কিছুক্ষণের জন্য মলি ফ্লাডার থামল। কি যেন ভেবে মিষ্টি একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলল, যদি তুমি মৃত হয়ে থাকো, তবে তোমার উত্তরাধিকারী তৈরি করে এর চেয়েও বেশি এনে দিতে পারি হয়তোবা। আমাদের সত্যিকার অর্থেই তাদের মাথায় ধরার মতো বন্দুক আছে।
তাহলে লডস্টোনে তাদের ডাকো। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করব। যদি তাতেও তারা সম্মত না হয়, তবে নিজেকে মেরে ফেলা ছাড়া তো আরো উপায় নেই। বলল ভেইল।
প্রতিউত্তরে মলি বলল, তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে না।
তাহলেও আমি এটা করব। ভেইলের সাফ জবাব।
যুক্তির সাথে কথা বলো ভেইল, দৃঢ় প্রত্যয়ী মলির উত্তর, তুমি মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের একজন লোক। অর্থের জন্য এ মৃত্যুর এ বয়স খুব বেশি নয়। ভালোর জন্য, দেশের জন্য, ভালোবাসার জন্য, বয়সে মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো, কিন্তু অর্থের জন্য নয়।
আমাকে অন্তত আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য যোগান দিতে হবে। ভেইল বলল।
মলির উত্তর, তোমার প্রাক্তন স্ত্রী এবং ঈশ্বরের কসম তুমি তো দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছ।
আমি আমার প্রকৃত স্ত্রীর কথা বলছি। আমি আমার সেই স্ত্রীর কথা বলছি যার দুটি বাচ্চা আছে।
মলি এবার বুঝতে পারল আর্নেস্ট ভেইলকে– কেন তাকে হলিউডের সবাই এত অপছন্দ করে। সে বলল, তুমি যা চাও তা স্টুডিও তোমাকে দেবে না। তারা ভালো করেই জানে যে তুমি মোটেও আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নও। শুধুমাত্র একজন লেখকের এই ঘটনা গুরুত্ব পাবে না। হ্যাঁ, তুমি যদি অভিনয় শিল্পী হতে, তবে মানা যেত। একজন এ গ্রেডের পরিচালক হলেও হয়তো হতো, তবে একজন লেখক হিসেবে নয়।
মলি আকস্মিক ক্লডিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, স্যরি ক্লডিয়া, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
ক্লডিয়া বলল, আমি জানি আর জানে আর্নেস্ট। এক টুকরো শূন্য কাগজে মৃত্যুর সংবাদ এই শহরের সবাইকে যদি আতঙ্কিত না করে, তবে তারা। সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে। তাও কি তুমি কিছুই করতে পারবে না মলি?
মলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। লডস্টোনের প্রেসিডেন্ট ববি বানজের বিরুদ্ধে। আঘাত হানার যথেষ্ট ক্ষুদ্র উপকরণ হয়তো তার আছে কিন্তু … আপাতত সে এলি ম্যারিয়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল— এক নতুন মামলা।
পোলো লাউঞ্জে তারপর ভেইল এবং ক্লডিয়া বসল ড্রিংকসের জন্য। ভেইল আচ্ছন্ন ছিল তখনও মলি ফ্লাডারসের দেয়া তথ্যগুলোর মধ্যে। ক্লডিয়ার দিকে উদাসী দৃষ্টি হেনে বলল, মলি একজন বিশাল আকৃতির মানুষ। আরো এমন মানুষের সাথে পরকীয়া বেশ সহজ। ছোটখাটো নারীদের চেয়ে এরা বিছানাতেও চমৎকার যে কোনো ধরনের পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই।
ক্লডিয়া বিস্মিত হলেও, ভেইলের কথায় এমন চুলচেরা বিশ্লেষণের স্বাদ সে আগেই পেয়েছে। ভেইলের এই অতি-মেধাকে ভালোবাসে ক্লডিয়া–এসব কারণেই তার প্রতি ক্লডিয়ার এত আগ্রহ। এমন জিনিয়াস ক্লডিয়ার জীবনে খুব একটা নেই।
ক্লডিয়া এখনও ভালোবাসে ভেইলের উপন্যাস। সে বলল, তুমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছ, ভেইল।
আমি ঠিক বোঝাতে চাইছি যে, এমন বড়সড় মহিলারা বেশ মিষ্টি স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা তোমাকে ব্রেকফাস্ট বিছানা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এছাড়াও ছোটখাটো অনেক কিছুই তারা করে দেবে দ্বিধাহীন- জাস্ট নারীসুলভ আর কি।
ক্লডিয়া একটু নড়েচড়ে বসল।
ভেইল বলল, বড় মহিলারা ভালো মনেরও হয়ে থাকে। একদিন এমনই একজন আমাকে পার্টি শেষে তার বাসায় নিয়ে গেল। সেই রাতে আমাকে নিয়ে যে সে কি করবে, বুঝতেই পারিনি প্রথমে। পরে দেখলাম এমনভাবে সে তার বেডরুমটি পরখ করছে– মনে পড়ে গেল আমার মায়ের কথা। মা ঠিক সেই মহিলাটির মতোই তার রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াত কিছু একটা খাবার তৈরির জন্য। এরপর তা সবার সামনে পরিবেশন করত। মহিলাটিও ছিল আশ্চর্য রকমের– আমাকে অভিভূত করেছিল। আমরা কিভাবে সে রাতটি সুন্দরভাবে কাটাব ব্যস্ত ছিল এই আয়োজনে।
ক্লডিয়া ও ভেইল তাদের ড্রিংকসে চুমুক দিতে শুরু করল। প্রত্যেক বারের মতো ক্লডিয়া আজও ভেইলের বন্ধুভাবাপন্ন আচরণে মুগ্ধ হলো। সে বলল, আমি ও মলি কিভাবে পরস্পরের বন্ধু হলাম, তুমি কি জানো?
ক্লডিয়া এবার শুরু করল তার কথা, একবার সে এমন এক লোকের পক্ষে কাজ করেছিল যে তার গার্লফ্রেন্ডকে না কি হত্যা করে। আর এই কাজে আদালতে অপরাধীদের পক্ষে মলির প্রয়োজন ছিল কিছু ভালো সংলাপের। উদ্বিগ্ন মলিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম আমি। ঠিক সিনেমার যেমন সংলাপ লেখা হয় আমি সেভাবেই লিখেছিলাম। মলির উপস্থাপনায় লোকটি অনিচ্ছাকৃত হত্যার রায় পেয়ে বেঁচে যায়। তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।
ভেইল বলল, আই হেইট হলিউড।
হলিউডের প্রতি তোমার বিদ্বেষের কারণ লডস্টোন তোমাকে একটা বেকায়দা অবস্থায় ফেলেছে প্রতারণা করেছে, বলল ক্লডিয়া।
ভেইল বলল, না, ঠিক সে কারণেই নয়। দেখো ক্লডিয়া আমি হচ্ছি সেই পুরনো সভ্যতার অনুসারী একজন মানুষ— চীনা সম্রাট কিংবা নেটিভ আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের আমলের মানুষদের প্রতি দরদি একজন, যাদের ওপর উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।
আমি একজন প্রকৃত লেখক, আমি আমার লেখার মধ্য দিয়ে মানুষের মনোস্তত্ত্বে আবেদন করি। আমার এসব লেখা খুব সেকেলে। মুভির জন্য এগুলো ঠিক দাঁড়ায় না। মুভির জন্য আছে ক্যামেরা, আছে দৃশ্যপট সাজানোর সেট, আছে সঙ্গীত– এসব দিয়ে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু একজন লেখক সামান্য কটা শব্দ সাজিয়ে কিভাবে তা সম্ভব করবে? বিশেষ করে যুদ্ধের দৃশ্যে হয়তো নিখুঁত সব দৃশ্যও তৈরি করা সম্ভব মুভির মাধ্যমে। তবে একটি ব্যাপার, মুভি মস্তিষ্ক জয় করলেও হৃদয় জয় করতে পারবে না।