আবার হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে কনি। মাইকেলের মুখে থুতু ছিটাবার চেষ্টা করুল সে, কিন্তু এত কথা বলে মুখের ভেতরটা শুকিয়ে গেছে, থুতু বের হলো না।
ওকে বাড়ি নিয়ে যাও, এতক্ষণে কথা বলল মাইকেল। সম্পূর্ণ শান্ত দেখাচ্ছে ওকে। একজন ডাক্তারকে ডেকে পাঠাও, পরীক্ষা করে যাক।
কনির হাত চেপে ধরল মাইকেলের বডিগার্ডরা, টানাটানি করে বাড়ির বাইরে নিয়ে চলে গেল তাকে।
স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও কে। দুচোখ ভরা আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে আছে স্বামীর মুখের দিকে। মাইক, এসব কথা কেন বলল কনি? এসব কথা বিশ্বাস করতে পারল কিভাবে ও?
শ্রাগ করল মাইকেল। ও অসুস্থ। হিস্টিরিয়া হয়েছে ওর।
স্বামীর চোখে চোখ রেখে কি যেন খুঁজছে কে। আতঙ্কে সবুজ হয়ে গেছে তার চেহারা, মাইক, বলো ওসব সত্যি নয়? দুই হাত দিয়ে মাইকেলের শার্টের কলার চেপে ধরুল সে। বলো, কনি যা বলে গেল সব মিথ্যে!
হঠাৎ ক্লান্ত দেখাল মাইকেলকে। ধীরে ধীরে উপর-নিচে মাথা নাড়ল ও। শান্তভাবে বলল, মিথ্যেই তো। ওর কথায় কান দেবার দরকার নেই তোমার, আমি যা বলছি সেটাই সত্যি। কিন্তু মনে রেখো, এই শেষবারের মত আমার কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে দিচ্ছি তোমাকে, তার উত্তরও দিচ্ছি। কনির মাথার ঠিক নেই, ও যা বলে গেল তা সত্যি নয়। বলার ভঙ্গি আর সুরে এর চেয়ে বেশি আশ্বাস প্রকাশ করা সম্ভব নয়। স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কণ্ঠে কথাটা বলল মাইকেল। বিবাহিত জীবনে পরস্পরের মধ্যে যে গভীর আন্তরিকতাময় বিশ্বাসের শক্ত বাধন রচনা করেছে ওরা, তার সবটুকু প্রয়োগ করে কেকে কথাটা বিশ্বাস করাবার চেষ্টা করল মাইকেল। সমস্ত সন্দেহ, সমস্ত ভয় এক নিমেষে দূর হয়ে গেল কে-র মন থেকে। পরম স্বস্তির হাসিতে মুখটা উদ্ভাসিত হয়ে উঠল তার, দুহাতে জড়িয়ে ধরেআলিঙ্গন করল স্বামীকে।
গলা শুকিয়ে গেছে, আমাদের দুজনেরই খানিকটা করে মদ দরকার, স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে বরফ আনার জন্যে কিচেনে গিয়ে ঢুকল কে। হঠাৎ সদর দরজা খোলার আওয়াজ গেল কানে। তাড়াতাড়ি কিচেন থেকে আবার বেরিয়ে এল সে।
ক্লেমেঞ্জা, নেরি আর রকো ল্যাম্পনি ঢুকল ঘরে। উল্টোদিকের দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে কে, ওর দিকে পিছন ফিরে রয়েছে মাইকেল। মাইকেলকে পাশ থেকে দেখার জন্যে ঘরের ভেতর ঢুকে একটু সরে দাঁড়াল কে।
ঠিক এই সময় ওর স্বামীকে সম্বোধন করল ক্লেমেঞ্জা, আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাল!
ডন মাইকেল, মুগ্ধ কণ্ঠে বলল ক্লেমেঞ্জা।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কে। দেখতে পাচ্ছে কিভাবে মাইকেল ওদের সবিনয় ভক্তি, শ্রদ্ধা আর স্বীকৃতি গ্রহণ করছে। রোমের প্রাচীন মূর্তির কথা মনে পড়ে গেল তার। তাদেরই মত মাইকেল যেন একজন রোমক সষাট, যারা দেবতাদের আনুকূল্য পেয়ে মানুনদের দণ্ডমুণ্ডের বিধাতা হতেন।
একটা হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল কর্লিয়নি। পাশ থেকে তার মুখটা দেখতে পাচ্ছে কে। সেই মুখে ঠাণ্ডা, প্রশান্ত গর্বের উদ্ভাস। দাঁড়াবার ভাঙ্গটা সহজ, কিন্তু আশ্চর্য একটা দীপ্ত দাম্ভিক ভাব ফুটে রয়েছে তাতে। একটা পা অপরটার চেয়ে সামান্য একটু পিছিয়ে রয়েছে, শরীরের ভার চাপানো রয়েছে সেই পিছনের পায়ের ওপরই। সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্যাপোরেজমিরা। মুহূর্তে সব পরিষ্কার হয়ে গেল কে-র কাছে। বুঝতে পারল, কনির সমস্ত অভিযোগ সত্যি! ঘুরে দাঁড়াল কে, দ্রুত বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কিচেনে ঢুকে ভেঙে পড়ল কান্নায়।
৪.১৪ রক্তাক্ত জয়লাভ
১৪.
রক্তাক্ত জয়লাভ সম্পূর্ণতা পেতে পুরো একটা বছর লেগে গেল। সূক্ষ্ম রাজনৈতিক কৌশলের সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে ইতিমধ্যে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ইতালীয় পরিবারের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে মাইকেল কর্লিয়নি। বছরটা সমান দুভাগে ভাগ করে লং বীচের হেডকোয়ার্টার আর লাস ভেগাসের বসতবাড়িতে কাটাল ও। বছরের শেষদিকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, নিউ ইয়র্কের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে, উঠান তার সমস্ত সয়-সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়া হবে। তাই শেষবারের মত পরিবারের সবাইকে নিয়ে লাস ভেগাস থেকে নিউ ইয়র্কে এসেছে ও। ঠিক হয়েছে পুরো একটা মাস এখানে থাকবে ওরা। মাইকেল তার ব্যবসা বন্ধ আর সম্পত্তি বেটার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকবে, আর ওদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গুছিয়ে বাক্স বন্দী করবে কে। গৃহস্থালির যাবতীয় মালামাল পাঠানো হবে জাহাজযোগে।
গোটা আমেরিকায় কর্লিয়নি পরিবার এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ক্লেমেঞ্জা এখন তার নিজের একটা আলাদা পরিবারের কর্তা। নিউ ইয়র্কে তার পরিবারটাই সবচেয়ে শক্তিশালী। কর্লিয়নিদের ক্যাপোরেজিমি এখন রকে ল্যাম্পনি। বিরাট একটা পদ দেয়া হয়েছে অ্যালবার্ট নেরিকেও। নেভাডায় কর্লিয়নিদের যত হোটেল রয়েছে সূবগুলোর সিকিউরিটি ব্যবস্থার ডিরেকটর সে। ডন মাইকেল তার পরিবারের একজন প্রবীণ সদস্য হিসেবে টম হেগেনকেও গ্রহণ করেছে।
সময়ের কোমল হাতের ছোঁয়ায় পরানো সমস্ত ব্যথা সেরে যায়। ডন মাইকেলের ওপর এখন আর কোন রাগ বা অভিমান নেই কনি কর্লিয়নির। ভাইয়ের বিরুদ্ধে অতগুলো গুরুতর অভিযোগ আনার মাত্র এক হপ্তা পরই নিজে যেচে পড়ে মাফ চেয়েছে সে। ডন মাইকেলের স্ত্রী কে-কে বলেছে, সেদিন যাই বলে থাকুক সে, তার কথায় কোন সত্যতা ছিল না, হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত সদ্য বিধবার প্রলাপ ছিল ওসব।