে ম্যাচ করে নীল ডটেড ব্যান্ড বেঁধেছে চুলে।
স্কানেটের ডান হাতে ধরা আছে বড় ধরনের রুপালি-রঙা অভিযান বোতল। পারতপক্ষে শো-বিজ দুনিয়ার একজন হিসেবে বজ স্কানেট নিজকে যতটা সম্ভব সাজিয়েছে। এর কারণ শো-বিস দুনিয়ার তারকা খচিত কলা কুশলীদের সম্মিলন অ্যাওয়ার্ড গিভিং সেরেমনি।
লস অ্যাঞ্জেলেসে ডরোথি চ্যান্ডলারে নির্মিত হয়েছে প্যাভিলিয়ন। এই প্যাভিলিয়ন ঘিরে কৌতূহলী জনতার ভিড়। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিতে যোগ দিতে আসা মুভি স্টারদের জন্যই ভক্তরা ভিড় করে আছে। এ ভিড়ের ঘনত্ব বাড়ছে ক্রমেই। রাস্তার দুধারে দর্শক-শ্রোতাদের ব্যাপক সমাবেশকে আটকে রাখা হয়েছে।
সড়কগুলো পরিপর্ণ হয়ে আছে বিভিন টিভি সংস্থার ক্যামেরা ও রিপোর্টারে। এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ঘিরে খুঁটিনাটি সকল সংবাদ ক্যামেরার মাধ্যমে রিপোর্টাররা পাঠিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর কোণায় কোণায়।
আজ রাতে মানুষ দেখবে তাদের গ্রেট মুভি-স্টারদের সশরীরে। তাদের থাকবে না কোনো কৃত্রিমতা। পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জয়-পরাজয়ের ফয়সালাও হবে আজ রাতে– এত মানুষের সমাগম এ কারণেই।
পোশকি নিরাপত্তা কর্মীরা দর্শকের ঢল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে পথ দিয়ে মুভি-স্টাররা ঢুকবে তা মানবশূন্য রাখতে কত কৌশলের অবতারণা। নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে হাতে চকচকে বাদামি ব্যাটন। মাঝে-মধ্যে দর্শকদের উত্তেজনা দমন করতে ব্যাটন উঠিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছে।
বজ স্কানেট অবশ্য নিরাপত্তা কর্মীদের দেখে মোটেও বিব্রত নয়। সে আকারে-আয়তনে বিশাল। শুধু তাই নয়, অনেকের চেয়েই সে অনেক বেশি গতিশীল ও ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন। তাছাড়া আকস্মিক চমকে দেয়ার মতো স্কানেট কৌশলীও বটে।
নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যাপারে সে উদাসীন হলেও টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানদের নিয়ে দ্বিধান্বিত। কলা-কৌশলীরা তাদের পথে আসলেই তো শুরু হবে রিপোর্টারদের বিভিন্ন তৎপরতা। তখন তারা সেলিব্রেটিদের সুরক্ষার চেয়ে নিজেদের সংবাদ, সাক্ষাৎকার এসব রেকর্ড নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
এসব চিন্তা করতে করতেই একটি সাদা লিমুজিন দেখতে পেল স্কানেট। প্যাভিলিয়নের প্রবেশ দ্বারের কাছে এসে থেমেছে লিমুজিনটি। আর তা থেকে নেমে এলো বিশ্বের সেরা সুন্দরীর খেতাবপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের জরিপে অ্যাথেনা অব্যাহত বিশ্বসেরা সুন্দরী রমণী।
স্কানেট দেখল– অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন গাড়ি থেকে নেমে আসার সাথে সাথেই দর্শকদের ভিড় ক্রমেই অভিনেত্রীর কাছাকাছি চলে আসছিল। নিরাপত্তা কর্মীরাও গলদঘর্ম হয়ে, ব্যাটন পিটিয়ে যুদ্ধ করে তাদের নির্ধারিত সীমানায় আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অ্যাথেনার নাম ধরে ভক্তকুল স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছিল প্রাঙ্গণ।
অপরদিকে অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার, ছবি তোলা ও ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতে ফেউ লাগল রিপোর্টাররা। এক রকম ঘিরেই ধরল তারা অ্যাথেনাকে। ভক্ত ও টিভি ক্যামেরার সামনে অ্যাথেনা হাত উঁচিয়ে অভিবাদনের সাড়াও দিয়ে যাচ্ছিল থেমে থেমে ক্রমাগত।
স্কানেট নিরাপত্তা ঘের কৌশলে টপকে বেরিয়ে এলো। তারপর শুরু করল ট্র্যাফিক গার্ড এড়িয়ে আঁকাবাঁকা দৌড়। আকস্মিক এ দৌড় দেখে কয়েকজন নিরাপত্তা গার্ডও তার পিছু নিল। কিন্তু স্কানেট ছিল তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
কয়েক বছর আগে, কোনো এক ফুটবল ম্যাচে স্কানেট যেমন বিপক্ষীয় দলের কঠিন ডিফেন্স ভেঙে গোল করেছিল, ঠিক তেমনি এই নিরাপত্তা কমীদের জিগজ্যাগ সঙ্কুল পথ অনায়াসেই অতিক্রম করছিল। এভাবেই অবশেষে সে একেবারে যথাযথ মুহূর্তে এসে পৌঁছল প্যাভিলিয়নে।
অ্যাথেনা তখন সবেমাত্র মাইক্রোফোনটি হাতে তুলে নিতে যাচ্ছে। ফটোগ্রাফাররাও তার সৌন্দর্যপূর্ণ অ্যাঙ্গেলের অভিব্যক্তি ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত। অ্যাথেনার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনজন দেহরক্ষী টাইপের মানুষ।
স্কানেট নিশ্চিত হলো যে কিছু ক্যামেরার লেন্স তার ওপরও পড়েছে। এমন সময় কাটে তার বোতল থেকে কিছু লিকুইড আকস্মিক অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের মুখে ছুঁড়ে মারল।