অকস্মা ডন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কি যেন ভাবতে লাগলেন। উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া চোখ দুটো। কণ্ঠে প্রত্যয়ের সুরে বলতে শুরু করলেন– এখন থেকে কুড়ি-ত্রিশ বছর আমরা আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তর্হিত হয়ে একটি আইনসম্মত বৈধ পৃথিবীতে প্রবেশ করব এবং আমরা আমাদের সম্পদগুলো তখন নির্দ্বিধায়, ভীতিহীন চিত্তে উপভোগ করতে সক্ষম হবো। আমাদের পরিবারের ঐ দুটি শিশুও যাদের ধর্মীয় দীক্ষায়-দীক্ষিত করতে যাচ্ছি, তাদেরকে যেন আমাদের বর্তমান অপরাধী জীবনের দায়ভার বহন করতে না হয়। আমাদের জন্য তারা যেন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে না ওঠে।
তবে কেন এই ব্রঙ্কস এনক্লেভ ধরে রাখা? প্রশ্ন করল জর্জিও।
ডন বললেন, আমরা কোনো এক সময় ধার্মিক হয়ে যাব বলে বিশ্বাস করি। তার আগে শহীদ হয়ে যেতে চাই না।
এক ঘন্টা পর ডন ক্লেরিকুজিও তার বাড়ির বেলকনিতে উঠে এলেন। তারপর সেখান থেকে তাকিয়ে থাকলেন নিচে উৎসবমুখর আয়োজনের দিকে।
বেলকনি থেকে নিচের বিশাল লনটি যেন মনে হচ্ছিল পিকনিক-টেবিল দিয়ে কার্পেটের মতো বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। টেবিলগুলো ঘিরে প্রায় দুশর মতো আমন্ত্রিত অতিথি। টেবিল ঘিরে আমন্ত্রিত অতিথিদের দৃশ্যটি বেলকনি থেকে ডনের মনে হচ্ছিল যেন এক-একটি মুকুট। অতিথিদের অনেকেই ব্রঙ্কস এনক্লেভের সেনা। এই উৎসব মুখর আয়োজনে চাঞ্চল্য থাকলেও ডন-এর মাঝে কোনো প্রাণ খুঁজে পেলেন মা–মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন মেকি, সাজানো।
সান্তাডিও’র বিরুদ্ধে জয় পেলেও ডন ক্লেরিকুজিওকে মূল্য দিতে হয়েছিল অনেক। সে লড়াইয়ে ডন হারিয়েছিলেন তার সবচেয়ে স্নেহের পুত্র সিলভিয়োকে। তার কন্যা রোজ ম্যারি হারিয়েছে স্বামীকে।
উদাস দৃষ্টিতে ডন তাকিয়েই রইলেন নিচের উৎসবমুখর লনটির দিকে। লনে ফেলা দীর্ঘ টেবিল ঘিরে বসে আছেন অতিথিরা। টেবিলের ওপর সাজানো গাঢ় লাল রঙের সুরাভর্তি ক্রিস্টাল গ্লাস। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল সাদা বাটিতে পূর্ণ সুপের লাইন। বিভিন্ন ধরনের পাস্তা, বারকোশে সাজানো বিভিন্ন রকমের স্লাইস করা মাংস-পনির এবং সতেজ ও মচমচে বিভিন্ন আকারের ব্রেড। এমন উৎসবে ভন ক্লেরিকুজিও অবশ্য নেপথ্যে ছোট-খাটো একটি ব্যান্ড দলের সফট মিউজিক পরিবেশেনেরও অনুমতি দিয়েছিলেন।
লনে সাজানো পিকনিক টেবিলগুলোর মাঝামাঝি একটি স্থানে গিয়ে ডনের দৃষ্টি স্থির হলো। শিশুবহনকারী ছোট দোলনা-গাড়িতে মোটা নীল পশমী কাপড়ে মোড়া দুটি শিশু। তিনি দেখলেন, ধর্মীয় পথের জন্য তাদের যখন পবিত্র পানির ছটা দেয়া হচ্ছিল, তখন, শিশু দুটি মোটেও ভয় পায়নি। তাদের পেছনেই ছিল তাদের দুই মা- রোজম্যারি এবং পিপির স্ত্রী ন্যালিনি ডি লিনা। তাদের সন্তান দুটির নাম ডেন্টি ক্লেরিকুজিও ও ক্রকসিফিজিও ডি লিনা। বেলকনি থেকে শিশু দুটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলেন তাদের যেন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে না হয়, এই নিশ্চয়তার জন্য তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। ধর্মের পথে ধর্মের জন্যই আজকে তাদের নিয়ে এই আয়োজন। ডনের এই পদক্ষেপ যদি সফল হয় তবে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য একটি সুন্দর সমাজে তারা প্রবেশ করতে পারবে। তিনি অত্যন্ত কৌতূহলের সাথে লক্ষ্য করলেন যে, এই জনসমাবেশের একটি লোকও শিশু দুটির প্রতি অনুগত্য স্বীকার করছে না।
তিনি বেলকনিতে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলেন ভিনসেন্টকে। গ্রানাইটের মতো কঠোর মুখে সে ছোট ছোট বাচ্চাদের হটডগ খাওয়াচ্ছে। শিশুদের জন্য এই আইটেমটি ভিনসেন্ট নিজের হাতেই তৈরি করেছে। হটডগ রাখার ঘোড়া গাড়িটির সাথে নিউ ইয়র্কের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ঘোড়া গাড়িটির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে ভিনসেন্টের গাড়িটি আকারে আয়তনে একটু বড় এই যা। গাড়ির উপরিভাগে বসানো রয়েছে উজ্জ্বল রঙের একটি ছাতা। ভিনসেন্ট তার গাড়ি থেকে ভালো ভালো খাবারগুলো তুলে আনছে। তার পরণে রয়েছে সাদা এপ্রোন। হটডগের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে হটডগ তৈরি করে যাচ্ছে। লোভনীয় এই খাবারটি পেতে প্রত্যেক শিশু ভিনসেন্টের গালে একটি করে চুমু দিচ্ছে।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভিনসেন্ট দেখতে কঠোর বা ককৰ্শ হলেও প্রকৃত পক্ষে সে বেশ সহানুভূতিসম্পন্ন যুবক। ডনের পুত্রদের মধ্যে ভিনসেন্টই সবচেয়ে দয়ালু প্রকৃতির বিষয়টি ডন ক্লেরিকুজিও ভালোভাবেই জানেন।
সেন্সর ক্যামরার মতো ডনের চোখ দুটো প্রত্যক্ষ করছিল লনের উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের ওপর। তার চোখ পড়ল বকসি কোর্টের ওপর। সেখানে দেখা গেল, পেটি, পিপি ডি লিনা, ভারজিনো ব্যালাজো ও আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের সাথে বকসি বল খেলায় মত্ত। পেটি স্বভাবগত জোকার। পেটির এই স্বভাব ডনের পছন্দ নয়। জুনের মনে হয় পেটির এই স্বভাব যে কোনো সময় তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমন কথা ভাবতে ভাবতেই ডন দেখতে পেলেন বকসি গেমটি পেটির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সে তাৎক্ষণিক তা ভণ্ডুল করতে বলটি প্রথম হিটেই পিসে পাঠিয়ে দিল।
ভারজিনো ব্যালাজো ক্লেরিকুজিও পরিবারের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ডনের আন্ডার বস। বকসি-বলের গেমটিতে অত্যন্ত তেজস্বী এই ব্যালাজো পেটিকে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। ডন জানেন, তার পুত্র পেটি জন্মগত একজন কৌশলী গুপ্তঘাতক এবং আমোদপ্রিয় ব্যালাজো তার আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিশ্চিত সুনাম রয়েছে।