গ্রোনিভেল্টের হুইল চেয়ারের পেছনেই থাকার কথা নার্সটির। তবে আজকের এই সুন্দর বিকেলে ভ্রমণের জন্য গ্রোনিভেল্ট আর নার্সের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না।
পেন্থ হাউসের বাগানে গ্রোনিভেল্টের হুইল চেয়ারটি অনায়াসেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। বাগানে কার্পেট করা কৃত্রিম সবুজ ঘাসে চোখ পড়ল গ্রোনিভেল্টের । আবারো তার মন ছুটে গেল মোল তলার নিচের ক্যাসিনো কক্ষে। সেখানেও এমন একটা মোলায়েম মেঝে আছে মনে পড়ল তার।
সটান বসে আছেন গ্রোনিভেল্ট তার হুইল চেয়ারটিতে, আর বামে-ডানে অনবরত তাকাচ্ছেন পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে-~~ এটাই তার আপাতত আনন্দ। তার আনন্দিত ও গর্বিত হওয়ার আরেকটি কারণ–তার জন্য এতগুলো মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত ক্যাসিনোয়।
গ্রোনিভেল্টের বহনকারী হুইলচেয়ার অত্যন্ত ধীর লয়ে এসে পৌঁছল ব্ল্যাকজ্যাক ও রুলথ এরিয়ায়। এরপর পরিদর্শন করল একে একে ব্যাকার্যাট পিট ও জাঙ্গল অব ক্র্যাপ টেবিল। এই পরিদর্শনের সময় জুয়াড়িরা তীর্যক উক্তিও করছিল বুড়ো গ্রোনিভেল্টের উদ্দেশে। বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়নি গ্রোনিভেল্টের সদা প্রস্তুত চোখ ও কান। তবে মুচকি হেসে তার যথাযথ উপলব্ধির কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেকে তাকে নতুন পঙ্গু-জুয়াড়ি হিসেবেও মনে করেছে। কেননা ভেগাসে এমন অনেকেই আছে যারা হুইলচেয়ারে করেই আসে জুয়ার আড্ডায়। অবশ্য এমন পঙ্গু জুয়াড়িরা অনেকের করুণাও পেয়ে থাকে। করুণার দৃষ্টি দিয়ে যেমন কিছুক্ষণ আগে কেউ মন্তব্য করেছিল- আহা, বেচারা, ভাগ্য তার সাথে শত্রুতা করে কি হাল করেছে।
অবশেষে গ্রোনিভেল্টের হুইল চেয়ারটি এসে পৌঁছল কফি হাউসে। এটি ডাইনিং রুম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কক্ষের প্রহরী তাদের রিজার্ভ করা বুথে পৌঁছে সেখানে অন্য গ্রাহকের দখল করা টেবিল খালি না হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে লাগল।
গ্রোনিভেল্ট স্বচ্ছ গ্লাসের দেয়ালের অপর প্রান্তে দেখতে পেলেন একটি বিশাল আকারের সুইমিংপুল। নীল রঙের কাঁচের কারণেই সেই সুইমিংপুলের পানিগুলো হয়তো নীল দেখাচ্ছিল। গ্রোনিভেল্টের মনে হলো– পানিগুলো যেন তপ্ত, সেখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তবে কিছু যুবতী ও শিশুও দেখতে পেলেন। তারা দাঁড়িয়েছিল ধোয়া ওড়া সারফেসের কাছেই। একটা ব্যতিক্রম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছিল গ্রোনিভেল্টের দৃষ্টিতে। যুবতী ও শিশুদের রঙিন খেলনার মতো লাগছিল তার। হঠাৎ তার মনে হলো- এ ছোট্ট পরিসরে আনন্দ ও বিনোদনের জায়গা– এর সব কিছুই তার সৃষ্টি।
আলফ্রেড গ্রোনিভেল্টের চিন্তায় ছেদ ধরাল ক্রস ডি লিনা। বলল, আলফ্রেড একটা কিছু খাও।
গ্রোনিভেল্ট ফিরে এলেন বাস্তবে। ক্রসের দিকে হাসি মুখে তাকালেন। ক্রসের সব কিছুই তার ভালো লাগে। তিনি তাকে ভালোবাসেন। আসলে ক্রস এমনই এক ব্যক্তি যার প্রতি পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আকর্ষণ বোধ করে। গ্রোনিভেল্ট তাকে পছন্দ করার পেছনে কারণ সে অত্যন্ত আস্থাবান ও বিশ্বস্ত। গ্রোনিভেল্টের জীবনে তার মতো বিশ্বস্ত আর একজনকেও পাননি।
ক্রসের উদ্দেশে গ্রোনিভেল্ট বললেন–আমি আমার এই ব্যবসাকে খুব ভালোবাসি।
একটু হেসে আবার বললেন, ক্রস, তুমিই হবে এই হোটেলে আমার উত্তরসূরি। আমি জানি তোমাকে নিউইয়র্কে আমাদের পার্টনারের সাথেও কাজ করে যেতে হবে। তবে কখনো জানাদু ছেড়ে যেও না।
ক্রস বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টের হাত চেপে ধরল। তার হাতের নরম অস্থিতে আলতো চাপ দিল, উল্টো পৃষ্ঠের নরম চামড়ায় হাত বুলিয়ে আশ্বাসের সুরে বলল, আমি যেতে চাইও না।
গ্রোনিভেল্ট অনুভব করলেন সূর্যের রশ্মি রঙিন কাঁচ ভেদ করে যেন তার শরীর ঝলসে দিচ্ছে। তিনি ক্রসের উদ্দেশ্যে বললেন, ক্রস, আমি তোমাকে সবকিছু শেখাব। আমি কিছু কঠিন কাজ করেছি– সত্যিই সেসব ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তবে কখনো পিছন ফিরে তাকাবে না। তুমি হয়তো জানো পার্সেন্টেজের কাজগুলো হয় একটু ভিন্ন পথে। তুমি তোমার সাধ্যমতো ভালো কাজ করে যাবে। অবশ্যই সেখান থেকেও তুমি পাবে বিস্তর। আমি কিন্তু ভালোবাসায় ব্যর্থতা কিংবা এক্ষেত্রে ঘৃণাকেই প্রশ্রয় দেবে এমন কোনো উপদেশ দিচ্ছি না। এগুলো থেকে অবশ্য খুব একটা ভালো পার্সেন্টেজ আসে না জীবনে।
টেবিলে রাখা কফির কাপে চুমুক দিল দুজনে। গ্রোনিভেল্ট কফির সাথে আসা একটি প্যাস্ট্রি তুলে নিলেন। আর ক্রস তার কফির সাথে অরেঞ্জ জুস।
মধ্যবর্তী স্বল্প সময়ের নীরবতা ভাঙলেন গ্রোনিভেল্ট, একটি বিষয় ….
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, যতক্ষণ অব্দি তোমার হাতে মিলিয়ন ড্রপটুকু না আসে ততক্ষণ তুমি একটি ভিলাও ছাড়বে না। কখনো ভুলে যেও না যেন ভিলা অর্থাৎ পূর্বপুরুষের বাগানবাড়িগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে সুদূর অতীতের স্মৃতি, সেগুলো পৌরাণিকই অন্তত আমার কাছে সে সবের গুরুত্ব অনেক।
ক্রস গ্রোনিভেল্টের হাতের ওপর হাত রেখে আশ্বস্ত করল। গ্রোনিভেল্টের প্রতি ক্রসের অনুভূতি দুর্বার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রস তাকে তার বাবার চেয়েও বেশি ভালোবাসে।
চিন্তা করো না–ক্রস বলল, ভিলাগুলো নিরাপদই থাকবে, এর জন্য যা কিছুই ঘটুক না কেন?
গ্রোনিভেল্টের চোখটি অস্পষ্ট হয়ে উঠল। তীব্র জ্বালা অনুভব করল সে তার চোখ দুটিতে। পুরুষ না হয়ে কোনো নারী হলে হয়তো অঝোর ধারায় নেমে আসত অশ্রু। সামলে নিল গ্রোনিভেল্ট নিজেকে। বলল, সাবধানী হও। সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করবে।