তা আমি ভালো করেই জানি, লুজিও হাসল। পারলে তা-ই করতাম। তবে তোমার সাথে একটু জোক করলাম আর কি।
সান্তা মনিকায় একটি ছোটখাটো হোটেল ওশেন এভিনিউয়ে উঠেছে বজ স্কানেট। এটিই পোলার্ডের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যালিবু কলোনিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের বাড়ি থেকে ওশেন এভিনিউয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে লাগে মাত্র পনেরো মিনিট।
স্কানেটের হোটেলে আসার আগে পোলার্ড অ্যাথেনার বাড়িতে চার জন গার্ডের একটি দল নিযুক্ত করল। আর স্কানেটের হোটেলে রাখল দুই জনের একটি দল। এরপর সেদিন বিকেলে স্কানেটের সাথে দেখা করতে গেল পোলার্ড।
পোলার্ডের সাথে ছিল আকার-আকৃতিতে বড় ও প্রচণ্ড শক্তিশালী তিন জন রক্ষী। স্কানেট যেমন আকস্মিক পোলার্ডের আগমন হেতু বুঝতে পারেনি, তেমনি পোলার্ডও বুঝতে পারছিল না কি ঘটতে যাচ্ছে।
স্কানেট তাদেরকে তার হোটেলের সুইটে নিয়ে গেল। মিষ্টি হেসে, বিনয়ের সাথে তাদের অভ্যর্থনা জানাল। কিন্তু তাদের আপ্যায়নের জন্য কোনো আগ্রহই দেখাল না সে। পোলার্ডের চোখে স্কানেটের পরিধেয় বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। তার পরনে ছিল শার্ট, টাই এবং জ্যাকেট, মোটের ওপর যেন একজন ব্যাংকার। পোলার্ড নিজের এবং তার তিন দেহরক্ষীর পরিচয় দিল। দেহরক্ষীদের গলায় ঝুলছিল প্যাসিফিক ওশেন সিকিউরিটির আই.ডি.।
স্কানেট পোলার্ডের দেহরক্ষীদের দিকে হাস্যকর ভঙ্গিতে তাকাল। তারপর বলল, তোমরা নিশ্চিতভাবেই বেশ বড়-সড়। তবে আমি একশটি ছাগল বিট রেখে বলতে পারি, যদি পক্ষপাতহীন লড়াই হয় তবে তোমাদের এক একজনকে কিক মেরে উড়িয়ে দেব।
উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পোলার্ডের তিন দেহরক্ষী-ই শুধু মুচকি হেসে স্কানেটের কথা মেনে নিল। কিন্তু পোলার্ড বেশ শান্ত হয়ে স্কানেটের বিরোধিতা করল– নিয়ন্ত্রণ করল তার উত্তেজনা।
আমরা এখানে বাণিজ্যিক কারণে এসেছি মি. স্কানেট। পোলার্ড বলল। হুমকির জন্য নয়। লডস্টোন স্টুডিও আপনাকে এই মুহূর্তে পঞ্চাশ হাজার ডলার ডাউন-পে করতে প্রস্তুত আছে, সেই সাথে আগামী আট মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে কুড়ি হাজার ডলার। আর এসব এজন্য যে, আপনাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে ছেড়ে যেতে হবে।
কথাগুলো শেষ করেই পোলার্ড তার ব্রিফকেস থেকে চুক্তিপত্র এবং সবুজ সাদা রঙের একটি ঢাউস চেক স্কানেটের সামনে তুলে ধরল।
স্কানেট চুক্তিপত্রটিতে মনোযোগর সাথে চোখ বুলাল। বলল, নগণ্য একটি চুক্তি। এর জন্য আমার আইনজীবীরও প্রয়োজন নেই। ডলারের পরিমাণটাও একই সাথে নগণ্য। আমি আশা করছি একশ গ্র্যান্ড ডাউন পেমেন্ট আর প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার।
অনেক হয়েছে, পোলার্ড বলল, আপনাকে দমিয়ে রাখার জন্য আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশ আছে। অ্যাথেনার ইচ্ছে থাকলে আপনার জেলও হতে পারে। অ্যাথেনাকে ঘিরে চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের প্রহরা থাকবে। সেই সাথে আপনার দৈনন্দিন যে কোনো কর্মকাণ্ডের সার্বক্ষণিক খবর রাখবে আমাদের বিশেষ নিরীক্ষণ দল। আর তাই, এই বরাদ্দকৃত অর্থই আপনার জন্য উপযুক্ত।
স্কানেট বলল, আমার তো খুব শিগগিরই ক্যালিফোর্নিয়ায় আসা উচিত। এর সড়কগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো। তবে আমাকে আপনারা কেন এত কিছু দিতে চাচ্ছেন?
স্টুডিও মিস অ্যাকুইটেনের নিশ্চয়তা চায়। পোলার্ডের প্রতিউত্তর।
সে আসলেই একজন বড়… একজন স্টার, উদাস মনে হলো স্কানেটকে। একটু থেমে আবার বলল, ঠিক আছে, সে সব সময়ই স্পেশাল। এবার পরিবর্তন হলো স্কানেট। আবারো সেই উচ্ছলপনা উক্তিতে সে বলল, আমার মনে আছে আমি প্রতিদিন তার সাথে পাঁচ বার মিলিত হতাম।
এবার তিন দেহরক্ষীর দিকে হাস্যকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্কানেট বলল, সে এক্ষেত্রেও ছিল বেশ চালাক।
বিস্মিত পোলার্ড কৌতূহলী দৃষ্টি হেনে তাকিয়ে থাকল স্কানেটের দিকে। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম এবং মালবোরো সিগারেটের বিজ্ঞাপন মডেলের মতো তার শরীর। মার্লবোরো মডেলের সাথে তার পার্থক্য কেবল শরীরের রঙে। স্কানেটের ত্বক লালচে এবং উজ্জ্বল। মদপায়ী এবং বিশাল বপুর অধিকারী।
দক্ষিণাদের মতো স্কানেট টেনে টেনে খুব প্রাণবন্ত স্বরে কথা বলে– বিষয়টি একদিকে যেমন মানবীয় অন্যদিকে তেমনই বিপজ্জনক। বহু নারীই এমন মানুষের প্রেমে পড়ে যায়। নিউইয়র্কে অবশ্য স্কানেটের মতো দেখতে বেশ কিছু পুলিশ আছে, যাদেরকে দস্যু হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। কোনো খুনের মামলায় যদি তাদের তদন্তের জন্য পাঠানো হয়, তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা স্বামীহারা নারীদের সান্তনা দিয়ে ফিরে আসত। জিম লুজিও এমনই এক কর্মকর্তা। পোলার্ডের অক্ষেপ যে, সে তাদের মতো ভাগ্যবান নয়।
আসুন আমরা আমাদের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করি। পোলার্ড বলল। স্কানেটকে দিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরই পোলার্ডের মূল উদ্দেশ্য। পোলার্ড চেকটি তার সামনে রাখল।
স্কানেট টেবিলের এক কোনায় বসে ছিল। আপনার কাছে কি একটি কলম ধার পেতে পারি?
পোলার্ড তার ব্রিফকেস থেকে কলম বের করে চুক্তিপত্রে প্রতি মাসে কুড়ি হাজার সংখ্যাটি লিখে ফেলল। এরপর স্কানেট উল্লসিত হয়ে বলল, এর মানে। আশি আরো বেশি পেতে পারি। চুক্তিপত্রের তিনটি কপিতেই স্বাক্ষর করল স্কানেট।
বলল, আমাকে ঠিক কখন লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়তে হবে?