অনায়াসে আবার স্বামী পেয়ে গেছে কনি কর্লিয়নি। প্রথম স্বামীর জন্যে শোক প্রকাশ করতে পুরো একটা বছর অপেক্ষাও করেনি সে, যদিও সেটাই নিয়ম। তার দ্বিতীয় স্বামীর বয়স খুবই কম, কনির চেয়ে ছোট হলে হবে তো বড় হবে না। চমৎকার, খাসা ছেলে। বিছানায় প্রথম রাতেই তার প্রেমে পড়ে গেল কনি, ছেলেটা সেক্রেটারির কাজ নিয়ে কর্লিয়নি পরিবারে ঢুকেছিল, এবং দক্ষতা দেখিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল অল্প সময়েই। ভাল ইতালীয় পরিবারের ছেলে, তার ওপর আমেরিকার শ্রেষ্ঠ বিজনেস কলেজ থেকে পাস করেছে। ডনের বোনের সাথে বিয়ে হওয়ায় ভবিষ্যতের জন্যে তাকে আর চিন্তা করতে হবে না।
ইতিমধ্যে পরিবারের সবাইকে খুশি করার জন্যে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে কে কর্লিয়নি। ওর ছেলে দুটোও ওই ধর্মীয় নিয়মে মানুষ হচ্ছে। তবে এতে করে একটু অন্তুষ্টই হয়েছে মাইকেল। ছেলেরা প্রটেস্টান্ট হলেই বেশি খুশি হত সে! তার ধারণা, তাতে নাকি আরও বেশি করে মার্কিনী হওয়া যায়।
নেভাডা শুধু ভাল লাগেনি কে-র, জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেছে সে। ওখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী জা করেছে তাকে। আকাশ ছোঁয়া পাহাড়, লাল পাথরের গরিখাদ, উত্তপ্ত মরুভূমি, প্রাণ ঠাণ্ডা করা নীল হ্রদ, এমন কি গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরমটাও ভাল লাগে তার। ছেলেরা ঘোড়ায় চড়ে খেলে। বাড়িতে বডিগার্ড নয়, চাকরবাকর আছে। আর নেভাডায় আরও অনেক স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। মাইকেল। একটী গৃহ নির্মাণ সংস্থার মালিক সে। বিজনেস ক্লাবের সদস্য হয়েছে। সদস্য হয়েছে পৌর সংস্থার। আজকাল লোকজনের সাথে মেলামেশা করে। সবাই ভারি পছন্দও করে ওকে। রাজনীতি সম্পর্কে চিরকালই উৎসাহী ও, ইদানীং সেটা আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কে-র কাছে জীবন বড় আনন্দময় বলে মনে হয়। নিউ ইয়র্কের আবাস তুলে দেয়া হচ্ছে, সেজন্যে খুব খুশি কে। এখন থেকে ভেগাসই ওদের স্থায়ী নিবাস হবে। ভেগাস থেকে নিউ ইয়র্কে আসতে একটুও ভাল লাগেনি তার।
নিউ ইয়র্কে আজ ওদের শেষ দিন।
ভোর অন্ধকার থাকতে ঘুম ভেঙে গেল কে-র। উঠান থেকে ট্রাকের ঘরঘর আওয়াজ ভেসে আসছে। বাড়ি খালি করে সম জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হবে ট্রাকে করে। দুপুরের পর কর্লিয়নিদের মাকে নিয়ে প্লেনে করে রওনা হবে সবাই। ফিরে যাবে লাস ভেগাসে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে কে দেখ বালিশে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে সিগারেট ফুকছে মাইকেল।
স্ত্রীকে দেখেই জানতে চাইল মাইকেল, আচ্ছা, রোজ ভোরে গির্জায় না ছুটলেই কি নয়? রোববারে যাও, বাধা নেই, কিন্তু বোজ:এ কেমন কথা? তুমিও তো দেখছি মায়ের, মতই খারাপ হয়ে যাচ্ছ। হাত বাড়িয়ে টেবিলের আলোটা জেলে ঘরের অন্ধকার তাড়াল মাইকেল।
খাটের কিনারায় বসল কে। মোজা পরছে। ক্যাথলিকরা কেমন হয় জানোই তো, বলল সে। তার ওপর আমি আবার দীক্ষা নিয়েছি। এরা সাধারণত আর সবার চেয়ে ধর্মের ওপর গুরুত্ব দেয়।
হাত বাড়িয়ে দিল মাইকেল। কে-র উরু স্পর্শ করল ও। চামড়াটা কোমল আর
না, হাত সরাও, মৃদু তিরস্কারের সুরে বলল কে। তোমার চাল আমি বুঝতে পারছি। লাভ নেই, সাহেব। আজ সুবিধে হবে না।
কেন? কেন?
আজ আমি কমিউনিয়ন নিচ্ছি, বলল কে। মাইকেলের হাত সরিয়ে দিয়ে খার্ট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে।
মৃদু একটু হাসল মাইকেল। বুঝলাম। নিজেকে তুমি গোড়া ক্যাথলিক বলে স্বীকার করছ, বলল ও। কিন্তু কই, ছেলেদেরকে তো কিছু বলো না, ওরা যে এত গির্জা ফাঁকি দেয়?
ওরা ছেলেমানুষ, গির্জায় যাবার সময় পড়ে রয়েছে ওদের, বলল কে। বাড়ি ফিরে নিয়মিত পাঠাব ওদেরকে।
ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে স্বামীকে চুমো খেলো কে। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে একটু দাঁড়াল সে। এরই মধ্যে গরম হয়ে উঠেছে বাতাস। গ্রীষ্মের স উঠছে পূবদিকে, আকাশটা টকটকে লাল। উঠানের ফটকের কাছে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেদিকে এগোল কে।
গাড়িতে ওর জন্যে অপেক্ষা করছেন শাড়ী। বিধবার কার্লো পোশাক পরেছেন তিনি। বউমাকে নিয়ে ভোরের মাস অনুষ্ঠানে যাওয়া রোজকার একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে তার।
বুড়ি শাশুড়ীর তোবড়ানো মুখে চুমো খেলো কে। তারপর ড্রাইভিং সীটে বসল।
সন্দেহ হওয়াতে বউমাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি, নাস্তা খেয়ে এলে নাকি?
না, মৃদু গলায় বলল কে।
সন্তুষ্টচিত্তে মাথা দোলালেন বৃদ্ধা! পবিত্র কমিউনিয়ন নিতে হলে রাত বারোটার পর মুখে কিছু দিতে নেই। নিয়মটা একবার ভূলে গিয়েছিল কে। সে অনেকদিন আগের কথা, কিন্তু শাশুড়ী তা আজও ভোলেননি। রোজই তিনি কথাটা জেনে নেন।
তারপর আবার জানতে চাইলেন, শরীর ভাল তো?
জী।
ভোরের কচি রোদে ছোট গির্জাটাকে কেমন যেন মিয়মান আর বিষণ্ণ লাগে। ভেতরটা খুব ঠাণ্ডা। মনে হয়, এখানে বসে সারাটা দিন বিশ্রাম নিতে পারলে মনটা ভাল হয়ে যাবে। সাদা পাথরের সিঁড়ি বেয়ে শাশুড়ীকে উঠতে সাহায্য করছে কে। তাকেই যেতে দিল আগে। নেদীর একেবারে সামনে বসতে ভালবাসেন তিনি। সিঁড়ির মাথায় কয়েকটা মুহূর্ত নষ্ট করল কে। এতটা কাছাকাছি পৌঁছে সব সময় কেমন যেন ভয় ভয় করে ওর। কেমন যেন একটা অনীহা জাগে মনে।
তারপর শীতল অন্ধকারের ভেতরে প্রবেশ করল কে। আঁধার থেকে পবিত্র জর্দানের পানি নিল আঙুলের ডগায়, ক্রুশচিহ্ন আঁকল শূন্যে, ভিজে আঙুলটা ছোঁয়া শুকনো ঠোঁটে। যীশু আর সন্তদের মূর্তির সামনে লাল শিখা কাঁপছে মোমবাতির। নিজের সারিতে গিয়ে হাটু মুড়ে বসল কে, অপেক্ষা করছে কখন কমিউনিয়ন নিতে ডাক পড়বে। মাথাটা নিচু করে রয়েছে সে, দেখে মনে হয় প্রার্থনা করছে, কিন্তু এখনও মনটাকে তৈরি করতে পারেনি ও।