এভাবে অ্যাথেনা দিন দিন বজের বিকৃত আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল। তখন তার বয়স মাত্র কুড়ি। ইচ্ছে করলে অ্যাথেনা তার বাবা-মার সাহায্য কামনা করতে পারত। কিন্তু তা সে করল না। এমনকি সে তার বন্ধুদের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা করেনি কখনো। তার চেয়ে বরং সে নিজেই এর যথাযথ সমাধান বের করতে চিন্তায় ডুবে গেল– অবশ্য নিজের বুদ্ধিমত্তার ওপর অ্যাথেনার ছিল চরম আস্থা। তারপর অ্যাথেনা কখনোই তার কলেজের পাট শেষ করতে পারবে না। ক্রমেই পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
অ্যাথেনা বুঝতে পেরেছিল, তার কলেজ কর্তৃপক্ষও তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তাই সে মনে মনে বজের প্রতি ব্যাপক ছাড় দেয়ার কথা ভাবল। বজকে সত্যিকার ভালোবাসতে পুনরায় পুরনো বজকে ফিরে পেতে অ্যাথেনা চেষ্টা করতে লাগল। প্রথমে সে তৈরি করার চেষ্টা করল নিজেকে। কিন্তু পারল না। বজের প্রতি অ্যাথেনার বিরূপ ভাব এমনই প্রকট রূপ নিয়েছিল যে, সে তার মুখোমুখি দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বজ তাকে স্পর্শ করবে এমন কথা চিন্তাও করতে পারল না। অ্যাথেনার মধ্যে অতি সন্তর্পণে যে ঘৃণার বীজ ধীরে ধীরে রোপিত হচ্ছিল, এতদিন পর তা সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো। উপলব্ধি করল ভালোবাসা পেতে সে আর কখনো কাউকে প্রমাণ প্রয়োগে বিশ্বাস জন্মাতে পারবে না।
তার চেয়ে বরং বজের সংসার থেকে সরে এলে কেমন হয়– অ্যাথেনা ভাবল। চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত যদি অ্যাথেনা নিতে চায় তবে বজ কি এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে? হয়তোবা। একমাত্র কন্যা সন্তান ব্যাথেনিকে নিয়েই সমস্যায় পড়বে অ্যাথেনা। এত সহজে ব্যাথেনিকে ছেড়ে দেবে না বজ। একের পর এক সমস্যার চিন্তা মাথায় এসে জড়ো হতে লাগল। অ্যাথেনা বিভ্রান্ত হতে থাকল।
বজ প্রায়ই তাদের এক বছরের সন্তানকে নিয়ে ভয়াবহ খেলায় মেয়ে উঠত। ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে আবার তাকে শূন্য থেকে লুফে নিত। মাঝে মাঝে অ্যাথেনাকে দেখিয়ে এমন ভাব করত যেন ব্যাথেনিকে শূন্যে ছুঁড়ে তাকে আর ধরবে না। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যাথেনিকে লুফে নিত। এভাবেই একদিন শূন্যে ব্যাথেনি ছুঁড়ে বজ আর ধরতে পারল না। শিশুটি পড়ে গেল মেঝেতে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ছুটে এলো অ্যাথেনা, মেঝে থেকে বুকে তুলে নিল শিশুটিকে। বিভিন্নভাবে পরখ করে দেখল সে। কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো মা অ্যাথেনা। তবে মেয়ের শয্যাপাশে ঠাই জেগে কাটিয়ে দিল সারাটি রাত— তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। ব্যাথেনি সুস্থ ছিল, নিশ্চিন্ত হলো অ্যাথেনা। তবে মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছিল তাদের শিশু কন্যাটি। একটু ফুলেও উঠেছিল। কন্যার এ অবস্থা দেখে মারাত্মক বিপর্যস্ত হলো বজ। অনুশোচনার কেঁদেই ফেলেছিল। অ্যাথেনার কাছে অশ্রুসজল নয়নে চেয়েছিল ক্ষমা এই প্রতিশ্রুতিতে যে, সে আর কখনো এমন ভয়াবহ কাণ্ড করবে না। অ্যাথেনাকেও আর কষ্ট দেবে না। কিন্তু অ্যাথেনা আর বজের কথায় কর্ণপাত করল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ভাবল।
পরের দিন অ্যাথেনা তার ব্যাংকের সমস্ত হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করল, অর্থাৎ ব্যাংক থেকে তার টাকা-পয়সা তুলে নিল। তারপর চিন্তা করল সে এমন এক অজ্ঞাত স্থানে চলে যাবে যেখানে কোনোমতেই পিছু নিতে পারবে না বজ। ঠিকানার বিন্দুবিসর্গও রেখে যাবে না অ্যাথেনা বজের জন্য। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অ্যাথেনা আর দেরি করেনি।
দুদিন পর বজ যখন তার কাজ শেষে ফিরে এলো তখন স্ত্রী অ্যাথেনা বা কন্যা ব্যাথেনি কাউকেই পেল না বজ।
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর অ্যাথেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে আত্মপ্রকাশ করল। ব্যাথেনি ছিল না সঙ্গে।
অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন শুরু করল তার কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের জন্য সংগ্রাম। খুব সহজেই একটি মধ্যমানের এজেন্টও পেয়ে গেল অ্যাথেনা এবং প্রাথমিক অবস্থায় ছোটখাটো থিয়েটার গ্রুপগুলোতে কাজ শুরু করল। মার্ক ট্যাপার ফোরামে একটি নাটকে অভিনয়ের সুবাদে অ্যাথেনা একটি ছোট ব্যানারের মুভিতে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেল।
ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটতে লাগল যে অ্যাথেনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই ছোট চরিত্রের পর সুযোগ এলো একটি এ গ্রেড ছবির সহযোগী চরিত্রে অভিনয়ের। এ ছবিতেও অ্যাথেনা জনপ্রিয় হলো। আর পরবর্তী ছবিতে নায়িকা চরিত্রে প্রশংসিত হবার পর থেকেই একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে থাকল। সেই সাথে বজ স্কানেটও তার জীবনে ধীরে ধীরে পুনরায় প্রবেশ করতে লাগল।
বজ চলচ্চিত্র একাডেমিতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটাল। এতে অবশ্য অ্যাথেনা খুব একটা বিস্মিত হয়নি। তবে সেদিনকার সেই অ্যাসিড বলে রুপালি রঙ ছুঁড়ে মারার বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে শুধুমাত্র জোক বা কৌতুক বলে মনে হলেও অ্যাথেনা সন্দিহান। বজকে অ্যাথেনার চেয়ে বেশি আর কে চেনে। সে জানে, এবারের বোতলে পানি থাকলেও পরবর্তী কোনো দিন বজের হাতে থাকবে সত্যিকারের অ্যাসিডপূর্ণ বোতল।
স্টুডিওতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্লডিয়া ডি লিনার উদ্দেশ্যে বলল মলি ফ্লান্ডারস।
সকালের আলোপচারিতা শুরু হয়েছিল স্টুডিওকে ঘিরেই। মলি ফ্লাডারসের কণ্ঠে ঝরে পড়ল এক অনিশ্চয়তার সুর অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এর কারণ সেই একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার দিন অ্যাথেনাকে লক্ষ্য করে কথিত অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনাটি। অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছে, অ্যাথেনা হয়তো তার ছবির কাজে আর ফিরে যেতে পারবে না। অথচ বানজ হোমাকে স্টুডিওতে চায়। তারা চায় তুমি যেন অ্যাথেনার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করো।