প্রথমে স্ক্রিপ্টটি লিখেছিল ক্লডিয়া ডি. লিনা–গল্পের নিখুঁত অনুসরণ করে চমৎকার একটি পাণ্ডুলিপি দাঁড় করায় সে। ডিটা টমি এই চিত্রনাট্যের চলমান দৃশ্য নির্মাণের দায়িত্ব পায়। প্রায়োগিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ওপর ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিটার নিযুক্তিও একেবারে সঠিক। সে হচ্ছে একজন শুষ্ক বুদ্ধিজীবী এবং পরীক্ষিত পরিচালক। এদিক থেকে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন ম্যাসেলিনা চরিত্রের জন্য আরো বেশি গ্রহণযোগ্য। পুরো ছবিতে তার চরিত্রটিই মূলত কর্তৃত্ব করেছে। অ্যাথেনার রয়েছে চেহারা ও শরীরের সৌন্দর্য, আর সেই সাথে তার অভিনয়ের দক্ষতা ও মেধা সবকিছুর পরিপূরক। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অ্যাথেনা সারা বিশ্বে সেরা তিন সুন্দরী ও মেধাবী অভিনেত্রীর একজন। এদিকে ক্লডিয়া নেপথ্যের সেরা একজন জিনিয়াস। ম্যাসেলিনা চরিত্রটিকে অ্যাথেনার উপযোগী করে তুলতে চমৎকার সব কাজ অন্তর্ভুক্ত করেছে তার পাণ্ডুলিপিতে।
কনফারেন্স কক্ষের সভায় স্কিপি ডিরি বলল, অ্যাথেনাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত ছবির কাজ আমাদের বন্ধই রাখতে হবে। তবে এর জন্য প্রতিদিন আমাদের প্রায় দেড়শ ডলার পরিমাণ বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হবে।
এই হচ্ছে এখন অবস্থা। ইতিমধ্যেই আমরা ব্যয় করেছি পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার আর এদিক থেকে কাজের অগ্রগতি কেবল মাঝপথে। আমরা নতুন স্ক্রিপ্ট তৈরি করে অ্যাথেনাকে বাদও দিতে পারব না, আবার তার মতো আরেক অ্যাথেনা তৈরি করতে পারব না। এ অবস্থায় সে যদি আর ফিরে না আসে তবে এ পর্যন্ত নির্মিত ছবি আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
এ ছবি বাতিল করতে পারি না আমরা, বানজ বলল। তারকাদের কাজ করতে অস্বীকৃতির বিষয়ে ইস্যুরেন্স কোনো পদক্ষেপই নিতে চাইবে না। যদি তাকে প্লেন থেকে ফেলে দিই, সেক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স এগিয়ে আসবে।
এবার মেলোর দিকে তাকিয়ে বানজ বলল, মেলো তাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটা তোমার। অ্যাথেনার সব দায়-দায়িত্ব তোমাকেই বহন করতে হবে।
মেলো স্টুয়ার্ট বলল, আমি শুধুমাত্র তার এজেন্ট। তার মতো নারীর প্রতি আমার আগ্রহ আছে। আমি বলতে চাই অ্যাথেনার আতঙ্কিত হয়ে ওঠার বিষয়টি জেনুইন। বিষয়টি তোমার বোধগম্য হবে না হয়তো। কেননা তুমি সে প্রকৃতির নও। সে সত্যিই আতঙ্কিত, তবে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে আকস্মিক এই আচরণের নিশ্চয়ই কারণ আছে। পরিস্থিতি সত্যিই বেশ ভয়াবহ ও সঙ্কটপূর্ণ।
বানজ বলল, এই শত মিলিয়ন ডলারের ছবিটি যদি তার জন্য নস্যাৎ হয়ে যায়, তবে সে আরো কখনোই ফিরে আসতে পারবে না, সে কি এটা জানে?
খুব ভালো করেই জানে।
বানজ এবার বলল, এমন কেউ কি নেই যে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে। স্কিপি, তুমিও তো চেষ্টা করেছ, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছ। মেলো, তুমিও চেষ্টা করেছ। ডিটা, আমি জানি, তুমি তোমার সাধ্যমতো তাকে বুঝিয়েছ। এমনকি আমিও। আমাকেও সে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বানজের প্রতি উত্তরে টমি বলল, ববি, তুমি তো গুনতিতেই পড়ো না। সে তোমাকে ঘৃণা করে।
বানজ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। বলল, অবশ্যই, অনেকেই আমার কথা বলার ধরণ পছন্দ করে না। তবে তারা আমার কথা শোনে।
টমির কণ্ঠে সহানুভূতি। সে বলল, এমন কোনো ট্যালেন্ট নেই যে তোমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু অ্যাথেনার বিষয়টি আলাদা। সে তোমাকে ব্যক্তিগতভাবেই ঘৃণা করে।
বানজ বলল, অথচ আমিই তাকে স্টার বানিয়েছি।
মেলো স্টুয়ার্ট শীতল কণ্ঠে বানজের বিরোধিতা করে বলল, সে জন্মগত একজন স্টার। তুমিই বরং তাকে পেয়ে ধন্য হয়েছ।
বানজ ডিটার উদ্দেশে বলল, তুমি তো তার বন্ধু। তাকে কাজে ফিরিয়ে আনার কাজটুকু তুমিই করো।
অ্যাথেনা আমার বন্ধু নয়, টমি বলল। সে আমার একজন সহকর্মী। সে আমাকে শ্রদ্ধা করে। এর কারণ আমিই তাকে তৈরি করেছি। সে যখন আমার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে আমি খুব মর্মাহত হয়েছি। আমি তোমার মতো নই, ববি। তুমি বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারো।
বানজ আর ধরে রাখতে পারল নিজকে। ডিটার উদ্দেশ্যে বলল, হু দি হেল ইজ নট টু ফাঁক আজ।
এলি ম্যারিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল, আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তোমাকে এর একটা বিহিত করতে হবে।
উপস্থিত সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো কনফারেন্স টেবিলের সবচেয়ে বয়োজ্যষ্ঠ এলি ম্যারিয়নের দিকে। এতক্ষণের আলোচনায় ম্যারিয়ন বেশ বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার বিশাল মাথাটা নড়াচড়া করছিল উপস্থিত অতিথিদের দিকে। এ মুহূর্তে তার মাথা আরো বড় মনে হচ্ছিল। তার এই বড় মাথার জন্য কোনো এক স্টার জোক করে বলেছিল– তার মাথাটা একটু হেঁটে নেয়া দরকার।— এই মন্তব্যে যতটা না ছিল জোক, তার চেয়ে বেশি ছিল বিদ্বেষ।
ম্যারিয়নকে দেখতে অনেকটা গরিলার মতো। তবে বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ সে– ছড়ানো নাক, মাংসল ঢাউস মুখ। কনফারেন্স টেবিলে তিনি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক চেহারা নিয়ে বসে আছেন। অত্যন্ত ভদ্র অবয়ব তার, শারীরিক বৈশিষ্ট্যে হ্যান্ডসাম না বলে উপায় নেই। তবে তার চোখ দুটো কিন্তু ব্যক্তিত্বের উৎস। শীতল-ধূসর চোখ দুটোতে একটা বুদ্ধিমত্তার ছাপ এবং তা যে কোনো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। আরেকটি বিষয় হচ্ছে তিনি তার ফার্স্ট নেমটি লোকমুখে শুনতে পছন্দ করেন।