ক্লডিয়া আর্নেস্ট ভেইলকে সাথে করে প্রতিউত্তরে বলল, যত শিগগির সম্ভব এখানকার কাজ শেষ করার জন্য আমি তাকে বলব। তবে আমার মনে হয় সে ঘাবড়ে যায়নি।
মলি ফ্লান্ডার একজন বিনোদন বিষয়ক আইনজীবী এবং শহরের অনেকেই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। চলচ্চিত্র জগতের আইনজীবী হিসেবে তার নামডাক রয়েছে বেশ। আদালত কক্ষে মোকদ্দমার লড়াই মলি বেশ উপভোগ করে। অধিকাংশ মোকদ্দমায় তার জয়লাভের সুখ্যাতি রয়েছে। তার এই যশের কারণ মলি নিজেও একজন অভিনেত্রী ছিলেন এবং চলচ্চিত্র জগতের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল, যা তার আইন প্রয়োগে সহায়ক।
এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে মলি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক দফতরের প্রধান অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সময় সে খুনের মামলার প্রায় কুড়িজন আসামিকে গ্যাস চেম্বারে প্রেরণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এ ধরনের মামলায় সত্যিকারের খুনির বিরুদ্ধেও এমন শাস্তি প্রদানে তার স্নায়ু কেঁপে উঠেছিল। সে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে অবশেষে এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশকেই অধিকতর পছন্দের মনে করল। মলি প্রায়ই বলে থাকে এক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতার বালাই নেই এবং এখানকার অপরাধীরা বেশ রসিক ও বুদ্ধিমান।
এন্টারটেইনমেন্ট লয়ার ছাড়াও মলি এখন পরিচালক, কলাকৌশলী, চিত্রনাট্য লেখক সরবরাহ করে থাকে। আজকের এই সকালেও সে এমনসব কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তবে চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে প্রিয় ক্লায়েন্ট ক্লডিয়া ডি লিনাকে সশরীরের তার অফিসে উপস্থিত হতে দেখে আনন্দিত হলো মলি ফ্লান্ডারস। ক্লডিয়ার সাথে সে ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়েছ, সে বর্তমানে ক্লডিয়ার চিত্রনাট্য রচনার পার্টনার, একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট ভেইল।
ক্লডিয়া ডি লিনা ফ্ল্যাভারের শুধু প্রিয় ক্লায়েন্টই নয়, অনেক পুরনো একজন বন্ধুও। তাদের মধ্যে রয়েছে বেশ আন্তরিকতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। তাই ক্লডিয়া ভেইলের বিষয়টি মলি ফ্লাভারসকে দেখতে অনুরোধ করায় সে তাৎক্ষণিক তাতে সম্মতি প্রকাশ করল।
তবে ভেইলের যে সমস্যা তা শুনে মলি নিরাশ হলো। ভেইলের এ সমস্যার সমাধান তার দ্বারা সম্ভব নয় বলে আক্ষেপ করল মলি। তবে আর্নেস্টকে তার খুব একটা পছন্দ হলো না। একজন পুরুষ হিসেবে তার প্রতি কোনো আকর্ষণবোধও করল না সে।
আর্নেস্টের মামলাটি ছিল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত। মলির কাছে দেয়া সমস্ত কাগজপত্র ঘেঁটে আর্নেস্টকে দুঃসংবাদ ছাড়া কিছুই দিতে পারল না আইনজীবী মলি ফ্লান্ডারস।
সে আর্নেস্টের উদ্দেশে বলল, আমি তোমার কন্ট্রাক্ট ও বৈধতার সব কাগজপত্র ঘেঁটে দেখলাম। সেখানে লডস্টোন স্টুডিওর বিরুদ্ধে নালিশ করার জন্য কোনো পয়েন্ট পাওয়া গেল না। তবে একটি উপায়ে তুমি তোমার অধিকার ফিরে পেতে পারো। এর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কপিরাইটটি তোমাকে বের করতে হবে। সময়টি পরবর্তী পাঁচ বছর পরের হলে ভালো হয়।
এক দশক আগেও আর্নেস্ট ভেইল ছিল আমেরিকার একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। সমালোচিতও হয়েছিল সে। ব্যাপক পঠিত হয়েছিল তার লেখা। একটি নোভেলের চরিত্র নিয়েই পরে সমস্যা বাধে। লডস্টোন বইটির স্বত্ব কিনে নেয় এবং এর ওপর একটি ছবিও নির্মিত হয়। ছবিটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে। পরপর দুটি ধারাবাহিক নির্মিত হয়, ব্যবসায় লাভ হয় ব্যাপক। পরবর্তীতে আরো চারটি সিকুয়েলের ছবি বোর্ডে আগমন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
দুর্ভাগ্যক্রমে ভেইল তার সব উপন্যাসের স্বত্ব প্রথম দফাতেই দিয়ে দিয়েছিল স্টুডিওর কাছে। কিন্তু সে চুক্তির পর চলচ্চিত্র থেকে একটি কণাও এ পর্যন্ত পায়নি সে।
আর্নেস্ট ভেইল সর্বদা একজন কদাকার মানুষ। সবসময়ই তার চেহারায় ফুটে থাকে এক তিক্ততার অভিব্যক্তি। এটি অবশ্য ভিন্ন একটি কারণে ভালো বলতে হবে। সমালোচকদের সাথে খুব একটা মিশতে হয়নি তার। তবে তারা ভেইলের সমালোচনায় অব্যাহতভাবে মুখর। তাদের মন্তব্য পাঠক তার বই পড়ে বেশি দিন মনে রাখবে না। ভেইলের মেধা সত্ত্বেও তার জীবন একটু ছন্নছাড়া। বিগত বিশ বছরের মধ্যে দাম্পত্য জীবন হয়েছে বিচ্ছেদের তার তিন সন্তানও চলে গেছে স্ত্রীর সাথে।
আর্নেস্ট ভেইলের একটি বই চলচ্চিত্রে বেশ সফলতা পায়। সেটি থেকেই ভেইলের কেবল এক দফা প্রাপ্তি আসে। অপরদিকে স্টুডিও ভেইলের ছবি করে বছরের পর বছর কামিয়ে নিচ্ছে দেদারসে বঞ্চিত হচ্ছে কেবল ভেইল।
আমাকে খুলে বলো, ভেইল বলল।
তোমার চুক্তিগুলো বোকা প্রমাণিত হবে–ভিত্তিহীন, মলি বলল। স্টুডিও তোমার লেখাগুলোর স্বত্ত্ব নিয়ে নিয়েছে। সেগুলো তাদের এখন ইচ্ছেমাফিক ব্যবহারের অধিকার আছে। কপিরাইটের আইন অনুযায়ী, তোমার মৃত্যুর পর তোমার সমস্ত কাজের অধিকার পাবে তোমার উত্তরাধিকারী।
এতক্ষণ সময়ে প্রথমবারের মতো হাসল ভেইল। একটি ছোট্ট শব্দ উচ্চারণ করল তারপর মুক্তি।
ক্লডিয়া কৌতূহলী হলো। প্রশ্ন করল, কেমন পরিমাণ অর্থ আমরা দাবি করতে পারি?
অন আ ফেয়ার ডিল, মলি বলল, মোটের ওপর পাঁচ শতাংশ। যেহেতু তারা চুক্তিবহির্ভূত পাঁচটির বেশি ছবি নির্মাণ করেছে এবং এর জন্য তারা বিপদগ্রস্তও নয়। তাছাড়া নিয়মিত বিশ্বব্যাপী সফল ব্যবসা তো তাদের রয়েছেই। আমরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিলিয়নের কথা ওঠাব।