এসব নিয়ে ডন খুব পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আশা করেন। ক্রসেরও এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রস অবশ্য আশা করছে যে, তার বাবা তাকে যথাসাধ্য সমর্থন ও সহযোগিতা যুগিয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডনের তিন পুত্রকে নিয়ে জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি এবং ডনের অপর নাতি ডেন্টি। এদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, এটাই এখন ক্রসের চিন্তার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডনের স্ব-নির্মিত পারিবারিক চ্যাপেলে যেদিন ক্রস ও ডেন্টির ব্যাপটাইজ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হচ্ছিল, সেদিন থেকেই তারা পরস্পরের শত্রু- এমন একটি জোক এখনও ডন পরিবারে চালু আছে।
সেই ডেন্টি বর্তমানে ভেগাসে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভেগাসে সে বিগ টিম নামে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে চাকরি করবে। বিষয়টি ক্রসের জন্য বিরক্তির কারণ, কেননা ডেন্টি বিগ টিমের জন্য আগ্রহী নয়– ব্যাপারটি ভালোভাবেই জানে ক্রস। কিন্তু বেচারা ডেন্টি! তার করার কিছুই নেই। ডন নিজেই ডেন্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এই ক্ষেত্রটিতে। এ বিষয়ে ক্রসের চিন্তা এখন একটাই— কিভাবে ডেন্টি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরিটি করবে।
আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান ঘিরে যে সমাগম, তা এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড়। গ্রোনিভেল্টের মতো একজন জিনিয়াসকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছেন অনেক লোক!
গ্রোনিভেল্টের মৃতদেহ সটান শুইয়ে রাখা হয়েছে তারই অর্থে নির্মিত প্রটেস্ট্যান্ট চার্চে। এই চার্চটিতে তিনি পুরোহিত নিয়োগ করেছিলেন ইউরোপ থেকে আর এর নির্মাণশৈলী ছিল খোদ আমেরিকার নিজস্ব শিল্প থেকে নেয়া। ভেগাসের এই চার্চের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো চার্চটির বাইরে পার্কিংয়ের জন্য বিশাল লন। তাছাড়া এখানে ইউরোপীয়দের চেয়ে ন্যাটিভ আমেরিকান বোধকেই প্রাধান্য দেয়া হয় এ বিষয়টিও বিখ্যাত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
চার্চের গায়ক দলের কণ্ঠে সুরের মূর্ঘনায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। ঈশ্বরের স্তুতি সঙ্গীতে যেন পবিত্রতার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল। গায়ক দল গ্রোনিভেল্টের স্বর্গ যাত্রার জন্য প্রার্থনা করছিল– সুরে সুরে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ উজাড় করে।
অদূরে শোকাহত শত শত গ্রাজুয়েট ছাত্র সমবেত হয় চার্চে। এসব ছাত্রের জন্য গ্রোনিভেল্ট প্রচুর অর্থ সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের এই দাতার মৃত্যুতে অনেকেই ভেঙে পড়ে কান্নায়। কেউ কেউ হোটেলের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ব্যাকুল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। মধ্যবয়সি কিছু মহিলা গ্রোনিভেল্টের চিরবিদায়ে নীরব অশ্রুপাত করে যাচ্ছিল। এই মহিলাদের অনেকে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগের কর্মী, অনেকে আবার ক্যাথলিক অনুসারী। গ্রোনিভেল্ট সকল ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতা করেছিলেন, উপাসনালয় নির্মাণে দিয়েছিলেন অর্থ।
নাভাদা রাজ্যের গভর্নর ওয়াল্টার ওয়াভেনও গ্রোনিভেল্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হলেন। তিনি এলেন মেয়র প্রদত্ত এসকর্টে। আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের শবযাত্রার জন্য ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি দেখে ওয়াভেন তার দেহরক্ষী গুটিয়ে নিলেন। সিমেট্রি বা কবরস্থানের উদ্দেশ্যে শবযাত্রার দীর্ঘ লাইনে তিনিও শামিল হলেন। গ্রোনিভেল্টের মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি এগিয়ে চলল সিমেট্রির উদ্দেশ্যে। পলকে তিনি ছেড়ে যাচ্ছিলেন তার তৈরি পৃথিবী–এ যাত্রাই তার শেষ যাত্রা।
সে রাতে ভেগাসের শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের অন্তরে অন্তস্তল থেকে জানাল শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসা প্রকাশের অভিনব উন্মত্ততা রেকর্ড সৃষ্টি করল, যা কেবল বর্ষবরণ নিউ ইয়ার ইউ এ-ই হয়ে থাকে। গ্রোনিভেল্টের কফিন যখন কবরে রাখা হলো তখন অনেকে তাদের অর্থও শ্রদ্ধার সাথে রাখল কফিনের ওপর। তারপর ঢেকে দেয়া হলো মাটি দিয়ে গ্রোনিভেল্টকে।
দিনের সমাপ্তি ঘটল, আরো ক্রস ডি লিনা তার নতুন জীবন শুরু করার জন্য শুরু করল প্রস্তুতি। সেই রাতে, ম্যালিবু কলোনিতে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তার বিচ হাউসে ছিল একাকী। মনে হাজারো প্রশ্নের দোলা– কি করবে সে, কি করার আছে তার?
সম্মুখ সমুদ্র থেকে হিমেল হাওয়া প্রবেশ করছিল সামনের খোলা দরজা দিয়ে। কোচে বসা অ্যাথেনা সাগরের শীতল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল– কেঁপে উঠছিল একই সাথে তার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে কষ্টে।
শিশুকাল থেকেই অ্যাথেনা স্বপ্ন দেখত বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হবার এবং তা সে খুব অল্প সময়েই অর্জন করতে সমর্থ হয় যার ফল আজকের বিশ্ব কাঁপানো অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন। অ্যাথেনা নিজের কথা ভেবে অবাক হয়।
অবাক হয় সে একজন পরিপূর্ণ নারী হিসেবে নিজকে ফুটিয়ে তুলতে কত কি-ই না তাকে করতে হয়েছে। একজন মুভিস্টারের ক্যারিশমা হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশেষ করে কোনো নায়কের সাথে বিশেষ এডাল্ট দৃশ্যে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নায়িকাকে অবশ্যই পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে– শারীরিক ও মানসিকভাবেও থাকতে হবে তাদের সৌন্দর্যের সব কলা। তাদের কখনোই থাকবে না বিছানা-সঙ্গী হওয়ার ইতিহাস। মুখে কখনো থাকবে না কোনো দাগ; কুৎসিত চেহারা তো কাম্য নয়ই, তাছাড়া চেহারার ত্বকে থাকবে না কোনো ভাজ। তারা কখনোই মৈথুনে অভ্যস্ত হবে না কিংবা হতে পারবে না ভালোবাসার ভিখেরী। অত্যন্ত কঠিন জীবন পার করতে হবে তাদের শুধুমাত্র বিখ্যাত হওয়ার জন্যই।