তাদের ধারণা ছবি সংশ্লিষ্ট এই নগণ্য, অকৃতজ্ঞরা যেন মধু তৈরির মৌমাছিদের প্রতি ক্রুদ্ধ ভিমরুলের মতো আচরণ করতে শুরু করে। আর এদের প্রকৃতিস্থ করতে ম্যারিয়ন-বানজ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। কুড়ি সদস্যবিশিষ্ট একটি আইনজীবীর দল রেখেছেন বিদ্রোহীদের ওপর জাল ফেলার জন্য।
তারা সব সময় শুধু শুধু সমস্যার সৃষ্টি করবে কেন? কেন অসুখী থাকবে তারা সর্বদা? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যেসব মানুষ শিল্পের চেয়ে অর্থের পেছনে সবসময় ছুটতে থাকে তাদের সে ক্যারিয়ার দীর্ঘ হতে পারে, জীবনে প্রচুর আনন্দ ও উপভোগ করতে পারে কিন্তু মনের প্রশান্তি তাদের ক্রমেই দূরে সরতে থাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই শিল্পের পূজারী তারা যেমন নিজেও স্বর্গীয় সুখ পায়, অপরকেও করতে পারে সুখী। শিল্প ছাড়া ছবি তৈরি হতে পারে কিন্তু তার মধ্যে প্রাণ থাকবে না, ভালোবাসা থাকবে না। আর মানুষও সেটা কিনতে আগ্রহী হবে না।
.
ববি বানজ ম্যানশনের বাইরে উৎসবমুখর আমন্ত্রিত অতিথিদের কনফারেন্স রুমে আসন গ্রহণের আহ্বান জানাল। এ আহ্বান থেকে বাদ গেল না একমাত্র মহিলা অতিথি ডিটা টমি। ডিটা টমি লডস্টোনের চলমান ছবি ম্যাসেলিনার পরিচালক।
ডিটা টমি একজন এ-ক্লাস পরিচালক এবং সমকামী নারী, অভিনেত্রীদের নিয়ে ছবি পরিচালনার তার সুখ্যাতি রয়েছে। আজকাল হলিউডে এই সমকামী শব্দটি প্রায় উঠেই গেছে। বৈধতা পেয়েছে সমলিঙ্গের যৌন বিনোদন। নারী সমকামীদের তাই এখন লেসবিয়ান না বলে ফেমিনিস্ট হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। ডিটা টমি নিজেও একজন সমকামী নারী। আর কনফারেন্স রুমে পুরুষদের ভিড়ে টমির উপস্থিতি অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে–একেবারেই বেমানান।
ডিটা টমি সবসময় বেশ কম বাজেটে ছবি তৈরি করে থাকে। ছবিগুলো প্রচুর অর্থও বয়ে নিয়ে আসে স্টুডিওর জন্য। সবচেয়ে সুবিধা হলো এই, তার ছবিতে নেয়া নারী অভিনেত্রীদের নিয়ে তাকে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না, যা একজন পুরুষ পরিচালকের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আরেকটি বিষয় হলো ডিটা টমি তার সমকামী অভিনেত্রীদের দিয়ে খুব সহজে দৃশ্যের পর দৃশ্যে কাজ করিয়ে নিতে পারে।
কনফারেন্স টেবিলের শীর্ষস্থানীয় আসন দখল করে বসে আছেন এলি ম্যারিয়ন। তার পাশে ববি বানজ সম্মেলনের বিষয়াদি আলোচনা করছিল।
বানজ ডিটার উদ্দেশে বলল, স্টুডিওতে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কি করা উচিত? এ বিষয়ে তোমার কোনো নিজস্ব চিন্তা থাকলে আমাদের বলো। এ সমস্যার মাথা-মণ্ডু কিছুই ঢুকছে না আমার মাথায়।
টমি আকারে একটু ছোটখাটো, তবে বেশ দৃঢ়তাসম্পন্ন, কথা বলে সবসময় যুক্তি দিয়ে। টমি বানজের কথার প্রতিউত্তরে বলল, অ্যাথেনাকে তার মৃত্যুভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যতক্ষণ না আপনারা তার এই ভীতি দূর করতে সক্ষম হবেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে সক্ষম হবেন–আমার ধারণা, সে ততক্ষণ তার কাজে ফিরে আসতে পারবে না। আর সে যদি ফিরে না আসে তবে আপনাদের পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার নিশ্চিতভাবে গোল্লায় যাবে। সে ছাড়া ছবির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
একটু সময় নিল টমি। তারপর বলল, গত সপ্তাহে আমি তাকে নিয়ে কাজ করেছি। সেখানেও আমি আপনাদের সাশ্রয় করেছি।
দিস ফাকিং পিকচার টমির কথা শেষ না হতেই বানজ এক রকম উত্তেজিত হয়ে উঠল। বলল, আমি কখনোই এটা বানাতে চাইনি।
ববি বানজের এই কথা উপস্থিত সকলের মনোযোগে আঘাত করল। প্রযোজক স্কিপি ডিরি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলল, ফাঁক ইউ ববি।
অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের এজেন্ট মেলো স্টুয়ার্ট ক্ষেপে গিয়ে ববির উদ্দেশে বিশেষণ ছুড়ল বুলশিট বলে।
সত্য কথা হলো ম্যাসেলিনা তৈরির জন্য সবাই খুব বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিল। এর কারণ ছবিটির কাহিনী প্রাচীনতম ঐতিহাসিক হলেও খুব সহজেই এটি ব্যবসায় সফলতা আনতে সক্ষম হবে–এই ভেবেই ছবিটি নির্মাণে সবুজ সংকেত দেয় প্রায় সবাই।
ম্যাসেলিনা ছবিটির কাহিনী প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সমকামী দৃষ্টিকোণ থেকেই ছবিটির বিষয়বস্তু মূলত প্রাধান্য পেয়েছে। তবে এই গল্পের লেখক একজন পুরুষ। লেখক যেভাবে লিখেছে–
সম্রাজ্ঞী ম্যাসেলিনা ছিলেন দুর্নীতিপরায়ণা, হন্তক এবং বহুগামী নারী। এক রাতে সম্রাজ্ঞী ম্যাসেলিনা রোমের সব মানুষকে যৌনাবেদনের মাধ্যমে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন।
ঘটনাটি এমন হলেও ম্যাসেলিনা ছবির কাহিনী নির্মিত হয়েছে একটু ব্যতিক্রম করে প্রায় দুই হাজার বছর আগের ঘটনা। যেখানে ম্যাসেলিনাকে দেখানো হয়েছে একজন বিষাদগ্রস্ত নায়িকা হিসেবে। এ গল্পে ম্যাসেলিনা এমন একজন নারী যার অস্ত্র কেবল তার নারীত্ব। আর এই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে পুরুষ কর্তৃত্বের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে সামাজিক ব্যবস্থায়। নারীকে যারা শুধু যৌন সম্ভোগের বস্তু হিসেবে মনে করে থাকে এমন কর্তৃত্বের অবসানের লক্ষ্যই ছবি নির্মাণের মূল বিষয়বস্তু।
ছবির ধারণাটি চমৎকার-সম্পূর্ণ রঙিন ও যৌননির্ভর দৃশ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয় বিষয়বস্তু। কিন্তু নিখুঁতভাবে সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু তুলে ধরাই হবে সাফল্যের ব্যাপার।