না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ডেস্কের কাছে এসে দাঁড়াল হেগেন। ডনের সাথে আজ যারা গোপনে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পেয়েছে তাদের তালিকাটা তুলে নিল ডেস্ক থেকে। এমন সময় অফিসে ঢুকলেন ডন। সাথে সাথে হেগেন তার হাতে তুলে দিল নামের তালিকাটা।
নামগুলোর উপর একবার চোখ বুলালেন ডন। সম্মতি জানাবার ভঙ্গিতে মাথা কাত করলেন। বললেন, আমেরিগো বনানেরাকে সবার শেষে ডেকো।
লম্বা দরজা খুলে বেরিয়ে গেল হেগেন। সোজা বাগানে। মদের পিপের চারপাশে সাক্ষাৎপ্রার্থীরা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ওর দিকে তাকাল। রুটিওয়ালা নাজোরিনির দিকে তর্জনী তুলল হেগেন।
বুকে জড়িয়ে ধরে রুটিওয়ালাকে অভ্যর্থনা জানালেন ডন কর্লিয়নি। অনেক দিন, আগেরকত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তার: বন্ধু ছিলেন তারা, একসাথে খেলাধুলো করেছেন, একসাথে বড় হয়েছেন। ইটালির সেইসব দিনের কথা কি ভোলা যায়। প্রতি বছর ঈস্টারের সময় সদ্য বেক করা পাই পৌঁছে যেত ডন কর্লিয়নির বাড়িতে। সে-পাইয়ের আকার প্রকাণ্ড ট্রাকের চাকার মত, তাজা হনা আর সুজি দিয়ে তৈরি, মুরগীর ডিমের হলুদ কুসুম দিয়ে সোনালী রঙ করা বড় দিন, বাড়ির কারও জন্মদিন, অথবা অন্য কোন উত্সবের দিন হলে আর কথা ছিল না, ক্ষীর দিয়ে ভরাট করা উপাদেয় মিষ্টির ঝুড়ি উপহার হিসেবে, নাজোরিনিদের শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে পৌঁছে যেত। বয়স হতে ডন একটা বেকারি সমিতি গঠন করেছিলেন, সেই সমিতির চাঁদা সুদিন দুর্দিনে বছরের পর বছর খুশি মনে নিয়মিত দিয়ে এসেছে নাজোরিনি। যুদ্ধের সময় কিছু কালোবাজারি চিনির কুপন ছাড়া আর কোন ব্যাপারে কখনও সে ডনের কাছে সাহায্যের জন্যে হাত পাতেনি। বিশ্বাসী বন্ধু সে, এখন বিপদে পড়ে সাহায্য চাইতে এসেছে। আনন্দের সঙ্গে তার উপকার করবেন ডন কর্লিয়নি। তার উপকার করার সুযোগের অপেক্ষাতেই তিনি আছেন।
এক গ্লাস স্টেগা মদ খেতে দিলেন বন্ধুকে ডন কর্লিয়নি। তারপর একটা ডি নোবিলি চুরুট দিলেন। উৎসাহ যোগানোর জন্যে একটা হাত রাখলেন তার কাঁধে। বহু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ডন কর্লিয়নি জানেন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের কাছে অনুগ্রহ চাওয়া কত কঠিন, কতটা সাহসের দরকার হয়।
তাঁকে নিজের মেয়ে এবং এনজার কথা বলল রুটিওয়ালা। ইতালির খা এক ছেলে, বাড়ি নিসিলীতে। যুদ্ধবন্দী হিসেবে পাঠানো হয়েছে আমেরিকাতে। বর্তমানে প্যারোলে মুক্ত। ওর মেয়ে ক্যাথারিন এই যুদ্ধবন্দীর প্রেমে পাগলিনী হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ এখন থেমে যাওয়ায় এনজোকে আর সব যুদ্ধবন্দীর সাথে ফেরত পাঠানো হবে ইটালিতে। এখানেই হয়েছে মুশকিল। এনজো চলে গেলে ওর মেয়ের মন ভেঙে যাবে, সে বাঁচবে না। বলাই বাহুল্য, ওদের দুজনের মধ্যে এই প্রেমটা যেমন কড়া তেমনি পবিত্র। এখন, একমাত্র গড ফাদারই পারেন এই অভাগা অভাগিনীকে সাহায্য করতে। তার হাতেই নির্ভর করছে ওদের জীবন মৃত্যু।
বন্ধুকে সাথে নিয়ে পায়চারি করছেন ডন কর্লিয়নি। একটা হাত তুলে দিয়েছেন তার কাঁধে। সহানুভূতির সাথে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন, বন্ধু যাতে উৎসাহ হারিয়ে না ফেলে। সব শুনে মৃদু হাসলেন তিনি। বললেন, আমি থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই।
কি কি করতে হবে সব তিনি অত্যন্ত সাবধানে বুঝিয়ে দিলেন। ওই এলাকার কংগ্রেস সদস্যের কাছে আবেদন করলে তিনি একটা বিশেষ বিলের প্রস্তাব তুলবেন, প্রস্তাবটা পাসও হয়ে যাবে, এবং পাস হয়ে গেলেই মার্কিন মুল্লুকের নাগরিক হবার অনুমতি মিলবে এনজোর। না-না, কংগ্রেসে বিলটা পাস হবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ করার কিছুই নেই। পরস্পরের জন্যে এটুকু উপকার সবাই করে থাকে।
কৃতজ্ঞতায় অভিভূত হলো নাজোরিনি। তার চোখে পানি এসে গেছে। দরজা পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দিলেন ডন কর্লিয়নি। বিদায় নেবার আগে রুটিওয়ালা মহান বন্ধুকে আলিঙ্গন করল।
ডনের দিকে তাকিয়ে হাসল হেগেন। নাজোরিনির জন্যে চমৎকার একটা বিনিয়োগ এটা। মাত্র দুহাজার ডলার খরচ করতে হবে তাকে, বিনিময়ে একটা কৃতজ্ঞ জামাই অর্থাৎ রুটির দোকানের নামমাত্র বেতনে সারাজীবন কাজ করার জন্যে একজন লোক পেয়ে গেল। একটু বিরতি নিয়ে জানতে চাইল সে, কাজটা কাকে দেব?
ভুরু কুঁচকে একটু ভাবলেন ডন কর্লিয়নি। আমাদের দলের কাউকে না। পাশের পাড়ার ইহুদিটাকে দিতে পারো! ঠিকানা ইত্যাদি সব বদলে দিতে হবে। যুদ্ধ থেমে গেছে, এ ধরনের সমস্যা আরও দেখা দেবে। আমাদের আরও কিছু লোক ওয়াশিংটনে থাকা দরকার, যারা বাড়তি কাজগুলো করবে, কিন্তু বাড়তি দর হাকবে না। নোট বুকে টুকছে হেগেন। কংগ্রেস সদস্য লুটেকার কাজ নয় এটা। ফিশারকে ধরো।
এরপর অ্যান্টনি কপোলাকে নিয়ে এল হেগেন। যৌবনে রেল ইয়ার্ডে কাজ করেছেন ডন কর্লিয়নি, তখনকার একজন সহকর্মীর ছেলে। একটা পাইয়ের দোকান দিতে চায় কপোলা, সেজন্যে পাঁচশো ডলার লাগবে তার। পকেট হাতড়ে এক গোছা টাকা বের করে গুনলেন ডন কর্লিয়নি। পাঁচশো ডলার হচ্ছে না দেখে হেগেনকে বললেন, একশো ডলার ধার দিতে পারো? সোমবারে ব্যাঙ্ক থেকে এনে। ফেরত দেব।
চারশো দিলেই কাজ চলবে, আর লাগবে না, সলজ্জভাবে বলছে কপোলা। কুণ্ঠিতভাবে হাসলেন ডন কর্লিয়নি। কপোলার কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন, তাই কি হয়। আমার পকেট খালি সেতো এই শখের বিয়ের জন্যেই, হেগেনের বাড়িয়ে ধরা হাত থেকে টাকাটা নিয়ে নিজেরগুলোর সাথে কপোলার হাতে গুঁজে দিলেন।