গাড়ির ফেণ্ডারে হাতের বেঁটে লাঠিটা দিয়ে দুটো মৃদু বাড়ি মারল নেরি। অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল ড্রাইভার, বিস্ময় ফুটে উঠল তার চেহারায়। মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে পুলিশ দেখে তার বিস্ময় আরও বাড়ল বৈ কমল না লাঠি দিয়ে নো স্ট্যাণ্ডিং লেখা নোটিশটা তাকে দেখাচ্ছে নেরি।
মুখ ফিরিয়ে আবার অন্য দিকে তাকাল ড্রাইভার পাত্তাই দিল না নেরিকে
ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নেমে এল নেরি। ড্রাইভারের পাশে খোলা জানালার সামনে দাঁড়াল ও। হিংস্র গুণ্ডার মত চেহারা ড্রাইভারের, স্বাস্থ্যটা এমন, যেন ভয় কাকে বলে জানা নেই। এরকম লোককেই জ করতে ভালবাসেনের। অপমান। করার ইচ্ছে নিয়েই তাকে বলল ও, এই, ব্যাটা, বাদরামি করার আর জায়গা পাওনি? কেটে পড়বে, নাকি দেব একটা সমনগুঁজে?
নতুন বুঝি? ঠাণ্ডা তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ড্রাইভার তোমার থানায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে ব্যাপারটা। একটু থেমে আবার বলল, শখ চেপে থাকলে টিকেটটা দিতে পারো আমাকে, তারপর কেটে পড়ো এখানে সুবিধে হবে না তোমার।
গাড়ি সরাও, শান্ত, কিন্তু গম্ভীর সুরে বলল নেরি। তা না হলে টেনে নিচে নামিয়ে পিঠের ছাল তুনব তোমার।
জাদুর মত একটা দশ ডলারের নোট চলে এল ডাইভারের হাতে। এক হাত দিয়েই সেটাকে চার ভাঁজ করল সে, তারপর চট করে নেরির কোটের পকেটে খুঁজে দেবার জন্যে হাত বাড়াল।
পিছিয়ে এসে প্রত্যাখ্যান করল নেরি। ফুটপাথে উঠে এসে তর্জনী নেড়ে ডাকল ড্রাইভারকে। এতক্ষণে রাজ্যের বিরক্তি ফুটে উঠল লোকটার চেহারায়। কাঁধ ঝাঁকাল সে, নেমে পড়ল গাড়ি থেকে।
তোমার লাইসেন্স আর রেজিস্ট্রেশন দেখাও, বলল নেরি। চোখের কোণ দিয়ে কয়েকজন লোককে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারল, প্ল্যানটা রদবদল করতে হবে। ভেবে রেখেছিল, গাড়ি নিয়ে ব্লকটার চারদিকে একবার চক্কর কাটতে বাধ্য করতে পাররে ড্রাইভারকে। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়।
প্লাজা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে তিনজন লোক। তিনজনই লম্বা-চওড়া, মোটাসেটা। মাঝখানে বার্জিনি, সামনে পিছনে বডিগার্ড। মাইকেল কর্লিয়নির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ওরা।
সামনের বডিগার্ডটা দ্রুত পা চালিয়ে গাড়ির কাছে চলে এল। নেরির আপাদমস্তক দেখে নিয়ে জানতে চাইল, ব্যাপার কি?
চিন্তার কিছু নেই, বলল ড্রাইভার। থানায় নতুন এসেছে মনে হচ্ছে, আমাকে টিকেট দিচ্ছে।
দ্বিতীয় বডিগার্ডকে নিয়ে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল বার্জিনি। আবার কি গণ্ডগোল? জানতে চাইল সে।
এর মধ্যে একবারও মুখ তুলে তাকায়নি নেরি। সমনের বইতে একমনে কি যেন লিখল সে। তারপর সরাসরি তাকাল ড্রাইভারের দিকে। লাইসেন্স আর রেজিস্ট্রেশনটা ফিরিয়ে দিল তাকে। তারপর সমনের বইটা সরিয়ে রাখার জন্য হিপ পকেটে হাত ভরেই এক টানে বের করে ফেলল .৩৮ পুলিশ স্পেশালটা।
পিপের মত মস্ত গোল বার্জিনির বুকে পর পর তিনটে গুলি করল নেরি। স্তম্ভিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে আত্মরক্ষার জন্যে খনও ডাইভ দেয়নি বাকি তিনজন। শেষ গুলিটা করে,ছিটকে সরে এল নেরি, তার সাথে বাকি তিনজনও যে যেদিকে পারল ডাইভ দিয়ে পড়ল। এক সেকেণ্ডের মধ্যে ভিড়ের সাথে মিশে গেল নেরি, বাক নিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে এল অপেক্ষারত গাড়িটার কাছে।
নেরিকে নিয়ে ফুল স্পীডে ছুটছে গাড়ি। নাইনথ অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এসে আবার একটা বাক নিয়ে ফিরে যাচ্ছে শহরের দিকে আরেকটা গাড়ি অপেক্ষা করছে চিলসে পার্কের কাছে। ইতিমধ্যে ইউনিফর্ম, টুপি খুলে অন্য পোশাক পরে নিয়েছে নেরি। গায়ে আবার ওভারকোটটা চড়িয়েছে। পুলিশের ইউনিফর্ম আর পিস্তল রেখে অন্য গাড়িটায় উঠল ও। প্রথম গাড়িটা সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হবে।
এক ঘণ্টা পর। লং বীচে পৌঁছুল অ্যালবার্ট নেরি। মাইকেল কর্লিয়নির সাথে কথা বলছে সে।
.
লং বীচ। উঠান।
ডন ভিটো কর্লিয়নির বাড়ি। কিচেনে বসে ধূমায়িত কফির কাপে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছে টেসিও। তাকে নিতে এল টম হেগেন।
তোমার সাথে রওনা হবার জন্যে তৈরি হয়ে বসে রয়েছে মাইক, বলল হেগেন, তুমি বরং ফোন করে বার্ভিনিকেও রওনা হতে বলে দাও!
সাথে সাথে কফির কাপ রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়াল টেসিও। দেয়ালে ঝোলানো টেলিফোনের রিসিভারটা নামিয়ে ডায়াল করতে শুরু করল। যোগাযোগ হতে বলল, ব্রুকলিনে যাচ্ছি আমরা। হুকে রিসিভারটা ঝুলিয়ে রেখে ঘুরে তাকাল হেগেনের দিকে। হাসল। বলল, আশা করি আজ রাতে ভাল একটা চুক্তি করে আমাদের খুব সুবিধেজনক একটা পজিশনে নিয়ে আসবে মাইক।
কোনও সন্দেহ নেই, গম্ভীর মুখে বলল হেগেন।
কিচেন থেকে দুজন এক সাথে বেরিয়ে এল ওরা। উঠানের ওপর দিয়ে মাইকেলের বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু দরজার সামনে ওদেরকে থামিয়ে দিল একজন সেন্টি।
বস বলেছেন,ওদেরকে বলল সেন্ট্রি, আলাদা একটা গাড়িতে যাবেন তিনি। আপনাদেরকে আগেই রওনা হয়ে যেতে বলেছেন।
ভুরু কুঁচকে উঠল টেসিওর। ঝট করে ফিরল হেগেনের দিকে। কি যন্ত্রণা, এমন তো কথা ছিল না। এ আবার কি ধরনের পাগলামি মাইকের শেষ মুহূর্তে প্ল্যান বদল করা সব নয় সব যে ভেস্তে যাবে তাহলে!
হঠাৎ এদের চারদিকে আরও তিনজন সেন্ট্রিকে দেখা গেল। আশ্চর্য শান্ত আর কোমল গলায় লল হেগেন, তোমার সাথে আমি যেতে পারছি না, টেসিও।