ম্যারিয়নের কন্ঠে কোনো আবেগ প্রকাশ পেল না। তিনি বললেন, অ্যাথেনা যদি আপনাদের কারো কথাই কর্ণপাত না করে, তবে সে আমার কথাতেও একই উত্তর দেবে। আমার যে অবস্থান তাতে তাকে ইমপ্রেস করার প্রচেষ্টা মানায় না। তবে একজন বোকা টাইপের বিবেকহীন লোকের হামলায় অ্যাথেনার আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আমরা কি অন্য কোনো পথের কথা চিন্তা করতে পারি না?
আমরা চেষ্টা করব, বলল বানজ। তবে অ্যাথেনার মনোভাবের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।
প্রডিউসার স্কিপি ডিরি বলল, আমরা অন্যভাবেও, বিশেষ করে পুলিশ প্রয়োগ করে অ্যাথেনার আটককারীকে শায়েস্তার চিন্তা করে দেখেছি। এতেও ব্যর্থ হয়েছি। কারণ বিষয়টি খুব সহজ নয়। তার বাবার আছে অঢেল টাকা ও রাজনৈতিক যোগাযোগ।
স্টুয়ার্ট প্রশ্ন করল, এই ছবিটি যদি আমরা বাতিল করে ফেলি তবে স্টুডিওর ঠিক কতটা ক্ষতি হতে পারে? একটু থেমে তার কণ্ঠে প্রতিশ্রুতির সুর ভেসে এলো, স্টুডিওর পরবর্তী কাজে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব যেন এই ক্ষতি পুষিয়ে যায়।
স্টুডিওর ক্ষতির বিষয়টি স্টুয়ার্ট মেলোর কাছে মেলে ধরাটা একটা সমস্যা। বিশেষ করে অ্যাথেনার এজেন্ট হিসেবে তো এটা প্রকাশ করা বোকামি। ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ পেলে সুবিধে হবে অ্যাথেনার, এমনটি স্টুয়ার্টেরও। ম্যারিয়ন মেলোর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলেন না, তবে এ বিষয়ে বানজের মতামতের প্রতিই আগ্রহ ছিল তার। ম্যারিয়ন কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালেন বানজের দিকে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও বানজ মুখ খুলল, প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব পঞ্চাশ মিলিয়ন। ঠিক আছে, মেনে নিলাম যে আমরা এর পুরোটাই পেটে ঢুকিয়েছি। কিন্তু বিদেশী সংস্থাগুলোকে তো তাদের অর্থ ফেরত দিতে হবে, ফেরত দিতে হবে ভিডিও কোম্পানিগুলোকে। তাছাড়া ক্রিসমাসের কোনো লোকোমটিভও আমাদের হাতে এখন নেই। এটা ভিন্নভাবে আমাদের কৌশলগত দিক দিয়ে ক্ষগ্রিস্ত করবে।
কি যেন একটা ভাবল বানজ–কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তার পর বলল, আমরা যদি লাভের দিকটা দেখি তবে সব মিলিয়ে দুশ মিলিয়ন ডলার। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ পুষিয়ে দিতে তোমার কি যথেষ্ট প্যাকেজ আছে মেলো?
স্টুয়ার্ট মেলো হেসে উঠল। তার এই হাসির কারণ স্টুডিওর কর্ণধাররা অ্যাথেনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মেলোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। মেলো বলল, প্রকৃত অর্থ তোমাদের কাছ থেকে বেরিয়েছে, তোমাদের হিসেবে পঞ্চাশ মিলিয়ন।
ম্যারিয়নের স্বর কঠিন হয়ে উঠল। কণ্ঠের ভদ্র ভাবও কেটে গেল। ম্যারিয়ন প্রায় ধমকের সুরে বলে উঠলেন, মেলো, তুমি এই পরিমাণ অর্থের কতটা তোমার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারবে?
সবাই বুঝতে পারল কি হতে যাচ্ছে। ম্যারিয়ন সিদ্ধান্ত নিলেন, এমন চাপ সৃষ্টি করে যদি কিছু উদ্ধার করা যায়।
স্টুয়ার্টও ভালো করেই বুঝল–এই ছোট্ট স্কিমের জন্য তাকে কতটা কাঠ খড় পোড়াতে হবে। বানজের সামনে খরচের হিসাব চাওয়া এবং পরবর্তীতে পুষিয়ে দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন ছিল মেলোর একটা ন্যায়পরায়ণতা, কিন্তু এর জন্য যে তাকেই এর মাশুল দিতে হবে–এমন অভিপ্রায় নিশ্চয়ই ছিল না তার। সঙ্কটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ম্যারিয়নের সাথে, যদি বানজের সাথে ঘটত, তবে নিঃসন্দেহে রুষ্ট আচরণ করত মেলো।
মুভি ওয়ার্ল্ডে স্টুয়ার্ট মেলোও একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি। ম্যারিয়নকে তোয়াজ করে চলার মতো লোক সে নয়। হলিউডে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাঁচ-পাঁচটি এ ক্লাস পরিচালক। তারা শুধু ব্যাংকেবল স্টারই নয়, অত্যন্ত শক্তিশালীও। এদের মধ্যে রয়েছে দুজন ব্যাংকেবল পুরুষ তারকা ও একজন নারী— অ্যাথেনা। আর এমন স্টার থাকার অর্থ সে যে কোনো সময় যে কোনো ছবির জন্য সবুজ সংকেতের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু নেপথ্যে যার এত ক্ষমতা, সে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই যাচ্ছে ম্যারিয়নের প্রতি। ম্যারিয়নের ক্ষুব্ধতায় সেও প্রতিউত্তর দেয়নি। আর এমন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করার কারণেই সে ধীরে ধীরে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে।
মেলো স্টুয়ার্টের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার বিচক্ষণতা। সে যা দেবে তা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাস আছে অ্যাথেনার মেধার প্রতি দশ বছর আগেও, অ্যাথেনা যখন এ জগতে অপরিচিত মুখ, তখনও তার বিশ্বাস ছিল অ্যাথেনার মেধায়। এখনও আছে আগের মতোই। তবে কিভাবে তার মনোভাব পরিবর্তন করে ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসবে? মেলোর মন বলছে– নিশ্চিতভাবেই অ্যাথেনা কোনো বিশেষ সমস্যার মধ্যে আছে। আরো এই সমস্যার জন্য তার মতো মেধাবীকে শেষ হতে দেয়া যায় না।
এখানে অর্থের কোনো বিষয় নয়, স্টুয়ার্টের কণ্ঠে প্রচণ্ড ভাবাবেগ ফুটে উঠল। সে নিজেই উপলব্ধি করল তার বিচক্ষণতার উল্লাস। বলল, তোমরা অ্যাথেনাকে অতিরিক্ত এক মিলিয়নের প্রস্তাব দাও। আমার মনে হয় সে আর ফিরে যাবে না। তোমাদের অবশ্যই সেই দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিত তথাকথিত স্বামী সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
স্টুয়ার্ট মেলোর কথাগুলো যেন অমঙ্গলসূচক বার্তা বয়ে আনল- সারা ঘরে পিনপতন নীরবতা। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল মেলোর কথাগুলো। যেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে আরো কিছু অর্থের বিনিয়োগ। এটাই কি তাহলে অ্যাথেনাকে আটকানোর প্রারম্ভিক গোজ?