তোযক নেবার দরকার পড়েনি। কেননা কর্লিয়নি পরিবারের প্রথম আক্রমণের ধাক্কাটাই শত্রুদের মেরুদণ্ড ভেঙে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে বিষম আতঙ্কে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়ল সবাই। ঠিক এই সময় দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ শুরু করুল কর্লিয়নিরা। ক্লেমেঞ্জা আর রকো ল্যাম্পনি তাদের সৈনিকদেরকে ছেড়ে দিল শহরে।
কর্লিয়নি সামাজ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল যারা, তাদেরকে যেখানে পাওয়া গেল সেখানেই ধরে ধরে মেরে ফেলা হলো। ছোটখাটো প্রতিরোধের সম্মুখীন হলো বটে সৈনিকরা, কিন্তু সে-সব অগ্রাহ্য করে দুর্বার গতিতে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে গেল তারা।
টেসিওর দলের ভার নেবার জন্যে পাঠানো হলো নেরিকে। বার্জিনিদের গোটা বুকমেকিং ব্যবসাটাকে দখল করতে সময় লাগল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। চুনোপুটিগুলোকে পাইকারীভাবে মেরে ফেলা হলো। ভাগ্যগুণে যারা ওদের হামলা এড়িয়ে যেতে পারল, শহর ছেড়ে চিরকালের জন্যে পালিয়ে বাঁচল তারা। বার্ভিনিদের সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুজন উচ্চপদস্থ পারিবারিক নেতা মালবেরি স্ট্রাটের একটা ইতালীয় রেস্তোরাঁয় ডিনার খেয়ে কাঠি দিয়ে দাঁত খুটতে খুটতে বেরিয়ে আসতেই কে বা কারা গুলি করে মেরে ফেলল তাদেরকে। ঘোড়দৌড়ের মাঠ থেকে বিস্তর টাকা জিতে বাড়ি ফিরছিল যারা, তাদের মধ্যে থেকে মার্জিনি আর টাটাগ্লিয়াদের লোকগুলোকে বেছে বেছে মেরে ফেলা হলো। তাছাড়া গায়েব হয়ে গেল অসংখ্য লোকজন। এদের সন্ধান কেউ কোনদিন পাবে না।
ওই একরাতের একটা হিংস্ব হামলা পরিচালনা করে শ্রেষ্ঠ সম্মানের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিল মাইকেল কর্লিয়নি। কর্লিয়নি পরিবার আবার তার আগের মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। নিউ ইয়র্কের পাঠ পরিবারের মধ্যে তারাই এখন শ্রেষ্ঠ, অপরাজেয়। এর সবটুকু কৃতিত্ব মাইকেল কর্লিয়নির। তবে শুধু তার অত্যাশ্চর্য কর্ম-কুশলতার জন্যে তাকে শ্রেষ্ঠ সম্মানের আসনে বসানো হলো, ব্যাপাা জ নয়। বার্জিনি আর টাটাগ্লিয়া পরিবারের প্রথম সারির সেরা ক্যাপোরেজিনিদের সবাই কর্লিয়নি পরিবারে চলে এল, সেটাও একটা বড় কারণ। নিউ ইয়র্কের দুটো পরির সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করল কর্লিয়নিদের কাছে বার্জিনি আর টাটাগ্লিয়াদেব তো আত্মসমপণ করার প্রশ্নই উঠল না তাদের অস্তিত্বের আর অবশিষ্টই বা আছে কি?
কিন্তু এত বড় বিজয় সামান্য একটা কারণে বিষাদময় হয়ে উঠল মাইকেলের জন্যে। সাফল্য চুড়ান্ত এবং সার্বিক হয়েছে, কিন্তু তবু এক জায়গায় একটু খুঁত থেকে গেল।
ছেলেদেরকে ভেগাসে রেখে একাই ফিরে এল কনি কর্লিয়নি। এসেই আদিনার মত আচরণ শুরু করে দিল সে।
কনিকে নিয়ে উঠানে এসে থামল গাড়িটা। এখন পর্যন্ত বৈধব্যের শোক কোনরকমে দমন করে রেখেছে সে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে মেয়েকে এগোর্ডে দেখে মা বুড়ি কর্লিয়নি ছুটে এলেন কিন্তু তিনি বাধা দেবার আগেই মাইকেলের বাড়িতে ঢুকে পড়া কনি। সিটিংরুমে ঢুকেই দেখল সোফায় বসে রয়েছে মাইকেল আর কে
কনিকে দেখেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মাইকেল, তার সাপে কে-ও। ননদকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেবে বলে তাড়াতাড়ি তার দিকে এগোল কে। কিন্তু হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। শোকে নয়, প্রচণ্ড ঘৃণায় বিকৃত হয়ে উঠেছে কনির চেহারা।
ছুটে ঘরের ভেতর ঢুকে মাইকেলকে দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে পড়েছে কনি। মাথা ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চাপল সে, চোখ দুটো কুঁচকে ছোট হয়ে গেল। উন্মাদিনীর মত হাত দুড়ে শুরু করে দিল চিৎকার বয়সে মাইকেলের চেয়ে ছোট, কিন্তু বড় ভাইকে সম্মান দেখাবার মত মানসিক অবস্থা এখন নেই তার।
বেজন্ম, শুয়োর। আমার স্বামীকে খুন করেছিস তুই। বাবা বেঁচে ছিল, তাই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলি। যেই বাবা মরেছে, অমনি তোর পাখা গজিয়েছে, ভেবেছিস আর তোকে পায় কে! খুনী, পাযৎ, বদমাশ। চিরকাল আমার স্বামীকে ঘৃণা করতিস তুই। দুচোখে দেখতে পারতিস নাই, তোরা সবাই সনির জন্যে দায়ী করতিস ওকে। সবই বুঝতে পারতাম আমি, কিন্তু তুই পাষণ্ড আমার.এতবড় সর্বনাশ করবি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। তোর কথা ভাবতেও ঘৃণা হয় আমার, তুই আমার শত্রু। এই পরিবারে একমাত্র তুই কক্ষনও আমার ভাল চাসনি। কি করব এখন আমি, এই শুয়োর, কি হবে এখন আমার! এক মায়ের পেটের ভাই না তুই, আমার মুখ চেয়েও তোর মনে দয়া হলো না একটু? গুণ্ডা
কখন যেন নিঃশব্দে ঘরে এসে ঢুকেছে মাইকেলের দুজন বডিগার্ড। কনির দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা, মাইকেলের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছে।
কিন্তু ভাবলেশহীন মুখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল।
হতভম্ব হয়ে গেছে কে। কথা বলার সময় গলাটা কেঁপে গেল তার। শান্ত হও, কনি। মাথা ঠাণ্ডা করো! কি বলছ তা তুমি নিজেও জানে না।
হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল কনি, নিজেকে সামলে নিয়েছে এরই মধ্যে। ঝট করে ফিরল সে কে-র দিকে। বিষাক্ত তীরের মত বেরিয়ে আসছে প্রতিটি শব্দ। তোমার স্বামী তোমাকে বোকা বানাতে পেরেছে, কিন্তু আমাকে পারেনি ওর স্ত্রী হয়ে ওকে তুমি চিনতে পারোনি, সেটা তোমার জন্যে নচ্ছার কথা জানো, আমার সাথে কেন ও অমন নীরস ব্যবহার করত? কেন উঠানে নিয়ে এসে রেখেছিল কার্লোকে? তাকে খুন করবে বলে। ইচ্ছেটাকে এতদিন পুষে রেখেছিল মনে। বাবা জানতে পারলে বাধা দেবে, তাই অপেক্ষা করে ছিল। আমাদেরকে বোকা বানাবার জন্যে আমাদের ছেলের গড ফাদার হয়েছিল। জানো, পিশাচটা আরও কত লোককে খুন করেছে? যাও না, খবরের কাগজগুলোয় একটু চোখ বুলিয়ে এসো, নিজেই দেখতে পাবে। বার্জিনি, টাটাগ্লিয়া, এই রকম আরও কত নাম জানতে চাও? তোমার স্বামী খুন করেছে ওদের সবাইকে।