ধীর কিন্তু বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগোচ্ছে রকে। কোনদিকে না তাকিয়ে, কোন রকম তাড়াহুড়োর ভাব না দেখিয়ে নিজের গাড়িতে চড়ল সে। স্টার্ট দিয়ে ছেড়ে দিল। উঠান ছেড়ে বেরিয়ে গেল গাড়িটা।
নিষ্প্রাণ পাথরের মূর্তির মত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল কর্লিয়নি। মাথাটা একচুল নড়ল না ওর, কিন্তু কোর গাড়িটা যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায়, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দেখল ও।
জোনস্ ব্রীজ কজওয়ে এই ব্রিজের ওপর খুন হয়েছিল সনি কর্লিয়নি। সাত করে ব্রিজ পেরিয়ে গেল কোর গাড়ি। ওয়ান্টাগ রেল স্টেশনের কাছাকাছি এসে স্পড কমাল সে, দাঁড় করাল গাড়ি। আগে থেকেই আরেকটা গাড়ি অপেক্ষা করছে ওখানে। দুজন লোক বসে রয়েছে তাতে। নিজের গাড়ি থেকে নেমে সেটায় চড়ল রকো। কোন কথা হলো না। গাড়ি চলতে শুরু করল।
ওয়ান্টাগ স্টেশন থেকে সান রাইজ হাইওয়েতে উঠেএল গাড়িটা। দশ মিনিট পর একটা মোটেলের উঠানে থামল সেটা। আরোহী দুজনকে গাড়িতে রেখেই নেমে পড়ল রকো ল্যাম্পনি পায়ে হেঁটে এগোল ও সামনে একটা বাংলো। এ ধরনের বাংলা সাধারণত সুইস পাহাড়ের ওপর দেখা যায়, ধনী এবং সৌখিন লোকেরা এখান ছুটি বা অবসর কাটাতে ভালবাসে কেউ নেই আশেপাশে। না থাকারই কথা। বুড়ো বয়সে গোপন কাজ করার সময় কে-ই বা সাক্ষী রাখতে চায়? সোনার মত চকচকে দরজাটা দেখা যাচ্ছে। সোজা সেটার দিকেই হাটছে রকো। আত্মবিশ্বাসে দৃঢ় পদক্ষেপ। পাঁচ গজ দূরে থাকতে অকস্মাৎ বিদ্যুৎ খেলে গেল ওর শরীরে। এক ছুটে এগিয়ে গিয়ে দরজার ওপর কাধ দিয়ে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা মারল ও। দুফাঁক হয়ে গেল কবাট দুটো কামরার ভেতর ঢুকে পড়ল রকো ল্যাম্পনি।
দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফিলিপ টাটাগ্লিয়া। সম্পূর্ণ নগ্ন! খাটের ওপর শুয়ে রয়েছে কমবয়েসী একটা মেয়ে বড় জোর তেরো কি চোদ্দ বছর বয়স হবে। খিক খিক করে হাসছে মেয়েটা তার একটা হাত ধরে আছে বুড়ো টাটাগ্লিয়া, হাতটা নিজের শরীরের একটা জায়গায় ছোঁয়াবার চেষ্টা করছে সে।
দুধের মত সাদা চুল ফিলিপ টাটাগ্লিয়ার সারা গায়ে, কিন্তু মাথার চুলগুলো ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ। শরীরটা নাদুসনুদুস মাত্র দুই সেকেণ্ডেই এসব দেখে নিল রক্সে ল্যাম্পনি; পর পর চারটে গুলি করল ও সবগুলোই পেটে চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল আধ পাক, নাফ দিয়ে বেরিয়ে এল কামরা থেকে।
স্টার্ট দেয়াই ছিল গাড়িতে, ছুটে এলে রকো উঠে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। রকোকে ওয়ান্টাগ রেল স্টেশনে নামিয়ে দেয়া হলো। নিজের গাড়িতে চড়ল রকে। সোজ পৌঁছে গেল লং বীচে।
এক মিনিটের জন্যে মাইকেল কর্লিয়নির সাথে দেখা করল সে। তারপর আবার বেরিয়ে এসে ফটকে দাঁড়াল নিজের জায়গায়
.
ব্রঙ্কস। আলবার্ট নেরির ফ্ল্যাট।
পুলিশের পুরানো ইউনিফর্ম পরিষ্কার করা শেষ করল নেরি। এতটুকু ব্যস্ততা নেই ওর কাজে, ধীরে ধীরে পরছে পোশাকটা। প্রথমে পা, তারপর শার্ট, টাই, কোট, হোলস্টার, সবশেষে রিভলভার ঝোলাবার জন্যে গানবেল্ট। পুলিশের চাকরি হারিয়ে রিভলভার জমা দিয়েছিল নেরি, কিন্তু বিভাগীয় অসতর্কতার দরুন ব্যাজটা বয়ে গেছে তার কাছে। নতুন একটা .৩৮ পুলিশ স্পেশাল দিয়েছে তাকে ক্লেমেঞ্জা। এটা যদি পুলিশের হাতে পড়েও, এর আসল মালিক বা ঠিকানা সম্পর্কে কিছু জানতে পাবে না তারা রিভলভারটা খুলল নেরি তেল দিল পরীক্ষা করল ট্রিগার। তারপর আবার জোড়া লাগিয়ে ট্রিগার মেকানিজম ঠিকমত কাজ করছে কিনা দেখে লি ভাল করে। সিলিণ্ডারগুলো লোড করে নিয়ে উঠে দাঁড়াল এবার নেরি। এখন একে রওনা হতে হবে। বড় একটা এভেলাপে পুলিশের কাপটা ভরে নিল সে, গায়ে একটা ওভারকোট চড়িয়ে ঢেকে নিল পুলিশের ইউনিফর্মটা রিস্টওয়াচ দেখল। সে পনেরো মিনিট পর গাড়ি আসবে ওর জন্যে। সময়টা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাটাল নোর ছবেশ দেখে কোন সন্দেহ জাগতে পারে না। একজন পুলিশ বলেই মনে হচ্ছে ওকে।
ঠিক সময়ে নিচে এসে পৌঁছুল নেরি। ওর জন্যে অপেক্ষা করছে গাড়িটা। ভেতরে বসে রয়েছে রকো ল্যাম্পনির দুজন লোক। পিছনের সীটে একা বসল। নেরি। পাড়া ছেড়ে বেরিয়ে এসে শহরের দিকে ছুটছে গাড়ি, ওভারকোট খুলে পায়ের কাছে রেখে দিল ও। এনভেলাপ থেকে বের করল পুলিশের কাপটা।
খানিক পর ফুটপাথের একধারে থামল গাড়ি ফিফটিফিফথ আর ফিফথ অ্যাভিনিউ-এর মোড় এটা। কারও সাথে কথা হয়নি নেরির। নিঃশজে নেমে পড়ল ও। ফিফথ অ্যাভিনিউ-এর ফুটপাথ ধরে হাঁটছে।
সেই পুরানো অনুভূতিটা ফিরে এসেছে নেরির মনে। ভূয়া হলেও, নিজেকে একজন পুলিশম্যান বলেই মনে হচ্ছে তার। আগে যেমন রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াত, আজও তাই দিচ্ছে। রাস্তায় যানবাহন আর ফুটপাথে লোকজনের খুব ভিড়। কিন্তু ত পথ হাঁটতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না নেরির! ইউনিফর্মর একটা মস্ত ণ আছে, দেখেই পথ ছেড়ে দেয় মানুষ।.এদিক-ওদিক না তাকিয়ে হনহন করে হেঁটেই যাচ্ছে নেরি। অবশেষে রকফেলার সেন্টারের সামনে এসে পৌঁছুল ও। উল্টোদিকে দেখা যাচ্ছে সেন্ট প্যাট্রিকের বড় গির্জাটা। এদিকে গাড়ি পার্ক করার কোন জায়গা নেই। কিন্তু তবু আশপাশে কোথাও একটা গাড়ি থাকার কথা। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে নেরি। একটা লিমুসিন গাড়ি খুঁজছে ও চলার গতি মন্থর, কিন্তু এখনও হাঁটছে। কয়েক গজ সামনে গাড়িটাকে দেখতে পেল নেরি। এক সারি লাল রঙের নো পার্কিং আর নো স্ট্যাণ্ডিং লেখা সাইনবোর্ডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়িটা। ওই একটাই, আশপাশে আর কোন গাড়ি নেই হাঁটার গতি আরও মন্থর করল নেরি। একটু আগেই পৌঁছে গেছে ও দাঁড়িয়ে পড়ল ফুটপাথে, সমন-এর বইটা বের করে কি যেন লিখল তাতে। তারপর কয়েক পা এগিয়ে লিমুসিন গাড়িটার পাশে এসে দাঁড়াল ও।