একপলকে সব বুঝে নিল ক্যাপারিজিমি টেসিও। এবং নিয়তির অমোঘ পরিণতিকে সেই মুহূর্তেই মেনে নিল নিঃশর্তে। নিমেষের জন্যে অসুস্থ, দুর্বল লাগল শরীরটা পর মুহর্তে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠল সে।
মাইককে বোলো, হেগেনের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে টেসিও, যা কিছু ঘটেছে, সবই ব্যবসার স্বার্থে। ওর ওপর আমার কোন রাগ নেই ওকে আর বরাবরই ভাল লেগেছে।
ঘাড় কাত করে রাজি হলো টম হেগেন। বলল, তা সে বোঝে।
স্তব্ধ হয়ে খানিক দাঁড়িয়ে থাকল টেসিও, তারপর ধীর, নরম গলায় জানতে চাইল, তুমি আমাকে রেহাই দিতে পারো না, টম? অনেক দিনের পুরানো বন্ধুত্ব।
ধীরে ধীরে এদিক ওদিক মাথা দোলাল হেগেন। পারি না।
তাকিয়ে আছে হেগেন, দেখছে সেট্রিরা ঘিরে ফেলে একটা গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে টেসিওকে। গাড়িতে উঠছে টেসিও ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকাল সে হেগেনের দিকে কিন্তু কিছু আশা করে নয়। সাথে সাথে সিধে করে নিল, মাথা, উঠে পড়ল গাড়িতে। অসুস্থবোধ করছে হেগেন। গলার ভেতর বমি বমি ভার। শিউরে উঠল সে। কর্লিয়নি পরিবারের সেরা সৈনিক ছিল টেসিও। লুকা ব্রাসির পর ওর ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখতেন ডন কর্লিয়নি। খুবই দুঃখজনক, এত তীক্ষ্ণ বুদ্ধির লোক হয়েও এই বয়সে এমন জঘন্য একটা ভুল করে বসল টেসিও।
৪.১৩ কার্লোর বাড়ি
১৩.
লং বীচ উঠান। কার্লোর বাড়ি।
মাইকেলের সাথে দেখা করার জন্যে এখনও অপেক্ষা করছে কার্লো ফটক দিয়ে অসংখ্য লোক আসা-যাওয়া করছে, চারদিকে কেমন যেন একটা চাপা ব্যস্ততার ভাব, গা ছমছম করছে তার পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ভয়ঙ্কর কিছু একটা পাকাচ্ছে মাইকেল, কিন্তু তা থেকে সম্ভবত বাদ রাখা হয়েছে তাকে। একটু রাগ হলো তার। তারপর বিরক্তি বোধ করল অপেক্ষারও তো একটা সীমা আছে, আর কতক্ষণ ধৈর্য ধরবে সে? অবশেমে ফোন করল মাইকেলকে।
অপরপ্রান্তে রিসিভার তুলল একজন বডিগার্ড। কার্লোকে লাইনে থাকতে বলে মাইকেলকে ডাকতে গেল সে। একটু পরেই লাইনে ফিরে এসে জানাল বডিগার্ড, বস আপনাকে চুপচাপ বসে থাকতে বলেছেন। একটু পরই হাতের কাজ শেষ হবে তার।
রিসিভার রেখে দিল কার্লো। তারপর আবার সেটা তুলে নিল। ফোন করল তার রক্ষিত মেয়েটাকে লোভ দেখিয়ে বলল, রাত আজ যতই হোক, তার সাথে দেখা করবেই কার্লো, ভাল কোন রেস্তোরাঁয় সাপার খেতে নিয়ে যাবে তাকে। তারপর বাকি রাতটা একসাথেই কাটাবে দুজনে মনে মনে সময়ের একটা হিসাব কষে নিল কার্লো একটু আগে জানা গেছে, মাইকেলের ডাক আসতে দেরি নেই। বলার কথা যাই থাকুক, আর যে কাজই করতে দিক, দুঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। এরপর ওয়েবারি পৌঁছুতে খুব জোর চল্লিশ মিনিট। সুতরাং এই প্ল্যানটা টিকে যেতে পারে মেয়েটাকে আবার কথা দিল কার্লো, আজ রাতে যাবেই সে। মান ভাঙার জন্যে কিছুক্ষণ রসিকতাও করল এর সাথে রিসিভার রেখে দিয়ে ঠিক করল, কাপড়চোপড় পরে তৈরি হয়ে থাকাই ভাল, তাহলে আর সময়টা নষ্ট করতে হবে না পরে।
নতুন একটা শার্ট গায়ে চড়িয়েছে মাত্র, এই সময় টোকা পড়ল দরজায়। ভুরু কুঁচকে মুখ তুলে কাল কার্লো ভাবল, নিশ্চয়ই তাকে ফোন করেছিল মাইকেল, কিন্তু ইন এনগেজড় দেখে ডাকাতে নোক পাঠিয়েছে তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগোল সে।
দরজা খুলেই স্তম্ভিত হয়ে গেল কার্লো। এক নিমেষে রক্তশূন্য হয়ে গেল মুখটা! আতঙ্কে আওয়াজ বেরুচ্ছে না গলার ভেতর থেকে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাইকেল কর্লিয়নি তার চেহারায় মৃত্যুর হিম ছায়া এই মৃত্যুর ছায়া অনেকদিন অনেকবার স্বপ্নের মধ্যে দেখেছে কার্লো।
মাইকেলের পিছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে টম হেগেন। তার পাশে অবিচল মূর্তির মত বকো ল্যাম্পনি। প্রত্যেকের চেহারায় বিষণ্ণতার মান ছাপ, যেন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও কোন দুঃসংবাদ দিতে এসেছে ওরা।
ঘুরে দাঁড়াল কার্লো। কাঁধ দুটো ঝুলে পড়েছে তার। ধীর পায়ে ফিরে এল সিটিংরুমে। তার পিছু পিছু এল ওরা তিন জন। এরই মধ্যে প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিয়েছে কার্লো। তার স্নায়ু দুর্বল হয়ে গেছে, তাই ভয় পেয়েছে সে, আসলে হয়তো কিছুই নয় ব্যাপারটা। নিজেকে আশ্বস্ত করার জন্যে এই সব ভাবছে সে।
কিন্তু মাইকেল তার সমস্ত ভুল ধারণা ভেঙে দিল।
সনির মৃত্যুর জন্যে জবাব দিতে হবে তোমাকে আজ, শান্ত, দৃঢ় কণ্ঠে বলল মাইকেল।
জবাব দিল না কার্লো, ভান করল মাইকেলের কথা যেন বুঝতেই পারেনি। সরে গিয়ে কামরার দুদিকের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছে হেগেন আর রকো কামরার মাঝখানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল আর কার্লো
সনিকে তুমি বার্জিনিদের হাতে তুলে দিয়েছিলে, মৃদু গলায় বলল মাইকেল। সে-রাতে আমার বোনের সাথে ছোট্ট একটা প্রহসন করেছিলে তুমি? বুদ্ধিটা তোমার নয়, বার্জিনির। কিন্তু বার্জিনির কথায় তুমি বিশ্বাস করলে কিভাবে যে একজন কর্লিয়নির চোখে ধুলো দিতে পারবে তুমি?
আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা, ব্যক্তিত্ব সব হারিয়ে ফেলল কার্লো মৃত্যু ভয়ে কাঁপছে সে। পাগলের মত চেঁচিয়ে বলতে শুরু করল, কসম খেয়ে বলছি, বিশ্বাস করো, আমি নির্দোষ। মিথ্যে কথা বললে আমি আমার ছেলেদের মাথা খাব। আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ! মাইক, আমাকে বাঁচতে দাও। আমাকে মেরো না। দোহাই তোমার, আমাকে রেহাই দাও।