ফাঁক ইউ, আমি লেখক নই। ক্লডিয়ার আক্ষেপ। সে বলল, একজন চিত্রনাট্যকার কখনোই লেখক নয়। তুমি এমন আক্ষেপ দেখাচ্ছ কারণ তোমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় তুমি কখনোই এর পক্ষে বলতে পারবে না।
ভেইল ক্লডিয়ার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, আমি তোমাকে ঠিক নিচে নামিয়ে ফেলছি না। আমি কেবল একটি সংজ্ঞা তৈরির চেষ্টা করছিলাম।
ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমি তোমার লেখা খুব পছন্দ করি, ক্লডিয়া বলল, কিন্তু এখানে কি কেউই তোমাকে পছন্দ করে না?
ভেইল হাসল, বলল, না, না তারা আমাকে অপছন্দ করে না। আমার প্রতি তাদের ঘৃণাবোধ আছে। তবে দেখো, যখন আমি আমার মৃত্যুতে লেখার স্বত্ব ফিরে পাব, তখন তারাই আমাকে শ্রদ্ধা জানাবে।
ক্লডিয়া বলল, তুমি একটুও সিরিয়াস নও।
আমি ভাবি, আমি যথেষ্ট সিরিয়াস। ভেইল বলল, আত্মহত্যা একটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এখন রাজনৈতিকভাবেও এটা সঠিক নয় বলে ভাবা হচ্ছে। তাই নয় কি?
ওহ শিট ক্লডিয়া তার একটি বাহু দিয়ে ভেইলের গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, লড়াই কেবল শুরু হচ্ছে। আমি যখন তোমার পয়েন্টগুলো তাদের সামনে উত্থাপন করব, আমি নিশ্চিত তারা শুনবে। এবার হলো তো!
ভেইল ক্লডিয়ার কথায় মুচকি হাসল। তাড়াহুড়োর কিছু নেই ভেইল বলল। এই করতে করতে ছয় মাসের মতো সময় লেগে যাবে। আর তখন আমিও আমার করণীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাব। আসলে সহিংসতা আমার একেবারেই অপছন্দ।
ক্লডিয়া এবার নিশ্চিত হলো যে, ভেইল সত্যি সত্যিই সিরিয়াস। আকস্মিক আতঙ্কিত হয়ে পড়ল ভেইলের মৃত্যুর কথা ভেবে। এমন ভাবনা, ক্লডিয়ার শুধু ভেইলকে ভালোবাসার জন্যই নয়, যদিও তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সে পর্যায়েই চলে গেছে। ভেইলের প্রতি অতিমাত্রায় অনুরক্তের কারণেও ক্লডিয়ার এই আতঙ্ক নয়। তার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, তার লেখা এত সুন্দর সুন্দর বই সামান্য কটা টাকার জন্য গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। ভেইলের এই শিল্প হয়তো অর্থকে জয় করে নেবে এক সময়। ক্লডিয়া তার এমন চিন্তা ঝেড়ে বেরিয়ে এলো। ভেইলের উদ্দেশে বলল, যদি খারাপ পরিস্থিতি একেবারে নগণ্য মাত্রায় নেমে আসে তবে আমরা ভেগাসে আমার ভাই ক্রসের সাথে যোগাযোগ করব। সে তোমাকে পছন্দ করে। সে নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারবে।
ভেইল হেসে উঠে বলল, সেও আমাকে ততটা পছন্দ করে না। ক্লডিয়া বলল, সে খুব ভালো মনের মানুষ। আমি আমার ভাইকে জানি। ভেইল এবার বলল, না ক্লডিয়া, তুমি তাকে চেনো না।
অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন সে রাতে ডরোথি চ্যান্ডলার প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি থেকে সরাসরি ফিরে এসেছিল। অবসাদগ্রস্ত অ্যাথেনা ঘরে ফিরেই সোজা চলে গিয়েছিল তার বিছানায়। কয়েক ঘণ্টা সময় সে বিছানায় শুধু এপাশ-ওপাশ করেই কাটাল- বিন্দুমাত্র ঘুম এলো না চোখে। শরীরের পেশিগুলোও যেন টেনে টেনে ধরছিল।
কেবল একটাই চিন্তা তার মাথায় চিন্তা নয় দুশ্চিন্তা। বজ স্কানেটের। আতঙ্কের রেশ তার তখনও কাটেনি। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে উঠল এ কাজের পুনরাবৃত্তি আর করতে দেয়া যাবে না। সে ভাবল, এমন ত্রাসের মধ্যে সে তার জীবন অতিবাহিত করতে চায় না।
আকস্মিক অ্যাথেনা উঠে বসল। সামান্য কয়েকটা মুহূর্তমাত্র। তারপর বিছানা থেকে নেমে সে তার পোশাক পরিবর্তন করল। গায়ে চড়াল খেলার পোশাক, পায়ে টেনিস জুতা। খুব ভোরে সূর্য উদয়েরও আগে এবং সৈকতে মানুষজনের পদচারণার অনেক পূর্বে অ্যাথেনা দৌড়াতে শুরু করল। তার দৌড়ের গতি হলো দ্রুত থেকে দ্রুততর।
সমুদ্র সৈকতের শক্ত ভেজা বেলেতে অ্যাথেনার দৌড় যেন অশরীরী মনে হতে লাগল। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দৌড়ানোর সময় অ্যাথেনার পায়ের ওপর আছড়ে পড়েছিল ঢেউ। নরম বেলেতে পা কদাচিৎ আটকেও যাচ্ছিল– তবুও থামেনি সে। সেই সাথে থামেনি তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতে স্নায়ুতে বজকে নিয়ে চিন্তার দৌড়।
অ্যাথেনা চায় না বজ তাকে কখনো আঘাত করতে সমর্থ হোক। মাথায় যেমনই আসছে বজের চিন্তা, অ্যাথেনার পরিশ্রমও বেড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে। চিন্তার রেশ থামেনি মোটেও। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল–বজ যে তাকে একসময় হত্যা করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার আগে সে অ্যাথেনাকে খেলিয়ে নেবে, তারপর অবশেষে তাকে বিকৃত করে ফেলবে– অ্যাথেনাকে কুৎসিৎ কদর্য করাই বজের অন্যতম অভিপ্রায়। এর কারণ, যদি অ্যাথেনাকে সে আবারো ফিরে পায়– অ্যাথেনা এভাবেই কথাগুলো বিড়বিড় করে আওড়ে যাচ্ছিল। এক সময় সমুদ্রের শীতল ছটা তার মুখে এসে পড়ল। আপন মনেই বলে উঠল– এ হয় না, এটা হতে দেয়া যায় না।
অ্যাথেনা আবার ভাবতে লাগল স্টুডিওর কথা তারা উন্মত্ত হয়ে উঠবে। তারা তাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। আরো এসব করা হবে কেবল অর্থের জন্য, নিশ্চয় অ্যাথেনার জন্য নয়, স্টুডিওর লোকরা অর্থের লাভ লোকসানে বেশ সতর্ক।
অ্যাথেনার ধারাবাহিক ভাবনায় এলো তার বন্ধু ক্লডিয়া। তার মনে এলো স্টুডিওর আরো কিছু মানুষের কথা। সে জানে, সে নিজের জন্য সবার কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করতে পারবে না। বজ খুব বেশি উচ্ছল, খুব বেশি সাহসী। সে এত বেশি স্মার্ট যে, অনায়াসেই যে কোনো লোককে আপন করে নিতে সক্ষম। মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাথেনা নিজের জন্য কোনো সুযোগই সৃষ্টি করতে পারবে না।