রাগে লাল হয়ে উঠেছে সনির মুখ শালা কুত্তার বাচ্চারা! একটা শুভ কাজের ওপরও কি ওদের শ্রদ্ধা থাকতে নেই? বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে যাচ্ছে সনি। উঠান পেরিয়ে গাড়িটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। নিচু হয়ে ড্রাইভারের দিকে তাকাতেই লোকটা নির্বিকার চিত্তে ওয়ালেট খুলে সবুজ রঙের পরিচয় পত্রটা দেখিয়ে দিল। কথা বলল না সনি, শুধু পিছু হঠে এসে থোঃ করে একগাল থুথু ছুঁড়ল। সেটা পড়ল গিয়ে গাড়ির পিছনের দরজার উপর।
ফিরে আসছে সনি। আশা করছে, ড্রাইভার নিচে নেমে ওকে তাড়া করে উঠানে উঠে আসবে। কিন্তু না। বাপের কাছে ফিরে এসে সনি বলল, এফ-বি আই, কুকুরগুলো সব গাড়ির নম্বর টুকছে।
দেখেই ওদের পরিচয় অনুমান করতে পেরেছেন ডন কর্লিয়নি। ওরা আসবে, এও তিনি জানতেন। সেজন্যে তার ঘনিষ্ঠ সব বন্ধুদের সাবধান করে দেয়া হয়েছে, বিয়ে বাড়িতে কেউ যেন নিজের গাড়ি নিয়ে না আসে। সনির এই নির্বোধের মত রেগে ওঠার পিছনে তার কোন সমর্থন না থাকলেও, তিনি বুঝলেন এতে একটু ভাল ফল দেবে। অবাঞ্ছিত আগন্তুকরা এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে তাদের আগমনটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, এর জন্যে কোন প্রস্তুতি নেয়া হয়নি।
রাগের কোন প্রকাশ জনের নিজের মধ্যে একেবারেই দেখা গেল না। তার কারণ অনেক দিনের অভিজ্ঞতায় তিনি একটি মূল্যবান শিক্ষা অর্জন করেছেন, তা হলো: সমাজ কোন মানুষকে যত ভয়ঙ্কর ভাবেই অপমান করুক না কেন, তা মুখটি বুজে সহ্য করতে হয় এই আশায় বুক বেঁধে যে এ দুনিয়ায় চোখ কান খোলা রাখলে এমন দিনও আসে যখন তুমি যত দূর্বলই হও না কেন, অতিক্ষমতাবানের উপরও প্রতিশোধ নিতে পারবে। এই জ্ঞানটি আছে বলেই তিনি কখনও তার সবিনয় ভাবটি বিসর্জন দেন না।
মেহমানরা সবাই পৌঁছে গেছে। বাড়ির পিছন দিকের বাগানে এই সময় চার বাজনাদারের ব্যাণ্ড শোনা গেল। অবাঞ্ছিতদের চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে বিয়ের ভোজে শরিক হতে যাচ্ছেন ডন কর্লিয়নি। সাথে দুই ছেলে।
প্রকাণ্ড বাগান। ইতিমধ্যে কয়েকশো মেহমান জড়ো হয়েছে সেখানে। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে কাঠের মঞ্চ, তাতে চড়ে কেউ কেউ নাচতে আরম্ভ করেছে। টেবিলগুলো লম্বা, সুস্বাদু মশলা দিয়ে রান্না করা উপাদেয় খাবার-দাবারের পাহাড় জমে উঠেছে সেগুলোয়। ঘরে তৈরি করা কালো মদ সরবরাহ করা হয়েছে। এক একটা জগে এক গ্যালন করে মদ ধরে। টেবিলগুলোর সামনে বসে আছে। মেহমানরা। সবচেয়ে উঁচু টেবিলে বসে আছে জমকালো পোশাক পরা বিয়ের কনে, কনি কর্লিয়নি। পাশে তার বর। ওদেরকে সঙ্গ দিচ্ছেন কনে ও বরের বন্ধু-বান্ধবীরা। সেকেলে ইতালীয় পাড়াগেঁয়ে রীতিতে বিবাহ উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি কনি কর্লিয়নির, শুধু বাবাকে খুশি করার জন্যেই এমন সুল আয়োজনে রাজি হয়েছে সে। এ ধরনের ছোটখাটো ব্যাপারে জেদ ধরে বাবার অসন্তোষ বাড়াতে চায়নি, এমনিতেই স্বামী বাছাই করার ব্যাপারে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট করেছে তাকে।
বর কার্লো রিটসি। দো-আঁশলা। মা ইটালির উত্তর দিকের মেয়ে, বাবা সিসিলির। মায়ের কাছ থেকে কালো সোনালী চুল আর নীল চোখ পেয়েছে। নেভাড়ায় থাকে ওরা, আইন কানুনের সাথে তেমন বনিবনা না হওয়ায় সে-রাজ্য ছেড়ে চলে এসেছে কার্লো। সনি কর্লিয়নির সাথে নিউইয়র্কেই পরিচয়, সেই সূত্রে পরিচয় কনি কর্লিয়নির সাথে। নেভাড়ায় বিশ্বস্ত বন্ধু পাঠিয়ে ডন কর্লিয়নি অবশ্য খবর নিয়ে জেনেছেন পুলিশের সাথে ঝামেলাটা যে একটা বন্দুক নিয়ে, অর্থাৎ ব্যাপারটার কোন গুরুত্ব নেই। পাত্রকে নিখুঁত করার স্বার্থে খাত থেকে সহজেই ব্যাপারটা মুছে ফেলা যায়। বন্ধুরা ফিরে এসে সেই সুথে তাকে আরও জানিয়েছিল যে আইনের অনুমতি নিয়ে ধূমসে জুয়া খেলা চাল রয়েছে নেভাডায়। কৌতূহল বোধ করেছিলেন ডন কর্লিয়নি, এবং ব্যাপারটা নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা করছেন। তাঁর বড় হওয়ার আরেকটা কারণ হলো, সবকিছু থেকেই তিনি লাভবান হতে পছন্দ করেন।
খুব একটা সুন্দরী কনি কর্লিয়নিকে বলা চলে না। বেশ রোগা। নার্ভাস টাইপের মেয়ে। একটু বয়স হলেই এরা খিটখিটে মেজাজের হয়ে ওঠে। কিন্তু আজকের কথা আলাদা। নারীর সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ কুমারীত্ব দান করার ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে কনির চেহারায়, মনে মনে নিজেকে নিয়ে আজ ও ব্যক্তিগত উৎসবে মেতে উঠেছে। বিয়ের সাদা পোশাকে মানিয়েছে খুব, চোখে মুখে এমন এক উজ্জ্বলতা, যে এক রকম সুন্দরীই দেখাচ্ছে তাকে। একটা হাত টেবিলের নিচে দিয়ে স্বামীর পৈশীবহুল উরুর উপর রেখেছে। ধনুকের মত আঁকা ঠোঁট দিয়ে স্বামীকে চুমোয় চুমোয় ব্যতিব্যস্ত করে তোলার জন্যে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে।
কনির চোখে কার্লো আশ্চর্য এক সুদর্শন পুরুষ। বয়স যখন কম ছিল মরুভূমির খোলা বাতাসে কঠিন পরিশ্রমের কাজ করেছে কালো। বিশাল শক্তিশালী ষাড়ের মত কাঁধ তার, পেশীর চাপে সৌখিন কোটের দুটো দিক উঁচু হয়ে আছে। শ্রদ্ধা, প্রশংসা আর ভালবাসার দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে কনি। গর্বে আরও ফুলে উঠছে কার্লোর বুক। স্ত্রীর গেলাসে মদ ঢেলে দিচ্ছে। কিন্তু কনির ডান কাঁধে ঝোলানো রেশমী ব্যাগটার দিক থেকে বেশিক্ষণ চোখ সরিয়ে রাখতে পারছে না সে। ব্যাগে রয়েছে অসংখ্য খাম, খামগুলো ভলারে ঠাসা। অনুমান করার চেষ্টা করছে কালো, কত ডলার ধরতে পারে ওই ব্যাগে? পঞ্চাশ হাজার? এক লাখ? তৃপ্তির মুচকি হাসি ফুটছে, তার ঠোর্টে। এই তো সবে শুরু, এখন শুধু আসতেই থাকবে টাকা, আসতেই থাকবে। বলতে গেলে মন্তু এক রাজার জামাই হয়েছে সে। এখন ওকে খাতির করতেওরা বাধ্য।