সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বেভারলি হিলসে এলি ম্যারিয়নের ম্যানশনটি আদতে একটি প্রদর্শনী ক্ষেত্র হিসেবেও অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যায়। বাড়িটিতে রয়েছে বিশাল বিশাল কুড়িটি কক্ষ। তবে সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, এত বড় বাড়িতে মাত্র একটি শয্যাকক্ষ বা বেড চেম্বার। এর কারণ এলি ম্যারিয়ন কখনোই চান না তার বাড়িতে কেউ ঘুমাক। তবে গেস্টদের জন্য অবশ্যই রয়েছে বাংলো-বাড়ি, রয়েছে টেনিস কোর্ট এবং বড়সড় আয়তনের সুইমিং পুল। ম্যারিয়নের বিশ কক্ষ বিশিষ্ট ম্যানশনটির প্রায় ছয়টি কক্ষই সাজানো হয়েছে অত্যন্ত মূল্যবান সব পেইন্টিংস দিয়ে। ম্যারিয়ন এ বিষয়ে প্রায় বলে থাকেন– আমার ম্যানশনের কয়েকটি কক্ষ পেইন্টিংসের জন্য উৎসর্গকৃত।
সেই বেভারলি হিলসের চ্যারিটি উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হলিউডের বাঘা বাঘা প্রায় পাঁচশ ব্যক্তিত্বকে। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে অতিথিদের প্রত্যেককে এক হাজার ডলার করে অ্যাডমিশন ফিও দিতে হয়েছে।
উৎসবের জন্য ম্যারিয়ন ম্যানশনের বাইরে পৃথকভাবে বসানো হয়েছে পানশালা। খাবারের স্থান, নাচের জায়গা ও মিউজিক ব্যান্ডের স্থান। এর বাইরে পুরো স্থান জুড়েই আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য এই আয়োজন। তবে ম্যানসনে অতিথিদের অবাধ বিচরণ সংরক্ষিত। আরেকটি বিষয়, অতিথিদের টয়লেট সিস্টেমেও আনা হয়েছে অভিনবতু— এর জন্য একটি বহনযোগ্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটি বেশ কৌতুককর।
ম্যানশন, অতিথিদের বাংলো, টেনিস কোর্ট ও সুইমিং পুলগুলো ঘিরে দড়ির সীমানা টানানো হয়েছে। বসানো হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী। কোনো অতিথিরই এমন নিরাপত্তা ডিঙিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এলি ম্যারিয়ন ব্যক্তি হিসেবে এতটাই প্রসিদ্ধ যে, এমন নিরাপত্তা ও আড়ম্বরপূর্ণ ব্যবস্থা না নিলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা অসম্ভব কিছু নয়।
আমন্ত্রিত অতিথিদের লনে গল্প-গুজব, নাচ-গানের জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর ম্যারিয়ন ছিলেন ম্যানশনের একটি বড় সম্মেলন কক্ষে। সেখানে একদল হলিউড ব্যক্তিত্বের সাথে তিনি ম্যাসেলিনা ছবিটি সম্পন্নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
বেভারলি হিলসে এই আয়োজনের পুরোটাই এলি ম্যারিয়ন নিজেই সম্পাদনা করছিলেন। আশি বছর বয়সেও ম্যারিয়নের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এতটা বয়স তিনি অত্যন্ত সতর্কতা ও ধূর্ততার সাথেই লুকিয়ে রাখতে পারেন। যে কেউ তাকে দেখে ষাটের বেশি মনে করবে না কখনো। তার ধূসর চুলগুলো নিখুঁতভাবে ছাঁটা এবং খুব সামান্যই তাতে রুপালি আভা। কালো সুট পরলে ম্যারিয়নের কাঁধ আরো প্রশান্ত মনে হয়। শরীরের টান টান ভাব আরো প্রস্ফুটিত হয়। সাথে ঠোঁটে ধরা চিকন পাইপ হারিয়ে দিতে পারেন প্রায় যুবকদের ইমেজও। তার পায়ে মাহোগ্যানি জুতা যেন ভূপৃষ্ঠ আঁকড়ে থাকে। লম্বভাবে কাটা সাদা শার্ট ও সাথে গোলাপি টাইয়ের বাঁধনে তার সামান্য ধূসর পাণ্ডুবর্ণও গোলাপি হয়ে ওঠে। তবে লডস্টোনে তার নিয়ম ও আইন পরিচালিত হয় তার নির্দেশমতোই। একটা সময় অবশ্য ছিল, যখন মানুষের ইচ্ছার স্বাধীন মতামতের ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হতো স্টুডিওর কার্যক্রম। এখন আর সে দিন নেই– কর্তৃত্ব ম্যারিয়নেরই।
একটি ছবির মাঝপথে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের অস্বীকৃতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে এলি ম্যারিয়নকে। এতে বিপর্যস্ত হয়েছে ম্যারিয়নের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সর্বোপরি তার মনোযোগ।
ম্যাসেলিনা শত মিলিয়ন ডলারের প্রযোজনা, স্টুডিওর গতি প্রকৃতি। এর অর্থায়ন বিভিন্ন বিদেশী ভিডিও, টিভি, ক্যাবল ইত্যাদি মাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত— যেন এক-একটি স্বর্ণের ভাণ্ডার। আর এই ভাণ্ডার স্প্যানিশ জাহাজ (গ্যালিওন) ডুবির মতো সাগরের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে যেন, তা আর কখনোই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এই ভাণ্ডার হচ্ছে অ্যাথেনা নিজেই। তিরিশ বছরে অ্যাথেনা– একজন মেগাস্টার। অ্যাথেনা শুধু ম্যাসেলিনার জন্যই নয়, লডস্টোনের পরবর্তী আরেকটি ব্লকবাস্টার ছবিতেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ম্যারিয়নের মতে, অ্যাথেনা একটি প্রকৃত মেধার নাম, তার মাঝে মেধা ছাড়া আর কি-ইবা আছে! তবে ম্যারিয়ন যে কোনো মেধার পূজারী।
মেধাকে তিনি ডিনামাইট হিসেবে মনে করেন। ডিনামাইটের মতোই ভয়ঙ্কর এই মেধা, তবে এর নিয়ন্ত্রণও রাখতে হবে। ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক এই ডিনামাইটের নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রয়োজন ভালোবাসার। তার নিয়ন্ত্রণে হতে হবে তোষামোদী– বিশ্বে প্রচার করতে হবে এর যত কিছু ভালো সব। এর জন্য হতে হবে বাবা, হতে হবে মা। এর জন্য নিজেকে একজন বোন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে, এমনকি প্রয়োজনে সাজতে হবে একজন প্রেমিক। তবে খুব বেশি ছাড়ও দেয়া যাবে না। কিন্তু ম্যারিয়নের এখন এমন একটি কঠিন সময়, যখন ডিনামাইট অ্যাথেনার প্রতি কোনো কিছুই সাজতে পারছেন না– দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারছেন না অ্যাথেনাকে।
কনফারেন্স রুমে উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছেন এলি ম্যারিয়নের দিকে। সবাই ম্যারিয়নের মনোভাব জানতে উদগ্রীব। আজকের এ সভায় উপস্থিত আছে ববি বানজ, স্কিপি ডিরি, মেলো স্টুয়ার্ট ও ডিটা টমি।