অ্যাথেনা জন্মেছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান দুটি মানুষের ঘরে। সেখানে সবকিছুই ছিল তার জন্য স্বাভাবিক। অ্যাথেনা ভাবতে লাগল– তার আছে অত্যন্ত ভালো মনের একজন বাবা ও মা যারা তার জন্য উপহারস্বরূপ। পূজনীয়। অ্যাথেনা তার বাবা-মার কথা ভেবে গভীর শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে ফেলল। তার মনে একের পর এক স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল সিনেমার পর্দার মতো– বাবা-মা অ্যাথেনার শারীরিক-মানসিক সৌন্দর্য এবং শিক্ষিত করে তুলতে সাধ্যের সবটুকু করেছেন। বাবা ছিলেন তার ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষক। মা শেখাতেন সাহিত্য এবং কলা। অ্যাথেনা তার শিশুকাল হাতড়ে মনে করতে পারে না যে সে ক্ষণিক সময়ের জন্যও তার বাবা-মার কাছে অসুখী ছিল, এমনকি সে তার কিশোর উত্তীর্ণ সতের বছর পর্যন্তও নয়।
এরপর আকস্মিক বজ স্কানেটের প্রেমে পড়ল অ্যাথেনা। তার চেয়ে মাত্র চার বছরের বড় স্কানেট। আঞ্চলিক ফুটবলের তারকা খেলোয়াড় সে।
হাস্টনের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি তাদের। অ্যাথেনা যেমন রূপসী তেমনি অপরদিকে স্কানেট সুন্দর ও যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। সেই সাথে সদা উচ্ছল ও মজার মানুষ সে। স্কানেট ও অ্যাথেনা যখন পরস্পর মুখোমুখি হতো, মনে হতো, যেন উভয় উভয়কে ম্যাগনেটের মতো আকর্ষণ করছে। উভয়ের নার্ভগুলো উত্তেজিত হতো উচ্চমাত্রার ভোল্টেজে-মিশে যেত একে-অপরের মাঝে, হারিয়ে যেত শিহরণে শিহরণে, সুখের অমিয় ধারার মাঝে। এভাবেই খুঁজে পেয়েছিল তারা একে-অপরকে। এই স্বর্গীয় সুখের ধারায় চিরকাল অবগাহন করতে অবশেষে তারা বিয়ে করল।
বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই অ্যাথেনা গর্ভবতী হলো। কিন্তু তারপরও তার শারীরিক সৌষ্ঠব বজায় ছিল। তবে কিছুটা যে পরিবর্তন হয়নি তা নয়– শরীরের ওজন একটু বেড়েছিল বৈকি। এতে তার খুব একটা সমস্যা হয়নি, কখনো অসুস্থ বোধও হয়নি তার সন্তান লাভের বিষয়টি বরং সে ইনজয়ই করেছে। কলেজেও গিয়েছে নিয়মমাফিক, ড্রামার ক্লাস করেছে– গলফ ও টেনিস খেলেছে নিয়মিত।
টেনিসে বরাবরই ছিল বজ অ্যাথেনার চেয়ে ভালো। তবে গলফে খুব সহজেই অ্যাথেনা হারিয়ে দিত বজ স্কানেটকে।
বজ তার বাবার ব্যাংকে কাজ করত। আর এদিকে তাদের ঘরে এলো একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হলো ব্যাথেনি। ব্যাথেনির জন্মের পরও অ্যাথেনা স্কুল যাওয়া অব্যাহত রেখেছিল। এ অবস্থায় নবজাতকের পরিচর্যার জন্য বিত্তশালী স্কানেট নিযুক্ত করল একজন ধাত্রী ও একজন মেইড সার্ভেন্ট।
বিবাহোত্তর অ্যাথেনা যেন জ্ঞান আহরণে আরো বেশি মরিয়া হয়ে উঠল। অধ্যয়ন করত যেন ক্ষুধার্তের মতে, বিশেষ করে খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ছিল তার দারুণ অনুরাগ। তারকাখচিত খেলোয়াড় পিরানডেলোর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হতে, উইলিয়ামসের জন্য অ্যাথেনা ছিল রীতিমতো পাগল।
অ্যাথেনা ক্রমেই পরিপক্ব হয়ে উঠছিল। তার বুদ্ধিমত্তা, তার সৌন্দর্যকে একই ফ্রেমে বেঁধেছিল, যা তাকে করেছিল আরো মহৎ। অ্যাথেনার এই বুদ্ধিমত্তার কাছে কখনো কখনো তার সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে যেত।
অবশ্য অনেকেই যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকেই অ্যাথেনার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে একদণ্ড কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে থাকত। ভালোবাসত তাকে। প্রেম নিবেদনও করেছে অনেকে। বিষয়টি অ্যাথেনার কাছে বিস্ময়ের ছিল না কিছু।
অ্যাথেনার মতো এমন বুদ্ধিমতী, শিক্ষিত, রুচিশীল এবং সর্বোপরি সুন্দরী একজন স্ত্রীর কারণে স্কানেট তার বন্ধুমহলে ছিল ঈর্ষার পাত্র। অ্যাথেনাও নিজের নিপুণতায় ছিল গর্বিত। পরবর্তী প্রায় বছর খানেক সে দেখেছে তার এই নিপুণতা অনেক মানুষের উত্তেজনার কারণ হয়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিকরাও।
বজ প্রায়ই জোক করে বলত, কি আর করা! অ্যাথেনার হাজারো গুণগ্রাহীর জন্য এখন আমাকে পথে পথেই কাটাতে হবে প্রতিটি রাত। বজ স্কানেটও যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সে জানত তার এই গুণবতী স্ত্রী জীবনের একটা বড় কিছু প্রাপ্তির দিকে ছুটছে। সে জানত অ্যাথেনা একজন অতিনারী এবং বজের এই বোধ থেকেই সে স্বয়ং বুঝতে পারত তার স্ত্রীকে আজীবন ধরে রাখা কঠিন হবে। স্কানেট অনুভব করত অ্যাথেনাকে নিয়ে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নও হয়তো একসময় ধূলিসাৎ হবে। তার এই কৌতূহলকে প্রমাণ করার জন্য কোনো বিশেষ যুদ্ধের দরকার নেই। অন্তত স্কানেটের নিজের তরফ থেকে কোনো ক্রটি নেই বলে সে নিশ্চিন্ত। তারপরও অ্যাথেনাকে নিয়ে তার সন্দেহ। তবে মাঝে মাঝে অ্যাথেনার চেয়ে নিজেকে বেশ দুর্বল ভাবত বজ। নিজের মাঝে উঁকি দিয়ে সে খুঁজত— এমন কি আছে তার মাঝে? কিছুই পেত না, কেবল উচ্ছলতা ও তার শারীরিক ফিটনেস ছাড়া। বিশেষ কোনো মেধাও সে খুঁজে পেত না তার নিজের মাঝে। আর স্কানেট তার ভবিষ্যতে ব্যাপক প্রাচুর্য কিংবা প্রাপ্তির প্রতিও খুব একটা আগ্রহী ছিল না।
ধীরে ধীরে স্কানেটের মনে অ্যাথেনার বিরুদ্ধে হিংসার জন্ম নিতে শুরু করল। অ্যাথেনার জনপ্রিয়তা, বিশ্বে তার যে একটা নিশ্চিত অবস্থান হতে যাচ্ছে। এসব নিয়ে তার মনে তোলপাড় শুরু হলো।
স্কানেট তার অনিশ্চিত ভাগ্যের সাক্ষাৎ লাভে এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। শুরু হলো তার অতিরিক্ত মাত্রায় মদপান। কলিগদের স্ত্রীদের সাথে শুরু হলো তার মেলামেশা। এই ফাঁকে বাবার ব্যাংকে তার কাজে অবহেলায় হিসাব নিকাশে দেখা গেল গরমিল। নিজেকে সে বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যা দিয়ে। গর্ববোধ করত। যেমন কোনো মানুষ কোনো কিছুতে দক্ষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে করে থাকে। আর এসবের পাশাপাশি স্ত্রী অ্যাথেনার বিরুদ্ধেও স্কানেটের বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করল।