এভাবেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে, দৌড়াতে দৌড়াতে অ্যাথেনা এক সময় এসে পৌঁছল একটি টিলাসম পাথরখণ্ডের কাছে, যার অর্থ উত্তর সৈকতের সীমানা এখানেই শেষ।
এতক্ষণ অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘপথ অতিক্রম করায় মনের জোরও প্রায় ফুরিয়ে গেল অ্যাথেনার ফিরে যাবার মানসিক ইচ্ছেও শেষ হয়ে গেল। দম ফুরিয়ে অ্যাথেনা বসে পড়ল বেলেতেই। হৃদয়ের স্পন্দনকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করল সে।
আকস্মিক সি-গালের শব্দে তার সম্বিত ফিরে এলো। দেখল কয়েকটি সি গাল শূন্য থেকে উড়ে এসে পানি ছুঁয়ে আবারো উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। খুব ভালো লাগল তার অনেকটা সময় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল পাখিগুলোর খেলা। কিন্তু তাকে ফিরে যেতে হবে। মুখ শুকিয়ে এসেছিল, জিহ্বা বের করে ঠোঁট ভিজানোর চেষ্টা করল সে।
অকস্মাৎ দীর্ঘদিন পর তার প্রথমবারের মতো মনে হলো— সে ইচ্ছে করলেই তো তার বাবা-মার আশ্রয় নিতে পারে। বিষয়টি এমন কিছু কঠিন নয়। তার মনে হলো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি কোনো শিশুর পথ ভুলে যাবার মতো ঘটনা। ইচ্ছে করলেই আবারো ফিরে যাওয়া যায় নিরাপদে, নিরাপদ আশ্রয়ে। যেখানে গেলে কেউ দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরবে তাকে, তার ভালোর জন্য করবে যা কিছু দরকার।
খুব ভালো লাগল অ্যাথেনার। মনে জোর পেল– হেসে উঠল শিশুর মতো। তার মধ্যে বিশ্বাস জন্মাল– এটা অসম্ভবের কিছুই নয়।
বর্তমানের অ্যাথেনা অনেকের ভালোবাসার, পছন্দের এমনকি শ্রদ্ধারও। তবে সে মনে করে, সে একেবারেই শূন্য। বিশেষ করে কোনো মানুষের ভালোবাসার যথাযথ অনুভূতি তাকে আরো দোলা দেবে না কখনো। অ্যাথেনা প্রায়ই নিজেকে বড় একাকী মনে করে যেন এ পৃথিবীতে তার কেউ নয় আপন।
কখনো অ্যাথেনার পাশ কাটিয়ে একজন সাধারণ মহিলা তার স্বামী সন্তানের সাথে হেঁটে যায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সে এমন একটি সহজ জীবনের জন্য। ঈর্ষা হয় তার সেই সাধারণ নারীটির ওপর। থামো– চিন্তার রেশ থামাতে চিৎকার করে ওঠে অ্যাথেনা। মনে মনেই বলে– ভাবো, এমন একটা জীবন ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায়। এর জন্য অ্যাথেনা, তোমার প্রয়োজন পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।
সকালের মধ্যভাগে অ্যাথেনা ফিরে এলো তার বাড়িতে। গর্বের সাথে, বুক ফুলিয়ে, সোজা হনে সে ফিরে এলো। তার মধ্যে উপলব্ধি হলো তার আত্মবিশ্বাস ফুরিয়ে যায়নি। অ্যাথেনা জানে তাকে এখন কি করতে হবে।
বজ স্কানেটকে সারা রাত পুলিশ কাস্টোডিতে রাখা হলো। স্কানেট কাস্টোডি থেকে ছাড়া পাবার পর তার আইনজীবী প্রেস কনফারেন্সের ব্যবস্থা করল। স্কানেট সাংবাদিকদের জানাল, অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে সে বিয়ে করেছিল। দীর্ঘ দশ বছরেও সে অ্যাথেনার দেখা পায়নি। সেদিন দেখা হওয়ায় বজের এই কাণ্ডটি ছিল কেবল একটি বাস্তব কৌতুক। লিকুইডটি ছিল পানি।
সংবাদ সম্মেলনে বজ জানাল যে, নিশ্চিতভাবেই অ্যাথেনা তার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করবে না। বাস্তবে ঘটলও তাই। অ্যাথেনা এ বিষয়ে কোনো মামলা বা সংবাদ সম্মেলন করেনি।
.
তবে সেদিন অ্যাথেনা লডস্টোন স্টুডিওকে বিষয়টি জানিয়েছিল। লডস্টোন স্টুডিওর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে ছবি নির্মাণের রেকর্ড আছে। এ কারণে স্টুডিওটির নাম-ডাকও ব্যাপক। অ্যাথেনা স্টুডিও কর্তৃপক্ষকে জানাল, লডস্টোনে চুক্তিবদ্ধ কাজ সে আর করবে না। এর কারণ হিসেবে অ্যাথেনা লিখল, তার ওপর যে কৌতুককর হামলা চালানো হয়েছে, তাতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে– আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
অ্যাথেনা ছাড়া লডস্টোনের ব্যানারে নির্মিতব্য ঐতিহাসিক ছবি ম্যাসেলিনা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ অবধি ছবিটির জন্য যে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে তার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং অ্যাথেনা এই স্টুডিওতে কাজ না করার অর্থ, পরবর্তীতে কোনো বড় স্টুডিওতেই কাজ করার সুযোগ হারাবে সে।
অ্যাথেনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে লডস্টোন স্টুডিও থেকেও একটি স্টেটমেন্ট ছাড়া হলো। তাতে লেখা হলো তাদের তারকা অভিনেত্রী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অথচ চুক্তিবদ্ধ ছবির শুটিং-এর কাজ এখনও সিংহ ভাগ বাকি। তাকে এক মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজটুকু করতে হবে।
০২. লডস্টোনের সাথে অ্যাথেনা
০২.
লডস্টোনের সাথে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের কাজ না করার ঘোষণাটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যার সাথে জড়িত বিশাল পরিমাণে অর্থের বিনিয়োগ ব্যাপক মূল্য দিতে হতে পারে এজন্য অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনকে।
লডস্টোন পুরো হলিউডের এমনই এক প্রভাবশালী ও বৃহৎ স্টুডিও যে, সাধারণত কোনো অভিনয় শিল্পীই অ্যাথেনার মতো নেতিবাচক আচরণের সাহস দেখায় না।
ঐতিহাসিক কাহিনীনির্ভর ম্যাসেলিনা চলতি বছর ক্রিসমাস মৌসুমের যথেষ্ট গতিশীল প্রযোজনা। শুধু তাই নয়, এমন বড় ছবি পুরো দীর্ঘ ও কঠিন শীতকালে স্টুডিওর সব ছবির পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত। আর এতেই প্রধান চরিত্রে কাস্ট করা হয়েছে অ্যাথেনাকে।
অ্যাথেনার ওপর লডস্টোন স্টুডিওর ক্ষেপে যাওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে এমন এক সময় অ্যাথেনা ছবিতে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছে যখন বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমস্ত আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। পরের রোববার এলি ম্যারিয়নের বেভারলি হিলস এস্টেটে এই বার্ষিক উৎসব ঘিরে ব্রাদারহুড চ্যারিটি পার্টির দিন নির্ধারিত। এলি ম্যারিয়ন হচ্ছেন লডস্টোন স্টুডিওর সিংহভাগের অংশীদার এবং চেয়ারম্যান।