ম্যানশনের বাইরে লনের এক কোণে রোজ ম্যারি ক্লেরিকুজিও পিপি ডি লিনার জন্য অপেক্ষা করছিল। পিপির সাথে তার জরুরি কথা আছে।
রোজ ম্যারি বিধবা হলেও নবীনা ও আকর্ষণীয়া। অপেক্ষমাণ রোজ ম্যারির পরনে কালো ড্রেস– একেবারেই বেমানান লাগছে। তার এই শোকাবহ পরিধেয়র কারণ সান্তাডিওর। আজকে রোজ ম্যারির গায়ে এই শোকাবহ পোশাক তার ভেতরের প্রকৃত সৌন্দর্য ও অল্প বয়সের প্রাণময়তা ঢেকে দিয়েছে।
রোজ ম্যারির ডাগর বাদামি চোখ দুটোতে শোকের গহিন ছাপ নেমে এসেছে। ত্বকের জলপাই রঙ এই শোকাবহ কালো পোশাকের জন্য মনে হচ্ছে আরো পিঙ্গল। শুধুমাত্র তার নবজীবনের সূচনায় উদ্দীপ্ত কোলের সন্তান ডেন্টি যেন রোজ ম্যারির শোক ঢেকে কিছুটা আভা ছড়াচ্ছে। ডেন্টির মাথায় নতুন জীবনের আভাপূর্ণ নীল ফিতা বাঁধা।
সারাটা দিন রোজ ম্যারি আজ তার বাবার কাছ থেকে সতর্কতার সাথে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এ দূরত্ব শুধু তার সাথেই নয় তার অপর তিন ভাই জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটির কাছ থেকেও। তাহলেও, এখন রোজ ম্যারি অপেক্ষা করছে পিপি ডি লিনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য।
পিপি ও রোজ ম্যারির মূল সম্পর্কটি কিন্তু রক্তের, উভয় উভয়ের কাজিন।
তবে রোজ ম্যারির সাথে পিপির বয়সের পার্থক্য প্রায় দশ বছরের। টিনএজার বয়সেই বোজ ম্যারি তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু অপরদিকে পিপি ছিল সর্বদা পৈতৃক ধারার রোজ ম্যারির আহ্বানে সে কখনোই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। পিপি ছিল সব সময়ই বিপরীতমুখী। এর কারণ হচ্ছে রোজ ম্যারি তার ডনের কন্যা। বলিষ্ঠদেহী পিপি তার প্রতি দুর্বল হলেও শুধুমাত্র একটি কারণে এই দুর্বলতা ঝেড়ে-মুছে দূর করেছে।
পিপিকে আসতে দেখে বোজ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, হ্যালো পিপি, তারপর শুভেচ্ছা জানাল, কংগ্র্যাচুলেশন।
স্মিত হেসে পিপি তাকাল রোজ ম্যারির দিকে। তার এই মিষ্টি হাসি খুব ভালো লাগল রোজ ম্যারির।
পিপি এগিয়ে এলো বরাজের কাছে। মাথা নিচু করে তার কোলের শিশুটির কপালে আলতো চুমু দিল। শিশুটির শরীর থেকে তখনো চার্চের ধূপ-ধুনার হালকা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শিশুটির দিকে তাকিয়ে পিপির মনে হলো– তার চুলগুলো একটি প্রায় নবজাতক শিশু হিসেবে বেশ ঘন।
পিপি শিশুটিকে উদ্দেশ্য করে রোজ ম্যারিকে বলল, ডেন্টি ক্লেরিকুজিও। চমৎকার নাম।
রোজ ম্যারির কাছে পিপির এ প্রশংসা ঠিক মনঃপূত হলো না। চুপিসারে রোজ অবশ্য তার পিতৃহীন সন্তানের নাম ঠিক করে রেখেছে। তার নিজের ক্ষেত্রেও কুমারী নামটিই প্রচার করতে ইচ্ছুক। বিষয়টি তার বাবা ডন ক্লেরিকুজিও’র কানে গেছে। ডন আপত্তি করেননি– মেনেই নিয়েছেন যুক্তির খাতিরে। তবে রোজ ম্যারি কিন্তু এখনো বিষয়টির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি– নিজকে অপরাধী ঠাওরাচ্ছে বারবার।
এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো বোজ। সে বলল, তুমি কিভাবে তোমার প্রটেস্ট্যান্ট স্ত্রীকে এই ক্যাথলিক উৎসবের জন্য সম্মত করালে, আর তোমাদের শিশুর ক্ষেত্রেও এমন ধর্মীয় নামেইবা তার সম্মতি এলো কেন?
পিপি তার কথায় আবারো হেসে ফেলল। আমার স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে, আর তাই সব সময় আমাকে খুশি রাখতে চায়।
কথাটি সত্য। রোজ ম্যারি ভাবল। তার ধারণা পিপির স্ত্রী তাকে ভালোবাসে কারণ পিপি সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। রোজ ম্যারি যে এক সময় পিপির প্রেমে পড়েছিল–এটিও সে জানে না।
রোজ ম্যারি বলল, তুমি তোমার ছেলের নাম রেখেছ কসিফিজিও। তুমিও তো তাকে খুশি করতে পারতে তোমার শিশুর একটি আমেরিকান নাম রেখে।
-আমি তোমার বাবাকে সন্তুষ্ট করতে তোমার দাদার নামে নাম রেখেছি।
হাসিমুখে রোজ ম্যারি বলল, ঠিক তাই, আমরাও অবশ্য তাই-ই করে যাব।
রোজ ম্যারির মুখে হাসি থাকলেও ভিতরে ভিতরে সে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। রোজ ম্যারির মুখে এই মুখোশপূর্ণ কষ্টের হাসি যেন বাতাসে মিষ্টি আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার মুখের সব কথা, অভিব্যক্তি মধুর লাগছিল পিপির কাছে।
রোজ ম্যারির মুখে কোনো কথা নেই।–দ্বিধাগ্রস্ত সে। আকস্মিক বলল, আমার জীবন রক্ষার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
পিপি রোজ ম্যারির ভাবলেশহীন মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। আকস্মিক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।
কোমল স্বরে বলল, তোমাকে কখনোই কোনো বিপদের মুখে পড়তে হবে না।
কথাটি বলেই পিপি তার বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল রোজ ম্যারির কাঁধ। তারপর বলল, বিশ্বাস করো। … আর, একটু থেমে পিপি বলতে লাগল, এখন থেকে আর কখনোই এমন কিছু ভাববে না। ভুলে যাও সব কিছু। আমাদের সামনে একটি সুখী জীবন অপেক্ষা করছে। অতীতের সবকিছু ভুলে যাও, একটু একটু করে।
রোজ ম্যারি তার কোলের সন্তানটিকে চুমু খেতে মাথা নিচু করল, কিন্তু পিপির কারণে পারল না।
পিপির কথার প্রতিউত্তরে ইতিবাচক মনোভাব এনে বলল, আমি সবই বুঝি।
রোজ ম্যারি জানে, এই কথোপকথনে পিপির মুখে তার বাবা ও ভাইদের কথা আবারো হয়তো আসবে। তাই বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল সে।
বলল, আমি বর্তমান অবস্থাতেই বেশ মানিয়ে গেছি।
রোজ ম্যারি চায় পরিবারের সকলে জানুক সে তাদের খুব ভালোবাসে এখনো। পরিবারের সবাই জানুক রোজ ম্যারি তার সন্তান নিয়ে সন্তুষ্ট এবং প্রকৃত অর্থেই রোজ ম্যারি তার সন্তানের জন্য এই ধর্মীয় উৎসব ব্যাপ্টাইজিং-এ সন্তুষ্ট। পবিত্র পানির পরশে তার সন্তান নরকের পথ থেকে এসেছে এবং ভবিষ্যৎ জীবনও হবে তার ধর্মীয়– এমন বোধ থেকে সে মনে মনে কৃতজ্ঞও।