নাইসে অর্টিসটিক শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার প্রথম দিনে সে শিশুদের মতো হাঁটা-চলা দেখতে চাইল। সে পরিচয়ের ধারণাকে পরাভূত করল। সেদিন সে আরামবোধ করেছিল।
ড. জিরার্ড এ দেখে উপহাস করে বলল, হু, খুব ভালো কিন্তু তুমি ভুল নির্দেশে যাচ্ছ। তার পর সে তার হাত তার হাতে নিয়ে ভদ্রভাবে বলল, তুমি অবশ্যই তাদের দুর্ভাগ্যের সাথে পরিচিত হওনি। তুমি অবশ্যই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
অ্যাথেনা তিরস্কার ও লজ্জাবোধ করল। আবার তার নায়িকাসুলভ অহংকার তাকে বিপথগামী করল। কিন্তু সে স্বয়ং এই শিশুদের শান্তিতে যত্নের কথা অনুভব করল। এটা তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না; তার ফ্রেঞ্চ ভাষা অসম্পূর্ণ, কোনোভাবেই তার শব্দের অর্থ উপলব্ধি করতে পারবে না।
এমনকি আসল যন্ত্রণাও তাকে নিরুৎসাহিত করে না। শিশুরা কখনো ধ্বংসাত্মক হয়, কখনো সমাজের নিয়ম-কানুন বুঝতে পারে না। তারা সবকিছু সামাল দেয় এবং তাদের পরিচর্যা করে। তাদের মল দিয়ে তারা দেয়াল আঠালো করে। আর যেখানে খুশি তারা প্রস্তাব করে। তাদের হিংস্রতায় ও বাইরের দুনিয়ার প্রতি অরুদ্ধিতে কখনো কখনো সত্যিই তারা ভয় পেয়ে যায়।
নাইসে ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় রাতে যখন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সাহিত্য পড়ে তখন অ্যাথেনা নিজকে খুবই অসহায় অনুভব করে। শিশুদের উন্নতি ও তাদের নিয়ে আতঙ্ক সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়। তারপর সে তার বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে কাঁদে।
প্রতিবেদনটি তাকে খুবই অসুখী করে ফেলে। ক্রস তাকে দেখতে আসবে জেনে সে সুখ ও আশায় উচ্ছ্বসিত হয়ে গেল। সে এখনো বেঁচে আছে। আর সে তাকে সাহায্য করবে। সে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়ল। সে ড. জিরার্ডের সাথে পরামর্শ করল।
আপনার মতে কি করলে অত্যাধিক ভালো হবে? সে জিজ্ঞেস করল। সে ব্যাথেনির বড় সহকারী হবে। ড. জিরার্ড বলল, আমি দেখতে চাই সে তাকে কিভাবে সে সময় গ্রহণ করে। আর এটা তোমার জন্য অবশ্যই খুব ভালো হবে।
তাদের সন্তানের জন্য মেয়েদের অবশ্যই আত্মত্যাগ থাকবে না। নাইস বিমানবন্দরে অপরিচিত ক্রসের সাথে তার কাল্পনিক চিন্তা করল।
বিমানবন্দরে ক্রস হেঁটে হেঁটে দেখল সমতল থেকে নিচু ঝুলন্ত টার্মিনালে বাতাস ছিল স্নিগ্ধ ও মিষ্টি। ভেগাসের মতো তাপে দগ্ধ, গন্ধময় না। শেষ প্রান্তের অভ্যর্থনা প্লাজা বিলাসবহুল লাল ও রক্ত বর্ণের ফুলে সুশোভিত।
সেই প্রাজায় সে দেখল তার জন্য অ্যাথেনা অপেক্ষা করছে। আর সে তার গান শৈলীতে প্রজ্ঞা ছড়ানোভাবে মোহিত। যদিও সে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল, তবু তার সৌন্দর্য পুরোপুরিভাবে লুকাতে পারেনি। সোনালি ফ্রেমে ঈষৎ রঞ্জিত চশমা তার চোখকে উজ্জ্বল সবুজ থেকে বাদামিতে পরিণত করেছে। যে কাপড় সে পরেছে তাতে তাকে আরো অপরূপা লাগছে। তার উজ্জ্বল চুল নীল ডেনিমের হ্যাঁটের নিচে খুঁজে রেখেছে। আর এতে তার মুখের একটা অংশ ঢেকে আছে। সে অনুভব করে এমন রোমাঞ্চ যে সেই একমাত্র ব্যক্তি যে জানে। সে আসলে কত সুন্দর।
ক্রস এগিয়ে এলো, অ্যাথেনা তার চশমা খুলে তার ব্লাউজের পকেটে রাখল। সে তার অদম্য অহংকার দেখে হাসল।
কমপক্ষে এক ঘণ্টা পরে তারা অনুচরসহ গেল নেগরেসকো হোটেলে যেখানে নেপোলিয়ন জোসেফাইনের সাথে থাকত। একজন পরিচারিকা ট্রেতে করে ওয়াইনের বোতল দিয়ে গেল। আর পরিবেশন করল ছোট্ট স্যান্ডউইচ।
বেলকনির যেখান থেকে ভূমধ্যসাগর দেখা যায় সেখানে চলে গেল। প্রথমে তারা একে-অপরের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। যদিও সে তার হাত ধরে, মনে হয় যেন সে ধরতে বাধ্য। তার দোয়ায় সে তার মধ্যে উষ্ণতা অনুভব করল। কিন্তু সে দেখল সে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। অনুচরবৃন্দ সুন্দরভাবে জানাদুর যে কোনো ভিলার চেয়ে এটাকে সাজিয়েছেন।
বিছানা কালো, লাল সিল্কের চাদর দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর মানানসই ভাঁজে সোনালি নকশা করে শোভিত করা হয়েছে। টেবিল-চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, ভেগাসের কোথাও এর অস্তিত্ব কখনো ছিল না।
অ্যাথেনা ক্রসকে বেলকনিতে নিয়ে গেল। আর সে যখন এ রকমই করল তখন ক্রস অন্ধের মতো তার গালে চুমু দিল। তারপর সে নিজেকে আর সহায়তা করল না। সে একটা ভেজা সুতি ন্যাপকিন দিয়ে ওয়াইনের বোতল ঢাকল এবং তার মুখ থেকে খারাপ দেখা যায় এমন কসমেটিক্স ঘষে-মেজে তুলে ফেলল। পানির ফোঁটায় তার মুখ চিকচিক করছে। তার ত্বক দীপ্তিমান ও গোলাপি। সে তার একটি হাত তার কাঁধে রেখে তার ঠোঁটে মার্জিতভাবে চুমু দিল।
বেলকনি থেকে তারা নাইসের পাথরের বাড়ি-ঘরের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিল। শত বছর আগে থেকে আঁকা সবুজ ও নীলের ম্লান আভা তারা দেখছিল। ক্রস ও অ্যাথেনা তাদের ওয়াইনে প্রথম চুমুক দেয়। সে সময় তারা মৃদু আওয়াজ শুনছিল। পাথরের সমুদ্র পাড় থেকে, কামানের মুখের মতো দেখা যায় তা থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু আসলে নীল সাগরের উত্তেজিত গভীর পানির বড় ঢেউয়ের আওয়াজ।
অ্যাথেনা তার মাথা ঘুরিয়ে ফেলল। সে ক্রসকে বলল, কত দিন তুমি এখানে থাকবে?
তুমি চাইলে পাঁচ বছর সে বলল।
এটা কথার কথা অ্যাথেনা ভ্রুকুটি করে বলল।
তুমি এখানে কি করবে? ক্রস বলল, আমি ধনী লোক, হয়তো আমি একটা ছোট হোটেল কিনব।