শুধু তাই নয়, চেঁচিয়ে উঠল এখানে কিছু অ্যাসিড আছে। যেন অন্য কোনো দুর্বত্ত এই অ্যাসিড ছোঁড়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে এমন মনোভাব প্রদর্শন করে স্কানেট অজানা দুৰ্বত্তের উদ্দেশে গালাগাল দিতে লাগল–ইউবিন বলে। তারপরই সে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকাল–তার চেহারায় ছিল চিন্তাশীল, ভাবগম্ভীর ও মর্যাদাশীল এক ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি।
এক সময় স্কানেট গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠে বলল, এটা তার পাওনা ছিল। এর পরপরই ব্যাটন হাতে কয়েক জন খাকি পোশাকের নিরাপত্তা কর্মী তাকে ঘিরে ধরল। স্কানেট বসে ছিল হাঁটু গেড়ে।
এই নাটকীয় ঘটনার শেষে অ্যাথেনা অবশেষে স্কানেটের দিকে তাকাল। সে স্কানেটের চেঁচানোর আওয়াজ শুনেছিল কিন্তু লিকুইড তার কানে ও মাথায় পড়ায় সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বলে ঠিক ঠাহর করতে পারেনি।
কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনাটি কোটি কোটি টিভি দর্শক ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে।
দারুণ লাভলি চেহারা অ্যাথেনার। তার গালে এখনো রুপালি রঙের দাগ। এই অ্যাসিড ছোঁড়া ব্যক্তিটির দিকে যখন অ্যাথেনার চোখ পড়ল, তখন সে বিস্মিত, মর্মাহত এবং কিছুটা ভয়ও পেল। আর এই বিস্ময় ও ভীতির ভাব অ্যাথেনার সৌন্দর্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল দ্বিতীয় বারের মতো।
টিভি ক্যামেরাগুলো তখনও সবল। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দেখছে পুরো বিষয়টি। স্কানেটকে এক রকম টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।
বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত হলেও দর্শক অনেকটা ফিলি ঘটনার মতোই উপভোগ করছিল। আপাতদৃষ্টিতে স্কানেট অপরাধী হলেও তাকে ঠিক মুভি স্টারের মতোই দেখাচ্ছিল। দু-হাতে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে একটি জয়সূচক স্যালুট দিল।
এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কানেটের কোমর হাতড়ে পেল লুকিয়ে রাখা ছোট পিস্তলটি। এরপরই পুলিশ কর্মকর্তাটি তার কিডনিসদৃশ স্থান লক্ষ্য করে আঘাত করল। সাথে সাথেই ঝাঁকিয়ে উঠে স্কানেট বেঁকে গেল কিছুটা।
এদিকে অ্যাথেনা অ্যাকুইটেন তখনও অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিমর্ষ। তবে তার চিবুকে লেগে থাকা রুপালি রঙ ইতিমধ্যে শুকিয়ে যাওয়ায় ঝরে পড়ল। আসলে সেগুলো অ্যাসিড ছিল না– অ্যাসিডে ত্বক ঝলসে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটল না আর তার হাতে ছিটে-ফোঁটা লিকুইডগুলোও সরে গেল। কিন্তু এতক্ষণে বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে ফিলেছে তার নিরাপত্তার খাতিরে। তাকে হয়তো সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেও।
অ্যাথেনা স্বাভাবিক হলো। শান্ত কণ্ঠে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বলল, এটা ছিল শুধু পানি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য হাতে পড়া কয়েক ফোঁটা রঙ মিশ্রিত পানি পরখ করে দেখল সে।
এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিরাজমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে স্মিত হেসে অ্যাথেনা বলল, কি আশ্চর্য মানুষ আমার স্বামীটি।
অ্যাথেনা আর দেরি করল না। ঘটনাটির মোড় ঘুরিয়ে নিতে সে তাৎক্ষণিক প্যাভিলিয়নের দিকে এগিয়ে গেল। এমন একটা ঘটনার পরও অ্যাথেনার এই স্বাভাবিক মূর্তি দর্শকদের আন্দোলিত করেছিল। ভক্তকুলের কাছে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছিল, হয়তো এ কারণেই।
এরপর অ্যাথেনা যখন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষের মনোনয়নে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পেল, তখন উপবিষ্ট দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিতে লাগল।
লাস ভেগাসে জানাদু ক্যাসিনো হোটেলের পঁচাশি বছর বয়স্ক মালিক মড়ার মতো শুয়ে আছেন। তিনি শুয়ে আছেন মোল তলার চিলেকোঠার মতো একটি শীতল কক্ষে। শুয়ে শুয়ে তিনি ভাবছেন; এই ষোল তলা থেকেও ক্যাসিনো কক্ষের সব ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর হর্ষধ্বনি যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
আজকের এই বসন্ত দিনে, এই ক্ষণটিতে তিনি যেন স্পষ্ট শুনতে পারছেন রুলথ হুইলে ঘূর্ণায়মান লাল-কালো গজদন্তী বলের ঘর্ষণের শব্দ। তার কানে ভেসে আসছে ক্র্যাপ শুটারদের পাইয়ে দিতে কিংবা হারানোর জন্য গুটির খটাখট আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন চকচকে রুপালি কয়েন গেলা মেশিনের ঝনাঝনাৎ শব্দ, সবই যেন স্পষ্ট ভেসে আসছে তার কানে এই মোল তলার পেন্থ হাউসেও।
আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট, যে কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মতোই সুখী! ইতিমধ্যেই তিনি অতিবাহিত করেছেন জীবনের প্রায় আশিটি বছর। নব্বই ছুঁই উঁই গ্রোনিভেল্টের সময় অতিবাহিত হয়েছে কেবল ব্যস্ততা আর ব্যস্ততায়। অনুরাগী ব্যভিচারী দূত, বহু হত্যাকাণ্ডের সক্রিয় মদদদাতা, রাজনৈতিক ফিক্সার এবং সর্বপরি জানা হোটেলের কঠোর অথচ দয়ালু লর্ড হিসেবে কেটে গেছে তার বর্ণাঢ্য জীবন।
বিশ্বাসঘাতকের ভয়ে আলফ্রেড় কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেননি। তবে অনেকের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন নীরবে। মানুষের ভালোবাসার ধার ধারেন না তিনি কোনো আক্ষেপও নেই তার এজন্য। সম্প্রতি তিনি মাঝে মাঝেই তার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোয় উঁকি মারেন তবে এও যেন বিকেলবেলায় তার ক্যাসিনো আড্ডায় সফরের মতো।
গত পাঁচ বছর ধরে ক্রকসিফিজিও ডি লিনা, অর্থাৎ ক্রস গ্রোনিভেল্টের দক্ষিণ হস্ত। শয্যাকক্ষে প্রবেশ করল ক্রস আলফ্রেড, তুমি রেডি? ক্রসের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, প্রতিউত্তরে কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলেন আলফ্রেড গ্রোনিভেল্ট।
ক্রস গ্রোনিভেল্টকে বিছানা থেকে টেনে তুলল, তারপর সতর্কতার সাথে নিয়ে বসাল হুইল চেয়ারে। একজন নার্স বৃদ্ধ গ্রোনিভেল্টকে নরম ব্লাঙ্কেট ভাঁজ করে ঢেকে দিল। একটি বালিশ ক্রসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেন্থ হাউসের দরজা খোলার জন্য রওনা হলো সে।